এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • বসন্ত এসে গেছে

    অনিকেত পথিক লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ | ৯৪১ বার পঠিত
  • হ্যাঁ, গতকাল অবধি শুধুমাত্র বার্তা ছিল, ইতি-উতি কোকিলের দু-একবার ডেকে ওঠা, মাঝে মাঝে দু-এক ঝলক অন্যরকম হাওয়া, জানান দিচ্ছিল, সে আসছে। কিন্তু আজ আর কোন সংশয় নেই। সব লক্ষণ স্পষ্ট, সে এসে গেছে। রাস্তার ধারে এক একটা গাছ বিনা নোটিশেই লালে লাআল...ক্লিশে হয়ে যাওয়া সেই কবিতার লাইন ব্যবহার না করে সোজাসুজিই বলতে পারি, আজ বসন্ত !
    বছরে মাত্র কয়েকটা দিন আমরা এইসব দেখতে-শুনতে পাই। এই যে শেষ রাত থেকে কোকিলের কু-কু-কুউউউ ডাকাডাকি, আস্তে আস্তে তার সঙ্গে আরো অনেকরকম পাখির কল-কলানি মিশে গোটা দিগন্তরেখা জুড়ে এক আশ্চর্য ঘুম ভাঙানি গান, সারাবছর কিন্ত আমরা ঠিক এইরকম শুনি না। ভোরবেলায় বাইরে এলে তকতকে আকাশের নীলে একটু লাল মিশে এই যে আশ্চর্য একটা স্বচ্ছতা, আর একটু পরেই সামনের দুটো বাড়ির মাঝখানের ফাঁকটুকু সোনালী হয়ে যাওয়া এইরকম কিছুতেই সারাবছর দেখা যায় না। সেইসময় পুবের জানলা দিয়ে যে মায়াময় সোনালী আলো এসে ঘরের আনাচে কানাচে পোঁছে যায়, সারাবছরই তার নাম রোদ্দুর শুধু এইক’টা দিন ভাবছি তাকে অন্য একটা নামে ডাকব !
    গরমপ্রধান দেশের লোক আমরা, গরম পেরিয়ে বর্ষার অপেক্ষায় থাকি, বর্ষা পেরিয়ে শরত তারপর একমুঠি শীতের দিনের জন্য অপেক্ষায় থাকি, শীত পেরিয়ে বসন্তের অপেক্ষায় থাকি না। কারণ বসন্ত আমাদের কাছে গরমের মুখবন্ধ বললেই চলে। অথচ মাঘের সূর্য ধীরে ধীরে উত্তরায়নে চলতে শুরু করলে, একদিন যখন খেয়াল হয় রোদের রঙ আর দিক কতটা বদলে গেছে, হাওয়ার সঙ্গে একটা হাল্কা মিষ্টি গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে, তখন মনটা এমনিই একটু প্রসন্ন হয়ে ওঠে। হঠাৎ খবর পাই মনে সেই বিরল কয়েকটা দিন একেবারে কাছে এসে গেছে । আকাশের দিকে চোখ তুল্লে দেখব ঝকঝকে নীল, কোথথাও এককণা মেঘ নেই, আস্তে আস্তে চোখ নামিয়ে এনে চারপাশে তাকালে দেখব কংক্রীট নগরীর আনাচে কানাচেও সবুজের নানা শেড। অনেকগুলো গাছ সাদা সাদা নিস্পত্র ডাল শূন্যে ছড়িয়ে অপেক্ষায় রয়েছে, কেউ কেউ উজ্জ্বল সবুজ কচি কচি পাতার পোশাকে সেজে উঠেছে আর কোনো ভুমিকা ছাড়াই এক-একটা শিমুল গাছ আগাগোড়া লালে লাল হয়ে উঠেছে !
    এই আমাদের বসন্ত। বৃষ্টি হোক না হোক এখন গাছপালা চকচকে সবুজ। আমগাছে তামাটে রঙের পাতার সঙ্গে নতুন বৌয়ের গহনার মতো মুকুলের সোনালী সাজ। কিন্ত সবুজ পাতার পরোয়া করেনি কিছু উজ্জ্বল রঙের ফুল, তারা আগেভাগেই ফুটে গেছে গাছের সাদা সাদা অস্থিসর্বস্ব শাখায় । শিমূল-কাঞ্চন-রুদ্রপলাশ। একমুঠো শিউলি কিম্বা একটা-দুটো স্থলপদ্ম। কিন্ত সবচেয়ে অবাক করে যে তার নাম পলাশ। তার কান্ড শ্রীহীন, পাতা অনুজ্জ্বল, এমনকি তার কুঁড়িও ঝুপসি কালো, যেন জমে থাকা অন্ধকার ! সারাবছর যে গাছকে চেষ্টা করেও মনে রাখা যায় না, এই বসন্তে একদিন সকালে সূর্যের প্রথম কিরণ তাকে স্পর্শ করলে হঠাৎ আলোর ঝলকানির মত সে শতশিখায় জ্বলে ওঠে, তখন তার দিক থেকে আর নজর ফেরানো যায় না ! সে যেন অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো !
    আমাদের বসন্ত প্রসন্নতার ঋতু। সকালের সোনালী রোদ বেলার দিকে কিছু বেশী উষ্ণ কিন্ত একটু বেলা পড়ে এলেই আবার মন্দমধুর বাতাসে প্রসন্নতার সৌরভ। বসন্তের বিকেলের চেয়ে মনোরম সময় আর হয় না। অতি দীর্ঘ নয়, অতি সংক্ষিপ্তও নয়। উষ্ণও নয়, শীতলও নয়। রোদের সোনালী রঙে সামান্য পাক ধরেছে কিন্ত ফিরে এসেছে সকালের স্বচ্ছতা, গাছপালার ফাঁকফোকর দিয়ে ঝিকিয়ে ওঠা পশ্চিমের রোদ যেন আয়নায় প্রতিফলন ! প্রজাপতিদের ওড়াউড়ি, পাখিদের আদুরে ডাকাডাকি, গাছের নিস্পত্র শাখায় কাকেদের অগোছালো বাসা। সন্ধের বাতাস কখনো সামান্য শিরশিরে আরামদায়ক, পশ্চিম আকাশের উজ্জ্বলতা মিলিয়ে যেতে যেতেই সন্ধ্যাতারার শান্ত উপস্থিতি।
    প্রতিটি ঋতুর নিজস্ব গন্ধ আছে। বসন্তের সেই গন্ধ এত স্পষ্ট যে সত্যিই ফুল ফুটুক না ফুটুক তাকে চিনে নেওয়া যাবে। আমের বোলের মিঠে গন্ধ যদি বিগতপ্রায় শীতের বেলার সঙ্গে মিশেও যায়, ছাতিমের তীব্র মনমাতানো ঘ্রাণ যদি শরতকালের কথা মনে করিয়েও দেয়, শিরশিরে সন্ধ্যায গলিপথে যেতে যেতে লেবুফুলের ঝিম ধরানো ঘ্রাণ নির্ভুলভাবে জানিয়ে দেবে আজ বসন্ত। শান্ত সকালে আনমনে চলতে ফিরতে এক আশ্চর্য সোঁদা গন্ধে সচকিত হয়ে উঠে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখা যাবে অজস্র ফুলের অলঙ্কারে নুয়ে পড়া সজনে শাখা, মাটিতে বিছিয়ে থাকা সজনে ফুল। শুধু গ্রামবাঙলা কি মফস্বলেই নয় এই খোদ মহানগরীর ছত্রে ছত্রেও এভাবেই বসন্ত আসে, চোখ-নাক-কান খোলা থাকলে তাকে চিনে নিতে দেরী হয় না।
    বসন্তের দিন ক্ষণস্থায়ী। এই রোদ্দুরের রঙ দেখতে দেখতে সোনালী থেকে সাদাটে (তারপর তামাটে !)হয়ে যাবে, গাছের পাতা ঘন সবুজ হবে, শিমূল-পলাশ ঝরে গিয়ে কৃষ্ণচূড়াকে জায়গা করে দেবে, প্রকৃতি উষ্ণ থেকে উত্তপ্ত হয়ে উঠবে, ঝিম ধরে থাকবে, নিমফুলে মৌ জমবে। তারও আলাদা রূপ আছে কিন্ত সে কথা আজ নয়।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ | ৯৪১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Arindam Chakrabarti | 127.194.63.44 (*) | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৮68665
  • " বসন্তের দিন ক্ষণস্থায়ী।"
    বসন্তের লেখা দীর্ঘস্থায়ী। মনে। বড় ভাল লেখা। পর্যবেক্ষণ নিখুঁত।
    আরও লিখুন অনিকেত। বড় ভাল লেখেন আপনি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন