এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • ইউক্রেন ,নেস্টর ইভানোভিচ মাখনো এবং বলশেভিক বিশ্বাসঘাতকতা

    Debabrata Chakrabarty লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৪ মার্চ ২০১৬ | ২০৮০ বার পঠিত
  • ( এই সম্পূর্ণ অজানা কাহিনীটির প্রেক্ষাপট এত বিশাল এবং এতো ঘটনা বহুল ইতিহাস যে যত লেখা হবে তত মনে হবে ওই অংশটি অনুল্লেখিত রইল, এক পর্বে প্রকাশ করলে রেফারেন্স ,ক্রস রেফারেন্স ইত্যাদি মিলিয়ে মিশিয়ে অতি বৃহৎ এবং অতীব জটিল হয়ে যেতে পারে তাই লেখাটি অন্তত তিনটি পর্বে প্রকাশিত হবে বলে ধরে রেখেছি অবশ্যই অ্যাডমিনের অনুমতি সাপেক্ষ - বর্তমান পর্বে ১৯১৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত সেই দুরন্ত সময়ের বিবরণ ধরা থাকলো - পাঠকের মতামতের অপেক্ষায় থাকলাম )

    ইউক্রেন ,নেস্টর ইভানোভিচ মাখনো এবং বলশেভিক বিশ্বাসঘাতকতা

    সময়টা ১৯৩০-৩৫ সালের প্যারিস । অসংখ্য মৃত আশা ,ভাঙ্গা হৃদয় ,বিশ্বাসঘাতকতার শিকার ,পালিয়ে বেড়ানো বিপ্লবী এবং হেরে যাওয়া রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের এক চলমান কবরখানা । হিটলারের থেকে তাড়া খাওয়া লিবারেল জার্মান প্রফেসর । ফ্রাঙ্কোর নজরে থাকা স্প্যানিশ আন্যারকিস্ট । রাশিয়ান কুলাক এবং হোয়াইট । বলশেভিকদের দু চোখের বিষ পোল্যান্ডের সোশালিস্ট। ট্রটস্কি’র চীনের অনুগামীগন । আমেরিকান জাতীয়তাবাদী । ইটালিয়ান ফ্যাসিস্ত থেকে বেরিয়ে আসা বিরোধী গোষ্ঠী কে নেই সেই কবরখানার আশেপাশে । একে ওপরের অপরিচিত হয়তবা একই সস্তার সরাইখানার একই সময়ে কোন না কোন টেবিলে ভগ্নহৃদয়ে আলোচনা মত্ত । ফ্রান্সের আভ্যন্তরীণ বিষয়াবলীতে মাথা না ঘামালে এবং দেশের পুলিশ নিয়মাবলী মেনে চললে এই সমস্ত রাজনৈতিক ভাবে লাশে পরিনতদের জন্য প্যারিসের দরজা তখন উন্মুক্ত ।

    এই চলমান লাশেদের দলে এক ভগ্নসাস্থ্য ,খর্বকায় ,পুরানো বুলেটের ক্ষতে প্রায় পঙ্গু ,ততদিনে ভদকা আশ্রিত এবং সমসাময়িকদের স্মৃতি থেকে প্রায় মুছে যাওয়া নেস্টর ইভানভিচ মাখনো কে তাও যদি অতি উৎসাহী কেউ দেখা করতে চাইতেন প্রতি শনিবার তাকে পাওয়া যেত -ইহুদী ওয়ারকার্স ক্লাবের পরিধিতে । অথচ কেবল মাত্র ১০ -১২ বছর পূর্বে ইনিই ছিলেন রাশিয়া’র গৃহযুদ্ধের অন্যতম বীর ,গ্লামারাস,বর্ণবহুল অদম্য চরিত্র । এই অর্ধ শিক্ষিত ,এলিট বুদ্ধিজীবীর ছোঁয়াচ বাঁচানো ,কারখান্রার শ্রমিক ,নাবালক অবস্থাতে জারের রাশিয়ায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ৫’৪” র মাখনো লাখো ইউক্রেনিয়ান চাষিদের তাদের সমস্ত শত্রুর বিরুদ্ধে এক জীবন মৃত্যুর লড়াইয়ে সংগঠিত করেছিলেন । দাসত্ব থেকে মুক্তির স্বাধীনতার লড়াইয়ে ,খুনি সরকারসমূহের হাত থেকে মুক্তির জীবন মরণ লড়াইয়ে লাখো ইউক্রেনিয়ান চাষি এবং শ্রমিক এই অকিঞ্চিৎকর ব্যক্তিত্বের ছাতার তলায় এসে জমা হয়েছিলো । গত তিনশো বছরের ইউক্রেনের দাসত্বের ইতিহাসে ইউক্রেনের ক্ষুদ্র এবং ভূমিহীন চাষি এই প্রথম অর্জন করেছিল এক অভূতপূর্ব স্বাধীনতা । যদিও মাত্র ৪ বছরের এই স্বল্পস্থায়ী স্বাধীনতা রক্তাত্ত পথে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল ট্রটস্কির প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে ।কালিমালিপ্ত করা হয়েছিল নেস্টর মাখনোর সমস্ত বীরগাথা । অদ্ভুত চতুরতার সাথে মুছে দেওয়া হয়েছিল ইতিহাসের পাতা থেকে , কিন্তু তবুও এই অকিঞ্চিৎকর ব্যক্তিত্বের অসাধারণ বীরত্বের ইতিহাস বর্তমানে তার মৃত্যুর প্রায় ৮০ বছর পরে পুনরায় নূতন করে লেখা হচ্ছে । বিস্মৃতি এবং মিথ্যা প্রচারের জাল কেটে উঠে আসছে নিত্য নূতন তথ্য । ভেঙ্গে পড়ছে বলশেভিক মিথ ।

    ১৯ বছর বয়েসেই জারের আমলে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত এই স্বল্পশিক্ষিত শ্রমিক , প্রথাগত মিলিটারি শিক্ষার ধার না ধারা এই অসামান্য মিলিটারি স্ট্রাটেজিস্ট ,চাষিদের নিয়ে গঠিত সৈন্যবাহিনীর সাহায্যে প্রায় একার হাতে ইউক্রেনে শ্বেত সন্ত্রাসকে ধ্বংস করেছিলেন । মস্কোকে বাঁচিয়েছিলেন রাশিয়ান হোয়াইট আর্মির আগ্রাসন থেকে। সংগঠিত করেছিলেন অভূতপূর্ব গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত গেরিলা বাহিনী । নিযুক্ত হয়েছিলেন রেড আর্মির ডিভিসনাল জেনারেল হিসাবে । স্থাপনা করেছিলেন অসংখ্য কমিউন যার মধ্যে 'রোজা লুক্সেমবার্গ’ কমিউন ছিল অন্যতম । একদিকে বলশেভিক পার্টি এবং রাশিয়ান রেড আর্মি তিন তিন বার নেস্টর ইভানোভিচ মাখনোর সাথে রাজনৈতিক এবং সামরিক চুক্তি সাক্ষর করেছিল অন্যদিকে মাখনো কে হত্যা করতে কেজিবির পিতামহ রাশিয়ান চেকা গুপ্তঘাতক পাঠিয়েছিল । যদিও চেকার গুপ্তঘাতক মাখনোর সাক্ষাতে নার্ভ হারিয়ে অবশেষে আত্মসমর্পণ করে । অবশেষে রেড আর্মির সর্বাধিনায়ক , ভগবানতুল্য ক্ষমতার অধিকারী , ট্রটস্কির বিশ্বাসঘাতকতার শিকার এই খর্বকায় ব্যক্তির বিরুদ্ধে শুট অ্যাট সাইট অর্ডার ঘোষণা মাখনোর বর্ণবহুল বিতর্কিত জীবনের আরেক অধ্যায় । মাখনোর ব্যক্তিগত রাজনৈতিক বিশ্বাস ,স্বপক্ষে বিপক্ষের বিবিধ গল্প এবং ঘটনার বৈপরীত্য । অসাধারণ মিলিটারি অর্গানাইসার । চরম প্রতিকুল পরিস্থিতিকে অনুকূল পরিস্থিতিতে পরিবর্তনের দক্ষতা এবং শেষ সময় পর্যন্ত নিজের আদর্শে অটল এই অকিঞ্চিৎকর ব্যক্তির -প্রকৃত প্রলেটারিয়েতের জীবনকাহিনী যে কোন এপিক সাহিত্যিক বর্ণনার থেকে রোমহর্ষক, অসাধারণ বীরত্বর , হতাশার ,বঞ্চনার এবং বিশ্বাসঘাতকতার চূড়ান্ত দলীল ।

    খর্বকায় , ভগ্নস্বাস্থ্য, যুদ্ধজনিত অসংখ্য ক্ষতের আঘাতে প্রায় পঙ্গু এবং অবশেষে ভদকা'য় আশ্রয়গ্রহণকারী মাখনো ১৯৩৪ সালে প্যারিসে যখন চরম অবহেলায় মৃত্যুপথ যাত্রী তখন একই শহরে তার ঐতিহাসিক শত্রু ট্রটস্কি ,দেশ থেকে চরম অপমানে বিতাড়িত ট্রটস্কি মাত্র কয়েক কিলোমিটারের ব্যবধানে স্তালিনের হত্যাকারীর অপেক্ষায় প্রতীক্ষারত। চরম বিশ্বাসঘাতকতায় মাখনো’কে দেশথেকে তাড়িয়ে দেওয়ার কারিগর ট্রটস্কি নিজেই তখন নিজের দেশ থেকে বিতাড়িত । ইতিহাসের কি চরম পরিহাস ।

    কিঞ্চিৎ আদর্শ বিচ্যুতি হয়ত বা অ্যাম্বিসানের সাথে সামান্য একটু আপস মাখনোকে বাঁচিয়ে রাখতো রুসিয়ার ইতিহাস পুস্তকে। শ্বেত সন্ত্রাস ধ্বংস করে দেওয়া এক জন মিলিটারি হিরো হিসাবে সোনার অক্ষরে তার নাম লেখা থাকত । মাখনো হতে পারতেন সোভিয়েত রাশিয়ার 'চিফ অফ ক্যাভালরি’ অথবা ট্রটস্কির পরিবর্তে 'সুপ্রিম কম্যান্ড অফ রেড আর্মি’ । এই কাহিনীটি সেই অনমনীয় যোদ্ধা ,স্বভাব বিপ্লবী ,রাশিয়ার বিপ্লবের অন্যতম বর্ণময় চরিত্র, স্বাধীন , স্বতন্ত্র ‘নেস্টর ইভানোভিচ মাখনো’র কাহিনী । ইউক্রেনে বলশেভিক বিশ্বাসঘাতকতার কাহিনী। স্বাধীনতার অপমৃত্যুর কাহিনী । বিপ্লবের ভ্রূণ হত্যার কাহিনী অথবা এক দীর্ঘ কাহিনীর মুখবন্ধ মাত্র ।

    নেস্টর ইভানোভিচ মাখনো ঃ- সময়কাল ১৮৮৯ -১৯১৮এবং ব্রিস্ট লিটভস্ক চুক্তি

    নেস্টর ইভানোভিচ মাখনো ১৮৮৯ সালে এক গরীব ইউক্রেনিয়ার চাষির পরিবারের কনিষ্ঠ সন্তান হিসাবে জন্মগ্রহণ করেন। স্তালিন এবং ট্রটস্কি’র থেকে বছর দশেকের ছোট মাখনোর জন্মগ্রহণের মাত্র দশ মাসের মাথায় তার পিতৃবিয়োগ ঘটে । চারটি ছোট ছোট বাচ্চার দায়িত্ব এসে পরে মায়ের ঘাড়ে । ভূমিহীন কৃষক , ছোট ছোট চার সন্তান ,একা উপার্জন কারী মা না আছে গবাদি পশু না আছে আয়ের অন্য কোন সূত্র তাই স্বভাবতই খুব অল্প বয়সেই মাখনোকে সংসারে অন্ন যোগানোর স্বার্থে কাজে লেগে পড়তে হয় । মাখনো তার সাত বছর বয়েসে অঞ্চলের বর্ধিষ্ণু পরিবারের গরু ভেড়া চড়ানোর কাজে লেগে পরেন । অর্থের অভাবে পড়াশুনার সুযোগ প্রায় হয়নিই বলা যায়, বরফে জমে যাওয়া রাশিয়ায় যখন গরু ভেড়া চড়ানোর কাজ বন্ধ থাকে সে সময়ে মাত্র ৪টি শীতকাল তিনি সরকারী স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষালাভের সুযোগ পেয়েছিলেন , এক অর্থে চার ক্লাস পাস । এগারো বছর বয়েস থেকে মাখনো চাষের জমিতে কৃষি শ্রমিক । একটু শক্ত সমর্থ হোলে কৃষকদের পুরানো ঘোড়ার গাড়ির চিত্রকার হিসাবে কাজ করতে শুরু করেন। ১৯০৫সালের প্রথম রুশ বিপ্লবের সময়ে সদ্য ষোল বছরের কিশোর নেস্টর ইভানোভিচ মাখনো ততদিনে ঢালাই কারখানার শ্রমিক । ছোট বেলা থেকেই অন্যের জমিতে কৃষি শ্রমিক এবং ঢালাই কারখানার শ্রমিক হিসাবে কাজ করে আসা মাখনোর ব্যক্তিগত জীবনে শোষণের অভিজ্ঞতা, সাথে শক্ত হাতে বিপ্লব দমনের সরকারী অত্যাচার মাখনোর কিশোর হৃদয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ প্রতিবাদের স্বপক্ষে যে সেন্টিমেন্ট গড়ে তোলে মাখনোর বাকি জীবন সেই অনুভূতি দ্বারা পরিচালিত হয়েছে ।

    ১৯০৫ এর প্রথম রুশ বিপ্লবের অভিঘাত ,মাখনোর কারখানায় পুলিসি হানা , গ্রামে বর্ধিষ্ণু কৃষকদের ক্রমাগত অত্যাচার ,অসহনীয় শ্রমিক শোষণ এবং নিজের ব্যাক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে মাখনো বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে একমাত্র প্রত্যক্ষ প্রতিবাদের রাস্তায় ,কেবলমাত্র পাল্টা প্রতিশোধের পথে এই অত্যাচার থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব । ১৯০৬ সালে মাখনোর তখন মাত্র ১৭ বছর বয়স ,তার জন্মস্থান দক্ষিণ ইউক্রেনের গুলাই পল’ অঞ্চলের এক গুপ্ত বিপ্লবী দলের সাথে যুক্ত হয়ে পরেন । অনেকটা আমাদের অনুশীলন সমিতির মত সেই উদ্দাম যুবকদের সংগঠন স্যাবটাজ এবং বিচ্ছিন্ন সশস্ত্র আন্দোলনের পথে রাশিয়ার জার সরকার বিরোধী আঞ্চলিক আন্দোলন চালাতে থাকে । দুই বছর পরে ১৯০৮ সালে সেই বিপ্লবী দলের এক গোপন মীটিঙে পুলিশ হানা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময়ে জেলা পুলিসাধিকারী’র মৃত্যু ঘটে । মাখনো এলাকা থেকে পালাতে সক্ষম হলেও পুলিশের পাল্টা অভিযানে সেই গুপ্ত দলের এক সহযোগী ধরা পরেন । কিছুদিন পালিয়ে বেড়ানোর পরে জেলা পুলিসাধিকারী’র প্রতি আক্রমণ এবং মৃত্যুঘটানোর দায়ে পুলিশ মাখনো কে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় । রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে আদালত ১২ জন সাথী সমেত মাখনোর'ও ফাঁসীর সাজা ঘোষণা করে । কিন্তু যেহেতু তার বয়েস তখনো ২০ বছর অতিক্রম করেনি তাই মৃত্যুদণ্ড অনেক অনুনয় বিনিনয়ের অবশেষে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে পরিবর্তিত হয়।

    যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত মাখনোকে ১৯০৮ সালে ইউক্রেন থেকে নিয়ে আসা হয় মস্কোর কুখ্যাত বুট্যরকি কারাগারে । ইউক্রেনের দিগন্ত বিস্তৃত স্তেপ ভূমীতে বেড়ে ওঠা বুনো ঘোড়ার মত পোষ না মানা মাখনো প্রায়ই জেল গার্ডদের সঙ্গে ঝামেলায় জড়াতেন । অধিকাংশ সময় হয় তাকে শিকল দিয়ে বেধে রাখা হোত অথবা ফেলে রাখা হোত ডিসিপ্লিনারি সেলের ঠাণ্ডা স্যাঁতসেঁতে মেঝেতে । ফুসফুসে জলজমার রুটিন ,সম্ভবত টিবি মাখনোর শরীরে তখনই বাসা বাঁধে। এরই মাঝে মাখনোর সেল সঙ্গী হিসাবে আসেন পিটার আরশিনভ । শিক্ষিত ,অভিজ্ঞ ,বলশেভিক পত্রিকা Molot (Hammer)’র সম্পাদক পোড় খাওয়া বিপ্লবী আরশিনভের তত্বাবধানে জেলের ভেতরে চলতে থাকে মাখনোর প্রাথমিক শিক্ষা । রাশিয়ান গ্রামার ,সাহিত্য ,ইতিহাস,অঙ্ক ,ভূগোল ইত্যাদির পাঠ সাথে মার্কস , বাকুনিন ,ক্রপ্টকিনের টেক্সট…নেস্টর ইভানোভিচ মাখনো দারিদ্র্যতার কারনে কোনদিনই প্রথাগত স্কুলের শিক্ষা পাননি ,যা কিছু পেয়েছেন তা জেলের ভেতরে ,জেলের লাইব্রেরী এবং বিভিন্ন শিক্ষিত কমরেডেদের মাধ্যমে । পিটার আরশিনভের সাথে জেলের ভেতর গড়ে ওঠা মাখনোর এই বন্ধুত্ব প্রায় ১৯৩২ সাল পর্যন্ত বজায় ছিল। পরবর্তীতে ১৯১৯ সালের সময় থেকে আরশিনভ ছিলেন মাখনোর বিপ্লবী আন্দোলনের প্রচার কমিটির প্রধান ,তাত্বিক নেতা, শিক্ষা এবং সংস্কৃতি বিষয়ক কমিটির মেম্বার এবং সক্রিয় সহযোগী । আরশিনভ ১৯৩১সালে স্তালিনের সাথে সমঝোতা করে রাশিয়াতে ফিরে যান, মাখনো ২৪ বছরের দীর্ঘ বন্ধুত্বের অবসান ঘটান, ১৯৩৫ সালের সেই কুখ্যাত স্তালিনীয় পার্জের সময় হাজারো রাজনৈতিক কর্মীর মত আরশিনভ নিখোঁজ হয়ে যান ।

    অবশেষে ১৯১৭ সালে ফেব্রুয়ারী বিপ্লবের পরে Georgy -lvov এর প্রভিসনাল গভর্নমেন্ট সমস্ত রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি ঘোষণা করলে -২রা মার্চ ১৯১৭ সালে মাখনো ৯ বছরের অত্যাচারিত কারাবাসের অবশেষে জেল থেকে মুক্তি পান । ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের অভিঘাতে তারা তখন রাতারাতি ক্রিমিনাল থেকে হিরোতে পরিবর্তিত বিপ্লবী দঙ্গল । মাখনোর সাথে একই জেলখানা থেকে একই সময়ে মুক্তিপান 'ফেলিক্স জেরজিনস্কি' । এই সেই বিখ্যাত অথবা কুখ্যাত পোলিস /রাশিয়ান বলশেভিক যিনি পরবর্তীতে বলশেভিক গুপ্ত বাহিনী ‘চেকা’ স্থাপন করবেন । পুরো রাশিয়া জুড়ে লাল সন্ত্রাস কায়েম করবেন ,বিনা বিচারে হাজারে হাজারে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নিধন করবেন এবং সদর্পে ঘোষণা করবেন "We represent in ourselves organized terror—this must be said very clearly." । সপ্তাহ তিনেক মস্কোয় বিভিন্ন বিপ্লবী দল ,শ্রমিক ইউনিয়ন ,অ্যানারকিস্ট গ্রুপের কর্মকাণ্ডের সাথে পরিচিত হওয়ার পর মাখনো ২৪শে মার্চ ১৯১৭ সালে ফিরে যান ইউক্রেনে তার নিজের গ্রাম ‘ গুলাই পোল’এ । দক্ষিণ ইউক্রেনের উন্মুক্ত প্রান্তরে বেড়ে ওঠা মাখনোর কাছে মস্কো এক দমবন্ধ করা নৈরাজ্যের পরিবেশ ।

    মাখনো তার সারাজীবন মস্কোর কুখ্যাত বুট্যরকি কারাগারের অত্যাচারিত দিনগুলির কথা ভুলতে পারেননি । পরবর্তী পাঁচ বছর মাখনো যখনই যে শহরই দখল করেছেন বা সামরিক ব্যরাক প্রথমেই সেই শহরের জেলখানার দেওয়াল উড়িয়েছেন ডায়নামাইট লাগিয়ে । মাখনোর মতে জেলখানা রাষ্ট্রের অত্যাচারের মনুমেন্ট -স্বাধীন বিপ্লবী জনতার প্রাথমিক দায়িত্ব অত্যাচারের এই সৌধ গুঁড়িয়ে দেওয়া । স্বাধীন জনতার নিজস্ব জীবনে জেলখানার অস্তিত্ব অর্থহীন ।

    ১৯১৭’র সেই সময়ে দক্ষিণ ইউক্রেনের গুলাই পল ঠিক গ্রামও না বড় শহরও না, মেরে কেটে হাজার তিরিশেক জনসংখ্যার এক অখ্যাত ছোট খাট মফস্বল । ইউক্রেনের মানচিত্রে আতস কাঁচ দিয়ে খুঁজে পাওয়া মুস্কিল অখ্যাত এই গ্রাম পরবর্তী ৫ বছর রাশিয়ার বিপ্লবের এক অন্যতম প্রধান কেন্দ্রে পরিবর্তিত হবে নেস্টর মাখনোর হাত ধরে । আগামী ৫ বছরে এই গ্রাম এবং এই গ্রামকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা মাখনোর দক্ষিণ ইউক্রেনের রাজধানী কমপক্ষে ১৬ বার বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে হাত বদল হবে । কখনো অস্ট্রিয়ান ,জার্মান, ইউক্রেনের জাতীয়তাবাদী শক্তি ,কখনো হোয়াইট আর্মির অধীনে আবার হয়ত তিনদিনের মাথায় প্রতিআক্রমণে মাখনোর বাহিনীর দ্বারা পুনঃউদ্ধার ।

    গুলাই পল’এর জনতা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের অপরাধে ৯ বছর ধরে জেলখাটা মাখনোকে বীরের সন্মানে স্বাগত জানায় । মস্কো ফেরত মাখনো পরেরদিন থেকেই তার পুরানো ছত্রভঙ্গ গ্রুপ এবং প্রান্তিক চাষিদের সংগবদ্ধ করতে থাকেন । এক সপ্তাহের মধ্যে গড়ে ওঠে কৃষক ইউনিয়ন -মাখনো তার চেয়ারম্যান । এপ্রিল মাসের মধ্যে প্রভিসনাল গভর্নমেন্ট পরিচালিত ‘পাবলিক কমিটি ‘ এবং তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ ‘ল্যান্ড ডিপার্টমেন্টের' নির্বাচনে মাখনো জয়ী হন । মাত্র ২৮ বছর বয়েসের নেস্টর ইভানোভিচ মাখনোকে অঞ্চলের স্বশাসিত প্রশাসনের ( সোভিয়েত ) ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত করে অঞ্চলের জনতা। লেনিন ঠিক এই সময়ে (১৬ই এপ্রিল ২০১৭ ) তার দীর্ঘ ১০ বছরের স্বেছা নির্বাসন কাটিয়ে জার্মানির সহযোগিতায় রাশিয়াতে ফিরে আসছেন - বিখ্যাত এপ্রিল থেসিস লেখা হচ্ছে যেখানে লেনিন ‘abolition of the Police, the army and the bureaucracy’র কথা বলছেন । অন্য দিকে গুলাই পল অঞ্চলে মাখনো কোন কেন্দ্রীয় কমিটি বা রাজনৈতিক দলের ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া নির্দেশ বিনা নিজস্ব অভিজ্ঞতার বলে গড়ে তুলছেন কৃষকদের ফৌজ। গুলাই পল’অঞ্চলে তখন পূর্বতন জার এবং বর্তমান প্রভিসনাল গভর্নমেন্টের ক্ষমতা বজায় রাখার জন্য এক সার্বিয়ান মিলিটারি রেজিমেন্ট নিয়োজিত ছিল । প্রভিসনাল গভর্নমেন্টের ক্ষমতা চ্যালেঞ্জ করার ক্ষেত্রে এই সার্বিয়ান রেজিমেন্ট অন্যতম প্রধান বাধা। মাখনোর নেতৃত্বে এবং ক্রমাগত প্রচারে অবশেষে ১৯১৭ সালের মে দিবসে এই সার্বিয়ান রেজিমেন্টের মেশিনগানার্সরা আনুগত্য বদল করে মাখনোর দলে যোগ দেয়। ১৯১৭ সালের মে দিবসের সেই মিছিলের পুরোভাগে ছিল সদ্য আনুগত্য বদলকারী সার্বিয়ান রেজিমেন্টের মেশিনগানার্সরা । ১৯১৭সালের রাশিয়ায় এইধরনের ঘটনা অস্বাভাবিক না হলেও মাখনোর নেতৃত্বে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের প্রথম ঘটনা হিসাবে স্বীকৃত ।

    ১৯১৭ সালের ১লা মে সার্বিয়ান রেজিমেন্টের মেশিনগানার্সদের আনুগত্য বদলের সাথে সাথে দুর্বল প্রভিসনাল গভর্নমেন্টের কর্তৃত্ব প্রায় তলানিতে এসে ঠেকে । একই সাথে মাখনোর নেতৃত্বে অঞ্চলের সমস্ত মেটাল এবং কাঠের কারখানায় ৮০-১০০% মজুরী বৃদ্ধির দাবীতে শুরু হয় দৃষ্টান্ত মূলক ধর্মঘট । মাখনোর পূর্বতন কারখানার মালিক ক্রেনারের নেতৃত্বে এলাকার সমস্ত কারখানার মালিক যূথবদ্ধ হয়ে স্ত্রাইক ভেঙ্গে দেওয়ার চেষ্টা চালাতে থাকে । কিন্তু মাত্র ১০দিনের প্রতিরোধের পর ক্রেনার চুক্তি মেনে নিতে বাধ্য হয় । নেস্টর মাখনো’র নেতৃত্বে এই প্রথম দক্ষিণ ইউক্রেনে’র সফল শ্রমিক আন্দোলন । এই প্রথম ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের শ্রমিকেরা মাখনোর নেতৃত্বে ১০০% মজুরী বৃদ্ধির দাবী আদায় করতে সক্ষম হয় । জেল ফেরত মাখনো মাত্র দু মাসের মধ্যে দক্ষিণ ইউক্রেনের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রভিসনাল গভর্নমেন্টের ক্ষমতা এবং পুঁজিবাদী শক্তির একতা ধুলিস্যাত করে দিতে সমর্থ হন । দক্ষিণ ইউক্রেনে প্রভিসনাল গভর্নমেন্ট ততদিনে কাগুজে বাঘ ।

    ১৯১৭’র জুন মাসে মাখনোর নেতৃত্বে শুরু হয় কৃষক অসহযোগীতা’র আন্দোলন । কৃষকেরা জমিদারদের দ্বিতীয় কিস্তির খাজনা দিতে অস্বীকার করে। এতদিনের জমিদারের আইন প্রয়োগ করে আসা লেঠেলবাহিনী মাখনোর চাপে ততদিনে হতোদ্যম , রাষ্ট্রের ক্ষমতা প্রয়োগকারী সার্বিয়ান রেজিমেন্ট ইতিমধ্যে আনুগত্য বদল করে মাখনোর দলে । ১৯১৭ সালের অগাস্ট মাসে মাখনো এলাকার সমস্ত স্থানীয় জমিদারদের ডেকে পাঠান । সেই মীটিঙে জমিদারদের থেকে সমস্ত জমির মালিকানার কাগজ বাজেয়াপ্ত করা হয় । চাষিদের জেলা পর্যায়ের মীটিংএ সর্বসম্মত সিধান্ত হয় যে অধিকৃত জমি সমস্ত চাষিদের মধ্যে সমান পরিমানে ভাগ করে দেওয়া হবে এমনকি পূর্বতন মালিকরা যদি নিজেরা চাষ করতে চান এই পরিকল্পনা থেকে বাদ যাবেন না । সেই সময়ের প্রভিসনাল গভর্নমেন্টের ক্ষমতা হারানো প্রতিনিধি ‘মিখনো’ এককালে জারের বিরোধিতা করা ভূস্বামী অসহায় ভাবে মাখনোর এই কর্মকাণ্ড দেখতে থাকেন ,সামরিকশক্তি হারানো এবং প্রশাসনিক ভাবে অসহায় প্রভিসনাল গভর্নমেন্টের প্রতিনিধির আর কিই বা করার ছিল ?

    মাখনো নিজস্ব শ্রেণী চেতনা থেকে খুব ভালো করে জানতেন যে হায়নার মত চতুর ভূস্বামী এবংপুঁজিবাদী শ্রেণী সুযোগের অপেক্ষায় , যে কোন দুর্বল মুহূর্তে অথবা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কৃষক এবং শ্রমিকদের এই অভূতপূর্ব জাগরণ চূর্ণ করার জন্য এক মুহূর্ত দ্বিধা করবেনা । রাশিয়া যখন নভেম্বর বিপ্লবের জন্য প্রতীক্ষারত , মাখনো তখন কৃষক এবং শ্রমিকের সদ্য অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষায় গুলাই পোল অঞ্চলের সোভিয়েত প্রধান হিসাবে ভূমিহীন কৃষকদের নিয়ে গড়ে তুলতে থাকেন নিজস্ব বাহিনী। মাখনোর গেরিলা বাহিনীতে তখন মাত্র ৫০০ -৬০০জন সদস্য এই সময় নিকটবর্তী শহর অলেক্সজান্ড্রাভিক্সের কমরেডদের থেকে গুলাই পোল এবং অলেক্সজান্ড্রাভিক্সের মধ্যবর্তী অরিখিভ অঞ্চলে অবস্থানকারী এক মিলিটারি রেজিমেন্টকে নিরস্ত্র করার নিবেদন আসে । মাখনো নিবেদন স্বীকার করেন মাত্র গোটা দশেক রাইফেল এবং কিছু পিস্তল নিয়ে শ দুয়েক মাখনো বাহিনী ট্রেন ভর্তি করে রওয়ানা দেয় অরিখিভ এর উদ্দেশ্যে। রেজিমেন্টের স্টোর ঘিরে ফেলা হয় , শহরের কেন্দ্র অবরুদ্ধ করা হয় । প্রথম বিশ্বযুদ্ধ রাশিয়ার প্রভিসনাল সরকার তখন শুধুমাত্র টেনে যাচ্ছে , পশ্চিম ফ্রন্টে তখন বেয়নটে বেয়নটে যুদ্ধের বীভৎসতা , যুদ্ধ ক্লান্ত মনোবল হীন সৈনিক সামান্য সুযোগে আনুগত্য পরিবর্তনে প্রস্তুত । অবশেষে ১৯১৭ সালের ২৮সে আগস্ট উদ্দেশ্যহীন ,মনোবল হীন রাশিয়ান রেজিমেন্ট বিনা লড়াইএ অস্ত্র সমর্পণ করে ।

    পরবর্তী যুক্তিসংগত বিপ্লবী কর্মকাণ্ড বিষয়ে বিশদ আলোচনার উদ্দেশ্যে ১৯১৭ সালের ২৫সে সেপ্টেম্বর মাখনো গুলাই পোলে এক কংগ্রেস আহ্বান করেন , জমিদারদের থেকে কেড়ে নেওয়া জমি বিতরণ , তৎকালীন বলশেভিক স্লোগান ‘ Bread,Peace and Land ‘ ছিল আলোচ্য বিষয় । জমিদার'রা দলে দলে গ্রাম থেকে পালাতে শুরু করে , আসে পাশের অঞ্চল থেকে সোভিয়েত প্রতিনিধি মাখনোর অঞ্চলে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে ঘটে চলা বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য আসতে শুরু করেন । অবশেষে রাশিয়াতে ঘটতে থাকে দুনিয়া কাঁপানো দশ দিন । বিপ্লবের অভিঘাতে নূতন সরকার ,পুরানো সরকারের অনুগত আমলাতন্ত্র ,রেড গার্ড মিলিশিয়া ,জারের পুরানো বাহিনী ,ইউক্রেনে রাডা (ইউক্রেনিয়ান জাতীয়তাবাদী সরকার ) এই সব মিলিয়ে ইউক্রেনের শহরাঞ্চলে যখন এক নৈরাজ্যময় পরিস্থিতি ,দু পক্ষই যখন ভীষণ দুর্বল ,তখন মাখনো গুলাই পোল এবং বিস্তীর্ণ দক্ষিণ ইউক্রেনের গ্রামাঞ্চলে ততদিনে ভূমী বণ্টন ,কমিউন গঠন থেকে শুরু করে গেরিলা বাহিনী এবং সোভিয়েত পরিচালিত নির্বাচিত প্রতিনিধিত্বর চরম গণতন্ত্রের ব্যবস্থা স্থাপন করে ফেলেছেন । না আছে কোন পার্টি নেতৃত্ব , না প্রলেতারিয়েত ভ্যানগার্দ ,না ট্রটস্কী বুখারিনের মত তাত্বিক , না মস্কো থেকে আসা কোন নির্দেশ । এ হোল জনতার দ্বারা জনতার শাসন । বলশেভিক কেন্দ্রিকতার মডেলের পরিবর্তে জনতার গণতান্ত্রিক মডেল ।

    ইউক্রেনে বলশেভিক’রা চিরকাল দুর্বল। পেটোগার্ড এবং মস্কোতে বলশেভিক ক্ষমতা দখল সম্পূর্ণ হলেও ইউক্রেনের পরিস্থিতি ছিল সম্পুর্ন আলাদা। রাশিয়ার বলশেভিক সরকার ১৯১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে যখন ইউক্রেনে রাডা'র বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে অলেক্সজান্ড্রাভিক্স তখন বলশেভিক এবং লেফট এস.আর ( সোশ্যাল রেভলিউশনারী ) যৌথ নেতৃত্বের দখলে। মাত্র চার সপ্তাহ শাসন পরিচালনা করার পরে অলেক্সজান্ড্রাভিক্স বিপ্লবী সরকার রাড’'র আক্রমণের মুখে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় । তাঁদের না ছিল মাখনোর মত শক্ত পোক্ত বাহিনী না ছিল মূল রাশিয়ার থেকে সাহায্যের আশা । রাডার আক্রমণে ছত্রভঙ্গ অলেক্সজান্ড্রাভিক্সের বলশেভিক এবং লেফট এস.আরের বিপ্লবী কমিটি মাখনোর সাহায্য চেয়ে পাঠায় । ইউক্রেনের গৃহযুদ্ধে এই প্রথম বৃহত্তর ক্ষেত্রে মাখনোর ভূমিহীন অসভ্য চাষাদের নিয়ে গঠিত স্বাধীন স্বতন্ত্র সৈন্যবাহিনী অলেক্সজান্ড্রাভিক্স পুনঃউদ্ধারের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে । ১৯১৭ সালের ২৯সে ডিসেম্বর মাখনোর নেতৃত্বে ৮০০ অশ্বারোহীর প্রথম দল বিদ্যুৎ গতিতে অলেক্সজান্ড্রাভিক্স আক্রমণ করে। মাখনোর বাহিনী শহরের কেন্দ্রস্থলে পৌঁছানোর খবরে শহরের ছত্রভঙ্গ বলশেভিক এবং লেফট এস.আরের বিপ্লবী কমিটি’র সদস্যরা তিনদিনের মাথায় পুনরায় রেড গার্ড সংগঠিত করে মাখনোর সাথে শহর দখলের লড়াইয়ে যোগ দেয় । পাঁচ দিনের যুদ্ধের অবশেষে অলেক্সজান্ড্রাভিক্সের ক্ষমতা পুনরায় বলশেভিক এবং লেফট এস.আরের বিপ্লবী কমিটি’র হাতে ফিরে আসে - মাখনো প্রথমেই শহরের জেলখানাটি ধ্বংস করেন ,বলশেভিক নেতৃত্ব পরাজিত রাডা সদস্য এবং প্রতিবিপ্লবীদের বিচারের উদ্দেশ্যে মাখনো’র চেয়ারম্যানসিপে এক ট্রাইব্যুনাল গঠন করে । ১৯০৮ সালে মাখনোকে মৃত্যুদণ্ড শোনানো বিচারক ছিলেন সেই ট্রাইব্যুনালের প্রথম আসামী । বলাবাহুল্য মাখনো প্রতিশোধের সুযোগ সদব্যবহার করতে কার্পণ্য করেন নি ।

    অলেক্সজান্ড্রাভিক্সের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হোলে মাখনো ফিরে যান গুলাই পোল । পুনরায় কৃষকদের সমস্যা এবং বলশেভিক কেন্দ্রিকতার মডেলের পরিবর্তে নিজস্ব গণতান্ত্রিক মডেল প্রতিষ্ঠার কাজে লেগে পরেন । বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করার যুক্তিতে মাখনো লোকাল ব্যাঙ্ক থেকে ওই টালমাটাল সময়েও ২৫০০০০ রুবল জোগাড় করে ফেলেন । রাশিয়ার নভেম্বর বিপ্লবের পরবর্তী সেই অরাজক সময়ে মস্কো ,পেট্রগ্রাডের প্রয়োজন তখন খাদ্য আর মাখনোর অঞ্চলে প্রয়োজন ফিনিশড গুডস ,ট্র্যাক্টর ,কাপড় জামা । সেই সময়ে ট্রান্সপোর্টের দুরাবস্থা স্বত্বেও মাখনো মস্কোর শ্রমিক পরিচালিত কারখানা গুলির সাথে প্রত্যক্ষ বিনিময় ব্যবস্থা গড়ে তোলেন , ইউক্রেনের কৃষক কমিউন রেল ভর্তি করে পাঠাতে থাকে খাদ্য শস্য আর মস্কোর কারখানাগুলি থেকে আমদানি করতে থাকে বিভিন্ন ফিনিশড গুডস,কৃষি কাজের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ।

    ১৯১৭ সালের শেষের দিক থেকে এবং ১৯১৮ সালের প্রথম দুমাসে প্রত্যেক দিন দ্রুত পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে ,শোনা যায় উত্তর ইউক্রেন এবং মধ্য ইউক্রেনের অধিকাংশ অঞ্চল ইতিমধ্যে বলশেভিক শাসন প্রতিষ্ঠিত । লেনিনের আগ্রহে সেন্ট্রাল পাওয়ারের ( জার্মানি ,আস্ট্রিয়া -হাঙ্গারি ,বুলগেরিয়া এবং অটোম্যান সাম্রাজ্য ) সাথে বলশেভিক পার্টি ডিসেম্বরের শেষের দিকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ১৯১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা এবং সেই মাস থেকেই ট্রটস্কি’র নেতৃত্বে সেন্ট্রাল পাওয়ারের সাথে চুক্তির শর্তাবলি নিয়ে আলোচনা চলছে । অন্যদিকে রাডা অনধিকৃত অঞ্চল গুলো দ্রুত দখল করতে শুরু করেছে - মাখনো চাপের মুখে পড়তে শুরু করেন ।

    ১৯১৮ ব্রেস্ট লিটভস্ক চুক্তি ঃ- বলশেভিক সুবিধাবাদী অবস্থান

    ১৯১৮ সালের শুরুর দিকে বলশেভিকরা বিপ্লব পরবর্তী সদ্য জন্মানো সোভিয়েত রাশিয়াকে বহিঃশত্রুর আক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতে এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে বেরিয়ে আসতে কঠিন শর্তে সেন্ট্রাল পাওয়ারের ( জার্মানি ,আস্ট্রিয়া -হাঙ্গারি ,বুলগেরিয়া এবং অটোম্যান সাম্রাজ্য ) সাথে ব্রিস্ট -লিটভস্ক শান্তি চুক্তি সাক্ষর করে। ১৯১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা এবং সেই মাস থেকেই ট্রটস্কি’র নেতৃত্বে সেন্ট্রাল পাওয়ারের সাথে চুক্তির শর্তাবলি নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে। যদিও লেনিন সদ্য গঠিত সোভিয়েত রাশিয়ার স্বার্থে অনতিবিলম্বে শান্তি চুক্তির স্বপক্ষে ছিলেন কিন্তু বাকি সেন্ট্রাল কমিটির সদস্যরা জার্মানির মত সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অবমাননাকর চুক্তির শর্ত মানতে অস্বীকার করেন । তারা বিশ্বাস করতেন যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অভিঘাতে জার্মানি ,তুরস্ক ,বুলগেরিয়ায় ফিনল্যান্ডে বিপ্লব আসন্ন সুতরাং আরও কিছুদিন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া হোক ।

    ক্রমাগত জার্মানির কঠিন শর্তাবলি এবং বিভিন্ন পরোক্ষ চাপের মুখে হতাশ ট্রটস্কি ১৯১৮সালের ফেব্রুয়ারি মাসে 'না যুদ্ধ না শান্তি’ এই ঘোষণার সাথে আলোচনার টেবিল থেকে উঠে আসেন । বলশেভিক নেতৃত্ব ট্রটস্কীর এই হটকারি সিধান্তকে সদ্য গঠিত সোভিয়েত রাশিয়াকে বহিঃশত্রুর আক্রমণের সামনে উন্মুক্ত করে দেওয়ার সাথে তুলনা করে তীব্র সমালোচনা করলেও ট্রটস্কী তার স্বভাবজাত বুদ্ধিজীবী দক্ষতায় বিভিন্ন তত্ব ফাঁদতে কার্পণ্য করেননি । আলোচনা মাঝপথে ভঙ্গ হওয়ার সাথে সাথে সেন্ট্রাল পাওয়ার ইউক্রেনে পুনরায় প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ আক্রমণ শুরু করে ।

    সেই সময়ে সিম্যান পেটলিউরা’র নেতৃত্বে এক জাতীয়তাবাদী পার্টি ইউক্রেনের শাসনভার সামলাচ্ছিলেন। সিম্যান পেটলিউরা ইউক্রেনের পূর্ণ স্বাধীনতা অথবা বৃহৎ অটনমির স্বার্থে ,ঘাড়ের ওপর বসে থাকা কমিউনিস্ট রাশিয়ার আক্রমণ থেকে বাঁচতে সেন্ট্রাল পাওয়ার এর সাথে হাত মেলায় । জার্মান সাম্রাজ্যবাদ বলশেভিকদের ইউক্রেন থেকে হটাতে সিম্যান পেটলিউরা’র সরকারকে সাহায্য করতে থাকে । সিম্যান পেটলিউরা’র নেতৃত্বে ধনী কৃষক ,স্কুল শিক্ষক ,আইনজীবী এবং মূলত শিক্ষিত বুদ্ধিজীবীদের এই টিপিক্যাল জাতীয়তাবাদী দল সোশ্যালিস্ট বা কমিউনিস্ট বিরোধী হলেও ইউক্রেনের পূর্ণ স্বাধীনতা অন্ততপক্ষে বৃহত্তর স্বশাসনের স্বপক্ষে ছিলেন। জার্মান রাশিয়ান এবং পোলিশ ভূস্বামীদের হাত থেকে উদ্ধারকরা জমি পুনরায় তাদের হাতেই ফিরিয়ে দেওয়ার বিরোধী ছিলেন । ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে অধিকাংশ ইউক্রেন ,বেলারুশ এবং বাল্টিক দেশগুলি প্রায় বিনা প্রতিরোধে সেন্ট্রাল পাওয়ারের হাতে চলে যায় । জার্মান নৌবহর তৎকালীন রাশিয়ার রাজধানী পেট্রগ্রাড এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় । বলশেভিক নেতৃত্বদের হতাশ করে দু একটা শ্রমিক আন্দোলন এবং স্ট্রাইকের মাধ্যমেই জার্মানিতে বিপ্লবের অবসান ঘটে । জার্মান শ্রমিক শ্রেণী ( প্রলেতারিয়েত ) রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিপ্লব ঘটাতে ব্যর্থ হয় । অন্যদিকে আরও কঠিন শর্তাবলি সমেত জার্মানি ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা দিয়ে সদ্যগঠিত সোভিয়েত রাশিয়ায় শান্তি চুক্তি’র বার্তা পাঠায় ।

    লেনিন যে কোন শর্তে শান্তিচুক্তি মেনে নিতে চাপ দেন এইবার প্রায় সমস্ত অন্যনপায় কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা লেনিনের প্রস্তাবের সমর্থনে মত প্রকাশ করেন । রাশিয়া যে কোন শর্তে শান্তি চুক্তি মেনে নেওয়ার আদেশ দিয়ে জর্জি ছিছেরিন এবং লেভ কারাখানের নেতৃত্বে নূতন প্রতিনিধি মণ্ডলী পাঠায় । ট্রটস্কির পক্ষে এই অবমাননাকর চুক্তি স্বাক্ষর করা সম্ভব ছিলোনা । অবশেষে ১৯১৮ সালের ৩রা মার্চ ব্রিস্ট -লিটভস্ক শান্তি চুক্তি সাক্ষরিত হয় । মাত্র এক মাস পূর্বে ট্রটস্কির প্রত্যাখ্যাত চুক্তির শর্তাবলীর তুলনায় আরও অবমাননাকর চুক্তি সদ্যগঠিত বিপ্লবী ( ! ) সোভিয়েত রাশিয়া সজ্ঞানে স্বাক্ষর করে । চুক্তি অনুসার লেনিনের রাশিয়া ইউক্রেন ,জর্জিয়া এবং ফিনল্যান্ডের স্বাধীন সার্বভৌমত্ব মেনে নেয় । চুক্তি অনুসার এই সমস্ত অঞ্চলগুলির ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক ,রাজনৈতিক এবং সমস্ত বিষয়ের নীতিনির্ধারণের দায়িত্ব জার্মানি এবং সেন্ট্রাল পাওয়ারের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয় । ব্রেস্ট -লিটভস্ক শান্তি চুক্তি সাক্ষরের মাধ্যমে সদ্য গঠিত সোভিয়েত রাশিয়া বেঁচে যায় ঠিকই,অথবা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বীভৎসতা থেকে রাশিয়া বেরিয়ে আসে তথ্য গত ভাবে তা সত্য হলেও ,নেস্টর মাখনো বা অন্যান্য বিপ্লবী দলগুলি যারা ইউক্রেনের ভেতরে এবং আন্তর্জাতিক স্তরে বিভিন্ন দেশে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বিপ্লবী যুদ্ধ সংগঠিত করছিলেন । ক্ষুদ্র ভূমিহীন চাষিদের ,শ্রমিকদের সংবদ্ধ করে জার্মানি এবং জাতীয়তাবাদী দলগুলির সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে জীবন মৃত্যুর লড়াই লড়ছিলেন তাদের কাছে এ এক একতরফা আত্মসমর্পণের দুর্বল সিধান্ত। নেস্টর মাখনোর মতে ব্রিস্ট -লিটভস্ক শান্তি চুক্তি কেবলমাত্র রাশিয়ার মুল্ভুখন্ডের সোভিয়েতের স্বার্থে বাকী স্বাধীনতাকামী জনতার বিপ্লবী প্রতিরোধকে ক্ষমতাবান শত্রুর সামনে কচুকাটা হওয়ার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার চুক্তি।

    অন্যদিকে রোজা লুক্সেমবার্গ তীব্র ভাষায় লেনিনের এই জার্মানি সাম্রাজ্যবাদের কাছে আত্মসমর্পণের বিরোধিতা করেন,লুক্সেমবার্গ লেখেন 'The Treaty of Brest-Litovsk was in reality nothing but the capitulation of the revolutionary Russian proletariat to German militarism. Admittedly Lenin and his friends deluded neither themselves no other about the facts. They candidly admitted their capitulation. Unfortunately, they did deceive themselves in hoping to purchase a genuine respite at the price of this capitulation, to enable them to save themselves from the hellfire of the world war by means of a separate peace. They did no take into account the fact that the capitulation of Russia at Brest-Litovsk meant an enormous strengthening of the imperialist Pan-German policy and thus a lessening of the chances for a revolutionary rising in Germany. ‘

    সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিস্থিতি ,ভিন্ন দেশ এবং একে ওপরের সাথে অপরিচিত হওয়া স্বত্বেও নেস্টর মাখনো এবং রোজা লুক্সেমবার্গের মতের মধ্যে অদ্ভুত সাযুজ্য - মাখনো মনে করতেন ব্রেস্ট -লিটভস্ক চুক্তি ইউক্রেনের বিপ্লবী পরিস্থিতির সঙ্গে বলশেভিক বিশ্বাসঘাতকতা । সদ্য গড়ে ওঠা বিপ্লবী শক্তিসমূহকে জার্মান সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আক্রমণের সামনে উন্মুক্ত করে দেওয়া । ইউক্রেনের চাষিদের সদ্য প্রাপ্ত স্বাধীনতা এবং জমির অধিকার পুনরায় কুলাক সম্প্রদায়ের দাসত্বে পরিবর্তনের রাস্তায় ফিরে যাওয়া। অন্যদিকে রোজা লুক্সেমবার্গ লিখলেন ‘ In fact the ‘peace’ of Brest-Litovsk is an illusion. Not for a moment was there peace between Russia and Germany. War has continued since Brest-Litovsk up to the present time, but the war is a unique one, waged only by one side: systematic German advance and tacit Bolshevik retreat, step by step. Occupation of the Ukraine, Finland, Lithuania, Estonia, the Crimea, the Caucasus, larger and larger tracts of the southern Russia – this is the result of the ‘state of peace’ since Brest-Litovsk.'

    লেনিনের প্রবল সমর্থনে ১৯১৮ সালের ৩রা মার্চ জার্মানি এবং সেন্ট্রাল পাওয়ারের সাথে অবমাননাকর ব্রিস্ট -লিটভস্ক শান্তি চুক্তি সাক্ষরিত হয় আর ১১ই নভেম্বর ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটে । জার্মানি এবং সেন্ট্রাল পাওয়ার প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত হয় । অটোম্যান সাম্রাজ্য ছিন্ন বিছিন্ন করা হয় । জার্মানি ভার্সাই চুক্তির অবমাননা মেনে নিতে বাধ্য হয় । অর্থাৎ যদি মাত্র আট মাস বলশেভিক একাধিপত্যের বাসনার পরিবর্তে বিভিন্ন বিপ্লবী শক্তির সন্মিলিত প্রতিরোধ বজায় রাখতে পারলে হয়ত রাশিয়ায় পরবর্তী তিন বছরের রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতির উদ্ভবই হতোনা । কেবলমাত্র প্রথাগত রেড আর্মির একাধিপত্যের পরিবর্তে হয়তবা গড়ে উঠত বিভিন্ন জনজাতির নিজস্ব আত্মরক্ষা বাহিনী । হয়ত আমলাতন্ত্র এবং এক পার্টির আধিপত্যের পরিবর্তে প্রতিষ্ঠিত হত প্রকৃত সোভিয়েত । হয়ত ইউরোপের ইতিহাস অন্যভাবে লেখা হত । পরবর্তীতে ১৯১৮ সালে মস্কোয় লেনিনের সাথে নেস্টর ইভানোভিচ মাখনোর যখন সাক্ষাত হয় তখন এই প্রসঙ্গক্রমে লেনিন বাস্তব পরিস্থিতির বাধ্যকতার কথা উল্লেখ করেন । মাখনো তাঁকে দক্ষিণ ইউক্রেনের বাস্তব পরিস্থিতির বিষয়ে এবং তার নিজের বাহিনীর সাহায্যে জাতীয়তাবাদী শক্তি এবং অভিজাত সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনের বিষয়ে অবগত করালে লেনিনের সংক্ষিপ্ত জবাব ছিল “ Perhaps I am mistaken,”।

    বলশেভিক রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির কাছে আত্মসমর্পণের ব্রেস্ট -লিটভস্ক শান্তি চুক্তির ফল হয়েছিল সুদূর প্রসারী । শ্বেত শক্তির হাতে সেই সময়ের উন্নত দেশ এবং শক্তিশালী শ্রমিক সংগঠনের ২৬০০০ কমিউনিস্ট কচুকাটা হয় । তুরস্ক ,ককেশাস ,এবং জার্মানির কমিউনিস্ট পার্টি গুলির মাজা ভেঙ্গে যায় । বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক বিপ্লবের সম্ভাবনার ইতির সূচনা ব্রিস্ট -লিটভস্ক ।

    মাখনোর আন্দোলনের প্রাথমিক মৃত্যু এবং পুনঃজাগরণ ঃ-

    আমরা পূর্বেই দেখেছি ১৯১৮ সালের ফ্রেব্রুয়ারি মাসে ট্রটস্কি শান্তি চুক্তি প্রত্যাখ্যানের মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে জার্মানি ইউক্রেনের অধিকাংশ এলাকা দখল করে নেয় । একই সাথে মাত্র কিছু সপ্তাহের শাসন চালানোর অধিকার দেওয়ার পর জার্মান বাহিনী সিম্যান পেটলিউরা’র জাতীয়তাবাদী সরকারকে উচ্ছেদ করে। সিম্যান পেটলিউরা’র জায়গা দখল করে জার্মানির পুতুল ,রাশিয়ান-ইউক্রেনিয়ান জেনারেল স্করোপাডস্কি । জেনারাল ইউক্রেনে প্রায় রাজতন্ত্রসুলভ শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করেন, এক আদর্শ এশিয়াটিক জার্মান কলোনি । জার্মানির প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় জেনারেল স্করোপাডস্কি 'হেটমান' নামের ঐতিহাসিক ইউক্রেনিয়ান কসাক পদবি গ্রহণ করে এক নূতন সাম্রাজ্য প্রতিস্থার স্বপ্ন বুনতে শুরু করেন । ব্রিস্ট -লিটভস্ক শান্তি চুক্তি পুরো ইউক্রেনকে জার্মান এবং বাকি সেন্ট্রাল পাওয়ার এর সামনে উন্মুক্ত করে দেয় । সমস্ত বিপ্লবী গোষ্ঠী কচুকাটা হতে থাকে । বিনা প্রতিরোধে রেড গার্ড পিছু হটতে থাকে ।

    এই অস্বাভাবিক পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নেস্টর ইভানোভিচ মাখনো একাধারে তিন ফ্রন্টে অসম লড়াই চালাতে থাকেন । একদিকে আধুনিক অস্ত্রে বলীয়ান আগুয়ান প্রফেশনাল জার্মান অস্ট্রিয়ান বাহিনী অন্যদিকে জেনারেল স্করোপাডস্কি বা 'হেটমানের জাতীয়তাবাদী কুলাক এবং কসাক বাহিনী ,সাথে সাথে চলতে থাকে রাশিয়ান ভূস্বামীদের জমি অধিগ্রহণ এবং ভূমিহীন কৃষক ,দাস কৃষি শ্রমিকদের মধ্যে ভূমি বণ্টনের বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ড। ইউক্রেনের ভূমিহীন কৃষক মাখনোকে ১৬৭০এর জার বিরোধী ইউক্রেন বিদ্রোহের ঐতিহাসিক নায়ক 'স্টেনকা রাযিনের' স্থলাভিষিক্ত করতে থাকে । মাখনো তাদের যুগ যুগ ধরে পালিত ' নিজস্ব এক টুকরো জমি এবং স্বাধীনতার ’’ স্বপ্ন বাস্তবায়িত করছেন । কিন্তু সংগঠিত এবং আধুনিক অস্ত্রে বলীয়ান শত্রুর আক্রমণের সামনে মাখনোর বাহিনী ক্রমে পিছু হটতে থাকে । এক তরফা যুদ্ধে রাশিয়ান রেড গার্ড বিনা যুদ্ধে ক্রমাগত পিছিয়ে যেতে থাকে । বসন্ত কালের মধ্যে অধিকাংশ ইউক্রেন স্করোপাডস্কি 'হেটমান' এবং জার্মান অস্ট্রিয়ান বাহিনীর হাতে চলে যায় । রোজা লুক্সেমবার্গের আশঙ্কা সত্যে প্রমাণিত হতে থাকে যে আপাত শান্তির আকাঙ্ক্ষায় বিপ্লবী সত্তার জলাঞ্জলি দিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর সেই শান্তি প্রকৃত অর্থে দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধে পরিনত হয় । ১৯১৭ সালের এপ্রিল মাসে ঘোষিত লেনিনের ‘এপ্রিল থেসিস’র প্রতিটি শব্দ উল্টে যেতে থাকে । বিপ্লবের ভ্রূণ হত্যা ঘটতে থাকে অসম্ভব দ্রুততায় ।

    এই পরিস্থিতিকে ক্যামু তার ‘The Rebel’ গ্রন্থে লিখলেন ‘ It can be said that , at this point ,freedom definitely died. From the rule of the masses and the concept of the proletarian revolution we first pass on to the idea of a revolution made and directed by professional agent . The restless criticism of the State is then reconciled with the necessary…….After that, it is logical that the autonomy of the Soviets should be contested ,MAKHNO BETRAYED,and the sailors of Kronstadt crushed by the party’ Albert Camus- The Rebel ( p 198)

    বাধ্য হয়ে মাখনো তার সদ্য গড়ে ওঠা গেরিলা বাহিনী ছোট ছোট টুকরোয় ভেঙ্গে দেন । অস্ত্র লুকিয়ে ফেলে কৃষকদের নিয়ে গড়ে ওঠা গেরিলা বাহিনীর সদস্য কৃষকেরা গ্রামে গিয়ে কৃষিকাজে লেগে পড়েন যেন কিছুই হয়নি । অপেক্ষা করতে থাকেন পরবর্তী সঙ্কেতের । মাখনোর ভাই জার্মানির সামরিক শক্তির হাতে ধরা পরেন । মাখনো ভলগা পেরিয়ে বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ অভিজ্ঞতার অবশেষে ১৯১৮ সালের ৩ অথবা ৪ই জুন মস্কো এসে পৌছান। মাখনোর হাতে গড়ে তোলা ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের জনতার শাসনের প্রাথমিক মৃত্যু ঘটে ১৬ মাসের মাথায় ।

    মাখনোর ইউক্রেনে শ্বেত সন্ত্রাস গুঁড়িয়ে দেওয়ার কাহিনীটি শুরু হবে ১৯১৮সালের জুলাই মাস থেকে… পরের পর্বে ( যদি পাঠক উৎসাহিত বোধ করেন )
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৪ মার্চ ২০১৬ | ২০৮০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Debabrata Chakrabarty | 212.142.91.45 (*) | ০৫ মার্চ ২০১৬ ০১:২২55961

  • রঞ্জন দা , হ্যা ১৯১৮ সালের জুন মাসের মাঝা মাঝি ক্রেমলিন প্রাসাদে লেনিনের সাথে মাখনোর প্রায় ঘণ্টা খানেকের মীটিং হয় , সেই মীটিংএ বলশেভিক পার্টির অতি উচ্চ পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন - এ বিষয়ে পরের পর্যায়ে বিস্তারিত লেখা যাবে ,পরবর্তীতে মাখনো বিস্তারিত লিখেছেন অন্যান্য রেকর্ড বর্তমান । সেই মীটিং এর কথোপকথনের সামান্য এক অংশ "
    Lenin wanted to know what the Ukrainian peasants in Makhno's area made of the slogan "All power to the local Soviets." Makhno replied that they took it literally, assuming they were to have complete control of all affairs affecting them, to which he added that he felt this was the correct interpretation. In response, Lenin said: "In this case, the peasants from your area are infected wifh anarchism." Makhno responded: "Do you think that is bad?" Lenin replied: "I did not say that. On the contrary, it may be to the good, for it would speed up the victory of communism over capital and its authority."

    মিটিং শেষ হলে লেনিনের নির্দেশে মাখনোর ভুয়া পাসপোর্ট তৈরি করা হয় এবং সেই পাসপোর্ট নিয়ে জুন মাসের শেষের দিকে মাখনো জার্মান অধিকৃত ইউক্রেন ফিরে যান । রাশিয়াতে 'দিননাথ বাত্রা' এক আধটা নয় ভুরি ভুরি । তাই শিশু পাঠ্যে পুষ্পক বিমানের নকশা দেওয়া থাকে এবং তাই জেনেই প্রজন্ম বেড়ে ওঠে ।
  • | 127.194.5.193 (*) | ০৫ মার্চ ২০১৬ ০২:২১55955
  • ক্ক!
  • কল্লোল | 125.185.146.226 (*) | ০৫ মার্চ ২০১৬ ০৩:০২55956
  • সাংঘাতিক।
  • Debabrata Chakrabarty | 212.142.91.117 (*) | ০৫ মার্চ ২০১৬ ০৩:২৯55957
  • কল্লোল দা এবং জ ঃ- আপনাদের দু জনাকেই ধন্যবাদ - কিন্তু সংক্ষিপ্ত কমেন্ট চলবেনা ।
  • ranjan roy | 24.99.93.122 (*) | ০৫ মার্চ ২০১৬ ০৩:৫৮55958
  • ছোটবেলায় মস্কোর প্রগতি প্রকাশনালয় প্রকাশিত কিশোর উপন্যাস , আনাতোলি রীবাকোভের "ছোরা" পড়ে জেনেছিলাম "মাখনো ডাকাত" ! (ইদানীং ওমনাথের সৌজন্যে ডিজিটালাইজড কপি পড়া যাচ্ছে) । জানতামই না যে উনি য়ুক্রাইনীয় বিপ্লবী ও লেনিনের সঙ্গে চর্চা করতে এসেছিলেন।
    দ্বিতীয় পর্বের জন্যে অপেক্ষায় রইলাম।
  • | 127.194.11.50 (*) | ০৫ মার্চ ২০১৬ ০৪:১১55962
  • দেবব্রত, আমি মাঝে মধ্যে স্যটায়ার বুঝতে ভুল করি। "রাশিয়াতে দিননাথ বাত্রা' এক আধটা নয় ভুরি ভুরি", কথাটার মানে কি এই যে "মাখনো ডাকাত" কাহিনী কোনো রাশিয়ান দীননাথ বাত্রা লিখেছিলেন, আর সেটা ভুল ইতিহাস জেনেবুঝেই বাচ্চাদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল?
  • Debabrata Chakrabarty | 212.142.91.45 (*) | ০৫ মার্চ ২০১৬ ০৪:৫৯55963
  • হ্যা ঠিক তাই । এই দিননাথ বাত্রা দের চাপ মায়াকভস্কির আত্মহত্যার অন্যতম কারন । আমাদের দেশে যেমন পুষ্পক বিমানের নকশা পাওয়া যায় । পাকিস্তানের ইতিহাসে যেমন ঈপির ফকির কে দেশদ্রোহী বলা হয় অথবা ইতিহাসের বই থেকে মুছে ফেলা হয় । ডাকাতের সাথে লেনিন মিটিং করবেন , পাসপোর্ট বানিয়ে দেবেন ,অস্ত্র সাহায্য করবেন তিন তিন বার বলশেভিক কেন্দ্রীয় কমিটির হোমরা চোমারা নেতৃত্ব লিখিত রাজনৈতিক এবং মিলিটারি চুক্তি করবেন -এ কেমন ধরনের ডাকাত ?

    গরবাচভ জমানায় রাশিয়ান মহাফেজখানা গবেষকদের জন্য উন্মুক্ত করে দিলে দীননাথ বাত্রা'রা সামনে আসছেন । এই ডাকাতের নামে মুদ্রা ( কয়েন ) ,স্ট্যাম্প প্রকাশিত হচ্ছে । মিউসিয়াম খুলছে । গবেষণার জন্য বিশেষ চেয়ার নিযুক্ত হচ্ছে । রাজপথে পূর্ণাবয়ব মূর্তি বসছে । বড়ো সড় ডাকাত হবে নিশ্চয়ই ।
  • সুব্রত | 69.92.144.154 (*) | ০৫ মার্চ ২০১৬ ০৬:১৭55964
  • পরের সংখ্যার অপেক্ষায় । এত বড় একটা ঘটনাবহুল সময়ের ইতিহাস একপাতায় চেপে ঢোকানো তে চাপটা মাথায় পড়লো যথেষ্ট ।

    তবে একটু সূত্র পেলাম তোমাড় আজকের মেসেজটার। পরের পার্ট দুটো সেশ করার পর এই প্রেক্ষিতে ইন্ডিয়ান ক্যমুনিস্ট পার্টির শুরু থেকে অবস্থানের ঠিক/বেঠিকের ব্যাখাটাও চাই ।
  • Debabrata Chakrabarty | 212.142.91.45 (*) | ০৫ মার্চ ২০১৬ ০৭:২৩55965
  • সুব্রত , আমি কি আর ইতিহাসবিদ ? তবে সারা বিশ্বের কমিউনিস্ট পার্টির ঠিকানা তৃতীয় কংগ্রেসের পরেই মোটামুটি ঠিক হয়ে যায় ( দু একটা দেশ বাদ দিলে ) ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি তার ব্যতিক্রম নয় । ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যখন হিটলার রাশিয়া আক্রমণ করেনি তখন ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির স্লোগান ছিল ' এ যুদ্ধ সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ ব্রিটেন কে এক ইঞ্চি সহায়তা নয় ' আর যখন ১৯৪২ সালে হিটলার রাশিয়া আক্রমণ করে সেই স্লোগান পাল্টে হয়ে গেলো ' এ যুদ্ধ পিপলস ওয়ার ' সুতরাং ব্রিটেন কে সমর্থন করো যাতে সোভিয়েত রাশিয়া বাঁচে। ১৯৪২ এর ভারতছাড় আন্দোলনে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি আন্দোলনে যোগদান না করে প্রকাশ্যে ব্রিটিশ কে সহায়তা এবং সাহায্য করেছে । ১৯৪১ এর ডিসেম্বর মাস্যা ব্রিটিশ কমিউনিস্ট লিডার Harry Pollitt, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিকে কমিন্তার্নের নির্দেশ পাঠায় যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে হিটলারের যুদ্ধ কে পিপলস ওয়ার হিসাবে গণ্য করতে হবে , রাতারাতি সিপিআই নেতৃত্ব Harry Pollitt,এর লাইন ফলো করে গন আন্দোলন এবং ব্রিটিশ সমর্থন করতে শুরু করে দেয় ।

    " In a couple of weeks, the All India Students’ Federation, one of the mass organisations under the Communist control at that time, met for its annual conference at Patna, and from there the Communists initiated the public campaign for People’s War." " the Indian Communists did not at that time go as far as the followers of M.N.Roy did in openly working with the British Government’s war efforts in this country. This distinction was, however, blurred to a large measure in the public eye, when the ‘Quit India’ struggle suddenly came like a mighty avalanche sweeping over the entire country.'

    ফেসবুকে দেখবে বামেরা আর.এস.এস যে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন করেনি এই নিয়ে বিশেষ কিছু বলেনা ( আর যারা বলে তারা ইতিহাস জানেনা ) কারন নিজেরাই ১৯৪২ এর আন্দোলনে ভাগ নেয়নি ।
  • | 127.194.2.243 (*) | ০৫ মার্চ ২০১৬ ০৮:০৮55959
  • বড় কমেন্ট করতে গেলে প্রচুর পড়তে হবে। ইতিহাস, বিশেষত ঐ সময়ের ইতিহাস, আমার জানা নেই।

    অপ্রাসঙ্গিক হলেও, আমি রাজনীতি-চর্চার যেটুকু চলমান ইতিহাস দেখেছি, তার বিচারে মোটের ওপর লেনিনপন্থি। ফলে লেনিনের বিরুদ্ধে যে কোনো তথ্যসমৃদ্ধ লেখা আমাকে টানে, কেননা আমি pet বিশ্বাসে বিশ্বাস রাখি না।
    কিন্তু এইরকম বড় প্রেক্ষাপটে লেনিনের ফলিত রাজনীতির নৈতিক সমালোচনা যে কোনো লেনিনপন্থির খুব প্রিয় হবার কথা, এবং লেনিনকে কোনোক্রমে বাঁচানোই তাঁর বা তাঁদের একমাত্র ইতিহাস চর্চার উদ্দেশ্য না হবার কথা।
    অপ্রাসঙ্গিক, তবু মনে হল তাই লিখে গেলাম।
  • ranjan roy | 24.96.105.163 (*) | ০৫ মার্চ ২০১৬ ১০:৫৭55960
  • জ এর দৃষ্টিকোণকে খুব বড় করে ক।
  • কল্লোল | 111.63.95.122 (*) | ০৬ মার্চ ২০১৬ ০২:২৩55967
  • রাশিয়ার ইতিহাস নিয়ে বিশেষ কোন পড়াশুনা নেই। তাই এই লেখাটি নিয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকলাম। মনোযোগী ছাত্রের মতো পড়ছি ও বিস্মিত হচ্ছি।
    মাঝে মাঝে ঝিলিক দিচ্ছে বিতর্ক।
    "Lenin wanted to know what the Ukrainian peasants in Makhno's area made of the slogan "All power to the local Soviets." Makhno replied that they took it literally, assuming they were to have complete control of all affairs affecting them, to which he added that he felt this was the correct interpretation. In response, Lenin said: "In this case, the peasants from your area are infected wifh anarchism." Makhno responded: "Do you think that is bad?" Lenin replied: "I did not say that. On the contrary, it may be to the good, for it would speed up the victory of communism over capital and its authority." এটা তো সাংঘাতিক কৌতুহলোদ্দীপক। লেনিন নৈরাজ্য/নৈরাষ্ট্রবাদ নিয়ে বলছেন - এটা হয়তো ভালো, কারন এটা পুঁজি ও ক্ষমতার বিরুদ্ধে সাম্যবাদের জয়কে তরান্বিত করবে। খুবই কৌতুহলোদ্দীপক।
    যেকোন কারনেই হোক লেনিনরা সমাজতান্ত্রিক "রাষ্ট্র" নিয়ে খুব মাতমাতি করেছেন। যেটা আমার ধারনা ভুলের শুরু। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় রাশিয়ার বিপ্লবকে রাশিয়াতেই আটকে রাখার সিদ্ধান্তও আরেকটা ভুল। হতে পারে, লেনিনরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। আর যুদ্ধ চাইছিলেন না। একটু হাঁফ ছাড়তে মন চাইছিলো রাশিয়ার বিপ্লবের পর।
    তবে মাখানোর All power to the local Sovietsএর ব্যখ্যা, রোজাভার রাষ্ট্রবিহীন গণতন্ত্রের কাছাকাছি। এটাও বেশ মজার।
  • T | 24.100.142.98 (*) | ০৬ মার্চ ২০১৬ ০৩:৩৬55968
  • পড়লাম। উপস্থাপনা আরো একটু ভালো হ'তে পারত মনে হয়।
  • ranjan roy | 24.99.43.122 (*) | ০৬ মার্চ ২০১৬ ১২:২৮55966
  • তাই সুভাষ বোস হয়ে গেছলেন কুইসলিং আর তৃতীয় আন্তর্জাতিকের চাপে কমিউনিস্ট পার্টির কাজ হয় দুর্ভিক্ষের ত্রাণ ও রিলিফের লাইনে র‌্যাশন বিতরণে সাহায্য।
    আর বামেদের বিরুদ্ধে প্রচার হত দেশদ্রোহী বৃটিশের চর বলে।
    এই সময়ে বামেদের তীব্র মানসিক যন্ত্রণা সুকান্তর একটি কবিতায় ধরা আছেঃ

    ইতিহাস জানি নীরব সাক্ষী তুমি
    আমরা চেয়েছি মুক্ত স্বদেশভূমি।
    কুয়াশা কাটছে কাটবে আজ কী কাল,
    ধুয়ে ধুয়ে যাবে কুৎসার জঞ্জাল।
    ততদিনে প্রাণ দেব শত্রুর হাতে
    মুক্তির ফুল ফুটবে সে সংঘাতে।
    দেব প্রাণ দেব মুক্তির কোলাহলে,
    জীন ডার্ক আর সোক্রাতিসের দলে।
    তুমি কোন দলে জিজ্ঞাসা উদ্দাম,
    গুন্ডার দলে আজও লেখাও নি নাম?
    ইতিহাস নেই অমরত্বের লোভ,
    আজ রেখে যাই আজকের বিক্ষোভ।।
    ====================
    চেকা ও ফেলিক্স জেরজিনস্কি নিয়েঃ
    ১) কেউ খেয়াল করেছেন যে অস্ত্রোভস্কির " হাউ দ্য স্টিল ওয়জ টেম্পার্ড" উপন্যাসে একজায়গায় বিশ্রামরত লালফৌজের সৈন্যরা নাচছে-- কসাকদের নাচ, পোলকা ইত্যাদি। একজন সম্ভবতঃ পাভেল অ্যাকর্ডিয়ন বাজাচ্ছে। একটি জনপ্রিয় গানের সুর বেজে উঠতেই উদ্দাম নৃত্য শুরু হলঃ
    Ekh, little apple
    whithers away.
    Got taken by Cheka
    that's where you stay.
    ২) লেনিনের পূর্বদেশগুলো নিয়ে থিসিস (রয়-লেনিন) ও অন্যান্য লেখাপত্তরের সংগ্রহে আছে স্তালিন ও জেরজিন্স্কি গিয়ে ককেশাস ইত্যাদি এলাকায় গণবিক্ষোভ ডান্ডা চালিয়ে দমন করবার চেষ্টা করলে লেনিনের বকাবকি।
    ৩)জেরজিনস্কির চিঠিপত্তরের একটি সংগ্রহ মস্কো থেকে প্রকাশিত হয়েছিল ইংরেজিতে। তাতে মানুষ জেরজিনস্কি ফুটে উঠেছেন জেল থেকে বেরিয়ে নিজের ছোট্ট ছেলেকে লেখা চিঠিতে। আবার একটি চিঠিতে দেখা যাচ্ছে যে আপন বোন পর্য্যন্ত ফেলিক্সের নেতৃত্বে চেকার কথিত লাল সন্ত্রাসের জন্যে ভাইয়ের দিক থেকে ঘৃণায় মুখ ফিরিয়েছেন।
    ৪) উৎপল দত্তের " লেনিনের ডাক" (১৯৭০)নাটকে জেরজিন্স্কির আদর্শায়িত চিত্রণ ও লাল সন্ত্রাসের ওকালতি।
  • Debabrata Chakrabarty | 11.39.38.7 (*) | ০৭ মার্চ ২০১৬ ০১:৫৮55969
  • রঞ্জন দা , রাশিয়ার ইতিহাস আপনার গুলে খাওয়া আছে দেখছি , আমার ফেলিক্স জেরজিনস্কি'র চিঠি পত্র নিয়ে প্রকাশিত বই এবংউৎপল দত্তর লেনিনের ডাক নাটকে জেরজিনক্সি বিষয়ক কোন ধারনাই ছিলোনা ।

    কল্লোল দা ঃ- আপনি যদি ১৯১৭'র লেনিনের রাষ্ট্র ও বিপ্লব এবং এপ্রিল থেসিস পরেন এবং লেখকের নাম যদি উল্লেখ না থাকে তবে আপনার মনে হবে অ্যানারকিস্ট টেক্সট পড়ছেন , রাষ্ট্র ও বিপ্লব প্রায় বাকুনিনের বই বলে মনে হবে - কিন্তু ১৯১৮'র লেনিন সম্পূর্ণ আলাদা । নিজেই নিজের থেসিস কন্ট্রাডিক্ট করছেন ।

    ১৯১৮ সালের ৩রা মার্চ সাক্ষরিত ব্রেস্ট লিটভস্ক চুক্তির কথা আমরা অনেকেই জানিনা কারন আমাদের কাছে খুব একটা প্রাসঙ্গিক নয় কিন্তু এই চুক্তির ফলে এবং তার প্রভাবে জার্মানি ,ফিনল্যান্ড ,হাঙ্গেরি ইত্যাদি দেশে কমিউনিস্ট আন্দোলন আর বিপ্লব ঘটানোর মত পরিস্থিতিতে আসতেই পারেনি ।
  • সম্পত | 11.39.38.211 (*) | ০৭ মার্চ ২০১৬ ০৪:২৪55970
  • লেখাটা বেশ তথ্যবহুল,মূলত এই ভদ্রলোক মাখানো বিষয়ে কিছুই জানতাম না । কিন্তু আমার প্রস্ন টা অন্য , এই যখন ভোটের আগে সিপিএম / কংগ্রেস সবে একটা জোট তৈরি হচ্ছে তখন এই লেখা পোস্টের উদ্দেশ্যটা ঠিক কি ?
  • sinfaut | 74.233.173.181 (*) | ০৭ মার্চ ২০১৬ ০৫:৩৪55971
  • টেলুরিক কারেন্ট এর বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা রিসেপ্টারগুলোর সঙ্কেতকে সিমসুম এর নিজস্ব কম্পনের এর সাথে অ্যালাইন করে নতুন ওয়ার্ল্ড অর্ডারের প্রতিষ্ঠা। উদ্দেশ্য তো স্পষ্ট।
  • sompot | 11.39.37.226 (*) | ০৭ মার্চ ২০১৬ ০৬:০৩55972
  • দেখুন ওইসব আন্দারগ্রাউন্ড কারেন্ট ফারেন্ট বুঝিনা, তবে এমন একজনের নাম নিয়ে গপ্প ফাঁদা হয়েছে তাকে আমরা চিনিনা, সেই গপ্পের আসল উদ্দেশ্য লেনিন কে চালাকির সাথে গাল পাড়া। তার পর কমেন্ট সুকান্ত ,বামপন্থী নাকি ৪২এ ঘাস কেটেছে , জাতীয়তাবাদ সুড়সুড়ি। এ গপ্পো পড়তে ভালো লাগলেও অন্য উদ্দেশ্য বিষয়ে আমি নিশ্চিত । কিন্তু ভোটের পরে লিখলে কি অসুবিধা ছিল ?
  • উদ্দেশ্য | 214.85.191.30 (*) | ০৭ মার্চ ২০১৬ ০৬:২০55973
  • উদ্দেশ্য খুব পরিস্কার,মমতাকে আরও ২৯ বছর গদিতে রাখা।
  • চ্যাটাং চ্যাটাং | 125.112.74.130 (*) | ০৭ মার্চ ২০১৬ ০৬:২২55974
  • পঃবঙ্গের লোকে এই ব্লগ পড়ে ভোট দেবে বলছেন?
  • খটাং | 214.85.191.30 (*) | ০৭ মার্চ ২০১৬ ০৬:২৬55975
  • অবশ্যই। ৪২ সালে বামেরা ঘাস কাটছিল শুনলে পোচ্চিম বঙ্গের রেগে টং হয়ে যাবে।
  • খট | 188.162.193.233 (*) | ০৭ মার্চ ২০১৬ ০৬:৪৯55976
  • কমরেড লেনিনের বিরুদ্ধে কুৎসামূলক অপপ্রচার মানছি মা মানব না।
  • Debabrata Chakrabarty | 212.142.76.208 (*) | ০৮ মার্চ ২০১৬ ০৩:০৭55978
  • সম্পত বাবু ঃ- এই লেখাটা বিশুদ্ধ আক্যাডেমিক লেখা - মাখনো কে কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসাবে ধরে সেই সময়ের ইতিহাস কে একটা বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা মাত্র । অবশ্যই তথ্য ভিত্তিক এবং কিছুটা গবেষণার ফল । লেখাটি প্রায় ৪০০০০ শব্দের , এই পর্যায়ে মাত্র ৪৫০০ -৫০০০ শব্দ কেটে কুটে প্রকাশ পেয়েছে - অনেকেই সুচিন্তিত মতামত , তথ্য দিয়েছেন ,আমিও দু একটি মতামত দিয়েছি যাতে লেখাটি এক তথ্য সমৃদ্ধ ইতিহাস হয়ে উঠতে পারে । উদ্দেশ্য হিসাবে এইটুকুই মাত্র । গুরুর সাইটে এই ছোট্ট লেখা ভোটে প্রভাব ফেলবে এটা একটু কষ্ট কল্পনা । আপনিও মতামত দিতে পারেন ,প্রশ্নও রাখতে পারেন । হয়ত নূতন কোন তথ্য উঠে আসবে ।
  • nili | 212.142.103.38 (*) | ০৮ মার্চ ২০১৬ ০৬:২৩55977
  • অজানা ইতিহাস ,পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম । কিন্তু যদি তথ্য সূত্র দেন তাহলে আরো ভালো হয় । wiki তে দেখলাম আপনার লেখার পরে ,কিছু জানলাম কিছু অজানা রয়ে গেল। সত্যিই কিছুই জানতামনা । ধন্যবাদ
  • কল্লোল | 125.185.158.69 (*) | ০৯ মার্চ ২০১৬ ০২:৪০55979
  • দেবব্রত, তুমি আর এই তৃণ-বামে ঢুকো না।
    প্রত্যেকের নিজের মতো করে মতামত দেবার অধিকার আছে। তারা তাদের কাজ করুন, তুমি তোমার কাজ করো।
    পরের কিস্তির জন্য বসে আছি।
  • ranjan roy | 24.97.42.50 (*) | ০৯ মার্চ ২০১৬ ০৫:২৫55980
  • দেবব্রত,,
    না, না। আসলে পড়াশুনো শুরু করেছিলাম। কিন্তু ৪০ বছর বঙ্গের সঙ্গে সম্পর্কহীন হয়ে ছত্তিশগড়ের গাঁয়ে চাকরি করে তাতে ছেদ পড়ে। আবার শুরু করতে আগ্রহী। বিশেষ করে সেই সময় যেটা আপনি ধরেছেন।
  • সৌভিক | 24.96.123.59 (*) | ১৩ মার্চ ২০১৬ ০৩:৪৯55981
  • লেখায় এই মডেলটির উল্লেখ দেখলাম। ভাসা ভাসা কথার পরিবর্তে যদি মডেলটির সঠিক পরিচয় পাই তো ভালো হয়। উদ্ধৃত করি "মাখনো গুলাই পোল এবং বিস্তীর্ণ দক্ষিণ ইউক্রেনের গ্রামাঞ্চলে ততদিনে ভূমী বণ্টন ,কমিউন গঠন থেকে শুরু করে গেরিলা বাহিনী এবং সোভিয়েত পরিচালিত নির্বাচিত প্রতিনিধিত্বর চরম গণতন্ত্রের ব্যবস্থা স্থাপন করে ফেলেছেন । না আছে কোন পার্টি নেতৃত্ব , না প্রলেতারিয়েত ভ্যানগার্দ ,না ট্রটস্কী বুখারিনের মত তাত্বিক , না মস্কো থেকে আসা কোন নির্দেশ । এ হোল জনতার দ্বারা জনতার শাসন । বলশেভিক কেন্দ্রিকতার মডেলের পরিবর্তে জনতার গণতান্ত্রিক মডেল ।"
    বলশেভিক কেন্দ্রিকতার মডেলের বিরুদ্ধে মাখনোর গণতান্ত্রিক মডেল এর কথা বারবার আসছে, আরেকটি উদ্ধৃতি - "পুনরায় কৃষকদের সমস্যা এবং বলশেভিক কেন্দ্রিকতার মডেলের পরিবর্তে নিজস্ব গণতান্ত্রিক মডেল প্রতিষ্ঠার কাজে লেগে পরেন ।" এই মডেলটির চেহারা চরিত্র নিয়ে জানাবেন।
    ব্রিস্ট লিটভক্স চুক্তি অবশ্যই একটা আপোষ ছিল, আর একথা লেনিন লেফট উইং কমিউনিজম : অ্যান ইনফ্যান্টাইল ডিস-অর্ডার এ সরাসরি বলেছিলেন। যে কোনও আপোশের মতোই এই আপোষের কিছু মূল্য স্বাভাবিকভাবেই দিতে হয়। তার বেদনাবহ তালিকা এখানে রয়েছে। কিন্তু মূল প্রশ্নের মীমাংসা অবশ্যই করতে হবে। এই চুক্তি ঠিক ছিল না অপ্রয়োজনীয় ? এই উত্তরটা এড়িয়ে এর সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করলে সেটা কী ঠিক হয় ?
  • Debabrata Chakrabarty | 212.142.91.206 (*) | ১৩ মার্চ ২০১৬ ০৭:০৭55982
  • সৌভিক ঃ- নিশ্চয়ই বলশেভিক কেন্দ্রিকতা এবং মাখনোর মডেল উল্লেখ থাকবে পরের পর্যায়ে না হলেও তার পরের পর্যায়ে । ব্রেস্ট -লিটভস্কের যুক্তি এবং কাউন্টার যুক্তি ,ঐতিহাসিক পরিস্থিতি ,ভেতরের ইতিহাস , রিগিং ইত্যাদি । আপস না করলে কি হতে পারত অথবা আপসের ফল কি হোল ইত্যাদি বিশদে থাকবে ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে প্রতিক্রিয়া দিন