এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • পাগল

    জান্নাতুল ফেরদৌস লাবণ্য লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৭ জুলাই ২০১৯ | ১০৭৬ বার পঠিত
  • বিয়ের আগে শুনেছিলাম আজহারের রাজপ্রাসাদের মতো বিশাল বড় বাড়ি! তার ফুপু বিয়ে ঠিকঠাক ‌হবার পর আমাকে গর্বের সাথে বলেছিলেন, "কয়েক একর জায়গা নিয়ে আমাদের বিশাল বড় জমিদার বাড়ি আছে। অমুক জমিদারের খাস বাড়ি ছিল সেইটা। আজহারের চাচা কিনে নিয়েছিলেন।"

    সেইসব গল্প শুনে আমাদের বাড়ির সবাই ধরেই নিল ছেলে বিরাট কিছু।‌ এতবড় জমিদার বাড়ির একমাত্র ছেলে! আর কিছু দেখার দরকার নাই।

    এসে দেখি সত্যিই বিশাল বড় বাড়ি। ভুতুড়ে টাইপ। জায়গায় জায়গায় ভেঙে ভেঙে পড়ছে। রান্না করছি, হঠাৎ‌ই রান্না ঘরের একটা অংশ ভেঙে পড়লো। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় আজহার মিনমিন করে নিচু গলায় বলবে, বামের ঘরটাতে গিয়ে ঘুমাবা আজকে? মনে হচ্ছে ঝড়বৃষ্টি হবে। এই ঘরে বৃষ্টি পড়লে আবার একটু ইয়ে মানে,পানি পড়ে আরকি। ভিজে যাবা!

    আমি বিরক্ত চোখে তাকিয়ে পাশের ঘরে চলে যাই। এসবে আমার এখন অভ্যাস হয়ে গেছে।

    আজহার কিছুই করে না। তার কর্মকাণ্ড কিছুটা রহস্যময়। বিয়ের আগে শুনেছিলাম BBA,MBA,LLB হেন তেন কয়েক রকমের ডিগ্রির কথা। কিন্তু বাস্তবিক সে কোন চাকরি করে না। সারাদিন শুয়ে বসে থাকে আর মাসশেষে লন্ডন প্রবাসী বড়ভাইয়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সংসার চালায়। সারাদিন পায়ের ওপর পা তুলে বসে থাকে, বেশীরভাগ সময় ঝিমায়,বাদবাকি সময় খবরের কাগজ পড়ে "দেশের হচ্ছেটা কি?" বলতে বলতে আফসোস করে নাহলে খেলা দেখতে বসে অপজিট দলকে গালাগালি করে।

    আমি ত্যক্ত,বিরক্ত,অসহ্য সবরকম নেতিবাচক অনুভূতির সংমিশ্রণে ঠিক করলাম আজহারের সাথে থাকবো না।‌ এতবড় অকর্মণ্য,অলস,অপদার্থ ছেলের সাথে আস্ত একটা জীবন কাটানোর কোন অর্থ হয় না। জীবন একটাই। মুসলিম ধর্মে পুনর্জন্ম বলে কিছু নেই। থাকলে একটা জীবন আজহারের সাথে জলে ভাসিয়ে দিতাম।

    থাকবো না সিদ্ধান্ত নিয়েও কিভাবে কি করবো সেসব কিছুই ঠিক করতে পারলাম না। ক‌ই যাবো? ক্যামনে যাবো? যেভাবে কাজী ডেকে বলেছিলাম,বিয়ে পড়ান। সেভাবেই আদালতে গিয়ে উকিলকে বলবো, ডিভোর্স পড়ান? কেমনে কি? ডিভোর্স নিতে নিশ্চয়ই অনেক টাকা-পয়সা লাগে? কাজী অফিসের মতো কোনো ডিভোর্স অফিস তো নাই যে গিয়ে বলবো, ডিভোর্স দেন। ডিভোর্স কি কোন তেল,মশলা,হলুদ,লবণ যে গিয়ে মুদি দোকান থেকে কিনে নিয়ে আসবো?

    ডিভোর্স কিভাবে দেয়? এই চিন্তায় চিন্তায় আমার দিন কাটতে লাগলো। উকিলকে ডিভোর্সের কারণ কি বলবো? আমি কি বলবো যে আজহারের বাড়ি ভেঙে ভেঙে পড়ে? নাকি বলবো, ও বেকার,বড় ভাইয়ের টাকায় চলে? এটাও বলা যায় যে আজহার সারাদিন বসে বসে ঘুমায়,ঘুমের মধ্যে নাক ডাকে। ওর ফেভারিট টিম হচ্ছে গিয়ে পেরু। পেরু কেউ সাপোর্ট করে? আর্জেন্টিনা,ব্রাজিলের বাইরে স্পেন বা পর্তুগাল সাপোর্ট করলেও মানা যায়। পেরু সাপোর্ট করলে তো মানা যায় না!

    রাতে খেতে বসে অনেক চিন্তা ভাবনা করে ভাবলাম নিজেই ওকে বলে ফেলি যে আমি ওকে ডিভোর্স দিতে চাই।

    -শোনো, একটা কথা আছে তোমার সাথে.....

    আজহার কোন উত্তর দেয়ার আগেই ওপর থেকে ছাদের খানিকটা অংশ ভেঙে খাবার টেবিলে পড়লো। আজহার স্বাভাবিক ভঙ্গিতে প্লেট নিয়ে বারান্দায় যেতে যেতে বললো, আসো বারান্দায় বসে খাওয়াটা শেষ করি। এই ঘরটা আজ‌ই ভেঙে পড়বে। অবস্থা ভালো না।

    আমি চিন্তিত গলায় বললাম, এখানে থাকলে তো আমরা ঘর চাপা পড়ে মরে যাবো!

    আজহার সহজ গলায় বললো, তা পড়বা না। আমার ভেতরে একধরনের ইনট্যুইশন কাজ করে। কবে কোন ঘরটা ধ্বসে পড়বে ভাব দেখে বুঝতে পারি। আজ আমরা ঘুমাবো উত্তরের ঘরটাতে। ওটার অবস্থা ভালো।

    আমি বললাম,দেখো! একটা কথা পরিস্কার করে বলে দিচ্ছি। আমি তোমার সাথে বাস করতে চাই না। তোমার কর্মকাণ্ড আর তোমার বাড়িঘর দেখে আমার মোহভঙ্গ হয়েছে।‌ আমাকে আমার বাপের বাড়িতে দিয়ে আসো। আমি তোমাকে ডিভোর্স দেবো।

    আজহার হালকা হেসে উড়িয়ে দেয়ার ভঙ্গিতে বললো, আচ্ছা দিও!

    আমি সন্দিহান চোখে তাকালাম। বললাম, আচ্ছা দিও বললে চলে নাকি! কিভাবে দেবো কি করে দেবো? প্রসেসিংটা কি?

    আজহার বললো, কাল খবরের কাগজে একটা খবর দিয়ে দাও যে "গৃহবধূ নির্যাতন!" তুমি ডিভোর্স পেয়ে যাবা আর আমি যাবো জেলে। একদিকে ভালো। ঘরবাড়ি যেভাবে ভেঙে পড়ছে কয়দিন পর আমি থাকবো ক‌ই বলো? তুমি নিশ্চয়ই তোমার বাড়িতে আমাকে জায়গা দিবা না।

    আমি অবাক স্বরে বললাম, কিন্তু তুমি তো আমাকে নির্যাতন করছো না! খামাখা আমি মিথ্যা বলতে যাবো কেন?

    আজহার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। নিজের সাথে কথা বলছে এমন ভঙ্গিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো, কি আর করা যাবে বলো! আমি তো মেয়ে ন‌ই! মেয়ে হলে তুমি আমাকে ডিভোর্স দিলে দেনমোহরের টাকা পাইতাম! সেই টাকায় বাড়ি ভাড়া করে থাকতাম। কিন্তু তা তো সম্ভব না! আর এই বাড়িও ভেঙে ভেঙে পড়ছে, তোমাকে নিয়ে আমি যাবো ক‌ই! তোমার বাপ মা কি আর ঘরজামাই রাখবে আমাকে! তাইজন্য সবচেয়ে সহজ সমাধান জেলে যাওয়া। এইজন্য জেলকে বলা হয় শ্বশুরবাড়ি!

    আমি বিরক্ত গলায় বললাম,তুমি তো মানসিক রোগী! চাইলে পাগলা গারদেও থাকতে পারো।

    আজহার মাথা নাড়লো। বললো, না গো! তুমি কিছু জানো না। আমার ফুপু তোমাকে কিছু বলেনি। আমি তো পাগলা গারদে থেকে এসেছি। ওখানকার সিস্টেম ভালো না।

    -কিহ!!!!

    আজহার হাসলো। বললো, আমার আগের ব‌উটার‌ও সেম কেস ছিল। তোমার মতো ডিভোর্স ডিভোর্স করতো। তারপর আমাকে পাগল বানিয়ে ডিভোর্স চাইলো। সেখান থেকে গেলাম পাগলা গারদে। পাগলা গারদে রোগীদের শকটক দেয়ার সিস্টেম থাকে। এগুলা অনেক কষ্টের। আমার ফুপু সেইজন্য আমাকে ওখান থেকে নিয়ে এসে এই ভাঙ্গা বাড়িতে এনে ফেলে রাখলো। তাই এইবার ভাবছি জেলে গিয়ে থাকি। এর পরেরবার কোথায় থাকবো সেটা ওখানে বসেই ঠিক করবো। কি বলো? লজিক ঠিক আছে না?

    আমি ফ্যাকাশে ভঙ্গিতে হাসলাম, চোরের‌ও ধর্ম আর পাগলের‌ও লজিক! কোনদিকে দৌড় দেবো এখন সেই চিন্তা করছি।

    লেখা- জান্নাতুল ফেরদৌস লাবণ্য
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৭ জুলাই ২০১৯ | ১০৭৬ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    আকুতি - Rashmita Das
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন