এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  রাজনীতি

  • ফোবর্সের তালিকায় ভারতের বৃহৎ বুর্জোয়া; এদের চরিত্রায়ন-

    Bhattacharjyo Debjit লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | রাজনীতি | ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২৬৯ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • (১)
    বেশ কিছুদিন হতে গেলো 'ফোবর্স'র তালিকা প্রকাশ হয়েছে। যাতে দেখানো হয়েছে ভারতের ১০০ জন অতি ধনীর সম্পত্তি বেড়েছে ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলার, গত বছরের তুলনায় এবছর। বর্তমানে এদের মোট সম্পদের পরিমাণ নাকি ৮০ হাজার কোটি ডলার। যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরোচ্ছে দেশের সংখ্যাগুরু শ্রমজীবী মানুষের! শ্রমিক-কর্মী রুটিন মাফিক ছাঁটাই হতে হতে স্বাভাবিকে পরিণত হয়েছে আজ আমাদের দেশে। যেন এটা হবেই! এটাই স্বাভাবিক। ঘুম থেকে উঠে দাঁত মাজার মতন কেসে পরিণত হয়েছে।
    এই ১০০ জনের তালিকায়, প্রথম ১০ জনে থাকা বৃহৎ পুঁজির ব্যবসাদারদের সম্পত্তির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে- ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। সমস্ত পণ্যে হাত বসানো, আদানি- স্বাভাবিক ভাবেই রয়েছে এই তালিকার প্রথম স্থানে। যার সম্পত্তির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার কোটি ডলার। দ্বিতীয়তে রয়েছে আম্বানী- ৮ হাজার ৮০০ কোটি ডলার নিয়ে। তথ্য মতে, আদানী এবং আম্বানীর কাছেই রয়েছে ৩০% সম্পদ, বাকি ৯৮ জনের কাছে ৭০%। ফোবর্সের এই তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে, সুপার চেইন ‘ডিমার্ট’ এর মালিক রাধাকৃষাণ দামানি। এঁর সম্পত্তি- ২ হাজার ৭৬০ কোটি ডলার। এরপরেই রয়েছে, সিরাম ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা সাইরাস পুনাওয়ালা। ২ হাজার ১৫০ কোটি ডলার সম্পত্তি নিয়ে। পঞ্চম স্থানে দেখানো হয়েছে, 'এসিএল টেকনোলজিস'র মালিক শিব নাদার কে। এঁর সম্পত্তি ২ হাজার ১৪০ কোটি ডলার। ওপি জিন্দাল গোষ্ঠীর এমিরেটস চেয়ারপার্সন সাবিত্রী জিন্দাল- ১ হাজার ৬৪০ কোটি ডলার সম্পত্তি নিয়ে রয়েছে ষষ্ঠ স্থানে। সপ্তম স্থানে উঠে এসেছে, ওষুধ নির্মাতা সংস্থা- সান ফার্মাসিউটিক্যালসের- প্রতিষ্ঠাতা, দিলীপ সংভি। ১ হাজার ৫৫০ কোটি ডলার সম্পত্তি নিয়ে। এরপরেই রয়েছে নামকরা 'হিন্দুজা ব্রাদার্স’। যাদের সম্পত্তি পরিমাণ ১ হাজার ৫২০ কোটি ডলার। আদিত্য বিড়লা গোষ্ঠীর- চেয়ারম্যান নয় নম্বর স্থানে রয়েছে, যার সম্পত্তির পরিমাণ ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। দ'শে দাঁড়িয়ে বাজাজ পরিবার, যাদের সম্পত্তি ১ হাজার ৪৬০ কোটি ডলারের। 
    এ তো ঠিক আছে! কিন্তু এদের আসল মজা রয়েছে বিদেশী ঋণের মেশিনে। এরা সব কটাই এদিক-ওদিক করে সাম্রাজ্যবাদ দ্বারা পরিচালিত। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া(Reserve Bank of India)-এর রিপোর্টে জানানো হয়েছিল বেশ কয়েক মাস আগে, বিদেশ থেকে যদি ৫ ডলার দেশে ঋণ হিসাবে নেওয়া থাকে তবে তার মধ্যে অন্তত ১ ডলার আদানি-আম্বানি নিয়ে থাকেন। তাছাড়া ভারতের বিভিন্ন কোম্পানির বৈদেশিক ব্যাংকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ হল ৩৮.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে আদানি-আম্বানির তৈরি করা কোম্পানিগুলোর নেওয়া ঋণের পরিমাণ ৮.২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাকি ঋণ রয়েছে আরো বহুবিধ বৃহৎ বুর্জোয়াদের! কী শুনতে তাজ্জব লাগছে? লাগলেও এটাই বাস্তব চিত্র ও চরিত্র ভারতের বৃহৎ বুর্জোয়াদের। যারা বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী-গোষ্ঠী গুলির কাছ দিয়ে মোটা ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে, তাদের ঋণের জালি শর্ত মেটায়। এদেশের বুকে; এইভাবেই আমাদের টাকে উন্নয়নের টুপি পরিয়ে বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির শোষণ বহাল তবিয়তে চালাতে সাহায্য করছে।
     
    দেশের সবচেয়ে বড় বড় কোম্পানি মালিক আম্বানি, আদানি,টাটা, বিড়লা, বাজাজ এবং মাহিন্দ্রা হলেও তাদের রয়েছে লক্ষকোটির ঋণ। আমেরিকা, চীন এর মতন নানান সাম্রাজ্যবাদী শক্তি গুলির কাছ থেকে। টাটা, দেশের বৃহত্তম ব্যবসায়িক গোষ্ঠী। তাকে নিয়ে অনেক রাম ভক্ত হনুমানি মিথ রয়েছে। সমাজসেবী, দেশপ্রেমী, ভালো বুর্জোয়া- মতন ভুয়সী মোড়কে মুড়ে। কিন্তু এ যে অন্য লেভেলের উচ্চমানের খেলোয়াড় বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী শক্তির তা কে জানে! টিসিএস, টাটা স্টিল, টাটা কেমিক্যাল, টাটা কনজিউমার, টাটা মোটরস, টাটা এলক্সি, টাটা কমিউনিকেশনের মতো বড় কোম্পানিগুলি চালায় তারা। বিদেশী মুদ্রায় এদের মোট ঋণের পরিমাণ রয়েছে, ২.৯ লাখ কোটি টাকা। আদানি গ্রুপ- এর বর্তমানে দেশের সবচেয়ে পচে যাওয়া বখাটে ধনী ব্যক্তি গৌতম আদনি। আদানি এন্টারপ্রাইজ, আদানি পাওয়ার, আদানি গ্রীন, আদানি ট্রান্সমিশন, আদানি গ্যাস এবং আদানি পোর্ট এর দরুন তরতরিয়ে বেড়েই চলেছে তার ব্যবসা। তাদেরও ২.১৯ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ মালিক মুকেশ আম্বানি। যার "স্ত্রী" লক্ষ্য টাকার জল পান করে, বিজ্ঞাপন মারে। তাদের মোট ঋণ রয়েছে ২.৬৬ লাখ কোটি টাকার। আদিত্য বিড়লা’র, বিড়লা গ্রুপ- দেশের প্রাচীনতম ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে একটি। তাদের মোট ঋণের পরিমাণ ২.২৯ লক্ষ কোটি টাকা। আনন্দ মহিন্দ্রার নেতৃত্বের মহিন্দ্রা গ্রুপের ঋণের পরিমাণ ৭৪,৬৬৭ কোটি টাকা। এছাড়া, নির্মাণ কোম্পানি L&T কোম্পানির রয়েছে ১.৬২ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ এবং বাজাজ গ্রপেরও রয়েছে ৬১,২৫৩ কোটি টাকার ঋণ। এমনটাই তথ্যসূত্র বলছে! যা দেশের বিভিন্ন ব্যাংকের বিদেশী ঋণের থেকে এবং বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির কাছ থেকে নেওয়া। এছাড়াও এরা আলাদা ভাবেই বিদেশী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। আর এর সবটাই সরকার উসুল করে সাধারণ জনগণের পকেট কেটে। এবং বেশি চাপে এদের কে বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রের খেলার ময়দানে খুল্লামখুল্লা যাওয়ার টিকিট কেটে দিয়ে।
     
    রুশ বিপ্লবের স্রষ্ঠা- কমরেড লেনিন সাম্রাজ্যবাদ কে পুঁজিবাদের একটি সুনির্দিষ্ট পর্যায় বর্ণনা করছেন। তিনি এর বিশেষত্ব হিসেবে তিনটি দিক দেখাচ্ছেন, (১) একচেটিয়া পুঁজিবাদ; (২)পরজীবী; (৩) মৃতপ্রায় পুঁজিবাদ। তিনি এর পাঁচটি পয়েন্ট বা মুখ্য আকার তুলে ধরছেন।
    ( ১) ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকারী জোট, একই স্বার্থ পূরণের জন্য বাণিজ্যিক সমিতি এবং নির্ভরযোগ্য ব্যবসায়ী সমিতি- উৎপাদনের কেন্দ্রীকরণ এমন একটি স্তরে পৌঁছায় যখন এই সকল একচেটিয়া সমিতি এবং পুঁজিবাদীরা হাত মেলায় প্রতিযোগীদের ধ্বংস করে দিতে। ওরাই দাম স্থির করে, উৎপাদন কে নিজের মধ্যে বণ্টন করে নেয় এবং নানান রকম ব্যবস্থা ও চুক্তির সাহায্যে অন্যদের বাজারে প্রবেশ করতে ও সুফল পেতে বাধা দেয। এরা অর্থনৈতিক জীবনে একটি নিষ্পত্তিকারক ভূমিকা পালন করে; 
    ২) এদের বড় বড় ব্যাংকগুলোর একচেটিয়া অবস্থা এবং একচেটিয়া উদ্যোগ পুঁজির অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে তৈরি আর্থিক পুঁজি। কমরেড লেনিনের তখনের সময়ে এমন পর্যায় পৌঁছায় যেখানে তিন-চারটি বৃহতকার ব্যাংক প্রধান শিল্প সমৃদ্ধ দেশগুলির অর্থনীতিকে কৌশলে নিজেদের অধীনে রেখেছিল;
    ৩) পুঁজির রপ্তানী একটি বিশেষ ভূমিকা পায়- এই বৈশিষ্ট্য হল যা অ-একচেটিয়া পুঁজিবাদের অধীনে পণ্যের রপ্তানী থেকে ভিন্ন এবং বিশ্বের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক বিভাজনের সঙ্গে এটির ঘনিষ্ঠ সংযোগ থাকে; 
    ৪) আন্তর্জাতিক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকারী জোটগুলির দ্বারা বিশ্বের অর্থনৈতিক বিভাজন। কমরেড লেনিনের তখনের সময় যা ১০০ টির বেশি হয়ে যায়; যেগুলি সমগ্র বিশ্বের বাজার কে নিয়ন্ত্রণ করতো এবং সাময়িক ‘বন্ধুত্বপূর্ন’(যতখন না আরেকটি যুদ্ধ শুরু হচ্ছে)উপায়ে নিজেদের মধ্যে ভাগবাঁটোয়ারা করে নিত।
    ৫) বৃহৎ পুঁজিবাদী শক্তিগুলির মধ্যে বিশ্বের (উপনিবেশ) আঞ্চলিক রাজনৈতিক বিভাজন। বিশ্বের সমস্ত পিছিয়ে থাকা দেশগুলির ঔপনিবেশিকরণ প্রথা মূলত পূর্ন হয়েছিল সাম্রাজ্যবাদের শুরুর সময় থেকেই। এরপরে উপনিবেশ তৈরী করা সম্ভব একমাত্র যুদ্ধের মাধ্যমে, বিশ্বের নতুন বিভাজনের মাধম্যে- সেইসময় ভারত হয়েছিল ব্রিটিশের অধীনস্থ। 
    অর্থাৎ, পরজীবী সাম্রাজ্যবাদের এই চারিত্রিক অবস্থান গুলি দেখে স্পষ্টতই বোঝা যায়, বর্তমান বিশ্বে আমাদের দেশ, ভারত কে বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী-গোষ্ঠী গুলি শোষণ করে চলেছে কী কী ভাবে! তাদের ব্যাংক-সুদ-ঋণের ছলছাতুরীর মধ্যে দিয়ে, ভারতের এই সমস্ত বৃহৎ বুর্জোয়াদের হাত করে। বলা ভালো ভারত কে অর্থনৈতিক-সামরিক-কূটনৈতিক-রাজনৈতিক ভাবে তাদের আধা উপনিবেশ বানিয়ে।
     
     
    (২)
    ভারতে ইংরেজদের শোষণের একেবারে প্রথম পর্বটি ছিল বাণিজ্যিক শোষণ। অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগ পর্যন্ত ছিল এর প্রথম পর্ব। এই পর্বটি পাকাপোক্তভাবে শুরু হওয়ার আগে ভারতের বাজারে বিদেশে রফতানির পণ্য ক্রয়ের জন্য ওলন্দাজ, ফরাসী ও ইংরেজদের মধ্যে ছিল প্রতিযোগিতা। ইংরাজরা প্রথমে ওলন্দাজ ও ফরাসিদের কোণঠাসা করে। তারপর নিজেদের ধীরে ধীরে রপ্তানিযোগ্য পণ্য ক্রয়ে পাকা পোক্ত করে ফেলে। তৎকালীন উঠে আসা দিশি বণিকেরা এর ফলে অন্তর্বাণিজ্যে'ই আটকে মরে। আর নয় তো ইংরেজদের অধীনস্থ হয়ে বহির্বাণিজ্যে অংশগ্রহণ করে। সেই থেকেই শুরু হলো, ভারতের বৃহৎ বুর্জোয়াদের উৎস ও বিকাশের যাত্রা। ১৭৫৭-র রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর একদিকে তাঁতিদের উপর ইংরেজ এজেন্সীগুলির অত্যাচার বাড়লো। অন্যদিকে কেবলমাত্র বিদেশিরা বা তাদের বংশবদ দেশি বেনেরাই কাপড় কেনার এজেন্সি পেল। ফলত, সার্বিক ভাবেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠিত হলো আর সাধারণভাবে দেশি বণিকদের ব্যবসা সংকুচিত হলো। নুনের দেওয়ানি আর উচ্চ সুদে ইংরেজদের টাকা ধার দেওয়ার মধ্যে তাদের ব্যবসা আটকে গেলো।
     
    ইংল্যান্ডে শিল্প-বিপ্লবের প্রত্যক্ষ ফলশ্রুতি কারণে ১৮১৩ সাল থেকে ইংরেজ দের শোষণ পদ্ধতির পরিবর্তন ঘটতে শুরু করলো। শুরু হলো অবাধ-বাণিজ্যভিত্তিক (free trade) শিল্প-পুঁজির শোষণ। ভারত অতিদ্রুত পরিণত হলো ইংল্যান্ডের বস্ত্র শিল্পের বাজারে। ফলে, এখানকার চিরাচরিত হস্ত শিল্প ধ্বংস হলো। আর শিল্পের জন্য কাঁচামালের উৎস হিসেবে ভারত-এর ব্যবহার শুরু হলো। ফের মার খেলো দেশিরা। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগ থেকে ভারতে ইংরেজদের লগ্নী পুঁজির শোষণ শুরু হয়। ভারতে রপ্তানি হওয়া ব্রিটিশ পুঁজি আর তার সাথে এদেশে গড়ে ওঠে ব্রিটিশ-নিয়ন্ত্রিত ব্যাঙ্ক, আমদানি রফতানির অফিস এবং ম্যানেজিং এজেন্সিগুলি। ১৯০৯-১০ সালের মধ্যে একটি হিসেবে দেখানো হয়েছে ৩৯% পুঁজি ঢালা হয়েছে রেল কোম্পানিতে ৫০% সরকারি ও মিউনিসিপ্যাল ঋণ হিসেবে। আর বাকি যতসামান্য বিনিয়োজিত হয়েছে চা, কফি, রাবার বাগিচায়, বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিফোনে, খনিজ ও পেট্রলে আর সওদাগরি কোম্পানি ও ব্যাঙ্কে। সুতরাং স্পষ্টত বোঝা যাচ্ছে দেশীয় শিল্পের বিকাশ পুরোপুরি রোধ হয়। উল্টে এই ধরনটি তৈরি কেবলই রপ্তানি ও বিদেশী চাহিদার স্বার্থে। এর মুখ্য কারণ ছিল ভারতে শিল্পবিকাশ যাতে ইউরোপের প্রথম বিশ্বের শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত না করতে পারে। এবং আজীবন সাম্রাজ্যবাদীদের অধীনস্থ থাকে! এই বিদেশী পুঁজির আধিপত্য স্থাপন হয়েছিল, ঔপনিবেশিক শাসন ও অর্থনীতির সামগ্রিক কাঠামোটির জোরে। কমরেড কার্ল মার্ক্স একসময়ে যে রেলপথকে ‘‘ভারতীয় শিল্পের অগ্রদূত’’ বলে বর্ণনা করেছিলেন দেখা গেল তাও ব্যবহার হলো শুধু বহির্বাণিজ্যের পক্ষে প্রয়োজনীয় বন্দরগুলির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য। আভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও শিল্প বিকাশের জন্যে একেবারেই নয়। পরে অবশ্য মার্ক্স এসব বিষয় বুঝেই বলেছিলেন, ব্রিটিশ ভারতে রেলপথ স্থাপনা ভারতীয়দের কাছে অর্থহীন। 
     
    ১৮৯০-এর দশকে আমেরিকা ও জার্মানী লৌহ-ইস্পাত শিল্পে ব্রিটেনের চেয়ে এগিয়ে গিয়েছিল। ১৮৯৫-৯৬ নাগাদ বেলজিয়ামও এই শিল্পে ব্রিটেনকে ছাপিয়ে চলে যায়। বিংশ শতাব্দীর শুরুতেই জার্মান ও মার্কিন লৌহ-ইস্পাত শিল্প ব্রিটিশ বাজার দখল নিয়ে নেয়। এদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার জন্য ১৯০০ সালে ব্রিটিশ সরকার জে.এন. টাটাকে ইস্পাত শিল্পগঠনে এগিয়ে আসতে বলেন। মানে, তৎকালীন সময় ব্রিটিশ সরকারের পুঁজির দৌলতে টাটা লৌহ-ইস্পাত শিল্প গড়া শুরু করেন। এই সময় লন্ডনের শেয়ার বাজারের আর্থিক মন্দা চলবার কারণে, টাটা ব্রিটিশ ও দেশীয় সামন্তপ্রভুদের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নিয়ে এই শিল্পে চলার পথ শুরু করেন এবং শিল্পায়নের স্বার্থে আমেরিকার থেকে প্রযুক্তি সামগ্রী কেনা শুরু করেন। অর্থাৎ, টাটার শিল্পায়নে চলবার পথ শুরু হলো সর্বত্র ক্ষেত্রেই প্রধানত: সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির পদলেহন করে আর সামন্তবাদীদের সাথে গাঁটছড়া বেঁধে। এরপর আমেরিকার সাহায্যেই, টাটা টিস্কো(TISCO) ১৯১২ সাল থেকে পিগআয়রন নির্মাণ শুরু করে। ১৯০৫ সালে টাটার থেকে বার্ষিক ২০,০০০ টন ইস্পাত কিনবে বলে ব্রিটিশ সরকার ১০ বছরের জন্য চুক্তি করে। এর বেশিরভাগই কিনত ব্রিটিশ সরকার পরিচালিত ভারতীয় রেল বোর্ড। সাম্রাজ্যবাদী অতি মুনাফার লোলুপসার ফলে ১৯১৬ সালে টিস্কো-র উৎপাদন ৫০শতাংশ বেড়ে যায়। যদিও তার অন্যতম প্রধান কারণ সাম্রাজ্যবাদীদের সৃষ্টকৃত প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-এ এর চাহিদা। যারফলে ভারত নিজের অজান্তেই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীকালে ব্রিটিশ সরকারের নির্দেশে ১৯২৪ সালে ভারতীয় বাজারে বিদেশী ইস্পাতের উপর ৩৫.৫% কর বসানো হয় এবং টিস্কো-কে ভর্তুকি দেওয়া শুরু হয়। অর্থাৎ, ভারতীয় বুর্জোয়া টাটার উৎস ও বিকাশ দুই হয় বিদেশী সাম্রাজ্যবাদীদের কেরামতিতে এবং অবশ্যই তা তাদের স্বার্থে। এরপর, লৌহ-ইস্পাতের পাশাপাশি টাটা-রা সাম্রাজ্যবাদীদের হাত ধরে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে। এই সময়ে ভারতীয় বুর্জোয়ারা জাহাজ, সিমেন্ট, সার ইত্যাদি শিল্প গড়ে তোলে সাম্রাজ্যবাদের চাহিদা পূরণের শর্তে, তাদের কথামত তাদের এবং সামন্তশ্রেণীর সাহায্যে। আগের মতন একই ভাবে। বাকি অন্যান্য সংগঠিত ক্ষেত্র যেমন পাট, চা, রাবার ইত্যাদিতেও ব্রিটিশ পুঁজিই প্রধান্যকারী জায়গায় ছিল। এরফলে ভারতের এই সমস্ত বৃহৎ বুর্জোয়াদের একধারে তৈরি হয় যেমন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি গুলির উপর নির্ভরশীলতা এবং আরেকধারে পোক্ত হয় আঞ্চলিক সামন্তীয়শ্রেণীর সাথে নিবিড় সম্পর্ক। অর্থাৎ এদের মাধম্যেই গড়ে উঠে বিদেশী সাম্রাজ্যবাদ ও আঞ্চলিক সামন্তশ্রেণীর এক সুতোর'বন্ধন। এরপর তথাকথিত কমিউনিস্ট পার্টির সূচনা এবং ছাত্র-যুব, শ্রমিকদের স্বতস্ফূর্ত আন্দোলন গুলি দমাতে, খুবই সুকৌশলে গঠিত হয় ফিকি(Ficci) মতন বুর্জোয়া সংগঠন। ১৯২৪ সালে পর থেকেই ভারতে মার্কিন পুঁজির বিনিয়োগ বাড়তে থাকে, মূলত মার্কিন তাবেদারীদের নির্দেশেই গঠিত হয় এই সংগঠনটি। যারা বাণিজ্যিক কারণবশত আধো-আধো ভাবে ব্রিটিশের সাম্রাজ্যবাদীদের বেশ কিছু নীতির বিরোধিতা করলেও আসলে শ্রমিক বিক্ষোভ গুলি দমাতে ব্রিটিশ কেই সাহায্য করে, সার্বিক ভাবে। অনেক তাত্ত্বিকগণ-কেতাবিপণ্ডিত এই সংগঠন কে দেখিয়ে ভারতের “জাতীয় বুর্জোয়া” ব্রিটিশ বিরোধী বিদ্রোহী সত্ত্বা তুলে ধরে- তারা ইচ্ছাকৃত পাশ কেটে সরিয়ে দেয়, এদের সাথে সাম্রাজ্যবাদের ঐক্যসূত্র গুলো। এই সংগঠন টি তৎকালীন পর্যায় ব্রিটিশের হিন্দু-মুসলমান বিভাজনের পক্ষ নিয়ে থাকে। এরপর, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে বিশ্বঅর্থনীতি পুরোপুরি মুক্ত বাজারে পরিণত হলে ভারতের এই সমস্ত বুর্জোয়া’রা বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী বিভিন্ন শক্তিগুলির সাথে এদিক-ওদিক করে নিজেদের দর-কষাকষিতে অস্তিত্ব বাড়াতে থাকে। কিন্তু মূল বিকাশের পথ সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী গুলির হাত ধরেই ধাবিত হয়। শেষে নব্বইয়ের উদারীকরণ-বিশ্বায়ন-বেসরকারিকরণ এদের কে একেবারেই সাম্রাজ্যবাদের বিশ্বস্ত কুকুরে পরিণত করে।
     
     
    (৩)
    প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি সারা বিশ্ব জুড়েই বিপ্লবী উত্থান বয়ে নিয়ে এসেছিল। স্বাভাবিক ভাবেই বলশেভিকদের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের সাফল্য প্রায় সমগ্র দেশেই বিস্তার লাভ করলো। ইউরোপ যা ছিল যুদ্ধবাজ দের মূল কেন্দ্র, তা হয়ে উঠলো বিপ্লবের দ্বারা সবচেয়ে প্রভাবিত স্থান। ১৯১৮ সালের জানুয়ারি মাসে সমস্ত ইউরোপ জুড়ে জনগণের দ্বারা রাজনৈতিক ধর্মঘট আছড়ে পড়লো। জার্মানি এবং হাঙ্গেরিতে প্রবল সংকটের কারণে বিপ্লব সংগঠিত হলো। ১৯১৮ সালের নভেম্বর মাসে জার্মান নাবিকেরা বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন। এইসময়ই জনগণের আন্দোলনের জমি তৈরিতে হচ্ছিল দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক। এই যুগে যেহেতু সোভিয়েত রাশিয়াই বিশ্বসমাজতন্ত্রের প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছিল, তাই সমস্ত ক্ষেত্রেই রুশীয় মডেলের নকল ব্যাপক অর্থেই বৃদ্ধি পাচ্ছিল। কিন্তু নকল করে কী কিছু হতে পারে? প্রতিটা দেশের ইতিহাস, সর্বহারাশ্রেণী উৎস-বিকাশমনের শ্রেণীচরিত্র আলাদা। আলাদা বুর্জোয়া দের শ্রেণী চরিত্র। তাই দ্বন্দ্ব ও ঐক্যের জায়গা গুলিও আলাদা করে বিশ্লেষন করতে হতো। পুরোপুরি নকল করে কিছুই হওয়ার নয় যে; তাই, লেনিনকে লেখা এক চিঠিতে ক্লারা জেটকিন এই ক্রমবর্ধমান ‘রুশিকরণ’ নিয়ে তাঁর তীব্র উদ্বেগ ব্যক্ত করে বলেন,“…কার্যনির্বাহী কমিটি যাতে তাদের চিঠিপত্র এবং বিজ্ঞপ্তির ব্যাপারে সতর্ক থাকে, আমি তার জন্য আপনাকে আপনার প্রভাব খাটাতে সনির্বন্ধ অনুরোধ করছি। কখনো কখনো তাদের হস্তক্ষেপের চরিত্রটা এমন কঠোর এবং জোরালো হয় যে তাতে তৎসম্পর্কিত বাস্তব অবস্থার ব্যাপারে তাদের তখনকার ধারণাটা গরহাজির থাকে”। এই সময় এর মধ্যেই আন্তর্জাতিকে ঔপনিবেশিক ও আধা-ঔপনিবেশিক দেশগুলির বুর্জোয়াদের সম্পর্কে সেদেশের কমিউনিস্ট পার্টিগুলির মূল্যায়নের প্রশ্নটি সামনে চলে এলো। পৃথিবীর অসম বিকাশের কারণে পিছিয়ে পড়া দেশগুলিতে বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে তীক্ষ্ণ শ্রেণিসংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার মত শক্তিশালী ও সংগঠিত শ্রমিকশ্রেণি(সর্বহাারা) পরিমাণে ছিল না। এই সমস্ত বাস্তব অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়েই ১৯২০-১৯২৮ সাল অবধি সময়পর্বে ঔপনিবেশিক ও আধা-ঔপনিবেশিক দেশগুলির মুক্তিসংগ্রাম সম্পর্কে কমিউনিস্টদের দৃষ্টিভঙ্গি গৃহীত হয়। লেনিন তাঁর প্রাথমিক খসড়াতে উপনিবেশ ও আধা-উপনিবেশগুলিতে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামকে আন্তর্জাতিক কর্তৃক সমর্থনের পক্ষে জোরদার করেন; “সমস্ত কমিউনিস্ট পার্টিগুলির দিক থেকে এই দেশগুলিতে চলমান বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক মুক্তি আন্দোলনগুলিকে সাহায্য করা উচিত এবং সবচেয়ে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করার কর্তব্যটি প্রাথমিকভাবে বর্তায় সেই রাষ্ট্রের শ্রমিকদের উপর, যার উপর পশ্চাদপদ দেশটি ঔপনিবেশিকভাবে বা আর্থিকভাবে নির্ভরশীল;…” তিনি আরো বলেন, “… কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক-এর দিক থেকে ঔপনিবেশিক এবং পশ্চাদপদ দেশগুলির বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক জাতীয়তাবাদী আন্দোলনগুলিকে সমর্থন করা উচিত শুধুমাত্র এই শর্তেই যে— সেসব দেশগুলিতে, নামেই শুধুমাত্র কমিউনিস্ট নয় এরকম ভবিষ্যতের সর্বহারা পার্টিগুলোর উপাদানসমূহকে একত্রিত করা হয়েছে এবং তাদের বিশেষ কর্তব্যগুলিকে বুঝতে শেখানো হয়েছে, যেমন, নিজের দেশের ভিতরেই বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক আন্দোলনগুলির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা”। কমরেড লেনিন জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লবের দিশা নির্ধারণ করতে বলেন যে, বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক আন্দোলনের দুটি ধারা আছে— একটি সংশোধনবাদী ধারা যারা ঔপনিবেশিক শাসকদের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধে; আর আরেকটি ধারা যারা এই শাসকদের বিরোধিতা করে জাতীয় মুক্তির জন্য লড়াই করে। তাই, দ্বিতীয় কংগ্রেসের চতুর্থ অধিবেশনে কমরেড লেনিন তাঁর অবস্থান স্পষ্ট ভাবে ব্যাখ্যা করে বলেন যে, "পশ্চাদপদ দেশগুলির বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রশ্নের উপর আমি জোর দিতে চাইছি। এটাই হলো সেই বিষয় যেটা কিছুমাত্রায় ভিন্ন মতামতের জন্ম দিয়েছে। পশ্চাদপদ দেশগুলির বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সমর্থন জানানো কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক এবং কমিউনিস্ট পার্টিগুলোর কর্তব্য- এই বক্তব্য ঘোষণা করা নীতিগত এবং তত্ত্বগতভাবে সঠিক কিনা এটাই ছিল আমাদের তর্ক-বিতর্কের বিষয়। এই আলোচনার পরিণতি হিসেবে আমরা সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম যে বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক আন্দোলন নয়, শুধুমাত্র জাতীয়-বিপ্লবী আন্দোলন সম্পর্কেই এই কথাবার্তা চলতে পারে। এই বক্তব্য সম্পর্কে কোনরকম সন্দেহ থাকতে পারেনা যে যেকোনো জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুধুমাত্র একটি বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক আন্দোলনই হতে পারে; তার কারণ পশ্চাদপদ দেশগুলির জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ কৃষকদের দ্বারা গঠিত, যা বুর্জোয়া পুঁজিবাদী সম্পর্কের প্রতিনিধিত্ব করে। যদি পশ্চাদপদ দেশগুলিতে সর্বহারার পার্টির উত্থান আদৌ সম্ভব হয়, তাহলে এইসব দেশগুলিতে কৃষক আন্দোলনের সাথে একটি নির্দিষ্ট সম্পর্ক ব্যতীত, তাকে প্রকৃতপক্ষে সমর্থন ব্যতীত তারা কমিউনিস্ট রণকৌশল এবং কমিউনিস্ট কর্মনীতি সম্পন্ন করতে পারবে, এটা ভাবা অলীক কল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়। কিন্তু আপত্তি তোলা হয়েছে এই ব্যাপারে যে যদি আমরা ‘বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক’ কথাটি ব্যবহার করি, সেক্ষেত্রে আমরা সংস্কারপন্থী এবং বিপ্লবী আন্দোলনের ফারাকটি হারিয়ে ফেলবো; এই ফারাকটি ইদানিংকালে পশ্চাদপদ দেশগুলি এবং উপনিবেশগুলিতে বেশ স্পষ্ট হয়েছে শুধু এই কারণেই যে নিপীড়িত জনগণের মধ্যে থেকেও একটি সংস্কারপন্থী আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে সাম্রাজ্যবাদী বুর্জোয়া তার সাধ্য অনুযায়ী সমস্তকিছু করে চলেছে। শোষক দেশগুলির বুর্জোয়াদের সাথে উপনিবেশগুলির বুর্জোয়াদের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট ধরনের বোঝাপড়া উদ্ভূত হয়েছে, যার ফলে প্রায়শই, এমনকি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই, নিপীড়িত দেশগুলির বুর্জোয়ারা, যদিও তারাও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনগুলিকে সমর্থন করে, তথাপি সাম্রাজ্যবাদী বুর্জোয়াদের সাথে একটি নির্দিষ্ট মাত্রার সমঝোতার ভিত্তিতে, অর্থাৎ এক কথায় তাদের সাথেই, সকল বিপ্লবী আন্দোলন এবং বিপ্লবী শ্রেণির বিরদ্ধে লড়াই চালায়। এই ব্যাপারটি কমিশনে সম্পূর্ণভাবে প্রমাণিত হয়েছে এবং আমরা বিশ্বাস করি যে এই পার্থক্যটি বিবেচনার মধ্যে নিয়ে আসা এবং প্রায় সব জায়গায় ‘বুর্জোয়া-গণতন্ত্র’ শব্দদুটিকে ‘জাতীয়-বিপ্লবী’ কথাটি দ্বারা প্রতিস্থাপন করা – এটাই একমাত্র সঠিক উপায়। এই সম্পর্কিত বিষয়টি হলো কমিউনিস্ট হিসেবে আমরা ঔপনিবেশিক দেশগুলির বুর্জোয়া স্বাধীনতা আন্দোলনগুলিকে শুধুমাত্র তখনই সমর্থন করবো যদি এই আন্দোলনগুলি প্রকৃত অর্থেই বিপ্লবী হয় এবং তাদের প্রতিনিধিরা কৃষকদের বিপ্লবী পদ্ধতিতে শিক্ষিত এবং সংগঠিত করতে আমাদের বিরুদ্ধাচরণ না করে। কিন্তু যদি তেমন কোন অর্থ না থাকে, তাহলে সেখানেও কমিউনিস্টদের কর্তব্য থাকছে সংস্কারবাদী বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে লড়াই চালানোর, যেই ধারায় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের নায়করাও পড়ে…’’ এই নিয়ে পরবর্তীকালে পক্ষ-বিপক্ষ নানান মত থাকলেও, অবশেষে পুরো বিষয়টি কমরেড মাও আরো পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্যাখ্যায় সুস্পষ্ট করেন; কমরেড মাও, ১৯২৮ সালে তাঁর এবিষয় নিয়ে লেখা গুলির মধ্যে প্রথম “মুৎসুদ্দি বুর্জোয়া” শব্দটি তুলে ধরেন। যারা আদতেই বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী প্রতিষ্ঠানের দেশীয় দালাল। তিনি স্পষ্ট পার্থক্য গড়েন জাতীয় বুর্জোয়া এবং মুৎসুদ্দি বুর্জোয়া দের মধ্যে। মুৎসুদ্দি বুর্জোয়া আসলেই নিজেদের অস্তিত্ব ও বিকাশের জন্য সাম্রাজ্যবাদের উপর নির্ভরশীল এবং সবসময়ই বিপ্লবের শত্রু। আর জাতীয় বুর্জোয়া হলো, বিপ্লবের দোদুল্যমান বন্ধু; তাদের আর্থিক বাজে অবস্থার কারণেই। জাতীয় বুর্জোয়াদের সাথে সাম্রাজ্যবাদ পরিচালিত মুৎসুদ্দি বুর্জোয়াদের প্রবল দ্বন্দ্ব রয়েছে। মাও এর মত অনুযায়ী,ঔপনিবেশ এবং আধা ঔপনিবেশ গুলিতে বিপ্লব অভূথ্যানের পথে আসবে না। আসবে, চার প্রকার শ্রেণীর যুক্তফ্রন্টে; যার মধ্যে থাকবে- সর্বহারা, কৃষক, শহরের পেটি বুর্জোয়া, জাতীয় বুর্জোয়া। অর্থাৎ, গ্রাম অঞ্চল ধরে ধরে দখল করার মাধ্যমে শহর গুলিকে ঘিরে ফেলে।
    বর্তমানে সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থায় মুৎসুদ্দি বুর্জোয়ারা সাম্রাজ্যবাদী বিভিন্ন গ্রুপের পদলেহী কুকুর। এদের নিজেদের মধ্যেও বিভিন্ন দ্বন্দ্ব থাকলেও প্রধান ঐক্যে চলে আসা সাম্রাজ্যবাদী নীতি সমূহকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে। এদের সাথে আঞ্চলিক আধা-সামন্ততান্ত্রিক চক্রের গাঁটছড়াতেই সাম্রাজ্যবাদী শোষণ বহাল তবিয়তে চলছে আজকের ভারতে। এখানেই রয়েছে ভারতের ফ্যাসিবাদের উৎস ও বিকাশ স্থল বর্তমানে; তাই আমি আমার এই লেখার উপরেই দেখানোর চেষ্টা, কী ভাবে সূত্র স্থাপন হয়েছিল ইতিহাসে; সামন্তপ্রভুদের সাথে সাম্রাজ্যবাদ পরিচালিত মুৎসুদ্দীদের। 
     
     
    শেষের কথা: ভারতে বৃহৎ বুর্জোয়াদের কেমন অবস্থা এবং ভারত রাষ্ট্রের শ্রেণী চরিত্র, গত ৫৫ বছর আগেই কমিউনিস্ট বিপ্লবী নকশালবাড়ি আন্দোলনের স্রষ্টা, বিপ্লবী পার্টি তৈরির কারিগর- শহীদ কমরেড চারু মজুমদার খুবই সুস্পষ্ট করে তুলে ধরেন। যদিও এই নিয়ে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মত পার্থক্য আছে। ভারত কে অনেকেই পুঁজিবাদী রাষ্ট্র মনে করেন। কিন্তু ভারতের বুর্জোয়াদের “স্বাধীন” মনে করলেও বাস্তব তথ্য-চিত্র ঠিক এর উল্টো কথা বলে; যার কারণে আমাদের ফিরে যেতে হলো ইতিহাসের দেওয়ালে। অসম বিকাশে দেশ ভারতে রয়েছে, এখনও প্রবল পরিমানে জমির অসাম্যতা। শ্রমিকশ্রেণীর “সর্বহারা” উপাদানহীনতা। দেশ জুড়ে শ্রমিকের সংখ্যা বিকৃত ভাবে বাড়লেও, সর্বহারা উপাদান গুলি হ্রাস পাচ্ছে তীব্র ভাবে(সাম্রাজ্যবাদী আইন নীতিমালার কারণে)। সরকারি তথ্যমতে ভারতে প্রায় ৯৫% অ-সংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক রয়েছে বর্তমানে। ভারতের মোট শ্রমিকশ্রেণীর জমি সম্পর্কই রয়েছে ৭০% এর। যাদের কাজ শেষে নজর থাকে কেবল ই গ্রামে ফিরেই, জমানো টাকা দিয়ে, দু-বিঘা জমি কেনার উপরে। 
     
    তাছাড়াও ভারতে বর্তমানে সঞ্জয় কাজারিয়া মতন এমন বেশ কিছু জুট মালিকদের বর্তমানে দেখতে পাচ্ছি- যাদের সাম্রাজ্যবাদ পরিচালিত আদানী-আম্বানী মুৎসুদ্দি বুর্জোয়াদের সাথে দ্বন্দ্ব প্রকট হচ্ছে। যারা জাতীয় বুর্জোয়াদের সমস্ত শর্তাবলী বহন করে। যদিও এ বিষয় নিয়ে আমার আরো বিশদে যাচাই করে দেখার প্রয়োজন রয়েছে।
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২৬৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • হজবরল | 185.34.33.2 | ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১১:২৬514388
  • মার্ক্স বা চারুবাবুর সময় থেকে পুঁজির চরিত্র এখন পাল্টে গেচে। এই যে সম্পত্তির পরিমাণ দেখানো হচ্ছে, তা আসলে এদের পাবলিক শেয়ার মার্কেটে লিস্টেড কোম্পানির মার্কেট ক্যাপ, এদের ফাইল করা ইন্ডিভিজুয়াল ইনকাম ট্যাক্স রিটার্নের হিসেব নয় । এখন ম্যাংগো পাবলিক বা একজন শ্রমিকও টাটা বা আদানির কিছুটা শেয়ার কিনে এই পুঁজির অংশ হতে পারে। এই ব্যাপারটা নিয়ে আধুনিক মার্ক্সবাদীদের কোনও তত্ত্ব আচে?
  • Bhattacharjyo Debjit | ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১২:০০514389
  • আপনি যেটা বলছেন একদম ঠিক বলছেন, যদি তা বর্তমানের ধোঁয়াশা গ্রস্ত অর্থনীতি তে দেখি। এটিকে গোপন পুঁজি আতাত বলা হচ্ছে। এটি পুরোটা উৎপাদন যন্ত্রের পরিবর্তনের সাথে বাড়তে থাকা উৎপাদন সম্পর্কের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব গত কারণ গুলিতেই সৃষ্টি হয়েছে। চীনের ঝিনপি, এটিকেই আবার "crony" পুঁজিবাদ দেখাচ্ছে। মানে জুয়া খেলার মতন করে। এর উত্থান দেখাচ্ছে দেং এর আমল থেকে শুরু হচ্ছে চীনে। কিন্তু আমরা যদি এই পুঁজির ভিতে যাই তবে দেখতে পাবো, এই পুঁজি দাড়িয়ে আছে অনলাইন চেইন সংস্থা গুলির উপরে এবং ক্রিপ্টো তে। এবার আমরা যদি এর আসার কারণ খুঁজি তবে দেখব, পুঁজি ও শ্রমের বাড়তে থাকা দ্বন্দ্ব ই প্রধান কারণ এর। এই পুঁজির খুঁটিনাটি বদলিয়েছে বাট বেসিক প্রাইমারিলি যে পয়েন্ট - বৈশিষ্ট্য গুলি থাকে তা বদলায় নি। বর্তমানে এই পুঁজির টোটাল বিষয়টা "গিগ" পড়ছে।
    আর ভারতে এই পুঁজি টেক্কা খাবে না। কারণ অনুন্নত দেশ। উল্টে এই পুঁজির হাত করেই বাড়বে সাম্রাজ্যবাদী শোষণ প্রতি দিনে দিনে। এবং সর্বহারা শ্রেণী চরিত্রের অবক্ষয়। বেসিকালী এটা নিও লিবেরালিজমের ফান্ডায় পড়ছে। 
  • Amit | 110.174.140.201 | ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১২:২৫514391
  • যুক্তি গুলো ঠিক কি ? কর্পোরেট এর কোনো ব্যাঙ্কে ধার থাকাই উচিত নয় ? টাটা বা রিলায়েন্স বা মাহিন্দ্রা কি সবাই মালিয়ার মত লোন ডিফল্টার ? আর  কর্পোরেট লোন ছাড়া পুরো ব্যাঙ্কিং বিজনেস টা বা ফিক্সড ডিপোজিট এ সুদ দেওয়া সাস্টেইন কিভাবে করতে পারে তার কোনো মডেল আছে যেটা চলছে ? 
     
    এটাও আশা করি যারা এসব দাবি করেন তারা সবাই নিজেদের জমানো টাকা বড়ো ব্যাংকগুলো ফিক্সড না রেখে  সমবায় বা গ্রামীণ ব্যাঙ্কে রাখেন যেখানে এসব কর্পোরেট লোন হয়তো শুন্য ? 
  • S | 185.220.102.244 | ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১২:৫২514392
  • শেষ অ্যানুয়াল রিপোর্ট অনুযায়ী লার্সেন আর টুব্রোর লং টার্ম লোন আর শর্ট টার্ম লোন মিলে আছে ১ লক্ষ ২৩ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে কোম্পানির ক্যাশ ব্যালেন্স উনিশ হাজার কোটি, আর শর্ট টার্ম লোন আর অ্যাডভান্সেস আরো সাড়ে বিয়াল্লিশ হাজার কোটি টাকা। নেট কত লোন আছে সেটা না দেখলে এইসব সংখ্যার চমক অনেক, গুরুত্ব কম।

    যেমন শেষ অ্যানুয়াল রিপোর্ট অনুযায়ী মাইক্রোসফ্টএর মোট লোন ৬০-৬১ বিলিয়ন ডলারের মতন, মানে আজকের হিসাবে বোধয় প্রায় পাঁচ লাখ কোটি। কিন্তু ক্যাশ ব্যালেন্সই আছে ১০৪ বিলিয়ন ডলার। ফলে সুদ বাবদ নেট আয় করে। মানে লোনের জন্য কিছু সুদ দেয় বটে, কিন্তু তার থেকেও বেশি সুদ আয় করে ঐ বিশাল ক্যাশ ব্যালেন্স ব্যান্ক ডিপোজিট আর/বা শর্ট টার্ম ইনসট্রুমেন্টে বিনিয়োগ করে।

    তবে আম্বানী বা আদানী অন্য জিনিস। এই দুই কর্পোরেট হাউস ব্যান্ক খোলার লাইসেন্স পেলে সবদিক থেকে সমস্যা কয়েক্গুণ বাড়বে।
  • কর্পোরেট ঘেঁষা | 2402:3a80:1cd2:f259:378:5634:1232:5476 | ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১৩:২১514393
  • কর্পোরেট তো ধার করবেই। না করলে ব্যবসা চলবে কি করে? তার মানে এই নয় লুঠ করবে।এক ব্যাংক থেকে ধার করে অন্য ব্যাংক কে শোধ করে বৃহত পঞ্জি চালাবে।
    টাকার ( ইনভেস্টমেন্ট ) এর বড় অংশ বাজারে শেয়ার ছেড়ে তুলতে হবে। নিজের মেইন ইন্ডাস্ট্রি র শেয়ার এর বিরাট চান্ক  ব্যাংক গুলোতে ব ন্ধক  রাখতে হবে।যাতে ঋণ শোধ করতে না পারলে মূল বড় ইন্ডাস্ট্রি ব্যাংক কব্জা করতে পারে।
    একবার ডিফল্ট হলে ,ব্ল্যাক লিস্টে নাম উঠবে।যাতে ভবিষ্যতে ব্যবসায় না ঢুকতে পারে।
    এঁরা তো লোন শোধ না করে, ওই হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি পরে এন সি এল টী র মাধ্যমে জলের দরে বেনামে কিনে নিচ্ছে।
    ঘাপলা কি একটা মামা? 
    সাধারণ জনগন তো বড় ব্যাংকেই এফ ডি করবে। সরকারী ব্যাংক হলেই ভালো।সুদ তো সরকার বা ব্যাংক কতৃপক্ষ স্থির করে।সাধারণ জনতা করে না তো! তারা খামোখা সমবায় ব্যাংক বা চিট ফান্ডে রাখবে কেন? কি আজব যুক্তি আসছে সব।
     
  • হজবরল | 146.70.129.100 | ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১৩:২৪514394
  • পুঁজির বেসিক চরিত্র এক্সপেন্স মিনিমাইজ করে বিসনেস স্টেকহোল্ডার দের প্রফিট ম্যাক্সিমাইজ করা। সেটা করার সবথেকে সোজা উপায় সরকারকে আর পলিটিকাল পার্টিদের হাতে রেখে শ্রমিকদের এক্সপ্লয়েট করা। সেটা তো দেবজিৎবাবু আমি আপনার সঙ্গে একমত। কিন্তু এই যে লোকটা জিওতে চাকরি করে, সে যদি জিওর হাজারটা শেয়ার কেনে, সে একই সঙ্গে জিওর শ্রমিক এবং বিসনেস স্টেকহোল্ডার। জিও যদি ঠিক করে ওয়ার্কিং হাওয়ার আট ঘন্টা থেকে বাড়িয়ে দশ ঘন্টা করলে কোম্পানির প্রফিট বাড়বে , তাহলে লোকটা কি সেটা করতে রাজি হবে ? ধীরে ধীরে এই 'গোপন পুঁজি আতাত' জিনিসটাই কিন্তু আধুনিক পুঁজিবাদ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। প্রাইভেট স্টার্টআপে যোগ দিলেই সঙ্গে সঙ্গে তাকে ভেস্টেড শেয়ার দিয়ে দেওয়া হয়, যাতে তাকে একই সঙ্গে শ্রমিক এবং বিসনেস স্টেকহোল্ডার হিসেবে এক্সপ্লয়েট করা যায়। এটার tকাউন্টার করার জন্য নিও মার্ক্সিস্টরা তাহলে কিছু ভাবছেন না ?
     
    কর্পোরেট ঘেঁসা, লোন নিয়ে আমি কিছুই বলিনি। পাবলিক কোম্পানি ইচ্ছে করলেই আরো শেয়ার বাজারে ছেড়ে টাকা তুলতে পারে, সেটা না করে তারা লোন নিচ্ছে কারণ কন্ট্রোলিং ফ্যামিলিগুলো নিজেদের শেয়ার বিক্রি করে বোর্ড মিটিংয়ে ভেটো দেবার ক্ষমতা হারাতে চায় না। ব্যাংকে জনতা টাকা রাখলে ব্যাংক বড় বড় লোন তো দেবেই। এমনকি কর্পোরেট নিতে না চাইলেও হয়ত পায়ে ধরে দেবে যাতে তাদের নমিনি ওই কর্পোরেট বোর্ডে একটা সিট পায়। :-))
  • Bhattacharjyo Debjit | ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১৩:৫৪514395
  • না হচ্ছে না! এটা একটা ঘোরের মতন। কিছু সময় বস করে থাকে। বিশেষত ক্রাইসিসের সময়। এটি অবক্ষয়ের চরিত্র এই ব্যবস্থা ধসে পড়ার। ভারী উৎপাদন ছাড়া এগোবে পুঁজির গাড়ি। হুড়মুড়িয়ে ধসে পড়বে। যা এখনই পড়ছে। সেইটা শুধুই সময়ের অপেক্ষা কেবল। রিস্কস্কেল ইনভেসমেন্ট দিয়ে ঠেকনা হয়, ধনতন্ত্রের মার্কেট গড়ে উঠে না।
  • | 2402:8100:25c0:6c8e:949c:17d1:80e0:ea4a | ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১৪:১৬514398
  • লালু কত্তা একদম ফাটিয়ে দিয়েছেন। পুঁজিবাদ , সাম্রাজ্যবাদ সর্বহারা , সব মিলিয়ে একদম পম পম লেখা .  এর মধ্যে একটু ​​​​​​​নারীবাদ ​​​​​​মেশালে ​​​​​​​আরো ​​​​​​​চম চম ​​​​​​​হতো. 
     
  • sm | 2402:3a80:1cd2:f259:378:5634:1232:5476 | ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১৪:২৪514399
  • তার মানে হজবরল এর যুক্তি অনুযায়ী, সাধারণ মানুষ তার জীবনের সঞ্চয় ব্যাংকে ডিপোজিট করে পাপ সঞ্চয় করেছে।তাই ব্যাংক সাধারণ মানুষ, ছোট ব্যবসায়ী দের লোন না দিয়ে গোটা কয়েক কর্পোরেট কে হতে পায়ে ধরে লোন দেবে।
    প্রত্যেক বছর ব্যাংক সেই লোনের কয়েক লাখ কোটি টাকা ওয়েভ করে দেবে।ম্যানেজমেন্ট এর কতকগুলো শিক্ষিত চার অক্ষরের বোকা হাত তালি দেবে! বলবে ইহাই সহি ক্যাপিটালিস্ট মডেল!
    এই যুক্তি তো পাড়ার চায়ের দোকানে ও চলে না!
  • হজবরল | 185.243.218.78 | ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১৫:২৪514400
  • সাধারণ মানুষ কথাটা কনফিউজিং। ভারতের নিম্নবিত্ত মানুষেরা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে জমি, গয়না এসব কেনে বা সঞ্চয় বলে বিশেষ কিছু রাখেই না। তারা ব্যাংকে ডিপোজিট করে না, পনজি স্কিমে রাখে। ব্যাংকে ডিপোজিট করে মূলত মধ্যবিত্তরা। ইনফ্লেশন না থাকলে যারা সবাই আগেকার মত সিন্দুকেই টাকা রাখত। 
     
    ব্যাংক একটা ইন্টারমিডিয়ারি মাত্র, তার আমানতকারীকে টাকা ফেরতের দায় থাকার কথা না, শুধু আর বি আই আছে বলে ব্যাংক সামনা সামনি না করে লুকিয়ে এসব করে যাচ্ছে। ব্যাংক এত লোন দেবার সময় সিকিউরিটি ডিপোজিট হিসেবে ঠিক কি দেখছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন তো করাই উচিত। হয়ত ব্যাংক ভাবছে এগুলো টু বিগ টু ফেল।
  • ঘাপলা | 2402:3a80:1cd2:f259:378:5634:1232:5476 | ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ ২৩:৪৩514405
  • সাধারণ মানুষ ই ফিক্সড ডিপোজিট রাখে ।
     
    More than half of our country's household savings are in bank deposits. According to the RBI Bulletin, 53% of a household savings are kept in a bank deposits. A fixed deposit has historically been the most attractive investment option in our country
     
    সুতরাং ভেবে বক্তব্য রাখা ভালো।
    ইন্ডিয়ার  বড় ব্যাংক গুলো অধিকাংশ সরকারি বা সরকার তাদের মেজর স্টেক হোল্ডার।
    সুতরাং আমানত কারির সুরক্ষা ও সাধারণ মানুষ ও ছোট ব্যবসায়ী কে লোন দেওয়া ব্যাংক গুলোর কর্তব্য।
    ব্যাংক গুলো তো বহু লক্ষ কোটি টাকার এন পি এ  র সঙ্গে  বহু বছর সহবাস করছে। এর বড় অংশ মাত্র কয়েক জন বড় শিল্প পতি নিয়েছে।অনেকেই উইলফুল ডিফলটার।
    অন্য দিকে এমন কিছু শিল্প পতি আছেন যাঁরা মূল লোন হয়তো অলরেডি শোধ দিয়ে ফেলেছেন কিন্তু সুদের কিছু বাকি আছে ( খারাপ পরিস্থিতি হেতু) তাঁদের কেও ব্যাংক কেস ফেস দিয়ে প্রচুর হেনস্থায় ফেলেছেে।
    সুতরাং ঘাপলা কি একটু খানি মামা!


     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন