এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • মধ্য সাম্রাজ্য : হে গর্বিত শ্রমণ

    শিবাংশু লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ | ৬৯৩ বার পঠিত
  • ঈশ্বর ও পৃথিবী নামক মননের দুই মেরুর মাঝখানে যে বিপুল নদী, বন, উপত্যকাময় মানুষের জটিল সেরিব্রাল উপনিবেশ, মধ্য সাম্রাজ্য ঠিক তার কেন্দ্রে। এই কারণেই প্রাচীনতম জীবিত সভ্যতাটি এখনও সারা পৃথিবীর মনস্কতার লক্ষ্য, কৌতূহলের উৎস। রাজনৈতিকভাবে চীন ( পুরোনো বানানটাই লিখি) একটা নেশন, কিন্তু প্রকৃত পক্ষে এটি একটি মহাদেশ। তার দক্ষিণপ্রতিবেশী ভারতবর্ষের মতো'ই। ব্যপ্তির দিক দিয়ে অধিক, জটিলতার দিক দিয়ে হয়তো একটু কম হতে পারে। তবে এতো সাধারনীকরণ করা যায়না হয়তো। কারণ চীন ইতিহাসপূর্ব কাল থেকে এক উদার গ্রহীতা। সব অস্তি, সব সভ্যতার যা সত্যফল তাকে দু'হাত ভরে গ্রহণ করেছে, কোনও রকম মানসিক পূর্বাগ্রহ না রেখে, সংকীর্ণতা বর্জন করে। আধুনিক চীনের এক ক্রান্তদর্শী বোধিনায়ক জি জিয়ানলিন বলেছিলেন, "Cultural exchange is the main drive for humankind's progress. Only by learning from each other's strong points to make up for shortcomings can people constantly progress, the ultimate target of which is to achieve a kind of Great Harmony." তিনি আরো বলেছিলেন, ".... Translations from other cultures have helped infuse new blood into our culture......."।
    ------------------------------------------
    আধুনিক চীনের আরেক মুখ্য চিন্তানায়ক হু শিহ ১৯২০ সালে বলেছিলেন, " চীন একটি ধর্মহীন দেশ এবং চৈনিক জাতি কখনও কোনও ধর্মীয় কুসংস্কারের অনুগত ছিলো না। " এই মন্তব্যটি একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ পর্যবেক্ষণ। চীনের মতো একটি প্রাচীন, জটিল, বহুমুখী, বিস্তৃত সভ্যতার ধর্মচিন্তা'র ঐতিহ্যকে এভাবে এক লাইনে ধরে ফেলার যে চেষ্টা, আপাত দৃষ্টিতে তাকে একটু হঠকারী বোধ হতে পারে, কিন্তু যেহেতু মন্তব্যটি করেছিলেন হু শিহ, তখন তা মনোযোগ আকর্ষণ করবেই।
    -----------------------------------------------------------------------------------
    এ বিষয়ে বিশদে যাবার আগে একটু জেনে নেওয়া দরকার, 'ধর্ম' নামের ধারণাটি মানুষের সভ্যতায় কীভাবে বিবর্তিত হয়ে এসেছে। 'ধর্ম' মানে মানুষী ও দৈব চেতনার মধ্যে যোগসূত্র। অর্থাৎ মানবিক ও অধ্যাত্মিক উভয় মেরু'কে জুড়ে রাখার জন্য মানুষের আবহমান প্রয়াস। সমস্ত সভ্যতাতেই এই পদ্ধতিটি প্রাথমিকভাবে শুরু হয়েছিলো মৃত পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে নিবেদিত উত্তরপুরুষদের কৃতজ্ঞতা ও প্রার্থনা হিসেবে। তার পর কালক্রমে পূর্বপুরুষদের আত্মা, ভূত, প্রেত, অতীন্দ্রিয় সত্ত্বা ইত্যাদি মিলে মিশে গিয়েছিলো বিভিন্ন প্রাকৃত শক্তির কল্পিত প্রতীক, যেমন আগুন, জল, বায়ু, পৃথ্বী'র সঙ্গে। এই পথেই কেলাসিত হয়ে ওঠে বিভিন্ন 'দেবতা'দের মানুষ প্রকল্পিত রূপচিন্তা ও মহিমার অন্তহীন ইতিবৃত্ত। তার সঙ্গেই বিকশিত হতে থাকে নানা লোকপ্রথা, প্রক্রিয়াকে আত্মস্থ করে অগণ্য লোকাচারের স্ট্রাকচার। যেটা শেষ পর্যন্ত লোকসাধারণের কাছে পূজাপদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃত হয়ে যায়। যদি আমাদের দেশে দেখি, তবে দেখবো প্রাক বৈদিক কাল থেকে যজ্ঞ, বলি, তর্পণ জাতীয় আচারই মূল পূজাপদ্ধতি হিসেবে মান্য হয়ে এসেছে। সেই ধারাই মোটামুটি একইভাবে অবিকৃত চলে এসেছে বৈদিক, পৌরাণিক, মধ্য, প্রাকআধুনিক ও আধুনিক কাল পর্যন্ত। সত্যিকথা বলতে কি পৃথিবীর সব গোষ্ঠীবদ্ধ ধর্মবিশ্বাসেই লোকাচারগুলি প্রায় একই রকম। তফাতটা হয়ে যায় স্থানিক লোকপ্রথার বৈচিত্র্যে। ডকট্রিনভিত্তিক যেসব প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম রয়েছে, তাদের জগতে আমরা দেখতে পাই ধর্মীয় দর্শন ও উপাসনাপদ্ধতির স্রোত দু'টি সমান্তরাল চলে। সংখ্যালঘু স্বল্প কিছু মানুষ মাথা ঘামায় দর্শনের ক্ষেত্রটি নিয়ে। বৃহৎ সংখ্যাগুরু জনগণ লোকাচারের অনুপালনকেই ধর্মচর্চা ভেবে আশ্বস্ত থাকে।
    ----------------------------
    আদিকাল থেকেই চীনদেশে 'অধ্যাত্ম'চর্চা'র মূল উৎসের সঙ্গে সামাজিক, রাজনৈতিক বা আত্মিক দৈনন্দিন জীবনচর্যা জড়িয়ে আছে। 'ধর্ম' মানে নিত্য যাপনধারার থেকে বিযুক্ত কোনও বৌদ্ধিক মাত্রা নয়। তেল-নুন-লকড়িময় মানুষের যে 'মামুলি' বেঁচে থাকা, ধর্ম সেখানে তার থেকে মহীয়ান কোনও চিন্তাধারা নয়। অন্য সংস্কৃতিতে 'ধর্ম' নামে বোধের যে এসোটেরিক নির্মাণকে চিহ্নিত করা হয়, চীনে তা নেই। নিকটতম যে ধারণাটি 'ধর্মীয়' প্রবণতাকে চিহ্নিত করতে পারে,তাকে বলে জং'জিয়াও। এই ধারণাটির লক্ষ্য হলো স্বর্গ'কে ( পড়ুন দৈব অস্তিত্ব'কে) মর্ত্যের কাছে নিয়ে আসা। চীনাদের বিশ্বাসে মহানতম দেবতা, শাং'ডি বা তিয়ান ( অন্য অর্থে স্বর্গ) প্রকট হ'ন অন্যান্য প্রধান দেবতাদের মধ্যে দিয়ে, যাঁরা নিজেরা স্বাধীনভাবে বিভিন্ন মাহাত্ম্য ও মানবিক সম্পর্কের প্রতিনিধিত্ব করেন। এই সব দেবতারা পূজিত হ'ন নানা পিতৃপুরুষ কেন্দ্রিক মন্দিরে। অতএব এইসব মন্দিরে পূজা নিবেদন করলেই সে বন্দনা সামগ্রিক দৈবী প্যান্থিয়নের মহানতম দেবতা'র কাছে পৌঁছে যায়। অস্যার্থে জং'জিয়াও নামক পরিভাষাটি সূচিত করে পূর্বপুরুষদের সঙ্গে উত্তরপুরুষদের সংযোগ, সংলাপ ও সমন্বয়ের ব্যাপক পরিসর। এই ব্যাখ্যায় দেবতা ও মানুষের মধ্যে কোনও বিচ্ছেদের অবকাশ নেই। পরস্পর পরিপূরক ভূমিকা তাদের একসঙ্গে বেঁধে রাখে। এর অন্য ব্যাখ্যাটি গুরু ও শিষ্যের মধ্যে সম্পর্কের মাত্রাভিত্তিক। জং' শব্দটির নানা পরিভাষার অর্থের মধ্যে আছে গুরু, প্রভু, পূর্বজ, পদ্ধতি প্রভৃতি। আর জিয়াও' শব্দটির মানে 'শিক্ষা'। অস্যার্থে, গুরু'র নেতৃত্বে, শিক্ষণে, উপদেশে চরম সত্যের স্বরূপ সন্ধান করা। গুরু'র থেকে শিষ্য এবং শিষ্যের থেকে গুরু'র মধ্যে জ্ঞানের বিনিময়'ই এই সাধনপদ্ধতির অন্তিম লক্ষ্য। এই পর্যায়ের 'ধর্মীয়' ডিসকোর্সের মধ্যে সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো সেখানে 'ঈশ্বর' নামক কোনও ধারণার স্থান নেই। এর সমান্তরাল যদি আমাদের দেশে দেখতে চাই, তবে আমরা তার শিকড় খুঁজে পাবো অনার্য কৌম সমাজের আবহমান কাল ধরে আচরণীয় আত্মসন্ধানের মধ্যে। আর্যধর্মের বর্ণাশ্রমভিত্তিক ধর্মচর্যার সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে এর অবস্থান।
    (ক্রমশঃ)
    পশ্চিম চিরকাল 'ধর্ম' বলতে বুঝেছে সেমিটিক বা আব্রাহাম প্রস্তাবিত ধর্মবিশ্বাস গুলিকে। ইহুদি, খ্রিস্টিয় এবং মোহম্মদীয় ঘরানার ফসলসমূহই স্ট্রাকচারড ধর্মীয় নির্মাণ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে এসেছে। প্রাচীবিশ্বের অধ্যাত্ম বিশ্বাসগুলিকে য়ুরোপ নিজের ছাঁচে ফেলে কখনও বুঝে উঠতে পারেনি। সেমিটিক বিশ্বাসগুলি প্রথম থেকেই অনুগামীদের গোষ্ঠীবদ্ধ করার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যক্তিস্তরে ধর্মের প্রয়োগ ভিত্তিক সম্ভাবনাটিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত সবার জন্য একই বিধান। এই রেজিমেন্টেশনের জন্য প্রয়োজন কয়েকটি নির্দিষ্ট শর্ত। তার মধ্যে প্রধান, ঈশ্বর বা এই জাতীয় কোনও ঐশী অস্তিত্বের প্রতি প্রশ্নহীন আনুগত্য। ঈশ্বরের সর্বশক্তিমান, সর্বস্রষ্টা, সর্বনিয়ন্তা ভাবমূর্তিকে নিঃসংশয় গ্রহন করা। প্রভু আমার মেষপালক। অর্থাৎ একক বা দলবদ্ধ মানুষ বস্তুত মেষগোত্রীয় অসহায়, দুর্বল, আশ্রয়প্রার্থী প্রাণী। তার অস্তিত্ব সর্বদা বিপন্ন, বিচলিত। একজন সর্বশক্তিময় পিতৃসুলভ আশ্রয়ই তার অভীষ্ট হবার যোগ্য। রক্তমাংসের শরীরী মানুষের ক্ষেত্রে এই নিরাপত্তাহীনতা, অসহায়ত্ব অবশ্যই সত্য। কিন্তু মানুষী চৈতন্য ও বোধের যে জগৎ, চিন্তাশীল মানুষ সেখানে কিন্তু 'ঈশ্বর'কে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে। জানিয়েছেও বারে বারে।
    দ্বিতীয়তঃ, একটি নির্দিষ্ট নির্দেশসমন্বিত গ্রন্থ প্রয়োজন, যার পবিত্রতা বা প্রামাণ্যতা প্রশ্নের ঊর্ধে থাকবে। কারণ, ঈশ্বর তো ধরাছোঁয়ার মধ্যে থাকা অস্তিত্ব ন'ন। মানুষের যাপনের মধ্যে তাঁর অবস্থান থাকবে বিবিধ নির্দেশাবলীর মধ্যে দিয়ে। যদিও তা বস্তুত মানুষেরই রচনা, কিন্তু তার মর্যাদা হবে স্বর্গীয় বা ঈশ্বরকথিত। এই সব অলঙ্ঘ্য আদেশ, নির্দেশ, উপদেশই একটি প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের মেরুদন্ড। এই জায়গাটি থেকেই চীন ও ভারতের ধর্মীয় অবস্থানটি পশ্চিমের থেকে আলাদা হয়ে যায়। এই দুই সভ্যতায় কিছুই প্রশ্নের ঊর্ধে নয়। যতোক্ষণ না প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, ততোক্ষণ তার মান্যতা নেই। অর্থাৎ অক্ষরস্য স্বীকৃতি নিয়ে মতানৈক্য থাকতেই পারে।শেষ কথা বলার সংস্কৃতিকে এখানে প্রশ্রয় দেওয়া হয়না।
    ------------------------------------

    অন্যান্য প্রাগৈতিহাসিক নৃগোষ্ঠীর মতো চীনদেশও 'পূজনীয়' হিসেবে বেছে নিয়েছিলো তাদের পূর্বপুরুষ'দের প্রতীকী অস্তিত্বদের। প্রকৃতিবাদী, রহস্যবাদী বা টোটেমভিত্তিক, সব ব্যবস্থাতেই বলিদান ও প্রার্থনার মাধ্যমে পূর্বপুরুষদের আত্মার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা হতো। এই প্রথাগুলির ঐতিহ্য পরবর্তীকালে বহমান থাকে চীনা লোকধর্ম তাওবাদের মধ্যে। নবপ্রস্তর যুগে চীনের হোংশান সংস্কৃতি কালক্রমে তাওবাদের 'য়ুইবাদ' নামে শাখায় বিবর্তিত হয়ে যায় । শাং রাজত্বের এই পরম্পরাটি ঝু রাজত্বকালে পুরোপুরিভাবে 'পূর্বজ উপাসনা' হিসেবে স্বীকৃত হতে দেখি। এই সময়কালে ইন্দো-য়ুরোপীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে যখন বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তিকে 'দেবতা'রূপে গ্রহণ করার উদ্যম পুরোমাত্রায় ক্রিয়াশীল, চীনদেশে তখন আরাধ্য হিসেবে পূর্বপুরুষদের মানুষী প্রতীকগুলিই দেবতার আসন পাচ্ছে।
    -------------------------------------------
    দেশের সম্রাটের পূর্বপুরুষদের বলা হতো 'ডি', তাঁদের মধ্যে যিনি প্রধান, তাঁর নাম 'শাং ডি' । তাঁর বাহন হিসেবে ড্র্যাগন নামক একটি কল্পিত জীবকে প্রথম কল্পনা করা হয়। এই শাং ডি'কে বলা যায় চীনের প্রথম 'মহাদেবতা'। 'ঝু' রাজত্বের মেয়াদ ছিলো খুব লম্বা। এই সময় যখন চীনে কৃষিব্যবস্থা উন্নত হতে শুরু করে তখন দুটি প্রাকৃতিক তত্ত্বকে দেবতার পদ দেওয়া হয়। 'তিয়ান' ( আকাশ বা স্বর্গ) আর 'দি' (পৃথিবী বা মর্ত্য)। এভাবে অন্য অনেক সভ্যতার মতো'ই চীনেও প্রাকৃত শক্তিগুলিকে পুরুষ ও নারী দেবতার প্রতীকী সম্পর্কের মধ্যে বাঁধার প্রয়াস শুরু হয়। এই যুগ্ম রসায়নের ভিত্তিতে বিশ্বতত্ত্ব সম্পর্কে কিছু দার্শনিক ধারণাও দানা বাঁধতে থাকে। এটা ঠিক কোনও অধ্যাত্ম পর্যায়ের বোধ নয়, অতিজাগতিক ভাবনা বলা যেতে পারে। 'স্বর্গ' বা তিয়ান'কে পুজো করার জন্য বহু মন্দির নির্মাণ করা হয়। এক্ষেত্রে 'স্বর্গ' মানে কোনও স্থানবিশেষ নয়। তা হলো বিগত পূর্বপুরুষদের সমাবেশ ও জ্ঞানসাম্রাজ্য। প্রথম থেকেই চীনের ঐতিহ্যে প্রাচীন ও নবীনের পরস্পর বিনিময়'কে উচ্চ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। প্রাচীন জ্ঞানের প্রতীক তিয়ান আর নবীন প্রশ্নের চিহ্ন 'দি'। এই দুয়ের যুগলবন্দি থেকেই যে ডিসকোর্স উঠে আসে সেটাই চীনা অধ্যাত্ম দর্শনের মূল। হানস কিং সাহেব চীনা অধ্যাত্মবিশ্বাস'কে জ্ঞানের ধর্ম বলেছেন। তার সঙ্গে প্রফেটিক ধর্ম, যেমন, খ্রিস্টিয়, ইহুদি বা ইসলামের কোনও মিল নেই। মিল নেই মিস্টিক ধর্ম, যেমন সনাতন , বৌদ্ধ বা জৈন মতবাদের। অবশ্য য়ুরোপীয়দের বিচারধারাটি বড্ডো সরলরৈখিক । বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাসের অন্বয় বা অনন্বয় এতোটা সরাসরি ও স্পষ্ট অবস্থান দিয়ে চিহ্নিত করা যায়না। সত্যি বলতে কি চীনদেশে 'ধর্ম' শব্দের অর্থবহনকারী কোনও পরিভাষাই তৈরি হয়নি। অনেক পরে, য়ুরোপীয় ও সমাজতন্ত্রী প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হবার সমকালে 'জং জিয়াও' ধারণাটির নবমূল্যায়ণ হয়। চীনা মার্ক্সীয় ব্যাখ্যায় 'জং জিয়াও' অর্থে মনে করা হয়, কুসংস্কার, লোকাচার আর অন্ধযুক্তির প্রাতিষ্ঠানিক চালচিত্র।
    (ক্রমশঃ)
    ---------------------------
    সংহত বিশ্বাসের রূপায়ন হিসেবে চীনে তাও ( উচ্চারণ, দাও) ঐতিহ্যই সব চেয়ে প্রাচীন। 'তাও' মানে পথ। তাও'মতে নীহারিকা'র সৃষ্টিরহস্য থেকে দৈনন্দিন জীবনের সামান্যতম ঘটনাকেও নিজস্বভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। 'তাও', শুধু যুক্তিবাদ আধারিত নয়। রহস্যবাদেরও বড়ো স্থান আছে এর মধ্যে। কিন্তু আদিম অবস্থায় এই দর্শনটি সন্নিবদ্ধ বা বিন্যস্ত ছিলোনা। তাকে সংহত করেন আদি তাওগুরু লাও জু বা লাও জি। তিনি ছিলেন পরবর্তী কালের, অর্থাৎ পঞ্চম খ্রিস্টপূর্ব শতকের মানুষ। তিনি যে উপদেশ দিয়ে গেছেন, তা মূলতঃ নিছক নৈতিক নির্দেশাবলী। তাঁর পথনির্দেশগুলি সোজাসাপটা আদিম নীতিকথার সমতুল। যেমন, যাবতীয় হিংসা শান্তিপূর্ণ উপায়ে নিবারণ করতে হবে। পার্থিব বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়া বা 'কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন' জাতীয় ভারতবর্ষীয় ম্যাক্সিমের অবিকল পুনরুক্তি। সারল্যই সম্পদ। যুক্তিবাদ জরুরি হলেও অতীন্দ্রিয়চেতনা ততোধিক জরুরি। শ্রদ্ধাবান লভতে জ্ঞানম। শুভ ও অশুভ শক্তির পারস্পরিক সম্পর্কের সূত্রই প্রকৃতির রহস্য উন্মোচন করে, ইত্যাদি। তাওবাদের দিক নির্দেশগুলি খুব সহজ। মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনের একটা সরল, গ্রাহ্য মানচিত্র তৈরি করে দেওয়াই তার উদ্দেশ্য। তাওবাদী মানুষেরা একে একটি 'ধর্ম'বিশ্বাস মনে করেন । কিন্তু বাকি পৃথিবীর অন্যান্য প্রধান প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের বহুমুখী জটিলতর টানাপড়েন বা সফিস্টিকেশন এর মধ্যে নেই।
    ------------------------------------------------
    সমাজে 'ধর্মে'র ভূমিকা কী? মানুষের সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতগুলির মধ্যে তার ব্যক্তিধর্ম বা সামূহিক বিশ্বাসের ডায়নমিকসগুলি কীভাবে কাজ করে? উল্লেখ নিষ্প্রয়োজন, সব সেমিটিক ধর্মবিশ্বাসগুলি প্রাথমিকভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্যই সংহত হয়েছিলো। খ্রিস্টিয় ধর্মে রাজা নিজেকে দৈবী আদেশের অনুগামী হিসেবে শাসন কার্য পরিচালনা করতেন। সে সময় একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে রাজনৈতিকভাবে বেঁধে রাখার জন্যই ধর্মের অনুজ্ঞাগুলি ব্যবহার করা হতো। ইসলামেও তার পুনরাবৃত্তি দেখেছি। ঈশ্বর, দেবতা বা কোনও ঐশী ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষকে ‘ভালোবেসে’ পুজো করার প্রথা অনেক পরে এসেছে। আমাদের দেশেও তার অন্যথা হয়নি। রাজতন্ত্রে ও সামন্ততন্ত্রে শাসকের ধর্মই শাসিতের ধর্ম হয়ে দাঁড়ায়। চীনদেশে প্রচলিত চিন্তাধারার নয়টি ঘরানার মধ্যে রাজ পোষকতা পায় শুধু রু'বাদ, তাওবাদ ও ফা হিয়া।
    --------------------------------------------------------------------
    সংহত তাওবাদের আগেই 'ঝু'রাজত্বে প্রচলিত হয়েছিলো 'রু'বাদ বা রু'জিয়া। অস্যার্থ জ্ঞানী ও মেধাবীজনের শিক্ষা। এটি একটি নৈতিক সামাজিক ব্যবস্থা, যার যথেষ্ট রাজনৈতিক প্রভাব ছিলো। এই মতটির জনক হলেন কনফুসিয়াস। চীনের সামগ্রিক ইতিহাসে একক ব্যক্তি হিসেবে তাঁর পর্যায়ের প্রভাবী মনন তার আগে আর কারো ছিলোনা। তিনি ছিলেন খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের মানুষ। প্রায় গৌতম বুদ্ধের সমসাময়িক। সেকালে ভারতবর্ষ ও চীন উভয়দেশেই ছোটো ছোটো রাজাদের রাজত্ব চলতো। কিন্তু সংস্কৃতি বিকাশের ক্ষেত্রে সেটা ছিলো স্বর্ণযুগ। আব্রাহামের ধর্ম তখনও কোথাও নেই। সমাজবদ্ধ মানুষকে একটা নির্দিষ্ট অনুশাসনের মধ্যে বেঁধে রাখা ছিলো সেকালে বড়ো চ্যালেঞ্জ। কনফুসিয়াস সমষ্টির জীবনযাত্রা সুগম, ন্যায়নিষ্ঠ করে রাখার জন্য বিশদ আচারসংহিতা প্রস্তাব করেন। তাঁর সময়কাল শাং ও ঝু রাজত্বের মধ্যে বিচরণ করলেও, তাঁর নীতি ও দর্শন গুরুত্ব পায় পরবর্তীকালে হান রাজত্বের সময়। মাঝখানে কিন রাজত্বে ' ফা হিয়া' নামে একটি রাজনৈতিক দর্শন বিকশিত হয়েছিলো। শাং ইয়াং নামে এক দার্শনিক প্রণীত এই ব্যবস্থাকে পশ্চিমের লোক Art of War নাম দিয়েছে। এর সঙ্গে আমাদের চাণক্যপ্রণীত রিয়্যাল পলিটিক ডিসকোর্সের অনেক মিল আছে। কিন্তু তার মধ্যে কোনও অধ্যাত্ম দর্শনের অবকাশ ছিলো না। অবশ্য এটাও সত্যি যে প্রাথমিক অবস্থায় কনফুসিয়াসের রু'বাদেও কোনও অধ্যাত্মিক মাত্রা ছিলোনা। কনফুসিয়াসের নীতিকথা ও উপদেশকে অধ্যাত্ম মাত্রা দিয়ে বিশ্লেষণ করা শুরু হয়েছিলো হান রাজত্বে। রু'বাদ হান সাম্রাজ্যের সরকারি রাজদর্শন ('ধর্ম' নয়) ছিলো। এর সমান্তরাল আমরা দেখতে পাই আমাদের দেশে প্রায় একই সময়ে পিয়দস্সি অশোকের রাজত্বে বৌদ্ধমতের বিকাশ। তাঁর সময়েই গৌতমবুদ্ধের উপদেশ ও নৈতিক দিগ্দর্শনের ভিত্তিতে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে থেরবাদ ও মহাসাংঘিক নামে দুটি ধর্মমত সৃষ্টি হয়। যাদের চলিত নাম হয়ে দাঁড়ায় হীনযান ও মহাযান। লক্ষ্য করার বিষয় ভারতবর্ষেও তার আগে নানা রকম উপাসনাপদ্ধতি বা ঐশী দর্শনের ( যেমন বেদ'উপনিষদ) প্রচলন হয়ে গিয়েছিলো, কিন্তু সংঘবদ্ধ ধর্মীয় গোষ্ঠী'র পত্তন হয়নি। অতএব, বলা যায় প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মতত্ত্বের ক্ষুরস্য ধার পথে মধ্য ও দক্ষিণ সাম্রাজ্য প্রায় একসঙ্গেই তাদের যাত্রা শুরু করেছিলো।
    (ক্রমশঃ)
    ---------------------------------
    পাশ্চাত্য মডেলে প্রাতিষ্ঠানিক 'ধর্মবিশ্বাস' পরিভাষাটির প্রয়োগ সামগ্রিকভাবে এসিয়া মহাদেশে আসে পরবর্তীকালে। তার আগে চীন বা ভারতের ধর্মীয় বা অধ্যাত্ম দর্শনের পরিকাঠামোটি ছিলো একেবারে ভিন্ন। অসংখ্য নৃ ও ভাষাগোষ্ঠী, অগণ্য প্রথা ও লোকাচারের প্লাবন, জটিল সাংস্কৃতিক বহুমুখিনতা, সব মিলিয়ে এই দুই দেশে কোনও রকম কেন্দ্রিত ধর্মব্যবস্থা, যা আব্রাহামীয় ধর্মব্যবস্থার মেরুদন্ড, একেবারে অনুপস্থিত ছিলো। সত্যি বলতে কি ভারতবর্ষে আর্যমতে অনুগত সংখ্যাগুরু বর্ণাশ্রমবাদী জনসমষ্টি, যাঁরা খ্রিস্টিয় দশম শতক থেকে 'সনাতন ধর্ম' নামে একটি কেন্দ্রিত ধর্মব্যবস্থাকে আত্মস্থ করেন, তাঁরা প্রকৃতপক্ষে সংহত হয়েছিলেন আসন্ন বিদেশী ভাবধারার ( পড়ুন তুর্কি অনুপ্রবেশ) বিরুদ্ধে সঙ্ঘবদ্ধ হতে। অবশ্য তার আগে এদেশে শাক্যমুনির ধর্ম গভীরভাবে শিকড় বিস্তার করেছিলো, কিন্তু তা ছিলো মূলতঃ এক ঈশ্বরচেতনাহীন নৈতিক যাপনসংস্কৃতি। পশ্চিমি মতে 'ধর্ম' নয়। তার আগে এ দেশের মানুষ এ জাতীয় ব্যাপক আপদের সম্মুখীন হননি তাই তাঁদের মধ্যে কোনও কেন্দ্রিত ধর্মের আশ্রয় নেবার প্রয়োজনও অনুভূত হয়নি। তাঁরা নিজেদের অসংখ্য কৌম, ব্রাহ্মণ্য বা নীতিবাদী ( যেমন বৌদ্ধ বা জৈন) অধ্যাত্ম ব্যবস্থার অংশভাগী হয়ে স্বচ্ছন্দে জীবন কাটাতেন। ভারতবর্ষে সময়ের প্রয়োজনে এ জাতীয় কেন্দ্রমুখিন ধর্ম ব্যব্স্থা প্রচলিত হলেও চীনদেশে কিন্তু স্বয়ম্ভূ কোনও কেন্দ্রিত ধর্মপদ্ধতি গড়ে ওঠেনি। সেখানে ছিলো বিভিন্ন নৈতিক অধ্যাত্মিক দর্শনের প্রচলন। তার মধ্যে প্রধান ছিলো প্রকৃতিবাদী স্থানিক নীতিবাদ, যেমন রু'বাদ ও তাওবাদ এবং বহিরাগত বৌদ্ধদর্শন ও পদ্ধতি। চীনদেশে 'ধর্মবিশ্বাস' নিয়ে আদি বা মধ্যযুগে মানুষে মানুষে কোনও বিরোধ বা হানাহানি হয়নি। আধুনিকযুগেও শুধু একবারই ব্যাপক 'ধর্মযুদ্ধ' ঘটেছিলো 'তাইপিং' বিদ্রোহের সময়। অবশ্য তা তথাকথিতভাবে খ্রিস্টিয়দের সঙ্গে অন্যদের সংঘর্ষ হলেও তার সঙ্গে পশ্চিমি ক্রুসেড বা জিহাদের কোনও মিল ছিলোনা। সম্পূর্ণ ব্যাপারটাই ছিলো নেহাৎ ব্যতিক্রম, নিয়ম নয়। 'ধর্ম'চর্চা ও শান্তিকল্যাণ, এই সহাবস্থানের কৃতিত্বে মধ্য সাম্রাজ্য অন্য সভ্যতাদের মাৎ দিয়ে দেয়।
    -----------------------------------------
    চীনদেশে মানুষের ধর্মবিশ্বাসের স্বরূপটি এসিয়ার অন্যসব দেশের থেকে আলাদা। এখানে মানুষ আদিকাল থেকেই সংশয়বাদী। 'ঈশ্বরে'র অস্তিত্বে সন্দিহান। এমন কি এদেশে প্রথম থেকেই শুদ্ধ নাস্তিকের সংখ্যাও বিপুল। মৃত্যুর পর শুধু ভস্ম থাকে, কোনও জন্মান্তর নেই, এই ধরণের বিশ্বাস এদেশে বেশ প্রভাবী। সম্ভবতঃ এই কারণেই চীনদেশে নির্বাণবাদী মহাযানী বৌদ্ধদর্শন এতো বিপুলমাত্রায় প্রসারিত হয়েছিলো। হয়তো এ জন্যই সাম্যবাদী রাজনীতি এতো দীর্ঘকাল ধরে এদেশে সফল হয়ে আসছে। পুরাকাল থেকেই চীনদেশের মানুষ কনফুসিয়াসের একটি আপ্তবাক্যে বিশ্বাস করে, " ঈশ্বর ও দানব, উভয়কেই শ্রদ্ধা করো। কিন্তু সর্বদা তাদের থেকে দূরে থেকো।" সে দেশে রাজশক্তি, জ্ঞানী ও সংস্কারকরা চিরকাল মানুষকে এই সব বস্তুবাদী শিক্ষাই দিয়ে এসেছেন। বাস্তবসম্মত, যুক্তিভিত্তিক উদারতা চীনদেশের অধ্যাত্ম বিশ্বাসের মূল স্তম্ভ। তাই কম্যুনিস্ট পার্টির প্রধান যখন বলেন ," বেড়ালের রংটি লাল না শাদা তাতে কিছু আসে যায়না, ইঁদুর ধরতে পারলেই হলো।" সারা পশ্চিমি বিশ্ব 'আদর্শবাদে'র এই অবনমনে মুহ্যমান। কিন্তু যাঁদের উদ্দেশ্যে এই উক্তি, সেই চীনা জনতা তাকে উপযুক্ত অর্থেই গ্রহণ করতে পারে ।
    ---------------------------------
    চীনের ধর্মভাবনা বিশ্বের আর সমস্ত দেশের থেকে একেবারে আলাদা। বহিরাগত দু'টি ধর্মবিশ্বাস, বৌদ্ধ ও ইসলাম, চীনে আসার পর সম্পূর্ণভাবে চীনের নিজস্ব মডেলে রূপান্তরিত হয়ে গিয়েছিলো। আবহমান কাল চীনের মানুষের বক্তব্য হলো, প্রত্যেকে নিজের ইচ্ছে মতো বিগ্রহের আশ্রয় নিতে পারে, কিন্তু সেটা যেন অপরের কষ্টের কারণ না হয়। ঐতিহ্যগত ভাবে বহু চীনা মানুষই দেবতা বা দানবের অস্তিত্ত্বে বিশ্বাস করেনা। কিন্তু সেই 'অবিশ্বাস' তাদের তাওবাদ বা বৌদ্ধমতে অনীহার কারণ হয়না। এই পর্যায়ের 'ইনক্লুসিভ' চেতনা বিশ্বের অন্যত্র বিরল। তবে অন্যমত নির্বিশেষে চীনের মানুষ নিয়তিবাদে গভীরভাবে বিশ্বাস করে। সাম্যবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থার কাছে এটি একটি গভীর চ্যালেঞ্জ।
    -----------------------------------
    যে দুটি ধর্মব্যবস্থাকে আদিকাল থেকেই চীনদেশ আশ্রয় করে আছে, তাওবাদ ও বুদ্ধবাদ, দুটিই আদর্শের দিক দিয়ে নৈতিক উপদেশ ও দিগ্দর্শন ভিত্তিক চিন্তাধারা। সামাজিক স্তর নির্বিশেষে চীনের বৃহত্তম জনসমষ্টি এই দু'টি ব্যবস্থার অঙ্গ। এই মতবাদ দুটি কোনও গোষ্ঠীবদ্ধ যুযুধান ক্ষমতাদখলের ধর্মবিশ্বাস নয়। নীতিগতভাবে তাদের মধ্যে কোনও এমন টোটেম নেই যা নিয়ে লড়ে যাওয়া যায়। একজন মানুষ একই সঙ্গে তাওবাদী ও বৌদ্ধ হতে পারেন, কোনও রকম 'বিশ্বাসে'র সঙ্গে আপোস না করেই। তাঁদের পরস্পর যুদ্ধ বাধানোর জন্য কোনও নিজস্ব 'ঈশ্বরে'র প্ররোচনা নেই। নেই কোনও প্রশ্নহীন আনুগত্যের বিধান দেওয়া কেন্দ্রীয় পুথিপত্র। বস্তুতঃ মধ্য সাম্রাজ্য চিরকাল ধরে তাদের 'ধর্ম' বিশ্বাসের মধ্যে সারা বিশ্বের নানা ধর্মমত থেকে নৈতিকতা, সহিষ্ণুতা, বাস্তববাদিতা ও সৌজন্যের আদর্শগুলি গ্রহণ করে মহিমান্বিত হয়েছে । এই জন্যই পরবর্তীকালের বহিরাগত ধর্মগুলি, ইসলাম বা খ্রিস্টিয় বিশ্বাস, অন্যান্য দেশের থেকে অনেক বেশি মসৃণভাবে চীনদেশে আত্তীকৃত হয়ে যেতে পেরেছিলো।
    এমন নয় যে সংখ্যালঘুদের প্রতি বৃহত্তর জনগোষ্ঠী সর্বদা সুবিচার করেছে। দমনপীড়নের ইতিহাস অন্য দেশের তুলনায় চীনে কিছু কম নয়। চীনের ইতিহাস, ভারতবর্ষের মতো'ই হিংস্র, রক্তাপ্লুত, নৃশংস। কিন্তু 'ধর্মে'র নামে নরহত্যা চীনে শুনতে পাওয়া যায়না। একজন তাওবাদী মানুষ শুধুমাত্র ধর্মসংক্রান্ত বিবাদে একজন বৌদ্ধ'কে কখনও হত্যা করবে না। কারণ দু'টি ধর্মের চীনা সংস্করণে এমন কোনও 'এক্সক্লুসিভ' শর্ত নেই, যেখানে একজন আরেকজনকে ম্লেচ্ছ বা কাফির হিসেবে গণ্য করবে। শ্রীলংকায় বৌদ্ধ-হিন্দু বা বার্মায় বৌদ্ধ-মুসলিম সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ত ঘটতে দেখেছি। কিন্তু চীনদেশে বৌদ্ধ, তাওবাদী, মুসলিম বা খ্রিস্টিয়, সবাই নিজস্ব ধরণে বদলে গেছে। নেতিবাদী আবেগের থেকে ইতিবাদী সহিষ্ণুতা সেখানে অধিক মর্যাদা পায়।
    -------------------------------
    (ক্রমশঃ)
    চীনা সাইকিতে সামূহিক অজ্ঞেয়বাদের শিকড় বেশ দৃঢ়মূল। মানসিকভাবে সংখ্যাগুরু চীনা একেশ্বরবাদে বিশ্বাস করেন না । যদি করেও থাকেন, তবু সেই বিশ্বাস'কে অপরের মধ্যে বলপূর্বক স্থাপন করার জন্য তাঁর বিবেক কোনও ভাবে ইচ্ছুক নয়। শক্তি প্রয়োগ করে ধর্মান্তরের দৃষ্টান্ত চীনদেশে অতি বিরল। চীনদেশে জীবনের উদ্দেশ্য বলতে মানুষ কর্মক্ষেত্রের সাফল্যকেই প্রাধান্য দেয়। মৃত্যুর পর মোক্ষ, নির্বাণ বা স্বর্গলাভের বাসনা তাদের তাড়িত করেনা। তাদের জন্য ঈশ্বর এক অনিশ্চিত অস্তিত্ত্ব, যিনি মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়লে হয়তো সান্ত্বনার উৎস হতে পারেন। তার বেশি কিছু নয়। এই মানসিকতা মানুষকে ধর্মবিশ্বাসের উপর অতি নির্ভরশীল করে তোলেনা। তা'কে ধর্মদুর্বলতার, যা অন্য অর্থে ধর্মহিংস্রতার, শিকারও করে তোলেনা।
    -------------------------------
    বিশ্বায়ন, বাণিজ্যসাফল্য ও ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতাজনিত বস্তুবাদী আতিশয্য চীনের মানুষকে আবার অন্দরমহলের দিকে টানছে। অন্ততঃ পরিসংখ্যান তো তেমনই বলছে। রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় নাস্তিকতা সেখানে স্বীকৃত ধর্মীয় ভাবনা। কিন্তু পাঁচটি ধর্মবিশ্বাস, বৌদ্ধ, তাওবাদী, ইসলাম, ক্যাথোলিক এবং প্রটেস্ট্যান্ট মত চীনদেশে সরকারিভাবে স্বীকৃত। ১৯৮২ সালের সংবিধান অনুযায়ী, "No state organ, public organization or individual may compel citizens to believe in, or not to believe in, any religion; nor may they discriminate against citizens who believe in, or do not believe in, any religion. The state protects normal religious activities. No one may use religion to engage in activities that disrupt public order, impair the health of citizens or interfere with the educational system of the state. Religious bodies and religious affairs are not subject to any foreign domination." যদিও কম্যুনিস্ট শাসন ব্যবস্থার আদর্শগত অভিমুখের তীক্ষ্ণতা চীনদেশের অন্যান্য মতবাদের মতো'ই সেখানে অপেক্ষাকৃত পরিশীলিত, কিন্তু ধর্মীয় আচার-আচরণকে সর্বদা নিরুৎসাহ করাই রাষ্ট্রের সরকারি নীতি। সংবিধানের ধারা ৩০০ অনুযায়ী যদি কোন ধর্ম আচরণ 'অবৈধ ধর্মীয় কাজ' বা ' সামাজিক স্থিতিশীলতা'কে বিনষ্ট' করতে উদ্যত হয়, তবে রাষ্ট্র তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে। চীনা কম্যুনিস্ট পার্টি সতত সতর্ক থাকে, যদি কোনও বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায় দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে কখনও চ্যালেঞ্জ করে বসে। যেমন পূর্ব য়ুরোপে, বিশেষতঃ পোল্যান্ডে, কম্যুনিস্ট ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার পিছনে পোপের প্রচার বিশেষভাবে কার্যকর হয়েছিলো। তা সত্ত্বেও চীনা কম্যুনিস্ট পার্টি জাতীয় জীবনে 'ধর্মে'র প্রভাব স্বীকার করে ও তার ইতিবাচক প্রয়োগের মাধ্যমে সমাজে সমন্বয়ভাবনাকে উৎসাহিতও করে। ২০০৮ সালের মার্চ মাসে কম্যুনিস্ট পার্টির একটি সম্মেলনে একজন প্রধান নেতা জিয়া কিনলিং ঘোষণা করেছিলেন, “We should fully follow the policy on freedom of religious belief, implement the regulations on religious affairs and conduct thorough research on important and difficult issues related to religion. We should guide religious leaders and believers to improve their lives and make full use of their positive role in promoting social harmony.”
    (ক্রমশঃ)

    -------------------------------------
    ২০০৮ সালের একটি সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, চীন দেশে ৩০-৮০ শতাংশ মানুষ দেশজ লোকধর্ম, যেমন রু'বাদ বা তাওবাদে বিশ্বাস করে। ১০-১৬ শতাংশ বৌদ্ধমতে, ২-৪ শতাংশ খ্রিস্টিয় ও ১-২ শতাংশ ইসলামে বিশ্বাসী। আবার ২০১২ সালের একটি গণনা বলছে লোকধর্মে বিশ্বাসী মানুষ ৮৭.৪ শতাংশ, বৌদ্ধমতে বিশ্বাসী ৬.২ শতাংশ, বাকি সব ধর্ম মিলিয়ে ৬.৫ শতাংশ। তবে এই পরিসংখ্যান কখনও নিখুঁত চিত্রটি ধরতে পারবে না। কারণ ২০০৫ সালের একটি পরিসংখ্যান আবার বলছে দেশের ৫১.৮ শতাংশ মানুষ কোনও ধর্মেই বিশ্বাস রাখেন না। বস্তুতঃ চীন দেশে ধর্মমতের বিভাজনটি বেশ অস্পষ্ট এবং সেটাই চীনা জনগণের শক্তির প্রধান উৎস। এ প্রসঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে যে দীর্ঘদিন ধরে চীনে লৌকিক অর্থে 'ধর্মবিরোধী' শাসন ব্যবস্থা প্রচলিত। কিন্তু মধ্য সাম্রাজ্যের শাশ্বত, 'ইনক্লুসিভ', সীমান্তবিহীন ধর্মবিশ্বাসের রাজত্বে ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় পছন্দ স্বচ্ছন্দে সহাবস্থান করে। কম্যুনিস্ট পার্টির সদস্যদের একটি বৃহৎ অংশ তাওবাদে বিশ্বাসী। বৌদ্ধ ও ক্যাথোলিকেরা অধিক স্বচ্ছল এবং প্রটেস্ট্যান্টদের মধ্যে দারিদ্র্য প্রকট। সাম্প্রতিক কালে সরকার কনফুসিয়াস কথিত 'হেকসি শিহুই' বা সমন্বিত সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখাচ্ছে। আবার একই সঙ্গে তারা আব্রাহামীয় ধর্মবিশ্বাসগুলির প্রতি সন্দিহান। তাদের মতে এই ধর্মগুলি অসহিষ্ণু ও অহংকারী। ২০১৩ সালে রাষ্ট্রপতি জি জিনপিং বলেছিলেন, ঐতিহ্যগত লোকায়ত ধর্মগুলির শিক্ষা মানুষকে নৈতিক শূন্যতা ও দুর্নীতি থেকে রক্ষা করে।
    ---------------------------------------------
    পরিশেষে আবার ফিরে আসি মনীষী জে জিয়ানলিঙের কাছে। তিনি বলেছিলেন চীনা সভ্যতার শ্রেষ্ঠ অংশগুলি অন্য সভ্যতার থেকে এসেছে, অনুবাদের মাধ্যমে। কোনও রকম মানসিক দ্বিধাদ্বন্দ্ব না রেখে চীনদেশ দশদিকের সেরা উত্তরাধিকারগুলিকে ক্রমাগত আত্মস্থ করে গেছে। নিজের মতো করে তাকে সাজিয়ে নিয়েছে প্রয়োজনের ভিত্তিতে। হান রাজত্বের সময় দক্ষিণ চীনে বৌদ্ধ প্রচারকেরা আসেন। সময়ের সঙ্গে চীনের নিজের তাওবাদী ও অন্যান্য লোকযানী বিশ্বাস বৌদ্ধ শিক্ষার সঙ্গে সমন্বিত হয়ে চীনদেশের নিজস্ব হান বৌদ্ধ ধর্মকে গড়ে তুলেছিলো। অপর ঘরানাটি তিব্বতি মহাযানী ধর্ম, হান ঘরানা থেকে ভিন্ন। তাওবাদ ও রু'বাদ ক্রমাগত বোধিচর্চার মধ্যে দিয়ে নিজেদের পরিশুদ্ধ, পরিমার্জিত করেছে। দীর্ঘ কাল ধরে এই মানসিক প্রস্তুতি থেকেই বিপুল সংখ্যক জনসমষ্টির মধ্যে যুক্তিবাদী, বস্তুবাদী কৃষিমনন সাফল্য পেয়েছে। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ঝোড়ো হাওয়ার অভিশাপ তাকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করতে পারেনি। ফলশ্রুতি হিসেবেই দেখতে পাই, চীনদেশ নিজস্ব ধরণের বাস্তববাদী যুক্তিতর্কের বীজতলায় ফসল চাষ করে এসেছে, তথাকথিত পুথিগত, আবেগপ্রবণ ব্যাখ্যাসমূহকে আমল না দিয়ে। এ জন্যই চীনদেশের আবহে সাম্যবাদী যুক্তিতর্কের বীজ বিকশিত হয়ে গেছে মসৃণভাবে। যেটা আমাদের ব্রাহ্মণ্য ব্যবস্থায় এখনও প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি।
    ----------------------------------------
    শাক্যমুনি বুদ্ধ তাঁর অনুচর শ্রমণদের বলেছিলেন শুধু মাত্র ভিক্ষান্ন থেকে ক্ষুন্নিবৃত্তি করতে। এই ভিক্ষা মানুষকে দীন করেনা। অপরপক্ষে তার মধ্যে বিনয়, করুণা ও সহানুভূতির আশীর্বাদ নিয়ে আসে। এই ভিক্ষায় যে দান করে, তার থেকে যে গ্রহণ করে , তার গরিমা অধিক প্রোজ্জ্বল । মধ্য রাজত্ব সেই গরিমাময় শ্রমণ, যে গত দু'হাজার বছর ধরে সারা বিশ্ব থেকে জ্ঞানভিক্ষা আহরণ করে নিজেকে সমৃদ্ধ করে গেছে।
    "The river of Chinese civilization has kept alternating between rising and falling, but it has never dried up, because there was always fresh water flowing into it. It has over history been joined by fresh water many times, the two largest inflows coming from India and the West, both of which owed their success to translation. It is translation that has preserved the perpetual youth of Chinese civilization……” (জি জিয়ানলিং)

    (শেষ)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ | ৬৯৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • রৌহিন | 113.42.127.64 (*) | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৫:০১57493
  • খুবই ভালো লাগলো
  • dd | 116.51.27.234 (*) | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৫:০৩57494
  • অনেকদিন আগে একটা বই পড়েছিলাম - হোয়াই চায়না ইজ চায়না? লেখকের নাম আর মনে নেই। গুগুল করেও খুঁজে পেলাম না। আর জেরাড ডায়ামন্ডের বিখ্যাত বইএর চ্যাপটার - How china became chinese - এইসব মনে পড়লো শিবাংশুর খাসা লেখাটা পড়ে।

    চীনের আরেকটা সুবিধে ছিলো একই ভাষা (প্রায়) - সারা দেশ জুড়ে। যার ফলে একেকটা আইডিয়া খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারতো সবখানে।
  • রৌহিন | 113.42.127.64 (*) | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৫:২৩57495
  • একই ভাষা ছিল কি? আমার ঠিক জানা নেই - আমি জানতাম ভাষার ব্যবধান দূর করার জন্যই লিখিত মান্দারিন ভাষা উদ্ভব হয়েছিল। অবশ্য আমি ভুল হতেই পারি
  • dd | 116.51.27.234 (*) | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৫:৪৫57496
  • এই যে, জারেড বাবু কী লিখেছেন। (Guns,germs and steel)

    "From the begining of literacy in China,it had only a single writing system............Of China's 1.2 billion people over 800 million speak Chinese.....China has been Chinese,almost from the begining of its recorded history। একটা অদ্ভুত হোমোজিনাস সমাজ।
  • শিবাংশু | 69.92.71.203 (*) | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৬:২১57490
  • এই লেখাটির একটি সংক্ষিপ্তসার 'দুকূল' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এখানে সম্পূর্ণ লেখাটি রাখা হলো।
  • Arindam | 213.99.211.81 (*) | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৮:২৮57491
  • ভালো লাগল! পরবর্তী কিস্তি(গুলি)র সাগ্রহ অপেক্ষায় রইলাম!
  • অভি | 113.24.84.135 (*) | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১১:০৮57492
  • সাগ্রহে পড়লাম। লেখককে অনেক ধন্যবাদ। পরবর্তী অংশের প্রতীক্ষায়।
  • lcm | 83.162.22.190 (*) | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৭:০০57497
  • চাইনিজ ভাষায় ৩০০০ এর বেশি অক্ষর আছে। তবে সব মনে রাখতে হয় না। রুল গুলো মনে রাখলেই হয়।
  • Atoz | 161.141.84.176 (*) | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৭:১৩57498
  • তাড়াতাড়িচ্চোটে পড়লাম, "মনে রাখতে হয় না, গুগল করলেই হয়।"
    ঃ-)
  • pi | 24.139.209.3 (*) | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:২৫57499
  • তুলে রাখলাম, সময় নিয়ে পড়ব।
  • শিবাংশু | 127.197.248.199 (*) | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৬:৪০57500
  • অরিন্দম, অভি, রৌহিন, dd, lcm, Atoz, পাইদিদি এবং যাঁরা এই দীর্ঘ লেখাটি পড়ার ক্লেশ স্বীকার করেছেন সকলকে ধন্যবাদ জানাই।
  • avi | 113.24.84.135 (*) | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৭:০২57501
  • ভীষণ ভালো লাগলো। চীন নিয়ে বুকের মধ্যে কেমন একটা অনুভূতি হল, তার যদি ২০ ভাগ গর্ব হয়, ৮০ ভাগ নিখাদ ঈর্ষা। আহা, আমাদের কেন এমন হল না?
  • Dilip Kumar Sarkar | 126.203.177.200 (*) | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:২৭57502
  • ভালো লাগলো ।অনেকদিন পর চিনের উপর এরকম গুরু গম্ভীর লেখা পড়লাম।ধন্যবাদ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন