এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • শিক্ষায় সমস্যা এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন

    Sumit Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৫ জুন ২০১৮ | ১৬০৬ বার পঠিত
  • (সম্প্রতি গুরুচণ্ডালির ফেইসবুক গ্রুপে Gour Adhikary বাবুর শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে একটি অসাধারণ লেখা পড়লাম। বেশ কিছু প্রশ্নের জবাব চেয়েছেন তিনি সেখানে। এরমধ্যে কয়েকটি প্রশ্নকে সাজিয়ে লিখলে এরকম হয়, "যারা ফেইল করে, তারা কেন সামান্য পাশ মার্ক জোগাড় করতে পারে না? এরা কি বইগুলো একটু ছুঁয়েই দেখে না? না কি বইই নেই? নাকি মাথায় সত্যিই গোবর পোরা? কারাই বা এরা? এরা কি স্কুলে যায় নিয়মিত ? না গেলে কেন যায় না?... মানব সম্পদ উন্নয়নের সাথে এই প্রশ্নগুলোর সম্পর্ক আছে, তাই এটা নিয়েই লিখছি...)

    এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনায় মানবসম্পদ উন্নয়নের সম্পর্ক আছে ভেবে মনে হল এটা নিয়ে কিছু লেখা দরকার। এই প্রপঞ্চের আরও অনেক কারণ আছে, কিন্তু অন্যগুলোর আগে মানবসম্পদ উন্নয়নের বিষয়টি লেখা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে। তাই এখানে মানবসম্পদ উন্নয়ন বা হিউম্যান রিসোর্স ডেভলপমেন্ট নিয়ে কিছু লেখার এই চেষ্টা... বিভিন্ন কারণে, যেমন দক্ষ জন শক্তি সৃষ্টির পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, প্রচলিত সমাজ কাঠামোর পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বস্তুগত মূলধনের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, জন সম্পদের গুণগত মান বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও জনসাধারণের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের জন্য মানবসম্পদ উন্নয়ন এখন প্রতিটি রাষ্ট্রের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এই মানবসম্পদ উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হচ্ছে শিক্ষা।

    এখন এই মানবসম্পদের উন্নয়নের বিষয়টিকে শুধুই সাবজেক্টিভ বলে মনে হতে পারে, তবে একে পরিমাপযোগ্য বানানো যায়। এই হিউম্যান ডেভলপমেন্ট ইনডেক্স পরিমাপের জন্য ভারতের অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ও পাকিস্তানের অর্থনীতিবিদ মাহবুব উল হক একটি সূচক বা ইনডেক্স তৈরি করেছেন, যার নাম হিউম্যান ডেভলপমেন্ট ইনডেক্স বা সংক্ষেপে HDI. মোট তিনটি বিষয় এর অবস্থা পরিমাপ করে বিভিন্ন অঞ্চলের HDI বের করা হয়, আর সেই মানটি দেখেই বোঝা যায়, আসলে সেই অঞ্চলের মানব সম্পদ উন্নয়নের কী অবস্থা। এই তিনটি বিষয় হচ্ছে, আয়ুস্কাল, জ্ঞান ও জীবন যাত্রার মান। আয়ুষ্কাল মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবন যাত্রার মান তার ক্রয়ক্ষমতা নির্দেশ করে (জিডিপি থেকে), আর নলেজ নির্দেশ করে শিক্ষা। এগুলো সবই পরিমাপযোগ্য, যার পরিমাপের বিভিন্ন নিয়ম থাকে। তবে এর কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, যেমন আয়বৈষম্য বা সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে থাকা বৈষম্যকে এখানে বিবেচনা করা হয় না, আরেকটি সমালোচনা হচ্ছে, জেন্ডার ইকুইটি বা নারী পুরুষের মধ্যকার লিঙ্গবৈষম্য এখানে বিবেচনায় নিয়ে আসা হয়না। যাই হোক, এই সব বিষয় বিবেচনায় এনে এডজাস্টেড HDI-ও নির্ণয় করা যায়, যা অনেক ক্ষেত্রেই HDI থেকে ভিন্ন হয়।

    এখন আলোচনার বিষয় হল শিক্ষা, তাই শিক্ষাতেই চলে আসি। হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইন্ডেক্সে যে তিনটি বিষয় আছে সেই তিনটির জন্যই আলাদা আলাদা ইন্ডেক্স বের করে তারপর সেখান থেকে হিউম্যান ডেভলপমেন্ট ইনডেক্স বার করা হয়। শিক্ষার জন্য যে ইন্ডেক্সটি আছে তার নাম হল এডুকেশন ইনডেক্স। এডুকেশন ইন্ডেক্স বের করতে মানুষ কত গড়ে কত বছর পড়াশুনা করছে (Mean Years of Schooling), কত বছর পড়াশুনা করবে বলে আশা করছে (Expected Years of Schooling) এসব ডেটা লাগে। এখন মিন ইয়ার অফ স্কুলিং এর স্ট্যান্ডার্ড ধরা হয় ১৫ বছর, আর এক্সপেক্টেড ইয়ার অফ স্কুলিং ধরা হয় ১৮ বছর। তাই মিন ইয়ার অফ স্কুলিংকে ১৫ দিয়ে আর এক্সপেক্টেড ইয়ার অফ স্কুলিংকে ১৮ দিয়ে ভাগ করে পাওয়া যায় যথাক্রমে মিন ইয়ার অফ স্কুলিং ইনডেক্স ও এক্সপেক্টেড ইয়ার অফ স্কুলিং ইনডেক্স। এরপর এই দুটো গড় করে পাওয়া যায় এডুকেশন ইনডেক্স।

    প্রশ্ন আসতে পারে, এখানে আলোচনা হচ্ছে কতজন ফেইল করল, কতজন বই ছুঁয়েই দেখল না, কতজন পড়াশুনা করছে না এসব নিয়ে, সেখানে মিন ইয়ারস অফ স্কুলিং, এক্সপেক্টেড ইয়ারস অফ স্কুলিং এর কথা আসছে কেন? আসছে কারণ এই পড়াশুনা না করতে পারা, ভাল মার্ক্স না পাওয়া এসবের কারণ যেগুলো স্কুলে না পড়তে পারার কারণ, শিক্ষাজীবন নিয়ে খুব একটা এক্সপেক্টেশন না থাকার কারণও মোটামুটি একই। এই এডুকেশন ইনডেক্সই একটি অঞ্চলের শিক্ষার সামগ্রিক অবস্থাকে নির্দেশ করে। আর তাই এগুলো থেকেই এর সামগ্রিক অবস্থার অবস্থা বোঝা যায়।

    ২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী ভারতের এডুকেশন ইনডেক্স হচ্ছে ০.৫৩৪, এক্সপেক্টেড ইয়ারস অফ স্কুলিং হল ১১.৭ বছর আর মিন ইয়ারস অফ স্কুলিং হচ্ছে ৬.৩ বছর। এডুকেশন ইন্ডেক্সে সবকটা দেশের মধ্যে ভারতের র‍্যাংকিং হচ্ছে ১৩১। আমার দেশ বাংলাদেশের অবস্থা আরও খারাপ, এর র‍্যাংকিং হচ্ছে ১৫৪, এডুকেশন ইনডেক্স হচ্ছে ০.৪৫৭, এক্সপেক্টেড ইয়ারস অফ স্কুলিং হল ১০.২ বছর আর মিন ইয়ারস অফ স্কুলিং হচ্ছে ৫.২ বছর। সমগ্র মানব সম্পদের উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে HDI র‍্যাংকিং-এ ভারত ১৩১ তম আর বাংলাদেশ ১৩৯ তম। এডুকেশন ইন্ডেক্সে প্রথম স্থানে আছে অস্ট্রেলিয়া (০.৯৩৯), দ্বিতীয় স্থানে ডেনমার্ক (০.৯২৩) ও তৃতীয় স্থানে আছে নিউজিল্যান্ড (০.৯১৭)। HDI র‍্যাংকিং-এ এই তিন দেশের অবস্থান যথাক্রমে ২য়, ৫ম ও ১৩শ। HDI র‍্যাংকিং-এ শীর্ষে থাকা দেশ নরওয়ে এডুকেশন ইনডেক্স এর র‍্যাংকিং-এ আছে ৪র্থ স্থানে (০.৯১৬)।

    বেশ কিছু কারণে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোতে মানবসম্পদ উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্ত হয়, যেগুলোর প্রায় সবগুলোই শিক্ষার সাথে সম্পর্কিত। আমি বাংলাদেশের মানুষ, এই দেশে কী কী সমস্যা আছে তা নিয়ে একটু ধারণা আছে, কয়েকটি উল্লেখ করছি... (কথাগুলো অতিশয় পাঠ্যপুস্তকীয়, আমরা সবাই মোটামুটি জানি, তবুও এর গুরুত্বের জন্যই পুনরালোচনা করছি...)

    *অবহেলিত শিক্ষা খাত: স্বাধীনতার পূর্বে এবং পরবর্তী কিছুকাল সময় দেশের শিক্ষাখাতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল অত্যন্ত কম ৷ কিন্তু সাম্প্রতিক কালে শিক্ষাখাতে প্রচুর ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। তবে সে তুলনায় শিক্ষকদের দক্ষতা এবং স্কুল-কলেজের ভৌত সুবিধাদি বাড়েনি৷ তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ মেধাবী ও প্রতিক্রুতিশীল শিক্ষার্থীদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করা যায়নি৷ ফলে দেশে ভাল শিক্ষকের অভাব রয়েছে৷ একজন ভাল শিক্ষক তৈরি করতে পারেন ভাল ছাত্র, আর ভাল ছাত্র একটি দেশের মানব সম্পদ।

    *যুগোপযোগী শিক্ষার অভাব: দেশের বর্তমান চাহিদার তুলনায় মানব সম্পদ গড়ে উঠছে না। দেশে শিল্প, কলকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদিতে দক্ষ কর্মকর্তা বা বিশেষজ্ঞের অভাব রয়েছে৷ অথচ সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত লক্ষ লক্ষ তরুণ আজ বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে দিন যাপন করছে৷ পড়াশুনা করেও যদি ভাল চাকুরির নিশ্চয়তা না পাওয়া যায় তাহলে পড়ার প্রতি আকর্ষণ অনেকটাই কমে, শিক্ষার্থীরা তখন ভিন্ন অলটারনেটিভ এর কথা ভাবে।

    *কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব: মানব সম্পদ উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট কারিগরি এবং সেবামূলক প্রতিষ্ঠান দেশে নেই৷ ফলে দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তোলা যাচ্ছে না।

    *তথ্যের ঘাটতি: মানব সম্পদের শ্রেণীভেদে চাহিদা পরিমাপ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে প্রয়োজনীয় যে কোন ধরনের মানব সম্পদ যোগান দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া সম্ভব হয় নি ৷ তথ্যের ঘাটতিতে মানব সম্পদ উরলয়ন ব্যাহত হচ্ছে ৷

    *দীর্ঘসূত্রিতা: মানব সম্পদ উন্নয়নের জন্য (শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে) যে অর্থ ব্যয় করা হয় তার ফলাফল পাওয়া সময় সাপেক্ষ ব্যাপার ৷ বর্তমানে মানব সম্পদ উন্নয়নে প্রচুর ব্যয় করা হচ্ছে। এ ব্যয়সমূহ অনেক ক্ষেত্রে যুক্তিযুক্ত নয়। হয়ত বিকল্প কৌশলে ব্যয় করলে আরও শুভ ফল পাওয়া যেত ৷

    *প্রশিক্ষণ কর্মসূচির অভাব: কাজে নিয়োজিত অবস্থায় প্রশিক্ষন কর্মসূচি প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে অনেক কম ৷ এছাড়া বয়স্ক শিক্ষা ব্যাপক পরিধিতে বিস্তার ঘটানো হয় নি ৷ এসব ক্ষেত্রে যে বিরাট সংখ্যক শিক্ষক ও প্রশিক্ষক দরকার তা আমাদের দেশে নেই।

    *এনজিও (Non-government Organization)-দের উপর নির্ভরশীলতা: বাংলাদেশে চতুর্থ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এনজিও এর মাধ্যমে পল্লী উন্নয়নের কৌশল গ্রহণ করা হয় ৷ এজন্য দেশে ৯৫১টি এনজিও-কে রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়, এদের কার্যক্রম সমন্বিত করা হয়। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিবারভিত্তিক উন্নয়নে শুধু ক্ষুদ্র প্রকল্প ব্যবহার করা হয়, যার দ্বারা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অবস্থার তেমন কোন পরিবর্তন ঘটেনি বরং অনেকে বলে, সামাজিক সংহতি ও পারিবারিক অবস্থান আরও দুর্বল হয়েছে।

    *রাজনীতিবিদদের অসহযোগিতা: সরকার মানব সম্পদ উন্নয়নের জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন৷ কিন্তু স্থানীয় সরকারের অঙ্গীভূত কিছু ব্যক্তি নিজ স্বার্থে সে সব অর্থ ব্যয় করার চেষ্টা করেন৷ ফলে জনস্বার্থে তা কোন কাজে লাগে না, মানবসম্পদ উন্নয়ন ব্যাহত হয় !

    *ক্রয় ক্ষমতার ঘাটতি: দেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রসার নির্ভর করে মানুষের ক্রয় ক্ষমতার উপর ৷ বাংলাদেশের জনসাধারণের মোট ১৩% মাত্র আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ পেয়ে থাকে ৷ আবার অধিকাংশ জন সাধারণের শিক্ষা উপকরণ ও বিদ্যালয়ের খরচ মেটানোর সামর্থ নেই ৷ ফলে মানব সম্পদ উন্নয়ন বিঘ্নিত হচ্ছে ৷

    *জাতীয়ভিত্তিক পরিকল্পনার অভাব: বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে মানব সম্পদ উন্নয়নের জন্য জাতীয়ভিত্তিক কোন মানব সম্পদ উন্নয়ন পরিকল্পনা নেই, বাংলাদেশে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় মানব সম্পদ উন্নয়নের কিছু কথাবার্তা অবশ্যই থাকে, কিন্তু প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের সংস্থান রাখা হয় না।

    শিক্ষার অবস্থা সহ সামগ্রিক মানব সম্পদ উন্নয়নের জন্য কয়েকটি বিষয় নিশ্চিত করা খুব জরুরি। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার সংশোধন ও পরিমার্জন, পেশাগত প্রশিক্ষণ, জনগণের সুস্বাস্থ্য, সম্পদের সুষম বণ্টন (যাতে দরিদ্র মানুষ উন্নয়ন কর্মকান্ডে অংশ নিতে পারে), কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি (বর্ধিত বেকার সমস্যার জন্য), গ্রাম ও শহরের সুষম উন্নয়ন: (গ্রামাঞ্চলে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর অধিকাংশের প্রচলিত শিক্ষা নেই), পরিবেশ উন্নয়ন, জনসংখ্যা সীমিত রাখা (জনগণের মাথাপিছু আয় বাড়বে এবং জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধি পাবে), প্রেষণা সৃষ্টি (যাতে কর্মক্ষম জনশক্তি শিক্ষিত হয়ে উৎপাদনশীল কর্মকান্ডে নিয়োজিত হয়) নিশ্চিত করতে হবে।

    আরেকটা কথা, বেকারসমস্যার সাথে নারীশিক্ষার বিষয়টি সম্পর্কিত। এই সমাজে পুরুষকে প্রধান উপার্জনকারী বলে মনে করা হয়, আর নারী কোন চাকরি করলে তাকে বিলাসিতা ধরা হয়। আমাদের সমাজের নিয়মটাই এমন যে পুরুষই সংসার চালাবে বলে আশা করা হয়, অন্যদিকে চাকুরিজীবী নারী একটি সংসার চালাবে না, বরং আরেকজন চাকুরিজীবী পুরুষকে বিবাহ করবেন আশা করা হয়। এই এক্সপেক্টেশন অসমতা পড়ে সরাসরি নারীর বেকারসমস্যা ও শিক্ষাখাতে। অনেক সময়ই বেকারসমস্যার কথা ভেবে (তার জায়গায় পুরুষকে চাকরি দিলে একটা সংসার চলবে, অর্থাৎ পুরুষের চাকরি বেশি প্রয়োজন এটা ভাবা হয়), আর বিয়ের পর বা সন্তান নেবার পর চাকরি করা বন্ধ করে দেবে এসব ভাবার কারণে নারীদেরকে বেকার সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে। এছাড়া দেখা যায়, নারীর বাবামা তার ভাল বিবাহ দেবার জন্যই পড়াচ্ছেন। হাই স্কুলে বা কলেজে ভাল কোন ছেলে পেলে বাবা মা সাথে সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়, আর এক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায় নারীর আর পড়াশুনা করা হয় না। একারণে নারীদের মিন ইয়ারস অফ স্কুলিং ও এক্সপেক্টেড ইয়ারস অফ স্কুলিং কম হচ্ছে।

    এদিকে নারীদের ক্ষেত্রে প্রেশণার অভাব একটি বড় সমস্যা। পুরুষের ক্ষেত্রে যেমন ছোট বেলা থেকেই সংসার চালাতে হবে একরকম পড়াশুনার জন্য চাপ দেয়া হয়, তেমনটা নারীর বেলায় সর্বস্তরে করা হচ্ছে না (বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে এটা সত্য)। এর কারণ নারীর বেলায় অর্থ উপার্জনের বিষয়টি আশা করা হয়না। আর এই কারণে তারাও পড়াশুনা করতে নিরুৎসাহিত হয়ে যায়, কারণ ভাল রেজাল্ট হোক, আর খারাপ রেজাল্ট হোক, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খুব একটা তারতম্য হয় না। আমার বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখা, ছাত্র পড়াশুনায় দুর্বল হলে স্কুলের টিচার তার বাসায় গিয়ে বাবা মাকে অভিযোগ দেয় যাতে ছেলেকে পড়তে চাপ দেয়া হয়, আর ছাত্রী পড়াশুনায় দুর্বল হলে স্কুল টিচার তাদের বাসায় গিয়ে তার বাবা মাকে পরামর্শ দেন, এই মেয়ে লেখাপড়ায় খারাপ, যত তাড়াতাড়ি পারেন বিয়ে দেবার চেষ্টা করুন। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আরও বেশি কর্মসংস্থান, চাকরির সুযোগ তৈরির সাথে সাথে সমাজ সংস্কারও জরুরি।

    যাই হোক, এগুলোকে উন্নয়ন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে অতি দ্রুত হারে মানব সম্পদ উন্নয়ন হবে বলে আশা করি। মানবসম্পদ উন্নয়নের সাথে উন্নত হবে দেশে শিক্ষার অবস্থা। ফেইল করা শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমবে, স্কুলগামী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৫ জুন ২০১৮ | ১৬০৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন