এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  উপন্যাস

  • অচলায়তনের রূপকথাঃ পর্ব ২০

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ০২ মে ২০২৩ | ৭৬৫ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • ১২
    উপসংহার
    সে রাত্তিরটা ভোলা কঠিন।
    কখন বারোটা বেজে গেছে, কিন্তু স্বামীজিদের বিবেকানন্দ আবাসে তিনজন মহারাজই জেগে রয়েছেন। আমাদের দু’জনকে আলাদা আলাদা করে জেরা করা হয়েছে। আগে ডাকা হয়েছিল প্রেমাংশুকে।
    আমি প্রেমাংশুকে বলে দিয়েছিলাম—আমাদের কেউ সিনেমা হলে দেখতে পায় নি, হাতে নাতে ধরে নি। বাকি সব অন্যের চুগলি নির্ভর। কিছুতেই স্বীকার করবি না যে  আমরা সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম।
    --কিন্তু ওরা যে ডাইনিং হলে রোল কল করেছিল, আমাদের ঘরে গিয়ে মশারি তুলে দেখেছিল!
    --তাতে কী হয়েছে? সত্যি কথা, আমরা খাবার সময় ডাইনিং হলে বা নিজেদের ঘরে ছিলাম না, কোথায় ছিলাম কেউ জানে না। তার মানে কি সিনেমা হলেই গিয়েছিলাম?
    --বেশ, তাহলে কোথায় ছিলাম?
    --আমরা ছিলাম স্কুল বিল্ডিং এর ছাদে। কেউ বলুক যে ছিলাম না! ওরা কি স্কুলের ছাদে চেক করেছিল? সিনেমা হলে তো কেউ আমাদের দেখে নি।
    --আচ্ছা, তাহলে আমরা খেতে যাই নি কেন? আর রাত্তিরে স্কুলের ছাদে গিয়ে কী করছিলাম?
    --আমরা বাড়ি ফিরে যাব, হোস্টেল ছেড়ে দেব। দুজনে ছাদে বসে ফিউচার প্ল্যানিং করছিলাম, সেটা কি অপরাধ না অস্বাভাবিক? আর আজ আমাদের খিদে মরে গেছল, ব্যস্‌।
    --তাহলে আমরা কেউই স্বীকার করব না যে পাঁচিল টপকে সিনেমা দেখতে গেছলাম?
    --প্রশ্নই ওঠেনা। কোশ্চেন ডাজ নট অ্যারাইজ। ওরা কেউ আমাদের হলে দেখে নি, স্কুলের ছাদে গিয়ে দেখে নি। কাজেই আমরা যা বলব সেটাই ট্রুথ।
    খানিকক্ষণ পরে প্রেমাংশু এল, একটু অসহজ, একটু থতমত খাওয়া ভাবভঙ্গি ।
    বলল ওকে বড় দুই মহারাজ খুব গ্রিল করেছে, জানতে চেয়েছে গেট পেরোলাম কী করে? দারোয়ানকে পয়সা দিয়ে, নাকি পাঁচিল টপকে?
    ছোট মহারাজ সুনীলদা জানতে চেয়েছিলেন কার গান বেশি ভাল লেগেছে? কিশোরকুমার নাকি হেমন্ত?  
    --আমি কিচ্ছু স্বীকার করিনি পোদোদা, শুধু ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে, পরে হাউমাউ করে কেঁদেছি। কোথায় ছিলাম তাও বলিনি। শেষে যেই বলেছি—আমার কী হবে মহারাজ? অমনি কেশব মহারাজ বললেন—এই প্রশ্নটা তোমার গুরু প্রদ্যুম্নকে জিজ্ঞেস কর গে।
    এরপর আমার পালা।
      পায়ে পায়ে গিয়ে স্বামীজিদের সামনে দাঁড়াই, কোন কথা বলি না। বড় ও মেজো মহারাজ দুটো চেয়ারে বসে, কিন্তু ছোট মহারাজ সুনীলদা দাঁড়িয়ে। উনি কি কোনদিন বড় হবেন না?
    কেশব মহারাজ আমাকে সাদর অভ্যর্থনা করলেনঃ
    --এই যে, এস এস।  একে আর কী বলব? দেখ, মাথা নীচু করে দু’হাত জড়ো করে কেমন দাঁড়িয়ে আছে, যেন ভাজা মাছটি উলটে খেতে জানে না। গুড বয়!  লাইক এ গুড বয়!
    এ আশ্রমের ভাল চায়! সারাক্ষণ কোথাও কোন বেচাল দেখলে এসে নালিশ করে—মহারাজ এই হয়েছে, মহারাজ ওই হয়েছে। ওতে আশ্রমের সুনাম চলে যাবে, একটা বিহিত করুন।
    বাঃ , এখন সেই ভাল ছেলেটি রাত্তিরে পাঁচিল টপকে নাইট শোতে সিনেমা দেখতে গেছিলেন। শুধু যে নিজে বখেছেন তাই নয়, একটি জুনিয়র ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে গেছেন, ওকেও বখামিতে দীক্ষা দিয়েছেন।
    --না মহারাজ!
    --মানে?
    --সিনেমা দেখতে যাই নি। স্কুল বিল্ডিঙয়ের দোতলার ছাদে আমি আর প্রেমাংশু কথা বলছিলাম।
    --খাওয়ার সময় চলে গেলেও? কী সেই প্রাণের কথা?
    --মহারাজ, আমরা দুজনেই ইন্ডাস্ট্রিয়াল শহরের ছেলে। ও আসানসোল, আমি ভিলাই। আমরা আগামী বছর হোস্টেল ছেড়ে অন্য স্কুলে যাব, নিজেদের শহরে। ভাল করে পড়াশুনো করব, এই সব।
    --আচ্ছা! ভালকরে পড়াশুনো? আশ্রমের নামকরা স্কুলে পোষাল না, অন্য স্কুলে? ক্লাস ইলেভেনে? শুনলেন আপনি, বড় মহারাজ!
    --হুঁ; বেড়াল বলে মাছ খাব না, কাশী যাব?
    --শোন, আমি তোমাকে বলে দিচ্ছি—তুমি উচ্চমাধ্যমিকের বেড়া ডিঙোতে পারবে না। এখান থেকে রাস্টিকেট হবে, কোথাও ভর্তি হতে পারবে না। শেষে কোলকাতার পথে পথে পকেট মেরে উঞ্ছবৃত্তি করে পেট চালাবে।
    --না, মহারাজ।
     --বিশ্বাস হচ্ছে না?  পাঁচ বছর পরে আমার কথা মিলিয়ে নিও।
    --হ্যাঁ মহারাজ।
    --দুত্তোর নিকুচি করেছে তোর ‘হ্যাঁ মহারাজ’ আর ‘না মহারাজের’। দূর হ’ আমার চোখের সামনে থেকে।
    বড় মহারাজ বললেন—তোকে আর কী শাস্তি দেব? পরীক্ষা হয়ে গেছে, যেদিন গার্জেন নিতে আসবে সেদিন তোর কীর্তিকাহিনী বলে হাতে টিসি ধরিয়ে দেব। তদ্দিন আমাদের আশ্রমের  অন্নধ্বংস কর।
    --হ্যাঁ মহারাজ।

    পরের দিন। দুপুরে খাওয়ার ঘন্টার আগেই গুরু অমিয়দা এবং প্রশান্তের বাড়ি থেকে  লোক এল, বিছানা বাঁধা আর ট্রাঙ্ক গোছানো চটপট হয়ে গেল। যাবার আগে আমরা সবাই একে অন্যকে জড়িয়ে ধরলাম, ঠিকানা নিলাম। কিন্তু, জানি যে হয়ত আর দেখা হবে না।
    গুহ্যপক্ক পোদো কোথাও পাঠ করিয়াছিল যে এক নদীতে দ্বিতীয়বার অবগাহন সম্ভব নহে। ঘড়ির কাঁটা জোর করিয়া পিছনপানে ঘোরানো যায় না।
    গুরু অমিয়দা আগামী মার্চ মাসে বাড়ি থেকে এসে হায়ার সেকেন্ডারি দেবে, তারপর কলেজ। আমি টিসি পাচ্ছি, তায় ‘হোমোসেক্সুয়ালিটি’ হয় জেনে বাবা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে আমাকে নানুকাকুর ওখানে হোস্টেলে দেবেন। বিপ্লবও আশ্রম এবং স্কুল ছেড়ে দেবে। রইল প্রশান্ত, নিখিলেশ ও বিশু।
    কীর্তনিয়া পরিবারের ছেলে বিশু বড্ড সেন্টিমেন্টাল। বলল—তোমরা সবাই চলে যাচ্ছ-- আমিও থাকব না।  
    গুরু বলল—দূর পাগলা! লাইফ ইজ লাইক দ্যাট। কেউ কারও জন্যে বসে থাকে না, এগিয়ে যাওয়াই নিয়তি। একটা ভাল দেখে চার লাইন কীর্তন শোনা দেখি।
    --পদকর্তা জ্ঞান দাসের একটা শোনাই?
    --বেশ, আমাদের মত অজ্ঞান দাসের তাই সই।
    বিশু গলা খাঁকরে একটু গুনগুন করে সুরু করলঃ
    “সুখের লাগিয়া  এ ঘর বাঁধিনু অনলে পুড়িয়া গেল,
    অমিয় সাগরে সিনান করিতে সকলি গরল ভেল।
    সখী, কী মোর করমে লেখি!
    শীতল বলিয়া ও চাঁদে সেবিনু ভানুর উদয় দেখি”।
    ওর গলা ধরে গেল, আর গাইতে পারল না।
    আমার রাগ হয়ে গেল। এসময় আর গান খুঁজে পেল না? ভোঁদাই কোথাকার! রমেন একটা হিন্দি গান শোনাক দেখি। কোন মনখারাপের গান হলে চলবে না।
    --আচ্ছা, প্যারডি শোনাই? শাম্মী কাপুরের হিট ফিল্মের গানের?
    আমরা মহাউৎসাহে মাথা নেড়ে সায় দিই।
    --ইয়াহু! ‘দাদা ধরে দিল যে এক জংলি মেয়ে,
            দিয়ে দিল তার সাথে আমার বিয়ে,
            আজ বিশ বছর ধরে সংসার করেও সুখ পেলাম না।
             পোড়ে রান্না, ধরে কান্না,
              সারাদিন কিছু খায় না।
              আমার মাংস, করে ধ্বংস,
             বলে স্বামীর কাছে থাকব না।
            ভাই রে, বল না,
            সত্যি কি থাকবে না”?

    আশ্রমে আমার অদ্যই শেষ রজনী। আশ্রম প্রায় খালি।  রাত্তিরে খাওয়ার সময় ডাইনিং হলে দু’শোর জায়গায় পঞ্চাশ জনের পাত পড়েছে।  মাছের সাইজ যেন একটু বড়, নাকি আমারই মনের ভুল। খাওয়া শুরুর আগে সবাইকে চমকে দিয়ে জোর গলায় সুর করে বলে উঠিঃ
       “ব্রহ্মার্পণং ব্রহ্মহবির্ব্রহ্মাগ্নৌ ব্রহ্মণাহুতম্‌,
        ব্রহ্মৈব তেন গন্তব্যং ব্রহ্মকর্ম সমাধিনা।।
     হরি ওঁ তৎ সৎ”।।    

    পরের দিন। বিকেলে আমাকে নিতে নানুকাকা আসবে, মহারাজ টিসি দেবেন, সে না হয় দেখা যাবে। আমি নিজেই তো হোস্টেল ছেড়ে দিচ্ছি। আসানসোলে নানুকাকার চেনা রেলওয়ে স্কুলে ভর্তি হব।
      ভাল করে সাবান মেখে স্নান করলাম। পুকুরপাড়ে বেড়িয়ে এলাম। তারপর বেডিং, বাক্সপ্যাঁটরা গুছিয়ে সাজগোজ শুরু। আসানসোলের ছেলেমেয়েগুলোকে ইম্প্রেস করতে হবে না!
      বাবার দেওয়া মাখন জিনের সাদা প্যান্ট, বাইশ ইঞ্চি ঘেরের। স্থানীয় টেলরিং শপ থেকে সেটা কাটিয়ে সাড়ে চোদ্দ ইঞ্চি করেছি, তাতে আবার খানিকটা চেন লাগানো। একটা ফুলহাতা শার্টের উপর রঙচঙে সোয়েটার। ‘বিশ সাল বাদ’ সিনেমায় বিশ্বজিৎ যেমন পরেছিল।  স্বামী বিবেকানন্দের স্টাইলে মাঝখানে সিঁথি কেটে ঢেউতোলা বাবরি চুল। আয়নায় নিজেকে ভাল করে দেখলাম।
    নাঃ; গুরু অমিয়দার কথা মেনে হামাম সাবান মেখে চান করেছি বটে, কিন্তু গায়ের রঙ সেই আলকাতরার মত রয়ে গেছে। এক পোঁচও ফিকে হয় নি।
    অবশেষে অফিস থেকে খবর এল , প্রদ্যুম্নের বাড়ি থেকে নিতে এসেছে।  হাসি হাসি মুখে মালপত্র নিয়ে অফিসে হাজির হলাম। ঐ তো, অফিসের বাইরে নানুকাকার অ্যাম্বাসাডার গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। চেনা ড্রাইভার পরেশদা হেসে হাত নাড়ল। তারপর মালপত্র ডিকিতে তুলতে লাগল। আমি অফিসের ভেতরে গেলাম।   
    একী! বিশ হাজার ভোল্টের শক। নানুকাকা আসেন নি। ওঁর গাড়ি নিয়ে আমাকে নিতে এসেছেন আমার বাবা-মা। ওঁদের চেহারায় আষাঢ়ের মেঘ ঘনিয়েছে। পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম। মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করলেন না। গম্ভীর মুখে খসখসিয়ে টিসির দরখাস্ত লিখতে লাগলেন।
    সুনীল মহারাজ বললেন— টিসি চাইছেন কেন?  ও ছাত্র ভাল, কুসঙ্গে থেকে একটু ভুল করে ফেলেছে। সিনেমা-টিনেমা দেখেছে। অনশন করেছে। একবার ক্ষমা চাইলে আমরা ছেড়ে দেব।
    বাবা উদারার মধ্যমে বললেন—না, ও ক্ষমা চাইবে না। ট্রান্সফার সার্টিফিকেট দিয়ে দিন।  
    গাড়ি রওনা দিল। গেট খুলে দিয়ে দারোয়ান হাসিমুখে হাত কচলে বকশিস চাইল। বাবা ধমকে উঠলেন। বেচারা হতভম্ব, ছুটিতে বাড়ি যাবার সময় সবাই ওকে বখশিস দেয় যে! বাবা এর আগে দিয়েছেন তো।
    নিজের রূঢ়তায় লজ্জা পেয়ে বাবা মাকে বললেন—বখশিস চাইবে না কেন? রাত্তিরে গেটের তালা খুলে দেয় যে।
    বলতে পারলাম না—কথাটা সত্যি নয়। বলতে পারলাম না যে পাঁচিল টপকানোর অনেক ক্রিয়েটিভ কায়দায় আমি পারঙ্গম।    
    আশ্রম থেকে আসানসোল, কয়েক ঘন্টার মোটরগাড়ির যাত্রা। শালবন, কুয়াশা। ঘোর শীত,  অন্ধকার গাঢ়। আমি ঘুমে ঢুলতে থাকি, স্বপ্নে শুনতে পাই সন্ধ্যেবেলার আরাত্রিক—“খণ্ডন- ভববন্ধন -জগবন্দন বন্দি তোমায়”।
    বাবা ঠেলা মেরে জাগিয়ে দেন, বিরক্ত মুখে বলেন—জোয়ান ছেলে, অবেলায় ঢুলছ কেন? সোজা হয়ে বস।
    নানুকাকার বাড়ি এসে গেল। কাকু-কাকিমা হৈ হৈ করে অভ্যর্থনা করে ভেতরে নিয়ে গেলেন। জুতো-জামা ছাড়ার পর বাবা ডাকলেন।
    --শোন, তোমার পেছনে পাঁচ বছর যে টাকা খরচ করেছি সেটা ভস্মে ঘি ঢালা হয়েছে। তুমি আশ্রম থেকে এসেছ টেরিকাটা বাবরি চুলে যাত্রাপার্টির ললিতা সখী হয়ে। বাট ইউ আর দ্য সন অফ এ সোলজার। ডোন্ট য়ু ফরগেট দ্যাট।
    দাঁতে দাঁত পিষে বললেন—চোরের মতন হোস্টেল পালিয়ে সিনেমা দেখা! ছিঃ ! আমার একটা থাপ্পড় নেবার মত ক্ষমতা তোর রোগাপ্যাটকা শরীরে নেই, নইলে-- ।
    এই প্রথম আমি আমার রোগাটে চেহারার জন্যে গর্বিত হলাম। কিন্তু সেই সুখ বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না।  উনি বললেন যে নানুকাকা নতুন স্কুলের ফর্ম এনেছেন। সাতদিন পরে অ্যাডমিশন টেস্ট। কাজেই ঠেসে প্রিপারেশন করতে হবে। ইংরেজি আর অংক। টাইমপিস ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে ভোর চারটেয় উঠে পড়তে বস। রাত দশটায় লাইট অফ্‌। কাকিমারা খেতে ডাকলে যাবে। দুপুরে একঘন্টা বিশ্রাম।  বিকেলে আধঘন্টা বাগানে বেড়ানো, ব্যাস।
    এই ক’দিন ক্রিকেট খেলা বা খুড়তুতো ভাইবোনের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া ভুলে যাও।
    ছ’দিন কেটে গেল। কাল সকালে পরীক্ষা দিতে নতুন স্কুলে যাব। নানুকাকা ভরসা দিচ্ছেন—তুই  ঠিক পারবি, ঘাবড়াস না।
    বিকেলের দিকে বাবা বাগানে গার্ডেন চেয়ারে বসে নানুকাকার সঙ্গে চা খাচ্ছিলেন আর আসানসোলের কোল মাফিয়ার গল্প শুনছিলেন। পিওন এসে একটা বন্ধ ইনল্যান্ড লেটার বাবার হাতে দিয়ে গেল। আমার নামে চিঠি এসেছে টাটানগর থেকে। বাবা ভুরূ কুঁচকে ঠিকানা পড়ছেন। কিন্তু প্রদ্যুম্নের পাশে ব্র্যাকেটে লাকি লেখা কেন? আর পাঠিয়েছে কোন বিপ্লব (মিতা)।
    --এসব কী? তুমি লাকি? আর মিতা কোন ব্যাটাছেলের নাম হয়?
    --না, মানে আশ্রমে সবাই বলত আমার লাক্‌ খুব ভাল। পরীক্ষায় খুব কমন প্রশ্ন পাই, তাই নাম লাকি। আর বিপ্লব আমার আশ্রমের বন্ধু। মিতা ওর বাড়ি থেকে দেওয়া ডাক নাম।
    --শোন, আমি কক্ষণো অন্যের চিঠি খুলে পড়ি না, নিজের ছেলেরটাও না। কিন্তু— এই চিঠি তুমিও পড়বে না। আশ্রমের বন্ধুদের ভুলে যাও। পেছনের ব্রিজ পুড়িয়ে ফেলে এগিয়ে যাও, নতুন জীবন শুরু কর।
    বন্ধ চিঠিটা উনি কুচিকুচি করে ছিঁড়ে হাওয়ায় উড়িয়ে দিলেন।
    আজও ভাবি, কী লিখেছিল বিপ্লব?
    হ্যাঁ, স্বপ্নে মিতা আসে, লাকির সঙ্গে কত গল্প করে। প্রথমেই বলে—কী রে লাকি, তোর খবর কী?
    আমি সত্যিই লাকি, কারণ আমার স্বপ্ন রয়েছে। দুর্ভাগা সে, যার কোন স্বপ্নই নেই।
                                                             (সমাপ্ত)

     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ০২ মে ২০২৩ | ৭৬৫ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    বকবকস  - Falguni Ghosh
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Kishore Ghosal | ০৩ মে ২০২৩ ১২:১৬519390
  • বেশ ঘটনাবহুল আশ্রম-স্কুল জীবনের সমাপ্তি হল। বেশ লাগল। 
    প্রসঙ্গতঃ আপনার "আহিরণ নদী সব জানে" বইটি পড়লাম। ভীষণ ভালো লাগল। 
  • Ranjan Roy | ০৩ মে ২০২৩ ১২:৫৫519393
  • অনেক ধন্যবাদ. 
  • Ranjan Roy | ০৩ মে ২০২৩ ২২:৫২519408
  • আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ. 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন