এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • জীবনপাত্র উচ্ছলিয়া মাধুরী, করেছো দান

    Sutapa Das লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২০ মে ২০১৮ | ১৫৪২ বার পঠিত
  • Coelho র সেই বিখ্যাত উপন্যাস আমাদের উজ্জীবিত করবার জন্যে এক চিরসত্য আশ্বাসবাণী ছেড়ে গেছে একটিমাত্র বাক্যে,
    “…when you want something, all the universe conspires in helping you to achieve it.”

    এক এন জি ও'র বিশিষ্ট কর্তাব্যক্তির কাছে কাতর ও উদভ্রান্ত আবেদন রেখেছিলাম গত 25 শে এপ্রিল রাতে,মেসেজে, "আমার একটি মেয়ে হারিয়ে গেছে, মানসিক চিকিতসাধীন ছিলো, অবসেসড, স্কুল থেকে বেড়িয়ে আর বাড়ী ফেরেনি,দোহাই খুঁজে দিন।"

    সংগঠনটি সারা বাংলায় নিষিদ্ধ পল্লীর মেয়েদের কল্যানমূলক কাজকর্মের জন্যে প্রসিদ্ধ, আমাকে তাদের কাছেই আবেদন জানানোর সুপরামর্শ দিয়েছিলেন দিদিয়া, আমাদের সব্বার বড় কাছের প্রতিভা সরকার দি।
    সে সময়টায় আমি শহরের বাইরে, ব্যক্তিগত ভীষনই প্রয়োজনীয় কাজে, স্কুল থেকে আমার দুই অতি প্রিয় সহকর্মিনী দুঃসংবাদটি দিলো।
    আমরা জানতাম 'আমাদের মেয়েটি' তীব্র মানসিক নিরাপত্তাহীনতায় আক্রান্ত, পরিবার সীমিত সামর্থ্যেও প্রয়োজনীয় চিকিতসার ভার বহন করতে পিছপা হয়নি। কিন্তু, অটো ইমিউন ডিসঅর্ডারের মতোই, পরিবারের বিরুদ্ধেই ওর যাবতীয় ক্ষোভ কেন্দ্রীভূত! চলে গেছে তাই, সব মায়ার বাঁধন হেলায় ফেলে।

    কথা হয়েছিলো আগেই, ওর মানসিক পরিচর্যাকারী মেডিক্যাল কলেজের অ্যাডোলেসেন্ট কাউন্সিলর লক্ষী ম্যাডামের সাথেও। জানছিলাম ছোট ছোট 'সেসন'য়ের মধ্যে দিয়ে, 'আমাদের মেয়ে'কে।ওর মামাতো বোনগুলির নিরাপত্তার জন্যে উতকন্ঠা, ওর মায়ের নিষিদ্ধ পেশার প্রেক্ষাপটে ওর নিজের নিরাপত্তাহীনতার অসহায় বোধ, যে মামার কাছে ও ছোট থেকে বড় হয়েছে সেই মামীকে মানতে না পারা, অসংলগ্নতার আরও ছোট ছোট ঘটনার কোলাজ।
    ঠিক সাতদিনের দিন , যখন হতাশ বিষন্নতায় ধরে নিয়েছে মন যে মেয়ে আর ফিরবে না, শেষদুপুরে ওর আপনজনের ফোন, ফিরছে মেয়ে, খুব নিরাপদ আশ্রয়েই ছিলো।কথা বললাম, ফোনেই বকুনি..উতকন্ঠা প্রকাশ.....আদর..নিশ্চয়তা প্রদানের চেষ্টা।
    স্বস্তি!!

    শহরে ফিরলাম দুদিন পর, দেখা করতে এলো স্কুলে। আমি বললাম, ও বললো, সকলে বললো ও শুনলো, এবং ও বললো সকলে শুনলো ।পরবর্তী কয়েকদিন অন্য পেশাগত কাজের পাশে পাশেই সরকারী আধিকারিক কে সাক্ষাত করা, আর সরকারী অফিসারদের সম্পর্কে প্রচলিত ধারনার অপরপ্রান্তে দাঁড়িয়ে সমাজকল্যান আধিকারিকের যথাসাধ্য প্রয়াস মেয়েকে চিকিতসা সহ ওর মনোমত ,পরিবার ছাড়া অন্য কোন নিরাপদ আশ্রয়ে রাখবার খোঁজ, কারন চিকিতসায় সাড়া দেবার পূর্বশর্ত যে ওইটিই!!
    ফলপ্রসু হলো না যদিও আইনের হিজিবিজি নিয়মেই, কিন্তু সাহায্যের প্রচেষ্টাকে আন্তরিক ধন্যবাদ না দেওয়া বোধহয় বড়ই অকৃতজ্ঞতা হয়ে যায়।

    মনোচিকিতসক বন্ধু স্বস্তিশোভন তার প্রেসক্রিপশন দেখে বললেন যদিও, যে নিয়মিত ঔষধ খাওয়াতে পারলে বাড়ীতেই ওকে রাখা সম্ভব, কিন্তু যে নিজে সহযোগিতা করছে না তাকে ঔষধ খাওয়ানো , অনভিজ্ঞ লোকের পক্ষে বোঝানো আর সর্বদা চোখে রাখা, না, আমি হলেও সম্ভবত পারতাম না।
    যখন কোথায় রাখি তারে ভেবে দিশাহারা, অভিভাবকের সাথে আমরাও চাইছি না ও মানসিক হসপিটালে যাক, দেবদূত এক, দিদিয়াকে পরিপূর্নতা বলে এক মানসিক অসাম্যতায় (ভারসাম্যহীন নয় আমাদের মেয়ে)ভোগা মেয়েদের আবাসিক চিকিতসা করে, কিছু পেশাপ্রশিক্ষনও দেয় এমন সংস্হার খোঁজ দিলেন।
    এরই মধ্যে, সদ্য দু তারিখ বাড়ী ফিরে, 13/05 দুপুরেই মেয়ে আবার উধাও! সেই মূহুর্তে স্টেশনে চাইল্ড হেল্প লাইন, RPF সকলকে জানানো, ছবি দেওয়া, সমাজকল্যাণ আধিকারিককে জানানো, থানায় ইনফর্ম করা, সেই এন জিও কে আবার জানানো, মেয়ের মামার মুখের দিকে তাকাতে খারাপ লাগছিলো, মনে হচ্ছিলো নিজের দায়িত্ব পালন করতে পারিনি , তবে কি আমার তরফে অবহেলা ছিলো কোথাও?

    পরিপূর্নতার ওয়েবসাইট দেখে, মেল আইডি বের করে লিখলাম সহায়তা প্রার্থনা করে , আবেদনপত্র। ঠিক দুদিন, মাননীয় সম্পাদক প্রত্যুত্তর দিলেন মেয়েকে খুঁজে পেলেই যাতে বহরমপুর হাসপাতালে ভর্তি করার সুব্যবস্হা করা যায় সে পথ বাতলিয়ে, কিন্তু মেয়ে আমাদের হাসপাতালে পাঠানোর মত নয় যে! ওর চাই মানসিক নিরাপত্তা, পরিচর্যা, অনেক অনেক ভালোবাসা যা ওকে নিজের প্রতি ভালোবাসাকে জাগিয়ে তুলবে। আবারও আবেদন, সাথে কাউন্সিলর লক্ষীদি, দিদিয়া, ওর অভিভাবকের ফোন নং সহ যাতে ওনারা আমার বয়ানের সত্যতা যাচাই করে পরিপূর্নতাতেই ওকে কিছুদিন থাকবার সুযোগ দেন। কথা দিলাম অর্থসাহায্য থেকে ও সুস্হ হয়ে ফিরিয়ে নেবার জন্যে আমরা দায়বদ্ধ থাকবো।

    নির্বাচন পর্ব মিটতে মামা চিকিতসাপ্রয়োজনে সেই সুপার স্পেশালিটি হসপিটালে যান যেখানে আগেও ওকে পাওয়া গেছিলো ও মেয়ে আমাদের সেখানেই ,আবারও পাওয়া যায়।ওখানে ও নিজেকে নিরাপদ ভাবে, সব্বাই দেখে রাখে, শুধু তাই ছুটে গিয়েছিলো সে!

    আর দেরী নয় .. আর দেরী নয়।

    গতকাল অফিসিয়াল মুচলেকা লিখে দিয়ে বলে দেওয়া হলো মেয়েকে নিয়ে যাওয়া হবে মঙ্গলবার ‘হোমে’। সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে হয়তো ঠাঁই পাবে সে আপাতত, সুস্হতা ফেরানোর প্রয়াসের লড়াইতে সামিল সেখানের কর্তাব্যক্তিরাও। আপাতত কোন অর্থসাহায্য নিচ্ছেন না তারা!!

    এ অব্দি পড়ে, আমাদের টীমের অন্তর্ভুক্ত স্কুলশিক্ষিকারা ও সেই পরানসখী বড়দিদিমনি যে প্রত্যেকটি মূহুর্তে সাহস আর আশা জুগিয়েছে, দিদিয়া , লক্ষ্মীদি, সরকারী আধিকারিকরা, মেয়ের পরিবার, সেই দেবদূত বন্ধু, এন জি ও’র প্রত্যক্ষ সহায়তাকারী সদস্যবৃন্দ , পরিপূর্ণতার পরিচালক মন্ডলী বা আমাকে, ধন্যবাদ জানাতে চাইবেন যারা, সবিনয়ে বলি , আমরা প্রত্যেকে আমাদের নিজ নিজ দায়িত্ব, সামাজিক জীব হিসেবে পালন করেছি মাত্র, আর আমরা সবাই চেয়েছি বলেই প্রয়োজনীয় পরামর্শ কি সহায়তা সব পাওয়া গেছে দরকারের সময়। শুধু ভালোবাসা ,প্রাপ্তি-প্রত্যাশাহীন, জীবনকে সত্যি দুহাত উজাড় করে দেয়, যা চাই তাই-ই, হয়তো বা আরো অনেক অনেক বেশী!!

    আপনারাও থাকুন আমাদের সাথে , প্রার্থনায়, যাতে ‘আমাদের মেয়ে’ সুস্হতা অর্জন করে খুব তাড়াতাড়ি, নিজের দায়িত্ব নেওয়ার মত কোন কর্মক্ষেত্র খুঁজে নিতে পারে সবার সাহায্যে আর শুভকামনায়।
    হাতে হাত বাঁধা পড়ুক।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২০ মে ২০১৮ | ১৫৪২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Prativa Sarker | 125.96.140.143 (*) | ২০ মে ২০১৮ ০৬:৩৪62680
  • এইরকম দরদী শিক্ষক ডোডোপাখি হয়ে গেছেন বহুদিন আগে। সেই পরম্পরা বয়ে নিয়ে যাচ্ছো তুমি, সবাই তোমার পাশে থাকবে। ✌✌
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন