এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  বিবিধ

  • বেড়ানো দেশের গল্প

    সুকান্ত ঘোষ লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১৪ জুলাই ২০১৯ | ১৭৩০ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • তোমার নাম, আমার নামঃ ভিয়েতনাম, ভিয়েতনাম
    -------------------------------------------------------------------

    দুনিয়া বৈষম্যে ভরা – অনেক সময়েই বোঝা যায় না কি কারণে একটা জিনিস অন্যের থেকে বেশী ফুটেজ খেয়ে চলে যায়! এই দেখুন না, ভিয়েতনামের এককালীন চেয়ারম্যান হো চি মিন-কে নিয়ে পাবলিক যেভাবে হৈ চৈ করে, ভিয়েতনামের খাবার নিয়ে কেউ সে রকম উতুপতু করে না! এটা কি ভিয়েতনামের খাবার প্রতি একপ্রকারের অবমাননা নয়? কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেবার মত আবার যখন দেখা যায় প্রতিবেশী থাইল্যান্ডের কুজিনের নাম হো চি মিনের থেকেও বেশী ছড়িয়ে পড়েছে, তখন হালকা একটু কষ্ট হয় বৈকি!

    আপনি যদি খেয়াল করে দেখেন তা হলে এটা পরিস্ফুট হবে যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যে সমস্ত দেশের কুজিন সারা পৃথিবীতে ডাল পালা মেলেছে, তাদের মধ্যে বাই ফার থাই রেস্তোঁরার সংখ্যা বেশী। তার পর আপনি পাবেন ইন্দোনেশীয়ান রেস্তোঁরা। ব্যাটা ডাচ পাবলিক-রা আলু খেয়ে খেয়ে মুখ হেজিয়ে ফেলেছিল – আর তাদের খাবার বিষয়ে ভালো মন্দ জ্ঞানের উপর ভরসা করা যায় না। ফলতঃ তেনারা যখন ইন্দোনেশিয়ায় সাম্রাজ্য বিস্তার করলেন, স্থানীয় লোকেরা যা খেত তাই তাদের কাছে স্বর্গীয় মনে হতে লাগল। সাড়ে তিনশো বছর সে দেশে থেকে অনেকে বিয়ে-থা করে থেকে গেল, আর যারা ফিরে গেল তাদের অনেকে গিয়ে ইউরোপে ইন্দোনেশীয়ান রান্নাকে ডেলিকেসী বলে চালাবার চেষ্টা করতে লাগল। ইন্দোনেশীয়ান খাবার খারাপ নয় – কিন্তু আমার মতে তাই নিয়ে বুক বাজাবারও বেশী কিছু নেই। মালয় খাবার রয়েছে – সে ব্যাটাদের সি-ফুড খুব সুন্দর। তবে চীন, থাই, তামিল এই সব কুজিন মিশে গিয়ে মালয় খাবার এক ভজকট ব্যাপার। অন্য কোন সময় সেই নিয়ে লেখা যাবে ক্ষণ। সিঙ্গাপুরের সরকার আবার তাদের চাঙ্গি-এয়ার পোর্টকে যেমন মার্কেটিং করেছে, তেমন ভাবেই ‘সিঙ্গাপুর’ কিচেন-কে মার্কেট করতে উঠে পড়ে লেগেছে। সিঙ্গাপুর এয়ারপোর্ট ভালত্বের দিক থেকে সমগ্র পৃথিবীর সব এয়ারপোর্ট গুলোর মধ্যে স্থান করে নিতে পারলেও, সিঙ্গাপুরের খাবার নিয়ে এমন কিছু বলা যায় না। মধ্যে সুখের কথা যে খুব বেশি লোক এখনো পর্যন্ত 'সিঙ্গাপুর কিচেন' সংক্রান্ত ঢপে পা দেয় নি। জাপান আর কোরিয়াকে আমি ফার ইষ্ট ধরে নিচ্ছি – তাদের গল্পও আলাদা হবে।

    কিন্তু, মাইরি সিরিয়াসলি বলছি, কেন যে ভিয়েতনামের খাবার তেমন ছড়িয়ে পরে নি আমি জানি না। আমার মতে পৃথিবীর আন্ডাররেটেড কুজিনের মধ্যে ভিয়েতনাম অন্যতম। তবে আজকাল যুগ পাল্টাচ্ছে – খুঁজলে আপনি ভারতের বড় বড় শহরে ভিয়েতনামীজ রেষ্টুরান্ট পেয়ে যাবেন। ভিয়েতনামের খাবার আমার ভালো লাগার এক অন্যতম কারণ হল, তাদের কুজিনে পদ্ম-ফুলের ব্যবহার। ওদের খাবার খেতে গিয়ে আমার বারে বারেই গাইতে ইচ্ছে করে, “ভালোবাসার আরেকটি নাম পদ্মপাতায় - - ” ভিয়েতনাম বেড়াতে গিয়ে বিশাল বিশাল পদ্ম দীঘি দেখে চোখ জুড়িয়ে গ্যাছে।



    বাই দি ওয়ে, ভিয়েতনাম বড় সুন্দর জায়গা – সময় সুযোগ পেলে চলে যান। আমি দক্ষিন থেকে উত্তরে গেছে সে দেশের – যত উত্তরে গেছি হোই-আন, হ্যানয় – তত যেন সুন্দর দেখতে হয়েছে দেশ।

    পদ্ম নামের মধ্যেই কেমন যেন এক আভিজাত্য লেগে আছে – বলাই বাহুল্য পদ্ম নিয়ে নাড়াঘাট করেই রাজ রাজাদের খাবার প্রস্তুত করা হত। ভিয়েতনামের লোটাস-টি তো খুবই বিখ্যাত। চুমুক দিলেই কেমন যেন হালকা সুগন্ধে মুখ ভরে যায় – মুখের থেকেও ব্রেনের উপর দিয়ে বেশি তরঙ্গ খেলে যায়। আপনি মগজ দিয়ে খাবার টের পেতে থাকেন। পদ্ম পাতা দিয়ে চা মুড়ে রেখে ফুলের সুগন্ধ কব্জা করা হয় – তার পর নাকি পদ্মের বীজ ইত্যাদি দিয়ে কিভাবে কি করে যেন চা বানায় – আপনারা বরং গুগুল থেকে জেনে নিন।

    আমার যেটা ভালো লাগে সেটা হল – পদ্ম পাতায় মুড়ে সিদ্ধ ভাত, বড়ই সুগন্ধ যুক্ত – এছাড়া আছে হাঁসের মাংস স্টিমড্‌ পদ্মে, পদ্ম পাতায় এবং ফ্লেভারে রান্না করা মেরিনেটেড চিকেন, বিফের স্ট্রীপ এবং নানাবিধ অন্য খাবার। ভিয়েতনামিজ রোলের নাম তো অনেকেই শুনেছেন – সে জিনিস হল গিয়ে স্টার্টার এর মত – মেন কোর্সের আগে। ভিতরের ফিলিং নানা জিনিসের হতে পারে – তবে রোলের র‍্যাপটা হয় পাতলা রাইস পেপারের। এই রোল গুলির আবার আমার ভেজ ভার্সেন বেশী ভালো লাগে নন-ভেজ ভার্সেন এর থেকে।



    তারপর আছে সেই দুর্দান্ত নুডুল স্যুপ – তারও নানা ভেরিয়েশন – চিকেন, পর্ক, বীফ, প্রণ, নানা বিধ মাছ, ডাক – এই সব দিয়েই স্যূপ বানানো হয়। রাইস নুডুলস্‌ এরই প্রচলন বেশী। এরা নাকি খাদ্য পরিবেশন করে ব্যালেন্স করে – মানে একটা পুরো ডিনারের শেষে আপনার শরীর যাতে কাবু হয়ে না যায় সেটা দেখার ব্যাপার আর কি। কিছু কিছু নাকি ‘হট’ খাবার বলে ধরা হয় – বলাই বাহুল্য মশালাদার খাবার এর মধ্যে পরে। মাংসের মধ্যে হাঁসের মাংসকে নাকি ‘কুল’, মুরগির মাংসকে ‘ওয়ার্ম’ এবং শুয়োরের মাংসকে ‘হট্‌’ ধরা হয়। সেই ভেবে নিয়ে শীতকালে নাকি শূয়ারের মাংস বেশি খাবার প্রচলন। কিন্তু কে জানে ভাই – আমি তো গ্রীষ্ম-বর্ষা-শীত সব সময়েই সব মাংস চলতে দেখেছি দুরদার করে! এ সব মনে হয় বহু পুরানো কনসেপ্ট।









    এদের রান্নায় যে সব সামগ্রী বহুল প্রচলন, আর বেশীর ভাগই আমাদের খুব চেনা – নানা প্রকারের লাল লঙ্কা, বেসিল পাতা, ধনে পাতা, লেমনগ্রাস, পুদিনা পাতা, পাঁচ-মশালার গুঁড়া, হোইসিন সস (সোয়াবিন, পিপার, রসুন এবং অন্য নানা মশলা দিয়ে বানানো), ফিস্‌ সস (এছাড়া ভিয়েতনাম রান্না ভাবাই যায় না – ঘটিদের যেমন সবেতেই মিষ্টি, তেমন এদের প্রায় সব রান্নাতেই কোন না কোন ভাবে মিশে আছে ফিস্‌ সস) – এছাড়া আছে রাইস ভিনিগার, রাইস ওয়াইন, কিছু তেঁতুলের খেলা।

    প্রথমবার যখন যাই তখন ভিয়েতনামে স্থানীয় কারো সাহায্য ছাড়া ঘোরা কেমন সোজা হবে তাই নিয়ে সন্দেহ ছিল। তাই একটা গাইড ছিল আমাদের সাথে – সেই হো-চি মিন শহর থেকে শুরু করে ডা-নাং, সেখান থেকে হোই-আন, সেখান থেকে হ্যানয় শহর এবং হ্যালং বে। এক প্রধান ইনষ্ট্রাকশন তার উপর ছিল সেই দেশ বরাবর ঘোরার সময় আমাদের যেমন সব জায়গার বিখ্যাত স্থানীয় খাবারের রেষ্টূরান্টে নিয়ে যাওয়া হয় এবং স্থানীয় খাবার সার্ভ করা হয়। তা সেই খাওয়া শুরু হয়েছিল হো চি মিং থেকে এবং বলতে নেই সেই ট্যুর কোম্পানীটা তাদের কথা রেখেছিল – সেই সব রেষ্ট্রারান্টে রিসার্ভেশন পাওয়া শক্ত, সেই সব জায়গা তেই বুকিং করে রেখেছিল – কিন্তু প্রি প্ল্যানড বিখ্যাত ডিস এবং কিছু আমাদের পছন্দের উপর ছেড়ে দেওয়া। সে এক বড় ভালো অভিজ্ঞতা। পদ্ম পাতা দিতে রান্না বা পদ্মের বীজের নানা বিধ ব্যবহারে যে কত সুন্দর খাবার বানানো যায়, সেই প্রথম খাওয়া।





    সেই ভালো লাগার শুরু – তার পর থেকে সুযোগ পেলেই খুঁজে খুঁজে ভিয়েতনামীজ রেষ্টুরান্ট গেছি। কুয়ালালামপুরের প্যাভিলয়ন মলের সামনে যে ম্যারিয়ট হোটেলটা আছে – তার তলায় অনেক রেষ্টুরান্টের সাথে একটা খুব ভালো ভিয়েতনামের রেষ্টূরান্ট আছে – সেখানে অনেক বার খেয়েছি এবং এখনো সুযোগ পেলেই খাই – আজকাল আমষ্টারডাম স্টেশনে খুব সুন্দর একটা ভিয়েতনামীজ ক্যাফে টাইপের করেছে – জায়গা পাওয়াই মুশকিল – দু-বার খেয়ে দেখলাম, খুবই ভালো। কয়দিন আগে চীন ঘোরার সময় ভিয়েতনামীজ খাবার খেয়েছি – ভালো লাগা রয়ে গ্যাছে। দূ-একটা প্রিয় খাবার – “পাইন অ্যাপেল সি-ফুড স্যুপ (কানহ্‌ চুয়া টম)”, “রাইস পেপার রোল উইথ মারিনেটেড ফিস অ্যান্ড ফ্রেস হার্বস (গোই কা্‌), নানা ধরণের নুডুল স্যুপ (বান্‌ হোই্‌, বান চা্‌, ফো্‌, ইত্যাদি – তবে আমি এখনো নাম দেখে বুঝতে পারি না, আমাকে ছবি দেখে বা ইংরাজী ডিটেলস মেনু কার্ডে পড়ে বুঝতে হয়), ভিয়েতনামীজ রোল, নানা ভাবে প্রস্তুত করা মাংস (সে চিকেন, বীফ, পর্ক যাই হোক না কেন), ভিয়েতনামীজ গ্রীলড ফিস (তবে আমি এর বিশাল কিছু পার্থক্য করতে পারি নি সাউথ ইষ্ট এশিয়ার অন্য জায়গার গ্রীলড ডিসের সাথে)। আবার মনে পড়ছে, “ক্লে পট – ডিস” ও কিছু খেয়েছিলাম – মূলত মাংসের।











    পুরোপুরি ট্রেডিশ্যানাল না হলেও হ্যানয় শহরে গিয়েছিলাম সেখানকার এক বিখ্যাত ফ্রেঞ্চ-ভিয়েতনামীজ ফিউশন রেষ্টুরান্টে। আমি এই ফিউশন জাতীয় খাবার ঠিক পছন্দ করি না – ঠিক যেমন পছন্দ করি না সুগার ফ্রী মিষ্টি বা ডায়াবেটিক সন্দেশ। কিছু সেই ফ্রেঞ্চ-ভিয়েতনামীজ রেষ্টুরান্টের খাবার বড় মনে ধরেছিল – সেখানে রিসার্ভেশন পাওয়াই চাপের – আগে থেকে বুক করে ভিড় ঠাসা রেষ্টুরাণ্টে খেয়ে কিছু দারুণ তৃপ্তি পেয়েছিলাম। হ্যালং বে তে ক্রুজ সিপ এ ছিলাম তিনদিন – সে তো এক ফাইভস্টার ব্যাপার – তারা আয়োজন করেছিল রোমান্টিক ডিনার টাইপের কিছু – পুরোপুরি অথেন্টিক কিছু খাবারের সাথে মিশ্র খাবার ও কিছু ছিল। সব মিলিয়ে সে অভিজ্ঞতাও দারুণ।





    শুধু রান্না করা খাবারের কথাই বা লিখি কেন, ভালো ভিয়েতনামী কুল-ও খেয়েছিলাম –



    গল্পের কি আর শেষ আছে রে ভাই, কিন্তু ধৈর্যের আছে। হাত ব্যাথা করে – গায়ে ব্যাথা করে। সঙ্গে কিছু তোলা ছবি দিয়েই আপাতত গল্প শেষ হোক।
    ------------------------------------------------------------------------
    গুহা অভিযান এবং ঝুলন্ত কফিন
    ------------------------------------------------------------------------

    খুব ছোটবেলায় ঠাকুমা ভূতের গল্প শুনিয়ে শুনিয়ে মনের মধ্যে ভালোই ভূতের ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছিল। সময়ের সাথে আস্তে আস্তে সেই ভূতের ভয় কেটে যায়, কিন্তু বুঝতে পারি কিছু একটা দ্বিধা যেন মনের মধ্যে থেকে গেছে। এটাও অনুভব করতে পারি যে, সেই ভয়টা আদপে ব্যক্তি বা বস্তুর ভয় নয় – আমাদের মনের মধ্যে অভিযোজনগত ভাবে প্রোথিত থাকা ‘অন্ধকারের’ প্রতি ভয়। বড় শহরে থাকা হলে সেই অকৃত্রিম অন্ধকার আমরা বেশীর ভাগ সময়েই টের পাই না। অন্ধকারের প্রতি সেই যে এক প্রকারের আধ ছোঁয়াচে দ্বিধা সেটা আরো একবার টের পেলাম ফিলিপিন্সের এক বিশেষ জায়গায় বেড়াতে গিয়ে।

    ফিলিপিন্স দেশের রাজধানী ম্যানিলা থেকে যদি আপনি উত্তর দিকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার এগিয়ে যান তাহলে ‘সাগাদা’ বলে এক জায়গায় পৌঁছে যাবেন। সাগাদা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরা এক অদ্ভূত সুন্দর জায়গা। চারিদিকে অফুরন্ত সবুজ আপনার চোখ ধাঁধিয়ে দেবে।





    আর এই সাগাদা প্রদেশ আজকাল জনপ্রিয় হয়ে অনেক পর্যটক আকর্ষণ করে অপরূপ দেখতে লাইমস্টোন দ্বারা নির্মিত গুহা গুলির জন্য। এই গুহাগুলি কত হাজার হাজার বছর ধরে প্রাকৃতিক পরিবর্তনের ফলে নির্মিত হয়েছে তা ভাবতেই অবাক লাগে। তা সাগাদা অঞ্চলে যে গুহা গুলি বেশী জনপ্রিয় তারা হল সুমাগুইঙ্গ, লুমিয়াঙ্গ এবং বালাংগাগান। মজার জিনিস হল আপনি এই যেকোন তিন জায়গার প্রবেশদ্বার দিয়েই গুহায় নামতে পারেন, কিন্তু আদপে মাটির নীচে সব গুহা গুলো একে অপরের সাথে সংযুক্ত। মানে আপনি চাইলে সুমাগুইঙ্গ দিয়ে ঢুকে লুমিয়াঙ্গ দিয়ে বেরোতে পারেন। কিন্তু ব্যাপারটা ত সোজা নয়। - এই কেভিং করা জিনিসটা শারীরিক ভাবে খুবই ডিমান্ডিং। নিজের ফিটনেসের উপর নির্ভর করে আপনি কতটা সময় কাটাবেন নীচের গুহাতে সেটা ঠিক করে নিতে পারেন। এই যেমন আমরা সুমাগুইঙ্গ দিয়ে ঢুকে লুমিয়াঙ্গ দিয়ে বেরিয়েছিলাম। সেই গুহাযাত্রা কমপ্লিট করতে প্রায় ৪-৫ ঘন্টা লেগেছিল।

    সুমাগুইঙ্গ গুহায় প্রবেশপথ



    গুহার ভিতরে অন্ধকারের অতলে তলিয়ে যাবার আগে



    সবচেয়ে গভীর গুহা ছিল প্রায় মাটির ৫০০ ফুট নিচে – ভাবুন যে আপনি পঞ্চাশ তলা বাড়ির মত গভীরতায় মাটির নীচে ঢুকে যাচ্ছেন। বলাই বাহুল্য গাইড ছাড়া এই গুহায় আপনি ঢুকতে পারবেন না – মানে পারবেন ঢুকতে, কিন্তু বেরোতে পারবেন না! সে এক জটিল গোলকধাঁধা – আপনি গুহায় প্রবেশ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রবল অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যাবেন। আপনার ভরসা থাকবে গাইডের ধরে থাকে একটা ব্যাটারি চালিত আলো। সেই আলো আবার বেশী দূর ছড়াতে পারে না, অনেক কষ্টে আপনি হয়ত সামনের পাঁচ ফুট দেখতে পাবেন। সেই যে অন্ধকারের ভয় বলছিলাম না, সেটা অনেক দিন পর টের পেলাম এই গুহায় ঢুকে।









    অন্ধকারের ভয়ের থেকেও আরো বেশী ভয়ের যেটা ছিল তা হল লাইমস্টোনের পিচ্ছিলতা। হাজার হাজার বছর ধরে সেই লাইমস্টোন ক্ষয়ে ক্ষয়ে প্রচন্ড পিচ্ছিল হয়ে উঠেছে। তাই এই গুহায় ছবিতে দেখবেন সবাই খালি পায়ে আছে – ট্রেকিং এর জুতো বা স্পোর্টস জুতো এখানে কোনই কাজে দেবে না। গুহা প্রবল অসমান – পিচ্ছিল, সমনে বেশী কিছু দেখতে পাচ্ছেন না – এমন অবস্থায় পড়ে গেলে আপনার হাত-পা ভাঙার সম্ভাবনা ১০০ ভাগের ও বেশী। হাত ভাঙলে তাও ঠিক আছে – কিন্তু পা ভাঙলে কি ভাবে গুহা থেকে বের হবে সেটাই চাপের ব্যাপার। ভিতরে ঢোকার সময় এত ভাবি নি – কিন্তু বেরোবার পর ভাবতে বসলাম, যদি আমরা কেউ পড়ে যেতাম, পা ভাঙলে সে রেসকিউ টিম ডেকে উদ্ধার করতে হত আমাদের! আর তাতে কত সময় লাগত কে জানে! আর স্ট্রেচার নিয়ে কিভাবে উদ্ধারকারী টিম আমাদের বয়ে আনত সেটাই বুঝতে পারি নি এখনো। কারণ অনেক অনেক জায়গায় দুই পাথরের ফাঁক এতই সরু যে এক মানুষকেই কাত হয়ে পায়ে পায়ে অতিক্রম করতে হত সেই ফাঁক।

    অমৃতা খুব স্পোর্টিংলি নিয়েছিল ব্যাপারটা – বলাই বাহুল্য আমি আগে থেকে বিশেষ কিছু বলি নি ওকে, বললে হয়ত ভয় খেয়ে যেত। কিন্তু ফিরে এসে আমরা দুজনেই ভাবছিলাম যে হয়ত এতটা ঝুঁকি নেওয়া উচিত হয় নি। তবে আমরা তো আর একা ছিলাম, আরো অনেক পাবলিক ঢুকছিল। তার মধ্যে অনেকে খানিকটা কেভিং করে ফিরে আসছিল খতরনাক গুহাগুলোয় না ঢুকে। তবে আমরা জটিল গুহাগুলোয় ঢুকেছিলাম – ভ্যাগিস গিয়েছিলাম, তা না হলে সেই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত হতাম।







    কিছু কিছু গুহায় স্টালাগমাইটস্‌ এবং স্ট্যালাসাইটস্‌ অদ্ভুত আকৃতি নিয়েছে, সে – কিসের আকৃতি সেটা আপনার কল্পনা শক্তির উপর নির্ভর করছে। মাদার নেচার বড়ই অদ্ভুত সেটা আরো একবার অনুভূত হল। সেই সব আকৃতির গায়ে হেলান দিয়ে ছবিও রয়ে গেল সাথে।



    এই গুহাগুলি ঢোকার আগে এক অদ্ভুত জিনিস দেখা যাবে – কারা যেন সারি সারি পাইন কাঠের কফিন সাজিয়ে রেখেছে পাহাড়ের পাথরের খাঁজে খাঁজে। এদের বলা হয় ঝুলন্ত কফিন। গাইড বলল এই কফিন গুলো নাকি প্রায় ৫০০ বছরেও বেশী পুরানো। এই কফিনের ভিতরে মৃতদের স্থাপন করা হয় যেমন ভঙ্গিতে আমরা মাতৃগহ্বরে থাকি তেমন ভাবে। এখানকার লোকেদের বিশ্বাস ছিল যে মানুষ যে ভাবে পৃথিবীতে আসে, সেই ভাবেই তার চলে যাওয়া উচিত। এই সবই নাকি মৃতদের পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা করা হত – আর সেই কারণেই গুহার ভিতরে কফিন গুলো রাখা হত না, আর রাখা হত পাহাড়ের উঁচু খাঁজে, মানে আকাশের যতটা কাছে রাখা যায় আর কি। কারণ ভিতরের অন্ধকারে আত্মারা নাকি পথ ভ্রষ্ট হয়ে যাবে। কিছু কিছু কফিনে অবশিষ্ট কঙ্কাল দেখা যায়।















    কোন মানুষ মরে গেলে তারা এটা সেটা বলি দিয়ে অনুষ্ঠান করত – ছাগল, ভেড়া, মুরগী, শুয়োর ইত্যাদি। সম্পন্ন পরিবারের কেউ মারা গেলে নাকি তিনটে শুয়োর এবং দুটো মুরগী জবাই করা হত। যাদের এত পয়সা ছিল না তারা বলি দিত একটা শুয়োর এবং দুটো মুরগী। মোটকথা মোট সংখ্যা বিজোড় হতে হত – তিন, পাঁচ ইত্যাদি। মৃত্যুর পর আরো কিছু আচার আচরণ পালন করার পর শেষে সেই কফিনে স্থাপন করা হত মৃতদেহ – পা মুড়ে চিবুকের কাছে নিয়ে আসা হত এবং দড়ি ইত্যাদি দিয়ে বেঁধে পাতা এবং কম্বল দিয়ে জড়িয়ে দেওয়া হত। এই ভাবে মুড়িয়ে কফিনে ঢোকাবার জন্য কফিনগুলির দৈর্ঘ্য মাত্র ফুট তিনেকের মতন হত।





    অনে কিছু জানতে পারলাম – গুহাক্লান্ত আমরা গাইডের কথা শুনতে শুনতে এগিয়ে চলছি – আবার আলোর দেখা পাওয়া গেছে – সাগাদার অপরূপ সবুজ সৌন্দর্য্য – তার সাথে আমরা সম্পৃক্ত হচ্ছি ফিলিপিন্সের সংস্কৃতির সাথে, তাদের প্রাচীন উপকথার সাথে।
    ---------------------------------------------------------------------
    কাতার – ন্যাশনাল লাইব্রেরী (Qatar National Library)
    ---------------------------------------------------------------------

    গ্যাসের কাজই হল জিনিসপত্র ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তোলা – তাই এই ফুলে যাওয়াটা খুবই আশ্চর্য্যের কিছু নয়। পেটে গ্যাস বেড়ে গেলে আমরা কেমন ফুলে উঠে ঢলে ঢলে হয়ে যাই এবং তার পর সেই বাড়তি গ্যাস ছাড়তে আইঢাই করি সেটা লক্ষ্য করে বড়বাবুও সেই কবেই গান বেঁধে গ্যাছেন, “ফুলে ফুলে, ঢলে ঢলে বহে কিবা মৃদু বায় ...”।

    তো সেই দিক দিয়ে দেখতে গেলে গ্যাস যে কাতার নামক দেশটাকেও ফুলে – ফাঁপিয়ে তুলল দুম করে একদিন, সেটা নিয়ে আমাদের ট্যারা চোখে চাওয়া উচিত নয়। কাতার দেশটা যাকে বলে একটা গ্যাস বোমার উপরে বসে আছে। আর তা ছাড়া যা গরম ওখানে, সেই গরমে অ্যাভোগাড্রো ভাইপোর কথা অনুসারে গ্যাস যে ক্রমশ প্রসারিত হবে সেটাও আমাদের জানা। গ্যাসের জোর এমনই যে সে দেশ ৫২ ডিগ্রি গরমের মধ্যেই বিশ্বকাপ ফুটবল হোষ্ট করতে যাচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি। তবে খেলা হবে এসি স্টেডিয়ামে সেটা ঠিক।

    লাইফ ইস নট ফেয়ার – এমন গ্যাস বোমা যদি আমাদের ভারতের নীচে, নিদেন পক্ষে পশ্চিমবঙ্গের নীচে পাওয়া যেত, তাহলে আমাদের খামোকা বাংলাদেশের অনুপ্রবেশকারী নিয়ে মাথা ঘামাতে হত না! আমাদের কাজ করার জন্য এমনই বাংলাদেশ থেকে লোক আনতে হত – আমরা ল্যাম্বোরগিনি চেপে গরমে হিমালয়ের দিকে বা সব সীজনে সমুদ্রের সৈকতের দিকে ঘোরাফেরা করতাম।

    এবার ব্যাপার হল, আপনি কাতার বা ওই দিকের তেল-গ্যাসে ফেঁপে ওঠা দেশ গুলো সম্পর্কে যা কিছু কান ঘুঁষো শোনেন, তার প্রায় সবটাই সত্যি। মানে এখানে লোকাল কাতারী লোকজন বেশীর ভাগই প্রচন্ড রূঢ়, আমাদের ভারতের মত বাদামী চামড়ার লোকেদের মানুষ বলে মান্য করে না – কেবল সস্তা শ্রমিক হিসাবে দ্যাখে, কুঁড়ের হদ্দ – একদম কাজ কর্ম করে না, শ্রমিক-দের এক্সপ্লয়েট করা হয় এই দেশে, - এই সব অভিযোগ প্রায় সত্যি। এই সব নিয়ে ডিটেলসে লেখার যায়গা এটা নয়, আর এই বিষয়ে আমি নতুন কিছু খবর দিচ্ছি এমনও নয়। ভারতীয়রা যারা ওখানে কাজ করতে যায়, তাদের কনসেপ্টও এই ব্যাপারে ক্লীয়ার – শুধু পয়সা ইনকাম কর ওখানে, মুখ বুজে পরে থেকে।

    তবে স্থানীয় কাতারী লোকেদের কুঁড়েমোর ডিফেন্সে আমার একটাই কথা বলার আছে, এত বেশী টাকা থাকলে আপনি-আমিও কাজ করতাম না। মানে আপনি করতেন কিনা জানি না, আমি বিলকুল করতাম না। কাজ করি প্লেন পয়সা কামানোর জন্য – সেই পয়সাই যদি পর্যাপ্ত থাকে অলরেডি, তাহলে খামোকা কেন ঘাম ঝড়াবো সেটাই রহস্য।! এই প্রসঙ্গে সেই তো কবেই হিউষ্টনের প্রফেসর সারবস্তু টের পেয়ে গ্যাছেন। আমাদের চেনাশুনা এক হিউষ্টনের প্রফেসর আছেন - টেক্সাস এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটিতে পড়ান। রিটায়ার করার আগে টু পাইস পয়সা ইনকামের জন্য পড়াতে আসেন টেক্সাস এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটি কাতারের দোহা শহরে যে ব্রাঞ্চটা খুলেছে সেখানে। তিনি সকালে দোকান খুলে বসেন ক্লাস নেবেন বলে – লোকান ছাত্ররা কখন ক্লাসে আসে তার কোন মা বাপ নেই – পড়াশুনায় যে খুব মন আছে, তাও নয়। কিন্তু একদিন বিরক্ত হয়ে এক ছাত্রকে ডেকে বললেন, “বাবা, ঠিক ঠাক সময়ে তোমরা ক্লাসে আস না কেন? এমন ভাবে ফাঁকি দিলে কি করে হবে”? সেই ছাত্র তাকে নাকি ডেকে জানালার কাছে নিয়ে গিয়ে পার্কিং-এ গাড়িটা দেখায়। বলে, “স্যার, আপনারা পড়াশুনা করেছিলেন কেন? আপনার যদি এই বয়সে ল্যাম্বোরগিনি, মাসট্যাঙ্গ থাকত ড্রাইভ করার জন্য, তাহলে কি আপনার এতো এনথু থাকত পিএইচডি করতে?” এই প্রফেসর বাস্তববাদী মানুষ – তিনি দেখলেন ভেবে যে ছেলে হক কথা বলেছে। তার পর থেকে তিনি আর কুঁড়েমো নিয়ে আক্ষেপ করতেন না।

    অনেকদিন পর কাতার গেলাম। অন্য বাকি মিডিল ইষ্ট দেশ গুলোর থেকে একটা ব্যাপারে কাতার মনে হয় বেশ কয়েক কদম এগিয়ে আছে। সেটা হল শিক্ষা এবং রিসার্চ খাদে কাতারী সরকারের ব্যায়। কি প্রচন্ড পরিমাণে টাকা ঢালছে এরা অ্যাকাডেমিয়াতে তা ভাবলেই গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। ‘কাতার ফাউন্ডেশন’ কি যে এলাহী ব্যাপার করেছে না দেখলে বিশ্বাস করবেন না। আমি গত কয়েকদিনে গোটা চারেক ইনষ্টিটিউট ভিজিট করলাম কিছু কাজ এবং প্রোজেক্ট মিটিং উপল্যক্ষে। এক ইনষ্টিটিউটে মেটেরিয়াল ক্যারেকটারাইজেশন ল্যাবের ইনষ্ট্রুমেন্ট দেখে আমার ইয়ে ট্যাঁকে উঠে গেল। নয় নয় করে বলতে নেই পৃথিবীর নানা প্রান্তে বিভিন্ন ল্যাবে ঘোরা হয়ে গেল – কিন্তু ইনষ্ট্রুমেন্ট নিয়ে এই এলাহী ব্যাপার কোথাও দেখি নি। অবশ্য ইনষ্ট্রুমেন্ট থাকা আর ভালো রিসার্চ তো সমানুপাতিক কিছু নয় – তাই সেই নিয়ে কিছু বলছি না। এ দেখে আমার মনে হল, আনলিমিটেড বাজেট নিয়ে কেউ শপিং করতে বেরিয়েছে – যা যা ক্যাটালগে পাওয়া যায় ক্যারেকটারাইজেশন ইনষ্ট্রুমেন্ট, সব কিনে নিয়েছে একধার থেকে। মাঝে মাঝে আবার বুঝতে পারে নি কোন কোম্পানীর প্রোডাক্ট ভালো, তাই একই ফাংশনের একধিক মেশিনও কিনে নিয়েছে নানাবিধ কোম্পানির। এই নিয়ে ডিটেলসে অন্য কোনদিন লিখব।

    এবারের ভিজিটে আমাকে সবচেয়ে বেশী ইমপ্রেসড করল ‘কাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরী” এর নতুন বিল্ডিংটা এবং তার ব্যবস্থা। ব্যপক জিনিস বানিয়েছে। সেই লাইব্রেরীতে আবার মিটিং বা সেমিনার রুম ভাড়া পাওয়া যায়। এমন একটা রুম ভাড়া নিয়ে একদিন বিকেলে মিটিং ছিল। মিটিং এর শেষে একটু ঘুরে দেখা হল লাইব্রেরীটা – একদম স্টেট অব দি আর্ট লাইব্রেরী যাকে বলে। উৎসাহী পাবলিক গুগুল সার্চ করে জেনে নিতে পারেন অনেক কিছু ডিটেলস। এখানে ডিজিটাল ব্যাপার স্যাপার ঢুকিয়ে এলাহী করে দিয়েছে।











    ২০১২ সালে এই নতুন লাইব্রেরী প্রোজেক্টের ঘোষণা হয় এবং ২০১৭ সালে এই নতুন বিল্ডিং-এর উদ্বোধন। সেদিন বিল্ডিং-এ ঢুকতে গিয়ে কেমন যেন একটা ডে-জা-ভু টাইপের হল। মনে হল এমন বিল্ডিং-এর আর্কিটেকচার যেন কোথায় দেখেছি। বেশী ভাবতে হল না – বুঝতে পারলাম, বিল্ডিংটা অনেকটাই আমষ্টারডামের আই-মিউজিয়ামের মত। আই-মিউজিয়াম রয়েছে আমষ্টারডাম সেন্ট্রাল স্টেশনের ঠিক উল্টোদিকে নদী পেরিয়ে। এবং খানিক পরে জিজ্ঞেস করে বুঝতে পারলাম যে, এই দুই বিল্ডিং একই আর্কিটেক্টের বানানো – ডাচ ব্যক্তি রেম কুলহাস। একই ডিজাইন দু-জায়গায় বেচে পয়সা কামিয়েছেন, কপিরাইটের ব্যাপার নেই মনে হয়।

    লাইব্রেরীর মধ্যেও যেটা আমাকে বেশী টানল সেটা হল ওদের ‘হেরিটেজ কালেকশন’ – এখানে আছে আরব-ইসলামিক সভ্যতা বিষয়ক নানা বিধ দুঃপ্রাপ্য বই, পান্ডুলিপি এবং আরো অনেক কিছু। এটা অনেক আগে এখানকার সুলতানের নিজের কালেকশন দিয়ে শুরু হয়েছিল, প্রথমে নাম ছিল “আরব-ইসলামিক হেরিটেজ লাইব্রেরী” – সেটাই এখন মূল ন্যাশনাল লাউব্রেরীর সাথে জুড়ে গ্যাছে। এই সেকশনে ধরা হয়েছে কাতারের ইতিহাস, এই জায়গার ভৌগলিক এবং ঐতিহাসিক বর্ণনা। আমাদের প্রায় এক ঘন্টার একটা ট্যুর দিল এই লাইব্রেরীতে কাজ করা এক কাতারী মেয়ে – সে এখন লাইব্রেরী সায়েন্স নিয়ে মাষ্টার্স করছে। অনেক কিছু জানতে পারলাম তার কাছ থেকে। আসলে এই জায়গার লিখিত ইতিহাস বলে খুব বেশীদিনের পুরানো কিছু ছিল না। কারণ এই সব জায়গায় এই মাত্র কিছু দিন আগে পর্যন্তও নানা ট্রাইব থাকত পৃথক কোন দেশের আইডেনটিটি ছাড়াই। ১৯১৮ সাল থেকে প্রায় ১৯৭১-৭২ সাল পর্যন্ত বৃটিশ প্রোটেকশনে ছিল কাতার, তার পরে স্বাধীনতা লাভ করে তারা। এই অঞ্চলের সব ডায়নামিক্স পালটে যায় তেল আবিষ্কারের পর। সেই নিয়ে আমি অন্য জায়গায় লিখব পরে।









    খুব বেশী নিজেদের লিখিত ইতিহাস না থাকার জন্য এরা অনেক অংশেই নির্ভর করে মূলত ইউরোপীয়ান বা অন্য ভ্রমণকারী দের ডায়েরীর উপর। এবার সেই জন্য পিক অ্যান্ড চ্যুজ এর একটা ব্যাপার থেকে যায়। মানে যে তথ্য গুলি এদের এখনকার কাতারের ফিলসফির সাথে মেলে সেগুলিকেই ওরা অথেন্টিক বলে মনে করে। আর বাকিদের অথেন্টিক মনে করে না – বলল ‘স্টেজড’ ইনফরমেশন বা ছবি।

    যাই হোক, পুরানো আরবিক প্রিন্টিং, ইউরোপিয়ান অভিযাত্রীদের ভ্রমণকাহিনী, ঐতিহাসিক ফটোগ্রাফ, পান্ডুলিপি, ম্যাপ, মাপজোপ করার যন্ত্রাংশ ইত্যাদি সব নিয়ে জমজামাট এক লাইব্রেরী। যদি কাতার যান, একবার ঘুরে আসতে পারেন এই লাইব্রেরী – ভালো লাগবে গ্যারান্টী। লাইব্রেরীর ক্যান্টিনের খাবারও খুব ভালো, বাচ্চাদের লাইব্রেরীও দেখলাম খুব বড় এবং প্রাণবন্ত।



















    সঙ্গের কিছু ছবি সেই কাতার ন্যাশানাল লাইব্রেরীর।
    ------------------------------
    পেকিং ডাক
    ------------------------------

    সে অনেকদিন আগের কথা – সিঙ্গাপুরের এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক জায়গাতে ‘পেকিং-ডাক’ নামে এক চেইন রেষ্টুরান্ট ছিল। আজকাল মনে হয় ভারতেও অনেক জায়গাতে এই রেশটুরান্ট পাওয়া যাবে কলোনারী বিস্ফরণের পর। তবে সেই খাবার কতটা অরিজিনাল ‘পেকিং ডাক’ হবে তা আমার সন্দেহ আছে। ভারতে যে খাবার চীনা বলে চালানো হয়, সেই ভাবে যদি ‘পেকিং ডাক’ প্রস্তুত করা হয়, তাহলেই তো চিত্তির! আর সেই কারণেই আমি ভারতে পেকিং ডাক খাবার সাহস করি নি এখনো পর্যন্ত।

    সিঙ্গাপুরের সেই পেকিং চেইন রেষ্টুরান্টে আমি আর অমৃতা খেতে গেছি – এখন মনে নেই সেখানে অর্ধেক পেকিং ডাক অর্ডার করা যায় কিনা, মনে হয় যেত। কারণ অনেকেই তো বাজেটের মধ্যে খেতে ভালোবাসে। ভালো কোয়ালিটির গোটা পেকিং ডাক বেশ দামী – তবে গোটা মাল অর্ডার না দিলে ঠিক মত জমে না অভিজ্ঞতা। আর গোটা পেকিং-ডাকটার সবটাই আপনি খেতে পারবেন – এমন ভাবে আপনাকে অপশন দেওয়া হবে। অর্ডার সার্ভ করতে গোটা পেকিং ডাক নিয়ে এল সেই রেষ্টুরান্টে। এবার এক জন আপনার সামনে সেটা কারিকুরি করে কাটবে – আমাদের জিজ্ঞাসা করা হল, “স্কিন টা আপনারা কেমন ভাবে সার্ভ পেতে চান”? আমি কিছু বলার আগেই অমৃতা বলে উঠল, “না, না – স্কিন টিন আমাদের চাই না – ও আপনি ফেলে দিন”! সেই ছেলে হাঁ! পেকিং ডাকের এক অন্যতম ডেলিকেসি ব্যাপার হল তার সেই গোল্ডেন স্কিন। আর সেটাকেই কিনা ফেলে দিতে বলছে! আমরা কি ধরণের পাবলিক সেটা বুঝতে চেষ্টা দিতে লাগল সার্ভারটা চোখে-মুখে একরাশ বিষ্ময় নিয়ে।

    পেকিং-ডাক নিয়ে ইচ্ছে থাকলে উইকি থেকে পড়াশুনা করে নিতে পারেন। এই ডিসের উৎপত্তি হচ্ছে চীন দেশের বেজিং-এ। আমাদের মোগলাই খাবারের মত এই জিনিসও ওদের রাজা মহারাজাদের খাবার – তবে ঐতিহ্য হিসাবে আরো অনেক বেশী দিনের পুরানো। ৩০০ খ্রীষ্টাব্দ নাগাদ থেকেই এমন ডাক রোষ্ট করা হতে থাকলেও ‘পেকিং রোষ্ট ডাক’-এর রেসিপির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ১৩৩০ সালের এক বইয়ে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে এই পেকিং ডাক ছিল বিত্তবানদের খাবার – রাজা, শিল্পী, সাহিত্যিক, উচ্চ রাজ পদাধিকারী লোকেরা সেই খেয়ে আঁতলামো করত। কিন্তু বিংশ শতাব্দী নাগাদ ছবি বদলায় এবং তার পর থেকে ক্রমে ক্রমে ‘পেকিং ডাক’ চীনের জাতীয় প্রতীকে পরিনত হয়।

    একবারে প্রথম দিকে পেকিং ডাক রাঁধতে যে হাঁস ব্যবহার করা হত তারা ছিল ছোটখাটো আকারের এবং আসত নানজিং নামক এক জায়গা থেকে। কিন্তু দিনে দিনে বেড়ে চলা চাহিদার জোগান দিতে এবং রাজধানী বেজিং-এ স্থানান্তরিত হবার জন্য, অন্য প্রজাতির হাঁজ ব্যবহার শুরু হল। এই যে হাঁস ব্যবাহার হয় তারা মুক্ত প্রঙ্গণে বেড়ে ওঠে প্রথম ৪৫ দিন, তার পরের ১৫-২০ ওদে জোর করে খাওয়ানো হয়, দিনে চার বার। এই জোর করে খাওয়ানোর ব্যাপারটা আমার কাছে এখন সরগর হয়ে গ্যাছে চোখের সামনে আমার মামার চিকেন ফার্ম-দেখে। ডিম ফোটার পর মাত্র ৩০ দিনের মাথায় মুরগী জবাইয়ের জন্য রেডি। কিলো খানেক ওজন হয়ে যায় – আরামবাগ, সুগুণা এই সবের মাধ্যমে আপনা পাতে বডি ফেলে দেবে ৩২ দিনের মাথায়। তবে চীনের পেকিং হাঁসদের খাইয়ে খাইয়ে প্রায় ৫-৭ কিলো করে ফেলা হয়।

    পেকিং ডাক খেয়ে খেয়ে পুরুষ্ট মত হয়ে গেলে তাকে জবাই করা হয় – পালক টালক ছাড়িয়ে, গরম জল দিয়ে ধুয়ে ঝুলে দেওয়া হয় শুকানোর জন্য। শুকাবার সময় এটা সেটা তার গায়ে মাখানো হয়। এবার চাইনীজ রান্না যখন তখন সেই এটা সেটা মসলার মধ্যে সোয়া সস থাকবে না, সেটা তো আর হতে পারে না। সোয়া সস ছাড়াও নাকি নানা মশলা মেশানো হয় – তবে কি মশলা সেটা না জানাই ভালো। জানলে হয়ত খেতে মানসিক সমস্যা হবে – কে জানে, চীনা খাবার বলে কথা! যাই হোক মেরিনেট করার ২৪ ঘন্টা পরে সেই হাঁসের রোষ্টিং শুরু হয় ওভানে যতক্ষণ না হাঁসের চামড়া সোনালী হয়ে আসছে।



    রোষ্ট করার ওভানেও আবার রকম ফের আছে – প্রথম দিকে পেকিং ডাক রোষ্ট করা হত মুখ বন্ধ করা চুল্লীতে – মানে আমাদের কাবাব বা নান রান্না করার মত। মাল চুল্লীতে ঢুকিয়ে মুখটা চাপা দিয়ে দাও। কিন্তু আজকাল পেকিং ডাক রান্না হয় খোলা চুল্লীতে। মানে নীচে চুল্লীর আগুন জ্বলছে, আর পেকিং ডাক ঝুলছে হুকে দিয়ে উপর থেকে। এই স্টাইলটাই এখন পপুলার।





    কিছুদিন আগে বেজিং গিয়েছিলাম একটা ইউনিভার্সিটিতে কিছু কাজে। তেনারা আবার বিশাল অতিথি পরায়ণ – তাই একদিন লাঞ্চ হল বেজিং এর সবচেয়ে পুরানো এবং বিখ্যাত পেকিং ডাক রেষ্টুরান্টে। সেখানে নাকি বেশ কিছুদিন আগে টেবিল বুক করতে হয়। বাহ্যিক আরম্বর বেশী নয় রেষ্টুরান্টটার – কিন্তু বহু পুরানো এবং বিখ্যাত।

    সেখানে গিয়ে এটা ওটা নানাবিধ খাবার পর এল প্রতিক্ষিত পেকিং ডাক। আপনার টেবলের সামনে টেবিল বিছিয়ে সেই গোটা হাঁসটার কাটাকুটি হবে। তিন পর্যায়ে সেই অপারেশন হবে – প্রথমে আপনাকে দেয়া হবে সেই সোনালী স্কিন যা আপনি খাবেন চিনি এবং গার্লিক সস দিয়ে। তারপরে হাঁসের মাংস স্লাইস করে আপনাকে দেওয়া হবে – সেই মাংস খাবেন পাতলা রুটির মত জিনিসে মুড়িয়ে, মানে রোল টাইপের করে – সাথে থাকবে মিষ্টি পেঁয়াজ কুচানো এবং মিষ্টি বীনের সস। আমাদের এর সাথে শসা কুচানোও দেওয়া হয়েছিল।

    চামড়া এবং মাংসতো আপনি ফিনিস করে ফেললেন – তা হলে পরে রইল কি? বিশ্বাস করুণ চীনারা কিচ্ছু ফেলে রাখে না! আপনার সামনে পরে রইল মৃত হাঁসের পাঁজরের খাঁচা এবং হাড় গুলি। এবার আপনাকে জিজ্ঞেস করা হবে, হাড়্গুলো আপনি কি ভাবে খাবেন? সেটাকে নাকি ব্রথ টাইপের কিছু করে খাওয়া যায়, নতুবা হাড় গুলো নিয়ে গিয়ে বেসন জাতীয় কিছুতে ডুবিয়ে আপনাকে কুড়মুড়ে ভাজা করে দেবে। আমি বললাম, আমি কুড়মুড়ে খাব – সেই মত ভাজা চলে এল।

    পেকিং হাঁসের চামড়া অবজ্ঞা করার সঞ্চিত পাপ খোদ বেজিং এ গিয়ে মোচন করলাম – সব কিছু সাপটে খেয়ে। বলাই বাহুল্য – খেতে বড় ভালো – এমনি এমনি এ জিনিসের নাম ফাটে নি মার্কেটে।

    সঙ্গে কিছু তোলা ছবি রইল –












    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ১৪ জুলাই ২০১৯ | ১৭৩০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সুকি | 237812.68.786712.87 (*) | ১৪ জুলাই ২০১৯ ০৪:৪১50657
  • ভাবলাম টুকটাক এগুলো লিখে রাখি। ফেসবুকে দিই মাঝে মাঝে, ছোট ছোট লেখা - এখানেও তুলে দিলাম, হয়ত কারো ইণ্টারেষ্টিং লাগবে।
  • সুকি | 237812.68.786712.87 (*) | ১৫ জুলাই ২০১৯ ০১:২৯50664
  • ডিসি, স্বাতী, বি, দ-দি, লসাগু-দা, রঞ্জন-দা,
    সবাইকে ধন্যবাদ লেখা পড়ার জন্য।

    লসাগু-দা, বিশেষ ধন্যবাদ ছবিগুলো ডিটেলসে ব্যখ্যা করে দেবার জন্য।

    ডিসি,
    তাই খাবার আমার বড় ভালো লাগে - অথেন্টিক থাই খাবার পেলে আর কি চাই। তবে আমাদের ভারতে মত না হলেও থাই খাবারেও একটু উত্তর-দক্ষিণ ব্যাপার আছে। আমার তো উত্তর দিকে থাই বেশী ভালো লাগে - ওই চিয়াং-মাই এর দিকে আর কি। তবে সব জায়গাতেই পাদের ছড়াছড়ি এটা ঠিক। ভিয়েতনাম ঘুরে আসুন, পস্তাবেন না।

    স্বাতী,
    কলকাতায় ভিয়েতনামীজ রেস্তঁরা থাকবে না এটা হতে পারে না - লুকিয়ে আছে কোথাও। খেয়ে দেখুন না একদিন :)

    বি,
    হ্যানয় বড় ভালো জায়গা - মুন কেকের কথা আর আলাদা করে বলা হয় নি। সেটিও বড় ভালো খেতে। আর সাপের রক্ত ইত্যাদি না খাওয়াই ভালো - অবশ্য খেলেও ক্ষতি নেই কিছু।

    দ-দি,
    ভারতেও আজকাল এই খাবার জনপ্রিয় হচ্ছে।

    রঞ্জন-দা,
    থাইল্যান্ড ঘুরে নেবার পর একবার সময় করে চলে যান ভিয়েতনাম, কিছু ইনফো-র দরকার হলে আছি।
  • dc | 124512.101.89900.159 (*) | ১৫ জুলাই ২০১৯ ০৩:০৩50658
  • কি অসাধারন ভালো লেখা! সকালবেলা এরকম একটা লেখা পড়তে পারলে সারাটা দিন ভালো যায়। ভিয়েতনামিজ কুজিনে পদ্মপাতা ব্যবহার করা হয় এরকম আমিও শুনেছি, যদিও সেভাবে খেয়ে দেখা হয়নি। এক দুবার হয়তো খেয়েছি কোন হোটেলে, তবে মনে নেই। আর লেখক ঠিকই বলেছে, ইস্ট এশিয়ান খাবার বলতে মূলতঃ থাই খাবারেরই জয় সর্বত্র। আর থাই খাবারে আবার পাদের ছড়াছড়ি, আমাদের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে যেমন ভুসুকু পাদ, লুই পাদ ইত্যাদি নানা পাদেল লোকের নাম পাওয়া যায় তেমনি থাই খাবার হলো pad thai, khao pad ইত্যাদি। তবে এই লেখাটা পড়ে ভিয়েতনাম ঘুরে দেখার ইচ্ছে হচ্ছে। পদ্মপাতায় মোড়া হাঁসের মাংসের কথা পড়েই তো জিভে জল এসে গেল! না জানি খোদ ভিয়েতনামে গিয়ে চেয়ারে বসে খেতে কেমন লাগবে! লেখককে অনেক ধন্যবাদ।
  • স্বাতী রায় | 124512.101.89900.159 (*) | ১৫ জুলাই ২০১৯ ০৫:৪৫50659
  • এসব অন্যায়! ঘোরতোর অন্যায়! ভিয়েতনাম যাই নি, কোনদিন যাওয়া হবে বলেও মনে হয় না - কলকাতাতে থাই, জাপানী ইত্যাদি বিবিধ দেশের খাবার মিললেও পুরো গোটা ভিয়েতনামিজ রেস্তঁরা আছে বলে শুনি নি। খুব সম্ভবত বান থাই ( এটাও সঠিক মনে নেই ) তে একটা দুটো পদ দেখেছিলাম অনেক দিন আগে, তাও খাওয়া হয় নি। এই লেখাটা পড়ে জিভে জল আসছে! এরকম লোভ দেখান কি উচিত কাজ?
  • b | 236712.158.891212.163 (*) | ১৫ জুলাই ২০১৯ ০৬:১৭50660
  • অনেকদিন আগে হ্যানয় গেছিলাম। সেখানে কি একটা পুরোনো মার্কেট আছে, নাম ভুলে গেছি। সেই মার্কেটে, একটা সেকশনে (মশলা, নানা ধরণের শিকড় বোধ হয়) ঢুকতেই স্বর্গীয় সুগন্ধ চারদিকে ম-ম। ওখানে একটা দোকান আছে, সেখানে শুদু ভাজা/গ্রিলড মাছ পাওয়া যায়। ঐ একটাই সিগনেচার ডিশ।

    আর মুন কেকের কথা বল্লেন না? আমি তো খেয়ে পুরো ফিদা।
    আর হ্যানয়ের ব্রিজ পেরিয়ে কোথায় যেন একটা জ্যান্ত সাপের রক্ত পাওয়া যায়, খাবার জন্যে। । ভরসা হয় নি।
  • | 236712.158.9007812.69 (*) | ১৫ জুলাই ২০১৯ ০৬:২৭50661
  • বেশ রসালো লেখা।
    ভিয়েতনামী ক্যুইজিন খাই নি। এখানে আছে দেখছি দুই তিনটে। খুঁজে খেয়ে আসবো তো!
  • lcm | 237812.68.233412.52 (*) | ১৫ জুলাই ২০১৯ ০৭:০১50662
  • আরে সুকান্ত করেছ কি ! কীবোর্ড নালেঝোলে একেবারে।

    ২নং যে যে ছবিটা রয়েছে, পদ্মপাতার ডোঙার মধ্যে সাদা গোল গোল জিনিস, ওগুলো লোটাস সিড্‌স্‌ - পদ্মের বীজ। সঙ্গে খুব সম্ভবত কুমড়ো বা ক্যান্টালোপ বা গাজর। পদ্মপাতায় মুড়ে স্টিম্‌ড্‌।

    ৩নং, ৪নং -এ একটি মাছভাজা কাঠির হোল্ডারের মধ্যে খাড়া করে রাখ হয়েছে, গোটা মাছ ভাজা এবং তাকে বিভিন্ন সস সহযোগে সুসজ্জিতভাবে পরিবেশন - এটিও খুবই কমন

    ৫নং ছবিতে - ফ্রুট স্কাল্পচার, একটি আনারস, কয়েকটি গাজর দিয়ে তৈরি স্থাপত্য।

    ৬নং ছবিটি - শ্রিম্প কেক - মুগ বিন (কাঁচা মুগ) + ডিম + শ্রিম্প মিশিয়ে -- ভাজা।

    আমার ফেভারিট - - ফিশ বল স্যুপ এবং ক্লে-পট।
    অবশ্য সবই ভাল।
    নাহ্‌, কালকের লাঞ্চটা ভিয়েতনামিজ।
  • রঞ্জন | 124512.101.89900.159 (*) | ১৫ জুলাই ২০১৯ ১১:২১50663
  • ছবিগুলোর জন্যে ধন্যবাদ।
    এবার শীতে থাই যাওয়ার কথা চলছে, আগামীতে ভিয়েতনাম। তখন সুকির সঙ্গে কন্ট্যাক্ট করব।
    অ্যার আগামী মাসেই দিল্লির ভিয়েতনাম এমব্যাসির রেস্তরাঁয় গিয়ে ভিয়েতনামী ডিশের স্বাদ নেবার কথা ভাবছি।
    --'জীবন এত ছোট ক্যানে?"
  • সুকি | 237812.68.786712.87 (*) | ১৬ জুলাই ২০১৯ ০১:২১50665
  • টুক টুক করে যোগ করে যাচ্ছি - সময় পেলে কেউ হয়ত পড়ে দেখবেন।
  • dc | 236712.158.565612.163 (*) | ১৬ জুলাই ২০১৯ ০৩:০২50666
  • সুকির বর্ণনা পড়ে সত্যিই ভিয়েতনাম ঘুরে দেখার ইচ্ছে হচ্ছে। তবে এবার হবে না, এবছরের হংকং আর বেজিং ট্রিপ অলরেডি বুক করা হয়ে গেছে। পরের বছর দেখি যাওয়া যায় কিনা। এছাড়া ফিজি আইল্যান্ডএর একটা ট্রাভেলগ দেখলাম, সেও অপূর্ব সুন্দর জায়গা।
  • সুকি | 237812.68.786712.15 (*) | ১৬ জুলাই ২০১৯ ০৩:৪৫50667
  • ডিসি, ফিজি যাই নি। তবে হংকং, ম্যাকাও, বেজিং একাধিক বার গেছি। কালকে পোষ্ট করছি তা হলে 'পেকিং ডাক' বেজিং এ খাবার অভিজ্ঞতা, ছবি সহ।
  • dc | 124512.101.89900.159 (*) | ১৬ জুলাই ২০১৯ ০৪:০০50668
  • অবশ্যই করুন, কাজে দেবে ঃ-)

    এটা হলো ফিজির ভিডিও, এটা দেখে খুব লোভ লাগছে আর যেতে ইচ্ছে করছেঃ

  • dd | 236712.158.566712.247 (*) | ১৬ জুলাই ২০১৯ ০৪:৪১50669
  • কাতারের ছবি গুলো খুব প্রফুল্লকর। কয়েকটি পোস্টারে দেখলাম হ্রস্ববসনা সুন্দরীদের। এটা কি নরমাল? কাতারতো খুবি রক্ষণশীল দেশ জানতাম।

    শুনেছি ওমান, বাহেরিন .... এসব দেশও আজকাল অনেকটা খোলামেলা হয়েছে। তাই ?
  • Pathik | 237812.68.674512.49 (*) | ১৬ জুলাই ২০১৯ ১০:৫৪50670
  • কাতারে ২০২২ এর অক্টোবর বা নভেম্বরে বিশ্বকাপ হবে, সেইসময় ওখনে খুব সুন্দর আবহাওয়া থাকে, ২০-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

    আর হ্যানয় এমন একটা জায়গা, যেখানে রেস্টোরেন্টের পাশ দিয়ে গেলেও, শুকনো মাছের গন্ধে বমি পায়! তবে হ্যালং বে ক্রুজ এর খাবার অনেকটা কন্টিনেন্টাল ধরনের ছিলো বলে শুকনো মাছের গন্ধবর্জিত ছিল।
  • সুকি | 237812.68.786712.45 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৯ ০১:১৫50673
  • পথিক,
    ভাল জিনিস মনে করিয়ে দিয়েছেন, ধন্যবাদ। আমার মাথার মধ্যে ফুটবল বিশ্বকাপ মানে জুন-জুলাই মাস ঘুরছিল, কাতারে যে অক্টোবর-নভেম্বরে হবে সেটা খেয়াল ছিল না। কিন্তু হ্যানয় এর ব্যাপারে আমার অভিজ্ঞতা আপনার সাথে মিলল না - মানে বিলকুল দ্বিমত, কি আর করা যাবে।
  • সুকি | 236712.158.895612.192 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৯ ০৩:৫২50671
  • ডিডিদা, কাতারে খোলামেলা ব্যাপারটা যাঁরা ওখানে স্থায়ী ভাবে আছেন তারা ভালো বলতে পারবেন। ঘুরতে গিয়ে ঠিক বোঝা যায় না। তবে আমার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী এরা সৌদি আর ওমানের মাঝা মাঝি স্পেক্ট্রামে
  • ন্যাড়া | 237812.69.3434.34 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৯ ০৪:২০50672
  • লাইব্রেরিটা খাসা। কিন্তু যে লাইব্রেরি আমার বই রাখেনা, তাকে আমি ভাল লাইব্রেরি বলতে পারিনা। দুঃখের বিষয় বিশ্বে একটাও ভাল লাইব্রেরি নেই।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু প্রতিক্রিয়া দিন