এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  ইতিহাস

  • ধর্মাধর্ম - চতুর্থ পর্ব - অষ্টম ও শেষ ভাগ 

    Kishore Ghosal লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | ইতিহাস | ১২ আগস্ট ২০২২ | ৯৩৯ বার পঠিত | রেটিং ৪.৭ (৩ জন)
  • চতুর্থ পর্ব - থেকে ১৩০০ সি.ই. – অষ্টম ও শেষ ভাগ

    ৪.৮.১ কাঞ্চীর পল্লব
    পল্লবদের উৎস নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিস্তর মতভেদ আছে। অনেকে বলেন, তাঁরা আদিতে পহ্লব অর্থাৎ পার্থিয়ান, দক্ষিণ ভারতে এসে পল্লব হয়ে গিয়েছিলেন। পৌরাণিক কথায় শোনা যায়, তাঁরা দ্রোণাচার্য এবং অশ্বত্থামার বংশধর –অর্থাৎ ব্রাহ্মণ-যোদ্ধা। অনেকে বলেন তাঁরা দক্ষিণ ভারতের দেশীয় গোষ্ঠী। তবে তাঁরা যে উত্তরভারত থেকেই দক্ষিণে গিয়েছিলেন, তার কিছু যুক্তি আছে, যেমন, পল্লবদের প্রাচীন রাজভাষা ছিল প্রাকৃত এবং পল্লবরা শুরু থেকেই সংস্কৃতের পৃষ্ঠপোষক। এর আগে কদম্ববংশের প্রতিষ্ঠাতা ময়ূরশর্মার লিপি থেকে আমরা জেনেছি, “পল্লবক্ষত্রিয়”, অতএব পল্লবরা উত্তরভারতের ক্ষত্রিয় এমন অনুমান হয়তো করা যায়।
     
    খ্রীষ্টিয় তৃতীয় এবং চতুর্থ শতাব্দীতে কিছু প্রাকৃত লিপি থেকে পল্লবদের প্রথম ইতিহাস জানা যায়। এই লিপিতে বেশ কয়েকজন রাজার নাম পাওয়া যায়, যেমন বপ্পদেব, শিবস্কন্দবর্মন, বুদ্ধি (বা অঙ্কুর) এবং বীরবর্মন। রাজা বপ্পদেব পল্লব বংশের প্রতিষ্ঠাতা কিনা সঠিক জানা না গেলেও, তিনিই এই রাজবংশকে দক্ষিণে শক্তিশালী করে তুলেছিলেন। তাঁর সময়ে তেলুগুর “অন্ধ্রপথ” এবং তামিলদের “তোণ্ডামণ্ডলম”- তাঁর রাজ্যের দুই প্রধান অঞ্চল ছিল এবং এই দুই অঞ্চলে তাঁর প্রশাসনিক কার্যালয় ছিল ধ্যানকটা (ধরণীকোট্টা, অমরাবতীর কাছে) এবং কাঞ্চী (কাঞ্জিভরম)। তাঁর পুত্র শিবস্কন্দবর্মন এই রাজত্ব হয়তো আরো দক্ষিণে বিস্তৃত করতে পেরেছিলেন, নচেৎ তিনি অশ্বমেধ, বাজপেয় এবং অগ্নিষ্টোম যজ্ঞের আয়োজন করতে পারতেন না। আরেকজন পল্লব রাজার নাম পাওয়া যায় সমুদ্রগুপ্তের এলাহাবাদ লিপিতে, কাঞ্চীর রাজা বিষ্ণুগোপ। দাক্ষিণাত্য অভিযানে সমুদ্রগুপ্তের সঙ্গে এই রাজার যুদ্ধ হয়ে থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে রাজা বিষ্ণুগোপের সময় কাল চতুর্থ শতাব্দীর মাঝামঝি কোন সময়ে। অতএব পল্লবদের শক্তিশালী হয়ে ওঠার পর্ব সাতবাহন সাম্রাজ্যের পতনের সময় থেকে একথা সহজেই অনুমান করা যায়।

    গুপ্ত সাম্রাজ্যের দুর্বলতার সময়ে পল্লবদের দ্রুত উত্থান শুরু হয়েছিল, মোটামুটি ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষ দুই দশকে। এই সময় থেকেই পল্লবরা দক্ষিণভারতের অন্যতম প্রধান শক্তি হয়ে উঠেছিলেন।

    রাজা সিংহবিষ্ণুঃ পল্লবদের এই পর্যায়ে রাজা সিংহবিষ্ণু চোলদের পরাস্ত করে, কাবেরি নদী পর্যন্ত এবং তারপরেও আরও দক্ষিণে পাণ্ড্য, কালাভ্র এবং আরও কিছু অঞ্চল অধিকার করে নিয়েছিলেন।

    রাজা প্রথম মহেন্দ্রবর্মনঃ সপ্তম শতাব্দীর শুরুতে পিতা সিংহবিষ্ণুর মৃত্যুর পর রাজা হয়েছিলেন। তাঁর সময় থেকেই পল্লব এবং চালুক্যদের মধ্যে নিরন্তর বিবাদ শুরু হয়েছিল, দুজনেরই উদ্দেশ্য ছিল দক্ষিণ ভারতে অবিসম্বাদিত প্রতিপত্তি স্থাপনা। এই সময়ের উভয় পক্ষীয় শিলালিপিতেই অন্যপক্ষকে পরাজিত করার বিবরণ বারবার লেখা হয়েছে। রাজা মহেন্দ্রবর্মন প্রথম দিকে জৈন ছিলেন, কিন্তু পরবর্তী কালে স্বামী আপ্পার প্রভাবে শৈব হয়েছিলেন। তাঁর সময়েই পাহাড় কেটে প্রচুর মন্দির নির্মাণ হয়েছিল। তিনি নিজে “মত্তবিলাস-প্রহসন” নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন, যার কথা আগেই বলেছি।
     
    প্রথম নরসিংহবর্মনঃ প্রথম মহেন্দ্রবর্মনের পুত্র, পিতার মৃত্যুর পর রাজা হয়েছিলেন, সপ্তম শতাব্দীর তৃতীয় দশকের কোন সময়ে। ভীষণ শক্তিশালী এবং সাহসী এই রাজা চালুক্যদের ভয়ংকর আক্রমণ করেছিলেন, এবং ৬৪২ সি.ই.-র যুদ্ধে তিনি চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলকেশীকে পরাজিত এবং হত্যা করেছিলেন। তাঁর সময়ে তিনি দুবার নৌ-অভিযান করে সিংহলও আক্রমণ করেছিলেন। নরসিংহবর্মন শুধু যুদ্ধ নয়, মন্দির স্থাপত্যেও অনবদ্য নিদর্শন রেখে গেছেন, তাঁর পিতার মতো তিনিও পাহাড় কেটে অনেকগুলি মন্দির নির্মাণ করিয়েছিলেন, যার মধ্যে মহাবলিপুরম বা মামল্লপুরম সব থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। নরসিংহবর্মনের রাজত্বকালেই চীনের বৌদ্ধ পর্যটক হুয়ান সাং কাঞ্চী গিয়েছিলেন এবং বেশ কিছুদিন ছিলেন। তাঁর বর্ণনা থেকে জানা যায় কাঞ্চী শহরে প্রায় শতাধিক সংঘারাম ছিল এবং সেখানে প্রায় দশ হাজার মহাযানী সন্ন্যাসী বিদ্যাচর্চা করতেন। শহরে প্রায় আশিটি দেবমন্দির দেখেছিলেন এবং শহরে অনেক নির্গ্রন্থ (জৈন) সন্ন্যাসীও বাস করতেন।
     
    প্রথম পরমেশ্বরবর্মনঃ মোটামুটি ৬৫৫ সি.ই.-তে পিতার মৃত্যুর পর সিংহাসনে বসেছিলেন। চালুক্যদের সঙ্গে যুদ্ধ করা ছাড়া তাঁর তেমন কোন কীর্তির কথা জানা যায় না।
     
    দ্বিতীয় নরসিংহবর্মনঃ সপ্তম শতাব্দীর শেষ দশকে তিনি পিতার সিংহাসনে বসেন। তাঁর রাজত্বকাল শান্তি এবং সমৃদ্ধির জন্যে বিখ্যাত। তিনি অনেকগুলি বিখ্যাত মন্দির, যেমন রাজ সিংহেশ্বর এবং কাঞ্চীর “ঐরাবতেশ্বর” মন্দির নির্মাণ করিয়েছিলেন। মামল্লপুরমের সমুদ্রতট মন্দিরে তাঁরও অবদানের কথা শোনা যায়। দ্বিতীয় নরসিংহবর্মন বিদ্যোৎসাহী রাজা ছিলেন, তাঁর সভার অলংকার ছিলেন দণ্ডিন, যাঁর কথা আগেই বলেছি। তাঁর পুত্র দ্বিতীয় পরমেশ্বরবর্মন সম্বন্ধে উল্লেখযোগ্য কোন তথ্য পাওয়া যায় না।

    দ্বিতীয় পরমেশ্বরবর্মনের মৃত্যু হয়েছিল মোটামুটি অষ্টম শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে। তাঁর মৃত্যুর পর রাজ পরিবারের মধ্যেই তীব্র বিবাদ এবং কলহ উপস্থিত হয়েছিল। শোনা যায় বেশ কিছুদিন বিশৃঙ্খলার পর, জনগণের বিপুল সমর্থনে রাজা হয়েছিলেন, নন্দিবর্মন। তাঁর পিতা হিরণ্যবর্মন ছিলেন, সিংহবিষ্ণুর ভাইয়ের বংশধর। নন্দিবর্মনের রাজত্বকালের শুরুতেই চালুক্যরা আবার পল্লব রাজ্য আক্রমণ করেছিলেন, যদিও নন্দিবর্মন তাঁদের প্রতিহত করে, পল্লব রাজ্য সুরক্ষিত রাখতে পেরেছিলেন। নন্দিবর্মন প্রায় পঁয়ষট্টি বছর রাজত্ব করেছিলেন। তিনি বৈষ্ণব ছিলেন এবং বেশ কয়েকটি মন্দির নির্মাণ করিয়েছিলেন। নন্দিবর্মণের পর রাজা হয়েছিলেন দন্তিবর্মন। শোনা যায় তিনি রাষ্ট্রকূট রাজকন্যা রেবার পুত্র। এই রাজকুমারী রেবা ছিলেন দন্তিদুর্গার কন্যা। কিন্তু এই বৈবাহিক সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও চালুক্যরাজ তৃতীয় গোবিন্দ ৮০৪ সি.ই.-তে কাঞ্চী আক্রমণ করেছিলেন এবং দন্তিবর্মনকে পরাজিত করেছিলেন। দন্তিবর্মনের (৭৭৬-৮২৮সি.ই.) রাজত্বকালে পাণ্ড্যদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছিল। তাঁর পরবর্তী রাজারা হলেন নন্দি (৮২৮-৫১ সি.ই.), নৃপতুঙ্গবর্মন (৮৫১-৭৬ সি.ই.) এবং অপরাজিতবর্মন (৮৭৬-৯৫ সি.ই.)। তাঁর সময়েই চোলরাজা প্রথম আদিত্য পল্লবরাজ্যে চরম আঘাত হানেন এবং পল্লবদের রাজ্যচ্যুত করেছিলেন। এরপর দাক্ষিণাত্যের ইতিহাস থেকে পল্লবদের যুগ সমাপ্ত হল।

    ৪.৮.২ চোল বা চোড়
    তামিল চোল শব্দের অর্থ “ভবঘুরে”, অনেকে বলেন, সংস্কৃত “চোর” থেকে চোড় শব্দের সৃষ্টি, অথবা দক্ষিণ ভারতের “কোল” নামে প্রাক-আর্য জনগোষ্ঠীরাই চোল। যাই হোক না কেন, চোলরা ছিলেন দক্ষিণ ভারতেরই প্রাচীন জনগোষ্ঠীর মানুষ। যদিও পরবর্তীকালে তাঁরা নিজেদের পৌরাণিক সূর্যবংশীয় বলে পরিচয় দিয়েছেন।

    প্রাচীন চোল-মণ্ডলম বলতে পেন্নার এবং ভেল্লারু (ভেল্লার) এই দুই নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলকে বোঝায়, অর্থাৎ আজকের তাঞ্জোর, ত্রিচিনোপল্লি এবং পাণ্ডুকোট্ট রাজ্যের কিছুটা। এই সীমানা অবশ্য চোল রাজাদের ক্ষমতা ও শক্তি অনুযায়ী কখনো বেড়েছে, কখনো কমেছে।

    চোল বা চোড়দের নাম প্রথম শোনা যায় চতুর্থ শতাব্দী বি.সি.ই-র বৈয়াকরণ কাত্যায়নের পাণিনি-ভাষ্যে। এঁদের নাম মহাভারতে এবং সম্রাট অশোকের শিলা নির্দেশেও পাওয়া যায়। তিনি মৌর্য সাম্রাজ্যের সীমানার বাইরে বন্ধু রাজ্য হিসেবে চোল বা চোড়দের নাম উল্লেখ করেছিলেন। এরপর সিংহলের বৌদ্ধ গ্রন্থ “মহাবংশ” থেকে জানা যায়, দ্বিতীয় শতাব্দী বি.সি.ই-র মাঝামাঝি কোন সময়ে জনৈক চোল রাজা ইলার সিংহল দ্বীপ জয় করেন এবং দীর্ঘদিন রাজত্ব করেন। এরপর তামিল সাহিত্য গ্রন্থ “সঙ্গম”- থেকে জানা যায়, খ্রীষ্টিয় কয়েক শতাব্দী ধরে বেশ কয়েকজন মহিমান্বিত চোল রাজার কথা, যাঁরা সুবিচার এবং দানের জন্যে বিখ্যাত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন, ইলাঞ্জেটচেন্নির পুত্র করিকাল। তাঁর সময়েই নাকি চোল রাজ্যের বিস্তার এবং প্রভাব বৃদ্ধি ঘটেছিল। তিনি পাণ্ড্য ও চেরা রাজাদের এবং বেশ কিছু আঞ্চলিক গোষ্ঠী-প্রধানদের পরাস্ত করে চোলরাজ্য সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। এরপর যে রাজার নাম পাওয়া যায়, তিনি হলেন পেরুনারকিল্লি, তিনি রাজসূয় যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন এবং রাজা করিকালের মতোই অনেক কীর্তি স্থাপনা করেছিলেন। কিন্তু তৃতীয় এবং চতুর্থ শতাব্দী সি.ই.-তে চোলরাজ্য কিছুটা ম্লান হয়ে পড়ে, পল্লব, পাণ্ড্য এবং চেরদের ক্রমাগত আক্রমণে।

    চোল বংশের নতুন রাজত্বের শুরু করেছিলেন রাজা বিজয়ালয়। যদিও তাঁর সঙ্গে প্রাচীন চোলদের সম্পর্কের সঠিক সন্ধানসূত্র পাওয়া যায় না। ৮৫০ সি.ই.-র কাছাকাছি কোন সময়ে তিনি পল্লবদের সামন্তরাজা হয়ে রাজত্ব শুরু করেছিলেন। শোনা যায় তিনি তাঞ্জাভুর বা তাঞ্জোর অবরোধ করে, পাণ্ড্য রাজার সামন্তরাজা মুত্থারাইয়ার প্রধানকে পরাজিত করেন।

    প্রথম আদিত্যঃ রাজা বিজয়ালয়ের পর তাঁর পুত্র প্রথম আদিত্য ৮৭৫ সি.ই.-তে রাজা হয়েছিলেন। তিনি পরাক্রমশালী রাজা ছিলেন, এবং পল্লবরাজ অপরাজিত বর্মনকে পরাজিত করে, তোণ্ডামণ্ডলম অধিকার করে নিয়েছিলেন ৮৯০ সি.ই.-তে। তারপর পশ্চিমা-গঙ্গদের রাজধানী তালকড়ও নাকি অধিকার করে নিয়েছিলেন। তিনি শৈব ছিলেন, বেশ কিছু শিব মন্দির নির্মাণ করিয়েছিলেন।

    প্রথম পরান্তকঃ প্রথম আদিত্যের পুত্র প্রথম পরান্তক যখন রাজা হলেন, তখন চোল রাজ্যের সীমানা বিশাল – পূর্বের কলহস্তী এবং উত্তরের মাদ্রাজ (চেন্নাই), দক্ষিণে কাবেরী পর্যন্ত। তাঁর ৯০৭-৫৩ সি.ই.-র রাজত্বকালে এই সীমা তিনি আরও বাড়িয়েছিলেন। প্রথমে তিনি অধিকার করলেন পাণ্ড্য রাজা জয়সিংহের রাজ্য, যার জন্যে জয়সিংহকে সিংহলে পালাতে হয়েছিল। এই জয়ের পর তিনি “মাদুরাইকোণ্ডা” উপাধি নিয়েছিলেন। এরপর তিনি পল্লবরাজাদের সরিয়ে নেল্লোর পর্যন্ত পল্লব রাজ্য অধিকার করে নিলেন। অবশ্য তাঁর সিংহল বিজয়ের প্রচেষ্টা সফল হয়নি এবং পরবর্তীকালে রাষ্ট্রকূট রাজা তৃতীয় কৃষ্ণ তাঞ্জোর এবং কাঞ্চী অবরোধ করে ফেলেছিলেন। রাষ্ট্রকূটদের সঙ্গে যুদ্ধে প্রথম পরান্তকের জ্যেষ্ঠ পুত্র মারা গিয়েছিলেন, এবং শোনা যায় তৃতীয় কৃষ্ণ বিনা বাধায় রামেশ্বরম পর্যন্ত বিজয় অভিযান করেছিলেন। এই সময় চোলরাজ্য ভয়ংকর বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছিল এবং এখান থেকে উদ্ধার পেতে তাঁদের বহুদিন অপেক্ষা করতে হয়েছিল। প্রথম পরান্তকও শৈব ছিলেন, তিনিও তাঁর পিতার মতো অনেক মন্দির প্রতিষ্ঠা করিয়েছিলেন। তাঁর সময়েই চিদাম্বরমের শিব মন্দিরের গর্ভগৃহ সোনায় মুড়ে দেওয়া হয়েছিল।

    ৯৫৩ সি.ই.-তে পরান্তকের মৃত্যুর পর বেশ কিছুদিন চোলদের খুব স্পষ্ট কোন ইতিহাস পাওয়া যায় না। শোনা যায় তাঁর দুই পুত্র গণ্ডারাদিত্য এবং অরিঞ্জয় রাজা হয়েছিলেন। তারপরে অরিঞ্জয়ের পুত্র সুন্দরচোল এবং তাঁর পুত্র দ্বিতীয় আদিত্য করিকাল এবং উত্তমচোল রাজা হয়েছিলেন। এঁরা সকলেই দুর্বল রাজা ছিলেন, এবং চোল রাজত্বে উল্লেখযোগ্য কোন প্রভাব ফেলতে পারেননি।
     
    প্রথম-রাজরাজঃ(৯৮৫-১০১৪ সি.ই.)- সুন্দরচোলের পুত্র প্রথম-রাজরাজ রাজা হওয়ার পর চোলরাজ্যের আবার গৌরবময় পর্যায়ের সূচনা হয়েছিল। তিনি যখন রাজা হলেন, তখন চোল রাজ্যের বিশৃঙ্খল অবস্থা। কিন্তু তাঁর পরাক্রম, বুদ্ধি এবং রণদক্ষতা চোলরাজ্যকে দাক্ষিণাত্যের প্রধান রাজবংশ করে তুলেছিল। প্রথমেই তিনি চেরদের রাজ্য জয় করলেন, চের রাজ্যের কান্ডালুর ধ্বংস করলেন। এরপর জয় করলেন মাদুরা, সেখানকার পাণ্ড্য রাজা অমরভুজঙ্গকে বন্দী করলেন। এরপর জয় করলেন কোল্লাম এবং পশ্চিমঘাট পর্বতের দুর্গ শহর উদাগাই (উটি) এবং মালাইনাড়ু (কুর্গ)। এরপর তিনি উত্তর সিংহল জয় করে, ওই অঞ্চলের নাম রাখলেন, মুম্মদি চোলামণ্ডলম। এরপর তিনি গঙ্গবাড়ি এবং নোলাম্বাপাড়ি জয় করে মহীশূরের অধিকাংশ নিজের আয়ত্ত্বে আনলেন। রাজরাজের এই পরাক্রম স্বাভাবিকভাবেই চালুক্যরা ভাল চোখে দেখেননি, অতএব চালুক্যদের সঙ্গেও যুদ্ধ শুরু হল। তবে চালুক্য রাজ তৈলপের ৯৯২ সি.ই.-র লিপি থেকে জানা যায়, তিনি চোলদের গর্ব খর্ব করে দিয়েছিলেন। যদিচ তৈলপের পুত্র সত্যাশ্রয় (৯৯৭-১০০৮ সি.ই.) যখন রাজা ছিলেন, তখন চোলরা রাজরাত্তপাড়ি অধিকার করে চালুক্য রাজ্যের ভয়ংকর ক্ষতি করেছিলেন।

    এরপর তিনি প্রাচ্য চালুক্যদের রাজ্য ভেঙ্গি অধিকার করেছিলেন, কিন্তু প্রাচ্য চালুক্যদের রাজা বিমলাদিত্য রাজরাজের বশ্যতা আদায় করেছিলেন। এই বশ্যতার পরিবর্তে রাজা বিমলাদিত্যকে, রাজরাজ তাঁর কন্যা, কুণ্ডাবাইকে দান করেছিলেন। এরপরেও তিনি কলিঙ্গ এবং লাক্ষাদ্বীপ ও মালদিভস জয় করেছিলেন। এভাবেই রাজরাজ সমগ্র তামিলনাড়ু, মহীশূরের অধিকাংশ অঞ্চল, কলিঙ্গ, সিংহল এবং অন্যান্য দ্বীপপুঞ্জ জয় করে, একক প্রচেষ্টায় চোল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছিলেন।

    প্রথম রাজরাজের কৃতিত্ব শুধু মাত্র রাজ্য জয়েই নয়, তিনি বেশ কিছু বিস্ময়কর মন্দির নির্মাণ করিয়েছিলেন, যা আজও আমাদের কাছে পরম গৌরবের বিষয়। যেমন তাঞ্জোরের শিবমন্দির, নিজের নামেই তিনি এই মন্দিরের নামকরণ করেছিলেন, “রাজরাজেশ্বর”।  শিব মন্দির ছাড়াও তিনি বিষ্ণু মন্দিরও নির্মাণ করিয়েছিলেন। বৌদ্ধ সঙ্ঘের জন্যে নেগাপতনমে একটি গ্রাম দান করেছিলেন। এই বিহারের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্মাতা ছিলেন সাগরপাড়ের মালয়-উপদ্বীপের রাজা শৈলেন্দ্র এবং বৌদ্ধ সন্ন্যাসী শ্রীমার-বিজয়তুঙ্গবর্মন।

    প্রথম-রাজেন্দ্র গঙ্গাইকোন্ডাঃ (১০১৪-৪৪ সি.ই.) - পিতার আসনে বসে প্রথম-রাজেন্দ্র, পিতার মতোই যোগ্যতা দেখিয়েছিলেন। তিনি পিতার প্রতিষ্ঠা করা সাম্রাজ্য অক্ষুণ্ণ তো রেখেছিলেনই, উপরন্তু জয় করেছিলেন, ইডিতুড়াইনারু (রায়চূর জেলা), বনবাসী (উত্তর কানারা), কোলিপ্পাক্কাই (কুলপক), মন্নাইক্কড়ক্কম (সম্ভবতঃ মান্যখেট)। এরপর তিনি জয় করেছিলেন সমগ্র সিংহল, যার উত্তর অংশ জয় করেছিলেন, তাঁর পিতা প্রথম রাজরাজ। এরপর তিনি পাণ্ড্য এবং কেরালাও অধিকার করে নিয়েছিলেন এবং সেখানে তাঁর পুত্র জাতবর্মনসুন্দরকে প্রশাসনিক প্রধান পদে বসিয়ে, ওই অঞ্চলের নাম দিয়েছিলেন, “চোল-পাণ্ড্য”। এরপর প্রথম-রাজেন্দ্র উত্তরের দিকে বিজয় অভিযানে মন দিলেন। একে একে তিনি জয় করলেন, ওড্ড-বিষয় (ওড্র-উড়িষ্যা), কোশলাইনাড়ু (দক্ষিণ কোশল), দন্তভুক্তির (দাঁতন- মেদিনীপুর) ধর্মপাল, তক্কন-লাঢ়মের (দক্ষিণ রাঢ়) রণশূর, বাংলাদেশের (পূর্ববঙ্গ) গোবিন্দচন্দ্র, মহীপাল, উত্তির-লাঢ়ম (উত্তর রাঢ়)। এই বিজয় অভিযানের সময়কাল মোটামুটি ১০২১ থেকে ১০২৫ সি.ই.।

    প্রথম-রাজেন্দ্রর এই বিজয় অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল ক্ষমতা প্রদর্শন, রাজ্য অধিকার করা নয়। অতএব তাঁর এই বিজয় অভিযানে কোন স্থায়ী ফল হল না, শুধু বঙ্গে কয়েকজন কর্ণাটকী সেনা প্রধান রয়ে গেলেন, পরবর্তীকালে যাঁরা সম্ভবতঃ সেনবংশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আর ফেরার পথে তিনি নিজের দেশে কয়েকজন শৈব পণ্ডিত বা সন্ন্যাসীকে নিয়ে গেলেন গঙ্গা পাড়ের কোন রাজ্য থেকে।

    প্রথম-রাজেন্দ্র নতুন রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যার নাম “গঙ্গাইকোণ্ডাচোলাপুরম” (আধুনিক গঙ্গাকুণ্ডপুরম)। এই রাজধানীতে তিনি দুর্ধর্ষ রাজপ্রাসাদ এবং মন্দির, সরোবর, স্থাপত্য নির্মাণ করিয়েছিলেন, কিন্তু কালের নির্মম নিয়মে সে সবই এখন ধ্বংসস্তূপ।

    প্রথম রাজাধিরাজঃ (১০৪৪-৫২ সি.ই.) -প্রথম-রাজেন্দ্রর পুত্র প্রথম রাজাধিরাজ ১০৪৪ সি.ই.তে সিংহাসনে বসলেও, তিনি যুবরাজ হয়ে পিতার প্রশাসনে সহায়তা করেছে ১০১৮ সি.ই. থেকে। পিতার বহু অভিযানেই তিনি সফল সঙ্গী ছিলেন। কিন্তু চালুক্যরাজ প্রথম-সোমেশ্বর আহবমল্লের সঙ্গে যুদ্ধে ১০৫২ সি.ই.তে কোপ্পমের রণক্ষেত্রে তিনি প্রাণ হারান।

    দ্বিতীয় রাজেন্দ্র দেবঃ (১০৫২-৬৩ সি.ই.) –চালুক্যদের সঙ্গে নিরন্তর যুদ্ধ করেছেন, কিন্তু চোল সাম্রাজ্যের সীমা অক্ষুণ্ণ রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।

    বীর রাজেন্দ্রঃ (১০৬৩-৭০ সি.ই.) - দ্বিতীয় রাজেন্দ্রর পর রাজা হলেন, তাঁর ভাই বীর রাজেন্দ্র। তাঁর সময়ে চালুক্য ছাড়াও অন্যান্য রাজ্যের রাজাদের আক্রমণ ও বিদ্রোহ দমনেই তাঁর রাজত্বকাল শেষ হয়েছিল। যদিও তিনি তাঁর কন্যার সঙ্গে চালুক্য রাজকুমারের সঙ্গে বিবাহ দিয়ে, চালুক্যদের সঙ্গে মৈত্রী স্থাপনের চেষ্টা করেছিলেন।
    প্রথম-কুলোত্তুঙ্গঃ (১০৭০-১১২২ সি.ই.) – বীর রাজেন্দ্রর পর তাঁর পুত্র অধিরাজেন্দ্র কিছুদিনের জন্য রাজা হয়েছিলেন, কিন্তু তিনি সিংহাসন অধিকারে রাখতে পারেননি বা অকাল মৃত্যু হয়েছিল। তাঁর পরে রাজা হয়েছিলেন প্রথম কুলোত্তুঙ্গ। চোলরাজ প্রথম-রাজরাজের কন্যা কুণ্ডাবাইয়ের সঙ্গে ভেঙ্গির চালুক্য রাজ বিমলাদিত্যের বিবাহ হয়েছিল। তাঁদের পুত্র রাজরাজ বিষ্ণুবর্ধনের সঙ্গে বিবাহ হয়েছিল চোলরাজা প্রথম-রাজেন্দ্রর কন্যা অম্মাঙ্গ দেবীর। তাঁদের পুত্রের নাম দ্বিতীয়-রাজেন্দ্র চালুক্য ওরফে প্রথম-কুলোত্তুঙ্গ। প্রথম-কুলোত্তুঙ্গ আবার বিবাহ করেছিলেন, চোলরাজ দ্বিতীয়-রাজেন্দ্রদেবের কন্যা মধুরান্তকীকে। অতএব অনুমান করা যায়, যেহেতু এই সময়ে চোল রাজপরিবারে সিংহাসনে বসার মতো যোগ্য কোন উত্তরাধিকারী পাওয়া যায়নি এবং যেহেতু তাঁর ধমনীতে চালুক্যদের থেকে চোল রক্তের পরিমাণ বেশি ছিল, সেহেতু প্রথম-কুলোত্তুঙ্গ চোল রাজ্যের সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন। সে যাই হোক, প্রথম-কুলোত্তুঙ্গ চোল সাম্রাজ্যের বিস্তার মোটামুটি অক্ষুণ্ণ রাখতে পেরেছিলেন। যদিও হোয়সল, পরমার, প্রাচ্য-গঙ্গ, পশ্চিমা-চালুক্যদের সঙ্গে যুদ্ধ বিবাদ লেগেই ছিল।

    প্রথম-কুলোত্তুঙ্গ ধর্মীয় এবং সাহিত্য বিষয়ে উৎসাহী ছিলেন। তিনি শৈব ছিলেন, কিন্তু বৌদ্ধ বিহারের জন্যেও অনেক দান করেছিলেন। কিন্তু যে কোন কারণেই হোক তিনি বৈষ্ণব আচার্য রামানুজমের ওপর বিরক্ত হয়ে, তাঁকে শ্রীরঙ্গম (ত্রিচিনোপল্লি) ছাড়তে বাধ্য করেন।  আচার্য রামানুজমকে হোয়সল রাজ বিত্তিগবিষ্ণুবর্ধনের মহীশূর রাজ্যে নিরাপদ আশ্রয় নিতে হয়েছিল। তিনি জয়গোণ্ডন, যিনি “কলিঙ্গত্তুপ্পারনি”-র রচয়িতা এবং আদিয়ারক্কুনাল্লারের, যিনি “শিলপ্পধিকারম”-গ্রন্থের রচয়িতা, পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।
     
    পরবর্তী চোলরাজা
    প্রথম-কুলোত্তুঙ্গর মৃত্যুর পর রাজা হয়েছিলেন তাঁর পুত্র বিক্রম চোল (১১২২-৩৩ সি.ই.)। তিনি বৈষ্ণব ছিলেন এবং তাঁর সময়ে আচার্য রামানুজম আবার চোলরাজ্যের শ্রীরঙ্গমে ফিরে এসেছিলেন। তাঁর পরে রাজা হয়েছিলেন দ্বিতীয়-কুলোত্তুঙ্গ (১১৩৩-৪৭ সি.ই.), দ্বিতীয়-রাজরাজ (১১৪৭-৬২ সি.ই.) এবং দ্বিতীয়-রাজাধিরাজ (১১৬২-৭৮ সি.ই.)। এঁরা সকলেই দুর্বল রাজা ছিলেন এবং এঁদের সময়ে চোল সাম্রাজ্য তার গৌরব দ্রুত হারাতে থাকে। হোয়সল, সিংহল, কেরালা সকলেই চোল সাম্রাজ্য থেকে নিজেদের স্বাধীন করে ফেলেছিলেন। তারপরে তৃতীয়-কুলোত্তুঙ্গ (১১৭৮-১২১৬ সি.ই.) দীর্ঘদিন রাজত্ব করলেও, অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন করতে পারেননি। এই সময় থেকেই পাণ্ড্য রাজাদের আধিপত্যে চোলরাজ্যের মূল সীমানাও খণ্ডিত হতে থাকে। মোটামুটি ১২৬৭ সি.ই.তে দক্ষিণ ভারতের রাজনীতিতে চোলরাজ্য তার অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছিল।

    ৪.৮.৩ মাদুরার পাণ্ড্য
    পাণ্ড্যদের উৎপত্তি নিয়েও কাহিনী ও বিতর্কের শেষ নেই। পৌরাণিক মতে তাঁরা কোরকাইয়ের তিনভাইয়ের বংশধর, যাঁদের থেকে পাণ্ড্য, চোল এবং চেরা বংশের উৎপত্তি। আবার আরেকটি মতে তাঁরা মহাভারতের পাণ্ডবদের বংশধর। পাণ্ড্য রাজারা যদিও নিজেদের চন্দ্র বংশের উত্তরসূরি বলে দাবি করেছেন। কাহিনী যাই হোক, পাণ্ড্যরা দক্ষিণ ভারতের প্রাক-আর্য জাতি, পরবর্তী কালে দক্ষিণ ভারতে আর্যদের উপনিবেশ গড়ে তোলার সময়, তাঁরা আর্যদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে, নিজেদের গৌরব বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন।
     
    পাণ্ড্যরা দক্ষিণভারতের দক্ষিণতম প্রান্তে এবং তার পূর্ব উপকূলে রাজত্ব করতেন। যদিও পাণ্ড্য বংশের রাজাদের পরাক্রম অনুযায়ী তাঁদের এই রাজ্যের সীমানা কখনো বেড়েছে, কখনো ছোট হয়েছে। সাধারণতঃ তাঁরা আধুনিক তিনটি জেলা, মাদুরা, রামনাদ, তিন্নেভেল্লি এবং তার সংলগ্ন অঞ্চলগুলিতে রাজত্ব করেছেন। তাঁদের রাজধানী ছিল মধুরা (মাদুরা), যাকে দক্ষিণের মথুরা বলা হয়ে থাকে। তাঁদের প্রাচীন বাণিজ্যিক বন্দর ছিল তাম্রপর্ণী নদীর ব-দ্বীপ অঞ্চলের কোরকাই, পরবর্তীকালে নদীর ভৌগোলিক পরিবর্তন হওয়াতে, কয়ল হয়ে ওঠে তাঁদের প্রধান বন্দর।

    পাণ্ড্যদের ইতিহাস যথেষ্ট প্রাচীন কাত্যায়নের (বি.সি.ই চতুর্থ শতাব্দী) পাণিনি-ভাষ্যে পাণ্ড্যদের নাম প্রথম পাওয়া যায়। এরপর রামায়ণ ও মহাভারতেও তাঁদের নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। সিংহলের “মহাবংশ” গ্রন্থ থেকে জানা যায়, সিংহলের রাজকুমার বিজয়ের সঙ্গে পাণ্ড্য রাজকুমারীর বিবাহ হয়েছিল, ভগবান বুদ্ধের পরিনির্বাণের কিছুদিন পরেই। এরপর কৌটিল্যের “অর্থশাস্ত্র”-এ বিশেষ এক ধরনের মুক্তার উল্লেখ করা হয়েছে, যার উৎস ছিল পাণ্ড্যকাবটক। আবার মেগাস্থিনিসের বিবরণ থেকে পাওয়া যায়, পাণ্ড্যরাজ্য নাকি পরিচালনা করতেন মহিলারা। তবে সব থেকে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়, সম্রাট অশোকের শিলালিপি থেকে। যেখানে বলা হয়েছে, মৌর্য সাম্রাজ্যের দক্ষিণতম সীমার বাইরে পাণ্ড্যদের স্বাধীন রাজ্য ছিল। এরপর কলিঙ্গরাজ খারবেলের শিলালিপি থেকেঅ জানা যায়, পাণ্ড্য রাজারা তাঁর বশ্যতা স্বীকার করেছিলেন এবং তিনি পাণ্ড্যদের থেকে ঘোড়া, হাতি, রত্ন, রুবি এবং অজস্র মুক্তা উপহার পেয়েছিলেন। এরপর রোমান ঐতিহাসিক স্ট্রাবোর লেখায় “রাজা পাণ্ডিয়ন”-এর উল্লেখ পাওয়া যায়, যিনি ২০ বি.সি.ই-তে রোম-সম্রাট অগাস্টাস সীজারের রাজসভায় দূত পাঠিয়েছিলেন। এরপর গ্রীক পর্যটক টলেমির গ্রন্থেও দক্ষিণভারতে “পাণ্ডিনোই” নামে এক রাজ্যের নাম পাওয়া যায়, যাদের রাজধানী ছিল “মোদৌরা”।

    অতএব প্রাচীন কাল থেকেই পাণ্ড্যরাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ অস্তিত্ব থাকলেও, তাঁদের সম্পর্কে বিচ্ছিন্ন কিছু উল্লেখ ছাড়া, নির্দিষ্ট ইতিহাস পাওয়া যায় না। ইতিহাসের পরিধিতে তাঁদের প্রথম প্রবেশ ষষ্ঠ শতাব্দীতে, পল্লবরাজ সিংহবিষ্ণুর উত্থান এবং কালাভ্র গোষ্ঠীর হাতে তাঁদের পরাজয়ের ইতিহাস দিয়ে। শোনা যায় ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষদিকে অথবা সপ্তম শতাব্দীর শুরুতে রাজা কাড়ুঙ্গন পাণ্ড্যরাজ্য পুনরুদ্ধার করে, পাণ্ড্যরাজকে শক্তিশালী করে তুলেছিলেন।  এই পাণ্ড্যরাজ কাড়ুঙ্গন এবং তাঁর পুত্র মারবর্মন অবনিশূলামণির সঙ্গে পল্লবরাজ সিংহবিষ্ণুর বেশ কয়েকবার যুদ্ধ হয়েছিল, কারণ দুই পক্ষই তাঁদের রাজ্যের প্রতিপত্তি বৃদ্ধিতে নিয়োজিত ছিলেন। এরপর সপ্তম শতাব্দীর মধ্যভাগে অরিকেশরী মারবর্মন, তাঁর উত্তরসূরি কোচ্চড়য়নরণধীর (সপ্তম শতাব্দীর শেষ দিকে), মারবর্মন প্রথম-রাজসিংহ এবং নেড়ুঞ্জড়য়ন প্রথম-বরগুণ, প্রধানতঃ চোল এবং কেরালা রাজ্যের অংশ জয় করে পাণ্ড্য রাজ্যের সীমানা বিস্তার করেছিলেন। রাজা নেড়ুঞ্জলয়ন কোঙ্গুদেশ (কোয়মবাটোর এবং সেলম জেলা) এবং বেনাড়া (দক্ষিণ ত্রিবাঙ্কুর); তাঁর পুত্র শ্রীমারশ্রীবল্লভ (৮১৫-৬২ সি.ই.) সিংহল জয় করেছিলেন এবং পল্লব, গঙ্গ এবং চোলদের সঙ্গে যুদ্ধ করে কুড়মুক্কু (কুম্বকোনম) অধিকার করেছিলেন। যদিও পাণ্ড্যরাজা দ্বিতীয়-বরগুণ ৮৮০ সি.ই.তে চোলরাজ প্রথম-আদিত্যের পরাজিত হয়েছিলেন।

    এরপর থেকেই পাণ্ড্য রাজাদের প্রবল প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছিলেন চোল রাজারা। শোনা যায় পাণ্ড্যরাজা মারবর্মন দ্বিতীয়-রাজসিংহ, সিংহলের রাজার সঙ্গে মিলিত শক্তিতে চোলরাজা প্রথম-পরান্তককে আক্রমণ করেছিলেন, কিন্তু সুবিধে করতে পারেননি। বরং পরবর্তী চোলরাজ পাণ্ড্যরাজ্যের রাজধানী অধিকার করে, “মাদুরাইকোণ্ডা” উপাধি নিয়েছিলেন। এভাবেই পাণ্ড্যরাজ্য মোটামুটি ৯২০ সি.ই.-তে চোলদের অধীন রাজ্য হয়ে গেল এবং ত্রয়োদশ শতাব্দীর শুরু পর্যন্ত দক্ষিণভারতে পাণ্ড্যরাজ্য তার গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেছিল। যদিও পাণ্ড্যদের কয়েকজন রাজা বিচ্ছিন্ন ছোট ছোট রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে, চোলদের আধিপত্য খর্ব করার বারবার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু খুব একটা সফল হতে পারেননি। চোলরাজ তৃতীয়-কুলোত্তুঙ্গের মৃত্যুর (১২১৬ সি.ই.) পর চোলরাজ্য যখন শক্তিহীন হয়ে পড়ল, সেই সময় পাণ্ড্যরাজাদের প্রতিপত্তি আবার বেড়ে উঠল।

    পাণ্ড্যরাজ জাতবর্মন কুলশেখর ১১৯০ সি.ই.-তে রাজা হওয়ার পর পাণ্ড্যরাজ্যের ভাগ্যের চাকা আবার অনুকূল ঘুরতে শুরু করেছিল। এরপর প্রায় শতাধিক বছর পাণ্ড্যরাজ্যের গৌরব অম্লান ছিল। জাতবর্মন কুলশেখরের পুত্র মারবর্মন সুন্দর প্রথম-পাণ্ড্য (১২১৬-১২৩৮ সি.ই.) চোলদের আক্রমণ করে, তাঁদের প্রধান দুই শহর তাঞ্জোর এবং উরায়ুর পুড়িয়ে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন, এবং চোলরাজ তৃতীয় রাজরাজ বশ্যতা স্বীকার করায়, তাঁকেই সিংহাসন ফেরত দিয়েছিলেন। তার পরের পাণ্ড্যরাজা ছিলেন মারবর্মন সুন্দর দ্বিতীয়-পাণ্ড্য (১২৩৮-১২৫১ সি.ই.), তাঁর সময়েও চোল–পাণ্ড্য–হোয়সল সম্পর্কের কোন পরিবর্তন হয়নি। তার পরের পাণ্ড্যরাজা জাতবর্মন সুন্দর পাণ্ড্য (১২৫১-১২৭২ সি.ই.) পরাক্রমী রাজা ছিলেন, তাঁর সময়েই পাণ্ড্যরাজ্য তার সমৃদ্ধির শীর্ষে উঠেছিল। তিনি চোলদের বিপর্যস্ত করে কাঞ্চী অধিকার করে নিয়েছিলেন, এবং চের রাজ্য এবং সিংহলেও আধিপত্য বিস্তার করেন। উপরন্তু তিনি হোয়সলরাজ বীর-সোমেশ্বরকে এবং কাকতীয়রাজ গণপতিকেও চূড়ান্ত পরাস্ত করে, তাঁদের বশ্যতা আদায় করেছিলেন। এভাবেই জাতবর্মন সুন্দর পাণ্ড্য দক্ষিণ ভারতের দক্ষিণতম প্রান্ত থেকে কুডাপ্পা এবং উত্তরের নেল্লোর পর্যন্ত অবিসম্বাদিত সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে “মহারাজাধিরাজ-শ্রীপরমেশ্বর” উপাধি গ্রহণ করেছিলেন।

    তাঁর মৃত্যুর পর রাজা হয়েছিলেন মারবর্মন কুলশেখর তিনিও বেশ কিছু নতুন অঞ্চল অধিকার করে সাম্রাজ্যের সীমানা অক্ষুণ্ন রাখতে পেরেছিলেন। তাঁর রাজত্বকালে ১২৯৩ সি.ই.-তে ভেনেসিয় পর্যটক মার্কো পোলো দক্ষিণ ভারত ভ্রমণে এসেছিলেন। তাঁর বর্ণনা থেকে পাণ্ড্য রাজাদের কথা, শাসন ব্যবস্থা, শহর ও গ্রামের জীবনযাত্রা সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া যায়। তিনি পাণ্ড্যরাজাদের সমৃদ্ধি, সম্পদ ও বাণিজ্য সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন।

    মারবর্মন কুলশেখরের শেষ জীবন খুব একটা শান্তির ছিল না। তাঁর দুই পুত্র, তাঁদের মধ্যে একজন অবৈধ, বীর পাণ্ড্য এবং অন্যজন সুন্দর, বৈধ পুত্র ছিলেন। দুজনেই দীর্ঘদিন– যথাক্রমে ১২৯৬ সি.ই. এবং ১৩০৩ সি.ই. থেকে পিতার প্রশাসনের অন্যতম সহায় ছিলেন। পিতা মারবর্মন কুলশেখরের জীবনের শেষদিকেই দুই ভাইয়ের মধ্যে সিংহাসন নিয়ে তীব্র বিরোধ উপস্থিত হয়েছিল। শোনা যায় মারবর্মন কুলশেখর কোন এক পুত্রের হাতে নিহত হন এবং তাঁর বৈধ পুত্র সুন্দর সিংহাসন অধিকার করার জন্যে আলাউদ্দিন খিলজির কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। সত্য ঘটনা যাই হোক, পারিবারিক এই বিবাদের মধ্যে, আলাউদ্দিন খিলজির সেনাপতি মালিক কাফুরের পক্ষে মাদুরা জয় করে পাণ্ড্যদের উচ্ছেদ করতে কোন বেগ পেতে হয়নি।  অতএব ১৩১০ সি.ই. এবং তার কয়েক বছরের মধ্যে পাণ্ড্য সাম্রাজ্যের গৌরব ধূলিসাৎ হয়ে, মুসলিম আধিপত্য স্থাপিত হয়েছিল।

    ৪.৮.৪ চের
    চের বা কেরালাদের উৎপত্তি নিয়ে তেমন কোন বিতর্ক শোনা যায় না। তাঁরা দক্ষিণ ভারতেরই প্রাক-আর্য অধিবাসী এবং তাঁদের রাজ্যের সীমানা ছিল আধুনিক মালাবার, ত্রিবাঙ্কুর এবং কোচিন জেলা। কখনো কখনো কোয়মবাটোর এবং সেলম জেলার দক্ষিণাংশও তাঁদের রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। চের রাজ্যের পশ্চিম উপকূলে প্রাচীন কাল থেকেই দুটি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র বন্দর ছিল। একটি পেরিয়ার নদীর মোহনায় মুজিরি এবং বৈক্করাই। এ দুটির মধ্যে মুজিরি থেকেই অধিকাংশ বৈদেশিক বাণিজ্য পরিচালিত হত। সুদূর গ্রীস, রোম ও মেসোপটেমিয়ায় প্রাচীন কাল থেকেই নানারকমের মশলা, মুক্তা এবং রত্ন রপ্তানি হত, যার ফলে অনেক গ্রীক ও রোমান বণিক এই অঞ্চলে বসবাস করতেও শুরু করেন এবং তাঁরা তাঁদের দেবতা অগাস্টাসের মন্দিরও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই অঞ্চলে ইহুদীদেরও একটি উপনিবেশ ছিল, যাঁদের চেররাজা ভাস্কর রবিবর্মন দশম শতাব্দীর শুরুতে সনদ দান করেছিলেন।

    চের রাজ্যের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়, সম্রাট অশোকের শিলালিপিতে, যেখানে চোড় (চোল) এবং পাণ্ড্যদের সঙ্গে, তাঁদের কেরলপুত্র বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। গ্রীক পর্যটক টলেমির গ্রন্থেও চেরদের উল্লেখ পাওয়া যায়। যদিও এই সময়ের চেরদের ইতিহাস খুবই অস্পষ্ট। তবে সেনগুট্টুবন নামে এক চের রাজার নাম পাওয়া যায় বিখ্যাত তামিল “শিলপ্পাদিকরম” গ্রন্থে। শোনা যায় এই গ্রন্থ রচনা করেছিলেন তাঁর সন্ন্যাসী ভাই, ইলঙ্গবদিগল। তাঁর গ্রন্থ থেকে অনুমান করা হয়, চেররাজা সেনগুট্টুবন হয়তো পাণ্ড্যরাজা নেড়ুঞ্জলয়ন এবং চোল রাজা করিকালের নাতির সমসাময়িক।

    অতএব রাজা সেনগুট্টুবনকেই প্রথম ঐতিহাসিক চের রাজা বলা যায়। তাঁর পরবর্তী রাজাদেরও চোল ও পাণ্ড্য প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিরন্তর লড়তে হচ্ছিল। কিন্তু তাঁদের কেউই সম্ভবতঃ পরাক্রমী বা উদ্যোগী রাজা ছিলেন না, অতএব বেশ কয়েক শতাব্দী চের রাজারা গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছিলেন। তাঁদের আবার প্রকাশ ঘটল অষ্টম শতাব্দীর শুরুর দিকে। এই সময় জনৈক চেররাজার সঙ্গে পল্লবরাজ পরমেশ্বরবর্মনের যুদ্ধ করতে দেখা গিয়েছিল। এই শতাব্দীর শেষ দিকে পাণ্ড্যরাজাদের সঙ্গেও তাঁদের যুদ্ধ করতে হয়েছিল এবং তাঁদের দক্ষিণ ত্রিবাঙ্কুর হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল। এই সময়ে চেররাজাদের সঙ্গে চোলরাজাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তা গড়ে ওঠে, চোলরাজ প্রথম-পরান্তক চের রাজকুমারীর পাণিগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু দশম শতাব্দীর শেষদিকে চেররাজাদের সঙ্গে চোল রাজাদের সখ্যতা ভেঙে যায়, এবং চোলরাজ প্রথম-রাজরাজ চেরদের রাজত্বের অনেকটাই অধিকার করে নিয়েছিলেন। এই সময় থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর শুরু অব্দি চের রাজ্য চোল রাজাদের অধীনে ছিল। দ্বাদশ শতাব্দীতে চোল রাজাদের দুর্বলতার সুযোগে চের রাজারা, বিশেষ করে ১২৯৯ সি.ই.তে রাজা রবিবর্মনকুলশেখর, চের রাজ্যকে স্বাধীন করলেন এবং তারপর পাণ্ড্য এবং চোলরাজাদের পরাজিত করে বেশ প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু তাঁদের এই পরাক্রমও প্রতিরোধ করেছিলেন কাকতীয় রাজা প্রথম-রুদ্র। সে যাই হোক, রাজা রবিবর্মনকুলশেখরের পর চেররাজ্য আবার গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছিল।

    ৪.৮.৫ দীর্ঘ এই ভারত-পরিক্রমায় প্রাপ্তি
    প্রায় সাড়ে ছশো বছরের ভারত-পরিক্রমা শেষ হল। এর মধ্যেও বাকি রয়ে গেল আরও অনেক বংশ এবং রাজরাজড়াদের নাম। তাঁদের মধ্যে অনেকেরই নামমাত্র শোনা যায়, ইতিহাসে তেমন কোন দাগ রেখে যেতে পারেননি। যাঁদের কথা বললাম, তাঁরাই বা কী এমন দাগ রেখে গেছেন, বেশ কিছু সুন্দর আর অনবদ্য স্থাপত্য নির্মাণ ছাড়া? এঁরা সক্কলেই নিজেদের মধ্যে নিরন্তর লড়াই করে, যুদ্ধ করে, অপচয় করেছেন জীবনীশক্তি, নিজেরা দুর্বল হয়েছেন, প্রতিবেশীকে দুর্বল করেছেন। প্রত্যেকটি রাজ্য জয় অথবা বিজয় অভিযানে তাঁরা অন্য রাজ্য থেকে লুঠ করে এনেছেন সম্পদ, সেই সম্পদে জমকালো মন্দির বানিয়েছেন অজস্র। তার পিছনে যত না ভক্তি, তার থেকে অনেক বেশি ছিল, বৈভব প্রদর্শনে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজাদের ঈর্ষান্বিত করে তুলে, ক্ষমতার উষ্ণতা উপভোগ করা। তারপর কিছুদিনের মধ্যে তাঁরা তাঁদের বানিয়ে তোলা বংশমর্যাদা নিয়ে মিলিয়ে গেছেন, কালের গহ্বরে। এমনই ঘটেছে বারবার, প্রত্যেকটি রাজবংশের ক্ষেত্রে।
     
    দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ছশ বছরের এই ইতিহাস থেকে আমাদের জাতীয় রাজনৈতিক চরিত্র সম্বন্ধে আমার কয়েকটি উপলব্ধি হয়েছে, সেগুলি সংক্ষেপে এখানে বর্ণনা করি।
    ১) বীর রাজারা তাঁদের প্রতিবেশী রাজাদের যত সহজে বারবার পরাস্ত করতে পেরেছেন, সেই বীরত্ব বিদেশী আক্রমণের সময় বারবার লোপ পেয়েছিল তাঁদের অদূরদর্শী কূপমাণ্ডুক্যের জন্যে। কারণ প্রথমতঃ তাঁরা আসল বিপদটা কোথায়, সেটা উপলব্ধিই করতে পারেননি। তাঁরা বিশ্বাস রেখেছিলেন – “যাক শত্রু পরে পরে” এই প্রবাদে এবং নিজ নিজ প্রতিবেশী-শত্রু যখন আক্রান্ত হয়েছে, তাঁরা মুচকি হেসেছেন। আশ্চর্য হল, আরেকটি প্রবাদ তাঁদের মাথায় আসেনি – “ঘুঁটে পোড়ে, গোবর হাসে”। কয়েকটি উদাহরণ দিলে স্পষ্ট হবে।
         
    ক) চৌহান বংশের রাজা পৃথ্বীরাজ যখন সুলতান সিহাবুদ্দিন ঘোরীকে প্রতিরোধ করলেন, তখন প্রতিবেশী গাড়োয়াল বংশের রাজা জয়চন্দ্র ব্যক্তিগত আক্রোশে উদাসীন রইলেন। আক্রোশের কারণ তাঁর অমতে রাজা পৃথ্বীরাজ রাজা জয়চন্দ্রের কন্যাকে বিবাহ করেছিলেন। এই আক্রোশের হেতু কী তাঁর জ্যাত্যাভিমান, বংশমর্যাদা? তিনি ভুলে গেলেন, কয়েকবছর আগেই তাঁর পিতা রাজা বিজয়চন্দ্রকেও খুসরু মালিকের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে হয়েছিল। সে সময় তিনি হয়তো যুবরাজ ছিলেন। তাঁর এই নির্বুদ্ধিতা ও অহংকারের মূল্য চোকাতে হয়েছিল, সুলতান সিহাবুদ্দিনের হাতে নিজের প্রাণ ও রাজ্য খুইয়ে। (অধ্যায় ৪.৬.১.৪ ও ৪.৬.১.৫)

    খ) চান্দেলরাজ ধঙ্গ নাকি “খেলার ছলে অধিকার করেছিলেন, কালঞ্জর (কালিঞ্জর দুর্গ –বুন্দেলখণ্ড, মধ্যপ্রদেশ), সুদূর মালব নদীতটের ভাস্বত (?), যমুনার তীর, চেদি রাজ্যের সীমানা, এমনকি গোপগিরি পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চল”। কিন্তু তিনি শাহী রাজা জয়পালের সঙ্গে যৌথ প্রচেষ্টাতেও সবুক্তিগিনের কাছে পরাস্ত হয়েছিলেন। এরপর গজনির সুলতান মামুদের আক্রমণের সময়, রাজা ধঙ্গের পুত্র রাজা গণ্ড ও শাহী রাজা আনন্দপালের সঙ্গে যৌথ প্রয়াসও ব্যর্থ হয়েছিল। (অধ্যায় ৪.৬.৭)
    পরপর এই দুটি পরাজয়েও চান্দেলরাজ গণ্ড এবং ভাটিণ্ডার শাহী রাজারা কিন্তু সতর্ক হলেন না। কেনই বা তাঁরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বারবার পরাস্ত হচ্ছেন, সেই বিশ্লেষণও করলেন না। উল্টে, সুলতান মামুদের ভয়ে পলাতক কনৌজের প্রতিহাররাজ রাজ্যপালকে খুঁজে, তাঁর কাপুরুষতার “উচিৎ শিক্ষা” দিতে তাঁকে হত্যা করলেন। এই সংবাদ পেয়ে গজনির সুলতান মামুদ পরের বছর ফিরে এলেন রাজা গণ্ডকেই “উচিৎ শিক্ষা” দিতে। এবার রাজা গণ্ড নিজেই ভয়ে গা ঢাকা দিয়ে কোন ক্রমে প্রাণরক্ষা করলেন। কিন্তু নিস্তার পেলেন না, বছর তিনেক পরে সুলতান মামুদ আবার ফিরে এসে তাঁকে সম্পূর্ণ পরাস্ত করলেন এবং রাজা গণ্ডকে বশ্যতা স্বীকার করিয়ে প্রচুর ধনরত্ন নিয়ে দেশে ফিরে গেলেন। (অধ্যায় ৪.৬.৭)

    গ) গজনির সুলতান যখন গুজরাটের সোমনাথ মন্দিরের সম্পদ লুঠ করতে এসেছিলেন, তখন চালুক্য বা সোলাংকিরাজ প্রথম ভীম ভয় পেয়ে রাজধানী অনহিলওয়াড়া (গুজরাটের আধুনিক পাটন) ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছিলেন। সুলতান মামুদ সোমনাথ মন্দির ধ্বংস করে এবং সমস্ত সম্পদ নিয়ে যখন ভারত ছাড়লেন, রাজা প্রথম ভীম “সগৌরবে” রাজধানীতে ফিরে সিংহাসনে বসলেন। এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিবেশী রাজ্য আবুর সামন্তরাজাকে আক্রমণ করে তাঁকে পরাস্ত করলেন! (৪.৭.২)।

    মোটামুটি সাড়ে ছশ’ বছরের ভারতীয় ইতিহাসে, এমনই অনেক বীর রাজাদের কাহিনী আমাদের গর্বের হিন্দু রাজত্বের ঐতিহ্য!         

    ২) এঁনাদের কূপমণ্ডুক বলেছি, তার কারণ বারবার মুসলিম আক্রমণ থেকে তাঁরা কোনদিন কোন শিক্ষাই গ্রহণ করেননি। যুগের সঙ্গে এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রণকৌশল, সামরিক দক্ষতা, সামরিক সম্ভার কিছুই বদল করেননি। এই পর্যায়ে হিন্দু রাজত্বগুলির মুসলিম প্রতিরোধে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হওয়ার কয়েকটি কারণ, আমার মনে হয়,

    ক) ভারতের শস্য-শ্যামল, সম্পদ-সমৃদ্ধ পরিবেশে হিন্দু রাজা এবং তাঁদের সেনাদল ছিল অনেকটাই নরম-সরম, শ্লথ, এবং বেশ আত্মতুষ্ট। প্রতিবেশী সমমনস্ক সৈন্যদলকে পরাস্ত করতে পারলেই, নিজেদেরকে বীরত্বের পরাকাষ্ঠা বলে মনে করতেন। অন্যদিকে মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার রুক্ষ ও ঊষর অঞ্চলের মুসলিম যোদ্ধারা ছিলেন বিপরীত প্রকৃতির। তাঁরা একদিকে ছিলেন কষ্টসহিষ্ণু, নির্মম, ক্ষিপ্র, আর অনমনীয় জেদের অধিকারী। তাঁরা অশ্বচালনায় যেমন দক্ষ ছিলেন, তেমনি তলোয়ার চালনাতেও ছিলে অত্যন্ত নিপুণ। এমনকি তাঁদের তীক্ষ্ণ তলোয়ারগুলিও হত ভারতীয় অস্ত্রগুলির থেকে অপেক্ষাকৃত হালকা, কিন্তু অনেক বেশি ঘাতসহ।
     
    খ) রণকৌশলেও তাঁরা ছিলেন অত্যন্ত চতুর ও দক্ষ। তাঁরা প্রচলিত ভারতীয় রণনীতি এবং বিধি-বিধানের ধার ধারতেন না। সরাসরি যুদ্ধে তাঁরা যেমন ভারতীয় রাজাদের অধিকাংশ সময়েই পর্যুদস্ত করেছিলেন, তেমনি শোনা যায় অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা বিদেশী বণিকদলের বেশে রাজধানীতে ঢুকে কিছুদিন রাজধানীতে বাস করতেন। তারপর একদিন আচমকা আক্রমণ করে, রাজধানীর সুরক্ষা-ব্যবস্থা ধ্বংস করে দুর্গ ও তার সরবরাহ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে ফেলতেন। তারপর অসীম ধৈর্যে অপেক্ষা করতেন সপ্তাহ এমন কি মাসাধিক কাল। দুর্গের সঞ্চিত রসদ ফুরিয়ে গেলেই, দুর্গের সকল অধিবাসীদের প্রাণ রক্ষার জন্যেই রাজারা বাধ্য হতেন দুর্গের প্রধান দরজা খুলে দিয়ে বশ্যতা স্বীকার করতে। এই সংবাদে প্রতিবেশী রাজ্যের রাজারা কখনো কাউকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন, এমন শোনা যায় না। বরং নিজেদের বিলাসী প্রাসাদে বসে তাঁরা অমাত্যদের সঙ্গে পরিকল্পনা করতেন, মুসলিম যোদ্ধারা লুঠপাট করে ফিরে গেলেই, ভগ্নকটি ওই দুর্বল রাজ্যের থেকে কোন কোন উর্বর অঞ্চল অতি দ্রুত হস্তগত করে ফেলা যায়।
     
    গ) এবারে অধ্যায় ৪.৪.২ অধ্যায় থেকে গুপ্ত রাজাদের প্রশাসনিক ব্যবস্থার দিকে একবার চোখ রাখা যাক। রাজধানীর বাইরের সাম্রাজ্যকে তাঁরা কয়েকটি প্রদেশে ভাগ করে, নাম দিয়েছিলেন ভুক্তি। প্রত্যেকটি ভুক্তি বিভক্ত করেছিলেন কয়েকটি বিষয় অর্থাৎ জেলায়। জেলার অধীনে থাকত গ্রাম পঞ্চায়েত বা গ্রামসভা। ধরে নেওয়া যায় গুপ্ত পরবর্তী হিন্দু যুগেও এই প্রশাসনিক ব্যবস্থাই প্রচলিত ছিল।
    রাজ্যের বা সাম্রাজ্যের রাজা যদি, প্রধান অমাত্য ও সেনাধ্যক্ষদের নিয়ে সর্বদাই যুদ্ধে – সে নিজের রাজ্য রক্ষার জন্যেই হোক অথবা অন্য রাজ্য জয়ের জন্যেই হোক – ব্যস্ত থাকেন, প্রদেশ থেকে গ্রাম পর্যন্ত প্রশাসনিক ব্যবস্থায় দুর্বলতা আসতে বাধ্য। প্রশাসনিক দুর্বলতার পিছনে অবধারিতভাবে আসে দুর্নীতি। অর্থাৎ প্রাদেশিক থেকে গ্রামিক আধিকারিকরা মিলিতভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে উঠে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিতে মগ্ন হয়ে পড়তেন। অতএব একদিকে যেমন প্রশাসনিক আধিকারিকরা হয়ে উঠতেন অত্যাচারী আঞ্চলিক রাজা, অন্যদিকে সাধারণ প্রজাদের দুর্গতির সীমা থাকত না। যুদ্ধের ফাঁকে ফাঁকে রাজা কখনো-সখনো রাজধানীতে বসে প্রজাদের খবরাখবর জানতে চাইলে, প্রশাসনের লোকজন রাজাকে নিশ্চিন্ত রাখত, বলত “আপনার শাসনে দেশে রাম-রাজত্ব চলছে, মহারাজ, প্রজারা সুখে শান্তিতে, নিরাপদে নিশ্চিন্ত জীবন যাপন করছে”।

    ঘ) আরও একটি বিষয় নিশ্চিত ভাবেই অনুমান করা যায়। রাজধানীর সিংহাসনে দশ বা বিশ বছর অন্তর নতুন-নতুন রাজা বসলেও, এই প্রশাসনিক কর্তাদের এতটুকুও ক্ষতি হত না, বরং লাভ হত। কারণ বিজয়ী রাজার পক্ষে, বিজিত রাজ্যের প্রশাসনের সর্ব স্তরে, রাতারাতি নিজস্ব আধিকারিক নিয়োগ করা কখনোই সম্ভব ছিল না। অতএব বিজয়ী রাজাকেও রাজধানীর বাইরের রাজ্য পরিচালনার জন্যে, পরাজিত রাজার কর্মচারীদের ওপরেই সম্পূর্ণ নির্ভর করতে হতো। এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে, প্রশাসনিক আধিকারিকরাও অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে তাঁদের দুর্নৈতিক কর্তব্য পালনে এতটুকুও গাফিলতি করত না।
     
    ঙ) ওপরের (খ) ও (ঘ) কারণের জন্যেই সফল গুপ্তচর ব্যবস্থাও এই সময়কার রাজ-প্রশাসনে ভয়ংকর দুর্বল হয়ে পড়েছিল। আমরা মৌর্য যুগে চাণক্য রাজনীতিতে, প্রশাসনিক কাজের সহায়ক যে নিবিড় গুপ্তচর চক্রের হদিস পাই, সে ব্যবস্থা নিশ্চয়ই গুপ্ত যুগেও ছিল। তা নাহলে গুপ্ত সম্রাটদের পক্ষে এতদিন ধরে, এত বড়ো সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হত না। এই গুপ্তচর চক্র সক্রিয় না থাকার ফলেই, দেশের রাজারা কেউই মুসলিম যোদ্ধাদের সম্যক শক্তি ও তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য কোনদিনই বুঝতে পারেননি। যার ফলে তাঁরা মুসলিমদের সঙ্গে অধিকাংশ যুদ্ধেই পরাজিত হয়েছেন, কখনো বা অতিরঞ্জিত গুজবে বিশ্বাস করে আতঙ্কে গা ঢাকা দিয়েছেন। এই কারণেই হয়তো আঠারো জন যোদ্ধা সঙ্গী নিয়ে বখতিয়ার খিলজি – অশ্ব ব্যবসায়ীর ছদ্মবেশে ঢুকে নদীয়ার রাজপ্রাসাদ থেকে বাংলার রাজা লক্ষ্মণ সেনকে পালাতে বাধ্য করতে পেরেছিলেন।                          

    দেশ জোড়া টুকরো টুকরো অজস্র রাজ্যের এই রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সাধারণ শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সমাজ (অর্থাৎ আমরা) এবং নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র কর্মী বা শ্রমিক সমাজের মানুষের অবস্থা কেমন ছিল, সে বিষয়ে কোন স্পষ্ট ইতিহাস পাওয়া যায় না। তা না থাক, এ বিষয়ে অস্পষ্ট ধারণা তৈরি করাই যায়। সে প্রসঙ্গ নিয়েই পর্যালোচনা করব পঞ্চম ও অন্তিম পর্বে। আপাততঃ এখানেই সমাপ্ত করলাম ভারতের ইতিহাস চর্চা।  

     
    চতুর্থ পর্ব সমাপ্ত।

     
    চলবে...
    (পঞ্চম ও অন্তিম পর্বের – প্রথম ভাগ আসবে ১৮/০৮/২২ তারিখে।)
     
     
    গ্রন্থ ঋণঃ
    ১. History of Ancient India – Rama Shankar Thripathi.
    ২. Penguin History of Early India – Dr. Romila Thapar.
    ৩. The Wonder that was India – A. L. Basham.

     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ১২ আগস্ট ২০২২ | ৯৩৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Dr. Avijit Ghosh | ১৭ আগস্ট ২০২২ ১১:৩০511099
  • লেখক অসম্ভব রিসার্চ করেছেন এই ঐতিহাসিক ঘটনা বিবৃত করতে গিয়ে এটাই আমার অনুমান। 
  • Kishore Ghosal | ১৭ আগস্ট ২০২২ ১৪:০৫511108
  • এই রে, একটু আধটু পড়েছি ঠিকই  কিন্তু রিসার্চ করার সাহস কোথায় পাবো?  পড়ার জন্যে কৃতজ্ঞতা জানাই ।  
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন