এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • হলদিঘাটের লড়াই

    dd লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫ | ৮৯৫ বার পঠিত
  • হলদিঘাটের লড়াই

    শুরুর আগে
    ***************************
    বেশী পিছিয়ে গেলে তো মুষ্কিল। ঐ ১৫৬৮ সাল। প্রায় পুরো রাজপুতেরাই আকবরের বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছে। আর সেই বিশ্ববন্দিত কমিক্সের বিখ্যাত গলের মতন শুধু মেওয়ার হাতের মুঠোর বাইরে। আর এক ভয়ানক লড়াইএ চিতোর দুর্গের পতনের পর মেওয়ারের রাজা উদয় সিং,আশ্রয় নিলেন পাশের জংগলে। বছর চারেক পর তার মৃত্যু হলে,তার ছেলে রানা প্রতাপ ইন এক্সাইল মেওয়ারের রাজা হলেন ।

    প্রথমটায় কিন্তু রানা প্রতাপ, আকবরের সাথে টক্কর নিতে যান নি।তার নিজের ছেলে অমর সিংকে তার প্রতিনিধি করে মুঘল সভায় পাঠিয়ে দেন। এটা সে সময়ের এক খুব প্রচলিত রীতি। কিছুটা হোস্টেজ ,কিছুটা "দেখুন,আপনাকে কতটা বিশ্বাস করি" - এই রকম । শত্রু শিবিরেই বড় হবে সেই ছেলে। তবে নিজের ছেলেকে পাঠালেও রানা প্রতাপ কিন্তু নিজে মুঘল সভায় একবারও পা রাখেন নি। আকবর অনেকবারই চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু বশ্যতার প্রকাশ্য প্রদর্শনে ওনাকে রাজী করানো যায় নি।

    আরো সমস্যা হোলো দুটি ঘটনায়। এক, আকবর ছিলেন রণহস্তীর একেবারে কমপালসিভ সংগ্রাহক। ভূ ভারতে কোথাও নামকরা হাতী থাকলেই উনি সেটা আবদার করে বসতেন। রানা প্রতাপের এক সুবিখ্যাত হাতী ছিলো রামপ্রসাদ নামে। আকবর সেটি চেয়ে বসলেন।নিজের ছেলেকেও মুঘল কোর্টে পাঠাতে দ্বিধা না করলেও, রানা প্রতাপ কিন্তু রামপ্রসাদ হাতীটিকে ছাড়লেন না। উপরন্তু আকবরের সেনাপতি মান সিং ,উদয়পুরে আসলেও ,রানা প্রতাপ নিজে গিয়ে ওনার সাথে দেখা করলেন না। সেই সময়ের ভদ্রতার কানুন অনুযায়ী এটা একেবারে ,যাকে বলে হস্টাইল অ্যাক্ট। তবে এটা হয়তো অনেকটাই হয়েছিলো কেননা রানা প্রতাপের শিশোদীয়া গোষ্ঠীর সাথে অম্বরের মান সিং গোষ্ঠীর বিবাদ তো অনেক পুরুষের এক বনেদী বিবাদ। আকবরের বশ্যতা মানতে না চাওয়াটা হয়তো মুখ্য কারন ছিলো না ।

    হলদিঘাট অভিযান
    ************************
    রানা প্রতাপ যখন দেখলেন যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী তখন তিনি উদয়পুর ছেড়ে ১৬ মাইল উত্তর পশ্চিমে কুম্ভলগড়ের আশ্রয় নিলেন। পাহাড়ের উপর সে এক দুর্ভেদ্য দুর্গ। এর আগে ওনার বাবা উদয় সিংহের সাথে লড়াই করতে গিয়েই চিতোর দুর্গে খুবই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিলো আকবরের, তাও তিনি আরেকবার ঝুঁকি নিলেন।

    তার নির্দেশে,মান সিংহও তার সেনাদের সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়ে চললেন রাণা প্রতাপের বিরুদ্ধে। তার সংগী ছিলেন রাজপুতানার তাবড় রাজারা। বিকানের,বুন্দির রাজারা তো ছিলেনই, আরো ছিলেন রানাপ্রতাপের ভাই সাগরাজ।
    আকবর বহু যুদ্ধেই নিজেই রণাংগনে থাকতেন, কিন্তু এই লড়াইতে আগাগোড়াই তিনি অনুপস্থিত রাণাপ্রতাপের দুর্গ আর মান সিংহের শিবিরের মাঝে ছিলো আরাবলী পাহাড়ের এক খাঁজ, যার নাম হলদিঘাট। কেননা এই পাহাড়ের পাথর ভেঙে হলুদ রংএর গুঁড়ো পাওয়া যেতো। রাণা প্রতাপও দুর্গ ছেড়ে এগিয়ে আসলেন সমরবাসনায়।

    দিনটা ছিলো ১৮ জুন,১৫৭৬।

    হ্যাঁ। যে কথাটা খুবই গুরুত্বপুর্ণ যে, এখন যদিও ঐ অঞ্চল রুক্ষ শুষ্ক ,সেই সময়ে কিন্তু সেটি ছিলো ঘন জংগলে ভর্ত্তি।

    কোন পক্ষে কতো সেনানী ছিলো? নানা পন্ডিতের নানান মত। আমি যদুনাথ সরকারের মতটাই নিলাম। যদিও প্রত্যক্ষদর্শী ঐতিহাসিক অল বাদায়ুনী এই লড়াই নিয়ে লিখেছেন, কিন্তু উনি রানা প্রতাপের শুধু ক্যাভালরীর সংখ্যাই দিয়েছেন। তাঁর মতে তিন হাজার ঘোড়সওয়ারী ছিলো রানার।তার পদাতিকদের সংখ্যা ছিলো আনুমানিক শ চারেক। এরা ছিলেন বনচারী ভীল গোষ্ঠীর যোদ্ধা। এদের পটুত্ব ছিলো জংগলের মধ্যে গেরিলা লড়াইতে। মুক্ত রণাংগনের মুখোমুখী লড়াইতে এনারা অনভিজ্ঞ ছিলেন।

    উল্টো দিকে মান সিংএর কাছে ছিলো প্রায় দশ হাজার সেনানী।তার মধ্যে চার হাজার হচ্ছে নিজের গোষ্ঠীর (কাচোয়া) রাজপুত।আরো হাজার খানেক সমবেত নানান গোষ্ঠীর রাজপুত। আর বাকীটা ,মানে হাজার পাঁচেক মুস্লিম সেনা। দুই পক্ষেই কিছু হাতী ছিলো।

    মুঘল শিবিরে ছিলো মাস্কেট মানে কিছু গাদা বন্দুকধারী সেনা। কিন্তু রানা প্রতাপের কাছে কোনো বন্দুকই ছিলো না।
    মুঘল ব্যুহ ছিলো এইরকম। প্রথমেই ৮৫ জন ঘোড়সওয়ারের শক ট্রুপ, অর্থাৎ যারা আচমকা ছুটে গিয়ে শত্রু পক্ষকে বিশৃংখল করে দিতে পারে যাতে অগ্রনী (ভ্যানগার্ড) অংশ সেই সুযোগের সদব্যবহার করতে পারে। যার নেতৃত্বে সইদ হাসিম। তার পিছনে অগ্রনী বাহিনী, কাচোয়া গোষ্ঠীর রাজপুত,সেনাপতি জগন্নাথ আর মধ্য এশিয়ার থেকে আসা বক্সি আলি আসফ খানের অধীনে ঐ গোষ্ঠীর মুসলমান সেনারা।

    এর পিছনেই মুঘলের মূল বাহিনী। সরাসরি মান সিংহের নেতৃত্বে, রাজপুত সেনারা। বামদিকে রয়েছেন বাদাকশান (আফঘানিস্তান- তাজাকিস্তানের সীমান্ত অঞ্চল) সেনারা। আর মান সিংহের সব থেকে শক্তিশালী অংশ হচ্ছে তাঁর সাদাতে এ বড়া মুসলিমেরা, তার দক্ষিন পক্ষে। এই sayyid of Barha হচ্ছে এখনকার উত্তরপ্রদেশের মুজফফরনগরের বারোটা গ্রামের অধিবাসী। সারা মুঘল যুগ ধরেই এদের সাংঘাতিক নাম ডাক ছিলো সেনা হিসেবে। মুঘল সেনানীদের মধ্যে ভারতীয় সেনাদের মধ্যে এরাই ছিলেন নামকরা। বাকীটা ছিলো উজবেক, তাজাকি, কাজাক ও অন্যান্য মধ্য এশিয়ার যোদ্ধাগোষ্ঠীর লোক।

    অবশিষ্ট ভারতীয় মুসলমান সেনারা, বেশ অনেকটাই দুরে ,রিসার্ভ ফোর্স হিসেবে মজুত থাকবে। দিনের শেষ এই রিজার্ভ ফোর্সই হবে সেদিনের যুদ্ধের ভাগ্য বিধাতা।

    রানাপ্রতাপের অগ্রনী মানে ভ্যানগার্ড সেনা ছিলো আটশো ঘোড়সওয়ার।এই বাহিনীর নেতৃত্ব ছিলেন আফঘানী হাকিম খান সুর। আরো কিছু রাজপুত দলনেতাও ছিলেন। ডানদিকে রইলেন গোয়লিওরের রাজা রাম সা তনোয়ার ও তার শ পাঁচেক সেনার দলবল। বামদিকের নেতৃত্বে বিদা মানার অধীনে প্রায় শ চারেক ঝালা উপজাতির লোক।ভ্যানগার্ড দলের পিছনেই প্রায় ১৩০০ সেনা, তারা সরাসরি রানাপ্রতাপের নেতৃত্বে। একেবারে পিছনে,রিসার্ভ ফোর্সে রয়েছে ভীল গোষ্ঠীর তীরন্দাজেরা। পেশাদার যোদ্ধা না হলেও , সংগে থাকে চারণ কবিরা, পুরোহিত, ব্যবসায়ী ও আরো কিছু অসামরিক লোক। কিন্তু রাজপুত ঐতিহ্য অনুযায়ী আপৎকালে এরা সকলেই তরোয়াল হাতে সরাসরি যুদ্ধে যোগদান করে থাকেন।

    এই সেনা সমাহারের ডিটেইলসটা একটু বোরিং লাগলেও খুবই গুরুত্বপুর্ণ কেননা যে মীথকথা প্রচলিত রয়েছে হলদিঘাটের যুদ্ধ নিয়ে, যেমন ওটি রাজপুত জাতীয়তাবাদ ও মুঘল সাম্রাজ্যের লড়াই বা আরো পরিষ্কার করে মুসলমান বনাম হিন্দুর লড়াই, সেটি ভেঙে যাবে।

    হলদিঘাটে যাবার জন্য এখন বড় রাস্তা হয়ে গেছে। তখন কিন্তু ছিলো শুধু পাহাড়ী পথ। দু ধারে ঘন জংগল। সেই খাঁড়ি পথ যায়গায় যায়গায় এতোই সরু যে পাশাপাশি দুজন ঘোড়সওয়ারই শুধু যেতে পারে।

    লড়াই,লড়াই,লড়াই চাই
    *************************************
    এপ্রিল মাসে মান সিংহ সেই পথের মুখে শিবির বসালেন, এবং দুই মাস ওখানেই অপেক্ষা করলেন।তার পরে খানিকটা এগিয়ে গিয়ে সেনাদের সাজালেন পাহাড়ী অঞ্চলের মধ্যে ছোটো এক উপত্যকায় - নাম তার বাদশা বাগ।এক বৃত্তাকার জমি,জাকে ঘিড়ে রয়েছে পাহাড়েরা।

    জুন মাসের সে সময়ে প্রচন্ড দাবদাহ। সেই লড়াইতে প্রথম অ্যাটাক শুরু করলো রানাপ্রতাপের সেনারা। তার পাহাড় ও জংগলের নিরাপদ আশ্রয় ছেড়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো মুঘল বাহিনীর উপর।

    প্রথম রাউন্ডে সার্বিক জিত হলো রানাপ্রতাপের। তাদের আফঘানী সেনারা মান সিংহের সেন্ট্রাল এবং দক্ষিনপক্ষকে আক্রমন করলে,দক্ষিন পক্ষ পুরো হেরে গেলো। অধিনায়্ক রাই লন করণ পালিয়ে গেলেন।

    আসফ খানের বন্দুকবাজ সেনারা দারুন বন্দুক চালিয়ে মুঘল সেনাদের "কভার" করলেন। সেই সুযোগে, মুঘল শিবির এবারে কিছুটা পিছিয়ে এসে ঘাঁটি গাড়লেন রক্ততালাও নামে এক যায়গায়। ওটি ঘাট অঞ্চল এর সামান্য দুরে,বনস নদীর ধারে। নিউমেরিকাল সুপিরিওরিটি আর বন্দুকের ব্যবহারের জন্য মুঘলরা চাইছিলেন যুদ্ধ হোক বড়ো যায়গায়, কেনোনা সংকীর্ণ যুদ্ধক্ষেত্রে এই দুটো'ই অচল। রানাপ্রতাপ ভুল করলেন মুঘল শিবিরকে তাদের পছন্দ মতন যায়গায় আক্রমন করে।
    রানা প্রতাপের সেনা সংখ্যা মুঘল শিবিরের এক তৃতীয়াংশ। রিজার্ভ ফোর্স বলে কিছু নেই। যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলেই ক্লান্ত সেনারা আর লড়তে পারবে না,আর সেই শিবিরই জিতবে যাদের হাতে আছে রিজার্ভ সেনা। রানাপ্রতাপ তাই সরাসরি ফ্রন্টাল অ্যাটাকের পথই নিয়েছিলেন - এসপার বা উসপার। লিডল হার্ট বলতেন "the wild boar rush"।

    এই দ্বিতীয় বারের লড়াইতে (রক্ততালাওতে),লড়াই চলছিলো মুলতঃ দুই শিবিরের রাজপুতদের মধ্যেই। সেই সংকুল যুদ্ধের মধ্যে তাদেরকে ঘিরে ধরে আসফ খানের ঘোড়সওয়ারেরা ক্রমাগতঃ তীর আর বন্দুক ছুঁড়ে ঘায়েল করছিলেন রানাপ্রতাপের রাজপুতেদের। এমবেডেড ঐতিহাসিক অল বাদায়ুনিকে নাকি সেনাপতি আলি আসফ খান বলেছিলেন, লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেই বা কী? দু দলই তো হিন্দু। বাদায়ুনির ধর্মান্ধ বলে খুব দুর্নাম ছিলো। তার বিবরণী সচারচর খুবই একপেশে হতো,কিন্তু ওনার লেখাতেই পাই হলদিঘাটের যুদ্ধে দুই দল রাজপুতের মরনপন লড়াইএর প্রসংশা।"দুই পক্ষের যোদ্ধারাই প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন কিন্তু নিজেদের সন্মান নয়," লিখলেন বদায়ুনি। মেবারের ক্যাভালরী চার্জের প্রাথমিক মোমেন্টাম ক্রমশঃই কমে আসছিলো। দুই পাশের মুসলিম ক্যাভালরীও মান সিংহের সাহায্যে এগিয়ে আসলে মুঘল শিবির আবার সুশৃংখল হয়ে উঠলো। লড়াই ক্রমেই মুঘল শিবিরের পক্ষেই চলে আসছিলো।

    রানার শেষ তুরুপের তাস ছিলো তার রনহস্তী। মহারানার হাতী লোনাকে আনা হোলো মুঘলের সেনাপ্রাচীর ভেদ করবার জন্য। কিন্তু মুঘলেরাও তাদের হাতী গজমুক্তাকে নামালো প্রতিপক্ষে। লোনা এক বন্দুকের গুলিতে আহত হয়ে রনাঙ্গন ত্যাগ করলে প্রতাপ তার বিখ্যাত হাতী রামপ্রসাদকে আনলেন। মুঘলেরা কাউন্টার অ্যাটাকে নামালেন তাদের দুটো হাতী, রণমদর আর গজরাজ। রামপ্রসাদের মাহুত নিহত হলে মুঘল শিবিরের এক ফৌজদার, হুসেইন খান তার হাতীর পিঠ থেকে এক লাফ দিয়ে রামপ্রাদের পিঠে চড়ে বসেন আর রামপ্রসাদের "দখল" নেন। যুদ্ধের পরে তিনি নবাবের কাছ থেকে এর জন্য অনেক পুরষ্কার পাবেন।

    কিন্তু এরকম সংকুল যুদ্ধে সময় যতই যাবে ততই রানাপ্রতাপের অসুবিধে। দু দলের সেনারাই ক্লান্ত। বেলা হবার সাথে রোদের তেজও প্রচন্ড হয়ে যাচ্ছে। মুঘলেরা এখন তাদের রিজার্ভ ফোর্সকে "মাঠে" নামালেন।

    যুদ্ধে এইবার ঘটনাক্রমে মুখোমুখী মান সিংহ আর রানাপ্রতাপ। মানসিংহ হাতীর পিঠে আর প্রতাপ চেতকের উপর। রানাপ্রতাপের ছোঁড়া বল্লমে মান সিংহের মাহুত নিহত হলে মুঘল সেনানীরা ছুটে আসেন। বেকায়দায় পড়ে যান প্রানা প্রতাপ।তাকে প্রায় ঘিড়ে ফেলে বিরোধী পক্ষ,তিনি আহতও হন। তাকে উদ্ধার করতে ঝালাদের নেতা বিদা, প্রতাপের রাজছত্র ছিনিয়ে নিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে চলে যান সেই খানে, চেঁচিয়ে বলেন,আমি রানাপ্রতাপ , কার সাধ্য আমকে ধরে? মুঘল সেনাদের মধ্যে একেবারে হুড়োহুড়ি পড়ে যায় তাকে বন্দী বা নিহত করবার জন্য। সেই সুযোগে অচৈতন্য রানাপ্রতাপকে উদ্ধার করেন তার সহযোদ্ধারা। চেতকের লাগাম ধরে তাকে ঘুড়িয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে।

    যুদ্ধের পরিনতি
    ****************************
    রানাপ্রতাপের রনাংগন ছেড়ে চলে যাওয়ার সাথেই এই লড়াই শেষ হোলো। মেবারের সেনারা দ্রুত পাহাড়ের পথে বা খাঁড়ি পথ দিয়ে ছুটে চলে গেলেন। মুঘল শিবিরও তাদের আর পিছু ধাওয়া করলো না। একে তো প্রচন্ড গরমে অবসন্ন সবাই,তায় ঐ জংগলে ঢাকা পহাড়ী পথে বা খাঁড়ি পথে অ্যামবুশের সুযোগও প্রচুর।তারাও ক্ষান্তি দিলেন।

    বাদাউনি জানাচ্ছেন যে এই লড়াইতে মেবার পক্ষে ৩৫০ জন নিহত হন। আর এর প্রায় তিনগুন আহত। অর্থাৎ রানাপ্রতাপের ফৌজের প্রায় অর্দ্ধেকই হতাহতের দলে। মুঘল শিবিরে পায় ১৫০ জন মারা যান, আর প্রায় ৩৫০ জন আহত। এদের অর্দ্ধেকের বেশী হচ্ছেন রাজপুত, বাকীরা ভারতীয় এবং বিদেশী মুসলমান সেনা।

    এই যুদ্ধের ফলাফলে কিন্তু আকবর সন্তুষ্ট হন নি। মান সিংহ রাজধানীতে ফিরলে, যা দস্তুর অর্থাৎ বিজয়ী সেনাপতিকে নবাব ব্যক্তিগত ভাবে অভিনন্দন জানান,সেটা এক্ষেত্রে হয় নি।

    শেষের পরে
    ****************************
    লড়াই তো শেষ হলো। সে সময়ের লড়াইএর মাপকাঠিতে নেহাৎই এক ছোটো খাটো সংঘর্ষ বই কিছু নয়। মুঘলেরা পাহাড়ের পাদদেশে গোগুন্দা গ্রাম দখল করে নিলেও সেটি ছেড়ে আবার চলে যান। এক তো নিয়মিত রসদের যোগানের অসুবিধে তায় স্থানীয় লোকেদের উৎপাত লেগেই ছিলো। ফলে রানাপ্রতাপ তার গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে যেতেই পারলেন। এর পরেও এরকম কিছু সংঘর্ষ হয়েছিলো মেবারী ও মুঘলদের অধীন রাজপুতেদের মধ্যে যে গুলি সব কটিই জিতেছিলেন নবাবী পক্ষ।

    কিন্তু রানাপ্রতাপ হাল ছাড়েন নি। আজীবন লড়াই করে গেছিলেন উনি। কুম্ভলগড় ও তার আশ পাশের এলাকাকে মেবারের মুক্তাঞ্চল করে রেখেছিলেন । আকবর বা রানা প্রতাপের জীবদ্দশায় এই লড়াই থামে নি। যখন দু জনেই মৃত তখন জাহাংগীরের কাছে আত্মসমর্পন করেন রানাপ্রতাপের ছেলে অমর সিংহ , সেই ১৬১৫ সালে। হলদিঘাটের যুদ্ধের পর তখন প্রায় চল্লিশ বছর চলে গেছে।
    ******************************************************
    যে তিনটে বই থেকে কাট অ্যান্ড পেস্ট করে লেখা
    Abraham Eraly : Emperors of the Peacock throne
    যদুনাথ সরকার Military history of India
    Major Gautam Sharma : Indian army through the ages
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫ | ৮৯৫ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    চম - dd
    আরও পড়ুন
    ও শানওয়ালা - dd
    আরও পড়ুন
    দ্রোণ পর্ব - dd
    আরও পড়ুন
    কর্ণসংহার - dd
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • avi | 113.252.164.178 (*) | ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:১১69707
  • এই সিরিজটা অসম্ভব ভালো লাগছে ddসাব। আপনার সবকটা সমধর্মী রচনা একসাথে জড়ো করে রাখছি, পুরনোগুলোও জোগাড় করছি। মিলিটারি হিস্ট্রি একটা খুব ইন্টারেস্টিং জিনিস।
  • | 125.117.233.236 (*) | ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:৩৫69704
  • হুমম। তার মানে কেউই নির্দিষ্টভাবে বিজয়ী বা পরাজিত হন নি।
  • de | 69.185.236.55 (*) | ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৯:০৬69705
  • সেই হলদিঘাটের যুদ্ধ -

    সুন্দর লেখা!
  • পুপে | 131.241.184.237 (*) | ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ ১১:১১69706
  • বাঃ, খুব ভাল্লাগলো পড়ে।
  • skm | 83.255.71.184 (*) | ০২ জানুয়ারি ২০১৬ ০৭:০৩69708
  • DD er leha khoob bhalo.
    How long Sri Rama & Sri Krisna(more than 100 years) lived
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল প্রতিক্রিয়া দিন