এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  গপ্পো

  • ভ্রান্ত পাটিগণিত

    Rezaul Karim লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ৪৭০ বার পঠিত
  • ভ্রান্ত পাটিগণিত
     
    মো. রেজাউল করিম

    বাবা আমার শহরের বড়ো কলেজে অনার্স পড়া দেখে যেতে পারলেন না। মৃত্যুর আগে বাবা কোনো চিকিৎসাও পেলেন না। তখন কাকডাকা ভোর- পাখির কিচিরমিচির শুরু হয়েছে, ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য মোরগগুলো গলা ছেড়ে হাঁক দিচ্ছে- এছাড়া চরাচরে আর কোনও সাড়াশব্দ নেই। মায়ের চিৎকারে ঘুম ভেঙে গেল, বিছানা থেকে নেমে দৌড়ে বাবা-মায়ের ঘরে গিয়ে দেখলাম বাবা বুকের একপাশ চেপে ধরে ব্যথা ব্যথা করে চিৎকার করছে; বৈদ্যুতিক পাখা চলছে তবুও আম্মা হাত-পাখা দিয়ে বাবার মাথায় বাতাস করছে- ভয়ার্ত তার চাহনি। অপরিণত বয়স, কোনও দিন এমনতরো পরিস্থিতির মুখোমুখি হইনি। তবুও মনে হলো বাবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে; মাকে বললাম, ‘ডাক্তার চাচাক্ আনতি যাচ্ছি, তুমি বাবাক্ দেইখি রাখ, ততক্ষণে ছোটো ভাইটাও উঠে এ-ঘরে এসে দাঁড়িয়েছে।’ বলার জন্যই বলা, তা না হলে এমন অবস্থায় বাবার জন্য মা কিই-বা করবে!

    চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে ঘর থেকে সাইকেলটা নামিয়ে ডাক্তার চাচার উদ্দেশ্যে সাইকেলের প্যাডেলে চাপ দিলাম। বড়োসড়ো কোনো অসুখ না হলে ‘ডাক্তার’ নামে পরিচিত আব্দুল মোত্তালেব চাচা-ই গ্রামবাসীর একমাত্র অবলম্বন। কম্মিনকালেও তিনি ডাক্তারি পড়েননি, কবে- কোন কালে শহরের কোনো হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চাকরি করতেন, আর কবে থেকে-বা গ্রামে বাড়িতে বসে নিজেই চিকিৎসক হিসেবে কাজ শুরু করেছেন সে কথা গ্রামের মানুষ ভুলে গিয়েছে। তবে চিকিৎসার ব্যাপারে তিনি খুব আন্তরিক। গুরুতর অসুখ হলে শহরের হাসপাতালে যেতে বলেন, সাধারণ রোগ-ব্যাধিতে নিজেই চিকিৎসাপত্র দেন- তাঁর ঔষধে কাজও হয়। কতক্ষণ সাইকেল চালিয়েছি মনে নেই। বাড়ি থেকে যখন রওনা দিয়েছিলাম তখন আলো-আঁধারির দ্বৈরথ চলছিল; এখন চরাচরে আলো; গ্রামের রাস্তার ধারে নিজ নিজ বাড়ির সামনে দু’একজন মানুষ দেখা যায়। ডাক্তার চাচা সব শুনে বিমর্ষ চাহনিতে বললেন, ‘হাসপাতালে নিয়া দরকার। এইডি কি আমার কাজরে ব্যাটা? তুমার সাইকেলে আমাক্ নিতি পারবান্ তো?’

    তাঁর কথায় আমিও বিষণ্ণ কণ্ঠে বললাম, ‘পারবোনে চাচা, উইঠি পড়েন?’

    ‘দাঁড়াও, চোখ-মুখি একটু পানি দিয়ি ডাক্তারি ব্যাগটা নিইয়ি আসি।’

    বিরতি ছিল বোধ হয় পাঁচ মিনিট। প্রতিটি মুহূর্তে আমার মনে হচ্ছিল ডাক্তার চাচা কি ইচ্ছে করে দেরি করছে? আরও কত কী বিক্ষিপ্ত চিন্তা মস্তিষ্কে ঘূর্ণায়মান...। কঠিন এক সময় পার করে উনি যখন সাইকেলের পেছনে ক্যারিয়ারে ওঠে বসলেন, মনে হচ্ছিল আরও জোরে সাইকেল চালানো যায় না? আহা! মাটির রাস্তা না হয়ে রাস্তাটা যদি পাকা হতো তাহলে নিশ্চয় আরও জোরে চালাতে পারতাম। দ্রুত বাড়িতে পৌঁছতে পারতাম; বাবা কত-না কষ্ট পাচ্ছেন। বাড়ির কাছাকাছি যেতেই সদর ফটকের সামনে কয়েকজন পড়শি দেখতে পেলাম, আর একটু এগুতেই মা, ভাইদের কান্না শুনতে পেলাম। ভেবেছিলাম...বাবার অবস্থা বুঝি আরও খারাপ হয়েছে, যে-কারণে ডাক্তার চাচার হাত ধরে তাঁকে অনেকটা টেনেই মায়ের ঘরে ঢুকলাম- কিন্তু ততক্ষণে সবশেষ।

    কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য বাবার রেখে যাওয়া ঠিকানায় জেলা শহরে পৌঁছলাম। কদিন থাকতে হবে- সাথে ছোটো একটা ট্রাভেল ব্যাগ ও অল্প কিছু টাকা। বাবার দূরতম আত্মীয় জালাল আহমেদ সম্পর্কে আমার ভাই। নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে দরজায় কড়া নাড়লাম। শহরে আধুনিক বাড়িঘরের মধ্যে পুরনো ইটের পাঁচিল ঘেরা বাড়িটা বড্ড বেমানানÑ পলেস্তারাবিহীন ইটের গাঁথুনি, ওপরে টিন। কাঠের দরজায় কষে দুটো লাথি দিলেই হয় তো ভেঙে পড়বে। কিছুক্ষণ পর দরজা খোলার শব্দ পেলাম; খালি গায়ে লুঙ্গি পরা এক ভদ্রলোক আমার সামনে দাঁড়িয়ে- অনুমান করে বয়স নিরূপণ দুরূহ; মুখাবয়ব রুক্ষ, চোয়ালের হাড্ডি দুটো উঁচু; যা তার চেহারার রুক্ষতা করেছে আরও প্রকট। লুঙ্গির ওপর থেকে কণ্ঠা অবধি বুকের হাড়গুলো গোনা যায়, মা বলেছিলেন বয়স হবে পঁয়ত্রিশ বছর- দেখে মনে হয় পঞ্চাশ। পরিচয় দিলাম পিয়াস রহমান। রসুলপুর গ্রামের হাফিজুর রহমানের বড়ো ছেলে। পরিচয় পাবার পরেই ভদ্রলোক ঘাড়ে হাত দিয়ে অনেকটা টেনেই ঘরে ঢোকালেন। সদর ঘরে একটা চৌকি আর দুটো কাঠের চেয়ার। উনি আমাকে চেয়ারে বসতে দিয়ে চৌকিতে পা তুলে আরাম করে বসলেন। অনর্গল বলে চললেন আমার বাবার কথা- বাবা তাকে কতটা স্নেহ করতেন, কবে কোন রেস্টুরেন্টে ভুনা খিঁচুড়ি খাইয়েছেন-ইত্যাকার নানা কথা; খবর না পাওয়ায় বাবার জানাজায় যেতে পারেননি, এজন্য তিনি বিষাদগ্রস্ত; বিষণ্ণ কণ্ঠে দুঃখ প্রকাশ করলেন। ‘এই দেকো দিকিনি- আমার অভ্যাস আর গেল নাকো। নিজি কথা বলার সময় অন্যির কথা খিয়ালই থাকে না। বসো তোমার ভাবিক্ ডাইকি আনি।’

    এক তরুণী আসলেন। পরনে সালোয়ার কামিজ, মাথায় ঈষৎ ওড়না দেয়া। সুশ্রী, ক্ষীণাঙ্গী, নির্মল হাসি ও নিষ্কলুষ চাহনি। প্রথম পরিচয়- তবে তেমন কোনো জড়তা নেই। অবলীলায় স্বামীর দিকে চেয়ে বললেন, ‘ভাই বইলি কি গায়ে কিছু দিতি হয় না? জামা না হোক, একটা গেঞ্জিও কি পরা যায় না?’

    জালাল ভাই উচ্চস্বরে হেসে ওঠে বললেন, ‘যে গরম, গায়ের চামড়া পয্যন্ত তুইলি ফেলতি ইচ্ছে করতিছে, আচ্ছা হইলো- গেঞ্জিখান পইরি আসি।’ ঘরে গিয়ে জালাল ভাই একটা স্যান্ডো গেঞ্জি গায়ে দিয়ে এলেন। দেখে বুঝতে কষ্ট হয় না বস্ত্রখ-টি তার  আয়ুষ্কাল পেরিয়েছে অনেক আগেই। দুখানা ঘর। সদর ঘরের পরে ওনাদের থাকার ঘর, উঠোনের শেষ মাথায় পাশাপাশি পায়খানা ও গোসলখানা। বাইরে ওনাদের শোবার ঘরের কাছেই ওপরে পুরনো জং ধরা টিনের ছাউনি দেয়া রান্নাঘর, তার পাশে টিউবয়েল। জালাল ভাই সদর ঘরের দরজা দিয়ে বের হয়ে আমাকে সব দেখিয়ে দিলেন। সাথে জানিয়ে দিলেন, রাত-বিরাতে দরজা খুলে পায়খানাতে যেতে কোনো অসুবিধে হবে না। ‘আরে শোনো ভাইডি চোর খবর নিয়িই চুরি করে। এ-পাড়ার চোরেরা জানে, আমি তাগোর চাইয়েও গরিব, আমার বাড়িতে তারা আসবিনানে। তুমি রাইতির বেলায় বাইর হলিপওে কুনু ভয় নাই, বুইলি রাকলাম। দুই মাসের কারেন বিল দিতি পারিনি। তাই বিদ্যুৎ বিভাগের বিয়াদবগুলান আইসি বিদ্যুতির লাইন কাইটি দিয়িছে। হেরিকেন আছে, সমস্যা হবিনানে।’

    কলপাড়ে ফ্রেস হয়ে ঘরে এসে বসলাম। ততক্ষণে ভাবী মুড়ি আর দুধ-ছাড়া লাল চা নিয়ে হাজির। জালাল ভাই বললেন, ‘ভাইডি তুমি ভাবীর সাথে কথা কও, সকালে শইলডা খারাপ ঠেকতি ছিল, তাই আইজ বাজার করা হয়নিকো। আমি বাজারের থি ঘুইরি আসি।’ কি বলা উচিত ঠাহর করতে পারলাম না; আচ্ছা বলে তাকিয়ে রইলাম।

    প্রথম দিনের পরিচয়ে কতই-বা কথা বলা যায় একজন নারীর সাথে- যিনি কি না দূর সম্পর্কীয় আত্মীয়ের স্ত্রী। বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা হয়েছে, ভাবী ঘরে হেরিকেন দিয়ে নামাজ আদায় করতে গিয়েছে, তারও দেখা নেই- অস্বস্তি, অন্তর্দাহ নিয়ে চৌকির ওপরে বসে আছি; ঘণ্টা পেরিয়েছে- ভাবীরও দেখা নেই। রাত বোধ হয় তখন আটটা- দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। দরজা খোলা ঠিক হবে কি না ভাবছি, এমন সময় এ-ঘরে ভাবীর আগমন ঘটল। তিনিই দরজা খুলে দিলেন। জালাল ভাই একটা পলিথিন ব্যাগ হাতে ঘরে ঢুকলেন। ভাবীর চেহারায় কোনও ভাবান্তর দেখলাম না। পলিথিন ব্যাগটা স্বামীর হাত থেকে নিয়ে ধীর পদক্ষেপে ভেতর-ঘরে চলে গেলেন। জালাল ভাইও এমনভাবেই তাকালেন মনে হলো যেন ওনার মধ্যেও কোনো ভাবান্তর নেই। উচ্চ শব্দে খোশমেজাজে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘কী ভাইডি তোমার ভাবী নিশ্চয় তুমাক্ একা রাইখি ঘরে খিল দিয়ি বইসি ছিল? বাজারে কাজ ছিল, তাই একটু দেরি হয়্যা গেল। কিছু মনে কোইরো না। ও অ্যাম্বাই। অপরিচিত মাইনষির সাথে সহজে কথা কতি পারে না। তয় মানুষডা খুব ভালোÑকলাম কিন্তু। নামাজ-কালাম, রান্নাবান্না, সেলাই-ফোড়াই সব কাজে পটু। এই যে তুমি আইসিছো না? ও মনে মনে খুশি, কিন্তু তা বুলবিনানে, তুমি তার মুখ দেইখি বুঝতিও পারবানানে।’

    রাতের খাবারের জন্য ভেতরের ঘরে ডাক পড়ল দশটারও পরে। সারাদিনের ক্লান্তিতে এর মধ্যে ঘণ্টাখানেক ঘুমিয়ে নিয়েছি। ভেতরের ঘরে আসবাব বলতে আছে চৌকি, কাঠের আলমিরা, একটা ছোটো টেবিল আর কাপড় রাখা আলনা। মেঝেতে মাদুর বিছিয়ে মেলামাইনের বাসন-কোসনে খেতে দেয়া হয়েছে। হেরিকেনের স্বল্প আলোয় চোখে পড়ল ভাতের গামলার পাশে ছোটো মাছ আর ডাল; আবার মেহমান অর্থাৎ আমার জন্য একটা ডিম পেঁয়াজ দিয়ে ভুনা করে রান্না করা হয়েছে।

    জালাল ভাইয়ের দরাজ কণ্ঠের আহ্বান, ‘ভাইডি খাও। ভাতের জন্যিই এই দুইন্যিয়ার মানুষ মারামারি, কাটাকাটি করতিছে। আমি ভালো হলি কী হবি? মানুষ ভালো থাকতি দিল নারে ভাইডি। ছোটোকাল থাইকি কত মানুষের গান শুনালাম। কত বিয়্যি বাড়িত্ গান গাইয়ি আলাম, তারাই আমার চাকরিডা খাইলো।’

    ‘থামো তো নতুন মানুষ দেখলি পারে প্যাটের কথা সব হড়হড় কইরি না বললি চলে না, না?’ অ্যাতোক্ষণ পরে ভাবীর উচ্চকণ্ঠী বাতচিৎ শুনলাম। মানুষ তিন জন। ডিম একটাÑ ভাবী হঠাৎ ডিমটা থালায় তুলে দেয়ায় খুব লজ্জায় পড়ে গেলাম। আবারও জালাল ভাইয়ের কণ্ঠ- মুখ ভর্তি ভাত, তার মধ্যেই গপগপ করে বলে উঠলেন, ‘আরে ভাইডি তুমি মেহমান। এইডি তুমার ভাবী তুমার জন্যি ইসপিশাল আইটেম বানাইছে। লজ্জা কইরো নাÑ খাও। তুমার বাবা আমার বাপজানের কী উপকারই না কইরিছে। আরাক দিন কবোনে, সারা জীবন তুমাক খাওয়ালিও সেই উপকারের প্রতিদান দিতি পারবোনানেÑ খাও ভাই।’

    খাওয়া শেষে ভাবী যখন বাসন-কোসন পরিষ্কার করতে ব্যস্ত তখন দরজা ভিড়িয়ে দিয়ে জালাল ভাই খাটের নিচ থেকে টেনে বের করল সেই জিনিস- একটা জাল- ওটা দিয়ে পাখি ধরতে হয়। তার নিচে একটা এয়ারগান। ‘এই জিনিস তুমার ভাবী দেখলিই খেইপি যায়। এই জন্যিই দরজা লাগায়া তুমাক দেখালাম।’ ওগুলো নাকি তিনি পৈত্রিক সূত্রে পেয়েছেন।

    দু’তিন দিনেই বুঝলাম, বাবা মারা যাওয়ার পরে এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে গ্রামে নিজ বাড়িতে মা যে দারিদ্র্য মোকাবিলা করছে- এরা দু’জন তার চেয়ে অধিক দারিদ্র্যের মধ্যে দিনাতিপাত করে। গ্রামে আমাদের বাড়িতে মোরগ-মুরগি আছে। ঘরের এদিক-ওদিকে শাক-সবজির বাগান আছে, একটা গরু দুধ দেয়। বাবা মারা যাওয়ার পরে মা উঠোনের পাশে লালশাক, পুঁইশাক লাগিয়েছে। এদের তো কিছুই নাই। জালাল ভাই মাঝেমধ্যে গান গাওয়ার আমন্ত্রণ পায়- কেউ দুশো, কেউ তিনশো টাকা দেয়। এ-রকম এক গরিব পরিবারে বসে বসে খাওয়া লজ্জাকর ব্যাপার। আমিও জালাল ভাইয়ের সাথে গানের অনুষ্ঠানে যাওয়া শুরু করলাম। উনিও খুশি হলেন। সাথে একজন যাওয়ার অর্থ উনি বড়ো শিল্পী হিসেবে বিবেচিত হন। এমনও হয় কেউ তিনশো টাকার কথা বলে বলে দুশো টাকা দেয়, পরে একশো দিবে বলে আর দেয় না। জালাল ভাই আগে একটা ফার্মেসিতে চাকরি করত। পাখি ধরা তার নেশা; বিশেষত শীতকালে শহরের আশেপাশের জলাশয়ে আগত পরিযায়ী পাখি ধরত- পেতও বেশ। শহরেই বিক্রি করত। একবার পুলিশের কাছে ধরা পড়ল। বিয়ের মাত্র কিছুদিন পরের ঘটনা। ভাবীর বাবা এসে তাকে নিয়ে গিয়েছিল, তালাকের প্রক্রিয়াও শুরু করেছিল। কিন্তু ভাবী বেঁকে বসায় তালাক হয়নি। সে আজ তিন-চার বছর আগের কথা। এতগুলো বছরে তাদের সন্তানাদি হয়নি। শহরের বড়ো ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করার মতো অর্থ নেই।

    এরকম এক দরিদ্র পরিবারে নিজেকে বোঝা মনে হয়। আমি নিজেও এদের সমগোত্রীয়। কাউকে না বলে টিউশনি শুরু করলাম। কলেজ শেষে ছাত্র পড়িয়ে বাসায় ফিরি বিকেলে, খিদেয় তখন পেট চোঁ-চোঁ। ভাবী ঠাণ্ড ভাত খুব যত্ন করে খেতে দেয়। ঠাণ্ডা ভাত খেতে হচ্ছে- এ কারণে দুঃখপ্রকাশ তার নিত্যদিনের অভ্যেসে পরিণত হয়েছে। ছাত্রের বাড়ি থেকে প্রথম মাসের বেতনের টাকা পেয়ে কিছু পাঠালাম বাড়িতে। কলেজের মাসিক টিউশন ফি-টা রেখে দুটো মুরগি, একটা রুই মাছ আর একমন চাল নিয়ে বাসায় এলাম। ভাবী তো মুখ হাঁ করে থুতনিতে আঙুলগুলো দিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করলেন- ‘ভাই তুমি ইডা কী কইরলা? ছাত্র মানুষ তুমার হাতে ট্যাকা দিল কিডা। তুমাক অ্যাত বাজার করতি বলিছে কিডা? পুরো মিথ্যে কথা চালিয়ে দিলাম। ‘আমি পাব কুথায় ভাবী? মা বাড়ি থাইকি পাঠায়ছে ভাবী। পাঠাইনি জিনিস তো ফিরত দিয়া যায় না। ’জালাল ভাই বাসায় ছিলেন না। আসা মাত্রই ভাবীকে মাছ কুটতে দেখে জিগ্যেস করলেন- মাছ আইলো কুথাত্যি। ’ভাবীর কাছ থেকে সব শুনে শুনে তিনি একরকম তেড়েই আসলেন আমার দিকে, ‘ভাইডি চাচা নিই, চাচী কত কষ্ট কইরি সংসারডা চালাচছে। চাচী এইডি কী কাম কইরল। তুমি বইলি পাঠাবা আর যেন এই কাম না করে। ইডা কুনু কতা হইলি? দুইডো প্যাটের খাবার দিয়্যি আরেকজন খাবি, এর জন্যি দাম দ্যাওয়া লাগবি? আর চাচা আমার বাপজানরে কয়বছর বিনিপয়সায় খাওয়াছে তাতো চাচীও জানে। চাচীক্ কয়্যা দিবা আর জানি এই কাম না করে।’

    পড়াশোনার ক্ষতি হলেও জালাল ভাইয়ের সাথে গানের অনুষ্ঠানে যাওয়া অব্যাহত রাখলাম। তাকে তবলটা শিখিয়ে দেবার জন্য বললাম। তাহলে ক্লায়েন্টের কাছে কিছু বেশি টাকা চাওয়া যাবে। সে যেটা বুঝেছে তা বলেই ফেলল, ‘শুনো ভাইডি তুমি গানের দলের ম্যানেজার, আমি গায়ক, আমার তবলচী মনা তো আছেই। এখুন-থি পাটি আলি পরে তুমিই কথা কবা। দামাদামী করবা, আমি শিল্পী মানুষ, ট্যকাপয়সা নাড়াচাড়া করতি মন চায় না।’

    দ্বিতীয় মাসে বাড়িতে পাঁচশো টাকা পাঠিয়ে আবারও এক মাসের চালসহ কিছু বাজার সদাই করে এক বন্ধুর মাধ্যমে পাঠিয়ে দিলাম সন্ধ্যার কিছু আগে। বন্ধুটি সেগুলো দিয়ে পুরো গল্প ফেঁদে এসেছে- ‘রসুলপুর গ্রামের থি পিয়াসের মা পাঠায়ছে।’

    সন্ধ্যার পরে বাসায় ফিরে সদর ঘরে ভাই-ভাবী দুজনকেই বিষণ্ণ মনে বসে থাকতে দেখলাম। বই এর ব্যাগটা রাখা মাত্রই জালাল ভাই আঙুল উঁচিয়ে ক্ষিপ্ত কণ্ঠে বললেন, ‘আমাক আইজ চিঠি লিকতিই হবি, তুমি কালই চাচীক্ দিয়্যি আসবা। এই জালাল বাঁইচি থাকতি হাফিজুর রহমানের ছাওয়ালের খাওয়ার জন্যি একজন বিধবা মহিলাক্ মাসে মাসে হাজার ট্যাকার বাজার পাঠাতি হবিনানে।’

    তাকে শান্ত করার জন্য বললাম, ‘আমি সামনের সপ্তায় গ্রামে যাবনি ভাই, আমিই বইলি আসবনে আর যানি বাজার না পাঠায়।’ ভাবলাম মানুষটা কত সরল। প্রথম মাসে এমনও হয়েছে শুধু ডাল রান্না দিয়ে ভাত খেয়েছি। ভাবী বোঝে এই কষ্ট, তিনি সকলের মুখে খাবার তুলে দিতে পেরে আনন্দিত নিশ্চয়। সেদিন রাতের খাবার ভালোই হলো। জালাল ভাই জানালো ‘ভাইডি তুমার কাম তো সামনের সপ্তায় বাড়বিনি। তুমার ভাবীর বাপজান দুই বছর পর মিয়াকে বাড়িতে নিতি চায় সপ্তা খানিকের জন্যি। আমি আর তুমি রান্না কইরি খাবোনে, কী কও? হো হো হো, ও বউ তুমি গরিবের বাড়িতে আবার আসবাতো নাকি বাপজানের বাসায় থাইকি যাবা?’

    স্বল্পভাষী ভাবী বলল, ‘তুমার সন্দেহ হলি আমি যাবো না কয়্যা দিলাম।’

    ভাবী নায়রে যেতেই রাতের বেলা ভাই বললেন, ‘ভাইডি ম্যালা দিন পর একটা কাম করতি চাই। এক সপ্তাহ তো রান্না কইরি খাতি হবি। আমি হেড বাবুর্চি, তুমি হেলপার। পাখির মাংস খাতি চাই। কাইল রাইতে বাইর হতি হবি।’

    ‘ভাই কেউ দেইখি ফেললি তো সর্বনাশ হবিনি।’

    ‘আরে নাহ্ ম্যালা রাইতে বাইর হতি হবি। ঠাণ্ডা পইড়িছে, কেউ দেখবিনানে। ’আগের রাতের কথামত রাত বারটায় বের হলাম। ভাইয়ের হাতে দীর্ঘ রশিযুক্ত জাল। আমার হাতে এয়ারগান। জাল দিয়েই পাখি ধরা হবে। একেবারেই পাওয়া না গেলে এয়ারগানের গুলি খরচ করে অন্তত একটা বালিহাঁস মারতে হবে। ঘর থেকে বের হতেই ঘোর লাগা আঁধার- আঁধারের মধ্যেই মূল রাস্তা ছেড়ে ক্ষেতের আইল ধরে এগিয়ে চললাম, দূরে কোনো পেঁচা ডেকে উঠল। জোনাক পোকার আলোতে পথ চলা বেশ সহজ। তবে ঝিঁঝি পোকার অবিরত ডাক পরিবেশকে অশান্ত করে তুলেছে।

    দু’জনেই একটা হিজল গাছে ওঠে বসেছি- গাছের একদিকে জলাধার- জলা-জংলা, সেখানে বকপাখি ঘুরে বেড়াচ্ছে। পাঁচ ছয়টা পাখি কাছাকাছি এলেই ওপর থেকে জাল ফেলা হবে- অপেক্ষার প্রহর বয়ে চলেছে। এক সময় পাঁচ-ছয়টা বক কাছাকাছি হতেই জালাল ভাই জালের রশি বাম হাতে ধরে ডান হাত দিয়ে জালটা শূন্য থেকে ছুড়ে দিল। জালটা গোলাকার বিশাল ফুলের আকৃতি ধারণ করে যমদূত হয়ে পাখিগুলোর ওপর নেমে  এলো। দুটো পাখি এর মধ্যে পালিয়ে গেল- চারটি জালের তলে। দ্রুত গাছ থেকে নেমে পড়লাম। পাখিগুলোকে সযত্নে ধরে খোলোইয়ের মধ্যে ঢুকানো হলো। দুইদিনের তরকারি কেনার ঝামেলা দূর হলো। ভাই বললেন, ‘চল বাড়িত্ যাই, তাড়াতাড়ি কর।’ কিছুটা এগোতেই মনে হলো কেউ একজন সাইকেলে চেপে মাটির রাস্তায় টর্চের আলো ফেলে ফেলে আমাদের দিকেই এগিয়ে আসছে। আমরা রাস্তার পাশেই একটা গাছের পেছনে গায়ে গা লাগিয়ে সিঁটিয়ে রইলাম। ভেবেছিলাম সাইকেল-আরোহী আমাদের অবস্থান শনাক্ত করতে পারবে না, কিন্তু বিধি বাম! সাইকেলধারী গাছের সামনে দাঁড়িয়ে গেল। সাইকেলটা স্ট্যান্ডের ওপরে রেখে ডান হাতে মোটা লাঠিটা ধরে বাম হাতে টর্চ জ্বালিয়ে জলদগম্ভীর কণ্ঠে বলল, ‘গাছের পিছে কিডারে? সামনে আয় কলাম।’

    জালাল ভাই ফিসফিস করে বললেন, ‘চৌকিদার রহিম বক্স জব্বর হারামি ঔষধ করতি চালি আইজ শালাক্ মাইরিই ফ্যালাবো’বলে এয়ারগানটা আমার হাত থেকে নিয়ে জালটা আমাকে দিলেন তিনি। তার কথায় ভয় পেয়ে গেলাম- ভাইয়ের ঈশারায় দুজনেই গাছের পেছন থেকে বেরিয়ে সামান্য উঁচু রাস্তায় ওঠে দাঁড়ালাম। রহিম বক্স টর্চলাইট জ্বালিয়েই রেখেছেন। আমাদের দেখে বললেন, ‘জালাল তুই আবার পাখি ধরিছিস? একবার জেল খাইটিও শিকখা হয়নিকো তোর? তুই না গায়ক? গায়ক কি চুরি করে-রে? সাতে কিডা?’

    জালাল ভাই খ্যাঁক খ্যাঁক করে উঠল। ‘এই রহিম, আমাক চোর কবি না কলাম। চেয়ারম্যান রিলিপ চুরি কইরি তোর বাড়িতেই না রাখিছিলো। পুলিশ তো তোকেও ধরিছিলো। তুই আমাক চোর বলিস? হারামখোর! পাখি মারা, মাছ ধরা শখ- ইডা চুরি না। ইডা সরকারি বিল। এই বিলি তুই দল বাঁইধি পলো দিয়্যি মাছ ধরিস তখুন চুরি না, আর আমি পাখি ধরলিই চুরি, না? এই বিলির মাছ যেমন আল্লাহ’র দান, পাখিও আল্লাহ’র দান। সইরি দাঁড়া, বাড়িত্ যাব।’

    ‘জালাল মাছ ধরতি সরকার নিষিধ করেনিকো। কিন্তুক সরকার আইন কইরি পাখি ধরা নিষিধ করেছে। তোর জেল হবিই হবি। ইউনিয়ন পরিষদে চল। রাইতটা তোক্ আটকা রাকব। বিয়ান বেলায় চেয়ারম্যান সাব তোক পুলিশির কাছে দিবিনি।’

    ‘রহিম চাইরডি পাখি ধরিছি। তুই দুইডি পাখি নিয়্যি বাড়িত্ যা, কেউ জানবিনানে। আমার পথ আগলায় ধরিসনে।’ ততক্ষণে আরও একজন গ্রামবাসী কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। রহিমবক্স লাঠি ফেলে দিয়ে জালাল ভাইয়ের হাত খপ করে ধরে ফেলল। শুরু হয়ে গেল ধস্তাধস্তি। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঠুস করে একটা শব্দ হলো, ওমনি রহিম বক্স পেট চেপে ধরে বসে পড়ল। জালাল ভাই এয়ারগান নিয়েই দৌড় দিলেন, পাখির খোলোই ফেলে আমিও অন্যদিকে দৌড় দিলাম।

    পরিযায়ী পাখি হত্যার শাস্তি এক বছর। জালাল ভাই পাখি ধরেছিল, কিন্তু হত্যা করেনি। শাস্তি হতো হয়তো আরও কম। কিন্তু রহিম বক্সের পেটে এয়ারগানের গুলি লাগায় তার নামে হয়ে গেল হত্যাচেষ্টা মামলা। দিন তিনেক বাদে ধরাও পড়লেন তিনি। হয়তো অনেক টর্চার করা হয়েছে ওনার ওপরে, তবু আমার নাম বলেনি। আমি জালাল ভাইয়ের বাড়িতে না গিয়ে শহরেই বন্ধুদের মেসে আশ্রয় নিলাম। জালাল ভাইয়ের বাড়িতে থাকিÑ এ কথা প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জেনে পুলিশ আমাকেও মেস থেকে ধরে নিয়ে গেল। কোনও প্রমাণ না থাকলেও আইনের মারপ্যাঁচে আমাকেও জেলে ঢুকতে হলো।

    দু’একজন আত্মীয়, কলেজের বন্ধু, কলেজেরই এক শিক্ষকের প্রচেষ্টায় তিন মাস পরে জামিন পেয়ে গেলাম। হত্যা মামলার আসামিও এদেশে কোনও কোনও সময় জামিন পেয়েছে। কিন্তু উপযুক্ত তদবিরকারি, ডাকসাইটে উকিলকে দেয়ার মতো টাকার অভাব- নানা কারণে জালাল ভাইয়ের জামিন হয় না। ভাবী তখন আবারও বাপের বাড়িতে বসবাস শুরু করেছেন। আমি টিউশনির কিছু টাকা ভাবীর হাতে প্রতি মাসেই তুলে দিই। ভাবী সে-কথা যথারীতি জালাল ভাইকে জানিয়েছেন। কিন্তু ভাবীর বাবা তেমন কিছু করে না, যদিও ভাবীর মা স্বামীকে না জানিয়ে জামাইয়ের জন্য কিছু টাকা প্রায়ই মেয়ের হাতে তুলে দেয়।

    উকিলের কাছে ভাবীর সাথে আমি গেলেও জেলে আর যাই না। জালাল ভাইকে জেলের শিকের ওপাশে দেখলে কষ্ট হয়। বছর খানেক পরে জেলে জালাল ভাইয়ের সাথে দেখা করতে যাওয়া বন্ধ করে দিলাম। ওদিকে ভাবী অনাকাঙ্ক্ষিত এক খবর জানালেন, জালাল ভাই নাকি ভাবীর সাথে সর্বদা আমাকে দেখে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। বছর পেরিয়েছে, উকিল আর জেল এই নিয়েই ভাবী আছে। তিন মাস ছয় মাস পরে তারিখ পড়লে কোর্টেও যান তিনি স্বামীকে এক নজর দেখার জন্য। ফোনে ভাবী জানালেন, কী কারণে যেন জালাল ভাই ভাবীর সাথে সেভাবে কথা বলতে চান না; বললেও মুখের দিকে চেয়ে কথা বলেন না। মামলা চালানোর জন্য উকিলকে টাকাপয়সা দিতেও নিষেধ করেন। আমার নাম ভুলেও মুখে আনেন না।

    আমার নামে ভিন্ন মামলা- সেটা বোধ হয় হিমাগারে চলে গিয়েছে। ততদিনে আমি অনার্স পাস করে লেখাপড়া আর করব না সিদ্ধান্ত নিয়ে চাকরি নিয়েছি। ছোটো ভাইটার লেখাপড়ার জন্য টাকা দেয়া দরকার। মায়ের বয়স হয়েছে। প্রতি মাসে নির্দিষ্ট অংকের টাকায় ঔষধ কিনতে হয়। অফিস থেকে মেসে ফিরে ভাবীর কাছ থেকে ফোন পেলাম। কাল জামিন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। খবরটা জেনে খুব ভালো লাগল। আরও কিছুক্ষণ কথা বলে ভাবীকে জানালাম আমি জালাল ভাইয়ের সাথে দেখা করতে যাব।

    অফিসে বসে ভাবীর কাছ থেকে ফোন পেলাম জামিন হয়েছে। জালাল ভাইয়ের নিজ বাড়িতে থাকার মতো অবস্থা নেই- দীর্ঘদিন কেউ বসবাস না করায় সেটা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। দুপুরের খাবার খেয়ে বসকে বিশেষ কাজের কথা বলে অর্ধদিবস ছুটি নিলাম। শহর থেকে বাসে করে কিছুটা গিয়ে সেখান থেকে ইজিবাইকে করে আর কিছুটা পথ গেলেই ভাবীদের গ্রাম; এর পরে কিছুটা পথ হেঁটে ভাবীদের বাড়িতে যখন পৌঁছলাম তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল। রৌদ্রের খরতাপ ঝিমিয়ে পড়েছে, আলোর ছটার পরিবর্তে ছায়ার চাদর পৃথিবীকে মুড়িয়ে দিয়েছে। কিছুক্ষণ পরেই অন্ধকারের আগমনী বার্তা হিসেবে আলো-আঁধারির চাদরে চরাচর ম্রিয়মাণ হয়ে পড়বে। চেনা পথ- গত চার বছরে অনেকবার ভাবীর বাপের বাড়িতে এসেছি। কিছুটা হেঁটেই পৌঁছে গেলাম। এর আগেও অনেকবার এসেছি। গ্রামীণ পরিবেশে বাড়ি, চারদিকে কোনও দেয়াল নেই; উঠোনকে মাঝখানে রেখে চারদিকে পৃথক চারটি আধাপাকা ঘর- পাশে ইটের দেয়াল, ওপরে টিন- তবে মজবুত। ফটক বলে কিছু নেই। বাড়ির উঠোনের দিকে পা বাড়াতেই চোখে পড়ল একটা ঘরের বারান্দায় চৌকিতে বসে জালাল ভাই চা খাচ্ছেন। আমি তখন আনন্দে উল্লসিত- দুই হাত বাড়িয়ে জালাল ভাইয়ের দিকে এগিয়ে গেলাম- মনের ইচ্ছা জড়িয়ে ধরব। কিন্তু জালাল ভাইয়ের গর্জনে আমি স্তব্ধ- দাঁড়িয়ে পড়লাম। চায়ের কাপ চৌকিতে রেখে এদিক-ওদিক চেয়ে একটা লাঠি হাতে তেড়ে আসছেন জালাল ভাই; আহত বাঘ যেন হুঙ্কার দিচ্ছে- ‘হারামজাদা আমি না থাহায় ট্যাকা পয়সা দিয়্যি ভাবীর সাথে লটরপটর করছোস না? আইজ তোক্ মাইরিই ফ্যালাবো।’

    আমি বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে উল্টোদিকে দৌড় দিলাম। এই বুঝি জালাল ভাই ধরে ফেলল আমায়। ধরে ফেলতও; কিন্তু অতিরিক্ত উত্তেজনায় কোনও কাটা গাছের শেকড়ে পা বেঁধে পড়ে গেলেন তিনি। আমি তখনও ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে চলেছি বড়ো রাস্তা অভিমুখে। পেছনে ফিরে দেখলাম জালাল ভাই বোধ হয় ভালোই আঘাত পেয়েছেন; উঠতে পারছেন না, হামাগুড়ি দিয়ে আগুনঝড়া দুই চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আহত বাঘের মতো হুঙ্কার দিয়ে চলেছেন- ‘হারামজাদা আইজ হোক, কাইল হোক তোক্ ধরবোই।’

     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • গপ্পো | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ৪৭০ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    ইঁদুর  - Anirban M
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন