এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  গপ্পো

  • শ্রোডিঙ্গারের বেড়াল

    সায়ন্তন চৌধুরী লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ১৭ মার্চ ২০২২ | ১৮৪৯ বার পঠিত | রেটিং ৩ (১ জন)
  • তখন আমি ছিলাম দারুণ গরীব এবং দারুণ সুখী, হেমিংওয়ের মতো বলতে পারলে ভালো হতো; কিন্তু সত্যিটা এটাই, পকেটে পয়সা না থাকাটা বেশ কষ্টকর ব্যাপার। তখন আমি থাকতাম ডাউনটাউন ব্রুকলিনের একটা বেসমেন্ট অ্যাপার্টমেন্টে। আমার বাথরুমটা ছিল নিজস্ব আর শুধু এইটুকুর জন্যে আমি ঐ ঘুপচি অ্যাপার্টমেন্টটা ছাড়িনি। অনেকরকম ছোটখাটো কাজ করতাম আমি, যার মধ্যে রেস্তোরাঁয় বাসন ধোয়া থেকে শুরু করে ডেলিভারি সবই ছিল। কখনও কখনও বেশ অদ্ভুত কাজে জড়িয়ে পড়তাম। যেমন, কয়েকমাসের জন্যে আমি লং আইল্যান্ডের একটা স্ক্যাম কোম্পানিতে কাজ করেছিলাম, যাদের ব্যবসা ছিল টাকার বিনিময়ে আপনার প্রিয়জনের নামে সদ্য-আবিষ্কৃত একটা নক্ষত্রের নাম ‘অফিসিয়ালি’ বুক করে দেওয়া। হ্যাঁ, এটা একটা স্ক্যাম! আপনাকে সাবধান করে দেওয়া হল। কিন্তু এসব কাজ পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। আর জমানো টাকা ফুরিয়ে আসা হচ্ছে নিশ্চিত ঘটনা (বস্তুতপক্ষে মৃত্যু বাদে জীবনের সবচেয়ে নিশ্চিত ঘটনা)। একান্ত কোথাও কোনো কাজ না জুটলে আমার ভরসার জায়গা ছিল বুড়ো এনজোর ফলের দোকান। এনজো একজন খচ্চর ইতালিয়ান বুড়ো, যে মনে করত নিউ ইয়র্কের সবচেয়ে ভালো ফলের দোকানটা ওর। অবশ্যই এটা ভীমরতি ছাড়া কিছু নয়, এবং লোকটা ছিল হাড়কিপটে ও দুর্মুখ, কিন্তু তবুও আমার মনে হত শীতের শুরুতে বেকার হয়ে বসে থাকার চেয়ে এনজোর দোকানে ডেলিভারির কাজ নেওয়া ঢের ভালো। আটলান্টিক অ্যাভিনিউতে এনজোর দোকানে গিয়ে দাঁড়ালে বুড়ো এনজো প্রথমে এমন হাবভাব দেখাত যেন আমাকে চেনে না। তারপর কিছুক্ষণ তর্কাতর্কির পরে বুড়ো মেনে নিত যে, স্রেফ ব্যবসার খাতিরে ওর ডেলিভারির লোক দরকার। দুনিয়ায় ডেলিভারির কাজের মতো জঘন্য কাজ আর কিছু নেই, বিশেষত শীতকালে। তবুও এনজোর দোকান থেকে ডেলিভারি দিতে গিয়েই দুজন সুন্দরী ফরাসী মেয়ের সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছিল। সাদা মেয়েদুটি থাকত ব্রুকলিন হাইটসে। ওদের মধ্যে সম্পর্কটা ঠিক কী আমি বুঝতে পারিনি। প্রায় নিয়মিত ওরা এনজোর দোকান থেকে ফল কিনত। ওদের একজনের চোখের মণি ছিল বাদামী, অন্যজনের নীল। একদিন ফলের ক্রেট নামিয়ে চলে আসছি, যে মেয়েটির চোখের মণি বাদামী, সে আমাকে বকশিস দিয়ে হঠাৎ জিগ্যেস করেছিল আমি ভারতীয় কিনা। আমি মাথা নাড়লাম। তখন আমতা-আমতা করে বলল যে, যোগা সম্পর্কে ওর কিছু আধ্যাত্মিক প্রশ্ন আছে, যা ব্রুকলিনের সেন্টারগুলোয় জানা মুশকিল। এইসময় অন্য মেয়েটা ঘরে এসে ঢুকল। সে মিটিমিটি হাসছিল। আমি বাদামী চোখের মেয়েটাকে বললাম আমি যোগা সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানিনা। তুমি বিভিন্ন আসন সম্পর্কে জানো না? — মেয়েটা ব্যাকুলভাবে জিগ্যেস করল। যদ্দূর মনে পড়ছে, মিশনারী পজিশনের জন্যে পদ্মাসন উপকারী আর হলাসন অ্যানালের জন্যে, চলে আসতে আসতে আমি বললাম। অন্য মেয়েটা হাসিতে ফেটে পড়ল। তারপর থেকে ওদের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়ে গেছিল। ব্রুকলিনের দিনগুলো কাটছিল বৈচিত্র্যহীনভাবে। সেইসব দিনগুলোতে আমি গোগ্রাসে গিলতাম থ্রিলার, কল্পবিজ্ঞান আর এরোটিকা। তখন আমি সাদ পড়েছিলাম, যেটা আমার জীবনকে বদলে দিয়েছিল। ফাঁকা বিকেলগুলোয় আমি ব্রিজের দিকে হাঁটতে যেতাম। কখনও কখনও আমার মনে হতো আমার সময় শেষ হয়ে আসছে; আবার এক-একদিন সবকিছু সহনীয় লাগত কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই। হয়তো আমাদের জীবন, এই নিউ ইয়র্ক শহর একটা ফিল্ম ছাড়া কিছুই নয়, যার শেষটা অজানা থেকে যাবে — আমি কল্পনা করতাম। মাঝেমাঝে আত্মহত্যার কথা আমি ভেবেছি; সেটা আমাকে স্বস্তি দিয়েছে এই কারণে যে, ইচ্ছা করলেই থিয়েটারের এক্সিট লেখা দরজাটা খুলে আমি বেরিয়ে যেতে পারি। যাইহোক, এক শীতে বুড়ো এনজো হঠাৎ মারা গেল। আমার নিশ্চিত কাজ পাওয়ার জায়গাটা বন্ধ হয়ে গেল। প্যাসিফিক স্ট্রিটে আমার বন্ধু স্যামুয়েল একটা গ্যারাজে কাজ করত। ঘানার ছেলে, ইয়েলো ক্যাব চালাত; স্যামুয়েল আমাকে পার্ক স্লোপ এলাকায় একটা বারের সন্ধান দিল, যেখানে কাজ পাওয়া যেতে পারে। কোনো এক সোমবার আমি বারটায় গেলাম। আগে বারটেন্ডার হিসেবে অভিজ্ঞতা থাকায় কাজটা পেলাম আমি; আমাকে বলা হলো শুক্রবার থেকে শুরু করতে।

    বারের কাজটা পেয়ে আমার আর্থিক সমস্যার কিছুটা সমাধান হলো। সপ্তাহান্তে বড্ড ভিড় হতো জায়গাটায়; তাছাড়া এমনিতে কিছু লোক নিয়মিত মদ খেতে আসত। এক সন্ধ্যেয় আমি সেই ফরাসী মেয়েদুটোকে বারে দেখলাম। আমাকে দেখে ওরা প্রথমে অবাক হলো; তারপর ‘হাই’ বলে একটা টেবিল দখল করল। আমি বুঝতে পারলাম না ওরা ব্রুকলিন হাইটস থেকে এখানে কী করছে। আমি ওদের ওল্ড ফ্যাশনড আমেরিকান ককটেল বানিয়ে দিলাম। ওদের সার্ভ করতে গিয়ে শুনলাম ওরা কাছাকাছি একটা যোগা সেন্টারে ভর্তি হয়েছে এবং মাঝে মাঝে এই বারটায় আসে। ক্রমশ আমি লক্ষ্য করেছিলাম মেয়েদুটো যেন বারের অন্যান্য খদ্দেরদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ব্যাপারটা সুবিধের ঠেকছে না, এক শুক্রবার রাতে একজন ওয়েটার আমাকে চুপিচুপি জানিয়েছিল। রাতটা বেশ ভালই শুরু হয়েছিল; ফরাসী মেয়েদুটো জানলার ধারে টেবিলে বসে ওদের পানীয়ে চুমুক দিচ্ছিল। ওদের দুটো টেবিল পরে কয়েকজন ব্লন্ড যুবক মেয়েদুটোকে চুপচাপ লক্ষ্য করছিল। একসময় আমি চোখের কোণ দিয়ে দেখলাম ওরা উঠে মেয়েদুটোর টেবিলের দিকে এগোচ্ছে। মেয়েদুটোর কাছে গিয়ে ওরা কিছু বলল। মেয়েদুটো ঘাড় নাড়ল। এইসময় বারের অন্য কোণ থেকে তিনজন কালো ছেলে এগিয়ে এল। আমি লক্ষ্য করলাম মেয়েদুটো কিছু একটা আশঙ্কা করে টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছে; ঠিক তখনই মারপিট শুরু হল। প্রথমে অল্পসল্প ধাক্কাধাক্কি, তারপর হঠাৎ কালো ছেলেগুলোর একজন একটা ব্লন্ড ছেলের গায়ে মেয়েদুটোর টেবিলে রাখা ড্রিঙ্কস ঢেলে দিল। এইবার আসল বারফাইট আরম্ভ হল। দেখা গেল, অনেকেই একঘেয়েমি কাটাতে একটা মারামারি প্রত্যাশা করছিল: একদম হাড়-থেঁতলে-দেওয়া, দাঁত-উপড়ে-নেওয়া লড়াই। কেউ আমাকে চিৎকার করে বলছিল পুলিশ ডাকতে, একজন ওয়েটার চেঁচিয়ে সবাইকে হুঁশিয়ার করছিল ৯১১-এ ফোন করা হয়েছে। কিন্তু ততক্ষণে কাঁচের গ্লাস আর বোতল ছোঁড়াছুঁড়ি পুরোদমে চলছে। মেয়েদুটোর ব্যাপারে আমার কৌতুহল হচ্ছিল, কিন্তু একটা কাঁচের বস্তু আমার কানের পাশ দিয়ে শাঁই করে গিয়ে পিছনের দেয়ালে আছাড় খাওয়ার পরে ঝাঁপিয়ে টেবিলের আড়ালে আত্মরক্ষা করাটাই প্রয়োজনীয় মনে হল। যখন পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়, তখন আমেরিকানরা শেষ না দেখে ছাড়েনা, তা সে যতই মূর্খামি করতে হোক না কেন, মবি ডিক পড়েছে এমন যে কেউ এটা জানে। কিন্তু আমি যে আমি, নিজের দেশ ও ঐতিহ্য সম্পর্কে যার কোনো আগ্রহ নেই, আমার সেই মুহূর্তে একটা উপলব্ধি হল যে, আমি গান্ধীর দেশের লোক। আমি কেন এদের ঝামেলার মাঝে মরব? বিশেষত মেয়েদের কেন্দ্র করে ডুয়েল লড়ার আপদ উনিশ শতকেই শেষ হয়ে গেছে বলে আমার ধারণা ছিল। সৌভাগ্যক্রমে পুলিশ এসে পড়াতে বারের মারপিট থেমে গেছিল এবং সবাই দুদ্দাড় করে দৌড় লাগিয়েছিল। কোনোরকমে টেবিলের পিছন থেকে মাথাটা বের করে আমি দেখলাম চতুর্দিকে ভাঙা কাঁচ ছড়ানো, টেবিলচেয়ার ওলোটপালোট হয়ে আছে, মেঝেতে তরল গড়াচ্ছে। কেবল একজন লোক ধীরস্থিরভাবে বারের এক কোণে বসে নিজের পানীয়ে চুমুক দিচ্ছে। — তুমি কি আমাকে আরেকটা স্কচ বানিয়ে দেবে? — কালো লোকটা আমাকে জিগ্যেস করল। আমি খানিকক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বললাম — আমার মনে হয় পুলিশ এখন বার বন্ধ করে দেবে। লোকটা মুখ কুঁচকে হাসল — আরেকটা সন্ধ্যে ফালতু নষ্ট হলো। মেয়েদুটো অবশ্য ঠিকসময়ে বার থেকে কেটে পড়তে পেরেছে। এইসময় আমার মেয়েদুটোর কথা মনে পড়ল। লোকটা টেবিল থেকে উঠে আসতে আসতে চাপাস্বরে বলল — ইডিয়েটস! তারপর আমার হাতটা ধরে ঝাঁকাল — জোসেফ ফিল্ডস। ঠিক আছে। চলি এখন। আমি জিগ্যেস না করে পারলাম না যে, লোকটা এত শান্ত আছে কিভাবে। — কিড — লোকটা এমন সম্বোধন করল যে ঐ পরিস্থিতিতেও আমার হাসি পেয়ে গেল — বছর দশেক আগে আমি মেরিন কর্পসের একজন ছিলাম, যারা প্রথম ইরাকে ঢুকেছিল।

    এইভাবে জো-এর সাথে আমার আলাপ হল। ইরাক যুদ্ধের একজন ভেটেরান, যে তার অবসাদগ্রস্ত দিনগুলো ব্রুকলিনে কাটাচ্ছে। পিটিএসডি সম্পর্কে সবাই যা জানে, আমিও সেটুকুই জানতাম। কিন্তু কোনো প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ছিলনা। জো ফিল্ডসের সাথে আমার যত বন্ধুত্ব বাড়ল, আমি টের পেলাম এটা একটা অন্য জগত। একটা ভৌতিক জগত, জো বলেছিল, যা কিছুতেই পালাতে দেয়না। নিজের কাছ থেকে সরে থাকবার জন্যে আমি অনেক মদ খাই, আর অনেক লিখি। — কী লেখো? — আমি জানতে চাইলাম। উত্তরে জো আমাকে একদিন ওর অ্যাপার্টমেন্টে যেতে বলল। শনিবারের রাতে আমি জো-এর অ্যাপার্টমেন্টে যাবো ঠিক করলাম। একটা ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্ট, কিন্তু আমার চেয়ে ঢের ভালো; এরকম অ্যাপার্টমেন্টের জন্যে নিউ ইয়র্ক শহরে একজন তার বন্ধুর গলায় ছুরি বসাতে দুবার ভাববে না। ঘরে ঢুকে আমি একটা কাউচে বসে পড়েছিলাম। তুমি কিছু নেবে? ড্রিঙ্কস? অ্যালকোহল ছাড়া কিছু পাবেনা কিন্তু — জো বলল। আমি ঘাড় নাড়লাম, লাগবে না। জো আরেকটা কাউচে ধপ করে বসে পড়ল। তারপর হঠাৎ সামনের দিকে ঝুঁকে বলল, আমি নানারকম জিনিস দেখি। আমি অবাক হয়ে ভাবলাম লোকটা কী বলতে চায়। আমি জানিনা, জো দুদিকে মাথা নাড়ল, একটা পরাবাস্তব জগত যেখান থেকে নানারকম দৃশ্য উড়ে আসে আমার মাথার ভেতরে। সবকিছু অর্থহীন লাগে, রাতে ঘুম হয়না, সে হাসল, আর অদ্ভুতভাবে মনে হয় কমব্যাটের দিনগুলোই ছিল সবচেয়ে সুখের। খানিকক্ষণ নীরবতা। দূর থেকে রাস্তার আওয়াজ ভেসে আসছে। আমি উসখুস করছিলাম। জো জানলার দিকে উদাসভাবে তাকিয়ে আস্তে আস্তে বলল, সামারায় আমি তোমার অর্ধেক বয়েসী একটা বাচ্চাকে গুলি করেছিলাম। তাকে অস্থির দেখাচ্ছিল। সেইরাতে তার মুখ থেকে আমি একটা আশ্চর্য কাহিনী শুনলাম। ইরাকে যেকোনো শহরেই প্রচুর বাচ্চা দেখা যেত। আর্মি দেখেও তাদের পরিবারের কেউ তাদের সরিয়ে নিয়ে যেত না। ব্যাপারটা অদ্ভুত হলেও খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছিল না। কিন্তু সামারার কাছাকাছি কোনো শহরে যখন ইউএস আর্মি ঢোকে, জো ফিল্ডস ও তার সঙ্গীসাথীদের একটা ভয়ংকর অভিজ্ঞতা হয়। অন্য শহরের মতোই এখানেও প্রচুর বাচ্চা, তারা গোলাগুলির মধ্যেই রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। কিন্তু সেদিন সৈনিকরা মুখোমুখি হয় কিছু সুইসাইড ভেস্টপরা বাচ্চার। স্বাভাবিকভাবেই, জো ফিল্ডস একটা এগারো-বারো বছরের বাচ্চা ছেলেকে গুলি করে মারতে বাধ্য হয়। জো-এর অ্যাপার্টমেন্টে আমি তৃতীয় কোনো ব্যক্তিকে দেখতে পাইনি। আমার ধারণা হয়েছিল সে একা থাকে। পরে জেনেছিলাম আমার ধারণা ঠিক। সে কখনো বিয়ে করেনি। সেরাতে জো আমাকে ওর ডায়েরিগুলো দেখিয়েছিল; স্ট্রীম অফ কনশাসনেস স্টাইলে বিভিন্ন অনিয়ন্ত্রিত বর্ণনায় ঠাসা আর মাঝে মাঝে কিছু দুর্বোধ্য হাতে-আঁকা ছবি। একসময় ডায়েরিগুলো রেখে জো আমাকে জিগ্যেস করল ফিলিপ কে ডিক সম্বন্ধে আমার কী ধারণা। আমি বললাম ফিলিপ কে ডিক আমার খুব প্রিয় লেখক। আমি অ্যাসিমভের লেখা কোনোদিন পছন্দ করিনি, কেননা অ্যাসিমভ একজন দ্বিতীয়শ্রেণীর লেখক। ফিলিপ কে ডিক যে কল্পবিজ্ঞানকে চিরকালের মতো বদলে দিয়েছেন, তার কারণ তিনি বুঝেছিলেন কল্পবিজ্ঞান আসলে সাহিত্য ছাড়া কিছু নয়, ঠিক যে অর্থে ফ্লবেয়ার বা চেখভের লেখা সাহিত্য। তবে লোকটা স্কিৎজোফ্রেনিক ছিল, আমি মন্তব্য করেছিলাম। হয়তো, জো ফিল্ডস বলেছিল, ফিলিপ কে ডিকের ১৯৭৪-পরবর্তী লেখাগুলো আমাকে ভাবায়। আমি জানি ১৯৭৪-এর ফেব্রুয়ারী মাসে ফিলিপ কে ডিকের একটা দৈব অনুভূতি হয়েছিল, কিছু অলৌকিক দৃশ্যের অভিজ্ঞতা, যা তাঁকে এতটা প্রভাবিত করে যে তিনি আটহাজার পাতা ব্যাপী নোটস লিখতে শুরু করেন: দ্য এক্সিজিসিস অফ ফিলিপ কে ডিক। অবশ্য এই নোটের খুব সামান্য অংশই প্রকাশিত হয়েছে, কারণ তা এতই উদ্ভট ও ননসেন্স। ফিলিপ কে ডিকের প্রতি জো-এর আকর্ষণের কারণ আমি বুঝতে পারছিলাম। নিজের মাথার ভেতরে ভৌতিক জগতটাকে বশে রাখতে সে বেছে নিয়েছিল কল্পবিজ্ঞান, যেটা তার আত্মপ্রকাশের মাধ্যম। মাসছয়েক পরে জো ফিল্ডস আমাকে জানিয়েছিল, তার লেখা একটা গল্প অ্যাসিমভ পত্রিকায় ছাপার জন্যে মনোনীত হয়েছে।

    হেমন্তের মাঝামাঝি এসে যখন ব্রুকলিনের পার্কগুলোয় গাছেরা পাতার রঙ বদলে ফেলেছে, তখন নীনার সঙ্গে আমার দেখা হলো। সে ফিজিক্সের ছাত্রী, বোম্বে থেকে এসেছে। আমরা দু-একবার ডেটে গেলাম। আমার অ্যাপার্টমেন্টটা যতটা সম্ভব ঝেড়েঝুড়ে আমি ওকে থ্যাংক্সগিভিংয়ের দিন ডিনারে ডাকলাম। নীনা ভারতীয় খাবার পছন্দ করত। আমি ওর জন্যে কিছু স্পেশাল ডিশ বানিয়েছিলাম। খাওয়াদাওয়ার পরে আমরা একটা হরর ফিল্ম দেখলাম। অবশ্য নীনা গোটা সময়টা জুড়ে হেসে গেল। আমার ফিল্মটা ভালোই লেগেছিল। সেদিন সারারাত আমরা বকবক করেছিলাম। আমরা কিছুক্ষণ চুমু খেয়েছিলাম পরস্পরকে, কিন্তু শুইনি। কোনো এক সময়ে নীনাকে আমি জো ফিল্ডসের কথা বলেছিলাম, কিভাবে তার সাথে আলাপ হলো বলতে গিয়ে ফরাসী মেয়েদুটোর কথাও উঠল। মেয়েদুটোর সঙ্গে আমার এখনও যোগাযোগ আছে কিনা, সে ব্যাপারেই নীনা বেশি কৌতুহলী হয়েছিল; জো ফিল্ডস সম্পর্কে সে বিশেষ প্রশ্ন করেনি। আমি মাঝে মাঝে জো-এর সাথে আড্ডা দিতে যেতাম। ততদিনে বারের কাজটা ছেড়ে দিয়েছিলাম আমি। বেশিরভাগ সময় আমরা সাইফাই নিয়ে আলোচনা করতাম: আঁদ্রে নর্টন, জেমস টিপট্রি জুনিয়র (যাঁর আসল নাম অ্যালিস শেলডন), রজার জেলাজনি, উরসুলা লে গুইন, উইলিয়াম গিবসন, নীল স্টিভেনসন ইত্যাদি। ফিলিপ কে ডিক ছিলেন আমাদের দুজনের সবচেয়ে পছন্দের লেখক। আমি ডিক সম্বন্ধে স্তানিস্লাভ লেমের চমৎকার প্রবন্ধটার কথা জো-কে বলেছিলাম। — এরপরেই ডিক এফবিআইয়ের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিল, তাই না? — জো হাসতে হাসতে বলেছিল — যে, লেম আসলে একজন লোক নয়, বরং এল.ই.এম নামে একটা কমিউনিস্ট কমিটি, যারা আমেরিকার প্রকাশনা জগতে গোপনে জালবিস্তার করছে? ফিলিপ কে ডিকের লেখা আমাকে বারবার গ্রেগর সামসার বাস্তবতার কথা মনে করিয়ে দেয়। বিশেষ করে একদম প্রথম দিকের গল্পগুলো, যেমন পঞ্চাশের দশকে লেখা দ্য হ্যাংগিং স্ট্রেঞ্জার। একজন লোক দ্যাখে রাস্তার ধারে ল্যাম্পপোষ্ট বা বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং থেকে একটা মৃতদেহ ঝুলছে এবং চারপাশের মানুষজন খুবই স্বাভাবিক আচরণ করছে: এই আতঙ্কিত লোকটা অবশ্যই কাফকার চরিত্র হতে পারত। বস্তুতপক্ষে, ডিকের গল্পের কাফকাসুলভ বৈশিষ্ট্য আরও পরিস্কার হয়, যখন পুলিশ এসে চরিত্রটাকে বলে এটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা এবং কর্তৃপক্ষের সামনে লোকটা সেই মুহূর্তেই মেনে নেয় ব্যাপারটার মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু নেই। প্রশ্ন উঠতে পারে এর মধ্যে কল্পবিজ্ঞান কোথায়? সাইফাই এলিমেন্ট এসেছে এর পরে, কিন্তু ডিকের পরবর্তী কাজগুলো লক্ষ্য করলে দেখা যাবে সেখানে কল্পবিজ্ঞান ও কাফকাসুলভ বাস্তবতা ক্রমশ মিলেমিশে গেছে। এটা একটা অসাধারণ ব্যাপার, কেননা এভাবে একজন লেখক ক্রমশ যুদ্ধপরবর্তী আমেরিকার বাস্তবতাকে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। জো ফিল্ডস উল্লেখ করতউই ক্যান রিমেমবার ইট ফর ইউ হোলসেল গল্পটা, যা থেকে একটা বাজে সিনেমা হয়েছিল নব্বইয়ের দশকে। ক্রমশ আমরা ষাটের দশকের আমেরিকার কথা ভাবতাম। জো ফিল্ডস তার প্রথম উপন্যাসটা লিখতে শুরু করেছিল। তার আর নিউ ইয়র্ক ভালো লাগছিল না। আমি ভাবছি ক্যালিফোর্নিয়ায় চলে যাবো, সে আনমনে বলত। একদিন সত্যিই সে ব্রুকলিন ছেড়ে চলে গেল। তুমি আমাকে ফোন করবে, সে আমাকে বলেছিল। আমি ঘাড় নেড়েছিলাম। সে চলে যাবার পর আমার খেয়াল হলো নীনার কথা আমি তাকে বলিনি। নীনা আর আমার জীবনও ক্রমশ পাল্টে যাচ্ছিল। একদিন নীনা আমাকে বলল যদি আমাদের বিয়ে করতে হয়, তাহলে নিউ ইয়র্ক ছেড়ে যেতে হবে; বড়ো শহরের এত খরচ চালানো আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। আমি কখনও নিউ ইয়র্ক ছেড়ে যাবার কথা ভাবিনি; আমি জানিনা কেন। আমার মনে হয় এই শহরটার ভেতরে একটা মজা আছে, যেটা আসলে ম্যানহ্যাটানের উঁচু উঁচু বাড়িগুলোর জন্যে নয় বা ওয়াল স্ট্রীটের নেকড়েদের জন্যে নয় বা দামী রেস্তোরাঁগুলোর জন্যে নয়; নিউ ইয়র্ক শহরের সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে যে, এত বিভিন্ন রকমের লোক এখানে বিভিন্ন রকমের জীবন কাটায়। দুনিয়ার সমস্ত জায়গা থেকে মানুষ এসে জুটেছে এইখানে, আর এটাই একটা শহরকে ইন্টারেস্টিং করে তোলে। কিন্তু শেষপর্যন্ত নীনার যুক্তি আমাকে মেনে নিতে হলো। আমি ওকে বললাম, ও যেখানে চাকরি করবে, সেখানেই গিয়ে আমরা থাকব। একদিন নীনা চাকরি পেল, আর তারপর আমরা নিউ ইয়র্ক ছেড়ে চলে গেলাম মিনিয়াপোলিসের একটা ছোটো কলেজটাউনে বাস করতে।

    নতুন শহরটায় আসার মাসদুয়েকের মধ্যে আমি স্থানীয় সুপারমার্কেটে একটা কাজ যোগাড় করলাম। নীনা কলেজে পড়াচ্ছিল। মোটের ওপর আমাদের বেশ সচ্ছলভাবে কেটে যাচ্ছিল। জো-এর সাথে দু-একবার আমার ফোনে কথা হয়েছিল। সে বলেছিল তার উপন্যাস ভালো বিক্রি হচ্ছে। ক্রমশ আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আমি মাঝে মাঝে নিউ ইয়র্ককে মিস করতাম। হাতে কাজ না থাকলে নীনা আমাকে পাত্তা দিত, নইলে দিত না। কোনো কোনো রবিবার আমরা সারাদিন বিছানায় শুয়ে থাকতাম এবং পরস্পরকে আদর করতাম। সন্ধ্যেয় উঠে আমরা কফি বানাতাম। আমি একটা ল্যাব্রাডর পুষেছিলাম। নীনা নাম রেখেছিল ডোডো। সন্ধ্যেবেলা ডোডোকে নিয়ে আমরা হাঁটতে বেরোতাম। আমাদের বাড়ি থেকে মিনিটসাতেক দূরে একটা লেক ছিল। লেকের পাশ দিয়ে বাঁধানো পথ। পথের ওদিকে পার্কে কয়েকটা কাঠের বেঞ্চ রাখা। নীনা হাঁটতে হাঁটতে বকবক করত। আমি শুনতাম। কলেজের কথা, সংসারের কথা, আমাদের ভবিষ্যতের কথা। বকতে বকতে ক্লান্ত হয়ে গেলে বেঞ্চগুলোর একটাতে গিয়ে আমরা বসতাম। ডোডো একটুদূরে খেলত। আমাদের পিছনে পার্কের ওপারে গাড়ি চলাচলের রাস্তায় স্ট্রীটল্যাম্পগুলো জ্বলে উঠত। আমরা পাশাপাশি বসে দেখতাম শেষবিকেলের আলোটুকু মুছে গিয়ে কেমন হ্রদের জলে ঝুপ করে অন্ধকার নেমে আসছে। আকাশে একটার পর একটা তারা ফুটে উঠছে, দেখতে দেখতে নীনা বলত ওর অ্যাস্ট্রোফিজিক্স পড়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু ভাগ্যক্রমে ও সলিড স্টেট ফিজিক্সের লাইনে চলে এসেছে। সবকিছুই আশ্চর্য মনে হয় আমার, আমি বলতাম, এদেশে আসা, তোমার সঙ্গে দেখা হওয়া — আমেরিকা আসলে শ্রোডিঙ্গারের বেড়ালের মতো, নয় কি? কেউ জানে না জার্নির শেষে কী অপেক্ষা করছে। নীনা হেসে ফেলত, প্লিজ, দার্শনিক হোয়োনা। তারপর আমরা শুনতে পেতাম হ্রদের জল থেকে বুনো হাঁসেদের কোয়াক-কোয়াক ডাক ভেসে আসছে। সেই শুনে ডোডো উত্তেজিত হয়ে লাফাত। নীনা ডোডোকে শান্ত করত। তারপর আমরা হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি ফিরতাম। একদিন নীনা আমাকে বলেছিল ওকে লস এঞ্জেলস যেতে হবে একটা কনফারেন্সে। তুমি আমার সঙ্গে আসতে চাও? — ও জিগ্যেস করেছিল। আমরা ফ্লাইটের দুটো টিকিট কাটলাম আর একটা শস্তা হোটেল বুক করলাম এল.এ.তে। ডোডোকে এক প্রতিবেশীর কাছে রেখে নীনা আর আমি ক্যালিফোর্নিয়া উড়ে গেলাম। বিকেলবেলা এল.এ. পৌঁছে নীনা আমাকে বলল পরেরদিনটা ও ব্যস্ত থাকবে ওর প্রেজেন্টেশনের কাজে। একা একা বোর হব হোটেলে বসে, আমি বললাম। বাচ্চাদের মতো কোরোনা, নীনা বলল। সেদিন রাতে আমরা একটা চাইনিজ রেস্তোরাঁয় ডিনার খেতে গেলাম। হোটেলে ফেরার পথে আমি নীনাকে বললাম আমি পরেরদিন জোসেফ ফিল্ডসের সাথে দেখা করতে যেতে চাই। নীনা আমার দিকে এমনভাবে তাকালো যেন প্রলাপ বকছি। আমি একটা রেন্টাল কার নিয়ে নেব, আমি বললাম। পরেরদিন সকালে আমি জো-কে ফোন করলাম। প্রথমে সে যেন আমার গলার স্বর চিনতে পারল না। তারপর আমি এল.এ.তে এসেছি শুনে সে দারুণ খুশি হল। আমি তাকে আমার পরিকল্পনা জানালাম। এসো, এসো, এসো — সে তিনবার বলে ফোনটা রেখে দিল। জোসেফ ফিল্ডস সান পেদ্রোর বাইরে সমুদ্রসংলগ্ন একটা নেবারহুডে বাস করছিল। ইন্টারস্টেট ১১০ ধরে দক্ষিণদিকে ভাড়া-করা টয়োটা করোলা চালিয়ে আমি সান পেদ্রো পৌঁছলাম। কড়া রোদ উঠেছিল। সান পেদ্রোয় আমি রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিলাম। কয়েকবার ভুল রাস্তায় ঘুরে অবশেষে আমি জো-এর দেওয়া ঠিকানাটায় পৌঁছলাম। গাড়িটা পার্ক করে নেমে আমি জো-এর দরজায় নক করলাম। তারপর আমি ভেতর থেকে ঘষটে ঘষটে আসা পায়ের আওয়াজ পেলাম। জো দরজা খুলতেই আমি অবাক হয়ে গেলাম। তাকে ক্লান্ত আর বয়স্ক দেখাচ্ছিল। আমি ভাবিনি তোমার সাথে আবার দেখা হবে, সে হাসল। তোমার কী হয়েছে? — আমি জিগ্যেস করলাম। কিছু না, সে বলল, আমার প্যানক্রিয়াটাইটিস ধরা পড়েছে।

    জো-এর ঘর মধ্যবয়েসী ব্যাচেলর পুরুষের মতন অপরিপাটি; এখানে-সেখানে জিনিসপত্র ছড়ানো। জামাকাপড়, বই আর কাগজ, মদের বোতল সারি সারি। তুমি কি শেষপর্যন্ত আত্মহত্যা করবে ঠিক করেছ? — আমি বোতলগুলোর দিকে ইঙ্গিত করে বললাম। জো কথাটা উড়িয়ে দিয়ে বলল, লিন্ডা আসবে একটু পরে। লিন্ডার সঙ্গে তোমার আলাপ করিয়ে দেব। লিন্ডা কে? আমি প্রশ্ন করলাম। আমার লিটেরারি এজেন্ট, জো বলল। তারপর আমরা সোফাতে বসে খানিকক্ষণ চুপ করে রইলাম। বিয়ার নেবে? জো জিগ্যেস করল। আমি ঘাড় নাড়লাম। কেমন চলছে তোমার জীবন? সে আবার প্রশ্ন করল। আমি গলা ঝেড়ে বললাম, আমি একটা মেয়ের সাথে রয়েছি। নিউ ইয়র্কে থাকতে আলাপ হয়েছিল। সম্ভবত আমরা বিয়ে করব। জো মাথা নেড়ে বলল, দ্যাটস গুড। তুমি কেমন আছ? আমি জিগ্যেস করলাম, তোমার লেখালিখি চলছে? একইরকম, একইরকম আছি আমি, জো বিড়বিড় করল। আমি সোফা ছেড়ে উঠে ঘরের বইপত্রগুলো দেখতে লাগলাম। জো একটু গলা তুলে বলল, লিখে কোনো পয়সা পাওয়া যায় না, বুঝলে? তুমি জানো, ডিক কুকুরের খাবার কিনে খেত? আমি কোনো উত্তর না দিয়ে ঘরের কোণের দিকে এগিয়ে গেলাম। বেসবল ব্যাটের মতো একটা জিনিস আমি টেনে বের করলাম — একটা খাপসুদ্ধু তরোয়াল! এটা কী? আমি জো-এর দিকে ফিরে জানতে চাইলাম। জোসেফ ফিল্ডস আমার দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে হাসতে লাগল। বলল — নেপোলিয়নের তরবারী। লিন্ডা আমাকে এনে দিয়েছে। খাপ থেকে তরোয়ালটা বের করে হাতে নিতেই আমার সন্দেহ হলো। এটা এমন কিছু ভারী নয়, দেখে নকল মনে হচ্ছে, আমি বললাম। তুমি সত্যিকারের ভেবেছিলে? — জো আবার হাসতে লাগল। তারপর সে উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে বলল, দাও। আমার হাত থেকে তরোয়ালটা নিয়ে সে হাওয়ায় ঘোরাতে লাগল, যেন সে অদৃশ্য শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। অল্পক্ষণ পরে হাঁপিয়ে গিয়ে সে সোফাতে বসে পড়ল। দম নিতে নিতে বলল, আমার বাড়ির ব্যাকইয়ার্ড থেকে সমুদ্র মিনিটতিনেক দূরে। একটা কাঠের সিঁড়ি বেয়ে নামতে হয়। জায়গাটা পাথুরে; লোক আসেনা তেমন। তরোয়ালটা নিয়ে আমি মাঝে মাঝে ভোরবেলা যাই ওখানে। তরোয়ালটা ধরলে আমি মনের জোর পাই। ওখানকার পাথরগুলো দেখিয়ে তোমাকে আমি বলে দিতে পারি কোনটায় বসে হ্যামলেট পড়েছি আর কোনটায় ম্যাকবেথ। আমি তাকে বললাম, তোমার বাড়ি থেকে সমুদ্রটা এত কাছে বুঝতে পারিনি। আমি থেমে যাই। সে কথা বলেনা। আমি কানখাড়া করে থাকি যদি সমুদ্রের আওয়াজ শোনা যায়। একবার আমার মনে হয় ঢেউগুলো আছড়ে পড়ছে একের পর এক। পরক্ষণেই বোধ করি ওটা বিভ্রম। আমি হঠাৎ একজন মহিলার গলার আওয়াজ শুনতে পাই। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে কেউ ডাকছে। ওহো, লিন্ডা চলে এসেছে, জোসেফ উঠে দাঁড়ায়। তারপর সে গিয়ে দরজা খোলে। একজন বছর তিরিশের মেয়ে ঘরে এসে ঢোকে। লিন্ডার সঙ্গে আমার আলাপ করিয়ে দেয় জো। লিন্ডা আমাকে পাত্তা না দিয়ে জো-কে বলে, ফের তুমি মদ খাচ্ছ? আমি তরোয়ালটা ঘরের ঠিক জায়গায় রেখে দিই। জো আর লিন্ডার তর্কাতর্কি থেকে আমি জানতে পারি জো পেটের যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। ডাক্তার তাকে বলেছে সে মদ খেলে বাঁচবে না। উল্টে সে ডাক্তারকে বলেছে সে মদ না খেলে বাঁচবে না। লিন্ডা, লিন্ডা — জোসেফ অনুনয় করতে থাকে। ওদের ঝগড়ার মাঝে আমি একসময় বিদায় নিই। আমার টয়োটা করোলায় উঠে আমি এঞ্জিন চালু করি। জোসেফ হাত নাড়ে। আমি হাত নাড়ি। লিন্ডা স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। সেদিন ফেরার সময় সমস্ত পথ ক্যালিফোর্নিয়ার গোলাপি সূর্যাস্ত আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখে। আমার মাথার ভেতরে ঘুরতে থাকে জো-এর একটা প্রশ্ন: আমেরিকার মতো দেশে লেখকরা আদৌ কোন্‌ কাজে লাগে?

    এল.এ. থেকে নীনা আর আমি আবার মিনিয়াপোলিসে ফিরে আসি; আমাদের ছোটো শহরে, ছোটো জীবনে। নীনা জানতে চায় জোসেফ ফিল্ডসের কথা। আমি তাকে সবই বলি, শুধু তরোয়ালের কথাটা চেপে যাই। আমি জো-কে ফোন করি। তার শরীরের খবর জানতে চাই। তারপর ভুলে যাই। দিন কেটে যায়। একদিন নীনা আমাকে খবর দেয় ও ওর পিরিয়ড মিস করেছে। টেস্ট করে আমরা নিশ্চিত হয়ে যাই নীনা গর্ভবতী। প্রথমে ঘটনাটা আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না। আমাদের দৈনন্দিন জীবন তো একইরকম কাটছিল। আমরা সারাদিন কাজ করতাম, সন্ধ্যেবেলা ব্ল্যাঙ্কেটের নীচে পা ঢুকিয়ে সিনেমা দেখতাম, ডোডো এসে কখনো আমাদের পাশে চুপটি মেরে বসে থাকত নয়তো জ্বালাতন করত। শুধু মাঝে মাঝে আমার মনে পড়ে যেত নীনা প্রেগন্যান্ট। একদিন সারা মিশেল গেলারের সিনেমা দেখতে দেখতে আমি নীনাকে বললাম যে বিয়ের জন্যে সবচেয়ে উপযুক্ত গিফট হচ্ছে নোরা বার্নাকেলকে লেখা জয়েসের চিঠিগুলো। নীনা আমার গায়ে একটা চাপড় মারল। তারপর নীনা আর আমি ঠিক করলাম, এবার বিয়েটা সেরে ফেলা যাক। আমি জানিনা কেন, কিন্তু আমার বিয়ের দিনটার কোনো স্মৃতিই আমার নেই। আমার শুধু মনে পড়ে কোনো একসময় আমি নীনাকে বলেছিলাম আমার জলতেষ্টা পেয়েছে। বিয়ের পর দিনগুলো কেটে যেতে যেতে মাসে পরিণত হলো। কয়েকমাস পরে একরাতে আমি জো-কে হঠাৎ স্বপ্ন দেখলাম। মেঘলা আকাশের নীচে সমুদ্রের জল ছেড়ে ধীরে ধীরে একটা ভুতুড়ে জাহাজ মাথা তুলছে, অদ্ভুত কুয়াশায় আচ্ছন্ন দিকচক্রবাল, গম্ভীর ফগহর্নের আওয়াজ আর সে, জোসেফ ফিল্ডস, তরোয়াল হাতে সমুদ্রতীরে দাঁড়িয়ে: নেপোলিয়নের নকল তরবারী, যা দিয়ে সে অদৃশ্য শত্রুদের কচুকাটা করে চলেছে ক্রমাগত। আচমকা ঘুম ভেঙে যেতেই অসম্ভব আতঙ্কবোধ হল আমার। আমি নীনাকে ঠেলে বললাম — জো ফিল্ডস দেখেছিল প্রচণ্ড বিস্ফোরণে একটা এগারো-বারো বছরের বাচ্চার হাত-পাগুলো ছিটকে টুকরো টুকরো হয়ে যেতে। নীনা ঘুমজড়ানো গলায় অস্পষ্ট কিছু বলে চুপ করে গেল। আমি ওর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি। আস্তে আস্তে ওর ফোলা পেটটা ছুঁয়ে দেখি। তারপর বিছানা ছেড়ে উঠে আমি বাথরুমে যাই। ঘরে ফিরে এলে ডোডো আমার পায়ে মাথা ঘষে। তারপর আবার গুটলি পাকিয়ে শোয়। আমি বাকিরাত জেগে থাকি। পরদিন সকালে আমি জোসেফ ফিল্ডসের নম্বরে ফোন করি। রিং হয়ে হয়ে কেটে যায়। তারপর বলে এই নম্বর উপলব্ধ নয়। সারাদিন চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিই। রাতের দিকে নীনা নানারকম ঘর সাজানোর জিনিস কিনে বাড়ি ফেরে। আমি অবাক হয়ে বলি, কী ব্যাপার। আরে হ্যালোইন আসছে না? ও আরও অবাক হয়। আমরা বাড়ি সাজাই। আমি জো-কে ফোনে ধরার চেষ্টা করি। ওদিক থেকে কোনো উত্তর নেই। হঠাৎ আমার মাথায় আসে লিন্ডার সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা। আমি লিন্ডার ফোন নাম্বার জানিনা। কিন্তু ঐ এলাকায় লিটেরারি এজেন্টদের লিস্ট কি ইন্টারনেটে পাব না? নেট ঘেঁটে কয়েকজন লিন্ডার ইমেল খুঁজে পাই। তাদের মেল করি আমার সঙ্গে একবার যোগাযোগ করার জন্যে। কয়েকদিন কেটে যায়। কোনো উত্তর আসেনা। আমি হতাশ হয়ে যাই। হ্যালোইনের সন্ধ্যেবেলা নীনা আমাকে কতকগুলো লাল-নীল মোমবাতির প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে কী যেন করতে বলে। মোমবাতিগুলো নিয়ে আমি বসে থাকি। একের পর এক বাচ্চারা উদ্ভট কস্টিউম পরে ক্যান্ডি নিতে আসে। আমি বারবার দরজা খুলি। বন্ধ করি। দু-একবার ফোন আসে। ফোন ধরি। রাতের দিকে সব ক্যান্ডি শেষ হয়ে যাবার পর নীনা আর আমি ক্লান্ত হয়ে কাউচে বসে আছি, এমন সময় ফোনটা বাজল। আমি ফোনটা ধরলাম। ওপ্রান্ত থেকে লিন্ডা তার পরিচয় দিয়ে বলল আমার মেলটা পেয়েছে, কিন্তু ব্যস্ত থাকায় ফোন করতে দেরী হলো। আমি জোসেফ ফিল্ডসের খবর জানতে চাইলাম। ও বলল জো ফিল্ডস মারা গিয়েছে। হঠাৎ লিভার ফেলিওর। আমি কী বলব বুঝতে না পেরে খানিকক্ষণ চুপ করে রইলাম। কাউচ থেকে উঠে গিয়ে ফোনটা কানে ধরে জানলার কাছে দাঁড়ালাম। জিগ্যেস করলাম জো-কে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কিনা। তুমি কীধরনের বন্ধু? লিন্ডা ওদিক থেকে ধমক দিল, তুমি জো-কে অসুস্থ দেখে গেলে, অথচ যোগাযোগ রাখলে না? লিন্ডা, আমি শান্তগলায় তাকে জিগ্যেস করলাম, তোমার কী মনে হয় জোসেফ ফিল্ডসকে লোকে লেখক হিসেবে মনে রাখবে? লিন্ডা একমুহূর্ত চুপ করে রইল, নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা গেল, তারপর বলল — না। তারপর আরও দু-একটা কথা বলে সে ফোনটা রেখে দিল। আমি জানলা দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম আমাদের পর্চের আলোটা জ্বলছে, বাড়ির সামনের রাস্তাটা নিঝুম দেখাচ্ছে। আমি টের পেলাম নীনা আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। ও আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল। ওর উত্তল পেটের স্পর্শ পাচ্ছি। এখন অক্টোবরের শেষ। আর সপ্তাহখানেকের মধ্যে এই শহরটা বরফে ভরে যাবে। সম্ভবত আমাদের প্রথম সন্তান জন্মাবে শীতের মাঝখানে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • গপ্পো | ১৭ মার্চ ২০২২ | ১৮৪৯ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    ইঁদুর  - Anirban M
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • dc | 122.164.32.193 | ১৭ মার্চ ২০২২ ১০:৩৬504934
  • খুব ভালো লাগলো, বিশেষ করে কারন আমারও ফিলিপ ডিকের কিছু গল্প অ্যাসিমভের থেকে বেশী ভালো লাগে। 
  • বিপ্লব রহমান | ১৭ মার্চ ২০২২ ১১:২৫504935
  • শ্রোডিঙ্গারের বেড়ালই যেন অনিবার্য নিয়তি। ব্যর্থ সাই ফাই লেখক জোসেফ ফিল্ডসও বোধহয় তাই। এই চরিত্রটিকে অনেকদিন মনে থাকবে। গল্পটিকে তো বটেই। 

    শুভ 
  • জয়ন্ত | 156.146.59.39 | ২৪ মার্চ ২০২২ ০৭:৩৮505395
  • সুন্দর লেখা।
  • | ২৪ মার্চ ২০২২ ০৯:৫৪505398
  • হুঁ বেশ ভাল।
  • b | 14.139.196.16 | ২৪ মার্চ ২০২২ ১০:৪৮505402
  • সায়ন্তনের লেখার মধ্যে, দীর্ঘ বাক্যবিন্যাসে (সেমিকোলনের পরে  " কিন্তু সত্যিটা এটাই, পকেটে পয়সা না থাকাটা বেশ কষ্টকর ব্যাপার" ) একটা সচেতন   আড়ষ্টতা আছে, হঠাৎ পড়লে মনে হয় কোনো এক বিদেশি গল্পের অনুবাদ পড়ছি । মনোযোগ দাবী করে । 
  • :|: | 174.251.162.12 | ২৪ মার্চ ২০২২ ১১:৩৩505407
  • "হঠাৎ পড়লে মনে হয় কোনো এক বিদেশি গল্পের অনুবাদ পড়ছি ।" -- এগজ্যাক্টলি। এই ফিলিং-টা আমারও খুব হয়। পড়তে ভালো লাগে নোডাউট। কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারিনা কেন এমন মনে হয়। ভাবতাম কাহিনীগুলির পটভূমিকার জন্য কি? এতক্ষনে আন্দাজ পাইলাম!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে মতামত দিন