এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • রাজেন্দ্রলাল মিত্র: উনিশ শতকের ভারতবিদ্যা পথিক

    Ashoke Mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২২ জুলাই ২০১৬ | ১৮৫৪ বার পঠিত
  • [এবছর ২৬ জুলাই ২০১৬ রাজেন্দ্রলাল মিত্রের মৃত্যুর একশ পঁচিশ তম বছর সূচিত হচ্ছে। উনিশ শতকের ভারতের এই অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্রকে আমরা আজ ভুলে গেলেও তাঁর জীবনের কর্ম ও সাধনাকে যতটুকু স্মরণ করব সেই অনুপাতে সেই ভুলের প্রায়শ্চিত্য করতে ইচ্ছে হবে। সেই তাগিদ থেকেই এই রচনার জন্ম। ধাপে ধাপে কয়েকটি ক্রমে আমরা চেষ্টা করব স্মরণ করার ফাঁকে ফাঁকে এই মহৎ মানুষটিকে তাঁর প্রাপ্য সম্মানের কিছু ভাগ অন্তত ফিরিয়ে দিতে। এবারে দ্বিতীয় পর্ব।]

    দ্বিতীয় পর্ব
    ।। ৩।।
    এই যে দেশকে সত্য করে জানা এবং দেশবাসীকে সেই সত্য জানানোর আগ্রহ—উনিশ শতকের বাংলাদেশের অনেক মনীষীরই যা ছিল জীবনব্রত—রাজেন্দ্রলালকেও তা পেয়ে বসল। গ্রিক লাতিন এবং সংস্কৃত ভাষা শিখে প্রাচীন ভাষাগুলির সঙ্গে আধুনিক ভাষাসমূহের যে বংশগতির সম্পর্ক তা তিনি নিজে যেমন যেমন বুঝতে শুরু করলেন, ভারতের মাটিতে তার প্রয়োগের ক্ষেত্র খুঁজতে লাগলেন।
    ১৮৬১ সালে কলকাতার বেথুন সোসাইটিতে তিনি একটি প্রবন্ধ পাঠ করলেন, যার শিরোনাম “The Origin and Affinity of the Indian Vernaculars”, যার প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ভারতীয় ভাষাগুলির পারস্পরিক আত্মীয়তা এবং সংস্কৃত ভাষার সঙ্গে তাদের সাংস্কৃতিক-ঐতিহাসিক সম্বন্ধ। মনে রাখা দরকার, ভাষা বিজ্ঞান, উপকরণ এবং বিচার পদ্ধতি, দুদিক থেকেই ইউরোপেও তখন অবধি শৈশবে; আর ভারতে তার সবে মাত্র জন্ম হয়েছে বলা চলে। সেই অবস্থায় ভাষাবিজ্ঞানের প্রতি এই মনোনিবেশ এবং সমাজ জীবনে তার প্রয়োগ ক্ষেত্র খোঁজা নিঃসন্দেহে একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই একই আগ্রহ থেকে তিনি চার বছর বাদে বেথুন সোসাইটিতে আর একটি বক্তৃতা দেন, যার বিষয়-পরিচিতি ছিল “Writing in Ancient India and the Sanskrit Alphabets”। এখানে তিনি ম্যাক্সম্যূলার এবং গোল্ডস্টুকারের মতামত পর্যালোচনা করে সংস্কৃত লিপি খ্রিস্টপূর্ব চতুর্দশ শতকের উদ্ভাবন বলে সাব্যস্ত করেন। একথা সত্য, পরবর্তীকালে ভাষাবিজ্ঞানের অগ্রগতি রাজেন্দ্রলালের এই অনুমান ও আরও কয়েকটি সিদ্ধান্তকে ভুল প্রমাণ করেছে। কিন্তু তাতে তাঁর এই ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না যে ভারতীয়দের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম ভাষাকে বিজ্ঞান ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্বের সীমানায় পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
    জানাতে হবে, দেশবাসীকে অনেক নতুন জিনিস জানাতে হবে শুধু নয়, জানার ব্যাপারে আগ্রহী করেও তুলতে হবে। তার উদ্যোগ নিতে হবে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে তখন একদিকে চলছে শিক্ষা বিস্তার, স্ত্রীশিক্ষা বিস্তার, স্কুল স্থাপন; অপর দিকে ঘটছে বাংলাভাষার দ্রুত বিকাশ। তার মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে একদল রুচিশীল শিক্ষিত বাংলা গদ্য পদ্যের পাঠক সমাজ তৈরি হচ্ছেন এবং এক স্বাভাবিক নবজাগ্রত জ্ঞানতৃষ্ণা নিয়ে আসরে অবতীর্ণ হচ্ছেন! রাজেন্দ্রলাল যেন এরই উত্তর হিসাবে একটি অভিনব পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে এলেন। বঙ্গভাষানুবাদক সমাজের আর্থিক আনুকূল্যে ১৮৫১ সাল থেকে তিনি শুরু করলেন “বিবিধার্থসংগ্রহ” নামক একটি মাসিক পত্রিকা। বাংলা ভাষায় এটাই ছিল প্রথম সচিত্র মাসিক। ভারতে তখন প্রয়োজন অনুযায়ী ছবি পাওয়া যেত না বলে তিনি ইউরোপ থেকে ছবি কিনে এনে পত্রিকার বিভিন্ন প্রবন্ধের ফাঁকে ফাঁকে সেগুলি ছাপিয়ে গুঁজে দিতেন। পত্রিকার পরিচয় লিপিতে বলা ছিল, এটি হবে “পুরাবৃত্তেতিহাস-প্রাণীবিদ্যা-শিল্প-সাহিত্যাদি-দ্যোতক”। নামেই মালুম, তিনি পাঠকদের ঠিক কী ধরনের রচনা উপহার দিতে চান। প্রথম প্রবন্ধেই তিনি অপ্রাকৃত অলৌকিক রটনায় বিশ্বাস বর্জনের আহ্বান জানান। পত্রিকার দূরগামী উদ্দেশ্য ব্যক্ত করে লেখেন: “যাহাতে সাধারণ জনগণে অনায়াসে বিদ্যালাভ করে, যাহাতে বণিক এবং মোদক আপন আপন কর্ম হইতে অবকাশমতে জগতের বৃত্তান্ত জানিতে পারে, যাহাতে বালক এবং বালিকাগণ গল্পবোধে ক্রীড়াচ্ছলে এই পত্র পাঠ করিয়া আপন আপন জ্ঞানের বিস্তার করে, যাহাতে যুবকগণ ইন্দ্রিয়োদ্দীপক গ্রন্থসকল পরিহরণপূর্বক উপকারক বিষয়ের চর্চা করে, যাহাতে বৃদ্ধ ব্যক্তি তুষ্টিজনক সদালাপ করিতে সক্ষম হয়েন—এমত উপায় প্রদান করা এই পত্রের লক্ষ্য; এবং এই মানস সিদ্ধ্যর্থে যাহাতে এই পত্র সকলেই অনায়াসে পাঠ করিতে পারেন ইহা আমাদের অবশ্য কর্তব্য।”
    বয়ানটি পাঠ করে মনে হয়, আমাদের কালের কোনো ক্ষুদ্র সমাজ সচেতক পত্রিকা পাঠকদের কাছে তার উদ্দেশ্য এক শতাব্দ প্রাচীন সাধু বাংলায় বুঝি ব্যক্ত করছে!
    প্রায় একই উদ্দেশ্য নিয়ে ১৮৬৩ সাল থেকে তিনি আর একটি পত্রিকা প্রকাশনায় হাত দিয়েছিলেন, নাম “রহস্যসন্দর্ভ”। এই দুখানি পত্রিকায় তিনি নিজে যেমন নানা বিষয়ে লিখেছেন, সেই সাথে সে কালের বহু বিশিষ্ট লেখককে দিয়েও বিচিত্র বিচিত্র সব ব্যাপারে লিখিয়েছেন। কিছু কিছু প্রবন্ধের শিরোনাম উল্লেখ করলে তাঁর সেই সব পরিকল্পনার বৈচিত্র্য এবং ব্যাপ্তি বুঝতে সুবিধা হতে পারে। বিবিধার্থসংগ্রহে বেরিয়েছিল: গ্রন্থাগার, তেগবাহাদুর, শিখগুরু নানকের বৃত্তান্ত, প্রাচীন পালি অক্ষর, বৌদ্ধদিগের মঠ, ভীলজাতির বিবরণ, মনুষ্যের প্রাকৃতিক বিচার, সতীত্ব, সাহিত্য-বিবেক, সৃষ্টির সমন্বয়, সৌহার্দ্যের পথ্য, অভিজ্ঞান-শকুন্তলম্‌ নামক নাটকের সংক্ষেপ বিবরণ, আজতেকীয় নরবলি, আগ্নেয়গিরি, ইলোরার গুহা, উষ্ট্র, গঙ্গার উৎপত্তি, কিয়াজ জাতীয় উদ্বাহরীতি, শূকর সংহারের প্রাচীন প্রথা, কুকি জাতির বিবরণ, ইলেকট্রিক টেলিগ্রাফ্‌ অর্থাৎ, তড়িত বার্তাবহ যন্ত্র, কায়িক সৌন্দর্যবিষয়ে মতভেদ, ভারতবর্ষের লোকসংখ্যা, মিশরদেশীয় পিরামিড, মুক্তা মুদ্রা ও বস্ত্রের বিনিময়, যাভাদ্বীপের বিবরণ, রুশীয় দেশের রাজদণ্ড, দাস ব্যবসায়, ইত্যাদি। রহস্যসন্দর্ভ থেকে কয়েকটি নমুনা: গ্রীনল্যান্ডের বৃত্তান্ত, পারস্যদেশীয় স্ত্রীদিগের রীতি ও নীতি, নদী ও কালের সমতা, ভাষাবিজ্ঞান, মস্তিষ্ক, হিন্দু মহিলাগণের হীনাবস্থা (সমালোচনা), হীরক আতর ও গোলাপ, ভূষণ নিরূপণ, ভেলশা শব্দের ব্যুৎপত্তি, সৌন্দর্য কাহাকে বলে, আরাকান, ত্রিপুরা, ভূতত্ত্ব, প্রাচীন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া, ইত্যাদি।
    অনেকেরই জানা নেই, বাংলা ভাষায় আধুনিক মানচিত্র প্রবর্তনের কৃতিত্বও রাজেন্দ্রলালের। বিবিধার্থসংগ্রহ পত্রিকায় যখন তিনি রাজপুত রাজাদের ইতিহাস ছাপাতে শুরু করলেন, তখন একজন মুসলমান চিত্রকরকে দিয়ে রাজপুতানার মানচিত্র আঁকিয়ে নিয়েছিলেন।* পরবর্তীকালে বাংলা ও অন্যান্য ভাষায় তিনি সমগ্র ভারতের মানচিত্রও তৈরি করেন। এই সুবাদে ভূগোল সম্পর্কে তাঁর আগ্রহের কথাও উল্লেখযোগ্য। বিদ্যাসাগর তখন নতুন নতুন স্কুলস্থাপন করে বাংলা ভাষায় শিক্ষাবিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। শিক্ষিত বন্ধুদের তিনি পীড়াপীড়ি করছিলেন বিভিন্ন বিষয়ে বাংলায় পাঠ্যপুস্তক লিখবার জন্য। ইতিমধ্যে অক্ষয় কুমার দত্ত তত্ত্ববোধিনী সভার তরফে এক খানি “ভূগোল” গ্রন্থ (১৮৪৩) লিখে বের করে ফেলেছিলেন। এবার সাড়া দিলেন রাজেন্দ্রলাল “প্রাকৃত ভূগোল” নামে একটা বই (১৮৫৪) রচনা করে। এ সম্পর্কেও তাঁর বিদ্যাবুদ্ধি কতটা সময়ানুগ ছিল তা বোঝা যায় শুধুমাত্র একটা সংজ্ঞা থেকে: “ভূগোলের যে অংশে জল-স্থল-বিভাগ—সমুদ্র, হ্রদ ও নদীর ধর্ম—জলের লবণাক্ততা, স্রোত, জোয়ার ও উচ্চতার বিবরণ—পর্বত, অধিত্যকা, উপত্যকা, ক্ষেত্র ও দ্বীপভেদ—বায়ুর গতি, ভূমিকম্প, নীহারিকাস্ফোট, বৃষ্টির নিয়ম, ঋতুর ক্রম, দেশ ও ঋতুভেদে মনুষ্য-পশু-পক্ষী-বৃক্ষভেদ, ইত্যাদি—পৃথিবীর প্রকৃতাবস্থার বিবরণ বিষয়ক আলোচনা থাকে, তাহার নাম প্রাকৃত ভূগোল।”
    এই মানচিত্র রচনার কাজে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি এতটাই পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন যে কিছু দিন পরে ভারত সরকার তাঁকে উত্তর পশ্চিম ভারতের মানচিত্র তৈরির জন্য আমন্ত্রণ জানান। তিনিও তাতে সাড়া দিয়ে কাজটি সুসম্পন্ন করেন।
    নবজাগরণ এসে সেদিন এই সহস্রাধিক বছর ব্যাপী ভারতীয় বন্ধ্যা সমাজের বুকে জ্ঞান বিজ্ঞান শিল্প সাহিত্য—নানা ক্ষেত্রে ব্যক্তি প্রতিভা বিকাশের সিংহদুয়ার খুলে দিয়েছিল। আর সেই অবকাশে তখন কলকাতার বুকে এক অনন্য বহুমুখী প্রতিভার প্রস্ফুটন হচ্ছিল! অবশ্য একা নয়, আরও অনেক বড় চরিত্রের পাশাপাশি, সম তালে, সমান স্বাচ্ছন্দ্যে। যদিও এক স্বতন্ত্র একক নতুন কর্মক্ষেত্রে।

    ।। ৪।।
    এই বিচিত্রগামী সৃজনশীলতার আরও কয়েকটি দিক নিয়ে এখানে সংক্ষেপে বলা যেতে পারে।
    রাজেন্দ্রলাল নিজে সাহিত্যকার ছিলেন না। সরাসরি কোনো গল্প উপন্যাস নাটক বা কবিতা লেখেননি। প্রাচীন ও মধ্য যুগের ভারতের সাংস্কৃতিক ইতিহাসের বিভিন্ন ছোট ছোট অধ্যায়ের পুনরুদ্ধারেই সারা জীবন ব্যাপৃত থেকেছেন। কিন্তু সেই সময় বিদ্যাসাগর, বঙ্কিম মাইকেল মধুসূদন ও অন্যান্যদের হাতে বাংলা ভাষায় বাংলা সাহিত্যের গদ্য ও পদ্যের যে নব জন্মের উৎসব চলছিল, তিনি তার শুধু আগ্রহী পাঠক বা রসাস্বাদক মাত্র নন, সমালোচক ও উৎসাহদাতা হিসাবেও অংশ গ্রহণ করেছেন। এখানেও তাঁর আর একটি প্রথম হওয়ার কৃতিত্ব। বাংলা পত্রিকায় সমকালীন সাহিত্য ও সাহিত্যিকের উপর সমালোচনামূলক রচনা ও প্রকাশের যে ধারা আমরা আজকাল দেখতে পাই, বিবিধার্থসংগ্রহ ও রহস্যসন্দর্ভ সাহিত্য পত্রিকা না হওয়া সত্ত্বেও এই প্রক্রিয়ার শুরু সেখানেই হল।
    উদাহরণ: বঙ্কিমের উপন্যাসগুলিতে তিনি লক্ষ করেন, “কল্পনা, গ্রন্থন, রচনা, সকলই নূতন প্রকারে নিষ্পন্ন হইয়াছে।” তৎকালীন সাহিত্য সম্পর্কে বলেছেন, বাংলা সাহিত্য থেকে ভূত প্রেত বিদায় নিচ্ছে, সৃষ্টি হচ্ছে মানুষিক ঘটনার উপন্যাস। অর্থাৎ, সাহিত্য রচনা ও পাঠকের রুচি—উভয়ত অধর্মীকরণ (secularization)–এর যে প্রবণতা জন্ম নিচ্ছে তা তাঁর দৃষ্টি এড়ায় না। মাইকেল মধুসূদন দত্তের চতুর্দশপদী কবিতাবলির দুটি কবিতা রহস্যসন্দর্ভ-র পাতায় বেরিয়েছিল। সমগ্র কাব্যগ্রন্থটি ছেপে বেরবার পর তিনি এর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে একটি অসাধারণ সমালোচনা লিখেছিলেন। বাংলা কবিতার জগতে তখনও প্রচলিত ভারতচন্দ্রের কাব্যরীতির আঙ্গিক ও বিষয়বস্তু—উভয় ক্ষেত্রেই যে মৌলিক রূপান্তর ঘটালেন মাইকেল, কাব্যজগতের সেই ঝোড়ো বিপ্লবকে বুঝবার মতো সমঝদার সাহিত্য রসিক শুধু সেদিন নয়, আজও যথেষ্ট কম। তাই আমরা রাজেন্দ্রলাল মিত্রের মন্তব্যে বিস্ময়ে আপ্লুত না হয়ে পারি না: “যে সকল ব্যক্তি “ও লো লো মালিনী”-র রুনুঝুনু শব্দঝঙ্কারে মুগ্ধ হন ও অনুপ্রাসই কবিতার সার বলিয়া কৃতনিশ্চয় আছেন তাঁহাদের নিকট এই নূতন গ্রন্থখানি (চতুর্দশপদী কবিতাবলী) কোনোমতে সমাদৃত হইবে না। পরন্তু যাঁহারা উৎকৃষ্ট প্রসঙ্গ, অলৌকিক কল্পনাশক্তি, চমৎকার লক্ষণা, প্রাঞ্জল রচনা ও প্রকৃষ্ট ওজোগুণবিশিষ্ট বাক্যে মনের আনন্দ সাধন করিতে পারেন, যাঁহারা জ্ঞাত আছেন যে কবিতার মূলই সদ্ভাব, এবং তদ্‌ভাবে সহস্র অনুপ্রাসও চিত্তের প্রকৃত অনুমোদন করিতে পারে না, যাঁহারা রচনার অলঙ্কারকে অলঙ্কার বলিয়া জানেন, তাহাই প্রধান মনে করেন না, তাঁহাদিগের নিকট দত্তজার এই নূতন গ্রন্থ অবশ্যই উপাদেয় বলিয়া গৃহীত হইবে।”
    মধুসূদনের মহাকাব্য এবং নাটক রচনাকেও তিনি প্রশংসা করেছেন, ‘শর্মিষ্ঠা’ নাটকের রচনাসৌষ্ঠব এবং অভিনয় সাফল্যকে অভিনন্দন জানিয়েছেন, সমকালীন বাংলা নাটকের মধ্যে শর্মিষ্ঠাকে “সর্বশ্রেষ্ঠ” বলে আখ্যা দিয়েছেন।
    একইভাবে তিনি প্রশংসা করেছেন দীনবন্ধু মিত্রের রচিত ‘সধবার একাদশী’ নাটকটিকে। আবার তৎকালীন কোনো লেখক যখন বুঝে বা না বুঝে মানুষের নিম্নরুচিতে সুড়সুড়ি দিয়ে পাঠক সংখ্যা বৃদ্ধি করতে চেয়েছেন তাদের তিনি সরাসরি নিন্দা করেছেন। যেমন, দীনবন্ধু মিত্রের ‘নববাবু বিলাস’ ও ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নব বিবি বিলাস’ বইদুটির প্রশংসা করেও শেষে মন্তব্য করেছেন: “আক্ষেপের বিষয় এই যে ঐ উভয় গ্রন্থকার কিয়ৎ বা উদ্দেশ্যের অনুরোধে এবং কিয়ৎ বা সহৃদয়তার অভাবে আপন আপন গ্রন্থে অশ্লীলতায় লিপ্ত হইয়াছেন।”
    এই মানুষটিকে আমরা সেদিনের প্রায় সমস্ত শিক্ষা সম্বন্ধীয় সরকারি ও বেসরকারি কমিটিতে সদস্য রূপে আবিষ্কার করি। আর কোথাওই তিনি অলঙ্কার হয়ে থাকেন না, সব জায়গাতেই তিনি সক্রিয়, উদ্যমী। তাঁকে পাই বাংলার টেক্সটবুক কমিটিতে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা সংস্কার ও অন্যান্য কমিটিতে। দেখি বাংলা ভাষাতত্ত্ব, বিশেষ করে, বাংলা ব্যাকরণ নিয়ে মাথা ঘামাতে, “ব্যাকরণ প্রবেশ” নামে পাঠ্যবই লিখতে। তাঁকে আবার দেখতে পাই বিভিন্ন বিষয়ের পরিভাষা নির্মাণে প্রচুর শ্রম ও সময় ব্যয় করতে। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর সমসাময়িক বন্ধুবান্ধবরা মিলে যখন ‘সারস্বত সমাজ’ নাম দিয়ে ১৮৮২ সালে একটা বিদ্যাচর্চার কেন্দ্র গড়ে তুললেন, রাজেন্দ্রলাল শুধু তার সভাপতি হলেন তাই নয়, রবীন্দ্রনাথের ভাষায় “বলিতে গেলে যে কয়দিন সভা বাঁচিয়া ছিল, সমস্ত কাজ একা রাজেন্দ্রলাল মিত্রই করিতেন।” রবীন্দ্রনাথ তাঁর ভূমিকাকে দেখে বললেন, সংস্থার “সব্যসাচী”—যিনি এক হাতে সংগঠন সামলান, আবার আর এক হাতে বিদ্যাচর্চার কাজগুলিও করতে থাকেন! সেই মানুষটি, যিনি রবীন্দ্রনাথের তুলনায় বয়সে প্রায় চার দশকের প্রবীনতর। কাজের মধ্যে ছিল ভূগোলের পরিভাষা নির্ণয়, বিভিন্ন দেশের নামের সঠিক উচ্চারণ নির্ধারণ করা, বাংলা শব্দমালার বানানের উন্নতি সাধন, বাংলা বর্ণমালার সংস্কার সাধন, ইত্যাদি। মনে রাখা দরকার, বাংলা বানান সংস্কার নিয়ে পরবর্তীকালে, ১৯৩০-এর দশক থেকে, যে তৎপরতা শুরু হয়, পঞ্চাশ বছর আগে রাজেন্দ্রলালের হাতেই তার সূচনা হয়েছিল।
    এই প্রসঙ্গে রাজেন্দ্রলালের বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার আর একটি উল্লেখযোগ্য কাজ ছিল ব্রায়ান হজসন সাহেবের সংগৃহীত বৌদ্ধ পুঁথিসমূহকে ভিত্তি করে “The Sanskrit Buddhist Literature of Nepal” শীর্ষক একটি বিশিষ্ট আকর গ্রন্থ রচনা। ১৮৮২ সালে গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। আমরা যদি মনে রাখি, নেপালেই চর্যাগীতির পুঁথিমালা বহুদিন পর্যন্ত অজ্ঞাত অবস্থায় পড়েছিল, এবং হরপ্রসাদ শাস্ত্রী প্রমুখ এর কিছু দিন পরে নেপালেই মৈথিলী ভাষায় লেখা বহু নাটক খুঁজে পেয়েছেন, তাহলে বুঝতে অসুবিধা হবে না—রাজেন্দ্রলাল সেদিন প্রথম আমাদের কাছে বিহার আসাম বাংলা ওড়িশার ভাষা সংস্কৃতির সঙ্গে নেপালের ভূ-সাংস্কৃতিক যোগসূত্রটি ধরিয়ে দিয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত, ভারতের বহু বৌদ্ধমঠ ও গুহা মন্দিরের ভাস্কর্য ও চিত্রশিল্পকে সঠিকভাবে বুঝবার ক্ষেত্রে এই বইটি এক অপরিহার্য সহায়িকা হয়ে উঠেছিল। ছবি ও খোদাইয়ের কাজের মধ্যে বুদ্ধ জাতকের যে সমস্ত কাহিনির সারমর্ম প্রদর্শিত হয়ে আছে, তার খবর তো এই বইয়েরই পাতায় পাতায়। মূল সংগ্রহের কাজটি তিনি নিজে না করলেও কাহিনিগুলির সারার্থ বুঝে বুঝে অনুবাদ করে সকলের কাছে বোধগম্য করে তোলা এবং সুসম্পাদনার মধ্য দিয়ে উত্তর-গবেষকদের অনেক পরিশ্রমই তিনি বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন।
    তিন নম্বর—হ্যাঁ, এই তিন নম্বর পরিষেবার প্রশ্নটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের কালে খুব কম লোকই মনে রাখেন যে কবি রবীন্দ্রনাথের পরবর্তীকালের বেশ কিছু বিখ্যাত কাহিনিমূলক কাব্য ও নৃত্যনাট্যের উপজীব্য যোগান দিয়েছিল রাজেন্দ্রলাল মিত্রের এই বইটি। প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়ের লেখা রবীন্দ্রজীবনী পাঠে জানা যায়, রবীন্দ্রনাথ দেশে বিদেশে ভ্রমণ কালে অনেকদিন অবধি সেই বইটা নিজের সঙ্গে নিয়ে রাখতেন। তাঁর ‘কথা ও কাহিনী’ গ্রন্থের অধিকাংশ কবিতার উৎস এই বইটিতে বর্ণিত বিভিন্ন কাহিনি। যেমন: ‘শ্রেষ্ঠ ভিক্ষা’ (অবদান শতক), ‘পূজারিনী’ (ঐ), ‘মূল্যপ্রাপ্তি’ (ঐ), ‘মস্তক বিক্রয়’ (মহাবস্তু অবদান), ‘পরিশোধ’ (ঐ), ‘অভিসার’ (বোধিসত্ত্বাবদান কল্পলতা), ‘সামান্য ক্ষতি’ (দিব্যাবদান মালা), ‘নগরলক্ষ্মী’ (কল্পদ্রুমাবদান), ইত্যাদি। ‘মালিনী’ নাটকের উৎসও ছিল মহাবস্তু অবদান ও কুশ জাতক। ‘রাজা’, ‘অরূপরতন’ ও ‘শাপমোচন’ নাটকেরও উৎস এই বইটি। ‘অচলায়তন’ নাটকের বেশ কিছু চরিত্র পঞ্চক অবদান সূত্রে প্রাপ্ত। ‘চণ্ডালিকা’-র কাহিনিও নাকি রবীন্দ্রনাথ পেয়েছিলেন শার্দুল কর্ণ অবদান পাঠ করে। অন্য দিকে ‘নটির পূজা’ ও ‘শ্যামা’ নৃত্যনাট্য দুটি পূজারিনী ও পরিশোধ কবিতাদ্বয়েরই রূপান্তর। এইভাবে রাজেন্দ্রলাল মিত্র তাঁর এক গুণমুগ্ধ স্রষ্টার হাতে হয়ত নিজের অজান্তেই কবিতা ও নাটক নির্মাণের ইট বালি চুন সুরকি যোগান দিয়ে বাংলা সাহিত্যের গোপন সাজঘরে একটা স্থায়ী আসন দখল করে নিয়েছেন।
    সাহিত্য-সংস্কৃতি-ইতিহাস-পুরাতত্ত্ব চর্চা করতে গিয়ে ভাষার ব্যবহারিক প্রশ্নেরও সমাধান খুঁজতে হয়েছিল রাজেন্দ্রলাল মিত্রকে—যেগুলো আজও হয়ত আমাদের পক্ষে প্রণিধানযোগ্য। সংস্কৃতসাহিত্য ভাণ্ডার থেকে মূল্যবান তথ্য বা উপকরণ পাওয়ার প্রয়োজনে তিনি সংস্কৃত ভাষা চর্চার উপর জোর দিলেও একই সঙ্গে বলেছেন যে টোলের পণ্ডিতরা তাঁদের ইংরাজি ভাষা জ্ঞানের অভাবেই পাশ্চাত্য বিদ্যা থেকে প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করতে পারছেন না। দেখিয়েছেন যে মধুসূদন বা বঙ্কিমচন্দ্র ইংরাজি জানার ফলেই সাহিত্যে নতুন অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছেন। তাই মুসলিম সম্প্রদায়ের একদল কট্টর রক্ষণশীল নেতা যখন প্রায় সমস্ত মুসলিম জনসাধারণকে ইংরাজি ভাষা ও শিক্ষা গ্রহণ থেকে সরে থাকার আহ্বান জানিয়েছিল, তিনি তার সমালোচনা করে বলেছিলেন, “I call on our friends of Allyghur to pause and consider before they renounce the study of English and thereby compromise the best interests of their community.”
    বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে স্বাধীনতা উত্তরকালে কখনও দেশপ্রেম কখনও মাতৃভাষার নামে বারবার ইংরাজি ভাষা ও শিক্ষাকে আক্রমণ করা হয়েছে—যেন দুটো পরস্পর বিরোধী। গত শতকের শেষ দুই দশকে পশ্চিম বাংলার ক্ষমতাসীনরাও স্কুল শিক্ষায় মাতৃভাষা চর্চার নাম করে ইংরাজি ভাষা শিক্ষা ও চর্চার গুরুত্ব ও ভূমিকা খাটো করতে চেয়েছিলেন। তাঁরা সকলেই সেই আলিগড় আন্দোলনের উনিশ শতকি রক্ষণশীলতাকেই হয়ত না বুঝে বরণ করে নিতে চলেছিলেন। অথচ, সেই কত কাল আগেই রাজেন্দ্রলাল মিত্র বলতে পেরেছিলেন, “. . . cultivation of English literature would contribute greatly to the growth of Indian vernaculars and give a stimulus to the revival of oriental learning.” [cited, Majumdar 1978, 17] মাতৃভাষায় শিক্ষা চাই-ই। মাতৃভাষার বিকাশও অবশ্যই চাই। কিন্তু সেই তাড়নায় ইংরেজিকে বর্জন করলে তা হবে, তাঁর মতে intellectual suicide! [রায় ১৯৬৯, ৬৭]। তাঁর সেদিনকার এই কথাকে মনে রাখলে, তাঁর অমূল্য শিক্ষা ও কাজগুলিকে স্মরণে রাখতে পারলে এই বিভ্রম থেকে বাঁচার জন্য তাঁদের হাতে অন্তত আর একটা শক্তিশালী মশাল থাকত। কিন্তু আমরা তাকে অনেক দিন আগেই তো নিভিয়ে দিয়েছি!
    -------------------
    * রাজপুত ও মারাঠা রাজাদের সম্পর্কে মোগল রাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বীরত্বের নানা রকম মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত কাহিনি এক বিচিত্র মনস্তাত্ত্বিক কারণে সেই যুগের হিন্দু রেনেশাঁস মনীষীদের দেশাত্মবোধে যে খোরাক যোগাত এবং বাংলা সাহিত্যেও তার শক্তিশালী উপস্থিতি ছিল, সময়ের দোষে বা গুণে রাজেন্দ্রলাল মিত্রও তাঁর থেকে প্রভাবমুক্ত হতে পারেননি।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২২ জুলাই ২০১৬ | ১৮৫৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Debabrata Chakrabarty | 212.142.124.76 (*) | ২৩ জুলাই ২০১৬ ০৯:১১58400
  • অত্যন্ত ভালো এগোচ্ছে " আমাদের দেশে স্বাধীনতা উত্তরকালে কখনও দেশপ্রেম কখনও মাতৃভাষার নামে বারবার ইংরাজি ভাষা ও শিক্ষাকে আক্রমণ করা হয়েছে—যেন দুটো পরস্পর বিরোধী। গত শতকের শেষ দুই দশকে পশ্চিম বাংলার ক্ষমতাসীনরাও স্কুল শিক্ষায় মাতৃভাষা চর্চার নাম করে ইংরাজি ভাষা শিক্ষা ও চর্চার গুরুত্ব ও ভূমিকা খাটো করতে চেয়েছিলেন।" একটু যেন SUCI ছোঁয়া তা হোক সে অন্য বিতর্ক " "words dilute and brutalize; words depersonalize; words make the uncommon common."
  • ashoke mukhopadhyay | 69.97.218.117 (*) | ২৫ জুলাই ২০১৬ ০৫:২৬58401
  • ঠিকই ধরেছেন দেবব্রতবাবু। যারা ইংরেজির পাট তুলে দিয়েছিল, আর যারা তার বিরোধিতা করেছিল—উভয়ের মধ্যেই একটা রাজনৈতিক মাত্রা ছিল। আর আমি যেদিন এই প্রবন্ধের প্রথম খসড়া লিখেছিলাম, ১৯৯২ সালে, আমার গায়েও তখন দলীয় ব্যানার ছিল। আবার সারা দেশেই কেন্দ্রীয় সরকারের “আংরেজি হঠাও” নীতির বিরুদ্ধেও একটা জাগ্রত জনমতের অস্তিত্ব আছে। অহিন্দি ভাষী রাজ্যগুলিতে গেলেই এটা টের পাওয়া যায়। এই উভয় পক্ষেই যুক্তি বা তথ্য বিচারের তুলনায় আবেগের দাপট বেশি। সেখানে ইতিহাস হয়ত সামান্য সাহায্য করতে পারে ভেবে এই দৃষ্টান্তটি উল্লেখ করেছি। আর ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব স্মরণের একটা গুরুত্ব তো এইখানে যে তাঁদের কোন অবদান আজও কতটা প্রাসঙ্গিক।
  • ranjan roy | 132.162.202.149 (*) | ২৭ জুলাই ২০১৬ ০২:০৩58402
  • আজকে সময়ের দুরত্বে দাঁড়িয়ে হয়তো এর একটা তুলনামূলক মূল্যায়ন সম্ভব।
  • π | 24.139.209.3 (*) | ৩০ জুলাই ২০১৬ ০৯:১৭58403
  • আপনি লেখার শিরোনামে পর্ব সংখ্যাটা দিয়ে দেবেন ? তাহলে পরে পড়তে বা খুঁজে পেতে সুবিধে হয়।
  • ashoke mukhopadhyay | 131.46.99.155 (*) | ৩০ জুলাই ২০১৬ ১০:২৮58404
  • আগে জানলে করা যেত। এখন 3 পর্ব হয়ে গেছে। চতুর্থ পর্ব থেকে করে দেব। তাতে আবার অসুবিধা হবে না তো?
  • π | 24.139.209.3 (*) | ৩০ জুলাই ২০১৬ ১০:২৯58405
  • না না, ঠিক আছে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন