এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  গপ্পো

  • একটি টিনক্যানের অবিচুয়ারি

    সায়ন্তন চৌধুরী লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ২৬ এপ্রিল ২০২১ | ২৫৪৫ বার পঠিত
  • সতেরো বছর বয়সে তার ভারী ওজনের শরীরটা ও একটা ভুলভাল মেকআপ সেন্স সঙ্গে করে মনিকা ম্যাকন প্রথম টরন্টো আসে ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজি সাহিত্য পড়তে। টিনএজকালে তাকে বেশ সাধারণ দেখতে ছিল আর তখনও তার কোনো বয়ফ্রেন্ড জোটেনি। একমাত্র হাসলে তাকে কিছুটা সুন্দর দেখাত, কিন্তু সে প্রায় সবসময়ই মুখ গম্ভীর করে থাকত। ইউনিভার্সিটির ক্লাসগুলো সে মন দিয়ে বোঝার চেষ্টা করত, যদিও মাঝারিমানের ছাত্রী হওয়ায় অনেককিছুই তার মাথার ওপর দিয়ে বেরিয়ে যেত। তার রুমমেট সোফি একটি স্থানীয় ক্যাফেতে ওয়েট্রেস হিসেবে কাজ করত। ওরা সেন্ট লরেন্সে দোতলায় থাকত একটা কন্ডো শেয়ার করে। সোফি ছিল রোগাপাতলা এবং সুন্দরী; তার বুকগুলো ছিল বড়ো আকারের। সে কোনদিন রান্না করত না, হয় তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে বাইরে খেতে যেত অথবা বাড়িতে মাইক্রোওয়েভে ফ্রোজেন ফুড গরম করে নিত। বাড়ির পাশেই লোকাল গ্রসারি স্টোর থেকে সে সিল-করা চিকেন তন্দুরি বা চিকেন টিক্কা মশালা উইথ রাইস কিনে আনত। মনিকা কখনও তাকে ঘরে কিছু বানিয়ে খেতে দ্যাখেনি। মনিকা তার নিজের জন্যে রাঁধত। সে রান্নার জিনিসপত্র কিনতে সেন্ট লরেন্স মার্কেটে যেত। এছাড়া তিনমাসে অন্ততঃ একবার তাকে দেখা যেত পাস্তা, পাউরুটি, ডিম, মাস্টার্ড এসবের সঙ্গে লন্ড্রির ডিটারজেন্ট, বাথরুমের টিস্যুপেপার প্রভৃতি বয়ে আনতে। তাদের কন্ডোমালিক একটা চাকালাগানো শপিং কার্ট দিয়েছিল কিন্তু মনিকা কখনই ফাঁকা শপিং কার্টটা ঠেলতে ঠেলতে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে চায়নি। তার অকোয়ার্ড লাগত। প্রথম কয়েকটা সেমেস্টারে মনিকা মোটামুটি ভালই গ্রেড পেল। একটা-দুটো সাবজেক্টে এ মাইনাস আর বাকিগুলোয় বি নিয়ে উতরে গেল। ঠিক এইসময় তার সিরিয়াস সাহিত্য পড়ার ঝোঁক বাড়ছিল। একদিন রাতে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে আগাথা ক্রিস্টি পড়তে পড়তে সে বইটা ছুঁড়ে ফেলল মেঝের এককোণে এবং তারপর চিত হয়ে সিলিঙয়ের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগল নেক্সট কী পড়া যায়। ক্ল্যাসিক হিসেবে ডিকেন্স তখনও তার পছন্দের তালিকায় ছিল; তাছাড়া টোয়েন, হথর্ন, মেলভিল, অ্যালকট, মন্টগোমেরি, ফিটজেরাল্ড, স্যালিঞ্জার, জ্যাক লন্ডন, হার্পার লি আর হ্যাঁ, জেন অস্টেন, যাকে সে প্রায়ই ফিরে ফিরে পড়ত। পরের দিন বিকেল পর্যন্ত ভাবনাচিন্তা করে সে ঠিক করল জার্মান ক্ল্যাসিকস পড়বে এবং শুরুতেই বেছে নিল বড়সড় একটা পাহাড়কে: টমাস মান; প্রথমেই বাডেনব্রুকস ধরল, যার অসম্ভব ঘনিষ্ট গদ্যে ভর্তি পাতাগুলোয় একজন টিনএজ পাঠক হিসেবে সে ক্রমাগত পর্যুদস্ত হচ্ছিল। কোন-কোনদিন সন্ধ্যে পর্যন্ত সে ইউনির লাইব্রেরিতে কাটাত। একদিন সেরকমই ইউনি থেকে ফিরে মনিকা দেখল সোফি সিঁড়ির নীচে আউট হয়ে পড়ে আছে। ইতিমধ্যে সে তার পুরোনো বয়ফ্রেন্ডের পাশাপাশি একজন কোরিয়ান ছেলের সাথে ডেট করছিল। মনিকা ওর কাঁধ ধরে ঝাঁকাল আর বোতল থেকে খানিকটা জল ছিটিয়ে দিল চোখেমুখে। মেয়েটা বিড়বিড় করে কিছু বলছিল, কিন্তু মনিকা একটা শব্দও উদ্ধার করতে পারল না। কোনোরকমে ওকে ধরে ধরে মনিকা ওপরে নিয়ে গেল এবং শুইয়ে দিল বিছানায়। সেদিন সোফি কোরিয়ান ছেলেটার সঙ্গে অতিরিক্ত ম্যারিজুয়ানা টেনে ফিরেছিল আর তার পেটে পড়েছিল অনেকটা আলকোহল। মাঝরাত পর্যন্ত আচ্ছন্ন হয়ে থেকে সে বাথরুমে গিয়ে গরমজলে চান করল এবং তারপর মনিকার দরজায় টোকা দিল। মনিকা জেগেই ছিল; হাতের বইটা ভাঁজ করে বালিশের পাশে রেখে দরজা খুলল। সোফি বলল ওর খুব খিদে পেয়েছে, ও কিছু খেতে বেরোচ্ছে; মনিকা ওর সঙ্গে যাবে কিনা। মনিকা একবার ইতস্তত করে রাজী হয়ে গেল। সে তার কালো পার্কাটা চাপিয়ে নিল। তারপর দুজনে জুতো পরে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ল। রাত একটা বাজছিল। বাতাস বেশ ঠান্ডা, যদিও বারের সামনে লোকজন বাস্কেটবল ম্যাচের ফলাফল নিয়ে গুলতানি করছিল। কিং স্ট্রীট অব্দি হেঁটে এসে ওরা একটা টিম হর্টন'স খোলা পেল। মনিকা এককাপ কফি অর্ডার দিল; মিডিয়াম ডাবল-ডাবল। সোফি তার কফিতে এক চামচ চিনি বেশি চাইল আর সঙ্গে একটা স্যান্ডউইচ।

     

     

    মনিকার কয়েকবছর আগে সোফি টরন্টো এসেছিল, ফলে তুলনামূলকভাবে তার অভিজ্ঞতা বেশি। সে ভেবেছিল কিছুদিন ওয়েট্রেস হিসেবে কাটিয়ে বিনোদনের জগতে একটা  কাজ জোগাড় করে ফেলবে; প্রথমদিকে অভিনেত্রী হওয়াই তার মূল লক্ষ্য ছিল, কিন্তু অধিকাংশ অডিশনে প্রত্যাখ্যাত হতে হতে একসময় সে বাস্তবটাকে স্বীকার করে নেয়। কোনো কিছু নাটকীয় ব্যাপার ঘটবে না, সে মনে মনে বুঝেছিল আর কফি খেতে খেতে মনিকাকে বিভিন্ন হতাশাজনক পরিস্থিতির গল্পই শোনাচ্ছিল। অনেকরাতে তারা যখন ঘরে ফিরছিল, ততক্ষণে অ্যাডিলেড স্ট্রীটে ম্যাকডোনাল্ডসের সামনে আঠারো নাকি কুড়ি নাকি তিরিশ চাকার নীলতিমির মতো অতিকায় সাপ্লাই ট্রাকটা মালপত্র নামানো শেষ করে উধাও হয়ে গ্যাছে আর হাইরাইজগুলো ধূসর ডিস্টোপিয়ার ঘোরে থম মেরে দাঁড়িয়েছিল। পরের সপ্তাহে সোফি মনিকাকে নিয়ে গেছিল একটা রক মেটাল কনসার্টে। সোফি প্রায়ই এধরনের মিউজিক কনসার্টগুলোতে যেত; রোগা হওয়ায় সে মশপিটে দাঁড়াতে পারত না, কিন্তু হেডব্যাংগিংয়ে নিয়মিত অংশ নিত। তার কিছু বন্ধুবান্ধব বিভিন্ন ব্যান্ডে বাজাত। ধীরে ধীরে তাদের দুজনের মাসের শেষ উইকেন্ডগুলো একসাথে কাটতে লাগল আলোআঁধারি সাইকেডেলিক উন্মাদনার নেশায়। মনিকার ম্যারিজুয়ানার প্রতি আকর্ষণ বাড়ছিল। কখনো কখনো বাড়িতে তারা তিন চামচ ক্যানাবিস মিশিয়ে উইড ব্রাউনি বানাত। এর মধ্যে মনিকা জিমে যেতে শুরু করেছিল। সে বই পড়া একেবারে বন্ধ করে দেয়নি বটে, কিন্তু তার লাইব্রেরি যাওয়া আর হচ্ছিল না। হঠাৎ একদিন সে শুনল চীট করা নিয়ে সোফির সাথে তার বয়ফ্রেন্ডের তুমুল ঝগড়া হয়ে গেছে, যার ফলে সোফি ব্রেক-আপ করে নিয়েছে এবং কোরিয়ান ছেলেটাকেও কাটিয়ে দিয়েছে। ছেলেগুলো ঠিক তাদের লিঙ্গের মতই, সে রেগে গিয়ে বলেছিল। মনিকার মনে হচ্ছিল একটা চাপা ডিপ্রেশন সাইকেলের ভেতর সোফি ঢুকে যাচ্ছে। কাজের সময়টুকু বাদ দিলে দিনের পর দিন ঘরে বন্দি করে রাখত নিজেকে আর লুপে গান শুনত। ডীপফ্রিজারটা সে ঠেসে ভর্তি করে রেখেছিল ফ্রোজেন ফুডে। অন্যদিকে, মনিকা হাঁপিয়ে উঠছিল ইউনিভার্সিটির রুটিনমাফিক জীবনে। মাসের শেষদিকে তাদের হাতে বিশেষ পয়সা ছিল না, কিন্তু তবু জোর করে মনিকা সোফিকে নিয়ে ইয়ঙ & ডান্ডাসে সিনেমা দেখতে গেল; সিনেমা দেখে তারা ঢুকল ইটন সেন্টারে। সারা সন্ধ্যে তারা ঘুরে বেড়াল আলো-ঝলমলে শপিংফ্লোরগুলোয়। একটা এইচ & এম স্টোরের সামনে এসে সোফি হঠাৎ হাত নেড়ে একটি ছেলের উদ্দেশ্যে চেঁচিয়ে উঠল — হেই থিও! থিওকে মনিকা আগে কখনও দ্যাখেনি। বেশ পেটানো চেহারা, ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া চুল, নেক্রোডোম নামে একটা ডেথ মেটাল ব্যান্ডে গিটার বাজায়। মনিকার সাথে আলাপ হবার পর কথায় কথায় সে তাদের সামনের মাসে নেক্রোডোমের একটা আন্ডারগ্রাউন্ড কনসার্টে আসার জন্যে অনুরোধ করল, যেখানে সোফির অন্যান্য কয়েকজন বন্ধুও বাজাবে। এটাই ছিল সেই রাতটা, যার স্মৃতি মনিকার মাথার মধ্যে একগোছা নিউরনকে পুড়িয়ে দিয়েছিল। পুরো ব্যাপারটাই, তার মনে হয়েছিল, যেন তাকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে দান্তের নরকের ভেতর। প্রচন্ড ডিসটর্টেড গিটার, অত্যন্ত কর্কশ ভোকাল আর হাইপার ডাবল-বাস ব্লাস্ট বিটগুলো আছড়ে পড়ছিল মনিকার ব্রেনসেলের পর্দায়। ক্যানড বিয়ারে চুমুক দিতে দিতে সমস্ত ধূসর ধোঁয়াটে পরিবেশটা অসম্ভব তড়িৎপৃষ্ট লাগছিল তার। সোফি সম্পূর্ণ মাতাল হয়ে গেছিল, তার ঠোঁটের কড়া ম্যারিজুয়ানা-ভর্তি সিগারেটটা চোখদুটোকে লাল টকটকে করে তুলেছিল। এবং প্রথমবার জীবনে ডেথগ্রিন্ড শোনার পরেই ব্যাপারটা ঘটল: শোয়ের শেষে থিও মনিকাকে একান্তে জিগ্যেস করেছিল সে তার সঙ্গে ডেটে যেতে চায় কিনা। মনিকা খুব বেশি অবাক হয়নি; দু-তিনদিন পরে তারা একটা ইটালিয়ান রেস্তোরাঁয় খেতে গেছিল। থিওর একটা সেকেন্ডহ্যান্ড টয়োটা ছিল, যেটা চালিয়ে সে মনিকাকে রাত্তিরবেলা নামিয়ে দিয়ে যেত সেন্ট লরেন্সে ওর বাড়ির সামনে। বারকয়েক ডেটে যাবার পর একদিন দুজনে রাতটা একসঙ্গে কাটাতে চাইল। সোফি বোধহয় আগেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। তার ঘর অন্ধকার ছিল। থিওকে ভয়ানকভাবে চুমু খেতে খেতে মনিকা নিজের ঘরের লক খুলল। সেদিন তারা মোট তিনবার সেক্স করেছিল। থিওর শক্ত আর মোটা লিঙ্গটা দু'পায়ের ফাঁকে নিতে মনিকার প্রথমে কিছুটা সমস্যা হচ্ছিল, আর মাসখানেক পরে সে বুঝেছিল অ্যানাল সেক্সের প্রতি তার একটা গোপন টান আছে; অবশ্যই তারা সর্বদা ভেসলিন ব্যবহার করত। 

     

     

    শীতকালীন সেমেস্টারে একটা দুঃস্বপ্নের সামনে এসে পড়তে হলো মনিকাকে: চসার এবং শেক্সপিয়ারের ওপর দুটো কোর্স। মিডল ইংলিশ সম্পর্কে এমনিতেই সে অজানা আতঙ্কে ভুগত আর শেক্সপিয়ারও তাকে কোনো স্বস্তি দেয়নি; এখন তার মনে হলো সে কোনোরকমেই পাশ করতে পারবে না। যেটা ঘটবে, যদি সে ফেল করে, ইউনিভার্সিটি থেকে তার সামান্য অ্যালাওয়েন্সটা বন্ধ হয়ে যাবে, আর ইতিমধ্যেই তার টাকাপয়সার টানাটানি চলছে, ফলে নিশ্চিতভাবেই সে একটা অন্তহীন খাদের ভেতর পড়ে যাবে। সোফির হাতেও টাকাপয়সা বেশী ছিল না। শীতের মাঝামাঝি এসে সে একটি গ্রীক ছেলের সঙ্গে ডেট করতে শুরু করেছিল। ওয়েট্রেসের কাজটা তার আর ভালো লাগছিল না, কেননা তার খরচের তুলনায় আয় বাড়ছিল নগণ্য হারে। ক্রমশ তাকে বাধ্য হয়ে মনিকার সঙ্গে ঘরে রান্না শুরু করতে হলো। একদিন বিকেলে গুঁড়ো-গুঁড়ো বরফ পড়ছে আর কনকনে ঠান্ডা, তার মধ্যে দিয়ে হেঁটে তারা দুজনে সুপারমার্কেটে গেল সবজি, ডিম ইত্যাদি বাজার করে আনতে। ফ্যাটফ্যাটে ফ্লুরোসেন্ট আলোয় উজ্জ্বল সুপারমার্কেটে ঘুরে ঘুরে তাকগুলো থেকে তারা প্রয়োজনীয় জিনিস বেছে নিচ্ছিল আর তাদের ওপর নজর রাখছিল কয়েকটা সিসিটিভি ক্যামেরা। ব্যাকগ্রাউন্ডে ফ্রেন্ডসের একটা গান বাজছিল। সুপারমার্কেটের ছায়াহীন আইলগুলোর মাঝখান দিয়ে সোফি আর মনিকা নিঃসঙ্গভাবে শপিং কার্ট ঠেলতে ঠেলতে এগোচ্ছিল। মদের তাকগুলোর সামনে এসে সোফি মনিকার দিকে ফিরে তাকাল। মনিকা দুদিকে ঘাড় নাড়ল। সোফি হঠাৎ তার হাত থেকে কিছু একটা মেঝেতে পড়ে গেছে এভাবে ঝুঁকল আর চট করে ডানহাতটাকে নিজের শরীরের আড়ালে রেখে একটা রেড ওয়াইনের বোতল ঢুকিয়ে নিল জ্যাকেটের ভেতর। এত দ্রুত ঘটনাটা ঘটল যে মনিকা অবাক হয়ে গেল। তারপর তারা চেকআউট করবার জন্যে কাউন্টারের সামনে এসে দাঁড়াল। কাউন্টারের মেয়েটি চুইংগাম চেবাতে চেবাতে দ্রুতহাতে বারকোড স্ক্যান করতে শুরু করল, তারপর ভাবলেশহীনমুখে মনিকাকে জিগ্যেস করল — ক্যাশ না ক্রেডিট? টাকা মিটিয়ে ওরা যখন সুপারমার্কেটের ঘূর্ণায়মান দরজাটার বাইরে এসে দাঁড়াল, ততক্ষণে রাস্তায় বরফের তোড় বেড়েছে আর শহরের আলোগুলো জ্বলে উঠেছে। ওরা জ্যাকেটের টুপিটা চাপিয়ে নিল মাথায়। সেদিন রাতে খাওয়াদাওয়ার পর দুটো গ্লাসে মদ ঢেলে সোফি মনিকাকে ওর পরিকল্পনার কথা জানাল। প্রকৃতপক্ষে, সোফির মাথায় ব্যাপারটা আসে ওর একজন বান্ধবীর গল্প শুনে, যে আগে ওর সঙ্গেই ক্যাফেতে কাজ করত এবং পরে স্ট্রিপক্লাবে যোগ দেয়। এক-একরাতে প্রায় তিন-চারশ ডলার রোজগার হয়, সোফি বলছিল মনিকাকে, ভাগ্য ভালো থাকলে হাজার ডলার অব্দি পাওয়া যায়। মনিকা প্রথমে কিছু বললনা; সোফি তাকে রেড ওয়াইনের বোতলটা তুলে দেখাল এবং হাসল। পরের সপ্তাহে সোফির বান্ধবীর সঙ্গে ওরা ক্লাবটায় গেল। একটা লম্বা করিডর দিয়ে ক্লাবটায় ঢুকে মনিকার চোখে পড়ল দিনেরবেলা টেবিলগুলো ফাঁকা, কোনো মিউজিক বাজছে না। কেবল লাল-নীল আলোগুলো জ্বলছে মেনস্টেজের ওপর আর অ্যালুমিনিয়াম পোলগুলো চকচক করছে। মেনস্টেজের বাঁদিকে বারের সামনে উঁচু টুলগুলো সারি দিয়ে সাজানো। বিয়ার আর সিগারেটের একটা কড়া গন্ধ হাওয়ায় ভেসে রয়েছে, মনিকা নাক টেনে বুঝল। শুধু ওরাই নয়, আরও তিনজন মেয়ে এসেছে। মেয়েদের ম্যানেজার ক্লডিয়া গ্রীন একজন মধ্যবয়েসী খরগোশের মতো মহিলা। তিনি ওদের নির্দেশ দিলেন জামা খুলে অন্তর্বাস পরে একে একে স্টেজে উঠতে। মনিকা আর সোফি ওদের টপ আর প্যান্ট খুলে রাখল। তারপর নতুন কেনা ব্রা আর ম্যাচিং প্যান্টিসমেত ওরা স্টেজে গিয়ে উঠল। ঠান্ডা আর পিচ্ছিল অ্যালুমিনিয়ামের পোলটা একহাতে ধরল মনিকা। তারপর যেভাবে অন্যদের ঘুরে ঘুরে নাচতে দেখেছিল, সেভাবে অনুকরণ করল। এবার ব্রা খুলে ফেলো, ক্লডিয়া নির্দেশ দিলেন, যাতে আমি তোমাদের বুকগুলো দেখতে পাই। ওরা তাই করল। কিছুক্ষণ পরে ওরা নেমে এল এবং পোশাক পরে নিল। ক্লডিয়া ওদের ভুলগুলো সম্পর্কে দু-একটা মন্তব্য করলেন। তারপর হাতের খাতাটায় ওদের নাম লিখতে আরম্ভ করলেন। একটা নাম নাও, ক্লডিয়া বললেন। মিসেস ডালোওয়ে, মনিকা বলল। ওরা যখন ক্লাবটা থেকে বেরিয়ে এল, তখন দুপুরের রোদ বেশ চড়া হয়েছে। সোফি আর মনিকা একটা ম্যাকডোনাল্ডসে ঢুকল বার্গার খেতে।

     

     

    স্ট্রিপক্লাবে প্রথমদিনটা মনিকা কখনো ভুলবেনা; ব্যাকস্টেজে দাঁড়িয়ে অদ্ভুত আতঙ্কে তার উঁচু হিল জুতোপরা পাদুটো জমে যাচ্ছিল। সারা সপ্তাহ সে জুতোটা পরে হাঁটা অভ্যেস করেছে; তবু তার মনে হচ্ছিল সে যেকোনো মুহূর্তে পড়ে যাবে। এরপরে তুমি আমার সঙ্গে উঠবে, ডিজের মিউজিকটা ঢিমে হয়ে আসতেই কেলী নামে একটি চকচকে লাল ব্রা আর ফিশনেট-পরা মেয়ে মনিকাকে বলেছিল। স্টেজে উঠতেই মনিকার অস্বস্তি কেটে গেছিল আর সে দ্রুত মানিয়ে নিয়েছিল নিজেকে পার্পল আলো ও ধোঁয়ায় ভর্তি ক্লাবটার পরিবেশে। প্রথম দু’দিন তার কাছ থেকে কেউ ল্যাপড্যান্স নেয়নি; তারপর কেলী তাকে সাহায্য করেছিল। স্রেফ আত্মবিশ্বাস রাখো, সে বলেছিল মনিকাকে, তুমি যথেষ্ট সেক্সি। অন্যদিকে, সোফিও স্ট্রিপার হিসেবে আস্তে আস্তে অভিজ্ঞ হয়ে উঠছিল। কোনো-কোনো রাতে তারা একসঙ্গে ক্লাবে যেত; কখনও কখনও আলাদা। সবথেকে জঘন্য যে ব্যাপারটা ঘটতে পারে, কেলী একদিন লকাররুমে চোখে আইলাইনার লাগাতে লাগাতে মনিকাকে বলেছিল, যদি কেউ তোমার প্রেমে পড়ে যায়, মেকআপ শেষ করে সে যোগ করেছিল, অথবা যদি তুমি কারো প্রেমে পড়ে যাও। মনিকা হেসে ফেলেছিল। কেলী একটা সিগারেট ধরিয়ে বলেছিল, হতেই পারে। অনেকেই সুগার বেবী হওয়ার লোভ সামলাতে পারেনা আর তারপর মরে। কেলী তাকে সাবধান করে দিয়েছিল বলেই, নইলে সত্যি বলতে সুগার বেবী ব্যাপারটা মনিকার খারাপ লাগেনি। সুগার বেবী মানে সবসময়েই যে একটা আধবুড়ো লোকের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক হতে হবে তা তো নয়, সে মনে মনে ভেবেছিল, ব্যাপারটা অনেক বেশি নিরাপদ আর কম খাটনির। কিন্তু জড়িয়ে যাবার আশঙ্কা থাকে, যেটা কেলী তাকে বলেছিল। তবু দোনামোনা করে মনিকা একটা ওয়েবসাইটে নিজের অ্যাকাউন্ট খুলে রেখেছিল। মাসখানেক পরে যখন সে প্রায় ভুলেই গেছে ওয়েবসাইটটার কথা, তখন একদিন একটা নোটিফিকেশন পেয়ে সে অ্যাকাউন্ট খুলে দেখল বেশকিছু অফার এসেছে। এর মধ্যে কয়েকটা তার পছন্দ হলো, কিন্তু সে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে লাগল। ইউনিভার্সিটিতে সেমেস্টারগুলো পেরিয়ে যাচ্ছিল একটা একটা করে। ওদিকে থিওর সাথে তার সম্পর্কটা ক্রমশ তিক্ত আর দুর্বল হয়ে পড়ছিল। থিওর ব্যান্ডে নানারকম সমস্যা চলছিল, সে বাধ্য হয়ে রেস্তোরাঁয় ডিশ ধোওয়ার কাজ নেয়। একদিন ক্লাবে স্টেজ থেকে নেমে মনিকা বুঝতে পারল তার ভীষণ শরীর খারাপ লাগছে; সম্ভবত সে নাচতে ওঠার আগে গোগ্রাসে ক্লাবের খাবার খেয়েছিল বলে। ম্যানেজারের ঘরে গিয়ে সে চেকআউট করে বেরিয়ে এল ক্লাবের বাইরে। তারপর একটা উবের ধরল বাড়ি ফেরার জন্যে। সবে ভোর হচ্ছে, হাওয়ায় ঝুলে রয়েছে একটা পুরু কুয়াশা; তাদের কন্ডোর সামনে পৌঁছে সে বাইরের দরজাটা চাবি ঘুরিয়ে খুলল, তারপর আলোআঁধারির ভেতর সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে লাগল, এমনসময় হঠাৎ তার চোখে পড়ল দোতলা থেকে একটা মৃদু আলো এসে পড়েছে সিঁড়িতে। আরো কয়েকধাপ উঠে এসে সে দেখতে পেল আলোটা রেফ্রিজারেটরের ভেতর থেকে আসছে আর রেফ্রিজারেটরের দরজাটা খুলে থিও দাঁড়িয়ে রয়েছে। ভেতর থেকে বিয়ারক্যান বা কিছু একটা বার করছে সে আর তার শরীরে কোনো সুতো নেই। মনিকাকে দেখে থিও ভূত দেখার মতো চমকে উঠল আর তারপরেই দৌড়ে সোফির ঘরে ঢুকে গেল। মনিকা কয়েকমুহূর্ত স্থাণুর মতো দাঁড়িয়ে রইল; তারপর সে নিজেকে সামলে চুপচাপ বাথরুমে ঢুকে গেল। বাথরুম থেকে বেরিয়ে সে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। ক্লান্তিতে তার শরীর ভেঙে পড়ছিল; সে বিছানায় এলিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। সন্ধ্যেবেলা জেগে উঠে সে বাইরে খুটখাট শব্দ পেয়ে বুঝল সোফি। দরজাটা খুলে বেরিয়ে এসে সোফির সামনে দাঁড়াল। আমি জানি থিও কার সাথে শুচ্ছে, মনিকা হিসহিসে গলায় বলল। সোফির মুখটা মুহূর্তে রক্তশূন্য হয়ে গেল। তারপর একটা অস্বস্তিকর নীরবতা আর দোষারোপে ভরে গেল চারদেয়ালের ভেতরটা। একসময় মনিকা নিজের ঘরে ফিরে এসে থিওকে ফোন করল এবং জানিয়ে দিল সে কোনো সম্পর্ক রাখতে চায়না আর। ফোন রেখে সে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইল। ঘন্টাখানেক পরে সোফির পায়ের আওয়াজ পেয়ে মনিকা বুঝল সোফি ক্লাবে গেল। মনিকা নিজের ল্যাপটপ খুলল। তারপর সুগারবেবীর যে অফারটা তার সবচেয়ে ঝুটঝামেলাহীন মনে হয়েছিল, সেটার উত্তর দিল। দুদিন কেটে যাবার পর মনিকার কাছে একটা ফোন এল এবং ওপ্রান্ত থেকে পিয়ের দু লেস্তঁজের সেক্রেটারী তাকে আপটাউন টরন্টোর একটা ঠিকানা দিয়ে জানালো কখন দেখা করতে হবে।

     

     

    খুব দ্রুতই সেন্ট লরেন্স ছেড়ে আপটাউন টরন্টোর বাড়িটায় মনিকা বাস করতে চলে গেল। বাড়িটার সামনে দীর্ঘ লন আর সুদৃশ্য বাগান। প্রথমদিন মনিকার বেশ অস্বস্তি লেগেছিল বাড়িটায় ঢুকে। বেলা এগারোটার সময়েও অদ্ভুত নির্জন বাড়িটা। পিয়ের দু লেস্তঁজ ও তাঁর কয়েকজন পরিচারক ছাড়া কেউ থাকেনা বাড়িটায়। সেদিন মনিকাকে বাইরের ঘরে বসিয়ে সেক্রেটারী লোকটি বাড়ির ভেতরে চলে গেছিল। মনিকা টের পেয়েছিল এটা একটা ডেট বা ওরকম কিছু হতে যাচ্ছেনা। পিয়ের দু লেস্তঁজ ঘরে এসে ঢুকতেই সে বুঝেছিল ব্যাপারটা, লোকটা হুইলচেয়ারে বসে আছে। মনিকার ব্যবস্থাটা ভালোই লেগেছিল। সে অনুমান করেছিল পিয়ের দু লেস্তঁজ একজন ব্যবসায়ী, বছর পঞ্চাশ বয়েস, নিঃসঙ্গ। পিয়েরের সঙ্গিনী হিসেবে মনিকার জীবন দ্রুত পাল্টে যাচ্ছিল: সবচেয়ে ব্যয়বহুল রেস্তোরাঁ, সবচেয়ে ভালো শ্যাম্পেন, সবচেয়ে দামী পোশাক আর তুখোড় ও আলোঝলমলে পার্টিগুলোয় অভ্যস্ত হয়ে উঠছিল সে। পিয়ের তার টিউশন ফি মিটিয়ে দিয়েছিল, কিন্তু মনিকা ইউনিভার্সিটির ডিগ্রিটা আর নিল না শেষপর্যন্ত; তার বইপড়ার অভ্যেসটা আবার ফিরে এসেছিল। কোনো-কোনো দিন সে পিয়েরের সাথে শুতো; তারা সেক্স করত কিছুক্ষণ, তারপর পিয়ের ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ত। মনিকা পিয়েরের বুকে হাত বোলাত, তারপর পেটে, আরও নীচে গিয়ে সে পিয়েরের রবারের মত নরম ও নেতিয়ে থাকা লিঙ্গটা ছুঁয়ে দেখত। ঘুমের মধ্যে পিয়ের কিছু বিড়বিড় করছে, সে শুনতে পেত। অন্ধকার ঘরে আবছা রাস্তার আলো ঢুকে পড়েছে, সেই আলোয় সে দেখতে পেত পিয়েরের ঠোঁটদুটো অল্প অল্প কাঁপছে এবং স্থির হয়ে যাচ্ছে। ঘুম না আসায় মনিকা আস্তে আস্তে উঠে বেডল্যাম্পটা জ্বেলে একটা বই খুলে বসত। একদিন ‘আ পোর্ট্রেট অফ দি আর্টিস্ট অ্যাজ আ ইয়ং ম্যান’ পড়তে গিয়ে তার মনে পড়ল স্টিভেন ডেডালাসের মতো সেও ছোটোবেলায় ঠিকানা লিখতে বললে স্কুল, শহর, প্রদেশের নাম থেকে শুরু করে পৃথিবী, সৌরজগত, ছায়াপথের নাম এবং সবশেষে মহাবিশ্বের উল্লেখ করে থামত। এটা ভেবে তার নিজেকে বেশ সুখী লাগল। এক-একটা রাতে সে অন্ধকারে জল খেতে উঠে রান্নাঘরের জানলাটার কাছে দাঁড়াত। দূরে শহরের পার্পল স্কাইলাইন, মেঘগুলো ভিনগ্রহী যানের মতো ভেসে আছে আকাশে, জনহীন নেবারহুড। সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজের জীবনের কথা ভাবত, সোফি ও থিওর কথা ভাবতে না চাইলেও তার মনে পড়ত। অন্ধকার ঘরের ভেতর রেফ্রিজারেটরের গোঁ-গোঁ আওয়াজ, এককোণে মাইক্রোওয়েভটার মিনিট ও সেকেন্ডের সেভেন সেগমেন্ট ডিসপ্লের মাঝে প্রতিপ্রভ কোলন চিহ্ন, সিলিঙয়ে স্মোকঅ্যালার্মের বিপ-বিপ করতে থাকা আলো — এসব ঘিরে থাকত মনিকাকে কিছুক্ষণ। তারপর সে বিছানায় ফিরে যেত। জুলাইয়ের একটা বৃষ্টিবিঘ্নিত বিকেলে মনিকা একটা প্যাড টেনে কাটাকুটি করতে লাগল। ঘন্টাখানেক পরে সে বুঝতে পারল সে একটা কবিতার তিনটে লাইন লিখেছে। পরের কয়েকমাস সে তার দৃশ্যকল্পগুলোকে স্পষ্ট করল, শব্দবাছাইয়ের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্ক হলো এবং লেখার ক্রাফটকে আরও নিখুঁত করার দিকে মন দিল। বিভিন্ন পত্রিকায় কবিতা লেখা সে চালিয়ে গেল। বছরদেড়েক বাদে মনিকা একজন এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করল এবং পাণ্ডুলিপি জমা দিল। মোট সাতাশখানা পদ্যসমেত ‘একটি টিনক্যানের অবিচুয়ারি’ বইটা বেরোল এবং প্রথম কয়েকসপ্তাহ কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেলনা। মাসদেড়েক পরে একটা ছোটো পর্যালোচনা মনিকার চোখে পড়ল, যেখানে সমালোচক কবিতাগুলোর বিভিন্ন গঠনগত ত্রুটি উল্লেখ করে জানিয়েছেন বইটা মধ্যমানের। মনিকা ব্যাপারটা মেনে নিল। দু-একমাস বাদে একটি অভিজাত ক্লাবে মনিকা পিয়েরের সঙ্গে ডিনারপার্টিতে যোগ দিতে গেল। পিয়েরের কয়েকজন বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মনিকা হেসে হেসে কথা বলছে, এমনসময় সে ইউনিফর্ম পরে খাবার পরিবেশন করতে থাকা থিওকে দেখতে পেল। তাদের চোখাচুখি হলেও দুজনেই দুজনকে এড়িয়ে চলতে লাগল। অত্যন্ত স্বাভাবিক ছন্দে থিও তার কাজ করে চলল, উচ্ছ্বল হাসির আওয়াজ পেয়ে সে আড়চোখে তাকিয়ে দেখল মনিকা পিয়েরের এক বন্ধুর কাঁধে মাথা রেখে এলিয়ে পড়েছে। তারপর একসময় মনিকা উঠে দাঁড়াল, পিয়েরের গালে চুমু খেয়ে তাকে জানালো সে একটু ফ্রেশ হয়ে আসছে। ঘরের অন্যপ্রান্ত থেকে থিও সজাগ হয়ে উঠল এবং সে নিঃশব্দে মনিকার পিছু নিল। একটা লম্বা করিডর পেরিয়ে বাথরুম, করিডরে পৌঁছে থিও হাতদশেক দূর থেকে ডাকল — মনিকা! নারীপুরুষের উঁচুনীচু কন্ঠস্বর, টুকরো-টুকরো হাসি, কাঁচের গ্লাস ঠোকাঠুকির মৃদু রিনরিনে আওয়াজ ভেসে আসছে নির্জন করিডরে; ফ্লুরোসেন্ট আলোয় ধাঁধিয়ে রয়েছে। মনিকা দাঁড়িয়ে পড়ল। থিও আস্তে আস্তে তার দিকে এগোলো। আমি কোনো কথা বলতে চাইনা, মনিকা ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল। সোফি মারা গিয়েছে, থিও তাকে নীচু গলায় জানাল। একটা বিরতি দিয়ে মনিকার মুখের ভাব লক্ষ্য করে অনিশ্চিতগলায় বলল, সোফি স্ট্রিপক্লাবটায় কাজ করেছিল বছরদুয়েক, তারপর সামগ্রিকভাবে সে গভীর ডিপ্রেশনে ভুগতে শুরু করে। একসময় একটা আধ্যাত্মিক গ্রুপের সঙ্গে তার অনলাইনে আলাপ হয়। সোফি থিওকে জানিয়েছিল সে ওই গ্রুপটার সঙ্গে ভারতে যাচ্ছে ‘কুন্ডলিনী’ খুঁজতে। বোম্বে পৌঁছে সোফি ভারতীয় গ্রীষ্ম সহ্য করতে না পেরে প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়ে; সম্ভবত বিভিন্ন ড্রাগ নেওয়ার ফলেও তার শারীরিক অবনতি ঘটে। একদিন মাঝদুপুরে যখন প্রখর রোদে আর ট্র্যাফিকের ক্যাকোফোনিতে শহরের রাস্তাগুলো মুখর, তখন সেন্ট্রাল বোম্বের একটা সস্তা হোটেলে শুয়ে সোফি ভ্যালিয়ামের ওভারডোজে মারা যায়।

     

     

    থিওর সঙ্গে কিভাবে যেন যোগাযোগটা রয়ে গেল মনিকার। মাঝেমাঝে সে থিওর সাথে দেখা করত, তারা পোয়েট্রি স্ল্যামগুলোয় যেত। অখ্যাত কবিরা, যাদের কেউ কোনোদিন চিনবে না, তারা হুল্লোড় করে অর্থহীন মেটাফরে ভর্তি এরোটিক কবিতা পড়ত। মনিকার ভালো লাগত। একদিন ওপেন মাইক ছিল, মনিকাকে থিও ডাকল তার বইটা থেকে কয়েকটা কবিতা পড়ার জন্যে। মনিকা উঠে গিয়ে প্রথম কবিতাটা পড়ল, দ্বিতীয় কবিতাটা পড়ার পর সে প্রচুর হাততালি পেল, তৃতীয় কবিতাটা সে আর পড়তে চাইলনা। বার থেকে বেরোতেই ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়তে শুরু করল। সাইবারপাঙ্ক শহরে থিও আর মনিকা হাঁটছিল পাশাপাশি। স্প্যাডাইনার কাছে এসে তারা যখন দুজনে আলাদা হয়ে যাবে, থিও মনিকার হাতটা ধরল। না, মনিকা বলল। থিও ওর হাতটা ছেড়ে দিল। এরপর মনিকা হঠাৎ থিওর সঙ্গে দেখা করা বন্ধ করে দিল। এমনকি তারা আর ফোনেও কথা বলেনি। একদিন মনিকা সোফিকে স্বপ্ন দেখল। সে একটা মরুভূমির ভেতর ঘুরে বেড়াচ্ছিল, যেটা আসলে একটা গোলকধাঁধা। আরেকদিন সে দেখল সোফি একটা কাঁচের জানলায় নাক ঠেকিয়ে দূরে তাকিয়ে আছে আর বাইরে ব্লেড রানার সিনেমাটার মতো একটা শহর। পিয়ের কখনও কখনও বিছানায় আসতে দেরী করত। একরাতে মনিকা স্টাডিতে গিয়ে পিয়েরকে দেখতে পেল টেবিলের ওপর ঝুঁকে থাকতে। ঘরটায় আলো নেভানো ছিল; শুধু টেবিল ল্যাম্পটা জ্বলছিল। পিয়ের ঘুমে ঢুলছিল। সে পিয়েরের ঘাড়ে হাত রাখল। নীচু হয়ে গলায় চুমু খেল। তারপর কানে ফিসফিস করে কিছু বলল। আস্তে আস্তে সে হুইলচেয়ারের সামনে হাঁটুগেড়ে বসল, পিয়েরের পেটে হাত বোলাতে বোলাতে সে তার নিম্নাঙ্গের পোশাক কোমর থেকে নামিয়ে দিল। তীর্যক আলো পড়েছে মনিকার কাঁধে। তার বাকী শরীর নিস্প্রভ হয়ে আছে। সে পিয়েরের লিঙ্গটা ধরে স্ট্রোক দিতে লাগল। পিয়েরের শ্বাসপ্রশ্বাস ক্রমশ গাঢ় হচ্ছিল। মনিকা ধীরে ধীরে লিঙ্গটা মুখে নিল। সে টের পেল পিয়েরের হাতদুটো তার মাথাটা আঁকড়ে ধরেছে। কিছুক্ষণ পরে মনিকা মুখ তুলল। সে আস্তে আস্তে পিয়েরের জামা খোলার জন্যে তাকে জড়িয়ে ধরে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল আর তখনই পিয়ের হুমড়ি খেয়ে মেঝেতে পড়ে গেল। তার মাথাটা টেবিলের পায়ায় খুব জোরে ঠুকে গেল এবং সঙ্গে সঙ্গে সে জ্ঞান হারাল। মনিকা বরফ এনে তার মাথায় দিল। কোনোরকমে তার শরীরটাকে সে হুইলচেয়ারে তুলল। তারপর স্টাডি থেকে বিছানায় এনে তাকে শুইয়ে দিল। পিয়েরের জ্ঞান ফিরে এসেছিল, কিন্তু সে ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছিল। মনিকা বিছানার একপাশে বসে পিয়েরকে লক্ষ্য করছিল। তারপর সে একটা প্যাড টেনে নিয়ে তাতে একটা চিঠি লিখল। আমি চলে যাচ্ছি, সে জানাল এবং উঠে দ্রুত কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস আর জামাকাপড় গুছিয়ে সে বেরিয়ে এল বাড়িটা থেকে। বাগানের আলোগুলো জ্বলছে, দীর্ঘ লনটা পেরিয়ে সে রাস্তায় এসে দাঁড়াল। কনকনে ঠান্ডা একটা রাত, স্ট্রীটল্যাম্পের আলোয় শুধু কয়েকটা গাড়ি হুশহুশ করে চলে যাচ্ছে। মনিকা কানদুটোকে ঢেকে হাঁটতে লাগল; ফোন করল সে থিওকে। থিওর ওখানেই সে গিয়ে উঠল। প্রথম কয়েকটা দিন মনিকা চিন্তা করছিল পিয়েরের প্রতিক্রিয়া কী হবে। কিন্তু ওদিক থেকে একটা জমাট নিস্তব্ধতা ছাড়া আর কোনো সাড়া পাওয়া গেলনা।

     

     

    থিওর সাথে মনিকার দিনগুলো কাটছিল একঘেয়েভাবে। তারা ম্যারিজুয়ানা টানতে টানতে অর্থহীন বকবক করত দীর্ঘসময় ধরে, পুরোনো রক আর জ্যাজ শুনতে শুনতে সন্ধ্যেগুলো ফুরিয়ে আসত, কোনো-কোনোদিন রাতে তারা একসাথে শুত। থিওর কিছু পুরোনো বন্ধুবান্ধব মাঝেমাঝে আসত। ইতিমধ্যে থিওদের নেক্রোডোম ব্যান্ডটা কিছুটা আর্থিক সাফল্যের মুখ দেখেছিল। একদিন থিও মনিকাকে বলল, ওরা ইউরোপ যাবে একটা স্প্যানিশ ব্যান্ডের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় বাজাতে। মাসখানেক পরে একদিন ভোরবেলা মনিকা ঘুমোচ্ছে, থিও তাকে জাগালো না; সে মনিকার কপালে একটা চুমু খেল। তারপর তার রুকস্যাক নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। মনিকা জেগে উঠে দেখল থিও চলে গ্যাছে। মনিকা একাই থাকতে শুরু করল অ্যাপার্টমেন্টটায়। কিছুদিন পরে বার্সেলোনা শহরের প্রান্তে একটি হাইওয়েতে গাড়ী দুর্ঘটনায় থিও মারা যায়। মনিকা একটা বেড়াল পুষেছিল। জীবনের এই পর্বে এসে একা একা জলের ধারে হাঁটতে ভাল লাগত মনিকার। সন্ধ্যের দিকে সে প্রায়ই চলে যেত হারবারফ্রন্টে। লেক অন্টারিওর জলে আস্তে আস্তে অন্ধকার গাঢ় হতে শুরু করত রাত আটটা বা নটার সময়। টরন্টো আইল্যান্ড থেকে ফেরিতে চড়ে পরিবারগুলো ফিরে আসত শহরে। বাবা-মা ও শিশুর দল হাসিমুখে হেঁটে যেত রাস্তা দিয়ে। মনিকা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করত জলের রঙ, ছায়া, বিচূর্ণ ঢেউগুলি। রাত অনেক হলে একসময় সে ধীরে ধীরে হলুদ স্ট্রীটল্যাম্পের আলোর নীচে দিয়ে ভুতুড়ে হাইরাইজগুলোর ছায়া পেরিয়ে পেরিয়ে ফিরে আসত তার এককামরার ঘরে। সাদা কাঠের দরজার গায়ে লকটায় চাবি ঢুকিয়ে পেতলের রঙচটা নবটা ঘোরাত। তার বেড়ালটা অপেক্ষা করত ফ্যাটফ্যাটে ফ্লুরোসেন্ট আলোজ্বলা দেয়ালগুলোর ভেতর। ম্যাও ম্যাও করে ডাকত। মনিকা ফ্রিজ থেকে দুধের বোতল বের করে বেড়ালের পাত্রে সামান্য দুধ ঢেলে দিত। কিছুক্ষণ হয়তো ল্যাপটপে সিনেমা দেখার চেষ্টা করত। একদিন সিনেমা দেখতে দেখতে হাসছিল সে; হঠাৎ থেমে গেল। তার মনে পড়ছিল থিওকে। বিছানায় বসে থাকত সে চুপ করে। বেড়ালটা চকচক শব্দে দুধ খেত আর সাদা দেয়ালগুলো যেন মনিকাকে হাঁ করে গিলতে আসত। মাথার ভেতরে একটা সূক্ষ্ম যন্ত্রণার বোধ ক্রমশ তীক্ষ্ণ হয়ে উঠত এবং একসময় সে উঠে আলোটা নিভিয়ে দিত। জানলা দিয়ে রাস্তার সামান্য আভা এসে পড়ত বিছানার উল্টোদিকের দেয়ালে। মনিকা আলোআঁধারির নীচে শুয়ে শুয়ে দেখত। সে চিত হয়ে শুয়ে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকত সিলিঙয়ের দিকে। তার আঙুলগুলো পোকার পায়ের মতো মাঝে মাঝে নড়ে উঠত। এটা বলা অসম্ভব যে কখন সে ঘুমিয়ে পড়ত বা আদৌ কখনো ঘুমিয়ে পড়ত কিনা। অনিদ্রার ধাতটা তাকে পেয়ে বসেছিল। মাঝেমাঝে সে স্লিপ মিউজিক চালিয়ে ঘুমোনোর চেষ্টা করত। তন্দ্রার ঘোরে সে দেখত সে একটা শপিংমলের ভেতর ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং আলোকোজ্জ্বল শপিংমলটা তার কাছে ডিস্টোপিয়া মনে হত। আচমকা একটা ঝাঁকুনি মেরে তার তন্দ্রা ভেঙে যেত। আবার এক-একসময় ঘুমের ভেতর সে স্বপ্ন দেখত, যেন সে একজন শীতঘুমে ডুবে থাকা নভোচারী আর লক্ষ লক্ষ আলোকবর্ষ পাড়ি দেবার জন্যে তার শরীরটাকে ডুবিয়ে রাখা হয়েছে ক্রায়োজেনিক দ্রবণে। আগস্টের মাঝামাঝি থেকে সে হঠাৎ হঠাৎ অদ্ভুত ফোন পেতে শুরু করল। বিভিন্ন প্রোডাক্টের স্প্যামকল। সবচেয়ে শক্তিশালী ডিটারজেন্ট, কৌটোয় ভরা স্বাস্থ্যকর মাংস, ইলেকট্রনিক ব্যাটারি কিনলে প্যারিস যাবার চমৎকার সুযোগ। শীতের একাকিত্ব আর বরফে রুগ্ন সন্ধ্যেগুলোয় সে নিজের সঙ্গে কথা বলত। তার মনে হতো এই বিশাল শহরে যদি সে একা একা মরে যায়, তাহলে মৃতদেহের পচন শুরু হবার আগে কেউ কি টের পাবে? এরকম উদ্ভট জিনিস ভাবতে ভাবতে তার পাগল-পাগল লাগত। এইসময় স্প্যামগুলোও যেন পাল্টে যেতে লাগল। কফিন আর ক্রিমেটোরিয়ামের বিজ্ঞাপনগুলো মনিকাকে অতিষ্ঠ করে তুলল। মৃতদেহ সৎকারে চল্লিশ শতাংশ ছাড়, ফোন তুললেই তার কানে আছড়ে পড়ত এরকম ঘোষণা। একদিন সে ৯-১-১-এ ফোন করে অভিযোগ জানালো তাকে মেরে ফেলবার চক্রান্ত চলছে। উল্টোদিক থেকে দু-একটা প্রশ্ন করে তাকে বলা হলো এটা এমার্জেন্সি লাইন, যেন দ্রুত ছেড়ে দেওয়া হয়। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে মনিকার বেড়ালটা নিরুদ্দেশ হয়ে গেল। বছরের শেষরাতে মনিকা নাথান-ফিলিপস স্কোয়ারে গেল বর্ষশেষের অনুষ্ঠান দেখতে। প্রচন্ড হুল্লোড় আর উল্লাসের মধ্যে কাউন্টডাউন সারা হলো। গভীররাতে মনিকা একা বাড়ি ফিরছিল হেঁটে হেঁটে। রঙ পাল্টাতে থাকা স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল, একের পর এক জনহীন স্টোরগুলো, উইনারসের সাদা লেখাটার দিকে মনিকা তাকিয়ে রইল খানিকক্ষণ। স্কিৎজোফ্রেনিক শহরে প্রতিটা নিয়ন সাইন যেন ঝলমল করছিল সেইরাতে। পরেরদিন অর্থাৎ নতুন বছরের প্রথম দিনে, আকস্মিকভাবে, মনিকার বেড়ালটা ফিরে এল। ভেজানো দরজার পাল্লা ঠেলে সে ঘরে ঢুকল। মনিকাকে খুঁজে বেড়ালো সারাঘরে। মেঝেতে লেজ গোল করে বসল, ডাকল কিছুক্ষণ, গলা চুলকোল। তারপর সে মন্থরগতিতে অ্যাপার্টমেন্ট ছেড়ে চলে গেল শহরের মারকুটে বেড়ালদের সঙ্গে যোগ দিতে।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • গপ্পো | ২৬ এপ্রিল ২০২১ | ২৫৪৫ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    ইঁদুর  - Anirban M
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন