টেলিভিশনে ব্রায়ান হ্যানরাহান যখন এই যুগান্তকারী ঘটনাবলির বর্ণনা দিচ্ছেন, আমি চোখ বন্ধ করে ভাবছি বারো বছর আগের সেই দিনটার কথা যেদিন আমি পশ্চিম বার্লিনের পতসডামার প্লাতসে একটা কাঠের পাটাতনের ওপরে উঠে প্রথম পূর্ব বার্লিন দেখি । কাঁটা তারের বেড়ার ওপারে ধূসর মাটি, ভাঙ্গা চোরা চ্যান্সেলরির বাড়ি যার নিচে ছিল হিটলারের বাঙ্কার, গোয়েরিঙের হাওয়া অফিস। সে মাত্র বত্রিশ বছর আগের কথা। লোকে কেতাবে পড়ে আমি চোখের সামনে ইতিহাস দেখছি । ঠিক এই সময়ে জার্মানি ফিরব ? কাজে? কো ইন্সিডেনসের বাংলা কি ? সমাপতন কি একেই বলে ? ... ...
ব্যাপারটা নিছক ব্যক্তিগত হলে দরকারই ছিল না এত কথার। কিন্তু দশকের পর দশক ধরে কবিতার নামে কী দেখছি আমরা? স্বকাম-মর্ষকাম কিম্বা ভঙ্গিসর্বস্বতা। একটু অন্যরকম ভাবেন যাঁরা, তাঁদেরও, যোগ থাকলেও আত্মীয়তা নেই জনগণের সাথে। অথচ, সমস্যার কি অন্ত আছে দেশে? কোথায় সেই ক্রোধ ও ফরিয়াদ? কঠিন কঠিন কথায় কীসব নিদান দেন মনীষী কবিরা! আর ক্লীব হলে যা হয়, প্রকৃত প্রেম, নির্মল আনন্দ থেকেও বঞ্চিত আধুনিক কবিকুল। প্রেমের কথা উঠলই যখন – বেশি ফেনিয়ে-গেঁজিয়ে না ভেবে, নরনারীর প্রেমকে যদি স্বাভাবিক চোখে দেখি, গানে-কবিতায় অদ্বিতীয় নজরুল। ... ...
আমাদের গ্রামে হিন্দু মুসলমান সবার প্রধান আনন্দ ছিল মাঘ মাসের ওলাইচণ্ডী পূজার মেলায়। দুর্গাপূজা, সরস্বতী পূজা, লক্ষ্মী পূজা আছে-- আছে ইদ বকরিদ মহরম--- কিন্তু মাঘ মাসের মেলাই আসল মিলবার জায়গা। সেটা হলেই সবচেয়ে বেশি আনন্দ। আত্মীয় স্বজন কুটুম আসার এই তো আসল সময়। দুর্গাপূজার সময় অনেকের ঘরেই অভাব। ইদ বকরিদ ধান ঝাড়ার সময় কবার আর হয়? পৌষ মাসে ধান কাটা শেষ। মাঘ মাসের ১৯ তারিখ মেলা। হাতে পয়সাও ম্যালা। ফলে আনন্দের অর্থই আলাদা। কাঠের নাগরদোলা, পাঁপড় চপ বেগুনি পেঁয়াজি ঘুগনি, জিভে গজা পান্তুয়া লেডিকেনির দোকান বসে মেলায়। দুর্গাপূজা বা ইদে তো সেসব অনুপস্থিত। বাঁশি কেনা, ঘড়ি কেনা, টিকটক কেনা, লাট্টু কেনা, রঙিন চশমা-- সেতো ইদ বকরিদ দুর্গাপূজায় সবার সম্ভব নয়। ... ...
তিনি লিখছেন, 'মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী / আর হাতে রণতূর্য'। সত্যই তাই । প্রেম প্রকৃতি বিক্ষোভ বিদ্রোহ বিপ্লব এসেছে তাঁর লেখায়। আবার একই সঙ্গে এসেছে বৈপরীত্যমূলকভাবে ঈশ্বরে অনাস্থা ও আস্থা । কেউ বলতে পারেন, ঈশ্বর নয়, ঈশ্বরের নামে করে খাওয়া ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে তাঁর এই জেহাদ। 'গ্রাম উঠে আসে নাগরিক স্থাপত্য নিয়ে তাঁর লেখায়। খনি অঞ্চলের মানুষ। খনন করেন মানুষের মন, রাজনীতি, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, দল—শ্রমিকের উদ্যমে, কৃষকের আবেগে, বুদ্ধিজীবীর পাণ্ডিত্যে, আবহমান বাংলা কবিতার সুরে। ... ...
ঈর্ষান্বিত হলেন কিছু মানুষ। নজরুলের উল্কার মত উত্থান তাঁরা মোটেই ভালো চোখে দেখলেন না। কোথাকার কোন ভুঁইফোঁড় ছোকরা, পল্টন থেকে ফিরেই সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়ে জনপ্রিয় কবি হয়ে গেল? প্রতিষ্ঠিত কবি মোহিতলাল মজুমদার বললেন, নজরুল নাকি তাঁর 'আমি' নামে একটি লেখার ভাব চুরি করেছেন। একবছর আগে ‘মানসী’ পত্রিকার পৌষ সংখ্যায় বেরিয়েছিল তাঁর 'আমি' লেখাটি। সে যুক্তি ধোপে টিঁকল না। লোকে হেসেই উড়িয়ে দিল, মোহিতলাল কি 'আমি' কথাটার পেটেন্ট নিয়েছেন? আর কেউ 'আমি' ব্যবহার করে কিছু লিখতে পারবে না? হাস্যকর দাবি সন্দেহ নেই। 'ভবকুমার প্রধান' ছদ্মনামে সজনীকান্ত ‘বিদ্রোহী’ কবিতার প্যারোডি লিখলেন কামস্কাটকীয় ছন্দে।'ব্যাঙ' কবিতাটি ভূমিকাসহ শনিবারের চিঠিতে প্রকাশিত হল এবং বেশ জনপ্রিয়ও হল। বিশেষ করে কবি মোহিতলাল মজুমদার ‘ব্যাঙ’ কবিতাটি নিয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলেন এবং জনে জনে শুনিয়ে বেড়াতে লাগলেন। ঈর্ষার কী বিচিত্র রূপ! ষড়রিপুর ষষ্ঠ রিপুটি অনেককেই জ্বালাতন করেছিল, সন্দেহ নেই। ... ...
গোটা সকালটা ফেরিঘাটে ক্যানোর মালিকদের সঙ্গে ফালতু কথায় নষ্ট হল। অবশেষে বেলা পাঁচটায় আমরা মালাগারাজি নদীর বাম তীরে ইহাতা দ্বীপের সামনে পৌছালাম। কিয়ালার পশ্চিমে, দেড় ঘণ্টা দূরে ইহাতা দ্বীপ। ফেরি পারাপারের জন্য শেষমেষ রফা হল আট গজ কাপড় ও চার ফান্ডো সামি-সামি বা লাল পুঁতি, তখনই সেটা দিয়ে দেওয়া হল। এই ছোট, বেঢপ, টলমলে ক্যানোতে মালপত্র-সহ চারজন নদী পার করতে পারে। যাত্রী আর মালপত্র বোঝাই নৌকাগুলোর মাঝিরা যখন তাদের নৌকা নিয়ে রওনা হল, তখন তাদের অন্যদিকেই থেমে থাকার নির্দেশ দেওয়া হল, আর আমাকে অবাক করে, আরও দাবি জানানো হল। মাঝিরা দেখেছিল, যে এর মধ্যে দু’টি ফান্ডো মাপে খাটো, তাই আরও দুটো ফান্ডো অবশ্যই দিতে হবে, আর নাহলে নদী পারাপারের চুক্তি বাতিল। অগত্যা আরও দুটো ফান্ডো দিতে হল, তবে কিনা প্রভূত প্রতিবাদ, বাকবিতন্ডার পরে – এই দেশের যা নিয়ম। ... ...
কাহিনীর সারাংশ হচ্ছে হিন্দু রাষ্ট্রের প্রকল্প যত এগোচ্ছে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের নিরাপত্তা ততো বিঘ্নিত হচ্ছে। মুসলিমরা সব সময়ই টপ টার্গেট, নানা ফন্দি করে তাঁদের টাইট দেওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত। বিভিন্ন রাজ্য নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করছে কে কত এই সম্প্রদায়কে কোণঠাসা করতে পারে। কেউ সরকারি মাদ্রাসা বন্ধ করে দিচ্ছে, কেউ প্রকাশ্যে নামাজ পড়া বা মসজিদের মাইক লাগানো নিষিদ্ধ করে দিচ্ছে, কেউ কসাইখানা বন্ধ করে গোশালা খুলছে... ... ...
এ তল্লাটে কে না জানে, আজুদের বাড়ির পাশের ঢিবির উত্তর পশ্চিম কোণে চালা পড়ো পড়ো ভিটেয় ঘাপটি মেরে বাস-করা আকালু আসলে এক ভয়ানক গুনিন। যতো গরু ছাগল মরা বাচ্চা বিয়োয়, যতো মেয়েছেলের অসময়ে গর্ভজল খসে, সবের পেছনে ঐ আকালু শালা। ওর নজর পড়লে ফলন্ত লাউ কুমড়ো অব্দি বিলাই কুত্তার শুকনো নাদির মতো খটখটে হয়ে যায়। আবার ভ্যান চালানো ছেড়ে দিয়ে কেউ যদি বিপুল বিষয়আশয়ের মালিক বনে যায় রাতারাতি, ঠিক জানবে তার পেছনে রয়েছে আকালুর দেওয়া মাদুলি আর কবচের কেরামতি। ... ...
রমজান এলেই ইদের আমেজ শুরু হয়। শুরু হয় বাস-ট্রেনের টিকিট কাটার তোড়জোড়। মনে জেগে ওঠে বাড়ি ফেরার তাড়া। দিন গোনা শেষে স্বজন-পরিজনের সঙ্গে ইদের আনন্দ ভাগাভাগি করার লক্ষ্যে বাড়ির পথে ছোটা শুরু হয়ে যায়। ... ...
"সুকান্তর রানার কবিতাটি পড়ে সে চমকে উঠেছিল। কোনোদিন তো ভাবেনি, পিঠে চিঠির পাহাড় আর টাকার বোঝা নিয়ে ছুটে চলা ডাকহরকরার কথা? পিঠে বোঝা নিয়ে সারা রাত দৌড়ে যায় সে, মানুষের চিঠি, টাকা গ্রাম থেকে গ্রামে পৌঁছে দেয় সূর্য ওঠার আগেই। তাকে কি কেউ চিঠি লেখে? যৎসামান্য অর্থে দিন-গুজরান, অভাব যার নিত্যসঙ্গী, সেই রানার নিজেও কি কোনোদিন ভেবে দেখেছে তার দুঃখের কথা? না কি তার সব বোধ, অনুভূতি গেছে অসাড় হয়ে? এ কবিতা পড়ে সলিলের চোখ খুলে গিয়েছিল। তখন থেকেই গান বাঁধার ইচ্ছে, রানারের ছুটে চলার গান। " ... ...
নটেন হাঁ করে বড়ো ছেলেকে দেখতে থাকে, দেখতে থাকে নির্নিমেষ। সে একবার ভাবল বাকি ভাত ক'টি কি সত্যেনকে খাইবে দেবে? ফের ভাবে থাক, ভাতটা ঢাকা দিয়ে এখন ছেলেকে খাটে শুইয়ে দেবে? সত্যেন কি অসুস্থ? নাকি ক্ষুধায় মুমূর্ষুপ্রায়? সত্যেনের ওয়াক ওয়াক স্তিমিত হয়েছে। সাপের নিশ্বাসের মতো ফ্যাঁসফেসে শব্দ বেরোচ্ছে এখন মুখ দিয়ে। নটেন কুপি তুলে ধরে সত্যেনের মুখের কাছে ধরতে গেলে তেল ফুরিয়ে যাওয়া কুপির শিখার টুপ করে নিভে-যাওয়া নিপূণ অন্ধকার। ঘরের ভেতরের কুপিটির আলোয় মাটির দেয়ালে আবছা দেখা যাচ্ছে সত্যেনের মা আরতি মরার পর কাগজের ওপর নটেনের নেওয়া পদতলের আলতার জোড়াছাপের ফটো। আধো আলোয় অন্ধকারে দূর থেকে প্রাচীন মথের মতো দেওয়ালে সে পদচিহ্ন। ... ...
পরের গান মিশ্র পাহাড়িতে একটি দাদরা। 'ছোড় ছোড় বিহারি নারি দেখে সগরি'। দুই ধৈবতকে নিয়ে খেলছেন, পাহাড়ি ধুনে মন উদাস। 'ম্যায় জল যমুনা, ভরন গয়ি বিন্দা, লপট ঝপট সে মে ফোরি গাগরি'। রাধার কলসি ভাঙে, মনও কি ভাঙে? ভাঙন কি একদিনের? একটু একটু করে ভাঙে নদীর পাড়। বিরহ অক্ষয় হবে, প্রিয় ফিরবে না কোনোদিন। তারই প্রস্তুতি চলে যেন, পাহাড়ির আকুল করা সুরে। এটি প্রচলিত কথা ও সুরের দাদরা। আগেও শুনেছে। কিন্তু এমন করে মন হারায়নি। সে নিশ্চিত, বিরজু মহারাজ জাদু জানেন। ... ...
আসামের বরাক উপত্যকার কাছাড় জেলায় “ডলু চা বাগান” রাজ্য সরকার আংশিকভাবে অধিগ্রহণ করেছে। ১২ই মে ২০২২-এর কাকভোরে ২৫০০ বিঘা জমি, প্রায় ত্রিশ লক্ষ চা গাছের ঝোপ এবং কয়েক সহস্র ছায়া গাছ উপড়ে ফেলে জমি পরিষ্কার করা হয়েছে। অবশ্য বিজেপি সাংসদ বলেছেন, ডলুতে কোনও উচ্ছেদ হয়নি, যা হয়েছে জমি অধিগ্রহণ। এদিকে দুই হাজার চা শ্রমিকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে গেছে। স্থানীয়, রাজ্য এবং জাতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলি এই বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছে। কিন্তু তারপর থেকে সেখানে নেমে এসেছে এক শ্মশানের স্তব্ধতা। কোনও সংবাদ বাইরে বেরোচ্ছে না। কাউকে ভিতরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না ... তথাকথিত উন্নয়নবিরোধীর তকমা যাদের গায়ে সেঁটে দেবার চেষ্টা হয়েছিল, তাদেরই কয়েকজন ... কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে – কেন ডলু? কেন পাশের বিশাল খালি জমি খরিল নয়? ... ...
শৈশবের ক্ষণস্থায়ী চিত্রণ, দুরন্ত বালকের দৌরাত্ম্য, মা-বাবার স্নেহ, গ্রামের শীতের সকাল, পল-অনুপল কৈশোরের স্মৃতি, প্রথম প্রেমের ব্যর্থতা, অসংখ্য ভুল সিদ্ধান্তের আবছায়া জাল হাতের মুঠোর আঙুলের ফাঁক দিয়ে অন্তর্হিত হয়ে যায়। এরপর আসে যুদ্ধের স্মৃতি, অসিতোপলের নির্দেশে সে দিতার কাছ থেকে একটি ঘড়ি নিয়ে এসেছিল, সেই ঘড়িটি চিতাদের বিরুদ্ধে সমতলের মানুষকে জয়ী হতে সাহায্য করেছিল। কিন্তু এর সঙ্গে একটা বেদনাবোধ জড়িয়ে আছে। রাতের ধাবমান ট্রেনের কাচের জানালায় বৃষ্টির জল ঝরে পড়ে। জানালায় মুখ লাগিয়ে পড়তে চায় সে না-থামা স্টেশনের ঝাপসা নামফলক, স্মৃতির স্টেশন থাকে থামতে দেয় না। ট্রেন থামানোর সুযোগ থাকলে সে নেমে সঙ্কেত বদলে দিত, এই লাইনে তার ভ্রমণ করার কথা নয়। এক অসীম ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ে সে। ... ...
এফএম প্রচার তরঙ্গে অনুষ্ঠান উপস্থাপনার জন্য সেই সময়, নয়ের দশকের মাঝামাঝি, ডেকে নেওয়া হল কলকাতা বেতারে ড্রামা অডিশন পাশ করা শিল্পীদের। প্রাথমিকভাবে কর্তৃপক্ষ ধরে নিলেন, যাঁরা আকাশবাণীতে শ্রুতিনাটক বিভাগে পরীক্ষা দিয়ে সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছেন, তাঁদের সঠিক বাংলা উচ্চারণ আর কণ্ঠস্বর নিয়ে কোনও দ্বিধা বা সংশয়ের কারণ নেই। এই প্রসঙ্গে জানাই, রেডিওর নাটক বিভাগে যাঁরা পরীক্ষা দিয়েছেন, তাঁরা সকলেই জানেন – বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস থেকে মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্য হয়ে রবীন্দ্রনাথের নাটক অবলীলায় ছুঁয়ে যেতে হয় এই পরীক্ষায়। বিভিন্ন বাংলা শব্দের সঠিক উচ্চারণ শোনার জন্য চোখা কান পেতে থাকেন পরীক্ষকরা। আজও এই পরীক্ষা দুরূহ। এই পরীক্ষা-পারাবার পার হয়েও অবশ্য তারপরে অনেকে আর সেভাবে সুযোগ পান না অভিনয়ের খামতির জন্য, তবে সে প্রসঙ্গ এখানে গৌণ। এখানে মূল উপজীব্য, কণ্ঠস্বর, পরিবেশনা, উপস্থাপনা। .... শ্রোতাকে আকৃষ্ট করার মত বিষয় ভাবতে হবে, কথার মধ্যে ইংরেজি শব্দ ব্যবহার গর্হিত অপরাধ, ইংরেজির ঝোঁকে বাংলা বলা অমার্জনীয়। অনুষ্ঠানের নাম ‘টক শো’। অবশ্যই ‘লাইভ’। তাকে নানান চেহারায় ‘কণ্ঠদান’ করতে এগিয়ে এলেন বাংলা ভাষার দক্ষ ‘কথাশিল্পী’রা। ইংরেজিতে তাঁরা ‘টক শো প্রেজেন্টার’, বাংলায় ‘অনুষ্ঠান উপস্থাপক’। হে পাঠক, লক্ষ্য করুন, ‘আর জে’ বা ‘রেডিও জকি’রা তখনও ঝাঁপিয়ে পড়েনি বাংলা সংস্কৃতিতে। ... ...
একথা নিশ্চিত, রাজলক্ষ্মী দেবী মূলত ভালোবাসারই কবি। তাঁর কবিতার প্রধান ভরকেন্দ্র অন্তর্নিহিত এক গোপন ভালোবাসা। তার যন্ত্রণা আছে কিন্তু আশাতীত কোনো নিরাপত্তা নেই। কখনও সে অযাচিত কড়া নাড়ে জীবনের দুয়ারে। তবু বরণের দুঃসাহস নেই। ... ...
কিন্তু, আমরা দেখি আকাদেমির সদস্যদের মধ্যে ভাষাবিদ কেউই নেই। সকলেই প্রায় সাহিত্যিক, কয়েকজন আমলা বা প্রকাশক এবং সাহিত্যিকদের মধ্যেও মাত্র একজন এইমুহূর্তে সরাসরি অধ্যাপনার সঙ্গে জড়িত। অর্থাৎ, ভাষাচর্চার লোক প্রায় কেউই নেই। সাহিত্যিকরা ভাষাকে দিশা দেখাতে পারেন, কিন্তু ভাষার সংস্কার বিশারদদের কাজ। এবং বাংলাভাষা যেহেতু বহুভাষার থেকে পুষ্টিগ্রহণ করে, বিবিধ ভাষার এক্সপার্টদের আকাদেমির প্রথমসারির নিয়ামকের ভূমিকায় থাকার দরকার তা নেই। তাহলে কারা আছেন? যাঁরা আছেন, তাঁরা সকলেই প্রায় সাহিত্যিক, তদুপরি তাঁরা সকলেই শাসকদলের ঘনিষ্ঠ। আকাদেমির চেয়ারম্যান বাংলার বিশিষ্ট নাট্যকার, কিন্তু তিনি তো মন্ত্রীও। তিনি নিরলসভাবে রাজনীতিটিও করেন। আকাদেমির আরেকজন প্রভাবশালী সদস্যের কথা এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, তিনি কবি। ২০১৩ সালে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পান, উৎপলকুমার বসু তখনও সাহিত্য আকাদেমি পান নি। ... ...
স্বপ্ন দেখি, একদিন সত্যি ভেঙে যাবে বার্লিন দেওয়ালের মতোই আমাদের পদ্মার বুক ভেদ করে চলে যাওয়া ব্যবধান। দুই বাংলা এক হয়ে যাবে আবার। কোনও উগ্রপন্থার হাত ধরে না। স্বাভাবিক ভাবেই। বরিশালের মাটিতে দাদুর সুরে আমার গলা দিয়ে বেরবে আবার মুকুন্দ দাসের গান..সেদিন...আমার অজানা পূর্বপুরুষের বহু কিছু জানিয়ে দেবে বরিশালের আকাশ-বাতাস আমায়....আমি মানুষ হিসেবে পূর্ণ হয়ে উঠব.. প্রণত হব আরেকবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে.. ... ...
মজাটা আসলে এখানেই। আমরা যে দুর্নীতিটা দেখতে পাচ্ছি এবং তা নিয়ে ধিক্কার ও প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠছে, তা আসলেই একতরফা। দুর্নীতির অভিযোগে জড়িত জনপ্রতিনিধি এবং সরকারী আধিকারিকদের প্রত্যেকের কঠোর শাস্তির দাবিতে তো সকলেই সরব। সমাজমাধ্যমে আমজনতা থেকে শুরু করে বিকাশভবনের সামনে বিরোধী রাজনৈতিক দল – সকলেই বিক্ষোভে সামিল। এবং সে দাবি অত্যন্ত ন্যায্যও বটে। কিন্তু পাশাপাশি যারা ঘুষ দিয়ে অথবা অন্য অনৈতিক যোগাযোগ খাটিয়ে চাকরি হাসিল করেছেন, তাদেরও যে একইরকম শাস্তি পাওয়া দরকার – তেমন কোনো দাবি কিন্তু গণমাধ্যমে বা সমাজমাধ্যমে কোথাও চোখে পড়ছে না। ... ...
কূলের কিনার থেকে ডাক দেয় পরীবানু। মাঝির মতিগতি যেন কেমন কেমন লাগছে। এত কি কথা বলেশ্বরের সঙ্গে ! বাসুকীর মা মাসীমা এসেছিল গেল কাল সন্ধ্যায়। রোজা থেকে থেকে মিলনের মুখের রুচি চলে গেছে, খেতে স্বাদ পাচ্ছে না শুনে কলাপাতায় মুড়ে কতগুলো পুরনো টক তেঁতুল দিয়ে গেছে শরবত বানানোর জন্য। চোত বোশোখ মাসে রোজা করা মানে জাহান্নামের আগুনে সেদ্ধ হওয়ার সমান। জিভ শুকিয়ে খড়ি হয়ে যায়। খা খা করে শরীর। যাওয়ার সময় মাসী চুপিচুপি বলে গেছে, মাইয়েরে মাইয়ে, চক্ষু দুইহান চেতায়ে রাহিস। রোজার ধকল তাও সয়, সাগরের ডাক কিন্তুক মানানো যায় না রে মাইয়ে। ঢনঢন করে ওঠে পরীবানুর বুক। রাগে দুঃখে গাল পাড়ে, ঢ্যামনা বলেশ্বর। মাইয়ে পোলাপানগো লাগান ছেনাল হইছিস হারামাজাদা তুই। বলেশ্বর ঢেউ তুলে কতগুলো কচুরীপানা ভাসিয়ে দেয় কূলের কিনারে। মিলনের পেছনে দপদপিয়ে হেঁটে আসা পরীবানু কি বুঝে কে জানে। নিজের প্রৌঢ় চোখকে বিশ্বাস করতে না পেরে বার বার পেছনে তাকায়। কুলকুল করে হাসছে বলেশ্বর ! পানি ছিটোচ্ছে ওদের ফেলে আসা পদচিহ্নমাখা পথে। ... ...