এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • যে পাহাড়্গুলি ডিঙোতে চাই

    Sukanta Ghosh লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৮ ডিসেম্বর ২০১৩ | ৬০৭৪ বার পঠিত
  • ললিত স্যার না থাকলে দেবু দত্তগুপ্তর লেখার সাথে হয়ত কোন দিনও পরিচয় হত না। তখন দশম শ্রেণী, স্যার একদিন আলোচনা প্রসঙ্গে একটি বইয়ের কথা বললেন, যা সারাংশ দিলেন তাতে করে খুবই আগ্রহ জন্মাল। এটাও বললেন যে বইটা আমাদের ওই বয়সী ছাত্রদের সবারই পড়া উচিত অন্তত একবার করে। ওই বই তখন আমাদের ওদিকের দোকানে বিক্রী হত না – তাই স্যারই আনিয়ে দিলেন কোথা থেকে যেন। হাতে এসে পড়ল লাল-কালো প্রচ্ছদের একশো তিরিশ পারাত বইটি – “যে পাহাড়্গুলি ডিঙোতে চাই”। আমাদের এলাকা তখন প্রবলভাবে বামপন্থী – স্কুলের স্যাররাও বেশীর ভাগ বাম মতাদর্শে বিস্বাসী। ললিত স্যারো তার ব্যতিক্রম ছিলেন না বরং ভালোই সক্রিয় ছিলেন। তবে সেই সক্রিয়তা প্রায় সমস্তটাই সংস্কৃতি কেন্দ্রীক – স্যার নাটক লিখছেন, নাটক করছেন। এলাকায় আলোড়ন তুলেছেন একক অভিনয়ে একাঙ্ক নাটিকা করে যার নাম ছিল ‘ধাক্কা’। স্বাভাবতই প্রাপ্ত বইটিও যে সেই ভাবধারায় অনুসারী হবে বলাই বাহুল্য।

    এনাদের সংস্পর্শে এসে আমিও কৈশোরে বাম সংস্কৃতি বেষ্টিত বা অনেকটা প্রভাবিতো ছিলাম বলা যেতে পারে। এখন হিপোক্রীট অবস্থান নিয়েছি – কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলি আমি ভালোর দলে। তো যাই হোক দেবু দত্তগুপ্ত কোন বিখ্যাত লেখক ছিলেন না – বরং একজন নিখাদ সরকারী কর্মচারী। পরে শুনেছিলাম উনি নাকি রাইটার্সে কাজ করতেন। যে গুটি কতক নন-ফিকশন বই আমার কৈশোর আলোড়িত করেছিল তার মধ্যে ‘যে পাহাড়গুলো ডিঙোতে চাই’ অন্যতম – অন্যান্যগুলি ছিল ‘অলৌকিক নয় লৌকিক’, ‘বিশ্বাস ঘাতক’ ইত্যাদি। এই বইটির গুরুত্ব বুঝতে হলে পরিপ্রেক্ষিতটাও একটু বুঝে নিতে হবে – মনে রাখতে হবে আমরা তখনও কম্পিউটার, ইন্টারনেট বা গুগুল থেকে অনেক দূরে। রেফারেন্স বই খুঁজতে স্কুল লাইব্রেরী বা মেমারী গ্রামীণ গ্রন্থাগার বা স্যারদের ব্যক্তিগত সংগ্রহই ভরসা। বর্ধমানের পার্টি লাইব্রেরী থেকেও আমি অবশ্য অনেক সাহায্য পেয়েছি – যিনি আমাকে সেই বই এনে দিতেন, কোঙার বংশীয় আমার সেই প্রিয়তম স্যারের গল্প অন্য কোন সময়।

    প্রায় চব্বিশটি প্রবন্ধ ছিল বইটিতে। কতকগুলির শিরোনাম আবার বেশ আকর্ষণীয়, যেমন, “হরলিকস কাকে বেশী শক্তি দেয়”, “হাঁসজারু বনাম অরণ্যদেব” ইত্যাদি। বইয়ের মুখোবন্ধে লেখক বলছেন, “আগুনের সঙ্গে ঝড়ো হাওয়ার মত দরিদ্রের সঙ্গে কুসংস্কার এবং অজ্ঞতা যুক্ত হলে মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রাম দুর্বল হয় চূড়ান্তভাবে। যে আর্থসামাজিক কারণে মানুষ কুসংস্কাস ও অন্ধ বিশ্বাসকে অবলম্বন করে বেঁচে থাকতে চাইছে, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক প্রচারের মাধ্যমে সেই কারণগুলি সম্পর্কে সচেতন করাটাই বিজ্ঞান সচেতন সংগঠনগুলির দায়িত্ব”।

    প্রথম পাঁচটি অধ্যায়ে দেবু দত্তগুপ্ত কুসংস্কার জাতীয় বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করেছেন যার মধ্যে আছে জ্যোতিষ, গ্রহরত্ন, মন্ত্র-তন্ত্র ইত্যাদি বিষয়গুলি। কৈশোরে এই বই পড়েই প্রথম জানতে পারি দৃকসিদ্ধ ও অদৃকসিদ্ধ পঞ্জিকার পার্থক্য, সত্তর দশকের পর থেকে স্বর্ণালঙ্কার দোকানগুলিতে গ্রহরত্নের ব্যবসা ও প্রকোপ বেড়ে যাবার সরল ব্যাখ্যা। জানতে পারি যে মঙ্গলের জন্য পলা, বুধের জন্য পোখরাজ, বৃহস্পতির জন্য মুক্তা, শুক্রের জন্য হীরা, শনির জন্য নীলা সহ চন্দ্রে জন্য কোন রত্ন ব্যবহার করা হয়। মনে প্রশ্ন জাগতে থাকে জ্যোতিষশাস্ত্রের মূল গোঁজামিলগুলি সম্পর্কে।

    সেই প্রথম আমার সচেতন হয়ে ওঠা মধ্যবিত্ত সমাজের দ্বৈত সত্ত্বা, চরিত্রের পরস্পর বিরোধিতা সম্পর্কে। সেই কবে তিনি লিখেছিলেন, কিন্তু আজো তা প্রবল ভাবে প্রাসঙ্গিক, “যিনি মহাকাশ বিজ্ঞানের আধুনিক মান মন্দিরে দূরবীক্ষণে চোখ রেখে সৌরমণ্ডলে গ্রহ নক্ষত্রের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেন, তিনিই মহাকাশযান উৎক্ষেপনের সময় নির্ধারণ করেন শনিবারের বারবেলার ‘অশুভ’ মুহুর্তকে সযত্নে এড়িয়ে। জ্যোর্তিবিজ্ঞানে একজন সুপণ্ডিত হয়েও তিনি ব্যক্তিজীবনে জ্যোতিষ বিদ্যার অপবিজ্ঞানের ব্যাখ্যায় নক্ষত্র-সূর্যকে গ্রহজ্ঞানে তুষ্ট করার চেষ্টা করেন যাগযজ্ঞের ধূমায়িত কোলাহলে”। তেমনই পরস্পর বিরোধিতা সেই চিকিৎসকের ক্ষেত্রেও যিনি মাথায় প্রসাদী ফুল ঠেকিয়ে অপারেশন থিয়েটারে ঢোকেন।

    শুধু জ্যোতিষশাস্ত্র নয়, মাদুলি-তাবিজ নয়, হস্তরেখা বিচার নামক লোকঠকানো ও গোঁজামিল ব্যবসাটার মূল স্বরূপও সেই প্রথম চেনা। আমাদের মনে যে খুব স্বাভাবিক প্রশ্ন আসে, কি ভাবে হাজার হাজার বছরের পরমায়ু নিয়ে সভ্যতা আর বিজ্ঞানের সমান্তরাল খাতে এই সব কুসংস্কার আর অবিদ্যার সুপ্রাচীন প্রবাহ টিকে থাকে – তার উত্তর খোঁজার শুরুও দেবু দত্তগুপ্তর বই পড়ার পর থেকেই।

    সেই প্রথম যেন কেউ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল কি ভাবে আমাদের প্রায় অজান্তেই নতুন প্রজন্মের শৈশব থেকে হারিয়ে যাচ্ছে মমতাময়ী পরী, ব্যাঙ্গমা-ব্যঙ্গমী, ভিন্দেশী মেঘবরণ কন্যার অপরূপ কাহিনী, রূপকথার দুয়োরানী আর সুয়োরানীরা। সুগভীর বিপন্নতায়, অবসাদে লেখক আমাদের জানালেন কিভাবে আজকের শিশুদের কল্পনা আর স্বপ্নের পৃথিবী থেকে সর্বশক্তিমান স্পাইডারম্যান, সুপারম্যান বা আয়রণ ম্যানেরা হঠিয়ে দিচ্ছে সুস্থ নৈতিকতার বার্তবহী স্বর্গ থেকে নেমা আসা পরীদের, মেঘবরণ কন্যা আর রাজপুত্র – কোটালপুত্রদের। আগে যা খুব স্বাভাবিক মনে হত, সেই বিষয়েও প্রশ্ন জেগে উঠলঃ

    •অরণ্যদেব কমিকসে নেংটি পড়া মন্ত্রমুগ্ধ কালো মানুষেরা কেন বারে বারে আক্রান্ত হয়ে হাঁটু মুড়ে আকুল প্রার্থনা জানায় একজন সাদা চামড়ার অতিনায়কের কাছে?
    •কেন অরণ্যদেবের সঙ্গীনীকে আসতে হয় সাত সাগর আর তের নদী পেরিয়ে শ্বেতাঙ্গদের দেশ থেকে?
    •কেনই বা সুপারম্যান সিরিজের সিনেমায় ভিনদেশের কুচক্রীর চেহারা চীনের পীত মানুষের মত হয়?
    •কেন অবিশ্বাস্য ধীশক্তির অধিকারী সাদা চামড়ার ম্যানড্রেকের পাশে তাঁর দেহরক্ষী, কালো চামড়ার লোথার, এক বুদ্ধিহীন, প্রতিভাহীন শুধুমাত্র স্থুল শারিরীক শক্তির অধিকারী হয়ে দাসসুলভ অনুগত্যে যাদুগরকে অনুসরণ করে ছায়ার মত?

    লেখক আকুল প্রশ্ন করেছেন, অরণ্যদেব, ম্যানড্রেক আর সুপারম্যানেদের হাত থেকে তাঁর সন্তানের কল্পনার পৃথিবীকে কি হাঁসজারূ, মিকিমাউস কিংবা ডোনাল্ড ডাকেরা বাঁচাতে পারে না? এর উত্তর আজকে লেখকে দিতে হলে তিনি জানতে পারতেন – হাঁসজারুরা হেরে গেছে সুপারম্যানদের কাছে বেশ অনেকদিন হল। আবোল-তাবোল, জাতকের উপাখ্যান কেনা হয় না আজকাল, আর হলেও তার মূল লক্ষ্য থাকে স্টেটাস সিম্বল (আমি বাঙালী বা ভারতীয়) মেনটেন করা। বই তাকেই তোলা থাকে – ছেলেকে ভাত খাওয়ানো হয় আয়রনম্যান হাতে দিয়ে।

    “হ্যাঁ সংস্কৃতি, না সংস্কৃতি” প্রবন্ধে দেবু দত্তগুপ্ত বিশ্লেষণ করেছেন কিভাবে শিল্প-সাহিত্য-চলচিত্র আর সংবাদ-সাহিত্যের বর্ণাঢ্য প্রলোভন দুর্বল করছে আমাদের নৈতিকতাকে। সেই প্রথম জানতে পারা যে শ্লীলতা-অশ্লীলতার প্রশ্নে বিবর-প্রজাপতি নিয়ে তুমুল আলোড়ন – মামলা ইত্যাদি হল প্রচার কিংবা বিজ্ঞাপনের সাম্প্রতিকতম এক কৌশল মাত্র। যৌনতা মানুষের জীবনের এক অপরিহা র্‍্য অঙ্গ – অন্যান্য জৈবিক তাগিদের মত সেটাও স্বাভাবিক একটা প্রয়োজন। কিন্তু সেই যৌনতাকেই জীবনের সর্বস্ব করে দেখাতে গিয়ে বাজারী পত্রিকা বা গল্প লেখকেরা নিজেরাও ক্লান্ত হয়ে উঠেছেন। সেই প্রথম জানতে পারা ধ্রুপদী সাহিত্যে কিভাবে যৌনতা এসেছে বা আসা উচিত, যেমন হেমিংওয়ের ‘ফর হুম দি বেল টোলস্‌’। আর চোখ খুলে যায় লেখকদেরও যে পেশাগত সততা থাকা উচিত সেই সম্পর্কে – পশ্চিমের বাণিজ্যিক লেখকেরা কিভাবে অসাধারণ প্রামাণ্যতা আনেন বিষয় বস্তুতে – তা সে অটোমোবাইল, মেডিক্যাল সায়েন্স যাই হোক না কেন। এর কাছে বাংলা সাহিত্যের আজকের বাজার মাত করা লেখকদের শ্রম, নিষ্ঠা বা সততা খুবই কম। কিন্তু প্রশ্ন হল আমরা বিনা প্রতিবাদে কতদিন আর এ জিনিস গলধগরন করব?

    ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় মিডিয়ার ভূমিকা এবং আমেরিকান পুঁজিবাদীদের অগ্রাসন প্রচারে মিডিয়ার নেওয়া সুকৌশন বারবার নানা প্রবন্ধে ঘুরে ফিরে এসেছে। দেবু দত্তগুপ্তর লেখা পড়েই সেই কৈশোরে প্রথম আঁচ পাওয়া যে বিদেশী কোম্পানীগুলি তাদের কাঙ্খিত মনস্তাত্ত্বিক পরিবেশ গড়ে নিতে কিভাবে বিজ্ঞাপনের পিছনে অবিশ্বাস্য অর্থ ব্যয় করে।

    (ক্রমশঃ)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৮ ডিসেম্বর ২০১৩ | ৬০৭৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • Atoz | 161.141.84.239 (*) | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৯:০০46193
  • আরেকটা সিরিজ একবার বেরোতে শুরু করেছিল, টেক্স বেন্সন। সেখানে স্কর্পিয়া গ্রহের যুবরাণী আজোরা ছিলেন। কিন্তু সেই সিরিজ কপ্পুরের মতন উবে গেল! আর বেরোলো না। কী হলো ওদের?
  • Blank | 180.153.65.102 (*) | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৯:৩৯46158
  • অরন্য দেবের কমিকসের বড় বড় ভিলেন রা অনেকেই কালো মানুষ। মহা শক্তিশালী। অরন্যদেবের মুখের আকৃতির পাহাড় যিনি বানিয়েছেন তিনি নিজেই কালো এক সুলতান, ভয়ানক শক্তিশালী আর সাহসী। এক ই কথা প্রযোজ্য লামান্ডা লুয়াগার জন্য। অলিম্পিকে বক্সিং চাম্পিয়ান, নামী ডাক্তার। অরন্যদেবের বউ তার আন্ডারে নার্স একজন।
    সুপারম্যান সিরিজের মেন ভিলেন একজন আমেরিকান ব্যাবসায়ী। যার নাম লেক্স লুথার।
    লোথার বুদ্ধি হীন, প্রতিভাহীন নয় - লুথার আফ্রিকান এক স্বাধীন দেশের প্রিন্স, যার কথায় ১৭ টা (নাম্বার টা ভুল হতে পারে) আলাদা রাজ্য চলে।
    যিনি বলেন ভারতের ছোটরা চিরকাল ঐ রাজপুত্তুর, কোটালপুত্তুর আর ব্যাঙ্গমা নিয়ে দিন কাটাতো - হঠাৎ করে এই সব আমেরিকান কমিক্স পড়ে শৈশব ঝুলে গেলো - তাদের বাংলায় গান্ডু বলা ছারা আর কিস্যু বলতে পারি না। পথের পাঁচালী তে অপু তীর ধনুক নিয়ে খেলতো আর ভাবতো 'মহাভারতে যুদ্ধ জিনিসটা বড় কম আছে'।
    এমনি ভাবে এগোলে কদিন ভাবে লোকে বলবে প্রদোষ মিত্র কেন প্রদোষ সোরেন হলেন না !!!
  • সুকি | 212.160.18.74 (*) | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৩ ১০:৩০46159
  • রঞ্জনদা, বইগুলি এখনো পাওয়া যাবে কিনা বলতে পারি না। তবে এককালে পাওয়া যেত - মনে হয় ক্যাম্প বলে একটা প্রকাশনা আরো কিছু বই বের করেছিল।

    বি - আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ। আপনি যে ভাবে বলছেন, সেই ভাবে দেখলে সমস্যা কিছু থাকে না অবশ্যই - কিন্তু ব্যাপার হচ্ছে কিছু লোক এই যে কি অসুবিধা হতে পারে সেই নিয়ে অনেক কিছু গবেষণা করে বই পত্র লিখে ফেলেছেন। আমাদের সনামধন্য রিচার্ড ডকিন্স সাহেবের বইগুলি পড়ে তার কিছু একটা আন্দাজ করা যাবে।

    ব্ল্যাঙ্ক, এটা অবশ্যই সত্যি যে দেবু দত্তগুপ্তর লেখার অনেক অংশের সাথেই অনেকে একমত হবেন না - আমি নিজেও নই। কিন্তু এই যে 'গান্ডু' জাতীয় শব্দ গুলি ব্যবহার করেন, এর ফলে হয় কি যে আলোচনার আর কোন স্কোপ থাকে না । আপনি যে গুলি বলেছেন তার সবগুলই সত্যি - কিন্তু আপনি কি ভাবেন যে যিনি বেশ কিছু বই লিখে ফেলেছেন এই নিয়ে তাঁর এই গুলি চোখে পড়ে নি! আসলে সমস্যা অন্য জায়গায় - এই লেখকেরা পুরো গল্পটাই জানতেন, কিন্তু তাঁরা প্রজেন্ট করলেন শুধু তাঁদের সুবিধা মত অংশটা! বাকি টা বললেন না - যাকে বলে সিলেকটিভ। এই সমস্যাগুলি আমাদের ভিতর থেকে গেছে। তাই নিয়েই আলোচনা আর কি।
  • b | 135.20.82.164 (*) | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৩ ১০:৪৪46160
  • কিছু লোক অ-নে-ক গবেষণা করে বইপত্র লিখে ফেলেছেন? ও আচ্ছা। তাহলে তো কোনো তর্কই উঠতে পারে না।
  • Blank | 180.153.65.102 (*) | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৩ ১০:৪৫46161
  • উনি তো পাঠক কেই গান্ডু ভেবে এই উদ্ভুটে লেখা পত্তর নামিয়েছেন। তো রিটার্ন টাকো ওনাকেই খেতে হবে। অন্তত ওনার তোলা প্রশ্ন গুলো থেকে কখনো ই মনে হয় না উনি আদৌ বিদেশী কমিকস সিরিজ গুলোকে ফলো করেন। কয়েকটা পড়েই 'এই তো খাপে খাপ মিলে গেছে' মনে করে প্রবন্ধ নামিয়ে ফেলা লোকেদের এইটাই বলা ছারা কিছু করার নেই।
    আলোচনা করার হলে করুন, আমার কিছু বলার থাকলে বলবো। ঝাঁট জ্বললে গান্ডু ই বলবো।
  • pinaki | 148.227.189.8 (*) | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৩ ১১:৩৫46162
  • দেবু দত্তগুপ্তের অধিকাংশ লেখা যথেষ্ট খেটেখুটে নামানো। উনি নিজের বক্তব্যের সমর্থনে শুধু রেটোরিক ঝেড়ে থেমে যান নি। যতটা সম্ভব পড়াশুনো করে লেখার চেষ্টা করেছেন। এখন চিন্তাভাবনার মধ্যে অতিসরলীকরণ আছে হয়তো। সেটা ওনার সময়ের এবং রাজনৈতিক পরিমন্ডলেরও সীমাবদ্ধতা। আর চিন্তাভাবনায় অতিসরলীকরণ কার নেই? এই যে ব্ল্যাংকি আগুপিছু না জেনে একজনের লেখা রিভিউ পড়ে একটা লোককে গান্ডু বলে নিজেকে বীর ভাবল সেটাও কি ছেলেমানুষি অতিসরলীকরণ নয়?

    আমি ব্যক্তিগতভাবে দেবু দত্তগুপ্তের প্রায় সব লেখা পড়েছি (নব্বইএর দশকের শেষ অব্দি তো বটেই)। ওনার লেখা খুবই ভালো লাগত। অন্যান্য রাজনৈতিক প্রবন্ধের থেকে অনেক বেশী তথ্য আর যুক্তিসমৃদ্ধ। যে সময় ইন্টারনেট ছিল না, সেসময়ে দাঁড়িয়ে বাম অ্যাকটিভিস্টদের হাতে তাদের রাজনীতির সমর্থনে তথ্যসমৃদ্ধ লেখা একের পর এক তুলে দিয়েছেন। বিশ্বায়ন, গ্যাট, ডান্কেল প্রস্তাব নিয়েও দারুণ দারুণ লেখা আছে। উনি নিজে সিপিএম বা সিপিআই কিছু একটা করতেন শুনেছি। আমরা সিপিএম সিপিআই বিরোধী বাম ধারার সাথে ছিলাম। কিন্তু সেজন্য ওনার লেখার ভক্ত হতে বাধে নি।

    আর এই মাদুলি, তাবিজ, বাবার থানে ফুল চড়িয়ে স্যাটেলাইট লঞ্চ ইত্যাদি সবের প্রতিই আমরা একটা বয়েসের পরে এসে অনেক সহনশীল হয়ে যাই। কেউ কেউ দাবী করেন এটাই যুক্তিবুদ্ধির পরিণত হওয়া। আমি অবশ্য খুব নিশ্চিত নই। হতে পারে এটা নিজেদের জীবনের কম্প্রোমাইজ বা দ্বিচারিতাগুলোকে অ্যাক্সেপ্ট করতে পারার একটা পার্ট। নিজেদের বেঁচে থাকার পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে দেখলে ঠিকই আছে। কিন্তু জেনারালাইজ করলে মুশকিল। মনে রাখা উচিত দুনিয়া মুক্ত চিন্তার দিকে যেটুকু এগিয়েছে সেটা কিন্তু এই মধ্য বয়েসে এসে সবকিছু অ্যাক্সেপ্ট করে ফেলা দিয়ে এগোয় নি। কিছু মানুষের এরোগ্যান্ট মানতে না চাওয়া দিয়েই এগিয়েছে।
  • Blank | 180.153.65.102 (*) | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৩ ১১:৪৪46163
  • একজন যদি চার পিস কমিকস পড়ে তাই নিয়ে ফর্মুলায় ফেলা প্রবন্ধ নামাতে পারে , তো তার রিভিউ পড়ে তাকে গান্ডু বলতে আমার কিস্যু যায় আসে না। 'খেটেখুটে নামানো' র প্রমান তো দেখতেই পাচ্ছি।
  • sandipan | 135.19.5.231 (*) | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৩ ১২:১২46164
  • sandipan
  • সুকি | 168.161.176.6 (*) | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৩ ০১:০১46194
  • ভালো লাগছে আলোচনা - অনেক কিছু জানা যাচ্ছে। আমার ব্যক্তিগত ভাবে কখনই মনে হয় না যে বিদেশী কমিকস পড়লেই আমরা গোল্লায় যাচ্ছি আর আমাদের সব রূপকথারা দারুন। তা সেই সম্পর্কে আমি দেবু দত্তগুপ্তর সাথে একমত নই - এবং আরো অনেক বিষয়েই নই। কিন্তু তার মানে এই নয় যে ভদ্রলোক কিছু না জেনে লিখেছেন! এবং উলটো - আমার নিজের মনে হয় জানতেন অনেকটাই, কিন্তু নিজের দলের মতামত প্রচার সার্থে শুধু বেছে বেছে কিছু উদাহরণ সিলেক্ট করেছেন। এটা কিন্তু মারাত্মক একটা ব্যধি - যেমন দেখা গেছে অনেকে রিসার্চ করার সময় যে রেজাল্ট গুলি নিজের হাইপোথিসিসের সাথে মিলছে না, সেগুলি ডিসকার্ড করে। আমার নিজের আপত্তি সেই জায়গায়।

    আমি এখানে পিনাকী-দার সাথে বেশীর ভাগটাই একমত। লেখকের সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে মনে হয় তাঁর লেখা পত্রের সাথে পরিচিত থাকলে মূল্যায়নটা ব্যালেন্সড হয়।

    জানি না এখনো বই গুলি পাওয়া যায় কিনা - তবে বাকি যে বই গুলির নাম এই মুহুর্তে মনে আসছে সেই গুলি হল - "হাত বাড়ালেই বিশ্ব", "ফাদার র‍্যাম্বো", "বিশ্বায়নের বনভোজন" ইত্যাদি।
  • Arpan | 126.202.124.208 (*) | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৭:৫৩46197
  • টিনটিন ইন আমেরিকার কোথায় ঠিক রেসিজমের ছায়া আছে?
  • Ekak | 24.96.120.15 (*) | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৮:৩২46198
  • যেটুকু নিদর্শন পেলুম খুব ভাসা ভাসা অগভীর লাগলো । কালারফুল জিনিসকে জোর করে সাদা-কালোয় দেখা । যাই হোক, প্রবন্ধ যখন ;যোগার করে পড়ব । তবে দু-চাট্টে বই প্রকাশিত হলে গান্ডু বলা যায়না ইতা হাস্যকর । যাইহোক ।
  • pinaki | 148.227.189.9 (*) | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৩ ১০:৫১46195
  • গোয়েবেলসের আস্তাবল বলে একটা বই ছিল। যদ্দূর মনে পড়ছে ফ্রী লাঞ্চ নামের একটা বই ছিল বিশ্বায়ন নিয়ে। তবে সিওর নই সেটা বইই ছিল নাকি কোনো বই এর মধ্যের কোনো প্রবন্ধ।
  • সুকি | 212.160.18.32 (*) | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৩ ১১:০৪46196
  • পিনাকীদা, মনে হয় বইটার নাম ছিল "গোয়েবল্‌সের ইস্তাহার"। বাকি কিছু বই "এক কদম এগিয়ে", "স্পিলবার্গের পৃথিবী", "একুশ শতক" এই সব।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত মতামত দিন