এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  রাজনীতি

  • পূর্ব আরব এবং ব্রিটিশ ভারতঃ স্বার্থের সুতোয় বাঁধা এক বিচিত্র সম্পর্ক

    মোহাম্মদ কাজী মামুন লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | রাজনীতি | ২৪ ডিসেম্বর ২০২২ | ৬৬১ বার পঠিত
  • পারস্য উপসাগরের ক্ষুদ্র দ্বীপদেশ বাহরাইন। মুক্তো চাষের জন্য সেই অতীত কাল থেকে প্রসিদ্ধ। এই দেশটিতেই ভ্রমনরত কোন পর্যটক যদি বাহরাইন ন্যাশনাল মিউজিয়াম পরিদর্শন করে, একটি আশ্চর্য বিষয় লক্ষ্য করবে, আর তা হল, ব্রিটিশ যুগের উল্লেখ নেই কোথাও। এমনকি দেশটির রাজার যে নিজস্ব ইতিহাস লিখিত হয়েছে, সেখানেও নেই ব্রিটিশ প্রভুত্বের কোন নাম-নিশানা। তবে শুধু বাহরাইন না, পারস্য উপসাগরের কোল ঘেঁষে থাকা অন্য দেশগুলির চিত্রটা প্রায় একই রকম। অথচ শেখ-শাসিত এই দেশগুলোর ইতিহাসে ব্রিটিশরা জড়িয়ে আছে শিরা-উপশিরার মতই, যা কেটে দিলে রক্তক্ষরণ হয়ে মৃত্যু ঘটতে পারে ইতিহাসের। সেই আশংকা থেকেই কিনা, কিছু স্থানীয় ঐতিহাসিক ব্রিটেনকে একদম বিদেয় করে দিচ্ছেন না ইতিহাসের পাতা থেকে। তারা তাকে রাখছেন বটে, তবে তা আবির্ভূত হবে প্রথমে শোষণ ও নির্যাতন বিদেশী শক্তি কর্তৃক, পরে প্রতিরোধ স্থানীয় জনসাধারণ কর্তৃক এবং শেষে স্বাধীনতা – এমন একটি চেনা গল্প নিয়ে। মজার ব্যাপার হল, এভাবে একটি গল্প রচনা করতে হলে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা, আর একটি নগন্য সংখ্যক ব্যক্তিমতকে সর্বসাধারণের মত হিসেবে দেখাতে হবে। কাজটি কঠিন, কারণ ব্যাপারটি ইতিহাসের সুবিশাল ভ্রমন পথে প্রশ্নের জন্ম দেবে ঝাঁকে ঝাঁকে; যেমন, রক্ত ও ধ্বংসের যে হোলিখেলা অংকিত হয়েছিল ফিলিস্তিন, মিশর, সাইপ্রাস বা ইয়েমেন থেকে ব্রিটিশদের পাততাড়ি গোটানোর কালে, তার ছিটেফোঁটাও কি পরিলক্ষিত হয়েছিল  ১৯৭১ সালের শেষ মাসগুলোতে শেখ শাসিত উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে ব্রিটিশদের বিদায়কালে? এমন আরো অনেক প্রশ্ন ইঙ্গিত দেয় যে, ব্রিটিশ আধিপত্যকালে যা বিস্তৃত ছিল ১৮২০-১৯৭১ পর্যন্ত,  ইতিহাসের স্রোত কিছু অন্য ধারায় বয়েছে উপসাগরীয় দেশগুলোর উপকূলে, চেনা খাতের বাইরে, অন্য কোন বাঁকে।

    বলা হয়, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে সূর্যাস্ত যেত না। সারা দুনিয়ায় ছিল এই সাম্রাজ্যবাদের নাগপাশ, উলম্ব জিহবা। কিন্তু শেখ-শাসিত দেশগুলো হাতে পায়ে ধরে ডেকে এনেছিল এই জিহবাকে, কোন ছল-বল-কৌশল করতে হয় সাপকে জিহবা বিস্তারে। কিন্তু কেন এই আহবান? কোন ভিক্ষার তরে অবনত মস্তক আর করজোর প্রার্থনা ভারতে অবস্থিত ব্রিটিশরাজের দরবারে? ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, তিন প্রকারের সাহায্য চাওয়া হয়েছিল। প্রথমটি ছিল কুটনৈতিক, যেখানে পরষ্পর যুধ্যমান উপসাগরীয় শাসকদের মধ্যকার শান্তি আলোচনায় সালিসি করতে ব্রিটিশ প্রভুকে প্রয়োজন পড়েছিল। শুধু তাই নয়, আলোচনা থেকে কোন সন্ধি বা যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছুতে পারলে, তাতে জামানতকারী হওয়ার জন্য নিকটস্থ ব্রিটিশ সরকারের প্রতিনিধিকেই সব থেকে উপযুক্ত মনে হত তাদের। দ্বিতীয় সাহায্যটি  ছিল নৌ সম্বন্ধীয় যেখানে সামুদ্রিক চুক্তির শর্তগুলো মানতে বাধ্য করার জন্য ব্রিটিশ দন্ড কামনা করা হত। এছাড়া শেখসাম্রাজ্য ও তাদের অধীনস্ত প্রজাদের নৌ-শত্রুর আক্রমন থেকে প্রতিরক্ষার তরেও ব্রিটিশ হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করা হত। আর সর্বশেষ ও ৩য় প্রার্থিত সাহায্যটি ছিল সামরিক, অর্থাৎ, তাদের অধীনস্ত এলাকাগুলোকে স্থলপথে বহিঃশত্রুর আক্রমন থেকে রক্ষা করা। তবে এসব ছাড়াও আরো কিছু ভূমিকায় ব্রিটিশকুশীলবরা অবতীর্ণ হয়েছিলেন এবং বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতির গতিপথ চিরদিনের জন্য নির্ধারন করে দিয়েছিলেন, এঁকে দিয়েছিলেন অর্থনৈতিক ভুগোলের এক স্থায়ী মানচিত্র অনাগত কালের জন্য।

    উপসাগরে ব্রিটিশ কীর্তিকলাপকে গাঁথা যায় মোটাদাগে চারটে পর্বে। প্রথম পর্বে, ব্রিটিশরা অনেক গাইগুই করে, আশংকার মেঘে মুখ ভার করে শেষমেশ দায়িত্ব নিচ্ছে শেখ শাসকদের প্রতিরক্ষার, দ্বিতীয় পর্বের সময়কাল উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগ ও বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ, সেই সময়টাতে ব্রিটিশ আশ্রয়দাতা উপসারীয় আরব শাসকদের বিদেশ নীতি প্রনয়ন ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেয়। এই পর্বেই দেশগুলোকে ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্যের অধীনস্ত করে বর্হিবিশ্বের নজর থেকে পুরো বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয় এবং এক সময় ব্রিটিশ আস্তিনে ঢুকিয়ে ফেলা হয়। ৩য় পর্বটি অনুষ্ঠিত হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর যখন ব্রিটেন উপনিবেশক উপসাগরের তেল বানিজ্যকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রন করতে শুরু করে এবং এ সংক্রান্ত শাসন ও শোষনব্রত নিষ্ঠার সাথে পালন করতে থাকে। তাছাড়া, এই পর্বেই একাধিক  বিমানঘাঁটি নির্মান করতে দেখা যাবে  ব্রিটেনের মূল ভূখন্ডের সাথে তার এশিয় উপনিবেশগুলোকে যুক্ত করার অভিপ্রায়ে। সর্বশেষ, অর্থাৎ, চতুর্থ পর্বে, ব্রিটেইনকে দেখা যাবে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করতে, যাতে করে উপসাগরের দেশগুলো আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার শর্তগুলো পূরণ করতে সক্ষম হবে। অবশ্য বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে উপসাগরের দেশগুলোতে ব্রিটিশ শাসন আরব জাতীয়তাবাদী ও সমাজতন্ত্রীদের ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে এবং উপসাগরের জলস্রোতকে বিদায় জানাবে শাসকবর্গের ইচ্ছের বিপরীতেই,  অভ্যন্তরীন রাজনৈতিক প্যাচে পড়ে।   

    প্রথমদিকে অনিচ্ছা থাকলেও ইন্ডিয়ার ব্রিটিশ শাসক পরবর্তীতে একে একে, যেমন, ওমানের জন্য ১৮২৯ সালে, সমঝোতা চুক্তির আওতাধীন রাজ্যসমূহের (অধুনা সংযুক্ত আরব আমিরাত) জন্য ১৮৩৫ সালে, বাহরাইনের জন্য ১৮৬১ সালে, কুয়েতের জন্য ১৮৯৯ সালে, কাতারের জন্য ১৯১৬ সালে    প্রটেক্টর বা রক্ষাকর্তার ভূমিকাটা আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করে আর প্রত্যাশার সাথে সাজুয্য রেখেই দায়িত্ব পালন করে যায়। আর একই সাথে মক্কেলের দেয়া কমিটমেন্টকে যথাযথ সন্মান দেখাতে পিছুপা হয় না আলোচ্য আরব শাসকেরা।

    উপসাগরের শেখ শাসিত দেশ ও তাদের উপনিবেশগুলোর সামরিক ব্যবস্থা খুব দুর্বল ছিল এবং বৈরীভাবাপন্ন আঞ্চলিক শক্তিধর দেশগুলির আক্রমন থেকে বাঁচার জন্য যথেষ্ট ছিল না। তবে এক ব্রিটিশ অফিসার যেমন বলেছেন, এসব দেশের প্রতিটি পুরুষের হাত উদ্যত থাকতো তার প্রতিবেশীর দিকে - এও অতিরঞ্জিত; কারণ একটি কূটনৈতিক ব্যবস্থা অবশ্যই থেকে থাকার কথা যা একটি ন্যূনতম স্থিতিশীলতা ও অনুমানযোগ্যতার যোগান দিয়ে থাকবে অঞ্চলটিতে, যেই কোড অব কন্ডাক্ট ভালভাবেই রপ্ত করবে ব্রিটিশ প্রটেক্টর তাদের দায়িত্ব সুচারুভাবে পালনের জন্য। একটি দুর্বল রাজ্য বা গোত্র একটি শক্তিশালী দেশ বা গোত্রের কাছে প্রতিরক্ষা চাইবে, এটাই ছিল প্রাচীন আরবীয় রীতি যা যুগ যুগান্তর ধরে স্থিতিশীলতার জাল বুনে গেছে আরব সমাজে। একজন সাহায্য চাইলে তা না দেয়াটা ছিল সন্মানের সাথে বড় ধরণের আপোষ করা। উপসাগরের উপরের অঞ্চলগুলিতে ‘দাখালা’ ও নিম্ন অঞ্চলগুলিতে ‘জাবানা’ নামে পরিচিত এই আশ্রয় রীতির আওতায় আশ্রিতের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে আশ্রয়দাতার কাছে তা করা যেত, আর আশ্রয়দাতা জনগনের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকতেন। এই আশ্রয়দানের পুরুষ্কার হিসেবে ‘খুওয়া’ নামক  রাজস্ব ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল, যা হতে পারতো একটি নির্দিষ্ট অংকের অর্থ, কৃষিজ পণ্য (যেমন, খেজুর), একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ঘোড়া, উট ইত্যাদি পশু, অথবা যুদ্ধোপযুক্ত কোন যুবক। যদিও খুওয়ার অর্থ ভ্রাতৃত্ব ফি, এটি সবসময় ভ্রাতৃত্ব থেকে উৎসরিত হত না। অনেক সময় খুওয়ার লোভেই আঞ্চলিক শক্তিগুলো দুর্বলের উপর আক্রমন করতো। কোন দুর্বল গোত্র যদি কোন শক্তিশালী প্রটেক্টর যোগাড় করতে ব্যর্থ হত, তখন যুদ্ধে করে নিশ্চিত পরাজয় বরণ করার চেয়ে শক্তিশালী গোত্রের বশ্যতা স্বীকার করে নেয়ার পথকেই বেছে নিতো, এবং কর স্বরূপ নিজেদের একটি ভুখন্ড ছেড়ে দিতে হত শক্তিশালী গোত্রকে, যার শাসনভার আবার দুর্বল গোত্রপতির কাঁধেই চাপতো, অবশ্যই শক্তিশালী গোত্রপতির প্রতিনিধি হিসবে। এই চিত্রনাট্য ব্রিটিশযুগের আগে থেকেই মঞ্চায়িত হত,  যখন অটোমান, ফার্সি, সউদিস, ওমানিজ, শারজাহর কাওয়াসিম , রাস আল-খাইমাহ – ইত্যাদি আঞ্চলিক শক্তির সাথে উপসাগরের দুর্বল শাসকরা গাটছাড়া বাঁধতো। ব্রিটিশরা শুধু চিত্রনাট্যটি আরো পরিমার্জনা করে গিয়েছে।

    ব্রিটিশদের সাথে শেখ শাসকদের সম্পর্কটা শুরু হয় সামুদ্রিক চুক্তিগুলো দিয়ে, যা অবশ্যই উপর থেকে চাপিয়ে দেয়া হয়নি, বরং শাসকদের ইচ্ছে ও প্রত্যাশার পথে বেয়েই তারা পৃথিবীর মুখ দেখেছে। এই সম্পর্কগুলো অনেকগুলো সরকারের সম্মিলিত কার্যকরনের ফল। এর মধ্যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি (১৬০০-১৮৫৮) এবং ইন্ডিয়া অফিস (১৮৫৮-১৯৪৭)  পরিচালিত  বম্বে ও ইন্ডিয়ার ব্রিটিশ সরকারের কুটনীতিকরা প্রাথমিক কাজগুলো করেছেন। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর থেকে কাজ করেছেন লন্ডনের ফরেন অফিসের কুটনীতিকরা।
    ব্রিটিশ স্বার্থ আরব উপসাগরে সীমাবদ্ধ ছিল তিনটি ক্ষেত্রে; বম্বে ও বসরার মধ্যে শিপিং লেন পরিচালনা করা, ইন্ডিয়া ও ব্রিটেনকে সংযুক্ত করা সিরিয়ার আলেপ্পোর মধ্য দিয়ে, এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্য নিশ্চিত করা ইরাক, ইরান ও ওমানের সাথে। সুতরাং, সেদিক থেকে ব্রিটিশ স্বার্থের ঢেউ পূর্ব আরবের ওমানের মাস্কাটকে ছাড়িয়ে আর ধাবিত হয়নি ঊনবিংশ শতাব্দীর আগে।  কিন্তু ১৭৯৭ সনে নিম্ন উপসাগরে টোল প্রথা চালু করে আরব শাসকদের একটি পরিবার, যা চাদাবাজি, ও দস্যুতা হিসেবে বিবেচিত হয় ভারতের ব্রিটিশ সরকারের কাছে।  অনেক অভিযান পরিচালনার পর অবশেষে ১৮২০ সালে ইংরেজরা একটি ‘জেনারেল ট্রিটি’ বা ‘সাধারণ চুক্তি’ করতে সক্ষম হয় যার অধীনে হরমুজ প্রণালীর কিসম দ্বীপে একজন রাজনৈতিক এজেন্ট নিয়োগ দেয়া হয় চুক্তির অধীনে ব্রিটিশ স্বার্থকে রক্ষা করতে। পরে এই পদটি ‘পলিটিকাল রেসিডেন্ট’ বা ‘রাজশক্তির প্রতিনিধি’ হিসেবে আখ্যায়িত হয় যার কাজ হয়ে দাঁড়ায় আরব শাসকদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা এক দল উপপ্রতিনিধি নিয়োগের মাধ্যমে। একই সময়ে, অর্থাৎ, ১৮২১ সনে পারসিয়ান গালফ স্কোয়াড্রন গড়ে তোলা হয় উপসাগরে টহল দেয়ার জন্য। এই স্কোয়াড্রনে ৫-৭টি জাহাজ,  ২-৪টে গানবোট এবং নৌকামান ছিল। এই জেনারেল ট্রিটি এত আকাংখিত ছিল যে উপসাগরের পার্ল ব্যবসায়ীরা প্রতিটা গানবোটের জন্য ২০  মারিয়া থেরেসা ডলার বা ২০ রুপি রাজস্ব দিতে প্রস্তাব করলো। একের পর এক প্রস্তাব আসতে শুরু করলো প্রটেকশানের পলিটিকাল রেসিডেন্টের কাছে। ১৮০৫ থেকে ১৮৬১ সালের মধ্যে কমপক্ষে ৯৮টি প্রস্তাব পান তিনি। প্রাথমিকভাবে রেসডিন্ট এ সকল প্রস্তাব প্রত্যাখান করতেন, শুধু ক্ষেত্রবিশেষে গালফ স্কোয়াড্রনের মাধ্যমে সেবা প্রদান করতেন। ব্রিটিশ প্রতিনিধির কাছে মনে হত যে, প্রতিরক্ষা বা সুরক্ষার সাথে সম্পর্কিত খরচ এ থেকে প্রাপ্ত আয়কে ছাড়িয়ে দিতে পারে। এরকমও ভাবা হয়েছিল, আশ্রিত শাসকেরা তাদের প্রজাদের সমর্থনের উপর আর নির্ভর করবে না এবং স্বৈরাচারী হয়ে পড়বে যা দীর্ঘমেয়াদে ব্রিটিশ স্বার্থকে বিঘ্নিত করবে। মাঝেমধ্যে মধ্যস্থতা করলেও পলিটিক্যাল রেসিডেন্ট গ্যারান্টি দিতে চাইতেন না।  ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান গভর্নমেন্ট একমাত্র ওমানকে ১৮০৯ সালে প্রতিরক্ষার কমিটমেন্ট দিয়েছিল, সউদি আধিপত্য (যা ব্রিটিশদের চোখে উপসাগরীয় শান্তির জন্য বড় ধরনের হুমকি ছিল) থেকে রক্ষা করতে।

    ১৮৩৫ এর মে মাসে চারজন শেখ, অর্থাৎ,  আবু ধাবি, দুবাই, আজমান, এবং শারজাহ, রাস আল-খাইমাহ, এবং লিনগাহ্‌ এর  কাওয়াসিম সামুদ্রিক চুক্তি করলেন তৎকালিন ব্রিটিশ রেসিডেন্টের সাথে যেখানে ছয় মাস মুক্তো চাষের কালে (মে-অক্টোবার) কোন প্রকার নৌযুদ্ধের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।  এই চুক্তি নানাকারণে ঐতিহাসিক ছিল, পুরো উপকূল জুড়ে স্বস্তির বাতাস বয়ে গিয়েছিল, কারন ব্রিটিশ রেসিডেন্ট সত্যিকারের রক্ষাকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল। ১৮৩৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই ষান্মাষিক চুক্তিকে চিরস্থায়ী চুক্তিতে রুপান্তর করার আহবান জানান শারজাহর শেখ। কিন্তু ব্রিটিশরা এটি প্রত্যাখান করেন, কারণ, তাদের মতে, আরব শাসকদের হিংসা ছয়মাসের জন্য বন্ধ করা যাবে না যদি তারা আবার তা জাগিয়ে তুলে তৃপ্তির পথ খুঁজে না পান। ১৮৩৮ সালে বরং একটি বারো মাসের চুক্তি হয় শারজার শেখের অনুরোধে। পরে সেটির সাফল্য দশবছরের চুক্তিতে পৌঁছে দেয় ১৮৪৩ সনে। শেখদের মনোভাব এই সময়ের মধ্যে এতটাই পরিবর্তিত হয়েছিল যে তারা আর রেসিডেন্টের মধ্যস্থতার প্রয়োজন অনুভব করছিল না, নিজেরাই প্রতিকার করছিলেন কেউ চুক্তি লংঘন করলে। এরই প্রেক্ষিতে ১৮৫৩ সালে চিরস্থায়ী চুক্তি হয় এখনকার আরব আমিরাতের অঞ্চলগুলির মধ্যে, যা পরে অন্য উপসাগরীয় রাজ্যগুলিও অনুসরন করে। ১৮৩৮ এর পূর্বে ব্রিটিশ সরকার ‘নো প্রটেকশান’ নীতি অনুসরন করতো, সেই তারাই এখন ‘ইমারজেন্সি প্রটেকশান’ নীতি অনুসরন করতে শুরু করে, যা ব্রিটিশ অনুমোদিত শাসকই শুধু ভোগ করতে পারতো। ১৮৫১ সনে ব্রিটিশ সরকার ‘আনঅফিসিয়াল প্রটেকশান’ নীতি গ্রহণ করে যা কার্যকর হবে যেকোন শাসকের উপর, তা সে  সরকারের অনুমোদিত হোক বা না হোক। ১৮৬১ সনে বাহরাইনকে ‘চিরস্থায়ী প্রটেকশান পলিসি’র আওতায় আনা হয়, তবে শর্ত থাকে যে, শাসককে নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে জনগনের সাথে সদ্ভাব রেখে।

    সামুদ্রিক চুক্তির পর রাষ্ট্রগুলো ইন্ডিয়ান ব্রিটিশ সরকারের সাথে আরো বিভিন্ন চুক্তিতে উপনীত হয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘এক্সক্লুসিভ এগ্রিমেন্ট’ যার মধ্য দিয়ে বৈদিশিক নীতি বিষয়ে রাষ্ট্রগুলোর সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা লোপ হয় ১৮৮০- ১৯১৬ এর মধ্যে। ওমান অবশ্য এর মধ্যে আসেনি, ১৮৬২ এর অ্যাংলো ফ্রেঞ্চ ডিক্লারেশনের কারণে। তবে সার্বিক বিচারে, তাদের অবস্থান প্রটেকটেড স্টেট এর মতই ছিল। এক্সক্লুসিভ এরেঞ্জমেন্ট এর মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার অটোমান, জার্মান, ফরাসী, ও রাশিয়ান প্রভাববলয় থেকে পূর্ব আরব উপসাগরের দেশগুলোকে মুক্ত করে আনলেন, মূল উদ্দেশ্য ছিল যাতে তারা কেউ নৌ ঘাঁটি করতে না পারে, কারণ তা ভারতে ব্রিটিশ স্বার্থের জন্য ক্ষতিকারক হত। ফারুক হার্ড বে খুব সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছেনঃ“শেখ শাসিত দেশগুলো ও ওমান অর্ধ স্বাধীন দেশের চিত্র উপস্থাপন করে’’ যাদের অবস্থান “ভারতীয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের উত্তর সীমান্ত থেকে শুরু করে এর পশ্চিমের সাগরতটের ঠিক মাঝ বলয় ঘিরে”। বিংশ শতাব্দীর ত্রিশের দশকে তেল আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ সরকারের নীতি কেন্দ্রীভূত হয় উপসাগরে ব্রিটিশ সরকারের তেল সরবারহের নিরাপত্তাকে ঘিরে। একজন রেসিডেন্ট বা রাজপ্রতিনিধির ভাষায় এই সময় দেশগুলোকে ঘিরে ব্রিটেনের নীতি ছিলঃ “আরবের শেখ-রাজ্যগুলোর স্বাধীনতা বজায় রাখা ততক্ষণ যতক্ষণ তারা আইনশৃঙ্খলা সংরক্ষন ও সমুন্নত করে যাবে এবং এমন একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু রাখবে যা সন্তুষ্ট করবে বা সহ্য করে নেবে তাদের প্রজাবৃন্দ। যদি চাপিয়ে না দেয়া হয়, তাহলে কোন আভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা হবে না। কিন্তু একই সঙ্গে কোন বৈদিশিক শক্তিকে প্রতিরোধ করা হবে প্রভাব সৃষ্টির প্রচেষ্টা বা কোন বিশেষ সুবিধা প্রাপ্তি থেকে।“ তেল নীতি ব্রিটিশকে কাতার ও আরব আমিরাতের সাথে স্থল প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে উদ্বুদ্ধ করে, ভারতের স্বাধীনতার পরেও উপসাগরে থেকে যেতে প্রণোদিত করে।

    আরব শাসকদের জন্য ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা নানা দিক থেকে উপকারী ছিল। প্রথমত, এতে রাজত্বে তাদের অবস্থান সংহত হয়েছে, অন্যদিকে, তাদের শাসিত ভুখন্ডের  রাজনৈতিক অবস্থান ও মর্যাদা পরিবর্ধিত ও শক্তিশালী হয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে তারা প্রজা দমনে স্বৈরতান্ত্রিক পন্থা গ্রহণ করতে পেরেছে ব্রিটিশ বলে বলীয়ান হয়ে। দ্বিতীয়তঃ অভ্যন্তরীন গোত্রপতি এবং স্বাধীনভাবে পরিচালিত অঞ্চলগুলোকে এই আরব শাসকেরা তাদের অধীনে আনতে পেরেছেন, যেহেতু ঐ ক্ষুদ্র রাজ্যগুলোর উপর ব্রিটিশ অনুমোদন ছিল না। এভাবে করদ রাজ্য বাড়িয়ে রাজ্যের সীমা বড় করা গেছে। তবে উপসাগরীয় শাসকেরা কিছু ক্ষতিরও স্বীকার হয়েছেন। প্রথমতঃ বাইরের কিছু রাজ্য যাদেরকে তারা তাদের অংশ মনে করতেন, তাকে দখলে আনার জন্য কোন আক্রমন চালনা করতে পারেননি সামুদ্রিক চুক্তির শর্তকে মানতে গিয়ে। যেমন, বাহরাইনের উপর ওমানসহ অনেকেরই আগ্রহ ছিল। দ্বিতীয়তঃ সামুদ্রিক ও এক্সক্লুসিভ চুক্তি অনুযায়ী,  জবাবদিহির একচ্ছত্র ক্ষমতা অর্পিত ছিল ব্রিটিশ রেসিডেন্টের উপর, যখন তখন যেকোন আরব শাসককে তিনি ডকে তুলতে পারতেন বিচারের জন্য। তৃতীয়তঃ ব্রিটিশ সরকারের উপসাগরীয় প্রতিনিধি তার ক্ষমতাবলে যেকোন শাসককে উৎখাত করতে পারতেন, যে তার দৃষ্টিতে সাম্রাজ্যের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করছে না। উদাহরণস্বরুপ,  বাহরাইনে তিনজন শাসককে উৎখাত করা হয়, একজন গভর্নরকে নির্বাসন দেয়া হয়। চতুর্থতঃ আরব শাসককে প্রায়ই দেশী প্রজা ও ব্রিটিশ প্রশাসকের পরষ্পর বিরোধী স্বার্থকে মোকাবেলা করতে হত। প্রায়ই দেখা যেত, ব্রিটিশ বণিক বা ব্রিটিশ আশ্রিত ও পালিত প্রজাদের সুবিধা প্রদান করতে যেয়ে স্থানীয় প্রজাদের ঠকাতে হত; ফলে তাদের চোখে শাসনের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ হতো। অন্যদিক, স্থানীয় প্রজাদের সুবিধা দেখতে গিয়ে ব্রিটিশদের অবজ্ঞা করলে ব্রিটিশ আক্রমন বা সমর্থন প্রত্যাহারের আশংকা থাকতো। এভাবে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা নীতি আরব শাসকের মর্যাদা শক্তিশালি করলেও তার কৃর্তৃত্বকে ঠুনকো করে ফেলে।
    প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে আরবের পুবের দেশগুলোতে ব্রিটিশ স্বার্থ সীমাবদ্ধ ছিল শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, ব্রিটিশ জাহাজ ও প্রজাদের রক্ষা করা, ইংল্যান্ড থেকে ইন্ডিয়ার যোগাযোগ চ্যানেলকে নিরাপদ করা, এবং প্রতিদ্বন্দী শক্তিসমূহ, অর্থাৎ, রাশিয়া, ফ্রান্স ও জার্মানিকে এই অঞ্চলে নৌ ঘাঁটি বা অন্য স্থাপনা গড়ে তোলা থেকে বিরত রাখা। প্রথম ও বিশ্বযুদ্ধের অন্তর্বর্তীকালে পূর্ব আরব নিজের কারণেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে ব্রিটিশ শাসকের কাছে। এখানে তারা বিমান ঘাঁটি, রাজকীয় নৌঘাঁটি, আরএএফ স্টেশান প্রভৃতি গড়ে তোলে। তেলের আবিষ্কার জায়গাটিকে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। অবকাঠামো, বিমান চলাচল ও তেল ব্যবসার অপার সম্ভাবনা হাতছানি দিয়ে ডাকতে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আরবের তেল ও বিনিয়োগের উপর ব্রিটিশ আগ্রহ আরো বেড়ে যায়। ভারত স্বাধীনের পর উপসাগরের ব্রিটিশ  প্রতিনিধিত্ব নয়াদিল্লী থেকে লন্ডনের উপর অর্পিত হলে এমন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, ব্রিটিশ সরকারের আইনগত না হলেও নৈতিক দায়িত্ব এই দেশগুলির উন্নয়নে সব রকমের সমর্থন যোগানো। এই অবস্থায় আরব উপসাগরের দেশগুলির তেল সম্পদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা ব্রিটিশ সরকারের অন্যতম বিদেশ ও প্রতিরক্ষা নীতি হয়ে দাঁড়ায়। ব্রিটিশ শাসিত ভারতীয় সরকার কুয়েত, বাহরাইন, কাতার, অধুনা সংযুক্ত আরব আমিরাত, এবং ওমানের কাছ থেকে অংগীকারনামা আদায় করে যে, তারা ব্রিটিশ সরকার অনুমোদিত কোম্পানিকেই শুধু তেল রেয়াৎ সুবিধা প্রদান করবে। উদ্দেশ্য ছিল, ব্রিটিশ নয় এমন কোম্পানিগুলোকে ছাড়ের বাইরে রাখা অথবা যদি সেগুলোকে ছাড় প্রদান করাও হয়, তা ব্রিটিশ সরকারের তদারকি ও রক্ষনাবেক্ষনের আওতায় আনা। ব্রিটিশ সরকার এই দেশগুলোকে তাদের তেল থেকে অর্জিত উদ্বৃত্ত আয় ব্রিটেনে বিনিয়োগে উৎসাহিত করে। সাড়া দিয়ে কুয়েত ব্রিটেনের সব থেকে বড় বিনিয়োগকারী হয়ে দাঁড়ায়, এমনকি লন্ডনে কুয়েত ইনভেস্টমেন্ট বোর্ড গঠিত হয়।

    প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সাম্র্যাজ্যের বিভিন্ন অংশকে সস্তায় যুক্ত করার কৌশল থেকে কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, দুবাই, শারজাহ ও ওমানের শাসকদের কাছ থেকে বিমানঘাঁটি স্থাপনের অনুমতি পায় ব্রিটিশ শাসক। ১৯৩২ সালে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ ব্রিটেন থেকে বাগদাদ, বসরা, বাহরাইন, শারজাহ, গোয়াদার হয়ে ইন্ডিয়া পর্যন্ত রুটে প্যাসেঞ্জার ও ডাক সার্ভিস চালু করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, উপসাগরিয় বিমান ঘাঁটি সুয়েজ খাল ও রাজকীয় নৌ ঘাঁটির মতই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।

    প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর উপসাগরীয় দেশগুলোতে ব্রিটেনের উপদেশ ও সাহায্যে সকল আধুনিক সরকারী দপ্তর গড়ে উঠে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও গণপূর্তসহ প্রায় সবকিছুর প্রথম ডিরেক্টর ছিলেন স্থানীয় শাসকের অধীনে নিয়োজীত একজন ব্রিটিশ নাগরিক। হ্যালক্রোর মত ব্রিটিশ ফার্ম প্রকৌশলী এবং স্থাপত্যবিদ সরবারহ করেছে উপসাগরীয় শহরগুলোর ভবন, বিমানবন্দর ও সেতু নির্মানে। ব্রিটিশ কাউন্সিল উপসাগরীয় দেশগুলোর মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে এবং শিক্ষাবৃত্তি দিয়েছে ছাত্রদের। ১৯২০ সন থেকে ব্রিটিশ সরকার স্থানীয় শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিয়ে মনোযোগী হয়ে উঠে এবং ছয়টি স্থানীয় পুলিশ ইউনিট, তিনটে আরএএফ লেভি ইউনিট, বিশটির বেশী সামরিক ইউনিট গড়ে তোলায় সহযোগীতা করে যারা ব্রিটিশ প্রশাসকের পরিবর্তে স্থানীয় শাসকের কাছেই দায়বদ্ধ ছিল।  

    উপসাগরীয় শাসকদের কাছে ব্রিটিশ রেসিডেন্ট একজন প্রতিনিধি মাত্র ছিল না, সে নিজেই যেন ছিল একজন পূর্ণ শাসক, উপসাগরের কোল  জুড়ে থাকা দেশগুলোর উপর যার ছিল একচ্ছত্র কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা, যার থেকে শক্তিশালী বা প্রভাবশালী শাসকের কথা তাদের অভিধানে ছিল না। তারা তাকে রইস আল-খলজি (উপসাগরের প্রধান), ফখামাত আল-রইস (মাননীয় প্রধান) ইত্যাদি খেতাবে ভূষিত করেন শ্রদ্ধাবনত চিত্তে। এই শ্রদ্ধার সংগত কারণ ছিল; কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া পুরো সময়টা জুড়ে এই ব্রিটিশ অভিভাবকত্ব উপসাগরীয় দেশগুলোকে পুষ্টি যুগিয়েছে। অন্যদিকে, ব্রিটিশ স্বার্থও সংরক্ষিত হয়েছে, উপসাগরীয় দেশগুলো অন্য সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর থাবা থেকে মুক্ত থেকেছে, এর মাটি ও জল ব্রিটিশদের শক্তিশালী সামরিক ঘাঁটির কাজে ব্যবহৃত হয়েছে,  এর তেল সম্পদ ব্রিটিশদের পুরো কুক্ষিগত থেকেছে একটা সময় পর্যন্ত। এই প্রটেকশান আরোপিত ছিল না, অন্যান্য দেশের মত চাপিয়ে দেয়া ছিল না। উপসাগরীয় দেশগুলোর আমন্ত্রণে ভারতীয় ব্রিটিশ সরকার তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রতিরক্ষা দিয়েছে, শান্তি ও স্থিতিশীলতার বাতাবরণ তৈরী করতে পেরেছে, উন্নত রাষ্ট্রের অবকাঠামো গড়ে দিয়েছে। পরবর্তীতে আরব জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্রের উপর ভর করে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বড় ধরণের ঝাঁকি খেয়েছে, কিন্তু এর শেকড় এত গভীরে প্রথিত ছিল যে এখনো আলোচ্য দেশগুলিতে ব্রিটিশ শাসনের গন্ধ পাওয়া যায়; এর রাস্তাগুলো, দালানগুলো, উপসাগরের পানি যেন সাক্ষ্য দিতে থাকে এক নিবিড় ও অভূতপূর্ব সম্পর্কের, আশ্রিত ও আশ্রয়দাতার, যা উভয়ের ইচ্ছেতেই ঘটেছে, এবং যা পারষ্পরিক স্বার্থের সুতোয় শক্ত করে বাঁধা ছিল। তাই তো তাকে ছিন্ন করা যায়নি আজও, যতই চাপা দিয়ে রাখার চেষ্টা করা হোক না কেন। 
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ২৪ ডিসেম্বর ২০২২ | ৬৬১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • guru | 103.175.168.131 | ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ ১০:১০514827
  • অনেক ধন্যবাদ লেখককে অবশেষে জিসিসি কে পূর্ব আরব বলে উল্লেখ করবার জন্য |
     
    একটি কথা আপনি বলছেন গোয়াদার সেই সময় আকাশপথে যুক্ত ছিল ব্রিটিশ ভারতের সঙ্গে | এটি বর্তমানের বিখ্যাত বন্দর যা বহুল আলোচিত |
     
    কিন্তু আমি যতদূর জানি এই অঞ্চলটি সেই সময়ে ওমান রাজার সাম্রাজ্যের অন্তর্গত একটি বিচ্ছিন্ন ও অনুন্নত অঞ্চল ছিল | এই বিষয়টি একটু বিস্তারিত ভাবে বলবেন ?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত প্রতিক্রিয়া দিন