ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময় পার্কসার্কাসের ধাঙড় বাজারের সার্কাস হোটেল। সামনের ফুটপাথে একটা হাইড্রেন, তার থেকে মুখ খুলে হোসপাইপ লাগিয়ে কর্পোরেশনের লোক রোজ ভোরে রাস্তা ধুয়ে দেয়। সময়টা যে পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি। তোড়ে যে জল বেরিয়ে আসে তা কিন্তু গঙ্গার ঘোলা জল, আর ফুটপাথে থেকে তিন ধাপ সিঁড়ি ভেঙে বারান্দায় উঠলেই খোলা উনুন বসানো। সেখানে ঝকঝকে শিকে গেঁথে পোড়ানো হচ্ছে মশলা মাখা লালচে হলুদ রঙের মাংসের টুকরো। তৈরি হচ্ছে শিককাবাব। তার পাশেই দু'জন ময়দা মেখে লেচি বানিয়ে সেঁকছে রুমালি রুটি আর ভেজে তুলছে পরোটা। ... ...
আস্তে আস্তে আমার নাচের প্রতি ভাললাগা যেন আমি রনজয়ের মধ্যেদিয়ে ফেরত পেতে শুরু করলাম। আর তাই আমার হারিয়ে যাওয়া ভাললাগা ভালবাসায় পরিণত হতে সময় লাগেনি।পরের দিন সকালে হঠাৎ করে অমৃতা আমাকে প্রোপোজ করে। আমি হাসতে হাসতে বলি "সবজানার পরেও... " অমৃতা উত্তর দিয়েছিল," তুই তো সৎভাবে স্বীকার করতে পেরেছিস। কতলোক তো বাইসেক্সুয়াল হয়, অন্যকাউকে যদি কখনও বিয়ে করি আর সে সবটা লুকিয়ে রাখে আমার থেকে।" অদ্ভুত একটা বিষয়ের সম্মুখীন হয়েছিলাম সেদিন। এর আগে পর্যন্ত এভাবে কেউ বলেনি, আর তখনও পর্যন্ত আমিও কোনও বিবাহিত সমকামী পুরুষের সম্মুখীন হইনি। ... ...
গণতন্ত্রে শেষ কথা বলে জনতাই। একুশের বাংলার নির্বাচন এই সত্যিটাই আবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল। ঝুড়ি ঝুড়ি টাকা ওড়ালে বা ধর্মের চোনা দিয়ে গোমূত্র খেলে বাংলাকে জেতা যায় না। মাছ প্রিয় বাঙালি ধোকলাকে ডাবল ইঞ্জিনে চাপিয়ে সোজা পগারপার করিয়ে তবে ছেড়েছে। বাঙালির সঙ্গে পাঙ্গা নেওয়া কী এতই সহজ! ... ...
লরার সাথে আমার আলাপ হয়েছিল নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে এক শীতকালীন সেমেস্টারে; আমরা দুজনেই কনভেক্স অপ্টিমাইজেশনের একটা কোর্স নিয়েছিলাম আর কোর্স প্রজেক্টে আমি ছিলাম ওর পার্টনার। লরা এসেছিল এল.এ. থেকে। নিউইয়র্কের শীত আমি পছন্দ করিনা, সে প্রায়ই বলত। ... ...
ভারতে এই মুহূর্তে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। কি উপায়ে একে প্রতিহত করা যায়? সামান্য একটি পেনসিল আর ডাইরি কি কাজে লাগতে পারে? ... ...
বি ... ...
রেমডেসিভির বিষয়ক দু-একটি কথা। দেখা যাচ্ছে যে ধরণের প্রমাণের ভিত্তিতে রেমডেসিভিরকে আমেরিকার এফ ডি এ ছাড়পত্র দিয়েছেন, সেই সমস্ত প্রমাণ খুব জোরালো নয়। এতৎসত্ত্বেও ভারতে রেমডেসিভির নিয়ে এক ধরণের উন্মাদনা তৈরী হয়েছে কি? ... ...
ছবি আঁকার প্রতি আমার আগ্রহ ছিল ছেলে বেলা থেকেই, পুসুমার উতসাহে বাড়ির পাশে আঁকার স্কুলেও যাওয়া শুরু হয়েছিল, প্রায় হাতেখড়ির সঙ্গে সঙ্গেই ।আমাদের বাড়িটা ছিল বাস রাস্তার লাগোয়া। তাই বাড়ির বাইরে যাতে খুব বেশি যেতে না হয়, তারজন্যই হয়তো ছবি আঁকার পাঠ শুরু হয়েছিল আমার। খেলাধুলা আমায় কোনও কালেই টানেনি। পুসুমার দৌলতে খবরের কাগজের সাথে সাথে আসত চাঁদমামা। আর বামপন্থী ছোটকাকুর দৌলতে আসত সোভিয়েত ইউনিয়ন পত্রিকা। ছবিতে রুশ উপকথার গল্প, আর চাঁদমামার উত্তর রামায়ণ আর বিক্রমাদিত্যের ও বেতালের গল্প আজও আমার স্মৃতিতে অমলিন। ... ...
পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের কোলকাতার ছবির কোলাজ, ব্যক্তিগত স্মৃতির টুকরো। ইতিহাস হওয়ার দায় নেই। ... ...
দেখি দুজন বয়স্ক সুদর্শন সুপোশাক পরিহিত মানুষ এসেছেন এইচ আইভি নিয়ে কথা বলতে, এরকম বয়সের লোকজন সাধারণত আসেন কোনও না কোনও এন জি ও র তরফে এইচআইভি সচেতনতার কাজ কর্ম করতে সাহায্য পাওয়া যাবে কিনা জানতে। কথা বলতে গিয়ে দেখলাম না এনারা দুই বন্ধু এসেছেন এইচ আইভির পরীক্ষা, চিকিৎসা কোথায় হয় সেসব জানতে।মনে মনে ভাবলাম আজকাল তো অনেকেই ছেলে মেয়েদের বিয়ের আগে থ্যালসেমিয়া এইচ আইভি পরীক্ষা করায়, ওনাদের হয়তো তেমন কোনও ব্যাপার। তাও বিষয়টা নিয়ে কথা বলতে গেলে নিজেকে যতটা সম্ভব নিরপেক্ষ রাখা উচিত সে ভাবেই আলোচনা শুরু করলাম। জানতেও চাইলাম ওনারা কেন হঠাৎ এইচ আইভি পরীক্ষা করাতে চাইছেন। কথায় কথায় জানলাম ওনাদের কোনও এক আত্মীয় বিদেশ থেকে ফিরেছেন, অনেক দিন যোগাযোগ না থাকায় তার যাপণ সম্পর্কে ওনারা জানেননা, সে হয়তো সেখানে ড্রাগ নিত, তার গায়েও উল্কি আছে অনেক তাই ওনারা তাকে এইচ আইভি পরীক্ষা করাতে চান। আর তাই সরাসরি স্বাস্থ্য দপ্তরে খোঁজ নিতে এসেছেন, বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে রাজ্য সরকারের এডস্ প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থায় পৌঁছেছেন। তার সঙ্গে সঙ্গে আরও জানতে চাইলেন এডস হয়েছে কিনা সেটাও কি করে জানা যায়। দেখলাম এনারা এডস আর এইচ আইভি র তফাতটা জানেন। কথা বলতে উৎসাহ পেলাম। ওনারা এইচ আইভি নিয়ে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন নিয়েও জানতে চাইলেন। জানালাম বর্তমান চিকিৎসা ব্যবস্থায় এইচ আইভি নিয়েও লোকজন দীর্ঘদিন ভাল থাকেন, এবং আমিও ভাল আছি। ওনারা ধাতস্থ হলেন। কিন্তু মানুষের কৌতূহল অসীম, ওনাদের মধ্যে একজন জিজ্ঞেস করে বসলেন কিভাবে আমার এইচ আইভি হল। আজকাল এটাতে অবাক হই না হাসিমুখে বললাম, "সেটা জানাটা বোধহয় জরুরি না"। ... ...
দেখতে দেখতে চার-পাঁচ দিনেই সারা দুনিয়া ববাসীরের বাজি রেখে সারিয়ে তোলার দম্ভের সামনে নতজানু হল।চারদিকে ওই বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি। রঙ্গনাথ হতভম্ব, একই বিজ্ঞাপন একটি দৈনিক খবরের কাগজে প্রকাশিত হয়েছে! কাগজটি রোজ সকাল দশটা নাগাদ শিবপালগঞ্জে পৌঁছিয়ে লোককে জানান দেয় যে স্কুটার ও ট্রাকের সংঘর্ষ কোথায় হয়েছে, আব্বাসী নামক তথাকথিত গুন্ডা ইরশাদ নামের কথিত সব্জিওলাকে তথাকথিত ছুরি দিয়ে কথিত রূপে কোথায় আঘাত করেছে। ... ...
তবুও কোথাও যেন একটা খচখচানি। বুঝতে পারতাম না আমি কেন আলাদা! সবাই যখন সিনেমার নায়িকাদের শরীর, অঙ্গপ্রত্যঙ্গের হাতছানিতে ছন্নছাড়া হতে রাজী বুঝতে পারতাম না আমার কেন মনে মনে নায়কের পৌরুষ বা লোমশবুক অনেক বেশি টানে। দ্য গ্রেট আর্টিস্ট পত্রিকার পাতায় পাতায় নগ্ন পুরুষ দেখার লোভ কেন এত বেশি। বলতে দ্বিধা নেই ওইবয়সে ক্লাসের বন্ধুদের সাথে ক্লাসের কোলের ওপর ব্যাগ রেখে গোপন অঙ্গে স্পর্শের হাতছানি অগ্রাহ্য করিনি। ... ...
আমার আপাত মেয়েলি নরমসরম হাবভাবের জন্য মনে করা শুরু হল নাচই কারণ। আমাদের স্কুলের প্রার্থনা সভায় প্রতিদিন বেশ কিছুটা সময় বরাদ্দ থাকত বিভিন্ন ক্লাসের ছেলেদের থেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য। ওই সময় তাদের কোনও কোনও অ্যকটিভিটি পরিবেশন করতে হত। এটা সোশাল অ্যাংসাইটি বা জড়তা কাটানোর একরকম পদ্ধতি । ক্লাসের হয়ে প্রতিনিধিত্ব কাউকে না কাউকে করতে হত। যদি কেউ না থাকত, তাৎক্ষণিক ভাবে কাউকে উঠতে হত। এরকম একদিন তাৎক্ষণিকভাবে কোনও প্রস্তুতি ছাড়াই আমায় উঠতে হল, আমি পড়লাম বিড়ম্বনায়। মাস্টার মশায় তখন ভারতীয় নৃত্যের ইতিহাস নিয়ে কিছু বলতে বললেন। কোনওরকমে মান বাঁচালেও বুঝলাম আমার নাচ নিয়ে আরও পড়াশোনা দরকার। এবং যতই মনের আনন্দে নাচ করি না কেন ব্যকরণ গত ভাবে শাস্ত্রীয় নৃত্য অনুশীলন প্রয়োজন।লুকিয়ে লুকিয়ে শুরু করলাম নাচ। কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতেই শরীর দিয়ে চোকাতে হল গুরুদক্ষিণা। লজ্জা আর ঘেন্নায় বন্ধ হয়ে গেল নাচ শেখা। ... ...
ভোটের বাদ্যির চোটে তার দ্বিরাগমনের পদধ্বনি কানে আসেনি। তাই পণ্ডিত মশাই যখন নিদ্রামগ্ন, ঠিক এই সময়েই পাগলা দাশু চিনে পটকায় আগুন দিয়ে ফেললো, একটু আনন্দের জন্য। সহপাঠীদের বিন্দু মাত্র বিশ্বাস নেই কিন্তু তাদের টাইট দিতে হবে তাকে...তারপর? ... ...
আমাদের বাড়িটার একটা অদ্ভুত অবস্থান ছিল। আমাদের কোনও পাড়া ছিলনা সেই অর্থে। সামনে জিটি রোড দুপাশে দুটো বাড়ীর দুপাশ দিয়ে দুটো গলি।ওই গলি ধরে গেলে দুদিকে দুটো পাড়া। বাড়ির পিছনের বাড়িগুলো বা পাড়াগুলো কখনও আমি সেভাবে যেতাম না। আমাদেরকে মিশতেও তেমন দেওয়া হতনা। আমাদের বাড়ির লোকজনকেও পিছন দিকের পাড়া-প্রতিবেশির সঙ্গে খুব বেশি যাতায়াত করতে দেখিনি। তবে বিকেল হলেই এপাড়া ওপাড়ার সবাই পুসুমার কাছে ঘুঁটে কিনতে আসত নয়ত দুধ নিতে আসত। সেইসময়টুকু যতটা এপাড়া ওপাড়ার আলোচনায় আমার জগত দর্শন। ... ...
বছর তিরিশ আগে এক তরুণ ডাক্তার গিয়ে পড়েছিলেন দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার এক প্রত্যন্ত গ্রাম বেল্পুকুরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যা এক আশ্চর্য নেই-রাজ্য। এরপর কীভাবে তিনি ভোল পাল্টালেন এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সেই কথাই তিনি লিখেছেন একটি ছোট্ট বইতে। বইটি আমাকে প্রভাবিত করেছে গভীরভাবে। বইটি পড়ার সূত্রে আসা কিছু ভাবনা ভাগ করে নিলাম পাঠকদের সঙ্গে। ... ...
সতেরো বছর বয়সে তার ভারী ওজনের শরীরটা ও একটা ভুলভাল মেকআপ সেন্স সঙ্গে করে মনিকা ম্যাকন প্রথম টরন্টো আসে ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজি সাহিত্য পড়তে। টিনএজকালে তাকে বেশ সাধারণ দেখতে ছিল আর তখনও তার কোনো বয়ফ্রেন্ড জোটেনি। একমাত্র হাসলে তাকে কিছুটা সুন্দর দেখাত, কিন্তু সে প্রায় সবসময়ই মুখ গম্ভীর করে থাকত। ইউনিভার্সিটির ক্লাসগুলো সে মন দিয়ে বোঝার চেষ্টা করত, যদিও মাঝারিমানের ছাত্রী হওয়ায় অনেককিছুই তার মাথার ওপর দিয়ে বেরিয়ে যেত। ... ...
আমার মতে, যিনি ফ্যান আবিষ্কার করেছিলেন তিনি পৃথিবীর সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দার্শনিক। যেকোনো মুহূর্তে খুলে মাথায় পড়তে পারে জেনেও নিচে আরামে শুয়ে থাকতে পারা, শুধুমাত্র আরামের জন্য - এ জিনিস পৃথিবীর সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দর্শন। ... ...