এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • জুবিন মেহতার কনসার্ট প্রসঙ্গে

    সন্মিত চ্যাটার্জী লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩ | ৯৭৪ বার পঠিত
  • লেখাটি আমাদের কাছে এসেছে একটি চিঠি হিসেবে। বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় সেটি প্রকাশ করা হল। যদিও, বলাবাহুল্য, মতামত লেখকের ব্যক্তিগত


    কাশ্মী্রে গত ৭ই সেপ্টেম্বর জুবিন মেহতার কনসার্ট ‘এহসাস এ কাশ্মীর’ কে কেন্দ্র করে দানা বেঁধেছিল বেশ কিছু বিতর্ক।আর সেই বিতর্ককে কেন্দ্র করে গত ১২ তারিখ আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদকীয়র পাতায় অরুণাভ পাত্রর লেখা একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।সেই প্রবন্ধের প্রেক্ষিতেই এই চিঠির অবতারণা।

    কোনো মৌলিক লেখনীর ক্ষেত্রে লেখনীর প্রথম অংশ,বা ভণিতা যাকে বলা হয়,সেটা খুব স্বাভাবিকভাবেই লেখার একটা সুর বেঁধে দেয়।অর্থাত,লেখনীর গতিপ্রকৃতি কোনদিকে যেতে চলেছে,তার একটা আঁচ পাওয়া যায় ভনিতা বা মুখবন্ধ থেকে। অরুণাভবাবুর তাঁর লেখার প্রথম অংশটা (যদিও তাকে কোনোভাবেই ভনিতা বলা যায়না)বেশ উপহাসচ্ছলে লেখা।কনসার্টকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদের বহর দেখে রসিক অরুণাভবাবুর মনে আশঙ্কা জন্মেছিল যে হয়তো কনসার্টের দিন “সারিবদ্ধ চিনার গাছ হয়ে উঠবে বিষবৃক্ষ। কবরে শুয়ে থাকা হাজার কাশ্মীরি যোদ্ধা এক রাতের জন্য জেগে উঠে প্রতিবাদ জানাবেন এক সুরে ...” ।, যাঁরা প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন,তাঁরা এই জাতীয় পরাবাস্তবধর্মী বক্তব্য কোথাও রেখেছেন বলে মনে পড়ছেনা। যাই হোক,লেখক তাঁর রচনায় কল্পনার আশ্রয় নিয়েছেন,এবং সেটা নিয়ে সত্যি কিছু বলার অবকাশ নেই।কি লিখবেন,না লিখবেন,সেই বিষয়ে পূর্ন স্বাধীনতা লেখকের রয়েছে।

    একটা ছোট্টো ‘টেকনিকাল’ ভুল লেখক করেছেন(বা প্রুফ এর ভুল ও হতে পারে)। যেখানে কনসার্টের নাম ছিল ‘এহসাস এ কাশ্মীর’-যেখানে লেখক সেটাকে উল্লেখ করেছেন ‘এহসান এ কাশ্মীর’ নামে।যাই হোক,টেকনিকাল বৃত্তান্ত ছেড়ে লেখার বক্তব্যের দিকে একবার তাকানো যাক।

    লেখকের মতে,মায়েস্ত্রো জুবিন মেহতার কর্মকান্ডের সাথে ইজরায়েলের নাম জড়িয়ে থাকার জন্যই নাকি তাঁকে যাবতীয় আক্রমনের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। তাঁর কর্মকান্ডের সাথে ইজরায়েলের নাম জড়িয়ে আছে বলেই কাশ্মীরে শালিমার বাগে তাঁর কনসার্ট নিয়ে আপত্তি তুলছে ভারতীয় সমাজের একাংশ। অরুনাভবাবু এক্ষেত্রে গতবছর কার্নেগি হলে জুবিন মেহতার কনসার্টের বিরোধিতা করে পিঙ্ক ফ্লয়েডের রজার ওয়াটার্স,অ্যালিস ওয়াকার ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের সদস্যরা মিলে মোট পঞ্চাশ জন যে চিঠি দিয়েছিলেন,সেই প্রসঙ্গের অবতারনা করেছেন।এবং রজার ওয়াটার্সদের এই উদ্যোগ সম্পর্কে অরুণাভবাবুর বক্তব্য,জুবিন মেহতাকে যদি ইজরায়েলের প্রতিভূ হিসাবে দেখা হয়,তাহলে আইনস্টাইনকেও হিরোশিমা নাগাসাকির জন্য দোষী সাব্যস্ত করতে হবে।কথাটা মন্দ নয়।কিন্তু একবার একটু তলিয়ে দেখা দরকার।

    প্রথমে ইজরায়েলের প্রসঙ্গে আসা যাক।তারপর ফিরব কাশ্মী্রের প্রশ্নে। অরুনাভবাবু রজার ওয়াটার্সদের চিঠিটা পড়েছিলেন কি?মনে হয় না। আসলে ইন্টারনেটে অনেকসময় টুকরো খবর দেখেই আমরা চোখ ফিরিয়ে নিই।বিস্তারিত খবর পড়ার হ্যাপা পোয়াতে আমরা অনেকেই চাই না।অনেকসময় আমিও হয়তো চাইনা। অরুনাভবাবুও সেই একই কাজ করেছেন।কাজেই চিঠির বক্তব্যটা উল্লেখ না করে তিনি শুধু এইটুকু বলে ছেড়ে দিয়েছেন যে “প্যালেস্টাইনে ইজরায়েলের অন্যায্য দখলদারির প্রতিবাদেই ছিল এই চিঠি ...” । এবং তারপর তিনি নিজের বক্তব্য রেখেছেন এই মর্মে যে “বলা হয়, তাঁর সংগীত শুনলে অপমান করা হয় প্যালেস্টাইনের অত্যাচারিত নাগরিকদের।...কিন্তু জুবিন মেটা যদি ইজরায়েলের শাসকশ্রেণির প্রতিভূ হন, তা হলে আইনস্টাইনকেও হিরোশিমা-নাগাসাকির জন্য দোষী সাব্যস্ত করতে হবে।” কিন্তু চিঠিটা কি আদৌ শুধু জুবিন মেহতার ইজরায়েলী সত্তা নিয়ে ছিল? না।ছিলনা।বরং চিঠিটা ছিল সামগ্রিকভাবে ইজরায়েলের পলিসি নিয়ে এবং জুবিন মেহতার কনসার্ট ‘ইজরায়েল ফিলার্মোনিক অর্কেস্ট্রা’র চরিত্র নিয়ে। আসলে,২০০৬ সালে ইজরায়েল সরকার একটা জনসংযোগ নীতি গ্রহন করে,যার পোশাকি নাম ‘ব্র্যান্ড ইজরায়েল’। এরই অংশ হিসাবে বিভিন্ন দেশে ইজরায়েল থেকে শিল্পীদের পাঠানো হয়। এ প্রসঙ্গে ইজরায়েলের বিদেশ মন্ত্রকের সাংস্কৃতিক বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর আরিয়ে মিকেলের বক্তব্য “We will send well-known novelists and writers overseas, theater companies, exhibits..This way you show Israel’s prettier face, so we are not thought of purely in the context of war.”(তথ্য সূত্র- নিউ ইয়র্ক টাইমস,১৮ই মার্চ,২০০৯) অর্থাৎ শিল্প কলাকে এমনভাবে ব্যবহার করা ,যা ইজরায়েলী আগ্রাসন থেকে মানুষের নজর ঘুরিয়ে দেবে।প্রতিনিয়ত একটু একটু করে প্যালেস্তিনীয় ভূখন্ড দখল করে দেশটাকে আজ ছোটো দুটো টুকরোয় পরিনত করে দেওয়া হয়েছে।বাড়ী ঘর ভিটে মাটি থেকে উতখাত হয়েছেন অসংখ্য মানুষ।এমনকি প্যালেস্তাইনে ওষুধ পৌঁছাতে গেলে রেড ক্রসের জাহাজকেও রেয়াত করা হয়নি।আর এই সমস্ত কিছু থেকে,প্রতিনিয়ত ঘটে চলা দখলদারী থেকে মানুষের নজর ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্যই ইজরায়েল সরকারের এই প্রয়াস।যুদ্ধবাজ একটি সরকারের ‘মানবিক মুখ’ কে বিশ্বের দরবারে হাজির করার জন্য শিল্পকলাকে ব্যবহার করা। এবং সচেতন ভাবে না হলেও ইজরায়েল ফিলার্মোনিক কনসার্ট সেই প্রয়াসেরই একটি অঙ্গ হিসাবে কাজ করছে।

    কিন্তু ফিলার্মোনিক অর্কেস্ট্রার ইতিহাস?সেটা একটু দেখে নেওয়া যাক।১৯৪৮ এ যখন সাড়ে সাত লাখ প্যালেস্তিনীয় বাস্তুহারা হন,তখন এই অর্কেস্ট্রা তাদের ‘যাতায়াতের জন্য ইজরায়েল সরকারের সাঁজোয়া গাড়ি ব্যবহার করত’।১৯৭৬ তে ইজরায়েলী দখলদারী চলাকালীন(যে অংশ ১৯৪৮ এ দখল হয়নি) জুবিন মেহতা ‘ইউরোপ থেকে একটি অস্ত্রবোঝাই বিমানে করে এসে পৌঁছান’ । ‘১৯৬৭ সালে যুদ্ধ চলাকালীন এই অর্কেস্ট্রা ইজরায়েলী সৈন্যদের সামনেও অনুষ্ঠান করে’ । এবং এই সমস্ত তথ্য কোনো প্রতিবাদী লিফলেট থেকে নয়,বরং ইজরায়েল ফিলার্মোনিক অর্কেস্ট্রার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া। এবং ফিলার্মোনিক অর্কেস্ট্রা কখনোই প্রকাশ্যভাবে ইজরায়েলের প্যালেস্তাইন নীতির সমালোচনা করেনি।প্যালেস্তিনীয় মানুষদের সপক্ষে কোনো বিবৃতি দেয়নি।বিরোধিতা করেনি ‘ব্র্যান্ড ইজরায়েল’ এর।বরং ইজরায়েলী সেনাবাহিনীর সামনে অনুষ্ঠান করার কথা গর্বিতভাবেই ঘোষনা করেছে(এই তথ্যও ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া যায়)। ফলে একদিকে ইজরায়েলী বিদেশমন্ত্রকের সংস্কৃতি বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টরের মন্তব্য এবং অন্যদিকে ফিলার্মোনিক অর্কেস্ট্রার ইতিহাস- এইগুলো থেকেই বোঝা যায় যে ঠিক কি কারনে নিউইয়র্কের মানবাধিকার কর্মীরা,অ্যালিস ওয়াকার, রজার ওয়াটার্স প্রমুখরা এই কনসার্টের বিরোধিতা করেছিলেন।যেভাবে সাউথ আফ্রিকাতে বর্ণবিদ্বেষী দাঙ্গার সময় আন্তর্জাতিক শিল্পীরা সাউথ আফ্রিকাতে অনুষ্ঠান না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন,এটাও সেরকমই একটা পদক্ষেপ।এবং চিঠির শেষে তাঁরা আশা প্রকাশ করেছেন যে ‘অন্য অনেক ইজরায়েলী শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের মতই ইজরায়েল ফিলার্মোনিক অর্কেস্ট্রাও ইজরায়েলের প্যালেস্তাইন নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিক এবং ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াক। কিন্তু যতদিন পর্যন্ত তা না হয়,ততদিন পর্যন্ত নিউইয়র্কে এবং অন্যত্রও এই ফিলার্মোনিক কনসার্টের বিরোধিতা করা হবে’ । এই হল চিঠির সামগ্রিক বক্তব্য। ফলে অরুনাভবাবু আইনস্টাইনকে টেনে এনে যে যুক্তির অবতারনা করেছেন,তা এক কথায় ধোপে টেঁকেনা।তাও অপ্রয়োজনীয়ভাবে হলেও,একটু মনে করিয়ে দেব যে আইনস্টাইন কিন্তু পারমাণবিক বোমার ব্যবহারের বিরুদ্ধে,মার্কিনি বর্বতার বিরুদ্ধে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সোচ্চার ছিলেন।এ বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন। 

    এখানে অরুণাভবাবু আবারো একবার জুবিন মেহতার পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে মেহতার ‘যুদ্ধবিরোধী’ বক্তব্যকে উদ্ধৃত করেছেন,যে বক্তব্যে জুবিন মেহতা যুদ্ধ করার জন্য ইজরায়েল প্যালেস্তাইন দুপক্ষকেই দায়ী করেছেন।বোঝো কান্ড।একপক্ষ দখল করতে এল,দখল করল।দেশটাকে টুকরো টুকরো করল।নিজেদের দেশের সে দেশের মানুষকে পরবাসী করে দিল। ‘দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক’ হিসাবে চিহ্নিত করল।আর দখল হয়ে যাওয়া দেশ যখন প্রতিরোধ সগড়ে তুলল,ধারাবাহিক ভাবে জান কবুল করে ন্যাটো বাহিনীর কামানের সামনে দরকার পড়লে ইঁট ছুঁড়েও প্রতিরোধ জারী রাখল যারা,তখন মায়েস্ত্রো জুবিন মেহতা এই যুদ্ধের দায় চাপিয়ে দিলেন দুপক্ষের উপরেই। অর্থাৎ দখলদারী আর প্রতিরোধকারী-এই দুপক্ষই যুদ্ধের জন্য সমানভাবে দায়ী।মানে প্যালেস্তাইন যদি চুপচাপ দখলদারী মেনে নিত,তাহলে বোধহয় কোনো সমস্যা হতনা।তাই না?চমৎকার যুক্তি জুবিন মেহতার।সত্যিই।

    এবার আসা যাক কাশ্মীর প্রসঙ্গে।কাশ্মীরে জুবিন মেহতার কনসার্ট নিয়ে যারা আপত্তি জানিয়েছেন,তাঁরা কোথাও জুবিন মেহতার ইজরায়েলী সত্তা কে কারণ হিসাবে উল্লেখ করেছেন বলে খেয়াল পড়ছেনা।আসলে যেভাবে ইজরায়েল এই শিল্পকে ব্যবহার করতে চেয়েছে যুদ্ধ প্রয়াস থেকে বিশ্বের মানুষের নজর ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য,ভারত সরকারও সেই একই কৌশল নিয়েছে।কাশ্মীর এই মুহুর্তে বিশ্বের সবথেকে ‘মিলিটারাইজড জোন’ গুলির মধ্যে একটা।১৯৪৭ এর অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে কাশ্মীরের সংগ্রাম।১৯৪৭ এর পর থেকে কাশ্মীর সমস্যা অন্য রূপ নিয়েছে।গণভোটের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হয়নি।কাশ্মীরিরা আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের দাবী জানালে জবাব দেওয়া হয়েছে আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট লাগু করে। প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে সেনাবিহিনী কর্তৃক হত্যার ঘটনা।কয়েকবছর আগের ‘পাথর ছোঁড়ার আন্দোলন’ খুব স্পষ্টভাবে একটা জিনিস বুঝিয়ে দেয়।যে যখন কোনো অঞ্চলের মানুষ শুধুমাত্র পাথরের টুকরেও হাতে নিয়ে তীব্র আক্রোশে মারাত্মক আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত সংগঠিত সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হচ্ছে(এবং একদিন নয়,ধারাবাহিক ভাবে,দিনের পর দিন),তখন বুঝতে হবে যে কোথাও একটা বড়সড় গলদ রয়েছে।বুঝে নিতে হবে যে,সেখানে শাসন ব্যবস্থাটাই পচে গেছে। কাশ্মীরের পরিস্থিতি ঠিক এটাই।আর এই কনসার্ট ঠিক এই বিষয়গুলো্র থেকেই সারা দেশের,তথা বিশ্বের নজর সরিয়ে দিতে চায়।এক্ষেত্রে ভারত সরকারের কৌশল ইজরায়েল সরকারের থেকে মূলগতভাবে আলাদা কিছুই নয়।

    কিন্তু অরুণাভ বাবুর যুক্তিজাল ক্রমশ বেড়েছে।তিনি লেখার কৌশলে কাশ্মীরের নাগরিক সমাজ,ভারতের বুদ্ধিজীবি মহল এবং মৌলবাদীদেরকে এক করে দিয়েছেন।যেহেতু তিনটি অংশই প্রতিবাদ জানিয়েছে,তাই লেখনীর কৌশলে অরুনাভবাবু তিনটেকেই সমগোত্রীয় বলে বুঝিয়েছেন।এবং এই প্রতিবাদীদের একচোট নিয়েছেন।যুক্তির ঘেরাটোপ ছেড়ে যে কখন তিনি বাইরে বেরিয়ে এসেছেন,কখন যে তিনি যুক্তির(তা সে যতই ভ্রান্ত হোক) বেড়াজাল ছেড়ে ব্যক্তিগত আক্রমণের রাস্তায় চলে গেছেন,সেটা বোধহয় তিনি নিজেও বুঝতে পারেননি।অম্লানবদনে তিনি প্রতিবাদকারীদের একাংশকে চিহ্নিত করেছেন ‘মানসিক ভাবে অতিবিপ্লবী আর জীবনে হরিপদ কেরানি’ বলে।তিনি ওয়াজিদ জিলানির বক্তব্য টেনে এনেছেন,যে ইউরোপ যদি কাশ্মীরের সংস্কৃতিকে গ্রহন করতে পারে,তাহলে কাশ্মীরই বা ইউরোপের সংস্কৃতিকে গ্রহন করতে পারবেনা কেন? কিন্তু অরুণাভবাবু, কনসার্টকে ঘিরে প্রতিবাদটা কিন্তু ‘ইউরোপের সংস্কৃতিকে কাশ্মীর গ্রহন করবেনা’ এই মর্মে গড়ে ওঠেনি।কাশ্মীরের নাগরিক সমাজ,ভারতের বুদ্ধিজীবি মহলের একাংশ কিন্তু ফতোয়া জারি করা মৌলবাদী বা গ্র্যান্ড মুফতিদের দলে পড়েনা।সবাইকে এক পংক্তিভুক করে ফেললে যে মুশকিল।সেটা আদতে ভাবের ঘরে চুরি হয়ে যাবে।মুড়ি মিছরির এক দর করে ফেললে যে বড়ই মুশকিল। পৃথিবীর যেকোনো জায়গার সাথে প্যালেস্তাইন বা কাশ্মীরকে এক করা যায় কি???আপনি বলেছেন যে যেহেতু সমস্যা সব জায়গাতেই আছে,যেহেতু কোনো জায়গাই স্বর্গরাজ্য নয়,তাই এই যুক্তিতে দেখা হলে সব শিল্পীদের মঙ্গলগ্রহে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত।কিন্তু সত্যিই কি সব জায়গা এক? ঠিকই যে,সমস্যা নিউইয়র্কেও আছে,প্যালেস্তাইনেও আছে,কাশ্মীরেও আছে,এবং এই পোড়া বঙ্গদেশেও আছে।কিন্তু সমস্যার চরিত্রগুলো কি এক?সমস্যা আছে ঠিকই।কিন্তু তাই বলে কাশ্মীর আর কলকাতার প্রেক্ষিত কি এক? নাকি নিউইয়র্ক ও প্যালেস্তাইনের প্রেক্ষিত এক???একটু ভেবে দেখার অনুরোধ রইল। 

    জুবিন মেহতা তাঁর কনসার্টের পর ‘আমরা ওরার বিভাজন ভেঙে ফেলা’র আহ্বান জানিয়েছেন।এবং কাশ্মীরের মানুষ এই ডাকে সাড়া দেবেন কিনা,সেই উত্তরটা অরুণাভবাবু ছেড়ে দিয়েছেন অনিশ্চয়তার উপর।কিন্তু অরুণাভবাবু,একদল-যারা মারণাস্ত্র হাতে নিয়ে উদ্যত জনতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে এবং আরেকদল, যারা প্রবল আক্রোশে পাথরের টুকরো ছুঁড়ে মারছে বন্দুকধারীকে এটা জেনে যে তার পাথরটা ওই উর্দিধারী বন্দুকওয়ালা লোকটাকে খুব বেশি হলে খানিক ঘায়েল করতে পারে মাত্র কিন্তু উর্দিধারীর বন্দুকের একটা গুলিই তার ইহলীলা সাঙ্গ করে দেবার জন্য যথেষ্ট,সেখানে এই দুই দলের কি কখনো এক সমে মেলা সম্ভব???ভেবে দেখবেন।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩ | ৯৭৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • জিগীষা | 127.194.114.197 (*) | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ০২:৪২75474
  • ভাল লাগলো সন্মিত দা :)
  • Kuhu | 113.2.133.105 (*) | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ০৬:০৫75475
  • Bhalo Likhechish :).
  • aranya | 154.160.226.53 (*) | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ০৭:৪৫75476
  • দরকারী লেখা। তবে কাশ্মীরে ভারতীয় সৈন্যকে শুধু পাথরের সম্মুখীন হতে হচ্ছে না, কিছু কাশ্মীরি মানুষ অস্ত্র হাতে লড়ছে, পাকিস্তান-ব্যাকড আর্মড টেররিস্ট-দেরও মোকাবিলা করতে হচ্ছে - এগুলো ও থাকলে ভাল হত।
  • গরু | 125.250.243.255 (*) | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ০৮:৪৩75477
  • সন্মিতের লেখাটি ভাল। আরও ভাল কিছু বলার ইচ্ছে আছে। তবে পুজোর পর...। আপাতত একটু ব্যস্ত আছি.....
  • কল্লোল | 125.241.78.208 (*) | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ০৭:২০75478
  • নানান লেখা পড়েটরে যা বুঝলাম, নানা জনের নানা কারনে আপত্তি ছিলো। কেউ গানবাজনা হারাম বলছেন। কেউ পশ্চিমী সংষ্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া বলছেন। কেউ ভারত সরকারের "কাশ্মীরে সব কিছুই ঠিকঠাক" এই বার্তা দেওয়ার বিরোধীতা করছেন।
    কিন্তু প্রশ্ন, সব ছেড়ে জুবিন কেন? বছর দুয়েক আগেও পন্ডিত রবিশঙ্কর ছিলেন, শিবকুমার শর্মা আছেন, হরিপ্রসাদজী আছেন, রশিদ খান আছেন, লুই ব্যাঙ্কস আছেন। কোই তাদের দিয়ে এমন স্কেলে অনুষ্ঠান ভাবেনি তো সরকার!! এমন নয় যে তারা রাজি হতেন না।
    কিন্তু জুবিনে অন্য খেলা আছে। সেই খেলাটা তুলে ধরার জন্য সন্মিতবাবুকে সেলাম।
  • রিয়াজ | 103.115.84.195 (*) | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ০৮:৩২75479
  • ফ্রি প্রেস কাশ্মীরে জার্মান অ্যাম্বাসাডারের বক্তব্যঃ

    http://freepresskashmir.com/the-zubin-mehta-concert-has-brought-kashmir-back-on-the-agenda-084218/

    ইন্টার্ভিউটি তেহেলকাতেও পড়তে পারেনঃ

    http://www.tehelka.com/the-zubin-mehta-concert-showed-the-beauty-of-kashmir-but-also-its-difficult-reality/

    Q: Was holding the music concert in Srinagar worth the effort despite the controversy surrounding it?

    Clearly yes. In the end, we had 2,700 guests at Shalimar Bagh, 1,200 more than envisaged. Among them were true music lovers, cultural icons, of course, also VIPs, but most of them were normal Kashmiris: houseboat owners, shopkeepers, artists, students, academics, workers, neighbours of Shalimar Bagh – you name it. They enjoyed one-and-a-half hour of brilliant music conducted by one of the best musicians in the world. They listened to the best of music Germany and Europe can offer. They saw, for the first time, Kashmiri musicians performing a Kashmiri song – Rind-e-Poshmal – along with a classical orchestra. Even now, two weeks later, people talk about the concert. The overall response was enthusiastic. We were flooded with positive letters and emails not only from locals, but also from people in Europe. I just came back from the International Motor Show in Frankfurt. There was not a single visitor from the subcontinent whom I met – and there were many – who had not watched the concert on TV, listened to it on the radio or at least seen parts of the concert. The concert has brought Kashmir back on the agenda. It did not embellish anything. It showed the beauty of Kashmir, but also its difficult reality to an audience in more than 50 countries – and that too live!
  • goru | 125.253.112.122 (*) | ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ১২:৪৪75480
  • এই কন্কার্ট নিয়ে গুরু কি বলছে ?

    http://news.bbc.co.uk/2/hi/7419975.স্তম

    Junoon, a Sufi pop band, is the first international group to perform in the conflict-torn Kashmir for the past two decades.
    The event - for which entrance was by invitation card only - caused political controversy.
    Leading Kashmiri militant, Syed Salahuddin, head of the Hizb-ul Mujahideen group, had urged the Pakistan government not to allow Junoon to travel to Srinagar.
    He argued that the performance would have a negative impact on the "disputed status" of Kashmir and would send a wrong signal to the international community that "Kashmir was an integral part of India".
    The student union body of the Kashmir University had also protested against the concert. As a result, many students stayed away.
    The South Asia Foundation had anticipated up to 10,000 people in the audience. But the numbers were well below that.
  • Anirban RC | 209.67.131.156 (*) | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ০৮:৩২75482
  • আবপ'তে লেখাটা পরে জুবিন মেহ্তার ব্যাপারে নেট ঘেটে এরকম তথ্য পেয়েছিলাম ।
    সুন্দর ভাবে গুছিয়ে তুলে ধরার জন্যে অনেক ধন্যবাদ সন্মিত ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে প্রতিক্রিয়া দিন