এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  বিবিধ

  • জুম চাষ: একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা

    বিপ্লব রহমান লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ২১ এপ্রিল ২০১৯ | ১১৭০ বার পঠিত
  • [ও ভেই যেই বেক্কুনে মিলি জুম কাবা যেই/পূব ছড়া থুমত বর রিজেভ' টুগুনোত/ পুরান রাঙ্গা ভূঁইয়ানি এবার বলি উত্যে হোই চেগার/ সে জুমোনি এ বঝরত মিলিমুলি খেই।...চাকমা কবিতা...ও আমার ভাই বন্ধুরা চল চল সকলে মিলে জুম কাটতে যাই/ বড় বড় পাহাড়ের চূড়ায়/ দূরের পূর্ব ছড়ার শেষ সীমানায়/আগে জুম করা ভূমিগুলো উর্বর হয়েছে/এ বছর মিলে-মিশে সেগুলো চাষ করে খাবো।...জুম কাবা, সলিল রায়, রান্যাফুল।]

    জুম চাষ হচ্ছে পাহাড়ের ঢালে এক বিশেষ ধরণের চাষাবাদ পদ্ধতি। পাহাড়ি মানুষের ঐতিহ্যবাহি এই ‘জুম’ শব্দটি থেকে চাকমা ভাষায় ‘জুমিয়া’ (জুম চাষী) ও জুম্ম (পাহাড়ি জনজাতি) শব্দটির উৎপত্তি। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান-এই তিন জেলা নিয়ে গড়ে ওঠা পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় ৯০ শতাংশ পাহাড়িই জুম চাষী।
    এ দেশের পাহাড় ও বনাঞ্চল হচ্ছে সরকারি খাস জমি। যুগ যুগ ধরে বংশপরম্পরায় সেখানে বসবাসরত পাহাড় ও অরণ্যচারী মানুষের এ সব জমির বন্দোবস্ত কোনো সরকারের আমলেই দেওয়া হয়নি। তাই পাহাড় ও বনাঞ্চলের ওপর আদিবাসী মানুষের এখনো কার্যত জন্মেনি কোনো অধিকার।

    এক সময় নেত্রকোনা ও শেরপুর অঞ্চলের গারো পাহাড়ে মান্দি (গারো) ও হাজং এবং শ্রীপুর, কুলাউড়া ও মৌলভীবাজার সীমান্তের খাসিয়া পাহাড়ে খাসি বা খাসিয়ারাও জুম চাষ করতেন। কিন্তু প্রায় একশ বছর আগে বৃটিশ আমলে বন বিভাগ গারো পাহাড় এবং মধুপুর-গাজীপুর ভাওয়াল গড় এলাকার প্রাকৃতিক বনাঞ্চলকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল (রিজার্ভ ফরেস্ট) হিসেবে ঘোষণা করে। একই সঙ্গে তারা বন ও পরিবেশ সংরক্ষণের নামে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে জুম চাষ ও শিকার।

    এ কারণে গারো পাহাড়ে জুম চাষ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। খাসিয়া পাহাড়েও সাধারণ জুম চাষ অনেক আগেই বিলুপ্ত। তবে নানা প্রতিকূলতার ভেতরেও খাসিয়ারা পানজুম চাষ করছেন।

    এদিকে ১৯৬২ সালে বন বিভাগ রাঙামাটিতে সদর দফতর করে কৃষি প্রধান অঞ্চল পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘জুম নিয়ন্ত্রন প্রকল্প’ চালু করে। এর উদ্দেশ্য ছিলো, জুমিয়াদের জুম .চাষে নিরুৎসাহিত করে সমতলের জমিতে বনজ ও ফলজ চাষে তাদের উৎসাহিত করা। এক দশক আগেও বন বিভাগের এই প্রকল্প খাতে সরকারি অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হতো। কিন্তু বাস্তবতার কারণেই এই প্রকল্প কখনোই সফল হয়নি। এখন এই প্রকল্পখাতে সরকারি অর্থ বরাদ্দও নেই।

    দুই.

    জুম চাষের ইতিহাস কয়েক হাজার বছরের পুরনো। পার্বত্য চট্টগ্রাম, গারো ও খাসিয়া পাহাড়ের বাইরে ভারতের অরুণাচল, আসাম, মেঘালয়, মনিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও ত্রিপুরা–’সেভেন সিস্টার্স’ খ্যাত এই সাতটি রাজ্যে জুম চাষ ব্যাপকভাবে প্রচলিত। এছাড়া চীন, নেপাল, মায়ানমার, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন মঙ্গোলিয় জনগোষ্ঠির পাহাড়ি অঞ্চলে জুম চাষের প্রাচীন ঐতিহ্য রয়েছে।

    পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের নিজস্ব শাসনরীতি ও ঐতিহ্য অনুযায়ী কার্বারি (গ্রাম প্রধান) ও হেডম্যান (মৌজা প্রধান) নির্ধারণ করেন কোন পাহাড়ে কোন কোন জুমিয়া পরিবার কখন জুম চাষ করবেন। এ কারণে এ চাষাবাদ নিয়ে বিরোধ হয় না।

    পাহাড়ের এই চাষ পদ্ধতি বেশ কষ্টসাধ্য। জুম চাষে একটি পরিবারের পাহাড়ি নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর সকলেই অংশ নেন। আবার কোনো একটি বড় পাহাড়ে কয়েকটি গ্রামের জুমিয়ারা ঐক্যবদ্ধভাবে জুম চাষ করে থাকেন।

    চাষের মৌসুমে প্রথমে নির্বাচিত পাহাড়টির জঙ্গল ও আগাছা বিশেষ কৌশলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। কৌশলে আগুন ধরানো হয় বলে বনাঞ্চলে এই আগুন যেমন ছড়িয়ে পড়ে না, তেমনি টিকে থাকার স্বার্থেই পাহাড়িরা জুম চাষ করতে গিয়ে বন ও চাষ এলাকার কোনো বড় বা দামি গাছের ক্ষতি করেন না।

    বৃষ্টির পর নির্বাচিত জুমের জমিতে পুড়ে যাওয়া জঙ্গল ও আগাছার ছাই সারের কাজ করে। এর পর বিশেষ ধরণের ছোট দা’এর মাধ্যমে ছোট্ট ছোট্ট গর্ত করে একই সঙ্গে কয়েক ধরণের ফসল বোনা হয়। ধান, গম, ভূট্টা, আলু, কলা, তরমুজসহ জুমের জমিতে প্রায় সব ধরণের খাদ্য শষ্য ও শাক-সব্জি চাষ করা হয়। জুমের ফসলের বীজ সমতলের চেয়ে ভিন্ন। এসব ফসল উৎপাদনে কোনো ধরণের সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয়না। আর জুমের শষ্য, ফল-মূল ও তরি-তরকারির আকার-আকৃতি সমতলের উৎপাদিত কৃষিজ পণ্যের চেয়ে ভিন্ন; এগুলো খেতে খুবই সুস্বাদু।

    জুমের ফসল পরিচর্যার জন্য চাষাবাদের পাহাড়ে জুমিয়ারা গড়ে তোলেন অস্থায়ী মাচাং ঘর (চাকমা ভাষায়, মোনঘর)। এই মনঘরে চাষাবাদের মৌসুমে জুমিয়ারা একই সঙ্গে যেমন ফসলের দেখভাল করেন, তেমনি বুনো শুকর বা অন্য জীব-জন্তু ও পাখ-পাখালি যেনো ফসলের ক্ষতি করতে না পারে, সেদিকেও তারা লক্ষ্য রাখেন। জুমের জমি ঘিরে এ জন্য ‘কাবুক’সহ নানা ধরণের ফাঁদ পাতা হয়। তঞ্চঙ্গা জুমিয়াদের আবার এসব ফাঁদ পাতার সুখ্যাতি রয়েছে।

    জুম চাষ নিয়ে পাহাড়ি লোকগাঁথা, গান ও ছড়া গান, প্রবাদ-প্রবচনও খুব সমৃদ্ধ। মোনঘর নিয়েও চাকমাদের নানা স্মৃতিকথা জড়িয়ে আছে জীবন-যাপনে।…

    তিন.

    পাঁচ-ছয় দশক আগেও একবার কোনো পাহাড়ে জুম চাষ করার পর অন্তত ১৫-২০ বছর সেখানে আর জুম করা হতো না। সেখানে এই দীর্ঘ সময়ে প্রাকৃতিক বনাঞ্চল গড়ে ওঠার সুযোগ দেয়া হতো; রক্ষা পেতো পাহাড়ি জমির উর্বরতা।

    কিন্তু ৬০ দশকে কাপ্তাই বাঁধের কারণে বিপুল সংখ্যক পাহাড় পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সংকুচিত হয় জুমের জমি। আর ৮০ র দশক থেকে এখনো পাহাড়ে সমতল অঞ্চল থেকে অপরিকল্পিতভাবে বাঙালিদের অভিবাসন গড়ে উঠছে।

    এছাড়া পাহাড়ে ছয়টি সেনা নিবাস ও প্রায় সাড়ে চারশ অস্থায়ী সেনা ছাউনি এবং বিডিআর, ড়্যাব, পুলিশ, আনসার, ভিডিপি, বন বিভাগসহ নিরাপত্তা বাহিনীর অসংখ্য স্থায়ী এবং অস্থায়ী ছাউনির কারণেও বিপুল সংখ্যক পাহাড় ও বনাঞ্চল অধিগ্রহণ করা হয়েছে।

    এমনিভাবে দিন দিন জনসংখ্যার চাপে ও বন বিভাগের নানা নিয়ম-কানুনের ফলে সংকুচিত হচ্ছে জুমের জমি। তাই জুমিয়ারা অনেক জায়গাতেই এখন বাধ্য হয়ে মাত্র পাঁচ-ছয় বছরের ব্যবধানে একই পাহাড়ে আবারো জুম চাষ করছে। এতে প্রাকৃতিক বনাঞ্চলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কমে যাচ্ছে পাহাড়ের উর্বরতাও। তাই বিচ্ছিন্নভাবে অনেক জুমিয়া এখন চাষের জমিতে ধুপ সার বা ইউরিয়া ব্যবহার করছেন; যা আগে কখনোই দেখা যায়নি।

    বলা ভালো, জুম চাষীরা হচ্ছেন সকলেই প্রান্তিক চাষী ও সাধারণতভাবে হত দরিদ্র। তাই জুম চাষ করা ছাড়া অন্য কোনোভাবেই তাদের টিকে থাকার উপায় নেই।

    অন্যদিকে বহুবছর ধরে পাহাড়ে কল-কারখানা গড়ে না ওঠায় সৃষ্টি হয়নি বিকল্প আয়ের পথ।

    চার.

    আগেই বলা হয়েছে, বহিরাগতদের অব্যহত জনসংখ্যার চাপ, জুমের জমি সংকুচিত ও পাহাড়ের উর্বরতা নষ্ট হওয়া, বিকল্প আয়ের অভাব, চার দশক ধরে জুম নিয়ন্ত্রনের নামে বন বিভাগের মিথ্যে মামলাসহ নানা হয়রানী — এসব কারণে অর্থনৈতিকভাবে মার খেতে খেতে প্রান্তিক চাষী জুমিয়াদের জীবন এখন বড়ই বিপন্ন।

    রাঙামাটির বিশিষ্ট পরিবেশবিদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ কমিটির নেতা গৌতম দেওয়ান এ বিষয়ে এই লেখককে বলেন, জুম নিয়ে জনমনে তো বটেই, এমন কি সরকারি মহলে রয়েছে নানা ভ্রান্ত ধারণা। এরমধ্যে জুমের আগুনে পাহাড়ের বনজ ও প্রানীজ সম্পদ ধ্বংস, জুমের কারণে পাহাড়ের ভূমি ক্ষয় বৃদ্ধি, জুম একটি পরিবেশ বিরুদ্ধ অবৈজ্ঞানিক চাষ পদ্ধতি — ইত্যাদি প্রধান।

    তিনি বলেন, কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, প্রকৃতির সন্তান জুমিয়ারা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই জুমের আগুনে কখনো আগাছা বাদে কোনো বনজ বা প্রাণীজ সম্পদ নষ্ট করে না। এ ছাড়া জুম চাষে লাঙ্গল বা কোদাল ব্যবহৃত হয় না। জুমিয়ারা পাহাড়ে একটি ছোট্ট গর্ত খুঁড়ে একই গর্তে নানা রকম বীজ এক সঙ্গে বপন করেন বলে ভূমি ক্ষয় হওয়ারও প্রশ্ন আসে না।

    গৌতম দেওয়ান বলেন, বরং এখন পাহাড়ে অপরিকল্পিত নির্মাণ ও পাহাড় কাটার ফলে ভূমি য় তথা পাহাড় ধ্বসের হার অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশী। কিন্তু জনসংখ্যার চাপে জুমের জমি কমতে থাকায় অন্তত পাহাড়গুলোকে ১৫ — ২০ বছর অনাবাদী রাখা হচ্ছে না বলে প্রাকৃতিক বনের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে চাষযোগ্য সমতলভূমির সংখ্যা খুবই কম বলে পাহাড়ে জুম চাষের বিকল্প এখনো গড়ে ওঠেনি।

    পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা বলেন, ৬০ দশকে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ করে প্রথম আঘাত হানা হয় বনাঞ্চলের ওপর। এই বাঁধের কারণে প্রায় ৫৪ হাজার একর জমি পানিতে তলিয়ে যায় বলে চাষের জমিও হয়ে পড়ে সংকুচিত। বাংলাদেশ আমলে পাহাড়ে জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে।

    তিনি বলেন, এছাড়া শান্তিচুক্তির (১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়) যথাযথ বাস্তবায়ন হয়নি বলে পাহাড়ে এখনো হয়নি ব্যাপক ও বড় ধরণের অর্থনৈতিক উন্নয়ন। আড়াই দশকের অশান্ত পাহাড়ে কৃষির বিকল্প কোনো আয়ের ব্যবস্থাও গড়ে ওঠেনি। তাই ভূমিহীন দরিদ্র মানুষ জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে জুম চাষ করছে।

    সাবেক গেরিলা নেতা সন্তু লারমা বলেন, আসলে যে ভাবে পাহাড়ে দিন দিন জনসংখ্যা বাড়ছে, ভবিষ্যতে এখানে হয়তো আর জুম চাষ সম্ভব হবে না। প্রায় সাত লাখ ভূমিহীন এসব জুম চাষীদের এখনই পুনর্বাসনের জন্য সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। এ জন্য প্রাথমিকভাবে তাদের কিছু অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়ে এবং হর্টিকালচার, ফিসারিজ, কি ছোট ছোট প্রকল্প খাতে সুদমুক্ত ঋণ দিয়ে পুনর্বাসন করা জরুরি। শান্তিচুক্তি অনুযায়ী জমির বন্দোবস্তি দিতে হবে এই সব বিপন্ন জুম চাষীদের।

    বান্দরবানের পরিবেশ কর্মি জুমলিয়ান আমলাইয়ের রয়েছে জুমচাষের নিজস্ব অভিজ্ঞতা। বম জনজাতির এই নেতা বলেন, পাহাড়ি এলাকায় জুম চাষের এই বিজ্ঞান সম্মত চাষাবাদ নানা দেশেই প্রচলিত। এসব দেশের তুলনায় আমাদের দেশের পাহাড়গুলো অনেক উর্বর। আমাদের জুম চাষীরা শত শত বছর ধরে শুধুমাত্র প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে ফলিয়ে আসছেন পুষ্টিকর ও সুস্বাদু ফসল, সাক-সব্জি, ফল-মূল। নিতান্ত নিরুপায় হয়ে এখন তারা জুমের জমিতে ব্যবহার করছেন রাসায়নিক সার।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ২১ এপ্রিল ২০১৯ | ১১৭০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • pi | 2345.110.9004512.123 (*) | ২১ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:০১47898
  • আরে এনিয়ে লেখা দেখে খুব ভাল লাগল। ত্রিপুরার জুমিয়াদের নিয়ে আমার কাজ, বেশ কিছু ব্যাপারে মিল পেলাম, সবেতে নয় যদিও। এদিকে আবার চাকমারা করেন ই না প্রায়। আর এদিকে এখনো আগের মত আছে অনেক কিছুই, এদিক পানের জুমের ভুট্টা শুধু অতিসুস্বাদুই নয়, অত্যধিকসুন্দরীও !
    রাসায়নিক সারের ব্যবহারও দেখিনি এখনো। জুমের সব ফসলের স্বাদই আলাদা, আমার তো অনেক বেশি ভাল লাগে !

    আগের জুমের গল্প পড়েছি সুধন্য দেববর্মার লেখায়, কেমন এক ঝিম ধরানো জীবন। ওখানে গেলে, ঐ হাওয়া পাহাড় নদী জঙ্গল আর পাহাড় জুড়ে থাকথাক সবুজে তো মনে হয় থেকেই যাই, হামিন অস্ত। বাস্তবের এই জীবনের প্রচুর সমস্যা, যেসব নিয়েই কাজ কারবার তখন আর ভাবতেই ইচ্ছে করেনা !

    পরে সময় পেলে কিছু ছবি দেব আর গল্প লিখব। যদিও এই পরে আর কোনদিন আসবে কিনা, নিজেরই সন্দেহ হয় ।
  • প্রতিভা | 238912.66.6712.29 (*) | ২১ এপ্রিল ২০১৯ ০৮:২৭47897
  • পাইয়ের কাছে শুনেছি জুমের ভুট্টা অতি সুস্বাদু। সবই হারিয়ে যাচ্ছে, না ?
  • বিপ্লব রহমান | 340112.231.126712.75 (*) | ২২ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৩৯47899
  • প্রতিভা দি,

    বাংলাদেশে গারো পাহাড়েও একদা জুম চাষ ছিল। জুমে আগুনে জংগল (বন নয়) পোড়াতে হয় বলে প্রায় একশ বছর আগে বন বিভাগ সেখানে জুম চাষ নিষিদ্ধ করেছে। গারো বা মান্দি জনগোষ্ঠীর জীবন থেকে এই সংস্কৃতি বা উৎপাদন পদ্ধতি হারিয়ে গেছে। ভাবতে পার?

    তবে তুমি বেড়াতে এলে অবশ্যই আমরা রাংগামাটির পাহাড়ে জুম দেখতে যাব। চাইলে মোনঘরে (জুমের অস্থায়ী ঘর) দুয়েকটি রাত কাটানোও যায়। তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম এখনো ইন্সার্জেন্সি এরিয়া বলে বিদেশীদের (?) জন্য সেখানে ভ্রমণে বিশেষ অনুমতির ব্যপার আছে।

    পাইদি,

    গুরুতে লেখায় ছবি যোগ করার পদ্ধতি এখনো জটিল মনে হয়, তাই ছবি দেইনি। আপনি কিছু ছবি যোগ করলে খুবই ভাল হয়। ফেসবুকে জুমের মতিভূট্টার ছবি দেখে আমোদ লেগেছিল!

    আর যদি জুম চাষ দেখার নিজস্ব অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখেন, তাহলে তো কথাই নেই! অবশ্যই লিখবেন, বিনীত অনুরোধ রইল।

    আপনি হয়তো জানেন, তবু বলছি, ওপারে ত্রিপুরায় যে চাকমারা বাস করেন, তাদের অধিকাংশই ১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের উদ্বাস্তু হিসেবে এপারের পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে গিয়ে ত্রিপুরায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। ১৯৯৬-৯৭ সালে পেশাগত কারণে একাধিকবার ত্রিপুরা রাজ্য সফর করার সময় সরেজমিনে তাদের সম্পর্কে জেনেছি। সেখানের চাকমারা পরে ভারতীয় নাগরিকত্ব পান। আসলে অভিবাসী ও পরে নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পেতেই তাদের অনেকটা সময় লেগেছে। জুম চাষের স্বীকৃতি হয়তো সে কারণে মেলেনি।

    অরুণাচল ও মিজোরামে আশ্রয় নেওয়া কাপ্তাই বাঁধের উচ্ছেদকৃত চাকমারাও জুম চাষ বঞ্চিত বলে শুনেছি।

    আসলে প্রথাগত এই চাষ পদ্ধতি সামাজিক রীতিনীতি ও সংস্কৃতির সংগেও জড়িত।

    কয়েকটি গ্রামের কারবারী (গ্রাম প্রধান) ও হেডম্যান ( মৌজা প্রধান) রীতিমতো বৈঠক করে নির্ধারণ করেন, কোন চাষী কোন পাহাড়ে জুম করবেন। এমন বন্টন পদ্ধতির কারণে জুমের কাগুজে দলিল না থাকলেও এ নিয়ে কখনো জমির বিরোধ হয় না।

    আবার চাষের এই ঐতিহ্যবাহী রীতিনীতির ভেতর অভিবাসীদের হয়তো ভাগ বসানোর সুযোগ নেই।

    আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার লেখাটি পড়ার অপেক্ষায়।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন