এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • কি সঙ্গীত ভেসে আসে..

    Sutapa Das লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | ১৪৬১ বার পঠিত
  • কিছু লিরিক থাকে, জীবনটাকে কেমন একটানে একটুখানি বদলে দেয়, অন্য চোখে দেখতে শেখায় পরিস্হিতিকে, নিজেকেও ফিতের মাপে ফেলতে শেখায়। আজ বিলিতি প্রেমদিবসে, বেশ তেমন একখান গানের কথা কই!
    না রবিঠাকুর লেখেন নি সে গান, নিদেন বাংলা গানও নয়, নেহায়ত বানিজ্য-অসফল এক হিন্দি সিনেমা, এক সদ্য বিবাহ-‘বন্ধনে’ আবদ্ধ সেসময় ও আজও সফলভাবে সে বাঁধন বহন করে চলা যুগলের সে সময়ের নিরিখে অন্যবিষয়ের চলচ্চিত্রায়ন। অ্যালঝেইমার্স রোগ বিষয়ক ডিটেলসে গাঁজাখুরি থাকলেও , সেই যে বিশেষ গানটি, সেটি এই ফিল্মের জন্যে শ্রেয়া ঘোষাল গেয়েছিলেন তার ফিল্মি গানের কেরিয়ারের প্রথমার্ধে। বিশ্বাস করুন, কে লিখেছেন কোনদিন জানতে চাইনি! কেন? দৈববাণীর মত আমার বোধের ঘরে প্রদীপ জ্বাললে যে শব্দেরা, তাদের কে সাজিয়েছেন জানলে সব রহস্য এক নিমেষে উধাও হবে যে!

    সময়টা 2008, প্রথমার্ধ। তখন শিলিগুড়িবাস আমার , আর নিত্যযাত্রা জলপাইগুড়ি , অন্ন-বস্ত্র-বাসস্হানের দাবী মেটাতে। সময় নেই, বাড়তি খরচ নেবার ক্ষমতাও নেই, সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখবো, যুদ্ধক্লান্ত জীবনে সে বিলাসিতার ইচ্ছেও নেই। তো বাবা (যাকে ছাড়া কোন গল্প আজো শেষ হয় না আমার) তার নাতনীরা যাতে বাইরে গিয়ে মা কে বিশেষ চিন্তায় না ফেলে সেজন্যে হংকং মার্কেট থেকে ‘সস্তা-টিকাও’ এক সি ডি প্লেয়ার কিনে দিলেন। সে সময়টা সি ডি ভাড়া পাওয়া যেতো পাড়ার মোড়ে মোড়ে, 5/10 টাকা থেকে ছিলো তার ভাড়া, 24 ঘন্টার জন্যে। বাবার নাতনীরা মাঝে মধ্যেই মনোরঞ্জনার্থে সি ডি নিয়ে আসতেন, আমিও চালাতে শিখেছিলাম তাদের তত্বাবধানে থেকেই। এমনই এক শণিবার সকালে তারা এনে রাখলো U, Me Aur Hum আর দ্বিপ্রহরে দুই বোনে মিলিত আব্দারে দাদুবাড়ি যাবার সম্মতি আদায় করে পাড়ি দিলো জলপাইগুড়ি।
    সন্ধ্যেবেলায় আমি একা, বাইরে ঘুরে বেড়ানো আমি আজো পছন্দ করি না, তাই খানিক একাজ ওকাজ সেরে, বৃথা বইয়ের পাতা উল্টে, টেলিফোনে মেয়েদের পৌঁছসংবাদ নিয়ে শেষসন্ধ্যেয় অনুভব করলাম আমার করবার মত আপাতত আর কিছু নেই। অগত্যা… সিডি উল্টে পাল্টে ঐটি বাছলাম দেখবো বলে।
    শুরুর চমক সামলে নিতেই মন লাগলো বেশ, বয়স অনুপাতে বুদ্ধির বিকাশ কম বলেই হয়তো । তো, জ্যেনেটীয় ডায়াজেসিসের যে ফ্ল্যাশব্যাকে গানটি শুরু হবে তখন আমি গেছি রান্নাঘরে ম্যাগীসেদ্ধ করতে, নিজের রাতের খাবার জন্যে। দুমিনিটের ম্যাগী নিয়ে বসার চৌকিতে ( সে চৌকি আমার জন্মের আগে বাবার চাকুরীসূত্রে একলাবাসের সময়ে কেনা, উত্তরাধিকারসূত্রে আমি পেয়েছিলাম ও জীবনের একবাঁকে হারিয়েও ফেলেছি) ফিরতে ফিরতে কানে এলো ‘আপনে রঙ গাওয়াঁয়ে বিন, মেরে রঙ মেঁ ঘুল যাও’… বলে কি বে!! মন দিয়ে কান খাড়া করে শুনতে শুনতে ছোটবুদ্ধির মেয়েমানুষটির চোখউপুড় করে হড়পা বান এসে পড়েছে, সামাল সামাল নিজেকে! সিনেমার বাকীটুকু দেখলো চোখ , মগজ তখন রুদ্ধদ্বার, মশলাম্যাগী অপেক্ষার চাদর মুড়ে ঠান্ডা!

    শেষ হলো একসময়! গানটার শব্দগুলো শুনতেই হবে আবার আমায়, মনের নীচে যে মন, সেখানে পাঁকাল মাছের মত খলবলাচ্ছে কোন কিছু, ধরতে পারছি না তখনো, সেদ্ধ নুডলস, অপেক্ষা আজ তোমার নিয়তি! কম্পিউটার খুললাম, ডায়াল আপ ইন্টারনেট কানেকশন তখন, সেই সামান্য স্পীডে খুঁজছি গানটা, স্পীকারে নয়, শুনবো হেডফোনে। হ্যাঁ, দ্বিতীয় বার, তারপর তৃতীয়, প্রসববেদনা বাড়বার মতো তীব্র আন্দোলন মনের নীচে মনে, জলের তলা থেকে মাছ ঘাই মারবার মতো উঠে আসছে সেই বোধ, যার অভাব কি বিচিত্র পরিস্হিতি তৈরী করেছে আমার জীবন জুড়ে!
    নিজের রঙ বিলিয়ে দিয়ে মিশতে চেয়েছে যে মেয়ে অন্যের রঙে, নিজের জীবন সর্বদা মাপতে চেয়েছে অন্যের ফিতেয়, অন্যের আলোয় নিজের ছায়াটুকুও বিসর্জন দিয়েছে যে, সে কি করে সফল হবে যৌথ জীবনে??!! ভালোবাসা মানে নিজস্বতা বিসর্জন দেওয়া নয়, স্বকীয়তা বজায় রেখেই অন্যকে আপনানো, এই বোধ এলো এত অবেলায়, বিচ্ছেদের অবশ্যম্ভাবী চাতালে দাঁড়িয়ে! যে আমায় ভালোবেসেছে, তাকে ভালো রাখতে গিয়ে যে নিরন্তর ‘নিজেকেই’ হনন করেছি আমি, ভালোবাসা তো জানালা গলে ‘পাইল্যে’ গ্যাসে! দু তরফই নিরন্তর সজ্ঞানে অজ্ঞানে, অবজ্ঞা করেছি, ‘এক দুজে পর আপনা হক তো হো, কব্জা না হো’ ‘হর হাল মেঁ, তুম , তুম ভি রহো, ম্যায় , ম্যায় ভি রহু, হাম, হাম ভি রহে/ তিনো মিলকে সাথ চলে, সাথী জনম জনম’.. এ জ্ঞান যদি থাকতো তবে, নিজেকে পথের বাঁকে হারাতে দিতাম নাকি! নিজেকেই সামলে রাখতে পারিনি তো বন্ধন বহন করবো কি করে! উদ্বন্ধনে প্রাণ যায়নি এই ঢের! চোখ মুছলাম। নিজেকে, নিজেকে খুঁজে বের করবো ধুলো ঝেড়ে পাক্কা ওয়াদা করলাম নিজেরি কাছে। আর রোগী মারা যাবার পর , অপারেশন সফল হবার অনুভব নিয়ে সদ্যজাত ধারনাকে ছোট মগজের কুঠুরীতে চেপে রাখলাম, আরেকটু বড় হলে আমার রত্নদের সাথে এ বোধ ভাগ করবো বলে। নিজেকে হারিয়ে ফেলে ভালোবাসা হয়না, নিজের সবটুকু স্বাতন্ত্র্যকে বজায় রেখে আর অন্যের সবটুকু স্বাতন্ত্র্যকে মর্যাদা দিতে পারলে তবেই জন্ম নেয় ভালোবাসা, যা হবে টিকাও, নচেত দিনের শেষে দেনা পাওনা মিলাতে বসবেই ক্লান্ত , অবাধ্য মন। মশালা ম্যাগী তোমার অপেক্ষায় এবার দাঁড়ি।

    আজো আমায় শান্তি দেয় , অস্হির সময়কে পাশ কাটাতে সেখায় সে গান , শুনে দেখতে পারেন আপনিও ।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | ১৪৬১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Sutapa Das | 213.163.236.148 (*) | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৫:১০64310
  • গানটা দারুণ। লেখাটাও। কিন্তু এখনই মন্তব্যটা লেখিকার নামে আসবে। এটা নিদারুণ।
  • pi | 24.139.221.129 (*) | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৪:১২64311
  • লেখাটা বেশ লাগল।

    গানটা এই প্রথম শুনলাম।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন