এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • অপৌরুষেয়

    শিবাংশু লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০১ জানুয়ারি ২০১৪ | ৯১৬ বার পঠিত
  • অপৌরুষেয়
    ---------------
    শাড়ি মানে শাটী বা শাটিকা, একটি পরিধান বিশেষ, যা এদেশে গত পেরায় হাজার দুই বছর ধরে নারীর সৌন্দর্য ও ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে চলেছে ।

    এই শব্দটির উল্লেখ প্রথম পাই বৌদ্ধ জাতক কথায় । তখন অবশ্য শাটী ছিলো অধোবস্ত্র, উত্তরাঙ্গে উত্তরীয় ব্যবহার করা হতো। আর্যযুগে পুরুষ ও নারী উভয়েরই পোষাক ছিলো একই রকম । পুরুষের অধোবস্ত্রে কাছা থাকতো, সহজভাবে কাজকম্মো করার জন্য আর নারীর শাটীতে থাকতো কোঁচা । তাও ছিলো অভিজাত নারীদের লক্ষণ । সাধারণ মানবীরা সচরাচর শাটীটি কটীদেশে জড়িয়ে পরতো । উপকরণ হিসেবে ব্যবহার হতো পাট ( যার থেকে পট্টবস্ত্র নামটি এসেছে) বা কাপাস বা রেশম । রেশম অবশ্য পরবর্তীকালের ব্যাপার । আদিকালে পট্টবস্ত্রই ছিলো অভিজাতকুলের পরিধান । যেহেতু তা ছিলো ব্রাহ্মণদের পোষাক তাই আজো পুজোআচ্চায় 'পট্টবস্ত্রে'র অগ্রাধিকার । যদিও মাঝখানে পাটের সুতো থেকে বানানো পোষাক একেবারে লুপ্ত হয়ে গিয়েছিলো , কিন্তু সম্প্রতি আবার তার ব্যবহার ফিরে আসছে । প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে নানাবিধ কৃত্রিম তন্তুজ কাপড়ে বোনা শাড়ি আজ সংখ্যাগুরু ।

    ২. ভারতীয় উপমহাদেশে শাড়ি একটি পোষাক মাত্র নয় । তা আমাদের সভ্যতার বিপুল সাংস্কৃতিক পরিধির একটি মূল্য সূচক হয়ে রয়েছে দীর্ঘকাল ধরে । তাই এদেশের ইতিহাস ও সমাজতত্ত্বে, ব্যক্তি নারী বা নারীত্বের ক্রমবিকাশের ধারণার সঙ্গে এই পরিধানটির ওতোপ্রোত সম্পর্ক সহজেই চোখে পড়ে । সভ্যতার বিভিন্ন পর্যায়ে এদেশের বিভিন্ন সংস্কৃতির সৌন্দর্যবোধ ও তার ব্যবহারিক প্রয়োগ, অমেয় নান্দনিক শিল্পকুশলতায় শাড়ি ও তার পরার শৈলির মধ্যে প্রতিফলিত হয়ে আসছে । আমি আমার সীমাবদ্ধ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে দেখেছি নিখিল বিশ্বে এই পরিধানটির মতো এতো দীর্ঘকাল ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে স্বীকৃত কোনও নারীবসন খুঁজে পাওয়া যায়না । সারা ভারতবর্ষে ঘুরে বেড়ানোর সূত্রে লক্ষ্য করেছি শুধু শাড়ির নাকনক্শা আর পরিধান করার ধরন থেকে বুঝে নেওয়া যায় আমি দেশের কোন প্রান্তে রয়েছি । শাড়ি নিয়ে অনেক গবেষণা, অনেক পন্ডিতি সন্দর্ভ রয়েছে । উৎসাহীজন সেখান থেকে বিশদ তথ্য আহরণ করতে পারবেন । কিন্তু আমি সেপথে যাচ্ছিনা । এই অঘ্রাণ থেকে শুরু হওয়া বাঙালির দীর্ঘ বিবাহ উৎসব মরসুমের একটা অতি আকর্ষণীয় অংশ হলো শাড়ি পরে মেয়েদের উজ্জ্বলউদ্ধার হয়ে ওঠার অনিঃশেষ খেলা । আমি অনেকের মতো এক মুগ্ধ দর্শক মাত্র । বাঙালিনীদের সুন্দরতর হয়ে সুপ্রকাশ দেখতে চাওয়ার মোহ তো কখনও ম্লান হয়না ।

    ৩. শাড়ির সঙ্গে নারীর সম্পর্ক শুধু উপভোক্তার । খুবই গদ্যময় ব্যাখ্যা নি:সন্দেহে, কিন্তু তা সত্যি । শাড়ি নামক পণ্যটি বাজারজাত হবার আগে পর্যন্ত তা সম্পূর্ণ পুরুষের আসনপাট । কাপাসচাষী, রেশমচাষী বা সুতোকারখানার শ্রমিক, সব্বাই পুরুষ । তার পর আসে আসল কাজটি, শাড়ি বোনা, নক্শা তোলা, রং লাগানো, সেখানেও তন্তুবায়দের পারিবারিক ব্যবস্থায় যদি কোনও মহিলার শ্রমদান নির্দিষ্ট থাকে তবে তাঁদের ভূমিকা ততোটুকুই । একজন মজদুর ও শিল্পানুরাগী হিসেবে শাড়ি নামক শিল্পটির প্রতি চিরকাল আগ্রহবোধ করেছি । যেসব 'পুরুষে'র ধারণা 'শাড়ি' নামক ধারণাটি 'অপৌরুষেয়', তাঁদের অনুরোধ করবো কখনও বিষ্ণুপুরে ( সবচে কাছে) বা ফুলিয়ায় অথবা ভাগলপুরের কাছে নাথনগরে তাঁতিপল্লীতে একবার ঘুরে আসতে । ঘামঝরানোর নতুন মাত্রা দেখতে পাবেন ।

    " হেঁটে দেখতে শিখুন , ঝরছে কী খুন দিনের রাতের মাথায়"

    বেদ'কেও অপৌরুষেয় বলা হয় ।

    ৪. শাড়ি নিয়ে আমার নাড়ানাড়ির দুনিয়ায় কিন্তু বম্বে, সুরত, আমদাবাদের কারখানায় তৈরি কৃত্রিম তন্তুর শাড়িগুলির, বণিকের ভাষায় যার নাম 'ফ্যান্সি শাড়ি', প্রবেশ নিষেধ । আমার বাড়িতে যাঁরা শাড়ির উপভোক্তা, তাঁরাও ঐ সব শাড়ির কৌলীন্য স্বীকার করেন না । তাই আমার দেশবেড়ানো ব্যবসা নিয়ে যখন যেখানে যাই, সেখানকার ঐতিহ্যকেন্দ্রিক কিছু শাড়ি আমার সঙ্গে ফিরে আসে । এই নেশাটি শাড়ি কিনে বেড়ানোর 'বহুনিন্দিত' বা 'নন্দিত' মানবী-কতা নয়, বরং অবাক করা দেশজ শিল্পসংগ্রহ হিসেবেও স্বীকৃত হতে পারে ।

    যেমন, গিয়েছিলুম মধ্যপ্রদেশে ইন্দোর শহরে । এক স্থানীয় বন্ধুকে জিগালুম কিছুদিন আগে টিভিতে ইন্দোরের এক রানীমা'র দৌলতে দেখা এক অদ্ভুত সুন্দর চান্দেরি শাড়ির সম্ভারগুলি কোথায় দেখা যেতে পারে ? তিনি বললেন সেই সব চান্দেরি শাড়ি আমাদের মতো পাতি লোকের ক্ষমতার বাইরে, তবে একেবারে আদত চান্দেরির কারিগরের কাজ এখানেই পাওয়া যাবে । তা গেলুম তাঁর সঙ্গে এবং দেখা পেলুম সুতি ও রেশমের উপর মূলত জরি সুতোর কাজ করা নয়নলোভন শাড়িগুলির। চান্দেরি শাড়ির সে অর্থে কোনও 'ঐতিহ্য' নেই । নেহাতই বিংশশতকের শৈলি, কিন্তু আভিজাত্যের বিচারে পিছিয়ে থাকেনা । তখন সেই বন্ধুই বললেন, আপনার তো ঐতিহ্যের দিকে ঝোঁক, তাই কাল যখন যাবো বাঘ আর মান্ডুর দিকে, তখন সামান্য যাত্রাবদল করে যাবো মহেশ্বর গ্রামে । মহেশ্বর, রাণী অহিল্যাবাই হোলকরের গ্রাম আর তিনি ছিলেন এই গ্রামের প্রাচীন দেবতা মহেশ্বরের একান্ত নিবেদিত উপাসিকা । তাঁর সময়েই এই গ্রামকে কেন্দ্র করে শাড়িবয়ন শিল্পের সূত্রপাত হয়, যাকে আজ মহেশ্বরী শাড়ি বলা হয় । বস্তুত, চান্দেরি শাড়ির পূর্বজ হলো মহেশ্বরী শাড়ি । বিভিন্ন লক্ষণে মিল থাকলেও উভয়ের নিজস্বতাও রয়েছে অনেক । নিঃসন্দেহে সংগ্রহযোগ্য শিল্পবস্তু । আজকাল মধ্যপ্রদেশের, অধুনা ছত্তিশগড়ের কর্কশ রেশমের কোসা শাড়ি, যা এক সময় উপজাতিক কারিগরদের মৌরসিপট্টা ছিলো, বাজারে খুব লোকপ্রিয় । তবে পরিমার্জনার বিচারে তাদের খামতি রয়েছে ।

    ৫.
    ''তোমার ঐ ধূপছায়া রং শাড়ির পাড়ে, চোরকাঁটাতে বিঁধিয়ে দিলাম মন...."

    পদ্য হিসেবে বেশ খাজা, কিন্তু একটা আবেগ বেশ লক্ষ্য করা যায় । বাঙালি এতেই গেলো । রোমান্টিক লোকজন সর্বত্রই রয়েছে, কিন্তু শাড়ির পাড়ে মন বিঁধিয়ে রাখা ??

    তবে বেশ কিছু শিল্পী কারিগরকে দেখেছি শাড়ির পাড়ে সত্যিই মন 'বিঁধিয়ে' কাজ করেন । দক্ষিণ ভারতের শাড়ির ঐতিহ্য অতি প্রাচীন । এখনও দক্ষিণ প্রান্তের যে কোনও জায়গায় শাড়ি পরিহিতা নারী উত্তর ভারতের তুলনায় অনেক বেশি চোখে পড়ে । কিম্বদন্তী হলো শাড়ির সঙ্গে মেয়েদের উত্তরাঙ্গের পোষাক 'চোলি' নাকি এসেছে দাক্ষিনাত্যের চোল রাজবংশের নামে । আবার শাড়ির আঁচল, যাকে পল্লুও বলা হয় তাও সেই একই জায়গার পল্লব রাজবংশের থেকে আমদানি হয়েছে ।

    আরেকটু উত্তরে ' দক্কন' এলাকায় , যেখানে আমি দীর্ঘদিন কাটিয়েছি, সেখানে শাড়ি সাম্রাজ্যের বেশ কটি বিখ্যাত ঘরানা মিলে মিশে রয়েছে । হায়দরাবাদ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে একটু দূরে নলগোন্ডার রাস্তায় রয়েছে পোচম পল্লী । নিজের গাড়িতে গেলে ঘন্টা দেড়-দুই । একশো বছরের বেশি হয়ে গেলো সেখানে প্রায় আশিটি গ্রাম নিয়ে শুধু বস্ত্রশিল্পীদের বসতি ।ইন্দোনেশীয় বর্ণবিন্যাস ইকত বা ইক্কত শৈলির উপর কাজ করেন তাঁরা ।এই ধরনের কাজ আবার সম্বলপুরের শাড়িশিল্পেও দেখা যায়, তবে তার সাজ আলাদা । মূলত জ্যামিতিক নক্শা ভিত্তিক কারুকার্যই তার বিশেষত্ব । আবার মহবুবনগরের গদোয়াল শৈলির শাড়ি যদিও এখন পুরো রেশমি সুতোয় বোনা পাওয়া যায়, কিন্তু তার বিশেষত্ব হলো সূক্ষ্ম কাপাসসুতোয় বোনা জমি আর রেশমি সুতোয় বোনা পাড় আর আঁচল । পাড় আর আঁচলের উপর থাকে ভারি জরির কাজ । এককালে দাবি করা হতো একটা সাড়ে পাঁচ হাত গদোয়াল শাড়ি একটা দেশলাই বাক্সের মধ্যে আঁটিয়ে দেওয়া যায় । কিন্তু আমরা তা দেখিনি । অন্ধ্রপ্রদেশের আরো দুটো বিখ্যাত শৈলি ধর্মাভরম আর বেঙ্কটগিরি । ধর্মাভরম শাড়িতে পাড় আর জমির কন্ট্রাস্ট বিশেষ থাকেনা । আর জমি সাধারনত: একরঙা হয়ে থাকে । কিন্তু তাতে থাকে বুটির কাজ আর পাড় আঁচল হয় ভারি জরির কাজের । বেঙ্কটগিরি শাড়িও মোটামুটিভাবে এই ধরনেরই হয়, কিন্তু তার জমিতে সোনালি জরির টানা বুনোট দেখা যায় । একটা ব্যাপার দক্কনের সব ঘরানাতেই শাড়ির রঙগুলি থাকে চমক দেওয়া । মূলত: মৌলিক রঙ সব । ওখানকার গহন শ্যামল দক্ষিণী সুন্দরীরা ঐ সব রঙ বেশ স্বচ্ছন্দে বহন করে নেন দেখেছি । কিন্তু তাঁদের থেকে অনেক গৌরী শ্যামলী বঙ্গবালাদের এই সব উচ্চকিত রঙ নিয়ে মনে কিঞ্চিৎ দ্বিধা থাকে । মানাবে তো ?

    ৬. বহুকাল আগে একবার চেন্নাই গিয়েছিলুম। এক স্থানীয় বন্ধুর কাছে কাঞ্চিপুরম শাড়ির হালহকিকৎ বিষয়ে জানতে ইচ্ছে হলো । সে যেরকম জানালো তাতে স্পষ্ট, আদত কাঞ্চিপুরম শাড়ি সোনার গয়নার মতো । পারিবারিক উত্তরাধিকার টাইপের ব্যাপার । বিশেষ বিশেষ উপলক্ষ্যে সেগুলির গায়ে আলোবাতাস লাগে । তামিল সুন্দরীরা সেগুলি পরে পৃথিবীকে উজ্জ্বলতর করে তোলেন । সেই সব উপলক্ষ্যে কোনও মহিলা যদি ঐ সব শাড়ি না পরে যান তবে বেশ নিন্দে মন্দও হয় । তাকে বলি একটু দেখা যাবে ? সে জানায় , নিশ্চয় , চলো টি-নগরে যাই । সেই আমার প্রথম নল্লি'র সঙ্গে পরিচয় । প্রথমত: অতো বড়ো যে একটা দোকান হতে পারে, তাও আবার শাড়ির , আমার ধারণার বাইরে ছিলো । সে বলে, আমি শাড়ি নিতে আগ্রহী কি না ? আমি জানাই তা একটু দেখা যেতে পারে । ভালোটালো লাগলে ভাবা যাবে এখন । সে খুব উৎফুল্ল হয়ে জানায় এদের সঙ্গে ব্যাংকের সূত্রে তার পরিচয় আছে । অন্তত: চার-পাঁচ হাজার দাম কমিয়ে দিতে পারবে । সেই সন্ধ্যায় সে আমার দ্বিতীয় ঝটকা । 'চার-পাঁচ' হাজার দাম কমিয়ে দেওয়া যাবে ? তবে আসল দামটি কতো ? আমি মিনমিন করে জানাই, ইয়ে, মানে কেমন রেঞ্জের মধ্যে পাওয়া যায় । সে খুব বিজ্ঞের মতো মুখ করে বললো, কমদামি, মানে পনেরো-বিশ হাজারের মধ্যেও পাওয়া যাবে, তবে তাতে মজা আসবে না । পঁচিশ-তিরিশ থেকে শুরু করলে 'বেটার-অ' জিনিস পাওয়া যেতে পারে । তৎক্ষণাৎ আমার একটা অত্যন্ত জরুরি কাজ মনে পড়ে যাওয়ায় আমি সবেগে দোকানটি থেকে ছুটে বেরিয়ে যাই, পরের দিন আসবো জানিয়ে ।

    কাঞ্চিপুরম শাড়ি নিয়ে আমার প্রথম অভিজ্ঞতাটি এই রকম ।

    ৭.
    গপ্পের কি আর শেষ আছে ? কিম্বদন্তী হলো কাঞ্চিপুরম শাড়ির শিল্পীর হলেন মার্কন্ড ঋষির বংশধর । এই শাড়ি বোনার বিদ্যে তাঁদের এই দৈবী সূত্রেই পাওয়া । কে জানতো লার্ড শিভার পছন্দ সুতি কাপড় আর লার্ড ভিষ্ণুর প্রেম রেশমি কাপড়ের প্রতি । এভাবে ইতরযানী অর্থনীতির একটা ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়ে গেলো । "ভিষ্ণু" হলেন আর্য ব্রাহ্মণদের দেবতা আর "শিভা" অনার্য কৌম সমাজের ত্রাতা । অতএব রেশমি কাপড় পরবেন লার্ড ভিষ্ণু সস্ত্রীক আর পাগল শিভার জন্য লজ্জা নিবারণ করার মতো কাঁথাকানি কিছু জুটলেই হলো ।

    এই শাড়ি যে তাঁতে বোনা হয় তার থাকে তিনটে মাকু । একদিকে বসে উস্তাদ অন্যদিকে চেলা । মাকুর প্রতিটা টানা আর পড়েন খুব মন দিয়ে লক্ষ্য রাখতে হয় । এই শাড়িটির সম্বন্ধে কোনও ভারতীয়কে কিছু বলার নেই । যতোরকমের ভারতীয় মোটিফ হয়, যেমন সূর্য, চাঁদ, রথ, মন্দির, ময়ূর, হংস, সিংহ, কল্কা এবং মল্লিগি, অর্থাৎ যুঁই ফুলের নক্শা । কাঞ্চিপুরম শাড়ির জমি, পাড় বা আঁচল কখনও কখনও দৈবী পযায়ে চলে যেতে পারে ।

    পরবর্তীকালে তিরুচিরাপল্লি ও মদুরাইতে সাধ মিটিয়ে ঐ শাড়ি দেখেছি । ঐ সব শাড়ির সঙ্গে থান্জাভুর, কুম্ভকোনম বা মদুরাইয়ের মন্দির সৌন্দর্যেরই তুলনা করা যায় বা ঋতু গুহর কণ্ঠে কয়েকটি বিশেষ রবীন্দ্রসঙ্গীতের ।

    ৮. সুদূর অতীতে, ঈশা মসিহার জন্মেরও অনেক আগে, যখন মধ্যভারতে সাতবাহন বংশের রাজাদের বোলবালা ছিলো, গ্রিক বণিকেরা এদেশে রেশম কিনতে আসতো, সেই সময়ের কথা । খ্রিস্টপূর্ব চার শতকে এই জায়গাটার নাম ছিলো প্রতিষ্ঠানপুর । গুপ্তযুগে এটি ছিলো অবন্তীরাজ্যের রাজধানী । সেই প্রতিষ্ঠানপুরে প্রায় আড়াই হাজার বছর ধরে বয়নশিল্পের ঐতিহ্য বিলুপ্ত হয়নি । এই এলাকাটিতে ইতিউতি ছড়িয়ে আছে ভারতসভ্যতার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন গুলি । একদিকে অজন্তা, এলোরা, অমরাবতী অন্যদিকে দৌলতাবাদ, অওরঙ্গাবাদ । প্রতিষ্ঠানপুরের অধুনা নাম হয়েছে পইঠান । এখানে জন্মেছিলেন সন্ত একনাথ । এবার পইঠানি শাড়ির কথা হোক ।

    যেসময় আমাদের দেশে উচ্চমানের রেশমি কাপড় তৈরি হতোনা তখন চিনদেশ থেকে কাপড় আসতো পইঠানি শাড়ির জন্য । এই শাড়ি ঘরানাটির ঐতিহ্য সম্ভবত: এদেশে প্রাচীনতম । অর্থমূল্যেও এর জুড়ি পাওয়া ভার । একেবারে 'সাধারণ' মানের আদত পইঠানি শাড়ির হাজার বিশেক টাকা দাম লাগে । এর মূল বিশেষত্ব হলো দুরঙের সুতোয় বোনা সূক্ষ্ম রেশমের জমিতে অতি সূক্ষ্ম জরির সুতোর নিবিড় পেটানো কাজ । সঠিক শাড়ি হলে এই জরির সুতোর বুনোট আলাদা করে চোখে পড়েনা । সোনার আয়নার মতো দেখতে লাগে । অন্য একটি লক্ষণ হলো আঁচলে ময়ূরের নক্শা । তাছাড়া বরফি প্যাটার্ন, পদ্ম, কল্কা ও অন্যান্য ফুলেল নক্শাও ব্যবহার করা হয় । অজন্তা ঘরানার চিকন ফ্লোরাল কারুকাজ বোনা থাকে এর পাড় আর আঁচলে । পাঁচলাখ টাকা দামের পইঠানি শাড়িও দেখেছি ।

    ৯. প্রথম যখন কেরালা যাই, তখন তাদের বিবাহ শাড়ির আভিজাত্যটি নজর কাড়ে । রেশম নয়, শুদ্ধ সূক্ষ্ম কাপাস বস্ত্র । রং হবে নানা ধরণের শাদা, তবে দুধশাদা নয় । ঈষৎ ক্রীম বা ঘিয়ে, যাকে বাংলার 'অফ-হোয়াইট'ও বলা হয়, সে রকম । পাড়-আঁচল হবে নানা ঔজ্জ্বলের সোনালি তন্তুতে বোনা। একটু কমদামি শাড়িগুলির পাড়ে লাল ও কালো ডোরা পাওয়া যাবে, সোনালি পেটানো জমি'কে ঘিরে । মহার্ঘ শাড়িগুলির পাড়-আঁচলে শুধু সোনালি সুতো । নক্শা বলতে সচরাচর ফুলেল কাজ আর সারা গায়ে রুচিসম্মতভাবে টানা সোনালি সুতোর রেখাসমূহ। হিন্দু, খ্রিস্টিয় বা মুসলিম, সব ধর্মের কন্যারাই বিবাহকালে এই শাড়ি পরিধান করে।
    কেরালার মানুষজনের রুচিশীলতার ঐতিহ্য সুদীর্ঘ ইতিহাস জুড়ে দেখতে পাওয়া যায়। তাদের এই পরিধানের রূপ সেই ধারণাকে সুপ্রতিষ্ঠ করে। মনে রাখতে হবে, দক্ষিণভারতে যখন সর্বত্র উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর রঙে বোনা শাড়ির আধিপত্য, তখন কেরালায় এই শাড়ির শ্বেতসৌন্দর্য সেখানকার মেয়েদের বিয়ের দিন মহাশ্বেতার মতো মহিমময়ী করে তোলে। একটা কারণ আমার মনে হয়েছে, "অবলা যত্র প্রবলা" সেদেশের রুচিশীলতায় তার একটা ছাপ থাকে । কে না জানে কেরালা স্বাধীনা, উজ্জ্বল নারীদের দেশ। প্রথমবার এক-আধটা এই শাড়ি নিয়ে ফিরেছিলুম বাড়িতে । তার গরিমা এতো-ই স্বীকৃত হলো যে যখন পরবর্তীকালে সঙ্গিনী যখনই কেরালা গিয়েছেন, তাঁর এই শাড়ির সংগ্রহ স্ফীত হয়েছে ।

    ১০.
    প্রথম পার্থ কর্ণকে উপহার দেওয়া রাজ্য 'অঙ্গদেশ', যেখানে মহাভারতের যুগে আর্যরা যেতে চাইতো না, গিরি অরণ্য আকীর্ণ সেই বঙ্গদেশের সীমান্তবর্তী ভূখন্ড ছিলো অনার্যদের এলাকা। উড়ো খৈ গোবিন্দায় নমঃ করে দুর্যোধন তো রাজনীতিতে পার পেয়ে গেলেন, কিন্তু দেশের এই অংশটি বিকশিত হয়ে ছিলো পরবর্তীকালে। সেখানকার সংস্কৃতিতে প্রবল প্রভাব ছিলো (এখনও আছে) উত্তর রাঢ়ের নানা রীতিপদ্ধতির । সত্যি কথা বলতে কি দেশের এই প্রান্তটিতেই অনার্য বঙ্গজ সংস্কৃতি ও আর্যাবর্তের মূল ভাবধারার মধ্যে গভীর বিনিময় হয়েছিলো একদিন। এই জায়গাটির নাম এখন ভাগলপুর। পুস্তৈনি বিহারি হবার দৌলতে ভাগলপুর ছিলো আমাদের অতি জানিত এক শহর। বাংলার বাইরে প্রখর বঙ্গীয় প্রভাব দেখা যেতো মিথিলার দ্বারভাঙ্গা-লহেরিয়াসরাই ও নদীর দক্ষিণপ্রান্তে ভাগলপুর অঞ্চলে। মায়েদের মুখে ভাগলপুরি রেশম শাড়ির কথা বাল্যকালে অনেক শুনেছি । কিন্তু ভাগলপুরের শাড়ি তথা বস্ত্রশিল্প নিয়ে গভীরভাবে অবহিত হই সত্তরদশকের শেষদিকে সেই কুখ্যাত সাম্প্রদায়িক নরমেধ যজ্ঞের প্রসঙ্গে । ভাগলপুর শহরকে কেন্দ্রে রেখে মোটামুটি বিশ কিমি অঞ্চলে বহু তন্তুজীবী মানুষের বাস। এই শিল্পটি গড়ে উঠেছিলো মূলতঃ নবাবি আমলে । মুর্শিদাবাদের দিকে গড়ে উঠেছিলো মালবেরি রেশমের শিল্প আর পশ্চিমে ভাগলপুর এলাকায় ছিলো তসর রেশমের কেন্দ্র । মালবেরি রেশম ঐ নামের গাছে গুটিপোকার চাষ করে সংগ্রহ করা হয় । কিন্তু তসর তন্তুর চাষ হয় শাল, অর্জুন জাতীয় বৃক্ষের আশ্রয়ে । ভাগলপুরি তসরতন্তু জাত বস্ত্র সনাতনধর্মীয়দের কাছে পবিত্র। কারণ এই রেশমতন্তু শুধু সেই সব গুটি থেকে সংগ্রহ করা হয় যেগুলির থেকে রেশমকীট বেরিয়ে গেছে। তসর রেশমতন্তু তৈরি করতে কোনও প্রাণীবধ করতে হয়না। তাই পূজা-উপাসনায় তসর শাড়ি বা অন্যান্য পোষাককে প্রশস্ত মনে করা হয় ।

    তসর শাড়ি কী বা কেন তা নিয়ে কোনও ভারতীয়ের কাছে ব্যাখ্যা দেওয়া নিষ্প্রয়োজন। কিন্তু এই শাড়িশিল্পটির স্বরূপ জানতে গেলে যেতে হবে ভাগলপুর থেকে বিশ কিমি পশ্চিমে নাথনগর এলাকায় । এখানে প্রায় পঁচিশ হাজার তাঁত চলে। তন্তুবায়রা পুরুষানুক্রমিক ভাবে এই বৃত্তিতে যুক্ত এবং শতকরা পঁচানব্বইজন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। এঁরা আগে শুধু তসর নিয়েই কাজ করতেন, যার মধ্যে মুগা বা এন্ডি নামের রেশমতন্তুও অন্তর্ভুক্ত ছিলো। কিন্তু পরবর্তীকালে মালবেরি রেশম নিয়েও তাঁরা অতি সুন্দর শাড়ির সাম্রাজ্য সৃষ্টি করেছেন।

    তসর রেশমের একটি স্বাভাবিক আভিজাত্য রয়েছে। আরোপিত চাকচিক্যকে অবজ্ঞা করে এই কাপড়ের ভার ও টেক্স্চার পরিধানকারীকে একটা অন্যরকম পরিচয় এনে দেয়। মূলস্রোতের তসর শাড়ির রং চাপা সোনালি হয়ে থাকে, যদিও রঙের ছায় লঘু থেকে গাঢ় বহুরকম পাওয়া যায়। পাড় ও আঁচলের কাজ সচরাচর লাল, নীল, সবুজ, বেগনি ইত্যাদি মৌল রঙের মুগাতন্তু বা সুতো দিয়ে বোনা হয় । কল্কাছাপ নক্শা সবচেয়ে প্রকট এবং তার পর পদ্ম ও লতাপাতা। নকশাগুলি মাপে বেশ বড়ো ও দৃষ্টি আকর্ষক হয়ে থাকে। পাড়-আঁচল ভারি হওয়ার জন্য শাড়ির ফল প্রায় নিখুঁত ।

    তসর ছাড়াও ভাগলপুর থেকে সংগ্রহ করা মালবেরি রেশমের যে শাড়িগুলি রয়েছে, তারা চমক ও মসৃণত্বে কর্ণাটকি রেশমের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে । তসরের ভার এই শাড়িগুলিতে নেই, কিন্তু রয়েছে এক নির্ভার, কোমল আশ্লেষ । এই শাড়িগুলির পাড় ও আঁচল সূক্ষ্ম, কিন্তু তাদের অন্তর্মুখী সফিস্টিকেশন স্বীকার করতেই হয় ।

    ১১. এতোক্ষণ কথা বলেও এখনও পৌঁছোলুম না আমার বাংলা, আমর ওড়িষা বা অসম সিল্কের শালীন চমকের পৃথিবীতে। অবশ্যই বাকি আছে মদনপুরা, সোনারপুরার বনারসি বিস্ময় বা অতি জনপ্রিয় মাইসোর সিল্ক ঘরানার শাড়ির হালহকিকৎ। শাড়ি নিয়ে আমাদের দেশে এতোরকম পরীক্ষানিরীক্ষা, শিল্পচর্চা ও সৃজনশীল উদ্যম জড়িয়ে আছে যে এই ধরনের লঘু কথামালায় তাকে সসম্মানে স্পর্শ করা যায়না। তাই নিরস্ত হওয়াই শ্রেয়।

    শেষ পর্যন্ত নিবেদন থাকে সেই সব বাঙালিনীদের প্রতি যাঁরা হয়তো জানেন, অথবা নাও জানতে পারেন, শাড়ি নামক পরিধানটি কীভাবে তাঁদের শ্রেয়তমা, সুন্দরীতমা করে তুলতে পারে । তাঁরা নাই বা হলেন অতি গৌরী, আর্যস্বীকৃত রূপের ব্যাকরণ মেনে চলা কালিদাসের স্বপ্নসম্ভবা । কিন্তু তাঁরা আমাদের মতো ইতরজনেদের পৃথিবীতে ঐ সাজে আলো জ্বেলে রাখুন ( জানিনা এ পথেই ক্রমমুক্তি হবে কি না), তবুও তাঁদের কাছে আমাদের হৃদয় সে আশায় রেখে দেওয়া গেলো ।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০১ জানুয়ারি ২০১৪ | ৯১৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • PM | 181.7.158.156 (*) | ০৩ জানুয়ারি ২০১৪ ০৩:৪০74348
  • বোঝো শাড়ী নিয়ে এই অত্যুজ্বল রচনাটিও এলো একজন পুরুষের হাত দিয়ে !!!! ঃ)
  • সিকি | 132.177.21.235 (*) | ০৩ জানুয়ারি ২০১৪ ০৪:০৩74349
  • কাঞ্চীপুরম বা কাঞ্জিভরম প্রসঙ্গে - নাল্লিতে যাওয়াই উচিত হয় নি। ওটি আসলে টি নগরের নিকৃষ্টতম দোকান। আসল দুটি দোকান ওর ঠিক উল্টোদিকে। চেন্নাই সিল্কস এবং পোতি'স। কালেকশন এবং দামের ভ্যারাইটি মারকাট রকমের। চার সাড়ে চার হাজার থেকে শুরু।

    আরও শস্তায় পাবেন যদি একটু কষ্ট করে ঐ টি নগর থেকেই একটা বাস ধরে সোজা কাঞ্চীপুরম চলে যান। ঘণ্টাখানেক লাগে, সেখানে গিয়ে স্থানীয় মন্দিরজাত নোংরা ইত্যাদি ইগনোর করে একটা অটো ধরে সো-জা চলে যান ওয়েভার্স সোসাইটির যে কারুর বাড়িতে। তাঁত চালানো দেখুন নিজের চোখে, আর বাড়ির বৈঠকখানায় স্টিলের গ্লাসে ফিল্টার কফি খেতে খেতে শাড়ি পছন্দ করুন। এক সে বঢ়কর এক। ২০১০এ প্রতিটি দেড় হাজার টাকা দামের তিনটি কাঞ্জীভরম কিনে এনেছিলাম। এতদিনে কিছু না হোক আড়াই তিন হাজার দাম হয় তো হয়েছে। তার বেশি নয়।
  • Ranjan Roy | 132.175.152.48 (*) | ০৩ জানুয়ারি ২০১৪ ০৪:২৬74350
  • একই ভাবে ছত্তিশগড়ের তসরের জন্যে কোরবা ও কঠঘোরার মধে ছুরি গাঁয়ে যেতে হবে। ওর মাহাত্ম্য শ্রাবণী জানেন।ঃ)))
    কিন্তু কী দারুণ লেখা!
  • শিবাংশু | 127.201.151.157 (*) | ০৩ জানুয়ারি ২০১৪ ০৪:৪৮74351
  • সিকির সঙ্গে একমত, নল্লি একটি নিকৃষ্ট দোকান। রহস্য একটাই, কী করে এতো বড়ো একটা কারবার চালায় । আমি সারাদেশে ওদের অন্ততঃ গোটা দশেক দোকান দেখেছি। চেন্নাই সিল্ক আর পোথি'র দোকান হায়দরাবাদেও আছে, গিয়েওছি সেখানে । ভালো সংগ্রহ। কাঞ্চিপুরম যাইনি, তবে মদুরাই আর ত্রিচি'তে খুব ভালো কাজ দেখেছি ।

    রঞ্জন একেবারে ঠিক । ঠিকঠাক কোসা খুঁজতে গেলে কোরবা যেতে হবে । :-)
  • oishik | 52.107.175.153 (*) | ০৩ জানুয়ারি ২০১৪ ০৫:৩৪74352
  • খুব bhalo laglo,
  • de | 190.149.51.68 (*) | ০৩ জানুয়ারি ২০১৪ ১২:৪৮74347
  • উঃ! সাষ্টাঙ্গে প্রণাম, শিবাংশুদা!
  • সিকি | 132.177.21.235 (*) | ০৪ জানুয়ারি ২০১৪ ০৩:৫০74354
  • এই জিনিস অনলাইন না কেনাই ভালো। বউকে বোঝান, শাড়ি নিজের চোখে না দেখেচিনে কিনতে নেই। শাড়িঠাকুর পাপ দেন।
  • | 24.97.25.67 (*) | ০৪ জানুয়ারি ২০১৪ ০৫:২২74355
  • উফফ! এরা একজনও জীবনে এগারো/বারোহাত দূরে থাক বোধহয় দশহাত কাপড়ও গায়ে ঠেকায় নি অথচ বিজ্ঞের মত মতামত দিয়ে চলেছে দেখো!!

    নাল্লি এমন কিসু খারাপও নয়। পাইকারি বাজার ঘুরে দেখার সময় না থাকলে নাল্লি দিব্বি চটজলদি সমাধান। আর শাড়ি চিনলে নাল্লি থেকেও চিনে কেনাই যায়।
    যত্তসব!!!

    সুকি, বৌকে এই সাইটটা দিন, আমি এটা থেকে শাড়ি ড্রেস মেটেরিয়াল দুইই নিয়েছি, নিয়ে থাকি, এখনও ঠকি নি।
    https://www.rmkv.com/
  • phutki | 24.99.45.134 (*) | ০৪ জানুয়ারি ২০১৪ ০৫:২৬74356
  • নাল্লি এক্চুয়ালি বেশ ভালো সমাধান। কোয়ালিটি এক্দম ঠিকঠাক থাকে। আর rmkv ব্যাপারেও দমদির সাথে একমত।
  • সিকি | 132.177.21.235 (*) | ০৪ জানুয়ারি ২০১৪ ০৫:৪৯74358
  • নাল্লি বেশি দাম নেয়। খারাপ কোয়ালিটির জিনিস দেয় এমন বলি নি, কিন্তু ঐ একই শাড়ি অন্যত্র কম দামে পাওয়া যায়।
  • শিবাংশু | 127.201.149.116 (*) | ০৪ জানুয়ারি ২০১৪ ০৬:২২74359
  • দ,

    অনেক ধন্যবাদ । এই টই-টা আমি আগে দেখিনি । অনেক কথা হয়েছে, কিছু নতুন কথাও জানলুম । যে শাড়ি শৈলিগুলি এই লেখাটিতে ধরতে পারিনি সেই গুলি নিয়ে লিখতে নতুন করে উৎসাহবোধ করছি । তবে আমি ঠিক শাড়িসংগ্রাহক নই, শাড়ির নন্দনতত্ত্বটি আমাকে আকর্ষণ করে । শিল্প আর কারিগরি, কখন একে অপরকে ছাপিয়ে যায়, সেখানেই আমার উচ্ছ্বাস। সময়ের সঙ্গে শাড়ির বিবর্তনে মোটামুটি দু'টো লক্ষণ বদলে যায়। একটা, কাপড়ের জমির মান বা চরিত্র এবং অপরটি মোটিফের ক্ষেত্রে নবতর উদ্ভাবনী প্রচেষ্টা । এই দুটি ব্যাপারেই ওড়িশা আর বাংলার তাঁত নতুনতর চলন সৃষ্টি করে। আমার গাঁয়ের বাড়ি বিষ্ণুপুরের খুব কাছে আর এই মূহুর্তে কিছুদিন ওড়িশায় থাকার সুবাদে এই উদ্ভাবনগুলি কাছ থেকে দেখেছি । আর দীর্ঘকাল দাক্ষিণাত্যে থাকার সময় তাদের শাড়ির বহুধরনের ট্র্যাডিশনাল চলন/ধরনও লক্ষ্য করেছিলুম। আমাদের দেশের আবহমান শিল্পবস্তু ঐতিহ্যের মধ্যে শাড়ি নিশ্চিতভাবে একটা বড়ো জায়গা নিয়ে রেখেছে ।

    রইলো বাকি নল্লি । একেবারে উচিত শব্দটি ব্যবহার করেছেন, 'সমাধান'। আসলে আমার দৃষ্টিকোণে শাড়ি কেনাটা মুখ্য ছিলোনা, দেখা বা বোঝাটাই ছিলো উদ্দেশ্য। নল্লি বস্তুতঃ একটি বাণিজ্যসংগ্রহ, শিল্পসংগ্রহ নয় । আর তাদের মূল্যধরার গতিপ্রকৃতি আমাদের মতো পাতি লোকেদের একটু নিরুৎসাহ তো করেই।

    এবার 'পুরুষ'দের উদ্দেশ্যে একটি নিবেদন । শাড়ি একটি 'পুরুষে'র শিল্প । যে নিষ্ঠা বা সমর্পণ নিয়ে আমি গণেশ পাইন দেখতে যাই, ততোটা না হলেও আমাদের দেশের অগণন ঐতিহ্যবাহী শাড়িশৈলির প্রতিও আমার মুগ্ধ টান।

    এ হলো দ্রৌপদীর বসন, অনিঃশেষ মহিমা ইহার .
    :-)
  • Suki | 212.160.18.53 (*) | ০৪ জানুয়ারি ২০১৪ ১২:৫১74353
  • দারুণ লেখা। নাল্লি যে খুব একটা সুবিধার দোকান নয় সেটা আমি আগেই বুঝেছিলাম - কিন্তু বউ বোঝে নি! তাই অনলাইন দেদার এখনো কিনে যায় নাল্লি ডট কম্‌ থেকে। এই পেজটা বউ কে পড়াতে হবে।
    বাই দি ওয়ে, ভালো অনলাইন কোন সাউথ ইন্ডিয়ান শাড়ি কেনার জায়গার নাম জানা যাবে?
  • jhinku bibi | 122.79.37.64 (*) | ১৪ জানুয়ারি ২০১৪ ০৭:৩৭74360
  • Khub informative to! Byappok! Btw, mone porlo, shari niye Q er ekta bhalo docu ache. Youtube e pawa jay.
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন