এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • বল ও শক্তি: ধারণার রূপান্তর বিভ্রান্তি থেকে বিজ্ঞানে#2

    Ashoke Mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২০ আগস্ট ২০১৭ | ২০৬৮ বার পঠিত
  • [৩] যাদুবিদ্যা ও ধর্ম

    পৃথিবীর সমস্ত প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মই প্রথম যুগে এই ম্যাজিক সংস্কৃতির বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু কেন? আসুন, এবার আমরা সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে দেখি।

    সমাজ বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে দেখা যাবে, ধর্মের উদ্ভবের সময়কালের সাথে এই যাদুবিদ্যার আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটের পার্থক্য দিয়েই সেই উত্তর খুঁজে পাওয়া যাবে। মনে রাখতে হবে, ম্যাজিক সংস্কৃতির বিকাশ ও বিস্তারের সময় হচ্ছে প্রস্তর যুগের সংগ্রহ ও শিকার ভিত্তিক যাযাবর আদিম সাম্যবাদী জ্ঞাতিগোষ্ঠীভিত্তিক সমাজ সংগঠন। আর ধর্মের উদ্ভব ঘটে সেই সমাজের ক্রমবিকাশের একটা পর্যায়ে ধাতুযুগের বিকাশের এক উন্নত পর্যায়ে--প্রথমে তাম্রযুগ ও অবশেষে লৌহযুগে এসে--স্থায়ী কৃষি, নগর সভ্যতা তথা শ্রেণিবিভক্ত ও রাজনৈতিক সমাজকাঠামোর আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে। [এই বিষয়ে খুব বেশি আলোচনার সুযোগ এখানে নেই। আমি আমার ধর্ম বিষয়ক একটি বইতে তা খানিক বিস্তারিতভাবে চর্চা করেছি।]

    আদিম সাম্যবাদী সমাজের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল, সেখানে কেউ কারোর প্রভু ছিল না। অভাব দুর্দশার সাম্য, আবার কাজ ভাগাভাগি করে দায়িত্ব বহনের সাম্য। সেই কালের মানুষ-জনদের প্রধান সমস্যা ছিল সকলে মিলে প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবিলা করে দৈনন্দিন খাদ্য সংগ্রহ করা, বেঁচে থাকার রসদ যোগাড় করা। সে গরু ঘোড়া কুকুরকে দিয়ে নানান কাজ করায়, গাছ পাথর নদী হ্রদকে দিয়েও কাজ করাতে চায়, চেষ্টা করে। কাজের সময় সে কুকুর বা ঘোড়াকে যেমন হাঁক দেয়, গাল পাড়ে, আদরও করে, খেতেও দেয়, হুকুম শোনায়, গাছ পাথর নদী বা হ্রদকেও সে একইভাবে বোঝানোর খুশি করার বা দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করতে থাকে। (আজও ভারতে বহু লোক গঙ্গা বা কাবেরী নদীর উপর দিয়ে ট্রেনে করে যাওয়ার সময় পয়সা ফেলে তাকে খুশি করার চেষ্টা করে। ছোটখাটো নদীগুলির অবশ্য এই সৌভাগ্য হয় না।) দলবদ্ধভাবে শিকারে যাওয়ার আগে সে গুহার ভেতরে বাইসনের ছবি এঁকে শিকারের যে অভিনয় করত, যা ছিল তখনকার সময়ে গা গরম করা, দক্ষতা বৃদ্ধি, মনঃসংযোগ রক্ষা এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার এক ধরনের অসচেতন অনুশীলন; তার মধ্য দিয়ে সে প্রকৃতির কাছ থেকে তার দাবি আদায়ের কথাই ভাবত। এর ফলে তার যে যাদুবিদ্যা, তা ছিল চাহিদা জ্ঞাপন অনুরোধ এবং হুকুমের এক গড়। তার মধ্যে প্রার্থনা নেই, দয়া ভিক্ষা নেই, সমর্পণ নেই। ভারতীয় দর্শনে মীমাংসকরা বলে গেছেন, মানুষের করা যজ্ঞ নাকি দেবতাদের চাইতেও শক্তিশালী। একবার কোনো যজ্ঞ সুষ্ঠভাবে করলে দেবতাকে তার ফল দিতেই হবে।

    শ্রেণি বিভক্ত সমাজের বৈশিষ্ট্য কিন্তু তা নয়। সেখানে মুষ্টিমেয় একদলের হাতে সমস্ত সম্পদ কুক্ষিগত, অন্যরা শুধু কাজের লোক, তা সে কেউ দাস হিসাবে আর অন্য কেউ হয়ত তথাকথিত স্বাধীনভাবে। শোষক আর শোষিত, শাসক আর শাসিত, মালিক আর গোলাম। এর ফলে সেই সমাজে উপরের দিকে দু-চারজন হুকুমদার আছে, প্রভু আছে। বাকিরা তার নিচে অধীনস্থ, কৃপাপ্রার্থী, হুকুমের দাস। সমাজের শাসককে দেখেই মানুষের মাথায় প্রকৃতিরও শাসকের ধারণা জন্ম নিল। রাজা, বড় রাজা, আরও শক্তিশালী মহারাজা, . . ., সুতরাং রাজাদেরও রাজা, দুনিয়ারও রাজা, নিশ্চয়ই কেউ আছেন। স্বামী বিবেকানন্দের মতে, এইভাবেই একদিন মানুষের মনে ঈশ্বরের ধারণা জন্ম নিয়েছিল। রাজাকে কি কোনো সাধারণ প্রজা গিয়ে হুকুম দিতে পারে? তেমনই ঈশ্বরকেও আর মানুষ তার নিজের অভিজ্ঞতার অনুসরণে অনুরোধ জানাতে, দাবি জানাতে, হুকুম দিতে, হাঁকডাক করতে পারে না। ঈশ্বরের সঙ্গে বোঝাপড়ার উপায় হল কৃপা প্রার্থনা, মঙ্গল-ভিক্ষা, আত্মসমর্পণ, আশীর্বাদ কামনা, . . .।

    আর একটা বড় সমস্যাও ছিল। ম্যাজিকের যুগে অসংখ্য প্রাকৃতিক শক্তি, ফলে দেবতাও অনেক।

    পরিদৃশ্যমান বস্তু থেকে দৈব শক্তির কল্পনা, নদী দেবতা, পাহাড় দেবতা, বট গাছ দেবতা, ইত্যাদি। আবার কাজের কর্তৃত্ব বহনকারী দৈব শক্তি হিসাবে প্রেমের দেবতা, সন্তানের দেবতা, বৃষ্টির দেবতা, শস্যের দেবতা, যুদ্ধের দেবতা, . . .। “এই সব দেবতারা কয়েক হাজার বছর আগেকার জীব।” [বিবেকানন্দ] তাদের স্বভাব চরিত্র আচার আচরণ কমবেশি মানুষেরই মতো। তাদের মধ্যে উদারতা, কর্মপটুত্ব, যুদ্ধানুরাগ, ভোজনরসিকতা, রাগ, হিংসা, লোভ, যৌনতা, ঘুষপ্রিয়তা, . . ., কী নেই?

    স্বভাবতই, যাদুবিদ্যার মন্ত্রতন্ত্র দিয়ে, তার ঠাকুর-দেবতাদের দিয়ে কি এই প্রার্থনার কাজ চলতে পারত? না, পারত না। এই জন্য দুনিয়ার সব দেশেই ধর্ম যখন এল, সে এল একেশ্বর উপাসনার কর্মসূচি নিয়ে। গ্রিস দেশের ভাববাদী দার্শনিক প্লাতো ধ্রুপদী মহাকাব্যকার হোমারকে প্রচুর সমালোচনা করলেন দেবতাদের মানুষ করে তোলার জন্য, তাদের মধ্যে দোকানদারি স্বভাব দেখানোর জন্য। মোহাম্মদ বললেন, লা ইলাহ ইল আল্লাহ . . . । এক ঈশ্বর ছাড়া আর আমাদের কোনো উপাস্য থাকবে না। ইহুদিদের ইয়াহ্‌বে, খ্রিস্টানদের জিহোবা (পরে গড), ইসলামের আল্লাহ (আল ইলাহ্‌ থেকে), ইত্যাদি। বিবেকানন্দ আক্ষেপ করে বললেন, ঋগ-বেদে বড্ড খাই-খাই। কেবল পেট পুরে খাওয়ার দিকে নজর।

    উপনিষদগুলিতেও অনেক কাঁটাঝোপের জঙ্গলের মধ্যে মধ্যে হয়ত দু একটা গোলাপের দেখা মেলে। গীতাতেই প্রথম পরিপূর্ণ ভক্তি নিয়ে একজন ভগবানের আবির্ভাব। অন্য সব উপাস্যদের সম্ভব হলে বাতিল করে, না পারলে অন্তত বা খাটো করে। ছোট ছোট অল্প ক্ষমতার অধিকারী আঞ্চলিক প্রভাব সৃষ্টিকারী অনেক দেবতার শক্তির যোগফল নিয়ে আবির্ভূত হলেন এই একমাত্র ঈশ্বর। তিনি সর্বশক্তিমান, কেন না, তাঁর প্রভাবাধীন সমাজের অন্য সব কজন দেবতার সমস্ত বিভাগীয় শক্তিই তিনি হরণ ও ধারণ করেছেন। এইভাবে উপাস্যর চরিত্র যখন বদলে গেল, তার সাথে উপাসনার বাক্যজালও ধীরে ধীরে পালটে ফেলতে হল।

    কিন্তু--হ্যাঁ, অনেকেই গম্ভীর আলোচনার মাঝখানে এরকম হঠাৎ করে ‘কিন্তু’ নামক অব্যয়টির আগমন পছন্দ করেন না, আমি জানি। জেনেও উপায় নেই বলেই বলছি--

    কিন্তু, ধর্মকেও শেষ পর্যন্ত যাদুবিদ্যার অনেক কিছুই মেনে এবং মানিয়ে নিতে হয়েছিল। নিতে হল কারণ, প্রায় পঞ্চাশ হাজার বছর ধরে চলে আসা এবং ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠা সাংস্কৃতিক প্রথা-প্রকরণগুলিকে এত সহজে সাধারণ মানুষের মন থেকে ঝেড়ে ফেলা যায় না। আধুনিক বিজ্ঞানের শক্তি ও বুদ্ধিতে বলীয়ান হয়েও মাত্র আড়াই কি তিন হাজার বছরের ধর্মীয় বিশ্বাসকে মানুষের মন থেকে নড়াতে গিয়েই তো আমরা টের পাচ্ছি, কাজটা কত কঠিন। স্বভাবতই জ্ঞানের দিক থেকে সেই তুলনায় অনেক দুর্বল ধর্মের পক্ষে সেদিন ম্যাজিক সংস্কৃতির অধিষ্ঠানকে নড়ানো আরও অনেক কঠিন হয়ে পড়েছিল। ফলে ধর্মপ্রবর্তকরা এবং তাঁদের প্রথম প্রজন্মের প্রচারকরা শেষ পর্যন্ত সেই চেষ্টা ছেড়ে দিয়ে আপসের পথ খুঁজতে চাইলেন।

    আপস করা সম্ভব হল দুটো কারণে।

    প্রথমত, ম্যাজিক এবং ধর্ম--দুই জায়গাতেই স্রেফ বিশ্বাসের একটা বড় ভূমিকা ছিল। অর্থাৎ, বিচারবুদ্ধির ফসলে দ্বিমত থাকলেও প্রয়োগ কৌশলে বিশেষ পার্থক্য ছিল না। বৃষ্টির দেবতাকে যজ্ঞ করে জল ঢালতে বাধ্য করলে সে বৃষ্টি দেবে--এর মধ্যে যে ধরনের বিশ্বাস নিহিত রয়েছে, ভগবানের উদ্দেশে প্রার্থনা করলে তিনিও ভক্তের মনোবাঞ্ছা পূরণ করতে বারিধারা নামিয়ে দেবেন--এর মধ্যেও সেই একই ধরনের বিশ্বাস ঢুকে বসে আছে। বরং বলা ভালো, আগের বিশ্বাসের প্রকরণটা মজুত ছিল বলেই পরের বিশ্বাসটাও সহজেই মানুষের মনে জায়গা করে নেবার জমি খুঁজে পেয়েছে।

    দ্বিতীয়ত, দুই ক্ষেত্রেই সেই শক্তির ধারণা একটা বড় জায়গা নিয়ে কাজ করছিল। বটগাছের গুঁড়ির শক্তি, পাথরের শক্তি, পাহাড় বা নদীর শক্তি, আবার ভগবানেরও শক্তি। আগেরগুলো অদৃশ্য হলেও কিন্তু মানুষের নাগালের মধ্যে রয়েছে বলেই মনে করা হত। ভগবানের শক্তি শুধু অদৃশ্যই নয়, মানুষের নাগালেরও বাইরে। কিন্তু শক্তি তো বটেই। আর এটা তো স্বাভাবিক, রাজার শক্তিই যেখানে এতকালের দেখা শোনা মানুষের শক্তির চেয়ে অনেক বেশি, অনেক কিছু তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, সেখানে দুনিয়ার শাহানশা ভগবানের শক্তি তো আরও বিশাল হবেই। ফলে সেই শক্তির প্রচার একটু একটু করে মানুষের মনে দাগ কাটতে সক্ষম হল।

    এই দুই পথ ধরেই আপসরফা হয়ে গেল।

    একটি উদাহরণ দিই।

    “ওম এ ক্লীং হ্লীং শ্রীং হসৌ শ্রীং হ্লীং ক্লীং এং জূং ক্লীং সং লং শ্রীং রঃ অং আং ইং ঈং উং ঊং ঋং ঋং লং লৃং এং ঐং ওং ঔং অং অঃ উং কং খং গং ঘং ডং ঊং চং ছং জং ঝং ত্রং ঊং টং ঠং ডং ঢং ণং ঊং তং থং দং ধং নং ঊং পং ফং বং ভং মং ঊং য়ং রং বং লং ঊং শং ষং হং ক্ষং স্বাহাঃ”--এটি হচ্ছে মহাকালী সাধনার উগ্র মন্ত্র। ভালো করে লক্ষ করলে বোঝা যাবে, এর মধ্যে কোনো অর্থপূর্ণ বক্তব্য নেই। আরও ভালোভাবে খেয়াল করলে বরং একটা জিনিস স্পষ্ট হয়ে উঠবে, এই মন্ত্রটিতে মূলত সংস্কৃত বর্ণমালাকেই পর পর অনুস্বার ও বিরতি সহযোগে ঘন্টাধ্বনির মতো করে বলে যাওয়া হয়েছে।

    এর থেকে একটা কথা অনুমান করা সম্ভব: এই বর্ণমালা যখন বৈদিক জনজাতির লোকেরা আয়ত্ত করেছিল (আজ থেকে কম-বেশি আড়াই হাজার বছর আগে), তা ছিল তাদের এক অসাধারণ কীর্তি-অর্জন। আর তাই তারা এর মধ্যে এক বিরাট শক্তির সম্ভাবনা দেখেছিল হয়ত। কিন্তু বেশ কয়েক হাজার বছর ধরে এই যাদুমন্ত্রটিতে লক্ষ লক্ষ ধর্মীয় লোকেরা বিশ্বাস করে এসেছে; তারা আন্তরিকভাবেই ভেবেছে, এই মন্ত্র ভক্তি ভরে উচ্চারণ করে গেলেই মহাকালী সন্তুষ্ট হবে; আর তখন ঈপ্সিত ফল লাভ হবেই।

    এখানে আর একটি মন্ত্রও পাঠ করা যাক।

    সকলেই জানেন, মাটির মূর্তি বানিয়ে পুজো করার আগে সেই মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করতে হয়, অর্থাৎ, উদ্দিষ্ট দেবতাকে আবাহন করে এসে সেই মূর্তিতে বসাতে হয়। তার মন্ত্রটি হল: “ওঁ আং হ্রীং ক্রোং যং রঙ লং বং শং ষং সং হৌং সঃ অমুকদেবতায়াঃ প্রাণা হই প্রাণা। ওঁ আং হ্রীং ক্রোং ওঁ আং হ্রীং ক্রোং যং রঙ লং বং শং ষং সং হৌং হং সঃ অমুকদেবতাঃ জীবঃ ইহ স্থিতঃ। ওঁ আং হ্রীং ক্রোং যং রঙ লং বং শংষং সং হৌং হং সঃ অমুকদেবতায়াঃ সর্ব্বেন্দ্রিয়াণি। ওঁ আং হ্রীং ক্রোং যং রঙ লং বং শং ষং সং হৌং হং সঃ অমুকদেবতায়াঃ বাঙ্মনশ্চক্ষুস্ত্বক্ শ্রোত্রুঘ্রাণপ্রাণা ইহাগত্য সুখং চিরং তিষ্ঠন্তু স্বাহা। ...” এটিও যে প্রাচীন কালের মানুষের ছন্দোবদ্ধ শব্দের শক্তিতে বিশ্বাসেরই পুনরুৎপাদন--তা নিশ্চয়ই কাউকে বুঝিয়ে বলে দিতে হবে না।

    সমস্ত ধর্মীয় সংস্কৃতির কঠোর একেশ্বরবাদের মধ্যেও এই জাতীয় আপসের নানা রকম ছাপ আজ পর্যন্ত থেকে গেছে। রোমের ভ্যাটিক্যানে, মক্কার কাবায়, জর্ডন নদীর পবিত্র জলে, জমজমের পানিতে, পরী-দেবদূত-ফরিস্তায়, শয়তান-ইবলিশ-ড্র্যাকুলা-জিন-দুষ্টশক্তি-ভূত--আরও কত কিছুতে! আর হিন্দুদের (তেত্রিশ কোটি নয়) মাত্র তেত্রিশ জন দেবতার মধ্যে এই ছাপ বড্ড বেশি স্পষ্ট বলে কখনও আচার্য শঙ্কর, কখনও নানকদেব, কখনও বা রামমোহন এদের মিলিয়ে দিয়ে একজন-মাত্র ভগবানের ধারণা তৈরি করতে খুবই আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। লাভ হয়নি। শঙ্করের একমেবাদ্বিতীয়ম ব্রহ্ম এক-ঈশ্বরের নানা রকম ধারণার চমৎকার একটি গ.সা.গু. হলেও তিনি নিজে শৈব ছিলেন বলে শেষ পর্যন্ত শিবঠাকুরের প্রাধান্যই কিছু দিনের জন্য বৃদ্ধি পেয়েছিল। যে কোনো ম্যাজিক-বস্তুর সঙ্গে ঈশ্বর সন্ধি করলেই পেছনে শিবঠাকুরকে পাওয়া যাবে। বটেশ্বর, মহেশ্বর, যোগেশ্বর, ঘাটেশ্বর, বালেশ্বর, ইত্যাদি।

    শেষ পর্যন্ত গুরু নানক আর মহাত্মা রামমোহনের প্রচেষ্টায় হিন্দুদের একেশ্বরবাদে আর উত্তরণ ঘটেনি, পরিবর্তে একটা করে নতুন ধর্ম—শিখ ধর্ম এবং ব্রাহ্ম ধর্ম—জন্ম নিয়েছে। তার পরে রামকৃষ্ণ আর বিবেকানন্দকে এসে অনেক বড় বড় দার্শনিক কথা বলার পরও সেই প্রাচীন ম্যাজিক সংস্কৃতির কাছে কার্যত আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে। নতুন করে ব্যাখ্যা দিতে হয়েছে, ব্রহ্মও আছে, কালীও আছে। যে যেমন বোঝে তার তেমন উপাস্য। “যত মত তত পথ”। আসলে দেশি নানা হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যেকার সমস্ত মত ও সমস্ত পথ। সমস্ত আচার বিচার কুসংস্কার। ইসলাম খ্রিস্টান নয়, শাক্ত শৈব বৈষ্ণবদের মধ্যেকার যত-তত মিলন প্রয়াস! এর সুবিধা হল, বক্তৃতায় বা ধর্মের ক্লাশে “সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম” বল; সব কিছুতে ব্রহ্মও মানো। আবার আম পাব্লিককে নিয়ে কাজ করার সময় মা কালীকে পাঁঠা বলি-ও দাও এবং একবার একটু মন্তর পড়ে মূর্তির কাছে উচ্ছুগ্‌গো করে নিয়ে রান্না করে খেয়েও নাও। নিশ্চিন্ত থাক; ব্রহ্মই ব্রহ্মকে খাবে। কোথাও কিচ্ছু উনিশ-বিশ হবে না। এ ভারি সুবিধার কথা!

    খ্রিস্টধর্মের তো প্রায় শুরুতেই এক থেকে তিন হয়ে গেল--ভগবান, তাঁর পুত্র যিশু ও পবিত্র আত্মা। অল্প দিনের মধ্যেই মা মেরিও এসে গির্জায় গির্জায় উঁচু বেদীর উপরে জায়গা করে নিলেন। বেচারি পিতৃদেব, যোশেফ--তাঁরই আর কিছু প্রোমোশন হল না! প্রাচীন মাতৃকেন্দ্রিক পরিবারতন্ত্রের জের কিনা কে জানে!! তারপর একে একে অনেক সন্ত। অগাস্তিন, আনসেল্ম, অ্যাকুইনাস, প্রমুখ। সকলেই পূজনীয়।

    অন্য দিকে অমন যে কঠোর একেশ্বরবাদী ইসলাম, যে তার ঈশ্বর, তাঁর প্রতিনিধি নবী, জগতের গাছপালা, পশুপাখি--কারোর ছবি আঁকতে দিতে চায়নি, পছন্দ করেনি, পাছে মূর্তি পূজার প্রবণতা আবার সমাজে ফিরে এসে পড়ে, তার ভক্তরাও বড় বড় পীর বা গাজীর সমাধি-মাজারে গিয়ে আক্ষরিক অর্থেই ধুপধুনো জ্বালিয়ে ফুল বেল(?)পাতা সমেত পুজো দিয়ে আসে। গাছে ঢিল বেঁধে রুমাল ঝুলিয়ে কত কী মানত করে রাখে। আরও কত কী!

    আর পাথর যুগের ম্যাজিকের কী অপার মহিমা! হিন্দুরাও অনেকে সেই সব দরগা-মাজারে যায় যার যার মনস্কামনা পূরণের বিশ্বাস নিয়ে।

    [৪] আধ্যাত্মিক শক্তি

    কিন্তু এই সব কিছুর মধ্যেও একটা নতুন ধারণা সমাজ মননে স্থান করে নিল। আধ্যাত্মিক শক্তির ধারণা। যাদুবিদ্যার মধ্যে যে শক্তির কল্পিত ধারণা নিহিত ছিল তা ছিল আসলে বস্তুরই ক্রিয়াশীলতার প্রকাশ। তার মধ্যে অবস্তু, অতি-বস্তু ও বস্তু-ঊর্ধ্ব অপ্রাকৃতিক কোনো ধর্ম বা বৈশিষ্ট্যের ধারণা ছিল না। যেমন মানুষের শক্তি, গরুর শক্তি, ঘোড়ার শক্তি, সিংহের শক্তি, তেমনই নদীর শক্তি, হাওয়ার শক্তি, দাবানলের শক্তি। এগুলোর মধ্যে পরিমাণগত পার্থক্য থাকলেও মানুষের চিন্তায় গুণগত পার্থক্য ছিল না বললেই চলে।

    যাদুবিদ্যার ধারণার মধ্যে বস্তু ও ঘটনা পরম্পরার মধ্যে এক একটা কারণ-কার্য সম্বন্ধ ছিল। এখন আমরা বুঝি, সেই কারণ-কার্য সংক্রান্ত অধিকাংশ ধারণাই ছিল ভুল। তবুও যে কোনো ঘটনার পেছনে বস্তুগত কারণ খোঁজার ঝোঁক বা প্রচেষ্টা ছিল।

    কিন্তু ঐশ্বরিক শক্তির ক্ষেত্রে একথা আর বলা যায় না। তা সম্পূর্ণতই বস্তুজগত-ঊর্ধ্ব অতিপ্রাকৃতিক ও অলৌকিক শক্তি। তার আর বস্তুগত কার্য-কারণ পরম্পরা নেই। ঈশ্বর যা চান তাই ঘটে। পাখিদের তিনি আকাশে উড়বার ব্যবস্থা করে দেন। আবার মানুষ খাবে বলে মুরগিদের তিনি উড়তে দেন না, ভূমিতেই চরতে বাধ্য করেন। এই ঈশ্বর চাইলে মরুভূমিতে নদী বসিয়ে দিতে পারেন। তিনি ইচ্ছা করলে সমুদ্র দুভাগ করে মাঝখান দিয়ে করিডর বানিয়ে দিতেও পারেন (টেন কম্যান্ডমেন্ট্‌স সিনেমায় তার ছবিও তুলে দেখানো হয়েছে)। আবার জাগতিক লীলা-বাসনা না জাগলে, তেমন ইচ্ছা হলে, তিনি কিছুই না করে চুপচাপ বসেও থাকতে পারেন। এখন, যেহেতু ঈশ্বর অনেক দূরের শক্তি উৎস, তাই মানুষের কাছে এর একটা আপাত দৃশ্যময়তা (visualization)-র প্রয়োজন দেখা দিল।

    ধীরে ধীরে বাইবেল বা অন্যান্য ধর্মগ্রন্থে নানা রকম গল্পের সমাবেশ ঘটল এই ঐশ্বরিক অলৌকিক ক্ষমতার দৃশ্যায়নের জন্য। এমন এক একজন সাধুর আবির্ভাব হয় যিনি হাত দিলেই কুষ্ঠ রোগ সেরে যায়, অন্ধ দৃষ্টি ফিরে পায়, শুকনো কুয়োয় জল ভরে ওঠে, আরও কত কী। এরই নাম আধ্যাত্মিক শক্তি। অন্তরাত্মার শক্তি। সকলের হয় না, কারোর কারোর হয়। কিন্তু মুশকিল হল, সে তো কেউই আবার নিজের চোখে দেখতে পায় না, প্রত্যেকেই অন্য কেউ দেখেছে বলে নিজের কানে শুনতে পায় শুধু। প্রত্যক্ষ শ্রোতা অনেক থাকলেও প্রত্যক্ষ দর্শক কেউই নেই। সেদিক থেকে এই সবের চাইতে অনেক বেশি শক্তিশালী এক যুক্তি উঠে আসে জগতের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার সেই কালের আদি প্রয়াসের মধ্যে।

    হ্যাঁ, গ্রিক দার্শনিক আরিস্ততলই প্রথম ভাবতে শুরু করলেন বল ও গতির রহস্য নিয়ে। বললেন, কোনো বস্তু চলমান হয় বলের প্রভাবে। পাথরটা মাঠে পড়ে আছে। নড়ছে না চড়ছে না। তুমি ঠেলা দাও, অমনি নড়ে উঠবে। হাতে হাতে প্রমাণ যে বল প্রয়োগেই বস্তু গতিশীল হয়ে ওঠে। এই প্রথম বিজ্ঞানের যুক্তির একটা প্রাথমিক কাঠামো নিয়ে বল গতি ও শক্তি দৃশ্যমান হয়ে উঠল আম আদমির কাছে। আর সেখান থেকেই আরিস্ততল এক বিরাট সিদ্ধান্তের কথা শোনালেন। পৃথিবীর চারদিকে সূর্য চন্দ্র ও অন্যান্য গ্রহগুলি কিংবা নক্ষত্রগুলি ঘুরছে কীভাবে? চলছে কীভাবে? একজন রাম ঠেলা দিয়ে যাচ্ছেন। দিয়েই যাচ্ছেন। ভগবান। তিনিই এই জগত সংসারের অধিচালক (prime mover)। তাঁর ধাক্কাতেই সব কিছু চলমান।

    আরিস্ততলের ব্যাখ্যায় ভগবানের ক্ষমতা, ঐশ্বরিক শক্তি, সমস্তই মানুষের দুই চর্মচক্ষে একেবারে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়ে গেল। চোখে লেগেও রইল। প্রতিদিন প্রতি রাতে। প্রায় দু হাজার বছর ধরে। একেবারে সেই গ্যালিলেওর কল্প-জাহাজ ১৬৩২ সালে শান্ত সমুদ্রে পাল তুলে ভাসতে শুরু না করা পর্যন্ত। তখন অবশ্য সমবেগে চলমান বস্তুর গতির জন্য অন্তত আর কোনো অধিচালকের দরকারই রইল না।

    নিউটন বোধ হয় ভগবানের এই অবমর্যাদা সহ্য করতে পারেননি। তিনি এসে আবার অনেক রকম মাথা খাটিয়ে ভগবানকে একবার মাত্র ধাক্কা দেবার একটা বন্দোবস্ত করে দেন। চতুর্দিক ব্যাপ্ত আপেক্ষিক গতি ও স্থিতি ভরা এই জগতে কোনো এক আদি মাহেন্দ্রক্ষণে তথাকথিত পরম স্থিতি থেকে সমস্ত জগত সংসারকে চলমান করে তোলার জন্য এক দুর্দান্ত পয়লা গুঁতো (first impulse) দেবার অধিকারটুকুই মহামহিম ঈশ্বরের জন্য তিনি বরাদ্দ করতে পারলেন।

    যাই হোক, তার আগে অবধি ঈশ্বর মহাশয়ের অসীম ক্ষমতা নিয়ে মানুষের কোনোই সংশয় ছিল না।
    এই ঐশ্বরিক শক্তির টুকরো-টাকরা ভগ্নাংশও যাঁর মধ্যে বর্তায় তিনিও এক দৈবী আধ্যাত্মিক শক্তির অধিকারী হয়ে ওঠেন। তিনি মাঝে মধ্যে ঈশ্বরের বাণী কিংবা স্বর্গীয় প্রত্যাদেশ শুনতে পান। তিনি অনেক বেশি দেখতে পান, ত্রিকালদর্শী হিসাবে সমস্ত অতীত সমগ্র ভবিষ্যত তাঁর কাছে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। তিনি অনেক অসম্ভব কাজ করতে পারেন। পায়ে হেঁটে নদী পার হতে পারেন। হাওয়ায় ভেসে থাকতে পারেন। না খেয়ে দিনের পর দিন বেঁচে থাকেন। জীবনের ওপারে সমাধিস্থ হয়ে থাকেন, আবার কিছু সময় পরে এই নশ্বর পৃথিবীতে ফিরে আসেন। এরকম বহু গল্প তৈরি হতে থাকে দেশে দেশে। নিজের চোখে প্রত্যক্ষ না করেও লোকে বিশ্বাস করে। ম্যাজিক যুগের সংস্কৃতির নানা রকম বিশ্বাস ধর্মীয় পরিস্রাবণের মধ্য দিয়ে আজ অবধি যতটা টিঁকে আছে তার জোরেই মানুষ এই সব কাহিনিই সত্য বলে ধরে নেয়। তার ফলে অনেকে না হলেও কেউ কেউ সত্যিই চেষ্টা করে এই ক্ষমতা কিছুটা হলেও অর্জন করার।

    এই শক্তির ধারণাই এবার চালান হতে থাকে জীবনের বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে। লোহা থেকে সোনা তৈরির প্রচেষ্টা শুরু হয়। পরশপাথর খুঁজতে থাকে তারা। বয়স ধরে রাখার চেষ্টা চলতে থাকে। অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুকে ঠেকানোর ভাবনা আসে। আত্মা ও জন্মান্তরবাদ অনুযায়ী নতুন করে তো আর কেউ জন্মায় না। আজ যে মরে গেল তার আত্মাই আগামী দিনে আর একজনের শরীরে ভর করে এই দুনিয়ায় ফিরে আসে। তাহলে . . . তাহলে . . . আমার শরীর থেকে যে বা যারা আগামী দিনে জন্ম নিত সে বা তারা যদি আদৌ না জন্মাতে পারে, তাদের আত্মাকে আমার কাছেই পাকাপাকিভাবে ধরে রেখে আমি কি অমর হতে পারি না? ব্রহ্মচর্য, ইন্দ্রিয়সংযম, তন্ত্রসাধনা, বামাচার--কত ভাবেই না মানুষ চেয়েছে চিরকাল বেঁচে থাকতে। যৌবন ধরে রাখতে, জরা এবং মৃত্যুকে ঠেকিয়ে রাখতে।

    এই বিশ্বাসের জোরেই কেউ কেউ দাবি করেন, তিনি মৃত বক্তির আত্মাকে নামিয়ে আনতে পারেন। প্ল্যাঞ্চেট-এর আসর বসে দেশে দেশে। আলফ্রেড ওয়ালেস-এর মতো নামকরা বিজ্ঞানীও তাতে যোগ দেন, প্রতারিত হন, তবুও বিশ্বাস করেন। ইউরি গেলারের মতো কেউ আবার দাবি করে বসেন, তিনি দূর থেকে শুধু ইচ্ছা শক্তির জোরে লোহার চামচ বাঁকিয়ে দিতে পারেন। তাপ, আলো, বিদ্যুৎ, চুম্বক, যান্ত্রিক শক্তি, শব্দ, তার সাথে ইচ্ছাশক্তিও যদি পদার্থবিজ্ঞানের সিলেবাসে রাখা যেত, কী মজাই না হত!

    স্বামী বিবেকানন্দের কথাই ধরা যাক। তিনি বলছেন, জিতেন্দ্রিয় পুরুষের নাকি অসাধারণ স্মৃতিশক্তি। একবার পড়লে বা জানলে তিনি নাকি কিছুই আর কখনও ভোলেন না। নিজের উপরেও তিনি এই শক্তির দাবি আরোপ করেছেন। মহেন্দ্রনাথ দত্ত (নরেনের মেজ ভাই) লিখে গেছেন লন্ডনে স্বামীজির এক বক্তৃতার কথা। সেখানে বিবেকানন্দ নাকি বলেছেন: “কিছুকাল ধরে জপধ্যান করলে শরীরের পরমাণু পরিবর্তিত হতে শুরু হয়, তারপর পুরনো পরমাণু পরিবর্তিত হয়ে নতুন পরমাণুর সৃষ্টি হয়, দেহটি যেন সামান্যভাবে বদলে যায়। সাধারণ লোকের দেহ ও যোগীর দেহ ভিন্ন উপাদানে গঠিত। প্রবৃত্তি থেকেই পরমাণুর সৃষ্টি ও স্পন্দন। মনই শরীরের সৃষ্টি করে, যোগীর গায়ের বর্ণ উজ্জ্বল, কণ্ঠস্বর স্নিগ্ধ ও মধুর, এবং দৃষ্টি স্নেহপূর্ণ ও আকর্ষণীশক্তি সংযুক্ত এবং তাঁর মূর্তি শান্ত ও সৌম্য। তারপর যোগী যখন উচ্চ অবস্থায় ওঠেন, তাঁর দেহ থেকে একটা আকর্ষণী শক্তি বা আভা বের হয়।” পাঠকদের আমি স্বামীজির এই কথাগুলি বিশ্বাস বা অবিশ্বাস কোনোটাই করতে বলছি না। শুধু লক্ষ করতে বলছি, ম্যাজিক যুগের ধ্যান-ধারণাগুলি কীভাবে ঊনবিংশ শতাব্দের শেষভাগেও একজন ব্রহ্মবাদীর মনের পরমাণুগুলিকে দখল করে নিতে পারে।

    সুতরাং তাঁর তুলনায় একটু প্রাচীনতর, আধুনিক বিজ্ঞানের জগতেও এই শক্তি ঢুকে পড়ে অতি সহজেই। সেই সুপ্রাচীন যাদুবিদ্যার কারণ-কার্য সম্পর্ক খোঁজার ঐতিহ্য ও পদ্ধতি মেনেই। চুম্বক কীভাবে লোহাকে আকর্ষণ করে? চুম্বক থেকে এক অদৃশ্য তরল নিঃসৃত হয়। তার শক্তিই চুম্বকের আকর্ষণ বল। একইভাবে বিদ্যুতের জন্য এল এক বৈদ্যুতিক তরল। সমসাময়িক কালে দহনের জন্য কল্পিত হল ফ্লোজিস্টন নামক এক অদৃশ্য দাহ্য পদার্থ, যে দহনের বাহক এবং কারক। তাপের জন্য ভাবা হল ক্যালরিক নামক একটি অগোচর তরলের নাম। এইভাবে জৈব পদার্থের জন্য ধরা হল এক অদৃশ্য প্রাণ-শক্তিকে। আর মনের জন্য আত্মা তো বহুকাল আগে থেকে ছিলই। যাদুবিদ্যার মতোই এই ভুল ধারণাগুলিও কিন্তু মানুষকে কিছু কিছু জিনিস সামান্য হলেও বুঝতে বা ধরতে সাহায্য করে। চুম্বকের অন্তরাত্মার শক্তি তাকে শক্ত করে উত্তর-দক্ষিণে আটকে রাখে--এই ব্যাখ্যায় ভুল থাকলেও আপনাকে মাঝ-সমুদ্রে দিক নির্ণয়ে সাহায্য করে বইকি! ঋণাত্মক তড়িৎকে ধনাত্মক ধরে নিয়েই বিদ্যুৎ ব্যবহারের বিশ্বব্যাপী বিশাল আয়োজন। তাতে তো কোনো অসুবিধা হয়নি।

    তবে এও ঠিক, কিছু দূর পর্যন্ত এগিয়ে দেবার পর আবার এই ভুল যাদুবিদ্যাই বিজ্ঞানের এগনোর পথ রোধ করে দাঁড়াতে থাকে। তখন বিজ্ঞানকে শেষ পর্যন্ত যাদুবিদ্যার গণ্ডি থেকে বেরতেই হয়। বিজ্ঞানীরা তার রাস্তা খুঁজতে থাকেন।

    [৫] বিজ্ঞানের মুক্তি

    বিংশ শতাব্দে এসে পৌঁছতে পৌঁছতে অবশেষে বিজ্ঞানের মুক্তি ঘটল। কিন্তু তার জন্য শেষ পর্যন্ত এই সমস্ত অ-বস্তু শক্তির ধারণাকে একে একে হঠিয়ে দিতে হল। এবার সেই প্রসঙ্গ আমরা সংক্ষেপে সেরে নেব।

    লোহা চুম্বক হয়, কিন্তু সোনা রুপো তামা পেতল--এরা চুম্বক-ধর্ম পায় না। চৌম্বক শক্তির আধিভৌতিক ক্ষমতায় সন্দেহ দেখা দেয় এর থেকেই। নিউটন বল থেকে শক্তিকে আলাদা করে দিলেন। আঠেরো শতকের শেষে ল্যাভোয়াশিয় এসে অক্সিজেনের সাহায্যে দহনের যে ব্যাখ্যা দিলেন তাতে ফ্লোজিস্টন বেচারার আর কোনো কাজই রইল না। ফরাসি বিপ্লবে ভুলবশত তাঁর শিরচ্ছেদ হতে না হতেই পিয়র সিমোঁ দ্য লাপ্লাস গ্রহ-নক্ষত্রের গতি ব্যাখ্যায় নিউটনের পয়লা গুঁতো-র ধারণাকেও হঠিয়ে দিলেন। ভগবানের আর এই ব্যাপারেও কিছুই করার রইল না। তার কিছু কাল পরেই তাপের তরলকেও বিদায় নিতে হয়েছে। কেন না, বিজ্ঞানী রামফোর্ড লোহার রডকে লোহার করাত দিয়ে কাটতে গিয়ে দেখলেন, দুটোই গরম হয়ে উঠছে। তাহলে তাপের তরল কার থেকে কার দিকে যাচ্ছে? অতএব অন্য ব্যাখ্যা খুঁজতেই হল। বৈদ্যুতিক তরল থেকে বেরনোর জন্য অবশ্য ফ্যারাডের পরীক্ষা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। আর ততদিনে বিজ্ঞানী হ্বোলারের পরীক্ষায় অজৈব পদার্থ থেকে জৈব পদার্থ তৈরি হওয়ায় প্রাণশক্তিবাদেরও বিদায় বার্তা এসে গেল।

    এর পর যে আত্মা দিয়ে মনের সমস্ত ব্যাপারের ব্যাখ্যা খোঁজার দিন শেষ হয়ে আসবে, এ আর বেশি কথা কী? ভূতের ভর, সমাধি, দুষ্টশক্তির খেলা--সব একে একে প্রশ্নের সামনে পড়তে লাগল। মন চিন্তা ও ভাষার শারীরিক অবকাঠামোর অনুসন্ধান শুরু হয়ে গেল। সেই সব ইতিহাসও কলম্বাসের সমুদ্র অভিযানের থেকে খুব একটা কম রোমাঞ্চকর নয়।

    তাহলে আজ আবার একদল মানুষ বিজ্ঞান থেকেই আধ্যাত্মিক শক্তির খবর নিচ্ছেন বা পাচ্ছেন কীভাবে? বিজ্ঞান তো সেই সব ধ্যান-বিন্দুর প্রায় সবগুলোকেই তার খেলার মাঠ থেকে একে একে বের করে দিয়েছে। এইখানেই আমরা উপরে উল্লিখিত সেই চার নম্বর প্রশ্নটির উত্তর দিতে বাধ্য হয়ে পড়ি।
    সত্যিই কিন্তু ধারণাগুলো বিজ্ঞানে আজ আর নেই। অন্তত প্রামান্য বইপত্রে বা গবেষণা পত্রে নেই। বিজ্ঞানে এগুলি যে একটা একটা করে পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে অপ্রমাণিত হতে হতে শেষে বর্জিত হয়েছে, তা নয়। অপ্রয়োজনীয় বিধায় বা অসুবিধাজনক লাগায় বিজ্ঞানীদের এগুলো স্রেফ বাদ দিয়ে আসতে হয়েছে। প্রয়োজন পড়লে বা কিছু সুবিধা পেলে এবং অন্য আরও ভালো বিকল্প হাতের কাছে না থাকলে বিজ্ঞানীরাও যে অনেক সময় কিছু কিছু ভুতুড়ে ধারণাকে প্রশ্রয় দেন না এমনটা নয়। যেমন, ইথারের ধারণা। কিংবা, নিউটনীয় মহাকর্ষ-বলের ধারণা, যা যে কোনো দূরত্বে অসীম বেগে ধেয়ে যেতে পারে। এগুলো তখন তত্ত্বকল্প (hypothesis) হিসাবে থেকে যায়। বাড়ি তৈরির সময় দেওয়ালে ফাঁক রেখে ভারা বেঁধে ইট গাঁথার মতো। সমস্ত কাজ হয়ে গেলে একে একে ফাঁকগুলো মিস্ত্রিরাই বুজিয়ে দেন।

    বিজ্ঞানীদেরও কাজকারবার অনেকটা সেই রকম। ম্যাক্সওয়েল হয়ে আইনস্টাইন পর্যন্ত এসে যখন আলোর তরঙ্গ গতি বোঝার এবং বোঝানোর জন্য ইথার ধারণার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেল, তাকে ছেড়ে দেওয়া হল। ওদিকে, জটিল জটিল সব অঙ্ক কষে আইনস্টাইন নিউটনের মহাকর্ষ বলের প্রায়-আধ্যাত্মিক ক্ষমতাকেও বিজ্ঞানের আঙ্গিনা থেকে একদম ছাঁটাই করে দিলেন। বিকল্প ব্যাখ্যার হাতিয়ার তিনি পেয়ে গেলেন। আমার মতোই যাঁরা অঙ্ক ভালো জানেন না, তাঁদের জন্য সূর্য এখনও পৃথিবীকে টানছে। কিন্তু যাঁরা অঙ্কটা জানেন বা বোঝেন তাঁরা জানেন, এর মধ্যে টানাটানির কোনো ব্যাপারই নেই। সূর্য এবং পৃথিবী যে যার খেয়ালে আছে। তবে এদের যেখানে অবস্থান সেই মহাকাশের চতুর্মাত্রিক জ্যামিতিটা এমন যে সেখানে সূর্যের মতো একটা মহাভারি বস্তুর সামনে পৃথিবীর মতো চুনোপুঁটি এসে পড়লে বেশ কিছু দিন (তা ধরুন, কয়েক কোটি কোটি বছর) ঘুরপাক খাবেই।

    আসল কথা হল, বিজ্ঞানে না থাকলেও সমাজে এই সব আধিভৌতিক আধ্যাত্মিক শক্তির ধারণাগুলি রয়ে গেছে। যেমন, জ্যোতিষ শাস্ত্র। সেখানে গ্রহের শক্তি আর পাথরের শক্তির যে ব্যাখ্যান শোনা যায়, তার মধ্যে সেই প্রাচীন মাজিক বিশ্বাসের ছাপ বেশ স্পষ্ট। কিন্তু জ্যোতির্বিজ্ঞানে যে আর সেই সব ধারণার কোনো অবশেষ মাত্রও নেই, তা তো বহু লোকই জানে না। একে তো সকলের মধ্যে শিক্ষা তথা বিজ্ঞান শিক্ষা সেভাবে জায়গা করে নিতে পারেনি। ফলে ভুল ধারণাগুলির জন্য উর্বর জমি এমনিতেই বিপুল সংখ্যক মানুষের মনে তৈরি হয়ে আছে। তার উপর সমাজে অন্যায় বৈষম্য শোষণ জুলুম থেকে যাওয়ায় এবং তার হাত থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজে না পাওয়ায় মানুষ সব সময়ই শর্টকাট খোঁজে। চাকরি না পেলে বা মেয়ের বিয়ে দিতে না পারলে যেমন লোকে জ্যোতিষীর কাছে যায়, আর্থসামাজিক দুঃশাসনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যও মানুষ বড় কোনো শক্তির দ্বারস্থ হতে থাকে। সোচ্চারে না হলেও নীরবে, মনের কোনায়। বিজ্ঞানীরাও এই সমাজেই বড় হয়ে ওঠেন। খুব সচেতনভাবে মনের ক্যানভাসে এই সব অবৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার বিরুদ্ধে যুক্তিতে শান না দিলে এবং/অথবা সামাজিক ন্যায় ও সাম্যের দাবিতে চলমান সংগ্রামের কোনো না কোনো মঞ্চে যুক্ত হয়ে না থাকলে এই জাতীয় বিভ্রান্তির হাত থেকে কারোরই রেহাই নেই।

    শুধু এটুকুই নয়।

    সমাজের কায়েমি স্বার্থ, যাদের হাতে সমস্ত প্রতিপত্তি, সমস্ত গণমাধ্যম, সমস্ত প্রকাশনা--তারা কেবল সেই সব চিন্তারই প্রচার প্রসার চায় যার মধ্যে ভূত প্রেত দত্যি দানো আত্মা পরমাত্মা জিন পরী দেবদূত ভগবান--সবাই না হলেও কেউ না কেউ আছে বিভিন্ন মাত্রায়। একেবারে কেউ না থাকলেও অন্তত বৈজ্ঞানিক যুক্তিশীলতায় ধন্দ জাগানোর মতো মালমশলা আছে। পক্ষান্তরে যুক্তির পক্ষে, বিজ্ঞানের সঠিক জ্ঞানের পক্ষে কেউ লিখলেও সহজে তাকে ওরা জায়গা ছাড়তে চায় না। যে বিজ্ঞানী বিজ্ঞান থেকে ভগবানের হাত পায়ের ছাপ দেখাতে পারেন তাঁর বেশ প্রচার হয়, বই প্রকাশিত হয়, সেই সব বই প্রচুর বিক্রি হয়। মনি ভৌমিক যে বেশ কিছুকাল যাবত বিজ্ঞান আর অধ্যাত্মবাদের খিচুরি তৈরি করে পরিবেশন করে যাচ্ছেন, অসংখ্য লোক জানে। কিন্তু রিচার্ড ডকিন্স যে ঈশ্বর-বিভ্রান্তি নিয়ে একখানা চমৎকার বই লিখেছেন তা আর কটা লোক জানে? এইভাবে, যিনি বিজ্ঞানের সঠিক তথ্য তুলে ধরেন, বৈজ্ঞানিক মনোবৃত্তিকে ধরে রাখতে চান, তাঁর বই সহজে বেরয় না, প্রকাশক পাওয়া যায় না। আর যে দুচারখানা এরকম বই বেরয় তার আবার তেমন প্রচার হয় না।

    এই সব নানা কারণে ম্যাজিক সংস্কৃতির উপাদানগুলি আজও সমাজ মননে খুব দৃঢ়মূল হয়ে টিঁকে আছে। আর, বিজ্ঞানের ধর্মীয়-আধ্যাত্মিক ভাষ্য দিতে গিয়ে কেউ যদি তাঁর বইতে বল, শক্তি, ভরবেগ, আকর্ষণ, পরমাণু, ইলেকট্রন, সূক্ষ্মকণা, ক্ষেত্র, পৃষ্ঠটান, ইত্যাদি শব্দগুলি ব্যবহার করেন [যা অনেকেই করেও থাকেন], সাধারণ মানুষ ধরেই নেন--এই সব বুঝি খোদ বিজ্ঞানেরই অন্দরমহলের কথা। লেখক বোধ হয় বিজ্ঞান থেকেই এই সব ধ্যান-ধারণা একেবারে টাটকা ছেঁকে তুলে এনেছেন। বিজ্ঞানের বল, শক্তি, ক্ষেত্র, কণা, ইত্যাদি সংজ্ঞাগুলি যে অনেক দিন আগেই প্রাচীন যাদুবিদ্যার আনুষঙ্গিক ছাল বাকল ছাড়িয়ে পুরোপুরি আলাদা হয়ে গেছে, সেই খবর তাঁরা অনেকেই রাখেন না। সুতরাং . . .

    কিন্তু মনোযোগ সহকারে বিজ্ঞানের প্রামাণ্য বইপত্র পড়লে দেখা যাবে: অধ্যাত্মবাদের পক্ষ থেকে কিছু চাইলেও বিজ্ঞানের তরফে হাত তুলে দিয়ে “ক্ষমা করবেন” বলা ছাড়া ভদ্রতা রক্ষা করার আর কোনো উপায় নেই। যা নেই তা সে দেবে কোত্থেকে?

    সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি

    স্বামী বিবেকানন্দ, স্বামীজির বাণী ও রচনা, ২য় খণ্ড; ৩য় খণ্ড; ৫ম খণ্ড।
    মহেন্দ্রনাথ দত্ত, লন্ডনে স্বামী বিবেকানন্দ।
    দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, লোকায়ত দর্শন, ১৯৫৫।
    অশোক মুখোপাধ্যায়, প্রসঙ্গ ধর্ম: উদ্ভব ও বিবর্তন; ১৯৯২।
    James Frazer, Golden Bough; 12 Vols.; 1906-15.
    Edward Clodd, Animism: the seed of religion; 1905.
    Robert R. Marett, The Threshold of Religion. 1909
    George Galloway, Studies in the Philosophy of Religion; 1904.
    Joseph Campbell, The Masks of God, 4 Vols. 1962-68.
    Plato, Republic
    Jane Harrison, Ancient Arts and Rituals, 1913
    Richard Dawkins, The God Delusion, 2006.

    পুনশ্চ: এই লেখাটিতে ব্যবহৃত শাস্ত্রীয় মন্ত্রগুলি কর্কট রোগে মৃত্যুর (৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪) মাত্র দু মাস আগে, হাসপাতালে যাতায়াতের মাঝের অবকাশে, আমাকে সংগ্রহ করে দিয়েছিল ৪৫ বছরের যুবক খড়্গপুরের ডি. জগন্নাথ কিট্টু। আগের খসড়া পড়ে আমাকে ও বলেছিল, “উদাহরণ দিয়ে বোঝাতে হবে অশোকদা; না হলে কেউ ধরতে পারবে না আপনার কথা। আপনাকে কষ্ট করতে হবে না, আমিই জোগাড় করে দিচ্ছি।” এখন সে আমার কৃতজ্ঞতা গ্রহণের সীমানা পেরিয়ে অনেক দূরে। তথাপি স্বীকৃতিটুকু দিয়ে রাখা উচিত বলে মনে হল। ≤Ω≥
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২০ আগস্ট ২০১৭ | ২০৬৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে প্রতিক্রিয়া দিন