এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • বৃহন্নলা, ছিন্ন করো ছদ্মবেশ’

    Debabrata Chakrabarty লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৬ আগস্ট ২০১৬ | ২০২৭৪ বার পঠিত
  • ৪৫ বছর ধরে তিনি নিখোঁজ । ১৯৭১এর ৫-৬ আগস্টে ময়দানে যদিও কেউ নাকি তার রক্তাক্ত দেহ পরে থাকতে দেখেছিল ,মাথা কেটে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল ম্যানহোলে প্রমাণ লোপের চেষ্টায় । অধ্যাপক দেবী প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি (শেল্টার) থেকে ৭১-এর চৌঠা অগস্ট রাত সাড়ে-এগারোটা নাগাদ সরোজ দত্তকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল রুণু-দেবী-তারাপদ’রা সেই থেকে পুলিশের খাতায় অথবা সরকারী মতে দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে তিনি এখনো নিখোঁজ । তিনি সেই কতিপয় বুদ্ধিজীবীদের অন্যতম যার তীক্ষ্ণ অনন্য স্বর শাসকদের কাছে আতঙ্ক -ভেঙ্গে চুরমার করে মধ্যবিত্তের সযত্নে সাজানো মিথ। আমাদের দার্শনিক ইমারত ভেঙে চুরমার করে দেবার কারিগর সরোজ দত্ত । যিনি সমর সেনের ‘In Defense of Decadents’ প্রগতিশীলতার মোড়কে ধেয়ে আসা প্রচ্ছন্ন ফ্যাসিবাদী এলিওটিজমকে চিহ্নিত করেন ১৯৩৯এ । ১৯৬৯ সেই শানিত সরোজ দত্ত যুক্তি সাজান ভারতে একই সাথে বিদ্যাসাগর , রামমোহন এর মত ব্রিটিশ শাসকের অনুগত ব্যক্তিত্ব’র সাথে মঙ্গল পাণ্ডের মূর্তি ,বীরসার মুর্তি স্থাপিত হতে পারেনা । সিপাহি বিদ্রোহের অর্থাৎ ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের শহিদদের মূর্তি স্থাপন করতে হলে সেই বিদ্রোহের সমর্থকদের মূর্তি ভাঙা দরকার।

    সরোজ দত্তর নৈতিক প্রশ্রয়ে বা তাত্ত্বিক আস্কারায় নকশাল তরুণরা যে কালাপাহাড়ি তাণ্ডব চালিয়েছিল, তার ফলেই অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতকের তথাকথিত মনীষীদের ধুপ-ধুনো জ্বালিয়ে পুজো করার বদলে যথার্থ মূল্যায়নের আগ্রহ শিক্ষিত বাঙালি সমাজে তৈরি হয়। সেই সঙ্গে সমগ্র বঙ্গীয় রেনেসাঁ বা নবজাগৃতির পুনর্মূল্যায়নের তাগিদও সৃষ্টি হতে থাকে। বিনয় ঘোষের মতো নিষ্ঠাবান গবেষক এই মূল্যায়নের কাজে হাতও দেন এবং নবজাগরণ সম্পর্কে তাঁর আগের ধারণা সম্পূর্ণ বর্জন করেন। আর রণজিৎ গুহের নেতৃত্বে যে নিম্নবর্গীয় ইতিহাস রচনার ধারা সূচিত হয়, তার প্রেরণা সমসাময়িক ইতিহাসে ওই নকশাল রাজনীতিরই চ্যালেঞ্জ। সরোজ দত্ত যার পথিকৃত ।

    সরোজ দত্ত ১৩২১ বঙ্গাব্দের ২১ ফাল্গুন বাংলাদেশের নড়াইল জেলার দত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম হৃদয়কৃষ্ণ দত্ত, মা কিরণবালা দত্ত। নড়াইলের ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করার পর ১৯৩০ সালে কলকাতায় আসেন স্কটিশ চার্চ কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়তে। ওই একই কলেজ থেকে ১৯৩৬ সালে ইংরেজি বিভাগে স্নাতক হন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পাঠক্রমে ভর্তি হন। তার গোড়ার দিকের ঘটনাবলী আর দশটা লোকের মতোই! জন্মেছেন, পড়েছেন, পাশ করেছেন , চাকরি করেছেন, সংশয়েও ভুগেছেন। কিন্তু আর দশজনের মতো সেই তমসার তামাশায় তিনি জীবনটাকে বিলীন হতে দেননি! ভেঙে বেরিয়ে এসেছেন সমাজ ও রাষ্ট্র নির্ধারিত বৃত্ত- ‘হেসে ওঠে দস্যু কবি অক্রোধের ক্লীবলজ্জা ছেড়ে, তামসীর তৃপ্তির দিন সাঙ্গ হলো তমসার তীরে’!

    কলেজে থাকতেই কমিউনিস্ট পার্টির গণসংগঠনে যুক্ত হন, জেল খাটেন। তবে শিল্প-সাহিত্যের সঙ্গে তার ওঠবসটা নিয়মিতই ছিল। ১৯৩৮ সালে এমএ পাস করার পর যোগদান করেন প্রগতি লেখক সঙ্ঘে। এই সময় থেকেই সরোজ দত্তর কবিতা প্রকাশ হতে শুরু করে। ১৯৩৯ সালে সহ-সম্পাদক হিসাবে যোগ দেন অমৃতবাজার পত্রিকায়। পরে কর্মী-ধর্মঘটে যোগ দিয়ে চাকরি খোয়ালে ‘পরিচয়’ ও ‘স্বাধীনতা’ পত্রিকায় সম্পাদনার কাজে যুক্ত হন। অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টি ভেঙে সিপিআইএম তৈরি হলে তিনি শেষোক্ত সংগঠনে যোগ দেন এবং দলীয় মুখপত্র ‘দেশহিতৈষী’র সম্পাদকমণ্ডলীতে যুক্ত হন। ‘শশাঙ্ক’ ছদ্মনামে তাঁর আগ্নেয় লেখাপত্র প্রকাশিত হতে থাকে। অতঃপর নকশালবাড়ি, দেশহিতৈষী থেকে দেশব্রতী এবং চারু মজুমদারের নেতৃত্বে সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী ও নেতা রূপে তাঁর বিকাশ। সরোজ দত্ত ক্রমে বামপন্থী বুদ্ধিজীবী থেকে উত্তীর্ণ হন বিপ্লবী বুদ্ধিজীবীতে, শেষে কমিউনিস্ট বিপ্লবীতে।

    কবি-ইন্টেলেকচুয়াল-সাংবাদিক সরোজ দত্ত-কে পুলিশ কেন খুন করল, এটা অনেকেই ভেবে পান না। কানু সান্যাল বা সন্তোষ রাণা-রা তো সরাসরি যুদ্ধেই অংশগ্রহণ করেছিলেন, তার পরেও তো তাদের বাঁচিয়ে রেখেছিল রাষ্ট্র। কিন্তু সরোজ দত্তর বেলায় কেন…? কেননা সরোজ দত্ত জানতেন যে বিপ্লব একটা প্যারাডাইম শিফ্ট, এবং চূড়ান্ত পর্বে সেটা মননে। সহস্র বছরের ফিউডাল সাংস্কৃতিক হেজিমনি (আধিপত্য)-কে ভেঙে নতুন পাল্টা জনতার হেজিমনি গড়ার পথেই এগোচ্ছিলেন তিনি। সরোজ দত্ত ভয়ঙ্কর ,তার কলম জীবিত থাকলে শাসকের উলঙ্গ শরীর ঢাকার আর উপায় থাকেনা , বুদ্ধিজীবীর উপায় থাকেনা হ্যা হ্যা করে পুরস্কার মঞ্চে ওঠার । আর হয়ত তাই তার চলার পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হল।

    সরোজ দত্ত শহীদ হওয়ার পর চারু মজুমদার ঘোষণা করেছিলেন: “কমরেড সরোজ দত্ত পার্টির নেতা ছিলেন এবং নেতার মতই তিনি বীরের মৃত্যু বরণ করেছেন।” হ্যাঁ, সরোজ দত্ত নেতা ছিলেন, এমন একজন নেতা যিনি স্ত্রী’র মুখে সাবধানে থাকার পরামর্শ শুনে উত্তর দিয়েছিলেন: “এইডা কি কইলা বেলা! যুদ্ধে কি শুধু বাহিনী মরব! আরে দুই একডা সেনাপতিরও তো জান যাইব!” নির্মম ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা।

    এই আগস্ট মাসেই ফ্রাঙ্কোর ফ্যাসিস্ত বাহিনীর হাতে লোরকা খুন হয়েছিলেন কিন্তু আজকের স্পেন সেই ১৯৩৬ এর ইতিহাস খুঁড়ে বার করছে আর অন্যদিকে পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ (!) ও বাম আন্দোলনের অন্যতম দূর্গ এ ভারত বা এ বাংলায় শহীদ সরোজ দত্ত ও তাঁর নিহত ও শহীদ সাথীদের ইতিহাসকে জনসমক্ষে হাজির করতে বিচারালয়ের ‘ন্যায়াধীশরা’ রাজি হননি। রাষ্ট্রের ও সরকারের কর্ণধারদের কথা তো ওঠেই না। সত্যকে চাপা দিতেই ‘ভদ্রলোকেরা’ বেশি ব্যস্ত ! আর সেই ..........

    বর্তমান বুদ্ধিজীবীদের প্রতি ~ সরোজ দত্ত

    তোমার বুদ্ধির সুধা, সুরা হল আঁধারে পচিয়া।
    হে অগ্নি পানিয়ে!! নিত্য জ্বলে তব ঘৃণ্য পাকস্থলি;
    কৌমার্য করিতে রক্ষা, আত্মরতি সম্বল তোমার,
    তোমার দুর্বল কন্ঠে স্বেচ্ছাবন্দী পাখির কাকলি,
    প্রাণশক্তি প্রাণহীণ, ধরিয়াছ প্রাণঘাতী নেশা,
    চরণে কাঁদিছে কায়া, ছায়া ভাবি হাসো উপহাসে,
    করেছ গতির রক্তে পঙ্গুতার প্রশস্তি রচনা,
    বিচ্ছেদ ভুলিতে চাহ বিরহের নিবীর্য বিলাপে।
    প্রসবের ব্যর্থতায় অভিমানী শৌখিন শাখার
    স্বার্থপর আত্মনাশ, বনস্পতি করিবেনা ক্ষমা,
    তৃষ্ঞায় শ্বসিছে তরু শিকড়ের শুন্য ভাণ্ড হাতে।
    সংবর এ ক্লীব কান্না! দেখনি কি মৃত্তিকা নির্মমা?
    রাজদণ্ড বহি ফিরে, শ্লথছন্দে রচিয়া বিলাপ,
    যে চাহে অলকা, তার নির্বাসন যোগ্য অভিশাপ।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৬ আগস্ট ২০১৬ | ২০২৭৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • :-X | 69.160.210.3 (*) | ১২ আগস্ট ২০১৬ ০৮:৪২55674
  • h, আপনার কথায়,
    ---
    আর একটা বক্তব্যও আছে, লিংক দেওয়া নিয়ে, আমি জানিনা লোকে বোঝে কিনা, পৃথিবীর সব কিছুর লিংক কিন্তু নেই। দাবী যদি এটা হয়, একজন একটা বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে, তাকে সমস্ত রিসোর্স লিংক সহযোগে এখানে উপস্থিত করতে হবে, সেটা সত্যি ই বাজে দাবী। এবং মিনিংলেস। ১৯৩০-৪০ এর দশকের ১৯৭০ এর দশকের কবিতা সাহিত্য বিষয়ের আলোচনা হচ্ছে সেখানে সোর্সের লিংক চাই বলাটা জাস্ট ন্যাকামোর চুড়ান্ত এবং দেবব্রত বাবুর প্রতি ডিসরেসপেক্টফুল, হোয়াট হ্যাজ হি ডান টু ডিজার্ভ দ্যাট? যাস্ট বাজে খিল্লি, কবিতার ইতিহাসে আগ্রহ আছে কিনা সন্দেহ হয়।
    ---
    উইথ ডিউ রেসপেক্ট, মাইরি, দেবব্রতবাবু যদি কাউকে বলেন, মেল আইডি দিন, আমি জিনিসটা পাঠিয়ে দিচ্ছি, বলার শুধু এই, যে সেটা মেল-এ এক-দু জন কে না পঠিয়ে, হাজার এক টা আপলোড-এর সাইট আছে, তাতে তুলে এখানে লিংক দিয়ে দিলে, জিনিসটা পার্সোনালাইজড না হয়ে আলোচনা ফর্মে থাকে। সকলেই পড়ে দেখে সেই নিয়ে কথা বলতে বা না-বলতে পারে। নইলে সেই মেল-পঠনোর পরে, দু-একজন ইনফর্মড আলোচনা চালাবেন, আর যাঁরা কোনো কারণে নিজেদের মেল আইডি শেয়ার করলেন না, তারা আলোচনাটার পরিসর থেকে সরে দাঁড়াবেন।

    এবার এর উত্তরে, উনি যেমন বললেন, "অনেকে অপ্রাসঙ্গিক মনে করতে পারে " এই কুন্ঠা এক জিনিস, কপিরাইট পাইরেসি হ্যান ত্যান বাজে পাঁচটা ফ্যাচাং এক জিনিস, আর "সোর্সের লিংক চাই বলাটা জাস্ট ন্যাকামোর চুড়ান্ত এবং দেবব্রত বাবুর প্রতি ডিসরেসপেক্টফুল" এই বোধোদয় অন্য জিনিস। একটা ফোরামের আলোচনাকে পার্সোনাল স্পেসে নিয়ে গিয়ে রেস্ট্রিকটেড নলেজ ট্রান্সফারের - বিরুদ্ধে আপত্তি জানানো হয়েছিল, সেই আড়াই লাইনের পোস্টটাকে আপনি আড়াই সেকেন্ড মনোযোগ দিলেও এমন wrong read করতেন না বোধহয়।
  • Debabrata Chakrabarty | 212.142.76.124 (*) | ১২ আগস্ট ২০১৬ ০৮:৪৫55686
  • রঞ্জন দা আমি " সে অগ্নি-পানীয়ে জ্বলে" মেনে নিয়েছিলাম প্রায় তিনদিন আগে - আমার টাইপে ভুল ছিল
  • d | 144.159.168.72 (*) | ১২ আগস্ট ২০১৬ ০৮:৫০55675
  • ডাবল এ'র সত্তর দশক সফট কপি পাওয়া যায় নাকি? তাইলে আমারও চাই। ও কেসি।
  • h | 213.132.214.88 (*) | ১২ আগস্ট ২০১৬ ০৯:২৪55676
  • কি কঠিন কেস খেয়েছি, একে সোমনাথ, তায় অসংখ্য লিংক ঃ-)))))))))))))))))) তো বাল তুমি লিংক দিন লিংক দিন করে লোককে লিংক খোঁজা না শিখিয়ে নিজেই তো দিয়ে দিলে পারতে ঃ-)))))))))))

    'কুন্ঠা এক জিনিস' যে বুজেছো এই অনেক, একটা লোক একটা পোবোন্দো লিখেছে, সকলে ইয়ারকি মারছে এমন ভাবে, যে বোঝাই যাছে না, কেউ আদৌ আগ্রহী কিনা, রঞ্জনদা বার খেয়ে একবার এদিকে একবার ওদিকে বোলে কোনমতে মামুকৃত পাবলিক স্পেস এর সম্মান রক্ষা করছে, তার মধ্যে হঠাৎ সোর্স দিন, সোর্স এর লিংক দিন , পাবলিক স্পেস প্রাইভেট স্পেস ইত্যাদি বলে জ্ঞান দিলে হবে? ;-))))))))))

    আর ফাইনালি, সোভিয়েট স্টেট মরে গ্যাচে, তারপরে বই নেটে তুলোচো তুলোচো, বাংলা সাহিত্য মরা অব্দি ওয়েট করা উচিত ছিল মাইরি। এমনিতেই লেখক প্রকাশক টাকা পায় না। অবশ্য যা জিনিস দিয়োচো এগুলো এখন ক্লাসিক পর্যায়ে।
  • h | 213.132.214.88 (*) | ১২ আগস্ট ২০১৬ ০৯:৩০55677
  • বাই দ্য ওয়ে, কবিতা পত্রিকার সবকটা সংখ্যার লিংক আছে?
  • Debabrata Chakrabarty | 55.250.246.113 (*) | ১২ আগস্ট ২০১৬ ০৯:৪৭55678
  • আসলে এই বিতর্কে বা পোস্টে যদি সেই সময়ের বিতর্ক একসাথে ধরা থাকে তাহলে অন্য পাঠকের ভবিষ্যতে সুবিধা হতে পারে এই ভেবে সেই সময়ের বিতর্কের উল্লেখ ,তা সোমনাথ ইতিমধ্যে লিংক দিয়েছেন সুতরাং পরিশ্রম কিছু নেই আগ্রহীরা সহজেই পড়ে নিতে পারবেন । এই সাইটে অশোক বাবু যেমন রেনেসাঁ পিরিয়ডের বিভিন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে সিরিয়াস প্রবন্ধ লিখছেন - রাজেন্দ্র লাল মিত্র কে নিয়ে ইতিমধ্যে লিখছেন বর্তমানে লিখছেন ডিরেজিও কে নিয়ে …আমরা কেউ হয়ত তার কাউন্টার লিখবো , এই লেখাগুলি বা বিতর্ক গুলি এক জায়গায় থাকলে অনেক পাঠক এমনকি গুরুর বাইরের পাঠকও রেফারেন্স হিসাবে কোনদিন ব্যবহার করতে পারেন ।
    পুনঃ; সরোজ দত্তের রচনা নিয়ে তিনখণ্ডে রচনাবলী প্রকাশিত হয়েছিল , বর্তমানে তা আউট অফ প্রিন্ট -ইতিমধ্যে আরও প্রায় তিন খণ্ড প্রকাশ করবার মত লেখা সংগৃহীত হয়েছে মূলত সরোজ দত্তের পুত্র কুণাল দত্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করে সেই সমস্ত সংগ্রহ করেছেন - আমি সেই সংগ্রহ থেকে ১৯৪০ এর দশকের কিছু চিঠি পত্তর যা এখনো কোথাও প্রকাশিত হয়নি বা কোথাও সংগৃহীত হয়নি পরবর্তীতে পোস্ট করবার প্রয়াস রাখব ( অবশ্যই অনুমতি সাপেক্ষে ) যা সেই সময়ের লেখকদের মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্কের দিক হয়ত তুলে ধরতে সক্ষম হবে । কেউ আগ্রহী হলে হতেও পারেন এই কথা ভেবেই । সোমনাথ বাবুকে ধন্যবাদ সব লেখা গুলি একত্রে রাখবার জন্য ।
  • Links | 69.160.210.3 (*) | ১২ আগস্ট ২০১৬ ১০:০২55679
  • সরোজ দত্ত অর্কাইভ বলে সাইট/ব্লগ বানিয়ে সেখানে সব তুলে রাখার পরামর্শ দিতে পারেন কুনাল বাবুকে। যদি না উনি এই সব গ্রন্থ আকারে প্রকাশ করে আর্থিক সুবিধের কথা ভেবে থাকেন।

    বাংলা ও অন্যান্য সাহিত্য মরে যাওয়া অবধি ওয়েট না করে, বরং আরো কিছু বেশিদিন বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টায় যদি কেউ Digital Library of India নামক সাইট বানিয়ে থাকে সে-সংক্রান্ত খিস্তি বা কৃতজ্ঞতা IISC Bangalore এর পাওনা, আমার কদাপি নয়, এই সমস্ত dli-লব্ধ বইতে আমার কোনো ব্যক্তিগত কনট্রিবিউশন নাই। আমি শুধু লিংক দিয়েছি, যা অন্যমতে গুগুললভ্য।
  • Debabrata Chakrabarty | 55.250.246.113 (*) | ১২ আগস্ট ২০১৬ ১০:৫৩55680
  • " সরোজ দত্ত অর্কাইভ বলে সাইট/ব্লগ বানিয়ে সেখানে সব তুলে রাখার পরামর্শ দিতে পারেন কুনাল বাবুকে। যদি না উনি এই সব গ্রন্থ আকারে প্রকাশ করে আর্থিক সুবিধের কথা ভেবে থাকেন।" মনে হয়না ওনার আর্থিক বা সাংগঠনিক সামর্থ্য আছে নাহলে যে রচনাবলী আউট অফ প্রিন্ট অথচ চাহিদা আছে তা পুনঃপ্রকাশ করতেন । তবে আর্কাইভ হলে থাকে একজায়গায় নতুবা হারিয়ে যাবে কবে প্রকাশিত হবে সেই সম্ভাবনার অপেক্ষা করতে করতে ।
  • Ranjan Roy | 132.180.17.115 (*) | ১৩ আগস্ট ২০১৬ ০২:৩০55687
  • দেবব্রত,

    সরি! মিস করেছিলাম।
  • বাদুরের ছানা | 99.187.142.208 (*) | ১৩ আগস্ট ২০১৬ ০৭:৩৪55688
  • আর ইতিহাস লোহার ল্যাঙট পরে ঘাপটি মেরে বসে বাথানের চালে
    ওয়াঁক! ওয়াঁক! হাঁক পাড়ে দার্শনিক বাদুরের ছানা অভিমানে।।
  • তাতিন | 340123.110.234523.17 (*) | ০৭ আগস্ট ২০১৮ ০৮:১২55689
  • সরোজ দত্তর রাষ্ট্রীয় গুমখুন বার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিদ্যাসাগরের প্রসঙ্গ এলো। আমরা যাঁরা সরোজ দত্তকে বিদ্যাসাগরের ভাবমূর্তি অবমাননার পথিকৃৎ মনে করি, তাঁরা মূলতঃ মনে করি ব্রিটিশ শাসন ভারতের জন্য এক দুর্যোগ ছিল, যা আজও ঘোচে নি। এবং এই দুর্যোগ ভারত ছাড়িয়ে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে আর পৃথিবীর বর্তমান বিভিন্ন সমস্যার জন্য কোম্পানির কলোনিস্থাপন ও লুণ্ঠনের উত্তরাধিকারই মূলতঃ দায়ী। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যাসাগরের শত অবদান স্বত্তেও তাঁর ভূমিকা হয়ে যায় এমন এক অনুঘটকের যা কোম্পানির শাসন, লুঠেরা পুঁজির বিকাশ এবং তার ফলশ্রুতিতে মানুষ-পরিবেশ-সমাজ ধ্বংসকারী বাজারকে প্রজন্মান্তরেও বৈধতা দিচ্ছে।
    এই বৈধতা এইভাবে আসে যে, ভারত বা বাংলা অন্ধকার পঙ্কিল ইতিহাসে পড়ে ছিল, তাঁকে কোম্পানি শাসনের সাহায্য নিয়ে বিদ্যাসাগর প্রমুখ মণীষীরা সভ্যতার আলোয় আনলেন। এই বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করার দায় থেকে বিদ্যাসাগরের অবদানগুলিকে পুনরালোচনা করার দরকার মনে করছি। মূল তিনটি অবদানকে লিস্ট করি, অন্য কিছু থাকলে যোগ করতে পারেন।
    ক) শিক্ষাব্যবস্থা প্রসার, প্রচুর স্কুল স্থাপনা করা এবং বিশেষ করে নারীশিক্ষা-- এর উল্টোদিকে আমরা এডামস সমীক্ষা দেখতে পাই। বিদ্যাসাগর এবং তাঁর নিয়োগকর্তার সাহায্য ছাড়াই বাংলা বিহার মিলিয়ে এক লক্ষ প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র ছিল যা সামাজিক সাহায্যে চলত। ১৮৩৫-৩৭ সালে উইলিয়াম এডামস এই রিপোর্ট পেশ করেন। লক্ষ্যণীয় তাঁর সার্ভেকালীন সময় বিদ্যাসাগরের কর্মজীবন শুরুর আগের। আরও লক্ষ্যণীয় এই রিপোর্ট ৭৬ এর মন্বন্তরের পরে। অর্থাৎ এক-তৃতীয়াংশ লোক মারা যাচ্ছে এমন দুর্যোগের পরও এক লক্ষ প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র টিকে আছে। এডামস বলছেন প্রতি চারশ বাসিন্দা একটি করে স্কুল দেখেছেন গড়ে। এডামস অতিরঞ্জন করছেন ধরে নিলেও মন্বন্তর দুর্ভিক্ষগুলির আগে, ব্রিটিশ শাসন ভাঙার আগে শিক্ষাব্যবস্থা কেমন ছিল ধারণা হয়?
    এবার প্রশ্ন হয় এই শিক্ষাপরিকাঠামো আজ নেই। তা ভেঙে গেল কী করে? আমার ধারণা মেকলের নীত আর বিদ্যাসাগরের ইস্কুল-উদ্যোগের প্রকোপে। এনিয়ে বিশদ পড়াশুনোর দরকার আছে মনে করি। কিন্তু বিদ্যাসাগরীয় উদ্যোগ চারশ কেন চারহাজার বাসিন্দাতেও একটা ইস্কুল বানাতে পারে নি।
    নারীশিক্ষা নিয়ে এডামসের খুবই পজিটিভ অবজার্ভেশন ছিল , নিম্নবর্ণের মধ্যে শিক্ষা নিয়েও। এবং এ তথ্য একটু ঘাঁটলেই পাওয়া যায় যে উনিশ শতকের মধ্যভাগেও সাধারণ গ্রামের মেয়েরা লিখতে পড়তে জানতেন। বিখ্যাত বৈষ্ণবী মা-গোঁসাই বা রানি-জমিদারনির কথা ছেড়েই দিলাম। নারীশিক্ষা বলে কিছু ছিল না, বিদ্যাসাগর এসে শুরু করলেন এমন হলে আমরা কেনারামের পালা পেতাম না, রানি ভবানিকেও পেতাম না।
    https://archive.org/…/AdamsReportsOnVernacularEducationInBe…

    খ)বাংলা ভাষা।- আধুনিক বাংলার জনক হিসেবে বিদ্যাসাগরের রূপায়ন কতটা বাস্তবসম্মত? বিদ্যাসাগরের শ খানেক বছর আগে রামপ্রসাদের যে বাংলা পাই, তা বিদ্যাসাগরের কালোয়াতির থেকে অনেক সাবলীল। বাংলায় এমন কোনও তত্ত্ব বা তথ্য আলোচনা, সন্দর্ভ আছে যা বিদ্যাসাগরের সংস্কৃত-অভ্যাসে হতে পারে কিন্তু রামপ্রসাদের ভাষায় সম্ভব না? উৎপল দত্ত লিখছেন "আজ যে কথায় কথায় চেঁচাস গ্রামে যাও, কৃষককে রাজনীতি দাও— বিদ্যাসাগর না থাকলে গাঁয়ে গিয়ে বলতিস কি রে হতভাগা? কি ভাষায় কথা কইতিস কৃষকের সঙ্গে? শিখতিস তো সংস্কৃত আর বলতিস, ভো ভো হলধর, বিপ্লবস্য ফৌজম!" !!! ভেবে দেখুন কী ভয়ঙ্কর অপমান বাংলাভাষাকে করা হল? রামপ্রসাদ ছেড়ে দিন, বৈষ্ণব সাহিত্য মঙ্গলকাব্য বলে কিছু ছিল না? সংস্কৃত বাদ দিয়ে লোকে কথা কইত না? কাজের কথা এগোত না? অথচ আমরা দেখি সাবলীল বাংলাভাষাকে সংস্কৃত আশ্রয়ী, তৎসম-ভারে ন্যুব্জ করে ফেলা হচ্ছে, সাধারণ লোকের বদলে শুধু সাধুর ব্যবহারের ভাষা হয়ে উঠছে আর কথ্য ভাষার সঙ্গে এত পার্থক্য হচ্ছে বিদ্যাসাগরের হাতে যে কথ্যভাষায় সিরিয়াস কথা বলার জন্য এক রবীন্দ্রনাথ জীবনকাল অতিবাহিত করতে হচ্ছে বাংলাভাষাকে। অথচ এর আগে ঢের ঢের দরকারি কথা বাংলায় বলা ও লেখা হয়েছে। যখন বিদ্যাসাগরের আগে বাংলা ছিল না বলি, সেই সমস্ত অবদানকে অস্বীকার করি। আর খুবখুঁটিয়ে দেখলে মুসলিম বাঙালির ভাষা অস্বীকার করে আরেকটা বঙ্গভঙ্গ করে ফেলি।

    গ) বিধবা বিবাহ- বাল্যবিধবাদের বিবাহ বাংলার আদ্ধেকের বেশি লোকের মধ্যে প্রচলিত ছিলই। হিন্দু উচ্চবর্ণ বাদ দিয়ে সব শ্রেণীতেই প্রায় হোতো। আর উচ্চবর্ণের মধ্যে যদি বিধবা বিবাহ হয়ে থাকে, সেটার হার কত জানতে ইচ্ছা করি।

    - এই লেখার যা উদ্দেশ্য, বিদ্যাসাগরের অবদান পুনর্মূল্যায়ণ করা। তিনি একজন মহাপ্রাণ ক্ষণজন্মা ছিলেন, অসামান্য প্রতিভাশালী ছিলেন এবং তাঁর জন্য বহুমানুষের উপকার হয়েছে সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রাপ্য কৃতিত্বের বেশি তাঁকে দেওয়া সমাজের ও ইতিহাসের বাকি উপাদানগুলির অবমাননা করে। এবং ভুল ভাবতে শেখায়। ভাবমূর্তি ভাঙার দরকার তাই-ই হয়
  • dc | 232312.164.5656.99 (*) | ০৮ আগস্ট ২০১৮ ০১:১৯55699
  • তাহলে কে সভ্যতার পক্ষে বেশী অভিশপ্ত? পাখি না বিদ্যাসাগর?
  • সিকি | 894512.64.56.141 (*) | ০৮ আগস্ট ২০১৮ ০১:৪৩55700
  • বিদ্যাসাগরই হবে। বলছে যখন।
  • dd | 670112.51.8912.1 (*) | ০৮ আগস্ট ২০১৮ ০৩:৩৪55691
  • বাবারে, অ্যাডাম বাবুর রিপোর্ট তো প্রায় চারশো পাতা। ওটা আর আমার দ্বারা পড়া সম্ভব হবে না।

    তবে ইন্ট্রোতেই দেখলাম লেখা আছে The reports assembled by Rev. William Adam in the early nineteenth century examining the state of indigenous eduction in north India, especially Bengal. In particular, Adam reported on Sanskrit education in detail, in the last period in which it existed on any scale.

    প্রথম কয়েক পাতাই একটু পড়লাম। দেখলাম লেখা আছে ছাত্রদের এক তৃতীয়াংশই ব্রাহ্ঙন (মানে বাউন, কি করে লিখতে হয় ভুলে গেছি)। রিপোর্টটা তাহলে মূলতঃ বাংলা (কিছুটা বিহার) ও সংস্কৃত শিক্ষা নিয়ে। পুরো রিপোর্টটা পড়লে ধারনা করতে পারতাম ইতিহাস, ভূগোল, অংক ইত্যাদিও কতোটা শেখানো হত?

    তো তাতিন বাবু লিখলেন "এবার প্রশ্ন হয় এই শিক্ষাপরিকাঠামো আজ নেই। তা ভেঙে গেল কী করে? আমার ধারণা মেকলের নীত আর বিদ্যাসাগরের ইস্কুল-উদ্যোগের প্রকোপে।"

    সারা ভারত জুড়ে বিদ্যাসাগরের কতোটা ইন্ফ্লুয়েন্স ছিলো যে দেশ থেকেই টুলো শিক্ষা উঠে গেলো।
  • b | 562312.20.2389.164 (*) | ০৮ আগস্ট ২০১৮ ০৪:৪৩55692
  • ১। "বিদ্যাসাগরের শ খানেক বছর আগে রামপ্রসাদের যে বাংলা পাই, তা বিদ্যাসাগরের কালোয়াতির থেকে অনেক সাবলীল।"
    " ভেবে দেখুন কী ভয়ঙ্কর অপমান বাংলাভাষাকে করা হল? রামপ্রসাদ ছেড়ে দিন, বৈষ্ণব সাহিত্য মঙ্গলকাব্য বলে কিছু ছিল না?"

    রামপ্রসাদ কেন, ভারতচন্দ্র ঐত্যাদিকেও আনা যায়। কিন্তু এগুলো সব পদ্য। বাঙলা গদ্যের কিছু উদাহরণ রামমোহন রায় পড়লে পাবেন, ওর মানে বই এখোনো খুঁজছি।
    গদ্যের মুক্তির একটা পথ হতে পারতো হুতোম আর আলালী ভাষা, কিন্তু ভিক্টোরিয়ান বাঙালী নাক কুঁচকে ছিলেন। সেটা বিদ্যাসাগরের দোষ না। রামমোহন থেকে ফোর্ট উইলিয়ামের পন্ডিতবর্গ , সেখান থেকে বিদ্যাসাগর, বিদ্যাসাগর থেকে বঙ্কিম, বঙ্কিম থেকে রবিবাবু (বিবেকানন্দের নাম করলাম না, স্বল্পায়ু ) এর মধ্যে বাঙলা গদ্যের পরিণত হওয়ার এক একটা ধারা আছে।
    যেটা একটা সিরিয়াস অ্যাকাডেমিক আলোচনা হতে পারতো, সেটার মাঝে হঠাৎ করে একটা নাটকের সংলাপ দিয়ে পূর্বপক্ষ দাঁড় করিয়ে তাকে পেটানোর মধ্যে নাটকীয় চমক আছে, কিন্তু মাল বিশেষ নাই।

    ২। "এই পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যাসাগরের শত অবদান স্বত্তেও তাঁর ভূমিকা হয়ে যায় এমন এক অনুঘটকের যা কোম্পানির শাসন, লুঠেরা পুঁজির বিকাশ এবং তার ফলশ্রুতিতে মানুষ-পরিবেশ-সমাজ ধ্বংসকারী বাজারকে প্রজন্মান্তরেও বৈধতা দিচ্ছে।"

    পেইছি এতদিনে। সিঙ্গুরে জমিদখলকারী সিপি এম -এর অনুপ্রেরণা। মার শালাকে। মরে গেছে? যাব্বাবা।

    ৩। ভয়ঙ্করী।
  • ... | 9001212.56.890112.179 (*) | ০৮ আগস্ট ২০১৮ ০৪:৫৩55693
  • আজকের দিনে কয়েকজন রুনু গুহনিয়োগীর অভাব বোধ করছি।
  • কল্লোল | 670112.203.566712.234 (*) | ০৮ আগস্ট ২০১৮ ০৬:২৮55694
  • ডিডি। বিষয়টা কি এরকম যে বিদ্যাসাগর চাইলেন আর টোল উঠে গেলো।
    কোম্পানীর আমলে কাজের ভাষা ফারসী থেকে ইংরাজিতে বদলে যচ্ছিলো। ফলে ইউরোপীয় বা ইংলন্ডীয় শিক্ষার আমদানী হলো। মেকলে সায়েব একটা রূপরেখা তৈরী করলেন, কিভাবে এদেশের মানুষকে (পড়ুন মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তকে) বিলিতি মতে শিক্ষিত করে তোলা যায়, লেখা, পড়া ও হিসাব করা শেখান্র জন্য ইস্কুল স্থাপন হলো। গ্রামে গ্রামে পাঠশালা ছিলো, তাতে অক্ষর পরিচয়, কড়া কিয়া, নামতা, শুভঙ্করী আঁক ইত্যাদি শেখানো হতো। সেখানেও বর্ণপরিচয় ঢুকলো, ইংলিশ ফার্স্ট রিডার জাতীয় - লাউ মানে পামকিন ঢুকলো। যারা পাঠশালা পেরিয়েও পড়া জারী রাখলেন, তাদের বাধ্যতামূলকভাবে সরকারী সিলেবাসের ইস্কুলে ধুকতে হলো। কেউ কেউ নবদ্বীপে বা ভাটপাড়ায় পড়তে যেতেন। তার ছাত্র সংখ্যা কমতে লাগলো, কারন ওতে আর নতুন ধরনের জীবিকা নির্বাহ হয় না। যারা যজমানী করবেন তারাই ওসব পড়তেন (যেমন একালের অনেক পরেও হরিহর ছিলেন)। কিন্তু তারা ক্রমশঃ ক্ষয়িষ্ণু। তাদের সন্তানেরা কালেজ যেতে লাগলো (অপু)।
    এভাবেই একটা দীর্ঘ সময় ধরে পুরানো শিক্ষা ব্যবস্থাটি মারা গেলো।
    কিন্তু এর উল্টোবাগে যে চেষ্টাটি হয়েছে (রবিঠাকুরের বিশ্বভারতী) তাও বছর পনেরোর বেশী টেঁকে নি। বিশ্বভারতীও সেই মেকলে লাইনেই দৌড়েছে।

    কিন্তু আমি বেশ ধন্দে। এই মেকলে ব্যবস্থাই তো কেরানী, আইএএস, তেভাগার কমিউনিস্ট আর নকশাল, উত্তর অধুনিক, সত্যজিত, ঋত্বিক ও কমলকুমার একই সাথে তৈরী করেছে। এটা কি ভালো না খারাপ?
  • ta bote | 456712.100.5623.50 (*) | ০৮ আগস্ট ২০১৮ ০৬:৫১55695
  • চীনের চাউমিন আমাদের চাউমিন, খতম লাইন, মূর্তি ভাঙা, সিনেমা হল ভাংচুর করা ইত্যাদি বালখিল্যতা করে স্রেফ অশান্তি আর হিংসা ছড়ানো নকুর দল করবে বিদ্যাসাগরের মূল্যায়ন!!
  • কল্লোল | 670112.203.893412.191 (*) | ০৮ আগস্ট ২০১৮ ০৭:১২55696
  • কি আর করা। আজ যে সব ভারতীয় ঐতিহাসিকের আন্তর্জাতিক খ্যাতি তাদের একটা বড় অংশ ওই নকশাল রাজনীতি থেকেই উঠে এসেছেন।
  • lcm | 900900.0.0189.158 (*) | ০৮ আগস্ট ২০১৮ ০৭:১৮55697
  • মুসলিমরা নিয়ে আসে ফার্সী ভাষা।
    ইংরেজরা নিয়ে আসে ইংরেজি ভাষা।

    মুসলিম আমলে ভাল মাইনের কাজকর্ম পেতে হলে ফার্সী জানলে সুবিধা হত।
    ইংরেজ আমলে ভাল মাইনের কাজকর্ম পেতে হলে ইংরেজি জানলে সুবিধা হত।

    রামমোহন রায় প্রথম বই লেখেন ফার্সীতে (তুহাফত্‌ অল্‌-মুওয়াহ্‌হিদীন)।
    মধুসুদন দত্ত প্রথম বই লেখেন ইংরেজিতে (দ্য ক্যাপটিভ লেডি)।

    মুসলিম রাজত্ব দেশ থেকে চলে গেলে পার্সীর গুরুত্ব কমে যায়।
    ইংরেজ রাজত্ব দেশ থেকে চলে গেলে ইংরেজির গুরুত্ব কমে যায় 'না'।

    শেষের ঐ 'না' নিয়েই তো এত বিরক্তি। সে কি আর করা যাবে... বাংলা, হিন্দি, তামিল, তেলুগু... তো আছে....
  • রোবু | 2345.110.125612.109 (*) | ০৮ আগস্ট ২০১৮ ১১:২৪55698
  • তাতিনের পোস্ট দেখে চাড্ডিদের একটা ফেভারিট লব্জ মনে পড়ল। ম্যাকুলাইজড কনস্পিরেসি। বিদ্যাসাগর মনে হয় ওই ষড়যন্ত্রেরই অংশ৷
  • sm | 7845.15.3467.110 (*) | ০৯ আগস্ট ২০১৮ ০১:১৭55706
  • হক কথা!কিছু মেধাবী ছেলে ছিল বলে, এখন ও বাঙালি ঝোল টানে।গণ্ডগোল পাকানো ও গণ্ডগোল করা ছাড়া এরা বিশেষ কিছুই করে নি।
  • Uttam Kumar | 236712.238.893412.173 (*) | ০৯ আগস্ট ২০১৮ ০১:৫১55701
  • বাই দ্য ওয়ে, আমি কিন্তু কিছু দেখি ফেখিনি। ওগুলো ধপ।
    ঐদিন ভোরে আমি পাদছিলাম আর মালের খোঁয়াড়ি কাটাচ্ছিলাম । এখানে কেউ ডিনারে ভ্যাট ৬৯ এর সাথে ডাটা গুঁড়ো মশলা দিয়ে বানানো বেণুর চিংড়ি মালাইকারি স্পেশাল রেসিপিটা খেয়েছে? (হাভাতে নক্শালাদের বলছি না, ঐ চারু টাইপ খেঁকুড়ে চেহারায় এসব হজম হওয়া চাপ, নর্মাল বাঙ্গালীদের বলছি)। খেলে বুঝত ঐটার পরে ভোরে একটা বিউটিফুল পাদ ছাড়ে। আত্মপাদে মগ্ন হওয়া ছাড়া হোল ডে কোন এক্টিভিটি পসিবল না।
    পোঁদে বিছে কামড়াইনি যে জগিং করতে যাব।

    আমার প্রথম দিককার দু তিনটে ছবি বাদ দিলে দুনিয়ার ওয়ার্স্ট ফ্লপ শো হল এই নকশাল আন্দোলন । কোনভাবে "গুরু"র নাম জুড়ে দাও, যাতে টিআরপি ওঠে।
  • তাতিন | 340123.110.234523.10 (*) | ০৯ আগস্ট ২০১৮ ০২:০০55702
  • b-কে,
    ১)পোস্টটা যতটা বিদ্যাসাগরকে নিয়ে করা তার থেকে বেশি বিদ্যাসাগর মূর্তিকে নিয়ে করা। সেখানে উৎপল দত্তর জপেনদার সংলাপ প্রাসঙ্গিক মনে হয়। কারণ বিদ্যাসাগর নিয়ে কথা বলতে এলেই লোকে বলে যে বিদ্যাসাগর না হলে বাংলায় কথা বলা অবধি যেত না, লেখা তো যেতই না।
    ফলে বাংলাভাষায় বিদ্যাসাগরের অবদান সম্পর্কিত আলোচনা করা দরকার। এই সংলাপটাকে পূর্বপক্ষ দাঁড় করানো এই কারণেই যে আপনার বলে দেওয়া সাইকেলের বাইরে বাংলাভাষার বিস্তারকে আমরা প্রায়ই ভুলে যাই।
    তবে সেই বিস্তার নিয়ে এবগ বিশেষ করে কলকাতার বাইরের বাংলার বিস্তার নিয়ে আলোচনা করা ভীষণ দরকার।
    এটাও বোঝা ভীষণ দরকার যে বিদ্যাসাগরের সংস্কৃতায়ন এবং ফার্সিবর্জন বাংলাভাষায় কতটা ইম্প্যাক্ট এনেছে।

    ২) একদমই। আমি নিজে ২০০৬ এর মাঝামাঝি অব্ধি ভেবেছি সিংগুরে কারখানা হলেই বাংলার মুক্তি আসবে। সেই ভাবনায় বিদ্যাসাগর ঢুকে আছেন বই কী।

    ৩) বুঝলাম না। মুসলিমদের মধ্যে বিধবা বিবাহ ছিল, নিচু জাতের হিন্দুর মধ্যেও ছিল। বিদ্যাসাগরের প্রয়াসে উঁচু জাতের হিন্দু বাঙালির বিধবাবিবাহ বৈধ হয়। একজন মানুষেরও তাতে উপকার হয়ে থাকলে কৃতিত্ব তাঁর। কিন্তু মোট কত লোকের হয়েছিল সেইটা জানতে ইচ্ছা করি। সেভাবে পাচ্ছি না ডেটা। তবে এইটা বক্তব্য ছিল যে সমাজ সংস্কারক হিসেবে এই কারণে তাঁর মূর্তি শুধু উচ্চবর্ণের হিন্দু সমাজেই সমাদৃত হতে পারে।
  • b | 562312.20.2389.164 (*) | ০৯ আগস্ট ২০১৮ ০৫:০৯55703
  • "এটাও বোঝা ভীষণ দরকার যে বিদ্যাসাগরের সংস্কৃতায়ন এবং ফার্সিবর্জন বাংলাভাষায় কতটা ইম্প্যাক্ট এনেছে"

    ঐ ক্রমে (রামমোহন-উইলিয়াম কেরি-রামনারায়ণ তর্করত্ন-বিদ্যাসাগর) ধরলে বিদ্যাসাগর সংস্কৃতায়ন কমাচ্ছেন, দীর্ঘ সমাস বহুল পদগুলি বাদ দিচ্ছেন, এবং (কোম্পানির দাস হয়ে) কমা সেমিকোলনের আমদানি করে গদ্যের ছন্দ ধরতে চাইছেন। সেই সময়ে ভদ্রলোক বিস্তর গালাগালিও খেয়েছেন এ নিয়ে।
  • তাতিন | 340123.110.234523.19 (*) | ০৯ আগস্ট ২০১৮ ০৫:৩৯55704
  • ভাষা নিয়ে একটা আলাদা আলোচনার স্কোপ আছে, অনস্বীকার্য। বাই দা ওয়েল, কমার ব্যবহার রামমোহনেই দেখেছি
  • chagu chaddi | 456712.100.5623.49 (*) | ০৯ আগস্ট ২০১৮ ০৫:৪২55705
  • তা নকুদের কি অবদান আছে উৎপাত আর খুনোখুনি ভাংচুর ইত্যাদি ছাড়া? আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নকু ঐতিহাসিকেরা নিজেদের দেবতা যথা চারুবাবু, সরোজ দত্ত ইত্যাদিদের যথাযথ মূল্যায়ন করেছেন তো? নাকি ভক্তিরসে ডুবে গেছেন? যত সব বালবাজারী গপ্পোকথা।
  • কল্লোল | 670112.203.567812.171 (*) | ১০ আগস্ট ২০১৮ ০৪:১৯55707
  • আপাততঃ তিনটে নাম দেই। গৌতম ভদ্র, দীপেশ চক্রবর্তি, পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
    এদের লেখাটেখা বিশেষ পড়েন নি যে সেটা নামেই মালুম।
    চারুবাবুর রাজনীতিকে সমালোচনা এদের হাতেই শুরু। ফ্রন্টিয়ার নামে একটি পত্রিকা আজও প্রাকাশিত হয়। তাতে এবং আরও নানা পত্র পত্রিকায় এদের নান লেখা সেই ৭৩-৭৪ সাল থেকেই ছাপা হচ্ছে।
    চাট্টি পড়াশুনা কল্লেও তো পারেন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত প্রতিক্রিয়া দিন