জানলার কাছে বসন্তের নরম রোদে সার দিয়ে সাজানো আছে কাঁচের বড় বড় বয়াম। মুখ গুলো ঢাকা আছে পরিষ্কার সাদা কাপড়ের ফেট্টিতে। বয়াম গুলোকে বাইরে থেকে দেখলে বোঝা যায় না তার মধ্যে কি রসদ লুকিয়ে আছে। কিন্তু যারা এই বাড়িতে রোজ ভাত খেতে আসে তারা ঠিক জানে। ভাতের পাতে লেবু, নু্ন, লঙ্কা দেওয়ার পাশাপাশি উড়ে বামুন ধনঞ্জয় একটু করে শালপাতায় ছুঁয়ে দিয়ে যায় বয়ামের সেই লুকোনো সম্পদ। কামরাঙা, কতবেল, জলপাই কিম্বা কোনদিন পাকা তেঁতুলের আচার। নতুন কাস্টমাররা অবাক হয়ে যায়। আর পুরোনো লোকেরা ভাবে আজ ... ...
আস্তে আস্তে যেন একটা সময় আমার চোখের সামনে একটু একটু করে অবয়ব নিচ্ছে। একটা আনকোরা ক্যানভাসে একটু করে ছবির ফুটে ওঠা দেখতে অসুবিধা হচ্ছে না। যে সময়কে প্রশ্ন করা যায়, যে সময়কে খুব সহজে ছোঁয়া যায়। তাতকুরা আসলে আমার হাই মাইওপিয়া অতিক্রম করে ছুঁতে পারা সেই সময়। আস্তে আস্তে যেন একটা গোটা গ্রামের ঘুম ভাঙছে আমার চোখের সামনে। সকালবেলা আড়মোড়া ভেঙে যে গতিবেগে বাইরবাড়ির থেকে জন বেরিয়ে চাষের খেতের দিকে গেল, আমি তার পাশাপাশি ঠিক সেই গতিবেগে ... ...
অর্থমন্ত্রী অশোক মিত্র একবার ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণায় লিখেছিলেন, যে, দিল্লির যোজনা কমিশনের সহসচিবকে তিনি বলেছিলেন, কলকাতা থেকে দিল্লি এলে তাঁর মনে হয়, গ্রাম থেকে শহরে এলেন। অস্যার্থঃ পশ্চিমবঙ্গ থেকে সম্পদ চুষে নিয়েই দিল্লি এবং পশ্চিমাঞ্চলের রমরমা। অশোক মিত্রের বর্ণনা অনুযায়ী সে বছর যোজনা কমিশনের অবশেষে পশ্চিমবঙ্গকে তার যথাযথ ভাগ দিতে সুপারিশ করে। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী সেই সুপারিশ খারিজ করেন। এ কোনো রাজনৈতিক স্লোগান বা লাইন নয়, কিন্তু মূল ন্যারেটিভটি ছিল এইরকমই। যা লোকে বিশ্বাস করত। ... ...
যজ্ঞের সমস্ত উপচার, অনার্য দাসেরাই সংগ্রহ করে দেয়। যজ্ঞের বেদী নির্মাণ, বিপুল সমিধসম্ভার, তৈজসপত্র, ঘি, দুধ, শস্য, ফল-মূল সর্বত্র তাদেরই হাতের স্পর্শ। যজ্ঞ শেষে পুরোহিতরা দক্ষিণা হিসাবে তাদের ঘরে নিয়ে যায় যে বিপুল সম্পদ – সোনা, রূপো, সবৎসা-গাভী, অজস্র শস্য সম্ভার, ধাতব কিংবা মাটির পাত্র – সে সবই অনার্য বৈশ্য ও শূদ্রদের পরিশ্রমের উৎপাদন। অথচ তারা বুঝতেই পারে না, দেবতারা কারা। পুরোহিতরা কাদের জন্যে যজ্ঞ করছেন। যে মন্ত্র তাঁরা বলছেন, তার মধ্যে কোথাও কী আছে বিপুল এই অনার্য শ্রমের সামান্যতম স্বীকৃতি? কঠোর শ্রমের পরিবর্তে অসহায় তাৎপর্যহীন এই জীবন তাদের ঠেলে দিতে লাগল আরও নিরাশার দিকে। মনে মনে আকুল প্রার্থনায় তারা আরও বেশি করে মাথা কুটতে লাগল তাদের নিজস্ব দেবতাদের পায়ে। ... ...
শিউলিদির বাবাকে দেখতে গেছিলাম। বাবা টার্মিন্যাল ক্যান্সারের রোগী। কল্যাণী রোডের ধারে শিউলিদিদের বাড়ি। বাড়ি বলতে আমি যা ভেবেছিলাম তেমন নয়। তার থেকে ন্যুন। সেই এম ডি পাশ করে আমি যখন আমাদের মফঃস্বলের একটি আধা-দাতব্য প্রতিষ্ঠানে গিয়ে চুপ করে বসে থাকতাম, তখন থেকে শিউলিদির সঙ্গে আলাপ। শিউলিদি ঐ প্রতিষ্ঠানটির ডে ম্যানেজার গোছের ছিলেন। আমি প্রায়ই যেতাম, চুপচাপ বসে থাকতাম। দু-তিন জন রোগী হত কোনো কোনো দিন। রোগী পিছু চল্লিশ টাকা করে নিত ওরা মনে হয়, তার থেকে চোদ্দ টাকা কেটে আমায় হাতে দিত ছাব্বিশ টাকা ।ঠিক ... ...
'আচ্ছা, সারা দেশে মোট কতজন ক্যান্ডিডেট এই পরীক্ষাটা দেয়?', লোকটা সিগারেটে একটা টান দিয়ে প্রশ্ন করলো।-'জানা নেই। তবে লাখ দশেক তো হবেই।', আমি বললাম।- 'বাব্বা! এতজন! সিট কতো ?'-'বলতে পারব না। ভাল কলেজ পেতে গেলে মেরিট লিস্টে যথেষ্ট ওপরে নাম থাকতে হবে।'-' তার মানে একটা লম্বা মেরিট লিস্ট হবে নিশ্চয়। তা, সবাই সবার নাম দেখতে পাবে ?'এই প্রশ্নে একটু অবাক হলাম। একটু বিরক্তিও বোধ হলো। ... ...
বলতে গেলে সে অনেক কথা। আর আমাকে যারা জানে তারা সবাই বলবে, একে দিয়ে কিসসু হবার নয়, বেহদ্দ আলসে। তবু দু-চার কথা পষ্টাপষ্টি বলে রাখাই ভালো, যা দিনকাল পড়েছে! চুপ করে থাকলে লোকে পরে পড়া ধরতে চায়! সেদিন আবার কে একজন বললেন, বেড়াল-গিরি করে করে কি আর ওর সময় আছে? সে কথাটাও নেহাত ফ্যালনা নয়।হ্যাঁ, কথা গুলোর দু-একটা হিন্দু-মুসলমান নিয়ে তো বটেই, জাত-পাত, ছেলে-মেয়ে, শ্রোডিঙ্গার ইকোয়েসন, এল্লাহাবাদ এক্সিবিসন -- সেসব ও আসতে পারে। অবিশ্যি সে আমার কলি-বেলা র কথা, তখন তো কেউ বোঝেনি এ বেটি পদ্ম নয়, ঘ ... ...
রেমডেসিভির বিষয়ক দু-একটি কথা। দেখা যাচ্ছে যে ধরণের প্রমাণের ভিত্তিতে রেমডেসিভিরকে আমেরিকার এফ ডি এ ছাড়পত্র দিয়েছেন, সেই সমস্ত প্রমাণ খুব জোরালো নয়। এতৎসত্ত্বেও ভারতে রেমডেসিভির নিয়ে এক ধরণের উন্মাদনা তৈরী হয়েছে কি? ... ...
দেখা হয়নি কয়েক চান্দ্রমাস l দেখা হবে না, এমনটাই জানি এখন l অথচ কী আশ্চর্য – দেবলীনার এই ছবিটার মুখোমুখি হওয়ার পর থেকে তোমাকেই মনে পড়ছে কেন যে... ! বিচ্ছেদ অবশ্যম্ভাবী ছিল l আর পূর্বনির্ধারিত ছিল এই মনোলোগ যা তোমাকে লেখার অজুহাতে আরও একবার রামধনু হয়ে উঠতে পারে পরতে পরতে l ১.“আমাদের এই ভালোবাসাটা ওরা মেনে নেয়নি l সবসময় আমাদের খারাপ চোখে দেখেছে, সন্দেহ করেছে l তাই আমি ঠিক করেছি এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাব l” (স্বপ্নার চিঠি) পড়তে পড়তে স্বরূপের বাবার উচ্চারণ থেমে যায়, সুমিতার ট্যাক্সি থমকে ... ...
অনুষ্ঠানের পরের দিনই লেখা শুরু করেছিলাম, তার পরে আর শেষ করি নি। আজ শ্রীশ্রী রবিশংকর পদ্ম সম্মানে ভূষিত হয়েছেন, তাঁর সম্মানে আজ লেখাটা শেষ করেই ফেললাম। জয় গুরুদেব :)অরূপ, বয়সে একটু বড় হলেও, স্কুলে আমার সহপাঠী ছিল। ব্যান্ডেল সেন্ট জনস। ভালো গান করত, হারমোনিয়াম বাজাত, ফলে স্কুলের প্রেয়ারে ও সামনের রো-তে দাঁড়াত। আমিও দাঁড়াতাম, কারণ আমি তবলাটা বাজাতাম। আমাদের মিশনারি স্কুলে প্রতিদিন হারমোনিয়াম তবলা সহযোগে দুটি করে গান হত। জনগণমন আর হে প্রভু, হে দয়াময়। দ্বিতীয় গানটা বুকের কাছে হাত জোড় করে গা ... ...
প্রথমেই একটা কথা সগর্বে বলে নেওয়া দরকার যে আমি হচ্ছি সেই অবলুপ্তপ্রায় ছাত্র সমাজের যোগ্য প্রতিনিধি যারা ইসকুল লাইফে মাস্টার মশাইদের নিরন্তর ঠ্যাঙ্গানি খেয়ে বড় হয়েছে এবং মাথা নামিয়ে স্বীকার করি যে সেইসব মাস্টার মশাইরা আমার এবং আমার মতন অনেক গাধার জীবনে না এলে আজ হয়ত এই জায়গায় থাকতুম না।প্রলোভন কি ছিলনা,ছিল সার,দস্তুরমতন ছিল।ইসকুলের মাস্টারমশাইরা যখন বাবা বাছা করে মাথায় হাত বুলিয়ে কড়া কড়া ট্রানস্লেশন কি হোয়াংহো নদী কোথায় গোছের টাস্ক করিয়ে নিয়েছেন,তখনই বুঝেছি যে সাধকের পথে কত বাধা,কত ... ...
বহু যুগ ধরে বাঙ্গালী মেয়েরা লক্ষ্মীর আরাধনা করে আসছেন, এই শারদীয়া মাসে দিকে দিকে তাঁর নামে শঙ্খধ্বনি হতেই থাকবে। তবু যতই তাঁরা লক্ষ্মীর জন্য হৃদয়মাঝারে ঠাঁই করে রাখুন, লক্ষ্মী কি সেই আসনে এসে বসলেন? ... ...
কোম্পানির খাস-নিয়ম, যেখানেই আস্তানা গাড়বে সেখানেই যাজক আর স্কুলমাস্টার থাকতে হবে। তাই কোম্পানির কলকাতায় আছেন রেভারেন্ড বাটলার আর রেভারেন্ড কেপ। কিন্তু কলকাতায় তখন গির্জা কোথায়? একটা ঠেকনা-দেওয়া আস্তানায় প্রভু যীশুর ভজন-পূজন চলছে। সেও আবার আদতে পর্তুগীজদের গির্জা। মুর্গিহাটার আওয়ার লেডি অব দ্য রোজারি। কোম্পানির এলাকায় ফ্রেঞ্চ বা পর্তুগীজ পাদ্রীদের ঢোকা মানা। আর্মেনিয়ান চার্চ আছে একটা। কলকাতার প্রথম চার্চ। কিন্তু প্রটেস্টান্ট ইংরেজ সাহেবরা সেখানে যান কি করে? এর আগে লোকজনের থেকে চাঁদা তুলে একখানা গীর্জা বানানো হয়েছিল বটে, আজকের রাইটার্স বিল্ডিং এর জায়গাতেই। পর পর দুটো বিপর্যয়, ১৭৩৭ সালের বিধ্বংসী ঝড় আর বন্যা আর ১৭৫৬ য় সিরাজ-উদ-দৌলার আক্রমণে সে গির্জা আর নেই। ... ...
১)আমার একটা লালমাটির রাস্তা আছে,স্বপ্নে৷ সেই রাস্তাটা সামনে বেশ সোজা৷ যত দূরে যেতে থাকে, ততই অ্যাঁকাব্যাঁকা হয়ে ঝাপসা হয়ে যায়৷ অনেক দূরে , যেখানে আকাশ নীলচে লাল আর মাটিটা সবজে লাল, সেখানে গিয়ে এই রাস্তাটা এঁকেবেঁকে হঠাৎ আকাশে উঠে যায়৷ ঘুম না এলে চোখ বুঁজে এই রাস্তাটাকে আমি দেখি ৷ দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ি৷ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখি, কিম্বা দেখি না, ঠিক মনে থাকে না৷ আমার স্বপ্নে আগে অনেক পুকুরও ছিল৷ ছোটবেলায় একসময় আমি শহর থেকে মফস্বলের আত্মীয়বাড়ীতে গিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘু ... ...
এই বৃহষ্পতিবার, ২৫ শে সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ হপ্তা। যে যেখানে আছেন, যেভাবে পারুন, প্রতিবাদ করুন। সেই খবর জানান। কিছু সংগঠিত করতে চাইলে , কোন মতামত থাকলে জানান এখানে,এতদিন ধরে যেখানে যা প্রতিবাদ হয়েছে, হচ্ছে, তার খবরাখবর, ছবি, ভিডিও, প্রতিবেদনও থাকুক এখানে ... ...
‘চুল’কানিস্থানঃ রানাঘাট স্টেশনের ১ নম্বর প্লাটফর্ম।কালঃ রাজ্যে পঞ্চম তথা শেষ দফা ভোটের আগের দিনের সকাল।পাত্রঃ চিনতে হলে শেষ অবধি ধৈর্য ধরুন।পোলিং পার্টির বাসে রানাঘাট কোর্ট পাড়ায় নেমে ষ্টেশন অবধি আসতে আসতে পাক্কা ছ’ মিনিটের জন্য ফুলিয়ার ট্রেনটা যখন মিস করলাম তখন অশান্ত মনের হোমাগ্নিতে আরও খানিক হবি বিসর্জন হল। সকাল চারটেয় উঠে রেডি হয়ে বেরতে দাঁতে কুটোটি কাটার সুযোগ পাইনি। সামনের শেডে ভাজা কচুরি দেখে মনে অসম্ভব লোভ সৃষ্টি হ ... ...
সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা ডাক্তারের চেম্বারে গাদাগাদি করে বসে থেকে, কড়কড়ে পাঁচশ টাকা খসিয়ে হাতে রইলো একখানা কাগজ। এ কাগজ যেমন তেমন কাগজ নয়, স্পেশালিষ্ট ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন, অ্যাবস্ট্রাকট আর্ট। কিছুটি বোঝার উপায় নেই। বোঝার দরকারও নেই। বুঝিয়ে দেবে ওষুধের দোকানের সেলসম্যান। ডাক্তারের দুর্বোধ্য লেখা কেমন অবলীলায় পাঠোদ্ধার করে ফেলে এ দেশের ওষুধের দোকানের সেলসম্যানরা। একবিংশ শতাব্দীতে আমরা মুঠিফোন দিয়ে শ্যামনগর থেকে সিঙ্গাপুরের সমুদ্রতরণীর শয়নকক্ষে থাকার ব্যাবস্থ্যা পাকা করে ফেলছি, কিন্তু প্রেসক্ ... ...
পুরানো সেই দিনের কথা (৩) - হাঁটি-হাঁটি পা-পা ... "যা চলে যায়, তা আর ফেরে না - এই প্রকৃতির নিয়ম। ডাইনোসরদের দিন গিয়েছে। যে থেরোপডরা একসময় পৃথিবীর রাজা ছিল, তারা আজ পাখি হয়ে রয়ে গেছে, দ্বিতীয় সারির জীব হয়ে। অতীতের সাক্ষ্য দেয় শুধু পাথর-হয়ে ... ...
আলমগীরের শেষ চিঠিঔরঙ্গজীবকে নিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশের অনেক ঐতিহাসিকেরা খুব স্পষ্ট দুটো শিবিরে বিভক্ত। খারাপ এবং ভালো। সাদা এবং কালো। আসলে একটা স্ট্যান্স অন্যটার প্রতিক্রিয়া। তাহলে সত্যিটা কি ? কোথাও একটা। যে জন আছে মাঝখানে। কিছুটা সাদা, অনেকটা কালো, আর কিছু ধুসর। জীবন যেরকম হয় আর কি। আমার আপনার মেজোমামা বা আপিসের বস - আদ্যন্ত খারাপ বা ভালো কেউ নয়। পাঁচমিশালী। সে সময়কার রাজা রাজরাদের মতন খুব অল্প বয়স থেকেই লড়ে যেতে হয়েছিলো ঔরঙ্গজীবকে । বাবা সাজাহান তার বাবা জাহাঙ্গীরের ... ...
‘একাত্তরের কথা কেউ মনে রেখেছে না কি? আর তাছাড়া আমি তো যুদ্ধ শুরু করেছিলাম মাত্র, শেষ করতে পারি নি। আমার যুদ্ধ ভারতীয় সেনারাই তো শেষ করে দিল’!…কথোপকথনে প্রয়াত পপসম্রাট, ১৯৭১ এর গেরিলা কমান্ডার আজম খান। ... ...