এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • ভাতের থালায় লুকিয়ে আছে সাদা শয়তান

    Gautam Mistri লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৮ মে ২০১৬ | ২১৪২৪ বার পঠিত
  • ইংরেজী ভাষায় একটা প্রবচন আছে – “The whiter the bread, the sooner you’re dead”, অর্থাৎ রুটি (প্রকারান্তরে ভাত) যত সাদা হবে আপনি তত তাড়াতাড়ি মারা যাবেন। ভাত সাদা হবে নাতো কি লাল হবে? ভ্রূ কুচকে গেলেও প্রস্তাবটা তেমনই। কিছু কিছু দেশে লাল ভাতের কদর সাদা ভাতের চেয়ে বেশী। চীনদেশে ও থাইল্যান্ডে লালভাতের চাহিদা আছে। শ্রীলঙ্কায় পাঁচতাড়া হোটেলেও ভাত চাইলে লালভাতই পাওয়া যাবে। অন্যান্য তৃণভোজী প্রানীরা ঘাসপাতা বেছে খেলেও শস্যদানা এযাবৎ আস্তই খেয়ে এসেছে, এখনও তাই খায়। বেশী বুদ্ধিমান প্রানী হিসেবে মানুষ প্রথম কি করেছিলো জানা নেই। কালের বিবর্তনে মানুষ ক্রমশঃ ঘাস জাতীয় গাছের বীজ অর্থাৎ ধান ও গমের খোসা ছাড়িয়ে খাবারের স্বাদ পেয়ে গেল। এতে যদিও খাবার চিবানো আর হজম করা সহজ হল আর শস্যবীজের খোসার মধ্যে থাকা তেল জাতীয় পদার্থের বর্জনের ফলে শস্যবীজের অধিক সময়ের জন্য সংরক্ষনের সুবিধা হয়ে গেল। তেল জাতীয় পদার্থ মিশ্রিত শস্যদানার গুঁড়ো হাওয়ার সংস্পর্শে এলে বেশীদিন অবিকৃত থাকে না। একবিংশ শতাব্দীর উন্নত প্রযুক্তির অধিকারী মানুষের খাবারের টেবিলে ৫০ থেকে ৮০ শতাংশই শস্যবীজের দখলে। প্রাতরাশের রুটি, পাউরুটি, কেক, বিস্কুট, স্যান্ডউইচ বা গ্রামবাংলার পান্তা; মধ্যাহ্নভোজের ভাত বা রুটি, বিকালের জলখাবারের মুড়ি, বাদাম, চপ, কাটলেট, পিৎজা, পাস্তা আর রাতের খাবারের রুটি বা ভাত — এই গুলোই খাবারের প্রধান অংশ। সঙ্গের পদগুলো বৈচিত্র্যময় হলেও পরিমাণের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রাধান্য পায় না।ভাত বা রুটি আমাদের প্রধান খাবার; যদিও পৃথিবীর কোন কোন জনগোষ্ঠীর খাবারের থালায় মাঝেমধ্যে প্রধান খাদ্য হিসেবে আলুর দেখা মেলে। তা সে চালই হোক বা গমই হোক, ঘাস জাতীয় শস্যদানার অবিকৃত গঠন একই রকম।

    বর্তমানে প্রচলিত ধান থেকে চাল বানানোর মেশিনে ধানের বাইরের খোসা (ব্রান) আর মধ্যবর্তী অংকুর বা বীজযুক্ত আবরণ (জার্ম) ছাড়িয়ে ভেতরের সাদা (এন্ডোস্পার্ম) অংশটি ব্যবহারের জন্য আলাদা করা হয়। চাল ও আটার সওদাগরেরা প্রায় ২৫ ধরণের রাসায়নিকের সন্ধান জানেন যার দ্বারা এরপরে একে আরও চকচকে, লোভনীয় ও সুস্বাদু বানানো হয়। ধান গাছের নিজের বংশবৃদ্ধির জৈবিক প্রয়োজনের অংকুরটি হল মাঝের “জার্ম” অংশটি। তাকে রক্ষা করার জন্য ও অঙ্কুরোদগমের সময় প্রয়োজনীয় ভিটামিন যোগায় বাইরের খোসাটি। ভেতরের সাদা যে অংশটি আমরা চাল হিসাবে বেছে নিই সেটা মামুলি ভিটামিন ও অন্যান্য পুষ্টিগুণ বর্জিত জটিল শর্করা। চালের তুষে বাইরের খোসা আর মাঝের প্রাক- অঙ্কুর (জার্ম) থাকে। ভবিষ্যতের শিশু উদ্ভিদটির বীজের (মূলতঃ প্রোটিন) পুষ্টির প্রয়োজনীয় সংকেতওয়ালা জিন এই মধ্যেকার আবরণে থাকে।বাইরের খোসায় থাকে প্রতিরক্ষার বর্ম হিসাবে ফাইবার, ভিটামিন আর প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ। মধ্যেকার এন্ডোস্পার্ম অংশ, যেটাকে আলাদা করে পরিশোধিত চাল অথবা সাদা আটা আর ময়দা খাবার জন্য ব্যবহার করা হয় সেটা নিছক শর্করা। বীজ থেকে জন্মানোর পরে সদ্য অঙ্কুরিত উদ্ভিদটির পাতা সৃষ্টির আগে পর্যন্ত (অর্থাৎ যখন নবঅঙ্কুরিত উদ্ভিদটি সালোকসংশ্লেষের বা photosysthesis মাধ্যমে খাদ্য প্রস্তুতের জন্য অপরিণত) উদ্ভিদের শর্করার প্রয়োজন মেটায় ভেতরের এন্ডোস্পার্ম অংশটি।

    শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট অপেক্ষাকৃত সস্তা আর আসক্তি উদ্রেককারী খাবার। তাই সহজে আমাদের খাবারে বড় অংশের অংশীদার হয়ে পড়ে। যত চকচকে সুদৃশ্য লম্বাদানার পালিশ করা পরিশোধিত চালের ভাত হবে, পেট ভরানোর জন্য তত বেশী পরিমানের ভাতের প্রয়োজন হবে আর তাড়াতাড়ি হজম হয়ে আবার খিদে পাবে। শর্করা জাতীয় খাবারে আসক্তি আমাদের অগোচরে ঘটে যায়। মিষ্টির দোকানের প্রতি আকর্ষন একরকমের প্রাদুর্ভাবের মত আমাদের আগ্রাস করেছে যদিও এটা আমাদের সহজাত প্রবৃত্তি নয়। ঘটনাচক্রে শর্করা জাতীয় খাবারের প্রতি এই আসক্তি সচেতন পশ্চিমী দুনিয়ার প্রতিপত্তিবান নাগরিকদের চেয়ে আমাদের মত গরিব দেশগুলোর (ধনী দরিদ্র সবার) মধ্যে বেশী পরিমানে দেখা দেয়। গত শতাব্দীর আটের দশকের জনপ্রিয় হলিউডের চলচিত্র “প্রেটি উওম্যান”-এর একটা দৃশ্যের কথা প্রাসঙ্গিক। বিলাসবহুল হোটেলের পেন্টহাউসের প্রাতরাশের টেবিলে ধনী নায়ক গরীব নায়িকার সামনে সযত্নে চয়ন করে রাখা ফল, বেরি আর সসেজ-স্যালামি পুর্ণ দুটো থালা পেশ করলেন। প্রিয় নায়কের ভালোবাসা মেশানো সুষম খাবারের প্রাতরাশের থালা ঠেলে ফেলে,নায়িকা দূরে রাখা ঝুড়ি থেকে ময়দা-মাখন-মিষ্টির সংমিশ্রণে তৈরী মিষ্টি পাউরুটি তুলে নিলেন।

    আমাদের মত গরিব গুর্মোর দেশে “ভিক্ষার চাল কাড়া না আকাড়া” এই ধরণের তর্কের অবকাশ আছে। সস্তার খাবার হিসাবে শর্করা আমাদের প্রয়োজন, মুস্কিল হয় এতে আসক্তি জন্মে গেলে। শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়ার জন্য খাদ্যে অন্যান্য খাদ্যাংশের মত নির্দিষ্ট পরিমাণে শর্করাও প্রয়োজন। খিদে পেলে খাবারের বন্দোবস্ত তো করতেই হয়। মনে রাখতে হবে, আগের কিস্তির খাবার কেবল পেট (পাকস্থলি) থেকে জায়গা খালি করে রক্তে মিশেছে। ফলেই খিদে পেয়েছে। আগেকার খাবারের যে অংশটি তখনও খরচ করা যায়নি, কেবল রক্তে ভেসে বেড়াচ্ছে, সেটা যাবে কোথায়? খাবারে শর্করার আধিক্যে প্রথমে অব্যবহৃত শর্করা সীমিত পরিমাণে যকৃতে (লিভার) গ্লাইকোজেন হিসাবে জমা হয়। যকৃতের ধারণ ক্ষমতা পূর্ণ হয়ে গেলে, অব্যবহৃত শর্করা চর্বি হিসাবে শরীরের অপ্রিয় জায়গা গুলোতে জমা হতে থাকে। তাই পেট ভরাতে হবে এমন খাবার দিয়ে, যেটা পেটে অনেকক্ষণ থাকবে, দেরীতে হজম হবে ও দেরীতে খিদে পাবে, ইতিমধ্যে চর্বি হিসাবে জমা হবার জন্য দাঁড়ানো গ্লুকোজের লাইন লম্বা করবে না।

    পুনরাবৃত্তির দোষ এড়ানোর জন্য শর্করার গ্লুকোজে পরিণত হবার হার (গ্লাইসেমিক ইনডেক্স) আর গ্লুকোজে পরিণত হবার পরিমাণ (গ্লাইসেমিক লোড)-এর বিস্তারিত আলোচনা এড়ালাম। শ্বেতশুভ্র পঞ্চবিষের প্রথম পর্বে (চিনি যখন বিষ) এর আলোচনা পাওয়া যাবে। আমাদের খাবারের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ শর্করা জাতীয় খাবার থেকে বেছে নিতে হবে, আর সেই শর্করা হবে তন্তু (ফাইবার), ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ জটিল শর্করা। আস্ত শস্যদানা সেই প্রয়োজন ভালোভাবেই মেটায়।যে কারণে চিনি দুষ্ট, সেই কারণে সাদা, চকচকে, সরু, লম্বা সুগন্ধিত পরিশোধিত চালও সমমাত্রায় ক্ষতিকারক। সোজা কথায় বলতে, মূলতঃ দুটি কারণে মেশিনে ছাটা চকচকে সাদা চালের ভাত, ময়দা আর বাজারে উপলব্ধ সব রকমের বেকিং করা খাবার (পাউরুটি, কেক, কেক, বিস্কুট, কুকিজ, প্যাটিস, সিঙ্গারা, নিমকি ইত্যাদি) বর্জনীয়। প্রথমতঃ এসব খাদ্যের মূল উপাদান শস্যদানার বাইরের আবরণের ফাইবার (তন্তু) ও ঠিক তার নীচের অংশের (বীজ বা র্জাম) ভিটামিন ফেলে দেওয়া হয়েছে, পড়ে রয়েছে কেবল শর্করা (empty calorie)। দ্বিতীয়তঃ, খাবারে যত পরিশোধিত শর্করা থাকবে সেটা তত তাড়াতাড়ি হজম হবে অর্থাৎ গ্লুকোজে পরিণত হবে, রক্তে চিনির মাত্রা তত তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পাবে (উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের জন্য) তন্তুবিহীন হবার জন্য অধিক পরিমাণে শরীরে গ্লুকোজ জমতে থাকবে (উচ্চ গ্লাইসেমিক লোডের জন্য)। অব্যবহৃত গ্লুকোজ চর্বিতে পরিণত হতে থাকে, পরে দীর্ঘ সময়ের অভুক্ত থাকাকালীন সময়ে শক্তি যোগানোর জন্য। কিন্তু সেই অভুক্ত অবস্থার অবকাশ আর ইহ জীবনে আর হয়ে ওঠে না।

    এক বা দুই পুরুষ আগেও খাবারের থালায় ঢেঁকিছাঁটা চাল থাকতো, প্রাতরাশে চিড়ে, মুড়ি, থাকতো। বরিশালের বালাম চালের কথা শুনেছেন? লালচে ঢেঁকিছাঁটা বালাম চালের খ্যাতি আছে। ঘরোয়া এবং নিকট প্রতিবেশী দেশের সেই খাদ্যসংস্কৃতি অবহেলা করে দুর্ভাগ্যক্রমে আমরা পশ্চিমী খাবারের বাছাই করা ক্ষতিকারক খাবারগুলো গ্রহণ করেছি। স্বাস্থ্যহানিকর বিস্কুট, পাউরুটি ও অজস্র বেকিং করা খাবার, চটজলদি খাবার, মেশিনে ছাঁটা সুদর্শন সুঘ্রাণযুক্ত চালের ভাত আমাদের খাবারের মূখ্য অংশ। ইদানিং কালে যে উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগের বাড়বাড়ন্তের কথা শোনা যাচ্ছে তার প্রধাণ কারন বিকৃত খাদ্যাভ্যাস। আঠারোশো খ্রিস্টাব্দে বিদেশে যন্ত্রচালিত ধান ও গম ভাঙা কলের আবিষ্কার হয়েছিলো। বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে সেই প্রযুক্তি আমাদের গ্রাস করে আমাদের খাদ্যাভ্যাস পালটে দিয়ে। বংশ পরম্পরায় আমাদের রোগ সৃষ্টিকারী জিনের পরিবর্তন করে আমাদেরকে দুনিয়ার সবচেয়ে হৃদরোগের ও ডায়াবেটিসের মত মারণ রোগের উপযোগী করে তুলেছে। আরও কারণ আছে, তবে খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা মূখ্য। আমরা পেটে যা ঢোকাচ্ছি, তাই দিয়েই তৈরী হচ্ছে আমাদের পার্থিব এই শরীর। কখনো কখনো পরিশোধিত শস্যদানা বা তার থেকে প্রস্তুত খাদ্যবস্তুতে অতিরিক্ত ভিটামিনের অন্তর্ভুক্তির (enriched, fortified) কথা বলা হয়ে থাকে। সেটা পরিমাণে প্রাকৃতিক পরিমাণের চেয়ে কম ও মানের দিক দিয়ে সেগুলো অত্যন্ত নিম্নমানের।এখন বাজার ব্রাউন পাউরুটিতে ছেয়ে গেছে, তারমধ্যে অধিকাংশই কেবল রঙ করা সাদা পাউরুটি মাত্র।

    তাহলে উপায় কি?
    গম জাতীয় শস্যদানা থেকে প্রস্তুত আটার ক্ষেত্রে পূর্ণদানা থেকে প্রস্তুত খাবার, রুটি ইত্যাদি ব্যবহারে অসুবিধা নেই। কেবল বাদামি রঙ দেখে পূর্ণদানার পাউরুটি চেনা যাবে না, প্যাকেটের ওপরে “whole grain” লেখা আছে কিনা দেখে নিতে হবে। কৃত্রিম উপায়ে পালিশ করা নয়, মোটা দানা লালচে চালের ভাতই শ্রেয়। পেট ভরানোর জন্য এই চালের ভাত পরিমাণে কম লাগে বলে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে। সুস্বাদু, সুদর্শন আর সুগন্ধিত নয় এই সব কারন ছাড়াও পূর্ণদানার শস্য থেকে তৈরী খাবার বেশী চিবোতে হয় বলেও অনেকের এটা অপছন্দ। মনে রাখতে হবে, এটা এগুলোর গুণ হিসাবে দেখা উচিত। বেশী চিবোনোর জন্য খেতে সময় বেশী লাগলে আমাদের ভক্ষণ প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রক মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস সক্ষমভাবে কাজ করতে পারে। ওজন বশে রাখায় এটা বেশ কাজে আসে। তন্তুসমৃদ্ধ আস্তদানার গমের আটা ও মোটা লালচে চালের ভাত অনেকক্ষণ পাকস্থলীতে থেকে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় বহুক্ষন ধরে শক্তি যোগাতে থাকে, কৃত্রিমভাবে তাড়াতাড়ি খিদে পায় না। সঙ্গে অঙ্কুরিত ছোলা এবং ডাল (সবুজ খোসাওয়ালা মুগ, বিনস) জাতীয় খাবার থাকলে ভালো হয়। পরিভাষায় একে লেগুমস (legums) বলা হয়ে থাকে। এতে যথেষ্ট তন্তু ও প্রোটিন থাকে। পূর্ণদানার শস্যবীজকে আমরা ভালো শর্করা বলব। ভালো শর্করায় অতিরিক্ত গুণ হিসাবে পাওয়া যাবে রোগপ্রতিরোধকারী এন্টিঅক্সিডেন্টস, “ই” ও “বি” শ্রেণীর ভিটামিন ও স্বাস্থ্যকর বহুশৃঙ্খলের অসম্পৃক্ত স্নেহ জাতীয় খাদ্যাংশ (polyunsaturated fatty acid)।

    পরিশোধিত শস্যদানা থেকে প্রস্তুত প্রক্রিয়াকৃত খাবারে (যেমন পাউরুটি, বিস্কুট, কেক, কুকিজ, চানাচুর, পাস্তা, নূডলস, পিৎজা ইত্যাদি) তন্তু ও ভিটামিনবিহীন শর্করা থাকে সেটা আমাদের শরীরে চিনির মত কাজ করে। এই ধরনের চাল বা আটা / ময়দা থেকে প্রস্তুত করা খাবার রক্তে সুগারের ও ট্রাইগ্লিসারাইডের (এক ধরনের রক্তে প্রবাহমান স্নেহ জাতীয় পদার্থ) মাত্রা বাড়িয়ে দেয় ও পেটে চর্বি জমতে থাকে। এর সাথে সাথে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কোষ্ঠকাঠিন্য, বৃহদান্ত্রের ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়ায় আর ওজন বেড়ে যাবার জন্য হাঁটু ও অন্যান্য অস্থিসন্ধিতে প্রদাহ বা অতিমাত্রায় প্রকট ধরণের নিরাময়ের অযোগ্য বাতের রোগ (osteo-arthritis) সৃষ্টি করে। বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ উইলিয়াম ডেভিসের মতে পরিশোধিত শস্যদানা একটি নিখুঁত মধুমাখা বিষ, যেটা নেশা ধরায় আর তিল তিল করে নিশ্চিতভাবে হৃদরোগ আর ডায়াবেটিসের মত অনিরাময়যোগ্য রোগের দিকে ঠেলে দেয়। সাদা পাউরুটির দুটি স্লাইস ছ’চামচ চিনি আর একটা চকলেটের বারের চেয়ে রক্তে সুগারের মাত্রা বেশী পরিমাণে বাড়ানোর ক্ষমতা ধরে।

    আমাদের প্রপিতামহগণ হলদে সোনালি গমের আটা আর লাল মোটাদানার ভাতে ক্ষুন্নিবৃত্তি করে স্বাস্থ্যখাতে নিয়ন্ত্রিত খাতে বেশ বেঁচে বর্তে ছিলেন। বিগত পঞ্চাশ বছরে জিনের ওপর খোদকারী করে উচ্চফলনশীল খর্বাকৃতি শস্যের বিপ্লবের মাধ্যমে স্বল্পসময়ে অনেক বেশী করে শস্যদানা উৎপাদন করে শস্যভান্ডার গড়ে তুলেছি। ফলে অদূর ভবিষ্যতে দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনা এড়ানো গেছে। অধিক ফলনশীল শষ্যের স্বাস্থ্যের উপর নিরাপত্তার নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা করা হয়নি। নতুন ধরণের এই গমে “পরিবর্তিত ধরণের গ্লায়াডিন (gliadin)” নামে একধরনের প্রোটিন থাকে যেটা গম জাতীয় খাবারের গ্লুটেন (gluten)-এর সমগোত্রীয়”। গ্লুটেন এন্টেরোপ্যাথি নামে একধরনের আন্ত্রিক রোগ ছাড়াও গ্লায়াডিন আমাদের মস্তিষ্কে আফিং (morphine) জাতীয় রাসায়নিকে রূপান্তরিত হয়ে “ভালো লাগা” (feel good effect) ধরনের নেশা ধরায় ও খিদে বাড়ায়। দেখা গেছে, পরিশোধিত সাদা আটা ও ময়দার খাবার দিয়ে পেট ভরাতে হলে দৈনিক প্রায় ৪০০ কিলোক্যালোরি বেশী খাওয়া হয়ে যায়।২০০৪ সালের এক গবেষণায় (Ludwig 2004, Lancet), লাল আটার চেয়ে সাদা আটায় ইঁদুরদের পেটে ৭১ শতাংশ বেশী চর্বি জমে যায়।

    দীর্ঘমেয়াদী ভাবে সাদা শস্যদানা খাওয়ার জন্য খাবার অব্যবহিত পরে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা উচ্চমাত্রায় পৌঁছে যায়।এমতাবস্থায় রক্তের বিশেষ কিছু প্রোটিনের সাথে শর্করার বিক্রিয়ায় (glycation) “এডভান্সড গ্লাইকেসন প্রোডাক্টস (AGP)” তৈরী হয়ে যায়। এডভান্সড গ্লাইকেসন প্রোডাক্টস রক্তনালীর প্রদাহের (inflammation) এক অন্যতম কারণ। অধুনা প্রকট হয়ে আত্মপ্রকাশ করা বিভিন্ন হৃদরোগ ও সেরিব্রাল স্ট্রোকের কারণ হিসাবে পরিশোধিত শস্যদানা একটা প্রধান নিয়ন্ত্রক। এই ধরনের শ্বেতসার (শর্করা, কার্বোহাইড্রেট) খাবার ফলে উদ্ভুত উচ্চ মাত্রার রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রন করার জন্য অধিক মাত্রায় ইনসুলিনের ডাক পড়ে। দীর্ঘসময় অতিমাত্রায় ইনসুলিনের প্রভাবে শরীরের কোষসমূহে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা কমতে থাকে (insulin resistance)। এর অবধারিত ফল হিসাবে পেটে এক বিশেষ ধরনের ক্ষতিকারক সক্রিয় চর্বি জমতে শুরু করে। ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ হল এর অন্তিম পরিণতি।

    আমাদের খাবারের মূখ্যভাগ হিসাবে অপরিশোধিত শস্যদানার ফাইবার বা তন্তু রক্তে চিনির মাত্রা আস্তে আস্তে বাড়ানোর সুফল ছাড়াও আরও উপকার করে। মলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করে। ঝাড়ুদারের ভূমিকা পালন করার মত পৌষ্টিক তন্ত্রের রোগজীবানু ও অন্যান্য ময়লা সাফ করে। বৃহদান্ত্রের ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমায়। অন্ত্র থেকে রক্তে কোলেষ্টেরলের মিশ্রণ কমায়। অন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগের প্রকোপ হ্রাস করে। শস্যদানা সমৃদ্ধ খাবার রক্তে অম্লতা বাড়িয়ে দেয়, যেটা নিয়ন্ত্রণের জন্য হাড়ের থেকে ক্যালসিয়ামের ডাক পড়ে। হাড়ের ক্যালসিয়াম কমে গেলে হাড় ভেঙ্গে যাবার প্রবনতা বেড়ে যায়।

    খাবারের শস্যদানার নির্বাচনের সময় তার সঙ্গে অংকুরিত ডাল ও ছোলা জাতীয় খাবার (স্প্রাউট, লেগুম) অন্তর্ভুক্ত করলে বিশেষ লাভ হবে। এতে প্রয়োজনীয় ফাইবারের সাথে সাথে ভিটামিন ও বেশ খানিকটা প্রোটিনও পাওয়া যাবে। প্রাকৃতিক ভিটামিন কৃত্রিম রাসায়নিক উপায়ে প্রস্তুত ভিটামিনের চেয়ে বেশী কাজে আসে। অংকুরিত শস্যদানার শর্করা খাবারের থালায়ই মলটোজে পরিণত হয়ে হজমের প্রথম ধাপ পেরিয়ে থাকে। বদ হজমের সম্ভাবনা নির্মূল করে। খাবারে শস্যদানার সাথে কাঁচা বাদাম জাতীয় খাবার মিশিয়ে খাবার প্রস্তুত করলে বিশেষ উপকার হয়। এতে রক্তে চিনির মাত্রা কমে ও উপকারী অসম্পৃক্ত ফ্যাট পাওয়া যায়, যেটা রক্তের ক্ষতিকারক লঘু ঘনত্বের কোলেস্টেরল কমায়।

    খাবারে শস্যদানা মুখ্য অংশ অধিকার করে থাকলেও এর অপরিহার্যতা সব বৈজ্ঞানিকগন স্বীকার করেন না। কৃষি-প্রযুক্তি উদ্ভাবনের আগে আদিম মানুষ শস্যদানা ছাড়াই জীবিকা নির্বাহ করত। শস্যদানার এই বিকৃত রূপে অভ্যস্ত হবার পিছনে ব্যবসায়িক ষড়যন্ত্র আছে। পরিশোধিত শস্যদানায় মধ্যেকার জার্মের অংশ না থাকার জন্য গুদামে আর খাবারের দোকানের আলমারিতে বহুদিন পর্যন্ত শস্যদানা সংরক্ষন করা যায়। আসলে আমরা শস্যদানা ছাড়াই বেশ সুস্থ থাকতে পারি। সেটা বড় বিপ্লব। যতক্ষন না সেটা সম্ভব হচ্ছে, শস্যদানার পরিমাণ কমানো ও তার গুনমান পরিবর্তন করা জরুরি। রান্নাঘরে এই বিপ্লব করতে পারলে আমাদের শরীর আমাদের প্রচেষ্টা কে অনেক ধন্যবাদ দেবে। “আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে”-প্রবচন টা ভুলে ভরা। কোন মা যেন এটা বিশ্বাস না করে। ইস, আমার স্কুল জীবনে আমাকে যদি এ সব কথা বিশ্বাস জাগানোর মত করে কেউ বলতো!

    একনজরে
    পূর্ণদানার শস্যবীজের উপকারিতাঃ
    ১। ত্রিশ শতাংশ সেরিব্রাল স্ট্রোকের সম্ভাবনা কম।
    ২। পঁচিশ শতাংশ ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা কম।
    ৩। ত্রিশ শতাংশ হৃদরোগের সম্ভাবনা কম।
    ৪। স্থূলতা হ্রাস।
    ৫। হাঁপানির প্রকোপ কম।
    ৬। বিভিন্ন প্রদাহজনিত (inflammatory disease) রোগের বোঝা কম।
    ৭। রক্তচাপ বশে রাখা সম্ভব।
    ৮। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে চিরতরে মুক্তি।
    ৯। বৃহদান্ত্রের ক্যান্সারের সম্ভাবনা কম।
    ১০। সুস্থসবল দাঁত ও মাড়ি।

    যে কারণে পরিশোধিত শস্যদানা স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে
    ১। তন্তু বা ফাইবার ও ভিটামিন বর্জিত
    ২। সাদা আটা ও ময়দায় ক্ষতিকারক গ্লুটেন ও গ্লায়াডিনের উপস্থিতি
    ৩। সুদৃশ্য ও সুগন্ধযুক্ত করার জন্য বিভিন্ন রাসায়নিকের ও ব্লিচিং পদার্থের ব্যবহার
    ৪। উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ও উচ্চ গ্লাইসেমিক লোডের বৈশিষ্টের জন্য খাবার সাথে সাথে দ্রুত ও উচ্চমাত্রায় রক্তে চিনির মাত্রা বৃদ্ধি। এর ফলে প্রথমের দিকে ইনসুলিনের মাত্রা বৃদ্ধি ও পড়ে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা হ্রাস।

    পরিশোধিত শস্যদানার বিকল্পঃ
    ১। পূর্ণদানার গমের আটা
    ২। বাদামি পাউরুটি, বহুরকমের শস্যদানা (multi-grain) থেকে প্রস্তুত (মাখন বা ভোজ্যতেল বিহীন) (নরম রং করা বাজার ছেয়ে যাওয়া ব্রাউন ব্রেড নয়)
    ৩। অপেক্ষাকৃত মোটাদানা ও লালচে চালের ভাত (কৃত্রিম উপায়ে পালিশ না করা)
    ৪। চিড়ে, মোটা চালের মুড়ি
    ৫। অংকুরিত ছোলা ও খোসাসহ ডাল
    ৬। ভুট্টা, বাজরা, জোয়ার, ওট

    গৌতম মিস্ত্রী, কোলকাতা, ২৮শে মে, ২৯১৬
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৮ মে ২০১৬ | ২১৪২৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • দেবব্রত | 212.142.76.55 (*) | ৩১ মে ২০১৬ ০৬:৩৩53982
  • গ্রোথ রেট কোথা থেকে আসবে ? ২০২০ সালের মধ্যে কার্বন এমিসন ৪০% এবং ২০৫০ সালের মধ্যে ৯০% (১৯৯০এর তুলনায় ) না কমালে তো ডুগডুগি বেজে যাবে । এই মাসেই প্রশান্ত মহাসাগরে সলোমন আইল্যান্ডের ৫ টি দ্বীপ সমুদ্রে ডুবে গেছে , আগামী দু মাসের মধ্যে আরও ৬ টা ডুববে । আজকেই জার্মানি তছনছ হয়ে গেছে ঝড়ে " Extreme flash flooding in Braunsbach, Baden Würtemberg, Germany, this evening!" গ্রোথ রেট বৃদ্ধি না সুইসাইড রেট ?
  • lcm | 202.31.105.187 (*) | ৩১ মে ২০১৬ ০৬:৪৮53984
  • দেবব্রত,
    দেখো, ১৯৬০-১৯৭০ এর দশকে এক হেক্টরে ২৫০% উৎপাদন বৃদ্ধি পেল। সেই রেট তো আর সবসময় সম্ভব নয়। তারপর থেকে চ্যালেঞ্জ হল উৎপাদন ঐ লেভেলে বা তার কাছাকাছি রাখা। প্রায় ৫০ বছর যে টেনেছে সেটাই তো অনেক।

    আর গ্রিন রিভোলিউশনের সাফল্য তো এসেছে আগের ৪০-৫০ বছরে (যে কথা দ্রি বলল)।

    সুইডেনের কথা ধরো --
    গত শতাব্দীর শুরুতে ৫০% লেবার ফোর্স ওদেশে ছিল এগ্রি-তে। ১৯৫০ সালে ২০%, ২০১৬ সালে ২% ... Farm holdings are intensively tilled; fertilizers are used heavily and mechanization is increasing. During 1980–90, the agricultural sector grew by an annual average of 1.5%. However, during 1990–2000, it remained essentially unchanged....
    এখন আর কোনো গ্রোথ নেই। তবে, ওদের গ্রোথের দরকার নেই, কারণ ওদের ...Production exceeds domestic consumption..., জনসংখ্যা বৃদ্ধিও নেই, এখন এক্সপোর্ট করে খাবার। তো, একর প্রতি উৎপাদন শুরুর দিকে বাড়ে, ৪০-৫০ বছর পরে আর বিশেষ বাড়ে না, এক জায়্গায় দাঁড়িয়ে যায়।

    তবে হ্যাঁ, কুফল তো অবশ্যই আছে। ওভার ইউজ্‌ড্‌ ল্যান্ডে খারাপ অবস্থা। দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ন্ত্রিত অপপ্রয়োগ-এর ফলে ইল্ড কমতে আরম্ভ করেছে অনেক জায়গায়, সয়েল ডিগ্রেডেশন ইত্যাদি। কন্ট্রোল থাকা খুব দরকার ছিল। সব থেকে খারাপ অবস্থা হল ছোট চাষীদের।
  • এলেবেলে | 11.39.37.172 (*) | ৩১ মে ২০১৬ ০৭:০৪53958
  • প্রসঙ্গ :ভারতের সবুজ বিপ্লব

    এক এক করে শুরু করি । আমি কারও নাম করছিনা, শুধু মন্তব্যগুলো কোট করছি বোঝার সুবিধার জন্য ।

    ১. ‘ষাটের দশকে গ্রিন রিভোলিউশান না হলে আমাদের দেশে লক্ষ লক্ষ লোক না খেতে পেয়ে মারা যেতো’ — মুশকিল হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম আসার পর শিক্ষকদের মাইনে বাড়ে এরকমটা ধ্রুবসত্য ধরে নিয়ে তর্ক শুরু করলে তথ্য দেওয়ার দায় থাকেনা । বরং দেশজুড়ে সবুজ বিপ্লবের ফলে খাদ্যে আমরা কতটা সয়ম্ভর হলাম তার একটা চার্ট করুন – তালিকায় থাক প্রতি পাঁচসালা হিসাব, জমির পরিমাণ, জনসংখ্যা এবং হেক্টর পিছু শস্যের উৎপাদন ( নিছক foodgrains নয়, একদম specific ধান ও গমের বৃদ্ধি ) । সাথে সারে বিপুল ভর্তুকি, কীটনাশকের খরচ আর জলের যোগানের value টাও add করে দেবেন । আর ‘১৯৭২-৮৭ সময়ে পাঞ্জাবে গমের উৎপাদন বৃদ্ধি মাত্র ২.৩২% ’ এটাকে হয় ব্যাখ্যা করুন নয়তো তথ্যটা ভুল বলুন ।আমি সবজান্তা এমনটা কখনো ভাবিনা বরং এই সুযোগে নিজের ধারণাটা শুধরে নিতে পারব । ব্যাপার হচ্ছে গমের Norin 10B এবং ধানের TN 1 জিন যদি আবিষ্কার না হত তাহলে ঠিক কী হত আমরা অনেকেই সঠিক জানিনা ।

    ২.‘ ফার্টিলাইজার কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া স্থাপিত হয় ১৯৬১ সালে। ১৯৭৮ এ আরো কটি - হিন্দুস্তান ফার্টিলাইজার, ন্যাশনাল ফার্টিলাইজার, রাষ্ট্রীয় কেমিক্যাল ফার্টিলাইজার... এইসব রাষ্ট্রায়াত্ত সংস্থাও আছে.... ভারত সরকারের একটি মিনিস্ট্রি অফ কেমিক্যাল্‌স এন্ড ফার্টিলাইজার - ডিপার্টমেন্টও আছে। তারা কি করল’ — চলতি কথায় স্রেফ বাঙি ফাটালো । সার হিসেবে পটাশ এবং ফসফেট কারা বেচত খোঁজ নিলে কেন বেচত তার উত্তর নিজেই পেয়ে যাবেন । কীটনাশক নিয়ে খোঁজ নিলেও দেখতে পাবেন তার অধিকাংশটা এখনও বহুজাতিকের কব্জায় ।

    ৩.‘পর পর দু তিন বছর খরা হলেও শষ্যের ভাঁড়ারে টান পড়ে না। এর একটা বড়ো কারন ঐ গ্রীন রেভোলিউশন’ — তাই ? তাহলে সবুজ বিপ্লব চালু হওয়ার প্রায় দশ বছর পরেও গত শতাব্দীর সাতের দশকে আমাদের শস্য আমদানি করতে হল কেন ?

    ৪. ‘ ... no one can deny the good intentions of its scientists...’ — বিজ্ঞানের যেহেতু নিজস্ব ইচ্ছাশক্তি নেই, ভালোমন্দের বিবেচনা নেই তাই সে মানুষের হাতের নির্জীব অস্ত্রমাত্র – এ কথাটা মানেন ? টেকনোলজি এবং ইনডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজির ফারাকটা দেবব্রত চমৎকার বলেছেন , স্বর্ণেন্দুও বিগ ক্যাপিটালের প্রসঙ্গ এনেছেন , আমি আমার মতটা জানালাম মাত্র ।

    ৫. ‘... organic yields are considerably lower than conventional yields...’ — Conventional yields নয়, এখনকার চালু রাসায়নিকযুক্ত ফসল । তবে কোট করার সাথে সাথে সময়কালটা উল্লেখ করা উচিৎ ছিল ( মানে কতদিন কম থাকে ) । উৎপাদনের দিক থেকে একটা দীর্ঘমেয়াদি ( organic )আরেকটা ঠিক তার উল্টো । মানে প্রথমটায় সময় একটু বেশি লাগলেও আখেরে উৎপাদন বাড়ে, পরেরটায় তা ক্রমশ কমতে থাকে । প্রথমটায় মাটির উর্বরতা বাড়ে, জলধারণ ক্ষমতা বাড়ে , মাটির অম্লত্ব কমে, বন্ধুপোকা বাড়ে । মানে সারের খরচ, কীটনাশকের খরচ, জলের খরচ কমে এবং দূষণও কমে পাল্লা দিয়ে । এবার আপনার পছন্দ আপনার নিজের ওপর ।

    ৬. ‘With the help of government subsidies, farmers can now obtain two bags of fertilizer and five kilograms of hybrid maize seed at just 25 percent of the actual price’— আনন্দ করছেন আপত্তি নেই কিন্তু ভারতবাসীকে চায়ের নেশা ধরানোর কৌশলটাও মাথায় রাখবেন আশা করি । ও হ্যাঁ, আমেরিকা তার বিস্তীর্ণ জমিতে ভুট্টা চাষের পাট তুলে দিয়ে সেখানে বায়োডিজেলের উপযোগী ফসলের চাষ শুরু করেছে । এখানকার ভুট্টা ওখানে যাবে কিনা বা অদূর ভবিষ্যতে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে কিনা সেটা খোঁজ নিলে হয়না ?

    ৭. ‘এগ্রি কমোডিটি যদি অরিজিনাল প্রোডিউসার (চাষী) সরাসরি ক্রেতাকে (আমর মতো কেউ যে চাষ করেনা) বিক্রি করতে পারে তাহলে তো খুব ভালো হয়। বা আমি যদি চাষীকে সরাসরি অর্ডার দিতে পারি। মাঝখানে অবশ্যই ডেলিভারি লেয়ার থাকবে, যেমন ফ্লিপকার্ট বা অ্যামজন ক্রেতা আর বিক্রেতার মাঝখানে স্টোরফ্রন্ট হিসেবে কাজ করছে’ — এটা সি রি য়া স লি ভাবছেন ? বাংলায় থাকেন ? তাহলে জানবেন যে পশ্চিমবঙ্গের ৬৫% মানুষ গ্রামে থাকেন , তাঁদের ৯৫% ক্ষুদ্র বা প্রান্তিক চাষি এবং তাঁদের হাতে রাজ্যের ৮৪% জমির মালিকানা । একবিঘা জমিতে ঠিক কতটা সার বা কতটা বিষ দেওয়া দরকার সে কথাটাই তাঁদের বলেনি কেউ এতদিন । সে আপনাকে তাঁর এগ্রি কমোডিটি বেচবে কিংবা আপনি তাঁকে সরাসরি অর্ডার দেবেন ? কীভাবে আর কবে যদি একটু বলেন ।

    ৮. ‘এই এগ্রি মার্কেট যদি ওপেন করে দেওয়া হয়, প্রাইভেট প্লেয়াররা পার্টিসিপেট করে মিডল লেয়ারগুলো বানায়, তাহলে এখনকার অনলাইন রিটেলের মতো সাকসেস স্টোরি হতেই পারে’ — জানি বৃথা চেষ্টা তবু সম্ভাব্য বিপদটা বোঝানোর অক্ষম প্রয়াস করি । দেখুন প্রাইভেট প্লেয়াররা মিডল লেয়ারগুলো বানিয়ে দেখল ব্রকোলি বা লাল ক্যাপসিকামের বাজারে বেশ চাহিদা, ক্রেতাও অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে আগ্রহী । Transport cost বাঁচানোর জন্য তারা নিশ্চয়ই আরামবাগ থেকে ৫ কেজি, মসলন্দপুর থেকে ৭ কেজি বা ময়নাগুড়ি থেকে ১০ কেজি কিনবেনা । অতএব তারা কাছাকাছি কোথাও বিঘার পর বিঘা ব্রকোলি চাষ করাবে চাষিদের দিয়ে । প্রথম কয়েক বছর চাষি লাভের মুখ দেখবে আর তারপর প্রাইভেট প্লেয়ারদের expertরা জমিগুলো ক্রমশ শেষ হয়ে আসছে দেখতে পাবে । তাঁদের মৃগয়াক্ষেত্র বদলাবে, চাষি সব হারিয়ে রিক্সা বা ট্রলি টানবে নাহয় আত্মহত্যা করবে । বড় হাঙরের মুখে জাস্ট মিলিয়ে যাবে অসংখ্য ছোট ফড়ে । বিকাশের চমৎকার মডেল সন্দেহ নেই !

    ৯. ‘এলেবেলে গ্রিন রিভোলিউশান নিয়ে যে কোটটা করেছেন ওখানে পুরো প্যারাগ্রাফটা দেননি’ — যেটুকু প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছিল সেটুকুই কোট করেছিলাম নাহলে পায়ের চেয়ে হাত বড় হয়ে যেত । তবে কোট না করলেও মূল বক্তব্যের কোনও ইতরবিশেষ হতনা মনে হয় ।

    পরিশেষে একটা কথা, কৃষিতে এখন শস্যপর্যায় ( crop diversification ) , বহুমুখী চাষ প্রভৃতি নিয়ে জোর চর্চা হচ্ছে আর গুরুর পাতা এখনও সবুজ বিপ্লবে আটকে । এবং ছ্যাবলামিতেও ।
  • lcm | 83.162.22.190 (*) | ৩১ মে ২০১৬ ০৭:২৯53959
  • একে একে, দেখি এলেবেলের কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায় কি না।

    ১)
    পাঞ্জাবে গম উৎপাদন
    ১৯৬১-১৯৬২ = ১,৭৬৫,০০০ টন
    ১৯৭১-১৯৭২ = ৫,৬০০,০০০ টন

    ১০ বছরে প্রায় +৩৩০% উৎপাদন বৃদ্ধি, এটা বাড়াবাড়ি রকমের অবিশ্বাস্য বৃদ্ধি। এর ফল ভালো হয় নি। পরে উৎপাদন বৃদ্ধি কমে যায়, ১৯৭২-১৯৮৭ র যে সংখ্যা তুমি দিয়েছ (২.৩২%)। এটি অনিয়ন্ত্রিত , লাগামহীন অপপ্রয়োগ। কিন্তু, ঠিকঠাক প্রয়োগ করতে পারলে, এমন হবার কথা নয়, যেমন জাপানে হয়েছিল। এখানে সরকারি কন্ট্রোল-এর দরকার ছিল।

    ২) পয়েন্টটা সেটাই। শুরু থেকেই কেন জাতীয় সংস্থা বীজ এবং সার বন্টন, একর প্রতি রাসায়নিক এর ব্যবহারের লিমিট সেট করা, জলের ব্যবহার নিয়্ন্ত্রণ... ... এইসব করল না। কেন ফ্রি হ্যান্ড দিল বহুজাতিক সংস্থাকে। অথচ, তখন '৬০-এর দশকে জাতীয়করণের জোয়ার চলছে। এটা সরকারের অবহেলা এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতা।

    ৩) দুটি কারণ - এক, পপুলেশন সার্জ। আর, দুই ঐ আগের কারণটি, অত্যাধিক অপপ্রয়োগের ফলে প্রথম একটি-দুটি দশকের পর থেকে উৎপাদনের হার কমে আসে। তবু, তবু - আজও, ভারত কিন্তু ১৯৫০ এর প্রায় তিনগুণ বেশি পপুলেশন নিয়েও, অনেক কম রপ্তানি দিয়ে কাজ চালাচ্ছে।

    বাকি...
  • dc | 132.174.127.35 (*) | ৩১ মে ২০১৬ ০৮:৩৯53960
  • এলেবেলের পোস্টটা পড়তে খুব ভাল্লাগলো, সব পয়েন্টের সাথে একমত না যদিও।

    ১। ‘ষাটের দশকে গ্রিন রিভোলিউশান না হলে আমাদের দেশে লক্ষ লক্ষ লোক না খেতে পেয়ে মারা যেতো’ এটা বোধায় আমিই লিখেছিলাম, তার কারন উইকি তে ১৯৬০-৭০ এর সময়ে ইন্ডিয়াতে কিভাবে রাইস য়িল্ড বাড়ানো আর চালের দাম কমানো হয়েছিল এই সংক্রান্ত কিছু তথ্য আছে। সেই তথ্যগুলো আগেই একটা পোস্টে দিয়েছি।

    ৭। আমি পবতে থাকিনা, আসলে আমার মন্তব্যটা পবকে ভেবে করিওনি। তবে অন্য কিছু রাজ্যে চাষীদের বেশ ভালো অ্যাওয়ারনেস আছে। শুধু চাষী না, পুরো ইন্ডিয়া জুড়ে অনেক ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ী, আর্টিসান, এথনিক ম্যানুফ্যাকচারার রীতিমতো অনলাইনে ব্যাবসা করছেন। এসেমেসে অর্ডার পাচ্ছেন, রিপ্লাই দিচ্ছেন, মাল ডেলিভারি করছেন, ওনাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অনলাইন টাকা ট্রান্সফার হয়ে যাচ্ছে। প্রত্যন্ত গ্রামে থাকেন, হয়তো বড়ো শহরে আসেননি, কিন্তু বহু দূরের শহরে এনারা মাল পাঠিয়ে দিচ্ছেন, নিজের চোখে দেখা। এনারা "ইন্টারনেট" সম্বন্ধে প্রায় কিছুই জানেন না, কিন্তু ব্যাবসার প্রয়োজন যেটুকু দরকার শিখে নিয়েছেন। এনাদের যদি ব্যাবসার আওতায় আনা যায় তাহলে ইন্ডিভিজুয়াল চাষীদের কেন আনা যাবেনা? ভারতে কমিউনিকেশান আর লজিস্টিক নেটওয়ার্ক কিন্তু আগের থেকে বেশ কিছুটা উন্নতি করেছে! (অবশ্যই আরো অনেক উন্নতি করতে হবে)

    ৮। প্রাইভেট প্লেয়াররা যদি আরো ক্যাপিটাল নিয়ে আসে বা মার্কেট প্লে করে তো আমার কোন আপত্তি নেই। তবে ভারতের এগ্রি মার্কেট বিরাট বড়ো, সবরকম সেগমেন্টের প্লেয়াররাই এখানে প্লে করতে পারবে (সেই যেমন রিটেলে এফডিআই এর সময়ে অনেকে ভেবেছিলেন যে ওয়ালমার্ট এলে নাকি পাড়ার দোকান উঠে যাবে, কিন্তু আসলে ওরকম কিছু হয়নি কারন মার্কেটটাই বিরাট বড়ো)।

    ৯। আমার আবার পুরো প্যারাটাই প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছিল, কারন বিপক্ষে আর পক্ষে দুরকম বক্তব্যই ছিল। শুধু বিপক্ষের মন্তব্য দেখলাম আর পক্ষের মন্তব্য দেখলাম না, এটা আমার কাজের মনে হয়নি।

    ১০। "গুরুর পাতা এখনও সবুজ বিপ্লবে আটকে । এবং ছ্যাবলামিতেও" এটা আমারও অবাক লাগছে। সেই ষাটের দশকের গ্রিন রিভোলিউশান, সেখানে তো আমরা আর আটকে নেই, আরো কিছুটা প্রোগ্রেস করেছি তো! টেকনোলজি তো কোন এক জায়গায় আটকে থাকে না! তাহলে গ্রিন রিভোলিউশান নিয়ে গুরুর পাতা আটকে আছে কেন?
  • dc | 132.174.127.35 (*) | ৩১ মে ২০১৬ ০৮:৪৯53961
  • আমার মনে হয় অর্গানিক ফার্মিং, জৈব সার, জিএম ক্রপ এগুলোরও প্রোস অ্যান্ড কনস নিয়ে আলোচনা করা উচিত। যেমন একক বললেন অর্গানিক ফার্মিং এর কনসেপ্টটা ভালো, কিন্তু আমরা কনসিউমাররা এখনো এর সুবিধে পাচ্ছি না। এটা কেন হচ্ছে? এগুলো নিয়ে কথা হলে ভালো হয়।
  • এই | 11.39.39.208 (*) | ০১ জুন ২০১৬ ০২:২৮53987
  • অনন্তকাল বেঁচে থাকার ইচ্ছেই বা কেন? ২০তে বিয়ে করুন, ৭৫ এ নাতির ঘরে পুতি দেখে হাসতে হাসতে ছুটি নিন।
  • এলেবেলে | 11.39.57.252 (*) | ০১ জুন ২০১৬ ০৩:৩৪53988
  • সবুজ বিপ্লব এবং ড. স্বামীনাথন :

    এবারও আমি কারও নাম করছিনা, শুধু মন্তব্যগুলো কোট করছি বোঝার সুবিধার জন্য ।

    ১. ‘এলেবেলে, ডঃ স্বামীনাথনের সবুজ বিপ্লবের কুপ্রভাব নিয়ে লেখাগুলো একটু পাওয়া যাবে’? — শুরুটা হয়েছিল এভাবে । ভাবলাম পাঁচ-পাঁচটা প্যারা নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য না করে হঠাৎ স্বামীনাথনের একটা মাত্র লাইন নিয়ে প্রশ্ন ? এড়ালাম । কিন্তু ও বাবা তারপর আবার ‘এলেবেলে, স্বামীনাথনের লেখাগুলো একটু দেবেন। উনি তো এখন জিএম নিয়ে প্রচুর বলেন দেখেছি। কিন্তু সবুজ বিপ্লবের ভুল নিয়ে কোথাও বলে থাকলে মিস করে গেছি। একটু পড়তে চাই’।আগের মোলায়েম ভাবটা গায়েব এবং প্রত্যেকটা বাক্য শেষ হয়েছে অনিবার্য দাঁড়ি বসিয়ে । বেশ প্রচ্ছন্ন একটা হুমকি প্লাস তির্যক ভঙ্গি । মানে স্বামীনাথনের নামটা হাওয়ায় ভাসিয়েছি কিনা বা গুরুর টিপিক্যাল ‘নেমড্রপিং’ কিনা তা জেনে নেওয়া । এলেবেলের মেঘে মেঘে বেলা কম হয়নি ! যাঁদের মনে হয় ‘এর কথাকে কাউণ্টার না করলে মনের সুখে আটভাট বকে যায়, কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হল করলেও বকে যায়’ তাঁরা কি ভেবে নিলেন যে স্বা-মী-না-থ-ন গোল গোল বলবেন সবুজ বিপ্লবের ভুল নিয়ে ? বেশ, চেষ্টা করি তাহলে ।

    ২. সবুজ বিপ্লব যখন জোরকদমে চলছে সেই ১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে ( ৩ -৭ ) বেনারসে অনুষ্ঠিত ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের সভাপতির ভাষণে ড. স্বামীনাথন যা বলেছিলেন তা হুবহু তুলে দিচ্ছি -‘Exploitative agriculture offers great dangers if carried out with only an immediate profit or production motive. The emerging exploitative farming community in India should become aware of this. Intensive cultivation of land without conservation of soil fertility and soil structure would lead, ultimately, to the springing up of deserts. Irrigation without arrangements for drainage would result in soils getting alkaline or saline. Indiscriminate use of pesticides, fungicides and herbicides could cause adverse changes in biological balance as well as lead to an increase in the incidence of cancer and other diseases, through the toxic residues present in the grains or other edible parts. Unscientific tapping of underground water will lead to the rapid exhaustion of this wonderful capital resource left to us through ages of natural farming. The rapid replacement of numerous locally adapted varieties with one or two high-yielding strains in large contiguous areas would result in the spread of serious diseases capable of wiping out entire crops, as happened prior to the Irish potato famine of 1854 and the Bengal rice famine in 1942. Therefore, the initiation of exploitative agriculture without a proper understanding of the various consequences of every change introduced into traditional agriculture, and without first building up a proper scientific and training base to sustain it may only lead us, in the long run, into an era of agricultural disaster rather than one of agricultural prosperity’.

    ৩. এবার এ শতাব্দীতে আসুন । ২০১০ সালে এক সাক্ষাৎকারে তাঁর মতামত - ‘The earlier Green Revolution has been criticized for excessive use of pesticides, excessive use of fertilizer, overexploitation of ground water, and so on. It had a number of negative consequences…’. ২০১২ সালে বিশাখাপত্তনমে GITAM Foundation Endowment Lecture এ তিনি বলেন - ‘Unlike in UK, and other industrialised nations, nearly two thirds of the population of India depends on agriculture for their livelihood. Therefore in India, as well as sub-saharan Africa, agriculture is not just a food producing machine but is the backbone of the livelihood security system of a vast majority of population.’ ওঁর অনেক বইয়ে বা আন্তর্জাতিক মানের পত্রিকাতেও এ ব্যাপারে লেখা খুঁজলেই পাওয়া যেতে পারে । খুঁজুন । আবারও ‘মিস’ করলে এলেবেলের দায় নেই । ও, যাঁরা বলবেন এ কী প্লেট ভর্তি কাজু, ডালমুট, চানাচুর, লাড্ডু থাকতে শুধু একটা শিঙাড়া নিয়ে চলে গেলে কেন তাঁদেরকে এটাই বলার এলেবেলে শিঙাড়া পেলে আর কিচ্ছুটি চায়না!

    ৪. খেয়াল করলে এটাও দেখবেন যে ড. স্বামীনাথন এখন বলেন
    i) use of appropriate crop varieties, শুধু চাল-গম নয় ।
    ii) integrated nutrient supply, শুধু রাসায়নিক সার নয় ।
    iii) integrated pest management, শুধু কীটনাশক নয় ।
    iv) scientific water management, শুধু ভূগর্ভ থেকে ঢালাও জল তোলা নয় ।

    ৫. স্বামীনাথন না হয় হল কিন্তু ওদিকে যে ‘গম ১৯৫০:৬৬৩ কেজি/হেক্টর ১৯৯০: ২২৭৪ কেজি/হেক্টর আর চাল ১৯৫০: ৬৬৮ কেজি / হেক্টর ১৯৯০: ১৭৫১ কেজি / হেক্টর এটা অবশ্য গোটা দেশের, উইকি তথ্য’ এর বেশি কিছু আসছেনা সেটা একটু দেখুন । সবাই গুগলানো বন্ধ করে দিল নাকি ? পাঁচসালা হিসাব, জমির পরিমাণ, জনসংখ্যা সবই তো লালমোহনবাবুর ‘উটের পাকস্থলী’ হয়ে যাচ্ছে ! বড় মুখ করে একটা চার্ট চাইলাম, এলেবেলে বলে এত হতচ্ছেদ্দা !!

    যাই হোক, ‘বহু সংখ্যক লোকের বাঁচা-মরা জড়িয়ে এমন বিষয় নিয়ে আলোচনা’ করতে গিয়ে ‘গ্যালারিতে বাদামভাজা নিয়ে বসলাম’ অ্যাটিচিউডের ‘কিম্বা মাঝে মধ্যে " গ্রিন রেভোল্যুশনের জয়" বলে big capital এর cheerleading এর ইনসেন্সেটিভিটি’দেখে একজন এই টই থেকে কেটেছেন ।আমারও যা বলার বলা হয়ে গেছে, কিছু পাওয়ার মুখেও আগুন । তাই ভাবছি আমিও কাটি । মহাজন যে পথে করেন গমন ...

    যেতে যেতে সহসা মনে পড়ল আমাজনে লিটার পিছু ২৯৯ টাকায় গঙ্গোত্রীর গঙ্গাজল বিকোচ্ছে । এ পোস্টে ওই জল ছিটিয়ে নিতে পারেন ।
  • দেবব্রত | 212.142.91.156 (*) | ০১ জুন ২০১৬ ০৬:১৬53989
  • এ বাবা একি বলেছেন স্বামীনাথন বাবু "with one or two high-yielding strains in large contiguous areas would result in the spread of serious diseases capable of wiping out entire crop Irish potato famine of 1854 and the Bengal rice famine in 1942." একজন তো ইতিমধ্যে বললেন - হে হে ১৫০ বছরের পূরানো ঘটনা থেকে নাকি শিক্ষা নিতে হবে তাও এই টেকনোলজির জয়যাত্রার যুগে ।
  • dc | 132.164.102.154 (*) | ০২ জুন ২০১৬ ০২:৫০53991
  • এলেবেলের পোস্ট থেকে বেশ কিছু জানতে পারলাম, বিশেষ করে গ্রিন রেভোলিউশান এখন আর আগের মতো কাজে আসছে না - তার মানে নতুন টেকনোলজি চাই, সেগুলো নিয়ে এক্সপেরিমেন্টও হচ্ছে।

    কিন্তু এলেবেলে ইনফর্মেশান চেরিপিকিং এর কথা বল্লেন (কাজু বাদ দিয়ে সিঙ্গাড়া ইত্যাদি), এতে হতাশ হলাম। নিটপিকিং তো একেবারেই সায়েন্টিফিক মেথড না, খুব একটা কাম্যও না। আর টেকনোলজি নিয়ে ডিবেটে যদি ডিসপ্যাশনেটলি বা কোন পক্ষ অবলম্বন না নিয়ে যদি আলোচনা না করা যায় তাহলে বেশ মুশকিল।

    জিএম ক্রপ নিয়ে স্বামীনাথন যে বলেছেন "field trials are absolutely essential to assess risks and benefits", আর এর জন্য মহারাষ্ট্র ফিল্ড ট্রায়াল শুরু করেছে, এটা একটা পজিটিভ মত বা স্টেপ। গ্রিন রিভোলিউশান, জিএম, অর্গানিক ফার্মিং সহ সব টেকনোলজিরই ভালো খারাপ দুদিকই আছে, কিন্তু সেগুলো নিয়ে নিরপেক্ষভাবে আলোচনা না করতে পারলে মুশকিল (অবশ্যই এটা আমার ব্যাক্তিগত মত)।
  • sosen | 50.128.208.34 (*) | ০২ জুন ২০১৬ ০৩:০৮53992
  • স্বামীনাথন যাহা কহেন উহাই ধ্রুব সত্য নহে।
  • dc | 132.164.102.154 (*) | ০২ জুন ২০১৬ ০৩:৪৯53993
  • একমত। সে জন্যও নিটপিকিং না করে অবজেক্টিভিটি আরো প্রয়োজন।
  • rivu | 140.203.154.17 (*) | ০২ জুন ২০১৬ ১২:৪৪53990
  • খুব ভালো আলোচনা হচ্ছে। পাঁচ নম্বর পাতা অব্দি পড়লাম। deforestation কিন্তু যত না মানুষের খাদ্য শস্য তৈরির জন্যে হয় তার চেয়ে ঢের বেশী হয় গরুদের খাওয়াতে। এমাজনের রেন ফরেস্ট সাফ করে ধান/ গম/ আলু চাষ নয়, cattle ranching হচ্ছে।

    বাকি আরো পড়ে লিখব।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন