এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • চক্রব্যুহে অভিমন্যু

    dd লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২২ মে ২০১৬ | ১৬২২ বার পঠিত
  • দ্রোণপর্বে, এটা একটা প্রায় নিত্তনৈমিত্তিক রুটিন ছিলো যে দুর্য্যোধন হয় সরাসরি না হয় অন্যদেরকে নিয়ে দ্রোণকে গালমন্দ করতেন। দুর্যোধন সারাক্ষনই দ্রোণের কাছে খেদোক্তি করতেন,নালিশ করতেন। এই ১৩ দিবসেও ব্যতিক্রম নয়। দুর্যোধন দ্রোণের কাছে আগের দিন রাত্রেই গিয়ে বললেন "আমরা আপনার বধমধ্যে পরিগনিত হইয়াছি ; কেন না আপনি যুধিষ্ঠিরকে সমীপস্থ দেখিয়া আজিও গ্রহন করিলেন না"। দ্রোণ খুব লজ্জা পেয়ে গেলেন।বললেন ,আরে না না। “আমি সব সময়েই তোমাদের প্রিয়কার্য্যসাধনার্থ নিরন্তর যত্নবান”। কোন ভাবে অর্জুনকে যুধিষ্ঠিরের কাছ থেকে সরাতে হবে। তার পর দেখি কী করা যায়। আমি নিশ্চয়ই পান্ডবদের অন্ততঃ একজন মহারথীকে নিপাতিত করব।

    সেই মতন সকালেই তিনি সংশপ্তক সেনা দের নির্দেশ দিলেন দক্ষিন দিকে গিয়ে অর্জুনকে যুদ্ধে আহ্বান কর । এই সংসপ্তকেরা, জানেনই তো আসলে নারায়নী সেনা। এরা আমৃত্যু লড়াই করে, কখনই পালিয়ে যায় না।
    আর মূল রণাংগনে উনি চক্রব্যুহ স্থাপন করলেন। চক্রব্যুহ একটি গোলাকার ব্যুহ। পর পর আটটি কনসেন্ট্রিক ভাবে বৃত্তাকারে সেনা সাজানো হয়।এর প্রবেশের পথ একটাই থাকে। সর্বতোভদ্রও এইরকমই ,তবে সেটি বৃত্তাকার হয় আবার চতুর্ভুজও হয়। আর সেই ব্যুহতে একটার বদলে আটটা প্রবেশ পথ থাকে।
    সেই ব্যুহের একমাত্র দ্বার মানে খোলা যায়্গায় রইলেন রাজকুমারেরা। এরা হচ্ছেন কৌরবদের একশো ভাইএর ছেলেরা। একমাত্র দুর্য্যোধনের ছেলে লক্ষণ আর দুঃশাসনের অনামা পুত্র - এদের আলাদা ভাবে মেনশন করা হয়েছিলো। বাকীরা যেনো নিতান্তই একটি ঝাঁক - যেমন হয় মৌমাছি বা পিঁপড়ের মতন। এই দশ হাজার রাজকুমার দুর্য্যোধন পুত্র লক্ষণের নেতৃত্বে একজোট হলেন। সকলেই পরেছিলেন রক্তবস্ত্র, রক্ত মাল্য ও সংগে ছিলো রক্ত পতাকা। এই ই বোধহয় প্রথম "ইউনিফর্মে"র প্রকাশ ! আলাদা কারুর কোনো না আছে নাম না আছে ব্যক্তিত্ব। যাহোক, সেই দ্বারের পিছনেই স্বয়ং দুর্য্যোধন,পাশে কর্ণ,কৃপ ও দুঃশাসন। খুব পরিষ্কার ভাবে লেখা নয় ,তাবে মনে হয় এর পরের লাইনে জয়দ্রথ যিনি "সৈন্যমধ্যে সুমেরু পর্ব্বতের ন্যায় স্থিরভাবে অবস্থান করিতে লাগিলেন"। তিরিশ জন কৌরব ভাই ছিলেন ওনার সাথে। শকুনি,শল্য, ভুরিশ্রবা - এরাও রইলেন ওখানেই।

    দ্রোণ নিশ্চয়ই ছিলেন ভ্যানগার্ড । তিনি এমনই পরাক্রমে লড়াই করতে শুরু করে দিলেন যে যাবতীয় পান্ডব বীর কিছুতেই দ্রোণকে এঁটে উঠতে পারছিলেন না। নিতান্ত কাহিল হয়ে যুধিষ্ঠির "কী উপায়" চিন্তা করতে লাগলেন।শেষটায় ধরলেন অভিমন্যুকেই। বললেন ,দেখ, এই চক্রব্যুহ ভেদ করতে পারে ভূ ভারতে মাত্র চারজন। তুমি,অর্জুন,কৃষ্ণ আর প্রদ্যুম্ন। আর অর্জুন যেন ফিরে এসে আমাদের নিন্দা না করে। তুমি ই বরং সৈন্য সামন্ত নিয়ে দ্রোণকে আটকাতে এগিয়ে যাও, নয়তো অর্জুন আমাদেরকেই দুষবে। আর তুমি কুরু সেনাদের বেষ্ঠনী ভেদ করে এগিয়ে গেলেই আমরা সদলবলে তোমার পিছনে পিছনে এসে ঐ ব্যুহ ধ্বংশ করব। ভীমও সায় দিলেন। অভিমন্যুর কাজ শুধু কৌরবদের বেষ্ঠনী ভেদ করা, বাকীটা সবাই মিলে করে দেবো।

    অভিমন্যু সারথিকে চালাও বলে আদেশ দিলে সারথি কিন্তু খুব খুসী হলেন না। বললেন,আপনার উপর বড্ডো গুরুভার চাপানো হয়েছে। সারথি সুমিত্র বললেন "কারণ দ্রোণাচার্য্য যুদ্ধে সুনিপুণ,বিশেষতঃ তিনি উত্তম উত্তম অস্ত্রশিক্ষায় পরিশ্রম করিয়াছেন আর আপনি অত্যন্ত সুখে বৃদ্ধিলাভ করিয়াছেন তায় আবার বালক বলিয়া যুদ্ধেও সেরূপ সুনিপুণ নহেন" এইসব বিবেচনা করেই যুদ্ধ করুন। অভিমন্যু কি আর সেই কথা শুনবেন? উনি হেসেই উড়িয়ে দিলেন। বললেন ,আমার সামনে এই দ্রোণ কে? সমস্ত ক্ষত্রিয়মন্ডলই বা কে?' আর এরা কোন ছাড়, বিপক্ষে যদি মামা কৃষ্ণ বা বাবা অর্জুনও থাকেন তাহলেও আমি ভয় পাবো না"।সারথি তখন "অতিশয় অসন্তুষ্ট মনে" দ্রোণের অভিমুখে রথ চালিয়ে নিয়ে গেলেন।

    এরপরে অভিমন্যুর অভিযান। দ্রোণের দিকে কুরি পা যেতে না যেতেই কৌরব পক্ষ অভিমন্যুর উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন কিন্তু অভিমন্যু স্বচ্ছন্দেই দ্রোণের চোখের সামনেয় ব্যুহ ভেদ করে ভিতরে ঢুকে পড়লেন। অন্যান্য রথীদের সাথে বাহ্লীক, কাম্বোজ, বনায়ু ও পার্বতীয় ঘোড়াদের সওয়ারী প্রাসধারী সেনারাও ছিলেন। মহাভারতকার তার সবিশেষ বর্ননা দিয়েছেন। বলেছেন ভাগীরথীর আবর্ত্ত সাগরে প্রবিষ্ট হলে যেরকম তুমুল হয়ে থাকে,সেই রকম দুই পক্ষের যোদ্ধাদের সংগ্রাম চলছিলো। সেই ভয়ানক সংগ্রাম দেখে কৌরব রাজপুত্রদের মুখ শুকিয়ে যাচ্ছিলো, তারা ভয়ে ঘর্মাক্ত হয়ে উঠছিলেন। ক্রমে তারা নিহত আত্মীয় ও বন্ধুদের ছেড়ে পালাতে শুরু করলেন। অভিমন্যু চক্রব্যুহে প্রবেশ করলেন।

    অভিমন্যুকে দেখে ছুটে এলেন দুর্য্যোধন। লড়াই,লড়াই,লড়াই চাই। দ্রোণ প্রমাদ গুনে তার সেনাদের বললেন এখনই দুর্য্যোধনের কাছেই যাও আর "আপনাদের রাজাকে রক্ষা করুন"। সমবেত কৌরব রথীরা অতঃপর অভিমন্যুর কাছে থেকে দুর্য্যোধনকে নিয়ে পালিয়ে আসলেন।
    অগত্যা সব ছেড়েছুড়ে দিয়ে যাবতীয় কৌরব মহারথীরা অর্থাৎ দ্রোণ, অশ্বত্থামা, কৃপ, কর্ণ, কৃতবর্ম্মা,শকুনি, বৃহদ্বল (কোশলের রাজা), ভুরি, ভুরিশ্রবা, শল, পৌরব (পর্বত রাজ), বৃষসেন - এরা সবাই ছুটে এলেন। ভয়ানক যুদ্ধ চললো কিন্তু অভিমন্যুকে সামলানো যাচ্ছিলো না। কর্ন যুদ্ধ করতে এসে গাঢ় বানবিদ্ধ হয়ে খুবই কাতর হয়ে পরলেন।মামাদাদু শল্যও নিতান্ত আহত হলেন। শল্যের ছোটোভাইও যুদ্ধে নিহত হলেন।

    তো মদ্রদেশীয় সেনারা তো রেগেই আগুন। তারা দল বেঁধে ছুটলেন বদলা নিতে। নিজের নিজের নাম,কুল আর বাসস্থান বলে ( মানে আমাকে চিনে রাখো হে ছোকরা) তারা ঝাঁপিয়ে পড়লেন । কুরুক্ষেত্রের শেষ দিনেও শল্য মারা যাবার পর মদ্রদেশীয় সেনারা এরকম ক্ষেপে গেছিলো। "অদ্য জীবিতাবস্থায় আমাদের নিকট পরিত্রাণ পাইবে না" বলিয়া অভিমন্যুকে তর্জন করিতে লাগিল। অভিমন্যু এ শুনে একটু মুচকি হেসে ওদের কচুকাটা করতে লাগলেন।

    সেই দুর্য্যোধন, ফের তার অনুযোগ শুরু করলেন। অন্য ভুপতিদের জড়ো করে তিনি বললেন যে দ্রোণ ইচ্ছে করেই অভিমন্যুকে খতম করছেন না। দুঃশাসন তখন বড়াই করে বললেন, কোন চিন্তা নেই। আমি ই অভিমন্যুকে সংহার করতে চললাম। ফলাফল? সে আর বলার কী? অচিরাৎ দুঃশাসন আহত ও অবসৃত হলেন।

    এইবারে অভিমন্যুর মোকাবেলায় এলেন কর্ণ। কিন্তু তিনিও পরাজিত হলেন। অভিমন্যু তার শরাসন ছিন্ন ও রথ ধ্বজ চুর্ণ করলেন। সমবেত পান্ডব সেনানীরা কর্ণের এরকম দুর্দশা দেখে চিৎকার করে,হাততালি দিয়ে অভিমন্যুকে উৎসাহ দিতে লাগলেন। কর্ণের এক ভাই (মানে পালক মা বাবা রাধা - অধিরথের ছেলে,এই ভাইএর নাম উল্লেখ নেই, পরে অর্জুনের হাতে কর্ণের আরো তিন ভাইএর মৃত্যু হবে) অভিমন্যুকে তেড়ে এলেন ও অভিমন্যুকে বানবিদ্ধ করলেন। অভিমন্যু "কর্ণের ভ্রাতার শরে পীড়িত হইলেন দেখিয়া কৌরবগনের আহ্লাদের আর পরিসীমা রহিল না"। কিন্তু সেই "আহ্লাদ" ক্ষনস্থায়ী মাত্র কেননা এর পরেই অভিমন্যু কর্ণের ঐ ভাইএর মাথাটি কেটে ফেললেন। কর্নও নিতান্ত আহত হয়ে "মহাবেগে রণস্থল হইতে প্রস্থান করিলেন"। একমাত্র জয়দ্রথই তখন তার সামনে।
    সঞ্জয় উবাচ " "যুধিষ্ঠির, ভীমসেন, নকুল, সহদেব, মৎসদেশীয়গন, ধৃষ্টদ্যুম্ন, বিরাট, দ্রুপদ,কৈকেয় ও ধৃষ্টকেতু প্রমুখ অভিমন্যুর আত্মীয়গন তাঁহাকে রক্ষা করিবার মানসে তাঁহার অনুসরণক্রমে সমরে ধাবমান হইলেন"।

    জয়দ্রথের মুখোমুখী হয়ে পান্ডবেরা কেউই সুবিধে করতে পারছিলেন না।সবাই চেষ্টা করেছিলেন। যুধিষ্ঠির ভল্লাস্ত্রে জয়দ্রথের শরাসন ছিন্ন করলে তৎক্ষনাৎ জয়দ্রথ আরেকটি ধনুক গ্রহন করে যুধিষ্ঠিরকে তিন বানে বিদ্ধ করলেন। ভীমসেনও তিন ভল্লে জয়দ্রথের রথ ধ্বজ ও ধনুক কেটে ফেললে জয়দ্রথ নতুন ধনুক নিয়ে ভীমের ধনুক ছিন্ন ও ঘোড়াদের নিহত করলেন। অগত্যা ভীম সাত্যকির রথে উঠে বসলেন। চক্রব্যুহের দ্বারে বোধ হয় হাতীর পাল দিয়ে ব্যারিকেড করা হয়েছিলো কেনো না লেখা আছে যে "পুর্বে মহাবীর অভিমন্যু যোদ্ধাদিগের সহিত কৌরবপক্ষীয় অসংখ্য হস্তী সংহার করিয়া পান্ডবগনকে যে পথ প্রদর্শন করিয়াছিলেন" সেই পথে হাজির ছিলেন জয়দ্রথ। না, কোনো অলৌকিক ঘটনা ঘটে নি - জয়দ্রথ নিজের বীরত্বেই পান্ডবদের রুখে দিয়েছিলেন।

    মহাভারতকার বলেছেন যেই ভাবে অভিমন্যু একাই পুরো কৌরবদের নাস্তানাবুদ করছিল্লেন, জয়দ্রথও সেই ভাবে সমবেত পান্ডবদের রুখে দিয়েছিলেন। জয়দ্রথের এজেন্ডা একটাই। অভিমন্যু চক্রব্যুহের যে সেনাপ্রাচীর ভেঙে দিয়েছেন সেই "অভিমন্যুবিদারিত ব্যুহের পুরণ"।

    এরমধ্যে অভিমন্যু কিন্তু যুদ্ধ করেই আরো গভীরে প্রবেশ করছেন। কৌরববীর বসাতীয়(এঁর কোনো পরিচয় নেই) আস্ফালন করে সামনে আসলে অভিমন্যুর তীর তার লৌহময় বর্ম ভেদ করে তার প্রাণনাশ করলো। কর্ণপুত্র বৃষসেনও যুদ্ধ করতে এসে সারথিশুন্য হলেন ও রণেভংগ দিলেন।
    আজকের দিনটাকে কুরুক্ষেত্রের "পুত্র দিবস" বলা যায়। সারা দিনের যুদ্ধে বার বারই বিভিন্ন রথী মহারথীদের ছেলেদের নাম উঠে এসেছে, যেন অভিমন্যুকে "ব্যালান্স" করতেই। কর্ণপুত্র বৃষসেন রণস্থল ছেড়ে যেতেই অভিমন্যুর মুখোমুখী হলেন শল্যপুত্র রুক্মরথ। কিন্তু তিনি দাঁড়তেই পারলেন না। অচিরাৎ অভিমন্যু তার "সুন্দর ভ্রুশোভিত মস্তকছেদন করিয়া ক্ষিতিতলে নিপাতিত করিলেন"। অনেক রাজকুমারেরা এবারে অভিমন্যুকে একেবারে ঘিরে ফেললেন কিন্তু একশোজন কুমার অভিমন্যুর হাতে নিহত হলেন। দুর্যোধনও সংগ্রামে এসে আহত হলে তার ছেলে লক্ষণ এবার অভিমন্যুর সাথে সংগ্রামে।"পুত্রবৎসল রাজা দুর্য্যোধনও হাজির রইলেন। কিন্তু সেই "দুর্ধর্ষ ,কুবেরপুত্র সদৃশ সুদর্শন" লক্ষণও প্রান হারালেন। অভিমন্যু তাকে আহ্বান করে বললেন হে লক্ষণ,তোমাকে পরলোকগমন করতে হবে। এইবার প্রাণভরে ইহলোক দেখে নেও , এই তোমায় যমালয়ে পাঠালাম, বলে সদ্য নির্মোকত্যাগী সর্পের মতন এক ভল্ল নিক্ষেপ করে লক্ষণের মাথাটি কেটে ফেললেন।

    মহাভারতের বৈবাহিক সম্পর্ক গুলিও বেশ জটিল। দুর্য্যোধনের কন্যা লক্ষণাকে বিয়ে করেছিলো কৃষ্ণের ছেলে শাম্ব। কে জানে,সেই কারনে কী অন্য কোনো কারনেই কৃষ্ণের কোনো ছেলেই মহাভারতের যুদ্ধে যোগ দেন নি। যদিও সমগ্র যদুবংশ কিন্তু ভাগাভাগি করে দুই পক্ষেই লড়েছিলেন।

    অভিমন্যু এইবার কর্ণীবানে কর্ণের কর্ণে আঘাত করলেন। এই অনুপ্রাসটি বহু পর্বেই বার বার উল্লেখ হয়েছে।

    যাই হোক, লক্ষণকে নিহিত দেখে কৌরবপক্ষের ছয় মহারথী যার মধ্যে দ্রোণ ও কৃপ - অর্জুনের এই দুই শিক্ষাগুরুও উপস্থিত ছিলেন - ঘিড়ে ফেললেন। অভিমন্যু তাদের ছেড়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন জয়দ্রথের সেনাদের মধ্যে। সেখানে উপস্থিত ছিল কলিংগ ,নিষধেরা আর ক্রাথপুত্র ও তাদের সমবেত গজসৈন্য।। এই ক্রাথের নাম বার তিনেক উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু তিনি কোন দেশের রাজা বা বীর সেটা জানা নেই। ক্রাথপুত্রের নামও নেই। ক্রমে অভিমন্যু এই অনামা ক্রাথপুত্রকে যমালয়ে পাঠাবেন। তার হাতে আরো নিহত হবেন বৃক্ষারক,অশ্বকেতু , ও চন্দ্রকেতু । এই পর্বে এরকম বেশ কয়েকজন মাইনর বীরেদের নাম উল্লেখ আছে কিন্তু তাদের পরিচয় মহাভারতে নেই।কৃপাচার্য্যের ঘোড়াগুলিকেও মেরে ফেললেন অভিমন্যু। অভিমন্যুর হাতে আরো নিহত হবেন কোশলের রাজা বৃহদ্বল , "কৌরবকুলের কীর্ত্তিবর্দ্ধন" বৃক্ষারক, মগধের অশ্বকেতু আর মাত্তিকাবত দেশীয় ভোজ।এই কোশলপতি বৃহদ্বল ছিলেন প্রথম যে ছয়জন মহারথী অভিমন্যুকে ঘিড়ে ধরেছিলেন তাদেরই অন্যতম। এই রাজা কর্ণিবানে অভিমন্যুর বুকে আঘাত করলে ক্রুদ্ধ অভিমন্যু কোশলরাজের ধনুক ছিন্ন ও সারথি ও অশ্বদের ভূপাতিত করেন। বৃহদ্বল অসি চর্ম নিয়ে ধেয়ে আসলে অভিমন্যু তাঁর বুকে তীর মেরে তাকে নিহত করেন।

    কর্ণের ছয় জন মহাবলাক্রান্ত "সচিব"ও নিহত হবেন। রণক্ষেত্রে "সচিব" কথাটির উল্লেখ আর কোথাও পাই নি, মনে হয় ছয়জন সহকারী যারা কর্ণের পাশ্ব ও পৃষ্ঠরক্ষক ছিলেন।
    কর্ণও এঁটে উঠতে পারছিলেন না অভিমন্যুর মুখোমুখী। দুজনেই দু জনের তীরে ক্ষত বিক্ষত ও রক্তাক্ত হয়ে "পুষ্পিত কিংশুকতরুর ন্যায় শোভা পাইতে লাগিলেন"।

    অনামা দুঃশাসন তনয় বরং পাল্টা মার দিলেন অভিমন্যুর ঘোড়া সারথি ও স্বয়ং অভিমন্যুকেও শরবিদ্ধ করে। অভিমন্যু তাকে বললেন, তোমার বাবা একজন কাপুরুষ। আমার সাথে যুদ্ধ না করেই পালিয়ে গেছেন কিন্তু তুমি পরিত্রান পাবে না"।
    এর কিছু ক্ষন পরে, এই অনামা দুঃশাসন পুত্রের হতেই নিহত হবেন অভিমন্যু।

    ইতিমধ্যে শকুনি ও যোগ দিলেন অশ্বত্থামা আর শল্যের সাথে। শল্য অচিরাৎ অভিমন্যুর "শরে জর্জরিত" হয়ে অব্সৃত হলেন। শকুনিও যথেষ্ট আহত হয়ে সটান চলে গেলেন দুর্য্যোধনের কাছে। বললেন এই অভিমন্যুকে একাকী লড়াইতে সংহার করা অসম্ভব। আপনি বরং দ্রোণ ও কৃপের কাছে গিয়ে জেনে আসুন কী ভাবে অভিমন্যুকে আটকানো যায়। না হলে এ তো একাই আমাদের সকলকে এক এক করে সংহার করবে।

    কর্ণ তখন দ্রোনের কাছে গেলেন। বললেন , নেহাৎ বীরদের যুদ্ধ ছেড়ে ছুড়ে চলে যাওয়া অনুচিত,তাই আমি "নিতান্ত নিপীড়িত”হয়েও যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থান করছি। এক্ষনে কী উপায়। দ্রোণাচার্য্য খুবই তারিফ করলেন অভিমন্যুর শৌর্য্যের। বল্লেন, দেখেছো, ঐ কিশোর এতো দ্রুত শরনিক্ষেপ করছে যে শুধু ওর ধনুকটাই চোখে পড়ছে। আর জানালেন যে অভিমন্যুকে সরাসরি আক্রমন করে ফায়দা হবে না। ওকে ঘিড়ে ধরে ওর ঘোড়া রথ পার্ষ্ণি সারথিকে ফোকাস করে মেরে ফেলো, তবেই যুদ্ধ জিতবে। পার্ষ্ণি সারথি কথাটিও ঠিক বোঝা গেলো না। আভিধানিক অর্থে পার্ষ্ণি মানে পিছনদিক। অর্থাৎ এরা ছেলেন পৃষ্ঠরক্ষক রথী। দ্রোণ জানালেন পিছন থেকে আক্রমন করে অভিমন্যুর ঘোড়ার লাগাম ছিন্ন কর,তার পার্ষ্ণি সারথিদের নিহত করো আর ধনুকের জ্যা ছিন্ন কর, এর পরেই অভিমন্যুকে হারাতে পারবে।

    ছয় জন (২)"করুণরসশুন্য" মহারথী অতঃপর অভিমন্যুকে একই সাথে আক্রমন শুরু করলেন। মহাভারতকারের এই লড়াইএর বিবরণ খুবই সংক্ষিপ্ত। তাও যেটুকু ডিটেইলস পাওয়া যায় - পিছন দিক থেকে আক্রমন করা কর্ণের বানে ছিন্ন হল অভিমন্যুর ধনুক, ভোজের বানে নিহত হল তার ঘোড়ারা আর দুই পার্ষ্ণি সারথী যমালয়ে গেলো কৃপের বানে।অভিমন্যুর বাণে অশ্বত্থামা আহত হলে "পুত্রবৎসল" দ্রোণ ও "পিতার নিকট গমানার্থী" অশ্বত্থামা উভয়েই অভিমন্যুকে শরবিদ্ধ করলেন। কোশল রাজ বৃহদ্বল কর্ণী বানে অভিমন্যুর "বক্ষে তাড়না" করলে অভিমন্যুও বৃহদ্বলকে সারথীশুণ্য করলেন।(এর পরের নানান বিবরনীতে কিন্তু একাধিকবার উল্লেখ হয়েছে যে অভিমন্যুর হাতে বৃহদ্বল নিহত হয়েছিলেন। আর সেই বর্ননাও রয়েছে কয়েক পরিচ্ছদ আগেই)

    অতঃপর রথহীন, ধনুর্বানহীন অভিমন্যু ঢাল তরোয়াল নিয়েই ভুমিতে পা রাখলেন। সমবেত মহারথীরা তখন একে একে তাকে নিরস্ত্র করতে লাগলেন। দ্রোণের নারাচে (লৌহময় ভারী তীর) ছিন্ন হল অভিমন্যুর মনিময় অসির মুষ্টিদেশ আর তার বর্ম্ম ছিন্ন হলো কর্ণের বানে।

    অভিমন্যু চক্রাস্ত হাতে নিলেন। সারা মহাভারতে চক্রাস্ত নিয়ে যুদ্ধের এই একটি ই বিবরণ রয়েছে। কিন্তু সমবেত বাণবর্ষণে সেই চক্রও খন্ড খন্ড হলে অভিমন্যু হাতে নিলেন গদা - এটাই তার শেষ অস্ত্র।

    সেই গদা হাতে ভীষণ অভিমনুকে ছুটে আসতে দেখে অশ্বত্থামা তার রথের থেকে “তিন লম্ফে পলায়ন করিলেন"। অভিমন্যু তখনও সংহারী। তার গদার আঘাতে মারা যাবে গান্ধার রাজা কালিকেয় এবংআরো অনেক সেনানী। বহু তীরবিদ্ধ অভিমন্যুকে তখন সজারুর মতন দেখতে লাগছিলো।
    দুঃশাসন তনয়ের সাথে একক সংগ্রামে অভিমন্যু গদা দিয়ে চুর্ণ করলেন তার রথ ও অশ্বদের। এখন দুজনেই রণভুমে - দুজনের হাতেই গদা। পুরাকালে মহাদেব ও অন্ধক যেমন দুজনে দুজনকে প্রচন্ড গদাঘাত করেছিলেন সেইরকম দুই জনের ভয়ংকর গদাযুদ্ধ শুরু হল। অভিমন্যুর শেষ লড়াই কিন্তু এক ডুয়েল। এক সময়ে দুজনেই দুজনের আঘাতে মাটীতে আছড়ে পড়লেন কিন্তু দুঃশাসন তনয় "সত্বর অগ্রে সমুত্থিত হইয়া উত্তিষ্ঠমান"অভিমন্যুর মাথায় গদা দিয়ে মারলেন মোক্ষম আঘাত।

    অভিমন্যুর মৃত্যু হল।

    সমূহ অ্যান্টি ক্লাইম্যাক্স। খুবই দায়সারা ভাবে লেখা।
    আসলে প্রথম তেরোদিনের যুদ্ধের বিবরণীটাই এইরকম ছিলো। শুরুই তো হল দশম দিনের থেকে। সঞ্জয় ধৃতরাষ্ট্রের কাছে গিয়ে বললেন ভীষ্মএর পতন হইয়াছে। সেই খান থেকে ফ্ল্যাশ ব্যাক।প্রথম দশ দিনের যুদ্ধের কথা একবারেই বলা হল। তার মধ্যে দু একদিন তো গোটা দুয়েক প্যারাতেই শেষ। "অনেক যুদ্ধ হল,অনেক লোক হতাহত হল",এইরকম কিছু সাধারন কথা, ব্যাস আর কিছু নয়।

    ১৪তম দিনে জয়দ্রথ বধের সময় থেকেই যুদ্ধের ধারা বিবরণী প্রায় ঘন্টা ধরে হয়েছে এবং এটা চলবে শেষ দিন পর্যন্ত্য।
    যে রহস্যটা থেকে যায় সেটি হল অর্জুন কেনো জয়দ্রথের উপরই বেছে বেছে প্রতিহিংসাপরায়ন হয়ে উঠলেন? অলৌকিক অংশটুকু বাদ দিলে দেখি জয়দ্রথ তো ন্যায় যুদ্ধ করেই পান্ডবদের আটকে রেখেছিলেন। সেটা অন্যায় কিছু নয়। অধর্ম করে যুদ্ধ করেছিলেন ছয় রথী, যারা একা অভিমন্যুকে ঘিড়ে ধরে লড়াই করেছিলেন, যার মধ্যে দ্রোণ,কৃপ ও অশ্ব্ত্থামা ছিলেন। অর্জুনের দুই গুরু ও এক গুরুপুত্র। এদের প্রতি এক অহৈতূকী দুর্বলতা ছিলো অর্জুনের , তাই যেনো এদের ডিফেন্ড করতেই তার পুরো আক্রোশটা পরলো জয়দ্রথের উপর।
    মহাভারতেও দেখি অভিমন্যুর পতনের পরে গগনচারী ভুতগন "উচ্চৈঃস্বরে কহিতে লাগিল - 'মহাবীর দ্রোণ, কর্ণ প্রমূখ ধৃতরাষ্ট্রীয়্পক্ষের ছয়জন মহারথ এই বালককে সংহার করিয়াছেন, ইহা আমাদের মতে নিতান্ত ধর্মবিরুদ্ধ কর্ম হইয়াছে'"। এঁরাও জয়দ্রথকে বাদ দিয়েছেন। অর্জুনও যুদ্ধ সেরে শিবিরে ফিরে এসে দুঃসংবাদটি পেলেন।
    শোকাহত অর্জুনও বললেন ,অন্তিম সময়ে কর্ণ,দ্রোণ ও কৃপপ্রমূখ "নৃশংসগন"এর বানে বিক্ষত অভিমন্যু কি "হা তাত! এক্ষণে আমাকে পরিত্রাণ কর" এই বলে বার বার বিলাপ করেছিলো? পরের মুহুর্ত্তেই নিজেকে সংশোধন করে বল্লেন, সে আমার আর সুভদ্রার পুত্র,বাসুদের ভাগিনেয় - সে"এইরূপ আর্ত্তনাদ করিবার পাত্র নয়"।

    শোকাহত অর্জুন বাকী পান্ডবদের খুবই অপমান করলেন। "আপনারা উপস্থিত থাকতে কী করে যুদ্ধরীতি লংঘন করে শত্রুরা অভিমন্যুকে নিহত করলো? " আরো বললেন "আপনাদের না আছে পৌরুষ না আছে পরাক্রম ,"আপনাদের বর্ম,অস্ত্র ও শস্ত্র এসবই শুধুই অংগভূষণ আর সভামধ্যে বীরবাক্য বলাও শুধু মুখে বীরত্ব প্রকাশ"। শোকতপ্ত অর্জুনের চোখের দিকে তাকানোর সাহসও ছিলো না কোনো পান্ডব পক্ষের বীরের।

    অনুতপ্ত যুধিষ্ঠিরই বোঝালেন অর্জুনকে। অপ্রতিরোধ্য দ্রোণকে সামলাতে সেই চক্রব্যুহ ভেদ করা ছাড়া অন্য উপায় ছিলো না। আর দ্রোণের তো ঘোষিত এজেন্ডাই ছিলো যুধিষ্ঠিরকে বন্দী করার। অর্জুনকে সাফাই দিতে গিয়েও যুধিষ্ঠির ছয় মহারথী দ্রোণ,কৃপ,অশ্ব্ত্থামা, কর্ণ, বৃহদ্বল আর কৃতবর্ম্মা'র নামই নিলেন। এরাই প্রত্যক্ষ ভাবে দায়ী। আরো বললেন "ক্ষুদ্র" জয়দ্রথ আমাদের আটকে দিয়েছিলেন। আমরা ব্যুহদ্বার ভেদ করতে পারি নি।

    ব্যাস। অর্জুন অমনি জয়দ্রথ বধের সাংঘাতিক সংকল্প নিয়ে নিলেন। একবারের জন্যেও দুই অস্ত্রগুরু আর গুরুপুত্রকে দোষ দিলেন না।
    আসলে অর্জুনের একটা অবসেসিভ ভক্তভাব ছিলো, সে দাদা যুধিষ্ঠিরের প্রতি হোক বা, সখা কৃষ্ণের জন্য হোক এবং অবশ্যই দুই অস্ত্রগুরু দ্রোণ আর কৃপ আর গুরুপুত্র অশ্বত্থামার জন্য। চতুরদশ দিনে,জয়দ্রথ বধের পরই কিন্তু সেদিনের যুদ্ধ থামে নি। জয়দ্রথের নিধনের পর কৃপাচার্য্য আর অশ্ব্ত্থামা , দুজনে একই সংগে অর্জুনকে আক্রমন করেছিলেন। অভিমন্যু বধের জন্য এরা প্রত্যক্ষ ভাবে দায়ী। কিন্তু অর্জুন এদের উপর "নিধনবাসনা পরিত্যাগপুর্ব্বক মন্দবেগে শরবর্ষণ করিতে লাগিলেন"। কৃপাচার্য্য কিন্তু তাতেই মুর্চ্ছা গেলেন ও তার সারথী তাকে "মৃতজ্ঞানে রথ লইয়া পলায়ন করিল"।

    ব্যাস হয়ে হেলো। অর্জুন কেঁদেই আকুল। "উনি ঋষিপুত্র,তায় আমার আচার্য্য ।।।।এবং দ্রোণের প্রিয়সখা," আর তাকেই আমি এরকম আঘাত করলাম? বল্লেন অর্জুন। "এক্ষণে উনি আমার শরে মুর্চ্ছিত হইয়া আমাকে পুত্রশোক অপেক্ষা অধিকতর দুঃখগ্রস্থ করিলেন। আমাকে ধিক"। এই প্রশ্নাতীত আনুগত্যের মনোভাব অর্জুনের সব সময়েই ছিলো। অভিমন্যুর মৃত্যুও তাকে পাল্টাতে পারে নি। যুদ্ধের সর্বত্রই অর্জুন এঁদের মুখোমুখী হলে "মৃদুভাবে শরবর্ষণ" করেছিলেন।

    আরো একটা ব্যাপার হয়তো ছিলো। এঁরা তিনজনেই ঋষিপুত্র, ব্রাহ্মণ, তাই মহাভারতকার এঁদের মৃত্যু তো দুরের কথা ,এদেরকে প্রহারও অর্জুনের হাতে করাতে চান নি। অর্জুন তাই ধর্মমতে "সফট টারগেট" জয়দ্রথকেই বেছে নিয়েছিলেন।

    আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে চক্রব্যুহ। সে এমনই ব্যুহ যে পান্ডবপক্ষ থরহরি কম্পমান হয়ে গেলো। এর আগে বা পরে , কোনো পক্ষই কিন্তু এই প্রায় "অভেদ্য" ব্যুহ স্থাপনা করেন নি এমন কি জয়দ্রথ বধ আটকাতেও এই ব্যুহ হয় নি।

    একটা লিস্ট দেই, আঠারো দিনের যুদ্ধে দুই পক্ষের ৩৬টি ব্যুহ থাকার কথা কিন্তু সব দিনের ব্যুহের উল্লেখ পর্যন্ত্য হয় নি মহাভারতের বিবরণীতে। আরো যে সকল বুহের নাম মহাভারতে উল্লেখ হয়েছে সেগুলো জানাই, ক্রৌঞ্চ, অর্ধচন্দ্র, গারুড়, ব্যাল, মকর, সাগর, শৃংগাটক, মন্ডল, সর্বতোভদ্র, শকট, সূচী, পদ্মবুহ।এর মধ্যে এই ১৩তম দিনের চক্রব্যুহ , আর ১৪তম দিনের সেই এক কম্পোসিট ব্যুহ, (যার সামনেটা শকটাকার, তারপরে পদ্মব্যুহ আর তার মাঝে সূচীব্যুহ), মাত্র এই দুই দিনের যুদ্ধেই ব্যুহের কিছু একটা ভূমিকা ছিলো। যে চক্রব্যুহ নিয়ে এতো ধুন্দুমার, যার ভেদ সন্ধান মাত্র চারজনই জানতেন ভূ ভারতে - সেই বুহের আর কোথাও উল্লেখ নেই।

    মনুসংহিতাতেও কয়েকটি ব্যুহের উল্লেখ আছে। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে তো বিশদ বিবরণ আছে ব্যুহ রচনার। ব্যুহের বর্ননা আছে অগ্নিপুরাণেও। এইগুলিতেও চক্রব্যুহের নাম নেই। মহাভারতের যুদ্ধেও ব্যুহ স্থাপনা নিয়ে বিশেষ কোনো মাতামাতি নেই - যতটা রয়েছে ইন্ডিভিজুয়াল মহারথীদের বীরত্বে। শুধু অভিমন্যুবধের ক্ষেত্রেই চক্রব্যুহ'র প্রায় অলৌকিক অভেদ্যতা নিয়ে বাড়াবাড়ি রয়েছে।

    আর শেষ যে ব্যাপারটা লেখার মতন সেটা হচ্ছে নামকরনের রাজনীতি।

    মহাভারত তো বিজয়ীদের অর্থাৎ পান্ডবদের পক্ষের রচিত ইতিহাস। সুতরাং পান্ডব পক্ষকে যে টেনে খেলানো হবে তাতে আর আশ্চর্য্যের কী? তাও , বড্ডো চোখে লাগে দুর্য্যোধন নাম আর বেশী করে দুঃশাসন নাম। এ কখনো বাবা মায়ের দেওয়া নাম হতে পারে ? অনেক টীকাকার বলেন দুর্য্যোধনের প্রকৃত নাম ছিলো সুযোধন।দুর্য্যোধনের স্ত্রীর নাম ও কখনো উল্লেখ হয় নি - অথচ উনি ছিলেন রাজমহিষী। কৌরব পক্ষের কারুর স্ত্রীর'ই কোনো ভুমিকা ছিলো না, নাম ও লেখা ছিলো সামান্য কয়েকজনেরই। আর দুঃশসনের যে ছেলে সম্মুখ যুদ্ধে সম্পুর্ণ নিজের পরাক্রমে অভিমন্যুকে পরাজিত ও নিহত করেন তিনিও আগাগোড়াই অনামা থেকে গেলেন। তার কথা বেশ কয়েকদিনের যুদ্ধে উল্লেখ করা হয়েছে - কিন্তু, ঐ শুধু "দুঃশাসন তনয়" নামেই। তাকে ঐটুকু সন্মানও দিতে পারেন নি মহাভারতকারেরা।

    ****************************************************
    (১)ভল্ল নিয়ে দু চার কথা।
    মহাভারতের সব থেকে সফল অস্ত্র ছিলো ভল্ল। কতো যে রথী মহারথী সারথী সবাই প্রতিপক্ষের ভল্ল বা ভল্লাস্ত্রে নিহত হয়েছেন তার ইয়ত্বা নেই। যেহেতু বান বা বল্লম - দুটো'ই “নিক্ষেপ” করা হয় তাই ঠিক বোঝা যায় না এটি কি একটা জ্যাভেলিনের মতন হস্তমুক্ত অস্ত্র না তীরের মতন চাপমুক্ত অস্ত্র ছিলো?

    তবে ভল্লের ফলা নিশ্চিত ভাবে ছিলো চওড়া ও ধারালো, হয়তো অর্দ্ধ চন্দ্রাকারও। কেনোনা প্রতিবারেই ভল্লের আঘাতে প্রতিপক্ষের গলা,হাত পা ছিন্ন হয়েছে। ছুচালো ও তীক্ষ্ণ ফলক থাকলে সেটি সম্ভব হতো না।

    দ্রোণপর্বের ১৬৫ তম অধ্যায়ে (কালীপ্রসন্ন সিংহের অনুবাদে)রয়েছে "হার্দ্দিক্যও এক নিশিত ভল্ল ধারন পুর্বক তাঁহার প্রতি ধাবমান হইলেন"। স্পষ্টত;ই এটি তাহলে বল্লম জাতীয় অস্ত্র।কিন্তু এর অল্প পরেই ১৭১ অধ্যায়ে বৃষসেনের সম্পর্কে লেখা আছে উনি "শরাসন গ্রহণ ও তুণীর হইতে সুবর্নবর্ণ নিশিত ভল্ল বহিষ্কৃত করিয়া তাহাতে সংযোজন পূর্ব্বক সোমকদিগের উপর নিক্ষেপ করিলেন"। মানে এটা একটা চওড়া ফলকের তীর।

    বোধহয় ভল্ল ছিলো এক লম্বা তীর যেটা প্রয়োজনে হাতে ছুঁড়েও মারা হতো এবং সেটি'ই বেশী প্রচলিত ছিলো।হরিদাস সিদ্ধান্তবাগীষ নিশ্চয়ই মহাভারতের সামরিক বিষয় নিয়ে কালীপ্রসন্নের পন্ডিতদের তুলনায় অনেক বেশী যত্নবান ছিলেন , তাঁর অনুবাদে দেখি অভিমন্যু'র "বাহুনিক্ষিপ্ত ভল্লের "(তস্য ভুজনিক্ষিপ্ত) কথা লিখেছেন। অর্থাৎ এটি হস্তমুক্ত অস্ত্র।
    তবে সদাশিব ধনুর্বেদে ভল্লের উল্লেখ আছে, সেটি নেহাৎই এক তীর। দশ রকমের ফলার কথা অছে যেমন সুচীমুখ, ক্ষুরপ্র, আরামুখ ইত্যাদি। তার মধ্য ভল্লও আছে - নেহাতই একটি ফলকের নাম। ভল্লের কর্ম ছিলো "লক্ষ্যস্থলভেদ"। অর্থাৎ ছুঁচলো ফলক। আরেকটি ফলক ছিলো দ্বিভল্ল নামে যেটি নাম শুনেই বোঝা যায় টিউনিং ফর্কের মতন দুই ফলা তীর , এটি সম্পুর্ণ ডিফেনসিভ তীর। এর কর্ম ছিলো প্রতিপক্ষের বাণাবরোধ।

    রামায়ণে একবারই ভল্লের উল্লেখ আছে (লংকা কান্ড ১০০/২৩-২৪)যে রাবণের বাণগুলিকে রাম তীক্ষ্ণ ভল্ল দিয়ে ছেদ করছেন। মুষ্কিল হচ্ছে তীক্ষ্ণ ফলক দিয়ে বিদ্ধ করা যায় ছেদ করা যায় না।

    (২) কারা ছিলো সেই ছয়জন নিষ্করুণ মহারথী যারা অভিমন্যুকে একই সাথে আক্রমন করেছিলেন ? এটি খুব পরিষ্কার করে লেখা নেই। নানান যায়গায় নানান নাম আছে। তবে অভিমন্যুকে যখন শেষ লড়াই ছয়জন মহারথী ঘিড়ে ফেলেছেন দ্রোণের পরামর্শ মতন ,তারা ছিলেন অবশ্যই দ্রোণ, কৃপাচার্য্য, অশ্বত্থামা, কর্ণ (এই চারজন সর্বত্রই উল্লেখিত হয়েছেন) আর ছিলেন শকুনি ও দুর্যোধন ।এর আগেও কিন্তু ছয়জন রথী অভিমন্যুকে ঘিড়েই অন্যায় যুদ্ধ করছিলেন - সেই ছয়জনের মধ্যে দ্রোণ,কর্ণ,কৃপাচার্য্য আর অশ্বত্থামা তো ছিলেনই - বাকী দুইজনের একজন ছিলেন কৃতবর্মা আর অন্যজন কোশলরাজ বৃহদ্বল যিনি অভিমন্যুর শরাঘাতে নিহত হবেন। এই জন্যেই যতোবারই "ষষ্ঠরথী বেষ্টিত অভিমন্যুর কথা ওঠে তখনই দ্রোণ, কৃপ প্রমূখ ছয় রথী বলা হয়।

    **********************************************
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২২ মে ২০১৬ | ১৬২২ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    চম - dd
    আরও পড়ুন
    ও শানওয়ালা - dd
    আরও পড়ুন
    দ্রোণ পর্ব - dd
    আরও পড়ুন
    কর্ণসংহার - dd
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • dd | 116.51.30.189 (*) | ২৩ মে ২০১৬ ০৪:৩৬54656
  • ব্যুহের ব্যাপারটা প্রায় মিথিকাল। চীনদেশেও ব্যাটেল অ্যারে ছিলো - কিন্তু হিন্দু ব্যুহের মতোন অতো ইলাবোরেট ছিলো না। যেহেতু হিন্দু যুদ্ধ ছিলো স্ট্যাটিক - মানে জমি দখলের লড়াইতো নয় - কতো তাড়াতাড়ি বিপক্ষের সবাইকে হতাহত করে দেওয়া যায় - সেই নিয়ে যুদ্ধ। আর সকলের কাছে তেমন অস্ত্রও থাকতো না। তাই একটা দুর্গ টাইপের গড়া হতো মানুষ দিয়ে। রথীরা চেষ্টা করতো সেই দুর্গের "পাঁচিল" ভেঙে ভিতরে ঢুকে তছনছে করে দিতে। সব দুর্গেই যেমন দরজা বা দ্বার থাকে,ব্যুহতেও তাই। না হলে নিজেদের দলের লোকে রথে,হাতীতে চড়ে আক্রমন করবে কেমন করে ?

    পুরু আলেকজান্ডারের লড়াইটা পড়লেই বোঝা যায় হিন্দু স্ট্যাটিক লড়াই বনাম পশ্চিমের ডাইনামিক লড়াইএর তফাৎ। পুরুর ছিলো হাতী আর ভারী রথ নির্ভর গাড়ুর ব্যুহ আর আলেকজান্ডারের ছিলো শক ট্রুপ আর ঘোড়সওয়ার বাহিনীর ফ্ল্যাংকিং ট্যাকটিক্স।

    ব্যুহের আয়তন নিয়ে কিছু বলা যায় না। যতো সৈন্য সেই রকম ছোটো/বড়ো হবে। হিন্দু এপিকগুলো এতো বেশী অতিরঞ্জিত থাকতো যে কোনো সংখ্যা বা মাপই বিশ্বাসযোগ্য নয়।
  • kc | 47.36.81.232 (*) | ২৩ মে ২০১৬ ০৪:৪২54652
  • এই লেখকের লেখা পড়লে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে মহাভারত পড়তে ইচ্ছে হয়। এনার লেখা পড়ে ডিটেলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পড়তে ইচ্ছে হয়। কিন্তু সময় এত কম। কুডোস,, ডিডি।
  • dd | 116.51.30.189 (*) | ২৩ মে ২০১৬ ০৪:৪২54657
  • ওহো, আরেকটা কথা। যে কোনো যায়গা দিয়ে ব্যুহ ভেদ করা তো মুশকিল। পর পর সাত আট সাড়ি সেনা থাকে - যেমন চক্র ব্যুহে পর পর আটটা কনসেন্ট্রিক সার্কেলে সেনা থাকতো উইথ রথী, ঘোড়া আর হাতী।

    এক যায়গায় ভেঙে ঢুকলেই অন্য যায়গা থেকে সেনারা এসে সেই যায়গায় জড়ো হয় আর নিউমেরিক্যাল সুপিওরিটি গড়ে তোলে। জয়দ্রথও তো তাই করছিলেন -"জয়দ্রথের এজেন্ডা একটাই। অভিমন্যু চক্রব্যুহের যে সেনাপ্রাচীর ভেঙে দিয়েছেন সেই "অভিমন্যুবিদারিত ব্যুহের পুরণ"।"(মানে নিজেকেই কোট করলাম)।
  • dd | 116.51.30.189 (*) | ২৩ মে ২০১৬ ০৪:৫২54658
  • এই মিনিট দশেকের ক্লিপিংটা দেখুন। ব্যুহ যুদ্ধ এক্কেবারে পরিষ্কার হয়ে যাবে।



    সিনেমর নাম রেড ক্লিফ।
  • avi | 113.24.86.115 (*) | ২৩ মে ২০১৬ ০৫:০৩54659
  • অনেক ধন্যবাদ। আর জাস্ট দুটো প্রশ্ন:
    একটা আগের। তুলে দিই। "এবার চক্রব্যূহ কি মাঠের একটা প্রান্তে হল, তার সামনে পাণ্ডবেরা, নাকি চক্রব্যূহ মাঝখানে আর তার চারপাশে পাণ্ডবপক্ষ? প্রথমটা হলে ভ্যানগার্ড দ্রোণ এত ভয়ঙ্কর যুদ্ধ করছিলেন কিভাবে, কার সাথে, কোন অভিমুখে?"
    অন্যটা কিছুটা রিলেটেড। এই ব্যূহ কি স্থির থাকবে, না মোবাইল? মোবাইল অর্থে প্রসারণশীল বা চলমান দুটোই হতে পারে। নাকি স্ট্যাটিক ওয়ারফেয়ার অর্থে নিশ্চল হয়ে থাকবে? কিন্তু সেক্ষেত্রে তো অপরপক্ষ জোরজারি করে ঢুকতে না চাইলে যুদ্ধ শুরুই হবে না।
    একটা বোনাস। অন্যপক্ষের ভেতরে ঢোকার এত ইচ্ছে কেন? মানে ব্যূহের গঠনে কি এমন কোনো ভালনারেবিলিটি আছে, যে ভেতর থেকে সহজে ভাঙা যায়? শুধু হিউম্যান শিল্ড দিয়ে সেটা কিভাবে সম্ভব? আবার এই আপাতদুর্ভেদ্য ব্যূহ খুব কম বানানো হয়েছে। এটা কি কস্ট বেনেফিট ধরে? মানে, ব্যূহ বানাতে আরো কিছু আয়োজনের কোনো ইঙ্গিত কি আছে, যা রোজকার মতো মেটানো দুঃসাধ্য?
  • avi | 113.24.86.115 (*) | ২৩ মে ২০১৬ ০৫:০৪54660
  • আগেই পোস্ট হয়ে গেছে। ক্লিপটা দেখছি এবার। :-)
  • Ekak | 53.224.129.52 (*) | ২৩ মে ২০১৬ ০৫:০৮54661
  • পড়তে খুবই ভাল্লাগছে কিন্তু অস্ত্রগুলোর মাস -মোমেন্টাম নিয়ে ধারণা কত্তে পারছিনা বলে বেজায় অস্বস্তি হচ্ছে । তবে লেখকেরও নিশ্চই সবচে বেশি অস্বস্তি হচ্ছে এই নিয়ে ।

    অর্কীয়লোজিকাল সার্ভে থেকে পুরনো সবচে পুরনো আমলের যে অস্ত্রশস্ত্র পাওয়া গ্যাছে সেখান থেকে কোনো সুত্র খোঁজার উপায় নাই , না ?
  • dd | 116.51.30.189 (*) | ২৩ মে ২০১৬ ০৫:১২54662
  • সেরকম কিছু লেখা নেই- আন্দাজে লিখছি।

    দুই ব্যুহ মুখোমুখী থাকে। মোটামুটি অচল। দুই পক্ষের রথী মহারথীরা ক্রমাগতঃ আক্রমন করে বিপক্ষের লোকক্ষয় করতে থাকে। কখনো কখনো দুই দলের রথীরাও মুখোমুখী হন, তখন দ্বৈরথ হয়। ডুয়েল। নয়তো দ্রোণ,অর্জুন ইঃ ক্রমাগতঃই শত্রুসৈন্যদের খতম করে যেতে থাকে। যে পক্ষের সৈন্য আগে শেষ হবে তারাই পরাজিত।

    রোমান ফ্যালাংক্সের যুদ্ধও তো অমনি হতো। তাদের সলিড স্কোয়ারের একটাই ব্যুহ থাকতো। প্রত্যেকে সেনানী বাহাতে ঢাল আর ডান হাতে বর্শা। একেবারে ডানদিকের লোকটির ডানদিকটা অনাবৃত - ঐ টাই উইক পয়েন্ট। ঘোরসওয়ারেরা ঐ খানে বা আউটপ্ল্যাংক করে পাশ দিয়ে পিছন দিয়ে অ্যাটাক করে শত্রুক্ষয় করতো।
  • সে | 198.155.168.109 (*) | ২৩ মে ২০১৬ ০৫:১৬54663
  • ন্যাটা সৈন্য থাকলেই ঐ সমস্যাটা সলভ হয়ে যেত
  • dd | 116.51.30.189 (*) | ২৩ মে ২০১৬ ০৫:২২54664
  • ধনুক হতো মানুষ প্রমান। মোস্টলি বাঁশের। কমপাউন্ড ধনু যেরকম টার্কো মোংগোল ধনুক ছিলো, হিন্দুদের সেরকম ছিলো না। হয়তো অল্প কয়েকজনের সেই কলা কৌশল জানতো - সেগুলোই ছিলো ঠাকুর দেবতাদের দেওয়া অস্ত্র। এই ধনুক তীরের প্রকরণ পদ্ধতি,মাপ,রেঞ্জ,ওজন সবই নানান ধনুর্বেদে আছে।

    চাইলে দু একটা এগজাম্পল দিতেই পারি। ধনুর্বেদ আমার সংগ্রহেই আছে।

    তীরও বেতের হতো। বা কাঠের। ফলক ছিলো লোহার। বা শিলীমুখ (obsidian পাথরের)। প্রাস ছিলো বাঁশের দুই মানুষ প্রমান। সলিড লোহার তীর ছিলো নারাচ আর ফাঁপা লোহার বডি হলে নালীক।আগাগোড়া লোহার বল্লম হচ্ছে শক্তি। ওজন কতই বা হবে?

    গদা নিয়েই তো সমস্যা। ক্যালেন্ডারের দেখানো হনুমানের মহতী গদা ছিলো না বলেই মনে হয়। বিভিন্ন মিউসিয়ামে রাখা অজস্র গদা যেগুলি মধ্যযুগেও চলতো সেগুলো ছোটোই হতো। দরকার হলে ছুঁড়ে মারা যেতো।

    অ্যাকচুয়ালি অস্ত্র নিয়ে তেমন সমস্যা নেই তো।
  • Ekak | 53.224.129.52 (*) | ২৩ মে ২০১৬ ০৫:২৭54665
  • সমস্যা এই যে মাস বুঝতে পারছিনা । আপনি কোনটার মুখ কেমন লিখেছেন সেটা বুঝতে পারছি । কিন্তু মাস আন্দাজ না করতে পারলে উল্টোদিকের কোন অস্ত্র তাকে আটকাতে পারে এটা আন্দাজ করা মুশকিল ।

    তীর এর ক্ষেত্রে , ধনুক এর ব্যাসার্ধ এবং বাতাসে কদ্দুর যেত লেখা আছে ? তাহলে মাসের একটা আন্দাজ পাওয়া যায় ।
  • dd | 116.51.30.189 (*) | ২৩ মে ২০১৬ ০৫:৪৫54666
  • বাব্বারে বাব্বা। এককের প্রশ্ন কী কঠিন।

    ধনুকের ব্যাসার্দ্ধ? একটু লিখছি। সবটা নয়।
    এটা সদাশিব ধনুর্বেদ থেকে।

    "চার সর্ষপে এক যব।চার যবে এক অন্ডক। ৮ অন্ডকে এক মাষ।১২ মাষে এক তোলা হয়।৫ তোলায় এক পল এবং সেই পলাদি মানের দ্বারা ধনুর শত সহস্রাদি পরিমাণ সংখ্যা হইয়া থাকে"। এই ওজন মধ্য ভাগ থেকে ঝুলিয়ে দেখে ধনুকের ইলাস্টিসিটি কতো।

    প্র্যাক্টিসের জন্য দুশো পল থেকে শুরু সাত আট রকমের গ্রেডেশন আছে।যুদ্ধে ক্লোস কোয়ার্টার ফাইটের জন্য সাত শো পল আর দুরের লক্ষ্য বেদে নশো পলের ধনুক হয়ে হবে।আরো দৃঢ় বেধের জন্য বারোশো পলের ধনুকও হতো।

    রেঞ্জ নিয়েই লেখা আছে। বর্ম তো হতো কাঁসার/ বা দুই পরত কাপড়ের মধ্যে তুলো গুঁজে (আজতেকরাও কাপুক তুলো গুঁজে ওরকম বর্ম পরতো)। খুব একটা ইতর বিশেষ ছিলো না মধ্য যুগের থেকেও।
  • dd | 116.51.30.189 (*) | ২৩ মে ২০১৬ ০৫:৫১54667
  • এক ধনু = চার হাত। সেই মতন ষাঠ ধনু মানে ২৪০ হাত(২৪০ গজ, মোটামুটি) রেঞ্জ হচ্ছে লক্ষ্যভেদের পক্ষে "জেষ্ট"। ৪০ ধনু মধ্যম আর ২০ ধনু কনিষ্ঠ।

    মিনিটে চার থেকে ছয়টি বাণ এফেকটিভলি ছোঁড়া যেতো পাণিপথের প্রথম যুদ্ধের সময়েও। কয়েকশো ধনুর্ধারী হাজার খানেক পদাতিদের মেরে ফলতো মিনিট কুরি তিরিশের লড়াইতে।
  • avi | 113.24.86.115 (*) | ২৩ মে ২০১৬ ০৫:৫৩54653
  • কুদোস কুদোস। :-)
    ডিডিস্যর, এই ব্যূহগুলোর বিস্তার কতটা হত? রণক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল নিয়ে কোনো আলোচনা আছে? ওইসময় অর্জুন তো গেলেন দক্ষিণের আলাদা রণাঙ্গনে, বাকি সবাই তো এখানেই ছিলেন। এবার চক্রব্যূহ কি মাঠের একটা প্রান্তে হল, তার সামনে পাণ্ডবেরা, নাকি চক্রব্যূহ মাঝখানে আর তার চারপাশে পাণ্ডবপক্ষ? প্রথমটা হলে ভ্যানগার্ড দ্রোণ এত ভয়ঙ্কর যুদ্ধ করছিলেন কিভাবে, কার সাথে, কোন অভিমুখে? আর যদি, ব্যূহে প্রবেশ করতে গেলে হাতি টাতি মেরে রাস্তা ক্লিয়ার করেই ঢুকতে হয়, তাহলে একটাই রাস্তা কেন? যেকোনো জায়গা দিয়েই তো উপস্থিত সেনাসামন্ত মেরে ঢোকার চেষ্টা করা যায়, এ তো আর দুর্গের দেওয়াল না যে কামান দাগতে হবে?
  • Ekak | 53.224.129.52 (*) | ২৩ মে ২০১৬ ০৫:৫৫54668
  • থেঙ্কু ডিডি দা !

    তার মানে এক পল দাঁড়াচ্ছে = ১ পয়েন্ট ফাইব ইনটু ফোর ইনটু এইট ইনটু ১২ ইনটু ফাইভ = ২৮৮০ মিলিমিটার =২ পয়েন্ট ৮৮ মিটার অলমোস্ট ইকোয়াল টু থ্রি মিটার ।

    দুশো পল মানে ছশো মিটার রেঞ্জ । এটাই তাহলে ধনুকের মিনিমাম রেঞ্জ । নট ব্যাড । অনেক হিসেব কষা যাবে এগুলো জানতে পারলে । ছিলা কি দিয়ে হত ? শুওরের নাড়ী না কার্পাস ?
  • আরও প্রশ্ন | 165.136.80.171 (*) | ২৩ মে ২০১৬ ০৫:৫৫54654
  • অধিরথ রাধার আরও সন্তান ছিল শুনে তো আমি টরেটম হয়ে গেলাম। মানে তাঁরা নিঃসন্তান ছিলেন বলেই তো জানতাম। এই বিষয়ে কিছু বিস্তারিত খোঁজখবর পাওয়া যায়?
  • avi | 113.24.86.115 (*) | ২৩ মে ২০১৬ ০৫:৫৬54669
  • চক্রব্যূহে সময়ের কোনো ব্যাপার ছিল বলে মনে হত। পাণ্ডবেরা তাড়াহুড়ো করছিল কাউকে ভেতরে পাঠাতে। অর্জুন নেই। অভিমন্যুকে বাড় খাওয়ানো হচ্ছে। কিন্তু কেন? দাঁড়িয়ে শত্রুক্ষয় উদ্দেশ্য হলে এত তাড়া কিসের? চক্রব্যূহে এমন কী বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে যা অক্ষত একটু বেশি সময় থাকলে মারাত্মক হয়ে উঠবে, এবং হয়তো যুধিষ্ঠিরের বন্দী হওয়ার সম্ভাবনা আসবে?
    ওহো, ক্লিপটার জন্যও অনেক ধন্যবাদ।
  • avi | 113.24.86.115 (*) | ২৩ মে ২০১৬ ০৬:০৩54655
  • আহা, কর্ণকে নেওয়ার সময় অব্দি নিঃসন্তান থাকতে পারেন। পরে হয়তো হয়েছিল।
  • dd | 116.51.30.189 (*) | ২৩ মে ২০১৬ ০৬:০৬54670
  • মোস্টলি মুর্ব্বা ঘাসের তন্তু দিয়ে ছিলা হতো। মুর্ব্বা ঘাস যে কী,সে আমি জানি না।

    হরিন, মহিষ ও ঘোড়ার স্নায়ু দিয়েও ছিলা হতো যদিও এটাও লেখা আছে যে বর্ষাকালে স্নায়ু নির্মিত ছিলা পিচ্ছিল হয়।

    ভরতবর্ষের আদ্র আবহাওয়ার জন্য স্তেপের ধনুকের যেগুলি প্রানীজ আঠাদিয়ে তৈরী হতো সেগুলি অচল হয়ে যেতো। "আঠারো হত কার্পাশের সূতা তিনগুন করে" ছিলাও হতো।
  • dd | 116.51.29.4 (*) | ২৪ মে ২০১৬ ০৪:৪৪54672
  • এটা এককের জন্য।

  • সুকি | 129.160.188.12 (*) | ২৪ মে ২০১৬ ১১:০৮54671
  • খুব ভালো লাগল - অনেক কিছু অজানা জিনিস জানতে পারলাম। লেখা পড়তে পড়তে একটা কথা মনে পড়ে গেল - কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময় দ্রোণাচার্যের বয়স নাকি ছিল পঁচাশি!
  • DP | 117.167.108.67 (*) | ২৫ মে ২০১৬ ০১:৪৭54673
  • খুবই সুন্দর লেখা। অনেক কিছু জানা গেল। কিন্তু বিষয় হল কৌরবদের উদ্দেশ্য ছিল যুধীষ্ঠির কে বন্দি করা। তো সেক্ষেত্রে তো পাণ্ডবদের ডিফেন্সে যাওয়ার কথা এবং কৌরবরা অফেন্সিভ স্ট্র্যাটেজি নেবে। অথচ এখানে ব্যাপারটা উল্টো। কারনটা কি?
  • dd | 116.51.26.156 (*) | ২৫ মে ২০১৬ ০৪:৩৬54674
  • @DP। নাঃ, উত্তরটা জানা নেই। লজিকালি আপনার কথাই ঠিক।

    তবে,মনে হয় যে স্ট্যাটিক যুদ্ধে, যেমন ধরুন প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের ট্রেঞ্চ ওয়ারফেয়ার শত্রুপক্ষ যদি ট্রেঞ্চের ভিতর ঢুকে যায় তো সমূহ বিপদ। ফ্ল্যাংক করে পাশ দিয়ে বা পিছন দিয়ে আক্রমন করতে পারবে।

    বোধহয় মহাভারতের ব্যুহ যুদ্ধও তাই। অন্য পক্ষের ব্যুহ ভেদ করলেই প্রচুর সেনানী খ্তম হবে,আর সেটাই জয় পরাজয়ের নির্ধারক। দ্রোণ সেটাই করছিলেন।যুধিষ্ঠির (এবং ভীমসেন) বোধহয় ভাবতেও পারেন নি যে অভিমন্যু ব্যুহভেদ করলেও তারা অনুসরন করতে অক্ষম হবেন।

    একমাত্র জয়দ্রথ বধের দিন আক্রমনটা ছিলো এক তরফা। কৌরবেরা তাদের বেশীর ভাগ মহারথীকেই সারাদিন রিজার্ভ ফোর্সে জয়দ্রথের পাশেই রেখে দিয়েছিলেন।
  • DP | 117.167.107.5 (*) | ২৬ মে ২০১৬ ০২:৩৬54676
  • জয়দ্রথ বধের দিন কিন্তু স্বাভাবিক নিয়মেই কৌরবরা ডিফেন্স আর পাণ্ডবরা অফেন্সে গেছে। হয়ত ব্যূহ থেকে এতটাই আক্রমন হচ্ছিল যে ব্যূহভেদ না করলে টেকা কঠিন হয়ে যেত। হতে পারে চক্রব্যূহে আরও কিছু বিষয় ছিল, যেমন হয়ত একটা সময় পরে ব্যূহ সচল হয়ে যেত। আর এই ব্যূহ রিপিট না করারও নিশ্চয় কোন কারন ছিল। হয়ত এতটাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হত যা খুব কঠিন ছিল। ব্যূহযুদ্ধটা কেমন যেন ক্ল্যাশ অফ ক্ল্যান্সের মত লাগছে। দুদিকে দুদল শিবির ফেলে বসে আছে। আর একে অপরের বেসে অ্যাটাক করে পয়েন্ট তুলছে। :p
  • Ekak | 53.224.129.63 (*) | ২৬ মে ২০১৬ ০৪:৫৬54675
  • দারুন ভিডিও ! এটা ঠিক এখন স্পোর্টস হিসেবে যা তীরন্দাজী হয় সব একজায়গায় দাঁড়িয়ে । আর্চারী কম্পিটিশন দেখতে যেতুম মাঝে মাঝে । আমাদের যেমন ফাঁক পেলেই রাস্তা জুড়ে ক্রিকেট , ভুটানে সেরকম ছুটির দিন মানে আর্চারী নয় খুরু (ডার্ট ) । সেগুলো অবশ্য ঘরে বানানো সাধারণ তীর ধনুক ।

    https://www.flickr.com/photos/67121428@N00/3837380290/

    তবে বো হান্টিং এখনো চালু আছে । ফেজান্ট ,ডাক শিকার হয় বো হান্টিং করে । ওই যেমন ভিডিও তে দেখিয়েছে ওরকম দৌড়-দৌড়ি সহ ।
  • d | 144.159.168.72 (*) | ২৭ মে ২০১৬ ০৮:৪৬54677
  • আজকে পড়ে ফেললাম ডিডিদাদা।
    ফাটাফাটি। আর কেসি এক্কেবারে মনের কথাটা বলেছেন।
  • de | 69.185.236.54 (*) | ২৭ মে ২০১৬ ০৮:৫৭54678
  • দারুণ!! অ্যাজ ইউজ্যুয়াল -

    এসব লেখা বই হিসেবে কিনে কাছে প্রিজার্ভ করতে চাই - ডিডিদা পাবলিশ করেন না কেন এগুলো?
  • আসিফ হোসেন | 670112.203.670112.234 (*) | ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৬:৩৭54679
  • আমি জানি জীবনে কি আসে একবার আর বলে যায় বারবার সেটাই কি ভুল করুনামায় এসেছিলাম জগতে দেখবো বলে এই সারাদূনীয়াতে হাসি হাসি পরব গলায় ফাঁসি একবার বিদায় দে মা জগত ঘুরে আসি
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন