ছবি - র২হ
রণাঙ্গনে
মেসোপটেমিয়াতে আব্রাহাম ব্যবসা করে দিন গুজরান করছিলেন। ঈশ্বর তাঁকে বললেন হেথা নয়, তোমাদের জন্যে আমি একটা বাসস্থান স্থির করে রেখেছি। যাও সেথা। অতএব ভেড়া গোরু ঠেঙ্গিয়ে গুষ্টি শুদ্ধু আব্রাহাম এলেন জুদিয়া। সেখান থেকে একদিন পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে ইহুদিরা মিশর গেলেন। মোজেস তাদের ফেরালেন আপন দেশে। কিন্তু সঙ্কট পিছু ছাড়ে না। প্রথমে অ্যাসিরিয়ানরা পরে ব্যাবিলনের রাজা তাদের খেদালেন। ফিরে যদিও এলেন কয়েকশ বছরের ভেতরে রোমান রাজা এসে তাদের মন্দির ধ্বংস করলেন, জেরুসালেম পোড়ালেন।
ইহুদি ঘর ছাড়া হল।
ইউরোপে তারা দেখা দিল এক যাযাবর জনতা রূপে। সব দেশে তারা বিদেশি । ১৩শ শতাব্দীতে পোল্যান্ডের রাজা বোলেস্লাভ পূর্ণ নাগরিকতা না দিলেও খানিকটা স্বীকৃতি দিলেন। বাকি ইউরোপ তাদের দূর ছাই করছে। আইন করে ১২৯০ সালে ইংল্যান্ড, ১৪৯২ সালে স্পেন তাদের বহিষ্কার করল। নরওয়ে সুইডেন ডেনমার্ক প্রবেশ নিষেধ বোর্ড টাঙ্গিয়ে দিলো।
রনাঙ্গনে ইহুদিদের নামার কোন প্রশ্ন ওঠে না তখন।
ফরাসি বিপ্লবের কারণ ও তাহার ফলাফল সম্বন্ধে যাহা জান তাহা লিখ। এই ধরনের প্রশ্ন আসতো বরানগরে স্কুলের ইতিহাস পরীক্ষায়।
ইউরোপের ইতিহাসে ফরাসি বিপ্লবের পরে লিখিত সংবিধানটিও বিপ্লবী! প্রথমত এটি সম্পূর্ণ ভাবে ঈশ্বর বর্জিত – ইউরোপের প্রথম সেকুলার সংবিধান। ইউরোপীয় ইতিহাসে ইহুদিরা প্রথম পেলেন নাগরিক অধিকার। ১৭৯১।
বাস্তিল পতনের তিন বছরের মধ্যে আনসেলম নরদাঁ হলেন প্রথম ইহুদি সামরিক অফিসার। ইহুদি সৈনিক লড়েছেন নাপোলেওঁর বাহিনীতে।
তার একশো বছর বাদে, ১৮৯৪ সালে, ফরাসি সৈন্য বাহিনীর এক ইহুদি ক্যাপ্টেন আলফ্রেড দ্রাইফুসকে (আক্ষরিক অর্থে তিনটে পা) জার্মান সরকারের কাছে গোপন রাষ্ট্রীয় তথ্য সরবরাহ করার সাজানো অভিযোগে ক্যারিবিয়ানের কুখ্যাত ডেভিলস আইল্যান্ডে যাবজ্জীবন নির্বাসন দেওয়া হয়। আসল আসামি এস্টারহাজিকে নামমাত্র বিচারের প্রহসন করে মুক্তি দেওয়া হল। দ্রাইফুসের পুনর্বিচারের জন্য ফ্রান্সে যে গুঞ্জন ওঠে তাতে গোটা দেশ হল দুই ভাগে বিভক্ত।
একদিকে ন্যায় বিচারের দাবিতে সোচ্চার হলেন সারা বারনহারড, আনাতোল ফ্রাঁস, জর্জ ক্লেমানশ সহ অনেক বরেণ্য ফরাসি লেখক ও গুণী ব্যক্তি। এমিল জোলা একটি খোলা চিঠি লিখলেন ফরাসি রাষ্ট্রপতিকে : , জাকুস (আমি অভিযোগ করছি) । লরোরে কাগজের প্রথম পাতায় এটি ছাপা হল ১৮৯৮ সালে ১৩ই জানুয়ারি। এই চিঠি লেখার কারণে এমিল জোলার বিরুদ্ধে মামলা করল ফরাসি সামরিক কর্তৃপক্ষ। এক বছরের কারাবাস এবং সে আমলের সর্বাধিক অর্থদণ্ড ৩০০০ ফ্রা নির্ধারিত হল। এ ধরনের ঘটনা আর কোন দেশে ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। ১৯০২ সালে জোলার অন্ত্যেষ্টি যাত্রার সঙ্গী, আনাতোল ফ্রাঁস বললেন-
এবার আমি বলি
ঈর্ষা করো তাঁকে : তিনি তাঁর দেশ ও দুনিয়াকে সম্মানিত করেছেন তাঁর প্রতিবাদে
ঈর্ষা করো তাঁকে : তাঁর হৃদয় আমাদের করেছে সমৃদ্ধ
তিনি ছিলেন মানুষের বিবেকের একটি মুহূর্ত।
অন্যদিকে ফ্রান্সের পুরনো ইহুদি বিদ্বেষ তার কণ্ঠ খুঁজে পেলো। কট্টর জাতীয়তাবাদী ফরাসিরা জেগে উঠলেন - ইহুদিদের জন্য ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা, ফরাসি সভ্যতা বিপন্ন। সে ক্রোধ এমনি রুদ্র রূপ নিয়েছিল যে এমিল জোলা আনাতোল ফ্রাঁসের মত মানুষের প্রাণ নিয়ে টানাটানি। একশোর বেশি জেলায় ইহুদিদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, তাদের সম্পত্তির বিনাশ চলল -পুলিস নির্বাক দর্শক মাত্র (হিটলারের বয়েস তখন ন বছর, গোয়েরিঙের ছয় : আইখমানের জন্মাতে আট বছর দেরি আছে) । কোন প্রমাণ ছাড়াই পুনর্বিচারে দ্রাইফুসের সাজা আরও দশ বছর বাড়ানো হল। তাঁকে জানানো হল তিনি মুক্তি পাবেন যদি অপরাধ স্বীকার করেন। পাঁচ বছর ডেভিলস আইল্যান্ডের কঠোর জীবনে ক্লান্ত দ্রাইফুস তাতেই সই করে মুক্ত হলেন (ডাসটিন হফমান অভিনীত পাপিলন ছবিতে ডেভিলস আইল্যান্ড চিত্রায়িত হয়েছে)। সামরিক বাহিনীতে পুনর্বাসন হল দ্রাইফুসের। তিনি জার্মানির বিরুদ্ধে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন।।
দ্রাইফুসের বিচারের পরিহাস ও প্রকট ইহুদি বিদ্বেষের এই কাহিনি ইউরোপে সাড়া জাগায়। চল্লিশ বছর বয়সী এক অস্ট্রিয়ান ইহুদি সাংবাদিক দ্রাইফুসের মামলার বিবরণ পাঠাচ্ছিলেন ভিয়েনার নয়ে প্রেসে পত্রিকার জন্য। আপন দেশে ইহুদি বিদ্বেষের সঙ্গে সম্পূর্ণ পরিচিত তিনি। কিন্তু ভাবেননি ফ্রান্সে তার পুনরাবৃত্তি দেখবেন। এই সেই দেশ যেখানে ইউরোপের ইতিহাসে ইহুদিরা প্রথম পূর্ণ নাগরিকের সম্মান পেয়েছিলেন একশ বছর আগে।। দ্রাইফুস ঘটনার পরে তিনি লিখলেন, “ফ্রান্সের মতন সভ্য দেশে যদি এই বর্বরতা চলে, ইউরোপে আমাদের কোন ভবিষ্যৎ নেই। আমাদের চাই আপন দেশ “।
তাঁর নাম থিওডোর হ্যরতসল। জাইওনিসট আন্দোলনের, ইহুদিদের আপন বাসভূমি স্থাপনার পুরোধা। ইজরায়েল প্রতিষ্ঠার অনেক আগেই অবশ্য তিনি মারা যান। তাঁর সম্মানে তেল আভিভের একটি শহরতলির নাম হ্যরতসলিয়া।
দ্রাইফুস ঘটনার (লোকমুখে এর নাম হয়ে যায় শুধুমাত্র " ঘটনা” বা লা ফের) - দেড় দশক বাদে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হয়। অস্ট্রো হাঙ্গেরিয়ান রাজত্বে তখন প্রায় ২৫ লক্ষ ইহুদি নাগরিক বাস করেন। অন্য অস্ট্রিয়ানদের পাশে দাঁড়িয়ে তিন লক্ষ ইহুদি সৈন্য এই যুদ্ধে সম্রাটের পক্ষে লড়াই করেছেন। অস্ট্রো হাঙ্গেরিয়ান সরকার ইহুদি সৈন্যদের জন্য আলাদা হেঁসেলের ব্যবস্থা অবধি করেন। যুদ্ধক্ষেত্রে ক্রিস্টিয়ান সৈন্যদের সঙ্গে যেমন আপন ধর্মযাজক (চ্যাপলেন) চলেন, ক্যাপ্টেনের সামরিক মর্যাদা সহকারে রাবিদের নিযুক্ত করা হয় ইহুদি সৈন্যদের পাশে থাকার জন্য (ফেলডরাবিনার) । এডুয়ার্ড রিটার ফন শোয়াইতসার এবং আডলফ করনহাবার অস্ট্রো হাঙ্গেরিয়ান বাহিনিতে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত হন।
প্রসঙ্গত, আজকের ইজরায়েল বাদ দিলে বিগত একশ বছরে এক মাত্র ইহুদি যিনি কোন সেনা বাহিনীর লেফটেনানট জেনারেল পদে উন্নীত হয়েছেন তিনি আমাদের ভারতের জ্যাক ফারজ রাফায়েল জেকব। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখিত আছে। এমনকি আমেরিকান সৈন্য বাহিনীতেও কোন ইহুদি পূর্ণ জেনারাল দেখা যায় না।
রাশিয়ান সাম্রাজ্যে কোন ইহুদির বসবাস ছিল না। কিন্তু উনবিংশ শতাব্দীতে জারেরা যখন পোল্যান্ড, ইউক্রেন এবং বালটিক দেশগুলি দখল করেন, রাজত্বের সঙ্গে ফাউ হিসেবে পেলেন পঞ্চাশ লক্ষের বেশি ইহুদি (পেল অফ সেটলমেনট – ইহুদি রসিকতা ষষ্ঠ পর্ব দ্রষ্টব্য) । ইজরায়েল সৃষ্টি হবার আগে অবধি ইতিহাসে এটি বৃহত্তম ইহুদি জনপদ। রাশিয়ান জার ইহুদিদের সামাজিক স্বীকৃতি কখনোই দেন নি কিন্তু আঠারো থেকে পঁচিশ বছরের ইহুদিদের মিলিটারি সার্ভিস বাধ্যতা মূলক করা হল। ছ'লক্ষ ইহুদি নাগরিকের অধিকার না পেলেও লড়াই করলেন জার্মানদের বিরুদ্ধে। অন্তত এক লক্ষ জারের জন্য প্রাণ দিলেন।
ভারসাই চুক্তিতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দায় জার্মানির ওপর চাপানো হয়। হিটলার সারা জীবন এর তীব্র বিরোধিতা করেছেন যদিও এ যুদ্ধে জার্মানির ভূমিকা আকস্মিক বা অনিচ্ছুক অংশীদারের নয়। কয়েকটি উদ্ধৃতি দেওয়া যেতে পারে -
জার্মানির লক্ষ্য হল পুবের পানে ধাবিত হওয়া। আমাদের এই দীর্ঘ দিনের অস্ত্র সঞ্চয় কেবলমাত্র পূর্বের স্লাভিক দেশগুলি অধিকারের জন্য (প্রাশিয়ান জেনারাল বারনহারদি, ১৯১২) – এক দশক বাদে হিটলার জার্মান জাতিকে উদ্বুদ্ধ করবেন " যাও পূবে” ( দ্রাং নাখ অস্টেন) ।
জার্মানির উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সাম্রাজ্য বিস্তার। মানুষের সভ্যতার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা হল যুদ্ধ (অধ্যাপক ওবারহোফেন, ১৯১৩)
কাইজারের পঁচিশ বছরের শান্তিপূর্ণ শাসন একটি বিশাল যুদ্ধের প্রস্তুতি মাত্র (বারলিনার জাইতুং, ১৯১৩)।
আমরা কি চাই? আমরা চাই একটি ভয়ঙ্কর আগ্রাসী যুদ্ধ (কার্ল পিটারস, আগস্ট ১৯১৩ : গোয়েটিংগেন ও বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস এবং দর্শনের ছাত্র। শোপেনহাউয়ারের ওপর এসে লিখে স্বর্ণ পদক প্রাপ্ত)
সারায়েভোতে ল্যাটিন ব্রিজের সামনে গাভ্রিলো প্রিন্সিপ অস্ট্রিয়ার ভাবি রাজা ও রানির ওপর গুলি চালাবেন এক বছর বাদে, ২৮শে জুন, ১৯১৪। শুরু হবে এক মহারন। কিন্তু সেই যুদ্ধের জার্মান মহড়া শুরু হয়েছে অনেক আগে। জার্মানিতে তখন পাঁচ লক্ষ ইহুদি পূর্ণ নাগরিকের মর্যাদায় বাস করেন। এই বিশাল যুদ্ধের উন্মাদনায় অংশ নিলেন এক লক্ষের বেশি ইহুদি। পূর্বে রাশিয়ান ফ্রন্ট থেকে পশ্চিমে বেলজিয়াম ফ্রান্স অবধি বিস্তৃত রণক্ষেত্রে বারো হাজার প্রাণ দিলেন কাইজারের নামে।
তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের কথা মনে করি।
অটো ফ্রাঙ্ক : হাইডেলবেরগে অর্থনীতি পড়েন। কিছুদিন নিউ ইয়র্কে কাজ করেছেন। তারপর বাবার ব্যাঙ্কিং ব্যবসায়ে যোগ দেন ফ্রাঙ্কফুর্টে। পশ্চিম রনাঙ্গনে অসম্ভব বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে ১৯১৭ সালে লেফটেন্যান্ট পদে উন্নীত হন। দুই ভ্রাতুষ্পুত্র যুদ্ধে মারা যান। অটো ফ্রাংকের দুটি মেয়ে – মারগট ও আনেলিস। হিটলারের অভ্যুদয়ের পরে হল্যান্ডে পালালেন। আমস্টারডামের এক চোর কুঠুরিতে বসে আনেলিস যে দিনলিপি লিখেছিলেন সেটি পরে অ্যান ফ্রাংকের ডায়ারি নামে বিশ্ববিখ্যাত হয়। স্ত্রী এডিথ ও দুই কন্যা কনসেনট্রেশান ক্যাম্পে মারা যান। অটো প্রাণে বেঁচে ফিরে আসেন।
কুরট লানডাউয়ার : আজকের সুবিখ্যাত বায়ার্ন মিউনিক ফুটবল ক্লাবের একেবারে প্রথম যুগের সবচেয়ে সফল খেলোয়াড়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে লড়াই করেছেন পুরো চার বছর। বায়ার্ন যখন প্রথম ফুটবল লিগ জেতে (১৯৩২) লানডাউয়ার তখন ক্লাব প্রেসিডেন্ট। নাৎসিরা এসেই তাঁকে দাখাউ কনসেনট্রেশান ক্যাম্পে পাঠায় কিন্তু তাঁর অসামান্য সামরিক রেকর্ডের জন্য একমাস বাদে ছাড়া পান। বন্ধুজনের সহায়তায় সুইজারল্যান্ড পালালেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে পশ্চিম জার্মানি তাঁকে সসম্মানে ফিরিয়ে আনে। আবার বায়ার্ন প্রেসিডেন্ট হলেন লানডাউয়ার।
হুগো গুটমান : যুদ্ধ শুরু হতেই নুরেমবেরগের হুগো গুটমান ব্যাভেরিয়ান কামান বাহিনীতে যোগ দিয়ে লেফটেনানট হলেন ১৯১৫ সালে। পশ্চিম ফ্রান্সের বিভিন্ন রণক্ষেত্রে বীরত্ব প্রদর্শনের কারণে প্রথম শ্রেণির আয়রন ক্রস অর্জন করেন। ১৯১৮ সালে তিনি হলেন ক্যাম্প কমানডানট । এই সময়ে তাঁর চোখ পড়ে বছর তিরিশেকের এক সাহসী সৈন্যের ওপরে। উপরওয়ালাদের কাছে হুগো সুপারিশ করলেন সেই সৈন্যকে প্রথম শ্রেণির আয়রন ক্রস দেওয়া হোক। আগস্ট মাসের চার তারিখে পশ্চিম ফ্রান্সের সোয়াসাঁ শহরে এক অনুষ্ঠানে হুগো গুটমান তাঁকে আয়রন ক্রস পরিয়ে সম্মানিত করলেন। এই সৈনিক তাঁর জীবনের শেষদিন অবধি সেই ক্রস সর্বদা গর্বের সঙ্গে পরিধান করতেন।
এই বীর সৈনিকের নাম আডলফ হিটলার!
ভাগ্যের বিদ্রূপ! এক ইহুদির হাত থেকে হিটলার পেলেন তাঁর সামরিক জীবনের শ্রেষ্ঠ পদক!
এই সোয়াসাঁ থেকে ৪০ কিলো মিটার পশ্চিমে গেলেই কম্পিয়েন শহর। তিন মাস বাদে, ১১ নভেম্বর ১৯১৮ সালে, একটি রেলের বগিতে বসে পরাজিত জার্মানি সেখানে ফ্রান্সের সঙ্গে সন্ধিচুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়। হিটলার তার শোধ নিলেন বাইশ বছর বাদে। পরাজিত ফ্রান্স জার্মানির পদপ্রান্তে বসে যুদ্ধ বিরতি ভিক্ষা করলো ২২শে জুন ১৯৪০। হিটলারের আদেশে পুরনো রেলের বগিটিকে টেনে আনা হলো ঠিক একই জায়গায়। সেখানে বসে ফ্রান্স সই করলো সেই চুক্তিতে।
ইতিহাসে এমন প্রতিশোধের দৃষ্টান্ত বিরল।
১৯৩৫ সালে ইহুদি হুগো গুটমান হারাবেন তাঁর জার্মান নাগরিকত্ব, গ্রেফতার হবেন গেস্টাপোর হাতে। গ্যাস চেম্বারে প্রেরিত হবার আগে নিতান্ত ঘটনাচক্রে একজন এস এস অফিসার তাঁর পুরনো কমানডারকে চিনতে পেরে তাঁকে বেলজিয়ামে পালিয়ে যাবার সুযোগ করে দেন।
প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পরে স্বাক্ষরিত ভাইমার সংবিধান সকল নাগরিককে দিয়েছে সমান মর্যাদা, মানুষের মনের ভেতরে যাই থাক না কেন। নাৎসিরা যখন ক্ষমতায় এলো, জার্মানিতে ইহুদিদের অনেক অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত। কেবল ব্যবসা বাণিজ্যে নয়, শিল্পে বিজ্ঞানে সাহিত্যে সঙ্গীতে ইহুদিরা সমাজের বিভিন্ন স্তরে আসন করে নিয়েছেন। জনসংখ্যার এক শতাংশ ইহুদি জার্মানিকে এনে দিয়েছেন এগারোটি নোবেল প্রাইজ। মুখর না হলেও চাপা ইহুদি বিদ্বেষ জার্মানি এবং ইউরোপের সুপ্রাচীন ব্যাধি । নাৎসিরা সেই বিদ্বেষকে ভালো মতন লালন পালন করে তাকে দিল এক সশব্দ উপস্থিতি – ইহুদিদের জন্য আমাদের সমাজ, ধর্ম, জীবন, বিপন্ন। পাঁচ লক্ষ ইহুদীর জন্য ছ কোটি জার্মান তাদের সভ্যতা নিয়ে শঙ্কিত।
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের ডঙ্কা যখন বাজল, ততদিনে জার্মানিতে ইহুদি সম্প্রদায়ের নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের কপালে জুটেছে হয় নির্বাসন অথবা স্থান হয়েছে ঘেটোতে বা কনসেনট্রেশান ক্যাম্পে। নাৎসিরা তাদের হাতে বন্দুক তুলে দিয়ে দেশ রক্ষা করার কথা বাতুলতা বিবেচনা করে।
নুরেমবেরগের জাতি আইনে (১৯৩৫) নির্ধারিত হয়েছিল কে জার্মান বা আর্য আর কে অনার্য। বিগত চার পুরুষের মধ্যে তিনজন ইহুদি থাকলে তিনি ইহুদি। জার্মান নাগরিকত্ব বাতিল। তিনি একান্ত অবাঞ্ছিত। নাগরিকত্ব কেন, সাধারণ সামাজিক অধিকার তাদের মিলবে না। বিগত আট পুরুষের ভেতরে যদি একজন বা দুজন ইহুদি হয়ে থাকেন তাঁকে মিশ্রিত জাতির মানুষ (মিশলিং) বলে চিহ্নিত করা হবে। তাঁকে আংশিক ভাবে জার্মান বলা যাবে, নাগরিকত্ব বহাল থাকবে। তবে কাজে কর্মে অনেক বাধা। মনে রাখা দরকার এঁরা ধর্মান্তরিত ইহুদি, ক্রিস্টিয়ান। কিন্তু খানিকটা ইহুদি রক্ত থেকে গেছে।
সাত আটশ বছর বসবাসের পরে রক্তের ভিত্তিতে ইহুদিদের জার্মান নাগরিকত্বের প্রমাণ চাওয়া হল।
তবু অন্তত ৭৭ জন অর্ধ বা পৌনে ইহুদি ( যাদের চার পুরুষে এমনকি তিনের অধিক ইহুদি ছিলেন এবং যারা নুরেমবেরগের জাতি আইন অনুযায়ী জার্মান নন) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান সৈন্য বাহিনীতে উচ্চ পদ অধিকার করেন - যেমন ফিল্ড মার্শাল এরহারড মিলশ, জেনারাল হেলমুট উইলবেরগ। হিটলার এবং গোয়েরিং স্বহস্তে স্বাক্ষর করে তাঁদের নির্বাচনে সম্মতি দেন।
গোয়েরিঙ বলেছিলেন, কে ইহুদি কে নয় সেটা আমি ঠিক করি! প্রয়োজন বুঝে।
প্রতিপক্ষে, মিত্র বাহিনীতে প্রায় পনেরো লক্ষ ইহুদি যোগ দেন। অনেক বাদ বিতণ্ডার পরে আমাদের দেশের গোর্খা রেজিমেন্ট বা আসাম রাইফেলস এর ধাঁচে ১৯৪৪ সাল নাগাদ ব্রিটিশ বাহিনীতে একটি ইহুদি ব্রিগেডের গঠন অনুমোদিত হয়।
দু হাজার বছর পরে ইহুদি এই প্রথম যুদ্ধক্ষেত্রে নামল তার আপন পরিচয় সামনে রেখে – ইউনিফরমে লাগানো ছিল মাগেন দাভিদ (ছ কোনা তারা- স্টার অফ ডেভিড) । এঁরা লড়াই করেন ইউরোপের দক্ষিণে, ইতালিতে। পরবর্তী কালে ইজরায়েল পত্তনে এই ইহুদি ব্রিগেডের বিশাল অবদান আছে। এক হিসেবে আজকের ইজরায়েলি সৈন্য বাহিনীর পিতামহ এই ব্রিটিশ ইহুদি ব্রিগেড।
নরমানডির বিশাল প্রান্তরে আমেরিকান ইউরোপীয় অস্ট্রেলিয় কানাডিয়ান সৈন্যের পাশে দেখেছি অজস্র ইহুদি সমাধি। মিত্র পক্ষের পক্ষে লড়ে প্রাণ দিয়েছেন।। তার এক কিলোমিটার ব্যবধানে আছে জার্মান সামরিক সমাধি ক্ষেত্র। পাথরে যাদের নাম লেখা আছে তাদের অনেকের বয়েস কুড়ি পেরোয় নি।
৬ই জুন ১৯৪৪ সালে জার্মান অধিকৃত ইউরোপের মূল ভূখণ্ডে মিত্র শক্তি প্রথম আঘাত হানে নরমানডিতে। তাদের শৌর্য গাথা, বীরত্বের কাহিনি আপনাদের জানা। ডি ডে ছবিটি অনেকেই দেখেছেন। যদি পারেন একবার নরমানডি তটে আসুন- আরোমানশ, কোলভিল যে কোন বিচে। এ এক তীর্থযাত্রা।
বন্দুকের, কামানের আওয়াজ থেমে গেছে কবে। নরমানডিতে আদিগন্ত বিস্তৃত মৃত সৈনিকের সারি সারি শ্বেত সমাধি প্রস্তর দেখে মাথা নিচু করে অজস্র ভ্রমণকারীকে নিশ্চুপ হয়ে যেতে দেখেছি। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শেষ। শৌর্য বীর্যের কথা আজ অবান্তর।
কেন এই মহারণ? জীবনের অর্থহীন অপচয়?
দূরে আটলান্টিক। নীল সমুদ্র। সামনে চির নিদ্রায় শায়িত হাজার হাজার সৈন্য : শত্রু, মিত্র। সকলেই ঈশ্বরের সন্তান। মানুষ।
**********
ভিয়েনা ১৯১৪। যুদ্ধে যোগ দেবার আগে ফেলডবাউমের ডাক্তারি পরীক্ষা হচ্ছে।
ফেলডবাউম : ডাক্তার বাবু, আমাকে যেন কামান বাহিনীতে পাঠাবেন না। কামানের আওয়াজ আমি শুনতে পারি না।
ডাক্তার : ফেলডবাউম, চিন্তার কোন কারণ নেই। কামানের শব্দ এতো বেশি যে তুমি ঠিক শুনতে পাবে।
**********
নৌ বাহিনীতে ভর্তির পরীক্ষা
অফিসার : হাবারকর্ণ , তুমি সাঁতার জানো?
হাবারকর্ণ : কেন? আমি তো শুনেছি আপনাদের জাহাজ আছে!
**********
অস্ট্রো হাঙ্গেরিয়ান সেনা বাহিনীতে যুদ্ধের ট্রেনিং হচ্ছে।
সার্জেন্ট : আমি এক থেকে তিন অবধি গুনব। তিন বলা শেষ হলেই তোমরা দৌড়ুবে তেজি ঘোড়ার মত!
এক..দুই ..একি রোজেনব্লুম, তুমি দৌড় শুরু করলে কেন? আমি তো তিন বলি নি এখনো?
রোজেনব্লুম :বলেন নি। কিন্তু জানি এবার আপনি তিন বলবেন।
**********
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। ১৯১৭। আহত সৈনিকদের দেখতে এসেছেন অস্ট্রিয়ান রানি । প্রত্যেক সৈনিককে জিগ্যেস করছেন – কি নাম আপনার, কোন রণক্ষেত্রে আহত হয়েছেন, আপনার ধর্ম কি?
প্রথম সৈনিকের কাছে উত্তর পেলেন - ক্যাথলিক। পাঁচটা সিগারেট রাখলেন বিছানার পাশে।
দ্বিতীয় সৈনিক প্রটেস্টান্ট। রানি রাখলেন চারটে সিগারেট।
তৃতীয় সৈনিককে জিজ্ঞেস করার আগেই রোজেনবাউম রানির দিকে চেয়ে বললে, মহীয়সী মহিলা, আমার পাওনা হবে তিনটে সিগারেট।
**********
অনেক ট্রেনিং হয়েছে। অস্ট্রিয়ান সার্জেন্ট উৎসাহের সঙ্গে সৈন্যদের বোঝালেন এবার শুরু হবে সত্যিকারের লড়াই!
সার্জেন্ট :এবার তোমাদের সম্মুখ সমর। শত্রু তোমার মুখোমুখি।।
পদাতিক রুবিন :আমার সামনের লোকটাকে চিনিয়ে দেবেন সার? তার সঙ্গে একটা আলাদা বোঝাপড়া করে নিতে পারি। বন্দুকের গুলি খরচা হয় না।
**********
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। একের পর এক রাশিয়ান পরাজয়। বিষণ্ণ জার গেছেন সৈন্য পরিদর্শনে।
জার : তোমরা শপথবদ্ধ সৈনিক। তোমার ওপরওলা অফিসার যদি আমাকে গুলি করতে বলে, করবে?
ইভান : হাঁ সম্রাট, আমরা সৈনিক। আমরা আদেশ পালনের শপথ নিয়েছি।
জার : তাই বলে তুমি আমাকে, তোমার সম্রাটকে গুলি করবে?
ইভান (মাথা চুলকে) : আজ্ঞে সৈনিকের কাছে আদেশ হল আদেশ। তার ব্যত্যয় হয় না।
চিন্তিত মুখে আরও কয়েকজনকে প্রশ্ন করলেন জার। পেলেন একই উত্তর। লাইনে শেষ সৈন্য রুবিন।
রুবিন : না, সম্রাট আমি আপনাকে গুলি করব না।
জার (খুশি হয়ে) : তুমি তো শপথবদ্ধ। কেন ওপরওলার আদেশ পালন করবে না?
রুবিন : সম্রাট, এই ডামাডোলের বাজারে আমাদের যে কোন গোলা গুলি সরবরাহ করা হয় নি।
**********
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। জার্মান সৈন্য দুর্বার গতিতে এগোচ্ছে পুব মুখে। রাশিয়ানরা ক্রমশ পিছুচ্ছে। ইউক্রেনে জার্মান যুদ্ধবন্দির পাহারায়
রাশিয়ান তরফে আছে ইহুদি রুবিন।
জার্মান বন্দি : এখন ধরা পড়েছি বটে তবে জেনো আমরাই জিতব। আমাদের কাইজার ভিলহেলম এতো সাহসী এবং যুদ্ধে জেতার বিষয়ে এমন নিশ্চিত যে প্রতি সপ্তাহে তিনি নিজে কোন না কোন ফ্রন্টে যান।
রুবিন : আমাদের জার নিকলাস তোমাদের কাইজারের চেয়ে অনেক বেশি সাহস রাখেন। তাঁকে কোথাও যেতে হয় না। প্রতিদিন ফ্রন্ট তাঁর কাছে চলে আসে।
**********
১৯১৭। অস্ট্রিয়া। এক জ্বালাময়ী ভাষণ দেবার পরে সার্জেন্ট নতুন রিক্রুট গেজেলকে সামনে পেয়েছেন।
সার্জেন্ট : গেজেল, লড়াইয়ের ময়দানে যখন দেখবে অস্ট্রিয়ার পতাকা পত পত করে উড়ছে, তোমার কি মনে হবে?
গেজেল : মনে হবে খুব হাওয়া উঠেছে সার।
**********
মরডেকাইয়ের ডিউটি পড়েছে ছাউনিতে। বন্দুক চালানো নয় এখন তার কাজ সার্জেন্টের তাঁবেদারি করা। এমনকি তার বুট পরিষ্কার করা তার প্রাত্যহিক কর্তব্য। সেটা সে মোটে পছন্দ করে না।
রবিবার সকাল।
সার্জেন্ট : এতক্ষণ ধরে কি করছ মরডেকাই ? আমার বুট পালিশ করনি এখনো?
মরডেকাই : এই দ্বিতীয় মানে আপনার ডান পায়ের বুটটা পালিশ করছি।
সার্জেন্ট : তাহলে প্রথম বুটটা নিয়ে এসো।
মরডেকাই : আমি সব সময় দ্বিতীয় বুটটা আগে পালিশ করি।
**********
চেরকাশ। ইউক্রেন (আক্ষরিক অর্থে সীমান্ত) ।
ইলান আর নাথান যুদ্ধের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করছে।
ইলান : বলতো ওই যে আকাশে বোমারু বিমান উড়ে যাচ্ছে, সেটা জার্মান না রাশিয়ান?
আরিয়েল : বোকা, তা বোঝা খুব সহজ। যে সব প্লেন সত্যি সত্যি ওড়ে সেগুলো জার্মান।
**********
প্রথম মহাযুদ্ধ। সার্বিয়ান ফ্রন্ট।
অস্ট্রিয়ান সার্জেন্ট : কাতস, বলো দেখি কেন তুমি সম্রাটের জন্য তোমার প্রাণ বিসর্জন দেবে?
কাতস : ঠিক বলেছেন সার । কেন আমি সম্রাটের জন্যে আমার প্রাণ বিসর্জন দেব?
অনলাইন কিনতে এখানে ক্লিক করুন
**********
গ্রিনসিং, ভিয়েনা (আপনার ভিয়েনা ভ্রমণে একান্ত আবশ্যিক বিরতি সেখানে! সন্ধ্যেবেলা সঙ্গীত সহযোগে দ্রাক্ষা মধু পান করার শ্রেষ্ঠ ঠিকানা)।
সার্জেন্ট :কাতস, এই যে ঘোড়া দেখছ, এ খুব তেজি। সন্ধ্যে বেলায় এই ঘোড়ায় সওয়ার হলে ভোর চারটেয় পৌঁছে যাবে প্রেসবুরগ (আজকের ব্রাতিস্লাভা) ।
কাতস :ভোর চারটেয় প্রেসবুরগ পৌঁছে আমি কি করব সার?
**********
ফরাসি ফ্রন্ট
কামান বাহিনীতে ইতঝাকের মন লাগে না। অনেক বকা ঝকা করেও তাকে উৎসাহিত করতে পারলেন না জার্মান সার্জেন্ট।
"ইতঝাক, আমি বলি কি তুমি বরং গোটা কয়েক কামান কিনে নিয়ে নিজের ব্যবসা খোলো। তাতে হয়ত তোমার মন লাগবে"।
**********
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। সেন্ট পিটারসবুরগ। প্রচণ্ড শীতের দিন। বরফে পা পিছলে নেভা নদীতে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে এক ইহুদি, মরডেকাই । সাঁতার জানে না সে। বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার! জারের পুলিস বাহিনী মজা দেখছে পাড় থেকে। বলছে " অনেক লোককে ঠকিয়েছ। এবার ডুবে মরো ইহুদি"
প্রায় সলিল সমাধি হয় এমন সময় সে হুঙ্কার দিয়ে বলল, " জারের এই অন্যায় যুদ্ধের জন্য আমরা মারা যাচ্ছি। জারের মৃত্যু হোক"
তৎক্ষণাৎ দু জন পুলিস নেভার ঠাণ্ডা জলে নেমে ইহুদির ঝুঁটি ধরে পারে তুলেছে। কালো ভ্যান হাজির। রাজদ্রোহের অপরাধে সাত দিনের হাজত বাস।
থানায় এসে বউ কান্না কাটি করছে " এ কি করলে গো? এখন আমাদের কি হবে?" মরডেকাই বললে, " বউ, ডুবে যাচ্ছিলাম। এরা বাঁচিয়েছে। হাজতে ঠাণ্ডা নেই। গ্যাস দিয়ে ঘর গরম করে রাখে। খেতে দিচ্ছেও ভালো। রোজ খাবার সময় বলি জারের জয় হোক। "
**********
দেবরেচেন (বুদাপেস্টের পরে হাঙ্গেরির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর) ।
অশ্বারোহী বাহিনীর ট্রেনিং। নতুন রিক্রুট কারফাঙ্কেলস্টাইন বার দশেক ঘোড়া থেকে পড়ার পরে কমান্ডারের কাছে অভিযোগ করতে গেছে। পেশায় সে উকিল।
কারফাঙ্কেলস্টাইন : সার, যে কোন বিষয়ে প্র্যাকটিকাল করার আগে থিওরি পড়ানো হয়। তা ঘোড়ায় চড়ার আগে তার ট্রেনিংটা কি কাগজে কলমে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে দেওয়া যেত না?
**********
ওস্টারলিতজ (আজকের স্লাভকভ, চেক) । ডিসেম্বর ১৮০৫। তিন সম্রাটের রণ।
অস্ট্রিয়া ও রাশিয়ার দুই সম্রাটের সম্মিলিত সৈন্য বাহিনীর বিরুদ্ধে নাপোলেওঁর শ্রেষ্ঠ যুদ্ধজয়। কৃতজ্ঞ সম্রাট সেনাদের বললেন তারা যে পুরস্কার চায় তিনি তাই দেবেন। তাঁর অর্ধেক সৈন্য ইউরোপের নানান অধিকৃত দেশের লোক।
তাদেউস (পোলিশ) : সম্রাট, আমাদের দিন এক মুক্ত পোল্যান্ড রাজ্য (১৯১৮ সালে সেটি দেখা দেবে)
নাপোলেওঁ : তথাস্তু।
হাইনতস (জার্মান) : সম্রাট, আমাদের দিন এক সম্মিলিত জার্মান রাষ্ট্র (১৮৭১ সালে সেটি সম্ভব হবে)
নাপোলেওঁ : তথাস্তু।
খাইম (ইহুদি) : সম্রাট আমি এক ঝাঁক হেরিং মাছ পেলে বাধিত হব।
নাপোলেওঁ : হেরিং? ফরাসি সম্রাটের কাছে তুমি শুধু হেরিং মাছ চাও? আর কিছু নয়?
খাইম : সম্রাট, স্বাধীন পোল্যান্ড আর মিলিত জার্মানি পেতে ওদের অনেক দেরি হতে পারে। । হেরিং তার আগে পেয়ে যাব। (মতান্তরেঃ ওরা কখন কি পায় দেখি) ।
**********
রাশিয়ান ফ্রন্ট। ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে তিনজন। জিগ্যেস করা হল কার শেষ ইচ্ছা কি।
ইতালিয়ান : পাস্তা নাপোলিতানা সঙ্গে কিয়ান্তি। আর কিছু নয়।
ফরাসি : শেষ বারের মত খেতে চাই বিফ বুরগিনিওঁ সঙ্গে বুজোলে ওয়াইন।
ইহুদি : বেশি কিছু নয়, গোটা কুড়ি স্ট্রবেরি।
রাশিয়ান সার্জেন্ট : স্ট্রবেরি? এটা নভেম্বর মাস। ছ মাসের আগে স্ট্রবেরি পাওয়া যাবে না।
ইহুদি : আমার কোন তাড়া নেই।
**********
১৯১৪ রাশিয়ান ফ্রন্ট
অস্ট্রিয়ান কমান্ডার : ঐ যে জারের পতাকা উড়িয়েছে শত্রু সৈন্য ওটা ছিনিয়ে আনতে পারো কেউ? ১০০ ক্রোনার পুরস্কার দেব।
দু ঘণ্টা বাদে সলি ব্রমবেরগার সেই পতাকা নিয়ে হাজির। তুমুল হর্ষধ্বনির মধ্যে কমান্ডার তাকে ১০০ ক্রোনার দিলেন। খানিক বাদে কমান্ডার সলিকে ডাকলেন তাঁর কেবিনে।
কমান্ডার : ব্রমবেরগার, তুমি অসাধারণ শৌর্যের পরিচয় দিয়ে শত্রুর পতাকা কেড়ে নিয়েছ। কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন আছে। আমি জানি তুমি এমন কিছু বীর সৈনিক নও। তা পতাকাটা আনলে কি করে? আমাকে নির্ভয়ে বলতে পারো।
সলি : সার, আপনাকে সত্যি বলছি। কোনমতে ওখানে গিয়ে দেখি এক রাশিয়ান ইহুদি সে পতাকাটা ধরে আছে। তার সঙ্গে একটা টাকা পয়সার বোঝা পড়া করে নিলাম। ওকে আগাম ভাগ দিয়েছি। টাকাটা ফেরত চাইবেন না সার।
**********
অস্ট্রিয়ান সামরিক ছাউনি। ইউনিফরম পর্যবেক্ষণ।
অফিসার : ইওসেল, তোমার ইউনিফরমে দ্বিতীয় বোতামটা নেই কেন?
ইওসেল : জানি না সার। এটা আমার নিজের নয়।
অফিসার : ইওসেল, এটা সরকারি ইউনিফরম কিন্তু যতক্ষণ এটা তোমার গায়ে আছে, এটা তোমার।
ইওসেল : তা আমার নিজের জামায় যদি একটা বোতাম কম থাকে তাতে আপনি চিন্তিত হচ্ছেন কেন সার?
**********
প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ। আরাস, পশ্চিম ফ্রান্স। ট্রেঞ্চ খোঁড়া হচ্ছে।
ফিঙ্কেলক্রাউট খুঁড়েই চলেছে। এক সময় কমান্ডার এলেন পর্যবেক্ষণে।
কমান্ডার : একি ফিঙ্কেলক্রাউট, এত গভীর ট্রেঞ্চে দাঁড়ালে তুমি শত্রু সেনাকে দেখতেই পাবে না যে?
ফিঙ্কেলক্রাউট : আপনাকে কে বলেছে আমি তাকে দেখতে চাই?
**********
প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ। রাশিয়ান ক্যাম্প। চেরনোভিতস।
ময়শে দুর্দান্ত পরাক্রম দেখিয়ে দু জন জার্মান সৈন্যকে বেঁধে এনেছে। রাশিয়ান কমান্ডার তার শৌর্যের সম্মান জানাবেন। ময়শে কি চায়?
একশো রুবেল না জর্জ ক্রস?
ময়শে : ঐ জর্জ ক্রসের দাম কত?
কমান্ডার : এ কি অভব্য প্রশ্ন! এর দাম আর কি হবে? হয়তো এক রুবেল।জর্জ ক্রস এক মহান সম্মানের স্মারক। রুবেলে এর হিসেব হয় না।
ময়শে : সার, তাহলে এক কাজ করুন আমাকে ৯৯ রুবেল ক্যাশ দিন আর তার সঙ্গে একটা ঐ জর্জ ক্রস।
**********
জার নিকোলাস সেনা বাহিনীর ছাউনিতে সরেজমিন তদন্তে এসেছেন। সারি সারি সৈন্য। তাঁদের সবাইকে জিজ্ঞেস করছেন, তোমরা সবাই খুশি তো? জারের সামনে অন্য সুরে বলার হিম্মত কারো নেই। সবাই হ্যাঁ বলে যাচ্ছে। জার একই প্রশ্ন করলেন তরুণ ইহুদি সৈন্য ইয়াঙ্কেলকে।
ইয়াঙ্কেল : রাজা মশায় বড়ো কষ্টে আছি, আপনার লোকেরা আমাদের বাড়িতে থাকতে দেয় না, খেতে দেয় না, স্কুলে যেতে দেয় না। শুনছি শিগগিরি নাকি বড়ো করে ইহুদি বধের (পোগরোম) আয়োজন হবে।
দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললেন জার নিকোলাস।
জার : ইয়াঙ্কেল, আমারও কি দিন ভালো যাচ্ছে? আমার মন্ত্রীরা চুরি করে, মিথ্যে কথা বলে। এমনকি প্রজারা আমাকে লক্ষ্য করে বোমা ছোঁড়ে।
ইয়াঙ্কেল : রাজা মশায়! তাহলে চলুন আপনি আমি দুজনেই আমেরিকা চলে যাই।
**********
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ। ইংল্যান্ডের সলসবেরিতে সৈন্য পর্যবেক্ষণ হচ্ছে। ইহুদি ইলান নাথানসন সবে ব্রিটিশ বাহিনীতে যোগ দিয়েছে।
অফিসার : নাম?
ইলান : ইলান নাথানসন।
অফিসার : অফিসারদের সঙ্গে কথা বলার সময় ব্রিটিশ সৈন্য বাহিনীতে সার বলার রেওয়াজ চালু আছে। কেউ বলে দেয়নি? এবার বল!
নাম?
ইলান : সার ইলান নাথানসন।
**********
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের রঙ্গ রস নিয়ে শেষ কথাটি এক ইহুদি হাস্যরস বেত্তা বলে গেছেন।
একটি রসিকতা শুনে সবাই একই ভাবে হাসেন না। তার রকমফের আছে।
পদাতিক বাহিনীর অধ্যক্ষ হাসেন তিনবার : প্রথমবার যখন সেটি শোনেন, দ্বিতীয় বার যখন তার ব্যাখ্যা করা হয় এবং তৃতীয় বার যখন সেটির মানে বোঝেন।
কামান বাহিনীর অধ্যক্ষ হাসেন দু বার : প্রথমবার, যখন শোনেন। দ্বিতীয় বার, যখন তার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। মানেটা তিনি কখনোই বোঝেন না।
স্টাফ অফিসার যুদ্ধ চালনা করেন অফিসে বসে। তিনি রসিকতাটি শুনে একবার হাসেন। ব্যাখ্যা করার সুযোগ কাউকে তিনি দেন না এবং এর অর্থ বোঝা তাঁর বুদ্ধির বাইরে।
চিকিৎসক দফতরের অধ্যক্ষ মোটেও হাসেন না। তিনি ইহুদি। তিনি বলেন" ওটা আমার জানা" ।
**********
ইজরায়েলিদের নিয়ে
১৯৬৭ সালে আরব ইজরায়েলি যুদ্ধের সময় মোশে দায়ান ছিলেন ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অনিয়মিত সৈন্য হিসেবে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর হয়ে লড়াই করার সময় বাঁ চোখের দৃষ্টি হারান। সে চোখে ঠুলি লাগানো থাকত।
সিরিয়ান সীমান্তে জিপ চালাচ্ছেন মোশে দায়ান। একজন মিলিটারি পুলিস তাঁকে থামাল।
পুলিস : জেনারাল, আপনি নির্ধারিত গতি সীমার ঊর্ধ্বে জিপ চালাচ্ছেন।
দায়ান : আসুন, আপনি আমার এই বাঁ চোখের ঠুলিটা চোখে বেঁধে গাড়ি চালান তো? দেখি কী করে আপনি ট্রাফিক ও স্পিডোমিটারে একসঙ্গে চোখ রাখেন।
**********
লেভি ইজরায়েলি সেনা বাহিনীর নতুন রিক্রুট। তার ওপরওলা ওয়েহমুট এসেছেন পর্যবেক্ষণে। লেভি খুব নিচু গলায় তাঁকে সম্ভাষণ জানাল।
ওয়েহমুট : লেভি, জোরে, উচ্চস্বরে বলুন। এতো নিচু সুরে কথা বললে আপনার বাহিনীর লোকে শুনবে কি করে?
লেভি (আরো নিচু সুরে) : সার এখানে সব কথাই কানে কানে হয়।
**********
অর্থ সঙ্কট ইজরায়েলের চির সঙ্গী।
প্রশ্ন : আরব ইজরায়েলের যুদ্ধ কেন ছ দিনে শেষ হল?
উত্তর : খরচায় কুলচ্ছিল না বলে। অস্ত্র শস্ত্র সব দৈনিক ভাড়ার। আরেকটা বেশি দিন যুদ্ধ চললে দেশ দেউলে হয়ে যেত।
**********
প্রশ্ন : ইজরায়েলি ট্যাঙ্ক তো দামাসকাসের ৩০ কিলো মিটার অবধি পৌঁছে গেছিল। তারা দামাসকাস গেলো না কেন?
উত্তর : দামাসকাস যাবার একমাত্র রুটে ব্রিজের ওপর লেখা ছিল গাড়ি প্রতি টোল - ৫০ পাউনড।
**********
ছয় দিনের যুদ্ধে ইজরায়েলের বিজয়ের পরে মোশে দায়ান গেছেন ওয়াশিংটনে। প্রেসিডেন্ট জনসনের সঙ্গে সাক্ষাৎকার।
ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকান মৃত্যু সংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিন। দেশে প্রচণ্ড প্রতিবাদের ঝড়।
জনসন : আপনারা তো ছ দিনে যুদ্ধ জয় করে ফেললেন। আমরা সাত বছর ধরে হিমসিম খাচ্ছি ভিয়েতনামে। আপনারা কি দু ব্যাটালিয়ন সৈন্য ভিয়েতনামে পাঠিয়ে আমাদের যুদ্ধজয়ে সহায়তা করতে পারেন না?
দায়ান : দু ব্যাটালিয়ন ইজরায়েলি সৈন্য? কেন, আপনারা চিন জয় করতে চান নাকি?
**********
আরব ইজরায়েলি লড়াই।
হাইফার পথে।
ইজরায়েলি টহলদার সামনের সেতুটি পর্যবেক্ষণ করে রেডিও বার্তা পাঠাল : গোলন্দাজ ও ট্যাঙ্ক বাহিনী এ সেতু পার হতে পারে। পদাতিক সৈন্যেরা নয়।
অফিসারের জবাব : কি আজেবাজে কথা। গোলন্দাজের গাড়ি আর ট্যাঙ্ক সেতু পার হতে পারে, পদাতিক নয়?
টহলদার (রেডিওতে) : সেতুর ওপরে দুটো ভয়ানক চেহারার কুকুর বসে আছে, সার।
**********
সদ্য ইজরায়েলি সেনা বাহিনীর প্যারাসুট বাহিনীতে ভর্তি হয়েছে ময়শে ও ইয়াঙ্কেল। আজ তাদের ট্রেনিঙের প্রথম দিন।
অফিসার : ময়শে, ইয়াঙ্কেল! প্লেন থেকে ঝাঁপ দেওয়াটা খুব সহজ। এক থেকে কুড়ি গুনে প্যারাসুটের ডান দিকের বোতামটা টিপবে। প্যারাসুট খুলে যাবে । চিন্তার কোন কারণ নেই। এক লক্ষের মধ্যে হয়ত একটা খোলে না। সেক্ষেত্রে আবার এক থেকে কুড়ি অবধি গুনে বাঁ দিকের বোতামটা টিপবে। প্যারাসুট খুলে যাবে। মাটিতে নেমে দেখবে দুটো জিপ দাঁড়িয়ে আছে তোমাদের শিবিরে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে।
ইস্ট নাম স্মরণ করে ঝাঁপ দিয়েছে দুজনে। কুড়ি অবধি গুনে ডান দিকের বোতাম টিপল, প্যারাসুট খোলে না। আবার কুড়ি অবধি গুনে বাঁ দিকের বোতাম টিপল। প্যারাসুট খোলে না।
ইয়াঙ্কেল : ময়শে, দেখেছিস কি রকম ইহুদি প্ল্যানিং? নিচে পৌঁছে দেখবি জিপ গুলোও নেই।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।