বোম্বা্ই মেলে চড়ে বসেছি। গন্তব্য –– পুণে শহরের কলেজ অফ এগ্রিকালচারাল ব্যাংকিং। মাথায় নানান চিন্তা; অচেনা জায়গার অস্বস্তি, ঘরে ছেড়ে আসা বৌ–বাচ্চার ভাবনা, চিন্তার কি আর শেষ আছে? হাতের পেপারব্যাকে মন বসছে না।হঠাৎ চোখ গেল কয় জোড়া বিদেশি দম্পতির দিকে – কটা রং, বেড়ালচোখো, নীলচোখো,তামাটেচুলো, কিন্তু সবাই খুব ফরসা। লালচে, ফ্যাটফেটে, হলদেটে –– নানান কিসিমের। ... ...
তাঁর চলে যাওয়ার দিনে, আজ, মনে আছে শহরে বৃষ্টি হয়েছিল খুব। মনে আছে, যে গাড়িতে শায়িত ছিলেন তিনি, জলের ধারা গড়িয়ে পড়ছিল তার কাঁচ বেয়ে। যেমনটা নিজেই লিখেছিলেন, নিজের মৃত্যুদিন জেনে যেতে পারেন নি তিনি; পারে না কেউই। কারণ, মৃত্যু তো আসলে তাঁদের যারা রয়ে গেল সেই খবর শোনার জন্য। ... ...
ঋতুপর্ণ ঘোষের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য ... ...
আর এই ‘স’ এবং ‘হ’ এর মিলিত অবস্থাকে বলেছেন ‘সহজ’ অবস্থা। সহজানন্দ লাভের জন্য সহজযানী সাধকেরা ‘সহ জ’ অর্থাৎ জন্মের সহিত জাত দেহকেই আশ্রয় করে থাকেন। ... ...
প্রাচীন কাল থেকেই তন্ত্রসাধনায় কল্পিত হয়েছে মানব শরীরের দুটো নাড়ী। শরীরের বামদিকে যে নাড়ী থাকে তাকে বলে ‘ইড়া’, আর ডানদিকে যে নাড়ী থাকে তাকে বলে ‘পিঙ্গলা’। বৌদ্ধ সাধনায় এই দুটি যথাক্রমে শুন্যতা ও করুনার প্রতীক। ... ...
সুন্দর ব্যাপারটা আপেক্ষিক – কারণ আমার চোখে যা সুন্দর, তা আপনার কাছে লাগতে নাও পারে! তবে কিনা একটা ব্যাপার থাকে – যেমন ঐশ্চর্য্য রাই সুন্দর, এ নিয়ে মনে হয় না তেমন কেউ দ্বিমত হবেন। তাই যদি কেউ ভিয়েতনাম ঘুরে এসে থাকেন এবং এই শহরে সময় কাটিয়েছেন এমন থাকেন, তাহলে মনে হয় তাঁরা আমার সাথে একমত হবেন যে, ভিয়েতনামের সবথেকে সুন্দর শহর খুব সম্ভবত ‘হোই-আন’। ভিয়েতনামের দক্ষিণে হো-চি-মিন সিটি থেকে উত্তরে হ্যানয় যেতে পারেন বা ভাইস ভার্সা। কিন্তু ভিয়েতনামের মধ্যভাগটা যেন কোন ভাবেই মিস করবেন না – মধ্য ভিয়েতনামেই আছে, হুয়ে, মাই-সন, হোই-আন, ডা-নাং এই সব সুন্দর জায়গা গুলি। একে একে লিখব যদি সময় পাই বা উৎসাহ থাকে। আজকে একটু হোই-আন নিয়ে ফিরে দেখা যাক। ... ...
খাবারের বাছবিচারে প্রতাপ রায় সাবেক কলকাত্তাইয়া। রয়ালের চাঁপ, সাবিরের রেজালা, নিজামের রোল, চাচার ফাউল কাটলেটে এমনই আস্থা যে সে জায়গায় অন্য কাউকে বসাতে পারেন না। তবে আশাভঙ্গও হয়। যেমন চাচার ফাউল কাটলেট। আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে যে আশাভঙ্গ প্রতাপ রায়ের হয়েছিল, আমার হল বছর তিন-চার আগে। চাচা তো ফুটপাত বদল করে উল্টোফুটে চলে এসেছে। সেজে উঠেছে নবসাজে। সে রূপ অবশ্য পাড়ার নতুন কাফে ডি তেলেভাজার থেকে থেকে কিছু ভিন্ন নয়। তবু এখনও ফাউল কাটলেটটি করে। কিন্তু সে শুষ্কং-কাষ্ঠং কাটলেট খেলে চাচার দোকানের ওপর শ্রদ্ধার থেকে অন্য কিছুর উদয় হয় মনে। শিককাবাব আর করে না। ... ...
এই পঞ্চতন্ত্র রচনার পেছনেও সেই একই গল্প। আজ ভাইস প্রিন্সিপাল হতে চাইছে, কাল প্রিন্সিপাল হতে আবদার করবে। তার জন্যে পরিচালন সমিতির মেম্বারদের হাত করবে। মাস্টারদের মধ্যে নিজের একটা দল বানাবে। ছাত্রদের মারপিট করতে উসকে দেবে। উপর মহলে নালিশ করবে। ব্যাটা বজ্জাত হাড় বজ্জাত হবে। ... ...
বাপের কথা জবার মনে পড়ে অস্পষ্ট, রাতে দেখা স্বপ্ন যেমন সকালে কিছুটা মনে পড়ে, আবার পরক্ষণেই মানস থেকে দ্রুত সরে যায়- তেমনি। গত বছর মা-ও চলে গেল পেটের ব্যথা নিয়ে। প্রথমে গ্রাম ডাক্তারের কাছে গেলে ব্যথা কমার ওষুধ দেয়। দিনে দিনে ব্যথার তীব্রতা বাড়তে থাকে, খাওয়া-দাওয়া আস্তে আস্তে বন্ধ হতে থাকে, একসময় শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে। জবার চাচা কবিরাজ ডেকে আনে, তিনি শহরের হাসপাতালে নিতে বলেন, হাসপাতালে কে নিয়ে যাবে, চিকিৎসা খরচই-বা কে দিবে; এক সকালে জবার হাউমাউ শুনে চাচা, চাচি, তাদের ছেলেমেয়ে ঘর থেকে বের হয়ে জানতে পারে জবাকে একা রেখে তার মা-ও পরপারে পাড়ি দিয়েছেন। ... ...
গত ১৫/৫/২০২১ অর্থাৎ ঈদের ঠিক পরেরদিন শান্তিপুর থানার অর্ন্তগত বেলতলার বাবলাবন গ্রামে স্থানীয় শনি মন্দিরের গ্রিলে গোমাংস ঝুলিয়ে রাখার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। রাস্তা অবরোধ, পুলিশের লাঠিচার্জ, গ্রেফতার ও মারপিটের ঘটনাও ঘটে। উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস শেল ও ফাটায়। এলাকায় এখন ও উত্তেজনা রয়েছে । এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এপিডিআর কৃষ্ণনগর শাখা ও শান্তিপুর জন উদ্যোগের পক্ষ থেকে ১৯/৫/২০২১ তারিখে একটি তথ্যানুসন্ধান করা হয়। ... ...
গপ্পো ... ...
জ্বরজারি, পেটখারাপ ও ডাক্তারবাবুরা; ক্যাপসুল বিপ্লব ও স্লাইস ব্রেড দাদুর দস্তানায় রায় পরিবারের এত জন সদস্য, কিন্তু সে হিসেবে অসুখ বিসুখ হত কম। সময়ে হামাদেওয়া শিশু এবং টলটল করে হাঁটা বাচ্চা প্রথমে দুই, পরে তিন হল। কয়েক বছর পরে আরো এক এবং দুই। কিন্তু ততদিনে পৃথিবী বিশেষ বদলায় নি। বাচ্চাদের হত জ্বর ও পেট খারাপ। বড়দের জ্বর; সম্ভবতঃ ওঁরা পৈটিক সমস্যা হলে নিজেরাই সমাধান খুঁজে নিতেন। ... ...
সারাদিন পাহাড়পথ ভেঙে আপনি ক্লান্ত। আরাম করে বসুন এই ছোট্ট ক্যাফেটায়, আমার উল্টো দিকের চেয়ারে। টেবিলে দু'টো বিয়ারের বোতল। ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে হিমালয়ান্ ব্লুজ। ... ...
অনুবাদ ... ...
১৯৭৪। এপিডিআর থেকে মিছিল করে এসেছি এসপ্ল্যানেড ইস্টে, রাজনৈতিক বন্দিমুক্তির দাবিতে। মনে আছে, হাওড়ার ছেলে, বনবিহারীবাবুদের গ্রুপে ছিল সঞ্জীবদা, একটা বাসের মাথায় চড়ে বক্তৃতা করছিল। আমি আর জয় কৌটো ঝাঁকিয়ে পয়সা তুলছিলাম। সেদিন ওখানে ওয়েবকিউটার জমায়েতও ছিল। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম মনোভাবাপন্ন মাস্টারমশাইরা ওঁদের নানান দাবি দাওয়া নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন। আমিই প্রথম দেখি আমাদের কলেজের সলিলদা (ইংরাজি পড়াতেন) আর হিতেনদা (বাংলা পড়াতেন) দাঁড়িয়ে আছেন। সদ্য কৈশোরের অ্যাডভেঞ্চার পোকা নেচে উঠল। জয়কে বললাম - চল যাই। ওঁরা সেই আমলে দশ টাকা দিয়েছিলেন। আর সলিলদা বলেছিলেন কলেজে দেখা করতে। ... ...
সাংবাদিক রোজিনা নিশ্চয়ই বীরের বেশে বেরিয়ে এসে আবারো নির্ভিকভাবে ঝড় তুলবেন কি-বোর্ডে, একের পর এক চোখা সব প্রতিবেদনে উন্মোচন করবেন দুর্নীতিবাজদের মাস্কের আড়ালের কুৎসিত মুখ। পেশাগত কারণে দেশজুড়ে তিনি যেমন অনেক সহকর্মী-শুভানুধ্যায়ী ও পাঠককে বন্ধু হিসেবে পাশে পাচ্ছেন, তেমনি শত্রুও তো কম তৈরি করেননি। এ ঘটনায় রাষ্ট্র যেন “ঝিকে মেরে বৌকে শিক্ষা” দেওয়ার পন্থাই নিল, যে গণমাধ্যম আসলে গণতন্ত্রেরই নাকি পঞ্চম স্তম্ভ! নতুন করে আবারো মনে পড়ছে, সম্প্রতি পুলিশ হেফাজতে নিহত লেখক মুশতাক আহমেদের কথা। ব্যাঙ্গচিত্র আঁকার অভিযোগে কিছুদিন আগেই কার্টুনিস্ট কিশোর অপহরণ, গ্রেপ্তার ও নির্যাতন হওয়ার কথা। তারও কিছুদিন আগে নির্যাতনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হয়ে লেখক মুশতাক কারাবন্দী অবস্থায় মারা যান। ফেসবুকে লেখালেখির দায়ে তাকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ রিমান্ডে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, হৃদরোগে মারা গেছেন তিনি। জামিনে মুক্ত কার্টুনিস্ট সাক্ষাৎকারে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, তিনি যখন ডিবি পুলিশের রিমান্ডে ছিলেন, সেখানে রিমান্ডের আসামি লেখক মুশতাকের সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল। তখন সম্পূর্ণ উলঙ্গ মুশতাকের সারা শরীর ছিল মলমূত্র মাখানো। সে অবস্থাতেই সুযোগ বুঝে তিনি একফাঁকে কার্টুনিষ্ট কিশোরের কাছে এসে বলেছিলেন, “ভয় পাস ক্যান বেটা? আমরা কী অন্যায় কিছু করেছি?” ... ...
কমল অর্চনার চুলের মুঠি ধরে তাঁকে চেয়ার থেকে টেনে তোলে এবং তাঁর মাথা দেওয়ালের দিকে ছুড়ে দেয়। দেওয়ালে মাথা ধাক্কা লাগার ঠিক আগে চুল ধরে হ্যাঁচকা টান মেরে নিজের দিকে নিয়ে আসে। এই পদ্ধতিতে অত্যাচার চলে ১৫-২০ মিনিট ধরে। অর্চনা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলেন না। তাঁর মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরোচ্ছিল। সারা শরীরে অসহনীয় যন্ত্রণা হচ্ছিল তখন অর্চনার। তাঁকে চেয়ারে বসতে বলা হল। কিছুক্ষণ পর আদিত্যকে রুণু নির্দেশ দিল অর্চনার চুল ধরে ঝুলিয়ে রাখতে। আদিত্য ঝাঁপিয়ে পড়ে অর্চনার চুল এত জোরে টানে যে তাঁর মাথার কিছু চুল ছিঁড়ে যায়। ... ...
ছংগামল বিদ্যালয় ইন্টার কলেজ স্থাপিত হয়েছিল যে উদ্দেশ্য নিয়ে তা’হল ‘দেশের নবীন নাগরিকদের মহান আদর্শের পথনির্দেশ এবং উত্তম শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের উত্থান’। আপনি যদি চকচকে কাগজে কমলা রঙে ছাপা কলেজের ‘সংবিধান এবং নিয়মাবলী’ পড়েন তাহলে বাস্তব জগতের মলিনতায় আচ্ছন্ন আপনার মন সত্যি সত্যি নির্মল এবং পবিত্র হয়ে যাবে। অবশ্যি ভারতের সংবিধানের মৌলিক অধিকারের অধ্যায়টুকু পড়লেও আপনার একই অনুভূতি হয়। ... ...