এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • অর্ধেক আকাশ

    Arijit Guha লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | ১৮০৭ বার পঠিত
  • দিল্লির রাস্তা আজ লালে লাল।দিল্লি আজ লালঝান্ডার দখলে।মিছিলের ছবি আর ভিডিওগুলো দেখছি আর মনে মনে একটু আপশোষ হচ্ছে।ব্যক্তিগত কারনের জন্য এবার যেতে পারলাম না বলে।শ্রমিক কৃষক মহিলা কারা নেই সেই মিছিলে!বিশেষ করে মহিলারা! দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে আসা তাদের ছবি আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে গতবছরের এক দৃশ্যে।গতবছর নভেম্বরে ট্রেড ইউনিয়নগুলোর যৌথ প্ল্যাটফর্মের ডাকে তিনদিনের ধর্না দেওয়া হয়েছিল পার্লামেন্ট স্ট্রিটে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরুর দিনে।তো সেই ধর্নায় যোগ দেওয়ার জন্য আমাদের সংগঠনের ৪০ জনের একটা দল চেপে বসেছিলাম পূর্বা এক্সপ্রেসে।সেখানেই দেখা পেয়েছিলাম এক দেহাতি মহিলার।আজও তার ছবি আমার চোখের সামনে ভাসছে। মুখটা হয়ত মনে নেই, কিন্তু তার বলা কথাগুলো সব কটা এখনো আমার মনে আছে।এতটাই দৃপ্ত ছিল সেই কন্ঠস্বর।না, কোনো ব্যারিটোন ভয়েস বা জোরে চিৎকার করে কোনো কথা বলেন নি উনি।কিন্তু যে কথাগুলো বলেছিলেন আর যতটা সাধারণভাবে বলেছিলেন, প্রথমে শুনে চমকে উঠেছিলাম।মহিলা হয়ত অশিক্ষিত, বা খুব একটা বেশি পড়াশোনা করেন নি, কিন্তু তার কথাগুলোর মধ্যে যে ধার ছিল, তা বিস্মিত করেছিল আমাকে।

    ট্রেন সবে তখন মোগলসরাই স্টেশন ছাড়িয়েছে।তখনো দীনদয়াল উপাধ্যায় নাম হয়নি।নেটে টাইম টেবলে দেখলাম সবে পাঁচ ঘন্টা মাত্র লেট।যাক, ভাবলাম খুব একটা তার মানে লেট নেই।বেশি ভোগাবে না।কিন্তু এই ৫ ঘন্টা লেটটাই দিল্লিতে গিয়ে যখন পৌঁছলাম তখন ২৪ ঘন্টায় দাঁড়িয়ে গেছিল।প্রথমদিনের সমাবেশে যোগ দিতে পারিনি ট্রেন লেটের জন্য। যাই হোক, মোগলসরাই ছাড়ানোর কিছুক্ষণ পরেই দেখি এক রঙা শাড়ির ইউনিফর্ম পরা প্রায় পনেরো ষোলো জন দেহাতি মহিলার একটা গ্রুপ আমাদের কম্পার্টমেন্ট ভর্তি করে দিল।স্লিপার ক্লাসে এরকম তো প্রায়ই হয়।রিজার্ভেশন না থাকলে উঠে পরে, পড়ে রিজার্ভেশন পেলে নিজের নিজের সিটে চলে যায়। দেখলাম প্রত্যেকের বুকের কাছে একটা ব্যাজ, তাতে লেখা 'আশা'।বুঝলাম আশা কর্মী।ভাবলাম হয়ত ট্রেনিং ফেনিং এ কোথাও গিয়েছিল, এখন ফিরছে, বা হয়ত যাচ্ছে।কারন ইউনিফর্ম পরে একমাত্র ট্রেনিং ছাড়া আর কোথাও দূরপাল্লার ট্রেনে চেপে যাবেনা নিশ্চয়ই।নিশ্চিন্তও হয়েছিলাম।অফিসিয়াল কাজের জন্য এসেছে মানে এদের হয়ত টিকিট কাটা আছে, রিজার্ভেশন পায়নি, সেটাও হয়ত টিটির সাথে কথা বললে হয়ে যাবে।তা নাহলে এরা তো সরকারি কাজেই যাচ্ছে।সরকারও নিশ্চয়ই সাহায্য করবে এদের।
    আমি তখন একটা আপার বার্থ কব্জা করে বই পড়ছি।কিছুক্ষণ পরেই টিটি উঠল।ওদের কাছে টিকিট চাইতে সপাট জবাব 'নেহি হ্যায়'।
    'নেহি হ্যায়? নেহি হ্যায় তো উতার যাও', টিটির রিপ্লাই।
    ওদের জবাব 'কাহে উতার জায়ে? ইউনিয়ন কা মিটিং মে যা রহে হ্যায়।'

    ইউনিয়ন শব্দটা খট করে কানে লাগল।একবার তাকালাম নিচে।দেখলাম তখনো ওরা সমানে টিটির সাথে ঝগড়া করে যাচ্ছে।
    টিটি বলল, 'ইউনিয়ন কা লিডার কো বোলো টিকিট দিখানে কেলিয়ে'।
    জবাব এলো 'লিডার নেহি হ্যায়, হামসব লিডার হ্যায়'।
    যাওয়ার আগে টিটি বলে গেল আগলা স্টেশন আনে সে পেহলে উতার যাও।নেহি তো আরপিএফ কো বুলা কে লায়েঙ্গে।
    টিটি চলে যাওয়ার পর আমি নিচে নামলাম।ইতিমধ্যে আমাদের এক কমরেড, তারও কানে 'ইউনিয়ন কা মিটিং' কথাটা গেছে।তারপর আমরা যারা ছিলাম এরপর তাদের সাথে কথা বলতে শুরু কররলাম।কোথা থেকে আসছেন, কোথায় যাচ্ছেন, কজন আছেন ইত্যাদি ইত্যাদি।তাতে যা জানা গেল সেটা হচ্ছে ওদের ৬০০ জনের আশা কর্মীর একটা দল পটনা থেকে দিল্লি যাচ্ছিল ধর্নায় যোগ দিতে।মাঝে মুঘলসরাইতে কোনো কারনে বাকি লোকজনের সাথে এই ১৫-১৬ জনের দলটা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।ওরা অন্য ট্রেনে ছিল।ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে আর এরা হাতের কাছে আমাদের ট্রেন পেয়ে এটাতেই উঠে পড়েছে।
    আমি তখন সাইডে দাঁড়িয়ে সবার কথা শুনছি।আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলাটি যিনি টিটির সাথে তর্ক করে যাচ্ছিলেন, আমাকে দেখে বলে উঠলেন 'ও টিটি টিকিট মাঙ রহা থা।টিকট তো হামলোগ লেতে হ্যায়।ফ্রি মে নেহি যাতে কহি। লেকিন যব ঘুমনে যাতে তব হি টিকিট লেতে হ্যায়।লেকিন ইয়ে তো হামলোগ হক কা লড়াই লড়নে যা রহে হ্যায়।সব কা লড়াই হ্যায় ইয়ে, অকেলা হামলোগকা তো লড়াই নেহি হ্যায়। তো ফির টিকিট কিয়ু লেঙ্গে?
    আমি কিছু আর বলতে পারলাম না।পরে যখন টিটি আরপিএফ নিয়ে এসেছিল, আমরাই তখন বললাম কোনো অসুবিধা নেই, আমাদের সাথেই চলে যাবেন এনারা।পুরো কম্পার্টমেন্ট বোঝাই লোক, বিভিন্ন সংগঠনের থেকে দিল্লি যাচ্ছে।কোনো অসুবিধা ছাড়াই ওরা আমাদের সাথে গাদাগাদি করে কখনো সিট শেয়ার করে কখনো নিচে বিছানা করে ঘুমিয়ে চলে গেল দিল্লি।ভদ্রমহিলার কথাগুলো মজার নাকি ইন্সপায়ারিং তা এখনো ঠিক বুঝিনা।

    সেই সমাবেশেই দেখেছিলাম আশা কর্মী অঙ্গনওয়ারি কর্মীদের দৃপ্ত মিছিল।স্লোগান দিদিতে দিতে এগিয়ে চলেছে।সবাই ইউনিফর্ম পরে। তার সাথে অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছিলাম দিল্লির গৃহসহায়িকাদের সংগঠনের ব্যানারের নিচে বাচ্চার হাত ধরে বসে থাকা মহিলাদের।চোখে মুখে প্রতিজ্ঞা আর তেজ উপড়ে পড়ছে।চকচক করছিল চোখমুখগুলো।
    দেখেছিলাম মধ্যপ্রদেশ সি আই টি ইউ র ব্যাজ বুকে আটা এক পরিবারকে।স্বামী স্ত্রী ও নাবালক পুত্র তিনজনেই এসেছে সমাবেশে, অধিকার রক্ষার লড়াই করতে।হক কা লড়াই লড়নে কে লিয়ে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | ১৮০৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • pi | 7845.29.9008912.32 (*) | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৫৬61928
  • আশা রা সত্যি বন্চিত, যে পরিমাণে কাজ্করে যেটুকু পান। এখনো তো বিশেষ উন্নতি কিছু হয়নি।

    আচ্ছা, ছবিগুলো দেখাচ্ছেনা।

    । . jpg /png ওয়ালা লিনক দিতে হবে
  • এরকম | 340112.215.2356.57 (*) | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:০১61929
  • . | 340112.215.2356.57 (*) | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:০২61931
  • .



  • . | 340112.215.2356.57 (*) | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:০২61930


  • সিকি | 894512.168.0145.123 (*) | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৭:০১61932
  • কী ভয়ঙ্কর আফশোষ হচ্ছে :( কেন গেলাম না কাল!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন