১৯৪৮ এ যখন সাড়ে সাত লাখ প্যালেস্তিনীয় বাস্তুহারা হন,তখন এই অর্কেস্ট্রা তাদের ‘যাতায়াতের জন্য ইজরায়েল সরকারের সাঁজোয়া গাড়ি ব্যবহার করত’।১৯৭৬ তে ইজরায়েলী দখলদারী চলাকালীন(যে অংশ ১৯৪৮ এ দখল হয়নি) জুবিন মেহতা ‘ইউরোপ থেকে একটি অস্ত্রবোঝাই বিমানে করে এসে পৌঁছান’ । ‘১৯৬৭ সালে যুদ্ধ চলাকালীন এই অর্কেস্ট্রা ইজরায়েলী সৈন্যদের সামনেও অনুষ্ঠান করে’ । এবং এই সমস্ত তথ্য কোনো প্রতিবাদী লিফলেট থেকে নয়,বরং ইজরায়েল ফিলার্মোনিক অর্কেস্ট্রার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া। এবং ফিলার্মোনিক অর্কেস্ট্রা কখনোই প্রকাশ্যভাবে ইজরায়েলের প্যালেস্তাইন নীতির সমালোচনা করেনি।প্যালেস্তিনীয় মানুষদের সপক্ষে কোনো বিবৃতি দেয়নি।বিরোধিতা করেনি ‘ব্র্যান্ড ইজরায়েল’ এর।বরং ইজরায়েলী সেনাবাহিনীর সামনে অনুষ্ঠান করার কথা গর্বিতভাবেই ঘোষনা করেছে(এই তথ্যও ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া যায়)। ... ...
ব্লগ সাইটটির নির্মাতা ও আমারব্লগ লিমিটেডের পরিচালক সুশান্ত দাসগুপ্ত এক সংবাদ বিবৃতিতে জানান, আমারব্লগ ডটকম বাংলাদেশের কিছু কিছু আইআইজি থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত সংবাদ পাওয়া গিয়েছে। গত ছয় মাসে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মত বাংলাদেশে আমারব্লগ ডটকম বন্ধ করা হলো। গত দুবারের মতো এবারও আমারব্লগ ডটকম কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কোন সরকারি কিংবা আনুষ্ঠানিক চিঠি পায়নি। ব্লগ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে জানাতে পেরেছে যে বেসরকারি এবং সরকারি ইন্টারনেট প্রভাইডারকে আমারব্লগ ডটকম সম্পূর্ণভাবে ব্লক করবার সরকারি নির্দেশ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ... ...
একবার আমি সৌগতর সাথে কলেজ থেকে গেছি বিয়েবাড়িতে খেতে - দুপুরের খাওয়া মিস দিয়েছি যথারীতি ভালো করে সাঁটাবো বলে। গেলুম বিয়েবাড়িতে - সবাই হাই-হ্যালো বলে আর খেতে যায়। সৌগত দেখি নড়েই না। ওর আবার হাত তুলে নমস্কার করার একটা ব্যাপার আছে - যেখানে জোড়া হাতটা ঘাড় আর বাম কাঁধের মধ্যের সমকোণটার মাঝামাঝি (অর্থাৎ ৪৫ ডিগ্রী কোণে) উঠবে। সেটা নাকি আদি/অকৃত্রিম কংগ্রেসী স্টাইল! তো যাই হোক আমি খোঁচা মারি সৌগতকে খেতে যাবার জন্য। যতই হোক বিয়েবাড়িতে আসা ওর চেনাশোনার সূত্র ধরেই। তো ঘন্টা দুই পর আমার মাথায় বাজ ফেলে সৌগত ঘোষণা করল - হ্যাংলার মত খেতে যাব মানে? আমরা নাকি জাষ্ট জলযোগ করব! মিষ্টির প্লেট এলে ও একটা মিষ্টি ডাইরেক্ট টাকরায় (ঠোঁটে লিপষ্টিক না থাকা সত্ত্বেও) চালান করে ঘোষণা করল - বাকিগুলো ফেরত নিয়ে যান মাসিমা। বাইরে বেরিয়ে এসে সৌগত আমাকে নিয়ে রেষ্টুরান্টের দিকে রওনা দিল - সেখানে খেয়েই পেট শান্ত করলাম - কারণ বিয়েবাড়িতে খাওয়া সৌগত মতে নাকি প্রায়শই ভালগার। ... ...
কামদুনির নাছোড়বান্দা মানুষ ব্যাঙ্কশাল কোর্টে নজরদারি চালিয়ে যেতে চান। তাই সব ডেটেই তাঁরা আসেন কলকাতা। কিন্তু পুলিশ তাঁদের প্রতিদিন হয়রানি করে। আসার পথে তাঁদের গাড়ি বারবার বেরাস্তায় ডাইভার্ট করে দেয়া হয়। কোর্টের কাছে তাদের গাড়ি রাখতে দেওয়া হয়না, পুলিশ টাকা চায়। ক্ষুব্ধ মানুষগুলো জানান যে সরকার যদি ভেবে থাকে যে বারাসাত থেকে কলকাতায় কেস নিয়ে এনে ও পুলিশ দিয়ে হয়রানি করে কামদুনির আন্দোলনকারীদের থামিয়ে দেবে তবে তারা ভুল করছে, ভিক্ষে করে হলেও তাঁরা আসবেন। ১০সেপ্টেম্বর তাই আরো বেশী সংখ্যায় এসেছিলেন তাঁরা। এপয়া ও মৈত্রী সংগঠনের কর্মীরাও হাজির ছিলেন। জিপিও-র সামনে পুলিশ তাদের বেধরক লাঠিপেটা করে, অপরাজিতার ছোটো ভাই ও মৌসুমি কয়াল সহ বেশ কয়েকজনকে আহত রক্তাক্ত করে এবং ১১জনকে গ্রেপ্তার করে লালবাজার লকআপে নিয়ে যায়, বাকীদের হেয়ার স্ট্রীট থানায়। ... ...
২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট অত্যন্ত গোপনীয়তা বজায় রেখে শুরু হয় ফেলানী হত্যাকাণ্ডের বিচার। সকালে কোচবিহারের সোনারীতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ১৮১ ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তরে উক্ত বিচারকাজ শুরু হয়। বিএসএফ এর আইন The Border Security Force Act, 1968 অনুযায়ী গঠন করা হয় জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্ট। মোট পাঁচজন বিচারক বিচার প্রক্রিয়া চালান আর কোর্ট পরিচালনা করেন বিএসএফের গুয়াহাটি ফ্রন্টিয়ারের ডি আই জি কমিউনিকেশনস সি পি ত্রিবেদী। ১৪ আগস্ট বুধবার থেকে শুনানি শুরু হয়। কনস্টেবল অমিয় ঘোষের বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির ৩০৪ ধারায় অনিচ্ছাকৃত খুন এবং বিএসএফ আইনের ১৪৬ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। এই অমিয় ঘোষ তাঁর ৫ দশমিক ৫৬ মিলিমিটার ইনসাস রাইফেল থেকে গুলি চালিয়েছিলেন, যাতে নিহত হয় ফেলানী। ফেলানীকে হত্যার দায়ে বিএসএফের অভিযুক্ত কনস্টেবল অমিয় ঘোষ ঘটনার পর থেকেই ক্লোজ অ্যারেস্ট থাকেন। অর্থাৎ তিনি তাঁর ইউনিটের ১৮১ নম্বর ব্যাটালিয়নের এলাকার মধ্যেই সীমিতভাবে ঘোরাফেরা করতে পারতেন। শুনানির শুরুতে অভিযুক্ত ব্যক্তির বক্তব্য শোনা হয়। নিজের রাইফেল থেকে গুলি চালিয়ে ফেলানীকে হত্যা করলেও এর জন্য দোষ স্বীকার করেনি কনস্টেবল অমিয় ঘোষ। এরপর ১৯ আগস্ট ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ও মামা আবদুল হানিফের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। জেনারেলসিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্ট ৬ সেপ্টেম্বর বিচারকাজ শেষ করে। রায়ে ভারত-বাংলাদেশসীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশী কিশোরী ফেলানী খাতুন হত্যার মামলায় অভিযুক্ত সীমান্তরক্ষী অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়। রায়ের পরে বিএসএফের ১৮১ নম্বর ব্যাটালিয়নের কনস্টেবল অমিয় ঘোষকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। দ্য বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স অ্যাক্ট ১৯৬৮ অনুযায়ী জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টের রায়ের চূড়ান্ত ছাড়পত্রের জন্য বাহিনীর মহাপরিচালকের কাছে পাঠাতে হয়। সেই প্রক্রিয়া শুরুর কথাও জানানো হয়। ... ...
প্রত্যেক আবিষ্কারের যেমন একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে, এই টেকনোলজিরও খুঁত ডিম বেচতে গিয়েই ধরা পড়ে। ডিমের ভেতরে ও খোসায় অধিক আয়রন থাকার দরুন কিছুদিনের মধ্যেই ডিমের গায়ে জল ও অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে জং পড়া শুরু হয় ও ফেরোসোফেরিক অ্যাসিড উৎপন্ন হয়ে খাবার অযোগ্য করে তোলে। ডিম কোম্পানীরা কিছুদিনের মধ্যেই গবেষণার মাধ্যমে স্টেনলেস ডিম তৈরি করতে সক্ষম হয়, কিন্তু তার দাম ধরাছোঁয়ার বাইরে হওয়াতে সাধারন মুরগির ডিম কেনাই মানুষের পক্ষে শ্রেয় হয়ে ওঠে। ... ...
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছে একটি বৃহৎ উপাসনালয়, পাপ মোচন জেলখানায় নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার; কারণ পাপ মোচন না হলে পরবর্তী পাপের প্রেরণা কোথা থেকে আসবে? ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারটির উপাসনালয়ে যাওয়ার জন্য কারা কর্তৃপক্ষ নিদেনপক্ষে একজন সাধারণ কারা প্রহরীর অনুমতি গ্রহণের প্রয়োজন হয়না। অথচ কারাগারের লাইব্রেরীতে প্রবেশের জন্য জেল সুপারসহ তিন স্তরের কারা প্রহরীর অনুমতি গ্রহণের প্রয়োজন হয়। তবে বেশিরভাগ সময়ই কেউ এত ঝামেলা পোহাতে চায় না, বা এই অনুমতিই মেলে না। ... ...
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক অত্যাবশ্যক ওষুধের তালিকায় আছে ৩৭৪টা ওষুধ। ভারতের জাতীয় তালিকায় ওষুধের সংখ্যা ৩৪৮। অথচ ভারতের বাজারে ওষুধ ফর্মুলেশনের সংখ্যা ১ লাখ ছাড়িয়েছে। এত ফর্মুলেশন তাহলে কেন? একই ওষুধ আলাদা আলাদা কোম্পানী বাজার-জাত করে আলাদা আলাদা নামে। তারপর আছে একাধিক ওষুধের নির্দিষ্ট মাত্রায় মিশ্রণ, যার অধিকাংশই অপ্রয়োজনীয়। এছাড়া আছে অপ্রয়োজনীয় অনেক ফর্মুলেশন, যেমন—কাফ সিরাপ, হজমী ওষুধ, টনিক...। প্রচুর ওষুধ, মানুষের জন্য ওষুধ নেই... ... ...
সুন্দরবনের পাশে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষেত্রে যেমন ১৪ কিমি দূরত্বের কথা বলে আশ্বস্ত করার চেষ্টা চলছে, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের ফায়েত্তি কাউন্টিতে ১৯৭৯-৮০ সালে ১২৩০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সময়ও স্থানীয় মানুষকে এভাবে আশ্বস্ত করা হয়েছিল। এমনকি কিছু দিন পরে এর ক্ষমতা বাড়িয়ে ১৬৯০ মেগাওয়াটে উত্তীর্ণ করা হয়। ফলাফল সাথে সাথে বোঝা না গেলেও ৬৬ থেকে ১৩০ ফুট উচু বিশালাকৃতি পেকান বৃক্ষগুলো(একধরণের শক্ত বাদাম, কাজু বাদামের মতো) যখন একে একে মরতে শুরু করল ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ১৯৮০ থেকে ২০১০ সালের হিসেবে ফায়েত্তি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নিঃসৃত বিভিন্ন বিষাক্ত গ্যাস বিশেষত সালফার ডাই অক্সাইডের বিষ ক্রিয়ায় পেকান, এলম, ওক সহ বিভিন্ন জাতের গাছ আক্রান্ত হয়েছে, বহু পেকান বাগান ধ্বংস হয়েছে, অন্তত ১৫ হাজার বিশালাকৃতির পেকান বৃক্ষ মরে গেছে। এবং এই ক্ষতিকর প্রভাব কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে এমনকি ৪৮ কিমি দূরেও পৌছে গেছে। ... ...
মহাশ্বেতা: ...আমার বিয়ে হয় কুড়ি, পরে একুশে, বিজন ভট্টাচার্য’র সঙ্গে। গণনাট্য সংঘের প্রতিষ্ঠাতা, ফাউন্ডার অ্যাক্টর, নাট্যকার, গীতিকার, গায়ক। তখন, তার আগে ১৮ বছর বয়সে আসে ৫০ এর মহা মন্বন্তর। তখনই আমি যেটুকু দূর্ভিক্ষের জন্য কাজ করি, তার ফলে কমিউনিস্ট পার্টি পরিচালিত আন্দোলনের সাথে আমার সেটুকু যোগাযোগ হয়। তারপর জীবনের বেশ কিছু পর্ব অন্যভাবে যায়। এখন ৬০ থেকে শুরু হয় কি ৬২ থেকে, তারপর ৭৫ সাল পর্যন্ত যে কারণেই হোক, আমি পালামৌ জেলায় বার বার যাই। এবং ইনসিডেন্টলি জানতে পারি ঘটনাবলির মধ্য দিয়ে...যা দেখতাম, বন্ডেড লেবার সিস্টেমের কথা জানতে পারি এবং তখন আমার আগ্রহ বন্ডেড লেবারে। তার স্ট্যাটেস্টিক্স গ্রহণ করা, তারপর নানা রকম হেনতেন করতে করতে গ্রামে গ্রামে ঘোরা। প্রায় পালামৌ জেলাই পায়ে হেঁটে ঘোরা হয়ে গেল। তার লড়াই, সে সব লিখেটিখে সেসব অন্যভাবে চলল। ... ...
১৯৯৮ সাল থেকে সুশান্ত চৌধুরির ক্ষমতা বাড়ে, তার দলে আরও কিছু দুষ্কৃতীদের দল যুক্ত হয়। দুই গুণ্ডা মিলেই তাদের তোলাবাজির কারবার জমিয়ে তোলে, স্থানীয় ব্যবসায়ী, দোকানদার এবং বাসিন্দা এদের কাছ থেকে এরা নিয়মিত তোলা আদায় করত এদের স্থানীয়ভাবে ব্যবসা করতে দেবার বিনিময়ে। দুজনেই বাইরের লোক হলেও অবিলম্বে এরা সুটিয়ায় জমিয়ে বসে, এবং নিজেদের দলে স্থানীয় হতাশ, কাজ-না-পাওয়া ছেলেপুলেদের ভেড়াতে শুরু করে। এই স্থানীয় ছেলেদের বেশির ভাগই এই সব দলের "ইনফর্মার" হিসেবে কাজ করত। দেখতে দেখতে ছোটখাটো তোলাবাজির ঘটনা বাড়তে বাড়তে ২০০০ সাল নাগাদ এই সব বড় আকার ধারণ করে, এবং এর সাথে যুক্ত হয় গণধর্ষণের মত ঘটনাবলী। এর মূলে ছিল এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া চালুন্দি নদীর বন্যায় সুটিয়া এবং আশপাশের গ্রামের বহু মানুষ সহায়সম্বলহীন হয়ে পড়েন। বেশ কয়েকটি গ্রাম হতশ্রী হয়ে পড়ে। এই সময়ে সরকারি এবং বেসরকারি ত্রাণসাহায্য এসে পৌঁছয় এবং সেইসব বিলিব্যবস্থার কাজে লাগে স্থানীয় ছেলেরা। এর পরে যা হয়, ধীরে ধীরে তারা নিজেরাই সেই সব রিলিফের মাল সরাতে থাকে, এবং সুশান্ত আর বীরেশ্বরের সহায়তায় তাদের গুণ্ডাবাহিনি এই সব গ্রামে তাদের দৌরাত্ম্য শুরু করে। গুন্ডাবাহিনি রিলিফের দখল নেয় এবং তারাই স্থানীয় স্কুল পালানো, কর্মহীন, হতাশ কমবয়েসী ছেলেদের নিজেদের দলে নিয়োগ করতে শুরু করে, ক্রমে সুটিয়া এবং আশপাশের সমস্ত গ্রামের রিলিফ সেন্টারের দখল তারা নিয়ে নেয়, এবং তাদের সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয় পুরো এলাকায়। নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে তারা তোলাবাজি আর অত্যাচার চালাত, লোকাল ইনফর্মারদের সাহায্যে তারা স্থানীয় পরিবারগুলো সম্বন্ধে খবর জোগাড় করত, তারপরে বাইকবাহিনী নিয়ে চড়াও হত সেই পরিবারের ওপর, মহিলাদের অত্যাচার এবং ধর্ষণ করত, তারপরে টাকা দাবি করত। কখনও দাবির কম টাকা নিয়েই তারা খুশি হয়ে যেত, কখনও কখনও তারা বাধ্য করত পরিবারটিকে নিজেদের আংশিক জমিজিরেত বেচে টাকা তুলে দেবার জন্য। পুলিশে খবর দিলে মেরে ফেলার হুমকি দিত তারা। কখনও তারা লাগাতার কয়েক দিন ধরে কোনও একটি বাড়িকে ঘিরে থাকত, কাউকে বেরোতে দিত না যতক্ষণ না তাদের দাবি মানা হত। সবাই জানত, স্থানীয় পুলিশের সাথে তাদের যথেষ্ট বোঝাপড়া ছিল এবং দুই গুণ্ডাবাহিনির নেতাই বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় পুষ্ট ছিল, তাদের ধরা সোজা ছিল না। মেয়েদের তারা ধরে নিয়ে যেত নাগবাড়ি এলাকায় একটা ছোট পরিত্যক্ত ঘরে, তারপরে সেখানে তার ওপর অত্যাচার চালাত। একটিমাত্র কেসে আমি জনৈক সারভাইভারের নিজের মুখ থেকে শুনেছি সেই অত্যাচারের কাহিনি, বাকি কেসগুলো আমি শুনেছি অন্যদের মুখ থেকে এবং লোকাল থানার এফআইআর থেকে। আমি আবার সুটিয়া যাব আরও বিস্তারিত জানতে। ... ...
বর্ণ গন্ধ ধ্বনির এই ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য প্রেক্ষাপটটা জরুরি। না হলে সব উন্নয়ন বিতর্কই শেষ পর্যন্ত মাথা কোটে অসার নাগরিক তাত্ত্বিকতার আবর্তে, “কিছু পেতে গেলে কিছু হারাতেই হয়” জাতীয় বুলিতে। যারা পাচ্ছে, তাদের যে কিছুই হারাতে হচ্ছে না, আর যারা হারাচ্ছে তারা যে পাচ্ছে না কিছুই – আবহমান এই নির্মম সত্যিটা খোদাই হয়ে থাকে একটি যন্ত্রণাক্লিষ্ট মুখে, একটি নীরব চোখের ভাষায়, একটি ঠোঁটের কুঞ্চনে। তেমন এক মুখের সামনে এসে মুখোমুখি বসতে হয়। ঠিক তেমনই একটি পাহাড়ের মাথায় এক স্বচ্ছ শীত অপরাহ্ণে, মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়া বনটিয়ার ঝাঁক আর কাঠঠোকরার ঠক ঠক শব্দে, আর্দ্র বনজ গন্ধে তিরতিরে ঝর্নার ধ্বনিতে, প্রতিভাত হয় ধর্মস্থানের সংজ্ঞা। পুরাণকথার নায়কের আঁতুড়ঘরের হালহদিশ নিয়ে যখন দেশ পোড়ে, সাম্প্রদায়িকতার দাঁতনখ শানিয়ে ওঠে, তখন এক কন্ধ রমণীর বাচন – “ তুমো মন্দির ইটা বালি রে তিয়ারি, আমো মন্দির গাছা লতা পাথরো ঝরনা জন্তু রে!” - ঝোড়ো হাওয়ার মতো আমাদের সনাতন দেবালয়ের পোড়ো দরজাটা সমূলে নাড়িয়ে দেয়। ... ...
এর দুইদিন পরে। আমি বসে আছি উপ-কমিশনারের রুমে। বড় হেফাজতিটাকে নিয়ে আসা হলো। আমাকে দেখিয়ে বলা হলো, এই লোকটা কেমন? মানে মানুষ কেমন? হেফাজতিটা বললো, সে মানুষ হিসেবে ভাল। মনটা ভাল আছে, লোক খারাপ না, কিন্তু সমস্যা হইলো নাস্তিক। নাস্তিক না হইলে তারে খুব ভাল মানুষই বলা যাইতো। ... ...
তাই এই ভীষণ চেনা মানুষগুলোর ভালোমন্দ দুরু দুরু বুকে দেখতে দেখতে একটা গোটা বড়োসড়ো সিনেমা পুরো উপভোগ করে ফেলি। আমার মনে মালগুডি ডেজ, চাঁদমামায় দেখা জাতকের গল্প ও ছবি, প্রিয় বান্ধবীর অ্যাকসেন্ট, প্রিয় বন্ধুর অর্থপিশাচ হয়ে যাওয়া, তিনটি মহাদেশ ও তার মানুষের ভালোমন্দের ছাপ, দারিদ্র্য, দারিদ্র্যকে ছাপিয়ে উঠে মানুষ হওয়া ও না হতে পারার অসহায়তা, আর এ যাবৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির ডিভিডি সংগ্রহের সমস্ত প্রিয় অপ্রিয় স্বল্পপ্রিয় চরিত্র জট পাকিয়ে যায়। যে দ্বন্দ্ব নিয়ে এই সিনেমা তৈরী, আমি সেই দ্বন্দ্বেরই শিকার হই। সিনেমাটা দেখার পরের আমি সিনেমাটা দেখার আগের আমিই আছি কিনা বুঝতে পারিনা। এর উত্তর জানা অবশ্য ততটা জরুরি কিনা জানিনা। ... ...
সাধারণভাবে আমরা জানি পদার্থের স্ট্যাটাস বা অবস্থা তিন প্রকার। কঠিন তরল এবং বায়বীয়। কিন্তু মানুষের স্ট্যাটাসের সংখ্যা অসংখ্য। এই বিচিত্র দুনিয়ায় বিচিত্র স্ট্যাটাসের উৎপত্তি হচ্ছে প্রতিদিন। ফেসবুকের কল্যাণে সেই স্ট্যটাসগুলো মনের কৃষ্ণগহবর থেকে বেরিয়েআসছে নির্দ্বিধায়। এই ফেসবুক স্ট্যটাস নিয়ে একটি গবেষণা করা যাক। কথায় আছে যার স্ট্যাটাস নাই তার কিছুই নাই। আবার বাংলা ছবির ডায়লগের মত ডায়লগ আছে, চৌধুরী সাহেব আমার ঘর নাই,বাড়ি নাই, কিন্তু স্ট্যাটাস আছে। এখন আপনার মেয়ে বিয়ে দিবেন কি না বলেন? ... ...
"এর পর আমি এক নীল রঙের ইন্ডিকা গাড়ি, নম্বর MH-02-JA-4786, দেখতে পাই রাস্তার ডিভাইডারের কাছে দাঁড়িয়ে আছে। গাড়ির কাছে পুলিশ কনস্টেবল মহম্মদ সফি দাঁড়িয়ে ছিলেন। জিজ্ঞেস করাতে কনস্টেবল সফি জানান, ওই ইন্ডিকা গাড়ি তিনিই চালিয়ে এনে রেখেছেন। সেই সময় শ্রী এন কে আমিন, শ্রী জে জি পারমার আর কম্যান্ডো পুলিশ কনস্টেবল শ্রী মোহন নানজি মেনত সেখানে উপস্থিত ছিলেন। শ্রী আমিনের গাড়ি ইন্ডিকা গাড়িটার পেছনে রাস্তার বাঁদিক ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছিল। এর পরে সাদা রঙের একটা এসইউভি গাড়ি সেখানে আসে এবং রাস্তার ধারে এসে দাঁড়ায়। তখন আমি দেখলাম যে, কনস্টেবল মোতি তালাজা দেসাই একজনকে সেই গাড়ি থেকে বের করল। এই লোকটিকেই কুড়ি দিন আগে গোটা সার্কেল থেকে ধরা হয়েছিল। তখনই আমার মনে হল কিছু একটা গড়বড় হতে চলেছে। ... ...
তখন তিনি পুনশ্চের কবিতাগুলি লিখছিলেন। একটু পরে সম্বিত ফিরে পেলে 'পুকুরধারে' নামে কবিতাটি লেখা হলো। পরদিন শান্তিনিকেতন ফিরে গেলেন। তখন সেখানে বর্ষামঙ্গল উৎসবের আয়োজন চলেছে। কবির এই শোকসংবাদে বিচলিত আশ্রমিকেরা উৎসব বন্ধ রাখার প্রস্তাব করলেন। কিন্তু কবি রাজি হলেন না। নিজেও উৎসবে পূর্ণতঃ অংশগ্রহণ করলেন। মীরাদেবীকে লিখলেন, '' ... নীতুকে খুব ভালোবাসতুম, তাছাড়া তোর কথা ভেবে প্রকান্ড দুঃখ চেপে বসেছিলো বুকের মধ্যে। কিন্তু সর্বলোকের সামনে নিজের গভীরতম দুঃখকে ক্ষুদ্র করতে লজ্জা করে। ক্ষুদ্র হয় যখন সেই শোক, সহজ জীবনযাত্রাকে বিপর্যস্ত করে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ,.... অনেকে বললে এবারে বর্ষামঙ্গল বন্ধ থাক আমার শোকের খাতিরে। আমি বললুম সে হতেই পারেনা। আমার শোকের দায় আমিই নেবো। ... আমার সব কাজকর্মই আমি সহজভাবে করে গেছি। ...'' ... ...
মৃত্যুরাখালের তো গর্বের শেষ নেই। যে জীবন নিয়ে মানুষের এতো অহমিকা, স্বজন-পরিজন সংসারের তৃপ্ত আবহ, অর্থ-কীর্তি-সচ্ছলতার উত্তুঙ্গ মিনার, তা'কে এক ফুঁয়ে সে ধূলিসাৎ করে দিতে পারে। তার সামনে নত হয়ে থাকে রাজার রাজা, ভিখারির ভিখারি, সম্মান-অসম্মানের ভিতে গড়া অনন্ত নক্ষত্রবীথি, পাবকের পবিত্র অগ্নি থেকে মৃত্যুরাখাল কাউকে রেহাই দেয়না। সে তো ভাবতেই পারেনা একটা রক্তমাংসের মানুষ সদানন্দ হয়ে নিজেকে ঘিরে রেখেছে আনন্দের সমুদ্রে। রাখাল তার নাগাল কখনো পাবেনা। তার কিন্তু চেষ্টার কমতি নেই। সদানন্দের আশি বছরের দীর্ঘ জীবন জুড়ে বারম্বার হননপ্রয়াস চালিয়ে গেছে সে। কিন্তু ঐ সমুদ্রটা কখনও পেরোতে পারেনি। সে হেরে যায় সদানন্দের কছে। জগৎসংসার জানে সে হলো জীবনের শেষ কথা, সদানন্দ বলে সে হলো অনন্ত সম্ভাবনার দ্বার। ... ...
-দুনিয়ার সেরা ইঞ্জিনিয়ারেরা বসে এমন একটা জায়গা বানিয়ে দিতে পারবে? এখানে যে জড়িবুটি হয়, তাই খেয়ে আমাদের বাপদাদা পরদাদারা বেঁচেছে, আমরা বাঁচছি, আমাদের ছেলেপুলে নাতিপুতি বাঁচবে। কিন্তুই খাদান হলে? যা বক্সাইট আছে সেটা তুলে ফেলতে নাকি পঁচিশ বছর লাগবে। তারপরে কী হবে? পঁচিশ বছরের জন্য কশো বছর বন্ধক রাখব আমি? কুমুটি মাঝির গলায় ছিল অনাগত প্রজন্মের ভার। অস্ত সূর্যের আলো এসে পড়েছিল তাঁর মুখে। পায়ের কাছে গর্তগুলো চেয়েছিল অক্ষিবিহীন কোটরের মতো। বনে কোথাও একটা কাঠঠোকরা ঠক ঠক করে শব্দ করছিল। আপাতত ভবিষ্যৎ বন্ধক রাখতে হবে না কুমুটি মাঝিদের। তবে, "তারপর তারা সুখে শান্তিতে বাস করিতে লাগিল" - রূপকথার এই শেষ লাইন লেখার সময় আসেনি এখনও। নিয়মগিরি পাহাড়ের নীচে লাঞ্জিগড়ে রয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকার রিফাইনারি, তার জঠরে খিদে, পাহাড়ের গা বেয়ে কনভেয়ার বেল্ট করিডোর পড়ে আছে অজগরের মতো। ... ...
ইতিহাসে তার আগ্রহ নেই। থাকলে সে জানত এই স্টেশন আর এই রেল লাইন ভারতের ইতিহাসের এক বিচিত্র খেলার সাক্ষী। ভারতের আর কোনো রেল স্টেশনের বা লাইনের এমন ইতিহাস নেই। প্রিন্স দ্বারকানাথ কয়লা খনির কয়লা পরিবহণ সমস্যা সমাধান নিয়ে ভাবতে ভাবতেই বিলেত গেছিলেন। তদ্দিনে রাজমহল আর রায়গঞ্জের অনেকগুলো খনি কেনা হয়ে গিয়েছে তাঁর। ১৮৪২-এ যখন বিলেতে গিয়ে ট্রেনে চড়লেন তখনি মাথায় খেলে গেল সমাধানের সম্ভাবনা। ১৮৪৩-এ কলকাতা ফিরে বানালেন কার এণ্ড টেগোর কোম্পানি। বিলেতে ম্যাকডোনাল্ড স্টিফেনসন বানিয়ে বসেছে ইস্ট ইণ্ডিয়া রেলওয়ে কোম্পানি। দ্বারকানাথ চাইলেন বর্ধমান ও আসানসোলের জন্য লাইন। বর্ধমান কৃষি ও খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। অশেষ বাণিজ্য সম্ভাবনা রেলের। দ্বারকানাথ এই লাইনের জন্য এক-তৃতীয়াশ মূলধন সংগ্রহের প্রস্তাবও দিলেন স্টিফেনসনকে। প্রত্যাখ্যাত হয়ে বানালেন গ্রেট ওয়েস্টার্ণ বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি। আবার বিলেত গেলেন অনুমতি পেতে কোম্পানির বোর্ডের। ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কোম্পানির ম্যানেজার স্টিফেনসন আর চেয়ারম্যান লার্পেন্ট বোর্ডে তাদের প্রভাব খাটালো। নেটিভ ম্যানেজমেন্ট-এর হাতে এমন গুরুত্বপূর্ণ লাইন তুলে দেওয়া যায় না এই ছিল তাদের বক্তব্য। দ্বারকানাথের ১৮৪৫-এর এই যাত্রা বিফল হল। দ্বারকানাথের মৃত্যু হল কিছুদিনের মধ্যেই। কার এণ্ড টেগোর উঠল নিলামে। কিছুদিনের মধ্যেই গ্রেট ওয়েস্টার্ণ বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি আর ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কোম্পানি মিশে গেল। গড়ে উঠল ‘ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ে’ এবং ১৮৫৫ তে হয়েও গেল বর্ধমান-কলকাতা লাইন। ... ...