পদবী-বর্জিত সুবিমলমিশ্র কোনোদিন একটি বর্ণও কোনো প্রাতিষ্ঠানিক পত্রিকায় লেখেননি। আমি তাঁকে পড়েছি লিটল ম্যাগাজিনে। সুবিমল কোনোদিন সাহিত্যের প্রতিষ্ঠান, একাডেমির কাছ দিয়ে হাঁটেননি, আমি তাঁকে পড়েছি মানিক তারাশঙ্কর পড়তে পড়তে নিজ প্রয়োজনে। তাঁর লেখার ভিতরে যে ঝাঁজ দেখেছি সেই চল্লিশ বছর আগে, তা আমাকে শিখিয়েছিল অনেক। আমি নিজে সুবিমলের সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই সহমত নই, তাঁর পথ আর আমার পথ আলাদা কিন্তু দূরে থেকেও আমি তাঁর লেখার অনুরাগী। ... ...
আরতুরোস বললে, ‘দেখতে থাক। পাঁচ মিনিটের বেশি যদি লাগে, হোটেলে ফিরে গিয়ে আমার পয়সায় বিয়ার খাওয়াব। কৌতূহল বেড়ে গেল। বিয়ারের জন্য নয়। সপরিবারে পরায়া গাড়িতে কারো লিফট পাওয়া অসম্ভব মনে হচ্ছিল। তিরিশ বছর আগে জার্মানিতে হাত দেখিয়ে লিফট জোগাড় করার ভীষণ চল ছিল। নিজে করেছি। তবে সেটা অটোবানে। শহরে নয় -সেখানে সরকারি পরিবহন ব্যবস্থা আছে, আমেরিকার মতন নয়। কথ্য জার্মানে বলা হয়, বুড়ো আঙ্গুল (প্যার দাউমেন) দেখিয়ে সফর করা। নিরাপত্তা পরিস্থিতির অনিশ্চয়তার কারণে হয়তো জার্মানিতে এই যানযাত্রার পদ্ধতি প্রায় বিলীন এখন। ... ...
"মেয়েরাই উঠে এসেছে এ বইতে কথার পর কথায়, কিন্তু এ বই শুধু মেয়েদের বই নয়। এর মরমিয়া কথন, বিষয়ের ব্যাপ্তি সবাইকে দিয়ে পড়িয়ে নেবে গল্পগুলোকে। উপরি পাওনা মনস্তত্ত্বের নিখুঁত মিশেল আর শ্লেষের নির্দয় চাবুক। ব্যথা নিরোধক যন্ত্র গল্পটি খুব নাড়া দেয়। দত্তক, একটি মেয়েলি দুপুর, গোধূলিসন্ধি, সবগুলোই গতানুগতিকতার বাইরে অন্য গল্প। আর রয়েছে কল্পবিজ্ঞান টিট্টিভ । তাকে সার্থক গল্প করে তোলার কাজটি যশোধরা করেছেন অবলীলায়।" পড়লেন প্রতিভা সরকার ... ...
আমাদের কৈশোর-যৌবনে, দশমীর পরে, পাড়ায় বন্ধুদের ও পরিচিতদের বাড়িতে বাড়িতে বিজয়া করতে যাওয়া প্রাইম অ্যাট্রাকশন ছিল জলখাবার, বিশেষতঃ মিষ্টি। কাজেই মনে হতে পারে সেই ট্র্যাডিশন আজও চলিতেছে। কিন্তু তা বোধহয় নয়। অন্ততঃ মহেন্দ্রনাথ দত্ত পড়লে তাই মনে হয়। "বিজয়ার দিন পাড়ার বুড়ো ব্রাহ্মণদের কিঞ্চিৎ প্রণামী দিয়া প্রণাম করিতে হইত। বিজয়ার দিন নারিকেলছাবা দেওয়া হইত। বিজয়ার কোলাকুলিতে সন্দেশ বা অন্য কোন খাবার চলিত না।" নো মাংসর ঘুগনি, নো রসগোল্লা। বোধহয় নারকোল নাড়ু নারিকেলছাবা-র জায়গা নিয়েছে। নারিকেলছাবা জিনিসটা কী, কে জানে! ... ...
এ এক অদ্ভুত বই। পাতার পর পাতা উলটেও আমি ঠিক করতে পারিনি এ কোন বৃক্ষের ফুল, কোন জনরেঁ এর উৎস। প্রবন্ধ, ইতিহাস, রসনা-রেসিপি, ইদানীং ফুড-ব্লগ নামে যা জগত-বিখ্যাত, শিল্প ও শিল্পীর ওপর কিছু কথা, নাকি কেবলই মনোহরণ দাস্তান বা আখ্যানগুচ্ছ। সব কাননের ফুলের সুবাস পাওয়া যাবে এতে আলাদা করে, আবার প্রত্যেকটি মিলেমিশে একটি নিবিড় কথকতা! বাংলা সাহিত্যে এরকম আর কিছু আছে কি? ... ...
কেন্দ্র রাজ্যের পুনর্বিন্যাসের দাবিতে রাজ্যে গড়ে উঠল আন্দোলন। জ্যোতি বসু প্রমোদ দাশগুপ্ত অশোক মিত্র তাকে অন্য ভাষা দিলেন। জ্যোতি বসু বললেন, খানিকটা যেন মুজিবের স্বরেই, কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে টাকা ছাপানোর মেশিন আছে। ওদের যখন ইচ্ছে টাকা ছাপিয়ে নেয়। রাজ্য সরকারকে ভাগ দেয় না। আর রাজ্য সরকারের হাতে টাকা ছাপানোর মেশিনও নেই।' স্বর আরেকটু উঁচু পর্দায় যেতে পারত। গেলে দেশের মঙ্গল হতো। গেল না। কারণ সর্বভারতীয় হতে চাওয়ার দায়। অমল সরকার লিখেছেন: কংগ্রেস, বিজেপি যখন যে দল ক্ষমতায় থেকেছে, রাজ্যগুলিকে শোষণ করেছে। রাজ্যগুলিকে একদিকে রাজস্বের ভাগ কমিয়ে দিয়ে বাজার থেকে ঋণ নেওয়ার সীমা স্থির করে দেওয়ার পাশাপাশি নানা শর্ত চাপিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার যে হাজার হাজার কোটি টাকা ( এখন লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা; গত সাত বছরে কেন্দ্রীয় সরকারের ঋণ বেড়েছে ৪৯ লাখ কোটি থেকে বেড়ে এক কোটি দুই লাখ কোটি টাকা) ঋণ নিচ্ছে তা নিয়ে জবাবদিহির বালাই নেই। ... ...
সর্বশেষ প্রশ্নপত্রটা বিলি করার পর পরীক্ষক যখন হলটির ডায়াসে এসে পৌঁছুলেন, চোখ পড়া মাত্রই দৌড়ে গেলেন দীপের দিকে, আর হাত থেকে বইটা প্রায় ছিনিয়ে নিয়ে সেখানে একটা প্রশ্নপত্র গুঁজে দিলেন। খাতা আগে থেকেই রাখা ছিল, সামনের পকেটটা অনেকক্ষণ ধরে কামড়ে থাকা জ্যামিতি বক্সটা কোনমতে বের করে দীপ তার জন্য নির্ধারিত আসনে সটান বসে পড়ল। হাঁটতে হাঁটতেই এক ঝলক দেখে নিয়েছিল, এখন পুরো প্রশ্নপত্রটা দেখে তো সে আনন্দে আটখানা হয়ে উঠলো। শতভাগ কমন! এমনকি ‘অথবা’ দেয়া বিকল্প প্রশ্নগুলোও তার ঝাড়া মুখস্ত। কোনটা রাখবে, আর কোনটা ছাড়বে, এ নিয়ে বেশ কিছুটা সময় ভাবলো সে। পরে জ্যামিতি বক্সটা খুলে যুৎসই একটি কলম বেছে নিয়ে লিখতে শুরু করলো। ... ...
এখন কি আমার খাবার সময় আছে? ব্যাগে পেন্সিলখানা, আমটা আর চিরুনিখানা ঠিকঠাক উঠল কিনা দেখতে হবে তো। সেসব খুঁজে দেখতে ব্যাগ খুলতেই চোখে পড়ে ম্যানোলা স্নো, মিল্লাত পাউডার, রবিন লিকুইড ব্লু আর বল সাবান। সাথে বেলা বিস্কুটের প্যাকেট। বাবা সব এনেছে বাড়ির জন্য। সে সবের ভিড়ে অবশ্য উঁকি দিচ্ছে আমার আধা ফুরানো নাবিস্কো বিস্কুটের প্যাকেট, নতুন পেন্সিলটা আর কাঁচামিঠে আমটাও। ... ...
এই গত সাত আট বছর নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে এই মাধ্যমে কাজ করে, গালাগালি আর ঘৃ্ণার যে পাহাড়নির্মাণ প্রতিদিন দেখে গিয়েছি। তাকে প্রতিহত করার জন্য কেউ কোনও ব্যবস্থা নিল না কেন! আমি বর্ম পরে রয়েছি মানে বিষয়টা নেই তা তো নয়। অবিরল যে ভাবে লড়ে চলে দুটো গোষ্ঠী, দু'জন ব্যক্তি, তাতে প্রতি পলে ক্ষয়ে যায় সভ্যতার বাঁধনটা। প্রতি মুহূর্তে আলগা হয় সম্পর্ক। রেশ রেখে যায় ঘৃণা। অথচ কেউ কোনও ভাবেই একে নিয়ন্ত্রণ করে না। কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারত? ... ...
বন্ধুরা বলেন--একুশ শতকে ভারতের মেয়েরা অনেক এগিয়ে গেছে। আমাদের সমাজে পিতৃতন্ত্রের ভিত এখন অনেক দুর্বল, থাম গুলোয় ফাটল দেখা দিচ্ছে। মেয়েরা এখন পুলিশ- মিলিটারি- প্রশাসন - সর্বোচ্চ ন্যায়ালয় সবেতেই উঁচু পদে বসছেন। তাই কি? একজন ইন্দিরা গান্ধীর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বা একজন এ পি জে আবদুল কালামের রাষ্ট্রপতি হওয়ার উদাহরণ দেখে কি ভারতে মেয়েদের এবং অল্পসংখ্যকদের বাস্তবিক অবস্থা নিয়ে সিদ্ধান্ত টানা যায়? আইনের চোখে তো মেয়েরা পুরুষের সমান—সেই সংবিধান প্রণয়নের দিন থেকেই। রয়েছে নারীপুরুষের ভোট দেবার সমান অধিকার। কিন্তু গাঁয়ের দিকে ক’জন ঘরের বৌ নিজের ইচ্ছের ক্যান্ডিডেটকে ভোট দিতে পারে? বেশির ভাগের ভোট দেবার নির্ণয় কী আগে ভাগে পরিবারের কর্তাব্যক্তিটি ঠিক করে দেন না? ... ...
আগের অধ্যায়েও এই কথাটি বলার চেষ্টা করেছি—কোম্পানি আমলে ইংরেজি শিক্ষার চাহিদা ও প্রসার প্রধানত কলকাতার উচ্চবিত্তদের মধ্যে সীমিত ছিল। কিন্তু ইংরেজের ফোর্ট উইলিয়ম কালেজের সাহায্যে ‘দেশে বাঙ্গালা ভাষার চর্চা’ এবং ‘বাঙ্গালা শিক্ষার জন্য পাঠশালা” স্থাপন? তাহলে বিশাল গ্রামীণ সমাজ ও পাঠশালার স্ট্রাকচার যা কিনা প্রাচীন সময়েও রাজানুগ্রহের অপেক্ষায় থাকত না, আজ কীভাবে ‘প্রান্তিক’ হয়ে পড়ল? এখানে লেখকের দেয়া সাক্ষ্য লেখকের প্রেমিসের বিরুদ্ধে যাচ্ছে না কি? দেখা যাচ্ছে, কোম্পানির সরকার এদেশে মাতৃভাষায় শিক্ষা প্রসারে আগ্রহী। এই প্রেমিসটি না মানলে সরকারি পয়সায় ভার্নাকুলার মাধ্যমে শিক্ষাবিস্তারে টোমাসন, হার্ডিঞ্জ মডেল এবং বিদ্যাসাগর মডেলের কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা অর্থহীন হয়ে পড়ে । ... ...
ধুন্দুলের লতা বা আকন্দের চারা যদিবা দেখেছি, তাও মনে হয় যেন বিগত জন্মের স্মৃতি, কাউরি গ্রাম-ফেরতা কোন গুনিনের সঙ্গেই কোনদিন কোন লেনাদেনা গড়ে ওঠেনি। না ভয়ের, না ভালবাসার। অবশ্য সে দেখলে শ্যাখের বিবি হালিমার ঘরকন্নাই বা কোন সুতোয় চেনা! তবু একুশ বছরের দিদির বিয়ের দায় মাথায় চাপানো চৌদ্দর ছোটভাই এর শিশু শ্রমের গল্পটা চেনা চেনা লাগে যে! আর তারই মাঝে লেখক কেমন বুনে দেন শবেবরাতের মোমের আলো আর দোলের চাঁদের পৃথগন্ন হওয়ার কিসসা। ... ...
না, যা ভাবছেন ঠিক তা নয়, এটা দার্জিলিং বা মসালা চা নয়। এই "এক কাপ চা" লেখাটা ক্যালিফোর্নিয়ার, স্যান ডিয়েগোর একটি হাই স্কুলে বিশেষ ভাবে সক্ষম (স্পেশাল এডুকেশন) নবম শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রীদের যৌন শিক্ষার ক্লাসের বোর্ডে জ্বলজ্বল করছে। এখানে হাইস্কুলে ঢুকেই যৌন শিক্ষা বাধ্যতামূলক। অন্য ছাত্রছাত্রীদের এ বিষয়ে শিক্ষাদান অনেকটাই সহজ, কিন্তু এদের? যারা অটিস্টিক, বা ADHD (মনোযোগ ঘাটতি) কিম্বা ডাউন সিনড্রোম এ আক্রান্ত, অথবা প্রায় অন্ধ ও বধির তাদের কী করে এই রকম একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া যাবে? অথচ দিতেই হবে, কারণ যৌন নিগ্রহের আশঙ্কা এদেরই সব থেকে বেশি, কয়েকজন তো শিশুকালেই তাদের সৎ বাবা অথবা মায়ের পুরুষ বন্ধুর দ্বারা অত্যাচারিত হয়ে মানসিক ভারসাম্য প্রায় হারাতেই বসেছে। ... ...
ভারতের নাগরিকেরা কি তবে আর ভারতীয় গণতন্ত্রের শ্রেষ্ঠ উৎসব, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাইছেন না? অন্তত নির্বাচন কমিশনের তথ্য তো তাই বলছে। ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচন এবং তারপরে যে কয়েকটি রাজ্যে নির্বাচন প্রতি ক্ষেত্রেই দেখা গেছে ভোটদানের হার ক্রমশ কমছে। গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনের আগে, নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে মৌ চুক্তি অবধি করেছিল, যাতে সেই সব সংস্থাতে কর্মরত মানুষেরা ভোট দিতে অনীহা প্রকাশ না করেন। যে সমস্ত কর্মীরা নির্বাচনে অংশ নেবেন না, তাঁদের নামের একটি তালিকা অবধি প্রকাশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে। বিরোধীদের তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়, এই বন্দোবস্ত তো ‘বাধ্যতামূলক’ ভোটদানের প্রক্রিয়া, কোনও গণতন্ত্রে একজন মানুষ, নানান কারণে ভোট নাও দিতে চাইতে পারেন, তা’বলে কি একজন মানুষকে ভোটদানে অংশ নিতে বাধ্য করা যায়? ... ...
না, যা ভাবছেন ঠিক তা নয়, এটা দার্জিলিং বা মসালা চা নয়। এই "এক কাপ চা" লেখাটা ক্যালিফোর্নিয়ার, স্যান ডিয়েগোর একটি হাই স্কুলে বিশেষ ভাবে সক্ষম (স্পেশাল এডুকেশন) নবম শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রীদের যৌন শিক্ষার ক্লাসের বোর্ডে জ্বলজ্বল করছে। এখানে হাইস্কুলে ঢুকেই যৌন শিক্ষা বাধ্যতামূলক। অন্য ছাত্রছাত্রীদের এ বিষয়ে শিক্ষাদান অনেকটাই সহজ, কিন্তু এদের? যারা অটিস্টিক, বা ADHD (মনোযোগ ঘাটতি) কিম্বা ডাউন সিনড্রোম এ আক্রান্ত, অথবা প্রায় অন্ধ ও বধির তাদের কী করে এই রকম একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া যাবে? অথচ দিতেই হবে, কারণ যৌন নিগ্রহের আশঙ্কা এদেরই সব থেকে বেশি, কয়েকজন তো শিশুকালেই তাদের সৎ বাবা অথবা মায়ের পুরুষ বন্ধুর দ্বারা অত্যাচারিত হয়ে মানসিক ভারসাম্য প্রায় হারাতেই বসেছে। ... ...
কলকাতার বিকাশ এবং বাংলার বিকাশ এক ধারায় হয়নি। আজকের দুনিয়ার মতো সেদিনের দুনিয়া “গ্লোবালাইজড” হয়ে যায়নি। এজন্য উপনিবেশের অর্থনৈতিক, সামরিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র কলকাতা যেভাবে পরতে পরতে রূপান্তরিত হয়েছে, সেভাবে সমগ্র বাংলার রূপান্তর ঘটেনি। উনবিংশ শতাব্দীর ৩য় দশকের আগে কলকাতার সাথে বৃহত্তর গ্রামীণ বাংলার উভয়মুখী যাত্রাও দুর্বল ছিল। ফলত কলকাতার খণ্ডচিত্র ভিন্নধর্মী – বাংলার অন্য অংশের চেয়ে। সমাচার দর্পণ পত্রিকায় ১০ কার্তিক ১২৪১ তথা ২৫ অক্টোবর ১৮৩৪-এ প্রকাশিত একটি সংবাদে বলা হয়েছিল – “বঙ্গ দেশে যে ৩ কোটি লোক আছে তাহারদিগকে ইঙ্গলণ্ডীয়রা ৯০০ সামান্য গোরা সিপাহী ও ১০০ ফিরিঙ্গি ও ২১০০ সামান্য সিপাহী অর্থাৎ বরকন্দাজ লইয়া জয় করিলেন এবং মুষ্টি পরিমিত সৈন্যের অধ্যক্ষ ৩১ বৎসর বয়সের মধ্যে এক জন অর্বাচীন অর্থাৎ লার্ড ক্লাইব ছিলেন ... দেখুন বঙ্গদেশীয় জমিদারদের মধ্যে ঘোড়ায় চড়িতে পারেন এমত ৫০ জন পাওয়া ভার অতএব বঙ্গদেশীয় লোকেরদের দ্বারা কি প্রকারে ভয় সম্ভাবনা।” (ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, সম্পাদিত, সংবাদপত্রে সেকালের কথা, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃঃ ১৯৩) এ লেখার মাঝে চরম আত্মগ্লানি আছে। কিন্তু কলকাতার জনসমাজকে এ কথাগুলো সেভাবে স্পর্শ করেছিল কি? ... ...
সমস্যা শুধু এবছরের বা মধ্যপ্রদেশের নয়। এই পর্যন্ত ভারত জোড়ো যাত্রায় আমি ৭টি রাজ্যের কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করার সুযোগ পেয়েছি। একেক জায়গার সমস্যা একেক রকম। কিন্তু একটি যন্ত্রণা দেশের প্রত্যেক কৃষককে এক করে দেয়: বাজারে ফসলের সঠিক দাম পাওয়া যায় না। পেঁয়াজ এবং রসুনের মত শাকসবজি বা ফলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নেই, তবে যে সব ফসলের সহায়ক মূল্য ঘোষণা করা হয়েছে তাও পাওয়া যায় না। মুগ, ছোলা, অড়হরের মত ডালের জন্য কাগজে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ঘোষণা করা হয় কিন্তু বিক্রি হয় না। ফলে বাজারে ঘোষিত ন্যূনতম মূল্য থেকে এক হাজার বা দুই হাজার টাকা ক্ষতি হয় কৃষকের। ধান ও গমের সরকারি ক্রয় সত্ত্বেও অধিকাংশ জায়গায় কৃষক লোকসানের মুখে পড়ে ব্যবসায়ীর কাছে ফসল বিক্রি করেন। ... ...
ও আমার ন্যাংটো বেলার বন্ধু। এ-রকম কথা বলার মানুষ ক্রমেই কমে আসছে। অথচ আমাদের, ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে, সবার, 'ন্যাংটো বেলা' ছিল। শহরে হয়তো আলাদা। শহরে ধনী উচ্চমধ্যবিত্ত মধ্যবিত্ত স্বল্পবিত্তদের ক্ষেত্রে আলাদা হতেও পারে, কিন্তু সুবিধাবঞ্চিতদের জীবনে এখনো গ্রাম বেঁচে আছে। খেলায়, মেলামেশায়-- অভ্যাসে। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় কাউকে কাউকে ঘুরতে আসতে দেখেছি প্যান্ট না পরেই। পুকুরে স্নান করার সময় ছোটদের পোশাকের কোনো বালাই নাই। বর্ষাকালে যত খুশি কাদা ঘাঁটার জল মাখামাখি করার কাদায় গড়িয়ে ফুটবল খেলার প্রভৃতি আজো জমজমাট। ... ...