এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  বিবিধ

  • লা জওয়াব দিল্লী - ২

    শমীক মুখোপাধ্যায়
    ধারাবাহিক | বিবিধ | ০৫ অক্টোবর ২০০৮ | ৭৪১ বার পঠিত
  • বাংলায় বলে প্রজাতন্ত্র দিবস, কিংবা সাধারণতন্ত্র দিবস, দূরদর্শনপ্রচারিত হিন্দি মাধ্যমে এরই নাম গণতন্ত্র দিবস। শুদ্ধ হিন্দিতে মূর্ধণ্য ণ-টা একেবারে মূর্ধণ্য ণ-য়ের মতই উচ্চারণ হবে, খানিকটা "ড়ঁ' ঘেঁষা। গড়ঁতন্ত্র দিবস।

    এইডা হইল রাজধানীর সবচেয়ে হাই প্রোফাইল হেভিওয়েট দিবস। যাবতীয় সরকারি খেতাব এই দিন অকাতরে বিতরণ করা হয় যোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিজের জীবন বাজি রেখে বা নিজের জীবন দিয়ে যে সব অসীমসাহসী নাগরিকের দল অন্যের জীবন বাঁচিয়েছেন বা বাঁচাবার চেষ্টা করেছেন, তাঁদের সম্মানিত করা হয়, তার সাথে কুচকাওয়াজ, প্রদেশোঁ কি ঝাঁকি মানে বিভিন্ন রাজ্যের ট্যাবলো, নাচ গান তোপধ্বনি জাতীয় সঙ্গীত এয়ারফোর্সের ফাইটার বিমান ....... সব মিলেমিশে, মানে, আপনার মনে দেশপ্রেম অন্তত সেদিনের জন্য জেগে উঠতে বাধ্য। দেশটা যে এত্তো মহান, দেশে যে এত্তো অস্ত্রশস্ত্র আছে, দেখে আপনি পুলকিত সম্মানিত বোধ করবেনই করবেন।

    গণতন্ত্র দিবস। ইয়ানি কি, রিপাবলিক ডে। সারা বছরটা পাব্লিকের ডে থাকলেও এই রিপাব্লিক ডে-র আগেপিছের দিনগুলোয় পাব্লিকের হাত থেকে দিল্লি চলে যায় মিলিটারি আর পুলুশের হাতে। পাব্লিকের একেবারে ব্যান্ড বাজানো হয়।

    গণতন্ত্র দিবসের প্যারেড চলে রাজপথে। রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনের মোড়টার নাম বিজয় চক। সেই বিজয় চক থেকে সোজা একটা রাস্তা চলে গেছে একেবারে ইন্ডিয়া গেটের সেন্টারে। এরই নাম রাজপথ। দুপাশে সবুজ মাঠ, সেখানে জনসাধারণের দেখার জন্য গ্যালারি বানিয়ে দেওয়া হয়। প্যারেডে বিভিন্ন রাজ্যের কলাকুশলীরা তো অংশ নেনই, সাথে স্থলসেনা, জলসেনা, বায়ুসেনার প্যারেড, বিভিন্ন ব্যাটেলিয়নের প্যারেড, বিভিন্ন সেনা ও পুলিশ ব্যান্ডের কারিকুরি, বিভিন্ন স্কুলের নাচগান, সবকিছুই চলে।

    তা, এত বড় জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান যখন, তার একটা প্রস্তুতি তো থাকবেই। পার্টিসিপেন্টরা প্রাথমিক প্রস্তুতি নিজেদের নিজেদের জায়গায় নেন। এর পর আসে ফাইনাল প্রস্তুতির পালা। জানুয়ারি মাসে সাধারণত দিল্লিতে হাড়কাঁপানো ঠান্ডা থাকে। সেই ঠান্ডায় অফিস যেতে গেলে ইন্ডিয়া গেটের আশেপাশে প্রায়ই দেখা যাবে জওয়ানরা কুচকাওয়াজ করে চলেছে। হয় তো রাত ছটা থেকে তাদের কুচকাওয়াজ চলছে। রাত বললাম এই কারণে, জানুয়ারিতে এখানে সূর্যোদয় হয় সকাল সাড়ে সাতটায়।

    উনিশে জানুয়ারি পর্যন্ত ট্রাফিক ডাইভার্সন হয় টয় না। লোকজনের গাড়ি টাড়ি ঠিকঠাক চলে, বাস অটোও চলে। উনিশ তারিখ থেকে শুরু হয় গ্যাঁড়াকল। নিউ দিল্লির সমস্ত অফিস খোলাও থাকবে, ওদিকে ইন্ডিয়া গেটের ত্রিসীমানার মধ্যে সমস্ত কমার্শিয়াল গাড়ির যাতায়াত সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রাইভেট গাড়ি যদিও ডাইভার্টেড রাস্তায় চলতে পারে। কে না জানে, সন্ত্রাসবাদীরা সর্বদা পাবলিক ভেহিক্‌ল ইউজ করে! তাতে করে ইন্ডিয়া গেট ও তার আশেপাশের এলাকা তো সন্ত্রাসমুক্ত হয়, কিন্তু বাঁশ হয়ে যায় ঐ এলাকায় যে বিপুল পরিমাণ সরকারি অফিসসমূহ আছে, সেখানকার কর্মচারীদের। অনেক দূরে দূরে বাস সার্ভিস থেমে যায়, সেখান থেকে হেঁটে হেঁটে আসতে হয় তাঁদের, অফিস পর্যন্ত, সরকারের মুন্ডপাত করতে করতে। কী দরকার রে বাবা অফিস টাইমেই তোদের প্র্যাকটিস করার? বেলা এগারোটার পরে ব্যাপারটা করা যেত না, যখন সবাই অফিসে পৌঁছে যায়? লোকজনের ট্যাক্সোর কোটি কোটি টাকা খরচা করে লোকজনকেই হ্যারাস করে এতসব জাঁকজমকেরই বা কী মানে?

    নাদান লোকজন, প্রশ্নই করে যায়। উত্তর কেউ দেয় না, দেবে না কোনওদিন।

    তা, সরকার বাহাদুর নেমকহারাম নয়। উনিশ কুড়ি একুশ, জানুয়ারির এই তিনদিন পুরোদমে রিহার্সাল চলার পরে বাইশে জানুয়ারি সম্পূর্ণ বিশ্রাম। সরকারি কর্মচারিদের অসুবিধের কথা মাথায় রেখে তেইশে জানুয়ারির শোয়ে তাঁদের জন্য ব্যবস্থা থাকে ঢালাও টিকিটের। বিনামূল্যে।

    ....... কীসের শো? কীসের টিকিট? আরে, তেইশে জানুয়ারির শো। সেদিন যে এই প্যারেডের ফুল ড্রেস রিহার্সাল! এই অনুষ্ঠানটা কেবলমাত্র মিনিস্ট্রি আর সংলগ্ন কিছু অফিসের কর্মচারীদের জন্য খোলা থাকে। মানে, ছাব্বিশে জানুয়ারি রাজপথে যা-যা হবে, তার হুবহু রেপ্লিকা। কেবল এই ফুল ড্রেস রিহার্সালে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী আর প্রধান অতিথি থাকেন না, সেখানে বসে থাকে তিনজন চারজন ডামি। কুচকাওয়াজ এসে তাদেরই স্যালুট দিয়ে এগিয়ে যায়।

    গ্যাঁড়া বারতিনেক দেখেছে এই অনুষ্ঠান। বেশ উপভোগ্য। কিন্তু সিকিওরিটি বড় বালাই। মোবাইল চাবি কিচ্ছু নিয়ে ঢোকা যাবে না। এমনকি পেন টেনও নিতে দেয় না কিছু বদ আর্মির লোকজন। অবশ্য আর্মির লোকজন কবেই বা সুবিধের হয়েছে! গেঁড়ি প্রথমবার দিল্লি এসে বন্ধুদের সাথে দেখতে এসেছিল এই তেইশে জানুয়ারির শো, ঢোকার মুখে এক আর্মি ব্যাগ চেক করে বলেছিল পেন নিয়ে ঢোকা যাবে না, পেন আমাদের কাছে রেখে যান, বেরোবার সময়ে ফেরৎ নিয়ে যাবেন।

    গেঁড়ি তখন দিল্লিতে নতুন, একেবারে নিষ্পাপ, গ্যাঁড়ার উপহার দেওয়া পেনটা তুলে দিয়েছিল আর্মির হাতে। অনুষ্ঠান শেষে বেরিয়ে এসে যতই চায় পেনটা ফেরৎ দিন, সে আর্মি বলে কীসের পেন? কাকে দিয়েছিলেন? গেঁড়ি লাকিলি মুখ চিনে রেখেছিল, নইলে পুলিশ আর মিলিটারির মুখ কে-ই বা চিনে রাখে! ধরা পড়ে তখন লাজুক মুখে আর্মির বক্তব্য, কত-ই বা দাম আপনার পেনের, একটা পেন নিয়ে এরকম করছেন কেন, অফিসে গিয়ে চাইলেই তো আরেকটা পেন পেয়ে যাবেন ইত্যাদি। গেঁড়ি আর গেঁড়ির সঙ্গী মিলে খুব চেঁচামেচি করায় অবশ্য সে নিজের বুকপকেট থেকে পেনটা আলটিমেটলি ফেরৎ দিয়েছিল। একটা পেন নিয়েও যে ইন্ডিয়ান আর্মি এ রকম হ্যাংলামো করতে পারে, এ না দেখলে বিশ্বাস হয় না।

    সকাল নটায় শুরু, সাড়ে বারোটায় শেষ অনুষ্ঠান। তার আগে পরে গাড়ি চলাচলে কোনও বাধা নেই। রাশি রাশি গেরুয়া সাদা সবুজ বেলুন উড়িয়ে সমারোহ সম্পন্ন হয়, একুশবার তোপধ্বনির মধ্যে বাহান্ন সেকেন্ডের জনগণমনঅধি শেষ হয়, জনগণ এর পর অফিসে ঢুকে পড়ে। অফিস তো সেদিন ছুটি থাকে না। যাদের অন্যান্য অঞ্ছলে যেতে হয়, তাদের অবশ্য অনেক ব্যারিকেডের মধ্যে দিয়ে প্রমাণ দিতে দিতে যেতে হয় যে, তারা যে গাড়িগুলো চালাচ্ছে, সেই গাড়িগুলো তাদের নিজেদেরই, তারা সন্ত্রাসবাদী নয়।

    চব্বিশ, পঁচিশ, একেবারে শান্ত। কোথাও কোনও যানজট নেই। আসন্ন ঝড়ের পূর্বাভাষ আর কি। ছাব্বিশে জানুয়ারি ভোর থেকে, দিল্লি শহর, যাকে বলে, একেবারে নাকাবন্দী। হুই নিজামুদ্দিন ব্রিজ, হেই আইটিও ব্রিজ, যমুনার পাড় ধরে সমস্তকটা রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রসঙ্গত, ছাব্বিশে জানুয়ারির মূল অনুষ্ঠান, যেটা দূরদর্শনে প্রতি বছর দেখা যায়, সেটা আমজনতার জন্য খোলা, পঞ্চাশ থেকে পাঁচশো টাকার টিকিটের বিনিময়ে। তো, সেদিনের অনুষ্ঠান যাঁদের দেখতে হয়, তাঁদের যদি একটু দূর থেকে আসতে হয়, তা হলে সেই দশ কিলোমিটার আগে থেকে পায়ে হেঁটে রাজপথে পৌঁছতে হবে। নো যানবাহন অ্যালাওড। অ্যাম্বুলেন্স বা ফায়ার ব্রিগেডের অবশ্য ছাড় থাকে।

    দিল্লিতে থাকার এই একটা মজা। শেষের দিকে, আকাশে যখন বায়ুসেনার ফাইটার প্লেনগুলো ডিগবাজি খেয়ে কসরৎ দেখায়, তার পরে পরেই তারা তীব্রগতিতে পাক খেয়ে নেয় পুরো দিল্লির সীমা বরাবর। মানে, টিভিতে এই দেখাচ্ছে বায়ুসেনা তাদের কসরৎ শেষ করল, এইবার জাতীয় সঙ্গীত শুরু হবে, সাথে সাথে কানফাটানো আওয়াজের সঙ্গে সেইসব প্লেন একেবারে গ্যাঁড়ার বাড়ির মাথার ওপর। ব্যাপক লাগে কিন্তু!

    সেদিন দুপুর দুটোর পর অবরোধ ওঠে। ..... তবে শুনুন দাদা, যদি মনে করে থাকেন এই অবরোধ শেষ হবার সাথে সাথে যাবতীয় দুর্ভোগের অবসান এ বছরের মত, তা হলে দ্বিতীয়বার ভাবুন। এর পরের অনুষ্ঠান বীটিং রিট্রিট। উনত্রিশে জানুয়ারি।

    সেডা কিডা? সেনাবাহিনীর নিজস্ব ব্যান্ড থাকে। বিভিন্ন ব্যাটালিয়নের। সেইসব ব্যান্ডবাদকের দল বিজয় চকে দাঁড়িয়ে নিজ নিজ সঙ্গীতকলা পরিবেশন করেন, আর তা শুনে শেষবারের মত পুলকিত হন রাষ্ট্রপতি আর বিদেশী প্রধান অতিথি। আলোর মালায় সাজানো হয় রাষ্ট্রপতি ভবন, নর্থ ব্লক, সাউথ ব্লক, আর তিরঙ্গা আলোয় ভেসে যায় ইন্ডিয়া গেট। বিকেল পাঁচটা থেকে সাতটা, এই দু ঘন্টার অনুষ্ঠান। কিন্তু দুপুর দুটো থেকে আশেপাশের এলাকা সীল করে দেওয় হয়, কেবল টিকিটধারী আমন্ত্রিতরা ঢুকতে পারেন, দূরে গাড়ি রেখে। এলাকার বিভিন্ন মন্ত্রকের অফিস দুপুর দুটোয় সীল করে দেওয়া হয়, সেদিন তাদের হাফছুটি। তবে সবার নয়। যেমন হোম মিনিস্ট্রি, ফিনান্স মিনিস্ট্রি, রেল মিনিস্ট্রি, এদের অফিস হয় নর্থ ব্লক সাউথ ব্লকে, নয় বিজয় চকের গায়ে। বাকিদের নর্মাল সময়েই ছুটি হয়, কিন্তু কেউ থাকে না। কারণ বাস পাওয়া যায় না। দুটোর মধ্যে সকলকে কেটে পড়তেই হয়।

    বড় মাপের দুর্ভোগ এর সাথেই শেষ, কেবল আরও একটা ছোট মাপের দুর্ভোগ রয়ে যায় পরের দিনের জন্য। ৩০শে জানুয়ারি। জাতির পিতার মৃত্যুদিন। বাড়ি ফেরার আগে বিদেশী অতিথি রাজঘাটের সমাধিতে ফুল চড়িয়ে আসেন, ফলস্বরূপ, হাজারে হাজারে গাড়ি আটকে থাকে আইটিও রাজঘাট এলাকায়। কয়েক ঘন্টার চেষ্টায় জ্যাম তৈরি হয়, ছাড়াতে লাগে আরও কয়েক ঘন্টা।

    আপাতদৃষ্টিতে দেখে মনে হতেই পারে এত নিরাপত্তার বাড়াবাড়ির মধ্যে কোনওরকম সন্ত্রাসবাদী হামলা হতে পারার প্রশ্নই ওঠে না। সারা বছর না থাকুক, অন্তত এই কটা দিনের জন্য দিল্লিবাসী নিজেদের নিরাপদ মনে করতেই পারে। কিন্তু ধীরে, হে সুশীল পাঠক, সুশীলা পাঠিকা, আপনি কি ছাব্বিশে জানুয়ারি দিল্লিতে কোথাও সন্ত্রাসবাদী হামলা করিতে ইচ্ছুক? বেশি খরচা নয়, আপনাকে খসাতে হবে মাত্র পাঁচশোটি টাকা। গুলিগোলা বন্দুক আরডিএক্সের খরচ এক্সট্রা। ওটা ধরছি না। কেবল নিউ দিল্লির কোনও হাই প্রোফাইল এলাকায় আপনি গাড়ি নিয়ে পৌঁছে যেতে পারবেন অনায়াসে। কেউ চেচ্‌ক করবে না। রাখে কেষ্ট মারে কে? টাকাটা যে আপনি দিচ্ছেন দিল্লি পুলিশের সার্জেন্টকে!

    ঘেঁটে যাচ্ছেন? তাইলে গল্প শুনুন। টাটকা গল্প, এই ২০০৮-এর ছাব্বিশে জানুয়ারির গল্প। পাওয়ার মিনিস্ট্রিতে রাতেও কাউকে কাউকে থাকতে হয় কোনও কোনও আর্জেন্ট কল অ্যাটেন্ড করার জন্য। নাইট ডিউটির জন্য তাদের বাড়তি পয়সাও দেওয়া হয়। সেই রকমই এক জনতা, পাওয়ার মিনিস্ট্রির লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক, রাতের ডিউটি থেকে যখন ছাড়া পেলেন, তখন ছাব্বিশে জানুয়ারি সকাল আটটা বেজে গেছে। সমস্ত গাড়ি বন্ধ, দূর দূর তক। অতএব, পনেরো কিলোমিটার দূরত্বে লছমীনগরের বাড়িতে পৌঁছনোর জন্য তিনি পায়ে হাঁটাই বেছে নিয়েছিলেন, তাতে নিষেধাজ্ঞা নেই। তাঁর চোখে দেখা ঘটনা।

    কনট প্লেসের ঘটনা। উত্তর প্রদেশের কোনো জায়গা থেকে একটা গাড়ি আসছিল একজন মারাত্মকভাবে জখম অ্যাক্সিডেন্ট ভিক্টিমকে নিয়ে। বেশভূষায় বোঝা যায় বেশ গরীব ফ্যামিলি, অ্যাম্বুলেন্স জোটে নি, কারুর গাড়ি নিয়ে আসছিল। ক্রিটিকালি জখম, সেখানকার ডাক্তার রেফার করে দিয়েছেন দিল্লির রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালে, যা কিনা ঐ হায়েস্ট সিকিওরিটি জোনের মধ্যে পড়ে। এতদূর গাড়ি চালিয়ে এসে তাদের গাড়ি প্রথম থামিয়েছেন কনট প্লেসের সার্জেন্ট। গাড়ি আর এগোবে না। ভেতরে জখম লোকটি কাতরাতে কাতরাতে মারা গেলেও এগোবে না। উইটনেস ভদ্রলোক সার্জেন্ট আর জখমের আত্মীয়দের কথোপকথন থেকে এটুকু বুঝে নেন। আত্মীয়রা তখন সার্জেন্টের হাতে পায়ে ধরছেন, সর্বস্ব দিয়ে তাঁরা গাড়ি ভাড়া করে এনেছেন, যদি লোকটিকে বাঁচানো যায়। কিন্তু সার্জেন্ট হুকুমের চাকর। গাড়ি কনট প্লেসের ওপর দিয়ে আর এগোবে না।

    অবশেষে সার্জেন্টের দয়া হল। পাঁচশো টাকার বিনিময়ে তিনি ড্রাইভারকে যেতে দিতে রাজি হলেন। "ম্যাঁয় তেরি গাড্ডিপে ব্যায়েঠ জাউঙ্গা, কঁহি পে ভি চেকিং নহি হোগি। কোই কুছ নহি বোলেগা, তু আরামসে পঁহুছ জায়েগা, বস্‌ পাঞ্চশ' রুপইয়া দে দে।' প্রসঙ্গত, কনট প্লেস থেকে রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতাল খুব বেশি হলে দেড় দু কিলোমিটার দূরত্বে।

    ড্রাইভার এই লোভনীয় প্রস্তাবে রাজি হয়েছিল কিনা সেটা আর ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে দেখেন নি। সারা রাত জেগে ক্লান্ত ছিলেন, হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির ঠিক দু কিলোমিটার আগে বাস পেয়েছিলেন।

    জনগণমঙ্গলদায়ক জয় হে ভারত ভাইগ্যবিধাতা .......
    জয় হে, জয় হে, জয় হে।
    জয় জয় জয় জয় হে।

    (চলেগা নেহি, দৌড়েগা)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ০৫ অক্টোবর ২০০৮ | ৭৪১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন