এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • মাত্রাছাড়া রক্তচাপ

    Gautam Mistri লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০১ জুন ২০১৭ | ২২৭৮ বার পঠিত
  • বীরেন বাবুর পাশের টেবিলে সহকর্মী বিশ্বাসদা কদিন ধরেই বেশ চুপচাপ মাথা নীচু করে বসে থাকছেন। বিশ্বাসদা অফিস ক্লাবের সেক্রেটারি, একা হাতে অফিসের আর ক্লাবের কাজকর্ম নিয়ে মেতে থাকেন। চা-ওয়ালা হারাধন জোরজার না করলে বীরেন বাবু অতটা পাত্তা দিতেন না। বিশ্বাসদা মাথা ব্যথার ওষুধ কিনতে হারাধনকে ওষুধের দোকানে পাঠানোর সময় টনক নড়ল সবার। অফিস ছুটির পরে বীরেন বাবু বিশ্বাসদাকে তার পরিচিত এক ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন। বিশ্বাস দার ব্লাড প্রেশার বেশ বেশি ধরা পড়লো। ওই ফাঁকে বীরেন বাবু প্রেশারটা মাপিয়ে নিতে গিয়েই বীরেন বাবুর চক্ষু চড়ক গাছে। বীরেন বাবুর ব্লাড প্রেশার বিশ্বাস দার চেয়েও বেশি। বীরেন বাবুর চোখ চড়ক গাছে চড়তে দেখে ডাক্তার আর একবার প্রেশার মাপলেন। বীরেনবাবুর ব্লাড প্রেশার তাতে কমলো না। ডাক্তারবাবু দুজনকেই ওষুধের নিদান দিলেন। বিশ্বাস দার প্রেশার সপ্তাহ খানেক বাদে কমলো বটে, কিন্তু তার মাথা ব্যথা কমলো না। দুজনেরই রক্তচাপ স্বাভাবিক হল, কিন্তু বীরেন বাবু যেমনটি ছিলেন তেমনই রইলেন, আর বিশ্বাসদার রক্তচাপ কমলেও মাথা ব্যথা আগের মতোই রয়ে গেল। বিশ্বাস দা ওষুধ খাবার ইচ্ছে হারিয়ে ফেললেন আর বীরেন বাবু প্রেশার মাপার মেশিনটা আর ডাক্তারের বিচক্ষণতাকে সন্দেহের চোখে দেখে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দিলেন।

    স্বাস্থ্য বিষয়ে এই ধ্যানধারণা গুলি বয়স বাড়ার সাথে সাথে অবচেতন ভাবে গড়ে ওঠে। গাড়ির চাকার প্রেশার আর রক্তনালীর প্রেশার সমগোত্রীয় বলে মনে হতে থাকে। সাধারণ অথবা উচ্চশিক্ষিত, কারোরই রক্তচাপ সম্পর্কিত প্রথাগত জ্ঞান লাভের সুযোগ হয়ে ওঠে না। খবরের কাগজের আর টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনের একপেশে ভীতিকর তথ্যে এবং রাস্তার মোড়ের জড়িবুটি ওয়ালার স্টিরিওফোনিক অভিনয়ে রক্তচাপ সম্পর্কে এক অসম্পূর্ণ ও ভয়ের ধারণা তৈরি হয়েই যায়। এর সঙ্গে অফিস কলিগ, বাসের সহযাত্রী, পাড়া-পড়শি ও নিজের পরিবারের সদস্যসের কাছ থেকে পাওয়া রক্তচাপের যাবতীয় খবরাখবর মিলে যে ধারণাটা তৈরি হয়ে ওঠে তার সঙ্গে সঠিক বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্যের বিস্তর ফারাক। মাথা ঘোরার অন্যতম কারণ হিসাবে কানের মধ্যেকার ককলিয়ার রোগে (ভারটাইগো) মাথা ঘুরলে প্রেশার কমে গেছে মনে করে প্রেশার মাপার জন্য ছোটাছুটি পড়ে যায়। অনেক সময়ে সেই মুহূর্তে প্রেশার মাপার সুযোগ না থাকলে রক্তচাপ কমে গেছে ধরে নিয়েই রক্তচাপ বাড়ানোর টোটকা হিসাবে নুন গোলা জল গেলা শুরু হয়ে যায়। এটা জেনে নেওয়া যাক, গুটিকয় প্রাণঘাতী রোগ ছাড়া (যেমন বড় ধরনের হার্ট অ্যাটাক) রক্তচাপের ওষুধ না খেলে রক্তচাপ বিপদসীমার নীচে নামেনা। অর্থাৎ, আপাত সুস্থ মানুষের বেশি মাত্রার রক্তচাপের ওষুধ না খেলে রক্তচাপ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। রক্তচাপ একটি জৈবিক প্রক্রিয়ার মাত্রার মাপ। মানুষের উচ্চতা, ওজন, চুলের দৈর্ঘ্য ইত্যাদির মাপের মতো ব্যাক্তি বিশেষের রক্তচাপের মাত্রা কোন স্থিরীকৃত সংখ্যা নয়।

    রক্তচাপের গোড়ার কথা

    বীরেনবাবুর সবকিছুতেই খুঁতখুঁতে স্বভাব। ডাক্তারকে চেপে ধরলেন রক্তের চাপের ইতিবৃত্ত জানার জন্যে। চশমার কাঁচটা রুমাল দিয়ে মুছে ডাক্তারবাবু শুরু করলেনঃ রক্তচাপের কথা বলার সময় দুটো সংখ্যার উল্লেখ করা হয়ে থাকে। একটা বড় সংখ্যা, অপরটা ছোটো। যদি বলা হয়, কোন ব্যাক্তির রক্তচাপ ১২০/৮০, তার মানে ঐ মানুষটির সিস্টোলিক রক্তচাপ ১২০ মিলিমিটার পারদস্তম্ভের চাপের সমান, আর ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ৮০ মিলিমিটার পারদস্তম্ভের চাপের সমান। পারদস্তম্ভের উচ্চতার চাপ একটা পরিচিত চাপ মাপার পদ্ধতি, যেমন সমুদ্রপৃষ্ঠে বায়ুমন্ডলের চাপ ৭৬০ মিলিমিটার পারদস্তম্ভের চাপের সমান। সেই অর্থে রক্তের চাপ বায়ুমণ্ডলের চাপের তুলনায় অনেকটাই কম। তাহলেও বুঝতে বাকি আছে। একটি বিশেষ গাড়ির টায়ারের চাপের উপযুক্ত মাপ একটাই হয়। রক্তচাপের দুটো সংখ্যা কেন? এবার উন্নত মানব শরীরের জটিল কার্যকলাপের কথা বলতে হচ্ছে। রক্ত একটা পরিবহন পরিষেবার কাজ করে। আমাদের বিভিন্ন অঙ্গের ক্রিয়াকলাপের জন্য যে শক্তির প্রয়োজন সেই কাঁচা মাল অর্থাৎ শক্তি উৎপাদনকারী গ্লুকোজ ও অক্সিজেন বিভিন্ন অঙ্গে পোঁছে দেবার কাজটা “রক্ত-সরবরাহ (circulatory system) নামক দেহের পরিবহন তন্ত্রের মাধ্যমে হয়। রক্ত প্রবাহিত হয় হৃদপিণ্ডের পাম্পের কারণে। হৃদপিণ্ড নামক পাম্পের যেমন পাম্প করার কাজ আছে, তেমনই দুই পাম্পের মধ্যবর্তী সময়ে হৃদপিণ্ডের প্রধান প্রকোষ্ঠগুলোর (নিলয়, ventricle) প্রসারণের মাধ্যমে পরের পাম্পের জন্য প্রয়োজনীয় রক্ত দিয়ে হৃদপিণ্ডের প্রধাণ প্রকোষ্ঠকে (নিলয়) রক্তপূর্ণ করারও প্রয়োজন আছে। পাম্প করার সময়ে যে শক্তি দিয়ে হৃদপিণ্ড রক্ত ঠেলে পাঠায় সেই সময়ে রক্তনালীতে যে চাপ সৃষ্টি হয় সেটা হোল সিস্টোলিক রক্তচাপ আর দুই হৃদস্পন্দনের মধ্যবর্তী সময়ে সেই চাপ কমে গিয়ে যে সর্বনিম্ন চাপ বজায় থাকে সেই চাপটা হোল ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ। এই পর্যন্ত বলে ডাক্তার একটু বোধহয় দম নেবার জন্য একটু থামলেন। সেই ফাঁকে বীরেনবাবুর বেয়ারা প্রশ্ন, সিস্টোলিক মানে কী?

    মুচকি হেসে ডাক্তার বলতে শুরু করলেন, গাড়ির টায়ারের প্রেশারের সঙ্গে রক্তচাপের বিস্তর ফারাক। রক্তের স্রোত বহমান এবং একমুখী। এর সঙ্গে নদীর স্রোতের খানিকটা মিল আছে। তবে নদীর স্রোতের মতো রক্তের স্রোত তির তির করে বা প্রবল বেগে এক ভাবে বয়ে যায় না। হৃদপিণ্ড সাইকেলের হ্যান্ড পাম্পের মতন করে ঝলকে ঝলকে রক্ত পাম্প করে যায়। হৃদপিণ্ডের সঙ্কোচনের সময়গুলোতে ঝলকে ঝলকে অধিক চাপে বেশি পরিমাণের রক্ত রক্তনালী দিয়ে বয়ে যায়। ঐ সময় রক্তের চাপ থাকে বেশি। দুই বার সঙ্কোচনের মধ্যবর্তী সময় যখন হৃদপিণ্ড প্রসারণ হতে থাকে, তখন সঙ্কোচনের সময়ের চাপের জেরে রক্ত সামনের দিকেই প্রবাহিত থাকে। তখন রক্তের চাপ কম, আর এই সময়ে সর্বনিম্ন চাপই হোল ডায়াস্টোলিক প্রেশার। রক্তের প্রবাহ একমুখীই থাকে, তবে পর্যায়ক্রমে একবার বেশি (সিস্টোল) আর পরবর্তী সময়ে কম (ডায়াস্টোল) চাপে রক্ত রক্তনালীর মধ্য দিয়ে বহমান থাকে। কতটা জোরে হৃদপিণ্ড পাম্প করছে সেটা সিস্টোলিক রক্তচাপের একটা নির্ণায়ক তো বটেই, তবে আরও একটা শারীরিক বৈশিষ্ট্য রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করে। সেটা হোল “পেরিফেরাল রেসিস্টান্স (peripheral resistance)” বা রক্তপ্রবাহকে রক্তনালীর গঠনমূলক (structural) ও ক্রিয়ামূলক (functional) বাধাদানের ক্ষমতার পরিমাপ। মনে করা যাক, একই পরিমাণের রক্ত মোটা ও সরু এই দুই ধরনের রক্তনালীর মধ্য দিয়ে একই শক্তি প্রয়োগ করে হৃদপিণ্ড পাম্প করে যাচ্ছে। মোটা রক্তনালীর মধ্যে রক্ত তাড়াতাড়ি প্রবাহিত হবে, কিন্তু সেই রক্ত প্রবাহ রক্তনালীর দেওয়ালে কম পরিমাণের চাপ সৃষ্টি করবে। অন্যদিকে রক্তনালী সরু হওয়ার জন্য রক্ত প্রবাহে রক্তনালীর বেশি বাধাদানের ক্ষমতা থাকবে ও অপেক্ষাকৃত কম মাত্রায় রক্ত প্রবাহ হবে আর রক্তনালীর দেওয়ালে বেশি পরিমাণের চাপ সৃষ্টি হবে। সরু ও আরও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের জন্য রক্তপ্রবাহে রক্তনালীর অধিক বাধাদানের ক্ষমতার জন্য রক্তচাপ বৃদ্ধি পাবে। দুই হৃদস্পন্দনের মধ্যবর্তী সময়ে রক্ত সামনের দিকে, অর্থাৎ হৃদপিণ্ডের থেকে দূরের দিকেই প্রবাহিত হতে থাকে; তবে সেই সময়ে রক্তচাপ ক্রমাগত কমতে কমতে একটা সর্বনিম্ন মানে নেমে আসে। সর্বনিম্ন সেই রক্তচাপের সংখ্যাটা হোল ডায়াস্টোলিক প্রেশার। ডায়াস্টোলিক প্রেশারের একটা স্বাস্থ্যকর নিম্নসীমা আছে, কারণ হৃদপিণ্ডের নিজের ব্যবহারের জন্য যে রক্তনালী রক্ত বয়ে নিয়ে যায়, সেই করোনারি ধমনি ডায়াস্টোলের সময় (দুই হৃদস্পন্দনের মধ্যবর্তী সময়ে) রক্ত বহন করে থাকে। সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক, রক্ত চাপের এই দুই নন্দী-ভৃঙ্গিরই উপযুক্ত চাপ থাকা বাঞ্ছনীয়। রক্তের সঠিক চাপের ফলে রক্ত থেকে দেহের কোষের প্রয়োজনীয় রসদ ও অক্সিজেন রক্ত থেকে কোষে প্রবেশ করতে পারে আর কোষ থেকে অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য পদার্থ রক্তে মিশতে পারে। চোখ বড় বড়ো করে বীরেনবাবু শুনছিলেন। হঠাৎ বলে উঠলেন, “তার মানে, রক্তনালী হোল শহরের রাস্তা আর রক্ত হোল বাস বা যান-বাহন”। ডাক্তার বললেন সঠিক।

    সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক রক্তচাপের একটা স্বাস্থ্যকর সীমা আছে। এটা বেশ বোঝা যায়, রক্তচাপ বেশি হলে মস্তিষ্কের রক্তনালীর দেওয়াল ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও হৃদপিণ্ডকে (পেরিফেরাল রেসিস্টান্স বা বেড়ে যাওয়া রক্তনালীর রক্তপ্রবাহে বাধাদানের ক্ষমতার জন্য) অধিক শক্তিতে পাম্প করতে হয়। হৃদপিণ্ডকে অধিক কাজ করতে হয় বলে তারও বেশি পরিমাণে গ্লুকোজ আর অক্সিজেন দরকার হয়ে পড়ে, অর্থাৎ নিজের ব্যবহারের জন্য বেশি রক্তের দরকার হয়ে পড়ে। বেশি পরিমাণে রক্ত বয়ে নিয়ে যাবার জন্য হৃদপিণ্ডের মাংসপেশিতে রক্ত সরবরাহকারী ধমনির ওপরে চাপ পড়ে। হৃদপেশির ধমনি যদি কোন কারণে রোগগ্রস্ত থাকে তবে প্রয়োজন অনুযায়ী হৃদপেশিতে রক্ত সরবরাহ হতে না পাড়ার কারণে বুকে ব্যথার রোগ বা মায়োকার্ডিয়াল ইসস্কিমিয়া রোগ তার অস্তিত্ব জানান দিতে থাকে। উচ্চ রক্তচাপের কারণে হৃদপিণ্ডকে জোরে পাম্প করতে হয় বলে হৃদপেশিগুলিও মোটা হয়ে সমস্যার সৃষ্টি করে (ডাম্বেল ভেজে মোটা বাইসেপ্স আর ট্রাইসেপ্স বাগালে অবশ্য ক্ষতি নেই) । দীর্ঘকাল ধরে অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ-রক্তচাপের ফলে বৃক্ক বা কিডনির কর্মক্ষমতাও হ্রাস পায়। গুরুতর কোন কারণ না হলে রক্তচাপ সাধারণত বিপদসীমার নীচে নেমে যায় না। তেমনটি হলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যেমন মস্তিষ্ক, হৃদপিণ্ড ও কিডনির কাজ ভয়ানক ভাবে ব্যাহত হয়। বীরেনবাবু এবার একটু ভয় পেলেন। প্রেশার তাহলে কেবল মাথা ব্যথার কারণ নয়! ডাক্তার বললেন, উচ্চ রক্তচাপের ব্যায়রাম কে তাই বিজ্ঞজনেরা “নিঃশব্দ ঘাতক বা silent killer” বলেন। রুগীরা মাথা ব্যাথায় কাতর হলেও চিকিৎসকরা রুগীর সুদূর ভবিষ্যতের সেরিব্রাল স্ট্রোক, হার্ট এটাক, কিডনি অনিরাময়যোগ্য রোগের কথা ভেবে প্রেশারের ওষুধ জীবনভোর খেয়ে যেতে বলেন। বীরেনবাবু আবার ধাক্কা খেলেন। প্রশ্ন, সারাজীবন ধরে ওষুধ খেতে হবে কেন? ডাক্তারের স্মার্টফোনে অ্যালার্ম বেজে উঠল। উনি বললেন, এক মিনিট, আমার প্রেশারের ওষুধটা খাবার সময় হয়েছে। ডাক্তার আবার বলতে থাকলেন…

    উচ্চ রক্তচাপ আসলে নিজেই কোন রোগ নয়, মারাত্মক সব রোগ সৃষ্টির আগের অবস্থা মাত্র। এখনও পর্যন্ত এই উচ্চ রক্তচাপ পাকাপাকিভাবে স্বাভাবিক করে দেবার মতো কোন চিকিৎসা প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হয়নি। সঠিক মাত্রায় ওষুধ খেলে সাময়িকভাবে রক্তের চাপকে কেবল স্বাভাবিক করে রাখা যায় মাত্র। আশার কথা, ওষুধের দ্বারা রক্তের চাপ স্বাভাবিক করে রাখতে পারলেই ঐ সব মারণ রোগের হাত থেকে নিরাপদে থাকা যায়। বীরেনবাবু, আপনার উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়লো বিশ্বাস বাবুর কল্যাণে। কিন্তু এই ঘটনার পরাম্পরায়ের উপরে তো ভরসা করা যায় না। আপাত সুস্থ মানুষের নিয়মিতভাবে একটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর কিছু কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত। রক্তচাপ মেপে নেওয়াটাও সেই পরীক্ষা লিস্টের মধ্যে অন্যতম। বীরেনবাবুর প্রশ্নের শেষ রাখতে চান না। বললেন, সারাজীবন ধরে ওষুধ খেয়ে গেলে ওষুধের কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মানে, সাইড এফেক্ট হবে না। ডাক্তার বললেন, হতেই পারে। প্রায় সব ওষুধেরই কোন না কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। বিচক্ষণ ডাক্তার মাঝে মধ্যে আপনার রক্তের চাপ মাপার ও ওষুধের লিস্টের নবীকরণের সময়ে এই ব্যাপারটা বিশেষ করে লক্ষ্য রাখেন। মরিয়া হয়ে বীরেনবাবুর শেষ প্রশ্ন, বিশ্বাসদার মাথা ব্যথার কী হবে? ওনার প্রেশার তো কমে গেছিল, কিন্তু মাথা ব্যথা গেলনা কেন? ডাক্তার বললেন, মাথা ব্যথার অন্য কারণ থাকতে পারে। ওনাকে আবার পরীক্ষা করতে হবে। একটা কথা ওনাকে অনুগ্রহ করে বলবেন, উচ্চ রক্তের চাপের কারণে মাথা ব্যথা খুবই কম হয়; তেমনটি হলে মস্তিষ্কের রোগগ্রস্ত ও ভঙ্গুর রক্তনালী উচ্চ চাপের জন্য ফেটে গেছে কিনা এইটা বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দেয় ডাক্তারের কাছে। মাথা ব্যথার কোন মামুলি কারণ থাকলে সেটা অনেক ক্ষেত্রে নিজের থেকেই কমে যায়। কাকতালীয়ভাবে মনে হয় রক্তচাপের ওষুধ খেয়ে মাথা ব্যথা কমেছে। সহ্যসীমার অধিক শারীরিক পরিশ্রম বা মানসিক টানাপোড়েনের কারণেও মাথা ব্যথা হতে পারে। রক্তচাপের ওষুধ খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাধ্যতামূলক শারীরিক বিশ্রাম আরোপিত হয়, আগেকারের সেই টানাপোড়েন কমে যায় বা রক্তচাপের দুশ্চিন্তা আগেকারের দুশ্চিন্তাকে সাময়িকভাবে হঠিয়ে দেয়। অধিকাংশ সময় সেই কারণেই মাথা ব্যথা থেকে মুক্তি মেলে। বীরেনবাবু কবুল করলেন, তার উৎকণ্ঠা কেটে গেছে। একটা ভরসার হাসি হেসে বললেন, বিশ্বাস বাবুকে বিশ্বাস করানোর প্রাথমিক কাজটা তিনিই করবেন। প্রয়োজন হলে “ডাক্তারবাবু, আর একবার এই কথাগুলো … ।

    ৩০ সে নভেম্বর, ২০১৫, নিবন্ধটি পূর্বে স্বাস্থ্যের বৃত্তে পত্রিকায় প্রকাশিত
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০১ জুন ২০১৭ | ২২৭৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • avi | 57.11.1.69 (*) | ০৫ জুন ২০১৭ ১০:৪৬60440
  • দারুণ।
    'গ্যাসের জন্যই সবকিছু' এই ধারণার ওপরেও একটু লিখুন প্লিজ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন