এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • সুস্থ থাকার ব্যায়াম

    Gautam Mistri লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ | ৫৮৫৫ বার পঠিত
  • সুস্থ বলতে যদি নীরোগ শরীরে দীর্ঘকাল বেঁচে থাকার কথা ভাবেন, তো তার জন্য ব্যায়াম একরকম। আবার যদি আটচল্লিশ ইঞ্চি বুকের ছাতি আর তেত্রিশ ইঞ্চি বাইসেপস বাগানোর তাল করেন, তাহলে অন্যরকম। রোগবালাই দূরে রেখে বহুদিন বাঁচার বৈজ্ঞানিক ফর্মূলা …

    অমলবাবুর হার্টের রোগ, আর সেই সুবাদে তিনি বছর-পাঁচেক ধরে আমার চিকিৎসায় আছেন। রোগী হিসেবে তিনি বেশ ভালো। ডাক্তারের কাছে ‘ভালো রোগী’ মানে জানেন তো? ‘ভালো রোগী’ হলেন তিনি যিনি ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলেন। অমলবাবু তাঁর ওষুধ ঠিকমতো খান, সময়ে দেখিয়ে যান, খাবার-দাবার ব্যায়াম ইত্যাদি নিয়ে যা যা পরামর্শ আমি দিই, তিনি মেনে চলেন।

    ভালোই ছিলেন অমলবাবু। আমার কাছে আসার সময় বেশ মোটাসোটা ছিলেন, কিন্তু আস্তে আস্তে সেই ক্ষতিকারক ফ্যাট আর ভুঁড়ি তিনি কমাতে পেরেছিলেন। খাওয়ার ব্যাপারে লোভ সামলে, আর নিয়মিত ব্যায়াম করে, চেহারাটা বদলেই ফেলেছিলেন। কিন্তু কী যে হল গত ছ’মাসে! তিনি একটু একটু করে বেশ মোটা হয়েছেন। গতবার তেমন পাত্তা দিইনি, কিন্তু এবার চেপে ধরলাম। এবং ঝুলি থেকে বেরোল বেড়াল।

    কমলবাবুর রক্তচাপ বেশি, চলতি কথায় বলি ব্লাডপ্রেশারের রোগ। তাঁর ওজন কমাতে হয়েছিল দস্তুরমত ঘাম ঝরিয়ে। মানে শুরুতে আমিই ঘাম ঝরাচ্ছিলাম, বোঝানোর বিস্তর চেষ্টা করছিলাম যে খানিক রোগা হওয়া তাঁর কতটা দরকার। প্রথমে কথা কানে তোলেননি, কিন্তু তারপর চেনাশোনা নানাজনের কাছে ওজন কমানোর সুফলের কথা শুনে অনেক হাঁটাহাঁটি করে ঘাম ঝরিয়ে রোগা হয়েছেন। তাতে তাঁর ব্লাডপ্রেশার কমেছে, ভাল আছেন সবদিক থেকেই। কিন্তু এবার মাস-আষ্টেক পরে এলেন তিনি, একেবারে পুরনো মেদবহুল চেহারা। চেপে ধরতেই ঝুলি থেকে বেরোল সেই বেড়ালটাই।

    বিমলবাবু আমার রোগী নন, তবে বিশেষ পরিচিত। তাঁর আবার ফিটনেসের বাতিক বলা যেতে পারে। একবার জিম-এর বাই তো আরেকবার পাড়ার ছেলেদের নিয়ে সাতসকালে ফুটবল পেটানো। সেদিন দেখি, তিনি ফুটবলটা যেন পাঞ্জাবীর ভেতরে রেখেছেন! কি সর্বনাশ, ওটা তো ফুটবল নয়, ভুড়ি! বিমলবাবুর ভুঁড়ি!! ভাবছি সৌজন্য বজায় রেখে কিভাবে গোয়েন্দাগিরি শুরু করা যায়, তো তিনি নিজেই ভুঁড়িসমস্যার সাতকাহন শুরু করলেন। খানিক পরেই বেরিয়ে এল ঝুলির সেই চেনা বেড়ালটা।

    বেড়াল কিন্তু বাঘের মাসিঃ

    হেঁয়ালি ভাল লাগছে না? ও, তাহলে সোজা বাংলায় বলি। বেশ কিছুদিন হল, প্রাণায়াম নামে একটি বস্তু স্বাস্থ্য-বাজারে বেশ গেঁড়ে বসেছে। একেবারে নামগোত্রহীন উড়ে-এসে-জুড়ে-বসা ব্যাপার নয় এটি, রীতিমত হাজার-হাজার বছরের ভারতীয় ঐতিহ্যের দাবীদার। তা এর ইতিহাস নিয়ে আমার তেমন জানা নেই, কিন্তু এর বিজ্ঞান নিয়ে খুবই মাথাব্যথা আছে।

    দাঁড়ান দাঁড়ান, আমি মোটেই বলছি না প্রাণায়াম করলে কেউ মোটা হয়ে যায়। না, অমল-কমল-বিমলবাবুরা প্রত্যেকে প্রাণায়াম করেছেন বটে, আর তার পরে মোটা হয়েছেন সেটাও সত্যি, কিন্তু প্রাণায়াম কারো মেদ বাড়ায়, এটা কষ্টকল্পনা। তাহলে প্রাণায়াম নিয়ে আমার মাথাব্যথা কিসের? আর আমার রোগীরা প্রাণায়াম করার পরে মোটা হচ্ছেন -– এটাই বা বলছি কেন?

    আসলে প্রাণায়াম, বা বলা ভাল, প্রাণায়াম-প্রবক্তারা, নানারকম দাবী করছেন। চর্বি কমে যাবে, ডায়াবেটিস সেরে যাবে, উচ্চরক্তচাপ ঠিক হয়ে যাবে -– তার জন্য ওষুধ লাগবে না। এবং বিশেষ খাটতেও হবে না। এইটাই ‘লোকে খাচ্ছে’। এই যে সাইড-এফেক্ট নেই, ভবিষ্যতে ওষুধ ছেড়ে দেবার আশ্বাস রয়েছে, এবং সর্বোপরি না খেটে হাতেনাতে ফললাভ – এটাতেই মজেছে পাবলিক। মিষ্টি কথার এই এক সুবিধা। বিশেষত ঘাম না ঝরিয়ে ফললাভ হবে -– একথাটা লোকের বড্ড মিষ্টি লাগে। আর তাঁরা ভাবেন, আরে এত হাজার বছরের ভারতীয় মুনি-ঋষিদের ঐতিহ্য, সায়েন্স দিয়ে ব্যাখ্যা করার দরকার কী? সত্যি কথা বলতে কি, আমি জানি কিছু অত্যন্ত উচ্চমানের হৃদরোগবিশেষঞ্জ, আমারই বন্ধু অনেকে রোগীকে প্রাণায়াম করতে বলছেন। মানুষের বিশ্বাস আরও বাড়ছে। ওষুধ ছেড়ে দেবার ব্যাপারটা ভবিষ্যতের গর্ভে থাকছে। আমরা চিকিৎসকেরা অনেক সময় বলে দিতে বাধ্য হই, না, আপনার ওষুধ বন্ধ করা যাবে না, বা ওষুধ বন্ধ করার সম্ভাবনা খুব কম। তাতে অনেক মানুষ নিজেকে অসহায় বা চিররোগী মনে করেন। তাঁদের পক্ষে ওষুধ বন্ধের সম্ভাবনা এক বড় প্রলোভন — ঠেকানো কঠিন।

    প্রাণায়াম করলে কী হয় বা কী হয়না সেকথায় পরে আসব। অমল-কমল-বিমলবাবুরা আসলে প্রাণায়াম করেছেন তাঁদের পুরনো ব্যায়ামের পরিবর্তে, আর তাতেই হয়েছে বিপত্তি। ব্যায়াম করে যে সুফলগুলো তাঁরা পাচ্ছিলেন সেগুলো উধাও হয়েছে, আর দৃশ্যমান কুফল, অর্থাৎ মেদবৃদ্ধি চোখেই দেখা যাচ্ছে। ব্যায়াম নিয়ে স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা মাথার ব্যায়াম নেহাত কম করেননি, আর কোন ব্যায়াম কোন অবস্থায় করা দরকার সেটা আমাদের এখন বেশ ভালভাবেই জানা আছে। প্রথমে সেই কথায় আসি।

    কেন ব্যায়াম?

    সবাই একই উদ্দেশ্যে ব্যায়াম করেন না, তাই একই ব্যায়াম সবার জন্য ঠিক নয়। একজন বডি-বিল্ডার বা একজন অ্যাকশন ফিল্মের হিরো যে উদ্দেশ্যে শরীরচর্চা করেন, এক হৃদরোগী হরিপদ কেরানী সে উদ্দেশ্যে করেন না। এবং বলাই বাহুল্য, উদ্দেশ্য আলাদা হলে ব্যায়াম বদলাবে। এই লেখায় আমরা হৃত্বিক রোশনের চাইতে হরিপদ কেরানীকে বেশি গুরুত্ব দেব। কিন্তু তার আগে বলে রাখি, আমাদের কালচারটা এমন যে টিভিতে বা নানা ম্যাগাজিনে অ্যাকশন ফিল্মের হিরো বা অতি-তন্বী হিরোইন কী করে হওয়া যায় তার টিপস সহজপ্রাপ্য, কিন্তু সুস্থ্ সবল জীবনের জন্য কী করবেন সেটা নিয়ে লেখা-বলা বড় কম। সেরকম লেখা যদিবা পাওয়া যায়, তার মধ্যে প্রায়শই বিজ্ঞানের বদলে অপ্রমাণিত আপ্তবাক্যের ছড়াছড়ি – “তিন’পা হাঁটলেই সুস্থ” ধরণের পাঠকতোষ লেখা। আমরা এখানে সেটা করব না। যেসব শরীরচর্চা কার্যকর বলে প্রমাণিত কেবল তাদের কথাই বলব।

    আমাদের শরীরচর্চার উদ্দেশ্য হল -– নীরোগ, সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকা। আর যদি রোগ হয়েই থাকে তো সেই রোগের প্রকোপ কমানো, আর যতোটা সম্ভব কর্মক্ষম থাকা। আর এই উদ্দেশ্যে শরীরচর্চা করলে মেদবৃদ্ধি হবে না, বাড়তি মেদ ঝরবে, সুতরাং আপনা থেকেই দেহ সুগঠিত হবে। তবে দারা সিং বা জনি ওয়েসমূলার হবার কোনও সম্ভাবনা নেই।

    কোন ব্যায়াম?

    এবার কাজের কথায় আসি। ঠিক কোন ব্যায়ামটা করবেন আপনি? আমাদের দেশে ক্রমাগত বাড়ছে ডায়াবেটিস আর উচ্চরক্তচাপ। সুতরাং আপনার যদি এইসব রোগ থাকে তো সেটা মাথায় রেখে শরীরচর্চার ধরণ ঠিক করতে হবে। আর যদি আপনার রোগদুটোর কোনোটাই না থাকে, তাহলে সেই রোগগুলো যাতে না হয় তার চেষ্টা করতে হবে। সুবিধার ব্যাপার হল, রোগদুটো থাকুক আর না থাকুক, শরীরচর্চার মূল ব্যাপারগুলো একই থাকে। এবং এইধরণের শরীরচর্চায় ফাউ হিসেবে পাওয়া যায় কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি। সাধারণ ছোঁয়াচে রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ-ক্ষমতাও বাড়ে বলে মনে করা হয় -– কিন্তু এটার কোনও পাথুরে প্রমাণ আমাদের হাতে এখনও নেই বলে এটাকে আমরা গুরুত্ব দেব না।

    ব্যায়াম বা যে কোনও শারীরিক পরিশ্রমের নানা ধরণ আছে। আমরা শুরু করব অ্যারোবিক ব্যায়াম নিয়ে, কারণ এইটা আমাদের জন্য সবচেয়ে দরকারি। কেন দরকারি, এবং ঠিক কী কী উপকার কিভাবে হয়, সে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার আগে অ্যারোবিক ব্যায়াম জিনিসটা কী সেটা বলি। একজন ত্রিশ-চল্লিশ বছরের মোটের ওপর সুস্থ মানুষকে আপাতত আমি আমার ‘আদর্শ মানুষ’ বলে ধরে নিচ্ছি। পরে অবশ্য দেখব, সামান্য রকমফের করে অন্য মানুষদের জন্যও এই একই পরামর্শ কার্যকর। ব্যায়াম ও শরীরচর্চা –- এই দুটো কথাকে আমরা এখন থেকে একই অর্থে ব্যবহার করব, এবং ব্যায়াম বলতেই যে ডনবৈঠক-মার্কা ধারণা আছে, সেটাকে একটু বদলে নিয়ে শরীরের উপকারের তাগিদে করা সমস্ত শারীরিক কসরতকেই আমরা ব্যায়াম বা শরীরচর্চা বলে অভিহিত করব। আমাদের এই নতুন ডিক্সনারীতে ফুটবল খেলাও হল একরকম ব্যায়াম।

    তাহলে অ্যারোবিক ব্যায়াম কী? অ্যারোবিক ব্যায়াম করতে গেলে দৌড়তে, বা বেশ জোরে হাঁটতে, বা সাঁতার কাটতে, বা লাফদড়ি খেলতে, বা দ্রুত সাইকেল চালাতে হবে। ফুটবল খেলা, ব্যাডমিন্টন কি টেনিস খেলা -– এসবেও বেশ অ্যারোবিক ব্যায়াম হয়। হাঁটার কথা একটু আলাদা করে বলা ভাল, কারণ বহু মানুষের কাছে হাঁটাটাই একমাত্র সম্ভব ও সহজসাধ্য। হেঁটে অ্যারোবিক ব্যায়াম করা যায়, কিন্তু সেটা গয়ংগচ্ছ মৃদুমন্থর হাঁটলে হবে না। এমন জোরে হাঁটতে হবে সুকুমার রায় কথিত প্যালারামের মতো ফোঁসফোঁস নিঃশ্বাস পড়ে, হাঁটতে হাঁটতে কোনমতে কথা বলা চলতে পারে, কিন্তু গান গাওয়া সম্ভব নয়।

    তা এইটাকে অ্যারোবিক (aerobic, air বা বাতাস কথাটা থেকে এসেছে) ব্যায়াম কেন বলে? অ্যারোবিক (aerobic) শব্দটা air বা বাতাস কথাটা থেকে এসেছে। অক্সিজেন বা বাতাস (এয়ার) দিয়ে এই ব্যায়ামের প্রয়োজনীয় শক্তি যোগানো হয়। এই ব্যায়াম চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের প্রায় পুরোটাই মাংসপেশিতে ব্যবহৃত হয়। তাই এর নাম এয়ার-ওবিক বা অ্যারোবিক ব্যায়াম। মোটরগাড়িতে যেমন পেট্রল পুড়ে শক্তি উৎপন্ন হয়, আমাদের শরীরেও তেমনই খাদ্য ‘পুড়ে’ বা খাদ্যের দহন হয়ে শক্তি উৎপন্ন হয়। আমরা যে খাদ্যই খাই না কেন, শরীরের কোষগুলো মূলত গ্লুকোজ হিসেবেই খাদ্য পায় ও তা ব্যবহার করতে পারে। সমস্ত খাদ্যকে তাই আমাদের যকৃৎ বা লিভার গ্লুকোজে পরিণত করে, আর রক্তের মাধ্যমে তা কোষে কোষে ছড়িয়ে পড়ে। গ্লুকোজ পেট্রল-লাইটারের পেট্রলের মতো দাউদাউ করে পোড়ে না, মোটরগাড়ির পেট্রলের মতো আস্তে আস্তে পোড়ে। গাড়ি চললে যেমন পেট্রল পোড়ার তাপে ইঞ্জিন গরম হয়ে যায়, তেমনই ব্যায়াম করার সময়ে দেহের ভেতরে খাদ্য পোড়ার তাপে দেহ গরম হয়ে যায়। তবে গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে দিলে ইঞ্জিনে পেট্রল পোড়া পুরো বন্ধ হয়ে যায়, ইঞ্জিন একেবার ঠান্ডা হয়ে যায়। আমাদের দেহে বেঁচে থাকাকালীন সেটা হবার জো নেই। বিশ্রামরত অবস্থাতেও দেহে অল্প কিছু খাদ্য পুড়বে, আর তার তাপে শরীর কিছুটা গরম থাকবে।

    পৃথিবী গ্রহের নিয়ম হল, কোনও কিছু পোড়াতে অক্সিজেন লাগে। আমাদের দেহে খাদ্য পোড়াতেও অক্সিজেন লাগে, আর সেই অক্সিজেন আসে বাতাস থেকে। বাতাসের অক্সিজেন আমরা নিঃশ্বাসের সাহায্যে ফুসফুসের মধ্যে নিই। তারপর ফুসফুস থেকে অক্সিজেন রক্তের মাধ্যমে সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে। তাই যখন বেশি বেশি করে খাদ্য পোড়ে, তখন আমরা ফোঁসফোঁস করে শ্বাস নিই বা হাঁপাই। তাতে ফুসফুসে অনেক বাতাস ঢোকে, আর ভেতরে-ঢোকা সেই বাতাস থেকে ফুসফুসের রক্ত অক্সিজেন টেনে নেয়। সেই অক্সিজেনভরা রক্তকে কোষে কোষে পৌঁছে দেয় হৃদযন্ত্র। হৃদযন্ত্র হল রক্ত চালানোর পাম্প, সারা শরীরে রক্ত চালায় হৃদযন্ত্রই। বেশি অক্সিজেন কোষে পৌঁছে দেবার জন্য হৃদযন্ত্রকে বাড়তি খাটতে হয়। ফলে হৃদযন্ত্র তাড়াতাড়ি আর বেশি জোরে সংকোচন-প্রসারণ করে। আমাদের হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়, আমরা বলি নাড়ির গতি বা পালস রেট বেড়েছে। আর প্রতিটা সংকোচন-প্রসারণে হৃদযন্ত্র বেশি রক্ত পাম্প করে, তাই নাড়ির জোরও বাড়ে — সেটা অবশ্য চিকিৎসক ছাড়া অন্যদের বোঝা শক্ত। সব মিলিয়ে ফুসফুস, হৃদযন্ত্র আর পেশিতে রক্ত-সরবরাহকারী রক্তনালীর কাজ বাড়ে, তবেই পেশির কোষে কোষে দরকারমত বেশি অক্সিজেন পৌঁছয়। ব্যায়ামের সময় মাংসপেশিতেই বেশি অক্সিজেন দরকার, কেননা ব্যায়ামে মাংসপেশির দ্রুত সংকোচন-প্রসারণ ঘটে, আর সেই কাজটা করবার জন্য বেশি গ্লুকোজ দহন করতে হয়। ফুটবল খেলার মতো ব্যায়ামে শরীরের প্রায় সমস্ত মাংসপেশিকে কাজ করতে হয়, আর তার জন্য শরীরে বিশ্রামরত অবস্থার তুলনায় দশগুণ অক্সিজেন লাগা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার।

    অ্যারোবিক ব্যায়াম হল সেইধরণের ব্যায়াম যাতে ব্যায়াম চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের পুরোটা, বা প্রায় পুরোটা, ফুসফুস আর হৃদযন্ত্র এদুয়ের যুগলবন্দিতে মাংসপেশিতে পৌঁছে যায়। অক্সিজেন বা বাতাস (এয়ার) দিয়ে এই ব্যায়ামের প্রয়োজনীয় শক্তি যোগানো হয় বলে এর নাম ‘বাতাসি’ ব্যায়াম, অর্থাৎ এয়ার-ওবিক বা অ্যারোবিক ব্যায়াম। এর আরেক নাম হল আইসোটোনিক ব্যায়াম। এর বিপরীতে আছে আইসোমেট্রিক ব্যায়াম। আপনি যদি দেওয়াল ধরে ঠেলেন তাহলে মাংসপেশিগুলো কাজ করবে, তাদের শক্তি উৎপাদন বাড়বে, কিন্তু অক্সিজেন ছাড়াই এই শক্তির বেশিরভাগটা উৎপাদিত হবে। ডাম্বেল-বারবেল করা, বা আধুনিক জিমে গিয়ে পেশিবহুল দেহগঠন করার ব্যায়াম এই শ্রেণির ব্যায়াম। এদের বলে আইসোমেট্রিক ব্যায়াম বা অ্যানঅ্যারোবিক ব্যায়াম। এই ব্যায়াম করাকালীন নানা কারণে খুব তাড়াতাড়ি রক্তচাপ বাড়ে, আর পেশির মধ্যেকার রক্তবাহী নালীগুলো সংকুচিত হয়ে যায় বলে পেশিতে বেশি রক্ত যেতে পারে না। ফলে এই ব্যায়ামে পেশিগুলো খুব তাড়াতাড়ি অক্সিজেন ছাড়া খাদ্য আধপোড়া করে শক্তি নিষ্কাশন করতে বাধ্য হয়। আমাদের শরীরে একটা ব্যবস্থা আছে যেটা দিয়ে অক্সিজেন ছাড়া খাদ্য থেকে খানিকটা শক্তি পাওয়া যায়, তবে সেটা দীর্ঘস্থায়ী ভাবে চালানো যায় না। যাঁদের বাড়িতে ‘ইনভার্টার’ আছে তাঁরা জানেন যে ইলেকট্রিক সাপ্লাই চলে গেলে কিছুক্ষণ ইনভার্টার দিয়ে লাইট ফ্যান চালানো যায়, কিন্তু সেটা কিছুক্ষণই মাত্র। কেননা ইনভার্টার জিনিসটাকে তারপর ইলেকট্রিক সাপ্লাই-এর সাহায্যে চার্জ করে না নিলে তার লাইট ফ্যান চালানোর ক্ষমতা দ্রুত লোপ পায়। ঠিক সেইরকম আমাদের দেহে রয়েছে অক্সিজেন ছাড়া খাদ্য থেকে শক্তি পাবার ব্যবস্থা। ওটা সাময়িক। আর আইসোমেট্রিক ব্যায়াম বা অ্যানঅ্যারোবিক ব্যায়াম ওই পদ্ধতিটা ব্যবহার করে বলে ওইরকম ব্যায়াম বেশি সময় চালানো যায় না। এ ব্যাপারে আবার পরে আসব।

    অ্যারোবিক ব্যায়াম –- কতোটা, কতক্ষণ?

    আমার কল্পিত মোটামুটি সুস্থ শরীরের তিরিশ-চল্লিশ বছর বয়সের মানুষের আদর্শ অ্যারোবিক ব্যায়াম কী হবে?

    ১। দৈনিক একদফায় ৩০ থেকে ৬০ মিনিট ব্যায়াম।

    ২। তীব্র ব্যায়াম, যাতে হৃদস্পন্দন হার বাড়ে। বেড়ে সেই হার সেই ব্যক্তির সর্বোচ্চ হৃদস্পন্দন হারের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ হয়।

    ৩। শরীরের সমস্ত বড় মাংশপেশিগুলোকে খাটাতে হবে। নিম্নাঙ্গ, উর্ধাঙ্গ ও মধ্যভাগ – সবজায়গার বড় মাংশপেশিকে কাজে লাগাতে হবে।

    ৪। পেশির ভেতরকার টানভাব বাড়বে না। মানে আইসোমেট্রিক ব্যায়াম বা অ্যানারোবিক ব্যায়াম চলবে না, বা করলেও সেটা অ্যারোবিক ব্যায়াম কমিয়ে করা চলবে না।

    এছাড়া এই ব্যায়ামে বিশেষ শারীরিক কুশলতার প্রয়োজন না হলেই ভাল। দামী যন্ত্রপাতি না লাগাই বাঞ্ছনীয়। এবং ব্যায়ামটা যেন আনন্দদায়ক হয়, নইলে অভ্যাস বজায় রাখা মুশকিল। দ্রুত হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা, ফুটবল খেলা, সাইকেল চালানো, ব্যাডমিন্টন বা টেনিস খেলা –- যেমন আগেই বলেছি -– দৈনিক এক-আধ ঘন্টা এইসব করলে আদর্শ অ্যারোবিক ব্যায়াম হবে।

    এইবার আসি আদর্শ অ্যারোবিক ব্যায়ামের ওই গুণগুলো থাকা কেন উচিত সে প্রসঙ্গে। তার আগে এটা আরেকবার বলে দিতে চাই, একনম্বর থেকে চারনম্বর গুণের তালিকা আমার ঠিক করা নয়। এমনকি বিজ্ঞানীরা কেবল তত্ত্বের দিক থেকে দেখেছেন যে ওইরকম ব্যায়াম করা দরকার, তা-ও নয়। এটা তত্ত্ব ও মানুষের ওপর পরীক্ষা করে পাওয়া তথ্য -– এ’দুয়ের ওপরেই ভিত্তি করে রচিত। প্রথমে আসি বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের প্রসঙ্গে, তার মাঝেমধ্যে পরীক্ষালব্ধ বিপুল তথ্যভান্ডার থেকে কিছু উদাহরণ দেওয়া যাবে।

    ব্যায়ামের বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব – (১)

    একজন মাঝবয়সী মানুষ বিশ্রামের সময় অল্প শক্তি খরচ করে, তাই তার অক্সিজেন খরচও কম হয়। অ্যারোবিক ব্যায়াম বা অন্য কাজের সময় তার মাংসপেশির শক্তি খরচ বাড়ে, ফলে অক্সিজেন ও খাদ্য দুয়ের খরচই বাড়ে। সাধারণ অবস্থায় আমাদের শরীরে খাদ্য বা গ্লুকোজের যোগানে টান ধরে অনেক দেরীতে, কিন্তু অক্সিজেনের যোগানে টান ধরে তাড়াতাড়ি। একটা সময় আসে যখন ফুসফুসের রক্তে অক্সিজেন ভরার ক্ষমতা, হৃদযন্ত্রের রক্ত সর্বত্র পৌঁছে দেবার ক্ষমতা, আর মাংশপেশির রক্ত থেকে অক্সিজেন নিষ্কাশন করে নেবার ক্ষমতা –- এই সম্মিলিত প্রচেষ্টাটা তার শেষ সীমায় পৌঁছে যায়। এইটাকেই আমরা চলতি ভাষায় বলি ‘দম ফুরিয়ে গেছে’। এই সময়ের আগেই কেবলমাত্র অক্সিজেন ব্যবহার করে বা অ্যারোবিক পদ্ধতিতে শরীরের শক্তির চাহিদা পুরো মেটানো যায় না। ডাক পড়ে ‘অ্যানঅ্যারোবিক’ ব্যবস্থার। আমরা আগেই দেখেছি, আমাদের শরীরে এই একটা ব্যবস্থা আছে যেটা দিয়ে অক্সিজেন ছাড়া খাদ্য থেকে খানিকটা শক্তি পাওয়া যায়। দম ফুরিয়ে যাবার কিছু আগে থেকেই অ্যারোবিক ও অ্যানঅ্যারোবিক দু’রকম পদ্ধতিই চলতে থাকে। যে মানুষটি নিয়মিত শরীরচর্চা করেন না, তাঁর শরীরে অ্যারোবিক পদ্ধতির ক্ষমতা দ্রুত ফুরিয়ে যায়, কেননা তাঁর ফুসফুস, হৃদযন্ত্র ও মাংশপেশির অক্সিজেন সরবরাহ ও ব্যবহার করার ক্ষমতা কম।

    কোনও মানুষের অক্সিজেন ব্যবহার করার ক্ষমতার উর্দ্ধসীমাকে পরিভাষায় বলা হয় ভি-টু ম্যাক্স (VO2 Max)। নিয়মিত শরীরচর্চা না করা সুস্থ মানুষের ভি-টু ম্যাক্স তাঁর বিশ্রামরত অবস্থায় অক্সিজেন ব্যবহারের মোটামুটি দশগুণ। বিশ্রামের সময় সাধারণত গ্রাম-পিছু অক্সিজেন ব্যবহার হল ৩.৫ মিলিলিটার, অর্থাৎ একজন মানুষ তাঁর ওজনের প্রতি একগ্রাম পিছু ৩.৫ মিলিলিটার অক্সিজেন ব্যবহার করেন। আর ব্যায়ামের সময় তাঁর ওজনের প্রতি একগ্রাম পিছু ৩৫ মিলিলিটার অক্সিজেন ব্যবহার করার ক্ষমতা থাকে। এইরকম অবস্থায় একজন পৌঁছে গেলে তারপর তাঁর ব্যায়াম চালিয়ে যেতে কষ্ট হয়, খুব হাঁপাতে থাকেন ও হৃদগতি খুব বেড়ে যায়। ‘ভি-টু ম্যাক্স’ পরিমাণ অক্সিজেন ব্যবহারসীমায় পৌঁছানোর একটু আগে থেকেই ব্যায়ামের প্রয়োজনীয় শক্তির একটা অংশ অ্যানঅ্যারোবিক পদ্ধতিতে আসে। তার ফলে পেশিতে ল্যাকটিক অ্যাসিড তৈরি হয়, ফলে পেশিতে দ্রুত ব্যাথা হয়, ক্লান্তি অনুভবও বেশি হয়।

    আরও নির্দিষ্ট করে বললে, পরিশ্রম করার ফলে অক্সিজেন ব্যবহারের উর্ধসীমার তথা ‘ভি-টু ম্যাক্স’-এর শতকরা ৭০ ভাগ অক্সিজেন যখন কেউ ব্যবহার করছেন, তখনই অ্যানঅ্যারোবিক পদ্ধতির ডাক পড়ছে। পরিশ্রমের এই মাত্রাকে বলে ‘অ্যানঅ্যারোবিক থ্রেসহোল্ড’, বাংলায় বলতে পারি ‘অ্যানঅ্যারোবিক মাত্রাসীমা’। এর চাইতে বেশি পরিশ্রম করলেই কষ্ট। কিন্তু নিয়মিত অ্যারোবিক ব্যায়াম করেন যিনি, তাঁর ‘অ্যানঅ্যারোবিক মাত্রাসীমা’ খানিকদূর পর্যন্ত ক্রমে বাড়তে থাকে। এটা সুস্থ মানুষের জন্য সত্য, এবং অনেক রোগীর জন্যও সত্য। দুভাবে এই ‘মাত্রাসীমা’ বাড়ে। এক হল তাঁর অক্সিজেন ব্যবহারের উর্ধসীমা (ভি-টু ম্যাক্স) বেড়ে যায়; অর্থাৎ তাঁর শরীর অনেক বেশি দক্ষতার সঙ্গে অক্সিজেন ব্যবহার করতে পারে। দুই, তাঁর শরীর ভি-টু ম্যাক্স-এর শতকরা ৭০ ভাগের চাইতে বেশি অংশ কাজে লাগাতে পারে।

    ব্যায়ামের বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব – (২)

    সুতরাং এখন বোঝা যাচ্ছে যে, বেশিক্ষণ ধরে ব্যায়াম করতে গেলে সেটা অ্যারোবিক ব্যায়ামই হবে, নইলে পেশিতে ব্যথা হবে, পরদিন ব্যায়াম করা সম্ভব হবে না। আর নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরে কতকগুলো পরিবর্তন ঘটে। ফুসফুস আর হৃদযন্ত্র এদুয়ের যুগলবন্দী বেশি কাজ করতে থাকে, ফলে বেশি পরিমাণ অক্সিজেন রক্তে মেশে। আর হৃদযন্ত্র অক্সিজেনযুক্ত রক্ত দ্রুত পেশিতে পৌঁছে দেয় –- হৃদস্পন্দনের গতি বাড়ে, ও প্রতিটি হৃদস্পন্দন জোরদার হয়ে বেশি রক্ত ঠেলে দেয়। অ্যারোবিক ব্যায়ামের সময়ে পেশিতে গ্লুকোজের দহনের ফলে উৎপন্ন রাসায়নিক পদার্থগুলো সেই পেশির রক্তযোগানকারী রক্তনালীর ওপর প্রভাব খাটিয়ে সেগুলোকে সাময়িকভাবে চওড়া করে দেয়। ফলে পেশিতে বেশি রক্ত ঢুকতে পারে। আবার ব্যায়ামের সময়ে যেহেতু শরীরের অন্যান্য অঙ্গের তুলনায় পেশিতেই সবচেয়ে বেশি রক্ত প্রবাহিত হয়, তাই পেশিকে রক্তযোগানকারী রক্তনালীগুলো চওড়া হয়ে যাবার মানে হল অধিকাংশ রক্ত যাবার পথ চওড়া হয়ে যাওয়া। এর ফলে শরীরের সমস্ত রক্তনালীর মিলিত ‘রোধ’ কমে। স্বাভাবিক বুদ্ধিতেই বোঝা যায়, রক্তনালী যত মোটা হবে, তারা রক্ত-চলাচলের পথে তত কম বাধা সৃষ্টি করবে; ফলে রক্ত পাম্প করার জন্য হৃদযন্ত্রকে তত কম খাটতে হবে। আর অ্যারোবিক ব্যায়াম করার ফলে সবচেয়ে কেজো রক্তনালীগুলোই চওড়া হয়ে যাচ্ছে, সুতরাং রক্ত পাম্প করার জন্য হৃদযন্ত্রকে অনেক কম খাটতে হচ্ছে।

    আইসোমেট্রিক ব্যায়াম তথা অ্যানঅ্যারোবিক ব্যায়ামে ঠিক উলটো জিনিসটা ঘটে। এতে পেশির ভেতরে পেশিতন্তুগুলোর চাপ বাড়ে, তারা পেশির রক্তনালীগুলোকে চারিদিক থেকে চেপে ধরে। ফলে রক্তনালীগুলো যায় সরু হয়ে, আর তাদের রোধ বা রক্তপ্রবাহে বাধাদানের ক্ষমতা বাড়ে। ফলে রক্ত পাম্প করার জন্য হৃদযন্ত্রকে আরও বেশি খাটতে হয়। এছাড়াও ডাম্বেল-বারবেল বা ওইরকম কিছু নিয়ে ব্যায়াম করতে গেলে বুকভরা শ্বাস নিয়ে কিছুক্ষণ দম বন্ধ করে থাকতে হয়। সেই সময়ে বুকের ভিতরকার বায়ুচাপ অনেকটা বেড়ে যায়। শরীরের নানা জায়গা থেকে হৃদযন্ত্রে রক্ত ফেরত নিয়ে আসছে যেসব রক্তনালী, সেই উচ্চ বায়ুচাপ তাদের ওপরে কাজ করে রক্ত ফিরিয়ে আনার কাজটাতে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে একদিকে একদিকে উচ্চরক্তচাপের বিরুদ্ধে কাজ করে রক্ত পাম্প করার কাজ শক্ত কাজ চালু রাখা, আর তার ওপর রক্ত কম পরিমাণে ফেরত আসার মোকাবিলা করা – এর জন্য হৃদযন্ত্রকে অ্যানঅ্যারোবিক ব্যায়ামের সময় প্রচন্ড বাধার মুখোমুখি হয়ে কাজ করতে হয়। এই ব্যায়ামে শরীরে দেখানোর মত সব মাংসপেশি তৈরি হয় বটে, কিন্তু হৃদযন্ত্রের কোনও উপকার হয়না। একদম সুস্থ লোকের পক্ষে রয়ে সয়ে এরকম ব্যায়াম ক্ষতিকর নয়, কিন্তু যার হৃদযন্ত্র কোনও কারণে দুর্বল তাঁর প্রাণঘাতী হৃদছন্দপতন (Cardiac arrhythmia) হওয়া অসম্ভব নয়। তবে সুস্থ মানুষ অ্যারোবিক ব্যায়ামের উপযুক্ত শক্তিশালী পেশিগঠনের উদ্দেশ্যে অল্পস্বল্প আইসোমেট্রিক ব্যায়াম করতে পারেন।

    নিয়মিত অ্যারোবিক ব্যায়ামের ফলে হৃদযন্ত্রের পেশিগুলো বেশি কর্মক্ষম হয়, ফলে একবার হৃদস্পন্দনের দ্বারা অনেক বেশি রক্ত দেহে পাম্প করতে পারে। বিশ্রামের সময়, বা একই রকম কাজ করার সময়, নিয়মিত অ্যারোবিক ব্যায়ামকারীদের হৃদস্পন্দনের হার তুলনায় কম হয়। এর একটা বড় সুবিধা আছে। হৃদস্পন্দনের হার যত বাড়ে হৃদযন্ত্র তত দ্রুত পাম্প করতে বাধ্য হয়। পাম্প করার দুটো ধাপ, একধাপে হৃদযন্ত্র-গহ্বর সংকুচিত হয়ে রক্ত ছড়িয়ে দেয়। অন্য ধাপে হৃদযন্ত্র-গহ্বর প্রসারিত হয়, ও সেই রক্ত হৃদযন্ত্রে ফেরত আসে। হৃদযন্ত্র দ্রুত রক্ত পাম্প করতে বাধ্য হলে তার সংকোচন-ধাপের (Systole) চাইতে প্রসারণ-ধাপ (Diastole) বেশি কমে যায়। অ্যারোবিক ব্যায়ামকারীদের হৃদস্পন্দনের হার তুলনায় কম হবার ফলে তাদের হৃদযন্ত্রের প্রসারণ-ধাপ কমে না। প্রসারণ-ধাপ হল হৃদপেশির বিশ্রামের সময়, বিশ্রাম যত বাড়বে তত তার ক্ষয়পূরণ হবে। যে যন্ত্রটা বছরের পর বছর একটানা কাজ করে চলেছে তার বিশ্রাম ও ক্ষয়পূরণ যত বেশি হবে ততই সে যন্ত্রের ভাল থাকার সম্ভাবনা। অর্থাৎ নিয়মিত অ্যারোবিক ব্যায়ামে হৃদযন্ত্রের দীর্ঘস্থায়ী উপকার।

    ব্যায়ামের বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব – (৩)

    দেখানোর মত শরীর গঠন করতে যে আইসোমেট্রিক ব্যায়াম করা হয় তার একটা বৈশিষ্ট্য হল, নিম্নাঙ্গের তুলনায় উর্ধাঙ্গের দেখনদারী পেশি গড়ে তোলা। ফলে এতে নিম্নাঙ্গের ব্যায়াম বেশি হয়, বুক আর হাতের ব্যায়াম বেশি হয়। কিন্তু অ্যারোবিক ব্যায়ামের সময় আমরা কোন দিকের ব্যায়াম বেশি করব – নিম্নাঙ্গের নাকি উর্ধাঙ্গের? আমার দেওয়া অ্যারোবিক ব্যায়ামের উদাহরণে (হাঁটা, ফুটবল খেলা, সাইকেল চালানো) নিম্নাঙ্গের ব্যায়ামই বেশি, সেটা কি আকস্মিক নাকি জেনেবুঝে?

    জেনেবুঝেই নিম্নাঙ্গের ব্যায়ামের ওপর বেশি জোর দেওয়া। আমাদের প্রকৃতিদত্ত পেশিগুলোর মধ্যে নিম্নাঙ্গের পেশিগুলোই সবচেয়ে বড়োমাপের আর শক্তিশালী। দেহের মোট রক্তনালীর একটা বড় অংশ হল নিম্নাঙ্গের পেশির মধ্যেকার রক্তনালীগুলো। আমরা আগেই জেনেছি অ্যারোবিক ব্যায়ামে পেশির মধ্যেকার রক্তনালী চওড়া হয়ে যায়। নিম্নাঙ্গের পেশির ব্যায়াম করালে দেহের রক্তনালীগুলোর একটা বড় অংশই চওড়া হয়ে যায়, ফলে রক্তনালীর মোট রোধ কমে। কিন্তু উর্দ্ধাঙ্গের অ্যারোবিক ব্যায়ামেও দেহের সব রক্তনালীর একটা ছোটো অংশই চওড়া হয়, ফলে রক্তনালীর মোট রোধ তেমন কমে না। তাই কেবল উর্ধাঙ্গের ব্যায়াম, তা অ্যারোবিক হলেও, রক্তচাপ বাড়ায় আর হৃদযন্ত্রের ওপর বেশি চাপ ফেলে। সুতরাং সাঁতার কাটার মতো নিম্নাঙ্গ ও উর্ধাঙ্গের মিলিত ব্যায়াম সবচেয়ে ভাল, কিন্তু সেটা না পারলে কেবল নিম্নাঙ্গের ব্যায়ামই ভাল।

    পরিশ্রম ও ব্যায়ামঃ

    আমার অনেক রোগীই বলেন, আমি তো এমনিতেই অনেক পরিশ্রম করি, তার ওপর আবার ব্যায়াম করার দরকার কিসের? গৃহবধূ বলেন, দিনরাত্তির হাঁড়ি ঠেলছি, ঘর মুছছি, তবু মোটা হচ্ছি কেন? ইঞ্জিনীয়ারবাবু বলেন, সারাদিন সাইটে বোঁ-বোঁ ঘুরছি, তার ওপর আবার ব্যায়াম! অফিসের কেরানীবাবু বলেন, বসের ঠেলায় অফিসে আর বৌয়ের ঠেলায় বাড়িতে চরকিপাক মারতে হয়, আমাকে ব্যায়াম করতে বলবেন না। বস বলেন, সারাদিনরাত কেবল অফিসের জন্য ঘুরছি, ফিরতে রাত ন’টা, ব্যায়াম করলেই বরং আগে টেঁসে যাব!

    কাজের খাতিরে এই যে পরিশ্রম, একটু ভেবে দেখলেই বুঝবেন, তাতে অ্যারোবিক ব্যায়ামের পুরো সুফল পাওয়া সম্ভব নয়। কাজের সময় খানিক খানিক করে কিছু কিছু পেশির সঞ্চালন হয়। কিন্তু আমরা আদর্শ অ্যারোবিক ব্যায়াম কী হবে, সে প্রশ্নের উত্তরে দেখেছি, একদফায় অন্তত ৩০ মিনিট তীব্র, হৃদস্পন্দন হার বাড়ানো ব্যায়াম, যাতে শরীরের সমস্ত বড় মাংশপেশিগুলোকে খাটাতে হবে। এটা ওপরের কোনও কাজের জন্য করা হয় না। রিক্সাচালক অনেকসময় কাজের খাতিরেই এরকম ব্যায়াম করেন, কিন্তু কর্মক্ষেত্রে মানসিক উৎকণ্ঠার একটা ব্যাপার থাকে; সেকথায় পরে আসছি। তবে এটুকু বলাই যায়, অন্যান্য ব্যাপার, যেমন সঠিক পুষ্টি, নেশা না করা, দুশ্চিন্তা কম করা — এইসব শর্তপূরণ করলে রিক্সাচালকদের স্বাস্থ্য অফিসে বসে কাজ করা মানুষের চাইতে ভালই হবার কথা। অন্যদের ক্ষেত্রে কাজের জন্য যেটুকু পেশিসঞ্চালন, তাতে একনাগাড়ে বেশ কিছুক্ষণ ধরে অক্সিজেন ব্যবহার করার ক্ষমতার উর্দ্ধসীমা বা VO2 Max-এর কাছাকাছি থাকা হয় না। কাজের খাতিরে পেশিসঞ্চালন সেই তীব্রতায় পৌঁছয় না, বা পৌঁছলেও কম সময়ের জন্য ততটা তীব্র থাকে। সত্যি কথা বলতে কি, অ্যারোবিক ব্যায়াম শুরুর পাঁচ-সাত মিনিট পরে যখন বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা দেয়, নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত ও ‘ভারী’ হয়ে আসে, তখন থেকে ব্যায়ামের আসল সুফল শুরু হয়। হৃদযন্ত্র, ফুসফুস ও রক্ত-সংবহনের ওপর ব্যায়ামের পুরো সুফল পেতে গেলে এর পর থেকে ত্রিশ-চল্লিশ মিনিট একইরকম দ্রুতছন্দে অ্যারোবিক ব্যায়াম চালিয়ে যেতে হবে। কাজের সময় এটা হয় না। আরও একটা সূক্ষ্ণ পার্থক্য আছে, সেটা হল কর্মক্ষেত্রে মানসিক উৎকণ্ঠাজনিত। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, কাজের সময় করা পরিশ্রমের চাইতে অবসর সময়ে করা শারীরিক পরিশ্রমে উপকার অনেক বেশি। বাহান্নটি দেশে হৃদরোগ সদ্য-ধরা পড়েছে এমন ১০০৪৩ জন মানুষের ওপর চালানো একটি সমীক্ষায় এই তথ্য পাওয়া গেছে (Intraheart Study, European Heart Journal 2012, Vol 33, p 452-466)।

    তাহলে আরও একটা কথা আমরা বলতে পারি। অ্যারোবিক ব্যায়াম স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের মানুষের জন্য ভাল, আবার তা হৃদরোগ থাকলে করা যাবে না এরকম কিছু জিনিস নয়। বরং হৃদরোগীরা এই ব্যায়াম করতে পারবেন, কিন্তু তার আগে তাঁদের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলতে হবে, এবং ধীরে ধীরে ও সাবধানে ব্যায়ামের মাত্রা বাড়াতে হবে। উচ্চ-রক্তচাপের রোগীদের জন্য একই কথা প্রযোজ্য। তাঁদের ব্যায়াম করা দরকার, এবং তাঁরা অধিকাংশ সময়ে ব্যায়ামের মূল্য ঠেকে শেখেন বলে ব্যায়াম চালিয়ে যান। ডায়াবেটিসের রোগীরাও অ্যারোবিক ব্যায়াম করবেন স্বাভাবিক স্বাস্থের মানুষের মতো করেই, কিন্তু তাঁদের পায়ে চট করে ঘা হয়ে যেতে পারে বলে সঠিক জুতো পরা ও পায়ের যত্ন খুব দরকার -– প্রয়োজনে চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ নিতে হবে। ডায়াবেটিসের রোগীদের আর একটা কথা মনে রাখতে হবে – ব্যায়ামের ফলে তাঁদের রক্তে শর্করার পরিমাণ যেন খুব কমে না যায়। অর্থাৎ হৃদরোগী, উচ্চ-রক্তচাপের রোগী, ও ডায়াবেটিসের রোগী -– এঁদের অ্যারোবিক ব্যায়ামের প্রয়োজন আছে, এবং তাঁরা সেটা করতেও পারেন, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে।

    তার মানে কি এই যে দিনে ত্রিশমিনিট থেকে একঘন্টা অ্যারোবিক ব্যায়াম না করলে কিচ্ছু লাভ নেই? না, তা নয়। আমি সর্বোচ্চ লাভ পাবার কথা বলছি। এটা দেখা গেছে দিনে একঘন্টার বেশি অ্যারোবিক ব্যায়াম চালিয়ে গেলে অতিরিক্ত লাভ কিছু হয় না। আবার অন্যদিকে, অনেক রোগীদের পক্ষে এতোটা ব্যায়াম আসম্ভব হতে পারে। সেক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে অ্যারোবিক ব্যায়াম কম করে করলেও লাভ আছে। যেমন জামাইকায় ১২৮ জন সেরিব্রাল স্ট্রোকের (ব্রেন স্ট্রোক) রোগীর ওপর চালানো এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, নিয়মিত ঘরের বাইরে যতটা সম্ভব দ্রুত হাঁটা আর ঘরে বসে ম্যাসাজ করা -– এই দু’দলের মধ্যে প্রথম দল হাঁটার ফলে জীবনযাত্রার অনেক বেশি মানোন্নয়ন করতে পেরেছেন। আর তাঁদের হৃদযন্ত্রের ক্ষমতা বেড়েছে, ফলে বিশ্রামকালীন হৃদস্পন্দন-হার কমেছে। বাইপাস সার্জারি করার পর কর্মক্ষমতা-বৃদ্ধিতে ওস্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে অ্যারোবিক ব্যায়াম কার্যকর।

    শরীরচর্চা ও রোগপ্রতিরোধঃ

    হৃদরোগের এতাবৎ জানা কারণগুলোর মধ্যে শরীরচর্চার অভাব অন্যতম, অথচ একেবারে অবহেলিত। ধূমপান, ডায়াবেটিস, উচ্চ-রক্তচাপ, ও স্থূলতার মত শরীরচর্চার অভাব হৃদরোগ ডেকে আনে, কিন্তু শরীরচর্চার গুরুত্ব কেউই সেভাবে দেন না। বোধহয় এটা আমাদের সস্তায় বাজিমাত করার প্রবণতার বিপক্ষে যায় বলেই এই অবহেলা। অথচ শরীরচর্চা নিজে হৃদরোগ আটকায়, আবার মেদ বা স্থূলতা কমিয়ে হৃদরোগের প্রতিরোধে আলাদা করে অবদান রাখে। বিজ্ঞাপনের ভাষায় বললে ‘ডাবল বেনেফিট’ স্কিম হল ‘ফিটনেস স্কিম’!

    দুচারটে তথ্য দেখা যাক। যাঁরা নিয়ম করে ব্যায়াম করেন না, কিন্তু পরিশ্রমসাধ্য জীবনযাত্রা করেন, তাঁদের হৃদরোগে ও সেরিব্রাল স্ট্রোকের মৃত্যুর হার ৩০% ভাগ কম (রিক্সাচালকদের উদাহরণটি মনে আছে আশা করি)। বাইশটি উচ্চমানের সমীক্ষার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, হার্টঅ্যাটাকের পরে নিয়ন্ত্রিত অ্যারোবিক শরীরচর্চা করলে শতকরা ২২ ভাগ মানুষের জীবনযাত্রার মান যথেষ্ট উন্নত হয়, এবং শতকরা ২৫ ভাগের হঠাৎ-মৃত্যু আটকানো যায় (O’Connor 1988, Oldridge 1989)। এটাই স্বাভাবিক। নিয়মিত অ্যারোবিক শরীরচর্চার ফলে হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের ক্রিয়ার উন্নতি হয়। তখন হৃদযন্ত্র এক-একবার সংকোচন-প্রসারণ করে বেশি পরিমাণ অক্সিজেন পাঠাতে পারে। আবার, পেশিতে রক্ত আহরণ করার ক্ষমতা বাড়ে। এই দুটোর সম্মিলিত ফল হল, হৃদযন্ত্র তুলনায় কম গতিতে কাজ করে সর্বত্র অক্সিজেনের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়। ফলে রোগীর কর্মক্ষমতা বাড়ে, জীবনযাত্রার মান বাড়ে। হৃদস্পন্দন-হার কমে যাওয়াতে করোনারী ধমনী, যার কাজ হল হৃদপেশিতে রক্ত সরব্রাহ করা, তাদের কাজ কমে। প্রাণঘাতী যে হৃদরোগে আজকাল বহু মানুষ মারা যাচ্ছেন সেটি হল করোনারী ধমনীর অসুখ, সেই অসুস্থ ধমনীর কাজ কমা মানেই মৃত্যুর সম্ভাবনা কমে যাওয়া। এছাড়াও নিয়মিত অ্যারোবিক শরীরচর্চার ফলে কম মাত্রার ওষুধেই রোগী ভাল থাকেন।

    শরীরচর্চা মেদহ্রাস ও কর্মক্ষমতাবৃদ্ধিঃ

    আমাদের শরীর যেন এক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। যত ক্যালোরি জমবে, আমাদের ওজন ততই বাড়বে। ক্যালোরি বা শক্তি আসে খাদ্য থেকে। আর ক্যালোরি খরচ হয় শারীরিক পরিশ্রমে। আমাদের খাদ্যাভ্যাস ভীষণ বদলে যাচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে একেবারে ছোটবেলা থেকেই উচ্চ-ক্যালোরিযুক্ত খাবার গ্রহণে অভ্যস্ত হয়ে উঠছি আমরা। অন্যদিকে, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের টাকা কমানোর উপায় যেমন টাকা খরচ করে ফেলা, তেমনই মেদ ঝরানোর উপায় হল ক্যালোরি-খরচ –- অর্থাৎ শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম। এর কোনও শর্টকাট রাস্তা নেই। পাতিলেবু, মধু বা টক দই কখনই ক্যালোরি-খরচ করিয়ে দিতে পারে না, ঠিক যেমন আপনার ব্যাঙ্কের পাসবই-এর ওপর সাতটা বা সতেরোটা দাগ দিয়ে আপনার জমা টাকা কমানো সম্ভব নয়। তবু মানুষ ভোলে, বিনা পরিশ্রমে ফললাভের ইচ্ছে তো খালি পরীক্ষার আগের রাতে ফাঁকিবাজ ছাত্রের একচেটিয়া নয়। কিন্তু পরিশ্রম ছাড়া মেদ ঝরবে না। আর এব্যাপারে শ্রেষ্ঠ পরিশ্রম হল অ্যারোবিক ব্যায়াম। তবে সেটাতেও বেশ খাটুনি আছে। একজন ৭০ কেজি ওজনের মানুষ যদি একটা সিঙ্গাড়া (মোটামুটি ৩০০ ক্যালোরি) খেয়ে সেই ক্যালোরিটা খরচ করতে চান তো ঘন্টায় চার কিলোমিটার বেগে প্রায় দেড় ঘন্টা হাঁটতে হবে। আর এই হিসেবটা সবসময়ের জন্যই সত্যি। কিছুদিন মেপে খেলাম, হাঁপিয়ে হাঁটলাম, তারপর কষে ঘুমোলাম আর খেলাম -– এটা করলে হা-হুতাশই করতে হবে। আর বিভিন্ন কর্পোরেট-কালচার পোষিত ‘ডায়েট’-এ সাময়িকভাবে ওজন কমে ঠিকই, কিন্তু ডায়েট ছাড়লেই ফিরে আসে মেদ। লাইপোসাকশান ও কসমেটিক সার্জারিতে সাময়িক ওজন ও মেদ কমে। বেরিয়াট্রিক সার্জারিতে বিপুল অর্থব্যয়ের বিনিময়ে মেদ স্থায়ীভাবে ঝরানো গেলেও তার সাইড এফেক্ট কম নয়। কিন্তু ‘ডায়েট’ ও ফ্যাট কমানোর নানা কাজের ও অকাজের উপকরণ ও উপদেশ বিক্রি করে বিপুল অর্থের আমদানী হচ্ছে, তাই কাগজে-টিভিতে-ম্যাগাজিন সেসবের বিজ্ঞাপনে ছয়লাপ। কিন্তু আপনি নিজের মনে দৌড়লে বা সাঁতার কাটলে আর কার ক’টাকা লাভ বলুন, তাই এগুলোর কোনও বিজ্ঞাপন নেই। বিজ্ঞাপনে কি না হয়। যেমন বাজারে মর্নিং ওয়াকার বলে অতি চমৎকার একটি দ্রব্য বেরিয়েছে। আপনি শুয়ে শুয়ে পা’টা দয়া করে তার ঘাড়ে রাখবেন, সেটি ১৫০০ পা (মতান্তরে ২২২২ পা) হাঁটার সুফল আপনার অ্যাকাউন্টে জমা করে দেবে। এসব বিজ্ঞাপন পড়ার সময় খালি সেই ঋষিবাক্যটি খেয়াল রাখবেন, চালাকির দ্বারা কোনও সুকর্ম হয় না, আপনার মেদ ঝরাও হবে না।

    অ্যারোবিক শরীরচর্চায় আমাদের কাজ করার ক্ষমতা বাড়ে। অ্যানঅ্যারোবিক ব্যায়ামে পেশির শক্তি বাড়ে ঠিকই, এবং এর জন্য অ্যারোবিক-এর সাথে অল্প অ্যানঅ্যারোবিক ব্যায়ামও করা উচিত। কিন্তু বেশি শারীরিক কাজ করার জন্য আর যেসব মূল ব্যাপার -– হৃদযন্ত্র, ফুসফুস ও রক্তনালীর রক্তসরবরাহ করার ক্ষমতা ও রক্ত থেকে পেশির অক্সিজেন আহরণের ক্ষমতা –- এসব বাড়ে অ্যারোবিক ব্যায়ামে।

    শরীরচর্চার প্রেসক্রিপশনঃ

    এটা একজন তিরিশ-চল্লিশ বয়সী এমনিতে সুস্থ মানুষের জন্য, তবে জটিলতাহীন ডায়াবেটিস রোগী বা মোটামুটি মাত্রার উচ্চ-রক্তচাপ রোগী এই ‘প্রেসক্রিপশন’ মানতে পারেন, তবে তাঁর চিকিৎসকের সঙ্গে একবার কথা বলে নেওয়াই ভাল।

    সারাদিনে কমপক্ষে একঘন্টা বরাদ্দ রাখুন শরীরচর্চার জন্য। সকাল বা বিকেলে হলে ভাল, নইলে অন্য সময়, শুধু চড়চড়ে গরমে বাইরে ব্যায়াম চলবে না।

    প্রথমে প্রস্তুতি হিসেবে মিনিট-পাঁচেক খালি হাতের হালকা ব্যায়াম বা অল্পমাত্রার দৌড়ঝাঁপ করে পেশিগুলোকে প্রস্তুত করুন। তাহলে পরে ভারী ব্যায়ামের সময়ে পেশিতে টান ধরা ইত্যাদি হবে না। প্রস্তুতিব্যায়ামের ফলে আপনার অল্প ঘাম হবে আর নাড়ির গতি বেড়ে গিয়ে দাঁড়াবে প্রতি মিনিটে ৯০-১০০, আর জোরে জোরে শ্বাস পড়বে।

    তারপর মূল ব্যায়াম হিসেবে এগুলোর যেকোনো একটা। জোরে হাঁটা (ঘন্টায় ৪-৬ কিমি বেগে), সাঁতার, স্কিপিং বা লাফদড়ি (দড়ি ছাড়া লাফানোও হতে পারে), জগিং, গানের সাথে বা এমনি এমনি নাচা, ব্যাডমিন্টন, টেনিস, ফুটবল, স্কোয়াশ ইত্যাদি খেলা।

    মূল অ্যারোবিক ব্যায়ামের তীব্রতা এমন হবে যে শরীরের শক্তি-উৎপাদন ‘অ্যানঅ্যারোবিক মাত্রাসীমা’-র কাছাকাছি থাকে। অন্য ভাষায় বললে, ব্যায়ামকারীর অক্সিজেন ব্যবহারের উর্ধসীমার তথা ‘ভি-টু ম্যাক্স’-এর শতকরা ৭০ ভাগ অক্সিজেন ব্যবহার করা হবে এই মাত্রার ব্যায়ামে। এইভাবে ব্যায়াম চলাকালীন নাড়ির গতি কত হবে তার একটা হিসেব আছে। হিসেবের ডিটেলটা আলাদা বক্স করে দেওয়া আছে, এখানে একটা উদাহরণ দিই। আপনার বয়স পঞ্চাশ বছর ও বিশ্রামরত অবস্থায় নাড়ির গতি প্রতি মিনিটে ৬২ হলে, অ্যারোবিক ব্যায়ামের সময়ে আপনার নাড়ির গতি ১২৭ থেকে ১৫৫ (প্রতি মিনিটে) হওয়া উচিত। ব্যায়াম করাকালীন নাড়ির গতি তথা হৃদস্পন্দন-হার মাপার বৈদ্যুতিন যন্ত্রও বাজারে কিনতে পাওয়া যায়।

    (ক) = সর্বোচ্চ অক্সিজেন ব্যবহারের সময়ে প্রতি মিনিটে হৃদস্পন্দন–হার = ২২০ – বয়স [মহিলাদের ক্ষেত্রে ২২৬ – বয়স]

    (খ) = বিশ্রামরত অবস্থায় প্রতি মিনিটে হৃদস্পন্দন–হার

    (গ) = হৃদস্পন্দন–হার যতটা বৃদ্ধি করা যায় = {(ক) – (খ)}

    (ঘ) = অ্যারোবিক ব্যায়ামের সময়ে প্রতি মিনিটে হৃদস্পন্দন–হার অন্তত যতটা হবে = [(খ) + {(গ)X ৬০/ ১০০}]

    (ঙ) = অ্যারোবিক ব্যায়ামের সময়ে প্রতি মিনিটে হৃদস্পন্দন–হার সর্বাধিক যতটা হবে = [(খ) + {(গ)X ৮৫/ ১০০}]

    অ্যারোবিক ব্যায়ামের সময়ে প্রতি মিনিটে হৃদস্পন্দন–হার (ঘ) থেকে (ঙ) –এর মধ্যে থাকবে

    কঠিন লাগছে? তাহলে একদম সহজ হিসেবটা বলেই দিই। ব্যায়ামের যে তীব্রতায় আপনি গান গাইতে পারবেন না, কষ্ট করে কথা বলতে পারবেন, সেটাই হল আপনার জন্য সঠিক তীব্রতা।

    মূল অ্যারোবিক ব্যায়ামের সময়কাল হবে আধঘন্টা থেকে একঘন্টা। এর চাইতে কম করলে লাভও কম পাবেন। আবার একঘন্টার চেয়ে বেশি করলে আনুপাতিক হারে সুফল বাড়ে না, উপরন্তু চোট-আঘাতের সম্ভাবনা বাড়ে।

    প্রাণায়াম?

    এবার শুরুর কথায় আসি। প্রণায়াম করার জন্যই কেউ মোটা বা ‘আনফিট’ হয়ে যান না, কিন্তু প্রাণায়াম করতে গিয়ে যদি অ্যারোবিক ব্যায়ামের সময়ে টান পরে তাহলেই মুশকিল। অ্যারোবিক ব্যায়ামের সুফল থেকে বঞ্চিত হবার ফলে তাঁর সমস্যা শুরু হয়। কিন্তু প্রাণায়ামের কি কোনও সুফল নেই? না থাকলে সেটা এত মানুষ করে চলেছেন কেন? নাকি প্রাণায়ামকে গালি পাড়া আমাদের আধাখ্যাঁচড়া জ্ঞানের বদহজম-উদগার মাত্র? দেখা যাক। এবং বিজ্ঞাপন-বিরতি না থাকলেও বলি, পাঠক, এবার সঙ্গে থাকুন। ভারী কঠিন প্রশ্নের সহজ জবাব পাওয়া যাবে।

    সম্প্রতি প্রকাশিত এক ডাক্তারি জার্নালে দেখানো হয়েছে, ১০০ জন ডায়াবেটিস রোগী দৈনিক একঘন্টা করে যোগাসন (Body postures), প্রাণায়াম (Breathing exercise) ও ধ্যান (Meditation) করার ফলে তাঁদের ওজন কমেনি বটে, কিন্তু মোট কোলেস্টেরল, লঘুঘনত্বের (অর্থাৎ ক্ষতিকর) কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসেরাইড কমেছে (Indian Heart Journal, Vol 65, No. 2, March-April 2013, p 127-136)। পরিসংখ্যানশাস্ত্র তথা স্ট্যাটিস্টিক্সের কিছু নিয়ম মেনে চিকিৎসাবিজ্ঞানের সমস্ত পরীক্ষা করতে হয়, কেননা প্রত্যেক রোগীর সমান ভাল ফল কোনও চিকিৎসায় হয় না, আর চিকিৎসা ছাড়া একজন নির্দিষ্ট রোগীর অবস্থার কতটা উন্নতি বা অবনতি ঘটত সেটা বলা কিছুতেই সম্ভব নয়। এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী রোগীর সংখ্যা বড্ড কম, মাত্র ১০০। পরিসংখ্যানশাস্ত্র মতে, তাঁদের যে পরিমাণ উন্নতি হয়েছে তা থেকে এইটুকুই বলা যায় যে পরীক্ষার ফল আশাব্যঞ্জক, কিন্তু সুনিশ্চিত করে বলা যায় না যোগ, প্রাণায়াম ও ধ্যান শরীরের পক্ষে উপকারী। উপকারী হলে কতোটা উপকারী সেটা বলার প্রশ্নই নেই। যে গবেষকরা পরীক্ষাটি করেছেন তাঁরাও শেষে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন, এবং বলেছেন -– এই নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে। এইধরণের বহু ব্যাপারে দেখা গেছে, কম সংখ্যক রোগীকে নিয়ে পরীক্ষায় ভাল ফল পাওয়া গেলেও পরে বড় পরীক্ষায় কোনও ভাল ফল পাওয়াযায় না, আবার হয়তোবা অনেক বেশি ভাল ফল পাওয়া যায়।

    কিন্তু যোগ, প্রাণায়াম বা ধ্যান নিয়ে চর্চা যাঁরা করেন তাঁরা নিজেরা এরকম পরীক্ষা আদৌ করেন না। অন্যদের পরীক্ষার ফল বিপক্ষে গেলে তা উড়িয়ে দেন, আর সামান্য স্বপক্ষে গেলেই সেটাকেই ‘একতম সত্য’ এমন প্রচার করেন। দুটো ব্যাপার আছে। প্রথমত, যোগ, প্রাণায়াম, ধ্যান –- এগুলোর সঙ্গে যেভাবেই হোক ধর্মীয় অনুষঙ্গ জড়িয়ে গেছে। ধর্ম মানুষকে যতটা মেনে নিতে বলে, যুক্তিবুদ্ধি দিয়ে বিচার করতে ততটা বলে না। ফলে যোগ, প্রাণায়াম, ধ্যান -– এদের চর্চাটা বিজ্ঞানচর্চার মতো করে করার ঐতিহ্যটাই গড়ে ওঠেনি। এবং দেশে-বিদেশে যোগ, প্রাণায়াম, ধ্যান এখন পণ্য। অনেকে এর বাজারে বেশ সফল ব্যবসায়ী, খ্যাতি-অর্থ দুটোই পেয়েছেন। ফলে এগুলো নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে তাঁরা আগ্রহী নন, অন্যরা বিশ্লেষণ করে ভাল কথা বললে সেটা তাঁরা প্রচার করেন, অথচ উল্টোটা হলেই পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলেন। আর নিজেরা প্রচার চালান ‘প্রাণশক্তি’, ‘আত্মিক উন্নতি’ এইসব ধোঁয়াটে কথা বলে। এগুলো কী, আর কেমন করে এগুলোর উন্নতি মাপব, সেকথা উহ্যই থাকে। আবার স্থানে-অস্থানে বৈজ্ঞানিক পরিভাষার অপব্যবহার করে তাঁরা এমন পরিমন্ডল রচনা করেন যে সাধারণ মানুষের মনে হয় তাঁরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিই অনুসরণ করছেন। একে বলে ‘ছদ্ম-বিজ্ঞান’। অনেকে রীতিমত ওষুধ প্রেসক্রিপশন, এমনকি ওষুধ বিক্রির বিশাল কারবারও বানিয়েছেন। অথচ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মেনে কোন কিছুর ‘ওষুধ’ শিরোপা পেতে গেলে যে পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে আসতে হয় তাঁরা সেগুলো কখনও করেন না।

    যোগ, প্রাণায়াম, ধ্যান নিয়ে কেউ কেউ ব্যবসা করছেন বলেই সেটাকে পুরো বাতিল করার কোনও মানে নেই। যথাযথ শরীর চর্চা করে যদি সময় ও ইচ্ছা থাকে তো যোগব্যায়াম (আসন) প্রাণায়াম, ধ্যান করা যেতে পারে। পাথুরে প্রমাণ নেই, কিন্তু যথাযথ প্রশিক্ষণ নিয়ে এগুলো করলে শরীরের অস্থিসন্ধি সচল থাকে ও অ্যারোবিক ব্যায়ামের পর ক্লান্তি খানিক দূর হয় ও মানসিক প্রশান্তি আসে — একথাগুলো একেবারে অযৌক্তিক নয়। কিন্তু আবার বলি, এ’নিয়ে আরও বৈজ্ঞানিক চর্চা দরকার, আর সে চর্চাটা খোলা মনে করতে হবে।

    অ্যারোবিক ব্যায়াম সম্পর্কে কয়েকটি সতর্কতা। একজোড়া ভাল জুতোর কোনও বিকল্প নেই, নইলে পায়ে ব্যথা হবে, গাঁটে স্থায়ী ক্ষতি হওয়াও আশ্চর্য নয়। গাঁটে ব্যথা থাকলে, বিশেষ করে হাঁটুতে ব্যথা থাকলে, হাঁটা চলবে না, দৌড়ঝাঁপ চলবে না। সাঁতারই সেরা উপায়। সাঁতার না জানা থাকলে কোমরজলে একনাগাড়ে হাঁটা চলতে পারে। ব্যায়ামের সময় প্রচুর জল শরীর থেকে বেরিয়ে যায়, সুতরাং আগেই অনেকটা জল খেয়ে অ্যারোবিক শুরু করা ভাল।

    এই নিবন্ধটি পূর্বে উৎস মানুষ এবং স্বাস্থ্যের বৃত্ত সাময়িকীতে প্রকাশিত।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ | ৫৮৫৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • SS | 182.58.184.165 (*) | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১২:২৪57984
  • ফ্রি র‌্যাডিকালস
  • avi | 113.252.164.43 (*) | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৭:৪৪57987
  • রবীন্দ্রনাথের একটা ব্যঙ্গকৌতুকে ছিল, ‘হরিহরপুরের ম্যুনিসিপালিটির বিরুদ্ধে গোবিন্দবাবুর যে সুগভীর প্রবন্ধ প্রকাশিত হইয়াছে তাহা প্রাঞ্জল ও ওজস্বী হইয়াছে সন্দেহ নাই, কিন্তু একটি বিষয়ে দুঃখিত ও আশ্চর্য হইলাম, ইনি পরের ভাব অনায়াসেই নিজের বলিয়া চালাইয়াছেন। এক স্থলে বলিয়াছেন, জন্মিলেই মরিতে হয়–এই চমৎকার ভাবটি যদি গ্রীক পণ্ডিত সক্রেটিসের গ্রন্থ হইতে চুরি না করিতেন তবে লেখকের মৌলিকতার প্রশংসা করিতাম।'
  • , | 213.132.214.81 (*) | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১১:২৫57988
  • জন্মেই ভুল করেছি দেখছি!

    কি হবে এবারে? আমি এখন কি করবো?? ও অলস বাবু বলুন না।। আমি এখন কি করবো?
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ মতামত দিন