এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • জ্ঞানের বিপ্লব- মানব ইতিহাসের শুরু

    Arijit Guha লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ৩০ আগস্ট ২০১৮ | ২০৩৬ বার পঠিত
  • জর্জ অরওয়েলের খুব বিখ্যাত একটি উপন্যাস আছে অ্যানিলাম ফার্ম বলে।আমার খুব প্রিয় বই এটি।কমিউনিস্ট বিরোধী প্রোপাগান্ডার মধ্যে একদম ওপরের সারিতে রয়েছে এই বইটি।বইটিতে রূপকের মাধ্যমে একটা কমিউনিস্ট দেশের আভ্যন্তরীণ নানা সমস্যা দুর্বলতাকে তুলে ধরা হয়েছে।মূলত আক্রমণটা করা হয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়নকে।বইটার ন্যারেটিভের জন্য নয়, আমার ভালো লাগার কারন ফর্মটার জন্য।ম্যানর ফার্মের সব জন্তুরা একবার ওল্ড মেজর যে নাকি একটা শুয়োর ছিল তার নেতৃত্বে একটা মিটিং এ বসল।সেখানে মানুষকে তাদের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হল আর মিস্টার জোনস, যে ম্যানর ফার্মের মালিক তাকে অত্যাচারী হিসেবে ঘোষণা করা হল।একদিন রাতে হঠাৎ করে ফার্মে বিদ্রোহ দেখা দিল এবং সব জন্তুরা মিলে মিস্টার জোনসকে মারধর করে তাড়িয়ে দিল।এরপর সেই ফার্মটা সব জন্তুরা দখল করে নিয়ে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে লাগল।ওল্ড মেজর মারা যাওয়ার পর ফার্মের দখলদারী যেসব জন্তুর হাতে এসেছিল তারা এবার আগের মিস্টার জোনসের মতই মিস্টার জোনসের মতই জন্তুদের ওপর অত্যাচার শুরু করল।আস্তে আস্তে বিদ্রোহী জন্তু যারা শাসকের বিরুদ্ধে কথা বলত তারা হঠাৎ হঠাৎ উধাও হয়ে যেত।এইভাবে আস্তে আস্তে পুরো ম্যানর ফার্মটা হয়ে উঠল আগের থেকেও অত্যাচারী একটা ফার্ম যেখানে জীব জন্তুদের ওপর আগের থেকেও বেশি অত্যাচার চালানো হত।
    গল্পটার পলিটিকাল বক্তব্যে আমি যাচ্ছি না।সেটা এই লেখার বিষয়ও নয়।আমি একটা অন্য দিক বলতে চাইছি।এই যে জীব জন্তুরা যারা একটা ফার্ম পরিচালনা করছে আর তারপর সেই মানুষের মত চিন্তাভাবনা করছে এগুলো দেখে আমাদের মনে হয় রূপকথা বা রূপক।কেন? তার কারণ মানুষ বুদ্ধিমান প্রাণী, মানুষের মত অন্য প্রাণীরা কখনই চিন্তাভাবনা করতে পারে না, একটা সংস্থা পরিচালনা করতে পারে না।মানুষের বুদ্ধির পরিমাণ অনেকটাই বেশি যার ফলে মানুষই এই পৃথিবী শাসন করছে।অথচ এটা কিন্তু উল্টোও হতে পারত।অর্থাৎ পৃথিবী ধরা যাক শুয়োররা শাসন করছে।বা বাঁদররা শাসন করছে।তখন মামুষকে সেইসব প্রাণীদের থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেরাতে হত।এই ব্যাপারটা হলেও হতে পারত যদি না মানুষদের সাথে কয়েকটা ঘটনা ঘটত।অভাবনীয় সেইসব ঘটনাগুলো ঘটেছিল বলেই আজ মানুষ অন্য জীব জন্তুদের খাঁচায় পুরে রাখছে, মহাশূন্যে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠাচ্ছে আবার এদিকে কবিতা লিখছে ছবি আঁকছে বা নাটক করছে।অর্থাৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আর তার সাথে সাথে শিল্প কলা সব কিছুই আজ মানুষই করছে।
    অথচ এরকম সব সময়ে ছিল না।একটা সময় অব্দি, প্রায় কুড়ি লক্ষ বছর ধরে মানুষ ছিল জীব জন্তুদের মধ্যে সব থেকে পিছনের সারিতে।অন্যান্য শক্তিশালী জন্তুরাই তখন পৃথিবী শাসন করত।মানুষ সেই সব প্রাণিদের থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেরাত।অবশ্য মস্তিষ্কের আয়তন মানুষের বরাবরই সব থেকে বেশি ছিল অন্যান্য জীব জন্তুর তুলনায়, কিন্তু একসময়ে এই বিশাল মস্তিষ্কের আয়তনই ছিল মানুষের শত্রু।কিভাবে? আসুন দেখা যাক।
    প্রায় ২৫ লক্ষ বছর আগে পৃথিবীর বুকে আফ্রিকার পূর্ব উপকুলে অস্ট্রালোপিথেকাস নামক প্রাণী থেকে মানুষের আদি জেনাস 'হোমো' এই জেনাস এর উদ্ভব হয়।এই হোমো শব্দটা থেকেই এসেছে হিউম্যান শব্দটা।
    জেনাস কাকে বলে? আসুন দেখে নি।বাঘ সিংহ প্যান্থার আর লেপার্ড এরা ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির প্রাণী, কিন্তু এদের মূল এক।অর্থাৎ জেনাস এক।প্যান্থেরা জেনাসের অন্তর্গত এই সব কটা প্রাণী।যে কোনো প্রাণীর বৈজ্ঞানিক নাম প্রথমে তার জেনাস আর তারপর তার স্পিসিস দিয়ে পরিচিত হয়।সিংহ এর যেমন স্পিসিস লিও।কাজেই সিংহের নাম হচ্ছে প্যান্থেরা লিও।
    ২০ লক্ষ বছর আগে এরপর সেই হোমো নামক প্রাণী আফ্রিকা উপকূল ছেড়ে প্রথমে আরব উপকূল ও পরে ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে।বিভিন্ন জায়গার আবহাওয়া আর অবস্থান পৃথক হওয়ার কারনে সেই সব মানুষদের প্রজাতিও বিভিন্ন রকম হয়ে পড়ে।৫ লক্ষ বছর আগে সেই সব প্রজাতির কারো নাম ছিল হোমো নিয়েন্ডারথাল যারা নিয়ান্ডার ভ্যালিতে অর্থাৎ পশ্চিম ইউরেশিয়াতে থাকত এবং সেখানকার ঠান্ডা ও প্রতিকূল পরিবেশের উপযোগী করে নিজেদের গড়ে তুলেছিল শক্তপোক্ত রূপে।আরো পূর্বে যারা থাকত সেই প্রজাতিটাকে বলা হত হোমো ইরেক্টাস।এছাড়া জাভা দ্বীপপুঞ্জ এ থাকত হোমো সোলেন্সিস, সোলো ভ্যালির প্রজাতি, হোমো ফ্লোরেসিয়েন্সিস, যারা ছিল খর্বাকৃতির, ওজন ২৫ কেজির বেশি নয় আর উচ্চতা এক মিটারের অধিক নয়।ছোট্ট দ্বীপ ফ্লোরেন্স এ এই প্রজাতির বসবাস ছিল।যেহেতু দ্বীপের মধ্যে রসদ ছিল সীমিত, তাই তাদের নিজেদের শরীরকেও ওরকম অল্প খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে মানিয়ে নিতে হয়েছিল।বড় চেহারা হলে তার খোরাকিও লাগবে বেশি, অথচ অল্প চেহারার খোরাকির প্রয়োজন অল্প।এর সাথে সাথেই আফ্রিকাতে যেসব প্রজাতিগুলো ছিল তাদের নাম ছিল হোমো রুডলফেনিস, হোমো এরগাস্টার ইত্যাদি ইত্যাদি।এদের সাথে সাথেই বেড়ে উঠছিল আরেকটি মানব প্রজাতি যার নাম হোমো সেপিয়েন্স।
    প্রতিটা প্রজাতির মধ্যেকার কিছু কিছু পার্থক্য সত্ত্বেও একটা দিকে মিল ছিল, প্রত্যেকের মস্তিষ্কের আয়তন ছিল অন্য প্রজাতির প্রাণীদের তুলনায় বড়।মোটামুটি ৬০ কেজির একেকটা স্তন্যপায়ীর মস্তিষ্কের আয়তন যেখানে ছিল ২০০ কিউবিক সেন্টিমিটার সেখানে মানব প্রজাতির ওইসব প্রাণীদের গড় মস্তিষ্কের আয়তন ছিল ৬০০ কিউবিক সেন্টিমিটার। আধুনিক যুগের মানুষ অর্থাৎ হোমো সেপিয়েন্সদের মস্তিষ্ক প্রসারিত হতে হতে আয়তন দাঁড়িয়েছে ১২০০-১৪০০ কিউবিক সেন্টিমিটার।
    এই বিশাল পরিমাণ মস্তিষ্ক নিয়ে প্রাণিজগতের অন্যান্য প্রাণীদের তুলনায় মানব প্রজাতিকে অনেক বেশি মূল্য দিতে হয়েছে।বৃহৎ মস্তিষ্কের জন্য চাই বেশি এনার্জি।অন্যান্য প্রাণীদের যেখানে শরীরের মোট এনার্জির ৮% লাগত মস্তিষ্কের পুষ্টি সাধন করতে, মানব প্রজাতির সেখানে শরীরের মোট এনার্জির ২৫% ব্যয়িত হত মস্তিষ্কের পুষ্টি যোগাতে।এই বৃহৎ মস্তিষ্কের মূল্য চোকাতে হত তাদের দু রকমভাবে।এক, তাদের অনেক বেশি সময় ব্যয় করতে হত খাদ্যের সন্ধানে, আর দুই, তাদের পেশি ছিল দুর্বল।স্বাভাবিক, যদি পুষ্টির একটা বড় অংশ মস্তিষ্ক খেয়ে নেয়, তাহলে শরীরের অন্যান্য অংশগুলো দুর্বল হতে বাধ্য।এই দুর্বল দৈহিক ক্ষমতার জন্য মানুষ (মানুষ বলতে এখনো অব্দি মানুষের সেই সময়কারসব কটা প্রজাতিই বোঝানো হবে।পরবর্তীকালে যেমন মানুষ বলতে শুধুমাত্র হোমো সেপিয়েন্সকেই বোঝানো হয়, সেরকম নয়) খাদ্য শৃঙ্খলের প্রায় নিচের দিকে অবস্থান করত।মানে, শক্তিশালী জীবজন্তুদের শিকার করার পর সব থেকে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর অংশটা তারা খেয়ে যে অবশেষ ফেলে দিত তার থেকে পুষ্টি আহরণ করত একটু কম শক্তিশালী প্রাণী আর তাদেরও ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্ট থেকে পুষ্টি আহরণ করত মানুষ।এই জন্য মানুষের প্রথম আবিষ্কৃত হাতিয়ার ছিল হাড় ভাঙার অস্ত্র।অর্থাৎ হাড়ের ভেতর থেকে মজ্জা বের করে সেই মজ্জায় পরিপুষ্ট হত দুর্বল মানুষ।কারন মাংস প্রায় পুরোটাই খেয়ে গেছে আগের শক্তিশালী প্রাণীরা।
    প্রায় কুড়ি লক্ষ বছর মানুষকে থাকতে হয়েছে এরকম দুর্বল হয়ে পিছনের সারিতে।কুড়ি লক্ষ বছর আগে যদি আফ্রিকার পূর্ব উপকূলের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাব সেখানে মানুষ যারা ঘুরে বেরাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছে সন্তানের জন্য প্রতিপালনকারী মা, রয়েছে মাটিতে খেলা করে বেরানো শিশু, রয়েছে নিজের প্রণয়ীর কাছে বুক থাপড়ে নিজের উদ্ধত যৌবন প্রদর্শনকারী যুবক ঠিক যেমন শিম্পাঞ্জি বেবুন হাতি এদের মধ্যে দেখা যায়, তেমনই।মানুষের মধ্যে আলাদা করে কোনো বিশেষত্ব ছিল না।তখনকার মানুষ কখনো ভাবতেও পারেনি যে তাদেরই উত্তরসূরিরা চাঁদে পৌঁছে যাবে।অবশ্য ভাবনা বা চিন্তা করার ব্যাপারটা মানুষের মধ্যে এসেছেও অনেক পরে।
    কুড়ি লক্ষ বছর ধরে ধীরে ধীরে পেশির তুলনায় মানুষের নিউরন হয়েছে শক্তিশালী।এরপর হঠাৎ করে মানুষ যখন খাদ্য শৃঙ্খলের একেবারে ওপরের সারিতে উঠে এলো, তখন সম্ভবত ওই কুড়ি লক্ষ বছর পিছনের সারিতে থেকে সবার উচ্ছিষ্ট খেয়ে সবার থেকে পালিয়ে পালিয়ে বাঁচার জন্যই হয়ত আধুনিক মানুষ অন্যান্য প্রাণীদের তুলনায় হয়ে উঠল সব থেকে বেশি নৃশংস।এক সময়কার সাভানা তৃণভূমির সব থেকে ভীরু সব থেকে নিচু প্রজাতির এক জন্তুর হঠাৎ করে এই ওপরে উঠে আসা তাদের প্রবৃত্তিকে করে তুলেছে নৃশংসতার চূড়ান্ত।
    কি করে মানুষ এই জায়গায় এলো? এর জন্য প্রাথমিকভাবে যে ঘটনা দায়ী সেটা হচ্ছে মানুষের হঠাৎ করে নিজের হাত দুটোকে মুক্ত করে ফেলা।

    চার হাত পায়ের বদলে শরীরের ভারসাম্য যে মুহূর্তে তারা দুটো পায়ের ওপর নিয়ে আসতে পারল ঠিক সেই মুহূর্তে তারা পাথর ছোঁড়া থেকে শুরু করে অস্ত্র বানানো সব করতে পারল।এঙ্গেলস এই ঘটনাকে ব্যাখ্যা করেছেন এইভাবে, যখনই মানুষের হাত মুক্ত হয়ে গেল, তখন তাদের সামনে খুলেলে গেল একটা নতুন দিগন্ত।তারা সেই হাত দিয়ে প্রথমে কি করবে বুঝে উঠতে পারেনি, পরে আস্তে আস্তে সেই হাতকে ব্যবহার করতে শুরু করল শ্রম করার জন্য। যে মুহূর্ত থেকে তারা শ্রম করতে শুরু করল সেই মুহূর্ত থেকেই মানুষ সম্পত্তির অধিকারী হল।গাছের ওপরের ফল তারা এর আগে পেড়ে খেতে পারত না।কিন্তু এবার তার গাছের ওপরের ফল খেতে পারল।হাতের পেশির নানারকম ব্যবহার পেশিকে দিল ফ্লেক্সিবিলিটি যার ফলে হাতের দ্বারা তারা নানারকম সূক্ষ্ম কাজ করতে সক্ষম হল।দরকারে আরো ওপরের গাছের ফলের জন্য তারা পেড়ে খাওয়ার হাতিয়ার বানাতে শুরু করল।অস্ত্র বানাতে শুরু করল যাতে তার থেকে শক্তিশালী প্রাণীদের ঠেকিয়ে রাখা যায়।তবে এই হাত মুক্ত হওয়ার জন্যও মূল্য দিতে হয়েছে মানুষকে।বলা যায় আজও সেই মূল্য চুকিয়ে চলেছে মানুষ।কিভাবে?
    মানুষ যখন চার হাত পায়ে হাটাচলা করত তখন তাদের নিম্নদেশ অর্থাৎ পেছনের দিক স্ফিত হল কিনা সেই নিয়ে তাদের চিন্তা করতে হয়নি।কারন স্ফিত হলেও তাদের শরীরের ভারসাম্য ঠিকই বজায় থাকত।এর ফলে মেয়েদের গর্ভে সন্তান যত বড়ই হোক না কেন তাদের কোনো অসুবিধা হত না।স্ফিত উদর নিয়ে তারা সহজেই চলাফেরা করতে পারত।কিন্তু যখন থেকে তারা উঠে দাঁড়িয়ে গেল তখন নারীরা তাদের নিম্নদেশ নিয়ে পড়ল বেজায় মুশকিলে।খুব ভারী নিম্নদেশ হলে হাঁটাচলায় প্রচন্ড অসুবিধা হয়।এই কারনে সন্তানকে বেশি সময় অব্দি গর্ভে ধারণ করা সম্ভব হয়না।সন্তানকে অন্যান্য জীবজন্তুর তুলনায় প্রিম্যাচিওর অবস্থায় পৃথিবীর আলো দেখতে হয়।এই কারনেই অন্যান্য জন্তুদের সন্তান হলে, সেই সন্তান আগে থেকেই স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে পৃথিবীর আলো দেখে, বাবা মায়ের বিশেষ করে মায়ের অতটা দরকার লাগে না।কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে সন্তানকে একটা দীর্ঘসময় পর্যন্ত তার বাবা মা অথবা শুধু মায়ের ওপর নির্ভর করে থাকতে হয়।
    হাত মুক্ত হওয়ার পরে আরেকটি বড়সর লাফ ছিল আগুনের আবিষ্কার।আগুন আগে থেকেই ছিল, কিন্তু মানুষ যখন তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখল তখন এক ধাপে অনেকটা পথ এগিয়ে গেল তারা।আগুন অখাদ্য বা অপাচ্য বস্তুকেও করে তুলল মানুষের খাদ্য।আর শুধু তাই নয়, খাদ্য গ্রহণ করার সময়েও দিল কমিয়ে।একটা অপাচ্য খাদ্য আগে সারাদিন ধরে মানুষকে চিবিয়ে যেতে হত তাকে তার অন্ত্রে পরিপাক করার জন্য।আগুনের ফলে রান্নার আবিষ্কার সেই সারাদিনের কাজ থেকে মানুষকে দিল মুক্তি।কয়েকঘন্টাতেই সারা হয়ে যায় খাওয়া দাওয়ার পাট।এর ফলে অন্য দিকে মন দেওয়ার সুযোগ পেল মানুষ আরো বেশি করে।আর আরেকটা ঘটনা যেটা ঘটল সেটা হচ্ছে এই রান্না করা পরিপক্ক খাবার খাওয়ার ফলে তাদের অন্ত্রের আয়তন হল ছোট।বৃহৎ অন্ত্র আর বৃহৎ মস্তিষ্ক এই দুটো ছিল একে অপরের বিপ্রতীপ।দুটোর খাই মেটানোর জন্য মানুষকে বেশি বেশি করে খাদ্য অন্বেষণ করতে হত। অন্ত্রের সাইজ ছোট হওয়াতে মস্তিষ্কের আয়তন বাড়ার আর কোনো সমস্যা রইল না।এইভাবে মানুষের আস্তে আস্তে দৈহিক বল আরো কমতে থাকল আর মস্তিষ্ক হয়ে উঠতে থাকল আরো ক্ষুরধার।
    এতদসত্ত্বেও ১.৫ লক্ষ বছর আগেও মানুষের সব কটি প্রজাতি ছিল প্রান্তিক।আগুন নিয়ন্ত্রণের ফলে তারা আগুন জ্বালিয়ে হয়ত বাঘ সিংহ সহ হিংস্র পশুদের কিছুক্ষণের জন্য দূরে সরিয়ে রাখতে পারত।আর তাছাড়া কিছুই নয়।এরই মাঝে আমাদের প্রজাতি হোমো সেপিয়েন্স নিজের মনে আপন খেয়ালে বেড়ে উঠছিল আফ্রিকার প্রান্তে।ঠিক কোন সময় থেকে হোমো সেপিয়েন্স প্রজাতির উদ্ভব তা নির্ভুলভাবে বলা সম্ভব নয় হয়ত তবে বিজ্ঞানী রা মোটামুটি ২ লক্ষ বছর আগে হোমো সেপিয়েন্সের মত দেখতে একটা প্রজাতির উদ্ভব তা বের করতে পেরেছেন।
    হঠাৎ করেই এই সেপিয়েন্স প্রজাতি প্রায় ৭০ হাজার বছর আগে আফ্রিকা ছেড়ে বেরিয়ে পড়তে শুরু করল।প্রথমে তারা গিয়ে পৌছল ইউরোপে, সেখান থেকে গেল এশিয়া মহাদেশে আর আরেকদল সাগর পেরিয়ে পৌছল অস্ট্রেলিয়া যেখানে ইতিপূর্বে কখনো কোনো মানুষের পায়ের ছাপ পড়ে নি।
    প্রথমে সেপিয়েন্সরা মুখোমুখি হল নিয়ান্ডারথালদের।নিয়েন্ডারথালরা দৈহিক ক্ষমতায় ছিল সেপিয়েন্সদের থেকে উন্নত।আগেই বলেছি তারা প্রতিকূল পরিবেশে থাকত, কাজেই তাদের শীত সহ্য করার ক্ষমতা ছিল বেশি আর খাদ্য সংগ্রহ করার ক্ষমতাও ছিল অন্যান্যদের তুলনায় উন্নত।তাদের মস্তিষ্কের আয়তনও ছিল সেপিয়েন্স দের থেকে বড়। তো এহেন নিয়েন্ডারথাল বা ইরেক্টাস বা আরো অন্য অন্য প্রজাতি যেগুলো ছিল সেগুলো বিলুপ্ত হল কি ভাবে?
    এর পিছনে দুটো পরস্পর বিরোধী তত্ত্ব রয়েছে।এক হচ্ছে ইন্টারনাল ব্রিডিং থিওরি আর দুই রিপ্লেসমেন্ট থিওরি।ইন্টারনাল ব্রিডিং থিওরি বলছে সেপিয়েন্সরা যখন গিয়ে হাজির হল নিয়েন্ডারথালদের জায়গায় তখন তাদের সাথে সেপিয়েন্সরা মিশে গেল যৌনতা আর ব্যবহারিক জীবনচার্চার মাধ্যমে।ঠিক এভাবেই ইরেক্টাসদের সাথেও মিশে গেল সেপিয়েন্সরা। ক্রমে ক্রমে সেপিয়েন্সদের উন্নত জিন নিয়েন্ডারথাল আর ইরেক্টাস সহ আর যা যা প্রজাতি ছিল তাদেরকে প্রায় গিলে ফেলল বলা যায়।কারন উন্নত জিন জয়ী হবে অনুন্নিত জিনের ওপর।অর্থাৎ তাহলে শুদ্ধ সেপিয়েন্স বলে কোথাও কোনো কিছুর অস্তিত্ব থাকে না।আজকের ইউরোপের যে মানুষদের দেখি তারা হচ্ছে সেপিয়েন্স আর নিয়েন্ডারথাল এর মিশ্রণ আবার এশিয়ার মানুষরা হচ্ছে সেপিয়েন্স আর ইরেক্টাসের মিশ্রণ।
    রিপ্লেসমেন্ট থিওরি বলে সেপিয়েন্সরা যখন গিয়ে পৌছাল নিয়েন্ডারথাল বা ইরেক্টাসদের ভূমিতে তখন তারা জোর করে দখল করে নিল তাদের জায়গা এবং তাদের খাদ্য ও রসদ।আজকের মানুষের মধ্যেও সামান্য পার্থক্যে যে হিংসার উদ্ভব হয়, ধর্মীয় বা জাতিগত বা বর্ণগত পার্থক্যের মাধ্যমে মানুষের সাথে মানুষের রক্তক্ষয়ী সঙ্ঘর্ষ যেখানে দেখতে পাই সেখানে সম্পূর্ণ অন্য প্রজাতির মানুষকে যে আজকের মানুষ ছাড়বে না, আজকের থেকেও আরো হিংস্র ভাবে তাদের ওপর আক্রমণ করবে তা ভেবে নিতে কোনো কষ্টকল্পনা করতে হয় না।প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে ৭০ হাজার বছর আগে সেপিয়েন্সরা যে অবস্থান ত্যাগ করে তারও আগে প্রায় ১ লক্ষ বছর আগেও একবার তারা তাদের পূর্ব আফ্রিকার জন্মভূমি ত্যাগ করে নিয়েন্ডারথালদের কাছে গিয়ে হাজির হয়েছিল তার একটা প্রমাণ পাওয়া গেছে।কোনো কারনে সেই দফায় তাদের হেরে ফিরতে হয়।আরব ভূমি ইউরোপ ও এশিয়া জয় তাদের কাছে অধরা থেকে যায়।এর প্রায় তিরিশ হাজার বছর পর হঠাৎ করেই তাদের ব্যবহারে এবং চেতনায় বেশ ভালো রকম পরিবর্তন আসে।সম্ভবত কোনো জিন মিউটেশনের জন্য তাদের এই পরিবর্তন ঘটেছিল।এই পরিবর্তনের ফলে তারা নিজেদের মধ্যে গড়ে তুলতে পারে আরো গভীর সংযোগ নিজেদের ভাষা ও ধ্বনি ব্যবহার করে।হয়ে ওঠে আরো বেশি হাতের কাজে পারদর্শী, যার ফলে তার নৌকা বানাতে পারে এবং অস্ত্র শস্ত্র সহ সুচ সুতোর ব্যবহার যার ফলে গরম পোষাক তৈরিতে তারা হয়ে ওঠে বেশ পটু।এই আরব্ধ জ্ঞান নিয়ে এরপর তারা বেরিয়ে পড়ে আরব ভূমি হয়ে ইউরোপ ও এশিয়ার পথে।সেখানে নিয়ান্ডারথাল ইরেক্টাস সোলেন্সিস ও খর্বাকৃতির ফ্লোরেসিয়েন্সিস দের তারা পরাজিত করে ফেলে।সোলেন্সিস শেষ দেখা গেছিল ৫০ হাজার বছর আগে, নিয়েন্ডারথালদের ৩০ হাজার আর ফ্লোরেন্সিসদের ১২ হাজার বছর আগে শেষ দেখা গেছিল।তারপর আর তাদের সন্ধান কেউ পায়নি।

    এই যে হঠাৎ করে জিনের পরিবর্তন যার ফলে হোমো সেপিয়েন্সরা হয়ে উঠল অনেক বেশি দক্ষ, নিজেদের মধ্যে শুরু করল ভাবের আদানপ্রদান আর সুচের আবিষ্কার তাদের গরম পোষাকের যোগান দেওয়াতে তারা সাইবেরিয়ার মত শীতল জায়গাতেও নিজেদেরকে মানিয়ে নিতে পারল এই ব্যাপারটাকে বিজ্ঞানীরা বলছেন 'কগনিটিভ রেভলিউশন'।জ্ঞানের বিপ্লব।তাদের চেতনার মান হতে শুরু করল অন্যান্য প্রাণিদের তুলনায় উন্নত।এই কগনিটিভ রেভলিউশনের ফলেই আজ হোমো সেপিয়েন্স নামক প্রজাতিটা হয়ে উঠেছে পৃথিবীর শাসক।সত্তর হাজার বছর আগে যে জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল তা তিরিশ হাজার বছরের মধ্যে এসে সম্পূর্ণতা পেয়ে যায়।কগনিটিভ রেভলিউশনের সময়সীমাও ধরা হয় এই সত্তর হাজার থেকে তিরিশ হাজার বছর সময়কালকে।এরপর আস্তে আস্তে মানুষ করেছে কৃষি বিপ্লব বা অগ্রিকালচারাল রেভলিউশন তিরিশ হাজার বছর আগে আর তারপর শেষ বিপ্লব হয়েছে সাইন্টিফিক রেভলিউশন বিগত ৫০০ বছর ধরে।কগনিটিভ রেভলিউশনের ফলে ভাবের আদান প্রদানের মাধ্যম হিসেবে মানুষের নিজের ভাষা তৈরি হল।এই ভাষার ওপর ভর করে তৈরি হল মানুষের কালচার বা সংস্কৃতি। আজকের দুনিয়ায় ভিন্ন ভিন্ন মানুষের যে ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি, বা পৃথিবীজোড়া যে কালচারাল এক্সচেঞ্জ বা সাংস্কৃতিক বিনিময় হয় তার মূল স্থাপিত হয়েছিল ওই কগনিটিভ রেভলিউশনের মধ্যে দিয়েই।এবং ঠিক ওই সময় থেকেই তৈরি হতে থাকে মানুষের ইতিহাস।তার আগে অব্দি যা ছিল তা পড়ে জীববিজ্ঞানের আওতায়।কগনিটিভ রেভলিউশনের ফলে জীববিজ্ঞান থেকে শুরু হল ইতিহাস।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ৩০ আগস্ট ২০১৮ | ২০৩৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কল্লোল | 238912.66.3456.194 (*) | ৩১ আগস্ট ২০১৮ ০৩:২৮63902
  • স্যাপিয়েনরা অন্যান্য মানব প্রজাতিকে হারিয়ে দিতে পারলো কেন, তার আরও একটা ব্যখ্যা রয়েছে।
    য়ুভাল নোয়া হারারির স্যাপিয়েন্স নামে বইটিতে উনি আর একটি সম্ভাব্য কারণ দেখিয়েছেন।
    স্যাপিয়েনরাই প্রথম মানব প্রজাতি যারা বিমূর্ত চিন্তা করতে শেখে। প্রায় ৩২হাজার বছর আগে তারা সিংহ-মানুষের মূর্তি গড়েছিলো, যা পাওয়া গেছে অধুনা জার্মানীর স্টাডাল গুহায়। এই যে কল্পনা শক্তি যা তাদের গোষ্ঠীবব্দ্ধ হতে শেখায় (খেয়াল রাখবেন - যূথবদ্ধ নয় গোষ্ঠীবদ্ধ)। স্যাপিয়েন বা অন্য মানব প্রজাতিরা অনেক আগে থেকেই যূথবদ্ধ, কিন্তু স্যাপিয়েনরা গোষ্ঠীবদ্ধ হতে শেখে বিমূর্ত চিন্তার জায়গা থেকে। যে চিন্তা মানুষকে একে অন্যের সাথে সহযোগিতা করতে শেখায়। গোষ্ঠীর ভিতরের মানুষদের সঙ্গে সম্পর্কিত বোধ করতে শেখায়। যুদ্ধে, এই মনোভাবের উদ্ভব, এদের অন্যদের থেকে এগিয়ে দেয়।
    কয়েক হাজার বুনো মোষের থেকে একজনকে আক্রমন করে সিংহের দল। সে একাই লড়তে থাকে অন্য মোষেরা নির্বিকার চেয়ে থাকে। অন্য মানব প্রজাতির ক্ষেত্রে এটা ঘটে থাকতে পারে। কিন্তু স্যাপিয়েনরা একে অন্যের বিপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। এটাই তফাৎ গড়ে দেয়।
  • dd | 90045.207.8945.92 (*) | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:০৫63903
  • আরো দুটো কারন রয়েছে, মানুষের মানুষ হয়ে উঠবার পিছনে।

    একটা তো লাং পাওয়ার, মানে দম। শিকার যোগ্য সব প্রাণীই মানুষের থেকে দ্রুত ছুটতে পারতো, কিন্তু সেটা অল্প সময়ের জন্য। মানুষ কম গতিতে দৌড়ালেও অনেকক্ষন ধরে দৌড়ে সেই শিকারকে ধরতে পারতো।

    আর সেকেন্ড কারনটা হচ্ছে কাঁধ। মানুষের কাঁধ অন্যান্য apeদের তুলনায় অনেক শক্তিশালী। যেটাতে বর্শা বল্লম ছুঁড়ে এমন কি হিংস্র মাংশাষী জন্তুকেও ঘায়েল করতে পারতো, অতিকায় ম্যামথও পার পেতো না। শিকারী প্রাণী হিসেবে এই দুটোই খুব বড় কারন ছিলো মানুষের এক নম্বর প্রেডাটর হওয়ার।

    নাঃ। সূত্র নেই। কোথায় কবে কী পড়েছি মনেও নেই।
  • Ishan | 8967.44.7812.221 (*) | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৫০63906
  • কল্লোলদা তো উপরে স্যাপিয়েন্স থেকেই রেফার করেছে।
  • Pi | 2345.110.674512.213 (*) | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৩৯63907
  • হ্যাঁ, সেদিন অন্য টইয়েও হারারির সাপিয়েন্স নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল, কোন টই যেন?
  • dd | 670112.51.2323.75 (*) | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:৪৪63908
  • আ মোলো যা। ন্যাড়ার কথা শোনো। ওঃ, কল্লোল আর আমি, এই আমরা দুজনে, বেশী জানি না কে এক ছাতার সাহেব বেশী জানে?

    আরে, আগুনের আগেই তো শিকার ধরতে, বাঘ শিংগির হাত থেকে পালাতে, দম চাই আর কাঁধ চাই। লরেন বাবুর মতন ছাতি আর আরাবুল মার্কা কাঁধ ছাড়া টিঁকতো কি করে? চকমকি পাথর ঘষে আগুন জ্বালাতেও পারতো না।

    আপনেরা উপেন বাবুর ছড়া পড়েন নি?

    আগে,লরেনবাবুর দম চাই
    আর আরাবুলের কাঁধ
    তবে পালাই সিংগি থেকে
    তবে ধরি হরিন
    তবে মারি ম্যমথটাকে
    তবে করি রোস্ট।
    তবে মগজএ মাস্কেল হবে
    গুচতে করবো পোস্ট

    আগুন জ্বালানোর আগেই
    এই দুটো চাই, মোস্ট।
  • ন্যাড়া | 890112.217.782323.153 (*) | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৫:০৭63909
  • চোখে ছানি, নয় পেটে আখের সরবত বেশি পড়েছিল। কল্লোলদার দেওয়া জলজ্যান্ত রেফারেন্সটা দেখতেই পেলাম না গা!
  • I | 7845.15.124512.58 (*) | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৫:২৫63910
  • কিন্তু মানুষ কেমতে চারপেয়ে থেকে দোপেয়ে হল, তা নিয়ে আপনেরা নীরব। গুগুলকাকুও দিশেহারা। রাশি রাশি তত্ত দেচ্ছে। সোজাসাপটা ধাঁ করে কিছু কইতে পারে না। কেমনধারা ব্যাভার ? অ্যাতো কম জানেন ক্যানো?
  • ন্যাড়া | 890112.217.782323.153 (*) | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৫:৩০63904
  • এ বাবা, কল্লোলদা আর ডিডিদা এই দশকের সব থেকে সাড়া জাগানো বই - স্যাপিয়েন্স এখনও পড়নি! সেখানে বলছে রান্না শেখা (মানে আগুনে ঝলসান) মানুষের উন্নতির কারণ। অন্য সব প্রজাতি খাবার থেকে যা এনার্জি পেত তার পুরোটাই ব্যয় হয়ে যেত খাদ্য অন্বেষণে আর তার হজমে। মানুষ যেই রান্না শিখল, তাতে শুধু যে তাড়াতাড়ি খাবার হজম হতে লাগল তাইই নয়, এনার্জিও বেশি পাওয়া যেতে লাগল (দুষ্পাচ্য বনাম সুপাচ্য)। এই এক্সট্রা এনার্জি গেল ব্রেনে, ব্রেন ক্রমশঃ বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠে অন্য প্রজাতিদের হারিয়ে দিল। পড়ে ফেল।

    Sapiens: A Brief History of Humankind https://www.amazon.com/dp/0062316117/ref=cm_sw_r_cp_apa_DiIIBb53MXMEV
  • Ishan | 8967.44.7812.221 (*) | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৬:০৭63911
  • ওই নিয়েও তত্ত্ব আছে তো। হারারি বাবু লিখেছেন একটু পপুলার করে। রায়ান লিখেছেন। এছাড়াও এঙ্গেলস তো পড়েছেনই।
  • b | 4512.139.6790012.6 (*) | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৬:২৯63912
  • মানব বিবর্তনে গুরুচন্ডালীর প্রভাব সম্পর্কে আপনারা একেবারেই নীরব।
  • Ishanb | 8967.44.7812.221 (*) | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৭:২০63913
  • কে কইল? আমরা কোনো পাথরই অস্পর্শিত রাখিনি।

  • পিনাকী | 56900.195.010123.82 (*) | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৯:২০63905
  • কী আশ্চর্য! স্যাপিয়েন্স বইটা কিনেছি দুহপ্তা আগে। এখনও পড়া শুরু করার সময় পাই নি। আজই শুরু করব। ঃ-)
  • Arijit Guha | 7845.15.894512.105 (*) | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:১২63914
  • আমার এই লেখাটা পুরোটাই প্রায় হারারি থেকেই নেওয়া হ্যাঁ, মানুষের প্রজাতি(শুধু সেপিয়েন্স নয়, পুরো মানব প্রজাতি কি করে হঠাৎ করেই চারপেয়ে থেকে দু পেয়ে সেই নিয়ে উনিও কোনো তত্ত্ব দেন নি।সম্ভবত প্রয়োজনই মামুষকে চারপেয়ে থেকে দু পেয়ে করেছে।সে গাছের ডালের উঁচু ফলের অন্বেষণই হোক বা অন্যান্য হিংস্র শক্তিশালি জানোয়ারের থেকে বাঁচার প্রয়োজনই হোক, যে কোনো একটা প্রয়োজন তো ছিলই।
  • Atoz | 125612.141.5689.8 (*) | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১২:২৯63915
  • ভারী মাথাওয়ালা(বড় মগজের কারণে) অবস্থায় চারপেয়ে থেকে দুপেয়ে হয়ে ওঠা খুব কঠিন। মাথা টলটল করবে, পায়ের ব্যালেন্স থাকবে না, ভয় করবে। ধুপ করে পড়ে যাবে একটু এগিয়েই। চারপেয়ে থেকে দু'পেয়ে হয়ে দু'পায়ে দৌড়োনো তো দূরের কথা, হাঁটাই বিরাট চ্যালেঞ্জ।
  • Bishan Basu | 7845.15.891223.234 (*) | ২৫ অক্টোবর ২০১৮ ০৮:৫০63916
  • বইটা নিয়ে কিছু ভ্যালিড পয়েন্ট রয়েছে এইখানে।

    স্বাভাবিক কারণেই ওবামা বা বিল গেটস বইটা নিয়ে মুক্তকচ্ছ হয়ে প্রশংসা করছেন।

    সময়সুযোগ পেয়ে মোসাহেবদের কেউ পড়ে ফেললে, এবং সেই ভালোলাগার কথা সারসংক্ষেপসহ ওনাকে জানিয়ে দিলে, আশা করি ট্রাম্প সাহেব তাঁর পূর্বসূরীদের চাইতেও আরো বেশী করে বইখানা ভালোবাসবেন।

    https://www.thenewatlantis.com/publications/a-reductionist-history-of-humankind
  • | 90090012.65.890123.190 (*) | ২৬ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:২৮63917
  • জ্ঞানবুদ্ধি এবং তার সঙ্গে করোটির আয়তন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নরম্যাল ডেলিভেরিতে মায়ের যন্ত্রণা বেড়ে যাওয়ার একসূত্রতাটা কী সুন্দর ভাবে ধরা আছে জ্ঞানবৃক্ষের ফল খেয়ে স্বর্গচ্যুত মানবের প্রতি ঈশ্বরের অভিশাপের রূপকে! আরও একবার মনে পড়ে গ্যালো... এবং হ্যাঁ, মৃত্যুকে মনে রাখা (ভাষার অভাবে আর কোনো প্রাণী যা জানেই না। যে একদিন সে মারা যাবে), মানে অমরত্ব থেকেও নির্বাসনও সেই জ্ঞানবৃক্ষের ফল খাওয়ার রূপকেই!
  • Atoz | 125612.141.5689.8 (*) | ২৬ অক্টোবর ২০১৮ ০৫:৪৬63918
  • নর্মাল ডেলিভারিতে ব্যথানাশক এপিডুরাল ইঞ্জেকশনের ব্যাপারটাও আস্তে আস্তে ঢোকাতে হবে মিথোলজিতে। কারণ জ্ঞানবৃক্ষের দ্বারাই তো ধীরে ধীরে ----এইসব ইঞ্জেক্শন টিঞ্জেক্শন - ---ঃ-)
  • ¥ | 457812.254.563412.23 (*) | ২৬ অক্টোবর ২০১৮ ১০:০২63919
  • এই শিরোনামটি দেখলেই মনে হয় ‘বিপ্লবের জ্ঞান’ অনেকদিন গুরুর পাতায় দেখি নি। অন্তত ‘গুরুচন্ডালীঃ একটি নির্মোহ ব’-ও কি লিখতে আসবেন না?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে প্রতিক্রিয়া দিন