এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  বিবিধ

  • সুকিয়ানা – ১৫শ পর্ব (বিদেশ যাপন - রিচমন্ড হিল রোড)   

    সুকান্ত ঘোষ লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | বিবিধ | ০৭ নভেম্বর ২০২০ | ৩২৭৩ বার পঠিত | রেটিং ৪.৩ (৪ জন)


  • সেদিন ক্রিস আমাকে ওয়ার্ডেন অফিসে ডেকে পাঠালে ঢুকে দেখলাম বাকি কথাবার্তা প্রায় শেষ, ক্রিস এবার ফেঁদেছে তার সেই বিখ্যাত প্রশ্ন নতুন বোর্ডারের সামনে –

    “ক্লজ নাম্বার ৮টা ঠিক বুঝে নিয়েছো তো?”

    বলাই বাহুল্য আমাদের প্রত্যেককে, মানে যারা এই বাড়িতে থাকতে এসেছিলাম, তাদের সকলকেই এই প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয়েছিল প্রথম দিন। সেই ক্লজ্‌টা ছিল এই মর্মে যে ওই বাড়িতে থাকাকালীন বিবাহ সম্পর্কহীন শারীরিক ইন্টু-মিন্টুতে জড়ানো যাবে না! এবার প্রশ্ন উঠতে পারে যে ক্রিস আমাকে ডেকে পাঠাতো কেন আর এমন অদ্ভূত ক্লজেই সই করতে হত কেন সেই বাড়িতে থাকতে হলে! এটা জানতে গেলে একটু হালকা ব্যাকগ্রাউন্ড জেনে নিতে হবে বাড়িটির সম্পর্কে।

    ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে পড়াশুনা করার সময় আমরা এই বাড়িতে থাকতাম যার নাম ছিল ‘গ্রেস হাউস’ – অনেক পুরানো দিনের কাঠের বাড়ি। তবে সেই কাঠের বাড়িটার পূর্ণ ইতিহাস জানা হয়ে ওঠে নি। যখন সেখানে ছিলাম তখন বাড়ির ইতিহাসের থেকেও বাড়ির বাসিন্দাদের সাথে জড়িয়ে পড়াটাই অনিবার্য ও স্বাভাবিক বলেই মনে হয়েছিল। আজ যখন ফিরে দেখি, সামনের কম্পিউটার স্ক্রীণে ভেসে ওঠা কালো সাদা ডোরাকাটা কাঠের বাড়িটাও কেমন কাছে টেনে নেয়। এর আগেও এখানে লিখেছি সেই বাড়ি নিয়ে – কবিতা গদ্য “আমরা কাঠের বাড়িতে থাকি”। তাই পাত্র পাত্রীর নাম কিছু কমন চলে আসবে আজকের গল্পেও।

    বেসমেন্ট সমেত তিনতলা বাড়ি আর ওই তিনতলার মাঝের ঘরটায় থাকতাম আমি। এই বাড়িটা নাকি একসময়ে বার্মিংহামের এক বিখ্যাত কয়লা ব্যবসায়ীর ছিল। দু-আড়াইশো বছর ঘুরে কোন একটা চার্চকে দান করা হয়েছিল। সেই চার্চ বাড়িটাকে বিদেশী ছাত্রদের আবাসস্থল বানায় – একজন ওয়ার্ডেন, একজন পার্ট টাইম কর্মী ও বেশ কিছু ভলেনন্টিয়ার সমেত নন্‌-প্রফিটেবল্‌ অর্গানাইজেশন। সব মিলিয়ে আমরা থাকতাম প্রায় ২২টা বিভিন্ন দেশের ছেলে মেয়ে। আমি, যোসেফ, নোয়েল, সিজারী, ফউষ্টো আর কয়েকটা মাত্র ছেলে আর বাকি সব মেয়ে - ভিভিয়ান, জেন, আইরিন, ওলা, আইভি, রিয়া, কারমেন, লিডা, এলেন, অলিভিয়া, আমান্দা, টোমোয়ো, অ্যানা, জোসেফিন এবং আরো অনেকে।

    ওয়ার্ডেন ক্রিস থাকতো অন্য একটা বাড়িতে – যে কোন কারণেই হোক ক্রিস আমাকে প্রথম থেকেই খুব পছন্দ করত। এবং তাই স্বাভাবিক ভাবেই গ্রেস হাউসের ‘ফায়ার ওয়ার্ডেন’ হবার দায়িত্ব এসে পড়েছিল আমার ঘাড়ে। যদিও এই কাজটা রোটেশন বেসিসে হবার কথা – কিন্তু আমার কাজে খুশী হয়ে ক্রিস আমাকেই পার্মানেন্ট করে দিয়েছিল সেই রোলে! মাসে মাসে একটা সাম্মানিক দিত অবশ্য খামে ভরে। বলতে গেলে সেই বাড়িতে আমি ছিলাম ক্রিসের চোখ-কান – অন্তত ক্রিস তাই মনে করত! ক্রিশ্চিয়ান চার্চ দ্বারা পরিচালিত হবার জন্য ওদের কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হত – নিয়ম বলতে ‘মরাল’ ব্যাপার স্যাপার। যার মূল প্রতিবাদ্য ছিল অবিবাহিত ছেলে-মেয়ে যেন নিজেদের মধ্যে শারীরিক ইন্টু-মিন্টু-তে লিপ্ত হয়ে না পরে। প্লেটোনিক ভাব-ভালোবাসা ঠিক আছে, কিন্তু অবিবাহিত শারীরিক সম্পর্ক একদম চলবে না সেই বাড়িতে! ইন ফ্যাক্ট রেন্টাল কনট্র্যাক্টে সেই ক্লজ্‌টা লেখা থাকত “আনম্যারেড সেক্স ফরবিডেন ইন দিস হাউস”।

    নতুন ছেলেপুলে বাড়িতে থাকতে এলে ক্রিস আমাকে ডেকে পাঠাতো তার অফিসে সেই নতুন ছেলে বা মেয়েটির সাথে আলাপ করিয়ে দেবার জন্য। অফিসের দরজায় এমারজেন্সী কনট্যাক্ট নাম্বার ঝুলত – সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৬ টা ক্রিসের নাম্বার, আর বিকেল ৬টা থেকে সকাল ৮টা আমার নাম্বার। তো অফিসে গিয়ে দেখতাম ক্রিস নতুন বোর্ডার-কে বাড়ির নিয়ম বোঝাচ্ছে। পাতা তিনেকের কনট্র্যাক্ট – ক্রিস হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলত, পড়ে নিয়ে তারপর সই করো। কিন্তু ছাত্র অবস্থায় কে আর ক্লজ্‌ পড়ে! দেখতাম ক্রিস সবাইকেই বারে বারে জিজ্ঞেস করত, বলাই বাহুল্য সেই ক্লজ্‌টা ছিল শারীরিক ইন্টু-মিন্টুতে জড়ানো যাবে না!

    এবার আপনি প্রশ্ন করবেন, ক্রিস কি করে জানবে যে কে ইন্টু-মিন্টু করছে! সেই ব্যাপারটায় আমাকে চোখ রাখতে অনুরোধ করত ক্রিস, “সুকান্ত, তুমি রাতের দিকে একটু চোখ কান খোলা রাখবে। কেউ বেচাল দেখলেই আমাকে জানাবে, আমি উপযুক্ত স্টেপ নেব”। এবার আপনি ভাবছেন আমি ক্রিস-কে এই সব জানাতাম কিনা! পাগল নাকি – ক্রিসের সেই ক্লজ্‌ মেনে চলতে গেলে সেই বাড়ির অর্ধেকের বেশী বোর্ডার-কে পরের দিনই বের করে দিত হত! ঘটনা হচ্ছে বাড়িতে সবাই জানত যে আগুন-টাগুন লেগে গেলে বা ফায়ার এলার্ম ইত্যাদিতে মাঠে নেমে পড়া ছাড়াও, আমার আর একটা কাজ হচ্ছে ক্লজ্‌ নাম্বার ৮ ঠিক ঠাক মানা হচ্ছে কিনা সেটা দেখা। তো যদি কোনদিন সন্ধ্যা বেলা ল্যাব থেকে ফিরে কাউকে একটু বেশী আমার সাথে ফ্রেন্ডলি হতে দেখতাম – তাহলেই বুঝতাম, “আজ ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার” কেস হতে চলেছে!

    ইন্টু-মিন্টুর ব্যাপারে আমার অত মাথা ব্যাথা ছিল না – কিন্তু সিরিয়াস ছিলাম খুব আগুনের ব্যাপারটায়। পুরো বাড়িটাই কাঠের হবার জন্য, যদি সত্যি কারের আগুন লাগে, তাহলে হাতে সময় থাকে খুব কম। বি বি সি-র এর স্টাডি অনু্যায়ী, একটা কাঠের দোতলা বাড়িতে যদি আগুন লাগে তাহলে হাতে সাকুল্যে সময় থাকে মিনিট দশেক। এর পর ওই বাড়ি থেকে বেরোনো বা বাড়িটাকে বাঁচানো খুব চাপের। এই সব জানার জন্য যদি ফায়ার অ্যালার্ম বাজে, তাহলে আমাদের খুব স্ট্রিক্ট প্রসেস পালন করতে হত। এলার্ম বাজলেই সবাইকে বেরিয়ে বাইরের বাগানে ইভাক্যুয়েশন পয়েন্টে জড়ো হতে হবে। আমি বাসিন্দা-দের লিষ্ট নিয়ে রোল-কল করতাম – সবাই না থাকলে যে আসে নি তার ঘরে গিয়ে দেখা। আমার কাছে থাকতো মাষ্টার-কী, যা দিয়ে সব ঘরের দরজা খোলা যায়। সবাই চলে এলে আমার কাজ হত বোর্ডে গিয়ে দেখা কোন ফ্লোরের অ্যালার্ম বেজেছে এবং সেখানে গিয়ে দেখা সত্যি আগুনের কেস কিনা।

    বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই ফলস অ্যালার্ম হত – যেমন একবার একজনের মা তাইওয়ান থেকে এসে মেয়েকে বলে গেছে যে ঘরে ধূপ দেখাতে। তো সেই মেয়ে ঘরে ধূপ লাগিয়েছে কি ধোঁয়ায় অ্যালার্ম গ্যাছে অ্যাক্টিভেট হয়ে! তাকে গিয়ে বোঝানো যে, যদি ধূপ জ্বালাতে মন চায় তাহলে বৌদ্ধ বা চাইনীজ মন্দির বা নিদেন পক্ষে হিন্দু মন্দিরে যেও! আর সময় না থাকলে বাইরের বাগানে। আর একবার দেখা গেল ঘরের ভিতর রুম-হিটারের উপর কেউ জামা প্যান্ট মেলে দিয়েছে শুকাতে! তাই অ্যালার্ম। এই সব অনুসন্ধান করে আমাকে অ্যালার্ম ডি-অ্যাক্টিভেট করতে হত দরকার মত, স্পেশাল কোড ছিল – আর সেটা ক্রিস আর আমিই জানতাম কেবল।

    তবে বাড়িতে বেফালতু আগুন জ্বালিয়ে ফেলে এবং ধোঁয়া সৃষ্টি করে যে সবচেয়ে বেশী সন্ত্রাসের সৃষ্টি করত সে আর কেউ নয়, চীনের মেয়ে ইয়ং চুঙ ডং। সেই একমাত্র চাইনীজ মেয়ে যার কোন ইংলিশ নাম ছিল না। ফলে আমাদের সবাইকে ওই অত বড় নাম ধরে ডাকতে হত। মেয়ে ভালো, যোসেফের ল্যাবেই করতে এসেছিল মাষ্টার্স – সেই প্রথম তার দেশের বাইরে আসা। তাই যোসেফের সুপারভাইজার বলে দিয়েছিলেন যোসেফকে যে মেয়েটাকে একটু গাইড করতে আর যতদিন না মানিয়ে নিতে পারে, একটু চোখে চোখে রাখতে। বলাই বাহুল্য যোসেফ খুবই আনন্দের সাথে লেগে পড়েছিল সে কাজে – প্রায় গায়ে গায়ে লেগে থাকত ইয়াং চুঙ-এর। সেই মেয়ে ভালো রান্না জানত না – কিন্তু বাড়ি থেকে একগাদা এই সব চাইনীজ খাবার এনেছিল। একদিন রান্না করতে করতে গরম তাওয়ায় দেশ থেকে আনা মাল ঢেলেছে কি, জ্বলে উঠেছে আগুন – ঠিক যেমন ভাবে গরম তাওয়ায় ওয়াইন বা অ্যালকোহল ঢাললে হয়। চাইনীজ স্পেশাল সসেজ ছিল নাকি সেটা – যোসেফ ছিল পাশেই, আগুন লেগেছে কি ইয়াং চুঙ-কে জাপটে ধরে আগুনের পাশ থেকে টেনে আনা। এর পর পাশের ফায়ার ব্ল্যাঙ্কেট দিয়ে আগুন নেভানো। এই ভাবেই সপ্তাহে দুই-তিন বার মিনিমাম আগুন লাগিয়ে ফেলত রান্না ঘরে! আমি যোসেফকে বললাম, এই ভাবে ফায়ার ব্ল্যাঙ্কেট যদি তুই নষ্ট করিস, তা হলে এবার থেকে তুই কিনে দিবি। তার থেকে তুই বরং ইয়াং চুঙ-কে রান্না শেখা। যোসেফের মনে ধরল কথাটা – সে শেখাতে লাগলো এর পর থেকে মেয়েকে মলটীজ্‌ রান্না!

    আমি কোনদিন রাতের বেলা ক্রিসকে ডাকি নি অ্যালার্ম বাজলেও, নিজেই শর্ট আউট করতাম। বিনা ডিসটার্বন্সে ভালো ঘুমাতে পারতো বলে ক্রিস আমাকেই রেখেছিল সেই ডিউটিতে! আমি পেতাম তখনকার দিনে ৩০ পাউন্ড একটা ফলস অ্যালার্ম হ্যান্ডেল করার জন্য। সেবার পুজোর ছুটিতে বাড়ি আসব, ক্রিস জিজ্ঞেস করল তাহলে টেম্পোরারী ফায়ার ওয়ার্ডেনের ডিউটি করবে কে? আমি বললাম যোসেফকে দিয়ে দিন দায়িত্ব, আমার পাশের ঘরেই তো থাকে – প্রবলেম নেই! বাড়ি ফেরার পর সবে এক সপ্তাহ হয় নেই, ইংল্যান্ড থেকে ক্রিসের ফোন – “তুমি কবে ফিরছ? এই যোসেফ এক সপ্তাহে তিন বার ফায়ার অ্যালার্ম কেস করে বসে আছে – আর একদিনও নিজে কিচ্ছু করতে পারে নি, রাতের বেলা আমাকে ফোন করা ছাড়া!” যোসেফের দ্বারা যে এই ডিউটি হবে না সেটা আমিও জানতাম – একটু মসকরা করে ছিলেম ক্রিসের সাথে! তবে সেটা ওকে বলি নি!

    গ্রেস হাউসের ডাইনিং রুম কাম ড্রয়িং রুম কাম টি ভি রুমটি ছিল বিশাল। কলকাতার মাপে একটা থ্রি-বেডরুম লাক্সারি ফ্ল্যাট স্বচ্ছন্দে এঁটে যাবে সেই জায়গায় – আর বোম্বের মাপে তিনটে টু-বেড রুমের ফ্ল্যাট! এত বড় হবার জন্য দুটো দরজা ছিল সেই রুমের। এক শুক্রবার রাতে আমরা সব সেই রুমে বসে সিনেমা দেখছিলাম – সিনেমা সবে শেষ হয়েছে – সামনে তখনো কিছুটা পরে আছে জেনের বানানো কেক। সেটাও শেষ হয়ে যাবে আর খানিক ক্ষণের মধ্যে। সেদিন দেখেছি শন পেনের কোন একটা ডিপ্রেসিং সিনেমা – একটু চুপচাপ আছে মার্কেট। এমন সময় শুনলাম সিঁড়ি দিয়ে পায়ের আওয়াজ – কাঠের বাড়ি হবার জন্য হাঁটাচলা করলে আওয়াজ হত। পায়ের শব্দের সাথে শোনা গেল কে যেন গাইতে গাইতে আসছে, “কান্ট্রি রোড – টেক মি হোম”। সেই গান শুনেই কয়েকজন তড়াক করে লাফিয়ে উঠল – বলল, “এই রে গফি আসছে” – এবং দুরদার করে পিছনের দরজা খুলে হাওয়া।

    আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না কি হচ্ছে – রাত এমন কিছু হয় নি, বারোটা-সাড়ে বারোটা মাত্র! ভাঁট তো সবে শুরু হবে – এখন পালাচ্ছে কেন! আজ বুঝতে পারি কেন পালিয়েছিল তারা! আমি, জেন, যোসেফ, আইরীণ, ভিভিয়ান এবং আরো দুচার জন রয়ে গেলাম। পা দিয়ে দরজা ঠেলে এক বগলে গিটার এবং আরেক বগলে একটা এক লিটারের মদের বোতল নিয়ে ঢুকলো থাইল্যান্ডের ছেলে গফি। গফি-কে আমি চিনতাম না এমন নয়, আমি ভালোভাবে তখনো কেবল চিনতাম দিনের গফি-কে। যে গফি ইউনিভার্সিটি যায় বেলায়, রাতে রান্না করে – বিকেলে আমাদের সাথে ফুটবল খেলতে যায়। যাঁরা ফুটবল ফলো করেন, বিশেষ করে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ, তাঁদের জানিয়ে রাখি থাইল্যান্ডে লিভারপুল খুবই জনপ্রিয়। এবং প্রায় সব থাইল্যান্ডের ছেলেরাই লিভারপুলের ফ্যান। গফি যে ভালো ফুটবল খেলতো এমন না, কিন্তু কেতের ঠেলায় অস্থির – ফুটবল জুতো রাখার হ্যান্ড ব্যাগ, জার্সি রাখার ব্যাগ – এনার্জি সাপ্লিমেন্ট ইত্যাদি নিয়ে সে খেলতে যেত আমাদের সাথে। তো যাই হোক রাতের গফির সাথে সেদিনের আগে ভালো আলাপ হয় নি। যা বুঝতে পারলুম, শুক্রবারের সিনেমায় গফির কোন আগ্রহ নেই – না আছে আগ্রহ কেক-পেষ্ট্রিতে। কিন্তু গান গাইতে এবং মদ খেতে গফি খুব ভালোবাসে। তাই শুক্রবার রাতে সিনেমা শেষ হবার টাইম অনুমান করে গফি নেমে আসে তার ঘর থেকে গীটার এবং মদ নিয়ে। এবার শুরু হবে গফির গান এবং তার সাথে মদ্যপান।

    গফি একদম বাজে গান করত – একটু ঝাক্কাস টাইপের গান যদিও চলে যেত, কিন্তু স্লো স্পীডের গান শুনলে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠত, এত বাজে গাইত। কিন্তু ওই যে – ইল্যুউশন, যে জিনিস যে পারে না, সেটাই সবচেয়ে ভালো পারে সে বলে মানুষ বিশ্বাস করে! গফি আবার নিজে থেকেই ঠিক করে বিরহের গানে স্পেশালাইজ করেছিল – তখনো তার বিয়ে হয় নি। ব্যর্থে প্রেমের গান গেয়ে মানুষকে তিতি বিরক্ত করে তুলেছিল। কিন্তু ছেলে এত ভদ্র এবং মধুর প্রকৃতির যে কেউ গান গাইতে বারণ করতে পারত না – সেই জন্যই আগেই অলিভিয়া, এলেন, ওলা সবাই কেটে পরেছিল! অন্য কেউ গান শুনতে চাইছে না – নিজেদের মধ্যে গল্প করতে চাইছে, কিন্তু গফি নাছোড়বান্দা – একদম গায়ের উপর এসে ঝুলোঝুলি। যত মাতাল হবে, বিরহের গান তত গভীর হবে। এবং সেই এক লিটারের বোতল শেষ না হওয়া পর্যন্ত চলতেই থাকবে গান! অবশ্য সে একাই খেত না মদ – ওই বোতলটা সে সবার জন্যই আনত। গফি নিজে সেই মদ খেত ভালোবেসে আর অন্যরা খেত গফির গান টলারেট করার জন্য! নেশা না হলে সেই গান বেশীক্ষণ টলারেট করা চাপ ছিল, পাবলিক প্লেস হলে এতদিনে খুনোখুনি হয়ে যেত!

    একদিন বাড়িতে সব বসে গল্প করছি রাতের বেলা – বেশ রাত হয়ে গেছে। গফি থাইল্যান্ড গেছে ছুটি কাটাতে। এমন সময় যোসেফের কাছে ফোন এল, ফোনে কথা শেষ করে আমাকে বলল, “সুকি চল, এয়ার পোর্ট যেতে হবে”। বললাম, “এত রাতে এয়ারপোর্ট কেন যাব?” যোসেফ জানালো, গফি বার্মিংহাম এয়ারপোর্টে এসে বসে আছে। আমি বললাম, “তা ট্যাক্সি নিয়ে চলে আসতে বল”! কিন্তু বোঝা গেল গফির নড়ার ক্ষমতা নেই – হয়েছে কি থাই এয়ারওয়েজ এর ইকনমি ক্লাসেই ফিরছিল সে। কোন এক কারণে, লটারি বা লাকি ড্র যাই হোক, গফি আপগ্রেড হয়ে গেছে বিজনেস ক্লাসে। এবং বিজনেস ক্লাসে উঠেই সে মদ খাওয়া শুরু করেছে, কারণ মদ দিচ্ছিল আনলিমিটেড। সেই দীর্ঘ ফ্লাইটে গফি এত মদ খেয়েছে যে প্রচুর মাতাল হয়ে গেছে, দাঁড়াবার ক্ষমতা নেই! ট্যাক্সি স্ট্যান্ড পর্যন্ত যাবার নাকি ক্ষমতা নেই – লাগেজের উপর শুয়ে আছে গেটের ঠিক বাইরে! কি আর করা, অত রাতে যোসেফের সেই বিখ্যাত গাড়িতে গিয়ে তুলে আনতে হল গফিকে এয়ারপোর্ট থেকে। ভাগ্যভালো যে সেদিন আর পুলিশ ধরে নি আমাদের! যোসেফের মুখ থেকেও খুব একটা সুবাস বেরুচ্ছিল না!

    আমার ভাগে পড়ত ইন্ডিয়ান সিনেমা যোগাড় করার ভার। আর সেই কাজে আমার প্রধান সাপোর্ট ছিল বার্মিংহাম সিটি লাইব্রেরী। যাঁরা জানেন না, তাঁদের উদ্দেশ্যে বলি, লন্ডন ছাড়া সবচেয়ে বেশী উপমহাদেশীয় লোক বাস করে ইংল্যান্ডের যে দুটি শহরে তারা হল ম্যাঞ্চেষ্টার এবং বার্মিংহাম। বাই দি ওয়ে, আপনারা যে এডজবাষ্টেন ক্রিকেট গ্রাউন্ড দেখেন টিভিতে, সেটা আমাদের ইউনিভার্সিটির একদম পাশেই – ইন ফ্যাক্ট মাঠ থেকে ক্যামেরা ঘুরিয়ে যখন আশপাশ দেখায়, তখন আমাদের ইউনিভার্সিটির বিখ্যাত ক্লক-টাওয়ারটাও দেখা যায়।

    বার্মিংহাম সিটি লাইব্রেরীতে একটা খুব বড় সেকশন ছিল হিন্দী সিনেমার – ভারত ছাড়াও সমস্ত উপমহাদেশীয় লোকেদের এমনকি মিডিল-ইষ্ট এবং আফ্রিকার এক অংশের কাছেও খুব জনপ্রিয় ছিল বলিউডের সিনেমা। লাইব্রেরীর কার্ড থাকলে বই ফ্রী-তে নেওয়া গেলেও সিনেমার ডি ভি ডি (তখনো ব্লু-রে আসে নি তেমন) রেন্টে নিতে হলে ১ পাউন্ড করে লাগতো এক সপ্তাহের জন্য। নিউ রিলিজ হলে মনে হয় ২ পাউন্ড ছিল। সেখান থেকেই একের পর হিন্দি ব্লকবাষ্টার দেখিয়েছি গ্রেস হাউসের পাবলিকদের। মানুষের মনের মতি গতি বোঝা দায় – তাই কোন বিশেষ কারণে শাহরুখ খানের প্রায় সব সিনেমাই চলেছিল সেই বাড়িতে। ম্যায় হু না জনপ্রিয় হয়েছিল, কাল হো না হো। অন্যসিনেমার মধ্যে ছিল “হাম-তুম” – আর ব্লকবাষ্টার জনপ্রিয় হয়েছিল “সালাম নমস্তে”। এটা হেলেনের এত পছন্দ হয়েছিল যে, আমি ভারত থেকে সি ডি কিনে নিয়ে গিয়ে ওকে দিয়েছিলাম।

    তেমন একদিন নিয়ে এলাম সিনেমা “দেবদাস” – আমি বারে বারে সতর্ক করলাম যে, এই একটা সিনেমার দৈর্ঘ্য তিনটে ইংরাজী সিনেমার দৈর্ঘ্যের সমান! কিন্তু কে শোনে কার কথা! বলল, “আমাদের আর কি তাড়াতাড়ি! সারা রাত তো পরে রয়েছে”। আমি বললাম তাহলে আজকে বেশী করে কেক আর অন্য পানীয় চাই। তাই হল – গোটা দশেক মেয়ে আর আমি, সিজারী ও যোসেফ ছেলেদের মধ্যে দেখতে শুরু করলাম। খানিক দেখেই যোসেফ বলল, “সুকি এ অত্যন্ত বোরিং সিনেমা, তুই কিছু মনে করিস না – আমি সোফাতেই শুয়ে পড়ি। সিনেমা শেষ হলে তুলে দিস, আবার ভাঁট মারা যাবে”। সিনেমা চলছে – মেয়ে গুলোর চোখের পাতা পড়ছে না। এক সময় একজন দেখলাম দৌড়ে বাইরে গেল, ফিরে এল মুহুর্তে হাতে ট্যিসু পেপার নিয়ে! যা বুঝলাম, কিচেন থেকে গিয়ে ট্যিসু পেপার দিয়ে এল। সেই ট্যিসু পেপার সে শেয়ার করল জেন ইত্যাদিদের সাথে – শাহরুখ যত দেবদাস হচ্ছে, মেয়েরা তত কাঁদছে! ট্যিসু ফুরিয়ে গেল হাতের একসময় – একজন বলল, বার বার না গিয়ে কিচেন থেকে ট্যিসুর রোলটা নিয়ে চলে আয়। তাই হল! রোল থেকে ছেঁড়া হচ্ছে ট্যিসু, আর জমা হচ্ছে পাশে ভিজেগুলো!

    একসময় সিজারী বলল, “এই রে, আমাকে একবার ল্যাবে ছুটতে হবে। মনে হচ্ছে একটা এক্সপেরিমেন্ট বন্ধ করতে ভুলে গেছি”। মেয়েরা এত ডুবে আছে সিনেমায় যে কেউ শুনতে পেল না সিজারীর কথা – আমি সিজারীকে বললাম, “তাহলে কি সিনেমাটা পজ্‌ করতে বলব, তুই ল্যাব থেকে চট করে ঘুরে আয়!” সিজারী বলল, “না না, পজ্‌ করার কিছু নেই – আমি আগের ইন্ডিয়ান সিনেমায় দেখেছি ৪০-৫০ মিনিট মিস করলেও বুঝতেও কিছু অসুবিধা হয় না”! তাই হল সেদিন – সিজারী ৪৫ মিনিট পর ল্যাব থেকে এক্সপেরিমেন্ট বন্ধ করে – এবং সে মূল জিনিস কিছুই মিস করে নি! শুধু “ডোলা রে ডোলা” গানটা ছাড়া – ওটাই তো মিনিট ২৫ ধরে হল!

    সিনেমা শেষ হল – সবার মুখ থমথমে, চোখ লাল। সেদিন রাতে আর বাকি আড্ডা জমল না – যোসেফে ঘুম থেকে তুললাম, আর আড্ডা হবে না শুনে যোসেফ দেবদাসের উপর খুব রেগে গেল। মেয়েরা আমাকে বলল, “সুকি, এই শাহরুখ খান শেষে মরে যাবে না, পরের বার তুই এমন সিনেমা আনবি। আগের দিন কি একটা সিনেমা আনলি (কাল হো না হো), সেটাতেও মরে গিয়েছিল”! আর যদি এমন সিনেমা আনি, তাহলে আমাকে কেক-পেষ্ট্রি দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেওয়া হল। আমি ভাবতে ভাবতে ঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম – শাহরুখের কোন সিনেমা ভালো হবে যেটাতে শেষে সে মরে যাবে না!

    পরের পর্ব যদি লিখি তাহলে আসতে পারে আরো সিনেমার গল্প – বা ভিভিয়ানের ডিজাইন করা জুয়েলারির ব্যাপার বা জাপানি টোমোয়োর ইন্ডিয়ান ওয়েডিং এর উপর রিসার্চ করার কথা – বা ফিরে আসতে পারি শুধুই খাবারের গল্পে – নোয়েলের সাথে লাসানিয়া বানানো – বা পানীয়ের গল্পে – দেখা যাক কি হয়!
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ০৭ নভেম্বর ২০২০ | ৩২৭৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বিপ্লব রহমান | ০৭ নভেম্বর ২০২০ ১০:৩৮99711
  • শাহরুখ মরবে না, এমন সিনেমা? হা হা হা :) 


    আসলে বোর্ডার দর্শকদের বোধহয় অধিকাংশই এশিয়ান। আর এশিয়ানদের মুড তুলনামূলকভাবে একই। 


    খুবই উপভোগ্য স্মৃতিচারণ। আরও লিখুন 

  • বিপ্লব রহমান | ০৭ নভেম্বর ২০২০ ১০:৪১99712
  • পুনশ্চঃ বন্ধু বোর্ডার দলবলসমেত দু-একটি ছবি লেখায় যোগ করলে ভালোর চেয়ে ভালো হতো। 

  • সুকি | 146.196.45.87 | ০৮ নভেম্বর ২০২০ ১০:২৯99752
  • বিপ্লব, ধন্যবাদ। শুধু এশিয়ান নয়, প্রচুর ইউরোপিয়ান ছিল, আমেরিকানও। ছবির ব্যাপারটা ভালো বলেছেন, আছে ছবি, কিন্তু এডিট করতে পারছি না এই লেখাটি!

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে প্রতিক্রিয়া দিন