এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  প্রবন্ধ

  • ‘আমরা আর তোমরা’র গল্পঃ একটি মিঠেকড়া আলাপন

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    প্রবন্ধ | ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ | ১৯৯৯ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (৬ জন)
  • ‘আমরা আর তোমরা’র গল্পঃ একটি মিঠেকড়া আলাপন
     ওরা থাকে ওধারে
    আমরা-ওরা এই শব্দযুগলের ধারণাটি অনেক পুরনো। ছোটবেলা থেকেই শিখে ফেলি--ওরা খারাপ, ওদের সঙ্গে খেলতে যাবি না। হ্যাঁ, বড়রা শিখিয়ে দেয়। এখন বড় হয়ে গিয়েও রেহাই নেই। আমার থেকে আরও বড়রা শেখাচ্ছেনঃ
    ‘আমরা ভাল লক্ষী ছেলে,  
    তোমরা ভারি বিশ্রী,
    তোমরা খাবে নিমের পাঁচন,
    আমরা খাব মিশ্রী।
     খেয়াল হয়, বুড়ো হয়েছি। তাই মাথায় নানান চিন্তা।
      বিদেশ থেকে আসা এক ছোটবেলার বন্ধুকে ধরলাম।
       আচ্ছা, আমরা মানে কী? আমরা বলতে ঠিক কাদের বোঝায়?  
    -এটা কোন কথা হল? আমরা মানে আমরা। মানে যারা একইরকম। আর ওরা মানে যারা আমাদের মত নয়, অন্যরকম।
       কোন মাপকাঠিতে এক? লম্বায়, গায়ের রঙে? নাকি ভাষায়? অথবা ধর্মে?
    --সবগুলোই মাপার একক হতে পারে, অবস্থা বুঝে।
    বুঝলাম না।
    --যখন যে মাপকাঠিতে যাদের সঙ্গে মেলে, তারা হবে ‘আমরা’। যেমন, স্বদেশ আর বিদেশ। স্বদেশের লোকজন আমার জন্যে ‘আমরা’। আর বিদেশের লোকজন আমার চোখে ‘ওরা’। বিদেশ যাত্রার জন্যে ইমিগ্রেশন লাইনে দাঁড়ালে যাদের একই দেশের পাসপোর্ট আছে তারা হল ‘আমরা’। যারা ‘আমরা’ নয়, তারা সবাই ‘ওরা’।  
    আবার যাদের আমেরিকান ভিসা আছে , তারা একধরণের ‘আমরা’। আবার যাদের শেনগেন ভিসা, তারা অন্যধরণের ‘আমরা’। যেমন আমেরিকানদের জন্যে সমস্ত আমেরিকান নাগরিক ‘আমরা’ আর বাকি সবাই ‘ওরা’।  
    তাই ? তাহলে ওদের দেশে সাদা মানুষ কালো মানুষ সবাই ওদের জন্যে ‘আমরা’, একই আইন, একই ব্যবহার।
    --সে আর বলতে!
    তাহলে মাঝে মধ্যেই কালোদের প্রতি আমেরিকান পুলিশের ব্যবহার আইন না মেনে বর্বরতার মাত্রা ছাড়ায় কেন? ‘ব্ল্যাক লাইভস্‌ ম্যাটার’ আন্দোলনে লাখে লাখে কালো মানুষদের পথে নামতে হয় কেন?
    --সেটাই তো কথা। তখন বুঝতে হবে অবস্থা বিশেষে আমেরিকান পুলিশের চোখে সমস্ত সাদা আমেরিকান ‘আমরা’ হয়ে গেছল, আর ‘কালো’রা ‘ওরা’।
      তাই বলে কালো আমেরিকানকে অমন করে মেরে ফেলতে হবে? ও যে বারবার বলছিল—শ্বাস নিতে পারছি না!  
    --সেটাই স্বাভাবিক। কারণ, ‘আমাদের’ জন্যে আছে আদর ভালোবাসা প্রাণের টান। আর ‘ওদের’ জন্যে বিরক্তি, তাচ্ছিল্য ও ঘৃণা।
    দেখ, রবীন্দ্রনাথ তাঁর বাংলা ব্যাকরণের বইয়ে দুটো প্রত্যয়ের – টি এবং টা—ফারাক বোঝাতে গিয়ে উদাহরণ দিয়েছেন। ধর, দুটো বাচ্চা উঠোনে খেলছে। কিন্তু আমাদের চোখেঃ
    মোদের বাড়ির ছেলেটি,
    নাচে যেন ঠাকুরটি।
    ওদের বাড়ির ছেলেটা,
    লাফায় যেন বাঁদরটা।
    বুঝলাম, কিন্তু এই একরকম আমরা ভেঙে অন্যরকম আমরা হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা ঠিক কেমন যেন লাগছে। চীনের বিরুদ্ধে আমেরিকার সব নাগরিক ছিল ‘আমরা’। আবার ঘরের মধ্যে সাদা আমেরিকান ‘আমরা’  থাকল, কিন্তু ‘কালো’ আমেরিকান হঠাৎ ‘ওরা’ হয়ে গেল। আবার গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতিবাদে একই আমেরিকার নাগরিক সমাজের  ভেতর ‘আমরা’ ‘ওরা’ গজিয়ে উঠল!
    - না বোঝার কী আছে। যেমন বোম্বাই বা কর্ণাটকের বিরুদ্ধে রণজি ক্রিকেটে সব বাঙালী এককাট্টা। তখন ‘আমরা বাঙালী’। কিন্তু ডার্বি ম্যাচে বাঙালদের জন্যে ইস্টবেঙ্গল হল ‘আমরা’ আর মোহনবাগান হল ‘ওরা’। আর ঘটিদের জন্যে ‘মোহনবাগান’ হল ‘আমরা’, ইস্টবেঙ্গল  ‘ওরা’। নিজেদের ঘরের মধ্যে বাপের বাড়ির লোকজন হল আমরা আর শ্বশুরবাড়ির সবাই ‘ওরা’ বা অপর। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় এতদিন ধরে পাশাপাশি থাকা ভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক এক পলকে ‘আমরা’ থেকে ‘ওরা’ হয়ে পরস্পর বিষাক্ত নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করে।
    আরে অন্যে পরে কা কথা, সাম্যবাদের আদর্শে দীক্ষিত নেতাও একসময় "আমরা ওরা"র কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন।বলে ওঠেন, "আমরা ২৩৫, ওরা ৩০।
     
    বুঝেছি, এই বিভেদের ব্যাপারটা আবহমান কাল থেকে রয়েছে।  ঋগবেদের সময়ে বহিরাগত বিজয়ী আর্যরা এদেশের স্থানীয় অধিবাসীদের অনার্য, দাস, দস্যু বলে নাক সিঁটকেছেন। এমনকি পণি বলে তৎকালীন বণিক গোষ্ঠীও এই ঘৃণার আক্রমণ থেকে বাদ পড়েন নি।
    --সমগ্র খৃষ্টান ইউরোপে ইহুদীরা ব্রাত্য, এবং নির্যাতন ও নির্বাসনের শিকার।
    ওদের বিরুদ্ধে এই জাতক্রোধের কারণ --আরে, ওরাই তো আমাদের যীশুখৃষ্টকে ক্রুশে চড়িয়েছিল—গোছের ভাবনা।      
     
    সে তো কোন যুগে; তার জন্যে দু’হাজার বছর ধরে তাদের প্রায়শ্চিত্ত করে যেতে হবে? এটা কোন কথা হল!
    --আচ্ছা! এতে আশ্চর্য হওয়ার কী আছে?  আমাদের দেশেও কি মুসলমানেরা ‘অপর’ নয়? ওদেরও কি বাইরে থেকে আসা বিদেশি বর্বর আক্রমণকারী বলা হয় না?
    বটেই তো। কয়েকশ’ বছর আগে মোগল পাঠানের দল মন্দির ভেঙেছে, লুঠতরাজ করেছে এবং হত্যা ও ধর্ষণ করেছে বলে আজ সব মুসলমানকে সন্দেহের চোখে দেখা হয় না? ওদের থেকে প্রতিপদে  দেশের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার প্রমাণ চাওয়া হয় না? কথায় কথায় – ‘মিঞা তুই পাকিস্তানে যা’—বলা হয় না!
     
    --কথাটা পুরোপুরি সত্যি নয়। আসলে ওরা ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ করালো এবং যার ফলে প্রচুর মানুষ প্রাণ, সম্মান এবং ভিটেমাটি হারিয়ে পথে নামল। কাজেই সাধু সাবধান!
    এরা যেখানে সংখ্যালঘু সেখানে মাথা নীচু করে থাকে। কিন্তু কোন এলাকায় বা জেলায় ঘেট্টো বানাতে পারলেই ওদের হাবভাব বদলে গিয়ে সিঙ্ঘি অবতার হয়ে ওঠে। ওদের বাড়তে দিলে ফের দেশভাগ হবে, সেটা কি ভাল কথা? তুমি সেকুলার সেকুলার বলে গলা ফাটাও আর এদিকে ধর্মীয় উন্মাদদের দেশ ভাগ করাকে জনগণের ইচ্ছে বলে সমর্থন কর!  

    আর এরা কি বহিরাগত? লুটেরা?  
    --অবশ্যই। ওরা কি বাইরে থেকে আসেনি? মহম্মদ বিন কাসিম অষ্টম শতাব্দীতে সিন্ধু নদের ওপার থেকে এসে হিন্দু রাজা দাহিরকে পরাজিত করে ভারতে ঢোকেনি? আর পঞ্চদশ শতাব্দীতে বাবর? ও কি উজবেকিস্তানের ফরগণা উপত্যকার লোক নয়?

    তাহলে আমার একটা প্রশ্ন; এই যে তুমি ভারতের আই আই টি থেকে যোগ্যতার সঙ্গে পাশ করে আমেরিকায় গিয়ে সিলিকন ভ্যালিতে ভাল চাকরি করছ, ওদেশে বাড়ি গাড়ি হয়েছে, সম্মানের সংগে সপরিবারে দিব্যি আছ— তুমি কি বহিরাগত লুটেরা?
     কেন নও? তুমি তো আমেরিকার বাইরে থেকে এসে ক্যালিফোর্ণিয়া থেকে ডলার কামিয়ে ভারতের ব্যাংকে পাচার করে আমেরিকার তুলনায় বেশি ইন্টারেস্ট কামাচ্ছ? তোমারও লাভ, ভারতেরও লাভ। এদেশের বিদেশি মুদ্রা ভান্ডার তোমার মত লোকেদের জন্যে ই ফুলে ফেঁপে উঠছে।
    কিন্তু একজন নিম্নবিত্ত আমেরিকানের জায়গা থেকে দেখ। সে দেখছে তুমি তার রোজগারে ভাগ বসিয়েছ। কোম্পানি কম টাকায় তোমাকে আউটসোর্সিং করে একজন পড়াশুনো করা আমেরিকান যুবকের পাতে জল ঢেলে দিয়েছে।  

    --বাজে কথা। আমি এখন ওদেশের নাগরিক, রীতিমত ট্যাক্স দিই। আমার এবং আমাদের মত অনেক প্রবাসী  ভারতীয়র টাকায়, সে যত ভগ্নাংশই হোক, ওদেশের রাষ্ট্র পরিচালিত হয়; অনেক সামাজিক কল্যাণের কাজ হয়। আর আমার কারিগরি দক্ষতা আজ আমেরিকার মত দেশের উন্নয়ন এবং সম্পদ বৃদ্ধিতে সহায়ক। আমি কেন লুটেরা হব? লুটেরা হল ওরা যারা একদেশের সম্পদ ছলেবলে কৌশলে, বিশেষ করে রাষ্ট্র ক্ষমতার পেশিবলে, নিজের দেশে নিয়ে যায়।
      তাহলে দুটো কথা।  
    এক, তোমার  সংজ্ঞা মানলে বলতে হয়--  লুটেরা হল ইংরেজ; মুসলমান বা তুর্কিরা নয়। বাবর হোক বা ইব্রাহিম লোদী, এদেশ থেকে সোনাদানা, ধনসম্পদ, ময়ুর সিংহাসন ইংল্যান্ডে কে নিয়ে গেছে? ক্লাইভের সময়  থেকে প্রতি বছর ইংল্যাণ্ডে কর আদায়ের কত বড় হিস্যা ব্রিটেনে গেছে এবং ভারতের হস্তশিল্প ধ্বংস করে ওদেশের শিল্প বিপ্লবে সহায়ক হয়েছে। আর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে দেশে দুর্ভিক্ষ ও প্রাণহানির খতিয়ান?
    --থামো, থামো। গজনীর সুলতানের সতেরোবার সোমনাথ আক্রমণ এবং সোনাদানা লুঠ করে নিজের দেশে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা ভুলে গেলে?

      দেখ, মহম্মদ ঘোরী নিশ্চয়ই লুঠেরা,  ও তো এদেশের ক্ষমতা দখল বা সাম্রাজ্য বিস্তার করতে আসেনি। কিন্তু কয়েকশ’ বছর ধরে যে সুলতানি এবং মোগল শাসন—তারা এদেশেই  রয়েছে। সম্পদ নিয়ে উজবেকিস্তান বা তুর্কমেনিস্তান চলে যায় নি তো!
    ওরা বরং এদেশের সম্পদ বৃদ্ধি করেছে। ভারতে মুঘল শাসনকালে (১৫২৬-১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দ) বিদেশি বাণিজ্য, কৃষির ও কর ব্যবস্থার উন্নতির ফলে দেশের জিডিপি বা গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট ছিল বিশ্বের অর্থনীতির ২৫.১% । সুবে বাংলা ছিল সাম্রাজ্যের  উন্নত কৃষি, জাহাজ নির্মাণ, রপ্তানি বাণিজ্যের সমন্বয়ে সবচেয়ে সমৃদ্ধ রাজ্য।[1] আর মুঘলেরা আকবরের সময় থেকে কৃষির উপর  ফসলের প্রায় ৫০% কর ধার্য করে এবং বাণিজ্যের জন্যে ব্যাপক যাতায়াত ব্যবস্থা, দেশজুড়ে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে একই রৌপ্যমুদ্রার প্রচলন করে। তৎকালীন ভারতের  পেশোয়ার থেকে কলকাতা অবধি বিস্তৃত গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড দিল্লির মুসলিম শাসনের সময়ই ভাল ভাবে সংস্কার করা হয়[2]।  
    কিন্তু বৃটিশ সাম্রাজ্যের সময় ঔপনিবেশিক লুঠের ফলে ভারতে শিল্পের ভ্রুণ অবস্থা মার খায় এবং ওরা দেশের অর্থনীতিকে এমন ছিবড়ে করে দেয় যে ১৯৫২ নাগাদ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ভারতের জিডিপি ৩% হয়ে যায়। এই বিষয়ে অর্থনীতির কেম্ব্রিজ ইতিহাসবিদ অ্যাঙ্গাস ম্যাডিসনের গবেষণার সঙ্গে মনমোহন সিং সহমত।[3]
    --আরে জিডিপি  বেড়েছিল তো কি হয়েছে, ভারতের কৃষকদের অবস্থা কি ভাল হয়েছিল? ফসলের ৫০% খাজনা দিয়ে চাষির হাতে কী থাকে? মোগল সম্রাটরা বিলাসব্যসনে দিন কাটাতেন, স্মৃতিসৌধ, প্রাসাদ বানাতেন। তাজমহল বা লালকেল্লা দেখে কেউ তখনকার কৃষকদের অবস্থা বুঝতে পারবে?
     
    তাহলে ফের দুটো কথা বলতে হচ্ছে।
    এক, তখন চাষ করতে খরচ খুব কম হত, পরিশ্রমটাই ছিল আসল। কোন কেমিক্যাল সার বা পোকা মারার ওষুধ দেয়া হত না। বীজধান কিনতে হত না। তাই ৫০% খাজনা দিয়েও যা থাকত সেটা খুব কম নয়। আজকের সঙ্গে তুলনা কর।  
    এখন চাষের উপর আয়কর নেই। কিন্তু সমস্ত ইনপুট-- উচ্চফলনশীল বীজ, কেমিক্যাল সার, কীটনাশক কিনতে গেলে অপ্রত্যক্ষ কর বা জিএসটি,  সেচ কর, মজুরি, বাজারে বিক্রি করতে গাড়িভাড়া সব জুড়ে দেখলে চাষির মাঝে মধ্যে আত্মহত্যা করা ছাড়া উপায় নেই। তাই প্রতি বছর ন্যায্য মূল্য নির্ধারণের দাবিতে বিভিন্ন রাজ্যের চাষিরা পথে নামে, একবছর ধরে পঞ্জাব, পশ্চিম উত্তর প্রদেশ ও রাজস্থানের চাষিরা রাজপথে ধর্নায় বসে।
    চাষির আয় দ্বিগুণ হওয়ার প্রতিশ্রুতি এখন আরেকটি জুমলা হয়ে গেছে।

    দুই, মানছি সম্রাটদের বিলাসব্যসন বা উঁচু মিনার দেখে চাষিদের অবস্থা বোঝা যাবে না। কিন্তু দিল্লীশ্বরদের ব্যাপারটাই ওই রকম-- স্মৃতিস্তম্ভ বানাবেই।
    এখন যে ১৮২ মিটার উঁচু স্ট্যাচু অফ ইউনিটি এবং নতুন সংসদ ভবনের সেন্ট্রাল ভিস্তা তৈরি হয়েছে তা দেখে কি কেউ আন্দাজ করতে পারবে যে আমাদের দেশের গত এক দশকে (২০১২-২১) তৈরি সম্পদের ৪০% মাত্র ১% লোকের কুক্ষিগত, ৫% ভারতীয়ের হাতে দেশের ৬০% সম্পদ;  আর সম্পদের মাত্র ৩% চুঁইয়ে চুঁইয়ে তলার ৫০% জনতার কাছে পৌঁছয়?[4]

       --বেশ, তুমি বলতে চাইছ যে আমাদের পুরনো দুর্দশার জন্যে দায়ী বৃটিশ, আমাদের রাগ মোগলদের ছেড়ে ওদের উপরই বেশি হওয়া উচিত।

    ঠিক তাই। অথচ, তোমাদের সাদা চামড়ার সায়েবদের নিয়ে কোন কথা নেই। কবে মোগল শাসন শেষ হয়ে গেছে। তারপর দুশো বছরের বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসন। যাতে ভালোর চেয়ে খারাপ বেশি হয়েছে। কিন্তু তোমরা ইতিহাসের চাকা পেছনে ঘুরিয়ে খামোখা প্রলাপ বকছ।
    --- আমরা তো জিডিপি নিয়েই খুশি। বলতে থাকি – ভারতের জিডিপি ৩ ট্রিলিয়ন হয়ে গেছে। শীগগিরই বিশ্বে চার নম্বর থেকে তিন নম্বর (জিডিপির হিসেবে) স্থান দখল করবে!
     
    হ্যাঁ,  তোমরা এখন গত এক দশকে ভারতের জিডিপি বৈশ্বিক জিডিপি’র ৮.৭% হয়ে গেছে বলে খুশিতে ডগমগ, যদিও চিনের ও আমেরিকার অনুপাত ১৮.২% এবং ১২.৪%।[5]
    কিন্তু যে কথাগুলো এড়িয়ে যাও তা হল--এত দশক পরেও আমাদের দেশের বেকারত্বের সূচক 7.33% [6] আর বিশ্ব ব্যাংকের রিপোর্ট বলছে গত এক দশক ধরে গড় সূচক হচ্ছে 7.83% ; অর্থাৎ কর্মক্ষম এবং কাজ করতে ইচ্ছুক জনসংখ্যার প্রায় সাড়ে সাত প্রতিশত লোক কাজের অভাবে বসে রয়েছে।
     শুধু এই নয়, গরীবের জন্যে এত ভাল ভাল কথা এত সব যোজনা সত্ত্বেও ২২.৯ কোটি গরীব মানুষ  আজ ভারতে  বাস করে। এই একটা ব্যাপারে আমরা এগিয়ে। বিশ্বের কোন দেশে এত বেশি গরীব থাকে না। কোভিড মহামারীর প্রকোপ কমার পরও একবছর ৮০ কোটি মানুষকে বিনে পয়সায় র‍্যাশন দেওয়া হয়েছে। মানে সরকার মেনে নিয়েছে যে ১৪০ কোটির ভারতবর্ষে ৫৬% লোক নিজের জন্যে দু’বেলা পেটভরে খাওয়ার জোগাড় করতে অক্ষম!
    এসব নিয়ে কোন চিন্তা নেই, খালি একে পাকিস্তান পাঠাও, তাকে পাকিস্তান পাঠাও! আর দেশের এই অবস্থার জন্যে নেহেরুকে দায়ী করা, ইংরেজকে নয়।

    --কিছুই বোঝ নি। ইংরেজ তো চলে গেছে। ওদের সঙ্গে ঝগড়া করতে কি ইংল্যাণ্ডে দৌড়তে থাকব? কিন্তু মুসলমানরা রয়ে গেছে। একশ’ ঊনচল্লিশ কোটি লোকের দেশে ১৯.৭ কোটি মুসলিম,  জনসংখ্যার ১৪.২%[7] , ভাবা যায়!  
      এটা আমার মুখের কথা নয়, সংসদে শ্রীমতী স্মৃতি ইরানী, অল্পসংখ্যক বিষয়ের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী একটি প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছেন।

    তাতে কী হল? ওদের এদেশের নাগরিক বলে মেনে নিতে বাধা কোথায়? তুমি যদি আজ আমেরিকায় গিয়ে গ্রীন কার্ড, পরে নাগরিকত্ব পেয়ে যেতে পার, তাহলে যারা দুই প্রজন্ম ধরে এই দেশে আছে, ভোট দিচ্ছে, চাকরি করছে, ব্যবসা করছে—ওদের মন থেকে স্বীকার করতে পারছ না কেন?
     

    --মূল প্রশ্নে ফিরে এস। আমরা এবং ওরা। ধর্মের ভিত্তিতে একটু চোখ খুলে দেখ। আমাদের ভারত তিন টুকরো হল—দুপাশে দুই পাকিস্তান, মাঝখানে ভারত। ওদের ধর্ম আরবের মরুভূমির। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আলাদা।  আমাদের সিন্ধু -গঙ্গা-যমুনার তীরে গড়ে ওঠা সভ্যতা। তেলে-জলে মিশ খায় না।

    উঃ এত বাজে বকতেও পারে। তোমার সিন্ধু নদ ও তার অববাহিকার বেশির ভাগটাই এখন পাকিস্তানের অংশ। মহাভারতের গান্ধার এখন কান্দাহার, পুরুষপুর আজ পেশোয়ার। এমনকি মহেঞ্জোদারো-হরপ্পা-কালিবংগান ভারতে নয়, পাকিস্তানে।
    তাহলে সেই ঐতিহ্য রক্ষার খাতিরে মিলেমিশে থাকা যায় না? মারামারি করতেই হবে?

    --তাই তো বলছি। যদি ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হয়ে ভারত -পাকিস্তান হল তাহলে এপারের বৃহৎ অংশের নাম হিন্দুস্থান হবে না কেন? আশি প্রতিশত বড়,  নাকি ১৪% ? বহুসংখ্যকের মত গুরুত্ব পাবে না – এটা  কেমন গণতন্ত্র?

    উফ, এবার একটু আমার কথাটা শোন।
    বর্তমানের পাকিস্তান, অর্থাৎ পশ্চিম পাকিস্তানের মুসলিম জনসংখ্যা ১৯৪৭ সালে ছিল ৩.২৫ কোটি আর ২০০৬-০৭ সালে সেটা হয়েছে ১৫.৭ কোটি। আর ২০১৭ সালে ২০ কোটি (৯৬.৫%) এবং হিন্দু ৪৪ লক্ষ (২.১৪%)  (সূত্রঃ উইকিপিডিয়া)  
    ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা ১৯৫১ সালের জনগণনা অনুয়ায়ী ছিল ৩.৫৪ কোটি (১০%), ২০১১ সালে ১৭.২ কোটি, এখন ২০২৩ সালে অনুমানিত ১৯.৭ কোটি (১৪%)।
    মানে যে মুসলমানেরা ভারতে রয়ে গেল তারা পশ্চিম পাকিস্তানের মুসলিম জনতার চেয়ে সংখ্যায় কম ছিল না। আর এখনও প্রায় সমান সমান।
    অর্থাৎ যারা  স্বেচ্ছায় দাঙ্গার আতংকের মাঝেও সাহস করে ভারতে রয়ে গেলেন, তারা জিন্নার দ্বিজাতিতত্ত্বকে অস্বীকার করলেন এবং এই দেশের মাটিকে ভালবাসার প্রমাণ দিলেন। এঁদের একাংশ বিজ্ঞান সাহিত্য সঙ্গীত ও শিল্পকলার চর্চায় ভারতের মুখোজ্বল করলেন। ক্রিকেট, ফুটবল, হকির কথা ছেড়েই দিলাম। তারপরেও অবিশ্বাস?
    যে মেষপালক কারগিল এলাকায় পাকিস্তানি অনুপ্রবেশের খবর দিল তার ধর্মীয় পরিচয় কী ছিল? ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে পাকিস্তানের প্যাটন ট্যাংকের ঢাকনা খুলে ভেতরে গ্রেনেড ফেলে আত্মঘাতী প্রতিরোধে রুখে যে সৈনিক রুখে দাঁড়ালেন তার নাম হামিদ।  

    --দূর! ওসব বিচ্ছিন্ন ব্যতিক্রমী উদাহরণ দিয়ে কোন লাভ নেই। ‘ওরা’ ওরাই থাকবে, ‘আমরা’ হবে না। আমরা পূবমুখো, সুর্য তো পূবে ওঠে, ওরা নামাজ পড়ে পশ্চিমে মুখ করে। আমরা কীভাবে হাত ধুই আর ওরা কীভাবে ‘ওজু’ করার সময় হাত ধোয় দেখেছ? একেবারে উলটো।
     মাইকেল ঠিক বুঝেছিলেন। তাই ‘বুড় শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ নাটকে ভক্তপ্রসাদের মুখ দিয়ে বলিয়েছেন—তেঁতুল নয় মিষ্টি, নেড়ে নয় ইষ্টি!
    তাই বলছি, যদি জনসংখ্যা অদলাবদলি হত, তাহলে সব মুসলমান ওপারে, সব হিন্দু এপারে। ব্যস, কোন দাঙ্গা হত না। কেমন? ঠিক বলেছি না?

    দেখছি, তোমার মাথাটা একেবারে গেছে। যদি ধরেও নেই যে ওদের সঙ্গে আমাদের ফারাকটা খুব বেশি তাহলেও কি পাশাপাশি থাকা যায় না? ওরা ওদের মত করে থাকবে আর আমরা আমাদের মত ?
    অনেকক্ষেত্রেই তো আমরা আজকাল ফ্ল্যাট বাড়িতে একে অন্যের ঘরে উঁকি মারি না,  অনেক ক্ষেত্রে নাম পরিচয়ও জানি না।
    না হয় ওদের ঘরে ঈদের দিন বিরিয়ানি বা ফিরনি খেতে গেলাম না, কোলাকুলি করলাম না। ওরাও বিজয়াদশমীর দিন বা দোলের দিন আমাদের বাড়ি এল না। তাতেও পাশাপাশি বা এক পাড়ায় কেন থাকা যাবে না? ওদের বাড়ি ভাড়া দেওয়া যাবে না? ওদের দোকান থেকে জিনিসপত্তর কেনা চলবে না? ড্রাইভার বা কাজের মাসি রাখার সময় তার ধর্ম পরিচয় বড় হয়ে উঠবে!

    --উপায় নেই। একটু গৈরিক রাষ্ট্রবাদ বোঝার চেষ্টা কর। ভারতে শিক্ষার অভাব এবং আর্থিক পশ্চাদপদতার বিচারে  সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায় কোনটি সে নিয়ে কারও সন্দেহ নেই। সবচেয়ে বেশি বেকার সবচেয়ে বেশি গরীব কোন সম্প্রদায়ে?  সাচ্চার কমিটির রিপোর্ট যথেষ্ট সোচ্চার।  তাই তারা যদি এদেশ ছেড়ে চলে যায় তাহলে এক ঝটকায় আমাদের দেশ দারিদ্র্যের সূচকে বেশ কিছুটা ওপরে উঠবে এবং আমাদের মাথা পিছু জিডিপির হারও অনেক বেশি হয়ে যাবে।  তারপর ভারত নিজে নিজেই হিন্দুরাষ্ট্র হয়ে যাবে। প্রায় হয়েই গেছে, তোমাদের মতন কয়েকজনকে বোঝানো বাকি, আর হাতে গোণা ক’জন না বুঝলেও কিছু আসে যায় না।
    আর মানছি, সব মুসলমান টেররিস্ট নয়, কিন্তু গোটা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি টেররিস্ট কোন ধর্মের লোক? বোকো -হারাম এবং আইসিস কাদের সংগঠন? কাজেই যে কাজটা অসমাপ্ত রয়ে গেছে, সেটা আমাদের পুরো করতে হবে।

    সেই কাজটা কী?
    --“আর্য সনাতন বঙ্গভূমিতে রাখিব না আর যবন চিহ্ন”।

    তাই বাবরি মসসজিদের পর ভারতে আরও পাঁচশ মসজিদ ভাঙা হয়েছে?[8] এত ঘৃণা কেন?
    -- মানুষ যুক্তি মেনে বিশ্লেষণ করে কাজ করে না। সে প্রেরণা পায় তার  মানস জগতে মৌলিক আবেগের (basic emotion) তাড়নায়।  যেমন, প্রেম, ভয়, আনন্দ, ঘৃণা এইসব।
    তোমরা ঘৃণার শক্তি চেন না। প্রেম-ভালবাসা নয়, ঘৃণাই মানুষকে শক্তি যোগায় লড়াইয়ের ময়দানে শত্রুর মাথাটা ধড় থেকে এক কোপে নামিয়ে দিতে। সামনের লোকটাকে তুমি যদি মানুষ ভাব, তাহলে মারতে পারবে না, হাত কাঁপবে। আর যদি ওকে ইঁদুর, আরশোলা, কেঁচো বা সাপ ভাবতে পার তবে অনায়াসে মারবে। নিজের বাঁচার তাগিদে অপরকে মেরে ফেলবে।

     হ্যাঁ, বোকো-হারাম, আইসিস বা তালিবানের মত সংগঠনের মানস জগতেও ঘৃণা স্বরাট।  ঠিকই বলেছ, তীব্র ঘৃণা মস্তিষ্কের কোষে কোষে শরীরের প্রতিটি রক্তকণায় দৌড়ে না বেড়ালে কোন বানু’র তিন বছরের বাচ্চাকে আছড়ে মেরে ফেলা যায় না, সেই গর্ভবতী নারীর সামনে তার পরিবারের অধিকাংশকে হত্যা করে তাকে গণধর্ষণ করা যায় না। ঠিক বললাম?   
    তা’ তোমার কল্পনার হিন্দুরাষ্ট্রে মুসলমানের জায়গা হবে না?

    --মুসলমানেরা থাকতে পারে, যদি তারা পোশাকে আশাকে চলা ফেরায়, খাওয়াদাওয়ায় আচরণে বেশি মুসলমানপনা না দেখায়। অর্থাৎ ওদের মুসলমান বলে সহজে চেনা না যায়। ওরা থাকবে আমাদের দয়া ও শুভেচ্ছার ভরসায়।

    বুঝতে পেরেছি, কানহাইয়া কুমারেরা জামিন পেয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে, কিন্তু উমর খালিদেরা বিনা বিচারে জেলের ভেতর থাকবে। মায়া কোদনানি, বাবু বজরঙ্গী, বিট্টু বজরঙ্গীরা প্রথমে জামিন তারপর প্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়ে যাবে, কিন্তু ৮৩ বছরের ফাদার স্ট্যান স্বামী জেলের ভেতর মারা পড়বে।
    কিন্তু এখনও বুঝলাম না এত বছর পরেও ভারতে ‘হিন্দু বিপন্ন’ শ্লোগানের মানে কী?

    --দুটো মানে। ভেতরের সত্যি হল ‘আমরা’ যদি ‘বিপন্ন’ না হই, তাহলে ‘ওরা’ আমাদের শত্রু ভাবব কেন? ওদের ঘৃণা করব কী করে?
    আর আপাতদৃষ্টিতে ওরা জনসংখ্যায় আমাদের ছাড়িয়ে গিয়ে একদিন আমাদের ‘অপর’ করে দিতে পারে এই আশংকা কী নেই? এবার তোমাদের মত মানুষজনকেও বেছে নিতে হবে তুমি কাদের সঙ্গে, কী বল।
    --একটাই কথা। ঘৃণা শেষ কথা নয়, কিন্তু দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে অ্যাসিডের মত, নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তোমরা ঘৃণা দিয়ে শুরু করেছ, কিন্তু শেষ অন্য কেউ করবে,--এখনও মণিপুর জ্বলছে।
    ======================================================

     

    [1] Sanjay Subrahmanyam (1998). Money and the Market in India, 1100–1700. Oxford University Press.  এবং Roy, Tirthankar (2012). "Consumption of Cotton Cloth in India, 1795–1940". Australian Economic History Review52 (1):  

    [2] Roy, Tirthankar (2012). "Consumption of Cotton Cloth in India, 1795–1940". Australian Economic History Review52 (1): 61–84. 

    [3] Manmohan Singh, Of Oxford, economics, empire, and freedom , The Hindu, July 2005.

    [4] The Indian Express, 7 April, 2023.

    [5] https://www.worldeconomics.com London.

    [6] Global Economy.com

    [7] ইকনমিক টাইমস্‌, ২১ জুলাই , ২০২৩।

    [8] The Siasat Daily, 6 December, 2020

     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • প্রবন্ধ | ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ | ১৯৯৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • হীরেন সিংহরায় | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:১৮528103
  • রঞ্জন  
    পাশ্চাত্য দর্শনে অদ্বৈতবাদের প্রতিশব্দ কি monotheism নয় ?
  • Ranjan Roy | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৬:৫৩528117
  • হীরেনদা
    Monotheism হল একেশ্বরবাদ।
    Monism. বা Non'- dualism হল অদ্বৈত। 
    এটা atheist বা  spiritual দুটোই  হতে পারে। 
     
    আমরা সাধারণতঃ অদ্বৈত বলতে অদ্বৈত বেদান্ত ভাবি।
    আসলে অদ্বৈত একটা বড় সেট। 
     যার ব্যঞ্জনা বস্তু ও চেতনার  মধ্যে কোন একটিকে প্রাথমিক বা মৌলিক তত্ত্ব ভাবা। 
    তার দুটো সাবসেট-'  জড়বাদী বা বস্তুবাদী অদ্বৈত এবং ভাববাদী বা চেতনাবাদী অদ্বৈত।
     
    প্রথম দলে পড়েন মার্ক্স, বেকন, দিদেরো এবং ভারতে চার্বাক, ন্যায় বৈশেষিক,  পূর্ব মীমাংসা ও আদি বৌদ্ধরা। এঁরা জড় বা বস্তুকে মুখ্য  এবং চেতনাকে গৌণ বা জড়ের উপজ ভাবেন।
     
    দ্বিতীয় দলে ব্র্যাডলি,  লাইবনিজ , হেগেল এবং ভারতে নাগার্জুন,  বসুবন্ধু ( মহাযানী বৌদ্ধ)  , শংকর ও রামানুজ (অদ্বৈত ও বিশিষ্টাদ্বৈত বেদান্ত)। এঁরা চেতনাকে মুখ্য ও জড় জগতকে অস্তিত্বহীন বা চেতনারই অভিক্ষেপ ( মায়া, স্বপ্ন বা রজ্জুতে সর্প দেখার ভ্রম গোছের) মনে করেন।
     
     
     
     
  • Arindam Basu | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:২৬528118
  • রঞ্জনবাবু, দ্বিতীয় গ্রুপে আধুনিক computational neuroscientsts দেরও রাখবেন, :-)
  • সমরেশ মুখার্জী | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:০৩528119
  • "আসলে অদ্বৈত একটা বড় সেট।" 
    এই বলে রঞ্জনবাবু বিষয়টা সংক্ষেপে খুব সুন্দর করে বোঝা‌লেন। 
     
    গুরুতে বাস্তবিক অনেক বিষয়ে কিছু প্রকৃত জ্ঞানী মানুষ আছেন। আমার প্রত‍্যাশা থাকে কোনো বিষয়ে কেউ প্রশ্ন করলে যিনি সেটা জানেন তিনি সেটা যারা জানেনা তাদের এমন প্রাঞ্জল‌ভাবে বুঝি‌য়ে দেবেন। 
     
    এই প্রবণতা রঞ্জনবাবু ছাড়াও অরিন্দম‌ বসু,  হীরেনবাবু, কিশোর ঘোষাল, শিবাংশু, ইন্দ্রানী ... এমন কিছু মানুষের মধ‍্যে দেখেছি। এমন স্বভাব বা প্রবণতা‌কে আমি সম্মান করি।
     
    কিন্তু কেউ কেউ কিছু জানাতে গিয়ে অপরকে এমন শ্লেষ বা তাচ্ছিল‍্য করে সেটা দেখলে খারাপ লাগে।
  • dc | 2401:4900:6323:f9ca:e801:c4ee:dff3:c611 | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:১৫528121
  • রঞ্জনদার লাস্ট পোস্টটা ভারি ইন্টারেস্টিং হয়েছে। পোস্টটা পড়ে মনে হলো, ওয়েস্টার্ন ফিলোসফাররা কনশাসনেসের প্রশ্নে মোটামুটি দুভাগে বিভক্ত, অর্থাত এখানেও আমরা আর ওরাঃ ডুয়ালিজম আর ফিজিকালিজম। 
     
    ফিজিকালিস্টরা বলেন যে এই মহাবিশ্বে "ফিজিকাল" ব্যাপার, মানে ম্যাটার, এনার্জি আর ফোর্স, ছাড়া আর কিছু নেই। হিউম্যান কনশাসনেসও সম্পূর্ণভাবে ফিজিকাল এজেন্সিগুলো দিয়েই ব্যাখ্যা করা যায়, অর্থাত আমাদের মস্তিষ্কের নিউরনগুলোর নিজেদের মধ্যে আর এনভায়রনমেন্টের সাথে ইন্টারয়্যাকশানের ফলেই আমাদের কনশাসনেস তৈরি হয়, এছাড়া আর কোন ব্যাখ্যা নেই। বা বলা যায়, কনশাসনেস এই ফিজিকাল ইন্টারয়্যাকশানগুলো ছাড়া আর কিছুই না (রিডাকশনিস্ট স্ট্যান্ড)। 
     
    ফিজিকালিজম এরও নানা ভাগ আছে, যেমন বিহেভিয়রিজম, ফাংশানালিজম, আর মাইন্ড-ব্রেন আইডেন্টিটি থিওরি। পল চার্চল্যান্ড এ নিয়ে অনেক লিখেছেন আর বহু নিউরোসায়েন্টিস্ট বা নিউরোসার্জেনরাও ফিজিকালিস্ট দলে আছেন, যেমন ভি এস রামাচন্দ্রন, যিনি ফ্যান্টম পেন দূর করার উপায় আবিষ্কার করেছিলেন। 
     
    অন্যদিকে, ডুয়ালিস্টরা বলেন যে শুধুমাত্র ফিজিকাল ইন্টার‌্যাকশান দিয়ে কনশাসনেস ব্যাখ্যা করা যায় না, মাইন্ড বলে একটা ব্যপার আছে যেটা শুধুমাত্র ফিজিক্যাল নয়। ডুয়ালিজম বহু পুরনো থিওরি, সেই প্লেটোর আমলের, তবে এটার মডার্ন ইন্টারপ্রেটেশান শুরু করেছিলেন দেকার্ত, আর এই দলে আরও অনেক হেভিওয়েট ফিলোজফার-ফিজিসিস্ট-ম্যাথামেটিশিয়ান আছেন, যেমন পেনরোজ, টুরিং, কান্ট ইত্যাদি। এই প্রসঙ্গে একটা বিখ্যাত পেপার হলো "হোয়াট ইজ ইট টু বি লাইক এ ব্যাট", টমাস নেগেল এর লেখা, যেখানে উনি লিখেছেন যে ফিজিকালিজম দিয়ে কনশাসনেস ব্যাখ্যা করা যায় না। এই পেপারের পক্ষে আর বিপক্ষে আরও বহু বহু পেপার লেখা হয়েছে।  
     
    অন্য যেকোন আমরা আর ওরার মতোই, এই দু দলও, হাজার হাজার বছর ধরে একে অন্যের সাথে লড়াই করে আসছে, তবে আজও ওদের ঝগড়ার নিষ্পত্তি হয়নি। দুদলই বহুবার অন্য দলকে, পেড ব্যাক ইন দেয়ার ওন কয়েন :-) 
  • dc | 2401:4900:6323:f9ca:e801:c4ee:dff3:c611 | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:৩০528122
  • রামাচন্দ্রন এর খুব ভালো কিছু লেকচার আছে এ নিয়ে, কোভিড এর সময়ে অনেকগুলো দেখেছিলাম। তার মধ্যে দুটোঃ 
     
     
    আর 
     
  • Ranjan Roy | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:৩৮528123
  • অরিনদা
    আমাকে রঞ্জন বলুন। বাবু বললেই কেমন যেন পটচিত্রের কথা মনে হয়।
    অমি শুধু প্লেস হোল্ডার হিসেবে প্রাচ্য পাশ্চাত্য দুদিকের ক্লাসিকাল দর্শনের থেকে ক'টি নাম দিয়েছি। গুচ্ছের নাম আছে।
    আর কন্টেম্পোরারি দর্শনের স্কুল গুলোর সম্পর্কে আমি কুব কম জানি। তাই সে বিষয়ে মুখ খুলছি না।:)))
     
     
    ডিসি,
    প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য,  দুটো দর্শনের আমরা-ওরাকেদুই রকম সেটে ভাগ করা যেতে পারে।
    এক, দ্বৈত - অদ্বৈত,  দুই জ্ঞেয় -অজ্ঞেয়।
    দ্বৈও মানে  যাঁরা জড় ও চেতনকে দুটো স্বতন্ত্র অস্তিত্ব ভাবেন। 
    এককে অন্যের উপর নির্ভরশীল ভাবেন না
     
    পাশ্চাত্য dualism এর গুরুদেব রনে দেকার্ত,  সেই স্থানাংক জ্যামিতির দেকার্ত।  
    আর ভারতীয় দর্শনের  সাংখ্য ও বেদান্তের মধ্বাচায্য।
  • dc | 2401:4900:6323:f9ca:5c76:9092:ec55:ad6c | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:৫৯528126
  • রঞ্জনদা, ঠিক, দেকার্তই ডুয়ালিজম কে ফার্ম ফুটিং দেন। "আমি চিন্তা করি, ​​​​​​​তাই ​​​​​​​আমি ​​​​​​​আছি"
     
    জ্ঞেয় -অজ্ঞেয় ব্যাপারে আরেকটু লিখুন, অর্থাত এদুটোর সঠিক মানে কি? আর পাশ্চাত্য দর্শনে কি এর ইকুইভ্যালেন্ট কিছু আছে? (কারন ডুয়ালিজম ঠিক জ্ঞেয় -অজ্ঞেয় নয়)। 
  • Ranjan Roy | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৩:০১528127
  • গাড়িতে আছি , একটু পরে লিখছি।
  • dc | 2401:4900:6323:f9ca:5c76:9092:ec55:ad6c | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৩:০৫528128
  • নো প্রব্লেম, সময় নিয়ে লিখুন :-)
  • Arindam Basu | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৩:২৪528131
  • রঞ্জন উবাচ,
    "পাশ্চাত্য dualism এর গুরুদেব রনে দেকার্ত, সেই স্থানাংক জ্যামিতির দেকার্ত। "
    দেকার্তের নাম দেখে একটা কথা মনে হল।
    ড্যানিয়েল ডেনেট dualist দের সম্বন্ধে বলতে গিয়ে  কারটেসিয়ান থিয়েটারের কথা বলতেন। কারটেসিয়ান থিয়েটারে যেন মস্তিষ্কের মধ্যে একটা যাত্রাপলা চলছে, মানুষের হোমানকুলাস (মস্তিষ্কের যে অংশটি শরীরের "খেয়াল রাখে") তাকে দেখছে, আবার তাকে দেখছে হোমানকুলাস ... 
     
    ডিসির লেখায় এই মেটিরিয়ালিজম ডুয়ালিজম এর তর্ক বিতর্ক আর ভিলায়ানুর রামচন্দ্রর সঙ্গে অ্যালানের কথোপকথন দেখতে দেখতে ভাবছিলাম, অ্যালান ওয়ালেসের সঙ্গে আমার দীর্ঘ দিনের পরিচয়, অ্যালানের উদ্যোগে আমরা অনেকে মিলে "মনের গভীরে দেখার একটা টেলিস্কোপ" তৈরীর উদ্যোগ শুরু করা হয়েছে। 
    তো এখানে যখন চেতনা নিয়ে কথা হচ্ছে, একটা প্রসঙ্গ একটু উসকে দিয়ে যাই। আমরা হয় ঘুমোই, নয়ত জেগে থাকি। এই দুটো অবস্থাতেই আমাদের স্বপ্ন দেখার একটা ব্যাপার থাকে তো, বিশেষ করে কাঁচা ঘুমে স্বপ্ন দেখার আনন্দই অন্যরকম। তখন তো চোখ বন্ধ, এমনকি স্বপ্নে কথা শুনলেও সে কথা সে ছবি মস্তিষ্কের গভীর থেকে বেরিয়ে আসে, ইন্দ্রিয় ব্যতীত সে অনুভূতি। দিবাস্বপ্নও ঐ এক ব্যাপার। দেখছেন কিছু একটা পরিষ্কার করে অথচ তাতে চোখের কোন ভূমিকা নেই। 
    ঘুমে কি আমরা সচেতন, নাকি চেতনা রহিত?
    এমন কখনো আপনাদের কারো বোধ হয়েছে যে স্বপ্ন দেখতে দেখতে বুঝতে পারছেন স্বপ্ন দেখছেন (lucid dream)? 
     
    আমরা কি আমাদের সচেতন যে আমরা সচেতন? :-)
     
  • dc | 2401:4900:6323:f9ca:cdcb:e07f:266e:65fc | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৩:৫৪528133
  • অরিন্দমবাবুর প্রশ্নগুলো খুব পার্টিনেন্ট। আমি যদ্দুর বুঝেছি, মানুষ বা অন্য পশুপাখীদের কেন সচেতন আর অচেতন এই দুটো মেন্টাল স্টেট থাকে, সেটা বোধায় আমরা পুরোটা এখনও জানিনা। এমনকি ঘুমের মেকানিজমও বোধায় পুরোটা আমরা এখনও ব্যাখ্যা করতে পারি নি, যদিও ঘুমের সময়ে আমাদের ব্রেন আর শরীরে নানারকম মেরামতির কাজ চলে সেটা জানা গেছে। 
     
    তবে লুসিড ​​​​​​​ড্রিম ​​​​​​​আমার ​​​​​​​খুব হয়। বিশেষত, ​​​​​​​আমি ঘুমের ​​​​​​​মধ্যে ​​​​​​​অনেক ​​​​​​​সময়ে ​​​​​​​বাবাকে ​​​​​​​অন্য ​​​​​​​ফ্যামিলি ​​​​​​​মেম্বারদের ​​​​​​​সাথে দেখি, ​​​​​​​তখন নিজেই ​​​​​​​নিজেকে ​​​​​​​বলি ​​​​​​​এটা ​​​​​​​তো স্বপ্ন ​​​​​​​(কারন ​​​​​​​বাবা ​​​​​​​অনেক ​​​​​​​হলো ​​​​​​​গত)। 
     
    আরেকটা হলো, আমি অনেক সময়ে খুব ডিটেলড স্বপ্ন দেখি, অনেকটা সিনেমার মতো, আর সেটা কন্ট্রোল করতে পারি।যেমন ড্রোন ভিউ এর মতো দেখতে পাই, অনেকে মারপিট করছে বা কার চেজ হচ্ছে, তখন আমার পয়েন্ট অফ ভিউটাও নানান অ্যাঙ্গেলে ফ্লো করতে থাকে, অনেকটা মেট্রিক্স সিনেমার কার চেজ গুলোর মতো। বেশ কিছু বছর আগে ভাটিয়ালিতে এরকম একটা স্বপ্নের একটা পোস্ট করেছিলাম। 
     
    কনশাসনেস প্রসঙ্গে চার্চল্যান্ড দম্পতির (পল আর প্যাট্রিশিয়া) একটা বিখ্যাত পেপারের লিংকও এখানে দিয়ে রাখলামঃ 
     
     
    আর অরিন্দমবাবুর "মনের গভীরে দেখার একটা টেলিস্কোপ" নিয়ে আরেকটু লিখলে, বা লিংক দিলে, খুব ভালো হয়, আগ্রহ নিয়ে পড়বো। 
  • Arindam Basu | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৫:৪৬528138
  • চেতনা দুরকমের: আমরা যা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় জানছি, প্রত্যক্ষ করছি (phenomenological ) আর Access consciousness - আমি যে কে, তার চেতনা। এবার বিভিন্ন অবস্থায় এই দুটি চেতনার স্তরের পরিবর্তন হয়। বা হয় না। চেতনা তাপমাত্রার মতন, immaterial মনে একে আপনি ধরতে ছুঁতে পারবেন না, অথচ তার অস্তিত্ব রয়েছে। Material এর মধ্যে সে immaterial। 
     
    এই জায়গাটয় একটা চেতনার স্বরূপ নিয়ে চিন্তাভাবনায় একটা পরিবর্তন এসেছে। মস্তিষ্কের "ওপরের" স্তরে অজস্র মডেল আর ইন্দ্রিয়গত চেতনার সিগনাল, এই দুইয়ের সংঘাতের মধ্যে দিয়ে চেতন মন "দেখে", "শোনে", ইন্দ্রিয়ের অনুভব হয় তার। মস্তিষ্ক তো আসলে একটি হাড়ের "খাঁচায়" বন্ধ করে রাখা অংশ, তার বহির্জগতের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগ তো কিছু নেই। অজস্র প্রারব্ধ মডেলের মধ্যে থেকে একটা মডেলের পূর্বানুমানের সঙ্গে ইন্দ্রিয়গত যে সিগনালের সঙ্গে সবচেয়ে মিল, তাকে বেছে নেয়, এবং তখন সংবেদনার "উৎপত্তি"। 
    এই প্রক্রিয়াটি নিরন্তর চলছে। 
     
  • Ranjan Roy | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:০৯528139
  • বা:
    "স্বপ্নো নু, মায়া নু, মাইক্রোসফট নু"
    একী স্বপ্ন? একী মায়া? একী মতিভ্রম"
    -- অভিজ্ঞান শকুন্ততলম্ ,ষষ্ঠ অংক।
     
    এই স্বপ্ন নিয়েই মায়াবাদের দুর্ধর্ষ যুক্তি-- কী করে বুঝব  যে জেগে আছি না স্বপ্ন দেখছি?
    -- স্বপ্নে ইচ্ছার পূর্তি হয় না। স্বপ্নে কলসী  কলসী জল  খেলেও তেষ্টা মেটে না।
    মায়াবাদের তর্ক: বাজে কথা। স্বপ্নে যৌন পরিতৃপ্তি হয়, জাগ্রত মতই। 
     
  • Ranjan Roy | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:০৩528143
  • কিন্তু মুচকি হাসলেন আচার্য বলেন, মহাযানী যোগাচার স্কুলের বিজ্ঞানবাদী দার্শনিক।
    -- স্বপ্নে যৌনপরিতৃপ্তি হতে পারে,  রেতঃস্খলন হতে পারে, কিন্তু সন্তানের জন্ম হয় না। এটাই সুষুপ্ত ও জাগ্রত অবস্থার তফাৎ।
  • Ranjan Roy | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:০৫528144
  • * আচার্য বসুবন্ধু, 'বলেন' শব্দ টাইপো।
  • dc | 2401:4900:634a:9e00:ada9:e131:23df:7fa4 | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:১৪528145
  • অরিন্দমবাবু, লিংকের জন্য ধন্যবাদ। সাইটটা দেখবো। 
  • Ranjan Roy | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:১৯528146
  • একটু দেকার্ত নিয়ে বলি।
    উনি নিষ্ঠাবান ক্যাথলিক,  কিন্তু ইউরোপের মধ্যযুগীন 'স্কোলাস্টিসজম্ ( যাতে অ্যারিস্টটল, বাইবেল এবং পৃথ্বীকেন্দ্রিক ব্রহ্মাণ্ডের কল্পনা ছিল শেষ কথা, এই লক্ষণ রেখা পেরোলে শাস্তি) এর অচলায়তন উনিই ভাঙলেন, বললেন সব কিছুকেই যুক্তিসিদ্ধ হতে হবে, এমনকি খোদ ঈশ্বরকেও।
     
    আর রচনা করলেন নিজের অস্তিত্বের প্রমাণ, যেমনটি ডিসি বলেছেন, "কজিটো এরগো সুম'।
    আমার অস্তিত্বের প্রমাণ কী?
    এই যে আমি নিজের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন করছি, তার মানেই আমি আছি। নইলে এই প্রশ্ন করছে কে?
  • | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:৪১528147
  • অভিজ্ঞান শকুন্তলমে 'মাইক্রোসফট নু' ছিল! surprise
    বাপস  ওইজন্যি বিল গেটসরে সব কনস্পিরেসিতে জড়ায় সবাই। শাস্ত্রেই মানা করেছে মাইক্রোসফট।
  • Ranjan Roy | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:০২528149
  • ডিসি 
    এবার জ্ঞেয়--অজ্ঞেয়।
    অন্তিম সত্য বলে কিছু আছে কি? থাকলেও তারে যায় না কি জানা?
    ইংরেজি Agnosticism বা positivism এর বাংলা হবে অজ্ঞেয়বাদ।.  Scepticism হবে সংশয়বাদ।
    এদের মতে onjective world এর  স্বতন্ত্র অস্তিত্ব আছে, কিন্তু তার স্বরূপ জানা যায় না। unknowable -- অজ্ঞেয়।
    এর শ্রেষ্ঠ প্রবক্তা ইমানুয়েল কান্ট।
    আমি এখানে সংক্ষেপে খুব মোটা দাগে দার্শনিকদের ক্লাসিফিকেশন করেছি, বাস্তবে এঁদের মধ্যে অনেক সূক্ষ্ম তফাত রয়েছে। সমস্ত সাব সেটের মধ্যেই কেউ একটু জড়বাদের( materialism) দিকে ঝুঁকে, কেউ একটু চৈতন্যবাদের (idealism/ mind/ consciousness) দিকে।
     
    Kant অনুযায়ী  বেকন/হিউমদের experimentation and inductive logic এবং দেকার্ত লাইবনিজদের যুক্তিবাদী বিশ্লেষণ and deductive logic--- এর সমন্বয়ে সত্যের কাছাকাছি যাওয়া যেতে পারে। 
    তাতে কাজ চলে যায়, কিন্তুক পরমসত্যকে জানা?
    নৈব নৈব চ!
    আমার সামান্য জ্ঞানে আজকের অধিকাংশ ফিজিসিস্ট দার্শনিকদভাবে পজিটিভিস্ট।
    অরিনদা এবং ডিসি ভাল বলতে পারবেন।
  • kk | 2607:fb90:eab2:c595:ec83:8024:df8d:f21a | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:২১528150
  • এই আলোচনাটা খুব ভালো লাগছে। 'মনের গভীরে দেখার টেলিস্কোপ' নিয়ে লেখা আমিও খুব আগ্রহ নিয়ে পড়বো।
    লুসিড ড্রীম জিনিষটা আমার খুবই হয়। অনেক সময়েই স্বপ্নের মধ্যে অনেক্গুলো লেয়ারও বুঝতে পারি। আর খুব ভিভিড সেগুলো।
  • dc | 2401:4900:634a:9e00:ada9:e131:23df:7fa4 | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:২১528152
  • রঞ্জনদা, কিছুটা বুঝতে পারলাম, ধন্যবাদ। 
     
    "অজ্ঞেয় বা আননোএবল এর শ্রেষ্ঠ প্রবক্তা কান্ট" - হয়তো ঠিকই, কারন এই প্রসঙ্গে কান্ট এর noumenon এর কথা মনে পড়লো, অর্থাত এমন এক বস্তু যা আমাদের সেন্সরি পার্সেপশানের বাইরে এক্সিস্ট করে। তবে এর কিছুটা ইঙ্গিত বোধায় গোডেল এর ইনকম্প্লিটনেস থিওরেম এও পাওয়া যায়, যাতে বলা হয়েছে যেকোন ফর্মাল সিস্টেমে এমন কিছু প্রোপোজিশান থাকবে যা ঐ সিস্টেমের মধ্যে থেকে প্রমান বা অপ্রমান কোনটাই করা যাবে না। 
     
    "আমার সামান্য জ্ঞানে আজকের অধিকাংশ ফিজিসিস্ট দার্শনিকভাবে পজিটিভিস্ট।" - আমারও তাই মনে হয়। আমি নিজেও মোটামুটি ফিজিকালিস্ট আর র‌্যাশনালিস্ট। তবে এও দেখতে পাই যে পজিটিভিস্ট আর ডুয়ালিস্ট, দুদলেই হেভিওয়েট সব বিজ্ঞানী আর ফিলোজফার আছেন, কাজেই বলাই যায় যে এই প্রশ্নের মীমাংসা এখনও হয়নি। 
  • dc | 2401:4900:634a:9e00:ada9:e131:23df:7fa4 | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:২৭528153
  • য়ুটুবে একটা খুব ভালো চ্যানেল আছে, Closer to Truth. সেটাতে প্রতিটা এপিসোডে এরকম একটা করে প্রশ্ন বা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। 
  • Arindam Basu | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২৩:১৮528154
  • পজিটিভিজম এ কনজেকচার এবং তার refutation, যে "নেতি" বা null hypothesis কে ডাটার নিরিখে পরীক্ষা করা, ডিসি এবং রঞ্জনের আলোচনায় যে ব্যাপারটা আসছে, বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান পৃথক  (noumenon এর কথা মনে পড়লো, অর্থাত এমন এক বস্তু যা আমাদের সেন্সরি পার্সেপশানের বাইরে এক্সিস্ট করে - ডিসি), উত্তর পজিটিভিজম (post positivism) বলে বিজ্ঞানী আর তাঁর ব্যক্তিগত দর্শণ প্রসূত বিজ্ঞানকে আলাদা করে দেখা যায় না, reality objective নয় (Thomas Kuhn দ্রষ্টব্য)। 
    এই চলছে। 
  • dc | 2401:4900:6346:4a0a:5d4b:9ace:a875:e8fe | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২৩:৫৭528156
  • হ্যাঁঁ  নানা দিক থেকে নানান মতবাদ উঠে আসছে। দেখা যাক কোন রাস্তা ঠিক!   
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:75da:1d42:33c1:172d | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০১:০৫528157
  • একটা ফর্মাল সিস্টেম ধরা যাক যেটায় একটাই এক্সিয়ম।
     
    আমার নাম পলিটিশিয়ান।
     
    এটার ইনকমপ্লিটনেস কিভাবে দেখানো যাবে?
  • Arindam Basu | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০১:১৮528158
  • রঞ্জন, "
    • কিন্তু মুচকি হাসলেন আচার্য বসুবন্ধু, মহাযানী যোগাচার স্কুলের বিজ্ঞানবাদী দার্শনিক।
      -- স্বপ্নে যৌনপরিতৃপ্তি হতে পারে,  রেতঃস্খলন হতে পারে, কিন্তু সন্তানের জন্ম হয় না। এটাই সুষুপ্ত ও জাগ্রত অবস্থার তফাৎ।"
    এখানে আচার্যের একটি "অনুমান" বা "ধারণা" রয়েছে । আচার্য ধরে নিচ্ছেন স্বপ্ন এবং জাগ্রত অবস্থা দুটি পৃথক অবস্থা, এবং স্বপ্ন ও নিদ্রিত অবস্থা সমার্থক। অর্থাৎ যে যজগে নেই, সে হয় নিদ্রিত নয় স্বপ্নাবিষ্ট, বা দুটোই | 
    যে জন্য বলছেন, যে কাজের কোন ফলপ্রসব হয় না, সে কাজ "যে অবস্থায় করা হয় সে স্বপ্নাবস্থা", তার সঙ্গে জাগ্রত মানুষের বাস্তবের কোন সম্পর্ক নেই |
     
    এখন এইখানে একটা প্রশ্ন আসছে।  মানুষ নিদ্রিত ও স্বপ্নাবিষ্ট অবস্থায় হাঁটতে থাকে ("sleepwalking"), নিদ্রিত স্বপ্নাবিষ্ট অবস্থায় গিয়ে মানুষ খুনজখম অবধি করে আসে, দ্রষ্টব্য: https://www.crimetraveller.org/2017/11/homicidal-sleepwalking/ ("Homicidal Sleepwalking") , বা
     https://ajp.psychiatryonline.org/doi/full/10.1176/appi.ajp.161.7.1149 ("Sleepwalking Violence: A Sleep Disorder, a Legal Dilemma, and a Psychological Challenge")
     
    এই অবস্থায় কিন্তু সে জেগে নেই, সে সুপ্ত, সে স্বপ্নাবিষ্ট | শুধু তাই নয়, "স্বপ্নাদেশ পেয়ে" কত মানুষ যে কতকিছু করে বসে তার ইয়ত্তা নেই |  
     
    কাজেই যে পরিস্থিতিতে কাজ করা হল, কিন্তু সে কাজের আশু বা দূরগত ফলও কিছু পাওয়া গেল না, সে যে স্বপ্ন, বসুবন্ধুর এই assertion নিয়ে কূটতর্ক তোলা যেতে পারে। 
     
    তখন প্রশ্ন উঠবে কোনটা কাজ আর কোনটা কারণ (cause and effect), সে আবার অন্য প্রসঙ্গ।
     
    এ স্বপ্ন, না মায়া, না মতিভ্রম, প্রতিনিয়ত এ প্রশ্নের সদুত্তর পাওয়া ভারি দুষ্কর। 
     
    আমাদের সমস্ত perception মায়া | "আমার চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ", আমার চেতনার রঙ, আপনার চেতনার রঙ নয় তো | দুজনেই "সবুজ" বলে যেটাকে ধরে নিচ্ছি (socially negotiated construct), তাকে আলোর spectrum এ আমি কি দেখছি আপনি জানেন না, আপনি কি দেখছেন আমি জানি না। 
    যার জন্য রঞ্জন, যে বিষয়টি দিয়ে শুরু করেছিলেন, সেটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক, আবার প্রফেট সুকুমারকে স্মরণ করতে হয়, "হ্যাঁরে হ্যাঁরে, তুই নাকি কাল সাদাকে বলছিলি লাল?", :-)
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
  • Arindam Basu | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৩:২০528164
  • "আমার নাম পলিটিশিয়ান।
     
    এটার ইনকমপ্লিটনেস কিভাবে দেখানো যাবে?"
     
    Statement টি সত্যি হলেও একে প্রমাণ করার তো কোন উপায় দেখছি না।
  • Arindam Basu | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৩:৪৭528165
  • দ, "অভিজ্ঞান শকুন্তলমে 'মাইক্রোসফট নু' ছিল!"
    রঞ্জন মাইক্রোসফটকে মতিভ্রম বলতে চাইছেন বোধহয়।
    ঠিকই আছে। 
    নু (?gnu) এর সঙ্গে ঐ বদ কোমপানীর কি সম্পর্ক বুঝলাম না। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন