এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • মরিচঝাঁপি ঃ- সমবেত বিস্মৃতি

    Debabrata Chakrabarty লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৩ মে ২০১৬ | ৩৫৫৩ বার পঠিত
  • “The struggle of man against power is the struggle of memory against forgetting” Milan Kundera

    আজ থেকে ৩৭ বছর পূর্বে ১৩ই মে ১৯৭৯ মরিচঝাঁপি অপারেশনের "ফাইনাল অ্যাসল্ট" শুরু হয় এবং ১৬ই মে ১৯৭৯ পশ্চিমবঙ্গ সরকার গর্বের সাথে ঘোষণা করেন -অবশেষে মরিচঝাঁপি উদ্বাস্তু শূন্য । বিদেশী শক্তির দালাল ,ভারতের পবিত্র অখণ্ডতা ভঙ্গকারী এই সব হতচ্ছাড়া জবরদখল কারীদের উচ্ছেদের অবশেষে কোন বিজয় উৎসব অথবা পাচতারা হোটেলে পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল কিনা অজানা । তবে এই বিষয়টি এতোই ক্ষুদ্র এবং অকিঞ্চিৎকর যে পশ্চিমবঙ্গের সদা জাগ্রত বিখ্যাত বুদ্ধিজীবীকুল যাদের অধিকাংশ আবার ঘোষ বোস চ্যটারজি গাঙ্গুলি যারা পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে অন্যায়ের প্রতিবাদে পাতার পর পাতা ভরান , রাস্তায় নেমে মানব অধিকারের দাবীতে আকাশ বাতাস মুখরিত করেন তাঁরা কেমন যেন কুটোটিও নড়েনি এইরকম এক অভূতপূর্ব নীরবতায় কাটিয়ে দিলেন পাক্কা তিনটি দশক । মরিচঝাঁপি ক্রমশ গ্রাস করে নিল জঙ্গল আর ভদ্রলোক বাঙালীর সমবেত বিস্মৃতির আড়ালে রয়ে গেল পশ্চিমবঙ্গের কুৎসিততম দলিত গণহত্যা এবং মানব অধিকার লঙ্ঘনের ইতিহাস । কেবল চণ্ডাল সমাজ যাদের পাঁজর ভেঙ্গেছিল সাথে বিশ্বাস তাদের সমবেত স্মৃতিতে মরিচঝাঁপি রয়ে গেলো তাদের প্রতি বঞ্চনা এবং ভদ্রলোক বাঙালী সমাজের কদর্য বিস্বাসঘাতকতার ইতিহাস সমেত ।

    অথচ হতদরিদ্র মূলত চণ্ডাল -নমশূদ্র, দণ্ডকারণ্যের কঠিন প্রান্তরে যুঝতে থাকা উদ্বাস্তুরা -৫ কোটি বাঙালীর ১০ কোটি হাত আপনাদের স্বাগত জানায় এই ধরনের বাগাড়ম্বর পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করে ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসার সাথে সাথে প্রায় ১,৫০,০০০ নমশূদ্র উদ্বাস্তু নিজেদের ঘটি বাটী বেচে পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারের প্রতিশ্রুত আশ্রয়ের আশায় রওয়ানা দেয় সুদূর দণ্ডকারণ্যের কঠিন প্রান্তর থেকে । উদ্বাস্তুদের দাবীর সমর্থনে দীর্ঘকাল ধরে লড়ে আসা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন বামপন্থী দল এবং তাদের বিপুল সমর্থনে জিতে গদিতে আসীন বামফ্রন্ট সরকার এই হটাৎ নমশূদ্র উদ্বাস্তু স্রোত এবং সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গের সাজানো বাগানে অবাঞ্ছিত উৎপাতের আশঙ্কায় ,অর্থনৈতিক ডামাডোল সৃষ্টি হতে পারে এই অমূলক ধারনায় প্রতিটি রেল স্টেশানে দণ্ডকারণ্যের উদ্বাস্তুরা এসে পৌঁছানোর সাথে সাথে তাদের বলপূর্বক ফিরতি ট্রেনে শুয়োর গাদা করে ফেরত পাঠাতে তৎপর হয়ে ওঠে । কিন্তু তবুও পুলিশের চোখ এড়িয়ে ,ভিটে মাটি থেকে উৎখাত ,মরীয়া , প্রায় ৩০০০০ উদ্বাস্তু ট্রেন লাইন ধরে হাটা পথে, রাষ্ট্রের চোখ এড়িয়ে বিভিন্ন উপায়ে পৌঁছে যায় -হাসনাবাদ এবং তার পরে মরিচঝাপি নামক সুন্দরবনের ভেতরে জনমানব হীন ১২৫ বর্গ মাইল এলাকার এক দ্বীপে । একদা কমিউনিস্ট পার্টির উদ্বাস্তু আন্দোলনের সাথে জড়িত সতীশ মণ্ডলের নেতৃত্বে এই দণ্ডকারণ্য থেকে আসা নমশূদ্র উদ্বাস্তুদের মধ্যে প্রায় ১২৫০০ পরিবার এবং ৩০০০০ উদ্বাস্তু নদী পেরিয়ে মরিচঝাঁপি তে আশ্রয় নেয় ।

    ততদিনে সুন্দরবনের উত্তর ভাগে ১৯৭৫ সালে ম্যানগ্রোভ অরণ্য কেটে নারকেল গাছ এবং ঝাউ গাছের ১২৫ বর্গ মাইলের আস্ত একটা দ্বীপ মরিচঝাঁপি । যদিও ততদিনে মরিচঝাঁপি মুল সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যের জঙ্গল নয় কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সরকার মরিচঝাঁপিতে গিয়ে উদ্বাস্তুরা বাসা বাধুক এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র আগ্রহী ছিলেন না । যে রাজনৈতিক দল ১৯৫০-৬০ এর দশকে কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ব্যক্তিগত সম্পত্তি এবং সরকারী সম্পত্তিতে পূর্ব বঙ্গ থেকে আগত উদ্বাস্তুদের অধিষ্ঠান সুনিশ্চিত করতে মিলিটান্ট লড়াই করেছে সেই তাদেরই সরকার মরিচঝাপি উদ্বাস্তুদের সরকারী জমি বেআইনি অধিগ্রহণ এবং রিসার্ভ ফরেস্ট এর মধ্যে আইন ভঙ্গ করে বাসস্থান স্থাপনের দায়ে অভিযুক্ত বলে ঘোষণা করলেন । মরিচঝাঁপির উদ্বাস্তুরা ততদিনে সরকারী সাহায্য এবং অনুদান ছাড়াই ,সরকারী কোষাগারে বিন্দুমাত্র চাপ সৃষ্টি বিনা গড়ে তুলতে থাকলেন নিজেদের নিজস্ব জীবনযাত্রা অন্যদিকে কলকাতার ভদ্রলোক শিক্ষিত সমাজের কাছে মরিচঝাঁপি উদ্বাস্তু শূন্য করার যুক্তি হিসাবে তুলে ধরা হোল রিসার্ভ ফরেস্ট আইন ভঙ্গ কারি ,সুন্দরবনের প্রাকিতিক পরিবেশ ধ্বংসকারি এক দল অবাঞ্ছিত জবরদখলকারি উদ্বাস্তু । তাদের সাথে সরকারের উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠা করার কাজ চলতে থাকলো ।

    মরিচঝাঁপির আশেপাশের দ্বীপ এবং গ্রামগুলি - সাতজেলিয়া ,কুমিরমারি ,ঝরখালি,ছোট মোল্লাখালি ইত্যাদি এলাকা দীর্ঘ কাল যাবত চণ্ডালদের বাসস্থান । ১৯৩০ এর সময়ে থেকে ব্রিটিশ মূলত খুলনা এলাকা থেকে জঙ্গল কেটে বসতি বানানোর কাজে নিয়ে এসেছিল নমশূদ্রদের -আর ছিলেন স্থানীয় মুন্ডা , সাঁওতাল আদিবাসী । দণ্ডকারণ্য থেকে আগত নমশূদ্র উদ্বাস্তুদের সাথে এলাকার বাসিন্দাদের পূরানো রক্তের সম্পর্ক । অনেকেই একে ওপরের আত্মীয় সাথে একই ভাষা একই সংকৃতি এবং একই প্রান্তিক অবস্থান । এই সহমর্মিতার কারনে স্থানীয় নমশূদ্র অধিবাসীদের সাহায্যে মরিচঝাঁপির উদ্বাস্তুরা সরকারী নারকেল বাগানের , ঝাউ গাছের ফাঁকে ফাঁকে প্রথমে গড়ে তুললেন অস্থায়ী খড়ের ছাউনি ওয়ালা বাসস্থান । আসপাশের বাসিন্দাদের সাহায্যে শিখে গেলেন কাঁকড়া ধরা , মাছ ধরা ,ছোট বাঁধ দিয়ে নোনা জল আটকানোর পদ্ধতি । চাষ বাসের জন্য ১২৫ বর্গমাইলের মরিচ ঝাঁপি ৩০০০০ দণ্ডকারণ্যের উদ্বাস্তুদের পক্ষে বিপুল পরিমাণ জমি ,স্থানীয় ভূমিহীন নমশূদ্রদের অনেকে মরিচঝাঁপিতে উদ্বাস্তুদের সাথে এসে বাস করা শুরু করলেন ।

    অত্যন্ত পরিশ্রমী বাঙ্গালার খেটে খাওয়া এই নমশূদ্রদের হাতে বিন্দুমাত্র সরকারী সাহায্য বিনা মরিচঝাঁপি এক আদর্শ বসতি হয়ে গড়ে উঠতে থাকলো অদ্ভুত দ্রুততায় । নিজেদের উদ্যোগে স্কুল হোল ,নৌকার লাইসেন্স হোল , পানীয় জলের জন্য টিউব ওয়েল বসল ,মাছের ভেড়ি ,নুনের আড়ত এমনকি গড়ে উঠল ডিসপেনসারি ছোটদের জন্য প্রাথমিক স্কুল । এই সমস্ত উদ্যোগ উদ্বাস্তুদের নিজেদের প্রয়াসে , নিজেদের পয়সায় । একই সময়ে বাঙলার সচেতন নাগরিক বৃন্দ ,গৌরকিশোর ঘোষ ,জ্যোতির্ময় দত্ত’র উদ্যোগে সুচিত্রা মিত্র ,হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ইত্যাদিদের গানের জলসা সংগঠিত করে ২০০০০ টাকা তুলে দিলেন মরিচঝাঁপি উদ্বাস্তু উন্নয়ন সমিতির হাতে । মরিচঝাপি ধরে নিয়েছিল এই যে তাদের সরকারী সাহায্য বিনা ,পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যন্ত সুন্দরবনে নিজেদের স্বয়ং সম্পূর্ণ হিসাবে গড়ে তোলার উদাহরণ সরকার দণ্ডকারণ্য থেকে ডেকে আনা উদ্বাস্তুদের স্টেশান থেকেই পুনরায় দণ্ডকারণ্যে ফিরিয়ে দেওয়ার যে প্রবঞ্চনা করেছে সেই দোষ স্খালনের উপায় হিসাবে তাদের এই নূতন বসতির স্বীকৃতি দেবে । কিন্তু একগুঁয়ে , বিন্দুমাত্র অনুতাপবিহীন উন্নাসিক বাঙালী ভদ্রলোক দ্বারা পরিচালিত প্রথম বামফ্রন্ট সরকার উদ্বাস্তুদের নিজস্ব উদ্যোগ এবং সমবায় উদ্যমের কদর করা দুরস্থান কিভাবে এই নমশূদ্র উদ্বাস্তুদের মরীচঝাঁপি থেকে উচ্ছেদ করা যায় তার পরিকল্পনা রচনা করতে থাকলেন ।

    বাঙালী ভদ্রলোক এবং চণ্ডাল ঘৃণা
    ------------------------------------
    চণ্ডালদের প্রতি বাঙালী ভদ্রলোকদের ঘৃণার ইতিহাস অনেক পূরানো । এই ঘৃণার প্রতিবাদে ১৮৭০ এর সময়ে নমশূদ্র’রা বাকরাগঞ্জ এবং ফরিদপুরে বর্ন হিন্দুদের সামাজিক বয়কট করা শুরু করেন , ধোপা নাপিত এমনকি বাবুদের জমিতে কাজ করা বন্ধ করে দেওয়া হয় । ১৯২৮ সালে যশোরের মুসলমান এবং নমশূদ্র বর্গাদারেরা উচ্চ শ্রেণী হিন্দু জমিদারদের বিরুদ্ধে ধর্মঘট পালন করেন এবং উচ্চ পারিশ্রমিক নির্দিষ্ট করতে জমিদার দের বাধ্য করেন । ১৯৩৩ সালে এম সি রাজা কেন্দ্রীয় আইন সভায় অস্পৃশ্যতা বিলোপ বিল উত্থাপন করলে বাঙলার প্রত্যেক হিন্দু সদস্য এই বিলের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন ।অবশেষে এম সি রাজা শ্লেষপূর্ণ মন্তব্যে বলেন ‘ এটা বিস্ময়কর ………… বিরোধী দলের অধিকাংশ সদস্য বাঙলা প্রদেশের এবং তাঁরা বলেন যে ,সেখানে কোনো অস্পৃশ্যতা নেই’ ।
    স্বাধীনতার পূর্বে যোগেন্দ্র মণ্ডল এবং অন্যান্য নমশূদ্র রাজবংশি নেতাদের নেতৃত্বে বাঙলায় বিশেষত উত্তর এবং পূর্ব বাঙ্গলায় মুসলমানদের সাথে নমশূদ্রদের একজোট লড়াই ১৯৩৫ সালের সময়ে থেকে উচ্চ বর্ণের হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালী ভদ্রলোকদের বাঙলার রাজনীতি থেকে ,ক্ষমতা থেকে শত হস্ত দূরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল । একই সাথে চণ্ডালদের বৃহৎ হিন্দু পরিবারের সদস্য হিসাবে গণ্য করে ভদ্রলোক সমাজ তাদের আন্দোলনের রাশ নিজেদের হাতে রাখার প্রয়াস চালিয়েছেন দীর্ঘসময় ধরে ।

    ১৯৩৬ -১৯৪৬ এই দীর্ঘ দশ বছর বাঙ্গালায় মুসলিম লীগের এবং কোয়ালিশন সরকারের সক্রিয় অংশীদার ছিল নমশূদ্র সম্প্রদায় । নমশূদ্রদের নেতা যোগেন্দ্র নাথ মণ্ডল কেবল মাত্র সুরাবর্দি’র মন্ত্রীসভায় মন্ত্রী ছিলেন তাই নয় পরবর্তীতে স্বাধীন পাকিস্তানের কনস্টিটিউয়েন্ট অ্যাসেম্বলির অস্থায়ী প্রধান এবং জিন্নার অধীন পাকিস্তানের প্রথম আইনমন্ত্রী ও শ্রমমন্ত্রী হয়েছিলেন । যখন বল্লভ ভাই প্যাটেলের ইশারায় মুম্বাই কংগ্রেস বাবা সাহেব আম্বেদকারের কনস্টিটিউয়েন্ট অ্যাসেম্বলির নির্বাচনে পরাজয় নিশ্চিত করেন তখন বাঙলার এই নমশূদ্র নেতা , মুসলিম লীগের সমর্থনে আম্বেদকারকে বাঙলা থেকে নির্বাচিত করে কনস্টিটিউয়েন্ট অ্যাসেম্বলিতে পাঠান । যোগেন্দ্র নাথ মণ্ডল , নমশূদ্র সম্প্রদায় এবং মুসলিম লীগের সমর্থন না থাকলে আম্বেদকার আমাদের সংবিধান রচয়িতা হতে পারতেন না এবং ভারতবর্ষের আপামর তপসিল জাতি উপজাতি সংবিধানের মাধ্যমে আজকে যে ন্যূনতম সুবিধা ভোগ করছেন তা হয়ত অন্যরকম হত ।

    যোগেন্দ্র নাথ মণ্ডল বাঙালী ভদ্রলোক সমাজের চরিত্র ,নমশূদ্রদের প্রতি তাদের রক্তে চারিত চতুবর্ন প্রথার ঘৃণা বিষয়ে অভিজ্ঞতা জনিত সূত্রে অবগত ছিলেন । বর্ণহিন্দুদের নেতৃত্বে হিন্দু প্রধান পশ্চিমবঙ্গে পদদলিত হওয়ার তুলনায় সমগোত্রীয় ,সম সংস্কৃতির গরীব মুসলমান নমশূদ্রদের কাছে বেশী আপন ছিল । যোগেন্দ্র নাথ মণ্ডলের নেতৃত্বে বাঙ্গলার নমশূদ্র সম্প্রদায় দেশভাগের বিরোধে অখণ্ড বাঙলার সপক্ষে ভোট দেন । দেশভাগের পরে যোগেন্দ্র নাথ মণ্ডল এবং নমশূদ্র সম্প্রদায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে থেকে যাওয়া বিষয়ে সিধান্ত গ্রহণ করে । ১৯৪৬-১৯৫২ সালের মধ্যে পূর্ববঙ্গ থেকে এদেশে আগত উদ্বাস্তুদের ৯৫% ছিলেন উচ্চ বর্ণের হিন্দু -বাঙলার বিপুল পরিমাণ নিন্মবর্গের অধিবাসী সেই সময়ে পুর্ব পাকিস্তানেই রয়ে যান । বিভিন্ন কারনে জিন্নার মৃত্যুর পরে সেকুলার পাকিস্তান ক্রমে ইসলামী পাকিস্তানে পরিবর্তিত হতে থাকে । ১৯৫২ -১৯৬৪ এই সময়ের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানে নমশূদ্রদের ওপর সাম্প্রদায়িক আক্রমণ বাড়তে থাকে । ১৯৫১-৫২ সাল থেকে দলে দলে নমশূদ্ররা মূলত বনগাঁ ,গেদে ,রানাঘাট সীমান্ত দিয়ে এদেশে চলে আসতে থাকেন । ১৯৬৪ সালের হজরত বালের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতে এবং পাকিস্তানে বিপুল দাঙ্গা সংগঠিত হোলে নমশূদ্রদের এদেশে আসার ঢেউ চরমে পৌঁছায় ।

    কিন্তু ততদিনে কলকাতায় এবং কলকাতার আসেপাশে ১৯৪৬-১৯৫২ এর সময়ে এপারে আসা বর্ন হিন্দুরা বিভিন্ন সরকারী এবং জবরদখল কলোনিতে স্থায়িত্ব লাভের পথে । কমিউনিস্ট পার্টি সরকারী ,ব্যক্তিগত এবং বেসরকারি জমি দখল করে উদ্বাস্তু বস্তি’ এবং উদ্বাস্তুদের সমর্থনে আন্দোলন রত। অন্যদিকে দেশভাগের পরের দিকে ওপার থেকে এপারে আসা হতদরিদ্র ,নেতৃত্বহীন নমশূদ্র উদ্বাস্তুদের বেছে বেছে পাঠিয়ে দেওয়া হতে থাকে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন উদ্বাস্তু ক্যাম্পে - কুপার্স ক্যাম্প ,ধুবুলিয়া ক্যাম্প ইত্যদি ।পশ্চিমবঙ্গে মূলত কলকাতার আসে পাশে ভদ্রলোক বাঙ্গালী উদ্বাস্তুদের কলোনিতে তখন নমশূদ্রদের ঠাই নেই । সরকারী মতে ইতিমধ্যে উদ্বাস্তু চাপে পশ্চিমবঙ্গ নাজেহাল সুতরাং ১৯৫৩ সাল থেকে বেছে বেছে নমশূদ্র উদ্বাস্তুদের আন্দামানে পাঠানো হতে থাকে । ১৯৫৬ সালে দণ্ডকারণ্য প্রোজেক্ট গড়ে উঠলে বাঙলা থেকে বহু দূরে দণ্ডকারণ্য ,মধ্যপ্রদেশ ,উড়িষ্যার মালকানগিরি এবং ভারতের বিভিন্ন দুর্গম প্রান্তে স্থান হতে থাকে এই সমস্ত হতদরিদ্র মূলত কৃষিজীবী নমশূদ্র উদ্বাস্তুদের । সরকারী মতে ভারতের ১৬৪ টি দুর্গম জায়গায় এই অসহায় নমশূদ্র উদ্বাস্তুদের ছড়িয়ে রাখা হয় । আবহমান কালের ছোটলোকদের প্রতি ঘৃণায় ভদ্রলোক বাঙ্গালী সমাজ ভুলে যায় এই সব হতদরিদ্র নমশূদ্র উদ্বাস্তুদের নিয়তির কথা ।

    মরিচঝাঁপির রাজনীতি
    --------------------------
    ভোট বুভুক্ষু বামপন্থী রাজনৈতিক নেতাদের এই হতভাগ্য উদ্বাস্তুদের কথা মনে পড়তে থাকে ১৯৭০ এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে । তার আগে যুক্তফ্রন্ট সরকার এবং একাত্তরের কংগ্রেসি শাসনের মধ্যে দিয়ে গেছে পশ্চিমবঙ্গ । রায়পুরের কাছে মানা ক্যাম্পে ১৯৭৪ সালে সি আর পি এফ এর গুলিচালনায় তিনজন উদ্বাস্তু মৃত্যুর পর মাননীয় সি.পি.আই.এম সাংসদ সমর মুখার্জির নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি মণ্ডলী মানা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন । জনসভা অনুষ্ঠিত হয় । সমর বাবু কেন্দ্রীয় পুনর্বাসন মন্ত্রীকে চিঠি লেখেন যে উদ্বাস্তুদের পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চলে পুনর্বাসন দেওয়া যেতে পারে । ১৯৭৫ সালে'র জানুয়ারি মাসে কমরেড জ্যোতি বসু ভিলাইএ জনসভা শেষে উদ্বাস্তু নেতা সতীশ মণ্ডল এবংউদ্বাস্তুদের এক প্রতিনিধি মণ্ডলীর সাথে দেখা করে প্রতিশ্রুতি দেন যে সি. পি আই.এম ক্ষমতায় এলে পশ্চিমবঙ্গে ,সুন্দরবন অঞ্চলে তাদের পুনর্বাসন দেবেন । ১৯৭৭ সালে প্রথম বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় এলে উদ্বাস্তু নেতা সতীশ মণ্ডলের নেতৃত্বে দণ্ডকারণ্যের এক উদ্বাস্তু প্রতিনিধি মণ্ডলী রাইটার্সে জ্যোতি বসুর সাথে সাক্ষাৎকার এবং আশ্বাস অবশেষে দণ্ডকারণ্যে ফিরে গিয়ে ডাক দেন “ চলো সুন্দরবন “ । ১৯৭৮ সালের মার্চ মাসে দণ্ডকারণ্যের প্রথম উদ্বাস্তু দল মরিচ ঝাঁপিতে এসে পৌঁছান ।

    যে যায় লঙ্কায় সে হয় রাবণ
    ------------------------------
    ইতিমধ্যে বিপুল সংখ্যা গরিষ্ঠতায় ক্ষমতায় বামফ্রন্ট । হতদরিদ্র , সম্পদহীন ,ছোটলোক নমশূদ্র উদ্বাস্তু তাদের কাছে আপদ বিশেষ । যে মরিচঝাঁপিতে পুনর্বাসনের আশ্বাসে দণ্ডকারণ্য ছেড়ে দলে দলে নমশূদ্র উদ্বাস্তুদের পশ্চিমবঙ্গে আগমন সেই মরিচঝাঁপি তখন হয়ে পরে সুন্দরবন রিজার্ভ ফরেস্টের অংশ এবং উদ্বাস্তুদের অবস্থান বে -আইনি । পশ্চিমবঙ্গে উদ্বাস্তুদের রাখবার কোন জায়গায় নেই ।বিভিন্ন জায়গায় সিপিএম নেতৃত্ব বাস্তু তন্ত্র বিপর্যয়ের দোহাই দিতে থাকে ।স্বয়ং জ্যোতি বসু টাকি ,ছোট মোল্লাখালিতে জনসভা করেন । আসে পাশের দ্বীপের বাসিন্দাদের বোঝানো হতে থাকে মরিচঝাঁপির উদ্বাস্তুরা তাদের জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে । এইভাবে উদ্বাস্তু উচ্ছেদের পটভূমী তৈরি হতে থাকে । কিন্তু যখন ধমক চমকে কাজ হলনা , মরিচঝাঁপির একজন উদ্বাস্তুও পুনরায় স্বেছায় দণ্ডকারণ্য ফিরে যেতে রাজী হলেন না তখন শুরু হোল ভাতে মারার চক্রান্ত , অমানবিক অর্থনৈতিক অবরোধ। ২৬ সে জানুয়ারি ১৯৭৯ ৩০টি পুলিশ লঞ্চ ঘিরে ফেলে মরিচ ঝাঁপি । ২৭ সে জানুয়ারি ১৪৪ ধারা জারী হয়। মরিচ ঝাঁপি থেকে বেরনো এবং ঢোকা নিষিদ্ধ করা হয়ে যায় । চালানো হয় কাঁদানে গ্যাস , মরিচঝাঁপির মিষ্টি জলের সূত্র টিউবওয়েল উপড়ে ফেলা হয় ,জ্বালিয়ে দেওয়া হয় উদ্বাস্তুদের খড়ের ঘর । ক্ষুধার তাড়নায় নদী পেরিয়ে অপরপারে কুমিরমারি থেকে খাদ্য সংগ্রহের আগ্রহে যাওয়া মরিচঝাপির বাসিন্দাদের কাঠের নৌকা লঞ্চের আঘাতে ডুবিয়ে দেওয়া চলতে থাকে । ৩১ সে জানুয়ারি ১৯৭৯ উদ্বাস্তুদের ওপর প্রথম গুলি চলে ,বাসিন্দাদের মতে ৩৬ জন এই ঘটনায় মারা যান । এরই মধ্যে পুলিশের চোখ এড়িয়ে নদী সাঁতরে একজন উদ্বাস্তু কলকাতা প্রেস ক্লাবে এসে কুমিরমারিতে গুলি চালনার বিবরণ দিলে অমৃতবাজার / আনন্দবাজার পত্রিকা ফেব্রুয়ারি মাসে তাদের কাগজে মরিচঝাঁপির অত্যাচারের বৃতান্ত ছবি সমেত প্রকাশ্যে আনে । বিধানসভায় কাশিকান্ত মৈত্র হাঙ্গামা বাঁধান , বিরোধীরা উদ্বাস্তুদের প্রতি অমানবিক অত্যাচারের প্রতিবাদে ওয়াক আউট করেন । মরিচঝাঁপি উদ্বাস্তুদের সমর্থকেরা তাদের প্রতি অমানবিক অত্যচার এবং অর্থনৈতিক অবরোধের বিচারের আশায় হাইকোর্টে মামলা করেন -বিচারপতি উদ্বাস্তুদের সপক্ষে রায় দেন , কিন্তু অর্থনৈতিক অবরোধ চলতেই থাকে -অনাহারে ,পিপাসায় ,অপুষ্টিতে মরিচঝাঁপির বাসিন্দারা মরতে থাকেন ।

    জ্যোতি বসু এবং সিপিএম নেতৃত্ব ,বিভিন্ন ধরনের খবর হাওয়ায় ভাসাতে থাকেন - মরিচঝাঁপি আন্তর্জাতিক চক্রান্ত ,সেখানে অস্ত্র প্রশিক্ষণ শিবির চলছে ,প্রেসের উচিৎ একটি স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে বেশী উত্তেজক খবর পরিবেশন না করে জাতীয় স্বার্থে সরকারের অনধিকার প্রবেশ কারীদের উচ্ছেদের সমর্থনে বক্তব্য রাখা । কেন্দ্রে তখন মোররাজি দেশাই এর টলমলে সরকার ,জ্যোতি বসুর সমর্থন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় , মরিচঝাঁপি’র ঘটনা জেনেও কেন্দ্র চুপ করে থাকা শ্রেয়মনে করে । অন্যদিকে এতকাল উদ্বাস্তুদের সমর্থনে রাজনীতি করে আসা সিপিএম ততদিনে সরকারে আসীন -সি.পি. আই .এম রাজ্য সেক্রেটারি প্রমোদ দাসগুপ্ত ঘোষণা করেন 'there was no possibility of giving shelter to these large number of refugees under any circumstances in the State ‘।

    জ্যোতি বসুর অনুগামী বাঙালী ভদ্রলোক সমাজ প্রমাদ গোনেন যে যদি মরিচঝাঁপি উচ্ছেদ করা না যায় এবং সরকারী সাহায্য বিনা নমশূদ্র উদ্বাস্তুরা সুন্দরবনের দুর্গম প্রান্তরে টিকে যান তাহলে সেই উধাহরনে বাঙলার বাইরে যে সমস্ত অঞ্চলে উদ্বাস্তুরা পচছেন দলে দলে বাঙলায় এসে ভিড় জমাবে । বাঙলার রাজনীতি অর্থনীতি এবং সংস্কৃতির নিয়ন্ত্রক উচ্চ বর্ণের বাঙ্গালী ভদ্রলোক বিক্ষিপ্ত কিছু ব্যাতিক্রম বিনা দলমত নির্বিশেষে স্বার্থের খাতিরে নীরব এবং উদাসীন হয়ে যান ।বর্ণ বিদ্বেষের বীজ তাদের রক্তে প্রোথিত । শিক্ষার গর্বের মুখোশের পেছনে সাম্প্রদায়িক ,মুসলমান এবং নমশূদ্র বিদ্বেষী বাঙ্গালী ভদ্রলোক । এনাদেরই প্রতিভূ পণ্ডিত সত্যেন্দ্রনাথ সেন ১৯৩৩ সালে এম সি রাজা কেন্দ্রীয় আইন সভায় অস্পৃশ্যতা বিলোপ বিল উত্থাপন করলে তার বিরোধিতায় বলেছিলেন ‘ বৈবাহিক বিধানের গুরুতর লঙ্ঘনই হল অস্পৃশ্যদের উৎপত্তির মুল বৈশিষ্ট্য …….. তাদের পেশা ,তাদের আচার-আচরণ ও তাদের সংস্কৃতির জন্য তারা কখনও বর্ণ হিন্দুদের সমপর্যায়ে আসতে পারেনা’। সুতরাং যারা আমাদের সমপর্যায়ের নয় তাদের নিয়ে কে মাথা ঘামায় ।

    মরিচঝাঁপি ,শেষ লড়াই
    -------------------------------
    অর্থনৈতিক অবরোধ , ক্ষুধা এবং পিপাসায় ক্লান্ত মরিচঝাঁপির নমশূদ্র উদ্বাস্তুরা তাও ঘাস পাতা খেয়ে মাটি কামড়ে পরে থাকেন । খাদ্য হয়ে দাঁড়ায় গেঁড়ে গুগলি এবং নদীর ধারে গজানো যদু পালং শাক । ২৬ সে জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক অবরোধ ,মধ্যে কিছুদিনের জন্য হাইকোর্টের নির্দেশে লঘু হলেও পুলিশের বোট এবং হার্মাদ বাহিনী ঘিরে রাখে মরিচঝাঁপি । বাঙলার বিখ্যাত বুদ্ধিজীবী সমাজের কাছে অশিক্ষিত নমশূদ্রদের প্রতি চূড়ান্ত মানব অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ততদিনে নন ইস্যু । ১৩ই মে ১৯৭৯ শুরু হয় চূড়ান্ত আক্রমণ -পুলিশ এবং স্থানীয় সিপিএম গুন্ডা বাহিনী রাত্তিরের অন্ধকারে মরিচঝাঁপি আক্রমণ করে । নিরস্ত্র অসহায় হতদরিদ্র উদ্বাস্তুদের কুঁড়ে ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া দিয়ে শুরু হয় নির্যাতন -ছেলেদের এবং মেয়েদের আলাদা করা হয় অধিকাংশ যুবক উদ্বাস্তুদের গ্রেপ্তার করা হয় । অসহায় উদ্বাস্তু মহিলাদের গন ধর্ষণ চলতে থাকে । পলায়নরত উদ্বাস্তুদের নৌকা ডুবিয়ে দেওয়া হয় । কম পক্ষে ১০০-১৫০ জন কে খুন করে ফেলে দেওয়া হয় নদীর জলে । তিন দিন ধরে তাণ্ডব চালানোর অবশেষে ১৬ই মে ১৯৭৯ মরিচঝাঁপি উদ্বাস্তু শূন্য হয় ।

    হাইকোর্টের আদেশে ২৪শে জুন ১৯৭৯ আইনজীবীরা বিধ্বস্ত মরিচ ঝাঁপি পরিদর্শন করে এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের যথাসম্ভব বিবরণ পেশ করেন । ১৩ই জুলাই ১৯৭৯ হাইকোর্ট রায় দেয় ‘ In my opinion ,this application is totally misconceived .This land belongs to the Government. This the reserved forest within the menaing of Indian Forest Act 1927 ‘ মাত্র দু লাইনে মরিচঝাঁপির উদ্বাস্তু বাসিন্দাদের ওপর যাবতীয় অত্যাচার নিপীড়ন, পুলিশ এবং গুন্ডাদের তাণ্ডব, হত্যা ,লুঠতরাজ, ঘেরাও অর্থনৈতিক অবরোধ বিষয়ে রায় দিয়ে দেওয়া হয় ‘ So far as the question of use of force is concerned this is denied and disputed. Accordingly, I am not going into such disputed facts herein’

    মরিচঝাঁপি উচ্ছেদের পরে 10,260টি পরিবার কে শুয়োর গাদা করে দণ্ডকারণ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ,কিন্তু মরিচঝাঁপিতে বসবাসকারী বাকি ৪,১২৮ টি পরিবারের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি । ফিরতি পথে অনাহারে ,মরিচঝাঁপিতে পিপাসায় ,কাশীপুর ,কুমিরমারি ,মরিচঝাঁপি তে পুলিশের গুলি চালনায় হয় অধিকাংশ মৃত অথবা এখানে ওখানে ফুটপাথে বস্তিতে পুলিশের চোখ এড়িয়ে বসবাস করছেন । সরকারী মতে মাত্র দু জন এই রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে প্রান হারান -প্রত্যক্ষদর্শী এবং গবেষকদের মতে সংখ্যাটি ১০০-১৫০ হোলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই । তখন টেলিভিশন প্রাগৈতিহাসিক পর্যায়ে , ১৪৪ ধারা পুরো এলাকা জুড়ে ,সংবাদপত্রের প্রবেশ নিষেধ তাই এই বিজয়ের উৎসব অনুসরণ করতে আমাদের 'বরখা দত্ত’ নয় বরং কিছু গবেষক , তথ্যচিত্র ,সাক্ষাৎকার এবং প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানে নির্ভর করতে হয় - কারন যারা লিখতে পারতেন সেই ঘোষ- গাঙ্গুলি -চ্যটার্জি - রায় মহাশয়ের মত বিখ্যাত বাঙ্গালী বর্নহিন্দু বুদ্ধিজীবীকুল আমাদের জন্য এই বিখ্যাত বিজয় উৎসবের বিষয়ে কিছুই প্রায় লিখে উঠতে পারেন নি । কেবলমাত্র অন্নদা শঙ্কর রায় ,সুনীল গাঙ্গুলি এই জঘন্য অপরাধের বিরুদ্ধে কিছুটা হলেও সরব হয়েছিলেন । মরিচঝাঁপি ইতিমধ্যে চলে গেছে বিস্মৃতির ওপারে ।

    আজকে বাঙালীর সেই লজ্জাজনক ইতিহাস স্মরণের দিন। রোহিত ভেমুলার মৃত্যুতে গর্জে ওঠা আপামর বাঙালীর আত্মদর্শনের দিন । গণহত্যা বিস্মরণের বিরুদ্ধে সচেতনতার দিন । কয়েকদিন পরে নূতন সরকার ক্ষমতায় আসবেন -তা সে যেই আসুন ১৯৭১ রাজাকার বাহিনীর যুদ্ধ অপরাধের যদি বিচার হতে পারে -একই সময়ে ঘটে যাওয়া পল পটের যদি বিচার হয় তাহলে এখনো অসংখ্য প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী মজুত থাকা স্বত্বেও বাঙালীর ইতিহাসে এই কুখ্যাত দলিত গণহত্যা ,সমাজের সব থেকে নিন্মবর্ন দরিদ্র অধিবাসীদের সাথে ঘটে যাওয়া এই নির্মম অনাচারের যেন বিচার হয় ।

    পুনঃ ঃ-
    তুষার ভট্টাচার্য মহাশয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এবং সমস্ত বিরোধিতা অগ্রাহ্য করে মরিচঝাঁপি বিষয়ে একটি অসামান্য তথ্যচিত্র প্রস্তুত করেছিলেন -তথ্য চিত্রটি সংলগ্নিত , সময় পেলে দেখবেন ঃ-
    Watch “MARICHJHANPI 1978-79 : Tortured Humanity” on @Vimeo https://vimeo.com/23944832
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৩ মে ২০১৬ | ৩৫৫৩ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    নবীন - Suvasri Roy
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | 127.194.3.102 (*) | ১৩ মে ২০১৬ ০৫:৫৮53693
  • সে সময় পান্নালাল ডাশগুপ্ত (প্রমোদবাবুর কেউ নন নিশ্চয়ই?) দণ্ডকারণ্যে উদ্বাস্তুদের অবস্থা বা দুরবস্থা নিয়ে লিখেছিলেন।
    জ্যোতির্ময় দত্ত তো অনেক কিছুই লিখেছিলেন।
    শৈবাল গুপ্ত কিছু কিছু লিখেছিলেন।
    সাংবাদিক সুখরঞ্জন সেনগুপ্ত তো অজস্র লিখেছেন। মরিচঝাঁপি দ্বীপে তিনি প্রথম-আসা সাংবাদিক, নির্দিষ্ট বিবরণ দিয়েছিলেন।
    কাশীকান্ত মৈত্র বিধানসভায় বলেছিলেন, নিজের চোখে দেখা কথা।

    একেবারে কেউ কিচ্ছু বলেন নি, তা নয়। তবে ভদ্রলোক বাঙালি সেসব তেমন পাত্তা দেয় নি। হতে পারে সেটা 'ছোটোলোকের' ব্যাপার, তাই লাপাত্তা। হতে পারে তখন বাঙালি সিপিএমে বামপন্থার চরম শৃঙ্গার-শিৎকার পাচ্ছিল, তাই সে মধুযামিনী ক্ষয়ে ভয় পাচ্ছিল।

    কে জানে।
  • | 127.194.3.102 (*) | ১৩ মে ২০১৬ ০৬:০৭53694
  • 'ডাশগুপ্ত'-টা টাইপো। পান্নালাল দাশগুপ্ত
  • Debabrata Chakrabarty | 212.142.91.170 (*) | ১৩ মে ২০১৬ ০৬:৩১53695
  • জ্যোতির্ময় দত্ত ,গৌর কিশোর ঘোষ সহমর্মী ছিলেন -কিন্তু মুল ঘটনার সময়ে ১৪৪ ধারা জারী ছিল , সাংবাদিক দের , রাজনৈতিক নেতাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল আর সেই সময়ে ইলেকট্রনিক মিডিয়া অতি সীমাবদ্ধ ছিল । কাশিকান্ত মৈত্র সম্ভবত যশোরের লোক ছিলেন -একটা স্মৃতি ছিল নিজের জেলার লোকের প্রতি । আজ পর্যন্ত একটা তদন্ত কমিশন পর্যন্ত গঠন হলনা ।
  • এজি | 37.63.181.130 (*) | ১৩ মে ২০১৬ ০৭:১৭53696
  • "হাইকোর্টের আদেশে ২৪শে জুন ১৯৭৯ আইনজীবীরা বিধ্বস্ত মরিচ ঝাঁপি পরিদর্শন করে এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের যথাসম্ভব বিবরণ পেশ করেন "। ... এই বিবরণটি কোথায়?
    আর ১৩ই জুলাই ১৯৭৯ তে হাইকোর্ট এর রায় যদি আবেদনকারীর পছন্দ না হয় , তাহলে তিনি ডিভিশন বেঞ্চে যেতে পারতেন ... আর এই আবেদনকারী কে বা কারা ? সেই তথ্যটাও জরুরি।

    আর এই নারকীয় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কেবল সাঁতরে পালিয়ে আসা মাত্র একজন উদ্বাস্তু ? প্রতিবেদনের স্বার্থে তার নামটা জানানোও জরুরি নাহলে বড়োই একপেশে লাগছে ।
  • Debabrata Chakrabarty | 212.142.91.170 (*) | ১৩ মে ২০১৬ ০৭:৫১53697
  • লেখাটির সাথে একটি তথ্যচিত্র বর্তমান আপনি সেটি দেখতে পারেন , প্রায় এক ঘণ্টার তথ্যচিত্র - সম্ভবত একেপেশে নাও লাগতে পারে । উদ্বাস্তু প্রত্যক্ষদর্শী ৩১সে জানুয়ারি'র গুলি চালনার সময়ে সাঁতরে এপারে এসে কলকাতা প্রেস ক্লাবে এসে ঘটনার বর্ণনা দেন । কিন্তু আনন্দবাজার /অমৃতবাজার প্রতিবেদক তার নাম প্রকাশ্য করে দিলে তিনি গ্রেপ্তার হন । সেই উদ্বাস্তু মহোদয়ের নাম Saphalananda হালদার ।এই ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর কলকাতার বিভিন্ন প্রেস মরিচঝাঁপি পরিদর্শন করেন এবং সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ্য হতে থাকে । এই বিসয়ে গুরুচণ্ডালী থেকে 'অপ্রকাশিত মরিচঝাপি ' নামে একটি পুস্তক প্রকাশিত হয়েছে । বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে ২০১৫ 'র জানুয়ারি মাসে , বইটির মূল্য ২০০ /- অনেক গুরুত্ব পূর্ণ তথ্য সেখানে বর্তমান । আইনজীবীদের ফটোগ্রাফ সমেত বিবরণ ,আবেদনকারী কে বা কাহারা , কেন তারা আর মামলা টানতে পারেনি এই ধরনের বিস্তারিত তথ্য উল্লেখিত পুস্তকটিতে উপলব্ধ ।
  • pi | 233.176.42.107 (*) | ১৩ মে ২০১৬ ০৭:৫২53698
  • তুষার ভট্টাচার্যের সম্পাদনায় গুরু থেকে 'অপ্রকাশিত ,মরিচঝাঁপি' প্রকাশিত হয়েছিল। আপনি দেখেছেন কিনা জানিনা।
  • Debabrata Chakrabarty | 212.142.91.170 (*) | ১৩ মে ২০১৬ ০৮:০৭53699
  • মরিচঝাঁপির গুলী চালনার সময়ে আহত ,লাসেদের স্তূপে মৃত হিসাবে ফেলে রাখা , পরবর্তীতে পা বাদ যাওয়া এবং মাস দুয়েক জেল খাটা সন্তোষ সরকার এখন ঘুটিয়ারি শরীফের কাছে থাকেন - ঘটনার সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য এখনো উদগ্রীব । যদি আদৌ কমিশন বসে ।
  • | 24.97.29.223 (*) | ১৪ মে ২০১৬ ০২:৪২53700
  • বিস্মৃত হবে কেন? গুরুতেই অচিন্ত্যরূপের একটা খুব ভাল ব্যালান্সড টই আছে। গাংচিল থেকে বেরোন মোটাসোটা দুটো বই আছে। গুরু থেকে বেরোন আরো একটা মোটাসোটা বই আছে।
  • অনিন্দ্য দত্ত | 11.39.36.58 (*) | ১৪ মে ২০১৬ ০৩:৩৯53701
  • খুবই ভাল প্রয়াস। ভাল লেখা বলার মত ক্ষমতা আমার নেই। আসলে লেখার বোদ্ধা আমি নই। দেবু দা র লেখা ভাল লাগে এবং কোন লেখাই আমি ছারি না। একটা কথা, মরীচঝাপি তে কি হয়েছিল এবং এতদিন হয়ে গেলেও এই মর্মান্তিক ঘটনা যারা ঘটিয়েছেন তারা কেন শাস্তি পাবেন না? এটা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। তার সাথে আর একটা অনুরোধ রইল দেবু দা এবং গুরুচন্ডালের কাছে, সিপিএম এর রাজনৈতিক চর্চা মধ্যেই কি এই ধরনের ঘটনার সম্ভাবনা বীজ রয়ছে, এবং এই রাজনৈতিক চর্চা আপামর বাঙালী ভদ্রলোক তথা বর্ন হিন্দু মানসিকতা কে ধারন করার জন্যে কত সম্পৃক্ত এই ব্যাপারে কিছু আলোকপাত আশা করছি।
  • Debabrata Chakrabarty | 212.142.76.126 (*) | ১৪ মে ২০১৬ ০৬:৪৪53702
  • @ অনিন্দ্য বাবু ঃ- বাঙালীর মধ্যে লুকিয়ে থাকা জাতি বিদ্বেষ মরিচঝাঁপি’র ব্যাপারে নির্লিপ্ত থাকার প্রধান কারন -মানে সিপিএম কংগ্রেস এবং তৃনমূল সবার নেতৃত্বই তো এই বাঙালী ভদ্রলোকদের হাতে । তাই দলিতদের ওপর আক্রমণে ওনারা প্রায় নীরব থাকেন ।

    এই বিষয়ে এক অভিজ্ঞতার কথা বলি ১৩ই মে ২০১৬ মোটামুটি তৃনমূল পন্থী বুদ্ধিজীবীদের উদ্যোগে অ্যাকাডেমির বাইরে মরিচঝাঁপি দিবস পালনের এক অনুষ্ঠান ছিল । বক্তা /শ্রোতা সবাই চ্যটারজি, মৈত্র , রায় ইত্যাদি ,ছিলেন প্রসূন ভৌমিক সঞ্চালক এবং বক্তা হিসাবে -আর দলিত প্রতিনিধি হিসাবে ছিলেন মনোরঞ্জন ব্যাপারী -যিনি জীবনে মরিচঝাঁপি জাননি ।

    তা আমার পাশে বসে ছিলেন তুষার ভট্টাচার্য বাবু ,ওনার তথ্যচিত্র টি ওখানে দেখান’র কথা ছিল আর উনি সাথে করে এনেছিলেন মরিচঝাঁপির ভিক্টিম নারায়ণ মণ্ডল বাবু কে । নারায়ণ মণ্ডল বাবু মমতা ব্যানার্জির শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন ।পরবর্তীতে মমতা দেবীর সাথে মরিচঝাঁপি ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত এবং এখনো পশ্চিমবঙ্গে এখানে ওখানে বসবাস করা উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের দাবীতে মিটিঙেও নারায়ণ বাবু অন্যতম প্রতিনিধি ছিলেন । নারায়ণ বাবু মরিচঝাপি উদ্বাস্তুদের অগ্রণী মুখ ।

    উদ্যোক্তাদের জানানো হয় যে দর্শক মণ্ডলীতে মরিচঝাঁপির একজন ভিক্টিম সশরীরে বর্তমান । উদ্যক্তরা খুব আগ্রহের সঙ্গে ওনার নাম টাম নেন , ডেকে আনা হয় তারা চ্যানেলের সাংবাদিক কে , ফট করে টিভি ক্যামেরার আলো জ্বলে ওঠে -নারায়ণ বাবু ইন্টার্ভিউ দেন । বেশ জোরে জোরেই উত্তেজনার সাথে দিচ্ছিলেন -প্রথম ভাগ টি ছিল পূরানো দিনের অত্যাচারের কথা আর পরের ভাগটি ইন্টারেস্টিং বর্তমান সরকারের তাদের সাথে ধোঁকাবাজির ইতিহাস । ইন্টারভিউয়ের অবশেষে নারায়ণ বাবু আশা করে বসে থাকলেন যে তাকে মঞ্চে বলতে ডাকা হবে । ততক্ষণে বুদ্ধিজীবী গন জেনে গেছেন নারায়ণ বাবু এই সরকারকেও তুলোধোনা করবেন । ব্যাস সাথে সাথে তার অস্তিত্বই মুছে গেল ।সব বক্তা একে একে ভাষণ দিলেন ,বামেদের তুলোধোনা করলেন ,তথ্যচিত্র চালু হোল । নারায়নবাবু কে কেউ এক কাপ চা ও অফার করলনা , অথচ তাদের জন্যই নাকি বুক ফেটে যাচ্ছে ।

    তারা চ্যানেল নারায়ণ বাবুর ইন্টারভিউ দেখিয়েছে -কিন্তু কেবল প্রথম অংশটি । আর তারা চ্যানেলের সেই অনুষ্ঠানে বক্তা ছিলেন ওই সব বর্ন হিন্দু ,যারা দলিতদের নিয়ে ফুটবল খেলেন । নারায়ণ বাবুর হতাশ ,অবহেলিত এবং ভদ্রলোক সমাজের প্রতি তীব্র ঘৃণার অভিব্যক্তি বিশ্বাস করুন আমি সহ্য করতে পারছিলাম না । পালিয়ে এলাম ।
  • pi | 24.139.209.3 (*) | ১৪ মে ২০১৬ ০৬:৪৮53703
  • তৃণমূলের এই কিস্সু না করা, বা এই ধোঁকাবাজি করার কথা সব ডকুমেন্ট সহ সামনে আসা উচিত।
  • Debabrata Chakrabarty | 212.142.76.126 (*) | ১৪ মে ২০১৬ ০৭:০২53704
  • @পাই ঃ- আসবে ডকুমেন্ট তৈরি হচ্ছে -দরকারে আরেকটি ছোট তথ্যচিত্র । তৃনমূল ঠাকুর পরিবার ,মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর পরিবারকে উপঢৌকন দিয়ে নমশূদ্র ভোট ম্যানেজ করছে । কিন্তু নমশূদ্র সমাজ তাদের প্রতি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি বিষয়ে সচেতন - কিন্তু চিন্তার ব্যাপার হচ্ছে এই নমশূদ্র সমাজ বামপন্থী দের বিশ্বাস করেনা , তৃনমূল তাদের সাথে ধোঁকাবাজি করেছে ক্রমে বিজেপি এই সুযোগ নিচ্ছে । একটা চরম বর্ণ হিন্দু রাজনৈতিক দল দলিতদের এই হতাশার সুযোগ নিচ্ছে । আপনি লক্ষ করবেন সীমান্ত অঞ্চলে ,দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় বিজেপি ভোট বাড়ছে এবং এই ভোটের পুরোটাই নমশূদ্র সমাজের ।
  • অনিন্দ্য দত্ত | 11.39.39.81 (*) | ১৫ মে ২০১৬ ১০:০৫53705
  • হ্যা এই তৃনমুল দলটিকে আমিও সমর্থন করেছিলাম প্রথমে। আসলে কোন ওপশন্ ছিল না। সিপিএমের সাথে আমার সম্পর্ক অনেকদিনের। সমর্থন সুচক নয় বিরোধিতা মুলক।আসলে তৃনমুল কোনভাবেই সিপিএমের বিকল্প নয়। ওটা মুলতঃ একটা লুম্পেন দলই হয়ে উঠেছে। তবে এটা ঠিকই যে লুম্পেন হোক আর যাই হোক উচ্চ বর্ণের প্রভাব থেকে বিযুক্ত নয়। আর এই মুহুর্ত্তে আমি ত তৃনমুল আর সিপিএমে কোন তফাৎ খুজে পাই না। একদল মার্কসের জারগন লিখে দেওয়াল ভরায় আর একদল ভরায় না। বাকি কার্যকলাপ ত মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। তা সত্ত্বেও বৃহত্তম মার্কসবাদী দল হিসাবে
  • অনিন্দ্য | 11.39.39.81 (*) | ১৫ মে ২০১৬ ১০:১৫53706
  • হিসাবে সিপিএম ছারা এখনও আমাদের সামনে আর কিছু নেই। যেকোন স্বাধীন উদ্যোগ কে গিলে খেয়ে নেওয়ার ক্ষমতা এখনও এই দলের আছে। সুতরাং সিপিএমের রাজনীতি এবং তার প্রভাব, এই মুল্যায়ন অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক আজকের পরিস্থাতিতে।
  • nibaron | 212.142.125.43 (*) | ১৬ মে ২০১৬ ০৭:৩৩53707
  • দেবব্রত বাবু - মরিচঝাঁপি মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ । এই সময়চিত প্রবন্ধটি অন্য গড়পড়তা মরিচঝাঁপি নিয়ে লেখা থেকে একটু আলাদা , - কিন্তু পণ্ডিত সুরেন্দ্র নাথ সেন এর উদ্ধৃতির তথ্য সূত্র যদি একটু উল্লেখ করেন ।

    অনেকে বলছেন কই ইতিহাস বিস্মৃত হইনি তো এইতো গুরু থেকেই বই প্রকাশিত হয়েছে তাছাড়া একটি ডকুমেন্টারিও আছে আরও বই বাজারে পাওয়া যায় । ঠিকই তো সমাজের ফুটনোটে স্থান পাওয়ার যোগ্য ঘটনা মরিচঝাঁপি নিয়ে অনেক লেখা পত্তর হয়েছে আবার কি ? এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের স্কুল পাঠ্যে স্থান পাওয়া দরকার নতুবা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানবেইনা যে প্রগতিশীল বামফ্রন্ট কি নির্মম ব্যবহার করেছিল নমশূদ্র মরিচঝাঁপির উদ্বাস্তুদের সাথে । এই বর্ণবিদ্বেষী সিপিএম আজকে রোহিত ভেমুলার মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করলে তাই কেউ প্রশ্ন তোলেনা কারন বর্তমান প্রজন্ম ইতিহাস বিষয়ে অজ্ঞাত ।
  • de | 24.139.119.172 (*) | ১৬ মে ২০১৬ ০৮:৪৭53708
  • বামফ্রন্টের তরফ থেকে মরিচঝাঁপি নিয়ে কোন লেখা আছে? এই অমানবিকতার কোন জাস্টিফিকেশন হয় না, তবুও কোন ডকুমেন্ট কি আছে?
  • sch | 132.160.114.140 (*) | ১৬ মে ২০১৬ ০৮:৫৬53709
  • PT মনে হয় এই টইটা দেখেন নি । কেউ ওনাকে একটু দেখিয়ে দিন - উনি ঠিক সিপিএম সরকারের কাজের একটা তুরন্ত সাফাই দিয়ে দেবেন।
    তিনোমূল পন্থী বুধিজীবী - কি রকম অদ্ভুত শোনাল। বিশেষ করে ২০১৬ তে এসে এই কথাটা সোনার পাথরবাটির মতো লাগলো। বুদ্ধি থাকলে কেউ তিনোমূলপ্নথী হয়?
  • Debabrata Chakrabarty | 37.63.151.179 (*) | ১৬ মে ২০১৬ ০৯:২৭53710
  • তিনোমূল পন্থী বুধিজীবী অক্সিমোরন ঠিকই কিন্তু ভদ্র ভাষায় কি আর লিখি বলুন ।

    @nibaron বাবু পণ্ডিত সত্যেন্দ্রনাথ সেন (সুরেন্দ্র নাথ নন ) ১৯৩৩ সালে এম সি রাজা কেন্দ্রীয় আইন সভায় অস্পৃশ্যতা বিলোপ বিল উত্থাপন করলে তার বিরোধিতায় নমশূদ্র অথবা সেইসময়ের অস্পৃশ্য হিসাবে গণ্য বাঙ্গলার দলিত দের সম্বন্ধে যে মন্ত্যবটি সম্বন্ধে আপনি জানতে চাইছেন সেটি আমি উদ্ধৃত করেছি সেটি জয়া চ্যাটার্জি'র " Bengal Divided: Hindu Communalism and Partition, 1932-1947" এই বই থেকে।
  • PT | 213.110.242.21 (*) | ১৬ মে ২০১৬ ১১:১৯53711
  • sch
    দেখেছি।
    আপনি বোধহয় এতদিন রিপ ভ্যান উইঙ্কল হয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। তাই দেখেননি যে এই নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছিল বেশ কিছু দিন আগে যেখানে PT-ও অংশগ্রহণ করেছিল।
    মৃতের সংখ্যা যেখানে ২ থেকে ২০,০০০ পর্যন্ত যাহোক কিছু হতে পারে সেই নিয়ে নতুন কোন প্রামাণ্য তথ্য ছাড়া আলোচনার বিশেষ মানে হয়না।
    আগের আলোচনাটি শেষ পর্যন্ত মরিচঝাঁপির কোন এক বিখ্যাত নেতার ছেলের প্রাসাদোপম বাড়ি তৈরির টাকা কোথা থেকে এল এইরকম কিছু বিতর্কিত ব্যাপারে গিয়ে থামে।
    আর তথ্যচিত্র নির্মাতাদের রাজনৈতিক অবস্থান/বিশ্বাস নিয়েও কিছু কথা হয়েছিল।

    তবে TOI-তে প্রকাশিত একটি লেখাকেই সেই সময়ে সব চাইতে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছিল। লিং-টা এখন খুঁজে পাচ্ছি না।
  • Prativa Sarker | 11.39.38.242 (*) | ১৯ মে ২০১৬ ০৫:৪৮53712
  • মরিচঝাঁপি প্রচন্ড জীবন্ত হয়ে উঠছে দিন কে দিন। এই নির্বাচনের আগে বার বার মরিচঝঁপি নিয়ে লেখালেখি হয়েছে। এবারের বই মেলায় গুরু থেকে তুষারবাবুর বইটা সংগ্রহ করেছি। আগেই পড়েছি দেশকালভাবনা থেকে প্রকাশিত মরিচঝাঁপি : ঘটনা ও রটনা। এছাড়াও টুকরোটাকরা পড়া তো আছেই। মনে হয় তুষারবাবুর ছবিটাও সত্য বোঝার পক্ষে সহায়ক হবে।
  • Debabrata Chakrabarty | 37.104.167.236 (*) | ৩১ জানুয়ারি ২০১৭ ০৭:০১53713
  • Black Day of India - 31 January 1979 :( :(
    Deadliest massacre in the history of independent India, which has been deleted from History books
    ➡ 1,700 Hindus were mercilessly gunned down in Marichjhapi by West Bengal Police on the orders of COMMUNIST CM Jyoti Basu. Many of these were children, women and elderly.
    ➡ More than 100 women were raped again and again by Communist cadres and policemen. After raping them, they were shot, beheaded or brutally beaten to death.
    ➡ 15 innocent children aged 5-10 who had taken shelter in a hut were BEHEADED with knives by Communist cadres and police who were given orders to kill all the Hindu refugees. These innocent children were preparing for the Saraswati Puja (which was on 1 February)
    ➡ After killing them, the communists destroyed the statue of Saraswati that was being decorated by those kids to celebrate the pooja next day.
    ➡ 4,128 families perished in transit, died of starvation, exhaustion, and many were killed in Kashipur, Kumirmari, and Marichjhapi by police firings. The CPIM congratulated its participant members on their successful operation at Marichjhapi
    ➡ Jyoti Basu (Communist) issued prohibitory orders after the murder of 1700 Hindus and blocked the entry of journalists, activists or anyone who could have shed light on this news.
    ➡ This is the worst state-sponsored massacre in the history of India where the government ordered cold-blooded murder of thousands of innocent, unarmed, harmless Hindu refugees just because they were turning out to be a burden.
    ➡ Today marks the 38 years of India's black day - a shameful event in India's independent history when 1700 innocent people were killed by the COMMUNIST PARTY Government and cadres of the party. This news could never come out in open. Hardly anyone in India knows about this massacre of Hindus. On this day, I pray to Maa Saraswati that may their souls rest in peace !!
    ➡ If you want to read more about this, read the book : "The Hungry Tide" by Amitava Ghosh. I am also attaching few links for this incident, which was never covered by any media.
    PS : If you have slightest of sympathy and this story shook you, PLEASE SHARE IT ! Every Indian MUST know the atrocities of Communists and Red Terrorism !
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন