এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • প্রাক-মুসলমান যুগে বাংলার খণ্ডিতাবস্থা ও মুসলমান যুগে বাংলার একীভূতকরণ

    Sumit Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৯ জুলাই ২০১৮ | ২৭৮২ বার পঠিত
  • (বাংলায় কার্যকর রাজনৈতিক ঐক্য সর্বপ্রথম মুসলমান শাসকগণই প্রতিষ্ঠা করেন। বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ তৈরি, বাংলা ভাষার বিকাশ সাধন ইত্যাদি ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এর পূর্বে ক্ষুদ্র স্বাধীন রাজ্য ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাই ছিল বাংলার একটি বিস্তীর্ণ ভূখণ্ডের প্রধান বৈশিষ্ট্য। সম্প্রতি এই ওয়েবসাইটের একটি আলোচনা দেখে মনে হল এই বিষয়ে আলোচনা করার অবকাশ রয়েছে। তাই কেন বাংলার প্রাক-মুসলমান যুগ "ওরকম" ছিল, আর কেন মুসলমান যুগে বাংলার রাজনৈতিক অবস্থা "এরকম" হল সেটা নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করছি...)

    প্রাক-মুসলিম যুগের প্রাচীন বাংলার রাষ্ট্র-ব্যবস্থার তিনটি সুস্পষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে:
    ১। প্রাচীন বাংলা কােনও সর্ব-ভারতীয় সাম্রাজ্যের জন্ম দেয়নি। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলের অভিজ্ঞতার সাথে এর একটি সুস্পষ্ট পার্থক্য ধরা পড়ে। ঐ সব অঞ্চল ছিল বিশাল সাম্রাজ্যের কেন্দ্রভূমি।
    ২। বাংলার ভেতরেই রাজনৈতিক সংগঠনের শক্তি ও ক্ষমতার ক্ষেত্রে লক্ষণীয় আঞ্চলিক তারতম্য ছিল। প্রায়ই পাশের মহা-সাম্রাজ্যের প্রভাব পশ্চিম ও মধ্য বাংলা পর্যন্ত সম্প্রসারিত হত। অন্যদিকে পূর্ব ও দক্ষিণ বাংলার অভিজ্ঞতা হল আঞ্চলিক রাজনৈতিক খণ্ডায়ন। পশ্চিম ও মধ্য বাংলার মত এই অঞ্চলগুলোতে বাইরের মহান কোন সাম্রাজ্যের কর্তৃত্ব দেখা যায় নি, বরং এই অঞ্চলগুলো ছিল অনেকটাই স্বাধীন ও খণ্ডিত।
    ৩। এই অঞ্চলে শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকারের অস্তিত্ব ছিল না বলে, সবসময়ই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা লেগে থাকত। এই অঞ্চলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্য যেন বুনো ফুলের মতো ফুটে উঠত আর ঝরে পড়ত।

    বাংলার ইতিহাসে রাজনৈতিক খণ্ডায়ন এক গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য, কিন্তু গতানুগতিক বিশ্লেষণে তা অবহেলিত হয়েই থেকে গেছে। এ সব বিশ্লেষণের এজাম্পশন বা পূর্ব ধারণাগুলো এই যে, এ অঞ্চলের ইতিহাসের গতিধারা দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসের মূলধারার সাথে অভিন্ন। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে যা হয়েছে, বাংলাতেও যেন তারই প্রতিফলন ঘটেছে, যা সত্য নয়। জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিকগণ তাদের পূর্বপুরুষদের কীর্তিকে মহিমান্বিত করতে চেয়েছেন। যেমন, তাদের অনেকের মতে, খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীর গঙ্গাঋদ্ধি সাম্রাজ্য থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর মোগল সাম্রাজ্য পর্যন্ত বাংলা অঞ্চলের রাষ্ট্রব্যবস্থা দু'হাজার বছরের বেশি সময় জুড়ে বিশাল সাম্রাজ্যের কর্তৃত্বাধীন ছিল (R C Majumder, History of Bengal vol 1)। এ সব সাম্রাজাের মধ্যে কিছু কিছু সাম্রাজ্যের উদ্ভব ঘটেছিল উত্তর ভারতে, আর বাংলা পর্যন্ত তাদের প্রভাব বিস্তৃত ছিল। তবে মনে করা হয় যে, অধিকাংশ সাম্রাজ্যই বাংলার মাটিতে জন্ম লাভ করেছিল। বাংলার এই সাম্রাজ্যকেন্দ্রিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ শিলালৈখিক বা এপিগ্রাফিক প্রমাণাদি দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এই ব্যাখ্যা এই অঞ্চলের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সত্যিকার উপলব্ধিকে ব্যাহত করেছে।

    সাধারণত, কিবংদন্তির গঙ্গাঋদ্ধি সাম্রাজ্যকে বাংলার জনগণের রাজনৈতিক প্রতিভার আদি সাফল্যের উদাহরণ হিসেবে উপস্থপন করা হয়ে থাকে। ধ্রুপদী লেখকগণ গঙ্গাঋদ্ধিকে দক্ষিণ এশিয়ার 'সবচেয়ে মহান জাতি' হিসেবে বর্ণনা করেছেন। জনশ্রুতি অনুসারে মহামতি আলেক্সান্ডার গঙ্গাঋদ্ধি সাম্রাজ্যের ভয়ে তার অগ্রযাত্রায় বাঁধাগ্রস্ত হয়েছিলেন৷ ধ্রুপদী লেখকবৃন্দ পূর্ব-ভারতে সমসাময়িক আরেকটি সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব সম্পর্কে বলেন, যা প্রাসিয়য় বলে পরিচিত। প্রাসিয়য় ও গঙ্গাঋদ্ধি কি একই সাম্রাজ্যের অংশ ছিল নাকি দু'টি স্বাধীন সাম্রাজ্য ছিল, তা স্পষ্ট নয়। উদাহরণস্বরূপ, কার্টিস গঙ্গাঋদ্ধি ও প্রাসিয়য়-কে একই রাজার অধীনে দু'টি জাতি বলে উল্লেখ করেছেন। গঙ্গাঋদ্ধি যদি একটি স্বাধীন রাজ্য হয়ে থাকে তাহলে তার অবস্থান হবে প্রাসিয়য়-এর পূর্বে - যা গঙ্গা নদী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। একটি রাজ্য যদি গঙ্গার পূর্ব এলাকার বাংলা বদ্বীপ নিয়ে গঠিত হয়ে থাকে তবে বিশাল এলাকা নিয়ে রাজ্যটির গঠিত হবার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

    পরবর্তীকালে বাংলার কিছু কিছু অংশ মৌর্য সাম্রাজ্য (খ্রিষ্টপূর্ব ৩২১-১৮৫ সাল) এবং গুপ্ত সামাজ্যের (৩৩১-৬০০ খ্রিষ্টাব্দ) দখলে ছিল। মৌর্য ও গুপ্ত উভয় সাম্রাজ্যের ভিত্তি ছিল বিহার। শিলালৈখিক প্রমাণগুলো বলছে, এ সাম্রাজ্যগুলোর প্রভাব পশ্চিম ও মধ্য বাংলায় সীমাবদ্ধ ছিল। অন্যদিকে, ঐতিহাসিক প্রমাণাদি পূর্ব ও দক্ষিণ বাংলায় স্বাধীন রাজত্বের অস্তিতের নির্দেশ করে (যেমন ফরিদপুরের কোটালিপাড়া শিলালেখ)। পূর্বভারতে গুপ্ত সাম্রাজ্যের স্থলে আসে শশাস্কের সাম্রাজ্য (৬০০-৬৩৭ খ্রি)। ঐতিহাসিক প্রমাণাদি সুস্পষ্টভাবেই প্রতিপাদন করে যে, সে সময় সম্রাট শশাঙ্ক নয়, ভদ্র রাজবংশই পূর্ব বাংলা শাসন করেছে। শশাস্কের কর্তৃত্ব পশ্চিম ও মধ্য বাংলায় সীমাবদ্ধ ছিল।

    আবার এও দাবি করা হয় যে, পাল সাম্রাজ্যের (৭৫০ ১১৬২ খ্রি) শাসনকাল ছিল চারশ বছরের অধিক, আর এটি বাঙালিদের সাম্রাজ্য ছিল। এ কথা ঠিক, পাল সাম্রাজ্যে মাঝে-মধ্যে উত্তর বাংলা অন্তর্ভুক্ত ছিল৷ কিন্তু সাম্রাজ্যটি ছিল মূলত বিহারভিত্তিক। আদি পাল শাসকদের সমন্ত শিলালেখই বিহার থেকে জারি করা হয়। পাল শাসনের প্রথম দু'শ বছরের একটি শিলালেখও পাওয়া যায়নি যাতে দক্ষিণ বা পূর্ব বাংলায় পাল অধিকার উল্লিখিত আছে। অন্যদিকে শিলালৈখিক উপকরণগুলো পূর্ব বাংলায় ভদ্রদের স্বাধীন রাজত্বের অস্তিত্বের প্রমাণ করে। Abdul Momin Chowdhury তার Dynastic History of Bengal গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ক্ষুদ্র একটি সময়কাল ( ১০৪৩-১০৭৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে) ছাড়া পূর্ব ও দক্ষিণ বাংলা পাল রাজাদের কর্তৃত্ব এড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল। এছাড়া সর্বশেষ পাল রাজা বাংলায় নয়, বিহারে রাজত্ব করতেন। পাল রাজাদের কোনও স্থায়ী রাজধানী ছিল না। রাম শরণ শর্মা তার "ভারতের সামন্ততন্ত্র" গ্রন্থে পাল রাজকীয় অধিষ্ঠানের নয়টি কেন্দ্রস্থল চিহ্নিত ঋরেছেন : ১. পাটালিপুত্র ২. মদগিরি, ৩. রামবতী (মালদহ জেলায়), ৪. বাটা পার্বতক (ভাগলপুর জেলা), ৫. বিলাসপুর, ৬ হরদাম, ৭. শাশাসা-গণ্ড, ৮. কাঞ্চনপুর এবং ৯. কপিলভাষক। এদের কোনওটিই পূর্ব ও দক্ষিণ বাংলায় অবস্থিত নয়, রাজকীয় অধিষ্ঠানের শুধু একটি কেন্দ্র মধ্য বাংলায় অবস্থিত ছিল। এ সব তথ্য সুস্পষ্টভাবেই নির্দেশ করে যে, পাল সাম্রাজের রাজনৈতিক ভিত্তি ছিল বিহার।

    মধ্য ও পশ্চিম বাংলার অংশবিশেষ ছিল বিহার-সংলগ্ন। ফলে, বিহারভিত্তিক সর্বভারতীয় সাম্রাজ্য মাঝে-মধ্যে পশ্চিম ও মধ্য বাংলার সংলগ্ন এলাকাকে নিজেদের অঞ্চলের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করত।তবে কেন্দ্রীয় শাসন যথন দুর্বল হয়ে পড়ত তখন এসব এলাকা আবার স্বাধীন হয়ে যেত। এ সব বিহারভিত্তিক সাম্রাজ্যের প্রভাব খুব কমই দক্ষিণ ও পূর্ব বাংলায় সম্প্রসারিত হত। পূর্ব ও দক্ষিণ বাংলার রাজনৈতিক মানচিত্র ছিল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজত্ব নিয়ে। বাংলার বর্তমান বাংলাদেশ অঞ্চলকে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত যে সকল রাজবংশ শাসন করত এখন পর্যন্ত তাদের মধ্যে ১১টিকে চিহ্নিত করা গেছে: ১. বৈণ্যগুপ্তের রাজত্ব (৬ষ্ঠ শতাব্দী), ২. ফরিদপুর রাজবংশ (৬ষ্ঠ শতাব্দী, ৩. ভদ্র রাজবংশ (আনুমানিক ৬০০-৬৫০ খ্রি.), ৪. খড়গ রাজবংশ (আনুমানিক ৬৫০-৭০০ খ্রি.), ৫. নাথ রাজবংশ (আনুমানিক ৭০০ খ্রি.), ৬. রাত রাজবংশ (আনুমানিক ৭০০ খ্রি.), ৭. দেব রাজবংশ (আনুমানিক ৭৫০-৮০০ থ্রি), ৮. হরিকেলের শাসককূল (আনুমানিক ৮০০-৯০০ খ্রি.), ৯. চন্দ্র রাজবংশ (আনুমানিক ৯০০- ১০৪৫ খ্রি.), ১০. বর্মণ রাজবংশ (আনুমানিক ১০৮০- ১১৫০ খ্রি.), এবং ১১. পট্টিকেরা রাজবংশ (আনুমানিক ১০০০- ১১০০ খ্রি.)। ঐতিহাসিক প্রমাণাদি বিশ্লেষণ করলে এই ইঙ্গিতই মেলে যে, এ সব রাজত্ব ছোট হলেও সার্বভৌম ছিল, তারা সর্ব-ভারতীয় সাম্রাজ্যের করদ রাজ্য ছিল না। ঐতিহাসিক সূত্রসমূহ তুলে ধরে যে, বাংলার বাইরে যে সব সর্ব-ভারতীয় সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল তাদের প্রভাব পশ্চিম থেকে পূর্বে ক্রমাগতহারে হ্রাস পেয়েছিল।

    প্রাচীন বাংলায় পুরো সময় জুড়েই ছিল সতত রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। ৫০০ থেকে ১১৫০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত পূর্ব ও দক্ষিণ বাংলায় একেকটি রাজবংশ গড়ে ৮০ বছরেরও কম সময় স্থায়ী হত। বাংলা অঞ্চলের রাজনৈতিক বিবর্তন পাশের বিহার ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলের থেকে ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত হয়েছে। প্রাচীনকালে বিহার নন্দ, মৌর্য, গুপ্ত ও পালদের বিশাল সাম্রাজোর উত্থান প্রত্যক্ষ করেছে। আসামের সমরবাদী অহম শাসকবর্গ একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে সক্ষম হয় যা প্রায় ছয়শ বছর স্থায়ী হয় (ত্রয়োদশ থেকে ঊনবিংশ শতাব্দী)। আবার ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলও বিশাল সাম্রাজ্যের উত্থান প্রত্যক্ষ করেছে (দক্ষিণ ভারতের পল্লব ও চোল সাম্রাজ্যের কথাই ধরুন)। কিন্তু বাংলা অঞ্চলে, বিশেষ করে পূর্ব ও দক্ষিণ এলাকায় রাজনৈতিক সত্তা ছিল সবসময়ই ক্ষুদ্র ও স্বল্পায়ু।

    বৃহৎ সাম্রাজ্যের দীর্ঘকালীন অস্তিত্ব নির্ভর করে বৃহৎ সেনাবাহিনী প্রতিপালনের জন্য সম্পদ আহরণের ক্ষমতার উপর। প্রাচীন সাম্রাজ্যের সম্পদ সাধারণত আদায় করা হত ব্যবসা-বাণিজা ও কৃষি থেকে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও বৃহৎ সাম্রাজ্যের মধ্যে গভীর সম্পর্ক আছে। তবে কার্য-কারণ সম্পর্ক দুই দিক থেকেই সত্য হতে পারে। বৃহৎ সাম্রাজ্যের রাজস্বের জন্য বণিকের প্রয়োজন আছে। অন্যদকে সম্পত্তি ও চুক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বণিকদেরও দরকার হয় শক্তিশালী রাষ্ট্রের। স্থলপথে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে পণ্য চলাচলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়। স্থলপথের সমৃদ্ধির জন্য বৃহৎ রাষ্ট্র দরকার। বাংলায় বাণিজ্যের বিশাল অংশই পরিচালিত হত নৌপথে। বাংলার বদ্বীপ এলাকা আভ্যন্তরীণ নদী-নালার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সহজেই সমুদ্রে প্রবেশ করা যেত। ফলে, বাংলার বণিককুলের বৃহৎ সাম্রাজ্যের পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন হত না। আর বণিককুলের যদি বৃহৎ সাম্রাজ্যের পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন না হয় তাহলে তারা বৃহৎ রাষ্ট্র ছাড়াই ভালভাবে বাণিজ্য করতে সক্ষম হবে, আর বৃহৎ রাষ্ট্র গঠনের প্রয়োজনও বোধ করবে না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এদের বাণিজ্যের পরিমাণ কী এতটা বেশি ছিল?

    Kamrunnesa Islam এর Aspects of Economic History of Bengal গ্রন্থ থেকে দেখা যায়, গতানুগতিক ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ প্রাচীন বাংলায় সমৃদ্ধ বৈদেশিক বাণিজ্যের উল্লেখ করে। ঐতিহাসিক সূত্রাবলি পরীক্ষা করলে দেখা যায়, প্রাচীন বাংলার বাণিজ্যের পরিমাণকে অতিরঞ্জিত করা হয়েছে। বাংলায় বাণিজ্যের পরিমাণ এত বেশি হবার কথা নয়, কারণ:

    ১। বিপুল আয়তনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ পরিমাণের মুদ্রার প্রচলনে অবদান রাখত। ঐতিহাসিক সূত্র থেকে স্পষ্টভাবেই ইঙ্গিত মেলে যে, সহস্র বছরেরও বেশি সময় (চতুর্থ থেকে পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত) অর্থনীতিতে মুদ্রার প্রচলন ছিল নগণ্য৷ চীনা পরিব্রাজক ফা-হিয়েন উল্লেখ করেছেন যে, বাংলায় চতুর্থ শতাব্দীতে কড়ি ছিল লেন-দেনের প্রধান মাধ্যম। দ্বাদশ শতাব্দীর সেন শাসকদের দলিল-দন্তাবেজ নির্দেশ করে যে, রাজারা কড়িতে দান-কার্য সম্পাদন করতেন। তুর্কী ঐতিহাসিক মিনহাজউদ্দিন উল্লেখ করেছন যে, ত্রয়োদশ শতাব্দীতে বাংলায় 'সমস্ত অর্থনৈতিক লেন-দেন হত কড়িতে। মরক্কোর পরিব্রাজক ইবনে বতুতা চতুর্দশ শতাব্দীতে বাংলা ভ্রমণ করেছিলেন। তিনিও দেখতে পেয়েছেন যে, বাংলায় কড়ি হচ্ছে লেন-দেনের প্রধান মাধ্যম। পঞ্চদশ শতাব্দীর পরিব্রাজক মা হুয়ান বাংলার অর্থনৈতিক লেন-দেনে কড়ির প্রাধানা লিপিবদ্ধ করে গেছেন। বাংলার বৈদেশিক বাণিজ্য স্থানীয় বণিকদের ভূমিকা ছিল খুবই নগণ্য। বাইরের বণিকরা তাতে একাধিপত্য বিস্তার করেছিল। বাংলায় বাণিজাের সুফল তাই সামান্য হওয়াই স্বাভাবিক।

    ২। নীহার রঞ্জন রায় এর বাঙ্গালীর ইতিহাসের আদি পর্ব গ্রন্থে দেখা যায়, ঐতিহাসিকগণ উল্লেখ করেছেন যে, পঞ্চম শতাব্দীতে রোমান সাম্রাজের পতনের পর - অষ্টম থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দীর মধ্যকার পাচশ' বছরের পরিসরে দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য অবনতি লক্ষ করা যায়। বাণিজ্যের এই ক্রমাবনতির কারণ হিসেবে ভূমধ্যসাগরীয় বাণিজ্যে বাঁধা সৃষ্টির পরিণামে এশিয়ার বৈদেশিক বাণিজ্যে আরব আধিপত্যের উদ্ভবকে চিহ্নিত করা হয়। এসব ব্যাখ্যা থেকে মনে হচ্ছে, বাংলা বদ্বীপে রাষ্ট্রের আয়তন নির্ধারণে বাণিজ্যের ভূমিকা নগণ্য ছিল, আর বাণিজ্যও যে আহামরি ছিল তেমনটা নয়।

    রাষ্ট্র-কাঠামোর তারতম্য ব্যাখ্যা করার জন্য অনেক থিওরি আছে। তবে ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে নিও-ক্লাসিকাল ছাঁচের সিদ্ধান্তগুলো যেন বিশেষভাবে আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে। Douglass C. North তার Structure and Change in Economic History গ্রন্থে এরকমই কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছিলেন। তো এগুলোর একটি খুব কমন পূর্ব অনুমান হচ্ছে, রাষ্ট্রের আয়তন বৃদ্ধির সাথে সাথে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে যুক্তি হচ্ছে, বড় রাষ্ট্র বেশি বড় এলাকা জুড়ে কম খরচেই নিরাপত্তা ও সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে পারে। বাংলাদেশ অঞ্চলের ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় যে, এখানে শাসন-ব্যবস্থার সম্প্রসারণ অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক ছিলনা। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চল থেকে বাংলাদেশ অঞ্চলের অভিজ্ঞতার ভিন্নতার চারটি কারণ চিহ্নিত করা যায়:

    ১। বাংলার বাংলাদেশ অঞ্চলে (মূলত পূর্ব ও দক্ষিণ বাংলা) রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিচালন ব্যয় বেশি। এই অঞ্চলে স্পষ্টতঃই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে-সংঘববদ্ধ গ্রামের অস্তিত্ব ছিল না (এই আলোচনায় আপাতত গেলাম না), সেজন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বা রাজস্ব সংগ্রহের জন্য কোন তৃণমূল সংগঠনও ছিলনা। এই অঞ্চলের গ্রামে কোনও গ্রাম-প্রধান বা মোড়ল ছিল না, ছিল না গতানুগতিক গ্রাম কর্মচারীরাও। দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ অঞ্চলে গ্রাম-প্রধান আর গ্রাম কর্মচারিরা তৃণমূল পর্যায়ে প্রশাসন পরিচালনা করত। বাদবাকি এলাকায় গ্রাম মধ্যবর্তী সংগঠন - যেমন, নাডু এবং পেড়িয়ানাডু দ্বারা সরকারের সাথে যুক্ত ছিল। S. C. Dube তার Indian Village গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, "কয়েকটি গ্রামের গুচ্ছের ওপর ভিত্তি করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত ছিল, প্রতি গুচ্ছেরই স্বীকৃত নেতা থাকত।" গ্রাম-সরকার বা গ্রাম-গুচ্ছ কোনোটির অস্তিতই বদ্বীপীয় বাংলায় ছিল না।

    ২। বদ্বীপীয় বাংলায় প্রশাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে তথ্যের আদান-প্রদান ব্যয়ও বেশিই ছিল। এই অঞ্চলে গ্রামীণ বসতি ছিল বিচ্ছিন্ন, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ এলাকায় গ্রামবসতি ছিল কেন্দ্রকে ঘিরে (nucleated)। কেন্দ্রকে ঘিরে গড়ে-ওঠা একটি বসতি থেকে সহজেই তথ্য সংগ্রহ করা যায়। ছিটিরে থাকা বসতি থেকে চাষাবাদের তথ্য সংগ্রহের জন্য বেশি সময় আর অনুসন্ধানের দরকার হত।

    ৩। বাংলা বদ্বীপে অনাবাদী জমির প্রতুলতা এবং এসৰ জমি-জমা চাষাবাদের আওতায় আনতে খুব কম অর্থ খরচ হত, তাই এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় দেশান্তরি হওয়া ছিল সহজ। এ ধরনের পরিস্থিতিতে মাত্রাতিরিক্ত শোষণ অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক না হওয়াই স্বাভাবিক। খাজনা আদায়ের জন্য কৃষককে চাপ দিলে তারা বরং সপরিবারে অন্য কোথাও গিয়ে আশ্রয় নেবে। আর তাই শোষণের দ্বারা এই অঞ্চলের মানুষের থেকে খুব একটা বেশি অর্থ আশা করা যায় না।

    ৪। বদ্বীপীয় অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতির বৈশিষ্টের কারণে সেনা অভিযান চালানোর সুযোগ ছিল সীমিত। বাংলা বদ্বীপের অধিকাংশ এলাকাই ছিল জলাভূমি। অসংখ্য নদী-নালা, খাল-বিল এ অঞ্চলে জালের মতো বিস্তৃত। এথানে যাতায়াতের বাহন কী হবে তা নির্ভর করত জলের উচ্চতার ওপর। James Novak তার Bangladesh গ্রন্থে যথার্থই বলেছেন, "বাংলাদেশ হচ্ছে বিপুল দূরত্বের ছোট্ট একটি দেশ" (পৃ. ৩৮)। বাংলা বদ্বীপ (পূর্ব ও দক্ষিণ বঙ্গ) চলাচলের জনা একটি বিপদসংকুল এলাকা। এ ধরনের ভূ-বৈশিষ্ট্যের একটি দেশের প্রতিরক্ষা ব্যয় তার আয়তন বৃদ্ধির সাথে সাথে কমবে তো নাই, বরং বাড়াটাই এখানে স্বাভাবিক। আর তাই বাংলার ক্ষেত্রে নর্থ এর বইতে উল্লিখিত নিওক্লাসিকাল এজাম্পশনগুলো ভেঙ্গে পড়ে। পূর্ব ও দক্ষিণ বাংলা অঞ্চলে রাজ্য বিস্তারে লাভের চেয়ে লোকশানই বেশি ছিল, আর তাই অন্যান্য অঞ্চলের রাজারা এই অঞ্চল জয় করার তাগিদ অনুভব করতেন না। ক্ষুদ্র ও স্বাধীন অবস্থাই ছিল এই অঞ্চলের স্বাভাবিক অবস্থা।

    প্রাচীনকালে বাংলা বদ্বীপের রাজ্যগুলি শুধু ছোটই নয়, অস্থিতিশীলও ছিল। রাষ্ট্র ছোট হলেই যে অস্থিতিশীল হবে তেমন কোনও কথা নেই৷ যতক্ষণ না তারা কোনও সংকটের সম্মুখীন হয় ততক্ষণ তাদের অস্তিত্ব টিকে থাকার সম্ভাবনাই বেশি। বাংলা বদ্বীপে ছোট ছোট রাজ্যের ক্ষেত্রে প্রধান হুমকি এসেছে বিদেশী আক্রমণ থেকে। বাংলা বদ্বীপের ক্ষুদ্র রাজ্যগুলো বৃহৎ ও শক্তিশালী রাজ্য দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল। আক্রমণকারীরা শুধু পশ্চিম দিক থেকেই আসেনি (যেমন, মৌর্য, গুপ্ত, পাল, চোল ইত্যাদি), উত্তর দিক (যেমন, বর্মণ ও আসামের পালগণ), এমনকি দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকেও (যেমন, আরাকান ও ত্রিপুরা) এসেছে তারা। ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের আরেকটি দুর্বলতা হচ্ছে, ভেতর থেকে সহজেই বিদ্রোহ করার সুযোগ। যখন ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের জনগণ অসন্তুষ্ট হয়ে ওঠে তখন সহজেই তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। বাংলা বদ্বীপের ক্ষুদ্র রাজ্যগুলো বাইরের আক্রমণ ও অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ দ্বারা সংকটাপন্ন হয়েছে। কিন্তু এ ধরনের কোনও সংকট কাটিয়ে উঠার জন্য তারা যথেষ্টভাবে প্রস্তুত ছিল না। এসব সংকট থেকে উত্তরণের জন্য ছোট ছোট রাষ্টের প্রয়োজন হত যথেষ্ট সম্পদ আহরণের। কিন্তু প্রতিযোগিতা ও রাষ্ট্র পরিচালনার উচ্চ ব্যয় সেই সম্পদ আহরণকে বাঁধাগ্রস্ত করত। ফলে ক্ষুদ্র রাষ্টের মৃত্যুহার ছিল খুব বেশি।

    ত্রয়েদশ শতাব্দীতে মুসলমান শাসন প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলা বদ্বীপে রাষ্টের আয়তন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। মুসলমান শাসকগণ বাংলার অধিকাংশ এলাকাকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে সফলতা লাভ করেন। বাংলা অঞ্চলের রাজনৈতিক জীবনে এই নতূন প্রবণতার ক্ষেত্রে দু'টি কারণকে চিহ্নিত করা যেতে পারে:

    ১। Dietmar Rothermund এর গ্রন্থ An Economic History of India তে প্রথম কারণটির ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। নতুন সামরিক প্রযুক্তি প্রবর্তনের ফলে সর্ব-ভারতীয় সাম্রাজ্যের আইন-শৃৎখলা রক্ষার ক্ষমতা বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। মুসলমান শাসন প্রতিষ্ঠার পূর্বে ভারতে সেনাবাহিনী ছিল পদাতিক। স্থানীয় ঘোড়া ছিল অপর্যাপ্ত এবং অশ্বারোহী বাহিনীর জন্য অনুপযুক্ত। ফলে, উচ্চ মূল্যে পারস্য ও আরব দেশ থেকে ঘোড়া আমদানি করতে হত। প্রথম দিককার মুসলমান শাসকদের সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব দ্রুত অশ্বারোহী বাহিনীকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। অশ্বারোহী বাহিনীর তুলনামূলক সুবিধা খর্ব হয়ে যায় যখন দিল্লি-ভিত্তিক সাম্রাজ্যের প্রতিদ্বন্দীরাও অশ্বারোহী বাহিনী ব্যবহার করতে শুরু করে। পরবর্তী পর্যায়ে দক্ষিণ এশিয়ায় আগত মোগলদেরকে আধিপত্য বজায় রাখার জন্য অধিকতর শক্তিশালী প্রযুক্তির প্রবর্তন করতে হয়। এই প্রযুক্তি হল যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারযোগ্য কামান, আর তার মূল্যও ছিল অত্যন্ত বেশি। নতুন ধরনের কামানের ওপর নির্ভরশীলতার কারণে মোগল সাম্রাজ্যকে প্রায়শই 'বারুদ সাম্রাজ্য' বলে অভিহিত করা হয়। পদাতিক সেনাদল থেকে দ্রুতগামী অশ্বারোহী সেনাদলে উত্তরণ এবং যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারযোগ্য কামান কেন্দ্রীয় সরকারের অভিযান পরিচালনার ক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করে৷ বাংলার মতো দূরে দূরে অবস্থিত এলাকাকে দীর্ঘদিন কব্জা করে রাখাকে তা সম্ভবপর করে তোলে।

    ২। দক্ষিণ এশিয়ায় মুসলমান শাসন প্রতিষ্ঠা এবং অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্যের উল্লেখযোগ্য প্রসার ঘটে একই সময়ে। আইন-শৃঙ্কলা পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দিল্লিভিত্তিক সর্ব-ভারতীয় সাম্রাজ্য অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যকে উজ্জীবিত করে। ইউরোপে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পুনরায় অভ্যুদয় ঘটলে তার ফলে ভারত মহাসাগরেও বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। বাণিজ্যের ব্যাপ্তি বাংলার শাসকদের রাজস্ব সম্ভাবনাকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়িয়ে দেয়। রাজস্ব ছাড়াও বণিকরা ঋণের সহজলভ্য সুযোগ সৃষ্টি করে। Richard M Eaton তার The Rise of Islam and the Bengal Frontier গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, "প্রকৃতপক্ষে বাংলা জয় করার ক্ষেত্রে মারোয়াড়ী ও মোগলরা একে অপরের সহযোগীরূপে কাজ করেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার জন্য মোগলরা মারোয়াড়ীদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা প্রদান করে, আর মারোয়াড়ীরা উত্তর ভারতের সর্বত্র বসবাসকারী নিজ বর্ণের সদস্যদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে মোগলদের পুঁজি সরবরাহ করে।"

    ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রের দ্বারা বাংলা অঞ্চলের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের ক্রম-বিলুপ্তিকে বাংলার রাজনৈতিক ঐতিহ্যের একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন বলা যায়। মোটামুটিভাবে বলা চলে, রাষ্ট্রের উৎপত্তি ও ভূমিকার ব্যাপারে দুধরণের তত্ত্ব রয়েছে, চুক্তিমূলক তত্ত্ব এবং শোষণ্মূলক তত্ত্ব। চুক্তিমূলক তত্ত্বাবলি এ কথা সত্য বলে ধরে নেয় যে, রাষ্ট্র হচ্ছে কিছু সেবা, যেমন নিরাপত্তা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার প্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রে সাম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের (যেমন, প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্র বা রাজবংশ) প্রতিযোগিতার মুখে তাকে বাসিন্দাদের সমর্থন নিশ্চিত করতে হয়। শোষণ তত্ত্ব মতে রাষ্ট্র হচ্ছে কায়েমি-স্বার্থবাদীদের একটি হাতিয়ার। যদিও দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে রাষ্ট্রের চুক্তিমূলক তত্ত্ব গভীরভাবে প্রোথিত, তবু অধিকাংশ সমাজবিজ্ঞানী ও ঐতিহাসিক শোষণমূলক তত্ত্বের পক্ষপাতী। দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসের ধ্রুপদী ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে একটি পৌনঃপুনিক ধুয়ো হচ্ছে স্বৈরাচারী সুবিশাল সাম্রাজ্য। কেন্দ্রীভূত স্বৈরাচার রাষ্ট্র সম্পর্কে ঐতিহাসিক ও সমাজবিজ্ঞানীদের ঐকমত্যের ফলে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক দৃষ্যপটের আঞ্চলিক আঞ্চলিক তারতম্য ঢাকা পড়ে যায়। যাই হোক, এই আলোচনায় আমরা দেখেছি বাংলার রাজনৈতিক গঠন মূলত চুক্তিমূলকই ছিল। তবে পরবর্তীতে বাংলার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের বিলুপ্তি ঘটলে ক্রমে বাংলা শোষণমূলক রাষ্ট্রে পরিণত হতে থাকে। নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থায় নিশ্চিতভাবেই দুটো শোষণমূলক উপাদান ছিল। এগুলো নিয়ে পরে কখনও বলার চেষ্টা করব...
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৯ জুলাই ২০১৮ | ২৭৮২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • তালিব বাশার নয়ন (লেখক ছদ্ম নাম | 340112.80.1278.202 (*) | ২১ আগস্ট ২০১৮ ০৬:১০64846
  • প্রিফ সুমিত রায়
    ”প্রাক-মুসলমান যুগে বাংলার খণ্ডিতাবস্থা ও মুসলমান যুগে বাংলার একীভূতকরণ” একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। “এগুলো নিয়ে পরে কখনও বলার চেষ্টা করব...” না বলে বলা ঠিক ছিল “বাংলার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের বিলুপ্তি ঘটলে ক্রমে বাংলা শোষণমূলক রাষ্ট্রে পরিণত হতে থাকে” অধ্যায়টি লিখবেন এবং পরবর্তী কোন সংখ্যায় তুলে ধরবেন। আপনি যে কাজটি করেছেন এর আগে কেউ করেছেন বলে আমার জানা নেই - পরবর্তী অধ্যায়টি পাবো এই আশাই রইলাম।
    শুভকানায়
    নয়ন তালুকদার
    বাংলাদেশ
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন