এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  বিবিধ

  • ভয়

    dd লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ২৮ আগস্ট ২০১৫ | ৬৫৬ বার পঠিত
  • ধড়মড় করে উঠে বসলো অজয়। ভয়ার্ত চিৎকার করে উঠলো। নিমেষে ঘুম ভেঙে গেলো দীপার।
    "ক্কি ?" উৎকন্ঠায় গলা বসে গেছে দীপার "কি হোলো?"
    "শুনতে পাচ্ছো?"
    "পাচ্ছি" দীপা বলে। একটা শব্দ। ঠিক চেনা যাচ্ছে না। কারুর আওয়াজ। কোনো দুর্বোধ্য ভাষায় কেউ বিড় বিড় করছে। না, মনে হচ্ছে গান গাইছে। কান পেতে শোনে দীপা। কেউ যেন অনেক দুরে চেঁচিয়ে উঠলো। অজয়ের বুকে কান পাতে। হৃতপিন্ডের ধুকধুক আওয়াজের
    সাথেই অস্ফুট একটা হাসি। শুনতে পায়।
    "আমার বুকের মধ্য থেকে। কেউ। কিছু। কথা বলছে।"
    দীপা উত্তর দেয় না। শুধু অজয়ের বুকে কান পেতে স্থানু হয়ে থাকে।

    ঝাঁঝাঁ গ্রীষ্মের দিনে আদিগন্ত খোলা মাঠে যেমন হাওয়ায় ভেসে আসে দুর দুরের কিছু আওয়াজ। হাওয়ায় উড়ে উড়ে যায়। তেমন । কিছু শোনা যায়। কিছু বোঝা যায়। একটা চাপা গুমড়ানোর পর ধীরে সেই আওয়াজ শেষ হয়। দীপা টের পায় কি জোরে অজয়ের হৃতপিন্ড ছুটে চলেছে - যেন মাঝরাতে ছুটে চলা ট্রেনের মতন। চরাচরে আর কোনো আওয়াজ নেই। আতংকে ত্রাসে নিঃশ্বাস নিতেও যেন ভুলে গেছে তারা দুজনে।

    বুকের মধ্য থেকে। কেউ কথা বলছে। কাঁপতেও ভুলে যায় দীপা। পাথরের মতন শুয়ে থাকে অজয়। দুজনেই শুনছে। কোনো ভুল নেই। হাওয়ায় হাওয়ায় ভেসে ভেসে শব্দ মিলিয়ে যায়। থেমে যায় একেবারে।

    নিশুতি রাতের নৈশঃব্দ। তাঁদের আচ্ছন্ন করে। মুর্ছিত না কি অবশ্রান্ত - ঘুমিয়ে পরে দুজনেই।

    ***************

    দীপা বলেছিলো "কেনো এতো চিন্তা করছো? নীপুও বার বার বলে গেলো, বেশী চিন্তা ভাবনা করলে শরীর ধসে যাবে। মামুকে বলো টু টেক থিংস ইজী"
    অজয় করুন হেসেছিলো " সে তো সবাই বলে। ডোন্ট ওরি। ঠিক হয়ে যাবে। সব ঠিক হয়ে যাবে। আর এখন তো সব অসুখই স্ট্রেস রিলেটেড। সাইকোসোমাটিক।"

    "তুমি ভীষন অন্যমনষ্ক হয়ে গেছো। কাল রাতেই নিশ্চই বাইরের ঘরে অনেকক্ষন পড়লে। আজ সকালে দেখি চারটে বই সোফার উপর। অমনি পরে রয়েছে। না তুলেই ঘুমাতে চলে এসেছো। " প্রচন্ড অবাক হয়ে যায় অজয়। কাল রাতে তো দীপা শুয়ে পরার পরেই অজয় শুয়ে পরেছিলো। কোনো বই তো পড়ে নি।

    দীপা বকবক করতেই থাকে "আর একসাথে চারটে বই... এতো কি তোমার পড়ার থাকে,শুনি?" অজয় প্রতিবাদ করতে গিয়েও পারে না। স্পষ্ট মনে আছে। কাল রাতে ঘড়িতে এগারোটা বাজতেই শুতে গিয়েছিলো অজয়। কোনো ভুল নেই। তাহলে বাইরের ঘরের সোফায় বইগুলো রাখলো কে ?

    মনে পরলো দুপুর বেলা বিরক্ত হয়ে দীপা ঘরে ঢুকে বল্লো "কি হলো? ডাকছো কেনো?"

    অজয় তো হাঁ। " আমি তো ডাকি নি তোমায় ?"
    " ইয়ার্কি মারছো?" স্পষ্টঃই খুব বিরক্ত হয় দীপা। "চিৎকার করছিলে দীপ্যা,দীপ্যা বলে। যেমন চেঁচাও। দীপ্যা।"
    থতমত খেয়ে সামলে নেয় অজয়। এতইকি ভুলে যাচ্ছে সব কিছু? শর্ট টাইম মেমরি ফেইলিওর? ভয় লাগে অজয়ের। ব্রেন ক্যান্সার? অ্যালঝেইমার? কি জানি।
    আজকাল কতো অদ্ভুত অসুখের কথা শোনা যায়। কার ভুল হচ্ছে? দীপার না অজয়ের? সেদিন অজয় দেখলো বারান্দায় দীপা দাঁড়িয়ে আছে। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। চারতলা বাড়ীর বারান্দায় যেমন দাঁড়িয়ে থাকে দীপা আর অজয়। দেখে নীচে ব্যাস্ত মানুষের ভীড়। গাড়ী। রাস্তার কুকুর। ক্বচিৎ চোখে পরে পাখী। বসবার ঘরে বসে ক্লান্তিকর টিভিটা অফ করে অজয় ভাবলো -যাই,ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়াই দীপার পাশে। কিছুটা সময় তো কাটবে। সারাদিন বড় অশান্তি । অশান্তি। কবে যে মিটবে? কখনো কি মিটবে ? এ ভাবেই চিন্তায় ভাবনায় গিঁট পাকানো দড়ির মতন শুকিয়ে শুকিয়ে জ্বলে পুড়ে অবশেষে মরবে অজয়?
    বসবার ঘর থেকে দেখে দীপাকে। পিছন থেকে। সবুজ রঙের সালোয়ার কামিজ পরে ঝুঁকে দেখছে নীচের রাস্তাকে।

    ব্যালকনিতে যাবার আগে এক গ্লাস জল খাবার জন্য ডাইনিং স্পেসে ঢুকেই আঁৎকে ওঠে অজয়। চেয়ারে বসে একমনে বই পড়ছে দীপা। তাহলে বারান্দায় কে ? অস্ফুট প্রশ করেছিলো অজয় " তাহলে ও কে ? বারান্দায় ?"
    একমনে বই পড়ছে দীপা, উত্তর দেয় নি।
    ছুটে গিয়ে বাইরের বারান্দায় যায় অজয়। না কেউ নেই। কেউ না। তাহলে কাকে দেখেছিলো অজয় ? কে সে ? সবুজ রঙের সালোয়ার কামিজ পড়ে। চব্বিশ বছরের বিবাহিত যীবন। পিছন থেকে এক ঝলক দেখেই চিনতে পারে দীপাকে। সেই একই ভাবে ঝুঁকে পরে দেখছে নীচের রাস্তাকে। কে সে ?

    শীতল আতংকে ঘেমে ওঠে অজয়। কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারে না দীপাকে ।

    *******************
    সময় বড় খারাপ। অসময়। দুঃসময়। অজয়ের সময় আর কাটে না। আর কত দুশ্চিন্তা করবে মানুষ। আর কত অপেক্ষা করবে সুসময়ের জন্য।

    ঝট করে চোখে পরবে না। কিন্তু একটু নজর দিলেই দেখা যাবে বাড়ীর দেওয়ালে ফাটল। স্টিরিও মিউজিক সিস্টেম খারাপ হয়ে পরে রয়েছে অনেকদিন। সকালবেলাই গান চলতো বাড়ীতে। এখন শুধু নিঃশব্দ। ফ্যানের ব্লেডে ময়লা। আর্তনাদ করে চলে। কাপ প্লেট গুলো পুরোনো হয়ে গেছে। ময়লা আর তোলা যায় না। হতশ্রী।

    অলক্ষীর পায়ের ছাপ চোখে পরে। বাতাসে শুধু বিজ বিজ করে দুশ্চিন্তা আর ভয়ের গন্ধ।ঘরের মধ্যে নিথর হয়ে থাকে সন্ত্রস্থ জীবন। জানলা দিয়ে বাইরে তাকাতে ভয় করে।

    বিষাক্ত হলুদ রোদে পুড়ে যাচ্ছে দুনিয়া। কটু বাতাসে নাক জ্বালা করে। কি জানি কার কার কান্না কার ভয়ার্ত চিৎকার শুনতে পাবে।

    সন্ধ্যাবেলা শপিং করে বাড়ী ফিরলো দীপা। "শিগগিরই কফি করো। মাথাটা ধরে আছে"। অজয় বলেছিলো "টুটুর চিঠি এসেছে। বিরাট মেইল করেছে। এই উইকএন্ডে বেড়াতে গেছিলো। একটা গুহায়। তিনটে ছবিও পাঠিয়েছে। কিন্তু সে গুলো গুহার ছবি। দ্যাখো। কোথায় ওর নিজের ছবি পাঠাবে - তা না। আর লিখেছে বন্ধুর সাথে গেছিলো। আরে তাঁর নামটা তো দিবি।"
    দীপা অবাক হয়ে বল্লো "কিন্তু এখন তো ওর মেইল আসার সময় নয়। ওখানেতে এখন শেষ রাত। এইসময় তো ওর মেইল আসে না"

    "ঠিক। ঠিক। চিঠির টাইমটা খেয়াল করি নি।" কমপিটারে লগ ইন করে অবাক হয় অজয়। কোথায় গেলো চিঠি।

    "নিশ্চয়ই ভুল করে ডিলিট বাটন চেপে দিয়েছো?"

    পরের দিন সন্ধ্যাবেলায় টুটুর ফোন আসলে উচ্ছ্বসিত অজয় বলে "শোন রে। তোর আগের মেইলটা আমি বোধহয় ভুল করে মুছে দিয়েছি। ওটা আবার পাঠাস তো। আর কার সাথে গেছিলি?"

    টুটু অবাক হয়ে বলে "কোথায় বাবা? কোন মেইল? আমি তো বলেইছি এখন আমার ভীষন পড়ার চাপ।আমি মেইল করতে পারবো না। যখন সময় পাবো - ফোন করবো। ব্যাস। কোনো মেইল তোমাদের করিনি প্রায় দু সপ্তাহ হয়ে গেলো।"

    অজয় প্রায় চেঁচিয়ে ওঠে " তুই যাস নি? ঐ যে অতো বড় চিঠি লিখলি। এক বন্ধুর সাথে গেছিলি কেভ এক্সপেডিশনে। ছবি পাঠালি দুটো "

    টুটু একেবারে নির্বাক হয়ে যায়। তারপর বলে। খুব শান্ত গলায়। আস্তে আস্তে। " বাবা। আমি গত উইকএন্ডে কোথাও যাই নি। আমার এতো পড়ার চাপ চলছে। আর কোনো দিন কেভে তো আমি যাবওই না। বাদুরের দুর্গন্ধ। আর আমি তোমায় কোনো মেইলও করিনি। ছবিও পাঠাই নি। তুমি,তুমি কি আবলতাবল বকছো? মাকে দেও তো। মার সাথে কথা বলি"

    সন্ত্রস্থ অজয় ফোনটা দীপার হাতে দেয়। মা মেয়েতে অনেকক্ষন কি কথা বলে।

    নিঃশব্দ ডিনারের পর শুতে গেলে দীপা শুরু করে। "সেদিন আরতির সাথে বেড়োবো বলে খাটের উপর আমার কটকি শাড়ী আর ব্লাউসটা রেখে স্নান করতে গেলাম স্পষ্ট মনে আছে। স্নান করে এসে দেখি,এসে দেখি " গলাটা কেঁপে যায় দীপার" দেখি খাটের উপর আমার বালুচরী শাড়ী।, যেটা আমি প্রায় পাঁচ বছর পড়িনি। একেবারে ভিতর দিকে ছিলো। সেই শাড়ী খাটের উপর। আর আমার কটকী শাড়ীটা আলনায়"

    অজয় চুপ করে থাকে।" তুমি ছিলে না বাড়ীতে। তবে কে পাল্টে রাখলো আমার জামা কাপড় ?"

    গলা শুকিয়ে এসেছে দীপার। হাড় হিম করা ভয় তার মুখে। চোখে। "আর সেদিন দুপুর বেলা শুয়ে শুয়ে খবরের কাগজ পড়ছি - তখন স্পষ্ট শুনলাম কেউ গাইছে। অন্যমনষ্ক ছিলাম। মনে হলো দোতলা থেকে কেউ গাইছে। তখুনি মনে পরলো ওপরের তো কৃষ্ণানেরা থাকে। পরের সেকেন্ডেই টের পেলাম ওটা ,ওটা তো আমার গলা। হুবহু। আমার গলায় কেউ গাইছে। মধুমালতী ডাকে আয়। ঐ গানটা। স্পষ্ট শুনেছি। কেউ গাইলো। কে? কে গাইলো? কে ? "

    অজয়কে আঁকড়ে ধরে দীপা। " ওটা কার গলা? কে গেয়েছিলো ?"

    আতংকে কেমন ফ্যাসফ্যাসে গলা হয়ে গেছে দীপার।

    " আর আজ সকালে। তুমি খবরের কাগজ পড়ছিলে। আমি হঠাৎ দেখি - কি করে বোঝাবো। হঠাৎ দেখলাম। তোমার চোখ কাগজের উপর। তুমি পড়ছো একমনে। কিন্তু তোমার চোখের ভিতর থেকে আরেকটা চোখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তাকিয়ে আছি। সেই চোখটা চলে গেলো। আরেকটা চোখ।"

    তীব্র ভয়ে কুঁকড়ে যায় দীপা। তার সাদা মুখের দিকে তাকিয়ে খুব ফিস ফিস করে বলে অজয় "শেভ করতে গিয়ে আয়নায়।বুঝতে পারলাম আমার চোখের মনি কেমন কালো হয়ে আসছে। এক সেকেন্ডের জন্য সব কালো হয়ে গেলো। যেন কেউ আমার চোখের ভিতর থেকে পর্দা ফেলে দিলো "

    দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরে। তাদের শরীর উত্তাপ তাদের পরষ্পরকে শান্ত করে না। অশান্তিতে মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্য্যন্ত হৃৎপিন্ড স্তব্ধ করা ত্রাসে আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। ভয়ের অতল খাদে তারা পরতেই থাকে। অনন্ত সময়। স্তব্ধ হয়ে থাকে। কখন ঐ ঝিম ধরা ভয়ের মাঝে ঘুমিয়ে পরে। কখন জেগে উঠে কঁকিয়ে ওঠে। কখন জানি অজয় টের পায় তার হাতের নীচে দীপার কনুইএর কাছে ,দীপার চামড়ার নীচে কি যেন একটা ঘুড়ে বেড়াচ্ছে

    কুড়ি বছর আগে গর্ভবতী দীপার পেটে হাত রাখলে যেমন টের পেতো অজয়। টুটুর ভ্রুণের নড়া চড়া। সেরকম। একটা যেন ছোটো সাপের মতন। এঁকে বেঁকে। না। যেন অনেকগুলো। পিঁপড়ের মতন । এলোমেলো । নড়ছে। চরছে। চামড়ার নীচে।

    ************************

    "আমরা আর কোথাও যেতে পারবো না। এই ই শেষ পয়েন্ট। এর পর আর পথ নেই " অজয় বলে।"আগে আশে পাশে থাকতো। কাছাকাছি। টের পেতাম হঠাৎ ঘাড়ে নিঃশ্বাস পরলে। বা আয়নায় আচমকা একটা অজানা ছায়া পরলে।"

    দীপা বলে "আমি তো ভাবতাম চিন্তায় চিন্তায় তোমার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তারপর , তারপর....আমাকে ধরলো। আমাকেও। আমি বাড়ীর মধ্যে হেঁটে গেলে পায়ে পা মিলিয়ে শব্দ করতো। মনে হতো প্রতিধ্বনি। যেন আমার সাথে মার্চ করে চলছে।"

    "কিন্তু এখন সাহস বেড়ে গেছে। আমাদের অসহায়তা টের পেয়ে আমাদের শরীরে মনে .... সব যায়গায় ঢুকে গেছে "

    " আর আমাদের ফেরার উপায় নেই। তাও ভালো টুটু বাইরে। দুর দেশে। ওখানে হাত যাবে না নিশ্চয়ই। আমরাই শুধু জ্বলবো আর মরবো"।

    কাঁপা কাঁপা হাতে টোস্ট মুখে তোলে অজয়। টেবিলের চারিদিকে তাকাতে ভয় লাগে। একবার শুধু মুখ তুলে দেখে দীপা মাথা নীচু করে আছে। অজয়ের চোখে চোখ রাখতেও ভয় পাচ্ছে। যদি আবার অজয়ের চোখের ভিতর থেকে আরেকটা চোখ উঁকি মারে। দীর্ঘ জীবন একসাথে থেকে এতো চেনা চোখ, তার ভিতর থেকে উঠে এসে আরেক অজানা চোখ। দীপার দিকে দেখবে। আজানা চাউনি।

    কোথাও আশ্রয় নেই। অজয় তাকিয়ে দেখে। দেওয়ালের রং প্রায় উঠে এসেছে। দেখে। পর্দাগুলো ম্রিয়মান। খাবার টেবিলের দুটো চেয়ারের পা নড়বড় করছে, সাবধানে বসতে হয়। টেবিলের ল্যামেনাইট উঠে গেছে কয়েক যায়গায়। লুকানোর কোনো যায়গা নেই।

    " একটা স্যাংচুয়ারী দরকার। খুব দরকার। আমাদের। " বলে অজয় ।

    "যখন খারাপ সময় আসে, তখন এভাবেই আসে। একসাথে। একটানা। মনে হয় কবে কখন এই আতংকের রাত শেষ হবে। হয়। আবার কখনো কখনো হয় না " দীপা মুখ বুঁজে শুনে যায়।

    " কারুর জীবন শুধু পুড়েই যায়। জীবনে একদন্ডও শান্তি পায় না, সুখ পায় না। বিশ্রাম পায় না।"

    অজয় খেয়াল করে টেবিলের উপর রাখা জগের ভিতর জল কেমন কেঁপে কেঁপে যাচ্ছে। পুকুরের উপর জোরে হাওয়া দিলে যেমন হয়। চোখ ফিরিয়ে নেয় অজয়।

    চায়ের পেয়ালাও কাঁপে। থিরথির করে।

    " অথচ আমরা সুখে ছিলাম। কত গান হতো এই বাড়ীতে। কত লোক আসতো। খাওয়া দাওয়া। কত রাত পর্য্যন্ত হুল্লোর। প্রতিবেশীরা কমপ্লেইন করতো। আর এখন ? যেন কবরখানা " অজয় বলে। দীপা ঘাড় গুঁজে ,মুখ নামিয়ে। চোখে চোখ নেই।অজয় দেখে দেওয়ালের রং কেমন বদলে আচ্ছে। ঘরের দেওয়ালের হলদেটে সাদা রং বদলে একটা আবছায়া কুয়াশার মতন .... জালনা দিয়ে বাইরে দেখে। যেন পাঁশুটে মেঘের মতন।

    অজয় চিৎকার করে ওঠে।" দীপা, দীপা, মুখ তোলো। কি হয়েছে ? মুখ তোলো" অজয় চেয়ার ছেড়ে উঠতে পারে না ,শুধু আর্তনাদ করে । বিকৃত হয়ে আসে তাঁর আওয়াজ। "দীপা,মুখ তুলে চাও। তাকাও। আমার দিকে " হাঁপাতে থাকে।

    অবশেষে দীপা মুখ তোলে। গুমোট ঘরের রং মুছে যায়। দমবন্ধ করা ঘরের ভিতর ছায়া ছায়া ।

    অজয় দেখে এক অপরিচিত মুখ। মানুষের ? না কি মানুষের নয়? চেনা কেউ? শ্যাওলার মতন। কাদার মতন। গলে যাচ্ছে, আবার নতুন মুখ,মুখের মতন। শুধু দীপার চোখ দুটিকে চিনতে পারে। চব্বিশ বছরের চেনা দৃষ্টি।

    সারা বিশ্ব ভুবনের দুঃখে ভরে আছে চোখ দুটি। ফাইনালিটি। এর পর আর পথ নেই। এইখানে শেষ। সব শোকে জমিয়ে রেখেছে সেই দৃষ্টি।

    অজয় টের পায় কেমন ভাবে তার ও হাত পা বুক মুখ চুল চোখ নাক। সব। গলে যাচ্ছে। সে খুব চেষ্টা করে। চেষ্টা করে ধরে রাখতে। তাঁর অস্তিত্ব। কিন্তু পারে না। আঁধারে ভরে যায় সব কিছু। তরল দুঃখে ডুবে যায় অজয়ের মন। স্মৃতি। স্বত্তা।

    শেষবারের মতন টের পায়,স্পর্শ করে আতংককে। ভয় পায় শেষবারের মতন।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ২৮ আগস্ট ২০১৫ | ৬৫৬ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    চম - dd
    আরও পড়ুন
    ও শানওয়ালা - dd
    আরও পড়ুন
    দ্রোণ পর্ব - dd
    আরও পড়ুন
    কর্ণসংহার - dd
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • I | 192.66.94.221 (*) | ২৮ আগস্ট ২০১৫ ০৬:৫৫67712
  • দীপ্তেনদা? অ্যাঁ? এই লেখা? আমি বারবার ভাবছিলাম অন্য কোনো ডিডি।

    দিব্য হয়েছে!!!
  • sosen | 177.96.76.3 (*) | ২৮ আগস্ট ২০১৫ ০৮:০৫67713
  • !
  • 00. | 118.171.131.161 (*) | ২৮ আগস্ট ২০১৫ ০৯:১৬67714
  • বাপ্পো!!!
    ইল্লুত!!!!!
  • kumu | 132.161.251.254 (*) | ২৯ আগস্ট ২০১৫ ০১:০২67715
  • !!!!!
  • Du | 107.79.230.34 (*) | ২৯ আগস্ট ২০১৫ ০৩:০৬67716
  • উরেবাবা
  • | 11.39.15.61 (*) | ২৯ আগস্ট ২০১৫ ০৩:০৮67717
  • এই গল্পটা বোধহয় অলিন্দতে এরিয়েচিল। নাকি অন্য কোথ?

    খাসা গল্প।
  • কল্লোল | 125.242.176.33 (*) | ২৯ আগস্ট ২০১৫ ০৩:২৮67719
  • জ্জিও দীপ্তেন। ওহঃ কি লেখা মাইরী। ভয় ধরানো। এই দীপ্তেনকে আমি চিনতাম না। দারুণ হয়েছে।
  • dd | 116.51.140.152 (*) | ২৯ আগস্ট ২০১৫ ০৩:৪২67718
  • ঐতিহাসিকতাময়তার খাতিরে জানিয়ে যাই ,এই গল্পোটি বা এই আত্মজৈবনিক ভুতের ন্যারাটিভটি "এবংঅনলাইন" নামে একটি ইপত্রিকায় প্রাকাশিতো হয় বছোর চার পাচ আগে এবং সেটি পরের সংখ্যার থেকেই বন্ধো হয়ে যায়।

    এই প্রসংগে জানাই আমার সুলিখিত যুদ্ধ ইতিহাস "ইয়ো জিমা" উড়ালপুল নানে আরেক ই জিনে ছাবা হওয়া মাত্র সেটির ও এন্তেকাল ঘটে। কিন্তু গু চ'র দম আছে, ঘাবড়াবেন না। ইটি ঘাগু মেগেজিন।

    আরো জানাই এই উপরিউক্ত গল্পোটির ফিলিম রাইটের জন্য একতা কাপুর,তারানতৃনো স্পীলবার্গ ইত্যকার কেউ ইন্টেরেস্ট দেখায় নি। আমি এতে আশ্চর্য্য বোধ কচ্ছি।
  • Du | 107.79.230.34 (*) | ২৯ আগস্ট ২০১৫ ০৩:৪৫67720
  • সিনেমায় করতে পারবে কি এইটা?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত মতামত দিন