এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  শনিবারবেলা

  • সুকিয়ানা – ১৮ পর্ব (গাজন)

    সুকান্ত ঘোষ
    ধারাবাহিক | ১০ এপ্রিল ২০২১ | ৩২৯১ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
  • খুঁজে পেলাম এই ছবিটা প্রায় তিরিশ বছর আগের। আমাদের ঘোষ বাড়ির দুই জন সেবারে সন্ন্যাসী হয়েছিল।

    হইহই করে নিমোতে শিবের গাজন শুরু হয়ে গেছে যখন আপনি এই লেখাটা পড়ছেন। কিন্তু এটা লেখার সময় আমার কাছে অনেক কিছু এখনও পরিপূর্ণ ক্লিয়ার নয় মূলত করোনা সমস্যার জন্য। বাংলার ভোটে কে জিতবে সেই ধোঁয়াশার মতোই এবারের নিমোর গাজন কতটা জাঁকজমকের মধ্যে দিয়ে সম্পন্ন হবে তা সঠিক ভাবে অনুধাবন করতে পারছি না। তবে যা হাওয়া বুঝছি, প্রবল ভাবেই এবারের গাজন হবে।


    যে প্রশ্নগুলোর জবাব সঠিক জানি না এই মুহুর্তে সেগুলি হলঃ

    • এবারের গাজনে ঠিক কত জন সন্ন্যাসী হচ্ছে
    • গ্রামে লোকজনের বাড়ি আত্মীয়-কুটুম কেমন এল
    • গাজনের প্রথম দুই দিন ফাংশন হবে কি
    • ফাংশন হলেও বাইরে থেকে অর্কেষ্ট্রা পার্টি আসবে নাকি ঘরের ছেলে দিবাকরের গলাতেই বহু শোনা কিশোর কুমারের গান আবার শুনতে হবে!
    • আলি-র জুয়ার বোর্ড এবারেও বসবে নাকি ভোটের এফেক্ট আসবে পুলিশ মারফত

    খুব তাড়াতাড়ি জানতে পেরে যাব, এবং জনতার উৎসাহ থাকলে পরের সপ্তাহে পরিপূর্ণ আপডেট দেওয়া যেতেই পারে এবারে কী হল সেই নিয়ে।

    এবার একটু ব্যাকগ্রাউন্ড দিয়ে দেওয়া যাক, যাতে আপনাদের নিমোর গাজনের কেসটা ধরতাই-এ সুবিধা হয়। গাজন-ই হল নিমোর সবচেয়ে বড়ো উৎসব–জাঁকজমক থেকে শুরু করে ব্যস্ততা এবং লোকজনের বাড়ি কুটুম আসা সব কিছুতেই এইসময় বাড়াবাড়ি। মোটমাট বছরের শেষ চারদিন জুড়ে এই গাজন–মহাহবিষ্যি, ফল, নীল এবং সংক্রান্তি। এবং মহাহবিষ্যি-র আগের দুই দিন চলে ‘কামান’–মানে গঙ্গার ঘাটে গিয়ে ক্ষৌরকর্ম করে আসা। আমাদের দিকে ত্রিবেণী পপুলার গঙ্গার ঘাট হিসেবে। ট্রেনে করে নিমো থেকে মগরা—এবং সেখান থেকে ট্রেকার/বাসে করে ত্রিবেণী–বহুদিন ধরেই এটা চলে আসছে। একবার ক্ষৌরকর্ম করে এলে আপনি টেকনিক্যালি শিবের সন্ন্যাসী হয়ে গেলেন—আর বাড়িতে শুতে পারবেন না। যেদিন কামিয়ে আসবেন গঙ্গার ঘাট থেকে সেদিন থেকেই শিবমন্দির চত্ত্বরে রাতে শোয়া শুরু। সংক্রান্তির পরের দিন (মানে পয়লা বৈশাখ) পুকুরে স্নান করে পৈতে বিসর্জন দিয়ে আবার বাড়িতে ফেরা।

    গতবারে করোনার কারণে গাজন হয়নি, সব লকডাউন ছিল। কেবলমাত্র টিমটিম করে দুজন সন্ন্যাসী হতে হয় বলে হয়েছিল—এটা নাকি নিয়ম, যাদের বলা হল নীলে আর মূলে। তো গতবার গাজনের চারদিনের দু-দিন রাতে বিশাল ঝড়ে কারেন্ট ইত্যাদি ছিল না, আর এদিকে জমকালো উৎসব হচ্ছে না বলে জেনারেটর ভাড়া করা হয়নি। ফলে ওই দুই সন্ন্যাসী, বিটু আর উদয় ঘুটঘুটি অন্ধকারে শিবতলায় শুয়েছিল প্রবল গরমে আর বিশাল মশার কামড় খেয়ে। মশার কামড় খেয়ে এত খিস্তি দিচ্ছিল দুজনে শিব দুয়ারে যে সেই খিস্তি রাতের বেলায় নিঃস্তব্ধতার জন্য বহু দূর শোনা যাচ্ছিল। কোনো এক গুরুজন থাকতে না পেরে নাকি বলতে এসেছিল, “এই তোরা সন্ন্যাসী হয়ে ঠাকুরদুয়ারে বসে এত মুখখারাপ করছিস, এই চারটে দিন মুখখারাপ না করলেই কি নয়!” একজন এর উত্তরে বলেছিল, “তাহলে তুমি কাকা আমাদের পাশে বসে হাতপাখা করে মশা তাড়াও—আমরা একটু ভালোভাবে ঘুমাই। তা ছাড়া একাজ করলে তোমার পুণ্যও হবে।” আর-একজনে বলেছিল, “তুমি কাকা বাঁড়া রাতের বেলায় জ্ঞান দিতে এস না—পারলে মশাগুলোকে শেখাও যেন শিবের চ্যালাদের এই চারদিন না কামড়ায়!”

    তো যাইহোক, এবারে যা শুনলাম গতবারের সন্ন্যাসী না হবার সব কিছু এবারে পুষিয়ে যাবে। প্রচুর ছেলেপুলে লাইন দিচ্ছে সন্ন্যাসী হবার জন্য। এমনকি ঘোষপাড়ার উৎপলদার ছেলে পান্না, যার কিনা গাল টিপলে দুধ বেরুবে সেও বলছে সন্ন্যাসী হবে! আমাদের গ্রামে বয়সের কোনো কাট অফ নেই—তাই যে খুশি বলছে হব। ছেলেরা পান্নার সাথে ইয়ার্কি মেরে বলেছে, “পান্না, সন্ন্যাসী হব বলেই তো আর হওয়া যায় না! তুই কাল খুব ভোরে আধারকার্ড নিয়ে গিয়ে পালপাড়ায় কানুদার বাড়ির সামনে লাইন দিয়ে নাম লেখাবি”। কানুদা রাতের বেলা কোল্ডস্টোরে আলু ভরে অনেক রাতে বাড়ি ফিরে ঘুমিয়েছে, এদিকে পান্না সিরিয়াসলি ব্যাপারটা নিয়ে ভোর চারটের সময় কানুদার বাড়ি গিয়ে হাঁকাহাঁকি। “জ্যাঠা, ও জ্যাঠা—দরজা খোলো, নাম লেখাব!” কানুদা রেগে ফায়ার—জুতো মারতে বাকি রেখেছিল মনে হয় শুধু।

    আমাদের গ্রামের ছেলেছোকরাদের মধ্যে মনে হয় আমিই কেবল সন্ন্যাসী হইনি কোনোদিন! এবারে শুনলাম অনেক নতুন ছেলে প্রথমবারের জন্য সন্ন্যাসী হতে যাচ্ছে—পান্না, নটা, বুবাই আরও গোটাকতক। আবার সন্ন্যাসী হায়ার করতে পারেন—যেমন ধরুন আপনি শিবের কাছে কিছু ব্যাপারে মানসিক করলেন যে “বাবা, এই ইচ্ছাপূরণ হলে তোমার কাছে সন্ন্যাসী হব”—ইমোশনাল হয়ে তো মানসিক করে দিলেন, কিন্তু পরে ভেবে দেখলেন আপনার বাড়িতে সন্ন্যাসী হবার মতো কেউ নেই! তখন কী হবে! শিবের সাথে মানসিক ব্যাপারে কথার খেলাপ করবেন এই বুকের পাটা নিশ্চয়ই আপনার হয়নি! ফলে তখন আপনাকে সন্ন্যাসী হায়ার করতে হত—কাউকে বলতে হত, “ভাই, আমার হয়ে একটু সন্ন্যাসীটা করে দেনা”—এইবারে শুনলাম সাউন্ডম্যান মিলন তেমন হায়ারিং-এ সন্ন্যাসী হচ্ছে।

    নিমোর গাজন জনপ্রিয় হলেও একসময় উঠল প্রবল জনপ্রিয়। জনপ্রিয় হবার মূল কারণ হচ্ছে সব গ্রামে গাজন হয় না। দুর্গা পুজো সব গ্রামে এবং সব জায়গাতেই হয় বলে তেমন কেউ গ্রামে আর কুটুম আসে না কেবল মাত্র আমাদের বাড়ি ছাড়া। নিমোতে দুইখানা মাত্র দুর্গাপুজো হত (কিছু বছর আগে থেকে নিমো বটতলার কাছে জি টি রোডের পাশে আর-একটা পুজো চালু হয়েছে)—একটা বারোয়ারি তলায় আর একটা আমাদের বাড়িতে, মানে ঘোষ বাড়ির। তাই দুর্গাপুজোর সময়ে আমাদের বাড়িতে কুটুমে কুটুমে ছয়লাপ হয়ে গেলেও, সমগ্র গ্রামে তেমন কোনো অতিথি এফেক্ট দেখা যেত না। ফলে যা কিছু কুটুমের ইন-ফ্লাক্স এই শিবের গাজনে।

    গ্রামের মূল কেন্দ্রে বেশ কতগুলো মন্দির নিয়ে গড়ে উঠেছে বারোয়ারি তলা। এর মধ্যে বুড়ো শিবের মূলমন্দির সহ শিবের আরও তিনটে ভেরিয়েন্ট নিয়ে মোট চারটে শিবের মন্দির। একটা দুর্গা ঠাকুরের চালা—আর একটা মনসা এবং রক্ষাকালী। বুঝতেই পারছেন শিবেরই আধিক্য, তাই গ্রামের বারোয়ারি তলাকে সাধারণত আমরা শিবতলা-ই বলতাম। শিবের মন্দির আমি যতদিন দেখে আসছি ততদিন পাকা ঘর ঢালাই দেওয়া হলেও, তার সামনের আটচালাটা ঢালাই করা ছিল না। মেঝে পাকা হলেও, মাথায় ছিল টিনের চাল। প্রবল চৈত্রের গরমে এর তলায় দাঁড়িয়ে শিবের পুজো দেখা যে কি চাপের, সে যারা অনুভব করেছেন তারাই বলবেন।

    বেশ কয়েকবছর আগে আরও মাথায় এল যে বাবা বুড়োশিবের মন্দিরটা এবং তার সাথের আটচালাটা পাকা মোজাইক ইত্যাদি কেতের করতে হবে। এই সব হুজুকে ব্যাপারে ঝাঁপিয়ে পড়ার লোকের অভাব হয় না! ক্রাউড ফান্ডিং শুরু হয়ে গেল—কেউ বাবার নামে, কেউ দাদুর নামে, কেউ মায়ের নামে এই ভাবে ডোনেশন দিতে থাকল। নিমোর মেয়েরা যাদের বাইরে বিয়ে হয়ে গেছে, তাদের কাছেও হাত পেতে পৌঁছে যাওয়া হল। বেশ কিছু লাখ টাকা উঠে সেই বুড়োশিবের চত্বর ঢেলে সাজানো হল—এখন গেলে মোজাইক টাইলস্‌ বসানো, মাথায় ঝাড়লণ্ঠন, ফ্যান ঝুলছে—সকাল বিকেল মন্দিরে লাগানো সাউন্ড বক্সে ভক্তিমূলক গান চলে। অনেকে আবার বলল এই ভাবে টাকা দেব না, কিন্তু লাইটিং খরচ দেব, কেউ বলল বারান্দার গ্রিল দেব—এইভাবে দারুণ জিনিস দাঁড়িয়েছে আজকাল।

    সেই তুলনায় মা দুর্গা বেশ বঞ্চিতই রয়ে গেছেন—মাত্র গতবার টিনের চালের মা-দুর্গা মন্দির ফেলে নতুন ঢালাই দেওয়া পাকা মন্দিরের আয়োজন শুরু হয়েছে। বিশাল নতুন মন্দিরের অনেকখানি হয়েছে, কিন্তু আপাতত পয়সা খতম—অনেক চেয়ে চিন্তে গত সপ্তাহে মেঝেটা ঢালাই হল। দেখা যাক ছাদ ঢালাইয়ের পয়সা কবে আসে।

    আর অন্যদিক থেকে দেখলেও মা দুর্গার অর্থনৈতিক অবস্থা শিবের থেকে খারাপ আমাদের গ্রামে। বারোমাসের শিবের পুজো-টেক কেয়ার এবং গাজন হয় দেবোত্তর সম্পত্তি থেকে। বেশ কিছু বিঘে জমি আছে সেখাই থেকেই খরচা উঠে যায়। সেই পুরানো দিন থেকে কোনো এক কারণে এই দেবোত্তর জমিগুলি চাষবাস দেখভাল করে পালপাড়ার জ্ঞাতি কয়েকভাই। অনেক আগে নিমোর গাজনে বিশাল জাঁকজমক হত না—কিন্তু আন্তরিক ভাবেই পুজো হত। এক সময় নিমোর বিখ্যাত সব জ্যাঠাদের কারও মাথা থেকে বেরুল, ওয়েট—এত বিঘে দেবোত্তর সম্পত্তি থেকে যা ইনকাম হবার কথা তাতে করে তো বাবা বুড়োশিবের সেবা আরও ভালো হবার কথা! আগে যে কানুদার কথা লিখেছি—তাদের পরিবারই এই জমির দেখভাল করত। সেই জ্যাঠা নিজের ক্যালকুলেশন গ্রামের আরও সবাইকে জানাল—সেই মতো একদিন চড়াও হওয়া গেল কানুদাদের বাড়ি। গ্রামের পাবলিকের দাবি যে শিবের গাজনে আরও জাঁকজমক বাড়াতে হবে। শিবের জমি থেকে ইনকাম বেশি যাচ্ছে জ্যান্ত শিবেদের ভুঁড়িতে—কেউ বলল, “তোমরা সরটা খাচ্ছ খাও, কিন্তু দুধের একটু তো বাবা বুড়োশিব-কে দেবে!” পাশের কেউ কারেক্ট করে দিল, “বাংলা জানিস না ঠিকঠাক, বলতে আসিস কেন! হ্যাঁ কানুদা, যা বলতে চাইছি আমরা—তোমরা দুধটা খাচ্ছ খাও, কিন্তু সরটা বাবা বুড়োশিব-কে দাও অন্তত!”

    কানুদা দাবি শুনে কনফিউজ—জানতে চাইল, “আরে আমাকে ঠিক কী দিতে হবে বলো—সর না দুধ!” সে এক ফালতু ফেঁসে যাওয়া অবস্থা। পাশ থেকে একজন ঠেলে এগিয়ে এল—“এত গাধাকে নিয়ে আলোচনায় আসাই ভুল হয়েছে। তা কানু, আমাদের দাবি চার দফা—গাজনের চারদিন ব্যান্ড পার্টি করতে হবে, নীলের দিন কদম-গাছ ফাটাতে হবে, লাইট এবং জেনারেটর এর ব্যবস্থা এবং সন্ন্যাসীদের ভালো খাওয়াদাওয়া।” কানুদা বলল—“আমি মরে যাব—এত ইনকামই হয় না।” পাবলিক সমস্বরে বলল, তাহলে জমি ছেড়ে দাও। কিন্তু কানুদা জমি ছাড়তে রাজি নয়, কারণ ইনকাম তো ভালোই! অনেক টালা বাহানার পরে চার দফা দাবিই মেনে নেওয়া হল। জাঁকজমকের সেই শুরু—তারপর তো প্রতি বছর টপ-আপ হতেই থাকে, এর মানসিক, তার দান—এই ভাবে।

    জাঁকজমক যখন শুরু হল, তখন ছেলেছোকরা-রাও নিজেরা কী কন্ট্রিবিউশন করবে ভাবতে বসল। একদিন নিমো ভারত সেবক সমাজে বিড়ি, গাঁজা, মদের মাঝে নেশাড়ুদের কেউ প্রস্তাব দিল—তাহলে ফাংশন দেওয়া হোক। হোল নাইট ফাংশন—পাশের কোলেপাড়া গ্রামে ওরা চালু করেছে এমন ফাংশন ওদের মনসা পুজোর সময়। প্রস্তাব মনে ধরল সবার, ফাংশন দিলে অতিথিদের একটা এনটারটেনমেন্টের ব্যবস্থা হবে। কানঘুঁষো শোনা গেল নাকি যে আগের বছর কিছু সুন্দরী অতিথি গাজনে এসে নিমো স্টেশানে সন্ধেবেলায় ঘুরতে ঘুরতে বলছিল—কী অজ পাড়াগাঁয়ে এলাম রে বাবা! রাতের বেলা কোনো অ্যাক্টিভিটি নেই! আর তা ছাড়া অন্য একটা সামাজিক সমস্যার সমাধান করে দিত হোল নাইট ফাংশন। অনেকের বাড়িতে এর কুটুম আসত যে শোবার ব্যবস্থা করতে বেশ অসুবিধ হত। সারা রাত ফাংশন দিলে সেই সমস্যার সমাধান হয়—মোটামুটি শুধু মেয়েদের শোবার ব্যবস্থা করলেই হয়। কারণ ছেলেছোকরারা রাতে কেউ আর বাড়ি ফিরত না—সকাল পর্যন্ত ড্যান্স চলত যাদের জ্ঞান থাকত তখনও পর্যন্ত। বেশির ভাগই স্টেজের সামনে ত্রিপলে এলোমেলো ভাবে শুয়ে থাকত।

    তখনও পর্যন্ত নিমো ভারত সেবক সমাজের তরফে কেবল যাত্রাই অ্যারেঞ্জ করা হত। তাই চিৎপুর ভালো চেনা থাকলেও অর্কেস্ট্রা ব্যাপারটির সাথে বিশাল পরিচয় ছিল না তেমন কারও। আর তা ছাড়া এটা ফ্রি ফাংশন, তাই বাজেটেরও একটা লিমিট আছে। ফাংশানের টাকা কানুদা দিতে রাজি হল না—বলল “এর সাথে শিবের পুজোর কোনো সম্পর্ক নেই। শিব কেবল তাণ্ডব নৃত্য করে, যেটা তোরা এমনিতেই মাল খেয়ে করিস।” ফলত গ্রামে চাঁদা তোলা শুরু হল ফাংশনের জন্য—সেবার প্রথম হবার জন্য কেউ বিশ্বাস করে আমাদের চাঁদা দিতে চাইল না। ভাবল মাল খাবার পয়সা তোলার নতুন ফন্দি। যাই হোক চাঁদা যা উঠল তার উপর বেস করে অর্কেস্ট্রা দল খুঁজতে লাগল। ফিল্ডে নেমে দেখা গেল যে, ওই টাকায় পূর্ব দিকে ব্যান্ডেল পেরোনো যাবে না। প্রচুর টাকা চাইছে তারা—পশ্চিম দিকে খোঁজ নেওয়া শুরু হল, সেখানেও দেখা গেল এমনকি বর্ধমানের দলও প্রচুর টাকা চাইছে!

    ফলে নিমোর ড্যান্স মাস্টার এবং প্রধান গায়ক দিবাকর-কে ধরা হল। ক্লাবে দিবাকর মাঝে মাঝেই বলত সে নাকি অর্কেস্ট্রা দলে গান গায়। আমাদের প্রস্তাব শুনে দিবাকর রাজি হয়ে গেল তার চেনাশোনা দল নিয়ে আসতে। প্রথমবারের ফাংশন দিবাকরের দল দিয়েই হল। কেমন গেয়েছিল সেই দল? ফার্স্ট ফরোয়ার্ড পরের বছর—নিমো ভারত সেবক সমাজের ক্লাব ঘরে মিটিং ডাকা হয়েছে সেই বছরের ফাংশন নিয়ে। প্রচুর সদস্য এসেছে—সবাই ওয়েট করছে ক্লাব সভাপতি ঘোষদের লাল্টুর জন্য (যাকে সবাই ডিলার বলে কারণ রেশন ডিলার গ্রামে ছিল সে)। লাল্টুদা হিরো হোন্ডা ক্লাবের বাইরে স্ট্যান্ড দিতে দিতে বলল, “আমি আগে থেকেই বলে দিচ্ছি যদি কেউ দিবাকরের অর্কেস্ট্রা টিম আনার নাম করে, তাকে ক্লাব থেকে সাসপেন্ড করব প্রথমেই। বাঁড়া গত বছর ওগুলো গান হচ্ছিল! আমাদের পাড়ার সুবানের বোন বুড়ির কালো ছাগল তিনটে এর থেকে সুরে চেঁচায়”।

    ফলত দিবাকরের টিম বাদ।



    দিবাকর সেবারের ফাংশন চালু করার চেষ্টা করছে সন্ন্যাসীদের আশীর্বাদ নিয়ে।


    এবার কিছু রুট-কজ অ্যানালিসিস হল যার সারমর্ম দাঁড়াল যে বাজেট না বাড়ালে ওই ছাগলের কান্নাই শুনতে হবে। আলোচনা শুরু হল কীভাবে বাজেট বাড়ানো যায়। গ্রামের ভিতর থেকে কিছু বেশি চাঁদা উঠলেও খুব বেশি পরিমাণে হবে না সেটা। ফলত নজর দেওয়া হল জি টি রোডের ধারের দুনম্বরি কারবারগুলোতে—কয়লার আড়ত (জল ঢালা), কদমের ধাবা (মদের ব্যাপার স্যাপার), ওয়িং ব্রিজ ইত্যাদি। সেখান থেকেও বেশ ভালো উঠল—কিন্তু আরও চাই। আমাদের তূণীরের শেষ তির আলি চাচাকে ডাকা হল। আলি জুয়ার বোর্ড বসায় গ্রামের ঝাঁপানে বা যাত্রার সময়। আলি ক্লাবে এসে সব শুনে বলল “আমি চার দিন বোর্ড বসাব, এত টাকা দেব। আমার শুধু চাই একটা লাইট আর একটু বসার ত্রিপল ইত্যাদি।” আলি ফিট হবার পরে টাকা উঠল ভদ্রস্থ—সেবার থেকে ফাংশন আরও একটু বেশি জমল।

    যারা জুয়ার বোর্ডের ব্যাপারটা জানেন না, তাঁদের জন্য বলে রাখি—এটা কমন ব্যাপার। পুলিশ ইত্যাদি সব আলি ম্যানেজ করবে। এমনকি খেলার কিছু পার্মানেন্ট কাস্টমার আছে—তাদেরকে ফোন করে ডেকে নেবার দায়িত্বও আলির। আমাদের লোকাল ছেলেদের কেবল এই দায়িত্ব যে যেন বাওয়াল না হয়। আমাদের মধ্যে আলম-ই এই জুয়ার ব্যাপারটা দেখত। একবার ভোরের দিকে আলমকে দেখি একটা চ্যাটা পেতে বসে আছে—কারণ হচ্ছে তার মতে এই সময় হারতে হারতে মাথা পাগলা হয়ে যাবে কিছু লোকের, তখন হাতের আঙটি, ঘড়ি, সাইকেল এমনকি অনস্পট মোটরসাইকেল পর্যন্ত বিক্রি করে দেয় তারা অনেক কম দামে। আলমের কাছে অনস্পট মোটর সাইকেল কেনার মতো টাকা ছিল না—কিন্তু অ্যাভন বাইসাইকেল খুব কম দামে কিনে বিশাল লাভ করেছিল।

    যাই হোক—ফাংশন জনপ্রিয় হতে শুরু করল। আঁতলামো করে প্রথম দিকে, মানে সন্ধে থেকে রাতের খাবার আগে পর্যন্ত স্থানীয় গ্রামের ছেলেপুলেদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং রাতের খাবার খেয়ে এসে আসল ফাংশন। এমনিতেও গাজনের সময় আমরা উদ্দাম শব্দে ফাংশন শুরু করতে পারতাম না যতক্ষণ সন্ন্যাসীদের রাতের হবিষ্যি খাওয়া হচ্ছে। কী কারণে নাকি যখন ওরা খাবে তখন বাইরে থেকে শব্দ কানে যাওয়া যাবে না। তাই মাথায় গামছা বেঁধে খেতে বসত। আর সেইসময় মাইকের সাউন্ড কম করে রাখা হত। প্রবলেম দেখা দিল রাতের ফাংশনে গানের চয়েস নিয়ে—কিছু পিছন পাকা সিনিয়ার বাংলা গান বেশির ভাগ থাকতে হবে বলে দাবি করল। সেই বাংলা গান শুনে ফেড আপ হয়ে এক বিদ্রোহী গ্রুপ পরের দিন ফাংশন চালু করল। এখনও নিমোর গাজনে প্রথম দু-দিন ফাংশন হয়। প্রথম দিন ভারত সেবক সমাজের এবং দ্বিতীয় দিন বিদ্রোহী ছেলেদের। সেই বিদ্রোহী দল প্রথম থেকেই বুগি-বুগি ড্যান্স লাগিয়ে দিল—উত্তাল গান, নাচ। এদের ফাংশন বেশি জনপ্রিয় হতে শুরু করে দিলে ভারত সেবক সমাজ নিজেদের অ্যাডাপ্ট করে নিতে বাধ্য হল ঝিন-চ্যাক ফাংশানে।

    গাজনের প্রথম দিন শিবঠাকুরকে পালকি-তে করে নিয়ে উত্তর দিকে রওনা দিত গ্রামের সন্ন্যাসীরা। আমি যত দিন পর্যন্ত নিয়মিত যেতাম ততদিন আমি সর্বোচ্চ চল্লিশ জন মতো সন্ন্যাসী হতে দেখেছি। এখন তো আরও বেশি হয়। খালি পায়ে, কাপড় কাছা মেরে পরে কাঁধে পালকি নিয়ে বেরুত এরা পরিভ্রমণে। শিবের মালা মানেই আকন্দ এটা তো সবাই জানেন। কিন্তু যেটা জানেন না তা হল ওই চৈত্রর প্রবল গরমে খালি পায়ে বালি এবং পিচরাস্তার উপর দিয়ে হাঁটা কী চাপের। পায়ে ফোস্কা পড়ে যেত হামেশাই। আর-একটা ব্যাপার ছিল—মাঝে মাঝে লাঠি ফেলে শিবের পালকি আটকানো হত। তখন সেখানে দাঁড়িয়ে শিবের পাঁচালি মতন পড়া হত—মনে করতে পারছি না একটাও ছড়া এই মুহূর্তে, কিন্তু শুনতে খুব সুন্দর লাগত। গ্রামের কিছু স্পেশালিস্ট ছিল এই ছড়া বই পড়াতে—তারাই পড়ত। উত্তর দিকে এরা যেত পাশের গ্রাম কোলেপাড়া, মহেশডাঙা, ক্যাম্প ইত্যাদি জায়গায়। বিকেলের দিকে গ্রামে ঢুকে বাড়ি বাড়ি ঘোষপাড়া এবং পালপাড়া। সবাই যে যার মতো দক্ষিণা দিত সন্ন্যাসীদের—সন্ন্যাসীদের মধ্যে একজন কাপড়ের কোঁচড়ে জমা করত সেই টাকা। পরের দিন দক্ষিণ দিকের গ্রামগুলি যেমন সানুই, কেজা, ছিনুই এগুলোতে যাওয়া হত আর গ্রামের জেলেপাড়া, স্কুলপাড়া, রাস্তাপাড় ইত্যাদি।

    আমার কাছে খুব ইন্টারেস্টিং লাগত গাছে ‘কোল’ দেওয়ার কনসেপ্ট। ধরুন আপনার কোনো নারকেল গাছ বা আম গাছে ফল হচ্ছে না—আপনি সন্ন্যাসীদের ধরলেন গাছটিকে কোল দিয়ে দেবার জন্য। সেই পালকি নিয়ে সন্ন্যাসীরা গাছের চারিদিকে ঘুরল, গাছের গায়ে ঠেকিয়ে দিল পালকিটা। এর বিনিময়ে কেউ দিত দক্ষিণা, আবার কেউ দিত অন্যা গাছে নারকেল বা ডাব। এইভাবে সন্ন্যাসীরা প্রচুর ডাব জড়ো করে ফেলত। বিকেলের দিকে পরিভ্রমণ থেকে ফিরে তারা যেত পুকুরে স্নান করতে—পুকুরের নাম ‘পোদ্দেরে’—এই নাম কেন আমি জানি না। তবে এই পুকুরে আমাদের কিছু ভাগ আছে—এখনও মাছ ধরলে আমরা ভাগ পাই। গ্রামের ঠিক বাইরে কোলেপাড়া গ্রামের কাছেই এই পুকুর। এখানে স্নান করে ফিরে এসে ভোগ বিতরণ—ছোটোবেলায় লাইন লাগাতাম, কাঠের জ্বালে মাটির হাঁড়িতে রাঁধা সেই ভোগ কেমন একটা ধোঁয়া ধোঁয়া লাগত—খেতে দারুণ। প্রথম দিনের সন্ধেবেলায় সন্ন্যাসীরা নিজের নিজের বাড়িতে হবিষ্যি করত।



    নিমো আর কোলেপাড়া গ্রামের মাজের সেই মাঠ – পোদ্দেরে পুকুরের স্নান করে ফিরে আসেছে সন্ন্যাসীরা।


    এই পালকি নিয়ে বেরোনো ছাড়া গাজনের প্রথম দুই দিনের আর-একটি ইন্টারেস্টিং ব্যাপার ছিল সন্ধ্যাবেলার শিবপুজো। শিবের মন্দিরের সামনে দালানে সব লম্বা সার দিয়ে বসে সামনে সাদা কাপড় পেতে তাতে শিবপুজো করতে করতে বেলপাতা নিক্ষেপ করা এবং সন্ন্যাসীদের মন্ত্রোচারণ—এটা খুব পপুলার ছিল গ্রামের লোকজন এবং আত্মীয়, বিশেষ করে মেয়েদের মধ্যে। ঠাকুরে বিশ্বাস করুন বা না করুন—এই শিবপুজো শুনতে এবং দেখতে কিন্তু বেশ লাগত।

    দ্বিতীয় দিনটিকে বলা হত ফল—সারাদিন তো গ্রামে/পাশের গ্রামে ঘুরে, বিকেলে স্নান এবং ভোগ। এই পর্যন্ত সব এক—কিন্তু এই দিন সন্ধেবেলায় সন্ন্যাসীরা খেত শুধু ফল। আমাদের ঘোষবাড়িতে সন্ন্যাসীদের ফল খাওয়ানো হয়—আমাদের দুর্গার দুয়ারে সব সন্ন্যাসীরা বসে ফল খেত। আমাদের বাড়ি খেয়ে গিয়ে সন্ন্যাসীরা নিজেদের বাড়িতে খেতে যেত। ফল খাওয়াবার প্রস্তুতি আমাদের বাড়িতে ছিল বিশাল—বেলের শরবত তৈরি থেকে শুরু করে ডাল ভিজানো, আখের গুড়—এই দিয়ে শুরু। ক্রমে আসত বাজারে যা ফল পাওয়া সব একটু একটু করে। জ্যাঠা কলকাতা থেকে আগের দিন ফল বাজার করে নিয়ে আসত যে ফলগুলো মেমারি বাজারে পাওয়া যেত না সেগুলো। বাচ্চাবেলায় এই ফল রাতটির দিকে চেয়ে সাগ্রহে বসে থাকতাম। এর মধ্যেও কিছু ট্র্যাডিশন ছিল—বাড়ির একজন গিয়ে শিবতলা থেকে সন্ন্যাসীদের ডেকে নিয়ে আসত। আর খাবার শেষে ফিরে যাবার সময় তাদের জন্য কিছু জ্বালানি, যেমন খড়ের বোঝা, কিছু কাঠ ইত্যাদি রেখে দিতে হত। সন্ন্যাসীরা সেগুলি মাথায় করে নিয়ে যেত পরের দিন সকালে ‘ফুল’ খেলবে বলে।

    ফুল খেলা হত শিবতলার একপাশে ডাক্তারদের খামারের ওইদিকটায় খুব ভোরবেলা। ‘ফুল’খেলা আর কিছুই নয় বিশাল আগুনের কুণ্ড জ্বালিয়ে হইহই আর কী—অনেকটা ন্যাড়াপোড়া টাইপের। মানুষ সব কিছুতেই ইন্টারেস্টিং কিছু খোঁজে, এই ফুল খেলার ইন্টারেস্টিং কম্পারিজন হল গত বছরের আগুনের শিখা কতদূর উঠেছিল! কেউ বলল গতবার গাব গাছ ছাড়িয়ে গিয়েছিল, কেউ বলল মোড়লদের নারকেল গাছের থেকেও বেশি উঁচুতে উঠেছিল আগুনের লেলিহান শিখা। এবার কাঠ, খড় সহ অনেক কিছু জিনিস এই আগুনে নিক্ষেপ করা হত—আমাদের ছোটোবেলায় সন্ন্যাসীদের জ্বালানি জোগাড় করার ব্যাপারটা হালকা দুষ্টুমি থেকে অনেক সময় বেশ বড়ো দুষ্টুমিতে পৌঁছে যেত। গৃহস্থের বাড়ি বা খামার থেকে কাঠ, খড়, ঘুঁটে চুরি করা নিয়ে হালকা উত্তেজনা থাকত—কোনো কোনো গৃহস্থ পরে শিবতলা এসে কমপ্লেন করত, নিচ্ছিস নে—কিন্তু তা বলে সব নিয়ে চলে আসবি! আজকাল অনেকেই বাড়ির নীচে তাদের সামর্থ্য মতো জিনিস আগে ভাগেই রেখে দেয়—তাই আর পাঁচিল ডিঙিয়ে ঢুকতে হয় না। কাপড় পরে পাঁচিল ডিঙোনো চাপের।

    গুরুত্বের দিক থেকে দেখলে এই গাজনের তৃতীয় দিন, যাকে ‘নীল’ বলা হত তার ইমপরটেন্স ছিল সবথেকে বেশি। সকালে ফুল খেলা দিয়ে শুরু—তার পর দণ্ডি খাটা—এবং তারপরেও সারাদিন এটা ওটা পুজো। তবে মূল নীলের পুজো রাতের বেলা। দণ্ডি খাটা খুবই জনপ্রিয় ছিল, বিশেষ করে বয়স্কা মহিলা মহলে—যাদের সামর্থ্য ছিল তারা ওই পোদ্দেরে পুকুরের ডুব দিয়ে আলপথে প্রায় এক কিলোমিটার মাটিতে শুয়ে, উঠে দাঁড়িয়ে শিবতলা পর্যন্ত আসত। প্রত্যেক দণ্ডি খাটার পাবলিকের সাথে থাকত একজন দাগ দেওয়ার লোক—মানে মাটিতে উপুড় হয়ে শুয়ে সামনে হাত ছড়াত—এবং সেই হাত যেখান পর্যন্ত পৌঁছাত সেখানে একজন আমগাছের ডাল দিয়ে মাটিতে দাগ দিত। এবার ইনি উঠে পরের বার সেই দাগ থেকে আবার ডাইভ দেবেন—এই ভাবে চলত। বুঝতেই পারছেন একবার শুয়ে, উঠে মাত্র ফুট ছয়েক এই যেতে পারতেন। এক কিলোমিটার এইভাবে ওঠ-বস করে যাওয়া খুব বিশাল কিছু সহজ ব্যাপার ছিল না! অনেকের শারীরিক শক্তিতে কুলাতো না—তারা শিবতলা থেকে ২০০ মিটার দূরের পুকুরে ডুব দিয়ে দণ্ডি খাটতেন।

    নিমোর গাজনে সবথেকে বেশি লোক উপস্থিত হত এই নীলের দিন—যেসব আত্মীয়রা চার দিন সময় বের করতে পারেনি একটানা, তারাও এই নীলের দিন আসত। সন্ধে থেকে শিবতলায় লোকে ভরতি নীলের পুজো ছাড়াও মূল আকর্ষণ ‘কপাল ফোঁড়া’ বা ‘বাণ ফোঁড়া’, ফুল পড়া এবং রাতের বেলায় বাজি ফাটানো—যাকে আমরা কদম গাছ বলতাম। কপাল ফোঁড়া মানে একটা শলাকা বাঁ চোখের ভ্রূ-টা ধরে এফোঁড় ওফোঁড় করা এবং সেই শলাকার পাশ দিয়ে উঠে থাকা লোহার দণ্ডটার উপরে জ্বলন্ত প্রদীপ বসিয়ে হালকা নাচ। কপাল ফোঁড়ার এক্সপার্ট ছিল (এবং এখনও আছে) ভাদু-দা এবং তার আর-এক দাদা রণ। এদের আপনি সারা গাজনে দেখতে পাবেন না—কিন্তু নীলের দিন রাতে কপাল ফোঁড়ার সময় এবং পরের দিনের বগল ফোঁড়ার সময় এদের যেন মাটি ফেটে উদয় হয়। সব সন্ন্যাসীদেরই কপাল ফুঁড়তে হত—শালাকাটিতে ঘি ইত্যাদি মাখিয়ে, একটা পাকা কলার ভিতর দু-একবার ঢুকিয়ে নিয়ে, প্যাঁক করে ঢুকিয়ে দেওয়া। আমার কাছে এটা কোনোদিনই ইন্টারেস্টিং মনে না হলেও গাজনে এই কপাল ফোঁড়া খুবই জনপ্রিয় ছিল।

    ফুল পড়ার ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং শিবের পুজোর পুরোহিত প্রথমে ছিল কালী বামুন, তিনি টেঁসে যাবার পরে গদা বামুন সেই ভার নেয়। এই সব স্পেশাল লতা এবং পুষ্প জলা মাঠ থেকে জোগাড় করে তাদের দুই হাতে করে বিশাল পাকানো হত। এবার সেই পাকানো মাল আপনি চাপালেন শিবলিঙ্গের মাথায় যেটা একদমই সমতল নয়। পাকানোর টেকনিক আছে জল দিয়ে, কারণ ধীরে ধীরে সেই পাক খুলে শিবের মাথার থেকে বড়ো হয়ে গেলেই ফুল পড়ে যাবে মাথা থেকে। এটাই ঘটনা—কিন্তু এই ব্যাখ্যা ভক্তদের দিতে গেলে আপনার চাপ হয়ে যাবে। ফুল পড়ার সময় শিবের মন্দির কেউ টাচ করতে পারবে না—কেবল গদা বামুন ভিতরে। মন্দিরের দরজার সামনে সন্ন্যাসীরা এবং তাদের পিছনে গাদা গাদা পাবলিক সেই ফুল পড়া দেখতে উপস্থিত। যখন ছোটো ছিলাম জেলেদের কার্তিকদার কাঁধে চেপে অনেক ফুল পড়া দেখেছি।

    ফুল পাকাবার কোনো স্ট্যান্ডার্ড না থাকার জন্য মাঝে মাঝেই কেস গড়বড় হত—ফুল পড়ছেই না! গদা বামুন, বাইরের সন্ন্যাসীরা বাবা বুড়োশিবের জয় বলে বলে গলা চিরে ফেলল, আর ঢাক ঢোল কাঁসি ইত্যাদির আওয়াজে শিবতলা কাঁপছে—রিকটার স্কেলে ৪ থেকে ৫, কিন্তু তবুও শিবের মাথা থেকে অনড় সেই পাকানো ফুল! একটা টাইমের পরে ফুল না পড়লে একটু ব্রেক নেওয়া হয়, সন্ন্যাসীরা গিয়ে আবার সামনের পুকুর থেকে পা ধুয়ে আসে—ফিরে এসে আবার চালু সেম প্রসেস। এতে পড়লে ভালো—না পড়লে একসময় গদা বামুন ডিক্লেয়ার করে ফুল পড়ল না। মানে রুষ্ট বাবা বুড়োশিব কোনো কারণে—যদি কারও মানসিকের ফুল পড়া হত, তাহলে তার মুখ এবং বাকি অনেক কিছু শুকিয়ে যেত ভয়ে।

    এই সব শেষ হলে ব্রেক—পাবলিক রাতের বেলায় খাওয়াদাওয়া করে ফিরে এলে শুরু হত বাজি পোড়ানো—মানে কদম গাছ। দুইখান গাছ পুড়ত—একটা তো কানুদার দেওয়া বুড়োশিবের জমি থেকে, আর-একটা দিত ঘোষেদের বাপিদা। এই দুটো কদম গাছ পুড়তে পুড়তে রাত একটা মতন—সেই দিনের শান্তি।

    পরের দিন গাজনের শেষ দিন—প্রধান অ্যাক্টিভিটি বেলা দশটা নাগাদ ওই পোদ্দেরে পুকুরে গিয়ে স্নান করে বগল ফোঁড়া। এটা কপাল ফোঁড়ার থেকেও চাপের—তবে সব সন্ন্যাসীদের এটা মাস্ট ছিল না—দুজনকে ফুঁড়তেই হত—নীলে আর মূলে। আর যদি কেউ বাড়তি মানসিক করত তো সেই। ত্রিশূলের মতন ছিল সব ফোঁড়ার যন্ত্রপাতি—ধরে নিন একটা ত্রিশূলের একদম শেষের দিকটা খুব ছুঁচালো করা—এবার সেটা হাতটা উঠিয়ে বগলের ঠিক তলার চামড়াটা টেনে এদিক ওদিক করে দেওয়া হল—অ্যাজ সিম্পল অ্যাজ দ্যাট। যেটা সিম্পল নয় তা হল, দুই বগলের দু-দিকে ত্রিশূল ঢুকিয়ে সামনের দিকে এনে তাদের ক্রস করে দেওয়া হল। এবার সামনের ক্রসে ঘিয়ে ভিজানো কাপড়ের টুকরো দিয়ে কন্টিনিউয়াস আগুন জ্বালা এবং তাতে ধুনোর ছিটে মারা। ত্রিশূল প্রচণ্ড গরম হয়ে যেত—তবে আমি এদের সাথে আলোচনা করে টের পেয়েছি গরমের থেকেও চাপ ছিল উঁচু নীচু আলপথ দিয়ে হেঁটে আসা চামড়ায় ত্রিশূল গেঁথে! নিদারুণ খচখচ করে লাগত।



    বগল ফোঁড়ে শেষ – এবার আগুন জ্বালাবার অপেক্ষা


    সেই বাণ ফুঁড়ে শিবতলায় ফিরে ফিরে আবার খানিক শিব পুজো এবং গাজনের শেষ ফুল পরা। এগুলো সব হয়ে গেলে এবার ঝাঁপ মারার প্রস্তুতি। বাই দি ওয়ে, যাদের বাড়ি থেকে সন্ন্যাসী হত তাদের একজনকে এই দিন ঝাঁপ মারার জন্য স্পেশাল করে শিরিষ গাছের ডালপালা, আকন্দ ফুল ইত্যাদি দিয়ে বানানো মালাটি ঝুড়ি করে সকালে পোদ্দেরে পুকুরে নিয়ে যেতে হত। সেখানে জলে ডুবিয়ে, পুজো করার পরেই তাদের গলায় চড়াবার শুদ্ধি হত। শিবতলায় লোক জমতে শুরু করে—ফাটা চৈত্রের প্রবল গরম, অনেকে ছাতা নিয়ে ঘুরছে, অনেকে আশ্রয় নিয়েছে গাছের বা বাড়ির ছায়ায়। শিবতলায় ঝাঁপ মারার জন্য দুই তলা সমান বাঁশের মাচা বানানো হয়ে গেছে। সন্ন্যাসীরা স্পেশাল করে কাপড় বেঁধে নিচ্ছে—কোঁচড়ে ভরা হচ্ছে আলো চাল, কিছু ফল, যেমন আপেল, শাঁক আলু, শসা ইত্যাদি ইত্যাদি। হাতে একটি ডাব নিয়ে একে একে সন্ন্যাসী সেই বাঁশের মাচায় উঠবে—নীচে ঝাপ মারার জন্য খড় ভরা বস্তা ধরে থাকবে ছেলেছোকরারা। সেই খড়ের বস্তা দৈর্ঘ্যে এক মানুষ সমান—চার জন করে ছেলে দুই দিক থেকে সার দিয়ে হাত পাকড়ে দাঁড়াত, আর তাদের ধরা হাতের উপরে বস্তাটি ফেলে দেওয়া থাকত। আর বস্তার উপরে রাখা থাকত একটা গজাল বেঁধা কাঠের টুকরো, তবে গজালের সূচালো মুখটা মুড়ে দেওয়া, ফলে বেশি লাগত না তেমন।



    আগুনের তেজে ওই লোহার ত্রিশূল যে কি গরম হত তা যারা ফুঁড়েছে তারাই জানে!


    ঝাঁপ মারার আগে অনেক সন্ন্যাসীর কাছে ‘ফল’ নিতে আসত বেশ কিছু সন্তানহীনা মহিলা—মানে কোনো কারণে গর্ভবতী হচ্ছেন না—বিশ্বাস ছিল যে নিমোর শিবের গাজনে ফল নিয়ে মানত করলে গর্ভধারণ গ্যারান্টিড! আমার শোনা মনে সাকসেস রেট খুব হাই ছিল—ফলে প্রচুর দূর দূর থেকে এইদিন মহিলারা ফল নিয়ে আসেন, এই এখনও। এনারা স্নান করে ভেজা কাপড়ে বাঁশের মাচার নীচে দাঁড়াবেন—সন্ন্যাসী বাবা বুড়োশিবের নাম করে একটা ফল মাথায় ঠেকিয়ে এই মহিলাকে দিয়ে দেবেন।



    ফল নিচ্ছেন এক ভদ্রমহিলা সেবারের গাজনে সন্ন্যাসীর কাছ থেকে। এনার ছেলে এখন বেশ বড়।


    আমার অনেক দিন পর্যন্ত ধারণা ছিল যে কপাল ফোঁড়া আর বগল ফোঁড়াই সবথেকে শক্ত ব্যাপার গাজনে। কিন্তু সব সন্ন্যাসীদের ফিডব্যাক থেকে যা বুঝেছি, সব থেকে চাপের ছিল এই ঝাঁপ মারা। আমি কেবলই ভাবতাম এই দুই তলা থেকে ঝাঁপ মারবে, তাতেও এত চাপ! কিন্তু যেটা আমি ফ্যাক্টার করিনি, তা হল সন্ন্যাসীদের খালি পেটে থাকা। মনে রাখবেন এই সন্ন্যাসীরা শেষবার সলিড খেয়েছিল ফলের দিন রাতে, মানে দুদিন আগে—আর জল খেয়েছিল নীলের দিক সূর্য ওঠার আগে, মানে দেড় দিন আগে! ফলে খালি পেটে এই দুই তলা উচ্চতা থেকে ঝাঁপ মারাকে প্রায় দশ তলা মনে হয়! অনেকেই ঘাবড়ে যায়। মাচায় উঠে কাজ হল কোঁচড়ে হাত ঢুকিয়ে কিছু আলো চাল আর ফল বের করে নীচে দাঁড়ানো পাবলিকের দিকে ছুড়ে দেওয়া—সেই ফল কুড়াতে আমাদের হুড়োহুড়ি।



    এটাকে বলে ক্লাসিক ঝাঁপ মারা – এমন সুন্দর ঝাঁপ মারলে সন্ন্যাসীরা হাততালি পেত পাবলিকের কাছ থেকে


    ঝাঁপ মারা শেষে কারও একটা কাঁধে করে সন্ন্যাসীরা নিজের নিজের বাড়ি ফিরে যেত, হেঁটে নাকি ফিরতে নেই। বেলা দুটোর মধ্যে এই সব শেষ। পড়ে থাকে বিকেলের চড়কের মেলা—আমাদের পাশের গ্রাম ছিনুই-এ বসত সেই চড়কের মেলা—বিকেলের দিকে হেঁটে হেঁটে মেলা দেখতে যাওয়া—জিলিপি, বাদাম, আইসক্রিম—ইউজ্যুয়াল ব্যাপার।

    বিকেল থেকেই নিমো ভাঙা হাট—কোনো আত্মীয়ই থাকত না, কারণ সংক্রান্তি নাকি পোয়াতে নেই! তাই বিকেল থেকেই নিমো স্টেশান সরগরম ফেরার আত্মীয় সকলে। চড়ক সেরে, আত্মীয়দের ট্রেনে তুলে দিয়ে আমরা বাড়ি ফিরতাম সন্ধেবেলা—নিমো শিবতলাকে আজ আর সন্ধ্যাবেলা চেনা যায় না! কাল যেখানে ছিল হাজারো লোকের ভিড়—আজ আর সেখানে কেউ নেই!

    গাজনের এই শেষ—সেই বছরের মতো। তবে সন্ন্যাসীদের কিছু ফর্মালিটি থাকে তার পরের দিনেও। এই ক-দিন তারা সাত্ত্বিক খেয়ে বলে অনেক বাড়ি থেকে ডাক আসে খাবার জন্য—বর্ধমান জেলার মুড়ি বিখ্যাত বলে মুড়ি—আলুর দম—বোঁদে—রসগোল্লা অনেকে বাড়িতে ডেকে খাওয়ায় সন্ন্যাসীদের। বলাই বাহুল্য আমাদের বাড়িতেও এদের সবার নিমন্ত্রণ থাকত। মুড়ি মিষ্টি ইত্যাদি খেয়ে এবার পুকুরে স্নান করতে যাবার পালা—তেল হলুদ মেখে। স্নান করে দিতে হবে পৈতে বিসর্জন—সেই পৈতে ফেলার পরেই সন্ন্যাসীত্ব থেকে মুক্তি—আবার গৃহী মানুষ বিকেল থেকে সবাই, আবার বাড়িতে শুতে আসা।

    গাজন আমাদের কাছে যে কতটা ছিল বা এখনও আছে, সেটা ঠিক হয়তো লিখে বোঝাতে পারলাম না—লেখা অনেক বড়ো হয়ে গেল, তবুও অনেক কিছু লেখা হল না। অন্য কোনো সময় সেইসব না-বলা গল্প আবার লেখা যাবে না হয়!


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ১০ এপ্রিল ২০২১ | ৩২৯১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • স্বাতী ব্যানার্জ্জী | 157.43.222.122 | ১০ এপ্রিল ২০২১ ১২:৫৯104593
  • খুব ভালো লাগলো পড়ে । 

  • b | 14.139.196.12 | ১০ এপ্রিল ২০২১ ১৪:২৬104594
  • সুকি পারলে ওই ছড়া গুলোকে জোগাড় করো। 


     অনেকদিন পরে ভিন্টেজ সুকি। ফাঁকি দেয় নি। 

  • রাহুল বর্মন | 2409:4061:2e13:d477:62ff:7949:6c07:46dc | ১০ এপ্রিল ২০২১ ১৫:২৮104597
  • অসাধারণ লাগলো,আপনার লেখনী বহুদিন আগে দেখা ঝাঁপ আর চড়ক দুটোকেই আবার প্রাণবন্ত করে তুলল।

  • অপরাজিতা চক্রবর্তী | 2402:3a80:a34:e7a:0:58:b484:7d01 | ১০ এপ্রিল ২০২১ ১৬:৩৩104600
  • খুব সুন্দর। আমার কন্যা কে দেখানোর ইচ্ছা রইলো, প্রাচীন বাংলার এই দিকটি। আমার মামার বাড়িতে চড়োকের মেলা হয়। 

  • Madhumita Chowdhury | 2409:4061:386:3495:2577:1d4a:ba89:3bff | ১০ এপ্রিল ২০২১ ২০:২৫104608
  • Osadharon laglo.apni bolchhen, lekha ta boro hoye gelo r amar mone hochhe lekha ta sesh hoye gelo, aro Keno likhlen na. 

  • Suman | 2603:6010:e742:f600:b421:df69:e192:19ac | ১০ এপ্রিল ২০২১ ২০:৪৬104610
  • দাদা , খুব ভালো  লিখেছেন .a

  • দু | 47.184.33.160 | ১১ এপ্রিল ২০২১ ০১:৪২104629
  • দারুণ লাগলো। কোন ধারনাই ছিল না এত কিছু হয়। আর স্টাইল তো আছেই ভীষণ পছন্দের।

  • সুকি | 49.207.216.115 | ১১ এপ্রিল ২০২১ ০৯:২৮104632
  • সবাইকে ধন্যবাদ লেখা পড়ার জন্য - লিখতে লিখতে অনেক বড় হয়ে গিয়েছিল এই পর্বটা। ধৈর্য্য ধরে পড়েছেন সব, তার জন্য বাড়তি থ্যাঙ্কস।  কত কিছু লেখা বাকি থেকে গেল - লিখব একদিন আবার হয়ত।


    বি-দা, পরের বার নিমো গিয়ে সংগ্রহ করার চেষ্টা করব। 

  • | ১১ এপ্রিল ২০২১ ১৫:৩১104640
  • দুদিনের চেষ্টায় পুরোটা পড়ে ফেললাম। ইন্টারেস্টিং ত। সবচে ভাল ব্যপার মানসিক করে আবার সন্ন্যাসিত্ব ডেলিগেট করা। 

  • শঙ্খ | 103.217.234.110 | ১১ এপ্রিল ২০২১ ১৭:১৪104642
  • ওরে না, বিশাল লেখা, চলছে তো চলছেই। দারুণ লাগছে পড়তে।

  • Ranu Kaibartya Pal | 2401:4900:33bf:7fe1:bcf6:68d3:a9cf:69e2 | ১১ এপ্রিল ২০২১ ১৮:৪৩104644
  • "খ‍্যাপা হয় দীগম্বর পাগল পশুপতি


    নারী রূপ দেখলে শিব খ‍্যাপা অতি


    একদা বজ্রতে হরি নারী হয়েছিল


    নারী রূপ দেখে শিব গর্জিয়া উঠিল.."


    এই হচ্ছে শিবের পাঁচালির দুই লাইন

  • manimoy sengupta | ২৮ মে ২০২১ ১৪:৪০106507
  • এ্যাতো ছোট লেখা !!  অন্যায় করলেন। 

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন