এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  ইতিহাস

  • ধর্মাধর্ম - প্রথমপর্ব / ৩য় ভাগ

    Kishore Ghosal লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | ইতিহাস | ১৮ মার্চ ২০২২ | ১৩৩৯ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • ১.৩.১ অবসরের ভাবনা, অবসরের ভাষা

    আগের অধ্যায়ের সারাংশ খ(৪)-এর বক্তব্য অনুযায়ী আমাদের মস্তিষ্ক পুষ্ট হওয়াতে সমগ্র মানুষ জাতির কতটা লাভ হয়েছে, সে বিষয়ে আলোচনা এখানে অর্থহীন। কারণ নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সমস্ত মানুষের মস্তিষ্কের আয়তন যদি মোটামুটি একই হয়, তাহলে ইতিহাসে মাত্র একজন করে নিউটন, আইনস্টাইন, রবীন্দ্রনাথ, বিটহোফেন[1] কেন? সে রহস্য ভেদ, বিজ্ঞানীরা আজও করে উঠতে পারেননি।

    কাজেই ও বিষয়ে অনধিকার চর্চা ছেড়ে আমরা বরং খ(৩), খ(৫) আর খ(৬)-এর বক্তব্য – মানুষের জীবনে কী কী পরিবর্তন আনল সেই নিয়ে আলোচনা করি।

    খাবার সংগ্রহ এবং খাদ্য গ্রহণে সময় বেঁচে যাওয়ায়, প্রতিদিনে অলস অবসর কাটানোর মতো অনেকটা সময় মানুষের হাতে এসে গেল। মানুষ এই অবসরটুকুর পূর্ণ সদ্ব্যবহার করল, নিজেদের মধ্যে কথা বলে। এই আলাপের প্রচেষ্টাতেই ধীরে ধীরে গড়ে উঠতে লাগল আমাদের ভাষা। যে ভাষায় আমরা নিজেদের মধ্যে সম্পূর্ণ তথ্য বিনিময় করতে পারি। যে ভাষায় বৃদ্ধরা তাঁদের দীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতা নবীন প্রজন্মকে হস্তান্তর করতে পারেন। যে ভাষায় আমরা মিথ্যা কথায় বিপক্ষকে বিভ্রান্ত করতে পারি। যে ভাষায় আমরা অজস্র কল্পনার জাল বুনতে পারি।

    তাহলে তার আগে কী মানুষ কথা বলতে পারত না? আজ্ঞে না, পারত। অন্যান্য সকল প্রাণীর মতো মানব প্রজাতিগুলি এবং মানুষও কথা বলতে পারত, সে কথার অধিকাংশই ছিল ধ্বনি, যাকে বলা যেতে পারে স্বরবর্ণ বা খুব জোর একাক্ষরী শব্দ। বিষয়টা আরেকটু খোলসা করা যাক।

    পৃথিবীতে অধিকাংশ প্রাণীই নিজেদের গোষ্ঠীর মধ্যে তথ্য আদানপ্রদানের জন্যে কিছু না কিছু ধ্বনি বা সংকেত ব্যবহার করে থাকে – সে পিঁপড়ে হোক বা হাতি। পিঁপড়ে তার পেছন থেকে ফেরোমন নামে একটি হরমোন ছিটিয়ে তার পেছনের সঙ্গীদের কখনো খাদ্যের কখনো বিপদের সংকেত দেয়। হাতিও তার নানান ডাকে তার সঙ্গীদের কখনো বিপদের, কখনো বেশ বড়োসড়ো কলা-বাগানের সন্ধান পেলে, আনন্দের সংকেত দেয়। আবার কখনো কখনো পুরুষ হাতি, মহিলা হাতিকে প্রেমও নিবেদন করে। হাতির সংকেতে বিপদ মানে বিপদই, সে বিপদ সিংহের দল, কিংবা শিকারী মানুষের দল সবই হতে পারে।

    আদিম মানুষও তাই করত। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে সিংহের দল আর হাতির দলের বিপদে বিস্তর ফারাক। এখন সারাদিনের অবসর সময়ে তাদের মস্তিষ্ক তাদের প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতাগুলিকে আলাদা আলাদা ভাবে চিহ্নিত (identify) করতে শুরু করল। তার সঙ্গে তাদের কথা বলার ইন্দ্রিয়গুলি – যেমন ওষ্ঠ, জিভ, তালু, কণ্ঠ ইত্যাদি এখন অনেক কমনীয় হয়ে ওঠাতে, চিহ্নিতকরণের (identification) এই প্রক্রিয়াটি খুব দ্রুত ঘটতে লাগল। তারা প্রত্যেকটি প্রাণী, গাছপালা এবং প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলিকে চিহ্নিত করে তাদের আলাদা আলাদা নাম দিতে শিখল। যেমন, হরিণ, শম্বর, বাঘ, ভালুক, হাতি, শুয়োর, সাপ ইত্যাদি। কিংবা পাহাড়, নদী, জঙ্গল, মেঘ, বৃষ্টি, বজ্র, বিদ্যুৎ, আগুন। তেমনি বট, অশ্বত্থ, আম, জাম, কাঁঠাল, নিম, কলা, নারকেল, তাল, বিছুটি, ধুতরো। এই বিষয়গুলির কারা কারা এবং কোনটি কোনটি তাদের পক্ষে বিপজ্জনক, কোনটি উপকারী, কোনটি খাদ্য, কোনটি অখাদ্য সেগুলিও সনাক্ত করে, বয়স্ক মানুষরা তাদের তরুণ প্রজন্মকে সেই তথ্য সরবরাহ করতে শুরু করে দিল।

    অর্থাৎ যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে আদিম মানুষরা বৃদ্ধ হয়ে যেতেন, সেই বৃদ্ধ পিতামহরা এখন গল্পের ছলে, তাঁদের তরুণ প্রজন্মের মস্তিষ্কে, তাঁদের জীবনের সকল অভিজ্ঞতার পূর্ণ তথ্য, সরবরাহ করে দিতে সক্ষম হলেন। পিতামহর এই অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ হয়ে, বিচক্ষণ তরুণরা নিজেদের আরও উন্নত করার ভাবনা চিন্তা এবং তার প্রয়োগ করার সময় পেলেন, তাঁদের নিজেদের বার্ধক্য কাল পর্যন্ত! এরপর এক প্রজন্ম থেকে পরের প্রজন্মে বেড়েই চলল, অভিজ্ঞতার তথ্য ভাণ্ডার এবং তথ্য সরবরাহের পরম্পরা। আশা করি, এবার কিছুটা আন্দাজ পাওয়া গেল আদিম মানুষের ৬০০ সি.সি.র মস্তিষ্ক কেন পরবর্তী প্রজন্মে বেড়ে উঠতে শুরু করেছিল!    

    অতএব মানুষ এখন পরিস্থিতি অনুযায়ী কথা বদলাতে পারে, কারণ তারা এখন আর শুধু শব্দ করে না।  অনেক শব্দ জুড়ে কথা, অর্থাৎ অর্থপূর্ণ বাক্য গঠন করতে পারে। যেমন তারা বলতে পারে, “বাঁদিকে সিংহের দলটাকে দেখেছিস, কেমন ঘাপটি দিয়ে বসে আছে? খুব সাবধান। চল আমরাও ঝোপের আড়ালে ঘাপটি দিয়ে বসি, তারপর একটু পরে সবাই মিলে একসঙ্গে হো হো চিৎকার করে লাফিয়ে ওদের তাড়া করব, সিংহ ব্যাটারা পালাবার পথ পাবে না”। অথবা “সামনেই হাতির দল, সাবধান। কোন ঝুঁকি না নিয়ে কেটে পড়াই ভালো। সবাই মিলে একদিকে না দৌড়ে, নানান দিকে ছুটতে থাক, হাতিরা কাকে ছেড়ে কাকে ধরবে, বুঝতে না পেরে, এক সময় হাল ছেড়ে দেবে”।

    কাকাতুয়া, ময়না বা টিয়া পাখিও মানুষের কথা নকল করতে পারে, কিন্তু তারা নিজেরা কথা বানাতে পারে না। মানুষ পারে এবং পারে বলেই হাতির শরীরের তুলনায় অতি তুচ্ছ প্রাণী হয়েও, পরবর্তী কালে তারা হাতি শিকার করেছে এবং পোষও মানিয়েছে।

    শব্দ করে মিথ্যা সংকেত দেওয়ার উদাহরণ প্রাণীজগতে একেবারেই যে নেই এমন নয়। বিজ্ঞানীরা বলেন দু-একটি প্রজাতির শিম্পাঞ্জি নিজের স্বার্থে মিথ্যা সংকেত দিতে পারে। কালাহারির মরুপ্রান্তরে ড্রংগো নামের ছোট্ট একটি পাখি, মিরক্যাটদের বন্ধু। মিরক্যাটদের পরমশত্রু ঈগল পাখির দেখা পেলেই তারা মিরক্যাটদের সতর্ক করে দেয়। আবার এই ড্রংগোই মিথ্যে সংকেত দিয়ে, মিরক্যাটদের চমকে দিয়ে, তার শিকার করা কাঁকড়া বিছে হাতিয়ে, নিজের উদরপূর্তি করে[2]। প্রকৃতিতে এরকম কয়েকটি উদাহরণকে ব্যতিক্রমই বলা উচিৎ। কারণ প্রাণী জগতের অধিকাংশই সত্যি কথা বলে এবং এটাই প্রকৃতির নিয়ম। দু-একটি ব্যতিক্রম যা দেখা যায়, সেগুলি এই নিয়মকেই প্রতিষ্ঠা করে।

    কিন্তু মানুষ মিথ্যা কথা বলায় অত্যন্ত দক্ষ। তারা প্রায়শঃ মিথ্যা কথা বলতে ভালোবাসে। একজন মানুষ নিজেকে বীর প্রমাণ করার জন্যে জঙ্গলে কোন দিন না গিয়েও, অজস্র বাঘ বা সিংহ শিকারের নিখুঁত গল্প বানাতে পারে। সে যদি মিথ্যা বলায় দক্ষ হয় মানুষ তাকেই বীর বলে বিশ্বাস করে। আর যে হয়তো সত্যিই বীর কিন্তু তেমন দক্ষ কথক নয়, তার কথায় কেউ কানই দেয় না।

    মানুষ কথা দিয়ে স্বপ্ন বুনতে পারে। অবাস্তবকে বাস্তব করে তুলতে পারে। অবাস্তবকে বাস্তব করে তোলা কিন্তু সর্বদাই নির্জলা মিথ্যা নয়। মিথ্যা কোন না কোন সময়ে ধরা পড়ে যায়। যাঁরা কথায় স্বপ্ন বুনতে পারেন, তাঁরা অনেক ক্ষেত্রে নিজেরাই সেই স্বপ্নে বিভোর থাকেন এবং মানুষের মনে সেই স্বপ্ন সঞ্চার করেন। মানুষের এই বৈশিষ্ট্যটির ভূমিকা আলাদা গুরুত্বের দাবি রাখে।

    মানুষের আরেকটি অন্যতম গুণ বিপদের কল্পনা আর দুশ্চিন্তা করার ক্ষমতা। কল্পনা আর দুশ্চিন্তার যোগসূত্র হল “যদি”। যদি আজ শিকারে কোন বড়ো প্রাণী শিকার না করা যায়? যদি আজ শিকার করতে গিয়ে দলের কিছু মানুষ আহত হয়, কিংবা যদি দু-একজন নিহত হয়? যদি অন্য কোন দল আমাদের আক্রমণ করে? যদি ঝড়ে গাছ ভেঙে আমাদের বাসার ওপর পড়ে এবং দু চারজন চাপা পড়ে? গভীর রাত্রে যদি হাতির দল কিংবা বাঘ এসে গ্রামে হানা দেয়? সন্তান প্রসব করতে গিয়ে যদি মায়ের মৃত্যু হয়? সারাদিনের এমন অজস্র “যদি” আমাদের জীবনকে কীভাবে বদলে দিয়েছে, আর তার জন্যে কত যে মন্ত্র বিভিন্ন শাস্ত্রে উচ্চারিত হয়েছে, সে কথা আলোচনা করা যাবে পরের অধ্যায়ে।    

    অবসর বিনোদনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের এমনই নানান জটিল ভাবনা যখন ভাষায় রূপ পেল, তার জীবনও ততই জটিল হয়ে সভ্যতার দিকে এগোতে লাগল। অবশ্যই এর পিছনে রয়েছে মস্তিষ্কের প্রত্যক্ষ অবদান। কিন্তু একই পরিবারের এক ভাই (গিরীশ ঘোষের “প্রফুল্ল” নাটকের মেজভাই) কেন যে বজ্জাত আর কুচুটে হয়, এবং কেনই বা অন্য ভাই (ঐ নাটকের বড়ভাই) সাদাসিধে ভোলাভালা হয়, সেকথা মস্তিষ্কই জানে।

    এবার আজ থেকে প্রায় চল্লিশ হাজার বছর আগের কোন এক সময়ে আমি কল্পনায় পৌঁছে যাবো। কিছুদিন একটি দলের সঙ্গেই আমি বাস করবো। দেখবো, আমাদের আগের দেখা মানুষগুলির তুলনায় এই মানুষগুলির জীবনে কী কী পরিবর্তন ঘটেছে।

    ১.৩.২ মনের ভাষা, প্রাণের ভাষা
     
    গোটা কয়েক পর্ণ কুটির আর সামনে অনেকটা খোলা প্রাঙ্গণ নিয়ে একটি বসতি। এই বসতিতে বাস করে যে দলটি, তাদের সঙ্গেই আমি রয়েছি। সে দলটিতে সদস্য সংখ্যা - শিশু থেকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ধরে প্রায় পঞ্চাশ জন। তাদের মধ্যে গোটা দশ-বারো বিভিন্ন বয়সের ছোট ছেলেমেয়ে। তারা যথারীতি নিজেদের মধ্যে হুটোপুটি করছে, হৈচৈ করছে আর বয়স্কদের বিরক্ত করছে। দলের পাঁচজন বার্ধক্যের সীমা পেরিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে একজন এখনো বেশ ঋজু, সুঠাম। তিনি এই দলের পিতৃস্থানীয়, নাম ধরা যাক পশুপতি। বাকিরা বয়েসের ভারে কুঁজো, চলাফেরাতেও বেশ মন্থর, চোখেও তেমন স্পষ্ট দেখতে পান না। তাঁরা সকলেই ওই ছোট ছেলেমেয়েগুলিকে লক্ষ্য রাখছেন এবং স্নেহমাখা সুরে মাঝে মাঝে শাসনও করছেন। বাকিরা নানান বয়সের তরুণ-তরুণী এবং মধ্যবয়স্ক পুরুষ-মহিলা। তাদের মেদহীন চেহারা পেশিবহুল এবং টানটান। দেখেই বোঝা যায় তারা বলিষ্ঠ, ক্ষিপ্র এবং চনমনে।

    এখন সদ্য সকাল, কিছু আগেই সূর্যোদয় হয়েছে। তরুণ ও মধ্যবয়স্কদের দলটি এখনই জঙ্গলে ঢুকবে। তারা সকলেই প্রস্তুত। তাদের সকলের কাঁধে ঝুলছে শুকনো লতা দিয়ে বোনা ঝোলা – কিছু ঝোলায় রয়েছে বেশ কিছু ধারালো পাথরের টুকরো, কিছু ঝোলা খালি। সকলেরই হাতে রয়েছে পাঁচ-সাড়েপাঁচ ফুট লম্বা পোক্ত লাঠি, যারা মাথাটা ছুঁচোলো। বেরোনর আগে তারা খোলা প্রাঙ্গণে এসে একত্রে দাঁড়াল গোল হয়ে।  পিতা পশুপতি সামনে এগিয়ে এলেন, ছোট্ট একটা গাছের ডাল হাতে নিয়ে। গোটা দলটিকে মাঝখানে রেখে, তিনি মাটিতে গোল একটা গণ্ডি আঁকলেন হাতের ডালটি দিয়ে, তারপর মুখ তুলে তাকালেন উপরের দিকে।

    পিতা পশুপতি যেদিকে তাকালেন, সকলেই মুখ তুলে সেদিকে তাকাল। আমিও তাকিয়ে দেখলাম, সামনেই খুবই ছোট্ট একটি পাহাড়। তার চূড়ার কাছাকাছি রয়েছে বড়োসড়ো একটি পাথর। পিতা পশুপতি পাথরের দিকে জোড়হাতে প্রণাম করলেন, তারপর উচ্চস্বরে একঘেয়ে সুরে বললেন, “হে পিতা, আমাদের খাদ্য দাও। আমাদের শিকার দাও। আমাদের ছেলেমেয়েদের সুস্থ রাখো। তোমার জঙ্গলের পশুরা ওদের যেন কোন ক্ষতি না করে। তুমি ওদের সকলের সঙ্গে সর্বদা থেক। ওদের নিরাপদে ঘরে ফিরিয়ে এনো”। পাথরের কাছে তাঁর নিবেদন শেষ হতে, দলের সকলেই মাথা নিচু করে জোড় হাতে প্রণাম করল, তারপর দ্রুত বেরিয়ে গেল জঙ্গলের পথে।
     
    যতক্ষণ দলটিকে দেখা গেল, বয়স্ক মানুষগুলি ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলেন। ওরা চোখের আড়ালে চলে যেতে,  পিতা পশুপতি এগিয়ে গেলেন, সামনের একটি বড়ো অশ্বত্থ গাছের দিকে। সেই গাছের তলাতেই তিনি বসবেন, দলের বাচ্চাদের লক্ষ্য রাখবেন। নানান চিন্তাভাবনাও করবেন। মনে মনে কথা বলবেন, ওই পাথরের সঙ্গে। তিনি বিশ্বাস করেন, ওই পাথরে আছে তাঁর প্রপিতামহের আত্মা। যিনি সর্বদাই এই দলের শুভাশুভের দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখেন।

    এক কিশোরী, দুই মধ্যবয়স্কা মহিলা ও এক পুরুষ অবিশ্যি জঙ্গলে যাননি। তাঁদের দায়িত্ব এই বৃদ্ধ-বৃদ্ধা আর ছেলে-মেয়েদের দেখা শোনা করা। তাঁরাই যে রোজ এমন থাকেন তা নয়, তবে দলের তিন-চারজনকে পালা করে এমন রোজই থাকতে হয়।

    পিতা পশুপতি অশ্বত্থের ছায়ায় একটি মোটা শিকড়ের ওপর বসতেই, কিশোরী মেয়েটি দৌড়ে এসে তাঁর পাশে বসল, বলল, “এখন আমার কোন কাজ নেই, বড়োবাবা, কাকিমা বলল”।
    পশুপতি মুখে প্রশ্রয়ের হাসি নিয়ে বললেন, “কাজ নেই তো ভাই-বোন, ভাইপো-বোনঝিদের সঙ্গে খেল গে যা। আমার সঙ্গে তোর কী দরকার?”
    আদুরে গলায় মেয়েটি, যার নাম ঊষি, বলল, “আমি তোমার কাছেই থাকবো, তোমার কথা শুনবো”।
    “কি কথা?” মুচকি হেসে জিজ্ঞাসা করলেন পিতা পশুপতি।
    “যদি রাগ না করো, তা হলে একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো”? কোন উত্তর না দিয়ে জিজ্ঞাসু চোখে তিনি তাকিয়ে রইলেন, কিশোরী ঊষির চোখের দিকে, তারপর বললেন, “আচ্ছা, রাগ করবো না, কী জানতে চাস বল”।
    বড়োবাবা রাগ করবেন না বলা সত্ত্বেও ঊষি একটু ইতস্ততঃ করে বলল, “বড়োবাবা, তুমি ওই যে ওপরের ওই পাথরটার দিকে প্রায়ই তাকিয়ে থাক, বারবারই প্রণাম করো। ওই পাথরে কে আছে বলো তো? সকলে বলে ওই পাথরে নাকি কোন এক আত্মা আছেন। তিনিই তোমাকে পথ দেখান, এ কথা কি সত্যি, বড়োবাবা?”
    পশুপতি হাসলেন, বললেন, “কেন ওই পাথরের বুকে তুই কি কিছুই দেখতে পাস না?” ঊষি এর আগে বহুদিন, বহুবার চেষ্টা করেছে, আজ আবারও নিরীক্ষণ করল কিছুক্ষণ, তারপর বড়োবাবার মুখের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টে ঘাড় নাড়ল, না। কিছুই দেখতে পাচ্ছে না।

    পিতা পশুপতি কিশোরী ঊষির মাথায় হাত রাখলেন। এই মেয়েটি তাঁর বড়ো কন্যার নাতনি, ওর বাবা, তাঁর এক ভাইপোর ছেলে, আর মা, ওঁর কন্যার মেয়ে। বেশ কিছুদিন হল ঊষিও জঙ্গলে যাচ্ছে, বড়োদের সঙ্গে। পাথর ছোঁড়া কিংবা কাঠের বর্শার ব্যবহারে রীতিমতো দক্ষ হয়ে উঠছে। যে কোন গাছে সে উঠে পড়তে পারে, কাঠবেড়ালির মতো। যেমন প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে পারে, তেমনই ওর অন্তরে আছে অত্যন্ত মায়া-দয়া। ছোটছোট ভাই-বোন, ভাইপো-ভাইঝিদের খেয়াল রাখে খুব, ভালওবাসে। আর ভীষণ ভালোবাসে তার বড়োবাবাকে। জঙ্গলে গেলে, একটা না একটা পাকা ফল সে আনবেই তার বড়োবাবার জন্যে। বড়োবাবার হাতে সেই ফল তুলে দিয়ে সে বলে, “বড়োবাবা এটা তোমার জন্যেই এনেছি, তুমি খাও”।

    পিতা পশুপতি মুখ তুলে পাথরটার দিকে একবার তাকিয়ে বললেন, “তোরা দেখতে পাবি না। তোরা বুঝতে পারবি না। তোরা এখন ছোট্ট। তোদের মনে এখনও বিশ্বাস আসেনি। তোরা ভাবিস, সারাদিন তোরা যা করছিস, সব তোরাই করছিস। আরও বড়ো হলে বুঝবি, তোরা কিছুই না”।

    ঊষি একটু অভিমানে ঠোঁট ফুলিয়ে বলল, “তুমি এমন কথা বলতে পারলে বড়োবাবা? আমি তোমাকে বিশ্বাস করি না? আর সারাদিন আমরা যা কাজ করছি, সে সব আমরা না তো, কে করছে, শুনি?”

    “পাগলি মেয়ে, রাগ করছিস কেন? তুই যেমন আমাকে বিশ্বাস করিস, ভালোবাসিস, তেমনি আমিও ভালোবাসতাম, বিশ্বাস করতাম আমার বড়োবাবাকে। আমি তো তাঁকেই দেখি ওই পাথরের বুকে। সেই নাক, চোখ, মুখ, সব স্পষ্ট। তিনি যেমন আছেন আমার অন্তরে, তেমনই আছেন ওই পাথরে। তুই যখন অনেক বড়ো হবি, আমি আর থাকবো না তোর সামনে, দেখবি, তুইও অমনি করেই আমাকে দেখতে পাবি। তখন তুইও বুঝবি, সারাদিন তোরা যা কিছু করবি, তার পিছনে আমিই থাকবো, তোর সঙ্গে সারাক্ষণ। আমার দৃষ্টি এড়িয়ে তোরা কিছুই করতে পারবি না”।

    বড়োবাবার কথায় ঊষি খুব অবাক হল, কিন্তু একটু রেগেও গেল, বলল, “তোমার সঙ্গে আর একটাও কথা বলব না, বড়োবাবা। সুযোগ পেলেই তুমি যখন “আমি আর থাকবো না” বলো না, তখনই আমার গা জ্বলে যায়...”। মুখ ঝামটা দিয়ে সে অন্য দিকে তাকিয়ে বসে রইল।

    পিতা পশুপতি কোন কথা না বলে নিবিড় স্নেহে ঊষির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। আর আমি অবাক হয়ে দেখছিলাম, শুনছিলাম ওদের দুজনের কথা। লক্ষ্য করছিলাম, ওদের শরীরি ভাষাও। কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে লক্ষ্য করছিলাম, ওদের দুজনের দুই চোখ, ভ্রূ, গাল, নাক এবং ঠোঁটের ভাষাও – সে ভাষা অনুভবের নীরব ভাষা। অবাক হচ্ছিলাম রান্নায় আগুনের ব্যবহারের মাত্র পনের-বিশ হাজার বছরে কী বিপুল উন্নতিই না করেছে মানুষ। নিজের মনের কথা ও অনুভব, অন্যজনের কাছে এমন ভাবে প্রকাশ করতে পারে, এই পৃথিবীর আর কোন্‌ প্রাণী? শিম্পাঞ্জি কিংবা আদিম মানুষরাও, কিশোরী ওই মেয়েটির মতো, ঠোঁট উল্টে না বলতে পারত কি? অথবা পারত ঠোঁট ফুলিয়ে অভিমান দেখাতে?  

    ঊষির দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর, পশুপতি বললেন, “আচ্ছা, আর কখনো অমন বলবো না, কিন্তু এবার মুখটা ঘোরা, পাগলি। তোর হাসি মুখখানি একবার দেখি”। ঊষি ছলোছলো চেখে আবার মুখ ফেরাল বড়োবাবার দিকে, একটু লাজুক হাসল। উদ্বেল স্নেহে পশুপতি আবারও বললেন, “তোর মা, বাবা, দাদু-ঠাকুমাকে আমি কত আদর করেছি, কত ভালোবেসেছি। আবার শাসনও করেছি কত। মনে নেই, এই তো সেদিন, তোদের সামনেই তোদের কাকাকে কম মারলাম? সে তো তোদেরই ভালোর জন্যে, বল? মানুষ তো চিরকাল থাকে না পাগলি, থাকে তার স্মৃতি। অনেক বড়ো হয়ে গেলে, যখনই তোরা খুব আনন্দ করবি, কিংবা দুঃখে-বিপদে জেরবার হবি। আমি না থাকলেও, দেখবি আমার কথাই তোদের সর্বদা মনে পড়বে। মনে মনে আমাকেই তোর পাশে অনুভব করবি, যেমন আমি করছি আমার বড়োবাবাকে”।

    “নাতনির সঙ্গে কী এত কথা হচ্ছে, বাবা?”
    এই সময় অপরিচিতা এক মহিলার গলা শুনে দুজনেই মুখ ফেরাল। তাঁদের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন মধ্যবয়স্কা এক মহিলা আর সঙ্গে তাঁর পিতা। মহিলার নাম মিত্তিকা আর ওঁর বাবার নাম গিরিজ। পশুপতি ও ঊষি দুজনেই অবাক হয়ে উঠে দাঁড়ালেন, জোড়হাতে নমস্কার করে পশুপতি বললেন, “আপনারা, হঠাৎ কোথা থেকে? আপনাদের দলের আর সকলে কোথায়?” মিত্তিকা ও গিরিজও জোড়হাতে নমস্কার করে বললেন, “একটু বসে জিরোতে দিন, বাবা, সেই কোন ভোরে বেরিয়েছি, আমাদের বসতি থেকে...”। বলতে বলতে অশ্বত্থের ছায়ায় দুজনেই বসলেন। কোন কথা না বলে পশুপতিও বসলেন তাঁদের মুখোমুখি, ঊষিকে ইশারা করলেন, একটু খাবার জল আনার জন্যে। ঊষি দৌড়ে গেল জলের ব্যবস্থা করতে।       
                
    ১.৩.৩ সংঘাত – সংযোগ - মৈত্রী                  

    ওঁদের বিশ্রামের ফাঁকে আর ঊষি খাবার জল আনার আগে, মিত্তিকা আর গিরিজের পরিচয়টা সেরে ফেলা যাক।

    মাস তিনেক আগে, পিতা পশুপতির দলটি যখন তাদের এই বসতির দিকেই আবার ফিরে আসছিল, জঙ্গলের পথে এক নদীর ধারে এই মিত্তিকার দলটির সঙ্গে তাঁদের দ্বিতীয় সাক্ষাৎ ও পরিচয় ঘটেছিল।

    মানুষের এই বিচ্ছিন্ন পারিবারিক দলগুলি ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এক জঙ্গল থেকে অন্য জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে বেড়ায়। কারণ একই জঙ্গলে সারাবছর যথেষ্ট খাবার, শিকার ও জলের সংস্থান থাকে না। বনের তৃণভোজী পশুরাও খাবার আর জলের সন্ধানে ঋতু অনুযায়ী এমনই জঙ্গল থেকে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়। তাদের পিছনে ঘুরে বেড়ায় মাংসাশী পশুরা এবং মানুষ ও মানবের গোষ্ঠীগুলিও। কোন ক্যালেণ্ডার নেই, কোন ট্র্যাভেল-গাইড নেই। তবুও জঙ্গলের সব অধিবাসীই টের পেয়ে যায়, কোন সময় তাদের পরিচিত জঙ্গল ছেড়ে অন্য জঙ্গলে চলে যেতে হবে। আবার কখন ফিরে আসতে হবে তাদের ছেড়ে যাওয়া পুরোনো বসতিতেই।

    এমনই যাওয়া আসার পথে, মাঝে মাঝেই অন্য মানুষ এবং মানব গোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের দেখা হয়ে যায়। সাধারণতঃ তারা একে অপরকে এড়িয়ে চলে, তবে কখনো কখনো ভয়ংকর সংঘাতও ঘটে যায়। সংঘাতটা ঘটে এলাকা দখলের বিবাদ থেকে। একই অঞ্চলে একাধিক দলের উপযোগী খাদ্যের সংস্থান হওয়া দুঃসাধ্য, অতএব একদল অন্যদলকে তাড়িয়ে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যেই সংঘাতের পথে যেতে বাধ্য হয়।

    বছর পাঁচেক আগের প্রথম সাক্ষাতে মিত্তিকার দলটির সঙ্গে পিতা পশুপতির দলের এমনই এক সংঘাত ঘটেছিল, এখান থেকে বহুদূরের এক জঙ্গলে। সেই সংঘাতে পিতা পশুপতির দলেরই ক্ষতি হয়েছিল বেশি। তাঁর দলের তিনজন মারা গিয়েছিল, এবং আহত হয়েছিল আটজন। মিত্তিকাদের দুর্দান্ত দলের হাতে পরাজিত হয়ে পিতা পশুপতির দল অন্য জঙ্গলে সরে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন।

    এইবারের ঋতুকালীন পর্যটন সেরে পিতা পশুপতির দলটি যখন আবার এই বসতিতে ফিরছিলেন, তখন মিত্তিকাদের দলটির সঙ্গে হঠাৎ সাক্ষাৎ হয়ে গেল, একটি নদীর ধারে। সে নদীতে সারা বছরই জল থাকে, যার ফলে তার দুপাশেই রয়েছে গভীর সবুজ জঙ্গল আর সবুজ তৃণক্ষেত্র। অতীতের সংঘাতের কথা দু দলের কেউই ভোলেনি। দূর থেকে দু দলই একে অপরকে সতর্ক লক্ষ্য করতে লাগল। পিতা পশুপতি লক্ষ্য করলেন, ওদের দলটির লোকসংখ্যা বেশ কম, মাত্র ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ জন, তার মধ্যে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা আর বাচ্চাদের সংখ্যাই বেশি, যুবক-যুবতীর সাকুল্যে আট-দশ জন। তারাও কেমন যেন মনমরা, আগেকার সেই সাহস বা শক্তির কিছুই যেন আর অবশিষ্ট নেই।

    দুটো দিন সতর্ক লক্ষ্য রাখার পর পিতা পশুপতি তাঁর দলের সবাইকে এক সকালে ডেকে বললেন, “আমি ওই দলের কাছে যাবো, আমার সঙ্গে কেউ একজন চল”। এ দলের সকলেই ভীষণ অবাক হল, জিগ্যেস করল, “কেন? আপনারা শুধু দুজন যাবেন, ওদের সঙ্গে লড়াই করতে? পাগল হয়েছেন?” পিতা পশুপতি বললেন, “লড়াই করতে নয়। দেখছিস না, ওদের দলে লোক কম, ওরা এখন দুর্বল, আমাদেরই ভয় পাচ্ছে। অন্য কোন দলের খপ্পরে পড়লে তো ওরা শেষ হয়ে যাবে। কিংবা বাঘ, সিংহ বা হাতির কবলে পড়ে যদি আরও কয়েকজন আহত হয়, তাহলে ওদের আর থাকবেটা কী? আমি যাবো ওদের সঙ্গে কথা বলতে, বর্শা নিয়ে শুধু একজন চল আমার সঙ্গে, আর তোরা এখানেই থাক, গতিক সুবিধের নয় মনে হলে, তোরাও তাড়াতাড়ি চলে আসবি”। এমন একটা প্রস্তাব দলের কারও ঠিক পছন্দ হল না। পিতা পশুপতি সকলের মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আমার মনে যে নির্দেশ এসেছে, আমি তা পালন করছি মাত্র। আমাদের দু’দলেই রয়েছি যারা, তারা সবাই তো মানুষ। আমি বুঝতে পারছি, ওরা ভীষণ দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে। এসময় ওদের পাশে দাঁড়ালে ভবিষ্যতে আমাদের দুপক্ষেরই মঙ্গল হতে পারে”। পিতা পশুপতির দলের সকলেই জানে, তিনি তাঁর অন্তরে তাঁর বড়োবাবার নির্দেশ পান, সেই আত্মার নির্দেশেই তিনি কঠিন সব সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।
     
    এরপর আর কিছু বলার ছিল না, পিতা পশুপতি একজন সশস্ত্র যুবককে সঙ্গে নিয়ে অন্য দলের দিকে হাঁটা দিলেন। অন্য দলের লোকেরাও তাঁদের দেখছিল, যুবক-যুবতীরা সতর্ক হয়ে উঠল তাদের বল্লম আর পাথরের অস্ত্র নিয়ে। ও দলের এক বৃদ্ধ তাদের সতর্ক থাকতে বললেন, কিন্তু উত্তেজিত হতে নিষেধ করলেন। তাদের কাছে এ এক সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতা। একদলের ওপর অন্যদল আচমকা হামলা করে, এমন তারা বেশ কয়েকবার দেখেছে। কিন্তু এভাবে একজন বৃদ্ধ একটিমাত্র যুবকের সঙ্গে শান্তভাবে, তাদের দিকেই হেঁটে আসছেন, এ দৃশ্য বিরল। তারা কোনদিন দেখেনি। তাদেরও কৌতূহল বাড়তে লাগল।

    বৃদ্ধ যে মানুষটিকে ওই দলের নেতা বলে মনে হচ্ছিল, পিতা পশুপতি তাঁকে জোড়হাতে নমস্কার করলেন।  ইশারা করলেন, তাঁর সঙ্গের যুবকটিকে। যুবকটি অবাক হলেও, মেনে নিল এবং জোড় হাতে নমস্কার করল। এতদিন সে এবং তার দলের সকলে পাথর-আত্মার সামনে নমস্কার করেছে, কিন্তু এখন অজানা এই লোকগুলোকে সে কেন নমস্কার করল, বুঝল না। পিতা পশুপতির চোখে এবং অধরে হাল্কা হাসির ছোঁয়া। তিনি ওই দলের নেতার সামনে মাটিতেই বসলেন। শান্ত দৃষ্টিতে দলের কৌতূহলী এবং সন্দিগ্ধ সকলের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলেন, তারপর দলনেতার চোখে চোখ রেখে বললেন, “কবছর আগে আপনার এই দলের সঙ্গে আমাদের যে লড়াই হয়েছিল, তাতে আমাদেরই হার হয়েছিল। মনে আছে? কিন্তু এবার আপনাদের দলটিকে বেশ ছন্নছাড়া মনে হচ্ছে যেন, এর কারণ বলবেন কী?”

    তাঁর ভাষা অন্যদলের ভাষার থেকে অনেকটাই আলাদা। ও দলের বৃদ্ধ সব কথা না বুঝলেও বক্তব্য বুঝতে অসুবিধে হল না। তিনি এতক্ষণ পিতা পশুপতির অভিনব ও অভূতপূর্ব আচরণ মন দিয়ে লক্ষ্য করছিলেন। তিনি ভীষণ আশ্চর্য হচ্ছিলেন, কিন্তু এটাও বুঝতে পারছিলেন আগন্তুক এই বৃদ্ধ এবং ওই যুবকের মনে কোন অশুভ উদ্দেশ্য নেই। তা যদি হত, ওদের শক্তিশালী দল নিয়ে আচমকা আক্রমণ করতে পারত এবং গতবারের পরাজয়ের শোধ তুলতে পারত অনায়াসে।

    কোন উত্তর না দিয়ে তিনি পিতা পশুপতির স্মিত মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ, তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে খুব শান্ত স্বরেই বললেন, “কয়েক মাস আগেই আমাদের দুর্ভাগ্য বয়ে এনেছিল সে এক বৃদ্ধ দাঁতাল হাতি – খ্যাপা, মনে হয় নিজের দল থেকে সে ছিল বিতাড়িত। তার সারা গায়ে ছিল ভয়ানক লড়াইয়ের ক্ষত। সে হাতিকে আমরা গভীর জঙ্গলে বেশ কয়েকবার দেখেছিলাম। দলছুট সেই হাতি গভীর এক রাত্রে আমাদের বসতির কাছাকাছিই নিঃশব্দে লুকিয়েছিল। আমরা বুঝতেও পারিনি। আমাদের উঠোনে যতক্ষণ আগুন জ্বলছিল, সবাই কথাবার্তা বলছিলাম, খাওয়াদাওয়া করছিলাম, তখন সে আসেনি। গভীর রাতে আমরা যখন ঘুমিয়ে পড়েছি, কোন এক সময় নিভে গেছে চর্বির মশাল, চারিদিক নিবিড় অন্ধকার। সে নিঃশব্দ মৃত্যুর মতো এগিয়ে এল আমাদের বাসার দিকে। উঠোনে যারা ঘুমোচ্ছিল – তাদের সাতজনকে পিষে দিল পায়ের তলায়। বাকিরা যারা ঘুমভাঙা চোখে অন্ধকার পাহাড়ের মতো হাতিটাকে বল্লম দিয়ে আঘাত করছিল বারবার। তাদের শুঁড়ে জড়িয়ে ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিল দূরে। তারপর আরও কিছুক্ষণ আমাদের উঠোনে দাঁড়িয়ে থেকে, যেমন নিঃশব্দে সে এসেছিল, তেমনই চলে গেল – গভীর জঙ্গলের দিকে। আমরা কয়েকজন এবং বাচ্চারা নিরাপদেই ছিলাম, কিন্তু ভীষণ আতঙ্কে সেই রাতে মশাল জ্বেলে বের হবার কথা মনেও হয়নি। সূর্যোদয়ের পর, আমরা আমাদের আহত মানুষগুলোকে তুলে আনলাম, তাদের সেবা শুশ্রূষা শুরু করলাম। কিন্তু তাদের মধ্যেও পাঁচজন, দুদিনের মধ্যে মারা গেল”।
    দলের অধিকাংশ মানুষ মাথা নিচু করে শুনছিল। তাদের প্রত্যেকের চোখেই জল, একজন প্রৌঢ়া মহিলা পাথরের মূর্তির মতো উদাসীন চোখে তাকিয়ে ছিলেন দূর জঙ্গলের দিকে। গিরিজ তাঁর দিকে তাকিয়ে বললেন, “ও আমার মেয়ে, মিত্তিকা। হাতির পায়ের তলায়, ও হারিয়েছে ওর দুই পুত্র আর নিজের সঙ্গীকে...”। গভীর হতাশায় আর দুঃখে বৃদ্ধ মাথা নাড়তে লাগলেন বারবার, তাঁরও দুই চোখ ভরে উঠল অশ্রুতে।

    পিতা পশুপতি থমথমে মুখে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলেন বৃদ্ধের মুখের দিকে, তারপর উঠে গিয়ে হাত রাখলেন তাঁর কাঁধে। অদ্ভূত এক অনুভূতি নিয়ে বৃদ্ধ মুখ তুলে তাকালেন পিতা পশুপতির চোখে চোখ রাখলেন কিছুক্ষণ। তারপর দুই বাহুতে জড়িয়ে ধরলেন পিতা পশুপতিকে, তাঁর কাঁধে মাথা রেখে কান্নায় ভেঙে পড়লেন, বিকৃত স্বরে বলতে লাগলেন, “আমার সব গেল, সব...তিন ছেলে, দুই নাতি, দুই ভাইপো...যাদের ওপর আমাদের ভরসা ছিল খুব। আমাদের বুকের পাঁজরগুলোও যেন ভেঙে দিয়ে গেল ওই শয়তান দাঁতালটা...”।

    দুঃখ ও শোকের ভারি বাতাবরণের মধ্যেও দলের সব্বাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল দুই বৃদ্ধের দিকে, অভূতপূর্ব এক দৃশ্য। অজানা, অচেনা, সম্পর্কহীন দুই বৃদ্ধের এমন অন্তরঙ্গ দৃশ্য তাদের কেউ কখনও দেখেনি। নিজেদের দলের পুরুষ মহিলার মধ্যে এমন আচরণ তারা বহুবার দেখেছে, সে দৃশ্যে তারা অভ্যস্ত, কিন্তু এমন দৃশ্য অভাবিত, তারা তাকিয়ে রইল দুই বৃদ্ধের দিকে। তাঁদের আবেগ ধীরে ধীরে সঞ্চারিত হতে লাগল সকলের মনে। এ আবেগ তারা আগে কোনদিনই টের পায়নি, মানুষের ইতিহাসেও এই হয়তো প্রথম। এ আবেগ মৈত্রীর, এ আবেগ সখ্যতার।

    একটু পরে বৃদ্ধ নিজেকে অনেকটা সামলে নিলেন, কর্কশ হাতে চোখের জল মুছে, পিতা পশুপতির চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আমি গিরিজ, এই দলের নেতা। আমরা সবাই কৃতজ্ঞ আপনার কাছে, আপনার দলের সবার কাছে। আমাদের দুর্বল বুঝেও আপনারা প্রতিশোধ নিলেন না। আপনার এমন আন্তরিক ব্যবহার আমরা কল্পনাও করিনি”।
     
    পিতা পশুপতি কিছু বললেন না, তাঁর গভীর বলিচিহ্নিত চোখের কোলে আস্থার হাসি, বৃদ্ধের দুই কাঁধে হাত রাখলেন কিছুক্ষণ, তারপর জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনাদের দলের কোন একজন অথবা কয়েকজন মানুষের কৃতকর্মের জন্যে আপনি কখনও অনুশোচনা করেন কি? এমন কোন কাজ, যা করা উচিৎ হয়নি, এমন কী মনে হয়?” পিতা পশুপতি মাথা নিচু করে অস্ফুট স্বরে আবার বললেন, “অকারণ কোন হত্যা, প্রকৃতির নিয়মে যার কোন প্রয়োজনই ছিল না – এমন কোন অপরাধ?”

    এই কথা শুনে গিরিজ এবং সঙ্গী-পুত্র হারা মিত্তিকা শিউরে উঠলেন যেন। অদ্ভূত আতঙ্কে তাঁরা তাকিয়ে রইলেন পিতা পশুপতির মুখের দিকে। এই বৃদ্ধ কি অন্তর্যামী, সব কিছু দেখতে পান? তা নাহলে এমন প্রশ্ন করলেন কী করে?
     
    বৃদ্ধ গিরিজ মুখ তুলে তাঁর অভাগী কন্যার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “আছে বৈ কি! এই শীতের আগের শীতে আমরা তখন ফিরে গিয়েছি আমাদের পুরোনো এলাকায়। গিয়ে দেখি, সেখানে আমাদের আগেই অন্য একটি দল আস্তানা গেড়েছে। তাদের সঙ্গে আমাদের বেধে গেল ভয়ংকর লড়াই, আমাদের একজন মারা গেল, আহত হল চার-পাঁচজন। কিন্তু অন্য দলটির ক্ষতি হয়েছিল অনেক বেশি। তাদের পাঁচজন মাটি নিয়েছিল, আর অন্ততঃ আটজন গুরুতর আহত হয়েছিল। ওরা হার স্বীকার করে নিয়েছিল। ওরা আমাদের এলাকা ছেড়ে আরও পশ্চিমের জঙ্গলে চলে যাচ্ছিল। আমরাও জয়ের আনন্দে পুরোনো এলাকায় জাঁকিয়ে বসার তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছিলাম। কিন্তু আহত মানুষদের জন্যে ওদের দলটা খুব দ্রুত পালাতে পারেনি। তিনদিন পরেও আমাদের কয়েকজন তাদের দেখতে পেল, পশ্চিমে জঙ্গলের গভীরে। আমাদের ছেলেরা, ওদের এতটুকুও সুযোগ না দিয়ে, আবার আক্রমণ করল সেই হীনবল দলটাকে। এবার সবাইকেই হত্যা করল নির্দ্বিধায়, মহিলাদের এমনকি বাচ্চাদেরও...”!
                
    পিতা পশুপতি থমথমে গম্ভীর মুখে মাথা নাড়লেন, অস্ফুট স্বরে বললেন, “এ যে অনর্থক গণহত্যা! এ তো প্রকৃতির নিয়ম নয়, এ যে মহা অপরাধ! পাপ!” তাঁর মুখের অজস্র বলিরেখায় এখন বিরক্তি!  
    পিতা পশুপতি হঠাৎই উঠে দাঁড়ালেন, সঙ্গের যুবকটিকেও ফেরার ইশারা করলেন। গিরিজ উঠে দাঁড়িয়ে পিতা পশুপতির দুই হাত ধরে বললেন, “আপনি কী চলে যাচ্ছেন?”
    “হ্যাঁ”।
    “আবার আসবেন তো?”
    “তার কী কোন প্রয়োজন আছে?”
    “নেই?” বৃদ্ধের স্বরে অদ্ভূত আকুতি। পিতা পশুপতি তাঁর চোখের দিকে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ তারপর ঘুরে দাঁড়িয়ে সঙ্গী যুবককে নিয়ে ফেরার পথে এগিয়ে চললেন দ্রুত। তিনি পিছন ফিরে আর তাকালেন না। তাকালে দেখতে পেতেন, সেই বৃদ্ধ এবং দলের অন্য সবাই, এমনকি সেই সঙ্গী-পুত্রহারা মিত্তিকাও জোড়হাতে দাঁড়িয়ে আছে এবং একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে তাঁর পথচলার দিকে।

    পিতা পশুপতির দলটি পরের দিন সকালেই তাদের পুরোনো এলাকায় ফেরার জন্যে প্রস্তুত হচ্ছিল। প্রস্তুত হবার ছিলটাই বা কী? শুকনো লতার ঝুলিতে পাথরের অস্ত্রগুলো, হাতে হাতে কাঠের বা বাঁশের বল্লম, আর কিছু পশুর চামড়া – বুনো ছাগল, ভেড়া আর শুয়োরের। গতদিনের শিকার করা কিছু খরগোশ, মেঠো ইঁদুর আর সংগ্রহ করা কিছু খাম-আলু ছিল, সেগুলো ঝলসে বা পুড়িয়ে খেয়ে দলটি যখন রওনা হতে যাচ্ছে, সে সময় পিতা পশুপতির কাছে এসে উপস্থিত হলেন, গিরিজ ও মিত্তিকা। তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে দুজনেই জোড়হাতে নমস্কার করলেন, তারপর জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনারা কী আজই চলে যাচ্ছেন?”
    নিজের দলের সবার দিকে একবার তাকিয়ে পিতা পশুপতি বললেন, “হ্যাঁ”।
    এবার মিত্তিকা সাগ্রহে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমরা কী আপনাদের সঙ্গে যেতে পারি?”
    পিতা পশুপতি মাথা নেড়ে দৃঢ়স্বরে বললেন, “না। আমাদের দলের সকলের খাদ্য-সংস্থান করাই আমাদের কাছে কখনও কখনও দুরূহ হয়ে ওঠে, তার ওপর আপনাদের দলে প্রায় পঁয়ত্রিশ জন। অসম্ভব। তাছাড়া আপনাদের দল অত্যন্ত উদ্ধত এবং নিষ্ঠুর। আমাদের দলকে একবার পরাস্ত করেছিলেন, তারপরে আরও একটি দলকে আপনারা নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন! অতএব, আমার উত্তর একটাই “না”।”
    “কিন্তু আপনি তো গতকাল নিজেই গিয়েছিলেন সহমর্মীতার বার্তা নিয়ে, তাহলে আজ আমাদের প্রত্যাখ্যান করছেন কেন?”
    স্মিত হাস্যে পিতা পশুপতি বললেন, “প্রত্যাখ্যান তো করিনি মা, যেটা সত্য সেটাই বললাম। এখনকার দুর্বলতা থেকে তোমাদের দলকে বের করে আনতে হবে, তোমাকেই। আমরা তোমাদের বড়ো জোর সাহায্য করতে পারি, কিন্তু বহন তো করতে পারি না। তাছাড়া...”।
    বৃদ্ধ গিরিজ অধীর আগ্রহে জিজ্ঞাসা করলেন, “তাছাড়া?”
    হাসিমুখে পিতা পশুপতি বললেন, “আমরা কোনদিন, কোনখানে আবার হয়তো মিলিত হব। কিন্তু সেই সাক্ষাতে আমরা গণ-হত্যার লড়াইতে সামিল হব, নাকি মৈত্রীর গণ-আলিঙ্গনে আবদ্ধ হব - সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আপনার দলের আচরণের ওপর”।
     
    দলের সকলেই তখন রওনা হওয়ার অপেক্ষায়, পিতা পশুপতি ওঁদের দুজনকে নমস্কার করে, দলের সঙ্গে যোগ দিলেন। তাঁর দলের অন্য সকলেও জোড়হাতে নমস্কার করল তাঁদের দুজনকে। গিরিজ ও তাঁর কন্যা জোড়হাতে তাকিয়ে রইলেন পিতা পশুপতির দিকে এবং তাঁর দলটির দিকে। মিত্তিকার দুই চোখ ঝাপসা হয়ে এল অশ্রুতে, তিনি অস্ফুটে বললেন, “খুব শিগ্‌গিরি আমাদের আবার দেখা হবে, বাবা, আমাদের বড়ো প্রয়োজন আপনাকে”।

    আজ সকালে সেই গিরিজ আর মিত্তিকা হঠাৎ কোথা থেকে উদয় হলেন? কী বলতে চান ওঁরা?

    চলবে...  
    (২৫/০৩/২২-এ আসবে পরবর্তী অধ্যায়।)

                         

    [1] বিটহোফেন এই বানানটা সচরাচর চোখে পড়ে না। সঠিক নাম খুঁজতে গিয়ে দেখলাম, কেউ বলেছেন, বিঠোভেন, বিটোফেন, বিঠোফেন...। শেষ অব্দি গুগ্‌লের জার্মান উচ্চারণের শরণাপন্ন হলাম।   

    [2]
      এই লিংকে ক্লিক করলে দেখতে পাবেন, BBC – Earth এর একটি ভিডিও ক্লিপিং। কালাহারি মরুভূমিতে মিরক্যাটদের ঠকিয়ে ড্রংগো কিভাবে তাদের খাবার জোগাড় করে, তার নিখুঁত দৃশ্য। ধারাভাষ্য দিয়েছেন স্যার ডেভিড অ্যাটেনবরো, তাঁর পরিচয় দেওয়ার আশা করি প্রয়োজন নেই।   
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ১৮ মার্চ ২০২২ | ১৩৩৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত প্রতিক্রিয়া দিন