তাঁরা সাধারণ মানুষকে বিশ্বাস করাতে সক্ষম হলেন, পুণ্য ও পাপ এবং তার ফলে প্রাপ্য পুরষ্কার ও তিরষ্কারের ধারণা। তাঁদের উচ্চারিত প্রত্যয়ী মন্ত্রের ব্যাখ্যায়, কথকতায়, ধর্মকথায় কল্পনার জগতের দুয়ার খুলে গেছিল সাধারণ মানুষের মনে। তাঁরা আশ্চর্য হয়েছিলেন, অভিভূত হয়েছিলেন, এবং বিশ্বস্ত হয়েছিলেন। আমাদের ছোটবেলাতেও গ্রামের বাড়িতে দেখেছি, বাঁধানো ফ্রেমে আঁকা নরকভোগের রঙিন চিত্রপট। সেখানে যমদূতেরা চোরদের হাত কাটে, পরকীয়া প্রেমিক-প্রেমিকাদের লোহার কাঁটাওয়ালা স্তম্ভ জড়িয়ে শুয়ে থাকতে হয়, ফুটন্ত তেলে পাপীদের ভাজতে ভাজতে (deep fry) যমদূতরা মাথায় ড্যাঙস মারে, ইত্যাদি। ... ...
যাদবপুর মেয়ে হস্টেল আশির দশক। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। ... ...
আশির দশকের যাদবপুর মেয়ে হস্টেল। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ঝুলি। ... ...
সেমিস্টারের পরীক্ষা যদি জুজু হয়, তবে কেমন হয় আষাঢ় শেষের বেলা? এই লেখা তাই মিশে যায় পরীক্ষার শেষে সব ফিরে আসা পথের সাথে। ... ...
রাশিয়ানরা সম্প্রতি উত্তরের নরডস্ট্রিম পাইপ লাইনের কল বন্ধ রেখেছিলেন কি সব যন্ত্রপাতি সারাবেন বলে । দিন দশেক বাদে কল খুলেছেন কিন্তু গ্যাস আসছে খুব কম । মহামতি পুতিন জানেন ইউরোপের বাতি, ইউরোপের ঘরের গরম জল তাঁর নিয়ন্ত্রণে। খেলা এই তো সবে শুরু। এখন এই গ্রীষ্মকালে সূর্যদেব উষ্ণতা বিতরণ করে যাচ্ছেন । তবে মাঘ মাস খুব দূরে নেই। মিত্র দেশ জার্মানির অবস্থা সবচেয়ে জটিল – রাশিয়ান গ্যাসের অভাবে তাদের কল কারখানা অবধি বন্ধ হতে পারে । এস্টোনিয়া থেকে রোমানিয়া অবধি যখন পারা শূন্যের অনেক নিচে নেমে যাবে তখন মহামতি পুতিন তাদেরও সিধে করে দেবেন । ইউক্রেন নিয়ে আর বাঁদরামি করো না । ... ...
“এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে” - কবিগুরু যখন এই কথাগুলি লিখেছিলেন, তখন কী তিনি ভারতের এই ইতিহাস জানতেন না? আমি নিশ্চিত, অন্ততঃ আমার থেকে সহস্রগুণ ভালোভাবে জানতেন। তবুও তিনি লিখেছিলেন, হতে পারে, তার একটিই কারণ – ব্রিটিশরাজের বিরুদ্ধে সাধারণ ভারতীয়দের ঐক্য দেখে তিনি আশ্চর্য হয়েছিলেন এবং স্বপ্ন দেখেছিলেন, স্বাধীন ভারত বুঝি বা এমনই থাকবে। কিন্তু কই, আমরা তেমন তো রইলাম না? কিন্তু কেন থাকতে পারলাম না? এই সাড়ে ছশ’ বছরের রাজতন্ত্র এবং প্রশাসনিক উচ্চমহলের আত্মক্ষয়ী নির্বোধ অহংকার আমাদের জীবন এবং ভাবনা- চিন্তায় যে চিরস্থায়ী প্রভাব ফেলেছিল, সেই অভিশাপই যে আমরা আজও বহন করে চলেছি। ... ...
না, গায়ে পড়তে বুঝি, হাতির বা অক্টোপাসের শুঁড় নয়, কেমন পাকানো পাকানো মাংসল দড়ির মতো আর তার সারা গায়ে কোনও চকচকে তরল। ফট করে বাঁহাত পেঁচিয়ে ধরতেই ঝাঁকুনি দিয়ে ছাড়াই। এহ্ হাতে চটচটে কীসব লেগে গেল। দিলরাজকে হাঁক দি, পালাও এখানে আর না!! কিন্তু সে পাগলের মতো বালি পাথরের খাঁজে, খুঁজে চলেচে তার মড়া বাচ্চার নাড়ি। ... ...
অমিতাভ গুপ্ত একটা অসম্ভব ভালো লেখা লিখেছে রোব্বারের আনন্দবাজারে। য্দিও লেখাটার প্রতিপাদ্যের সঙ্গে আমি একমত নই, তার পরেও, বৈদ্যুতিন এবং সামাজিক মাধ্যম জুড়ে অজস্র চর্বিতচর্বণের মধ্যে, এ ধরণের বৌদ্ধিক লেখা পড়লে মগজের আরাম হয়। লেখাটা লম্বা, তবে তার যৌক্তিক মোটামুটি এইরকমঃ ১। ফেসবুক, বা সামগ্রিকভাবে সামাজিক মাধ্যমে অতি-দক্ষিণপন্থী দৃশ্য-শ্রাব্য-পাঠ্য বস্তুর সংখ্যা বাম-অতিবাম-মধ্য এদের যোগফলের চেয়েও বেশি। ২। এর একটা কারণ হল সামাজিক মাধ্যমের অ্যালগরিদম অতি-দ্ক্ষিণপন্থীদের সহায়তা করে বেশি (কেন, লেখক ব্যাখ্যা করেননি)। ৩। এর আরও একটা সম্ভাব্য কারণ আছে। একটা স্টাডিতে দেখা গেছে অতি-দক্ষিণপন্থায় বিশ্বাসীদের বৌদ্ধাঙ্ক, অর্থাৎ আইকিউ তুলনামূলকভাবে কম। সোজা বাংলায় বললে বোকাদের অতিদক্ষিণপন্থার দিকে টেনে আনা সোজা। কারণ, বুদ্ধি কম মানে পড়াশুনো কম, বহির্জগতে বীক্ষণ কম, চিন্তাভাবনার ক্ষমতা কম। ... ...
মুখে বসন্তের দাগ , মাথার ডাক্তার , রসিয়ে কেচ্ছা জুড়েছে পেটে পড়তেই : না চিনতাম না। কিকরে চিনবো ? তখন সবে ট্রান্সফার হইছি। একদিন দুপুরে হাজির। দিব্যি আপিসবন্ত মানুষ। বলে কীনা একটা কুকুরকে স্বপন দেখছে রোজ । ... ...
[ আমার চোখে দেখা আর হৃদয়ে্র অনুভবে জারিত এই ছোট্ট ছোট্ট চিকিৎসা সংক্রান্ত ঘটনাগুলি এখনো মোছেনি আমার মাথার স্মৃতিকোষগুলোর থেকে। তার থেকে তুলে আনা এই মণি-কাঞ্চনগুলোয় যেমন পেয়েছি সাক্ষাৎ ভগবানদের, তেমনি কিছু কিছু সাংঘাতিক ঘটনা নেহাৎ-ই সহ্য করেছি উপায়ান্তরহীন যাপনে। ক্রোধে ফেটে পড়েছি মননে। রক্তচাপ বাড়িয়েছি বারংবার – মধ্যবিত্ত মনোভাবনায়। পেয়েছি আচম্বিত বাড়ানো হাত - অকাতর অকৃপন স্পর্শে। কৃতজ্ঞতাও হয়তো অব্যক্ত ছিল আমার পক্ষে সে সময়। তো এইসব ছিন্নবিচ্ছিন্ন ঘটনার কিছু রেশ গ্রন্থিত করছি প্রাণের আনন্দে। এখনো বেঁচে আছি, বেঁচে আছে আমার প্রজন্ম। তাই ভগবানের নামকীর্তন যেমন করেছি অক্লেশে, আবার সেই ‘আতঙ্ক’ চলচিত্রের মতো যেন কিছুই দেখিনি আমি হয়ে পাল্টেছি চরিত্র কিম্বা স্থান-নাম। মহাবীর-বুদ্ধ-নানক-রামকৃষ্ণের পুণ্যভুমিতে আজ হিংসা পৌনঃপুনিকতায় ছড়াচ্ছে বিদ্বেষের লাল আগুন। যে আগুন শুধুই ভস্ম-জন্ম আহ্বান করে। নিরুপায় আমি করজোড়ে মার্জনা চাইছি আমার এটুকু অপৌরুষেয়তার।] ... ...
ছোট গল্প ... ...
বিশ্বায়ন ও নারী প্রবন্ধটি আমার মতে এই বইয়ের সেরা প্রবন্ধ। বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টর থেকে শুরু করে পৃথিবীব্যপী মেয়েদের উপর বিশ্বায়নের প্রভাব, পুঁজির প্রসারের সাথে সাথে নারী ও শিশুদের খাদ্যসুরক্ষা ও পুষ্টির অধিকার সংকুচিত হয়ে আসা, জলের অধিকার প্রায় হারিয়ে ফেলা এই সবই উঠে এসেছে। লেখক তাঁর সহমর্মিতার হাত বুলিয়ে গেছেন সেইসব লক্ষ লক্ষ মেয়েদের প্রতি যাঁরা একই সাথে রোজগার করতে, গৃহকর্ম সামলাতে বৃদ্ধ ও অসুস্থের সেবা করতে করতে লুকিয়ে ফেলতে বাধ্য হন নিজের স্ট্রেস, হারিয়ে ফ্যালেন নিজস্ব অবকাশ। লেখকের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখে ফেলেছে মেয়েদের সর্বত্রগামী উপস্থিতি, বিশেষত সার্ভিস সেক্টরে, ব্যাংকিং ইত্যাদির বিভিন্ন পদে মেয়েদের স্বচ্ছন্দ বিচরণ কাজগুলোকে করে তুলেছে কম গুরুত্বপূর্ণ। মেয়েরা সময় দিচ্ছেন বেশী, পয়সা পাচ্ছেন ঢের কম। এ এক অদ্ভুত অলাতচক্র। ... ...
বুচা শহরের ভিক্টোরিয়া বললেন ছেলে মেয়েকে নিয়ে দু দিনের জন্যে হলেও ট্রেনে করে পোল্যান্ড যাবেন । ইংরেজ আশ্রয়দাতা বহন করবেন টিকিটের ব্যয় । তাঁর স্বামী ইয়ারোস্লাভ যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ছুটি নিয়ে পশ্চিম সীমান্তের লভিভে এসে স্ত্রী পুত্র কন্যার সঙ্গে দেখা করে যাবেন । সেই সংক্ষিপ্ত মিলন ও বিরহের দৃশ্যটি মনে করতে চাই না । শুধুমাত্র চোখের দেখা দেখে পিতা ,স্বামী ফিরে যাবেন রণাঙ্গনে। ইয়ারোস্লাভ বিদ্যালয়ে ভূগোল পড়াতেন । কখনো বন্দুক হাতে ধরেন নি । অতি অল্প বয়েসে দেখা চন্দ্রধর শর্মা গুলেরির হিন্দি গল্পের ওপর আধারিত মণি ভট্টাচার্যের উসনে কহা থা ছবিটির কথা মাথার মধ্যে ঘুরে চলেছে সারাদিন । মনে পড়ে রেলওয়ে স্টেশনের সেই দৃশ্য- স্ত্রী পুত্র কন্যাকে প্লাটফরমে একবার দেখেই ফ্রন্টের ট্রেনে উঠছেন সৈন্যেরা। পটভূমিকায় বাজে মান্না দের কণ্ঠে সেই অমর গান – জানেওয়ালে সিপাহি সে পুছো , ওহ কহাঁ যা রহা হ্যায় । ... ...
চীনকেও মুনাফাসন্ধানী,বাজারপন্থী, বৃদ্ধিপন্থী,পুঁজির পুনরুৎপাদক ব্যবস্থা থেকে সরে আসতে হবে। ‘সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনীতি’র মত স্ববিরোধী দর্শন ছেড়ে মানুষের ন্যূনতম চাহিদার পরিপূরণে নজর দিয়ে ভোগবাদ, অপ্রয়োজনীয় উৎপাদন ও অপচয়ের অর্থনীতির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে।মাও যুগের ‘এক কড়াই থেকে খাওয়ার নীতি’র কথা অনেকের মনে পড়তে পারে। হ্যাঁ, অনেক ক্ষেত্রেই সেই আদর্শের পুনরুদ্ধার কাম্য বটে। কিন্তু এ কেবল অতীতচারী পশ্চাদগমন নয়। মনে রাখতে হবে মাওয়ের সময় পরিবেশ নিয়ে আদৌ কোনো সচেতনতা ছিলো না। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির বাস্তবতা অন্য রকম দাবী রাখছে চীনের শাসক ও জনগণের কাছে। এখন প্রশ্ন হল সেই দাবীর কোনো ভবিষৎ চীনে আছে কি? ... ...