এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • ভিভিয়ান

    সুকান্ত ঘোষ লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২১ জুলাই ২০১৫ | ৯৩২ বার পঠিত
  • তোমার কবিতার ভিতরে সবসময় মেয়ে থাকে কেন?
    কবিতার ভিতরে মেয়ে? আমি তো শব্দ লিখেছি, শব্দ দিয়ে বাক্য হয়েছে – আমার কিছু বলা কথা, অনেক না বলা কথা, এই সব নিয়েই তো –
    আসলে বলতে চাইছি - মেয়ে, অবদমিত যৌনতা, শরীর এইসব ছাড়াও তো শব্দ হয় – বাক্যও মনে হয় লেখা যায়। কবিতায় শুধু মেয়ে আসবে কেন?
    কিন্তু আমি তো প্রেমের কবিতা লিখিনি। আমার কবিতায় ওরা এসেছিল –
    শুধু প্রেমের কবিতা লিখে কি আলাদা হওয়া যায়?
    আমি তো আলাদা হতে চাই নি – আমি তো শুধু ওদের মনে রাখতে চেয়েছিলাম, ওদের মনে করতে চেয়েছিলাম –
    তাহলে চিরাচরিত লিখো না – অন্যরা যা লিখতে পারে নি তুমি তা লিখলে তবেই তো লোকে তোমার লেখা পড়বে!
    আমার ‘লেখা’ পড়বে! আমার কবিতা পড়বে না কেউ? কখন আমার ‘লেখা’ তাহলে কবিতা হয়ে উঠবে?

    তুমি এই সব জানতে না ভিভিয়ান – আমি তোমাকেও আলাদা করে লিখবো ভেবেছিলাম, আলাদা করে ছোঁয়া – তুমি কি জানতে বাড়িয়ে দেওয়া স্ট্রবেরীও কখনো কখনো ব্যর্থ হয়ে যায়! আঙুলের ছোঁয়া না-বলা কথা জানিয়ে দেয় না সবসময়। এমন সময় গুলিতে তুমি কি কর? আমি ভেবে বের করেছি সময় নষ্ট করা যায় না, যায় না ব্যয় করা – আসলেই সময় একটি ধারণা মাত্র। তাই আমি সময়ের সাথে লেগে থাকি –

    আমি প্রতিদিন তোমাকে নতুন করে দেখছি ভিভিয়ান, নতুন করে লিখবো বলে। পুরানো তোমাকে আমি চিনি না, খুব পুরানো বলতে হারবোর্ণ মার্কেটে তোমার সাথে আলাপ হয়ে যাওয়া।

    আমি কি ভুল বলছি? আমি কি তোমাকে একই সাথে দেখেছি আর লিখেছি – কবিতা? নাকি আমি তোমাকে শুধুই দেখে গেছি, আর এই নষ্ট সময় গুলোতে ভাবছি আমি তোমাকে লেখার মত করে দেখেছিলাম? ও, আগেই তো বলেছি সময় নষ্ট করা যায় না – তাহলে কি নষ্ট-সময় বলেও কিছু হয় না? ভিভিয়ান, তোমায় আমি কোনদিন বাংলা কবিতা শোনাই নি না? আমাদের বাঙলা ভাষায়, “প্রভু নষ্ট হয়ে যাই -” এই মর্মে একটি কবিতা ছিল -

    তুমি কি জানতে মর্ম কাকে বলে? আমিও জানি না – লোকে বলে প্রেমে পড়লে নাকি ‘মর্মে’ আঘাত পাবার সম্ভাবনা খুব বেড়ে যায়। তুমিও মাঝে মাঝে বলতে না যে, সেই মর্মে আমার আরো বহুদূর যাওয়া বাকি? তোমাদের ভাষায় ‘মর্ম’ নিয়ে লেখা একটা কবিতা শুনিয়ো সময় মত কোন একদিন।
    তুমিও তো সময়ের সাথে লেগে ছিলে ভিভিয়ান? নাকি তোমার কাছে সময় শুধুমাত্র ধারণা ছিল না – তুমি নিঙড়ে নিতে চেয়েছিলে ওর ভিতরে লুকিয়ে থাকে মুহুর্তগুলি। নিঙড়ে নেওয়া হয়ত বড় বাস্তব হয়ে যায় চোখের দিকে তাকালে।

    “ভিভিয়ান একটি চীনা নাম
    কাঁধের সাদা জামা থেকে খুলে পড়া ফিতে
    সিরামিক করে নিয়তই
    চীনা মেয়েরা ভিভিয়ান হয় না
    একটা মুখোশের সাথে লালা মিশে
    পুরু ঠোঁট খুঁজি
    জামাটা পাতলা ছিল, ঘরের হিটার অন্‌
    কিভাবে স্যালাড হয়
    সবুজ দিয়ে স্টোর ফেরত আঙুলগুলি
    সিরামিকে মাখিয়ে নেয়
    ওভান আর নিঃস্বাসের গরম
    ঘরটায় রান্নার জায়গা

    ঘরটায় সেদ্ধ হয় কিছু আগের প্রাণীরা
    সিরামিকে আঁকা একরাশ ছবি
    এবার টুকরো হবে
    গরম নিঃশ্বাসে
    আঙুলগুলি খেলবে ন্যাতানোর সঙ্গে
    স্যালাডে ঠেকানো জিবে
    লালার সাথে ফেনাবে আর ফেনাবে
    ধার করা উত্তাপ এবার বন্ধ
    জামাটা পাতলা ছিল বলেই তাপে
    গলতে থাকবে চীনা মেয়েটা
    ও ভালো সিরামিক জুড়তে জানে
    ফিতে খুলে নিলে সাদা
    চীনা মেয়েটা ভিভিয়ান”।

    হ্যাঁ ভিভিয়ান চীন দেশের – লুকিয়ে রাখা দ্বিতীয় মেয়ে। তোমার কি অন্ধকার ইতিহাস আছে লুকিয়ে থাকার সময়? সারা শরীরও কি লুকিয়ে ছিল – অন্তত অনেকদিন? তোমার শরীর বলে, শরীর লুকিয়ে ছিল।

    তুমি বড় সাদা – আমরা একেও সাদা বলি। কাঁধের কাছটা – ফিতে খুলে নিলে, আমরা বলি আরো-সাদা। সাদারও প্রতিশব্দ আছে – একদিন শোনাবো না হয়। ওই জামাকেই কি সাটিন বলা হয়? ও, চাইনীজ সিল্ক? হাত দিয়ে দেখতে পারি?

    ঘরে আর কেউ নেই – আলো থেকে বাইরে দেখা যায় না, অথচ আমরা আলোর তলায়। নিজেই সরিয়ে দাও কাঁধের ফিতে – অল্প একটু। আমি সাদা এবং আরো-সাদার পার্থক্য করতে পারি না। এগুলি নাকি কেবল ছুঁয়ে পার্থক্য করা যায় – কিন্তু যদি কারো হাত কাঁপতে থাকে? কত ক্ষণ সময় দেবে ভিভিয়ান?
    স্তনের গল্প বলেছিলে নিজেই – আমাদের সবাইকে, অন্তত আমি ছাড়াও আরো দুজন মেয়ে ছিল। উন্নত বক্ষা নয় বলে সে এক অজানা হীনমন্নতা – নাকি খুব চেনা আক্ষেপ? আমি স্তোত বাক্য দিতে পারি না, সেই সাদা ফিতে বড় কাছে ছিল – বড় ছুঁয়ে ছিল যে। আমি তাই গল্প শুনি, ওর দিদির সেই আক্ষেপ নেই। ওর দিদি তো চীন থেকে বাইরে বেরোয় নি কোন দিন – তাই ভিভিয়ান ঈষৎ হিংসা করে দিদিকে। আমি চীনের পুরুষ নিয়ে ভাবি, ভিভিয়ান বলে দিদির কম থাকলেও কিছু ক্ষতি হত না।

    বৈষম্য নিয়ে কে ভাবে যদি গরম নিঃশ্বাসে সিদ্ধ হতে থাকে ঘরের প্রাণীরা? তোমার জামাটা পাতলা ছিল ভিভিয়ান – বিশেষত বাইরে যদি বরফ পড়ে। ভালো করে দেখা আমার কাজ – আমি দেখতে থাকি সেই রং করা নখ কেমন করে সিরামিকের গায়ে খেলা করে যায়। আমি স্যালাডের সবুজ দেখি, সাদে গায়ের আরো-সাদা ফিতে, শক্ত হবার আগে নেতিয়ে থাকা সসেজ – তুমি আরো ঝুঁকে পড়ে কিছু একটা কুড়াতে যাও, আমি সসেজের শক্ত হয়ে যাওয়া ভাবি। মাটির কাছাকাছি থেকে তাকিও না ভিভিয়ান, এ চোখ চলে যায় বাইরের বরফের শব্দ খুঁজতে।

    মসৃণ হয় বলেছিলে ত্বক রাঙা-আলুর স্যুপ খেলে। ভেবেছিলাম তোমার স্যুপে রাঙা-আলু গা থেকে গলে গলে পড়বে মসৃণতার সূত্র – আমি চেখে নেব, আমি জেনে নেব সেই গোপনতা। মসৃণতার নিয়েও কি তোমার আক্ষেপ আছে ভিভিয়ান? জানো মসৃণ গায়ে চাঁদের আলো ছিটকানো নিয়ে আমাদের ভাষায় কবিতা --- এবার তবে আমি বলতেই পারি, রাঙা-আলুর স্যুপ থাক নাহয় - সেই সাদা ফিতে বড় কাছে ছিল, বড় ছুঁয়ে ছিল যে।

    “জানালার হুকে ঝোলা তোমার ভিতরটা
    সাদা আর বড় স্বচ্ছ থাকতে পারে কিভাবে
    ভাবতে ভাবতে তুমি
    একই সাথে ঘন কিন্তু স্বচ্ছ হচ্ছিলে

    তুমি লেপ্টে যাও ভিভিয়ান যেখান থেকে তুলে আনা
    ফায়ার অ্যালার্মের রাত একটা আমার ডিউটি
    জানালার হুক থেকে সাদা শরীর
    স্বচ্ছতা ঢেকে আনে
    রেশম গুটি ঘাড় বা পিঠের থেকে গড়িয়ে
    বড় পিচ্ছিল সসেজ্‌ শীতল হয়ে যাই
    খালি পায়ে শনিবার হাঁটু জোড়া রাতে
    ভিভিয়ান, তুমি ঠিক আছো তো”?

    যাবে আজকে ফ্যাকটরি আউটলেটে? অনেক দূর বাসে করে যেতে হয় – বাসে চাপাটাই তো মজা। পেছনের সীট কিছু ফাঁকা থাকার কথা আছে। ওঃ, আসলে আমি যেখানে পড়াই, সেখান থেকেই ব্যবস্থা হয়েছে – ওখানে কেবল দোকান নেই কিন্তু! অনেক বড় ভিলেজের মত ওটা – পার্ক আছে, পাব আছে, গাছতলা আছে – নদীর দিকে মুখ করে বসানো টেবিলে লাঞ্চের জায়গা আছে। আরো একটু যদি এগুতে চাও, সমুদ্র পেয়ে যাবে – ভিজে বালি দিয়ে হাঁটা যায়। তা একদিন যদি ফুটবল নাই বা দেখলে? সেব্‌, রব্‌ ওরাই যাক না একদিন – আমি বলে দেব দেখা হলে কাজ ছিল কিছু। টিকিটও তো লাগবে না বাসে!

    ভিভিয়ানের ফিতে খোলা শরীরের সামনে আমি রাত একটার অ্যলার্মের ফায়ার ওয়ার্ডেন দাঁড়িয়ে আছি। সময় থমকে গেছে – নাকি সময় ভঙ্গুর হয়ে সিরামিকের মত গুঁড়িয়ে যাচ্ছে ক্রমশঃ ?

    সময় এলোমেলো হয়ে যায় বড় সহজেই – সমুদ্র আগে নাকি রাত একটার ভিভিয়ানের ফিতে খোলা শরীর? ঘণ্টা বেজে ওঠে রিং রিং টানা একঘেয়ে – বারান্দায় রাতে বাতি জ্বলছে শুধু। আমি লাইট নিয়ে এল্যার্মের উৎস সন্ধানে বের হই। ঘর থেকে রাত পোশাকেরা বেরিয়ে আসে – কারো গায়ে ঢাকা আব্রুতা। আমি শরীর গুণি – হিসেব মেলে না, একটা শরীরের ওম্‌ কম পড়ে যায় আমাদের মাঝে। আমি মুখ গুণি এবার – ভিভিয়ানের পুরু ঠোঁট খুঁজে পাই না – ছুটে যাই চোদ্দ রম্বর রুমে – দরজায় ঠক ঠক। বেশ কিছু পরে একটা শরীর দরজা খুলে দেয় আমার ডাক শুনে। এ বড় অসময় ভিভিয়ান – চলো নিচে যাই, তোমার শরীরও গুণতে হবে আরো অনেকের সাথে। নিভৃতি কখনো কখনো বেরসিক হয় তুমি তো জানই। নিভৃতি আবার অজুহাতও হয়, তুমি সেটাও তো –

    আমরা ওই দিনই কি বড় দূরের সমুদ্র থেকে ফিরে এসেছিলাম? ওই শরীরে কি ক্লান্ত ভিভিয়ানের লেগে থাকা? পিছনে সাদা আলো জ্বলছে – তোমার এই পোষাকও সাদা আর বড় স্বচ্ছ কেন? রাতের বিছানা কি তোমার মসৃণতায় ঘষে ঘষে ক্লান্ত হয়ে পড়ে না? বিছানা কি তোমার আক্ষেপ জানে? পায়ের দিকে তাকিয়ে থাকি ক্ষণেক – খালি পা কিসের কথা মনে করায়?

    তুমি অন্য ভাবে দেখবে – অন্য ভাবে দেখতে শিখলে তবেই অন্য ভাবে লিখতে পারবে। ভাবি যদি একই ভাবে দেখে অন্য ভাবে লেখা প্র্যাকটিস করি? জানি না কার দিকে পাল্লা ভারী হয় – অন্য ভাবে দেখা, নাকি অন্য ভাবে ভাবা। তবে দুই অর্থেই ভিভিয়ান নীচে আসার জন্য ঘুরে যায় – আমি দেখি স্বচ্ছতা। হাঁটু জুড়ে ছিল এতক্ষণ – দুই হাঁটু সরে গেলে তা স্বচ্ছতা, কেউ বলে আহ্বান।

    “আমাদের সমস্ত ঘটনায় সিঁড়ি
    আমরা কাঠের বাড়িতে থাকি

    সেই সিঁড়ি লব্ধ জ্ঞানের প্রথমটায়
    কেউ কাঁধে মাথা রেখে কাঁদলে আমি
    ধর্মগ্রন্থের মতই ভাগ্যবান হয়ে যাই কিংবা উভয়েই

    একথা জানতেই না ভিভিয়ান এবং আঙটি
    রূপোর গায়ে লেগে আছে অচেনা অক্ষরে
    সিঁড়ি লব্ধ জ্ঞানের দ্বিতীয় ভাগটা

    অথচ প্রথম এবং দ্বিতীয় ভাগটা আমরাই লিখতে পারতাম
    হাঁটুভাঙা বাঁপাশের না খোলা দরজায়

    অতঃপর শেষ হয় সমস্তই ড্রয়িংরুমে
    তুমি ভুলে গেলে গতকাল - ভুলে গেলে আঙুররসে
    তোমার লালচে গালে আমার সিঁড়িলব্ধ জ্ঞানের তৃতীয়টা
    জানার কথা ছিল আজকে থেকেই

    ফ্রয়েড ও ইয়ুং – এর গিনিপিগ আমি ভিভিয়ানকে রাদের কবিতায় দেখি – “সিঙ্গারা স্তনে স্কার্ফটা রোদের মত জড়িয়ে নিয়ে বলছে তুমি ভালোবাসা জানো না”

    ভিভিয়ান ফিরে গেছে তার দেশে অনেক দিন হল – মাঝে মাঝে সেই স্থবির সময়ের কথা মনে পড়ে আমার। পেলব উজ্জ্বল চামড়া থেকে গড়িয়ে পড়ছে করিডোরের আলো – আমি স্বচ্ছতা থেকে চোখ সরিয়ে নিতে চাই – ভিভিয়ান তাকিয়ে আছে, ফিতের দিকে হাত বাড়াবার কোন তাগিদ অনুভব করছে না। এখনো কি তুমি এমনই ভঙ্গুর হও ভিভিয়ান? তোমার কি মনে পড়ে সেই ফ্যাকটরি আউটলেট থেকে ফেরার পথে পিছনের সীট থেকে ক্ষণিকের বসা তুমি সামনের সীটে বড় ঝুঁকে আমার কাছে চলে এসেছিলে! চোখের কাছে – নাকি মুখের? চোখ বন্ধ আমি সেই সুগন্ধ মনে করে সত্যের সন্ধান করি।
    রাদ আহমেদও কি ভিভিয়ানকে চিনত? না হলে এমন কবিতা কেমন করে লিখল সে? রাদের কবিতা কেমন করে সিঙ্গারা স্তন আসে? কেমন করে স্তন সাথেই জড়িয়ে থাকা অনুযোগ আসে? ভিভিয়ান অবশ্য কেবল শীতের দিনেই স্কার্ফ পড়ত। ওর স্কার্ফ কি আক্ষেপ জানত, জানত কি যে বাঙলা ভাষায় অমন স্তন নিয়েও কবিতা লেখা হয়েছে ? পরের বার আমি তোমাকে শোনাবো –

    ভিভিয়ানের হাতে কার আঙটি জানতাম না, কার অর্থে কার দেওয়া – যেমন জানতাম না ভিভিয়ান কি আমাদের বয়সী? আমি জানতাম ভিভিয়ান সহজেই মাতাল হয়ে যায় – আর খুলে দেয় উৎস দ্বার, অনেক না বলা গল্পের। বা অনেক ফিসফিসের। তুমি কার জন্য আমার খুব চেনা দরজায় মাথা রেখে কাঁদো ভিভিয়ান?

    তুমি তো জানতেই কাঠের সিঁড়ি ঠিক কতটা শব্দ করে – পায়ের শব্দ দরজার কত কাছে এসে থেমে যায়! তুমি যদি আমার কাঁধে মাথা রেখে কাঁদো, জানতেই তো আমি কি ভাবে হাত দিয়ে স্বান্তনা দেব। আমার হাত তোমাকে বড় চেনে ভিভিয়ান, এমনকি না-খোলা দরজার ওপাশ থেকেও।
    দরজা না খুললে, আমাদের সমস্তই শেষ হয় ড্রয়িং রুমে – সবাই জানত তাই কাঁধে মাথা রেখে ঢুকলেই ফাঁকা হয়ে যেত বাকি সব, তুমি কি খেয়াল করতে ভিভিয়ান? কে তোমার সিঙ্গারা স্তনের উপর দিয়ে ঢেকে দিত আব্রু?

    “আমি এশিয়ান ট্রাই করি
    মোর ঘরে জলতরঙ্গ এমনি রিনিঝিনি বেজে
    আবারো এমনি নিবিড় সন্ধ্যায় আমি নিষিক্ত ভ্রুণে
    জলতরঙ্গের সাথে জলকণা ট্রাই করি আমার কার্পেটে

    আমার অবচেতনায় কবিতারা শরীরপ্রিয় হয়ে ওঠে
    শরীর সূত্র মেনে চলে
    এবং সূত্র শরীর মেনে চলে না
    আমি তাই সমস্ত কবিতা কেন্দ্রীক অন্তরঙ্গতা ট্রাই করি
    সুরেলা কম্পনে নিবিড় জলকণা ভেঙে ভেঙে
    নিবিড়তা মেখে নেওয়া সেই আমি
    একেলা ঘরেও রিনিঝিনি রিনিঝিনি কেন্দ্রীক
    কবিতাও ট্রাই করি

    অনেকের মত কার্পেটও গন্ধ মেখে
    সমস্ত বিবশ সকালে একরাশ মুখবন্ধ সমেত
    যাহা প্রত্যাশা করে তাহার পোষাকি নামও আমার অজানা
    আমি নিষিক্ত রাত জানি, জলতরঙ্গও
    তখনো জানি প্রত্যাশার নাম জলকণা
    মুখে কবিতা গন্ধ নিয়েও তাই এশিয়ান ট্রাই করি

    তুমি কি জানতে আমি নৈসর্গকেন্দ্রীক কবিতার মত
    জবাবদিহি ভালোবাসি?”

    এশিয়ান ট্রাই করি তাই মুখে কবিতা গন্ধ নিয়েও। আমি অন্য রকম লিখতে চাই – লেখা অর্থে কবিতা। অন্য মেয়ের বাজারের ব্যাগ বওয়া নিয়ে অভিমান লক্ষ্য করি। প্রত্যাশার মাপকাঠি নিয়ে ভাবতে থাকি আমার অবচেতনায় আমার শরীরপ্রিয়তা কিভাবে কবিতা হয়ে উঠতে পারে! তুমি কি জানতে ভিভিয়ান এই ভাবেই আমি কবিতা ও তোমাকে একই সাথে বুঝে চলেছিলাম এবং কখনও কখনও লিখেও।

    তোমার কবিতা চিরাচরিত প্রেমের কবিতার থেকে আলাদা – ইনফ্যাক্ট অনেক সময় বোঝাই যায় না যে ওগুলি প্রেমের কবিতা!

    ভিভিয়ান তোমার শরীর সূত্র মেনে চলত – তাই তো তোমার দেওয়া পিলাটিস্‌ ক্লাসে উপুড় হয়ে শুয়েছিলাম অনভ্যাস সত্ত্বেও। তুমি কি এটাও বুঝতে না যে আমার ছড়িয়ে রাখা সূত্র শরীর মেনে চলে না? ভিভিয়ান, আমি মনে হয় তোমাকে পুরোপুরি আঁকতে পারি নি, না হলে ওরা ঠিকই বুঝত যে এগুলি প্রেমের কবিতাই।

    আমার জবাবদিহি শুনেছে কার্পেট – আমার নৈসর্গপ্রেম জেনেছে কাঠের দরজার কাছে ক্ষণিকের স্থবিরতা। তুমি এমন নিবিড় সন্ধ্যায় আমাকে অনেক বার সদ্য স্নাত স্ট্রবেরী এগিয়ে দিয়েছ – আমাদের আঙুলে লেগে গেছে লাল ছাপ। জিহ্বা দিয়ে চাটতে চাটতে আমরা সেই রঙ উপভোগ করেছি নিষিক্ত রাতে, আমার কার্পেটে – কখনো বা সবার ছেড়ে দেওয়া ড্রয়িং রুমে।

    “টুং শব্দে বোঝা যায় কাঁচের ভঙ্গুরতা
    বিকার
    অনুররণ শেষে তাই ক্ষীণ হাতে তুলে নিই টলটলে গ্লাস
    আজি আর রবিবার নেই – সেই ক্যানালের ধার
    সকালের
    সমস্ত গ্লাসেই লেগে থাকা রাতের তলানি
    এমনও হয় ভিভিয়ান তুমি এলে
    এই নোনা বাতাসে চিপসের দোকানগুলি
    অবাক হয়ে আমাদের বালু ঝরানো দেখতে দেখতে
    দয়ালু সূর্যের কথা ভাবে
    সারাটা দিন ঝিনুকের সাথে লেখাগুলি হয়ত থেকে যায়
    আর একটি রাতে যেখানে নোনা বাতাসেও ছিল সূর্যমুখীর গন্ধ
    সে তোমার বিনুনীর সুবাস
    আর সেই রবিবার নেই
    সবাই তো এমনই ফিরে আসে নদীর ধার হতে
    কোথাও এক নিশ্চুপ সন্ধ্যা নেমে এলে

    টেবিলেই জড়িয়ে যায় সিল্কের মসৃণতা
    স্যুপে ডুবতে ডুবতে এনামেল চামচগুলি
    তোমার ম্যানিকিওর নখের প্রতিবিম্ব গড়ে তোলে
    ক্লান্ত ইষ্টার সকালের ক্যানালের ধার
    আর নিহিত দিনগুলির অপেক্ষা
    তাই এমনও হয় ভিভিয়ান ভিজে ঠোঁট মনে করায়
    নোনতা স্বাদ কিংবা মৌনতা।!”

    নিশ্চিত হয়ে নিই যে আমি একই সাথে কবিতা ও ভিভিয়ান চর্চা করছিলাম, হয়ত সম ভাবে নয়। ক্যানালের ধার, ইষ্টার বিকেল, ইউনিভার্সিটি মাঠ সহ আরো অনেক কিছুই আমার চর্চার অঙ্গ ছিল। এক সময় মনে হয়েছে বুঝি তোমাকে পুরোপুরি জানা হয়ে গেছে, অন্তত একটা সার্থক কবিতা লিখতে যেটুকু দরকার। সার্থক কবিতা কাকে বলে? যখন তোমাকে পুরোপুরি জানা হয়নি ভিভিয়ান, তখন মনে হত, সার্থক কবিতার থেকেও কবিতা লেখাটা জরুরী – তোমাকে পুরোপুরি জানার থেকেও জানার চেষ্টা করাটা।

    সেই জানার চেষ্টার মধ্যেই নিহিত ছিল ভিজে ঠোঁট, সমুদ্রের নোনতা স্বাদ – রাতের করিডোরে আমাদের মৌনতা। মৌনতার মধ্যেই তোমার নখ প্রতিবিম্ব গড়ে তোলে – আমি যেমন দেখতে চেয়েছি, অনেকটা তেমনই। আজ আর আলাদা রবিবার নেই, যে রবিবার নিশ্চিত জানে বাড়িয়ে দেওয়া স্ট্রবেরীও কখনো কখনো কিভাবে ব্যর্থ হয়ে যায়।

    তোমার কবিতার ভিতরে সবসময় মেয়ে থাকে কেন?
    কবিতার ভিতরে মেয়ে? থাকে হয়ত, আমি তো ভিভিয়ানকেই লিখতে চেয়েছি –
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২১ জুলাই ২০১৫ | ৯৩২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • h | 213.132.214.156 (*) | ২১ জুলাই ২০১৫ ০১:৪৩69202
  • সত্যি সুন্দর হয়েছে লেখাটা। মানে কি জে সুন্দর হয়েছে। আমার খুব ই ভালো লেগেছে।
  • san | 113.245.14.197 (*) | ২১ জুলাই ২০১৫ ০৩:৩৮69203
  • ভাল লেগেছে।
  • সুকি | 129.160.188.174 (*) | ২১ জুলাই ২০১৫ ০৯:২৮69200
  • সরি, বুঝতে পারছি না যে বেশী তাড়াতাড়ি পোষ্ট করে ফেলছি কিনা হরিদাস পালে। যদি লেখা পোষ্ট ফ্রিকোয়েন্সির কোন নিয়ম থাকে প্লীজ জানাবেন।
  • pharida | 125.111.246.234 (*) | ২১ জুলাই ২০১৫ ১১:২৫69201
  • লেখা আসলেই পোস্ট করুন প্লিজ।

    ফ্রিকোয়েন্সি নিয়ে কোনো নিয়ম তো নেই।
  • sosen | 177.96.11.242 (*) | ২২ জুলাই ২০১৫ ১১:৫৯69204
  • সুন্দর, খুব সুন্দর
  • kumu | 132.161.49.45 (*) | ২৩ জুলাই ২০১৫ ০১:৫৬69206
  • খুব ভাল লাগল।খুবই।
  • kumu | 132.161.49.45 (*) | ২৩ জুলাই ২০১৫ ০১:৫৬69205
  • খুব ভাল লাগল।খুবই।
  • সুকি | 129.160.188.224 (*) | ২৪ জুলাই ২০১৫ ১১:২৯69207
  • ধন্যবাদ সকলকে।

    ফরিদা, লেখা এলেই পোষ্ট করি তো! কিন্তু কখন যে লেখা আসে সেটাই ঠিক নেই!
  • pi | 192.66.14.68 (*) | ২৬ জুলাই ২০১৫ ০৬:৩১69208
  • সুকির এই লেখাগুলো আমার আরো ভাল লাগে ঃ)
  • SOUMEN DAS | 160.242.148.66 (*) | ০৩ আগস্ট ২০১৫ ০৮:৫৫69209
  • ভালো লাগলো।
  • রিপন | 117.167.99.160 (*) | ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:০২69210
  • এককথায় অসাধারণ
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন