এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • বুদ্ধিমুক্তি আন্দোলনের অগ্রতাপস―ডিরোজিও # পাঁচ

    Ashoke Mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৩ আগস্ট ২০১৬ | ১৮৩৩ বার পঠিত
  • ।। ৭ ।।
    মৃত্যুতেও ডিরোজিও তাঁর এই উচ্চগ্রাম মূল্যবোধের পরিচয় দিয়ে গেছেন। ১৯ ডিসেম্বর ১৮৩১ তিনি ধর্মতলা অ্যাকাডেমি স্কুলে গেলেন বার্ষিক পরীক্ষা নিতে। সেখানেই তিনি দিলেন তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনের শেষ ভাষণ। আশা প্রকাশ করে গেলেন শেষবারের মতো, ড্রামন্ডের এই বিদ্যালয়ের ছাত্রদের মতোই এক দিন আসবে—
    When man to man the world o’er
    Shall brothers be, and a’ that.

    সেখান থেকে ফিরেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। দুরারোগ্য কলেরায় আক্রান্ত হন। আসলে সেই সময় সারা কলকাতা জুড়েই কলেরা এক মহামারীর রূপ নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। ভবানীপুর, বেহালা, মধ্য কলকাতা, লবন হ্রদ, ইত্যাদি নানা এলাকায় যখন কলেরার প্রকোপ প্রতিদিন পঞ্চাশ থেকে একশ জন পর্যন্ত মানুষের প্রাণ হরণ করে চলেছিল, এই মানুষটি তখন সেই সব পাড়াতেই কোথাও তাঁর ছাত্রদের আমন্ত্রণে, কোথাও তাঁর নিজের প্রাণের টানে, বিভিন্ন স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা নিতে ছুটে গেছেন। জেনেশুনেই গেছেন। না গেলেও চলত, তবুও গেছেন। এত দিন যুক্তির পক্ষে সত্যানুসন্ধানের পক্ষে কত কঠিন কথা উচ্চারণ করেছেন, বলেছেন, live and die for truth! আজ কি তিনি মৃত্যু ভয়ে পিছিয়ে যেতে পারেন? বরং বলা যায়, এই মহৎ-প্রাণ যুবক সেদিন প্রাণঘাতী ওলারাক্ষসীকে নিজেই বুঝি হাতে ধরে তাঁর ঘরের দরজাটি চিনিয়ে দিলেন।

    সারা শহরে খবরটা ছড়িয়ে পড়তেই ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ তাঁকে দেখতে আসতে লাগল। কয়েকটি কাগজে খবরটা বেরল। তাঁর প্রিয় ছাত্ররা সব এল দলে দলে। তারাই দু বেলা পালা করে সেবা শুশ্রূষা করতে লাগল। এলেন গ্রান্ট, উইলসন, হেয়ার, ডাফ, প্রমুখ শিক্ষাবিদগণ। আর এলেন—হ্যাঁ, তাঁরাই অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফেললেন সবচাইতে বেশি—বিশপ হিল, রেভারেন্ড মিল ও অন্যান্য চার্চের মান্য যাজকবৃন্দ। গবেষণার গুঞ্জন শুরু হয়ে গেল শহর জুড়ে, এবার বুঝি এই সংশয়বাদী পাতক মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ভয়ে ভীত হয়ে পরম করুণাময় ঈশ্বরের শরণ নিচ্ছে।

    না। যখন যাজকবৃন্দ আসেন সেই সময় তাঁর ছাত্র মহেশ চন্দ্র ঘোষ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি পরে খ্রিস্টান হয়ে যান। তিনি লিখেছেন, বিশপ হিল ঘরে ঢুকে ডিরোজিওকে যিশু ও ঈশ্বরের করুণা ভিক্ষা করতে বলেন। কিন্তু ছয় দিন ব্যাপী মুহুর্মুহু বমি ও মলত্যাগের ক্রিয়ায় সমস্ত শরীর জলশূন্য হয়ে আসা মৃত্যু যন্ত্রণায় অস্থির গোঙানির মধ্যেই সেই মানুষটি ক্ষীণস্বরে বলেন, “আমি এখনও ঈশ্বরের স্বরূপ নির্ণয় করতে পারিনি। জানি না তিনি আছেন না নেই।” তাঁর প্রথম জীবনীকার টমাস এডওয়ার্ডস ১৮৮৪ সালে লিখেছেন, “DeRozio died as he had lived, searching for truth.” তিনি কৃষ্ণমোহনের কাছে শুনেছেন, মৃত্যু শয্যায় শুয়ে ডিরোজিও বাইবেল থেকে কোনো অংশ শুনতে চাননি, তাঁর ছাত্রকে তাঁর সেই প্রিয় কবি টমাস ক্যাম্পবেলের Pleasures of Hope কবিতার প্রথম পর্বের শেষ অংশ অনেকটা পড়ে শোনাতে অনুরোধ করেন। সেই স্কটল্যান্ডের কবি, যিনি ভারতের পরাধীনতার ব্যথায় মর্মজ্বালা অনুভব করেন, আশা করেন একদিন এই দেশ পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে চুরমার করে মুক্ত হবে। যিনি ইংরেজ কোম্পানির শাসনকে ধিক্কার জানান এই বলে,
    Rich in the gems of India's gaudy zone,
    And plunder pil'd from kingdoms not their own,
    Degenerate Trade!

    সেই বৃহৎ কাব্যের যেখানে এসে তিনি ভারতীয় পুরাণের চরিত্রকে রূপকের আকারে স্মরণ করে লেখেন,
    "To pour redress on India's injured realm,
    The oppressor to dethrone, the proud to whelm;
    To chase destruction from her plunder'd shore
    With arts and arms that triumph'd once before,
    The tenth Avatar comes! at Heav'n's command
    Shall Seriswattee wave her hallowed wand!
    And Camdeo bright, and Ganesa sublime,
    Shall bless with joy their own propitious clime!
    Come, Heav'nly Powers! primeval peace restore!
    Love! — Mercy! — Wisdom! — rule for evermore!"
    ডিরোজিও সেই সব স্বপ্নিল শব্দবিন্যাস শেষবারের মতো শুনে যেতে চান।

    জীবন-মৃত্যুর সেই সন্ধিক্ষণে শিষ্যরা আর একবার, শেষবারের মতো প্রত্যক্ষ করল তাদের প্রিয় পরম শ্রদ্ধেয় গুরুর যুক্তিবাদ, মুক্তবুদ্ধির সর্বজয়ী শক্তি, যা শুধু ধর্ম আর ঈশ্বর নিয়ে শুষ্ক তর্ক করতেই শেখায় না, দেশকে ভালোবাসতেও উদ্বুদ্ধ করে। যা চিন্তায় চেতনায় শিক্ষার দ্বারা আহরিত কোনো উপলব্ধিকেই জীবনের কোনো দুর্বলতম বা কঠিনতম মুহূর্তেও হারিয়ে যেতে দেয় না। সুরেশ চন্দ্র মৈত্র অল্প কথায় ভারি সুন্দরভাবে প্রকাশ করেছেন এই শেষের মুহূর্তটি, “নিজের মুক্তি নয়, দেশের মুক্তিই হল তাঁর অন্তিম ইচ্ছা।”

    অনেক বছর বাদে তাঁর স্মরণে সমাধির উপরে যে স্মৃতি স্তম্ভ নির্মিত হয়, তাতে উৎকীর্ণ হয় তাঁরই ১৮২৭ সালে প্রকাশিত The Poet’s Grave শীর্ষক একটি কবিতার কিছু অসাধারণ পংক্তি; যেগুলি পড়তে পড়তে সন্দেহ হয়, দেশের চারদিকে তাকিয়ে এই তরুণ প্রতিভা যেন এক ভবিষ্যত দ্রষ্টার মতো বুঝে গিয়েছিলেন, মৃত্যুর পর তাঁর মতো মানুষদের কতটা সমাদর হবে এই দেশের বেঁচে থাকা মানুষজনদের কাছে, যাদের জন্য তিনি আমৃত্যু এক অনন্যসাধারণ আদর্শ-সিক্ত জীবনসংগ্রাম করে যাবেন:
    Beside the ocean’s foamy surge
    On an untrodden solitary shore.
    Where the wind sings an everlasting dirge,
    And the wild wave in its tremendous roar
    Sweeps o’er the sod! — There let his ashes lie
    Cold and unmourned; … …
    … …
    There all in silence, let him sleep his sleep!
    No dream shall flit into slumber deep।
    No wandering mortal thither once shall wend;
    There nothing over him but the heavens shall weep.
    There never pilgrim at his shrine shall bend,
    But holy stars alone their nightly vigils keep.

    ছাই কেন? দেহাবশেষ নয় কেন? আবার মনে পড়ে যায়, যে দেশটাকে তিনি আপন বলে জেনেছেন, সারা জীবন মেনে এসেছেন, সেখানে মৃত্যুর সঙ্গে যে ছাইয়েরই পারম্পর্য।

    তাঁর প্রথম জীবনী লেখা হল তাঁর মৃত্যুর অর্ধ শতাব্দ পেরিয়ে, যখন অনেক তথ্য হারিয়ে গেছে, তাঁর অনেক লেখা আর খুঁজে পাওয়া যাবে না, যখন তাঁর সমকালের শিষ্য সহকর্মীদের অনেকেই আর বেঁচে নেই। বহু দিন পর্যন্ত তাঁর সমস্ত প্রবন্ধ সঙ্কলন করে প্রকাশ করার কোনোই ব্যবস্থা হল না। অথচ তাঁর মারা যাবার এক মাস পরেই সমকালীন বন্ধু সহকর্মী এবং ছাত্ররা মিলে একটা উদ্যোগ নিয়েছিলেন স্মৃতিরক্ষার ব্যাপারে কিছু করার। একটি কমিটিও গঠিত হয়েছিল। দুঃখের এবং আশ্চর্যের ঘটনা হল, সেই কমিটির সম্পাদক মিঃ ফেনউইক, যা কিছু টাকা পয়সা উঠেছিল, সব আত্মসাৎ করে নেয় এবং তারপর কলকাতা থেকে ডুব মারে। সেই যে সেই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেল, তারপর আর তা কোনোদিনই সম্পূর্ণ করার চেষ্টা হয়নি। গত শতাব্দের মধ্য ভাগ থেকে অনেকেই তাঁর সম্পর্কে লিখেছেন। জীবনী রচনা করেছেন, কবিতা অনুবাদ করেছেন, মূল্যায়ন করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তার বেশিরভাগই অসম্পূর্ণ, ভুল তথ্যে আকীর্ণ, বিভিন্ন দিক থেকে ভ্রান্ত মূল্যায়নের শিকার। সুরেশ চন্দ্র মৈত্র অবশ্য বহু বছর ধরে প্রচুর পরিশ্রম করে খুব যত্ন সহকারে ডিরোজিওর জীবনকে ঐতিহাসিক তথ্যনিষ্ঠার আধারে পুনর্স্থাপন করার এক অসাধারণ প্রয়াস করেছেন। কিন্তু অতীব দুঃখের কথা, মুদ্রণ প্রমাদের নৃত্যনাট্য এবং তথ্য সম্ভার সুসম্পাদনার অভাবে (প্রথম সংস্করণ ১৯৮৮) তার পঠনমূল্য খানিকটা অবগ্রামিত হয়ে গেছে।
    দেখা যাক, মৃত্যু-দ্বিশতবার্ষিকী এসে পড়ার আগে তাঁকে আমরা আমাদেরই মুক্তবুদ্ধির বিকাশের স্বার্থে আর একটু অতিরিক্ত সম্মান জানাতে পারি কিনা।

    তথ্য-উৎস

    সুরেশ চন্দ্র মৈত্র (১৯৮৮), অশান্ত কাল জিজ্ঞাসু যুবক; পুঁথিপত্র, কলকাতা।
    ড: কুমুদ কুমার ভট্টাচার্য (১৯৮৫), রামমোহন-ডিরোজিও: মূল্যায়ন; বর্ণ পরিচয়, কলকাতা।
    বিনয় ঘোষ (১৯৬১), বিদ্রোহী ডিরোজিও; বাকসাহিত্য, কলকাতা।
    পল্লব সেনগুপ্ত (১৯৭৯), ঝড়ের পাখি: কবি ডিরোজিও; পুস্তক বিপণী, কলকাতা।
    Thomas Edwards (2003), Henry Derozio; Radiance, Kolkata
    Poems of Henry Louis Vivian Derozio (1980); Oxford University Press, Calcutta.
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৩ আগস্ট ২০১৬ | ১৮৩৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • avi | 125.187.34.132 (*) | ২৪ আগস্ট ২০১৬ ০৩:১২55476
  • খুব ভালো লাগলো।
  • ashoke Mukhopadhyay | 127.194.43.205 (*) | ২৪ আগস্ট ২০১৬ ০৭:৩১55477
  • ধন্যবাদ!
  • b | 135.20.82.164 (*) | ২৫ আগস্ট ২০১৬ ০৩:০৩55479
  • রঞ্জনদা, অক্ষয় কুমার বল্লে সারনেমটাও বলে দেবেন, নইলে পোটেনশিয়াল কেলোর কীর্তি হতে পারে।
  • ranjan roy | 192.69.74.122 (*) | ২৫ আগস্ট ২০১৬ ০৩:৩২55480
  • b,
    করেক্ট; কান মূলছি।ঃ)))
  • ashoke mukhopadhyay | 127.194.44.228 (*) | ২৫ আগস্ট ২০১৬ ০৭:৫৩55481
  • হা হা হা! (ব্রাকেটে)!! হ্যাঁ, অক্ষয় কুমার দত্তকে নিয়েও লেখা একটা 3/4 ভাগ তৈরী আছে বটে! ঝাড়পোছ করে উত্তোলন করব? দু একটা ধ্বনি ভোট পেলেই ...
  • ranjan roy | 192.69.74.122 (*) | ২৫ আগস্ট ২০১৬ ১২:৪৩55478
  • দারুণ কাজ করছেন আপনি! এবার কি অক্ষয়কুমার?
  • অভি | 233.191.62.170 (*) | ২৬ আগস্ট ২০১৬ ০২:৪৫55482
  • হ্যাঁ হ্যাঁ, হাত তুললাম।
  • π | 24.139.209.3 (*) | ২৬ আগস্ট ২০১৬ ০২:৫০55483
  • হ্যাঁ, অবশ্যই হয়ে যাক।
  • d | 144.159.168.72 (*) | ২৬ আগস্ট ২০১৬ ০৪:২৫55484
  • হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয় নিশ্চয়।

    মন্তব্য করি না বটে কিন্তু পড়ি সবকটা লেখাই।
  • ashoke mukhopadhyay | 69.97.216.124 (*) | ২৭ আগস্ট ২০১৬ ০৪:২০55485
  • প্রচুর ধ্বনি ভোট পাওয়া গেল। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ! অক্ষয় কুমার দত্ত তাঁর বালির বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছেন। শিগগিরই এসে যাবেন!!
  • ranjan roy | 192.69.167.171 (*) | ২৭ আগস্ট ২০১৬ ০৭:৪৮55486
  • শেষে একটা বিনীত প্রস্তাব, মুখুজ্জেমশায় ও গুরুর অ্যাডমিনদেরঃ
    এঁর প্রবন্ধগুলো একত্রিত করে ধরুন (ডিরোজিও, বিদ্যাসাগর, অক্ষয়কুমার, রামমোহন, রামেন্দ্রসুন্দর, রাজেন্দ্রলাল ইত্যাদি) অগ্রতাপসদের নবমূল্যায়ন নিয়ে একটি চটি বের করলে কেমন হয়?
  • Debabrata Chakrabarty | 212.142.76.78 (*) | ২৯ আগস্ট ২০১৬ ০২:৩৩55490
  • অশোক বাবু আপনি নিশ্চয়ই লিখবেন যে এই নূতন বিদ্বৎসমাজের প্রায় সম্পূর্ণ মুসলমান বর্জিত অথচ সেই সময়ে বাঙলায় প্রায় ৪৭% মুসলমান জনসংখ্যা ,সেই অর্থে বাঙালী বিদ্বৎ সমাজ বা বাঙলার রেনেসাঁ বিকাশের মধ্যে যে প্রথম ও প্রধান ট্র্যাজেডি তার প্রথম ট্র্যাজেডি কেবল মাত্র তার হিন্দু কেন্দ্রিক -তা ইয়ংবেঙ্গলই বলুন কি ব্রাহ্মসমাজ । কেবলমাত্র হিন্দু মধ্যবিত্ত শ্রেণী এবং হিন্দু বিদ্বৎসমাজের বিকাশের ফলে তথাকথিত রেনেসাঁ ও রিফর্মেশন আন্দোলন হিন্দুসমাজের মধ্যেই কেন্দ্রীভূত রয়ে গেল । এনলাইটমেন্ট এবং হিউম্যানিসিম এর অগ্রদূত ইয়ং বেঙ্গল তাই হিন্দু সমাজের বাইরের সমস্যা নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামাতে পারেনি - কৃষ্ণমোহন ,দক্ষিনারঞ্জন সাম্প্রদায়িক ছিলেন তা আমি বলছিনা কিন্তু অতিসংকীর্ন রেনেসাঁ বা রিফর্মেশন আন্দোলন কেবল এবং কেবলমাত্র হিন্দু সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল । এই অতিসংকীর্ন তথাকথিত রেনেসাঁর ট্র্যাজেডি প্রকাশ হওয়া শুরু হোল উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিক থেকে -সেই সময় থেকে বাঙলায় মুসলমান মধ্যবিত্ত শ্রেণীর এবং বিদ্বৎগোষ্ঠীর বিকাশ এবং হিন্দু মধ্যবিত্ত ও বিদ্বৎসমাজের ক্রম অবনতির সূত্রপাত । বিশাল মুসলমান সমাজকে প্রাথমিক রেনেসাঁ ও রিফর্মেশন আন্দোলনে সমবেত না করার দুর্বলতা জনিত হিন্দু প্রীতি ক্রমে হিন্দুত্ব প্রীতির মধ্যে দিয়ে সাম্প্রদায়িকতায় পরিনত হোল । যুক্তির বদলে ভক্তি ,সংস্কারের বদলে কুসংস্কার ,উদারতার বদলে সংকীর্ণতা এবং মানবতার পরিবর্তে সাম্প্রদায়িকতার চোরাবালিতে ডুবে গেল সংকীর্ন রেনেসাঁ । মুসলমান বর্জিত তথাকথিত রিফর্মেশন আন্দোলনের প্রায়শ্চিত্ত করা হোল গুরু অবতারে'র পাঁকে মুখ থুবড়ে -আজও সেই পাঁক থেকে গাত্রোত্থান সম্ভব হয়নি । সামারি অফ দা রেনেসাঁ -এটাই সম্পূর্ণ মুসলমান বর্জিত রিফর্মেশন আন্দোলনের ইহাই ভবিতব্য ।
  • ashoke mukhopadhyay | 69.90.56.184 (*) | ২৯ আগস্ট ২০১৬ ০৯:২৬55487
  • এত দ্রুত? এখনও তৃতীয় জন এসেই পৌঁছলেন না। তাছাড়া রামমোহন বিদ্যাসাগরকে সামলানো বেশ কঠিন। আগেই এত সব বিখ্যাত কাজ হয়ে আছে! তবে হ্যাঁ, সবাইকে নিয়েই চেষ্টা করতে হবে। প্রস্তাবের জন্য ধন্যবাদ, রঞ্জনবাবু!
  • 0 | 132.176.27.175 (*) | ২৯ আগস্ট ২০১৬ ১১:৫৭55488
  • বেশ ভালো লাগলো। আপনি কি মুক্তমনায় লেখেন? এই পেজটা ( https://blog.mukto-mona.com/author/ashoke-mukherjee/ ) আপনার?
  • 0 | 132.176.27.175 (*) | ২৯ আগস্ট ২০১৬ ১২:১০55489
  • sorry , লাস্ট পোস্টের প্রশ্নটার উত্তর পেয়ে গেলাম এক্ষুনি :-) রাজেন্দ্রলাল মিত্রের ওপর সিরিজটা পড়তে গিয়ে। ঐ সাইটেও আপনার বিজ্ঞান-বিষয়ক লেখাগুলো খুব ভালো লেগেছে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন