এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • হকার সঙ্গমে

    সুকান্ত ঘোষ লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৮ জুন ২০১৫ | ১৯১৫ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • ভারতবর্ষে যদি রেলে যাতায়াতকে কেবল পরিবহন বলে কেউ ভাবেন তা হলে তিনি নির্ঘাত বিশাল একটা ভুল করে বসেন না জেনেই। ভারতে রেলে যাতায়াতের দার্শনিক নাম হল – রেলযাত্রা। যে কোন তীর্থ যাত্রার মত গুঁতো গুঁতি, না বেঁচে ফিরে আসার ভয়, সব খুইয়ে বসার আশঙ্কা এই সব সারক্যাষ্টিক জিনিস পত্র যদি বাদও দিই, তাহলে আমাদের রেলকে ‘যাত্রা’য় উন্নীত করতে যাদের অবদান অনৈস্বীকার্য তারা হল ট্রেনের ‘হকার’ এবং তাদের প্রতি আমাদের সমাজিক স্নেহ।

    ভারত থেকে বিদেশে এসে যখন প্রথমদিকে কেউ কেউ ট্রেনে চাপেন তা হলে বিশাল একটা ঝটকা লাগে – টাইমে ট্রেন আসছে , বসার জায়গাও পাওয়া যাচ্ছে,পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ইত্যাদি । তা এই সবে আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে এলে একটা অভাব অনুভূত হতে শুরু করে – কিছু যেন একটা মিস করছি । অনেক ভেবে আমি বার করলাম সেটা আর কিছুই নয়, ট্রেনে হকার দের অনুপস্থিতি ! ট্রেন অনুমোদিত কয়েকটা কফি ভেন্ডর ছাড়া বিদেশের ট্রেনে হকার কোথায় !

    আমাদের দেশে ট্রেনে হকার দের উপস্থিতি যাত্রাকে একটা আলাদা মাত্রা দিয়ে থাকে, নাহলে ওই নরক যন্ত্রণা সহ্য করা দায় ! প্রসঙ্গত উল্লেখ্য আমি এখানে ট্রেনে হকারদের আলোচনা মূলত সীমিত রাখব হাওড়া- বর্ধমান লাইনের মধ্যে কারণ এই লাইনের মধ্যেই আমার ফার্স্ট- হ্যান্ড অভিজ্ঞতা রয়েছে । তবে সমস্ত ট্রেন হকার প্রজাতির মধ্যে জীনগত পার্থক্য তাতটাই যতটা আমাদের আর শিম্পাঞ্জীর মধ্যে ! যাই হোক হাওড়া- বর্ধমান মেইন লাইন লোকালের হকারদের চার ভাগে ভাগ করতে হবেঃ

    এক) শুধু হাওড়া স্টেশন - এদের এক্তিয়ার ট্রেন ছাড়া পর্যন্ত
    দুই) হাওড়া থেকে ট্রেন ছেড়ে ব্যান্ডেল দাঁড়ানো পর্যন্ত
    তিন) ব্যান্ডেল ছাড়ার পর ও বর্ধমানে থামার ঠিক আগে
    চার) বর্ধমান স্টেশন শুধু

    এদের মধ্যে তৃতীয় প্রজাতির সাথে আমার অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক ছিল বহুদিন । অনেকে আবার বন্ধুস্থানীয় বলা যেতে পারে । এরা অনেকেই চমকপ্রদ খাবার বিক্রী করত । মানুষের মত খাবারেরও যে বিবর্তন হয় তা এই ট্রেন লাইনের হকারদের খাবার অনুসরণ করলেই বোঝা যায় । পার্থক্য একটাই, খাবারের বিবর্তনের টাইম স্কেল ডারইন স্কেলের থেকে তুলনামূলক সংক্ষিপ্ত । যখন ট্রেনের ভেন্ডর কম্পার্টমেন্টে ভাত বিক্রি শুরু হল তখন বেশ একটা চমক লেগেছিল । এই ভাত বিক্রি বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল সকাল ১০টা থেকে ১২ টার মধ্যে ট্রেন গুলিতে । এই সময়ের ট্রেনে বর্ধমানের দিক থেকে কলকাতায় ছানা আসত ।এই ছানাওয়ালারা সকালে আশে পাশে গ্রামে গোরুর দুধ দুইয়ে, সেই দুধে ছানা কেটে তারপর কলকাতা। ফলত এরা সত্যিকারের টাইম প্রেসারে থাকত , কর্পোরেট জগতের মত ফলস টাইম প্রেসার নয়। তা ট্রেনে ভাতের ব্যাবস্থা শুরু হওয়ায় অনেকের সুবিধাই হল । একজন বৌদি প্রথম এটা শুরু করে এক হাঁড়ি ভাত ,ডাল ,সব্জি ,মাছ ও খোপ কাটা থালা বা কলাপাতা বিছানো থালা দিয়ে ব্যাবসা শুরু । সঙ্গে বালতিতে জল- দাম মনে হয় ১০ টাকার মত ছিল । অনেক খানবালার মতে রীতিমত হোমলি খাবার ।

    ট্রেনে ভেন্ডর কামরা নিয়ে অনেকের ভুল ধরণা আছে – ভুল ভাঙানোর জন্য কিছুদিন যাতাযাত করতে অনুরোধ করব। ছানার গন্ধ, পচা সব্জির গন্ধ এই সব সহ্য এলে ভেন্ডরে যাতাযাত কিন্তু খুবই আরামপ্রদ। উপরি পাওনার মধ্যে রয়ে যায় হকারদের কাছ থেকে ন্যায্য দামে জিনিস পত্র কেনা।

    ভাত ছাড়া পেট ভরানোর নিকটতম খাবার ট্রেনে যা পাওয়া যেত তা হল মশলামুড়ি । মশলা মুড়ি যারা বিক্রি করত তাদের অনেকেরই আমাদের আশে পাশের গ্রামে বাড়ি। আমাদের নিমো গ্রামে মশলা মুড়ি বিক্রেতা ছিল সাকুল্যে তিন জন – ময়রাদের তপন, তপনের ভাই বাঁকু আর বাউরিপাড়ার হারা। আর মশলামুড়ি পরিবেশনের যে কাগজের ঠোঙা তা তৈরী করত কলুদের বুধোর বউ, যে বুধো আমাদের পিকনিকে রান্না করত বলে অন্য পর্বে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি আগেই। তপন ছিল আদ্যান্ত সংসারী মানুষ, লাইফে তেমন ঘটনার ঘনঘটা নেই। আমাদের পরিবারের সাথে তপনের খুবই ভালো সম্পর্ক। পুজোর কদিন তপনদা হকারি করতে যায় না – আমাদের বাড়িতে রান্না করে। আমাদের বাড়িতে পারিবারিক দূর্গা পূজা হবার জন্য আত্মীয় সজনের সমাগমে বাড়ি গম গম করে ওই সময়ে। ইয়ং জেনারেশেনের বাড়ির বঊরা আজকাল জবাব দিয়েছে এই বলে যে সারা বছর হেঁসেল ঠেলে ওই কটা দিন তারা সাজুগুজু করে রিল্যাক্স করতে চায়। তাই শুধু হেল্পিং হ্যান্ড নয়, পুজোর কদিন সব রান্না-বান্নার ভারও তপনদা এবং তার সহকারীর উপর ন্যস্ত থাকে।

    বাঁকুর ব্যাপারটা একটু সাইকোলজিক্যাল – বিয়ের আগে পর্যন্ত ঠিক ছিল, কিন্তু চাঁপাকে বিয়ে করে আনার পর ব্যালান্স চেঞ্জ হয়ে যায়। বাঁকুর হাইট খুবই শর্ট থাকার জন্যই সেই ব্যালেন্সের খেলা – চাঁপা সুন্দরী, বাপের ধারদেনা থাকার জন্য বাঁকু পয়সা দিয়ে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে চাঁপিকে (চাঁপাকে আদর করে আমাদের গ্রাম চাঁপি বলত) তুলে আনে। চাঁপি কিছুদিন বিয়ের পর ঠিক থাকে – কিন্তু বাপের বাড়ির গ্রামের তুলনায় নিমো গ্রাম মর্ডান হবার জন্য সেই সজীবতার রেশ চাঁপির মনেও লাগে। কুজনেরা বলে চাঁপির নাকি পরপুরুষের প্রতি আসক্তি বেড়ে যায়। তো এমন অবস্থায় বাঁকুর জীবনের ইক্যুলিব্রিয়াম নষ্ট হয়ে গিয়ে ফ্রী এনার্জী কোলাহলে নষ্ট হতে শুরু করে। লাষ্ট ট্রেন পার করে বাড়ি ফিরে বাঁকু পাড়া জানিয়ে চাঁপিকে শাসন এবং ততসহ চাঁপির একজিজটেন্ট ও নন-একজিসট্যান্ট নাগর-দের প্রতি ‘দেখে-নেবার’ চেতাগ্নি শুরু হত। বাঁকুর চেতাগ্নি নিয়ে আমাদের চিন্তা ছিল না – চিন্তা ছিল এই নিয়ে যে এই সব সাত-পাঁচ ভেবে বাঁকুর মুড়িমশলার কোয়ালিটি না কমপ্রোমাইজড হয়ে যায়। মুড়ি মশলার লাইনের কম্পিটিশন সফটওয়্যার আউট সোর্সিং-এর থেকেও লগ্‌ স্কেলে বেশী।

    আমার চেনা সমস্ত মুড়ি মশলা বিক্রেতাদের মধ্যে সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ক্যারেক্টার নিঃসন্দেহে ছিল হারা । আগে হারা আমাদের জমিতে কিষেনের কাজ করত। একদিন কোথা থেকে ট্রেনে করে ফেরার সময় দেখি গাংপুর স্টেশন থেকে হারা মুড়ি মশলা নিয়ে উঠছে প্যান্ট-জামা পড়ে এবং সব চেয়ে বড় কথা চোখে একটা চশমা পড়ে! আমার সঙ্গের জনতা এক ঐতিহাসিক ভুল করে ফেলে যা ভাবলে আমি এখনও লজ্জিত হই – জানলা দিয়ে পাবলিক হেঁকে উঠে, “এই হারা - *ড়া, চশমা পড়ে কি *রাচ্ছিস, আর গলায় ওটা কি”? গলায় মুড়ি মশলার ডাব্বা বুঝতে আরো যোগ করে, “তোর *লের মুড়ি কে খাবে রে”? হারা সেই পাবলিক দেখে ট্রেন কমপার্টমেন্টে থেকে অনেক রানিং অবস্থায় নেমে যায় – তখনো ওর বেশী প্র্যাক্টিস হয় নি চলন্ত অবস্থায় ডাব্বা নিয়ে ট্রেন থেকে নামা। হারা ট্রেনের তলায় ঢুকে গেলে আমরা শিওর খুব দুঃখ পেতাম তৎকালে।

    তবে হারাও শোধ নিতে চেয়েছিল। সে কোন সময় রাতের বেলা তন্ত্র প্র্যাকটিস করতে শুরু করে আমরা জানতে পারি নি। নিমো স্টেশন ও গ্রামের মধ্যে ১০০ মিটার মত জমির ফাঁক আছে। হারা রাতে বাড়ি ফিরত না – নিমো স্টেশনের ধারেই একটা গুমটিতে থাকত। আমাদের বন্ধু রাজু এক সময় ঠিক করে নিমো স্টেশনে একটা ইমিটেশনের দোকান করবে – তা রাত জেগে সেই দোকানের কাজ চলছে। তখন হারা অফার করে যে অত রাতে বাড়ি না ফিরে রাজু ওর গুমটিতে থাকতে পারে। রাজুর সরল মনে থেকে যেতে রাজী হয়। একদিন রাতে শুনি বিশাল চিৎকার আর দরজায় রাজুর ধাক্কা। কিনা স্টেশন থেকে রাজু গ্রামে ছুটে আসছে আর তার পিছনে পিছনে খাঁড়া হাতে তাড়া করেছে হারা। পরে জানা যায় হারার বিছানার তলায় একটা খাঁড়া রাখা থাকত এবং কোথা থেকে সে একটা মাথার খুলি ও একজোড়া টিবিয়া-ফেবুলা জোগাড় করেছিল । সেই খুলির ভেতর ঢেলে হারা নাকি মাল খেত । সেই দিন রাত্রে খুলিতে মাল খেয়ে হারা সিন্দুর দিয়ে খাঁড়া পুজা শুরু করতে শুরু করতে। রাজু নাকি বিছানায় শুয়ে শুয়ে সব মজা দেখছিল – এর পরে কি হবে সেটা সে অনুমান করে নি। পুজা শেষে হারা নাকি মায়ের আদেশ পেল যে সেদিন নরবলি দিতে হবে! অতঃপর রাজুকে বলি হতে রিকোয়েষ্ট করে মহা পূণ্যের কাজ বলে, এবং রাজু রাজী না হলে খাঁড়া নিয়ে তাড়া করা মাঝরাতে ইত্যাদি ইত্যাদি। পরে মিউচ্যুয়াল হয়ে যায় – ট্রেনের কমপার্টমেন্টে আমাদের দেখতে পেলে, হারা সেই খানটায় আর মুড়ি বিক্রী করত না। চশমা ঠিক করে সরে যেত।

    আগেই বলেছি মুড়ি মশলা লাইনে কম্পিটিশন একটু বেশি ছিল । এখনও দেখা যায় এক কামরায় চারজন মশলামুড়ি নিয়ে উঠে পড়ল ! কোনও নির্দিষ্ট টাইম না থাকলে যা হয় আর কি? মুল সারবস্তু সবারই প্রায় সমান ছিল- মেশিনে ভাজা মুরি,চানাচুর, পেঁয়াজকুচি, আলুর টুকরো, ছোলা ভেজানো, তাতে খাঁটি সরষের তেল খানিকটা –আর তাছাড়া ছিল একটা স্পেশাল মশলা । সেই স্পেশাল মশলা প্রায় সব হকারই একজায়গা থেকে কিনত ।এবং সেই মিশ্রণে যে কি আছে সেটা কেউ জানত না । আমি শুনেছিলাম ওই মশলায় নাকি কুলের বিচি গুঁড়ানো থাকে ! এত্য ফল থাকতে কুলের বিচি কেন সেই বিষয়ে আমি ধন্ধে ছিলাম ! সব মিশিয়ে স্টিলের কৌটোয় চামচ দিয়ে নাড়ানোর যে শব্দ তাতেই জিভে জল চলে আসার মত ব্যাপার । মাল ঠোঙায় ঢেলে সর্বোপরি একটা লম্বা নারকেলের টুকরো ।এই খাবার বহু ক্ষুধার্ত স্কুল ফেরত ছোকরা , অফিস ফেরত বাবু ,সিনেমা ফেরত গৃহবধূ ,সন্ধ্যেয় রেলাক্স করতে বেরানো যুবক যুবতী দের প্রাণে জোর সঞ্চার করেছে দিনের পর দিন ।

    তবে কম্পিটিশন মার্কেট থাকায় কোনও কোনও হকার স্ট্যান্ডার্ড রেসিপি থেকে ডিভিয়েট করত একটু আধটু – যেমন একজন আমদানী করল আমতেল দিয়ে মুড়ি। আর কিছু নয় মুড়ি , আমতেল আর নারকেল ।বললে বিশ্বাস করবেন না এই ভাবে সে নিজের একটা মার্কেট গড়ে তুলেছিল নিজের চারদিকে । বর্ধমানে মেইন লাইন যে ট্রেন টা ৫।৪০ তে ছাড়ত সেই ট্রেনের পিছন দিক থেকে তৃতীয় কামড়ায় সে উঠত। দিনে ওই একটাই ট্রেন ও কভার করত –বর্ধমান থেকে ব্যান্ডেল ও ফেরত । প্রায় ১০০ ঠোঙা মত মাল সে বিক্রী করত । দুটাকা ঠোঙার যুগে আমতেল মুড়ি ছিল তিন টাকা ।আর বর্ধমান স্টেশনে দেখেছি সস দিয়ে মশলা মুড়ি বিক্রী করতে । স্পেশাল বলতে হত এবং তার দাম তখনি ছিল পাঁচ টাকা মত ।তবে সেই সস মেশানো মুড়িতে মুচমুচে ভাবটা থাকত না বরং মাখা মাখা কাদা কাদা একটা ভাব । কাগজের প্লেটে সেই জিনিস ঢেলে দিত এবং আইসক্রীম খাওয়ার চামচ দিয়ে তা খেতে হত ।

    ট্রেনের খাবার বিষয়ে আলোচনা করতে হলে একটা তুলনা মূলক প্যারালাল না চাইলেও আনতে হবে যেটা হল ঘটি বনাম বাঙাল ।আমাদের দিকে এই ব্যাপারটা মাঝে মাঝে কলকাতা সুলভ ড্রয়িংরুম জাত টিক্কা-টিপ্পনীর মত সীমাবদ্ধ না থেকে সমাজজীবনে প্রভাব ফেলত !দেখা গেছে যে ট্রেনের হকারদের মধ্যে প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ বা তার বেশী বাঙাল !এর সমাজতত্ব গত ব্যাখ্যা আমি জানি না তবে আপাত দৃষ্টিতে যা মনে হত তা হল বাঙাল ছেলে পুলেরা ঘটি কাউন্টার পার্ট গুলোর থেকে বেশি কর্মঠ ।ঘটি যুবক গন যখন আগের দিনের ক্রিকেট ম্যাচের আলোচনা করতে ও গ্রামের বাঁশের মাচায় বসে বিড়ি ফুঁকতে ব্যাস্ত , তাখন বাঙাল ছেলেদের দেখেছি বাড়ির গাছে হওয়া এক ঝুড়ি পেয়েয়ারা নিয়ে ট্রেনে বেচতে যেতে ।আর তাছাড়া আমাদের ওদিকের বাঙালদের ব্যাবসা বুদ্ধি প্রখর ছিল । ট্রেনে ইনিভেটিভ যা কিছু হকাররা বিক্রী করে সবই বাঙাল মস্তিষ্ক প্রসূত। ভাবুন – বিটনুন দিয়ে কাঁচা আমলকী , চালের পাঁপড় ,টম্যাটো দিয়ে ছিলা মটর সিদ্ধ (তেঁতুল গলা জল সমেত), ঘটি গরম ,গরম দিলখুশ, ঘুগনি ইত্যাদি । এখানে শুধু তাও আমি খাবার নিয়ে আলচনা করছি বাকি ট্রেনে বিক্রীত ষ্টেশনারী দ্রব্যের ইনভেশনের ম্যাগ্নিটিউড এডিসন ও স্টিভ জোবসের মাঝামাঝি পর্যায়ে ছিল প্রায় । সেই প্রসঙ্গ অন্যসময় আসা যাবে ।

    ইদানিং শুনলাম বিটনুন আমলকির এক নতুন ভারসান বের হয়েছে- সেটা হল বিটনুন – আমলকী ও তার সাথে ধনে পাতা । এই মালের চাহিদা আগের চেয়ে বেশি ছিল। এই মুহূর্তে আরও যা যা মনে পরছে তার মধ্যে ছিল আমসত্ব , গুড়বাদাম ।তবে এই দুই প্রোডাক্টের মধ্যে কিঞ্চিত মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজী মিশে আছে এবং এই দুই প্রডাক্টের কোয়ালিটি কন্ট্রোল খুবই নিম্নমানের । কস্মেটিক্স ইন্ডাস্ট্রির মত ইহাও শুধু মাত্র বিজ্ঞাপন ও প্রচারের ওপর ভর করে অনেকদূর এগিয়ে গেছে । আগে ১০০ বা ২০০ গ্রাম ওজনের আমসত্বের টুকরো বিক্রী হত । তারপর কোনও ধুরন্ধর (বাঙাল হাওয়ার চান্সই বেশি) মস্তিষ্ক প্রসূত হল এই আইডিয়া যে চকোলেটের মত করে পুরিয়ায় আমসত্ব বিক্রী হবে, ১ টাকা পিস । সেই যুগান্তকারী ভিউ চেঞ্চের পর এখন হই হই করে আমসত্ব পুরিয়া বিক্রী হচ্ছে ট্রেনে । আফসোস এই যে দেশটি ভারত হাওয়ায় আইডিয়াটি পেটেন্ট করা যায় নি ! না হলে ভদ্রলোক আমেরিকান গৃহবধুর মত যিনি স্লাইস পাউরুটির পেটেন্ট নিয়ে কোটিপতি হয়েছিলেন টার মত হতেই পারতেন । ভাবলে অবাক হতে হয় যে পাউরুটি স্লাইস করে বিক্রীর আইডিয়ার জন্যে আমাদের বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে । তাতে যদি ওই ভদ্রমহিলার পাঁচ ছটা ছেলে মেয়ে না থাকত, তাহলে হয়ত আমাদের অপেক্ষা আরও বাড়ত !

    যাই হোক ওই আমসত্বের মধ্যে আমের ভাগ কিন্তু খুবই কম ছিল।আপনি নিশ্চিন্তে ওই আমসত্ব খেতে পারেন এই জেনে যে ওর সিংহ ভাগটাই কুমড়ো থেকে তৈরী – তার সাথে মিশেছে আম সেন্টেড কিছু কেমিক্যাল ।আর ওই গুড় বাদামের মধ্যে খারাপ কেমিক্যাল কিছু থাকত না, কেবল ভাল বাদাম-ভুয়ো বাদামের অনুপাত প্রায় ২০-৮০ হয়ে যেত ।

    ট্রেনে ডাব বিক্রীও এক যুগান্তকারী প্রচলন ।প্রথমদিকে সেই ডাব খাওয়ার পর ট্রেনের জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলাই নিয়ম ছিল-কারন তাতে ট্রেন নোংরা কম হবে । চলন্ত ট্রেন থেকে ছোঁড়া ডাব হতে বেশ কিছু পাবলিক শহীদ বা হাসপাতাল জাত হওয়ার পর ডাব খেয়ে চেয়ারের নীচে রাখাটাই নিয়ম বলে চালু হল । ফলত ট্রেন বেশি নোংরা হতে শুরু করল । কোন পদ্ধতিটি সঠিক সেই বিষয়ে প্রথম দিকে ডেলি প্যাসেঞ্জার মহল আলোচনায় সরগরম থাকত । ট্রেনে আরও যে সব ফল পাওয়া যেত তার মধ্যে কমলালেবু ও পানিফলের খোসা পাবারই সম্ভাবনা বেশি ছিল ট্রেনের কামড়ায় । তবে সবচেয়ে বেশী ব্যাবহৃত ফল শসার খোসা কিন্তু ছড়ানো অবস্থায় খুব কম পাওয়া যেত। কারন বহুবিধ শসা মূলত হকারটি ছাড়িয়ে বিটনুন মাখিয়ে,কাগজে মুড়িয়ে প্যাসেঞ্জারের হাতে চালান করত । তাই খোসা থাকত হকারটির ঝুড়িতেই এবং সেই খোসার কুলিং এফেক্টটা হকার ব্যাবহার করত তার বাকী শসাকে ঠাণ্ডা রাখতে ।আর দিনের শেষে জমা হওয়া খোসা সযত্নে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হত পোষা গরুর জন্যে ।একেবারে ইকো ফ্রেন্ডলি –গ্রীন অবস্থা যাকে বলে ।

    ট্রেনের ডাবের চলনের পেছনে কিন্তু খবরের কাগজের রূপচর্চা বা স্বাস্থ্য কলামগুলির অবদান অনেকখানি । কাগজ খুললেই দেখবেন কোল্ড ড্রিঙ্কস খাওয়া অস্বাস্থ্যকর। তার বদলে ডাবের জল খান এই সব । আর তা ছাড়া সকালে ঘুম থেকে উঠে ডাবের জল দিয়ে মুখ ধুন, চোখের পাতায় শসার টুকরো রাখুন – এই সব তো ছিলই ।তবে আমি আজ পর্যন্ত কাউকে ট্রেনের ভিতর ডাবের জল দিয়ে মুখ ধুতে দেখি নি । যদিও অনেককে ট্রেন থকে শসা কিনে বাড়ি নিয়ে যেতে দেখেছি , মনে হয় সে যতটা চোখের পাতায় দেবার জন্যে, তার ছেয়েও বেশী মুড়ি দিয়ে খাওয়ার জন্যে। এখন ডাবের পিস কত করে হয়েছে আমি জানি না-আমি এক কালে আমাদের গাছের ডাব পাইকারী দরে বিক্রী করতাম ১১০ টাকা ১০০ ডাবের জন্যে । এই কয়েক মাস আগে আমি বাড়িতে গাছের ডাব ৬০০ টাকা শয়ে বেচে এলাম। সেই ডাব ১৫ টাকা করে ট্রেনের কামড়ায় বিক্রী হত মনে হয়। তাহলেই বুঝতে পারছেন লাভের মার্জিনটা কেমন ছিল ! আর আগে যেমন উল্লেখ করলাম, ডাবের প্রচলন হঠ করে যেন বেড়ে গেল ট্রেনে কোল্ড ড্রিঙ্কস বিক্রী কমে যাওয়ার পর ।

    আগে গরম কালে ট্রেনে আকছার বরফ ত্রিপলের ব্যাগের মধ্যে নিয়ে কোল্ড ড্রিঙ্কস বিক্রেতাদের দেখা যেত ।এইসব কোল্ড ড্রিঙ্কস বর্ধমানের মেহেদীবাগানের দিকে তৈরী হত বলে আমার কাছে খবর ছিল । মানুষ যে ব্র্যান্ড দেখেই খাদ্য কেনে এবং মুল স্বাদ কেমন হাওয়া উচিৎ সে বিষয়ে প্রায়শই প্রত্যক্ষ কোনও জ্ঞান রাখে না , তা এই কোল্ড ড্রিঙ্কসের বিক্রী দেখেই বোঝা যেত। ওই সব প্রোডাক্টই যে নাকল তা বোধগম্য হতে হতে বহু লোক মাটির বাড়ি থেকে দোতলা পাকা বাড়ি হাঁকিয়ে নিয়ে ছিল ।

    ডাব বিষয়ে আমার বহু স্মৃতি জড়িয়ে আছে –অন্যত্র বলা যাবে ডিটেইলসে তবে এখানে একটা ছোট্ট ব্যাপার বলে রাখি ।আমাদের সময়ে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দুই হাফে হত, দিনে দুটো পেপার ।তা মাঝের ব্রেকটায় গার্জেনরা টিফিন আনতেন – এবং এপ্রিল মাস নাগাদ পরীক্ষা হবার জন্যে পরীক্ষার্থীর মাথা ঠাণ্ডা করার জন্যে ডাব । বাবা মা ডাব ধরে আছে আর ছেলে স্ট্র দিয়ে ডাবের জল টানছে ,চোখ হাতের নোট বইয়ের দিকে ।এমন দৃশ্য তখন অত্যন্ত স্বাভাবিক ছিল । সবার দেখাদেখি আমার বাপও দ্বিতীয় দিন গাছের একটা ডাব নিয়ে টিফিনের সময় হাজির । তা দেখে আমি যা শক পেয়েছিলাম তাতে ইংরাজী দ্বিতীয় পত্রে আমার ১০ নম্বর মত কমে গিয়েছিল প্রায় । বাড়িতে প্রত্যহিক ব্যবহারের জন্য ডাব গাছ থেকে পেরে দিত আমাদের বাড়িতে কাজ করার কমলদা। তা সেই কমলদারো বয়স হতে থাকল – এক সময় বলল, আর নারকেল গাছে উঠতে পারব না বুঝলি। আমিও ততদিনে নারকেল গাছে ওঠা ছেড়ে দিয়েছি – নিজের এবং পরের নারকেল গাছ সাফ করে, বেশ কিছু বার নারকেল গাছ থেকে পড়ার পর জীবিত থাকার আনন্দ নিয়ে এবং বাপের রামপ্যাঁদানির হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য। একবার আমার গ্রামের বাড়িতে ইংল্যান্ড থেকে আমার বন্ধুরা বেড়াতে আসে – বেশির ভাগই মেয়ে। তো সেই মেম মেয়ে দেখে কমলদা বলল আবার গাছে উঠে ওদের ডাব খাওয়াবো। তার উপর আইরীন প্যাকেট থেকে সিগারেট বের করে কমলদাকে দেওয়াতে, ফেলে আসা যৌবন চেগে ওঠে তার। লুঙ্গি পড়ে কমলদা গাছে উঠেছে আর নীচে থেকে মেম মেয়েরা ছবি নিচ্ছে, সে এক জটিল দৃশ্য!

    এখন গরমকালে ট্রেনে যেটা সহজলভ্য তা হল বিমলের দই লস্যি (সলিড দণ্ডাকৃতি), তরল দইলস্যি (বাড়িতে বানানো),ও কাঁচা আমের সরবত(বাড়িতে বানানো),অনেকে আবাব কায়দা করে আম পোড়ার শরবতও বিক্রী করতেন । এই সব মালে প্রফিট মার্জিন খুবই বেশী- রঙ বা কেমিক্যাল প্রয়োগের কথা বলতে পারব না ,তবে স্বাদে সেই- তিনটাকার প্ল্যাস্টিক প্যাকেটের শরবত , OH CALCUTTA রেস্টুরেন্টের ১৩০ টাকা গ্লাসের শরবতের কাছা কাছি ছিল । দণ্ডাকৃতি দই-লস্যি একটি বিবর্তিত প্রডাক্ট- এবং যথারীতি বাঙাল মস্তিষ্ক প্রসূত । বিমলের বাড়ি বৈঁচির কাছাকাছি- সকাল ৮ টার ডাউন লোকালে মাল এসে ষ্টেশনে ষ্টেশনে নেমে যায় একটা বড় বাক্স করে । সেখানে তাবৎ হকার জড়ো হয় মাল কেনার জন্যে-সাদা শোলার পেটিতে । ১০০ পিস মাল বিক্রী করতে পারলে ৩০ টাকা কমিশন । দিনের শেষে গলে যাওয়া অবিকৃত মাল কারখানায় পুনরগমন সলিড হাওয়ার জন্যে । এই ভাবেই চক্রাকারে ঘুরতে থাকে দই-লস্যি ।আপনি যে দই-লস্যিটি কিনলেন সেটা কতদিনের পুরনো আপনি জানতে পারবেন না। লাকি হলে আপনি একটা পুরনো মাল পেতেও পারেন কারন দই-লস্যি যত পুরনো হবে , তত গেঁজবে ও তার স্বাদ খুলবে ।দই-লস্যির ব্যাবসা রম রম করে চলে গরম কালে – আমরা লোকাল ছেলে হবার জন্যে মাঝে মাঝে দু একটা গ্যাঁজানো দই- লস্যি ফ্রী পেতাম , যদিও এই বস্তুটি আমাদের তেমন আকর্ষণ করত না তার উৎপত্তি ও গমন পথ সম্পর্কে সম্যক ধারনা থাকা হেতু ।

    আরও দুটি খাদ্য বস্তু যা আমাদের জীবনে খুব ভালো ভাবে জড়িয়ে ছিল এবং ট্রেনের কামরায় দাপটের সাথে বিচরন করত তা হল খেঁজুর ও শনপাপড়ি । ‘খেজুরে আলাপ’ কথাটার সারমর্ম আমরা খুব গভীর ভাবেই ছোটবেলায় অনুভব করে ফেলেছিলাম । নিমো ষ্টেশন মাস্টার আমার নিজের জ্যাঠা তাই সেই সুত্রে রেল টিকিট কাউন্টারে অবাধ বিচরণ । আমাদের গ্রামে তখন বিদ্যুত ছিল না এবং ওই টিকিটঘরই ছিল একমাত্র জায়গা যেখানে টিউব লাইট জ্বলত। ঘরের আয়তন বেশ বড় – অ্যাসবেসটস চাল, এক কোণে টিকিট রাখা দেওয়াল খাপ ও তার পাশে পাঞ্চ মেশিন। বাকি পুরো ঘর ফাঁকা – সেই ফাঁকা জায়গা ব্যবহৃত হত ট্রেনের হকারদের ঝাঁকা রাখার কাজে। আমার জ্যাঠা সেই জায়গা ভাড়া দিয়ে টু-পাইস কামাত কিনা বলেতে পারব না, তবে জ্যাঠার ছেলেদের দেদার ফলমূল খেতে দেখেছি। সেই সব ফলই ঝাঁকা থেকে আসত – লেবু, আপেল, বেদানা সহ প্রচলিত সব ফলই প্রায়। তা সেই ঘরে খেজুরের প্রসেসিংও চলত। যাঁরা দোকান থেকে বা ট্রেন থেকে কোয়া কোয়া ইণ্ডিভিজুয়াল খেজুর খান তাঁদের সম্ভবত কোন ধারণা নেই যে ওই খেজুর বাংলায় কিভাবে আবির্ভূত হত! খেজুরের স্ল্যাব বস্তায় (আমরা বলতাম ‘চিকচিকি’ বস্তা, পরে জানলাম উহার নাম ‘নাইলন’) করে – ইনফিনিট নাম্বার অফ খেজুর চাপসৃষ্ট অবস্থায় জড়াজড়ি করে এক আয়তকার স্ল্যাব তৈরী করত। সেই বস্তা হাজির হত টিকিটরুমে আমরা ছোটরা ভলেয়েন্টারী সার্ভিস দিয়ে খেজুর সেপারেট করতাম। আমাদের মজুরী ছিল পেটভর্তি খেজুর খেতে পারা। এটা চাইল্ড লেবার এর আওতায় পড়ে কিনা বলতে পারব না, তবে সেই কাজ আমরা আনন্দের সাথেই করতাম। খেজুরের চাঙরগুলিকে বালতির জলে ডোবাও ও আলাদা কর – প্লেন এ্যণ্ড সিম্পিল! সেই আলাদা করা খেজুর খোলা বিক্রি বা প্যাকেট করে বিক্রী হত মধ্যপ্রাচ্য বা মরুদেশীয় বিভিন্ন দেশের নামাঙ্কিত হয়ে। এটা খুবই স্ববাভিক ছিল যে একই বস্তার খেজুর চারটে আলাদা দেশের নামে চিহ্নিত করা হল – সেই ক্ষেত্রে আমাদের ভোগলিক জ্ঞান কাজে লাগানো হত। তবে মানুষের জেনারেল নলেজ সীমিত বলে অনেক সময় নামকরণের হ্যাপার মধ্যে না গিয়ে, ‘আরব’ দেশের খেজুর বলেও চালানো হত।

    তাহলে বাকী রইল শোনপাপড়ীর গল্প – এই এমন এক ব্যাবসা যা বিগত ৩০ বছর ধরে স্থিতাবস্থায় রয়েছে – যাকে বলে only change is constant টাইপ আর কি! শোনপাপড়ী তৈরী এক খুবই আকর্ষনীয় ব্যাপার। ইন ফ্যাক্ট তৈরী দেখতে খুবই ভালো লাগে – যে জিনিসটা সব খাবারের ক্ষেত্রে বলা যায় না। ধরুণ মাখা সন্দশ তৈরী – এটা খুবই ক্লান্তিকর একটা ব্যাপার। আমাদের নিমো স্টেশন সংলগ্ন ক্লাবের একটা বড় ঘর তেমনই এক শোনপাপড়ী কারিগরকে ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। ‘দিলীপের’ শোনপাপড়ী নাকি কি যেন একটা নাম ছিল। ভাই বলব কি, সে ব্যাবসা বিশাল ফুলে উঠেছিল। আমি খুবই সিওর যে যাঁরা এই লেখা পড়বেন তাঁদের কারো কারো পেটে ওই শোনপাপড়ী চালান গেছে। প্যাকেটস্থ হবার পর সেই শোনপাপড়ী দেখতে খুবই ভালো, সোনালী রঙের। কিন্তু যে পাত্রে বা পরিবেশে মাল তৈরী হত তা প্রায় কহতব্য নয়। ওই শোনপাপড়ী খেয়ে যাদের পেটে কিছু হয় নি, তাঁরা নির্দ্ধিধায় অন্য যে কোন খাবার না ধুয়েই মুখে চালান করতে পারেন। আমাদের ক্লাবে পিকনিক হলে আমরা ওই শোনপাপড়ী তৈরীর পাত্রগুলো অনেক সময় ব্যবহার করতাম। পাঁচ টাকা প্যাকেট ছিল তখন শোনপাপড়ীর । উত্থান ও পতন যেহেতু জাগতিক নিয়ম, তাই প্রাকৃতিক নিয়মেই একদিন সেই শোনপাপড়ী কারখানা বন্ধ হয়ে গেল। মালিকের ছিল জুয়া দোষ – একদিন প্রায় সব খুইয়ে সে উধাও। তার কর্মচারীরাও কিছুদিন অপেক্ষা করে বিদায় নিল – আমাদের গ্রামের কিছু মেয়ে প্রেমিক হারা হল। সে এক জটিল সমাজতাত্ত্বিক গল্প – ডেটেলসে অনত্র। আমাদের লাভ বলতে হয়েছিল সেই ফেলে যাওয়া বাসনপত্র ও মাল বইবার একটা তিনচাকা রিস্কা ভ্যান, সেই ঘটনা পরের কোন এক পর্বে।

    [এই লেখাটি মনে হয় কোন এক সময় টই-য়ে পোষ্ট করে ছিলাম। কিছু যোগ করা হয়েছে, তাই এখানেও দিয়ে রাখলাম]
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৮ জুন ২০১৫ | ১৯১৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • ব্যোমকেশ | 127.194.231.29 (*) | ০২ জুলাই ২০১৫ ০৭:৫৯67193
  • সুকান্ত, আপনার লেখার মধ্যে একবার কুটিরশিল্পজাত কোল্ড ড্রিংক্‌সের উল্লেখ রয়েছে।
    শিয়ালদা দক্ষিণ শাখায় ‘ফটাস জল’ বলে এক রকম কার্বোনেটেড জল বিক্রি হয়। এটা কি সেই রকম কিছু? দক্ষিণ শাখার যাত্রীদের কাছে ফটাস জলের বিরাট চাহিদা। এক শ্রেণীর যাত্রীদের কাছে এটা আবার দক্ষিণ শাখার আইকন বিশেষ যেটা নাকি আর কোথাও পাওয়া যায় না।
  • সিকি | 132.177.96.92 (*) | ০২ জুলাই ২০১৫ ০৮:৫০67194
  • কাঠিভাজা। সাধারণত বিক্রেতার গলা খুব হেঁড়ে হয়। ভিড় ক্যালোরব্যালোরের মধ্যে ক্রেতার গলা শোনা যায় না, কেবল বিক্রেতার গলা গমগম করে -

    "দু টাকায় একটা পাঁচ টাকায় তিনটে"

    "কটা?"

    "কেটে দোবো?"

    ------------

    ফটাশ জল হল সোডা ওয়াটার। উত্তর ভারতে যাকে বান্টা বলে। কাচের বোতলে কাচের ছিপি। কুললে ফটাশ করে একটা শব্দ হয়।

    সুকি বা সুকান্ত যেটা বলছে সেটাকে আমরা সম্ভবত পেপলি বলে জানতম। আগে অরেঞ্জ বা কোলা ফ্লেভারের পেপসি পাওয়া যেত, পরে ঐ একই সিলিন্ড্রিকাল প্যাকেটে দই, লস্যি ইত্যাদিও বিক্রি হতে থাকে। থার্মোকলের বাক্সে থাকে, অবিক্রীত জিনিসগুলো দিনের শেষে ফ্রিজে চলে যায়, পরের দিন আবার বিক্রি হয় র‌্যান্ডমলি নতুনের সঙ্গে মিশিয়ে। ফলে, লাকিলি বা আনলাকিলি আপনার হাতে যেটা এল, সেটা সেদিনকার ফ্রেশ নাকি চারদিনের পুরনো, না খেলে আপনি বুঝতেও পারবেন না।

    খেলেও বোঝা যায় না অনেক সময়ে।
  • সিকি | 132.177.96.92 (*) | ০২ জুলাই ২০১৫ ০৮:৫৩67195
  • ধুর - টাইপো। পেপলি নয়, পেপসি।
  • b | 135.20.82.164 (*) | ০৩ জুলাই ২০১৫ ০১:৩০67199
  • শ্যালদা সাউথ লাইনে অনেক কিছু পাওয়া যায়, স্বভাবে ও চরিত্রে সে কলকাতার অন্য চারটি লাইন ( শিয়ালদা নর্থ, বনগাঁ, বর্ধমান (কর্ড ও মেইন), তারকেশ্বর, কাটোয়া, আর সাউথ ইস্টার্ণ) এর চেয়ে একেবারে আলাদা। ফটাস জল বিক্রি হত কুলীন কোকো কোলার কাঁচের বোতলে, ১৯৯৬-৯৭ সাল নাগাদ দাম ছিলো ১ টাকা। আর পাওয়া যেত মুড়ি-ঘুগনি, সেও এক টাকায় ঠোঙা ভর্তি। এছাড়া বর্ধমান (মেইন /কর্ড) লাইনে স্বাস্থ্যসচেতন ডেলি প্যাসেঞ্জারদের জন্যে লাল চা পাওয়া যায়, তার সাথে লেবুর রস ও বিটনুন ফ্রী। ওর দাম লোকাল ট্রেনে পাঁচ টাকা, স্লীপার ক্লাসে সাত টাকা ও এ সি তে দশ টাকা।

    সাউথ ইস্টার্ণে পাঁশকুড়া মেচেদার কাছে বড় বড় ভেজিটেবল চপ পাওয়া যায়। কিনবেন, কিন্তু খাবেন না। একটু ওয়েট করুন, খড়গপুর থেকে মশলামুড়ি উঠবে....
  • sima | 213.101.101.207 (*) | ০৩ জুলাই ২০১৫ ১১:৩৮67198
  • খুব ভালো
  • Sailesh C Roy | 192.59.65.169 (*) | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১০:০৯67200
  • থাকি মুম্বই তে।হকার সমগ্র পরে পুরোনো কথা মনে পরে আর জিভের জল রোখা মুশ্কিল।
  • শিবাংশু | 127.197.72.123 (*) | ১১ জুলাই ২০১৬ ০৩:০৮67202
  • আগে পড়েছিলুম, ভালো লেগেছিলো। আবার পড়লুম, আবার ভালো লাগলো.... :-)
  • সুকান্ত ঘোষ | 212.152.87.224 (*) | ১১ জুলাই ২০১৬ ০৩:৪১67201
  • জিভে জল এসে গেলো খুব ভলো লাগ লো লেখা
  • Robu | 11.39.56.247 (*) | ১১ জুলাই ২০১৬ ০৫:৪৬67203
  • ভাল লেখা। শেয়ালদা নর্থে মেনলি যাতায়াত করি, তবে বাকিগুলোতেও অনেকবার গেছি, বনগা বাদে। রিলেট করতে পারছি।
  • Abhyu | 107.81.98.66 (*) | ১২ জুলাই ২০১৬ ০২:১৮67205
  • ঘ্যাঁ
  • bhagidaar | 106.2.247.250 (*) | ১২ জুলাই ২০১৬ ১২:৪৭67204
  • ভেউ
  • বুড়া | 113.249.37.66 (*) | ১২ জুলাই ২০১৬ ১২:৫৭67206
  • b ঠিক বলেছেন, শ্যালদা সাউথ সেকশন বহু দিকে মৌলিক। অন্তত এই লাইন ছাড়া অন্য কোথাও ট্রেনে তাড়ি বিক্রি হতে দেখিনি। আমার বন্ধু হাঁদু দাবি করতো, এই লাইনে সে এক হাফ প্যান্ট বিক্রেতা হকারের সাক্ষাৎ পেয়েছিল, যার বুলি ছিল, 'এই যে দাদা, টিয়া পাখি মার্কা হাফ প্যান্ট। পোঁ_ ছিঁড়ে যাবে তবু প্যান্ট ছিঁড়বে না।'
    দেহের অঙ্গ বিশেষের পাবলিক সম্মুখে উল্লেখের জন্য নয়, হাঁদুর আপত্তি ছিল ব্র্যাণ্ড নিয়ে, 'ভাব একবার, হাফ প্যান্টের মার্কা টিয়াপাখি!'
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু প্রতিক্রিয়া দিন