এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • কলেজ লাইফ এবং

    Lilaboti Lb লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৬ মার্চ ২০১৯ | ১২০৪ বার পঠিত
  • নতুন কলেজে ভর্তি হয়েছি। এরমধ্যে এক কান্ড হলো। কারা যেন ক্লাসের সবথেকে ভালো‌‌ ছাত্র যে পড়ালেখা ছাড়া কিছুই বোঝে না তার‌ সাথে আমার নাম লিখে দিলো দেয়ালে। আমি পরদিন কলেজে গিয়ে দেয়ালে দেখছি বড় বড় করে লেখা,

    Labonno, I love you, Tanvir

    একদল গবেষণা করে বলছে, তানভীর আমাকে ভালোবাসে তাই Labonno I love you লিখে নিজের নাম লিখেছে।

    আরেকদল‌ বলছে, আমি তানভীরকে ভালোবাসি তাই শুরুতে নিজের নাম লিখে, I love you Tanvir লিখেছি।

    আমি সদ্য গার্লস স্কুল থেকে পড়ে বেরিয়েছি। এই জাতীয় ঘটনার সাথে আমার পরিচয় নেই। গার্লস স্কুলে সর্বোচ্চ যেটা‌ হতো স্কুলের বাথরুমে এক মেয়ে আরেক মেয়ের নামে লিখে রাখত এমন করে, "সাদিয়া একটা কুটনী।" অথবা বোর্ড পরীক্ষা দিতে এসে অন্য স্কুলের ছেলেরা লিখে যেত, "মারুফা, তোমাকে ছাড়া আমার পৃথিবী অন্ধকার, প্রিয়া মেরি জান.."

    যদিও আমি এসবের শিকার‌ও কোনোদিন হ‌ইনি। কিন্তু কলেজে এসে এরকম ঘটনা দেখে আমি হতভম্ব। ক্লাসের সব ছেলেমেয়ে আমাদের নিয়ে হাসাহাসি করছে। এরমধ্যে অনেক ছেলে‌ যারা ভাবছিল কিছুদিনের মধ্যে আমাকে প্রপোজ করবে তাদের হৃদয় ভেঙ্গে গেছে। আমি পাশ দিয়ে গেলে তারা গান গাইছে, " আমি নিঃস্ব হলাম, ভালোবাসা হারালাম,ভালোবেসে কি পেলাম?"

    আমার যত রাগ গিয়ে পড়ল তানভীরের ওপর। তখন‌ও আমি ছেলেদের সাথে সেভাবে কথা বলতে সহজ‌ বোধ করতাম না। সুতরাং কলেজের যে স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়ি‌ তার কাছে নালিশ করলাম। তানভীর সেখানেও প্রাইভেট পড়ে তবে অন্য ব্যাচে।

    স্যারকে গিয়ে লেখাটা দেখালাম। স্যার বললো,এখন কি এটা মোছার ব্যবস্থা করব না প্রিন্সিপালের কাছে নালিশ দেব? আমি বললাম, স্যার প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে নালিশ দিন।

    পরদিন সকালে প্রিন্সিপাল স্যার,ভাইস প্রিন্সিপাল স্যার সবাইকে লেখাটা দেখালাম। "সূর্যের চেয়ে বালি গরম" প্রবাদবাক্যের মতো আমাদের প্রিন্সিপালের চেয়ে ভাইস প্রিন্সিপাল বেশী রাগী। তিনি কি কারণে যেন ছেলেদের শার্ট খোলাতে পছন্দ করেন। কোন‌ ছেলে ক্লাসে দেরী করে এসেছে, সিগারেট খেয়ে এসেছে,কোন মেয়ের পেছনে লেগেছে, শার্টের বোতাম খুলে রেখে ভাব মারছে সব অন্যায়ের একটাই শাস্তি। মেয়েদের সামনে দাঁড় করিয়ে ভাইস প্রিন্সিপাল স্যার বলবেন, শার্ট খোল।

    তানভীরকে ডেকে আনা হলো। ভাইস প্রিন্সিপাল স্যার বললেন, শার্ট খোল। তানভীর অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। স্যার দিলেন এক ধমক, শার্ট খোল!

    তানভীর শার্ট খুলতে শুরু করল। তখন শীতকাল। প্রথমে জ্যাকেট খোলা হলো, তারপর তার নিচে একটা ফুলহাতা সোয়েটার সেটা খোলা হলো, তারপর হাতাকাটা সোয়েটার সেটা খুলতে গিয়ে চেইন আটকে গেল।বহু টানাটানির পর সেটা খোলার পর দেখা গেল এখনো তিনটা বাকি।‌ শার্ট, শার্টের নিচে গেঞ্জি,তার নিচে নিশ্চয়ই স্যান্ডো গেঞ্জি আছে। স্যার ক্লান্ত গলায় বললেন, থাক। আর খোলা লাগবে না।

    সেদিনের মতো শাস্তি প্রক্রিয়া স্থগিত করা হলো। তানভীর আমার কাছে এসে অবাক গলায় বললো, কি হয়েছে?

    আমি রাগী গলায় বললাম,কি হয়েছে তুমি জানো না? দেয়ালে ঐটা কেন লিখেছ?
    সে আরো‌ অবাক হয়ে বললো,আমি তো কিছু লিখি নাই।
    আমি বললাম,নাটক‌ করো? তুমি এখন‌ কিছুই না জানার ভান ধরছো কেন? এতবড় লেখাটা তোমার চোখে পড়েনি?
    সে বলল, তানভীর তো‌ একটা না ক্লাসে। লাবণ্য অবশ্য একটাই...

    আমি রেগে আগুন হয়ে বললাম, লাবণ্য একটা হবে কেন? আমাদের ক্লাসে না হোক পুরো কলেজে বহুত লাবণ্য আর‌ তানভীর আছে কিন্তু এটা‌ আমাদের ডিপার্টমেন্টের সামনে লেখা‌ হয়েছে। তোমাকে আর আমাকে নিয়ে।

    তানভীর মাথা চুলকাতে চুলকাতে চলে গেল।

    পরদিন গার্জিয়ান কল করে আমার আর তার বাবাকে ডেকে আনা হয়েছে। তার বাবা সব শুনে বললো, আমার ছেলে এমন কিছু করতে পারে না।‌ সে পড়ালেখা ছাড়া কিছু বোঝে না।

    আমার আব্বুও রাগী গলায় বললো,তার মানে কি? আমার মেয়ে করতে পারে? এতকাল গার্লস স্কুলে পড়িয়েছি,বাড়িতে ম্যাডাম রেখে পড়িয়েছি আমার মেয়ে এরকম কাজ করার মতো মেয়ে না।

    তানভীর সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বললো, লজিকালি লাবণ্য আর আমি কেউ এটা করতে পারিনা। চলুন, প্রমাণ দিচ্ছি।

    আমরা সবাই লেখাটার কাছে গেলাম। তানভীর লেখাটার পাশে দাঁড়িয়ে দেখালো। বললো, দেখুন এটা কতোটা উচ্চতাতে লেখা হয়েছে।‌ স্বাভাবিকভাবে মানুষ দেয়ালে লেখার সময় তার নাক বরাবর লেখে না। একটু উচ্চতা রেখে লেখে। এই লেখাটা আমার নাক বরাবর। সুতরাং যে লিখেছে সে আমার চেয়ে খাটো। এখন‌ যেটা করতে হবে ক্লাসের সব ছেলেমেয়েকে এখানে দাঁড় করিয়ে মেপে মেপে দেখতে হবে যে....

    ভাইস‌ প্রিন্সিপাল স্যার ধমক দিয়ে থামিয়ে দিলেন।‌বললেন,লেখাটা মুছে ঝামেলা শেষ করা হোক।

    দেখা গেল দেয়ালে রীতিমতো খোদাই করা হয়েছে লেখাটা, কেটে বসানো‌ যেটাকে বলে। সুতরাং রংমিস্ত্রী ডেকে এনে সেই জায়গাটা রং করে লেখাটা‌ মুছতে হলো।

    ঘটনা‌ এখানেই থামল না। লিডার টাইপের একটা ছেলে যে নাকি আমাকে ভালোবাসত সে এই ঘটনা জানতে পেরে তানভীরকে পিটিয়ে আধমরা করে দিলো। সে এমন লেভেলের মানুষ যাকে প্রিন্সিপাল স্যার‌ও কিছু বলার সাহস রাখেন না।

    তানভীর হসপিটালে ভর্তি।‌‌ তার একপাশের পায়ের শিরা ছিঁড়েছে বা‌‌ হাড় ভেঙেছে সেটা সঠিক জানি না। আমি ওকে দেখতে হসপিটালে গেলাম।

    বললাম, আমি খুবই দুঃখিত। এতদিনে আমি এটুকু বুঝতে পেরেছি লেখালেখির ঐ কাজটা তুমি করোনাই। বাট মিলন ভাই যেভাবে তোমাকে পিটিয়েছে এটা খুবই অন্যায়। কিন্তু আমার কিছু করার নেই।

    তানভীর বললো, লজিকালি তোমার এখন যেটা করা উচিত সেটা‌ হলো আমার সাথে প্রেম।

    আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।

    তানভীর পরীক্ষার পয়েন্ট লিখছে এভাবে বলে যেতে লাগল,

    ধার্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভেবে দেখো, সৃষ্টিকর্তা মানুষকে মিলিয়ে দেন। ভাগ্য বিশ্বাস করো? তোমার আমার নাম নিয়ে যে এতকিছু লেখালেখি হয়েছে এর মানে ভাগ্য চায় আমরা দুজন এক হ‌ই।

    লজিকালি ভেবে দেখো, আমার সাথে রিলেশন করা তোমার জন্য ভালো। নতুন কলেজে উঠলে সুন্দরী মেয়েদের ওপর অনেক ছেলের নজর থাকে। তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড হয়ে গেলে আর কেউ তোমার পেছনে লাগবে না।

    পড়ালেখার সুবিধার্থে ভেবে দেখো, আমি ক্লাসের সবচেয়ে ভালো ছাত্র।‌ সাজেশন,নোটস এইগুলা দিয়ে আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারব।

    ভবিষ্যতের কথা ভেবে দেখো, আমি নিঃসন্দেহে বড় কিছু হবো। আমার সাথে প্রেম করলে তোমার লাভ আছে।

    নিজের নিরাপত্তার কথা ভাবো, পলিটিক্যাল ছেলেপুলে তোমার পেছনে লেগে আছে। আমি তোমার বফ হলে একসাথে কলেজে যাবো আসব। তোমাকে প্রটেকশন দেব।

    আরো কিছু বিষয় ভেবে দেখতে পারো যেমন....

    আমি ওর ভাঙ্গা পায়ের ওপর জোরসে একটা ঘুষি বসালাম। সে সজোরে চিৎকার করে উঠতেই আমি বেরিয়ে চলে এলাম। এবার‌ মিলন গুন্ডাকে ফোন‌ দিয়ে বলতে হবে ওর বাকি এক পা ভেঙ্গে দিতে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৬ মার্চ ২০১৯ | ১২০৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন