এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  বিবিধ

  • উত্তর-উপনিবেশিক প্রথম সর্বভারতীয় ঐক্যবদ্ধ গণ নাগরিক অভ্যুত্থান
    ক্যা-এনপিআর-এনআরআইসি কুচক্র ধ্বংস হোক

    Ashoke Mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ২২ জানুয়ারি ২০২০ | ৩১২৩ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
  • #নয়া ইতিহাস

    একটা নিতান্ত ব্যক্তিগত কথা দিয়ে কথা শুরু করি।

    ১৯৬৪ সাল। আমি তখন ক্লাশ সিক্স-এ পড়ি। আতপুর হাইস্কুলে। উত্তর ২৪ পরগণা জেলার শ্যামনগর আর জগদ্দলের মাঝখানে একটা ছোট শহরতলির স্কুল। সেইখানে একদিন স্কুলের মেইন গেটে সকাল পৌনে এগারটা নাগাদ একদল বয়স্ক লোক (বিপিএসএফ ছাত্র নেতা) এসে টুলে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিল -- গড়িয়া নামক কোনো একটা জায়গায় কোনো এক দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ কলেজের এক ছাত্র ভূদেব সেন পুলিশের গুলিতে মারা গেছে। তার প্রতিবাদে সেদিন ছাত্র ধর্মঘট ও মিছিল হবে। হইহই করে স্কুল থেকে বেরিয়ে সেদিন এগারটা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত মিছিল করে বাড়ি ফিরতে অনেক দেরি হয়েছিল। কাল ব্যয়ের ব্যাখ্যায় মা-কে হাত পা নেড়ে অনেক কিছু মোদীভাষ্য দিয়েছিলাম, যার একটা কথাও, আজ বেশ ভালোই বুঝতে পারি, আমার বুদ্ধিমতি জননী বিশ্বাস করেননি। যেমন আমরা আজকাল মোদীর বাক্‌তুন এক পিসও বিশ্বাস করি না!

    কিন্তু সেই সেবারে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর কাজে হাতেখড়ি হয়ে গেল। ছাত্র ধর্মঘট, মিছিল, প্রতিবাদ, পোস্টার, দেওয়াল লেখা, ইত্যাদি। সেই থেকে আজ অবধি ঘটে চলা দেশের সমস্ত আন্দোলনের লঘু বা ঘন স্মৃতি মনের ভেতরে সাজানো আছে। ‘’৬৬-র খাদ্য আন্দোলন, ’৬৭-তে যুক্তফরন্ট সরকার ভেঙে দেবার পর ধর্মঘট, নকশালবাড়ি কৃষক বিক্ষোভ, ’৭৪-এর রেল ধর্মঘট, ১৯৭৪-৭৫ সালে জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বে বিহার ও গুজরাতে দুর্নীতি বিরোধী গণ আন্দোলন, ১৯৭৫ থেকে শুরু করে দফায় দফায় ট্রামবাসভাড়া বৃদ্ধি বিরোধী আন্দোলন, '৮০-র দশকে ভাষা ও শিক্ষা আন্দোলন, এইভাবে চলতে চলতে একেবারে সেদিনের সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, চাঁদমনিতে জমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ আন্দোলন। সম সময়ে রাজস্থানে অন্ধ্র প্রদেশে জমি দখল বিরোধী সেজ প্রকল্প বিরোধী আন্দোলন। ১৯৬৪ সালের আগেকার আন্দোলনের প্রায় কিছুই নিজের অভিজ্ঞতায় জানি না। অন্যদের কাছে, সিনিয়র নেতাদের কাছে, কমরেডদের কাছে শুনে শুনে অনেকটা জানি। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখা ইতিহাস খণ্ড থেকেও ক্রমে ক্রমে কিছুটা জেনেছি।

    সেই জানার ভিত্তিতে আজ বোধ হয় বলতে পারি, স্বাধীনতা উত্তরকালে সমস্ত দেশ জুড়ে এত বৃহদাকার ঐক্যবদ্ধ গণ আন্দোলন আর হয়নি। ১৯৭৪ সালের ২২ দিনের রেল ধর্মঘট মাথায় রেখেও বলছি। দেশ ব্যাপী রেল সংযোগের কারণেই সেই সংযোগ হারিয়ে সারা দেশ উত্তাল হয়েছিল। রেল কলোনিগুলিতে এক দিকে চলেছিল জিআরপি সিআরপিএফ প্যারামিলিটারি পুলিশের দাপাদাপি, রেলের কর্মচারীদের ঘর থেকে টেনে তুলে নিয়ে গাড়ি চালানোর চেষ্টা। অপরদিকে ঘর ছাড়া পলাতক রেল কর্মীদের সঙ্গে আমাদের রাতের অন্ধকারে সাইকেলে বা পায়ে হেঁটে গোপন ডেরায় গিয়ে গিয়ে যোগাযোগ স্থাপন, খবরের লেনদেন, অভুক্তদের খাদ্য পানীয় বিতরণ। সেই সব দিনের সেই গরম রক্তের চাষ উঠতি যৌবনে আমাদের অনেককেই স-মগজ মেরুদণ্ডী করে তুলেছিল।

    তবুও আজ বুঝতে পারি, নির্দিষ্ট সমস্যাক্রান্ত জনসমষ্টি ও সংশ্লিষ্ট দাবি আদায়ের নিরিখে সেই সব আন্দোলনের ভৌগোলিক সীমানা যুক্তিসঙ্গত কারণেই বিভিন্ন মাত্রায় সীমিত ছিল।

    এবারের ক্যা বিরোধী এনার্সি বিরোধী আন্দোলন সেই সব সীমানা পার হয়ে দেশের কোনায় কোনায় পৌঁছে গেছে। সমস্যার শিকার এবার আর বিশেষ কোনো জনগোষ্ঠী নয়, সারা দেশের জনগণ। আন্দোলনের দাবিও সেই গোটা দেশের মানুষেরই। শাসক দল বনাম জনগণের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব এর আগে কখনই এতটা অবিমিশ্র দ্বিমেরুভূত চরিত্র অর্জন করেনি। তাই দেখা গেল, অমিত শা নরেন মোদীর সমস্ত অঙ্ক ওলটপালট করে দিয়ে জামিয়া মিলিয়ার ছাত্রদের উপর আক্রমণ গুজরাতি ছক ভেঙে এক আজাদ হিন্দ ছকে পরিণত হয়েছে। আজাদ হিন্দ ছকটা—যাঁরা জানেন বুঝবেন—গান্ধীয়ানা থেকে অনেকাংশেই আলাদা। পাশাপাশি সর্ব ধর্ম পালন (আসলে নিজ ধর্ম পালন ও অপর ধর্ম সহন) করে সাম্প্রদায়িক ঐক্য নয়, ধর্মকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে সরিয়ে রেখে সামাজিক রাজনৈতিক মুদ্দায় সম্মিলন—এই ছিল আজাদ হিন্দ বাহিনীর ভেতরের ছবি। ভারত মাতা কি জয় এবং জয় হিন্দ—দুই শ্লোগানের মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য। সেই জয় হিন্দ আজাদির উত্তপ্ত আহ্বানে সারা হিন্দুস্তান আজ আর একবার জেগে উঠেছে। জামিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে জেএনইউ, আইআইটি, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতা, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, জলন্ধর, চণ্ডীগড়, লক্ষ্ণৌ, পাটনা—সর্বত্র ছাত্র যুবক ও সাধারণ মানুষ দিল্লি জামিয়ার ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়েছে, তাদের ছাত্রছাত্রীদের উপর পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদ করেছে। আর একই সঙ্গে এনার্সি, এনপিআর ক্যা-র বিরুদ্ধে মিছিল করেছে। নানা ছুতোয় সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরি করতে গিয়ে আজ দিল্লির নয়া হিটলাররা যে বৃহত্তর ঐক্য ও সংহতির জন্ম দিয়েছে এক কথায় তা সত্যিই অভূতপূর্ব। চতুর্দিকে শুধু মিছিল আর মিছিল।

    #বিপন্ন দিল্লীশ্বর ও তার পারিষদ বর্গ

    ভাজপা-র তরফে চেষ্টার কোনো ত্রুটি হয়নি। গভীর নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা নিয়ে ওরা চেয়েছিল সারা দেশ জুড়ে একটা মুসলমান বিরোধী দাঙ্গাহাঙ্গামা বাধিয়ে দিতে। সেই প্রক্রিয়ায় ৯ নভেম্বর ২০১৯ একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উৎপাদনের। যেদিন সর্বোচ্চ আদালত সম্পূর্ণ বে-আইনিভাবে মোদীরাজের ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ করে বাবরি মসজিদের জমি তুলে দিয়েছিল রাম মন্দির করার জন্য। মোদী গ্যাং পুরনো সঙ্ঘী মতলববাজি থেকে আশা করেছিল, এর বিরুদ্ধে একটা তীব্র প্রতিক্রিয়া হবে মুসলমানদের মধ্যে। তারা দেশের নানা জায়গায় বিক্ষোভ দেখাবে, কালো ব্যাজ পরবে, পথ অবরোধ করবে, বাসে ট্রেনে আগুন লাগাবে, নরামিত এবং সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকদের কুশপুতুল পোড়াবে। তাতে উত্তেজিত হয়ে হিন্দুদের একাংশ পালটা কিছু করতে চাইবে, বাধা দেবে, ইত্যাদি। আহা, কী সুখকর স্বপ্নই না ছিল সেটা।

    কিন্তু সে আর হল কেউ? মুসলিম জনসমাজ যেন ধনুর্ভাঙা পণ করেছে, তারা কোনো প্ররোচনাতেই ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক এই সঙ্ঘশ্রী ফাঁদে আর পা দেবে না। তাদের পক্ষে সুবিধার দিক হল, ফাঁদের নকশাগুলো অনেক দিনের চেনা, অনেকবার ব্যবহারের ফলে জরাজীর্ণ। ফলে, এমনকি মহম্মদের সঙ্গে দুচারটে পর্নো মেয়ের ছবি সহ সোস্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিলেও তারা তাতে প্রলুব্ধ হয়ে তেমন একটা হইচই বাধিয়ে ফেলছে না। বাবরি মসজিদ হাতছাড়া হলেও তা নীরবে অগ্রাহ্য করে তারা মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ে আসছে। রাম মন্দিরের পাশে আদালত তাদের যে জমি দিতে বলেছিল, তাও তারা সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করে বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা হিন্দুরাষ্ট্রের থেকে আর ভিক্ষার দান নিতেও রাজি নয়।

    হায়, পুরনো কারসাজি যদি কাজে না দেয়, সঙ্ঘের কোচদের এবার থেকে কী যে দুর্গতি হবে কে জানে!

    বিপরীতে তারা একটা অন্য ধরনের আন্দোলনে সামিল হল। আন্দোলনের এই ছকটা দেখিয়েছিল বাংলাদেশের নতুন ছাত্রযুব প্রজন্ম। ২০১৩ সালে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে শাহবাগে জমায়েত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জাগিয়ে তুলে ঘাতক দালালদের শাস্তি চেয়েছিল। নির্ধারিত সাজার দ্রুত রূপায়ণ চেয়েছিল। কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের সমস্ত জেলা থেকে ছাত্রছাত্রী যুবক যুবতীরা দলে দলে এসে গানে কবিতায় আসর সজীব করে রেখেছিল। দিল্লির শাহিনবাগে ব্যাপক সংখ্যায় মহিলাদের জমায়েত সেই ছবিটির ভারতীয় অনুবাদ প্রকাশ করে ফেলে। তারপর কলকাতার পার্ক সার্কাসে, আরও পরে নাখোদা মসজিদের পাশে জাকারিয়া স্ট্রিটে তারই অনুসরণ ঘটে যায়। হ্যাঁ, এ সেই নাখোদা মসজিদ, যেখান থেকে রবীন্দ্রনাথ সদলবলে ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে রাখিবন্ধন পরিয়ে আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন। সেখানেই শুরু হল ভারতভঙ্গ রুখবার পরিকল্পনা!

    আর এই একটা নতুন উপসর্গ দেখা দিয়েছে এই গণ আন্দোলনের মঞ্চে। চারদিকের আন্দোলনের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মহিলাদের অংশগ্রহণ। হিংস্র রাষ্ট্র আজ হঠাৎ আবিষ্কার করেছে নারীরা ঘোমটা পরেও, বোরখায় শরীর ঢেকেও, আর পেছনের সারিতে নেই, তারাই এখন মধ্যমঞ্চের আসনে, আন্দোলনের সামনে। তারাই কর্মসূচি ঠিক করছে, তারাই নরামিতের ভুজুং-রাশির জবাব দিচ্ছে, সৃজনশীল পোস্টার ও কার্টুনের বয়ান নির্মাণ করছে। উন্নাও কাঠুয়া হায়দ্রাবাদের নারীবিধ্বংসী বর্বরতার জবাবে নিঃশব্দে নিভৃতে এক নতুন হিন্দুস্তানি রোজাভা প্লেটুন যেন সাজিয়ে তুলছে।

    এর মধ্যে কয়েকটি জিনিস অবশ্য লক্ষণীয়।

    এক, এই প্রথম ভারতীয় সংসদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা যেভাবে কোটি কোটি মানুষের মজলিশ মিছিলের সামনে পরমাণুর মতো অদৃশ্য হয়ে গেছে—স্বৈর শাসকরা কখনও তা ভাবতে পারেনি। ৩৮০ বনাম ১০০,০০,০০,০০০। সংসদের আইন ফর্মান যে কোটি কোটি মানুষের প্রতিবাদের মুখে খড়কুটোর মতো ভেসে যেতে পারে, উপেক্ষিত ও বাতিল হয়ে যেতে পারে, এ তাদের স্বপ্নেও কখনও মনে হয়নি। স্বাধীনতার পরে এই প্রথম ভারতবাসী বুর্জোয়া ক্ষমতার নাট্যমঞ্চ রূপী সংসদের অন্তঃসারশূন্য কঙ্কালটিকে উন্মুক্ত করে দেখিয়ে দিল। সংসদীয় রাজনীতি অতীতে এতটা কখনও উল্লঙ্গ অসহায় হয়নি।

    দুই, আর তার ফলে প্রতিটি সংসদীয় রাজনৈতিক দল, যারা কখনও শাসক দল ছিল বা এখন আছে বা ভবিষ্যতে হবে বলে আশা পোষণ করে—এই আন্দোলনের গতিপ্রকৃতিতে অনেকটাই হতভম্ব। এই বিপুল সংখ্যক আন্দোলনকারীরা যে তাদের প্ল্যান প্রোগ্রামের মুঠোয় বাঁধা নেই, তাদেরই এখন বরং আন্দোলনকারীদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে হচ্ছে, সমর্থন জানাতে হচ্ছে, এবং তা নেতা হিসাবে নয় সহযোদ্ধা হিসাবে—এটা তারা অনেকেই মেনে নিতে বা হজম করতে পারছে না। কেন না, তাঁদের অনেকের মধ্যে সজ্ঞানে বা মনের অগোচরে এই আশঙ্কা কাজ করছে, আম জনতা যদি উদ্যোগ নিজের হাতে তুলে নিতে শিখে যায়, আগামী দিনে আমি যখন তখতে বসব এবং ঘাপলাবাজি করব, এরা তো আমার বিরুদ্ধেও রাস্তায় নেমে পড়বে। সেটা কি ভালো হবে?

    তিন, অন্য দিকে যাঁরা হয়ত এখনই শাসক দল হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন না, তাঁদেরও সমস্যা আছে। তাঁদের কাছেও গান্ধীয়ানার বাইরে, মিছিল ধর্মঘটের পরে, আন্দোলনের নতুন কায়দা ও রাস্তার খবর আর কিছু নেই। ফলে তাঁরা যথেষ্ট দিশাহারা। এই রাস্তার খবরের অভাবেই বামপন্থী নেতারা নোটবাতিলের বিরুদ্ধে কোনো সামান্য প্রতিবাদী আন্দোলনও গড়ে তুলতে পারেননি। কেন না, কী করলে সামান্যতমও আঁচ সরকারের গায়ে লাগানো যায়, তা তাঁরা খুঁজে পাননি। আর গান্ধী ফরমুলায় যে ওখানে সুড়সুড়িও দেওয়া যাবে না, এটা তাঁরা অনুভব করতে পেরেছিলেন। একই ভাবে তাঁরা উন্নাও কাঠুয়ার বিরুদ্ধে নিজেদের মহিলা মঞ্চকে সক্রিয় করে ময়দানে নামিয়ে দিতে পারেননি। অথচ করা যে সম্ভব ছিল, মানুষের মধ্যে, এমনকি মহিলাদের মধ্যেও যে বিদ্রোহের বারুদ মজুত ছিল, আজ তো চোখেই দেখা যাচ্ছে!

    তবুও আশা রাখছি, তাঁরা বাস্তব জীবন থেকেই শিখে নেবেন। ইতিহাসের চাকা যেভাবে ঘুরছে সেভাবেই তার গতিকে বুঝতে হবে। আমার জানা সূত্রে তাকে চালাতে চাইলেও সে রাজি হবে কেন? মনে রাখা দরকার, এই আন্দোলনেও রাজনীতি লাগবে, দিশা লাগবে, বুদ্ধির প্রয়োজন হবে। শুধু ধর্মীয় ঐক্যের শ্লোগানে, অরাজনৈতিক ঐক্যের বাতাবরণে, এই লড়াই বেশি দূর যেতে পারবে না, বেশি দিন চালিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না। শ্রমিক চাষি মধ্যবিত্ত আপামর শোষিত শ্রেণির এক সুদৃঢ় শ্রেণিগত ঐক্য গড়ে তোলার মতাদর্শিক সিমেন্ট দরকার হবে। উপযুক্ত ভাবে প্রশিক্ষিত হতে পারলে বামপন্থীরাই পারে সেই ঐক্যের যোগসূত্র স্থাপন করতে। সেই রকম সাংগঠনিক তাকত ও সংযোগ জালিকা চাই। প্রস্তুতি চাই। যাদের বিরুদ্ধে এই লড়াই তারা এক দুর্দ্ধর্ষ স্বৈরাচারী অপশাসক। গণ আন্দোলন দমন করার জন্য এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তারা করবে না বা করতে পারবে না। দিলীপ ঘোষের তালা খোলা লালা ভরা মুখ দিয়ে যার স্পষ্ট আভাস মাঝে মাঝেই বেরিয়ে পড়ে। ফলে, সার্বিক প্রস্তুতি না থাকলে দীর্ঘমেয়াদে একটা এত বড় মাত্রার সংগ্রাম টেনে নিয়ে যাওয়া যাবে না।

    সুতরাং নেতৃত্বের অহম ছেড়ে নেতাদেরই আন্দোলনকারীদের কাছে যেতে হবে। দলে দলে। ব্যাচ বাই ব্যাচ। বামপন্থী দলগুলো নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগিও করে নিতে পারেন—কারা কবে যাবেন। এখন পর্যন্ত দু তিনটি ছোট ছোট বামপন্থী গ্রুপ বা দল ও নেতা ছাড়া বড়দের কেউ সাহস করে এই সব জমায়েতে যাননি। কিন্তু প্রয়োজন বুঝতে পারলে, তাগিদ অনুভব করতে পারলে, যেতে হবেই। নিজেদের নারী স্বেচ্ছাসেবকদের জমায়েতের মহিলাদের পাশে বসিয়ে দিতে হবে। ওদের সাথে রাত জাগতে হবে। সুখ দুঃখের গল্প বলতে হবে, শুনতে হবে। শুনতে শুনতে কাজের কথা শোনাতেও হবে। ভরসা জাগাতে হবে। পাশে পাশে থাকতে হবে ছেলেদেরও।

    হসরত-এ-আজাদি

    লেনিন এক সময় বলেছিলেন—আসলে জার্মান কবি গ্যোঠের কথার উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন—“তত্ত্ব হল ধুসর, বন্ধুগণ, জীবনবৃক্ষ কিন্তু সবুজের স্পন্দন!” আমাদেরও এখন পুরনো ধুসর সমস্ত তত্ত্ব ঝেড়ে ফেলে পুরনো সমস্ত রুটিন ছক ভেঙে জীবন সবুজের সমারোহে এসে মিলতে হবে। কুর্সিভোটের জন্য অনেক কসরত তো হল, এবার হসরত হোক মুক্তিজোটের লক্ষ্যে।

    ক্যা, এনার্সি এনপিআর নিপাত যাক!!
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ২২ জানুয়ারি ২০২০ | ৩১২৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • g | 162.158.167.15 | ২২ জানুয়ারি ২০২০ ১২:৪৫90817
  • প্রবন্ধ টার শীর্ষে যতি চিহ্ন কিসু চেঞ্জ হবে? নৈলে মনে হচ্ছে নতুন আইন ও গন অভ্য্ত্থান সব ই নিপাত যাক ঃ-)))))
  • সিদ্ধার্থ বসু | 172.69.135.51 | ২২ জানুয়ারি ২০২০ ২০:৫১90820
  • খুবই ভালো লেখা। কিন্তু সত্যিই কি এতটা আশাব্যঞ্জক পরিস্থিতি? সংশয় হয় কিন্তু।
  • সিদ্ধার্থ বসু | 172.69.135.51 | ২২ জানুয়ারি ২০২০ ২০:৫১90819
  • খুবই ভালো লেখা। কিন্তু সত্যিই কি এতটা আশাব্যঞ্জক পরিস্থিতি? সংশয় হয় কিন্তু।
  • অশোক মুখোপাধ্যায় | 172.69.135.117 | ২২ জানুয়ারি ২০২০ ২৩:৪৫90821
  • মাননীয় g,

    ওটা আমার অজ্ঞতার দোষে হয়েছে। শিরোনামের দু লাইন যে কীভাবে উপর নীচে জুড়ে গেল, কে জানে! কীভাবে পাল্টাতে হবে বুঝিয়ে দিন।

  • tester | 172.69.34.75 | ২৩ জানুয়ারি ২০২০ ১২:১৮90827
  • এবার কি ঠিক হয়েছে ?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন