এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  বিবিধ

  •  সুকিয়ানা – ১৭ পর্ব (লঙ্কা কান্ড )      

    সুকান্ত ঘোষ লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | বিবিধ | ০২ এপ্রিল ২০২১ | ৩৭৩১ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)

  • অ্যালুমিনিয়ামের ডেকচি-তে মাংসটা মেরিনেট করতে দিয়ে সব্জীতে মন দিয়ছি এমন সময় অন্য প্রতিবারের মতই হাজির হল বিটু – একহাতে টর্চ এবং অন্যহাতে লুঙ্গির কোঁচাটা ধরে। সুকান, ঝাল দিয়েছিস তো ঠিক ঠাক” বলতে বলতে নিজেই টর্চ মেরে মাংসটা দেখে নিল একবার, এবং মতামত জানালো – “রঙ এসেছে কয় রে – কিছু তুই লঙ্কা দিস নি মনে হচ্ছে” বলে পাশের কুকমি-র লঙ্কা গুঁড়োর প্যাকেটটা তুলে মাংসের উপর আর একটু ছড়িয়ে দিল।

     

    আমি কিছু আর বললাম না – কারণ এটা এক্সপেকটেড ছিল। এর পরে আসবে আলম, তারপরে সন্তু, বাপন ইত্যাদিরা – এবং তার প্রত্যকেই সেই কাজ করবে যা ঠিক এই মুহুর্তে বিটু করে গেল, মানে মাংসে আরো বেশী করে লঙ্কা গুঁড়ো ছড়ানো! পিকনিক হচ্ছে নিমো উন্নত অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চত্ত্বরে। গ্রামের মধ্যে এটাই  আমদের পিকনিক স্পট ছিল রাতের বেলায়।  স্কুলের উঠানের এক পাশে বড় বকুল গাছ – চারিদিক খোলা।  একদম সামনে বড় বামনা পুকুর – চাঁদ উঠলে আর হালকা বাতাস দিলে সেই পুকুরের পাশে পিকনিক স্পট তথা নিমো প্রাইমারী স্কুল বড়ই অপার্থিব হয়ে ওঠে।  তখনও মিড ডে মিল চালু হয় নি, তাই পাশের একটা আটচালা টাইপের রান্নার জন্য সেটাও বানানো হয় নি।  আমরা একদম ছোট বেলায় ইঁট দিয়ে উনুন বানিয়ে কয়লা দিয়ে, বা তোলা উনুন দিয়ে – পরে কাঠের আগুনে এবং এবং বর্তমানে গ্যাসের ওভানে রান্না করি।  এই পিকনিকগুলোতে (যাকে আমরা ফিষ্টি বলতাম) আমিই মূলত মাংস রান্না করতাম বহুদিন ধরে।  পাশে বকুল তলায় বসে পাবলিক মাল-টাল খেত, আমরা কয়েকজনা রান্না করতাম। আবার অনেকে উঠে গিয়ে কয়েক ঢোঁক দিয়ে আসত।

     

    মাংসের ভাগ নিয়ে নয়, ফিষ্টির দিন সব চেয়ে বেশী কোলাহল এবং তর্ক হত মাংসে কতটা ঝাল দেওয়া হবে সেই নিয়ে।  আমি নিজে বেশী ঝাল খেতে পারি না বলে মাংসে বেশী ঝাল দিতাম না।  ওই জন্যই পাবলিক টর্চ দিয়ে দেখতে আসত মাংসের রঙ। একবার এই ভাবে চারজন এসে বেশী করে গুঁড়ো মশলা ঢেলে এত বেশী ঝাল দিয়েছিল যে পরের দিন পায়খানা করার পর হাত পর্যন্ত জ্বালা করছিল।  মনে রাখতে হবে তখনো পর্যন্ত আমাদের দিকে কাশ্মিরী গুঁড়ো মশালা দিয়ে ফালতু কালার বাড়াবার পদ্ধতি আবিষ্কার হয় নি – কুকমী ছিল, শুধুই কুকমী।  সেই থেকে আমি মাংস মেরিনেট করার সময় আর গুঁড়ো লঙ্কা দিতাম না, কারণ জানতাম এরা এসে দিয়ে যাবে একে একে।  এই ভাবে ব্যালেন্স আনা হয়েছিল রান্নায়।   

     

    আজ সকালে কিছু পুরানো ছবি দেখত দেখতে ঝাল সংক্রান্ত পুরানো ঘটনাগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠল।  বার্সিলোনা ঘুরতে যাবার ছবি দেখছিলাম – যাঁরা বার্সিলোনা গেছেন তাঁরা কোন না কোন সময় নিশ্চয়ই ঘুরে  এসেছেন সেখানকার বিখ্যাত ‘লা বক্যুয়েরিয়া’ মার্কেটে, যাকে বার্সিলোনার পাবলিকরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাজার বলে।  একেবারে শ্রেষ্টত্বের শিরোপা দেওয়া যাব কিনা সেটা তর্ক সাপেক্ষের হলেও,এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে খুবই জমকালো বাজার এটা।  ইস্তানবুলের গ্রান্ড বাজার বা স্পাইস বাজারের মত এই বাজারের ইতিহাসও বহু শত বছরের পুরানো।  এই বাজারটি সেই কোন ১২০০ সাল থেকে ইতিহাসে উঁকি দিচ্ছে – তার পরে অনেক ঝড়ঝাপ্টা সয়ে আজকের দিনের এই রূপে দাঁড়িয়েছে।  পরে কোন একদিন এই বাজারের পুরো ইতিহাস নিয়ে লেখা যাবেক্ষণ। 

     

    কিছু ছবিতে চোখ আটকে গেল – যেগুলিতে দোকানের সামনে ঝোলা সার সারি নানাবিধ লঙ্কার ছবি তুলেছিলাম আমি।  এত নানা প্রকারের লঙ্কা এর আগে বা এর পরেও অনেক জায়গায় দেখেছি, কিন্তু লা বক্যুয়েরিয়া মার্কেটের মত এত কাছাকাছি এত দোকানে আগে দেখি নি।  সেই বিভিন্ন প্রজাতির লঙ্কাগুলিকে চেনার চেষ্টা করলাম – বলাই বাহুল্য দুই এক প্রকার ছাড়া বাকিদের নাম মনে করতে পারলাম না।  তাই ভাবলাম তাহলে আর একবার লঙ্কার ইতিহাসটা ঝালিয়ে নেওয়াই যাক!

     

    আমার ছোটবেলায় ইতিহাসে যতই পড়ি না কেন যে কলম্বাস বা ভাক্সো-দা-গামা নতুন দেশ আবিষ্কারের জন্য এক্সিপিডিশনে বেরোতেন – ব্যাপারটা কিন্তু অত সরল নয়।  তেনাদের দেশ আবিষ্কার করার ব্যাপারটা আধ-খাপছাড়া ভাবে সত্যি।  সেই সময়কালে ইউরোপের কোন ব্যক্তি সকালে ঘুম থেক উঠে – চল দেশ আবিষ্কার করে আসি এমন করত না সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন – বেসিক কমন সেন্স।  এর পিছনে থাকত কিছু প্রগাঢ় ধান্দা – মূলত ব্যবসার।  তো এই কলম্বাস আর ভাস্কো-দা-গামা দুইজনের মূল উদ্দেশ্যে ছিল সমুদ্র পথে ভারতে আসার রাস্তা বের করা।  কারণটা আর কিছুই নয় – ভারতীয় স্পাইসের (মশালা) অমোঘ টান এবং হাই-ফাই বিজনেস ভ্যালু।  সেই সময় ইউরোপীয়ানরা অবশ্য হাজার রকমের মশালা সম্পর্কে বিশাল কিছু জানত নাতাদের মূল লক্ষ্য ছিল ‘ব্ল্যাক পেপার’ (কালো মরিচ) – ইউরোপের বাজারে যা প্রায় সোনার দামে বিকোতো। 

     

    এর পরের গল্প তো সবার জানা – কলম্বাস বেশ কনফিউজড মানুষ ছিলেনভারতে আস্তে গিয়ে তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন আজকের দিনের ক্যারাবিয়ানে (ওয়েষ্ট ইন্ডিজ)সে ১৪৯২ সালের কথা।  এর ছয় বছর পরে ভাস্কো-দা-গামা ইউরোপ থেকে থেকে পর্তুগীজ ঝান্ডা উড়িয়ে ল্যান্ড করলেন ভারতের কালিকটে।  ভাস্কো-দা-গামার কাছে ভারতীয়রা অনেক ব্যাপারে ঋণীসেই সব নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। তবে যেটা নিয়ে তেমন একটা আলোচনা হয় নাতা হল ভাস্কো স্যার কিভাবে ভারতীয় রান্না ঘরেও থাবা বসিয়েছিলেন।  আজকের দিনে যদি আপনাকে বলি ভারতীয় রান্না করুন আলু এবং লঙ্কা ছাড়া – আপনাকে একটু হলেও মাথা চুলকাতে হবে।  বিরিয়ানিতে আলু না দিলে তো বাঙালীরা তাকে বিরিয়ানী বলতেই রাজী নই! আমাদের গ্রামের সমীরের সাদা সমীরের জন্য মেয়ে দেখতে গিয়ে উড বি আত্নীয়রা মাংসের ঝোলে চন্দ্রমুখী আলুর বদলে জ্যোতি আলু দেয় বলে বিয়ের কর্থা বার্তায় ইতি টানে।  তাছাড়া পান্তা-ভাতে কাঁচা লঙ্কারান্না বান্নায় কাঁচা লঙ্কা – পাশের সাইড ডিসে লঙ্কা রাখাদরকার মত চিবিয়ে নাও – ইত্যাদি ইত্যাদি। ভাবতে পারছেন যে মাত্র পাঁচশ বছর আগেও আমরা ভারতীয়রা আলু এবং লঙ্কা কি জিনিস জানতাম না!

     

    আলু নিয়ে আগে আলোচনা করেছি – আজ হয়ে যাক লঙ্কা নিয়ে দুই চার কথা।  কলম্বাস বাবু শুধু ভারতকে নিয়েই কনফিউশনে ভোগেন নি – ক্যারাবিয়ান দ্বীপে পৌঁছেও বেশ ছড়িয়ে ছিলেনছড়ানোর মধ্যে এক অন্যতম উদাহরণ হছে চিলি-এর সাথে পেপার-কে ঘুলিয়ে ফেলা! ক্যারাবিয়ান দ্বীপ সান সালভাদরে (আজকের দিনের ওয়াটলিং দ্বীপ) পৌঁছে ঝাল ঝাল খাবার খেয়ে তিনি মনস্থির করে নিলেন যে যা থেকে ঝালের স্বাদ আসচে তাহাই ব্ল্যাক পেপার!  কালো মরিচের স্বপ্নে তাঁর মন আচ্ছন্ন ছিল তখনো! যতক্ষণে তিনি বুঝতে পারলেন যে সেই ঝাল কালো মরিচ থেকে নয় বরং ছোট কুঁড়ি জাতীয় ফল এর জন্য এর জন্য দায়ী – ততক্ষণে বড় দেরী হয়ে গেছে।  স্প্যানিশরা এই ছোট কুঁড়ি ফলকে পেপার বলে ডাকতে শুরু  করে দেয় – সেই থেকে নামটা প্রচলন হয়ে গেছে! ব্ল্যাক পেপারের সাথে এই পেপারের কনফিউশনের সেই শুরু।

     

    আজকের দিনে লঙ্কা-কে নানা নামে ডাকা হয়ইংরাজি স্পেলিং এরও কিছু তফাত আছে।  কমন উচ্চারণ হল চিলি এবং একে অনেক সময় চিলি-পেপার ও বলা হয় (chile, chilli, chile pepper, বা chilli pepper)  বৈজ্ঞানিক দিক থেকে দেখতে গেলে একে চিলি-পেপার ই বলা উচিতকারণ তার থেকে বোঝা যাবে যে চিলি আসলে ক্যাপসিকাম ফ্যামিলির এক ফলঠিক যেমনটা আমরা খাই মিষ্টি ক্যাপসিকাম।  লঙ্কা (চিলি)ট্যামেটোআলু এদের মধ্যে আবার লতায় পাতায় সম্পর্ক আছে বোটানির দিক থেকে দেখতে গেলে – পিসির ছেলের মাসির ননদের ভাইপো – এমনটা তবে অনেকটা।  লঙ্কা যেই গাছ থেকে আসে তার নাম Capsicum Annuum and Capsicum Fretcens” – এবার এটা আসে Genus Capsicum  থেকে যার বৃহত্তর পরিবারের নাম Solanaseae – এবং এই পরিবারের মধ্যেই আবার ঢুকে যায় ট্যামাটো আর আলু।

     

    ক্যাপসিকাম শব্দটির উৎপত্তি এক গ্রীক শব্দ ‘ক্যাপসিমো’ হতে যার অর্থ ‘কামড়াবার যোগ্য’।  এটা মেনে নেওয়া হয় যে এই ক্যাপসিকাম পরিবার আদপে এসেছে দক্ষিণ এবং মধ্য আমেরিকা থেকে।  এবার জিজ্ঞেস করতে পারেনভাই পেপারপেপার তো বারবার করছোকিন্তু ‘চিলি’ নামটা তাহলে প্রথম কে চালু করেছিলএখনো পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ‘চিলি’ নামটা প্রথম ব্যবহার করে অ্যাজটেক সভ্যতার মানুষজন প্রথমে।  প্রাচীন অ্যাজটেক এর এক ভাষা ‘নাউহাতাল’ এ পেপার-কে বলা হত চিলতেপিন।  সেও আজ থেকে প্রায় ৫০০০-৬০০০ বছর হয়ে গেল প্রায়!

     

    মায়া এবং ইনকা সভ্যতার লোকেদের মতন এরাও জঙ্গলের রঙ চঙে উজ্বল ফলে দেখে আকর্ষিত হয়েছিল এবং চিলি-র ব্যবহার শুরু করেছিল খাবার এবং ঔষুধ হিসাবে।  ইনাকার তো আরো এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে লঙ্কা-কে পুজো করতে শুরু করে দিয়েছিল – ওদের সৃষ্টিতত্ত্বের গল্পে চার জন ভায়ের উল্লেখ আছেচিলি ছিল সেই চার ভাইয়ের একজন।   পৃথিবীর সবচেয়ে পুরানো প্রজাতির চিলি গাছ যাকে আদর করে ‘মাদার চিলি’ বলা হয় তার নাম ‘তেপিন’ বা ‘চিলতেপিন পেপার’ – মেক্সিকোর উত্তরের জঙ্গলে যাকে প্রথম দেখা যায়।  এরা মূলত বন্য প্রজাতির গাছ – এদের এনে চাষবাস করা খুব ঝামেলার ছিল – তাই জঙ্গলের থেকেই সংগ্রহ করে কাজ চালনো হল তখন কার দিনে।  এই চিলি-র গাছ গুলি অনেক দিন বাঁচে – প্রায় ২০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে দেখা গেছে।  এবে শুধু তখন কার দিনেই বা কেনআই আজকের দিনের লঙ্কা গাছেরও এই এক বিশেষ বৈশিষ্ট – যত্ন-টত্ন করে রাখলে বেশ অনেক দিন ধরে লঙ্কা দেয়। 

     

    সেই ১৫০৯ সাল নাগাদ স্প্যানিশরা যখন মেক্সিকো দখল করতে যায় তখনই প্রথম তারা নানা ধরণের চিলি-র সাথে পরিচিত হয় – কাঁচা এবং শুকনো দুই ধরণের লঙ্কা এবং গুঁড়ো লঙ্কাও সেখানকার বাজারে দেদার বিক্রী হতে দেখে তারা।  মেক্সিকো-কে এই আজকের দিনেও লঙ্কার স্বর্গরাজ্য বলা হয়।  তবে ইউরোপে লঙ্কার ইন্ট্রোডাকশন কিন্তু ততদিনে হয়ে গেছে।  কলম্বাস ১৪৯৩ সালে অভিযানে গিয়ে ক্যারাবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে চিলি-র সাথে সাক্ষাতলাভ করলেও সেই বারের যাত্রায় ইউরোপে ফিরে এলে সাথে করে তিনি কিন্তু লঙ্কা আনেন নি – যদিও তিনি লিখে রেখেছিলেন।  এর পরের অভিযানে ১৪৯৫ সালে আবার গিয়ে ফেরার সময় স্পেনে আনা হল চিলি – তবে কলম্বাস নিজে কিন্তু আনেন নি যদিও ইতিহাস তাঁর নামেই চালায়। আসলে সেই লঙ্কা সাথে করে এনেছিলেন কলম্বাসের অভিযানের ডাক্তার ডিয়াগো আলভারেজ – তবে তিনি চিলি খাবার থেকেও বেশী আগ্রহী ছিলেন তাদের ঔষুধীয় গুণাগুণের জন্য। তাই তিনি সেই যাত্রায় ইউরোপে ফিরে এলে সাথে হরেক রকমের এবং হরেক রঙের পেপার নিয়ে আসেন। 

     

    আগে যেমন উল্লেখ করেছিএর কিছু বছরের মধ্যেই ভাস্কো-দা-গামা ভারতের সাথে সমুদ্রের যোগাযোগ পথ আবিষ্কার করে ফেলেন – এর পরেই শুরু হয়ে যায় এশিয়ার সাথে ইউরোপের মশালার বাণিজ্য – ভারত/এশিয়া থেকে ইউরোপীয়ানরা নিয়ে যেতে লাগল নাট-মেগদারুচিনিকালো-মরিচ এবং এর বদলে ইউরোপ থেকে অন্য নানা ফল/গাছ ভারতের মাটিতে প্রথম পদার্পণ করল – লঙ্কাট্যামেটোআলু – এই সবই তার উদাহরণ।  এখনকার হিসেব মত প্রায় ২০০ প্রজাতির ক্যাপসিকাম পাওয়া যায় এখন – সর্বাধিক জনপ্রিয় হল চিলি-পেপার (লঙ্কা বলি আমরা যাকে)পাপরিকা (মিষ্টি প্রজাতির)ক্রিসমাস পেপার (রান্নায় সৌখিনতার হেতু ব্যবহৃত) এবং বেল-পেপার (একটু ঝাল ঝাল পেপার)।

     

    ইউরোপে চিলি এসে গিয়েই কিন্তু লোক জন খেতে শুরু করে দেয় নি প্রথম থেকে। প্রথম দিকে কেবল বোটানিক্যাল গার্ডেন এবং বাগান সাজাবার কাজে এই চিলি-পেপার গাছ লাগানো হত।  এই দিয়ে রান্না করার কথা প্রথমে কারো মাথায় আসে নি যতদিন না স্পেন এবং পর্তুগালের মোনাষ্ট্রির মঙ্ক-রা এই নিয়ে নাড়াঘাঁটা শুরু করেন। তখনকার দিনে খাবারে ঝাল ঝাল আনার জন্য ব্যবহার করা হত শুরু কালো মরিচ। কিন্তু সেই কালো মরিচ এতই দামী ছিল যে কিছু কিছু দেশে তো বিনিময় মুদ্রা হিসাবে এই মরিচ ব্যবহার করা হত! এত যার দাম তা কি করে আর কিনে খাবে গরীব সাধু সন্ত! এরা নিজেদের বাগানা লাগানো লঙ্কা গাছের লঙ্কা নিয়ে রান্নায় ট্রাই করে দেখলেন – বাঃ বেশ ব্যাপার তো! খাবারে বেশ ঝাল ভাব আনা যাচ্ছে এই চিলি দিয়ে! সস্তায় মরিচ-কে প্রতিস্থাপন করার কাজেই এই ভাবে লঙ্কার ব্যবহার শুরু হল রান্নায়।  এই ভাবে রান্নায় লঙ্কার প্রথম ব্যবহার চালু হবার ৫০ বছরের মধ্যে স্পেন এবং পর্তুগাল থেকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ল লঙ্কা।

     

    দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শুধু ভারতেই নয়লঙ্কার ব্যবহার ছড়িয়ে পড়ল চীন – এবং তার থেকে সুদূর জাপানেও।  এই সব দেশেই খুব তাড়াতাড়ি রান্না ঘরে এক গুরুত্বপূর্ণ স্পাইস হিসাবে লঙ্কা পরিচিত হয়ে গেল।  অবশ্যই প্রথম দিকে কেবল বড়লোকেরাই লঙ্কা ব্যবহার করতে পারত – কিন্তু খুব তাড়াতাড়িই সাধারণ লোকেদের মধ্যেও সহজলভ্য হয়ে উঠল লঙ্কা।   

     

    তাহলে কি লঙ্কা দিয়ে শুধুই রান্না হত এর ব্যবহার ছড়িয়ে পড়ার পরতাই কি আবার হয় – একটা জিনিস জনপ্রিয় হয়ে উঠলে তাকে তার প্রাইমারী কাজ ছাড়াও সেকেন্ডারী কাজে লাগাবার প্রচেষ্টা মানুষের অনেকদিনের। তাই চিলি শুধু খাবার বা মেডিসিনের কাজে কেন – ইউরোপে ভ্যাম্পায়ার তাড়াবার কাজেও নাকি পাবলিক লঙ্কার ব্যবহার শুরু হয়েছিল। এমন ভাব যে এত ঝাল টের পেয়ে ভূত/ভ্যাম্পায়ার পালাবে! আমদের ভারতই বা বাদ যায় কেন – আসামের দিকে নাকি হাতি তাড়াবার কাজে লঙ্কা ব্যবহার করা হয়! এছাড়া লঙ্কা দিয়ে বানানো স্পেশাল ড্রিংকস খেয়ে আগের রাতের মদের খোঁয়ার ভাঙানো (যার গাল ভরা নাম হ্যাঙওভার) সারা পৃথিবীতে খুবই প্রচলিত।  চিলি নাকি ঢুকিয়ে ফেলা হয় বিউটি প্রোডাক্টেও – মেকাপ কিট ব্লাসারে চিলির ব্যবহার আছে।  লঙ্কা খেয়ে ঝাল লেগে চোখ-মুখ-গাল লাল হতে দেখেছি হামেশাই – কিন্তু গালে লঙ্কাগুঁড়ো মেখে ব্লাস করা! কত কি যে জানার আছে। লঙ্কার আর একটা অদ্ভূত ব্যবহার হল চোখের ড্রপ হিসাবেচোখে চিলির ড্রপ দিলে নাকি মাথা যন্ত্রণা সেরে যায়।  বাচ্ছাদের আঙুল চোষা বন্ধ করতে এই লঙ্কার গুঁড়ো দিয়ে বানানো কিছু তাদের হাতে লাগিয়ে দেবার পদ্ধতিও মানুষ ব্যবহার করেছে।    

     

    আজকের দিনে ভারত হচ্ছে পৃথিবীর মধ্যে চিলি উৎপাদন এবং রপ্তানীর ক্ষেত্রে এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ।  আগেই লিখেছি আমাদের দেশে চিলি নিয়ে আসে পর্তুগীজরা – তাহলে তার আগে আমরা ভারতীয়রা চিলি-র মতন কিছু খেতাম কিআমাদের দেশে চিলি ছিল নাকিন্তু ছিল ‘পিপালি’ (লম্বা পেপার)।  এই লম্বা পেপার আমাদের বাংলায় বহুকাল ধরেই প্রচলিত ছিল১৬০০ শতকের পরে মালাবার কোষ্টেও এই লম্বা পেপারের চাষ হতে শুরু করে।  এক ফরাসী ব্যবসায়ীর লেখায় পাওয়া যায় সেই সময়ে মুসলিম স্টাইলে পোলাও বানাতে নাকি ভারতে ব্যপক ব্যবহার হত এই পেপার।  পর্তুগীজরা চিলি পেপার ভারতে নিয়ে আসার পর ১৬০০ শতাব্দীতে বেশ কিছু চিলি পেপার এবং পিপালি এই দুইই ব্যবহার করা হত রান্নায় একে অপরের প্রতিস্থাপক হিসাবে। কিন্তু দেখা গেল চিলি পেপার চাষ করা বেশ সোজা পিপালি-র থেকে – খেতেও বেশী ঝাল ঝাল। তাই ক্রমে ক্রমে পিপালির ব্যবহার কম গিয়ে শুধু চিলি-পেপার আধিপত্য বিস্তার করল ভারতীয় রান্নায়। 

     

    তাহলে ভারতে কি কি ধরণের চিলি-পেপার পাওয়া যায় এখনবৈজ্ঞানিক ভাবে গুণলে হয়ত অনেক – কিন্তু সাধারণ ভাবে মূলত চার ভাগেই ভাগ করা হয় – লাল মির্চহরি মির্চদেগি মির্চ (পাপরিকা) এবং শিমলা মির্চ (সুইট বেল পেপার)।  আরো প্রজাতির মধ্যে আছে –

     

    বার্ডস আই চিলি – মিজোরামের দিকে উৎপাদিত হয় মূলতমনিপুরের কিছু জায়গাতেও

    বাদাগি – কর্ণাটকেলাল রঙের

    এলাচ্চিপুর সান্নম-এস ৪- মহারাষ্ট্রে এটা পাওয়া যায়।

    গুন্টুর সান্নম এস-৪ – অন্ধ্র প্রদেশের গুন্টুরে

    হিন্দপুর এস ৪ – এটাও অন্ধ্রে মূলত

    জ্বালা – গুজরাটে

    কাঁথারি হোয়াইট – কেরালাআইভরি রঙের

    কাশ্মির চিলি – হিমাচল প্রদেশে

     

    ভাস্কো-দা-গামা ভারতে আসার মাত্র ৩০ বছরের মধ্যেই বিপুর উদ্যমে লঙ্কা চাষ শুরু হয়ে যায় ভারতেপ্রথম শুরু হয় ভারতের পশ্চিম ঘাটে। তখনকার দিনে এদের বলা হত গোয়াই মির্চনাম থেকে অনুমান করা যায় যে এটার চাষ গোয়া থেকেই শুরু।  সেখান থেকে লঙ্কার চাষ ছড়িয়ে পরে প্রথমে দক্ষিণ ভারতে এবং তার পরে উত্তর ভারতে।  কথিত আছে যে ছত্রপতি শিবাজী যখন মুঘোলদের চ্যালেঞ্জ করতে উত্তরে রওনা দিলেনতার সাথে সাথেই লঙ্কার অনুপ্রবেশ ঘটেছিল উত্তর ভারতে। এর সাথেও জুড়েছে লোকগাথা – শিবাজী যে এত পেন-ইন-দ্যা-অ্যাশ হয়েছিলেন মুঘোলদের এবং তাদের পরাজিতও করেছিলেন তার মূলে ছিল লঙ্কা! এই লঙ্কা খেয়ে খেয়েই নাকি মারাঠা বাহিনী এত ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল!

     

    একেবারে প্রথম দিকে এই চিলি-পেপার দিয়ে মূলত চাটনী বা আচার বানান হত – ক্রমশ সাধারণ রান্নাতে লঙ্কার ব্যবহার ঢুকে যায়।  তবে লঙ্কার প্রসারে বৃটিশরাও কিছু অবদান রেখেছিল বৈকী।  সেই সব কচাকচিতে ঢুকছি না এখন – আলুরাঙালু এবং আরো নানাবিধ আমেরিকান গাছাপালার/সব্জীর প্রজাতির প্রসারে ব্রিটিশরা বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলবিশেষ করে পূর্ব-ভারত তথা বাংলায়।  ভারতে চিলি-পেপার এখন সব থেকে বেশী উৎপাদিত হয় অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুরে – ভারতের সমগ্র উৎপাদনের প্রায় ৩০% আসে কেবল মাত্র এই জায়গা থেকেইআর সমগ্র অন্ধ্র ধরলে ভারতের ৭৫ ভাগ লঙ্কার উৎপাদন এখানেই।  ২০১৬ সালের হিসাবে সারা পৃথিবীতে গ্রীন চিলি উৎপাদিত হয়েছিল প্রায় তিন কোটি পাঁচ লক্ষ টনের মত।   গ্রীন চিলির উৎপাদনে চীন সবার উপরেঅর্ধেকের বেশী গ্রীণ চিলি ওখান থেকে আসে।  আর শুকনো চিলি-পেপার হিসেব করলে পৃথিবীতে প্রায় চল্লিশ লক্ষ টন এর উৎপাদন – এর মধ্যে ভারতের অবদান প্রায় ৩৬%।  ভারত থেকে এই চিলি-পেপার রপ্তানী হচ্ছে আমেরিকাকানাডাইংল্যান্ডসিঙ্গাপুরজার্মানিমালয়েশিয়া এই সমস্ত দেশে।

     

    আচ্ছা এই যে এত প্রজাতির লঙ্কার (চিলি-পেপার) এর কথা বললাম – সেই অ্যাজটেক সভ্যতা থেকে আজকের দিনের অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুর – এই জিনিসের মূল অবদান একটু ঝাল প্রদান করা খাবারে – তাহলে কোন লঙ্কা বেশী ঝাল তাই নিয়ে কি কোন কম্পিটিশন বা গাইডেন্স থাকবে নাসেটা না থাকলে কি করে বুঝবেন যে কোন লঙ্কা কেমন ঝালআমার মতন পাবলিককে দিয়ে টেষ্ট করিয়ে জানাতে বললেই তো চাপ! কারণ আমি একদমই ঝাল খেতে পারি না – সমস্ত লঙ্কাই আমার কাছে প্রবল ঝাল! কিন্ত তা বললে তো হবে না – আরো বাকি অনেক কিছুর মতই এই ঝাল মাপার স্কেলও আমরা বানিয়ে নিয়েছিযার নাম ‘স্কোভিল স্কেল’।  আর এই স্কেলে মাপ হচ্ছে ‘স্কোভিল হিট ইউনিট’ (SHU)  - আমারিকান ফার্মাসিষ্ট উইলবার স্কোভিল এর নাম এই স্কেল। 

     

    বেশী টেকনিক্যাল ব্যাপারে ঢুকবো না – ছোট্ট করে বলে নিই এই স্কোভিল হিট কেমন করে মাপা হয়।  শুকনো চিলি পিপারের গুঁড়ো নিয়ে অ্যালকোহলে দ্রবীভূত করা হয় তার থেকে হিট কম্পোনেন্ট-টা (যেটাকে বলা হয় ক্যাপসাইসিনয়েড) নিষ্কাষণের জন্য। এবার এটাকে ক্রমে পাতলা (ডায়ল্যুশন) করা হয় চিনির দ্রবণ দিয়ে।  ক্রমশঃ ওই ঝাল কম্পোনেন্টের ঘনত্ব কমাতে থাকা হবে – এবং সেই তরল দেওয়া হবে পাঁচ জন এক্সপার্ট টেষ্টারকে টেষ্ট করতে।  ক্রমশঃ কমতে থাকা ঘনত্ব কমতে কমতে যখন পাঁচ জনের মধ্যে নূন্যতম তিন জন আর ঝাল টের পাবেন না একেবারেই তখন থামা হবে।  চিলি-পিপারের যে হিট লেভেল তা ঠিক হবে এই ডায়ল্যুশনের উপর ভিত্তি করে – ১০০ SHU  এর গুণিতকে ঝাল রেটিং দেওয়া হবে।  তাহলে একবার দেখে নেওয়া যাক বিভিন্ন চিলি-পিপারের ঝালের র‍্যাঙ্কিং কেমন

     

    বেল পেপার -   ০ SHU

    নিউ মেক্সিকো গ্রীন চিলি -  ০-৭০,০০০ SHU

    ফ্রেসনোহ্যালিপিনো -  ৩৫০০-১০,০০০ SHU

    সায়ানে -  ৩০,০০০ -৫০,০০০ SHU

    পেরি পেরি -  ৫০০০০-১০০,০০০ SHU

    হাআনেরোস্কচ বনেটবার্ডস আই -  ১,০০০০০-৩,৫০০০০ SHU

     

    অফিসিয়ালি (গিনেস বুক অফ রেকর্ড) পৃথিবীর সব থেকে ঝাল চিলি-পেপার বলে মানা হয় আমেরিকার ‘কারোলিনা রিপার’কে (১৫৬০০০০ SHU), আনঅফিসিয়ালি এই খেতাব হল আমেরিকার ‘পেপার-এক্স’ এর (৩২০০০০০ SHU)।   এরপরে আছে ইংল্যান্ডের ‘ড্রাগনস্‌ ব্রেথ’ (২৪০০০০০ SHU) – আমাদের ভারতের ‘ভূত জলোকিয়া বা ঘোষ্ট পেপার’ ও কম যায় না (১৫৮০০০০ SHU)!

     

    একটা সাধারণ ভুলের ব্যাপারে সতর্ক করি - অনেকেই আমরা ভুলে করে লঙ্কা চিবিয়ে ফেলে হু-হা করতে করতে এক গ্লাস জল খেয়ে ফেলি! এই ভুলটা করবেন না – জলের সাথে সেই ঝাল ভাব আপনার গলাতেও চাড়াবেশুধু মুখ নয়এবার আপনার গলাও জ্বলবে! এটা না করে বরং জল নিয়ে কুলকুচি করে ফেলে দিন এবং বারবার রিপিট করুন।  তবে সব থেক ভালো হয় ঘন দুধ হাতের কাছে কিছু থাকলে – এটা মুখে নিয়ে কুলকুচি করে ফেলুন।  এছাড়া রুটি বা ভাত হাতের কাছেও থাকলে তা খেতে পারেন – এরা লঙ্কার হিট অনেকটা শুষে নেবে।  

     

    পরিশেষে হালকা করে এটা বলার যে মেক্সিকো অঞ্চলের লোকজন গত পাঁচ-ছয় হাজার বছর ধরে লঙ্কা খাচ্ছে।  আর ওদিকে আমরা ভারতীয়রা মাত্র ৫০০ বছর লঙ্কা খেয়েই ‘আমরা আসল লঙ্কাখোর’ বলে দাবী দাওয়া করতে শুরু করেছি! তাই বলি কি লঙ্কা ভালোবাসেন ঠিক আছেকিন্তু আশে পাশে মেক্সিকান থাকলে এই নিয়ে বেশী মুখ না খোলাই ভালোওরা আরো বেশী লঙ্কাখোর!   


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ০২ এপ্রিল ২০২১ | ৩৭৩১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • b | 14.139.196.12 | ০২ এপ্রিল ২০২১ ২২:৫৫104418
  • ভুত জলোকিয়া আসলে  ভোট (তিব্বতী ) লঙ্কা। সেখান থেকে বর্ণ বিপর্যয় হতে হতে ভূত (অসমিয়াতে ত আর ট এর উচ্চারণ কাছকাছি ) হয়ে গেছে। এখানে একটা প্রমাণ দিলাম।


    https://www.google.com/search?client=firefox-b-d&q=bhoT+jalokia+restaurant

  • সম্বিৎ | ০২ এপ্রিল ২০২১ ২৩:২০104419
  • সুকিকে একেবারেই পছন্দ করছিনা। লংকা নিয়ে আমিও একটা লেখা লিখছিলাম। "কেমনে ব্যাটা পেরেছে সেটা জানতে"।

  • সম্বিৎ | ০২ এপ্রিল ২০২১ ২৩:২১104420
  • লেখাটা যথারীতি সুকির অন্যান্য লেখার মতই ভাল। তাই আরও অপছন্দ করছি সুকিকে।

  • :|: | 174.251.169.217 | ০৩ এপ্রিল ২০২১ ০৪:৩৭104427
  • সুকিবাবু এইখানে লেখা উচিৎ না। তবু নিমোর টই খুঁজতে আলস্য লাগছে বলে এখানেই লিখলাম। ভোটে নিমোর জনতার আশীৰ্বাদ পাবার সম্ভবনা কার সব চেয়ে বেশী? এমনিই জানতে মঞ্চায়। 

  • সুকি | 49.207.197.3 | ০৩ এপ্রিল ২০২১ ০৮:৩৪104429
  • বি-দা, ভালো হল জেনে। আমি তো এই ভূত লঙ্কার ব্যাপারে কিছুই জানতাম না আগে!  


    ন্যাড়াদা, আরে তাই নাকি? হয়ে যাক তাহলে লঙ্কা নিয়ে তোমার লেখাটা। আমি আর কতটুকু লিখলাম - আরো কত কি ইন্টারেষ্টিং ব্যাপার আছে লঙ্কা নিয়ে!


    :|: এখানে ভোট নিয়ে কিছু লিখলেই টই বেলাইন হয়ে যাবে। ভোট নিয়ে একবার কিছু শুরু হয়ে গেলে সেটা আর সামলানো যাবে না।  

  • মনোজ রায়। | 2402:3a80:a8b:436f:0:6e:b8a4:ba01 | ০৩ এপ্রিল ২০২১ ১০:০৭104432
  • এটা তো পুরো Research paper হয়েছে।


    এককথায় দারুন

  • :|: | 174.251.169.217 | ০৩ এপ্রিল ২০২১ ১০:৪৪104434
  • নানা এখানে লিখতে বলিনি। নিমোর টই-তে ভোটের গপ্পো পেলে হতো -- এইই মনে করছিলুম।

  • :|: | 174.251.169.217 | ০৩ এপ্রিল ২০২১ ১০:৫১104435
  • "ভাবতে পারছেন যে মাত্র পাঁচশ বছর আগেও আমরা ভারতীয়রা আলু এবং লঙ্কা কি জিনিস জানতাম না!"


    মানে শচীমা ​​​​​​​নিমাইকে কাঁচা লঙ্কা দিয়ে মেখে আলুভাতে খাওয়াননি? ​​​! 

  • সম্বিৎ | ০৩ এপ্রিল ২০২১ ১১:০৬104436
  • সেটা বোধহয় পুরো ঠিক নয়, পিপ্পলি বলে দেশজ লঙ্কা ছিল, যার থেকে পেপার নাম এসেছে। সাউথ আ্যমেরিকান লংকা আসায় তার গৌরব একেবারেই চলে যায়।

  • অনিন্দিতা | 160.202.36.48 | ০৩ এপ্রিল ২০২১ ১১:১১104437
  • ঝাল ঝাল জিনিস নিয়ে লেখাটা কিন্তু মিষ্টি মিষ্টি , অতি সুস্বাদু। পড়তে ভাল লাগল। 


    ছবিটা দেখে আমাদের দেশেই শিলং-এ দেখা নানা রকম নাগা মরিচের বাজারের কথা মনে পড়ে গেল। 

  • Amit | 121.200.237.26 | ০৩ এপ্রিল ২০২১ ১১:২৮104438
  • জব্বর লেখা সুকি। স্কোভিল টেস্টিং নিয়ে একটুখানি উইকি ঘেটে এলুম। কিছুটা কিন্তু ম্যানুয়াল ডিপেন্ডেন্ট।  অবসোলুট স্কেল নয় যতই এক্সপার্ট হোক।  পারসন টু পারসন ভ্যারি করতে পারে । টাইট্রেশন মেথডের মতো ডাইরেক্টলি ক্যাপসাইসিনয়েড- % বা পিপিএম মাপা গেলে ​​​​​​​বেশ ​​​​​​​হতো। একটাই ​​​​​​​স্ট্যান্ডার্ড ​​​​​​​স্কেল ​​​​​​​সব ​​​​​​​দেশের ​​​​​​​জন্যে। 


    অন্ধ্র তে আমার বাড়ি বলে ওদের ঝাল খাওয়ার স্বভাবটা জানা আছে। একখান অফিস পিকনিকে এক্কেরে এক কেস হয়েছিল তোমার মতো।  জন্যে জন্যে এসে লঙ্কা ঢেলে গেছে।  ফাইনাল আগুনমার্কা প্রোডাক্ট টা খেয়ে যে কারোর এন্তেকাল হয়নি , সেটা  নেহাতই কপালজোরে। 

  • Prativa Sarker | ০৩ এপ্রিল ২০২১ ২০:০১104452
  • দুর্দান্ত লেখা। ঝাল খাই না, তবু পড়তে পড়তে জিভে যেন লংকার আস্বাদ পেলাম। বাপ রে বাপ !

  • শিবাংশু | ০৩ এপ্রিল ২০২১ ২২:৫০104456
  • এতো বজরংবলীর লংকাকাণ্ডের ধারাবিবরণী। পড়ার পর একটা রসগোল্লা  খেয়ে তর্পণ করলুম। জীয়ো ...

  • kk | 97.91.195.43 | ০৩ এপ্রিল ২০২১ ২৩:২০104458
  • বা রে, এত কিছু জানতামই না লংকা নিয়ে! কিন্তু ঐ বেদম ঝাল লংকাগুলোর মধ্যে 'ত্রিনিদাদ স্করপিয়নের' নামও আসবে না?

  • দু | 47.184.33.160 | ০৩ এপ্রিল ২০২১ ২৩:৩৫104459
  • খুবই উপভোগ্য

  • সুকি | 49.207.216.115 | ০৪ এপ্রিল ২০২১ ০৯:০১104465
  • সবাইকে ধন্যবাদ লেখা পড়ার জন্য। 


    শচীমাতার নিমাইকে আলু-কাঁচা লঙ্কা না খাওয়াবার চান্সই বেশী - আমরা আজ যে গুলো আলু বা লঙ্কা বলে চিনি,তখন তা না থাকরই সম্ভাবনা বেশী - দেশজ ভার্সন হতে পারে।


    অমিতাভদা স্কেলটা রিলেটিভ তো বটেই। তবে ইচ্ছে করেই মনে হয় আরো বেশী সায়েন্টেফিক করে নি,একটু ধোঁয়াশা থাকলে জমকালো হয়। 

  • দীপক দাস | 2402:3a80:1c3d:ffe8:f1c5:cced:b2b5:3a9d | ০৪ এপ্রিল ২০২১ ১১:৪১104472
  • সুন্দর লেখা। খাদ্যের ইতিহাস দারুণ আকর্ষণীয় হয়। আরও খাদ্য সফর চাই। 

  • Ramit Chatterjee | ০৪ এপ্রিল ২০২১ ১৪:৪৫104477
  • দুর্ধর্ষ স্বাদ এসেছে, ঝাঁজে একদম গরমাগরম ।

  • Abhyu | 47.39.151.164 | ০৪ এপ্রিল ২০২১ ১৮:১৯104480
  • বেশ বেশ। খুশি হলাম লেখাটা পড়ে। আর হ্যাঁ, নিমোর ইলেকশন নিয়েও আলাদা একটা লেখা হয়ে যাক।

    আপনারা কেউ চাইনীজ পেপারকর্ণ পছন্দ করেন? আদতে ওটা একটা ফুল। (কেকে এখন আর মুর্গী খায় না নইলে ঐ দিয়ে খাসা একটা রেসিপি দিতে পারতাম।)

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে মতামত দিন